বেদপাঠ প্রণালী
অনুবাদ : হে মনুষ্যগণ আমি যে রূপে ব্রাক্ষণ ,ক্ষত্রিয় ,বৈশ্য ,শূদ্র, স্ত্রীলোক এবং অন্যান্য সমস্ত জনগনকে এই কল্যাণদায়িনী পবিত্র বেদবাণী বলিতেছি , তোমরাও সেই রূপ কর। যেমন বেদবাণীর উপদেশ করিয়া আমি বিদ্বানদের প্রিয় হয়েছি , তোমরাও সেইরূপ হও। আমার ইচ্ছা বেদ বিদ্যা প্রচার হোক । এর দ্বারা সকলে মোক্ষ এবং সুখ লাভ করুক
ওম্ শম্
यथे॒मां वाचं॑ कल्या॒णीमा॒वदा॑नि॒ जने॑भ्यः। ब्र॒ह्म॒रा॒ज॒न्या᳖भ्या शूद्राय॒ चार्या॑य च॒ स्वाय॒ चार॑णाय च। प्रि॒यो दे॒वानां॒ दक्षि॑णायै दा॒तुरि॒ह भू॑यासम॒यं मे॒ कामः॒ समृ॑ध्यता॒मुप॑ मा॒दो न॑मतु ॥२ ॥
पद पाठ
यथा॑। इ॒माम्। वाच॑म्। क॒ल्या॒णीम्। आ॒वदा॒नीत्या॒ऽवदा॑नि। जने॑भ्यः। ब्र॒ह्म॒रा॒ज॒न्या᳖भ्याम्। शूद्राय॑। च॒। अर्या॑य। च॒। स्वाय॑। च॒। अर॑णाय। प्रि॒यः। दे॒वाना॑म्। दक्षि॑णायै। दा॒तुः। इ॒ह। भू॒या॒स॒म्। अ॒यम्। मे॒। कामः॑। सम्। ऋ॒ध्य॒ता॒म्। उप॑। मा॒। अ॒दः। न॒म॒तु ॥२ ॥
यजुर्वेद अध्याय:26 मन्त्र:2
पदार्थान्वयभाषाः -
हे मनुष्यो ! मैं ईश्वर (यथा) जैसे (ब्रह्मराजन्याभ्याम्) ब्राह्मण, क्षत्रिय (अर्याय) वैश्य (शूद्राय) शूद्र (च) और (स्वाय) अपने स्त्री, सेवक आदि (च) और (अरणाय) उत्तम लक्षणयुक्त प्राप्त हुए अन्त्यज के लिए (च) भी (जनेभ्यः) इन उक्त सब मनुष्यों के लिए (इह) इस संसार में (इमाम्) इस प्रगट की हुई (कल्याणीम्) सुख देनेवाली (वाचम्) चारों वेदरूप वाणी का (आवदानि) उपदेश करता हूँ, वैसे आप लोग भी अच्छे प्रकार उपदेश करें। जैसे मैं (दातुः) दान देने वाले के संसर्गी (देवानाम्) विद्वानों की (दक्षिणायै) दक्षिणा अर्थात् दान आदि के लिये (प्रियः) मनोहर पियारा (भूयासम्) होऊँ और (मे) मेरी (अयम्) यह (कामः) कामना (समृध्यताम्) उत्तमता से बढ़े तथा (मा) मुझे (अदः) वह परोक्षसुख (उप, नमतु) प्राप्त हो, वैसे आप लोग भी होवें और वह कामना तथा सुख आप को भी प्राप्त होवे ॥२ ॥
भावार्थभाषाः -इस मन्त्र में उपमालङ्कार है। परमात्मा सब मनुष्यों के प्रति इस उपदेश को करता है कि यह चारों वेदरूप कल्याणकारिणी वाणी सब मनुष्यों के हित के लिए मैंने उपदेश की है, इस में किसी को अनधिकार नहीं है, जैसे मैं पक्षपात को छोड़ के सब मनुष्यों में वर्तमान हुआ पियारा हूँ, वैसे आप भी होओ। ऐसे करने से तुम्हारे सब काम सिद्ध होंगे ॥२ ॥
প্রিয়ো দেবানাং দক্ষিণায়ৈ দাতুরিহ, ভূয়াসময়ং মে কামঃ সমৃধ্যতামুপ মাদো নমতু ।। (যজুর্বেদ ২৬/২)
হে মনুষ্যগণ আমি যে রূপে ব্রাক্ষণ, ক্ষত্রিয়, বৈশ্য, শূদ্র, স্ত্রীলোক এবং অন্যান্য সমস্ত জনগনকে এই কল্যাণদায়িনী পবিত্র বেদবাণী বলিতেছি, তোমরাও সেই রূপ কর। যেমন বেদবাণীর উপদেশ করিয়া আমি বিদ্বানদের প্রিয় হয়েছি, তোমরাও সেইরূপ হও। আমার ইচ্ছা বেদ বিদ্যা প্রচার হোক। এর দ্বারা সকলে মোক্ষ এবং সুখ লাভ করুক। অর্থাৎ বেদ পাঠে সকল মনুষ্যের অধিকার।
ওম্ সর্বদা প্লুতস্বরে উচ্চারণ করা উচিৎ।--অষ্টাধ্যায়ী ব্যাকরণ-8/2/27
প্লুতস্বর=ইহাকে ত্রিমাত্র স্বর বলে।দূর থেকে ডাকার জন্য,গানে ও কান্নার সময় প্লুতস্বরের ব্যবহার হয়।
হ্রস্বস্বর "অ"-কার উচ্চারণ করতে যত সময় লাগে, দীর্ঘস্বর "আ"-কার উচ্চারণ করতে তার দ্বিগুণ সময় লাগে এবং প্লুতস্বর উচ্চারণ করতে এই হ্রস্বস্বরের তিনগুণ সময় লাগে অর্থাৎ তিনটি "অ"বর্ণ ঠিক পরপর সহজে উচ্চারণ করতে যত সময় লাগে ঠিক তত সময় লাগবে প্লুতস্বরে ও৩ম্ উচ্চারণ করতে।
ও৩ম্=অ+অ+অ(তিনটি অ উচ্চারণ করতে যতটা সময় লাগে)।
তাহলে,ওম্ এর মাঝখানে যে,৩ অক্ষরটি ব্যবহৃত হয় তা হল,প্লুতস্বরের চিহ্ন।
বেদমন্ত্র কোনও রূপেই বিস্মৃত না হয় এবং ইহার মধ্যে কিছুই প্রক্ষিপ্ত না হইতে পারে এ জন্য বেদ পাঠের দুই প্রণালী আছে – ‘নির্ভূজ’ সংহিতা ও ‘প্রতৃণ’ সংহিতা। মন্ত্রটি যেরূপ আছে ঠিক সেইরূপ পাঠ করিলে তাহা ‘নির্ভূজ’ সংহিতা। “অগ্নি মীডে পুরোহিতং যজ্ঞস্য দেবং ঋত্বিজম” এই মন্ত্রটিকে ‘অগ্নি মীডে পুরোহিতং যজ্ঞস্য দেবং ঋত্বিজম্’ ঠিক এইরূপ অবিকৃতভাবে পাঠ করিলেই তাহাকে ‘নির্ভুজ’ সংহিতা বলে।
‘প্রতৃণ’ সংহিতার বহু ভেদ আছে। যেমন পদপাঠ, ক্রমপাঠ, জটাপাঠ, ধনপাঠ ইত্যাদি। সন্ধি ও বিরাম আদি বিচার করিয়া পাঠ করিলে তাহার নাম ‘পদপাঠ’, যেমন- ‘অগ্নিম, ঈডে, পুরোহিতম, যজ্ঞস্য, দেবম্, ঋত্বিজম্’।
‘ক্রমপাঠ’ এইরূপ, যেমন –‘অগ্নিং ঈডে, ঈডে পুরোহিতম্, পুরোহিতং যজ্ঞস্য, যজ্ঞস্য দেবম্, দেবং ঋত্বিজম্।
‘জটাপাঠ’ এইরূপ যেমন –অগ্নিং ঈডে, ঈডে অগ্নিম্। অগ্নিং ঈডে, ঈডে পুরোহিতম্, পুরোহিতং ঈডে, ঈডে পুরোহিতম্। পুরোহিতং যজ্ঞস্য, যজ্ঞস্য পুরোহিতম্, পুরোহিতং যজ্ঞস দেবম্, দেবং যজ্ঞস্য, যজ্ঞস্য দেবম্, দেবং ঋত্বিজম্, ঋত্বিজং দেবম্, দেবং ঋত্ত্বিজম্। ‘ধনপাঠ’ এইরূপ যেমন – অগ্নিং ঈডে, ঈডে অগ্নিম, অগ্নিং ঈডে পুরোহিতম্; পুরোহিতং ঈডে অগ্নিম্; অগ্নিং ঈডে পুরোহিতম্; ঈডে পুরোহিতম্, পুরোহিতং ঈডে, ঈডে পূরোহিতং যজ্ঞস্য, যজ্ঞস্য পুরোহিতং ঈডে, ঈডে পুরোহিতম্ যজ্ঞস্য, পুরোহিতং যজ্ঞস্য, যজ্ঞস্য পুরোহিতং পুরোহিতং যজ্ঞস্য দেবম্, যজ্ঞস্য পুরোহিতম্, পুরোহিতং যজ্ঞস্য দেবম্, যজ্ঞস্য দেবম্। দেবং যজ্ঞস্য, যজ্ঞস্য দেবং ঋত্বিজম্, ঋত্বিজং দেবং যজ্ঞস্য, যজ্ঞস্য দেবং ঋত্বিজম্ ইত্যাদি।
বেদার্থ জানিবার জন্য শিক্ষা, কল্প, ব্যাকরণ, নিরুক্ত, ছন্দ ও জ্যোতিষ এই ‘ষড়ঙ্গ’ প্রবর্তিত হইয়াছে। ‘শিক্ষা’ ছয় প্রকারের –শব্দ, শব্দাঘাত, শব্দাবয়ব, শব্দাবয়বাঘাত, স্বর মাধুর্য ও শব্দ সন্ধি। শিক্ষা গ্রন্থে এই সকল শিক্ষা দেওয়া হয়। শ্রৌত, গৃহ্য, ধর্ম ও শল্ব এই চারি সূত্রের নাম ‘কল্প’। ইহাতে যজ্ঞ প্রয়োগ বিধি কল্পিত হইয়াছে বলিয়া ইহার নাম কল্প। আপস্তন্ব, বৌধায়ন, আশ্বলায়ন, প্রভৃতি ঋষিরা সূত্রাকারে কল্প গ্রন্থ প্রণয়ন করিয়াছেন।
শ্রোত সূত্রে ধর্মানুষ্ঠান ও যজ্ঞ সন্বন্ধের বিধান; গৃহ্য সূত্রে গার্হস্থ্য বিধি, গর্ভাধান হইতে অন্ত্যেষ্টি এই ষোড়শ সংস্কার ও পঞ্চ মহাযজ্ঞের বিধান, ধর্মসূত্রে দায়ভাগ, শাসন বিধি কর্মবিধি ও চারিবর্ণের আচার বিচার এবং শূল্ব সূত্রে বেদীরচনা, অগ্নি কুণ্ড রচনাদি বর্ণিত আছে। শূল্ব সূত্রের সন্বন্ধ শ্রৌত্র সূত্রেরই সঙ্গে। বেদের যে যে মন্ত্র, যে যে ছন্দে প্রকাশিত, সেই সেই মন্ত্রে সেই সেই ছন্দ।
ছন্দ তিন প্রকারের – ছন্দ, অতিছন্দ ও বিছন্দ। এই তিনের প্রত্যেকটিতে ৭টি করিয়া ভেদ আছে।
ছন্দ সাতটি, যথা- গায়ত্রী, উষ্ণিক্, অনুষ্টুপ্, বৃহতী, পঙক্তি, ত্রিষ্টুপ ও জগতী।
অতিছন্দও সাতটি।
যথা – অতিজগতী, শক্করী, অতিশক্করী, অষ্টি, অত্যষ্টি, ধৃতি ও অতিধৃতি।
বিছন্দও সাতটি, যথা- কৃতি, প্রকৃতি, আকৃতি, বিকৃতি, সংকৃতি, অতিকৃতি ও উৎকৃতি।
এই ২১টি ছন্দের প্রত্যেকটিতে বিভিন্ন সংখ্যক অক্ষরযুক্ত থাকে। গায়ত্রীতে ২৪ অক্ষর, উষ্ণিকে ২৭টি, অনুষ্টুপে ৩২টি, বহতীতে ৩৬টি, পংক্তিতে ৪০টি, ত্রিষ্টুপে ৪৪ টি, জগতীতে ৬০টি, অত্যষ্টিতে ৬৮টি, ধৃতিতে ৭২টি, অতিধৃতিতে ৭৬টি, কৃতিতে ৮০টি, প্রকৃতিতে ৮৪টি, আকৃতিতে ৮৮টি, বিকৃতিতে ৯২টি, সংকৃতিতে ৯৬টি, অতিকৃতিতে ১০০টি এবং উৎকৃতিতে ১০৪টি অক্ষর থাকে। এই ২১ ছন্দের মধ্যে কোনটিতে এক অক্ষর কম হইলে তাহাতে নিচৃৎ এবং এক অক্ষর বেশী হইলে ভুরিজ বিশেষণ যুক্ত হয়। এই ২১ ছন্দের আর্ষী, দৈবী, আসুরী, প্রজাপত্যা, যাজুষী সাম্লী, আর্চী ও ব্রাহ্মী ভেদে ৮ ভেদ এবং বিরাট, নিচৃৎ, শুদ্ধা, ভূরিজ্ ও স্বরাট্ ভেদে ৪ ভেদ হয়। অতিছন্দ ও বিছন্দেরও ভেদ হয়। এইভাবে নানা পদ যোজনা ও অক্ষর যোজনা দ্বারা এই সব ছন্দের না না বিভেদ করা হইয়াছে।
কর্ম কাণ্ডের জন্য সূত্র গ্রন্থ রচিত হইয়াছে। ঋগ্বেদের আশ্বলায়ন ও সাংখ্যায়ন শ্রৌত সূত্র এবং ইহাদের উভয়ের গৃহ্য সূত্রও পাওয়া যায়। শৌনকের এক প্রতিশাখ্য সূত্র আছে।
যজুর্বেদের কঠ, মানব, লৌগাক্ষি, কাত্যায়ন, ভারদ্বাজ, আপস্তন্ব, হিরণ্যকেশী বাধুল, বৈখানস, মৈত্রা বরুণী ও ছাগল শ্রৌতসূত্র পাওয়া যায়। গৃহ্যসূত্র ও এতগুলিই আছে। শুক্ল যজুর্বেদের কাত্যায়ন ও বৈজপায় শ্রোতসূত্র, পারস্কর ও কাতীয় গৃহ্যসূত্র। কাত্যায়নের এক প্রতি শাখায় আছে।
সামবেদের পঞ্চবিংশ ব্রাহ্মণের এক শ্রৌতসূত্র ও এক গৃহ্যসূত্র আছে। দ্বিতীয় –লাট্যায়ন শ্রোতসূত্র বা মশকসূত্র, তৃতীয় –দ্রাক্ষায়ণ শ্রৌত্রসূত্র, চতুর্থ – অনুপদ সূত্র, পঞ্চম-গোভিল কৃত পুষ্প সূত্র এবং তাণ্ডা, লক্ষণ, উপগ্রন্থ, কল্পানুপদ, অনুস্তোত্র ও ক্ষুদ্র সূত্র আছে। ইহার গৃহ্য সূত্রের মধ্যে গোভিল গৃহ্যসূত্র; কাত্যায়ন কর্মদীপ, খদির গৃহ্যসূত্র ও পিতৃমেধসূত্র আছে।
অর্থববেদের কৌশিক, বৈতান, নক্ষত্র কল্প, অঙ্গিরস ও শান্তিকল্প সূত্র আছে।
যাহা দ্বারা ভাষার সম্যক জ্ঞান লাভ হয় তাহার নাম ‘ব্যাকরণ’। পাণিনির অষ্টাধ্যায়ী ব্যাকরণই বর্তমানে একমাত্র বৈদিক ব্যাকরণ। মহর্ষি পতঞ্জলি ইহার উপর মাহভাষ্য নামে এক ভাষ্য রচনা করিয়াছিলেন। পাণিনির পূর্বেও বহু বৈদিক বৈয়াকরণ বিদ্যমান ছিলেন, তন্মধ্যে সাকল্য, সেনাকাশ, স্ফোটায়ন, গার্গ্যেয়, গালব, শত্রুবর্মন্, ভারদ্বাজ, অপিশালী ও কাশ্যপের নাম উল্লেখযোগ্য। ইহাদের ব্যাকরণ হইতেই পাণিনি সুত্রাকারে অষ্টাধ্যায়ী প্রণয়ন করিয়াছিলেন।
নিরক্ত গ্রন্থে বৈদিক শব্দ ও বাক্য সমূহের অর্থ সুস্পষ্ট করা হইয়াছে। যাস্কমুনি কৃত অতি প্রাচীন ও প্রসিদ্ধ নিরুক্ত গ্রন্থই বর্তমানে আদৃত হইতেছে। যাস্কের পূর্বেও কৌৎস, শাকপুণি ঔর্ণনাভ ও স্থোলাষ্টীরী প্রভৃতি নিরুক্তকার বিদ্যমান ছিলেন। যাস্ক খৃষ্টপূর্ব পঞ্চম শতাব্দীর লোক। নিঘন্টু নিরুক্তের অঙ্গীভূত। নিঘন্টু বেদের অর্থ প্রকাশক শব্দকোষ বা অভিধান মাত্র। দেবরাজ যজ্বা নিঘন্টুর টীকা লিখিয়াছেন এবং দুর্গাচার্য নিরুক্তের বৃত্তি প্রণয়ন করিয়াছেন। ছন্দ সন্বন্ধে পূর্বেই বর্ণনা করা হইয়াছে।
‘জ্যোতিষ’ গ্রন্থে আকাশস্থ জ্যোতিষ্ক মণ্ডলীর গতি বিধি সন্বন্ধে সম্যক জ্ঞান লাভ করা যায়।
‘উপাঙ্গ’ ছয়টি। বেদের ছয় উপাঙ্গের নাম ষড়দর্শন বা ষট্ শাস্ত্র। গৌতমের ন্যায়, কণাদের বৈশেষিক, কপিলের সাংখ্য, পতজ্ঞলির যোগ, জৈমিনির পূর্ব মীমাংসা এবং ব্যাসদেবের ব্রহ্মসূত্র বা উত্তর মীমাংসা (বেদান্ত)। উপাঙ্গের তীক্ষ্ণ বিচার দ্বারা বেদের সিদ্ধান্ত প্রমাণিত হইয়াছে।
‘উপবেদ’ চারি প্রকারের। ধনুর্বেদ বা যুদ্ধবিদ্যা, গন্ধর্ববেদ বা সঙ্গীত বিদ্যা, অর্থবেদ বা শিল্প বিদ্যা, আর্য়ুবেদ বা চিকিৎসা বিদ্যা।
বেদ পড়ার অধিকার সমস্ত মানুষের জন্য।যজুর্বেদে বলা হয়েছে-
যথেমাং বাচং কল্যানীমাবদানি জনেভ্যঃ ।
ব্রহ্ম রাজন্যাভ্যাং শূদ্রায় চার্য্যায় চ স্বায় চারণায় চ।।
প্রিয়ো দেবানাং দক্ষিণায়ৈ দাতুরিহ, ভূয়াসময়ং মে কামঃ সমৃধ্যতামুপ মাদো নমতু ।। যজুর্বেদ, ২৬/২
অথ পঠন পাঠন বিধিঃ
যাহা প্রথমতঃ পাণিনি মুনি কৃত শিক্ষা' সূত্ররূপ আছে, উহার রীতি শিক্ষা করিবে। অর্থাৎ এই অক্ষরের এই স্থান, এই প্রযত্ন, এই কারণ। যথা ‘প’ উচ্চারণের স্থান ওষ্ঠ, প্রযত্ন সৃষ্ট এবং প্রাণ ও জিহ্বার ক্রিয়াকে 'করণ’ বলে। এইভাবে মাতা, পিতা এবং আচাৰ্য যথােযােগ্যভাবে সকল অক্ষরের উচ্চারণ বিধি পূর্বক শিক্ষা দিবেন।
তদনন্তর ব্যাকরণ অর্থাৎ প্রথমে অষ্টাধ্যায়ীর সুত্রগুলি পাঠ, যথা বৃদ্ধিরাদৈ’। (অষ্টাধ্যায়ী অ0 ১। পা১ সূ১) পরে পদচ্ছেদ, যথা বৃদ্ধিঃ, আং, ঐচ বা আদৈ ইহার পর 'সমাসআচ্চ ঐচ্চ আদৈ এবং অর্থ যথা ‘আদৈচাং বুদ্ধি-সংজ্ঞা ক্রিয়তে' অর্থাৎ আ, ঐ, ঔ ইহার বৃদ্ধি সংজ্ঞা (করা হয়), 'তঃ পরাে য়স্মাৎ স পরস্তাদপি পরস্তপরঃ’ ‘ত' কার যাহার পরে থাকে এবং যাহা ‘ত’ কার হইতেও পরে থাকে তাহাকে “তপর” বলে। ইহাতে সিদ্ধ হইল যে, ‘আকারের পর এবং ‘'য়ের পরে “ঐ” উভয়ই “তপর”। ত’পরের প্রয়ােজন এই যে হ্রস্ব ও প্লুতের বৃদ্ধি। সংজ্ঞা হইল না।
উদাহরণ- (ভাগঃ) এস্থলে ‘ভজ’ ধাতুর উত্তর ‘ঘ’ প্রত্যয়ের পর ‘ঘ’ ‘এ’ এর ‘ই’ৎ সংজ্ঞা হইয়া লােপ হইল। অতঃপর ‘ভজ+ অ, এস্থলে জ’ করের পূর্ববর্তী “ভ” কারােত্তর “অ” কারের বৃদ্ধি সংজ্ঞক “আ” কার হইল। সুতরাং “ভাজ” হইল। পুনরায় জ’ স্থানে ‘গ’ হইয়া অ’কারের সহিত মিলিয়া “ভাগঃ” এইরূপ প্রয়ােগ হইল।
অধ্যায়ঃ”, এস্থলে অধিপূর্বক ইঙ’ ধাতুর হ্রস্ব ‘ই’ স্থানে ‘ঘ’ প্রত্যয়ের পর ঐ’ বৃদ্ধি এবং তৎস্থলে আয় মিলিত হইয়া অধ্যায়ঃ হইল।
‘নায়ক’ এস্থলে নী’ ধাতুর দীর্ঘ ঈকারের স্থানে ‘ল’ প্রত্যয়ের পরে ঐ’বৃদ্ধি (এবং) পরে উহা ‘আয়’ হইবার পর মিলিত হইয়া ‘নায়ক’ হইল।
পুনঃ স্তাবকঃ”, এস্থলে ‘স্তু’ ধাতুর উত্তর ণুল' প্রত্যয় হইয়া হ্রস্ব উকারের স্থানে ঔ’ বৃদ্ধি (এবং) ‘আব’ আদেশ হইয়া আকারের সহিত মিলিত হইয়া 'স্তাবকঃ হইল।
(কারকঃ) কৃঞ' ধাতুর উত্তর ‘গুল' প্রত্যয়, তাহার ণ, ল এর ইৎ সংজ্ঞা হইয়া লােপ, 'বু’ এর স্থানে ‘অক’ আদেশ এবং ঋকারের স্থানে ‘আর বুদ্ধি হইয়া 'কারকঃ’ সিদ্ধ হইল।
যে যে সূত্র পূর্বাপর প্রযুক্ত হয়, সেইগুলির কাৰ্য্য প্রভৃতি বলিয়া দিতে হইবে এবং শ্লেট অথবা কাষ্ঠ ফলকে দেখাইয়া মূলরূপ লিখিয়া; যথা—‘ভজ+ঘঞ+সু' এইরূপে রাখিয়া প্রথমে ধাতুর অকারের লােপ, পরে ঘৃ কারের লােপ পরে ‘ঞ’- র লােপ হইয়া-ভজ + অ + সু' এইরূপ রহিল। পুনরায় (অকারের আ বৃদ্ধি এবং) ‘জ’ এর স্থানে ‘গ’ হওয়াতে ‘ভাগ্+অ+সু' পুনঃ অকারের সহিত মিলিয়া যাওয়াতে ‘ভাগ+সু’ রহিল। এবার উকারের ‘ই’ সংজ্ঞা, 'স' এর স্থানে ‘রু ' হইয়া পুনঃ উকারের ইৎ সংজ্ঞা লােপ পাওয়াতে ‘ভাগর’ হইল। এইবার রেফের স্থানে (ঃ) বিসর্জনীয় হইয়া ‘ভাগঃএই রূপ সিদ্ধ হইল।
যে যে সুত্রানুসারে যে যে কাৰ্য্য হয় সেই সেই সুত্রের বারংবার পাঠ করাইয়া এবং বারংবার লিখাইয়া অভ্যাস করাইতে থাকিবে। এইরূপ পঠন পাঠন দ্বারা অতি শীঘ্র দৃঢ় বােধ হয়। একবার এইরূপে অষ্টাধ্যায়ী পড়াইয়া অর্থ সহিত ধাতুপাঠ এবং দশ ‘ল’ কারের রূপ তথা প্রক্রিয়া সহিত সূত্রগুলি উৎসর্গ অর্থাৎ সামান্যসূত্র শিক্ষা দিতে হইবে। যথা–কর্মণ্য’ (অষ্টা ৩।২।১) কর্ম-উপপদ যুক্ত থাকিলে ধাতু মাত্রেই অণ্ প্রত্যয় হয়। যথা—“কুম্ভকারঃ"। তাহার পর অপবাদ সূত্র শিক্ষা করাইতে হইবে। যথা—“আতোংনুপসর্গে কঃ’ (অষ্টা০ ৩। ২। ৩।) উপসর্গ ভিন্ন কর্ম উপপদ যুক্ত থাকিলে আকারান্ত ধাতুর উত্তর ‘ক’ প্রত্যয় হইবে। অর্থাৎ যাহা বহুব্যাপক যথা, কর্ম উপপদবিশিষ্ট হইলে ধাতুর উত্তর “অণ” প্রাপ্ত হয়। তদপেক্ষা বিশেষ অর্থাৎ অল্পবিষয় সেই পূর্ব সূত্রের বিষয় হইতে আকারন্ত ধাতুর ‘ক’ প্রত্যয় গ্রহণ করিল। উৎসর্গ বিষয়ে যেরূপ অপবাদ সুত্রের প্রবৃত্তি হয়, সেইরূপ অপবাদ সূত্র বিষয়ে উৎসর্গ সুত্রের প্রবৃত্তি হয় না। যথা, চক্রবর্তী রাজার রাজ্যাধীন মালিক এবং ভূস্বামী থাকে, কিন্তু মাগুলিক রাজার অধীনে চক্রবর্ত্তী রাজা থাকে না।
এইরূপেই মহর্ষি পাণিনি সহস্র শ্লোকের মধ্যে অখিল শব্দ, অর্থ ও সম্বন্ধ বিষয়ক বিদ্যা প্রতিপাদন করিয়াছেন। ধাতু পাঠের পর উণাদিগণ পাঠের সময় সমস্ত সুৰন্ত বিষয় উত্তমরূপে পড়াইয়া, পুনরায় দ্বিতীয়বার সংশয়, সমাধান, বাৰ্ত্তিক, কারিকা এবং পরিভাষার প্রয়ােগ সহকারে অষ্টাধ্যায়ীর দ্বিতীয়ানুবৃত্তি পড়াইবে। তদনন্তর মহাভাষ্য পড়াইবে। যদি কোন বুদ্ধিমাণ, পুরুষকার-সম্পন্ন, অকপট, ও বিদ্যোতিকামী ব্যক্তি নিত্য পঠন-পাঠন করে, তবে সে দেড় বৎসরে অষ্টাধ্যায়ী এবং দেড় বৎসরে মহাভাষ্য অধ্যয়ন করিয়া তিন বৎসরে পূর্ণ বৈয়াকরণ হইয়া বৈদিক ও লৌকিক শব্দাবলীর ব্যাকরণজ্ঞানের সাহায্যে অন্য শাস্ত্রগুলির শীঘ্র সহজে পড়িতে ও পড়াইতে সক্ষম হইবে।
কিন্তু, ব্যাকরণে যেমন কঠিন পরিশ্রম করিতে হয়, অন্য শাস্ত্রে সেরূপ পরিশ্রমের প্রয়ােজন হয় না। এইগুলি অধ্যয়ন করিলে তিন বৎসরে যে পরিমাণ জ্ঞান জন্মিবে, কুগ্রন্থ অর্থাৎ সারস্বত, চন্দ্রিকা, কৌমুদী এবং মনােরমাদি অধ্যয়ন করিলে পঞ্চাশ বৎসরেও সে পরিমাণ জ্ঞান জন্মিতে পারিবে না। কারণ, মহাশয় মহর্ষিগণ যেরূপে গম্ভীর বিষয় গুলি সরল ভাবে স্ব স্ব গ্রন্থে প্রকাশ করিয়াছেন, ক্ষুদ্রাশয় মনুষ্যগণের কল্পিত গ্ৰন্থে সেইরূপ প্রকাশ করা কীরূপে সম্ভব হইতে পারে? মহর্ষিদের ভাব যথাসম্ভব সুগম এবং অল্প সময়ে আয়ত্ত করা যায়। কিন্তু ক্ষুদ্রাশয় ব্যক্তিগণের ইচ্ছা এই যে, যতদূর সম্ভব রচনাকে কঠিন করা, যাহাতে বহু পরিশ্রমের সহিত পাঠ করিয়া অল্প লাভ হয়। ইহা যেন পাহাড় কাটিয়া কপর্দক লাভ। আর আর্য গ্রন্থ পাঠ করা কীরূপ— উহা যেন একটি বার ডুব দিয়াই মূল্যবান মণি-মুক্তা লাভ করা।
ব্যাকরণ পাঠ করিয়া ছয় বা আট মাসে যাস্কমুনি কৃত ‘নিঘটু’ ও ‘নিরুক্ত অর্থ সহিত পড়িবে ও পড়াইবে। অন্য নাস্তিক কৃত অমরকোষাদি অন্যান্য গ্রন্থে বহু বৎসর বৃথা নষ্ট করিবে না। তাহার পর পিঙ্গলাচার্যকৃত ছন্দো গ্রন্থ' সাহায্যে বৈদিক ও লৌকিক ছন্দের পরিজ্ঞান, আধুনিক নবীন রচনা এবং শ্লোক রচনার প্রণালীও যথােচিত ভাবে শিখিবে। এইরূপে গ্রন্থ, শ্লোক রচনা এবং বিস্তার চার মাসে শিক্ষা করিয়া পঠন পাঠনে সমর্থ হইবে। বৃত্তরত্নাকর প্রভৃতি অল্পবুদ্ধি প্রকল্পিত সমূহে বহু বৎসর নষ্ট করিবে না। | অতঃপর মনুস্মৃতি, বাল্মিকী রামায়ণ এবং মহাভারতের উদ্যোগ পর্বান্তগত বিদুরনীতি প্রভৃতি উৎকৃষ্ট প্রকরণগুলি পাঠ করিবে। ইহাতে দুষ্ট ব্যসন দূর হইবে এবং উৎকর্য ও সভ্যতা লাভ হইবে। অধ্যাপকগণ কাব্যরীতি অনুসারে অর্থাৎ পদচ্ছেদ, পদার্থোক্তি, অন্বয়, বিশেষ্য, বিশেষণ ও ভাবার্থ বুঝাইতে থাকিবেন এবং বিদ্যার্থীগণ এই সকল শিক্ষা করিতে থাকিবে। এক বৎসরের মধ্যে এইগুলি অধ্যয়ন শেষ করিবে। | তাহার পর পূর্ব মীমাংসা, বৈশেষিক, ন্যায়, যােগ, সাংখ্যও বেদান্ত—অর্থাৎ যতদূর সম্ভব ততদূর ঋষিকৃত ব্যাখ্যা অথবা শ্রেষ্ঠ বিদ্বাদিগের সরল ব্যাখ্যা সহ পঠন পাঠন করিবে। কিন্তু বেদান্তসূত্র অধ্যয়নের পূর্বে ঈশ, কেন, কঠ, প্রশ্ন, মণ্ডুক, মাগুক, ঐতরেয়, তৈত্তিরী , ছান্দোগ্য এবং বৃহদারণ্যক—এই দশ উপনিষদ্ অধ্যয়ন করিবে। ছয় শাস্ত্রের সূত্র সমূহের ভাষ্য ও বৃত্তিসহ সূত্র দুই বৎসরের মধ্যে পড়াইবে এবং পড়িবে। ইহার পর ছয় বৎসরের মধ্যে চারি ব্রাহ্মণ, অর্থাৎ ঐতরেয়, শতপথ, সাম, গােপথ ব্রাহ্মণ, চর্তুবেদ, স্বর, শব্দ সহিত অর্থ, সম্বন্ধ এবং ক্রিয়াজ্ঞান সহিত অধ্যয়ন করিবে। এ বিষয়ে প্রমাণ।
স্থাণুরয়ং ভারাহারঃ কিলাভূদীত্য বেদংন বিজানাতি য়োংর্থম।
য়োংর্থজ্ঞইৎসকলং ভদ্রমশ্নুতে নাকমেতি নবিধূতপাপমা।।
নিরুক্ত ১/১৮
অর্থ :- এই মন্ত্রটি নিরুক্তে আছে। যিনি বেদের স্বর ও পাঠমাত্র পড়িয়া অর্থ জানিতে অক্ষম, তিনি শাখা, পত্র এবং ফল পুষ্পের ভার বহনকারী বৃক্ষ ও ধান্যাদির ভার বহনকারী পশুর ন্যায় ভারবাহ অর্থাৎ ভার বহনকারী। আর যিনি বেদপাঠ করেন এবং বেদার্থ সম্যকরূপে জানেন, তিনিই সম্পূর্ণ আনন্দ প্রাপ্ত হইয়া দেহান্তের পর ডানবলে পাপমুক্ত হইয়া পবিত্র ধর্মাচরণ প্রতাপে সর্বানন্দ প্রাপ্ত হইয়া থাকেন।
উত ত্বঃ পশ্যন্ন দদর্শ বাচমুত ত্বঃ শৃন্বন্ন শৃণােত্যেনাম্। উতাে ত্বষ্মৈ তন্বং১ বিসস্রে জায়েব পত্য উশতী সুবাসা। ঋ০১০।৭১ |৪||
অর্থঃ- যে অবিদ্বান্ ব্যক্তি সে শুনিয়াও শুনেনা, দেখিয়াও দেখে না, বলিয়াও বলেনা, অর্থাৎ অবিদ্বান ব্যক্তিরা এই বিদ্যাবাণীর রহস্য জানিতে পারে না। কিন্তু, যেমন সুন্দর বস্ত্রালঙ্কার পরিধান করিয়া স্বীয় পতিকে কামনা করিয়া স্ত্রী স্বীয় পতির নিকট নিজ শরীর ও স্বরূপ প্রকাশ করিয়া থাকে, তাপ বিদ্যাও শব্দ, অর্থ এবং সম্বন্ধ জ্ঞাত বিদ্বানের নিকট স্বীয় স্বরূপ প্রকাশ করিয়া থাকে, কিন্তু বিদ্যাহীন ব্যক্তির নিকট করে না।
ঋচো অক্ষরে পরমে বােমান্যস্মিন্দেবা অধি বিশ্বে নিযেদুঃ।। য়স্তন্ন বেদ কিমৃচা করিষ্যতি য় ইদ্ধিদুস্ত ইমে সমাসতে৷ ঋ০ ১। ১৬৪/৩৯ ।
অর্থঃ- যে ব্যাপক, অবিনাশী এবং সর্বশ্রেষ্ঠ পরমেশ্বর সমস্ত বিদ্বান ব্যক্তি এবংপৃথিবী সুৰ্য্যাদি সব লােক অবস্থিত, যাহাতে সকল বেদের মুখ্য তাৎপৰ্য, যিনি সেই ব্রহ্মকে জানেন না, তিনি কি ঋগ্বেদাদি হইতে কোন আনন্দ প্রাপ্ত হইতে পারেন? না, না। কিন্তু যাঁহারা বেদাধ্যয়ন পূর্বক ধম্মত্মাি ও যােগী হইয়া সেই ব্রহ্মাকে জানেন, তাহারা সকলে পরমেশ্বরে স্থিতি লাভ করিয়া মুক্তিরূপী পরমানন্দ লাভ করেন। এই জন্যে অর্থজ্ঞান সহকারেই পঠন পাঠন হওয়া আবশ্যক।
এইরূপে সকল বেদ অধ্যয়নের পর আয়ুর্বেদ অর্থাৎ চরক এবং সুশ্রত প্রভৃতি ঋষি প্রণীত চিকিৎসা শাস্ত্রের অর্থ, ক্রিয়া, শস্ত্র, ছেদন, ভেদন, লেপ, চিকিৎসা, নিদান, ঔষধ, পথ্য, শরীর, দেশ, কাল এবং বস্তুর গুণ, জ্ঞানপূর্বক জানিয়া ৪ (চার) বৎসরের মধ্যে পঠন পাঠ করিবে। অনন্তর ধনুর্বেদ অর্থাৎ রাষ্ট্র সম্বন্ধীয় কাৰ্য। ইহা দ্বিবিধ, প্রথম—নিজ রাজপুরুষ সম্বন্ধীয়, দ্বিতীয়—প্রজা সম্বন্ধীয়। রাজকার্যে সভা, সৈন্যাধ্যক্ষ শস্ত্ৰাস্ত্রবিদ্যা সম্বন্ধে জানিবে এবং নানাপ্রকার ব্যুহ রচনা অভ্যাস অর্থাৎ আজকাল যাহাকে কায়দ’ বলে, শত্রুর সহিত যুদ্ধকালে যাহা করিতে হয় তাহা সম্যকরূপে শিক্ষা করিবে। প্রজাপালন, প্রজাবৃদ্ধি প্রণালী শিক্ষা করিয়া ন্যায়ানুসারে প্রজাদিগকে সন্তুষ্ট রাখিবে। দুষ্টদিগের সমুচিত দণ্ডদান এবং শ্রেষ্ঠদিগের পালন সম্বন্ধে সর্ববিধ ব্যবস্থা শিক্ষা করিবে। | এই রাষ্ট্রবিজ্ঞান দুই বৎসরে শিক্ষা করিয়া গান্ধর্ববেদ যাহাকে ‘গানবিদ্যা’ বলে উহা এবং তৎসংক্রান্ত স্বর, রাগ, রাগিণী, সময়, তাল, গ্রাম, তান, বাদিত্র, নৃত্য এবং গীত আদি সম্যক্ররূপে শিক্ষা করিবে। কিন্তু প্রধানরূপে সামবেদের গান বাদ্যযন্ত্র সহকারে শিক্ষা করিবে এবং নারদ সংহিতা প্রভূতি আর্যগ্রস্থ অধ্যয়ন করিবে। কিন্তু লম্পট, বেশ্যা, বৈরাগীদিগের বিষয়াসক্তি উৎপন্নকারী গর্দভ শব্দবৎ ব্যর্থ-সঙ্গীতালাপ কখনও করিবে না।
অর্থবেদ যাহাকে 'শিল্পবিদ্যা’ বলে তাহার দ্বারা পদার্থসমূহের গুণ, বিজ্ঞান, ক্রিয়া, কৌশল, বিবিধ বস্তুনির্মাণ এবং পৃথিবী হইতে আকাশ পর্যন্ত যাবতীয় পদার্থবিষয়ক বিদ্যা অর্থাৎ ঐশ্বৰ্য্য বৰ্ধক সেই বিদ্যা শিক্ষা করিয়া এবং দুই বৎসরের মধ্যে জ্যোতিষ শাস্ত্র সূৰ্য্যসিদ্ধান্ত প্রভৃতি তদন্তৰ্গত বীজগণিত, অঙ্ক, ভূগােল, খগােল এবং ভূগর্ভ বিদ্যা সম্যক্রপে শিক্ষা করিবে। তাহার পর সর্ববিধ হস্তশিল্প ও যন্ত্রকলা প্রভৃতি শিক্ষা করিবে; কিন্তু গ্রহনক্ষত্র, জন্মপত্র, রাশি এবং মুহূর্ত প্রভৃতির ফল বিধায়ক যে সব গ্রন্থ আছে সেগুলিকে মিথ্যা জানিয়া কখনও পঠন পাঠন করিবে না, করাইবেও না।
বিদ্যার্থী এবং অধ্যাপকগণ এইরূপ চেষ্টা করিবেন যাহাতে বিংশ বা একবিংশ বৎসরের মধ্যে সর্ব প্রকার এবং উত্তম শিক্ষা লাভ করিয়া মনুষ্যগণ কৃতকৃত্য হইয়া সর্বদা আনন্দে থাকে। এই রীতি অনুসারে বিংশ বা একবিংশ বর্ষে যে পরিমাণ বিদ্যালাভ হইতে পারিবে অন্যরীতি অনুসারে একশত বৎসরেও সে পরিমাণে বিদ্যালাভ করিতে পারিবে না।
ঋষিপ্রণীত গ্রন্থ এই জন্য পাঠ করিবে যেহেতু তাহারা পরম বিদ্বান, সর্ব শাস্ত্রবিদ এবং ধর্মাত্মা ছিলেন। আর যাঁহারা অনৃষি অর্থাৎ অল্পশাস্ত্র পড়িয়াছেন ও যাহাদের আত্মা পক্ষপাতদুষ্ট তাহাদের রচিত গ্রন্থও সেইরূপ হইবে।
পূর্ব মীমাংসার ব্যাস মুনিকৃত ব্যাখ্যা, বৈশিষিকের গৌতম মুনিকৃত প্রশশুপাদ ভাষ্য, ন্যায় সূত্রের বাৎসায়ন মুনিকৃত ভাষ্য, পতজ্ঞলি মুনিকৃত সূত্রের ব্যাস মুনিকৃত ভাষ্য, কপিল মুনিকৃত সাংখ্য সূত্রের ভাণ্ডরিমুনিকৃত ভাষ্য, ব্যাস মুনিকৃত বেদান্ত সূত্রের বাৎস্যায়ন মুনিকৃত ভাষ্য, অথবা বৌধায়ন মুনিকৃত ভাষ্যবৃত্তি সহিত পড়িবে ও পড়াইবে। এই সকল সূত্রকে কল্প এবং অঙ্গের মধ্যেও গণনা করিবে। যেরূপ ঋক, যজুঃ, সাম এবং অথর্ব—এই চারি বেদ ঈশ্বরকৃত, তদ্রুপ ঐতরেয় শতপথ, সাম এবং গোপথ—এই চারি ব্রাহ্মণ; শিক্ষা, কন্স, ব্যাকরণ নিঘন্টু, নিরুক্ত, ছন্দ এবং জ্যোতিষ—এই ছয়টি বেদাঙ্গ। মীমাংসাদি ছয় শাস্ত্র বেদের উপাঙ্গ। আয়ুর্বেদ, ধনুর্বেদ, গান্ধর্ববেদ এবং অর্থবেদ এই চারিটি বেদের উপবেদ। এইগুলি ঋষি মুনিকৃত গ্রন্থ, এ সকলের মধ্যেও যেগুলি বেদ বিরুদ্ধ প্রতীত হইবে সেগুলিকে পরিত্যাগ করিবে। কারণ, বেদ ঈশ্বরকৃত বলিয়া অভ্রান্ত ও স্বতঃপ্রমাণ অর্থাৎ বেদের প্রমাণ বেদ হইতেই হইয়া থাকে। ব্রাহ্মণ প্রভৃতি সমস্ত গ্রন্থ পরতঃ প্রমাণ বেদাধীন। বেদের বিশেষ ব্যাখ্যা ‘ঋগ্বেদাদি ভাষ্য ভূমিকায় দ্রষ্টব্য। এই গ্রন্থেও উহা পরে লিখিত হইবে। | এখন পরিত্যাজ্য গ্রন্থগুলির পরিগণনা সংক্ষেপে করা যাইতেছে। নিম্নে অর্থাৎ নিম্নলিখিত যে সমস্ত গ্রন্থ লিখিত হইবে সেগুলিকে জাল গ্রন্থ বলিয়া জানিবে—
ব্যাকরণের মধ্যে কাতন্ত্র’, ‘সারস্বত’, ‘চন্দ্রিকা', 'মুগ্ধবােধ’, ‘কৌমুদী’, ‘শেখর’এবং ‘মনােরমা ইত্যাদি। অভিধানের মধ্যে 'অমরকোষ প্রভৃতি। ছন্দোগ্রন্থের মধ্যে 'বৃত্তরত্নাকর' প্রভৃতি। শিক্ষার মধ্যে ‘অথ শিক্ষাং প্রবক্ষ্যামি পাণিনীয়ং মতং যথা ইত্যাদি জ্যোতিষের মধ্যে শীঘ্নবােধ’, ‘মুহূর্তচিন্তামণি” আদি। কাব্যের মধ্যে 'নায়িকা ভেদ কুবলয়ানন্দ', 'রঘুবংশ’, ‘মাঘ’, ‘কিরাতাৰ্জ্জুন প্রভৃতি। মীমাংসার মধ্যে ধর্মসিন্ধু', 'ব্ৰতাৰ্ক প্রভৃতি। বৈশেষিকের মধ্যে তর্কসংগ্রহ প্রভৃতি। ন্যায়ের মধ্যে জাগদীশী প্রভৃতি। যােগের মধ্যে হঠপ্রদীপিকা” প্রভৃতি। সাংখ্যের মধ্যে 'সাংখ্যতত্ত্ব-কৌমুদী আদি। বেদান্তের মধ্যে ‘যােগবাশিষ্ঠ’, ‘পঞ্চদশী' ইত্যাদি বৈদ্যক মধ্যে শার্গধর প্রভৃতি। স্মৃতি মধ্যে মনুস্মৃতির প্রক্ষিপ্ত শ্লোক সমূহ ও অন্য সমস্ত স্মৃতি, সৰ তলুগ্রন্থ, সব পুরাণ, সব উপপুরাণ এবং তুলসীদাস কৃত রামায়ণ, রুক্মিণীমঙ্গল' প্রভৃতি ভাষায় লিখিত যাবতীয় গ্রন্থ। এইগুলি কপােলকল্পিত ও মিথ্যা গ্রন্থ।
প্রশ্ন—এই সকল গ্রন্থে কি কোন সত্য নাই?
উত্তর -- অল্প সত্য আছে। কিন্তু তৎসঙ্গে বহু অসত্যও আছে, অতএব ‘বিষসম্পৃক্তাবত্যাজ্যাঃ। যেরূপ অত্যুত্তম অন্ন বিষ-মিশ্রিত হইলে তাহা ত্যাজ্য সেইরূপ এইসকল গ্রন্থও ত্যাজ্য।
No comments:
Post a Comment
ধন্যবাদ