শাকাহার না মাংসাহার - ধর্ম্মতত্ত্ব

ধর্ম্মতত্ত্ব

ধর্ম বিষয়ে জ্ঞান, ধর্ম গ্রন্থ কি , হিন্দু মুসলমান সম্প্রদায়, ইসলাম খ্রীষ্ট মত বিষয়ে তত্ত্ব ও সনাতন ধর্ম নিয়ে আলোচনা

धर्म मानव मात्र का एक है, मानवों के धर्म अलग अलग नहीं होते-Theology

সাম্প্রতিক প্রবন্ধ

Post Top Ad

স্বাগতম

24 July, 2020

শাকাহার না মাংসাহার

🐥☘️বিশুদ্ধ শাকাহার না মাংসাহার🐥☘️
শাকাহার না মাংসাহার
নিরামিষ ভাল নাকি আমিষ ?
পরিবেশ দূষণ রোধে গবাদি পশু পালন এবং মাংস উৎপাদনের শ্রম শিল্পগুলো পরিবেশের ভয়ানক ক্ষতি সাধন করে থাকে। আমরা যেসব পরিবেশগত সমস্যার/ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছি তার অনেকটা দায় সন্দেহাতীত ভাবে এসব শিল্পকারখানারই উপর বর্তায়। মানবজাতির সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ এবং বিশ্বের পরিবেশের জন্য সবচেয়ে বড় হুমকি বিশ্ব উষ্ণায়ন রোধের লড়াইয়ে গ্রিনহাউস গ্যাস কমাতে নিরামিষ ভোজনকে কার্যকরী পন্থা বলেই মানছেন গবেষকরা।
পরিবেশ সচেতন নানা পদক্ষেপের মধ্যে অনেক দেশই আজ কাল বিশ্ব উষ্ণায়ন কমাতে কম কার্বন নির্গমণের জন্য বিকল্প জ্বালানি ব্যবহারের দিকে মনোনিবেশ করেছে। এতে কিছু উপকার হলেও বৈজ্ঞানিক গবেষণায় দেখা গেছে, নিরামিষাশী হওয়ার মধ্য দিয়ে অত্যন্ত কার্যকরভাবে বিশ্বউষ্ণায়নরোধ করা যেতে পারে। সাম্প্রতিক এক জাতিসংঘ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জলবায়ু পরিবর্তনের কু-প্রভাব মোকাবেলায় নিরামিষখাদ্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ২০০৬ সালের এক জাতিসংঘ প্রতিবেদন অনুযায়ী, ১৮ শতাংশ গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমণ ঘটে মাংস ভক্ষণের কারণে। আর ২০০৯ সালে ওয়ার্ল্ডওয়াচ ম্যাগাজিনের প্রতিবেদন অনুযায়ী, এ হার প্রায় ৫০শতাংশ । কিন্তু বিশ্বে বিশেষকরে উদীয়মান অর্থনৈতিক শক্তিরদেশগুলোতে মাংস খাওয়ার প্রবণতা বাড়ছে৷ অথচ পরিবেশের জন্য এর পরিণাম ভয়াবহ৷ বিস্তৃত খামারে যে পশুপালন করা হয় সেই পশুদের জন্য খাবার হিসাবে বিপুল পরিমাণ শস্য কণা এবং পানির ব্যবহার থেকে শুরু করে পশু হত্যা এবং তাদের মাংস বিভিন্ন জায়গায় সরবরাহ, প্রক্রিয়াজাত করা পর্যন্ত প্রতিটি পদক্ষেপই জ্বালানি- নিবিড় হওয়ায় তা পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর।পশুর জন্য চারণভূমির তৈরির জন্য বন পোড়ানোয় প্রধান গ্রিনহাউস গ্যাস কার্বন ডাই অক্সাইড নির্গমণ বেড়ে যায়। খামারের পশুদের জন্য শস্য উৎপাদন করতে একরের পর একর বন পোড়ানোর কারণে গাছে সঞ্চিত বিপুল পরিমাণ কার্বন ডাই অক্সাইড নির্গত হয়ে পরিবেশ দূষিত হয়ে পড়ে। তাছাড়া, পশুর বিষ্ঠা থেকেও বিপুল পরিমাণ কার্বন ডাই অক্সাইড নির্গত হয়।
বিস্তাতিত জানতে----
http://www.fao.org/docrep/010/a0701e/a0701e00.htm
মাংসাহার ক্ষুধা ও দারিদ্র্যের কারণঃ মাংসাহার ক্ষুধা ও দারিদ্র্যের অন্যতম কারণ। আমি নিজেকে কখনো ক্ষুধার্ত ও পুষ্টিহীন করতে চাই না। ঠিক তো? অবশ্যই ঠিক। আর আমি এটাও চাই না যে, এই পৃথিবীতে আমার অন্যান্য সকল ভাই-বোনেরা এর শিকার হউক। আমরা শাকাহারী(ভেজিটেরিয়ান) হলে এবং মাংসাহার বর্জন করলে একই শক্তি ব্যয় করে অন্তত দশগুন লোক খেতে পারবে। এনার্জি পিরামিড (Energy pyramid)এর ওপর ভিত্তি করে এ কথা বলা যায় যে, ১ একক মাংসের খরচ= ১০ একক শাক-সবজির খরচ। অর্থাৎ এক একক শক্তিতে (মাংসের পেছনে) যে খরচ হয় তা দিয়ে ১০ গুণ বেশী উদ্ভিজ্জ শক্তি পাওয়া যায়= ১০ জনকে খাওয়ানো যায়। তাই একজন মানুষ যিনি ভেজিটেরিয়ান তিনি প্রকারন্তরে ৯ জন মানুষকে দারিদ্র্যতা ও পুষ্টিহীনতার হাত থেকে রক্ষা করছেন। আমি যেহেতু মানবতার জয়গান গাই এবং সেই পৃথিবীটাকে নিজ পরিবারের মত মনে করি, তাই আমি আমার ভাই-বোনদের এবং নিষ্পাপ শিশুদের দারিদ্র্যতা ও অপুষ্টির শিকার হয়ে মরতে দিয়ে নিশ্চিন্তে ঘুমোতে পারি না।
বর্তমান যুগে কেউ সিংহের মত আফ্রিকার জঙ্গলে শিকার করে বেঁচে থাকে না। মাংস একটি অনাবশ্যকীয় আসক্তি। মাংস দিয়ে তৈরী সব ধরনের খাবারের বিকল্প একজন আদর্শ ভেজিটেরিয়ান এর আছে এবং তা নিঃসন্দেহে পুষ্টিগুণ দিয়েও অধিকতর সমৃদ্ধ। অথচ এমন হাজারটা শাক-সবজি জাতীয় পুষ্টিগুন সমৃদ্ধ খাবার আছে যার বিকল্প হিসেবে কখনোই মাংস জাতীয় খাবার সমীচীন না।
মাংস নবায়ন যোগ্য নয়(Non renewable):
একটি প্রাণীকে হত্যা করলে তার পুনঃউৎপাদন ক্ষমতা বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু একটি উদ্ভিদকে সমুলে উৎপাটন করলেও এর কান্ড, বীজ, মুল ইত্যাদি অংশ থেকে নতুন চারার জন্ম হয় এবং উৎপাদন প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকে। তাছাড়া একটি উদ্ভিদের বিভিন্ন অংশ ভোজ্য হিসেবে ব্যবহার করলেও তা অতিদ্রুত গজিয়ে যায়।
জীবন অনেক সুন্দর!(Life is so beautiful):
জীবন আমার কাছে অনেক সুন্দর, সবচেয়ে প্রিয় এবং সবচেয়ে মুল্যবান।প্রত্যেকটা মানুষ এভাবেই তার জীবনকে ভাবে এবং ভালবাসে।আমি যদি অপর কোন একজন মানুষকে খুন করি তাহলে আমি একজন খুনি হিসেবে পরিগনিত হব। ক্লারণ আমি তার মহা মূল্যবান জীবনটাকে ছিনিয়ে নিয়েছি। ঠিক তো????? হ্যা, ঠিক। তাহলে আমি কিভাবে একই অপরাধ অন্যান্য প্রজাতির প্রাণীর ক্ষেত্রে করতে পারি যাদের আমাদের মত মস্তিষ্ক আছে, যাদের আমাদের মত জীবোণ আছে,যারা আমদের মত মরতে ভয় পায় এবং যারা আমাদের মত সুখ-দুঃখের অনুভূতি প্রকাশ করতে পারে???!!!!! শুধু কি এই কারনে যে,আমরা তাদে ভাষা বুঝি না এবং তারা আমাদের থেকে অনুর্বর মস্তিষ্ক সম্পন্ন??!! তাহলে তো মানসিক রোগীদের খুন করাও বৈধ হওয়া উচিৎ, কোমা রোগীদেরও খুন করাও বৈধ হওয়া উচিৎ?? অনাথ শিশুদেরকেও হত্যা করা উচিৎ??? আর তাই সঙ্গত কারনে প্রাণীদেরও হত্যা করা উচিৎ না। বরং তাদের ভালবেসে রক্ষা করা উচিৎ।
🌻🌷 প্রশ্নঃ তাহলে আপনারা উদ্ভিজ্জ খাবার (ফল-ফলাদি,শাক-সবজি ইত্যাদি) খাওয়া বন্ধ করেন না কেন? কেননা তাদেরও তো প্রাণ আছে এবং এটা বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত।
🌷 উত্তরঃ গবেষণা এটা প্রমাণ করেছে যে, উদ্ভিদের প্রাণীদের মত প্রায় একই রকম প্রক্রিয়া এবং কোষীয় গঠন(processes and cellular structures) রয়েছে। কিন্তু বিজ্ঞান এটা বলে নি যে, উদ্ভিদসমুহের প্রাণীকূলের মত ব্যাক্তিত্ব আছে, সৃজনশীলতা আছে। এটার কোন প্রমাণ নেই যে, উদ্ভিদ প্রাণীদের মত সুখ,দুঃখের অনুভূতি প্রকাশ করে। তাছাড়া উদ্ভিদ এবং প্রাণীর উৎপাদন প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ ভিন্ন। আর তাদের মাঝে, সুস্পষ্টরূপে পার্থক্য আছে বলেই উদ্ভিদবিদ্যা (বোটানি) এবং প্রাণীবিদ্যা ( জুলুজি) আলাদা এবং স্বতন্ত্র। আমরা জানি যে, উদ্ভিদ দুঃখও পায় বটে। কিন্তু সে কখনোই উপলব্ধি করতে পারে না যে, “আমি একটি আত্মা,আমি একটি আম গাছ।’’ আর আমরা প্রাণীজ আমিষ বা মাংস না খেয়ে বেঁচে থাকতে পারি কিন্তু উদ্ভিজ্জ খাবার ছাড়া একদিনও সাবলীলব ভাবে টিকতে পারি না। তাই মানবতাবোধে উজ্জীবিত হয়ে আমাদের এটা ভাবা উচিৎ যে, আমরা বিনা রক্তপাত করেই খুব সুন্দরভাবে বেঁচে থাকতে পারি। আর পাশবিকভাবে ভাবলে, নরখাদক/মানুষ খাওয়াকেও সাপোর্ট করেও যুক্তি দেওয়া যায়।তাই নয় কি??
🌻🌷 প্রশ্নঃ সিংহ, বাঘ ইত্যাদি প্রাণীসমূহ তো মাংস খায়। তাহলে মানুষের খেলে ক্ষতি কি??
🌷 উত্তরঃ সিংহ এবং বাঘ মাংসাশী এবং তারা প্রাণীজ আমিষ খায় কারণ তারা প্রকৃতিগতভাবে এভাবেই সৃষ্টি হয়েছে। আর তারা এমন অবস্থায় থাকে না যে, তারা চিন্তা করবে, বিশ্লেষণ করবে কি খাবে,কিভাবে খাবে? তারা এটাও ভাবে না যে কাঁচা মাংস খাবে না রান্না করা মাংস খাবে?? ৫ প্রকারের মাংস মিক্স করে খাবে কি না এটাও তাদের মনে কখনো চিন্তার উদ্রেক করে না। অথচ একজন মানুষ চিন্তা করতে পারে যে, সে কি খাবে, কিভাবে খাবে।আর যেহেতু এটা ১০০% প্রমাণিত হয়েছে যে, প্রাণী হত্যা করে মাংস খাওয়া দারিদ্র্য এবং ক্ষুধার সৃষ্টি করে এবং ব্যাপকভাবে পরিবেশ দূষণ করে তাই একজন চেতন বোধ সম্পন্ন মানুষ কখনোই প্রাণী হত্যা করবে না। আর যেহেতু মানুষ প্রাণী হত্যা না করে শুধুমাত্র উদ্ভিজ্জ খাবার খেয়ে সাবলীলভাবে বেঁচে থাকতে পারে তাহলে এমন অপরাধ না করাটা নিশ্চয়ই মঙ্গলজনক।
🌻🌷 প্রশ্নঃ কিন্তু আমি একজন নাস্তিক। আমি আত্মা বা ঈশ্বরে বিশ্বাস করি না। তাই প্রাণী এবং উদ্ভিদ উভয়ই আমার কাছে রাসায়নিক ক্রিয়ালব্ধ ফল। তাহলে কেন আমি কেন প্রানীজ মাংস খাব না?
🌷 উত্তরঃ আপনি নাস্তিক/অজ্ঞেয়বাদী যাই হন, অনেক কারণ আছে যেসব কারণে আপনি মাংসাহারকে বাদ দিয়ে শাকাহারী হবেন। আমি মনে করি আপনি একজন মানুষ এবং আপনিও একমত হবেন যে, একজন মানুষের অপর একজন মানুষকে আঘাত করা, দুঃখে রাখা ঠিক না। আমি মনে করি, আপনি আপনার বন্ধুদের জন্য, এককথায় মানব জাতির জন্য ভালবাসা অনুভব করেন। তাই বলা যায়, আপনি নিশ্চয়ই নিজে খেয়ে অন্য ৯ জন মানুষকে ক্ষুধার্ত রাখতে পছন্দ করবেন না। পৃথিবীকে রক্ষাকারী পরিবেশকে আপনি নিশ্চয়ই রক্ষা করতে সচেষ্ট হবেন। তদুপরি,আপনি নিশ্চয়ই চাবেন না যে, আপনার ভবিষ্যত প্রজন্ম দারিদ্র্য,অপুষ্টি এবং নিষ্ঠুর স্বার্থপরতার শিকার হউক!! সেক্ষেত্রে আপনাকে “মাংসাহারকে না বলুন” প্রচারে যোগ দেওয়া উচিৎ।(( কারণসমুহ পূর্বে উল্লেখিত))।
🌻🌷 প্রশ্নঃ ধরুণ,আমি এমন একটা জায়গায় আছি যেখানে শুধু মাংস পাওয়া যায়(এন্টার্কটিকার একটি নির্জন দ্বীপে)। তখন কি আমি মাংস খাবো না?
🌷 উত্তরঃ এটা একটা মজার প্রশ্ন। আপনি জীবনের কতটুকু সময় তদ্রুপ অবস্থায় থাকেন??? ভালো কথা হচ্ছে যে, আপনি নিজেই স্বীকার করলেন যে, সেইসব পরিস্থিতি ব্যতীত প্রাণীর মাংস খাওয়া ঠিক না। আর আপনি যেহেতু একটি মানব সমাজে বসবাস করছেন সেক্ষেত্রে আপনার এমন অবস্থা না আসার সম্ভাবনাই বেশী (৯৯.৯৯%) যদি না আপনি রবিনসন ক্রুসো হতে চান। আর একটা বিষয় , প্রায় সব প্রাণীই উদ্ভিদের উপর নির্ভরশীল এবং উদ্ভিদের জন্যই বেঁচে থাকতে পারে। সব ধরনের খাদ্য শৃঙ্খল উদ্ভিদ দিয়েই শুরু হয়। এমন কোন প্রাণী নেই যারা সূর্য শক্তিকে জীবনী শক্তিতে রুপান্তরিত করতে পারে। এটা শুধু উদ্ভিদেরাই পারে।
🌻🌷 প্রশ্নঃ আমরা যদি প্রাণীজ মাংস খাওয়া বন্ধ করে দেই তাহলে কি সেসব প্রাণী দিয়ে সম্পুর্ন পৃথিবী ভরপুর হয়ে যাবে না??আমাদের প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষার্থে অবশ্যি প্রাণী হত্যা করে খাওয়া উচিৎ। তাই নয় কি??
🌷 উত্তরঃ খাদ্য শৃঙ্খল তার নিজস্ব নিয়ম অনুযায়ী চলতে থাকবে এবং প্রাকৃতিক ভারসাম্য বজায় রাখবে। এটআ একটা মৌলিক জ্ঞান। আর মানুষ তো কখনো সর্বভুক প্রাণীদের( সিংহ, বাঘ, শকুন) হত্যা করে খায় না। আপনার কথা অনুযায়ী তাহলে তো সমগ্র পৃথিবী বাঘময় অথবা সিংহময় হওয়ার কথা ছিলো। কিন্তু তা আজ অবধি হয় নি। আর মানুষ অধিকাংশ প্রাণীকে প্রতিপালন করে থাকে ফার্মে এবং পরবরতীতে তাদের হত্যা করে খায়। এতে করে পরিবেশের উপকার না হলেও ক্ষতি অনেক বেশী হয়। তাই এটি একটি অযৌক্তিক প্রশ্ন। পক্ষান্তরে, সর্বভুকসহ অন্যান্য প্রাণীরা ফারম হাউস তৈরী করতে পারে না এবং খোয়ার জন্য অন্যান্য প্রাণীদের লালন-পালন করতে পারে না। তাই প্রাণী হত্যা বন্ধ করলে সহজেই তারা তাদের আহার্য পাবে।
🌻🌷 প্রশ্নঃ আমি যদি বলি, প্রাণি হত্যা করা একটা natural phenomena( প্রাকৃতিক প্রপঞ্চ/কারণ)। সব শক্তিশালি প্রানীরাই তো মাংস খায়। তাহলে মানুষ মাংস খেলে সমস্যা কোথায়??
🌷 উত্তরঃ প্রথমত বলা হয়েছে যে, প্রাণীজ় আমিষ নবায়নযোগ্য নয়। প্রাণী হত্যা করলে তাদের পুনঃ উৎপাদন একেবারেই বন্ধ হয়ে যায়। আর প্রাণীরা খাবারের জন্য মানুষের মত ফার্ম তৈরী করতে পারে না। শিকার করে ক্ষুধা নিবৃত্ত করা তাদের প্রকৃতিজাত সহজাত প্রবৃত্তি। দ্বিতীয়ত, মোটামুটি সব শক্তিশালী প্রাণীরা তৃণভোজী। যেমনঃ হাতি, ঘোড়া, জলহস্তি, বুনো মোষ, গরিলা, গন্ডার, জ়েব্রা ইত্যাদি। তৃতীয়ত, প্রাণীরা নগ্ন হয়ে ঘোরা-ফেরা করে, তার কবিতা পড়ে না, তারা রান্না করে খায় না ইত্যাদি। তাই মাংস খাওয়া যসি মানুষের সহজাত প্রবৃত্তি হত তাহলে মানুষ সবসময় কাঁচা মাংস খেত আর চামচ/কাটা কিছুই ব্যবহার করতো না। মানুষ সৃষ্টির সেরা জীব এবং সবচেয়ে বুদ্ধিমান প্রাণী। আমাদের বিচার বুদ্ধির মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা আছে। আমরা করুণা করতে পারি, বিস্বস্ত হতে পারি। তাই মানুষ যদি তার প্রকৃতিপ্রদত্ত সহজাত বৈশিষ্ট্যগুলোকে সমুন্নত রাখতে চায় তাহলে তাদের অবশ্যই প্রাণী হত্যা বন্ধ করে তাদের রক্ষা করতে হবে এবং প্রাণী নির্যাতন বন্ধ করতে হবে। আর শক্তির অপব্যবহার করা নিশ্চয়ই উচিৎ নয়। যদি সঠিক হয় তাহলে তো, শক্তিশালী মানুষগুলোরও উচিৎ দুর্বল মানুষগুলোকে পদদলিত করে প্রভাব বিস্তার করা। এটা কি আদৌ মানবিকতা সম্পন্ন কোন মানুষের কাজ হতে পারে?? তাই চলো সবাই মানুষ হই। দুর্বলদের রক্ষা করি। দুর্বলের ওপর সবলের অত্যাচার নিশ্চয়ই মনুষ্যত্বের বৈশিষ্ট্য না।
🌻🌷 প্রশ্নঃ বায়োলজিকালি কিন্তু মানুষ সহজাতভাবে প্রানীর মাংস খেতে পারে। আমাদের ইন্টেস্টাইন দাঁতের দিকে তাকাও?আমাদের কিন্তু তৃণভোজ়ী প্রাণীদের মত সেলুলোজ হজম করার মত অঙ্গ নেই। আমরা তো তাহলে নিঃসন্দেহে প্রাণীর মাংস খেতে পারি, তাই নয় কি?
🌷 উত্তরঃ মানুষের সহজাত প্রবৃত্তি সর্বভুক এবং তৃণভোজ়ি উভয়ের থেকে আলাদা এবং স্বতন্ত্র। তৃণভোজীর মত মানুষ ঘাস খায় না আর সর্বভুকদের মতোও কাঁচা মাংস খায় না। বাঘ,সিংহের মত আমাদের ইয়া বড় বড় ক্যানাইন দাঁতও নেই। বরং, মানুষের ক্যানাইন দাঁতসমুহ প্রামাণিকভাবে ইক্ষুর আচ্ছাদন ছিঁড়ার জন্য সবচেয়ে উত্তম (ডেন্টিস্টকে জিজ্ঞাসা করতে পারেন)। দৌড় দিয়ে, চেস করে সর্বভুক প্রাণীরা তাদের শিকার ধরে এবং তার পরেই তাদের বড় বড় দাঁত, নখ দিয়ে তাদের আহার কারয সম্পাদন করে। মানুষ তাহলে কেন এভাবে শিকার করে না?মানুষকে এক্ষেত্রে প্রাণীদের বাঁধতে হয়/ বন্দি করতে হয় এবং বিশেষ যন্ত্রপাতি দিয়ে কাটতে হয়।একটু বুঝে ভাবুন তো? বিপরীতে ফল-মুল,শাক-সবজি কিন্তু রান্না না করেও খাওয়া যেতে পারে। তাই আমাদের জীব বিজ্ঞান বিষয়ে জ্ঞান থাকলে আমরা অবশ্যই শাকাহারী হব এবং শরীর, মন ও মস্তিষ্ককে সুস্থ, স্বাভাবিক রাখবো।
🌻🌷 প্রশ্নঃ কিন্তু আমি এমন এক সমাজে থাকি, এমন এক পরিবেশে থাকি, এমন এক পরিবারে থাকি যেখানে মাংস না খেলে চলেই না। তাহলে আমি কিভাবে আমার মাংসাহার বন্ধ করবো?? আর আমি বন্ধ করলে তো আমার গ্রুপের সবাই আমাকে Crazy বলবে।
🌷 উত্তরঃ হুম। এটা একটা honest প্রশ্ন। অনেক ভাল লোক তাদের সঙ্গীদের পাল্লায় পরে মাংস খেয়ে থাকে। কিন্তু তুমি একটু ভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে চিন্তা কর!!! ভাবো, তুমি একদল নরখাদক ( মানুষখেকো) লোকের সাথে আছো। তারা তোমার পরিবারকে খেতে চাইবে, তোমার বাবা-মার বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ছেদ করে খাবে,তোমার ভাই-বোনকে খেতে চাইবে। তুমি কি এতে আনন্দিত হবে????? একজন যুক্তিবোধ সম্পন্ন মানুষ ভাবে যে, সব জীবই তার পরিবারের সদস্যের মত। আর তুমিও এমনটা ভাবলে প্রাণী হত্যা করে মাংস খেতে পারবে না। তোমার বিবেককে তা প্রশ্নবিদ্ধ করবে! আর মনে রেখ, ১ একক প্রাণীর মাংসে খরচ (১ জনের খাবার)= ১০ একক উদ্ভিজ্জ খাবারের খরচ (১০ জ়নের খাবার)।
🌻🌷 প্রশ্নঃ তাহলে কি আমরা মাংস আহারকারীদের ঘৃণা করবো?
🌷 উত্তরঃ যারা প্রানী হত্যা করে প্রাণীজ মাংস খায় তার অবশ্যই দোষী। কিন্তু তাদের ঘৃণা করাটা উচিৎ না। মাংস খাওয়া বর্তমানে একটি সাংস্কৃতিক ইস্যু এবং প্রথা হয়ে দাড়িয়েছে। তাই এমন অযৌক্তিক, ভ্রান্ত। কু-প্রথাকে দূর করতে হবে সচেতনতা আর সহানুভূতির দ্বারা, সন্ত্রাসবাদের মাধ্যমে না। আমরা দ্ব্যর্থহীন কণ্ঠে বলছি যে, মাংস খাওয়াকে ব্যাপকহারে নিরুৎসাহিত করুন এবং পরিবেশবান্ধব, সর্বোত্তম খাবার শাক-সবজি খেতে সবাইকে উৎসাহিত করুন।
🌻🌷 প্রশ্নঃ তাহলে মাংস উৎপাদনকারী ফার্মগুলোর কি হবে? আর যেসব লোক সেসব ফার্মে কাজ করে তার কি বেকার হয়ে যাবে না?
🌷 উত্তরঃ না। ফার্মগুলো মাংসের পরিবির্তে বিভিন্ন ধরনের উদ্ভিজ্জ উপাদান দিয়ে বিভিন্ন খাদ্য তৈরী করতে পারবে। এতে করে, কর্মসংস্থানের সুযোগ আরো বেড়ে যাবে। কেননা, প্রকৃতি উদ্ভিজ্জ উপাদান দিয়ে কানায় কানায় পূর্ণ। আর পরিবেশকেও ক্ষতির সম্মুখীন হতে হবে না।
🌻🌷 প্রশ্নঃ যদি মাংসাহারের প্রকৃতি প্রদত্ত প্রবৃত্তি মানুষের না থাকে তাহলে প্রথম দিকে মানুষ কেন মাংস খাওয়া শুরু করে?
🌷 উত্তরঃ ধর্ষণ, খুন, লুণ্ঠন, লিঙ্গ বৈষম্যভেদ, সন্ত্রাসবাদ কি মানুষের সহজাত প্রবৃত্তি?!অবশ্যই না। কিন্তু তবুও মানুষ কেন তা করছে?! এসব জঘন্য কাজশুদ্ধ-পবিত্র জ্ঞান এর অভাবের ফলে ঘটে থাকে। আর শুরুর দিকে মানষেরা কিন্তু বন-জঙ্গলের ফল-ফলাদিও ব্যাপকহারে খেতো। তাছাড়া বাইবেল বলছে, উৎপত্তিগতভাবে সকল মানুষই নিরামিশাষী( ভেজিটেরিয়ান ছিলো)।[Genesis 1.29 For Example] আর পবিত্র বেদ এবং গীতা তো সব-সময়ই অনেক আগে থেকেই এসব ঘোষণা করে আসছে। এমনকি পবিত্র যজুর্বেদের প্রথম মন্ত্রই নিরামিশাষী হবার নির্দেশ প্রদান করে। শিক্ষা,জ্ঞান, প্রজ্ঞা ও মনুষ্যত্বের অভাবের ফলে এসব কু-আচার আমাদের সামাজিক প্রথায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছে।
তাই আসুন। জ্ঞানের আলোয় আলোকিত হয়ে প্রজ্ঞাবান হই, মনুষ্যত্ববোধে উজ্জীবিত হয়ে প্রকৃত মানুষ হই। পৃথিবীকে সমৃদ্ধিময় করে তুলি। পরিবেশকে সুন্দর রাখি। আসুন আমরা সবাই “ ভেজিটেরিয়ান( নিরামিশাষি) হই, হবার চেষ্টা করি” এবং মাংসাহারকে নিরুৎসাহিত করে একে নির্মুল করি।

মনুষ্য মাংসাহারী নাকি শাকাহারী
বায়ু, জল এবং খাদ্য সমস্ত জীবের জীবনের ভিত্তি। বায়ু এবং জল পরিষ্কার হওয়া উচিত এবং দূষিত নয়, এটিও সর্বমান্য। মানুষ ব্যতীত অন্য সকল জীবেরা নিজেদের খাদ্য সম্পর্কে স্পষ্ট, যে তাদের খাদ্য কী? এটা কি বড় পরিহাস যে সবচেয়ে বুদ্ধিমান শরীরধারী মানুষ তার খাবার সম্পর্কে স্পষ্ট নয়। আমি আমার মনুষ্য বন্ধুদের কাছে এই কথা বলে ক্ষমা চাইবো যে খাবারের সিদ্ধান্তে মানুষের অবস্থান একটি গাধার চেয়েও নিচে। যারা মানুষকে খাবার সম্বন্ধে বক্তব্য রাখে যথা ডাক্তার, বিজ্ঞানী, অর্থনীতিবিদ, ধর্মগুরু তারা কপটতার মতো কথা বলে। স্পষ্ট নির্ণয় কার থেকে নেবেন? খাদ্য সম্পর্কে স্পষ্ট নির্ণয় আমরা শুধুমাত্র সিদ্ধান্ত থেকেই পেতে পারি, কারণ সিদ্বান্তই হলো সর্বোপরি। আসুন আমরা সিদ্ধান্ত নিয়ে দেখেনি যে মানুষের খাদ্য আসলে কি?
১. কোনো মেশিন সম্পর্কে তথ্য, ব্যবহারকারীর চেয়ে স্রষ্টার কাছে বেশি থাকে।
২. মেশিনের জ্বালানি এবং শরীরের খাদ্য তার গঠন অনুযায়ী নির্ধারিত হয়।
৩. উপযুক্ত (গঠন অনুযায়ী) জ্বালানি বা খাবার দ্বারা মেশিন বা শরীর ভালো কাজ করবে আর দীর্ঘ কাল পর্যন্ত ভালো করে কাজ করবে অন্যথায় জ্বালানি বা খাবার দ্বারা কম কাজ করবে আর শীঘ্র খারাপ হয়ে যাবে।
৪. জ্বালানি বা খাবার হলো সেই পদার্থ, যার দ্বারা মেশিন কাজ করে আর শরীর জীবিত থাকে। যে পদার্থকে খাদ্য হিসেবে শরীরে প্রবেশ করানো হয় এবং শরীর বাঁচে না, তা খাদ্য হতে পারে না।
৫. সকল শরীর (আস্তিকদের জন্য) ঈশ্বর বানিয়েছেন অথবা (নাস্তিকদের জন্য) প্রকৃতি বানিয়েছে। একটিও শরীর কোনো ডাক্তার, বিজ্ঞানী, অর্থনীতিবিদ, ধর্মগুরু বানায়নি।
৬. আমরা এই সংসারে আমাদের চারপাশে দুই ধরনের দেহ দেখতে পাই- মাংসাহারী এবং শাকাহারী।
এখানে আমরা ১, ২, ৫ আর ৬ এর ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নিবো মানুষের খাদ্য মাংসাহারী না শাকাহারী?
সকল শরীর ঈশ্বর অথবা প্রকৃতি বানিয়েছে, ঈশ্বর বা প্রকৃতির জ্ঞান মানুষের চেয়ে বেশি আর খাবার গঠন অনুযায়ী হয়ে থাকে। আমাদের সামনে দুই ধরনের শরীর মাংসাহারী (সিংহ,বাঘ, চিতা, হায়না, নেকড়ে ইত্যাদি) আর শাকাহারী (গরু, ছাগল, ঘোড়া, হাতি, উট ইত্যাদি) উপস্থিত আছে, তাই সবচেয়ে মৌলিক বিষয় হলো শরীরের গঠন অনুযায়ী খাবার ঠিক করে দিয়েছে ঈশ্বর বা প্রকৃতি যিনি শরীর তৈরি করেছে আর ঈশ্বর বা প্রকৃতির কথা মানুষের চেয়ে বেশি সঠিক হবে, এই ভিত্তি ব্যবহার করে, আমরা মানুষের খাদ্য নির্ধারণ করবো। সেই সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য, আমরা শাকাহারী এবং মাংসাহারীদের শরীরের গঠন তুলনা করবো আর দেখা যাক মানবদেহের গঠন কিসের সাথে মিলে যায়? যদি মানুষের শরীর শাকাহারী দেহের অনুরূপ, তবে মানুষের খাদ্য শাকাহারী এবং যদি দেহের গঠন মাংসাহারী দেহের সাথে মিলে যায়, তবে মানুষের খাবার হবে মাংসাহারী। এটি চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে এবং আমাদের কোনো ধর্মগুরু, বিজ্ঞানী বা ডাক্তারকে জিজ্ঞাসা করার দরকার নেই, কারণ ঈশ্বর বা প্রকৃতির কাছে তাদের কোনো যোগ্যতাই নেই আর যাই হোক একজন মানুষের পক্ষে নিষ্পক্ষ হওয়া খুব কঠিন। নিম্ন তালিকায় মাংসাহারী-শাকাহারী দেহের গঠনের তুলনামূলক তথ্য দেওয়া হচ্ছে-
১. মাংসাহারী- চোখ গোলাকার হয়, অন্ধকারে দেখতে পায়, অন্ধকারে চকচক করে, জন্মের ৫-৬ দিন পরে খোলে।
শাকাহারী- চোখ লম্বা হয়, অন্ধকারে দেখতে পায় না, অন্ধকারে চকচক করে না আর জন্মের সাথে সাথেই খোলে।
২. মাংসাহারী- ঘ্রাণ শক্তি (গন্ধ অনুভূতির শক্তি) অনেক অধিক হয়ে থাকে।
শাকাহারী- ঘ্রাণ শক্তি মাংসাহারীর তুলনায় অনেক কম হয়ে থাকে।
৩. মাংসাহারী- খুব উচ্চ কম্পাঙ্কের শব্দ শুনতে পারে।
শাকাহারী- খুব উচ্চ কম্পাঙ্কের শব্দ শুনতে পারে না।
৪. মাংসাহারী- দাঁত ধারালো হয়, পুরো মুখে শুধু দাঁত আছে, দাঢ় নেই আর দাঁত একবারই আসে।
শাকাহারী- দাঁত আর দাঢ় দুটোই আছে, চ্যাপ্টা হয়ে থাকে, একবার পরে গেলে দ্বিতীয়বার আবার নতুন দাঁত জন্মে।
৫. মাংসাহারী- এরা মাংসকে ছিঁড়ে গেলে, তো এদের চোয়াল কেবল উপর-নিচে চলে।
শাকাহারী- এরা খাদ্যকে চিবিয়ে চিবিয়ে খায়, তো এদের চোয়াল উপর-নিচে আর ডানপাশে-বামপাশ চলে।
৬. মাংসাহারী- মাংস খাওয়ার সময় বারংবার মুখকে খোলে এবং বন্ধ করে।
শাকাহারী- খাওয়ার সময় খাদ্য একবার মুখে নেওয়ার পর গেলা পর্যন্ত মুখ বন্ধ রাখে।
৭. মাংসাহারী- জিহ্বা সামনের দিক থেকে চ্যাপ্টা ও পাতলা এবং সামনের দিক থেকে চওড়া।
শাকাহারী- জিহ্বা প্রস্থে কম এবং সামনের দিক থেকে গোলাকার হয়।
৮. মাংসাহারী- জিহ্বাতে টেস্ট বুড্স (Taste Buds) যার সাহায্যে স্বাদকে চিনতে পারে, সংখ্যায় খুব কম হয় (৫০০ - ২০০০)।
শাকাহারী- জিহ্বায় অনেক পরিমানে টেস্ট বুড্স থাকে (২০,০০০ - ৩০,০০০), মানুষের জিহ্বাতে এর সংখ্যা ২৪,০০০ - ২৫,০০০ হয়ে থাকে।
৯. মাংসাহারী- মুখের লালা অম্লীয় (acidic) হয়।
শাকাহারী- মুখের লালা ক্ষারীয় (alkaline) হয়।
১০. মাংসাহারী- পেটের গঠন এক কক্ষীয় হয়।
শাকাহারী- পেটের গঠন বহু কক্ষীয় হয়। মানুষের পেট হলো দুই কক্ষীয়।
১১. মাংসাহারী- পাকস্থলীর পাচক রস খুব তেজ (ঘন) হয়। শাকাহারীদের পাকস্থলীর পাচক রসের তুলনায় ১২-১৫ গুণ অধিক তেজ হয়ে থাকে।
শাকাহারী- শাকাহারীদের পাকস্থলীর পাচক রস মাংসাহারীদের তুলনায় অনেক কম তেজ হয়। মানুষের পাকস্থলীর পরিপাক রসের তেজ শাকাহারীদের সমান।
১২. মাংসাহারী- পাচনতন্ত্র (মুখ থেকে মলদ্বার পর্যন্ত) দৈর্ঘ্য কম থাকে। সাধারণত শরীরের দৈর্ঘের ২.৫ – ৩ গুণ হয়।
শাকাহারী- পাচনতন্ত্রের দৈর্ঘ্য বেশি থাকে। প্রায় শরীরের দৈর্ঘের ৫-৬ গুণ হয়।
১৩. মাংসাহারী- ক্ষুদ্রান্ত্র এবং বৃহৎ অন্ত্রের দৈর্ঘ্য ও প্রস্থের মধ্যে খুব একটা পার্থক্য নেই।
শাকাহারী- ছোট অন্ত্র বৃহৎ অন্ত্রের তুলনায় প্রস্থে অনেক ছোট এবং দৈর্ঘ্যে অনেক বেশি হয়।
১৪. মাংসাহারী- এগুলিতে কার্বোহাইড্রেট থাকে না, এই কারণে, মাংসাহারীদের অন্ত্রে কোনো কিণ্বন (Fermentation bacteria) ব্যাকটেরিয়া নেই।
শাকাহারী- এদের অন্ত্রে কিণ্বন (Fermentation bacteria) ব্যাকটেরিয়া থাকে, যা কার্বোহাইড্রেট হজমে সাহায্য করে।
১৫. মাংসাহারী- অন্ত্রগুলি পাইপের মতো অর্থাৎ ভিতর থেকে সমান।
শাকাহারী- অন্ত্রে স্ফীতি (bulges) এবং খাঁজ grooves আছে, অর্থাৎ, ভিতরের গঠন চুড়িগুচ্ছের মতো।
১৬. মাংসাহারী- এদের লিভার চর্বি এবং প্রোটিন হজম করার জন্য অধিক পাচক রস নির্গত করে। পিত্তে জমা করে। আকারে বড় হয়।
শাকাহারী- এদের লিভারের পাচক রস চর্বি হজমকারী পাচক রসের তুলনায় কম হয়। পিত্ত হতে ছাড়ে। তুলনামূলকভাবে ছোট হয়।
১৭. মাংসাহারী- অগ্ন্যাশয় অল্প পরিমাণে এনজাইম নিঃসরণ করে।
শাকাহারী- মাংসাহারীদের তুলনায় অধিক পরিমানে এনজাইম নিঃসরণ করে।
১৮. মাংসাহারী- রক্তের প্রকৃতি অম্লীয় (acidic) হয়।
শাকাহারী- রক্তের প্রকৃতি ক্ষারীয় (alkaline) হয়।
১৯. মাংসাহারী- রক্তে এক ধরনের লাইপোপ্রোটিন থাকে, যা শাকাহারীদের থেকে আলাদা।
শাকাহারী- মানুষের রক্তের লাইপোপ্রোটিন (Lipoprotein) শাকাহারীদের সাথে মেলে।
২০. মাংসাহারী- প্রোটিন হজমের ফলে ইউরিয়া এবং ইউরিক অ্যাসিড উৎপন্ন হয়, তাই রক্ত থেকে প্রচুর পরিমাণে ইউরিয়া ইত্যাদি অপসারণের জন্য বড় আকারের কিডনি (Kidney) রয়েছে।
শাকাহারী- এদের কিডনি মাংসাহারীদের থেকে ছোট হয়।
২১. মাংসাহারী- এদের মলদ্বারের (Rectum) উপরে কোন অংশ নেই।
শাকাহারী- এদের Rectum আছে।
২২. মাংসাহারী- এদের মেরুদণ্ডের গঠন এমন যে এরা পিঠে ভার বহন করতে পারে না।
শাকাহারী- এরা পিঠে ভার বহন করতে পারে।
২৩. মাংসাহারী- এদের নখ সামনের দিক থেকে তীক্ষ্ণ, গোলাকার এবং লম্বা।
শাকাহারী- এদের নখ চ্যাপ্টা এবং ছোট।
২৪. মাংসাহারী- এরা তরল পদার্থকে চেটে পান করে।
শাকাহারী- এরা তরল পদার্থকে চুমুক দিয়ে পান করে।
২৫. মাংসাহারী- এদের ঘাম আসে না।
শাকাহারী- এদের ঘাম আসে।
২৬. মাংসাহারী- এদের প্রসবের সময় (বাচ্চা জন্ম করতে সময়) কম লাগে। প্রায় ৩ - ৬ মাস।
শাকাহারী- এদের প্রসবের সময় মাংসাহারীদের তুলনায় অধিক সময় লাগে। প্রায় ৬ - ১৮ মাস।
২৭. মাংসাহারী- এরা জল কম পান করে থাকে।
শাকাহারী- এরা তুলনামূলকভাবে বেশি জল পান করে।
২৮. মাংসাহারী- এদের শ্বাস-প্রশ্বাস দ্রুত হয়।
শাকাহারী- এদের শ্বাস-প্রশ্বাসের হার কম, এদের আয়ুষ্কাল দীর্ঘ হয়।
২৯. মাংসাহারী- ক্লান্ত হলে ও গরমে মুখ খুলে এবং জিভ বের করে হাঁপাতে থাকে।
শাকাহারী- মুখ খুলে হাঁপায় না আর গরমে জিভ বের করে না।
৩০. মাংসাহারী- প্রায়ই দিনের বেলা ঘুমায়, রাতে জাগে ও ঘুরে বেড়ায়।
শাকাহারী- রাতে ঘুমায়, দিনে সক্রিয় থাকে।
৩১. মাংসাহারী- এরা নিষ্ঠুর হয়ে থাকে, প্রয়োজনে নিজের সন্তানকে মেরে খেতে পারে।
শাকাহারী- নিজের সন্তানকে হত্যা করে না এবং সন্তানের প্রতি হিংসক হয় না।
৩২. মাংসাহারী- অন্য প্রাণীদের ভয় দেখানোর জন্য হুংকার দেয়।
শাকাহারী- অন্য প্রাণীদের ভয় দেখানোর জন্য হুংকার দেয় না।
৩৩. মাংসাহারী- এদের রক্তে প্রচুর পরিমাণে রিসেপ্টর রয়েছে যা রক্তে কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণ করে।
শাকাহারী- এদের রক্তে রিসেপ্টরের পরিমাণ কম রয়েছে। মানুষের রক্তেও কম পরিমাণে রয়েছে।
৩৪. মাংসাহারী- এরা কোনো প্রাণীকে হত্যা করে এবং তার মাংস কাঁচাই খেয়ে ফেলে।
শাকাহারী- মানুষ কোনো প্রাণীকে হত্যা করে তার কাঁচা মাংস খায় না।
৩৫. মাংসাহারী- এদের মলমূত্রে দুর্গন্ধ রয়েছে।
শাকাহারী- এদের মলমূত্রে দুর্গন্ধ হয় না (যদি কোনো মানুষ শাকাহারী হন এবং তার হজমশক্তি সুস্থ থাকে, তাহলে সেই মানুষের মলমূত্রে খুব কম গন্ধ থাকে)।
৩৬. মাংসাহারী- হজমের সময় শক্তি পেতে এদের পরিপাকতন্ত্রে বিভিন্ন ধরনের প্রোটিন ব্যবহার হয়, যা শাকাহারীদের থেকে আলাদা।
শাকাহারী- এরা শক্তি পেতে বিভিন্ন প্রোটিন ব্যবহার করে।
৩৭. মাংসাহারী- এদের পরিপাকতন্ত্র, যা এনজাইম তৈরি করে, তারা মাংসই হজম করে।
শাকাহারী- এদের পরিপাকতন্ত্র, যা এনজাইম তৈরি করে, তারা শুধুমাত্র বনস্পতি জাতীয় পদার্থ হজম করে।
৩৮. মাংসাহারী- এদের শরীরের তাপমাত্রা কম, কারণ মাংসাহারীদের BMR (Basic Metabolic Rate) শাকাহারীদের থেকে কম।
শাকাহারী- মানুষের শরীরের তাপমাত্রা শাকাহারী প্রাণীদের কাছাকাছি।
৩৯. মাংসাহারী- দুটি পাত্র নিন, একটিতে মাংস রাখুন এবং অন্যটিতে শাকাহার রাখুন, তাহলে মাংসাশী প্রাণী মাংস বেছে নেবে।
শাকাহারী- মানব শিশু শাকাহারকে বেছে নেবে।
উপরোক্ত তথ্য অনুসারে, মানবদেহের গঠন কোনোরূপ ব্যতিক্রম ছাড়াই ১০০% শাকাহারী প্রাণীদের শরীরের গঠনের সাথে মেল খায় এবং খাদ্য দেহের গঠন অনুযায়ী নির্ধারিত হয়, তাই মানুষের খাদ্য হলো শাকাহার, মাংসাহার কখনোই নয়। শাকাহার ভোজন করার ব্যাপারে আমাদের নিশ্চিত হওয়া উচিত এবং মাংসাহার খাবারের কারণে অনেক ধরনের ক্ষতি হয় তাই এর থেকে দূরে থাকতে হবে।
শাকাহারে মানবের কল্যাণ আর মাংসাহারে বিনাশ। প্রকৃতির সিদ্ধান্তকে উপেক্ষা করে বিনাশ থেকে বাঁচার কোনো পথ নেই।
👏 লেখার মাধ্যমে যদি কোন ভূল হয় সবাই ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।
University of Missouri, Columbia র এই research paper টি পড়ুন ।
উদ্ভিদ এর structure ও ক্রিয়া সম্পূর্ণ অন্য । যার নিজস্ব কোনো সাধন নাই । যখন আপনি ঘুমিয়ে আছেন তার সাথেও এর কোনো তুলনা হয় না। আপনার ঘুম অবস্থায় হার্ট, digestive system, Nervous System , ব্রেন সব কিছুই কাজ করছে। এটি পড়লে উদ্ভিদ বিষয়ে ব্যাপার টি আপনার কাছে পরিষ্কার হবে।

No comments:

Post a Comment

ধন্যবাদ

বৈশিষ্ট্যযুক্ত পোস্ট

যজুর্বেদ অধ্যায় ১২

  ॥ ও৩ম্ ॥ অথ দ্বাদশাऽধ্যায়ারম্ভঃ ও৩ম্ বিশ্বা॑নি দেব সবিতর্দুরি॒তানি॒ পরা॑ সুব । য়দ্ভ॒দ্রং তন্ন॒ऽআ সু॑ব ॥ য়জুঃ৩০.৩ ॥ তত্রাদৌ বিদ্বদ্গুণানাহ ...

Post Top Ad

ধন্যবাদ