এখানে হলুদ বলতে কাঁচা হলুদের কথা বলা হচ্ছে।
হলুদ বা হলদি হলো হলুদ গাছের শিকড় থেকে প্রাপ্ত এক প্রকারের মশলা। ভারত , বাংলাদেশ এবং পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের রান্নায় এটি ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়। এটি আদা পরিবারের অন্তর্গত একটি গুল্মজাতীয় উদ্ভিদ।হলুদ এর সক্রিয় উপাদান হল মধ্যে curcumin । ভারতবর্ষে প্রায় লক্ষ লক্ষ বছর ধরে হলুদ ব্যবহার হয়ে আসছে। যা এখন বিশ্বব্যাপী ব্যাপক হারে ব্যাবহৃত হচ্ছে। এটি মুলত একটি মসলা জাতীয় দ্রব্য। গবেষণায় দেখে গেছে, হলুদের রয়েছে অন্তত ১৪টি মহৌষধের গুণ। যাতে সেরে উঠবে অন্তত ৬০০ রোগ।আদার সমগোত্রীয় মশলা, হলুদ পাওয়া যায় দক্ষিণ এশিয়ার গ্রীষ্মপ্রধান দেশগুলিতে উৎপন্ন কারকিউমা লোঙ্গা নামে উদ্ভিদ থেকের মূল থেকে। এই উদ্ভিদের মূল বা শিকড় স্ফীতাকার হয়ে থাকে যেখানে রাইজোম প্রস্তুত হয়। এগুলিকে ফুটিয়ে, শুকনো করে নেওয়া হয়, তারপর গুঁড়ো করে আমরা যে পাওডার মেলে, সেটাই আমাদের কাছে হলুদ নামে পরিচিত।
ভারতের চিকিৎসা শাস্ত্রে বহুদিন ধরে হলুদের ব্যবহার হয়ে আসছে কারণ আয়ুর্বেদ ভেষজ শাস্ত্রে এটি বিভিন্ন শারীরিক সমস্যা যেমন শ্বাসকষ্ট, বাত, শরীরের যন্ত্রণা, এবং এমনকি ক্লান্তি নিরসনের জন্যও দেওয়া হয়ে থাকে। কাপড় রং করার জন্যও হলুদের ব্যবহার আছে। বস্তুত, মার্কো পোলো যখন 1280 খ্রীষ্টাব্দে চিন ভ্রমণে যান তখন তিনি হলুদকে কেশরের সঙ্গে তুলনা করেছিলেন। মধ্যযুগে ইউরোপে, হলুদকে ‘‘ভারতীয় কেশর’’ বলে অভিহিত করা হতো।হলুদের একটি ঝাঁঝালো-তিক্ত স্বাদ আছে এবং মাঝে মাঝে খাদ্য বস্তু রং করার কাজেও ব্যবহৃত হয়। ক্যানবন্দি পণ্য, বেকারি পণ্য, ডেয়ারি, জুস, এবং অন্যান্য খাদ্যদ্রব্যেও ব্যবহার হয়ে থাকে। খাদ্য দ্রব্যের মোড়ক করতে বা রান্নার জন্যও হলুদ পাতা ব্যবহার করা হয়। এই পাতা খাদ্যে একটি নির্দিষ্ট স্বাদ নিয়ে আসে।
হলুদ নিজেই একটি চমকপ্রদ মশলা, কিন্তু যদি এটিকে দুধের সঙ্গে মেশানো হয় তাহলে এর উপকার দ্বিগুণ হয়ে যায়। হলুদ একটি রাসায়নিক যৌগ যার নাম কারকিউমিন যা স্নেহ পদার্থ দ্রবীভুত করে। দুধ গরম করে তার মধ্যে এক চামচ টার্মারিক পাওডার মিশিয়ে টার্মারিক প্রস্তুত করা হয়।
বিশ্বের মধ্যে ভারত হচ্ছে হলুদে সর্ববৃহৎ উৎপাদক, উপভোক্তা, এবং রপ্তানিকারক দেশ। ভারতে উৎপাদিত হলুদ কে সর্বশ্রেষ্ঠ বলা হয় কারণ এই হলুদে উচ্চ মাত্রায় কারকিউমিন থাকে। সারা পৃথিবীতে উৎপাদিত হলুদের 80% ভারতে উৎপন্ন হয়।
হলুদের কিছু প্রাথমিক তথ্য
বৈজ্ঞানিক নাম: কারকিউমা লোঙ্গা
পরিবার: আদার সমগোত্রীয় জিঞ্জিবারেসিয়া পরিবার অন্তর্ভুক্ত
সাধারণ নাম: টার্মারিক, হলদি (হিন্দি)
সংস্কৃত নাম: হরিদ্রা
কোন অংশ ব্যবহৃত: ভেষজ বা খাদ্য হিসাবে মূল বা রাইজোম ব্যবহৃত হয়।
উদ্ভাবন স্থান এবং ভৌগৌলিক বণ্টন: সিংহভাগ উৎপন্ন যায় দক্ষিণ এশিয়ায়, প্রাপ্তিস্থান ভারত, ইন্দোনেশিয়া, চিন, ফিলিপাইন, তাইওয়ান, হাইতি, জামাইকা, শ্রী লংকা এবং পেরু।
গুরুত্বপূর্ণ তথ্য: উদ্ভিদের আরবি শব্দ কারকুম থেকে কারকিউমা লোঙ্গা নামটি এসেছে। চিনে এটিকে বলা হয় জিয়াং হুয়ানজিন।
হলুদের পুষ্টির তথ্য -
হলুদে আছে 26% ম্যাঙ্গানিজ এবং 16% লোহা। এটি তন্তু, ভাইটামিন B6, পটাসিয়াম, ভাইটামিন C এবং ম্যাগনেসিয়াম সমৃদ্ধ। এর মধ্যে রাসায়নিক যৌগ কারকিউমিন থাকার কারণে হলুদের মধ্যে ভেষজ গুণ আছে বলে ধরা হয়। এর মধ্যে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট আছে এবং এটি প্রদাহরোধী এজেন্ট।
USDA নিউট্রিয়্যান্ট ডেটাবেস (পুষ্টির তথ্য) অনুযায়ী 100g হলুদে নিম্নলিখিত পুষ্টি পাওয়া যায়:
পুষ্টি প্রতি 100 g -এ মূল্যমান
জল 12.85 g
শক্তি 312 kcal
প্রোটিন 9.68 g
স্নেহ পদার্থ 3.25 g
কার্বোহাইড্রেট 67.14 g
তন্তু বা ফাইবার 22.7 g
শর্করা 3.21 g
খনিজ পদার্থ
ক্যালসিয়াম 168 mg
লোহা 55 mg
ম্যাগনেসিয়াম 208 mg
ফসফরাস 299 mg
পটাসিয়াম 2080 mg
সোডিয়াম 27 mg
দস্তা 4.50 mg
ভাইটামিন
ভাইটামিন B6 0.107 mg
ভাইটামিন C 0.7 mg
ভাইটামিন E 4.43 mg
ভাইটামিন K 13.4 mg
স্নেহ পদার্থ
ফ্যাটি অ্যাসিড স্যাচুরেটেড 1.838 g
ফ্যাটি অ্যাসিড, মনোস্যাচুরেটেড 0.449 g
ফ্যাটি অ্যাসিড, পলিস্যাচুরেটেড 0.756 g
ফ্যাটি অ্যাসিড, ট্রান্স 0.056 g
স্বাস্থ্যের জন্য হলুদের উপকারিতা -
প্রদাহরোধী হিসাবে: প্রদাহরোধী হিসাবে ত্বকের ওপর ব্যবহার করা হয়, যা আঘাতজনিত কারণে শরীরে যন্ত্রণা হলে বা ফুলে গেলে তা কমাতে সাহায্য করে এবং দীর্ঘস্থায়ীভাবে কোনও জায়গা ফুলে থাকলে তা এড়ায়।
অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হিসাবে: হলুদে কারকিউমা নামে যৌগ আছে যা এটিকে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং বার্ধক্যরোধী গুণসম্পন্ন করেছে। ফ্রি র্যাডিক্যল নাশ করার যে শক্তি এর মধ্যে আছে তা এর অক্সিডেটিভ ক্ষতি পূরণ করে এবং শরীরে বার্ধক্যের আক্রমণ বিলম্বিত করে।
আর্থারাইটিসের জন্য: প্রদাহবিরোধী হওয়ায় হলুদ গাঁটের ব্যাথা, এবং আর্থারাইটিসজনিত সমস্যা কমায়।
মস্তিষ্কের জন্য: মস্তিষ্কের উপযুক্ত কার্যপ্রক্রিয়ায় হলুদ সাহায্য করে এবং অ্যালঝাইমার এবং অবসাদের বিরুদ্ধে কার্যকরী ভূমিকা নেয়।
হার্টের জন্য: হৃদনালী এবং হার্টের দেওয়ালে যা ক্ষয়ক্ষতি হয় কারকিউমিন তা কমাতে সাহায্য করে বলে কার্ডিওভাসকিউলার সমস্যার ঝুঁকি কমে।
ক্যান্সাররোধী হিসাবে: কারকিউমিন অস্বাভাবিক বৃদ্ধি আটকায় বলে ক্যান্সাররোধে কার্যকরী হয়। স্তনের ক্যান্সার, ফুসফুসের ক্যান্সার, ডিম্বাশয়ের ক্যান্সার, লিউকেমিয়া, লিম্ফোমা এবং পাকস্থলী ও অন্ত্রের বিশেষ কিছু ক্যান্সারের বিরুদ্ধে কাজ করে বলে দেখা গিয়েছে।
মুখের স্বাস্থ্যের জন্য: হলুদের প্রদাহরোধী গুণের জন্য মাড়ির সমস্যা যেমন জিঞ্জিভাইটিস এবং পিরিওডন্টিটিস-এর বিরুদ্ধে কাজ করে। মুখের ক্যান্সারের বিরুদ্ধে কাজ করতেও দেখা গিয়েছে।
WHO -এর মতে সারা বিশ্বে মৃত্যুর প্রধান কারণ ইসকিমিক হার্টের কারণে অসুস্থতা। হৃদরোগের বহু কারণ থাকতে পারে তবে সুস্থ হার্টের জন্য আমরা সর্বদা আমাদের খাদ্যতালিকায় এবং জীবনশৈলীতে পরিবর্তন আনতে পারি। গবেষণা করে জানা গিয়েছে, কারকিউমিন হচ্ছে অন্যতম একটি গুল্ম যা হার্টের রোগ রুখতে বা এড়াতে সক্ষম। এন্ডোলিথিয়াল কোশের ওপর, হার্টের রক্তনালীর লাইনিংয়ের ওপর, কারকিউলামের ভূমিকা আছে বলে হার্টের ক্ষতি এড়াতে পারে। আমরা সকলেই জানি, ণাস্কুলার এন্ডোথিলিয়ামের সুষ্ঠু কার্যকারিতার ওপর ব্যায়ামের ব্যাপক সদর্থক প্রতিক্রিয়া আছে। একটি সমীক্ষাতে এটাও দেখা গিয়েছে যে এন্ডোথিলিয়ামের কার্যপ্রণালীর ওপর হলুদেরও একই রকম প্রভাব আছে। নিয়মিত হলুদ খেলে আপনার হার্ট দীর্ঘদিন সুস্থ রাখতে তা কাজ করে।
মস্তিষ্কের স্বাস্থ্যের জন্য হলুদ -
শুধু হার্টের জন্য নয় মস্তিষ্কের স্বাস্থ্যের জন্যও হলুদ উপকার করে, সেই সঙ্গে স্মৃতিশক্তি বাড়াতে সাহায্য করে।
একটি গবেষণায় দেখা গিয়েছে, ব্রেন-ডিরাইভড নিউরোট্রোফিক ফ্যাক্টর (BDNF) হচ্ছে এক ধরনের প্রোটিন যা মস্তিষ্কের প্রধান উপাদান হিসাবে কাজ করে। স্নায়ু কোশের পুনরুজ্জীবনে তার মস্ত বড় ভূমিকা আছে। অন্য একটি সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, যে সব ব্যক্তি অবসাদ অথবা অ্যালঝাইমার রোগে ভুগছেন তাঁদের অতি অল্প মাত্রায় BDNF থাকে। শারীরিক ব্যায়াম উপকারী এই কারণে যে এটি মানবদেহে স্বাভাবিকভাবে BDNF বাড়ায়। আশ্চর্যজনকভাবে দেখা গিয়েছে, হলুদও একইরকম কাজ দেয়।
নিয়মিত হলুদ খেলে তা BDNF মাত্রা বাড়াতে সাহায্য করে, যার ফলে স্মৃতিশক্তি বাড়ে, মস্তিষ্কের অসুখ কমে এবং মস্তিষ্ক ঠিকভাবে কাজ করে।
হলুদের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট গুণাবলী -
আমাদের বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আমাদের শরীরে ফ্রি র্যাডিক্যালের (সক্রিয় অক্সিজেন স্পিসিজ) সংখ্যা হু হু করে বাড়তে থাকে। ফ্রি র্যাডিকল বহুল পরিমাণে প্রতিক্রিয়াশীল হয় বলে অক্সিডেটিভ ক্ষতি করতে পারে কারণ তারা প্রোটিন এবং ফ্যাটি অ্যসিডের সঙ্গে বিক্রিয়া করে। অতিরিক্ত পরিমাণে ফ্রি র্যাডিক্যাল থাকলে তা আমাদের কোশের সঙ্গে এমনকি DNA-র পর্যন্ত ক্ষতি করতে পারে। ধূমপান, বায়ু দূষণ, খাদ্যে কীটনাশকের পরিমাণ বৃদ্ধি, ভাজা খাবার ইত্যাদি কারণের জন্য আমাদের শরীরে ফ্রি র্যাডিক্যালের মাত্রা বাড়ে। খাদ্য প্রাকৃতিক অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ হলে ফ্রি র্যাডিক্যালের ঊর্ধ্বমুখী হারের সঙ্গে আমাদের শরীর পাল্লা দিতে পারে। এই অ্যান্টিঅক্সিডেন্টগুলি সবজি এবং ফলে স্বাভাবিকভাবে পাওয়া যায়। একটি গবেষণায় দাবি করা হয়েছে, হলুদ একটি শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, যা এই সব ফ্রি র্যাডিক্যালকে নাশ করতে পারে। এটি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এনজাইমের উৎপাদন বাড়াতে সাহায্য করতে পারে। কাজেই যে সব ব্যক্তি নিয়মিত হলুদ খেয়ে থাকেন তাঁরা স্বাস্থ্যকর জীবন যাপন করেন।
প্রদাহরোধী হিসাবে হলুদ -
ফুলে যাওয়া বা প্রদাহ আমাদের শরীরের পক্ষে খুব জরুরি, কারণ তা ক্ষতিগ্রস্ত টিস্যু পুনরুদ্ধারে এবং বহিঃশত্রুর আক্রমণ থেকে শরীরকে বাঁচাতে সাহায্য করে। আমাদের সিস্টেমে যে প্যাথোজেন প্রবেশ করছে তার সঙ্গে লড়াই করতেও প্রদাহ সাহায্য করে। ক্ষণস্থায়ী প্রদাহ বা কোনও জায়গা ফুলে ওঠা যেমন ব্রণ বা ছোট কোনও ক্ষত শরীরের পক্ষে উপকারী হতে পারে কিন্তু তা চিন্তার বিষয় হয়ে দাঁড়ায় যদি দীর্ঘস্থায়ী হয়ে পড়ে, কারণ তখন তা তার নিজস্ব টিস্যুকে আক্রমণ করে বসে। কোনও স্থান ফুলে থাকা বা প্রদাহ, আকারে ছোট হলেও দীর্ঘস্থায়ী হয়ে পড়লে তা থেকে হৃদরোগ, মেটাবোলিক সিনড্রোম, এবং ক্যান্সার হতে পারে। হলুদের প্রদাহ প্রতিরোধী গুণাবলী আছে কারণ তা NF-kB ( নিউক্লিয়ার ফ্যাক্টর কাপ্পা বিটা), নামে যে অণু কোশের প্রদাহ বৃদ্ধির জন্য দায়ি জিনকে উত্তেজিত করে সেই অণুকে প্রতিহত করে। একটি সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, হলুদ প্রদাহ কমাতে আণবিক স্তরে কাজ করে।
ক্যান্সার রোধে হলুদ -
কোশের অস্বাভাবিক বৃদ্ধির কারণে ক্যান্সার হয়ে থাকে। সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, হলুদে উপস্থিত কারকিউমিন ক্যান্সার চিকিৎসায় ব্যবহৃত হতে পারে কারণ তা কোশবৃদ্ধিকে প্রভাবিত করে, আণবিক স্তরে ক্যান্সার কোশ বৃদ্ধি, বিস্তার এবং ছড়িয়ে পড়া রোধ করে। গ্যাস্ট্রোইনেস্টিন্যাল ক্যান্সার (পাকস্থলী ও অন্ত্র), স্তনের ক্যান্সার, ফুসফুসের ক্যান্সার, স্নায়ুর ক্যান্সার, ডিম্বাশয়ের ক্যান্সার, লিউকেমিয়া এবং লিম্ফোমা জাতীয় ক্যান্সারের বিরুদ্ধে কারকিউমিন কার্যকরী হতে দেখা গিয়েছে। গবেষণায় প্রমাণিত কারকিউমিন সাধারণ কোশকে প্রভাবিত করে না কিন্তু বিভিন্ন টিউমার কোশ মেরে ফেলে। এই কারণে একটি উপকারী ভেষজ উদ্ভিদ হিসাবে কারকিউমিন প্রমাণিত, যা থেকে বিভিন্ন ওষুধের উন্নতি ঘটানোর কাজে লাগানো হচ্ছে। সুতরাং, নিয়মিত হলুদ খেলে ক্যান্সারের সঙ্গে যুদ্ধ করা এবং তা প্রতিহত করা সহজ হয়।
অ্যালঝাইমারের জন্য হলুদ -
সারা বিশ্বে স্মৃতিভ্রংশের সমস্যার অন্যতম মূল কারণ অ্যালঝাইমার (AD) সমস্যা। প্রাচীন ভারতীয় ভেষজ কারকিউমিনের ওপর দীর্ঘ গবেষণা চালিয়ে দেখা গিয়েছে, আধুনিক চিকিৎসা শাস্ত্রেও এর উপকার আছে। বিভিন্ন উপসর্গ যেমন গ্যাস্ট্রিক আলসার, স্তন ক্যান্সার, অ্যাথেরোস্ক্লেরোসিস ইত্যাদির চিকিৎসায় এটি ব্যবহার হয়ে থাকে। মস্তিষ্কের আঘাতেও কারকিউমিনের সাহায্যে চিকিৎসা করা হয়ে থাকে। একটি গবেষণায় প্রমাণিত যে হলুদ থেকে পাওয়া কারকিউমিন অ্যালঝাইমার প্রতিরোধে এবং তার চিকিৎসায় কার্যকরী ভুমিকা পালন করে। প্রদাহবিরোধী এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট গুণাবলী থাকায়, এই রোগে যাঁরা আক্রান্ত কারকিউমিন তাঁদের অবস্থার উন্নতি ঘটাতে সক্ষম বলে প্রমাণিত হয়েছে। লাইপোফিলিক গুণের জন্য কারিকিউমিন ব্লাড-ব্রেন ব্যারিয়ার পেরিয়ে যেতে পারে, যা শেষ পর্যন্ত মস্তিষ্কের কোশে গিয়ে পৌঁছায় এবং অ্যালঝাইমার প্রশমনের কাজ করে। কাজেই, নিয়মিত হলুদ খেলে স্নায়বিক অবনতির (নিউরোডিজেনারেটিভ) কারণে যে সব অসুখ হয় তা দূরে সরিয়ে রাখা যায়।
আর্থারাইটিসের জন্য হলুদ -
যে কোনও বয়সের মানুষের গাঁটে ব্যাথা একটি সাধারণ সমস্যা যাকে আর্থারাইটিস বলা হয়। হলুদের মধ্যে কারকিউমিনের প্রদাহপ্রতিরোধী গুণ থাকার জন্য যাঁরা আর্থারাইটিসে ভুগছেন তাঁদের জন্য উপকারী। একটি পাইলট সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, আর্থারাইটিসে যাঁরা ভুগছেন তাঁদের চিকিৎসার জন্য নিরাপদ এবং কার্যকরী।
অবসাদের জন্য হলুদ -
অবসাদের উপসর্গ দূর করতে হলুদ সাহায্য করে এবং যাঁরা অবসাদে ভুগছেন তাঁদের চিকিৎসার ক্ষেত্রেও কার্যকরী ভূমিকা আছে। একটি নিয়ন্ত্রিত সমীক্ষায় 60 জন রোগীকে ছয় সপ্তাহ ধরে প্রোজ্যাক (অবসাদ কাটানোর ওষুধ), কারকিউমিন এবং যৌথভাবে দু’টি দেওয়া হয়েছিল। পরিষ্কার বোঝা গিয়েছিল, যে সব অবসাদগ্রস্তদের কারকিউমিন দেওয়া হয়েছিল তাঁদের ক্ষেত্রে তা কার্যকর হয়েছিল এবং পরবর্তী সময়ে তাঁদের মধ্যে কোনওরকম আত্মহননের প্রবণতা বা অন্যান্য মানসিক সমস্যা দেখা যায়নি। শারীরিক পরীক্ষায় এও দেখা গিয়েছে যে কারকিউমিন অবসাদগ্রস্তদের চিকিৎসায় নিরাপদ এবং কার্যকরী হয়ে থাকে।
বার্ধক্যরোধে হলুদ -
মনে করা হয়, ফ্রি র্যাডিক্যাল এবং প্রদাহ এই দু’টি হচ্ছে বার্ধক্য এবং অন্যান্য রোগের মূল কারণ। এটা পরিষ্কার যে কারকিউমিন প্রদাহরোধী এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। যেহেতু অ্যান্টিঅক্সিডেন্টগুলি ফ্রি র্যাডিক্যালদের নাশ করে, সুতরাং বার্ধক্যের চিহ্ন দূর করতে কারকিউমিন ব্যবহার করা যেতে পারে। তাছাড়া, কারকিউমিন শরীরে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এনজাইম উৎপাদন বাড়িয়ে দেয় বলে শরীরে বার্ধক্য নেমে আসার গতি মন্থর হয়।
দাঁতের স্বাস্থ্যে হলুদ -
চিরাচরিত চিকিৎসা পদ্ধতিতে বহুবিধ ভেষজ গুণের জন্য যুগ যুগ ধরে হলুদের ব্যবহার হয়ে আসছে। একটি সমীক্ষা বলছে, দাঁতে প্লাক হয়েছে কিনা, সাদা চোখে বোঝা যায় না, তা বুঝবার জন্য হলুদ ব্যবহার করা যেতে পারে। হলুদের নির্যাস বেনি-কোজির উপস্থিতির কারণে হলুদ পিগমেন্ট তৈরি হয় যার জন্য প্লাকের রঙ হলুদ দেখায়। এছাড়া প্রদাহপ্রতিরোধী এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদানের জন্য জিঞ্জিভাইটিস, ব্যাথা কমানো, পিরিওডনটাইটিস এবং মুখের ক্যান্সার -এর চিকিৎসায় হলুদ সাহায্য করে।
হলুদের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া -
যুগযুগান্ত কাল ধরে বারতীয় পরিবারে হলুদের ব্যবহার হয়ে আসছে। সম্প্রতি পাশ্চাত্যেও হলুদের জনপ্রিয়তা বেড়েছে। যদিও হলুদের বহু গুণ রয়েছে, তবু মনে রাখতে হবে কোনও জিনিসের অধিক প্রয়োগ ক্ষতিকর হতে পারে।
হলুদের মধ্যে যে কারকিউমিন আছে তা অ্যালার্জেন হওয়ায় কারো কারো ক্ষেত্রে হলুদে অ্যালার্জি দেখা দিতে পারে। এর সংস্পর্শে চর্মরোগ হওয়ার কথা জানা যায়। হলুদের সংস্পর্শে বা হলুদ গ্রহণের পর ত্বে দাগড়া দাগড়া র্যাশ এবং অ্যালার্জির উপসর্গ দেখা দিতে পারে।
ডায়বিটিস: হলুদে কারকিউমিন বলে যে রাসায়নিক আছে তা ডায়বিটিস আক্রান্তদের রক্তে শর্করার পরিমাণ কমিয়ে দিতে পারে।
গলব্লাডার বা পিত্তকোষ: আপনার পিত্তকোষে সমস্যা থাকলে হলুদ না খাওয়াই শ্রেয়, বিশেষত যদি পিত্তকোষে পাথর (গলস্টোন) থাকে বা পিত্তনালীতে বাধা থাকে। গবেষণায় দেখা গিয়েছে, কারকিউমিন পিত্তকোষ সঙ্কুচিত করে ফেলে।
পাকস্থলীর সমস্যা: হলুদের সঙ্গে অ্যান্টঅ্যাসিডের বিক্রিয়া ঘটতে পারে। যদি ট্যাগামেট, পেপসিড, জ্যানট্যাক, নেক্সিয়াম, বা প্রিভ্যাসিডের মতো অ্যান্টঅ্যাসিডের সঙ্গে একযোগে খাওয়া হয় তাহলে পাকস্থলীতে অম্ল বা অ্যাসিডের পরিমাণ বেড়ে যেতে পারে। সমীক্ষায় প্রমাণিত যে অতিরিক্ত পরিমাণ বা দীর্ঘদিন হলুদ খেলে গ্যাস্ট্রোইনটেস্টিনাল (পাকস্থলী এবং অন্ত্র) সমস্যা হতে পারে এবং পেটের গণ্ডগোল দেখা দিতে পারে।
হলুদে উপস্থিত কারকিউমিন পেটের (গ্যাস্ট্রিক) অস্বস্তি বাড়ায় যা থেকে ডায়রিয়া বা বমিভাবের উপসর্গ দেখা দিতে পারে।
মনে রাখতে হবে -
বহুকাল ধরে আমাদের সংস্কৃতির সঙ্গে হলুদের অঙ্গাঙ্গী সম্পর্ক। পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার থেকে হলুদের গুণাবলী অনেক বেশি, তবু খে কোনও প্রকারেই হলুদ খাওয়া হোক না কেন, শুরু করার পূর্বে চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করে নেওয়া জরুরি, বিশেষত আপনি যদি ডায়বিটিস আক্রান্ত বা অন্তঃসত্ত্বা হন।
হলুব শুধুমাত্র খাদ্যে ব্যবহার হয় না, বহুবিধ প্রাকৃতিক প্রসাধনী দ্রব্যে ব্যবহার করা হয়। পরিচিতির সুবাদে ভারতীয় জীবনযাত্রায় বড় ভূমিকা পালন করে হলুদ, কারণ আমরা এটি শুধু রান্নার কাজে ব্যবহার করি না, ওষুধ এবং প্রসাধনী পণ্য প্রস্তুতেও ব্যবহার করি।
হলুদকে বাস্তবিক একটি চমৎকার মশলা বলা যায় যার একাধিক ব্যবহার আছে। বলা হয়ে থাকে, এক গ্লাস হলুদ মেশানো দুধে এক চামচ করে মধু দিয়ে খেলে আর চিকিৎসকের সাহায্য প্রয়োজন হয় না।
নিচে রইল কাঁচা হলুদের গুণাগুণের ৫২টি নমুনা-
১। কাঁচা হলুদ একটি প্রাকৃতিক এন্টিসেপ্টিক। তাই কাঁটা এবং পোড়া জায়গায় হলুদ বাটা লাগালে অনেক উপকার পাওয়া যায় ও তাড়াতাড়ি ব্যথা এবং দাগের উপশম ঘটে।
২। হলুদ যখন ফুলকপির সাথে মিলিত হয় তখন এটা ক্যান্সার প্রতিরোধ করে এবং বিদ্যমান প্রস্টেট ক্যান্সারের বৃদ্ধি বন্ধ করে দেয়।
৩। স্তন ক্যান্সার প্রতিরোধকারী ও অন্ত্রের ক্যান্সার নিরাময়কারী।
৪। মেলানোমা প্রতিরোধ এবং আত্মহত্যা করতে মেলানোমা কোষ বিদ্যমান হতে পারে।
৫। শিশুদের লিউকেমিয়া ঝুঁকি কমিয়ে দেয়।
৬। হলুদের প্রদাহ বিরোধী বৈশিষ্ট্য বাত এবং ফোলানো বাত এর জন্য একটি প্রাকৃতিক চিকিৎসা।
৭। হলুদ কেমো ড্রাগ এর প্রভাব এবং তার পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হ্রাস করে।
৮। গবেষণা দেখা গেছে, হলুদ অগ্ন্যাশয়ের ক্যান্সার উপশমে চমৎকার কাজ করে।
৯। টিউমার হওয়া বন্ধ ও নতুন রক্ত উৎপাদন বৃদ্ধি করে।
১০। হলুদের গাঠ পিষে, ঘিয়ে ভেজে চিনি মিশিয়ে কিছু দিন খেলে (নিয়মিত) ডায়াবেটিস সারে। প্রমেহও সারে।
১১। এটি চর্বি বিপাকে সাহায্য করে এবং ওজন নিয়ন্ত্রণ করে।
১২। দীর্ঘ বিষণ্নতা জন্য একটি চিকিত্সা হিসাবে চীনা দেশে হলুদেরর ঔষধ ব্যবহার করা হয়।
১৩। যেকোনো চর্ম রোগের জন্য হলুদ অনেক উপকারী। কাঁচা হলুদের সাথে কাঁচা দুধ মিশিয়ে শরীরে মাখলে একজিমা,অ্যালার্জি, র্যা শ, চুলকানি ইত্যাদি থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
১৪। হলুদের মানসিক অবসাদ রোধ করতে ব্যবহৃত অ্যান্টি ডিপ্রেস্যান্টের কাজও করে । এ ছাড়া, এই উপাদানে রয়েছে অ্যাস্পিরিনের গুণ। এর প্রয়োগে ভ্যাস্কুলার থ্রম্বোসিস আক্রান্ত রোগীর রক্তের ঘনত্বের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করা যায়।
১৫। সর্দি-কাশির ক্ষেত্রে খুব ভালো কাজ দেয় হলুদ। কাশি কমাতে হলে হলুদের রস খেয়ে নিন কয়েক চামচ, কিংবা এক টুকরো হলুদের সাথে মধু মাখিয়ে তা মুখের মাঝে রেখে আস্তে আস্তে চুষতে পারেন অথবা এক গ্লাস গরম দুধের মধ্যে হলুদের গুঁড়ো, সামান্য মাখন এবং গোলমরিচ গুঁড়ো মিশিয়ে পান করুন।
১৬। হলুদ খেলে শরীরে রোগ প্রতিরোধের ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। বাচ্চাদের লিউকমিয়া বা ব্লাড ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায় নিয়মিত কাঁচা হলুদের রস সেবন। প্রতিদিন দুধ বা পানির সাথে হলুদের গুঁড়ো বা রস মিশিয়ে খাওয়া অভ্যাস করলে অনেকটাই সুস্থ থাকা সম্ভব।
১৭। হলুদ গায়ের ত্বক ফর্সা ও লাবণ্যময় করে তোলে। প্রতিদিন রাতে ঘুমানোর আগে দুধের সাথে কাঁচা হলুদ মিশিয়ে খেলে,ধীরে ধীরে ত্বকের রঙ ফর্সা হয়।
১৮। হলুদের অন্য এক উপাদান ‘পলিফেনল’ চোখের অসুখ ‘ক্রনিক অ্যান্টিরিয়ার ইউভেইটিস’ সারাতে কর্টিকোস্টেরয়ডের কাজ করে। উল্লেখ্য, এই রোগের প্রকোপে চোখে প্রচণ্ড জ্বালা ও প্রদাহ দেখা যায়।
১৯। মুখে জ্বালা-পোড়া করলে গরম পানির মধ্যে হলুদের পাউডার মিশিয়ে কুলকুচি করুন।
২০। শরীরের কোনো অংশ পুড়ে গেলে পানির মধ্যে হলুদের পাউডার মিশিয়ে লাগাতে পারেন।
২১। সূর্যের তাপে গা জ্বলে গেলে হলুদের পাউডারের মধ্যে বাদামের চূর্ণ এবং দই মিশিয়ে লাগান।
২২। আয়ুর্বেদিক মতে, হলুদ রক্ত শুদ্ধ করে।
২৩। পেটে বাতাস হলে ও পুরনো ডায়রিয়ায় হলুদের গুঁড়ো বা রস পানিসহ খেলে খুবই উপকার হয়।
২৪। পেটের সংক্রমণ দমনে হলুদ খুবই কার্যকর। মাখন বা দুধের সাথে হলুদের গুঁড়ো মিশিয়ে খেলে উপকার মেলে।
২৫। কাঁচা হলুদের রস ১৫-২০ ফোঁটা (বয়সানুপাতে) সামান্য লবণ মিশিয়ে সকালে খালি পেটে খেতে হয়। কৃমি দমনে কার্যকর ওষুধ, তাই একে কৃমিঘ বা কৃমিনাশকারীও বলে।
২৬। জন্ডিস গায়ের রঙ ফ্যাকাশে হয়ে আসছে বুঝতে পারলে হলুদের রস ৫ থেকে ১০ ফোঁটা থেকে শুরু করে বয়সানুপাতে ১ চা চামচ পর্যন্ত একটু চিনি বা মধু মিশিয়ে খাওয়ার ব্যবস্থা বহু আগে থেকে চলে আসছে। আবার একটু হলুদ গুঁড়া তার দ্বিগুণ পরিমাণ দইয়ে মিশিয়ে খেলে পিলে ও যকৃতের দোষ এবং জন্ডিস সারে। মধুসহ হলুদ খেলে বিশেষ উপকার পাওয়া যায়।
২৭। ছোটবেলায় যাদের কথা আটকে যায় বা স্বাভাবিকভাবে তাড়াতাড়ি কথা বলার অভ্যাস, সে ক্ষেত্রে হলুদকে গুঁড়ো করে তা দুই-তিন গ্রাম পরিমাণে এক চা চামচ ঘিয়ে একটু ভেজে সেটাকে দুই-তিনবার চেটে চেটে খাওয়াতে হয়। এতে তোতলামি কমে যায়।
২৮। এক চা চামচ হলুদের রস অল্প গুড় ও এক চা চামচ গরুর পেশাব খাওয়াতে বিধান কবিরাজ চক্রপানি দত্তের। এটি আমবাতেও ব্যবহার করা হয়।
২৯। জ্বরে কাঁচা হলুদ শুকিয়ে গুঁড়ো করে সাথে করলা পাতার রস ও অল্প মধু মিশিয়ে খাওয়ালে তা সারে।
হলুদের শিকড় রোদে শুকিয়ে গুঁড়ো করে এক চা চামচ মধু ও করলা পাতার রস মিশিয়ে খেলে হাম সারে।
হলুদের শিকড় রোদে শুকিয়ে গুঁড়ো করে এক চা চামচ মধু ও করলা পাতার রস মিশিয়ে খেলে হাম সারে।
৩০। মধু মিশিয়ে হলুদের গুঁড়ো খেলে কোষ্ঠবদ্ধতা, হজমে দুর্বলতা বিশেষ উপকার পাওয়া যায়।
৩১। পাঁচ-সাত গ্রাম কাঁচা হলুদ থেঁতলে নিয়ে দেড় কাপ আন্দাজ পানিতে ৫-১০ মিনিট সিদ্ধ করে ছেঁকে নিয়ে ওই পানি চিনিসহ অল্প অল্প করে পান করলে শ্লেষ্মাজনিত পিপাসা চলে যায়।
৩২। হলুদ গুঁড়ো, আখের গুড় ও খাঁটি সরিষার তেল এক সাথে মিশিয়ে চাটলে হাঁপানি একটু উপশম হয়। এ ছাড়া এক চা-চামচ হলুদের গুঁড়ো এক গ্লাস দুধে মিশিয়ে দিনে দুই-তিনবার খেলে ভালো উপকার মেলে। এটি খালি পেটে খাওয়া ভালো।
৩৩। নাকের ভেতর ক্ষত হলে হলুদ গুঁড়ো মহৌষধ হিসেবে কাজ করে।
৩৪। কোনো সাধারণ কারণে স্বরভঙ্গ হলে দুই গ্রাম আন্দাজ হলুদের গুঁড়ো চিনির শরবতে মিশিয়ে একটু গরম করে খেলে চমৎকার উপকার হয়। গরম দুধে এক চিমটি হলুদ গুঁড়ো দিয়ে রাতে খেলে স্বরভঙ্গ ও গলাবসা ঠিক হয়ে যায়।
৩৫। জোঁকের মুখে হলুদ বাটা বা গুঁড়ো দিলে জোঁকও ছাড়ে, সেই সাথে রক্ত পড়াও বন্ধ হয়।
৩৬। হলুদের মধ্যে এন্টিসেপ্টিক এবং এন্টিব্যাক্টেরিয়াল উপাদান থাকে যেটি ব্রণ দূর করতে সাহায্য করে। কাঁচা হলুদ বাটা, চন্দন গুঁড়া, লেবুর রস মিশিয়ে একটি মাস্ক বানিয়ে মুখে লাগিয়ে রাখুন ১৫ মিনিট। শুকিয়ে গেলে কুসুম গরম পানিতে মুখ ধুয়ে ফেলুন।
৩৭। হলুদ ত্বকের বলিরেখা দূর করতে সাহায্য করে। ২/৩ চিমটি হলুদ গুঁড়া, চালের গুঁড়া, টমেটো রস,কাঁচা দুধের সাথে মিশিয়ে মুখে মাস্ক হিসাবে লাগিয়ে রাখুন ১৫ মিনিট। তারপর কুসুম গরম পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলুন। এটি ত্বকের ফাইন লাইন্স এবং ঝুলে পড়া ত্বক কে স্বাভাবিক করতে, ত্বক কে ফর্সা করতে অত্যন্ত কার্যকরী।
৩৮। ২/৩ চিমটি হলুদ গুঁড়ার সাথে মাখন মিশিয়ে চোখের নীচে লাগিয়ে রাখুন ২০ মিনিট। পরে ঠাণ্ডা পানি দিয়ে চোখ ধুয়ে ফেলুন। এটি চোখের নীচে বলিরেখা সহ কালো দাগও দূর করবে।
৩৯। ১ দিন পর পর বেসন, কাঁচা হলুদ বাটা, টক দই মিশিয়ে মুখ সহ সারা শরীরে লাগিয়ে রাখুন শুকানো না পর্যন্ত। শুকিয়ে গেলে ঘড়ির কাটার উলটো দিকে স্ক্রাব করে মাসাজ করুন। এটি ত্বকের ময়লা পরিষ্কার করার সাথে সাথে ত্বকের তারুণ্য ধরে রাখে ।
৪০। ত্বকের মোটা হয়ে যাওয়ার ফাটা দাগ, প্রেগ্নেন্সির স্ট্রেচ মার্ক দূর করতে বেসন, কাঁচা হলুদ মিশিয়ে ঐ নিদিষ্টও জায়গায় লাগালে ধীরে ধীরে দাগ কমতে শুরু করে।
৪১। প্রতিদিন ময়দা এবং কাঁচা হলুদ বাটা মিশিয়ে স্ক্রাব করলে, ত্বকের অবাঞ্ছিত লোম ধীরে ধীরে কমে আসবে।
৪২। গোসলের যাওয়ার আগে কাঁচা হলুদের সাথে, নারিকেল তেল অথবা ক্যাস্টর অয়েল মিশিয়ে ১৫ মিনিট লাগিয়ে রাখলে পায়ের ফাটা দাগ কমবে, পায়ের ত্বক সুন্দর এবং নরম থাকবে।
৪৩। গা ব্যথা হলে দুধের মধ্যে হলুদ মিশিয়ে খেতে পারেন। জয়েন্টের ব্যথা হলে হলুদের পেস্ট তৈরি করে প্রলেপ দিতে পারেন।
৪৪। হলুদের মধ্যে ফিনোলিক যৌগিক কারকিউমিন রয়েছে যা ক্যান্সার প্রতিরোধ করে।
৪৫। কাঁচা হলুদ ও শুকনো কমলার খোসা একত্রে বেটে স্ক্রাবার হিসাবে পুরো শরীরে ব্যবহার করতে পারেন। ত্বকে আসবে অন্য রকম গ্লো।
৪৬। সর্দি-কাশি হলে হলুদ খেতে পারেন। কাশি কমাতে হলে হলুদের টুকরা মুখে রেখে চুষুন। এছাড়া এক গ্লাস গরম দুধের মধ্যে হলুদের গুঁড়ো এবং গোলমরিচ গুঁড়ো মিশিয়ে পান করুন।
৪৭। বলিরেখা দূর করতে কাঁচা হলুদের সাথে দুধের সর মিশিয়ে মুখে মাখুন ফেস প্যাক হিসাবে। নিয়মিত লাগালে অবশ্যই দারুন উপকার পাবেন।
৪৮। হলুদ মোটা হওয়া থেকে বাঁচায়। হলুদে কারকিউমিন নামে এক ধরনের রাসায়নিক পদার্থ রয়েছে যা শরীরে খুব তাড়াতাড়ি মিশে যায়। শরীরের কলাগুলোকে বাড়তে দেয় না।
৪৯। যাদের প্রচুর ব্রণ ওঠে তাদের জন্য কাঁচা হলুদ জাদুর মতো কাজ দেয়। ব্রনের সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে কাঁচা হলুদ বাটা, আঙ্গুরের রস ও গোলাপ জল মিশিয়ে ব্রনের উপরে লাগান। কিছু সময় পর ধুয়ে ফেলুন। ব্রণ মিলিয়ে যাবে ও ইনফেকশন হবে না।
৫০। রোদেপোড়া দাগ কমাতে মসুর ডালবাটা, কাঁচা হলুদবাটা ও মধু একসাথে মিশিয়ে ত্বকে লাগান।
৫১। আয়ুর্বেদিক মতে, হলুদ নাকি রক্ত শুদ্ধ করে। তাই হলুদের ফুলের পেস্ট লাগালে চর্ম রোগ দূর হয়।
৫২। সূর্যের তাপে গা জ্বলে গেলে বা পুড়ে গেলে কাঁচা হলুদ বাটার মধ্য দই মিশিয়ে লাগান পোড়া ভাব দূর হয়ে যাবে।
References
- United States Department of Agriculture Agricultural Research Service. Basic Report: 02043, Spices, turmeric, ground. National Nutrient Database for Standard Reference Legacy Release [Internet]
- World Health Organization [Internet]. Geneva (SUI): World Health Organization; The top 10 causes of death.
- Wongcharoen W, Phrommintikul A. The protective role of curcumin in cardiovascular diseases. Int J Cardiol. 2009 Apr 3;133(2):145-51. PMID: 19233493
- Akazawa N et al. Curcumin ingestion and exercise training improve vascular endothelial function in postmenopausal women.. Nutr Res. 2012 Oct;32(10):795-9.PMID: 23146777
- DEVIN K. BINDERa, HELEN E. SCHARFMAN. Brain-derived Neurotrophic Factor. Growth Factors. 2004 Sep; 22(3): 123–131. PMID: 15518235
- V. Lobo, A. Patil, A. Phatak, N. Chandra. Free radicals, antioxidants and functional foods: Impact on human health. Pharmacogn Rev. 2010 Jul-Dec; 4(8): 118–126. PMID: 22228951
- Menon VP, Sudheer AR. Antioxidant and anti-inflammatory properties of curcumin. Adv Exp Med Biol. 2007;595:105-25. PMID: 17569207
- Biswas SK, McClure D, Jimenez LA, Megson IL, Rahman I. Curcumin induces glutathione biosynthesis and inhibits NF-kappaB activation and interleukin-8 release in alveolar epithelial cells: mechanism of free radical scavenging activity. Antioxid Redox Signal. 2005 Jan-Feb;7(1-2):32-41. PMID: 15650394
- Libby P. Inflammation in atherosclerosis. Nature. 2002 Dec 19-26;420(6917):868-74. PMID: 12490960
- Lumeng CN, Saltiel AR. Inflammatory links between obesity and metabolic disease. J Clin Invest. 2011 Jun;121(6):2111-7. PMID: 21633179
- Coussens LM, Werb Z. Inflammation and cancer. Nature. 2002 Dec 19-26;420(6917):860-7. PMID: 12490959
- Chainani-Wu N. Safety and anti-inflammatory activity of curcumin: a component of tumeric (Curcuma longa). J Altern Complement Med. 2003 Feb;9(1):161-8. PMID: 12676044
- Jayaraj Ravindran, Sahdeo Prasad, Bharat B. Aggarwal. Curcumin and Cancer Cells: How Many Ways Can Curry Kill Tumor Cells Selectively? AAPS J. 2009 Sep; 11(3): 495–510. PMID: 19590964
- Shrikant Mishra, Kalpana Palanivelu. The effect of curcumin (turmeric) on Alzheimer's disease: An overview. Ann Indian Acad Neurol. 2008 Jan-Mar; 11(1): 13–19.PMID: 19966973
- Chandran B, Goel A. A randomized, pilot study to assess the efficacy and safety of curcumin in patients with active rheumatoid arthritis. Phytother Res. 2012 Nov;26(11):1719-25. PMID: 22407780
- Menon VP, Sudheer AR. Antioxidant and anti-inflammatory properties of curcumin. Adv Exp Med Biol. 2007;595:105-25. PMID: 17569207
- Monika Nagpal and Shaveta Sood. Role of curcumin in systemic and oral health: An overview. J Nat Sci Biol Med. 2013 Jan-Jun; 4(1): 3–7. PMID: 23633828
- Rasyid A, Lelo A. The effect of curcumin and placebo on human gall-bladder function: an ultrasound study. Aliment Pharmacol Ther. 1999 Feb;13(2):245-9.PMID: 10102956
- National Center for Complementary and Integrative Health [Internet] Bethesda, Maryland; Turmeric
No comments:
Post a Comment
ধন্যবাদ