শিউলির উপকারিতা - ধর্ম্মতত্ত্ব

ধর্ম্মতত্ত্ব

ধর্ম বিষয়ে জ্ঞান, ধর্ম গ্রন্থ কি , হিন্দু মুসলমান সম্প্রদায়, ইসলাম খ্রীষ্ট মত বিষয়ে তত্ত্ব ও সনাতন ধর্ম নিয়ে আলোচনা

धर्म मानव मात्र का एक है, मानवों के धर्म अलग अलग नहीं होते-Theology

সাম্প্রতিক প্রবন্ধ

Post Top Ad

স্বাগতম

09 August, 2018

শিউলির উপকারিতা

শিউলি বা পারিজাত একটি গাছ অথবা গুল্মের মত বেড়ে উঠতে পারে। গুল্মটির উচ্চতা প্রায় 10-11 মিটার পর্যন্ত হয়। এর গায়ের পরতের মত বাকল রুক্ষ এবং ধূসর রঙের হয়। গাছের লম্বা পাতাগুলিতে রোম থাকে। এর ডালের প্রান্তে সাদা রঙের ফুল থোকায় থোকায় ফুটে থাকে। গাছের বাদামী রঙের বীজ গোল বা হৃদয়াকৃতির হয়। এই গাছ অল্প ছায়া-যুক্ত জায়গায় ভাল হয় এবং দৈনন্দিন খুব বেশি যত্নের প্রয়োজন হয় না।
শিউলি একটি অতি সুন্দর এবং ঔষধি ফুল গাছ। এর সুন্দর সাদা ফুলের শীতল এবং শান্ত সুবাস অনেকই পছন্দ করেন। এর ঔষধি গুণের জন্য আয়ুর্বেদ শাস্ত্রে এর অবস্থান খুবই উচ্চে। সাধারণ ভাবে এই গাছ পারিজাত বা রাতের জেসমিন নামে পরিচিত। ভারতীয় পৌরাণিক কাহিনী এবং লোককথাতে এই গাছটির একটি রহস্যময় স্থান রয়েছে। ভগবৎ গীতা এবং হরি-বংশ পুরাণে পারিজাত ফুল এবং গাছের উল্লেখ আছে। ভারতীয় পৌরাণিক সাহিত্য অনুসারে, পারিজাত একটি স্বর্গীয় গাছ। আপনি জানলে আশ্চর্য হবেন যে পারিজাত ফুল শুধু রাত্রিবেলাতেই ফোটে, এবং সকাল হতে না হতেই গাছ থেকে সব ফুল ঝড়ে পড়ে যায়। এই গাছ "রাতের রাণী" নামে বিখ্যাত। আশ্চর্যের ব্যাপার, এই গাছের বৈজ্ঞানিক নামের অর্থ "দুঃখের বৃক্ষ"।
শিউলি সম্পর্কে কিছু মৌলিক তথ্য:

বৈজ্ঞানিক নাম: নিকট্যান্থেস আরবর-ট্রিস্টিস
পরিবার: ওলিয়েসি
সংস্কৃত নাম: পারিজাত, শেফালি, শেফালিকা
সাধারণ নাম: পারিজাত, হারসিংগার, দুঃখের বৃক্ষ, রাতের রাণী, রাতের জেসমিন, কোরাল জেসমিন, শিউলি, রাত কি রাণী
যে অংশ ব্যবহৃত হয়: পাতা, ফুল, বীজ
স্থানীয় অঞ্চল এবং ভৌগলিক বিতরণ: শিউলি দক্ষিণ এশিয়ার গাছ। এই গাছ মূলত পাওয়া যায় উত্তর ভারতে, নেপালে, পাকিস্তানে এবং থাইল্যান্ডে।
ভারতবর্ষের অঙ্গরাজ্য পশ্চিম বঙ্গ রাজ্যের অফিসিয়াল ফুল হল শিউলি। এটি হিন্দু উৎসবগুলিতে দেবী দুর্গা এবং শ্রীবিষ্ণুর জন্য একটি উৎসর্গ হিসাবে ব্যবহৃত হয়।

স্বাস্থ্য রক্ষার্থে শিউলির উপকারিতা -
শিউলি থেকে বিবিধ স্বাস্থ্য সংক্রান্ত উপকার পাওয়া যায়। এর অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট, অ্যান্টি-ইনফ্লামেটারি এবং অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল গুণগুলি মানুষের স্বাস্থ্য এবং মঙ্গলের জন্য একটি আশীর্বাদ। এর নিরাময়কারী বৈশিষ্ঠগুলি দেখা যাক।

কাশি উপশম করে: শিউলির নির্যাস ব্রংকিয়াল পেশীগুলিকে শিথিল করে, ফলে কাশি এবং ব্রঙ্কাইটিস'এর উপসর্গগুলি দূর হয়।
জ্বর কমায়: সাম্প্রতিক কিছু গবেষণা শিউলির অ্যান্টি-পাইরেটিক (জ্বর-বিরোধী) ক্রিয়া প্রদর্শন করেছে। ঐতিহ্যগতভাবে দেহের তাপমাত্রা কমাতে এবং জ্বর কমিয়ে আনতে শিউলি সাধারণত চা'এর মত করে পান করতে দেওয়া হয়।

ম্যালেরিয়ার উপসর্গ হ্রাস করে: পরীক্ষা করে দেখা গিয়েছে যে শিউলি পাতার পেস্ট খেতে দিলে ম্যালেরিয়ার উপসর্গগুলি হ্রাস পায়, দেহ থেকে ম্যালেরিয়ার প্যারাসাইটগুলি নষ্ট হয়, রক্তের প্লেটলেট'এর সংখ্যা বৃদ্ধি পায় এবং শরীরের সামগ্রিক স্বাস্থ্য ভাল থাকে।
উদ্বেগ হ্রাস করে: মানসিক চাপ এবং উদ্বেগ হ্রাস করার জন্য অ্যারোমাথেরাপিতে শিউলির তেল ব্যবহার করা হয়। মস্তিষ্কে সেরোটোনিন'এর মাত্রা বৃদ্ধি পায় এবং মেজাজ নিয়ন্ত্রণ করে, ফলে আপনি খুশি থাকেন।
অন্ত্রের কীট অপসারণ করে: প্রাণীদের উপরে গবেষণা থেকে জানা যায় শিউলির অ্যান্টহেলমিন্টিক (মানুষের অন্ত্রের কীট নির্মূল করা) গুণ রয়েছে। যদিও মানুষের উপর গবেষণার তথ্য না থাকায় এর উপকারিতা জানার জন্য একজন চিকিৎসকের সাথে কথা বলা উচিত।

সন্ধি-বাত এবং সায়াটিকাতে শিউলি -
সন্ধি-বাত এবং সায়াটিকা বিশ্বের সবচেয়ে প্রচলিত প্রদাহজনক রোগ। সন্ধি-বাত হল হাড়ের জোড়গুলোতে প্রদাহ, আর সায়াটিকা হল সায়াটিকা স্নায়ুতে তীব্র ব্যথা। শরীরের দীর্ঘতম স্নায়ু হল সায়াটিকা স্নায়ু, যা পিঠের নিচ থেকে গোড়ালি পর্যন্ত যায়। বর্তমানে এই দুটি রোগের চিকিৎসায় ফিজিও থেরাপি এবং শক্তিশালী অ্যান্টিবায়োটিক, এই দুটি পদ্ধতির চিকিৎসা ব্যবস্থা আছে। দ্বিতীয়টি, আমরা জানি, যে এর অনেক পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া আছে। এই সময়ে গবেষকরা অবশেষে ভেষজ ও আয়ুর্বেদিক প্রতিকারের শরণাপন্ন হচ্ছেন। আয়ুর্বেদিক চিকিৎসকরা সন্ধি-বাতের ব্যথা কমাতে শিউলির ক্কাথ ব্যবহারের পরামর্শ দেন।

প্রাণীদের উপরে সাম্প্রতিক একটি গবেষণাতে দেখা গিয়েছে যে শিউলির পাতার নির্যাস একটি চমৎকার প্রদাহ-বিরোধী ওষুধ। তবে শিউলি ব্যবহারের আগে আপনার আয়ুর্বেদ চিকিৎসকের সাথে পরামর্শ করে নেবেন।

শিউলির অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল গুণ - 
 একটি গবেষণা-ক্রমে দেখা গিয়েছে যে শিউলির নির্যাস সাধারণ রোগ সৃষ্টিকারী ব্যাকটেরিয়ার বৃদ্ধি রোধ করে, ফলে রোগ প্রতিরোধ এবং সংক্রমণ হ্রাস করে।
ত্বকের উপকারী: শিউলির চমৎকার অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট এবং অ্যান্টি-ইনফ্লামেটারি গুণ আছে। ব্রণ প্রতিরোধ করতে এবং বয়স বৃদ্ধির প্রারম্ভিক লক্ষণগুলির বিকাশ বিলম্বিত করতে শিউলি উপকারী।
উদ্ভিজ্জাণুগুলির প্রতিরোধী বংশগুলির বিকাশ বিশ্বব্যাপী বিজ্ঞানীদের বিকল্প চিকিৎসাগুলির সন্ধানে ব্যাপৃত করেছে। গবেষকরা দাবি করেন যে আয়ুর্বেদিক ঔষধিগুলির এবং ব্যাকটেরিয়াগুলির একই সাথে ক্রমবিকাশ হওয়ার ফলে এক সাথে দীর্ঘ কাল ধরে সহাবস্থানে আছে। অতএব, এই উদ্ভিদ-ভিত্তিক ওষুধগুলির বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলা এই জীবাণুগুলির পক্ষে কঠিন হবে। আয়ুর্বেদ ও লোক চিকিৎসা পদ্ধতি শিউলিকে একটি কার্যকর অ্যান্টি-মাইক্রোবিয়াল এজেন্ট হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। দুটি বিভিন্ন গবেষণাতে এই ঔষধি ব্যবহার করার সেরা পদ্ধতি জানতে শিউলির নির্যাস দুটি ভিন্ন দ্রাবক দিয়ে তৈরি করা হয়। দেখা গেল যে বিভিন্ন দ্রাবক দিয়ে প্রস্তুত বিভিন্ন নির্যাসগুলি বিভিন্ন ধরণের উদ্ভিজ্জাণুগুলির বিরুদ্ধে বিভিন্ন ভাবে কাজ করে। এই গবেষণাতে দ্রাবক হিসাবে ব্যবহার করে হয়েছে জল, ইথানল, মিথানল এবং ক্লোরোফর্ম, এবং দেখা গিয়েছে যে নির্যাসগুলি বহু ধরণের উদ্ভিজ্জাণু ধ্বংস করতে পারে, যেমন এশেরেশিয়া কোলি, সিউডোমনাস, স্যালমোনেলা, ব্যাসিলাস, স্ট্যাফাইলোকক্কাস, লিস্টেরিয়া, ক্লেবসিয়েলা প্রভৃতি। এই অবস্থাগুলির যে কোন একটিতে আপনি শিউলির প্রয়োগ করার আগে আপনার আয়ুর্বেদিক চিকিৎসকের সাথে পরামর্শ করে নেবেন।

কাশিতে শিউলি -
আপনি কি ক্রমাগত কাশিতে ভুগছেন? আপনার গলা কি বন্ধ হয়ে আসে এবং জ্বালা হয়? চিকিৎসকরা বলেন এটি গলা অথবা ফুসফুসের সংক্রমণ হতে পারে। শ্বাস-যন্ত্রে (ফুসফুস, নাক, শ্বাসনালী) কোন বাধা থাকলে তার প্রাকৃতিক প্রতিক্রিয়া হল কাশি। কিন্তু একটি সংক্রমণ বা এলার্জি পরিস্থিতিকে আরও খারাপ এবং দীর্ঘ করে।  কাশি, সর্দি এবং ব্রংকাইটিস থেকে আরাম পেতে আয়ুর্বেদে, শিউলির পাতা এবং ফুল দিয়ে চা তৈরি পান করা হয়। সাম্প্রতিক গবেষণা জানাচ্ছে যে শিউলির ইথানল নির্যাস একটি চমৎকার ব্রংকোডায়ালেটার (গলার পেশিগুলি শিথিল করে)। গবেষণাটি আরও ইঙ্গিত করছে যে ভবিষ্যতে হাঁপানি রোগের চিকিৎসায় শিউলি ব্যবহার করা হতে পারে। অধিকন্তু, দাবি করা হচ্ছে যে শিউলি একটি প্রদাহ-বিরোধী ঔষধি। এই ভাবে, এই গাছের অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল এবং প্রদাহ-বিরোধী গুণগুলি সংক্রমণ দমন করে এবং গলার পেশিগুলিকে আরাম দেয়।

জ্বরে শিউলির পাতা - 
ঐতিহ্যগত চিকিৎসাতে শিউলি একটি পরিচিত অ্যান্টি-পাইরেটিক (জ্বর কমায়)। দীর্ঘ স্থায়ী জ্বর কমাতে আয়ুর্বেদিক চিকিৎসকরা শিউলির চা পান করার পরামর্শ দেন। সাম্প্রতিক গবেষণা জানাচ্ছে যে শিউলি গাছের ছালের নির্যাস একটি উপকারী অ্যান্টি-পাইরেটিক হতে পারে। তবে মানুষের উপরে গবেষণার অভাবে, ভাল হয় যদি শিউলির অ্যান্টি-পাইরেটিক গুণগুলি জানার জন্য আপনার আয়ুর্বেদিক চিকিৎসকের সাথে কথা বলেন।

দেহের সুরক্ষায় শিউলি -
দেহের সুরক্ষা ব্যবস্থা তৈরি করতে আয়ুর্বেদ দীর্ঘ দিন ধরেই শিউলি ব্যবহার করে আসছে। দেহের সুরক্ষা ব্যবস্থার উন্নতিতে শিউলির উপকারিতা জানতে গবেষণাগারে পরীক্ষা করে হয়েছিল। দেখা গিয়েছে যে শিউলি পাতার ইথানল নির্যাস হিউমোরাল (অ্যান্টিবডির মধ্যস্থতায়) এবং কোষের মধ্যস্থতায় (অ্যান্টিবডির পরিবর্তে ইমিউন কোষ দ্বারা মধ্যস্থতায়)সুরক্ষাকে উজ্জীবিত করে। অবশ্য, এই বিষয়ে আরও গবেষণার প্রয়োজন আছে। কাজেই, শিউলি কি করে দেহের সুরক্ষা ব্যবস্থায় কাজ করে তা জানার জন্য আপনার আয়ুর্বেদ চিকিৎসকের সাথে কথা বলুন।

ম্যালেরিয়ার চিকিৎসায় শিউলি -
ম্যালেরিয়া একটি মশক-বাহিত রোগ। এই রোগের কারণ প্লাজমোডিয়াম নামে একটি পরজীবী। এই রোগের বৈশিষ্ঠ হল জ্বর, পেশীর ব্যথা এবং বমি হওয়া যা পরে রোগ বৃদ্ধি পেলে খিঁচুনি এবং তীব্র জ্বর হওয়া। চিকিৎসা না করলে, ম্যালেরিয়াতে মৃত্যু হতে পারে। ম্যালেরিয়ার উপসর্গগুলি হ্রাস করতে ভারতীয় ঐতিহ্যগত চিকিৎসায় শিউলির ব্যবহার করা হয়। ম্যালেরিয়ার উপসর্গ হ্রাস করতে শিউলির ভূমিকা জানার জন্য অনেক গবেষণা হয়েছে। এই গবেষণাগুলি থেকে ইঙ্গিত পাওয়া যায় যে আয়ুর্বেদের দাবি সত্যি। একটি সাম্প্রতিক গবেষণাতে 20 জন ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত রোগীদের এক সপ্তাহ ধরে শিউলি পাতার পেস্ট খেতে দেওয়া হয়েছিল। দেখা গিয়েছিল যে অর্ধেক রোগীর জ্বর এবং পরজীবীর সংখ্যা কমে গিয়েছিল। এই গবেষণাতে আরও দেখা গিয়েছিল যে রোগীদের প্রদাহও বিশেষ ভাবে কমে গিয়েছিল। উপরন্তু, রক্তের প্লেটলেট'এর মাত্রা বৃদ্ধি পেয়েছিল, এবং শরীরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের সামগ্রিক কার্যক্ষমতাও বৃদ্ধি পেয়েছিল। কাজেই নিরাপদে বলা যেতেই পারে যে ম্যালেরিয়া-বিরোধী ঔষধি হিসাবে শিউলির ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল।

মধুমেহ রোগে শিউলি -
জানা আছে যে শিউলি পাতা রক্তের শর্করার মাত্রা হ্রাস করতে ব্যবহার করা হয়। প্রাণীদেহের পরীক্ষাতে জানা গিয়েছে যে শিউলি ফুলের নির্যাসের শক্তিশালী মধুমেহ বিরোধী প্রভাব আছে। মানব দেহে এখনও এর প্রভাব গবেষণা হয়নি, তাই শিউলির মধুমেহ বিরোধী প্রভাবের ব্যাপারে আপনার আয়ুর্বেদিক চিকিৎসকের সাথে কথা বলে বুঝে নিন।

অন্ত্রের কীটের জন্য শিউলি -
গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল ট্র্যাক্ট'এ কীট এমন একটি অবস্থা যেখানে অন্ত্রে পরজীবী কিটের সংক্রমণ হয়েছে। বিভিন্ন ধরণের কীটকে অন্ত্রের পরজীবী কীট বলা হয়, যেমন রাউন্ডওয়ার্ম, ফ্ল্যাটওয়ার্ম এবং হুকওয়ার্ম। এই সংক্রমণের উপসর্গ হল অন্ত্রের অস্বস্তি, উদরাময় (ডায়রিয়া) এবং কখনও কখনও রক্তাল্পতা (এ্যানিমিয়া)। এই রোগের প্রাথমিক কারণ হিসাবে চিকিৎসকরা চিহ্নিত করেন সংক্রমিত খাদ্য, অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ এবং স্বাস্থ্য-ব্যবস্থা। অন্ত্রের কীটের (ইন্টেস্টেনাল ওয়ার্ম) চিকিৎসার সাধারণ আয়ুর্বেদিক প্রতিকার হল শিউলি। শিউলির পরজীবী  বিরোধী (এ্যান্টহেলমিনটিক প্রভাব) ক্ষমতা নিশ্চিত করার বিষয়ে বেশির ভাগ গবেষণাই হয়েছে প্রাণীদেহে। মানবদেহে পরীক্ষার তথ্যের অভাবে একজন আয়ুর্বেদ চিকিৎসকের সাথে আলোচনা করে শিউলির এ্যান্টহেলমিনটিক প্রভাবের বিষয়ে জেনে নেওয়াই ভাল।

উদ্বেগের জন্য শিউলি -
অ্যারোমাথেরাপি (সুগন্ধ দিয়ে চিকিৎসা) এবং ভেষজ চিকিৎসা পদ্ধতিতে মন শান্ত করার ক্ষমতা থাকার জন্য শিউলির তেল ব্যবহার করা হয়। প্রাণীদের উপরে পরীক্ষা ইঙ্গিত দেয় যে শিউলির পাতার নির্যাসের কিছুটা উদ্বেগ হ্রাস এবং মনকে শান্ত করার ক্ষমতা আছে। আরও গবেষণা জানাচ্ছে যে শিউলির নির্যাস আমাদের মস্তিষ্কে সেরোটোনিন'এর মাত্রা বৃদ্ধি করে। সেরোটোনিন ঘুমাতে সাহায্য করে। এই ঔষধির কার্যক্ষমতা প্রতিষ্ঠা করবার জন্য মানব দেহে গবেষণা বাকি আছে। একজন পেশাদারের সাথে আলোচনা করেই তবে শিউলির ব্যবহার করা উচিত।


ক্ষত এবং হাড়ের ফাটলের জন্য শিউলি -
পরম্পরাগত চিকিৎসায় ক্ষত (দেহের বাইরের এবং ভিতরের) নিরাময় বৈশিষ্ট্যর জন্য এবং ভাঙ্গা হাড়ের (ফ্র্যাকচারড বোন) চিকিৎসার জন্য শিউলি সুপরিচিত। কিন্তু শিউলির এই গুণগুলি মানব-কল্যাণে প্রয়োগ করার বিষয়ে কোন বিশ্বাসযোগ্য গবেষণা এখনও হয়নি।

ত্বকের উপকারে শিউলি -
ত্বকের জন্য শিউলি একটি আশীর্বাদ। পরম্পরাগত চিকিৎসাতে ত্বকের উপরে শিউলির উপকারী প্রভাবের কথা বলা আছে। পরীক্ষাগারের গবেষণাগুলি জানায় যে এই উদ্ভিদের ফুলের নির্যাস একটি চমৎকার অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট। কাজেই দেহের ফ্রি র‍্যাডিকেল জনিত ক্ষতির মোকাবেলার জন্য এটি একটি আদর্শ বস্তু। ফ্রি র‍্যাডিকেল অথবা প্রতিক্রিয়াশীল অক্সিজেন দেহের সব মুখ্য অঙ্গের পক্ষে ক্ষতিকারক। চাপ বা অন্যান্য শারীরিক কারণে দেহে অধিক পরিমাণে ফ্রি র‍্যাডিকেল জমে গেল শরীরের সামগ্রিক কর্মক্ষমতা হ্রাস পায়। কাজেই শিউলি, একটি অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট হিসাবে, আমাদের কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি করতে পারে এবং অকাল বার্ধক্যের চিহ্নগুলি, যেমন ত্বকের গাঢ় দাগ এবং কালো ছোপ হ্রাস করতে পারে। জীবাণু-বিরোধী এবং প্রদাহ-বিরোধী গুণ থাকার ফলে এই ঔষধিটি হয়ত ত্বকের বিভিন্ন প্রকারের সমস্যার সমাধান করতে পারে। অবশ্য, কোন ভাবে শিউলি ব্যবহারের আগে চিকিৎসকের সাথে কথা বলে নেওয়া ভাল।

চুলের উপকারে শিউলি -
চুল পড়া বন্ধ করার আয়ুর্বেদিক প্রতিকার হল শিউলি। উকুন এবং খুশকি বিতারণের জন্য আয়ুর্বেদিক চিকিৎসকরা শিউলির বীজের কাঁধা অথবা চা ব্যবহার করার পরামর্শ দেন। শিউলি ফুল চুলের পুষ্টি যোগায়, এবং পরম্পরাগত ভাবে চুলের দৈর্ঘ্য বৃদ্ধির জন্য ব্যবহার করা হয়। চুলের উপরে এই গাছের প্রভাব নিয়ে যদিও সরাসরি কোন গবেষণা হয়নি, তবুও এর অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট, প্রদাহ বিরোধী এবং জীবাণু নিধন ক্ষমতার কথা এখানে উল্লেখ করতেই হয়। অর্থাৎ মাথার ত্বকের সাধারণ সমস্যাগুলি দূর করতে, অকাল পতন রোধ করতে এবং চুলের সাধারণ রোগগুলি নিরাময় করতে ভবিষ্যতে শিউলির ক্ষমতার ব্যবহার করার সম্ভাবনা আছে।

শিউলির ব্যবহার -
বাড়িতেই শিউলির পাতা এবং ফুলের কাঁধা অথবা চা তৈরি করে ব্যবহার করা যেতে পারে।
বাণিজ্যিক ভাবে বাজারে শিউলির বড়ি, চূর্ণ এবং ক্যাপসুল পাওয়া যায়।
স্বাস্থ্য সংক্রান্ত বিভিন্ন কারণে হোমিওপ্যাথিক ওষুধে এর এলকোহলিক নির্যাস ব্যবহার করা হয়।
চুলের দৈর্ঘ্য বৃদ্ধি করতে শিউলির তেল ব্যবহার করা হয়।
শিউলির অপরিহার্য তেল (এসেনশিয়াল অয়েল) এ্যারোমাথেরাপিতে ব্যবহার করা হয়। এর ফুলের সুগন্ধ কোন কোন বায়ু বিশুদ্ধিকারকে (এয়ার ফ্রেশনার) ব্যবহার করা হয়।
কাপড় রঙ করার জন্য এবং মিষ্টান্ন প্রস্তুত করার জন্য এর ফুল ব্যবহার করা হয়। এর স্বতন্ত্র তিক্ত স্বাদের জন্য শিউলির কচি পাতা বাঙালীদের সুক্তো রন্ধনে ব্যবহার করা হয়।
শিউলির মাত্রা - 
শিউলির ব্যবহারের কোন সঠিক মাত্রা জানা নেই। কাজেই একজন আয়ুর্বেদ চিকিৎসকের সাথে পরামর্শ করে আপনার দেহের এবং মনের অবস্থার কথা বিবেচনা করে শিউলির সঠিক মাত্রা নির্ধারণ করা উচিৎ।

শিউলির পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া -
মানবদেহে গবেষণার অভাবে শিউলির কোন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার কথা জানা নেই। তবে দেখা গিয়েছে এই গাছের নির্যাস প্রাণীদের পাকস্থলীতে ক্ষত সৃষ্টি করতে পারে। কাজেই একজন আয়ুর্বেদ চিকিৎসকের সাথে পরামর্শ করে এই গাছের সম্ভাব্য প্রভাবের কথা জেনে নেওয়া উচিৎ।


References

  1. Puri A et al. Immunostimulant activity of Nyctanthes arbor-tristis L. J Ethnopharmacol. 1994 Mar;42(1):31-7. PMID: 8046941
  2. Chhaya S. Godse et al . Antiparasitic and disease-modifying activity of Nyctanthes arbor-tristis Linn. in malaria: An exploratory clinical study. J Ayurveda Integr Med. 2016 Oct-Dec; 7(4): 238–248. PMID: 27914754
  3. Agrawal J, Shanker K, Chanda D, Pal A. Nyctanthes arbor-tristis positively affects immunopathology of malaria-infected mice prolonging its survival.. Parasitol Res. 2013 Jul;112(7):2601-9. PMID: 23624584
  4. Agrawal J, Pal A. Nyctanthes arbor-tristis Linn--a critical ethnopharmacological review. J Ethnopharmacol. 2013 Apr 19;146(3):645-58. PMID: 23376280
  5. Bramanage Sachini Rangika, Pavithra Dilakshini Dayananda, Dinithi Champika Peiris. Hypoglycemic and hypolipidemic activities of aqueous extract of flowers from Nycantus arbor-tristis L. in male mice. BMC Complement Altern Med. 2015; 15: 289. PMID: 26285827
  6. World Health Organization [Internet]. Geneva (SUI): World Health Organization; Intestinal worms.
  7. Sanjita Das, D. Sasmal, S. P. Basu. Evaluation of CNS Depressant Activity of Different Plant parts of Nyctanthes arbortristis Linn. Indian J Pharm Sci. 2008 Nov-Dec; 70(6): 803–806. PMID: 21369448
  8. Saxena RS, Gupta B, Lata S. Tranquilizing, antihistaminic and purgative activity of Nyctanthes arbor tristis leaf extract. J Ethnopharmacol. 2002 Aug;81(3):321-5. PMID: 12127232
  9. Anowar Hussain, Anand Ramteke. Flower extract of Nyctanthes arbor-tristis modulates glutathione level in hydrogen peroxide treated lymphocytes. Pharmacognosy Res. 2012 Oct-Dec; 4(4): 230–233. PMID: 23225968
  10. Bibhuti Bhusan Kakoti, Paresh Pradhan, Sudarshana Borah, Kabita Mahato, Mritunjay Kumar. Analgesic and Anti-Inflammatory Activities of the Methanolic Stem Bark Extract of Nyctanthes arbor-tristis Linn.. Biomed Res Int. 2013; 2013: 826295. PMID: 23984409

No comments:

Post a Comment

ধন্যবাদ

বৈশিষ্ট্যযুক্ত পোস্ট

মনুস্মৃতি প্রথম অধ্যায়

স্মৃতি শাস্ত্রের মধ্যে মনুস্মৃতিকেই প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। যেমন বৃ্হস্পতিস্মৃতিতে বলা হয়েছে- বেদার্থপ্রতিবদ্ধত্বাত্ প্রাধাণ্যং তু মনো: স্মৃত...

Post Top Ad

ধন্যবাদ