হরিবংশে আমরা পাই বালক বয়সে শ্রীকৃষ্ণের কাছে কংসের নির্দেশে কংসের দূত অক্রুর আসেন। এসে তাঁকে আমন্ত্রণ জানান মথুরায় আগমনের। বলেন-
মাতাপিতৃভ্যম্ সর্বেণ জাতেন তনয়েন বৈ।
ঋণম্ বৈ প্রতিকর্তব্যম্ যথাযোগমুধৃতম্।।
(২.২৬.২৪)
তনয়ের জন্ম পিতা ও মাতা হতে হয়, তাদের প্রতি ঋণ যথাসম্ভব পরিশোধ করা কর্তব্য।
অর্থাৎ পিতামাতা মথুরায় কংসের কাছে বন্দী। শ্রীকৃষ্ণের উচিত সেখানে গিয়ে পিতামাতাকে উদ্ধারের চেষ্টা করে ঋণশোধ করা।
বৈষ্ণব সাহিত্যের অন্যতম ভাগবত পুরাণে পাই-
ততো নন্দব্রজমিতঃ পিত্রা কংসাদ্বিবিভ্যতা।
একাদশ সমাস্তত্র গুঢ়ার্চিঃ সবলোऽবসৎ।।
(ভাগবত পুরাণ ৩.২.২৬)
অর্থাৎ তার পিতা(বসুদেব) কংসের ভয়ে ভীত হয়ে তাকে নন্দের গৃহে পাঠিয়ে দিলেন, ১১ বছর বয়স পর্যন্ত তিনি সেখানে বাস করলেন।
হরিবংশে আমরা দেখি সেইসময় বৃন্দাবনে অক্রুর এর আগমন ঘটে এবং তার সাথে কৃষ্ণ ও বলরাম উভয়েই চিরতরে বৃন্দাবন ত্যাগ করেন এবং মথুরায় গমন করেন, আর কখনো ফিরে আসেন নি। অর্থাৎ ১১ বছর বয়সের মাথায় তিনি বৃন্দাবন ত্যাগ করেন।
হরিবংশ আমরা দেখি যাদবদের মধ্যে কংসের প্রধান প্রতিদ্বন্দী বসুদেবের পুত্র শ্রীকৃষ্ণ ও বলরাম বৃন্দাবন ছেড়ে মথুরায় আসছেন এই সংবাদ পেয়ে বিদ্রোহের আশংকায় কংস তার পার্ষদদের নিয়ে একটি আলোচনা সভা ডাকেন এবং সেখানে বলেন-
অবাল বাল্যমাস্থায় রমতে শিশুলীলয়া।
(২.২২.৩১)
এই বালকটি ছোট শিশুর ন্যায় হলেও সে আসলে ছোট শিশু নয় (কৃষ্ণ ও বলরামের শক্তির গুরুত্ব অনুধাবন করে)।
অর্থাৎ স্পষ্টই দেখতে পাচ্ছি মথুরা ত্যাগকালে শ্রীকৃষ্ণ শিশুর ন্যায় বালক ছিলেন।
ভাগবত পুরাণে আমরা দেখি মথুরায় আগমনের পর মথুরার লোকজন কৃষ্ণ ও বলরামের বর্ণনা দিচ্ছিলেন এভাবে-
ক্বচাতি সুকুমারোঙ্গৌ
কিশোরৌ নাপ্তোযৌবনৌ
(ভাগবত, ১০.৪৪.৮)
অর্থাৎ কৃষ্ণ ও বলরামকে দুই সুকুমার দেহের কিশোর বলা হচ্ছে যাদের এখনো যৌবন প্রাপ্ত হয়নি।
আর আমরা জানি সংস্কৃতে বয়স বিভাজনের শব্দসমূহ এভাবে বর্ণিত হয়-
কৌমারম্ পঞ্চমাব্দান্তং
পৌগন্ডং দশমাবধি
কৈশোরম আপঞ্চদশদ্
যৌবনম্ তু তত পরম্
অর্থাৎ কৌমার হলো ৫ বছর বয়স পর্যন্ত, পৌগন্ড ১০ বছর পর্যন্ত, কৈশোর ১০-১৫ বছর পর্যন্ত ও এরপরে হলো যৌবন।
ভাগবত ১০.৪৪.৮ এ বলা হচ্ছে এ দুইজন কিশোর, তাদের এখনো যৌবন প্রাপ্ত হয়নি। অর্থাৎ তাদের বয়স অবশ্যই ১৫ বা তার নিচে।
অর্থাৎ আগেই যে লেখা হয়েছে ১১ বছর বয়সে বৃন্দাবন ত্যাগ করে মথুরা আসেন অর্থাৎ কিশোর বয়সে তার সাথে মিল পাওয়া গেল।
আরও একটি পারিপার্শ্বিক পরোক্ষ প্রমাণ পাওয়া যায় হরিবংশ ২.৩৩.৩ এ। মথুরায় আসার পর পর ই কৃষ্ণ ও বলরাম সান্দিপনী মুনির আশ্রমে উপনয়ন নিয়ে বিদ্যাশিক্ষায় যান-
কস্যচিত্ত্বাথ কালস্য সহিতৌ রামকেশবৌ।
গুরুম্ সান্দীপনিম্ কাশ্যমবন্তিপুরবাসিনম্।।
(হরিবংশ ২.৩৩.৩)
মথুরায় আসার কিছু সময় পর বলরাম ও কৃষ্ণ কাশীর অবন্তিতে অবস্থিত সান্দীপনি গুরুর আশ্রমে বিদ্যাশিক্ষা লাভ করতে গেলেন।
আমরা জানি কৃষ্ণ ও বলরাম ক্ষত্রিয়কূলের ছিলেন, চন্দ্রবংশীয় যদুকূলের তাঁরা। আর একাদশ বছরেই ক্ষত্রিয়কূলের উপনয়নের নিয়ম-
গর্ভাষ্টমেব্দে কুর্ব্বীত ব্রাহ্মণস্যোপনায়নম্।
গর্ভাদেকাদশে রাজ্ঞো গর্ভাত্ত দ্বাদশে বিশঃ।।
(মনুস্মৃতি ২।৩৬)
অষ্টমে বর্ষে ব্রাহ্মণমুনেয়ৎ।গর্ভাষ্টমে বা।একাদশে ক্ষত্রিয়ম্।দ্বাদশে বৈশ্যমন।।
(অশ্বলায়ন গৃহ্যসূত্র ১।১৯।১-৩ )
অর্থাৎ ব্রাহ্মণের অষ্টম বর্ষে, ক্ষত্রিয়ের একাদশ বর্ষে এবং বৈশ্যের দ্বাদশ বর্ষে উপনয়ন বিধেয়।
অর্থাৎ এখান থেকেও বুঝা যাচ্ছে ক্ষত্রিয় কুলোদ্ভূত শ্রীকৃষ্ণের বয়স তখন ১১ ছিল।
তার মানে হলো বৃন্দাবনে তিনি যা কিছু করেছেন তা ১০ বছর বয়সের মধ্যেই করেছেন।
No comments:
Post a Comment
ধন্যবাদ