তুলসী গাছ ভারতে বৈদিক কাল থেকে ফলানো হয়ে আসছে এবং হিন্দুরা এটিকে পবিত্র মনে করে। এটি সাধারণত মন্দিরের আশেপাশে রোপণ করা হয় এবং বেশিরভাগ ভারতীয় বাড়িতে পাওয়া যায়। তুলসী গাছের মাপ এবং রঙ ভূগোল, বৃষ্টিপাত এবং গাছের ধরণের ওপর নির্ভর করে।
বেসিল বা তুলসী কে “গাছড়ার রাণী” বা “জীবনের স্পর্শমণি” বলা হয়। অন্যান্য গাছড়ার মধ্যে এর একটি অতুলনীয় মর্যাদা রয়েছে এর ঔষধীয়, রন্ধন বিষয়ক এবং আধ্যাত্মিক বৈশিষ্ট্যের জন্য। তুলসী তিনটি ধরণের হয়। রাম তুলসী যার সবুজ পাতা, কৃষ্ণ তুলসী যার বেগুনি পাতা এবং বন তুলসী যেটি একটি বুনো ধরণ এবং এর হালকা সবুজ পাতা।
রান্না থেকে ওষুধ অবধি এর বিস্তৃত ব্যাপ্তি রয়েছে ব্যবহারে। তুলসীর সুগন্ধ এবং তিক্ত স্বাদ সালাদ এবং সসের সাথে খেলে জিভে জল চলে আসে। প্রাচীনকালে তুলসীকে শুদ্ধতার প্রতিক ধরা হত। বিশ্বাস করা হয় যে তুলসী গাছের সামনে গিয়ে এর ঘ্রাণ নিলেই অনেক ধরণের সংক্রমণ থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে।
আধ্যাত্মিক মর্যাদার কারণে তুলসীকে পবিত্র তুলসী বলা হয়ে থাকে। আয়ুর্বেদে, তুলসী পরিচিত বিস্তৃত স্বাস্থপকারিতার প্রদানকারী হিসেবে। তুলসীর জীবাণু-বিরোধী, প্রদাহ-বিরোধী, বাত-বিরোধী, কেমো-প্রতিরোধী, যকৃৎ সুরক্ষাকারী, ডায়বিটিস-বিরোধী, হাঁপানি-বিরোধী বৈশিষ্ট্য রয়েছে।
তুলসীর ব্যপারে কিছু মৌলিক তথ্যঃ
বোটানিকাল নামঃ অসিমাম সাঙ্কটাম
পরিবারঃ লামিয়াসি
প্রচলিত নামঃ তুলসী
সংস্কৃত নামঃ তুলসী
অন্যান্য নামঃ পবিত্র তুলসী, রাম তুলসী, শ্যাম তুলসী
উৎস এবং ভৌগোলিক অবস্থানঃ তুলসী ভারতের স্থানীয় এবং এটি মধ্য আফ্রিকা থেকে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার গ্রীষ্মপ্রধান অঞ্চলেও পাওয়া যায়।
মজাদার তথ্যঃ পরিবেশবিদ এবং বৈজ্ঞানিকেরা তাজ মহলের পাশে দশ লাখ তুলসী গাছ পুঁতেছেন এই স্মৃতিস্তম্ভটিকে দূষণের হাত থেকে রক্ষা করার জন্যে।
তুলসীর পুষ্টিগুণের তথ্য -
তুলসী প্রোটিন, ভিটামিন, খনিজ বস্তু, খাদ্যগত ফাইবার, ফ্লাভোনয়েড এবং বিবিধ জৈব যৌগর একটি ভাল উৎস। এতে থাকা ফ্লাভোনয়েড ব্রণ, হাঁপানি, প্রদাহ এবং শ্বাসজনিত সমস্যায় সাহায্য করতে পারে।
ইউএসডিএ জাতীয় পুষ্টিগুণের ডেটাবেস অনুযায়ী, 100গ্রা তুলসীতে নিম্নোক্ত পুষ্টিগুণ থাকেঃ
পুষ্টিগুণ মুল্য প্রতি 100 গ্রা
জল 92.06 গ্রা
শক্তি 23 কিক্যাল
প্রোটিন 3.15 গ্রা
চর্বি 0.64 গ্রা
কার্বোহাইড্রেট 2.65 গ্রা
ফাইবার 1.6 গ্রা
চিনি 0.30 গ্রা
খনিজ
ক্যালসিয়াম 177 মিগ্রা
লোহা 3.17 মিগ্রা
ম্যাগনেসিয়াম 64 মিগ্রা
ফসফরাস 56 মিগ্রা
পটাসিয়াম 295 মিগ্রা
সোডিয়াম 4 মিগ্রা
জিঙ্ক 0.81 মিগ্রা
ভিটামিন
ভিটামিন এ 264 µগ্রা
ভিটামিন বি1 0.034 মিগ্রা
ভিটামিন বি2 0.076 মিগ্রা
ভিটামিন বি3 0.902 মিগ্রা
ভিটামিন বি6 0.155 মিগ্রা
বিতামিন বি9 68 µগ্রা
ভিটামিন সি 18.0 মিগ্রা
ভিটামিন ই 0.80 মিগ্রা
ভিটামিন কে 414.8 µগ্রা
চর্বি/ফ্যাটি অ্যাসিড
পরিপৃক্ত 0.041 গ্রা
একক পরিপৃক্ত 0.088 গ্রা
বহু পরিপৃক্ত 0.389 গ্রা
তুলসীর স্বাস্থপকারিতা -
অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হিসেবেঃ তুলসী একটি শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সক্রিয় জৈব যৌগ থাকার দরুন। এই গুনের কারণে এটি আপনার ত্বক এবং চুলের জন্য দুর্দান্ত। এটি আপনার শরীরকে শুধুমাত্র অক্সিডেটিভ চাপ এবং ক্ষতি থেকেই রক্ষা করে তা নয় এটি আপনার ত্বক এবং চুলের বিন্যাস উন্নত করে। উপরন্তু, এটি সরিয়াসিস, কুষ্ঠ, চর্মরোগের মত বিভিন্ন ত্বকের সংক্রমণের বিরুদ্ধে কার্যকর। এটি একটি জীবাণু-বিরোধী প্রতিনিধি এবং এটি ত্বকে আঘাত বা পোকার কামড় নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে। চুলের প্রসঙ্গ এলে, তুলসীর ব্যবহারে শুধুমাত্র চুল পাকা বিলম্বিত হয় বা চুল পড়া কমায় তা নয়, টাক পড়ার হাত থেকেও মুক্তি পাওয়া যায়।
মৌখিক স্বাস্থের জন্যঃ তুলসী দাঁতের ক্ষয়, দাঁতে ব্যথা এবং জিঞ্জিভাইটিস নিয়ন্ত্রণ করতে কার্যকর।
পেটের জন্যঃ তুলসী কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে মুক্তি দেয় হজম প্রক্রিয়াকে উন্নত করে। তুলসীর মিশ্রণ খিদে বাড়াতে কার্যকর।
চাপের জন্যঃ তুলসী কার্যকর শারীরিক, মানসিক, রাসায়নিক এবং বিপাকীয় চাপ নিয়ন্ত্রণ করতে কার্যকর।
চোখ এবং কানের জন্যঃ চোখের ড্রপের আকারে তুলসীর ব্যবহার গ্লকোমা, ছানি এবং আঞ্জনির মত অবস্থা থেকে রেহাই দেয়। তুলসী মধ্য কানের সংক্রমণ এবং ব্যথা থেকে মুক্তি দেয়।
ক্যানসারের বিরুদ্ধেঃ প্রচুর গবেষণা তুলসীর ক্যানসার-বিরোধী সম্ভাব্যতা খতিয়ে দেখেছে এবং এটিকে পাকস্থলীর ক্যানসারের নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রেও কার্যকর পাওয়া গেছে।
ক্যানসার বলতে বোঝায় শরীরে কোষের অস্বাভাবিক বৃদ্ধি। সারা বিশ্বে ব্যপক গবেষণা করা হয়েছে ক্যানসার-বিরোধী চিকিৎসায় প্রাকৃতিক বিকল্প খোঁজার জন্য কারণ বর্তমান চিকিৎসার পদ্ধতিতে প্রচুর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া রয়েছে। এই প্রবনতা অনুসরণ করে বিভিন্ন গবেষণা তুলসীকে তার ক্যানসার-বিরোধী বৈশিষ্ট্যের জন্য সংযুক্ত করে। একটি প্রাক-ক্লিনিকাল গবেষণা করা হয়েছিল তুলসী এবং নিমের পাতার নির্যাস ব্যবহার করে। এই গবেষণাটি প্রদর্শিত করে যে তুলসীর নির্যাস পাকস্থলীর ক্যানসার প্রতিরোধ করতে কার্যকর। কোষের অস্বাভাবিক বৃদ্ধিও উল্লেখযোগ্য পরিমাণে কমে। আরেকটি গবেষণা দেখায় যে তুলসীতে আরসলিক এবং ওলিয়ানলিক অ্যাসিড রয়েছে যার ক্যানসার-বিরোধী ক্রিয়া রয়েছে।
তুলসীর একটি বিকিরণ থেকে সুরক্ষাকারী ক্ষমতা রয়েছে যা স্বাস্থ্যবান কোষগুলিকে বিকিরণের ক্ষতিকারক প্রভাব থেকে রক্ষা করে। উপরন্তু, তুলসীর প্রদাহ-বিরোধী বৈশিষ্ট্য প্রদাহ প্রতিরোধ করে যেটি ক্যানসারের মূল কারণ হিসেবে ধরা হয়।
তুলসীর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হিসেবে ক্ষমতা -
ফ্রি র্যাডিকাল হল অস্থিতিশীল অনু যা কোষের ক্ষতি করে এবং ফলত ক্যানসারের মত রোগ এবং কার্ডিওভাসকুলার সমস্যা দেখা দেয়। অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হল প্রাকৃতিক উপাদান যা ফ্রি র্যাডিকাল থেকে হওয়া ক্ষয় প্রতিরোধ করে। সেহেতু ফ্রি র্যাডিকাল এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের মধ্যে একটা ভারসাম্য বজায় রাখা গুরুত্বপূর্ণ। এই দুটির মধ্যে অমিলের কারণে যেটা হয় তা হল অক্সিডেটিভ চাপ। প্রচুর গবেষণা দেখিয়েছে যে তুলসীর ক্ষমতা রয়েছে শরীরকে অক্সিডেটিভ চাপ থেকে হওয়া ক্ষয় থেকে রক্ষা করার এতে উচু মাত্রায় থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের কারণে।
একটি পশু ভিত্তিক গবেষণা ইঙ্গিত করে যে একটি ভেষজ পাউডারে, যার প্রধান উপাদান হল তুলসী, প্রচুর পরিমাণে ক্যাটালেস এবং গ্লুথাথিওন ট্রান্সফেরেসের মত অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে।
(আরও পড়ুনঃ অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের খাদ্যে উৎস)
চুলের জন্য তুলসীর উপকারিতা -
লোকজনের যত বয়স বাড়ে, তত তারা সমস্যার সম্মুখিন হন যা শুধুমাত্র তাদের ত্বক নিয়েই নয়, তাদের চুল নিয়েও। চুল পেকে যাওয়া, চুল পড়া, চুল পাতলা হয়ে যাওয়া এবং টাক পরে যাওয়া হল সাধারণ সমস্যা যা লোকে বয়স বাড়ার সাথে সাথে সম্মুখিন হয়। চুলের সমস্যার সবচেয়ে সাধারণ কারণগুলির মধ্যে পরে চাপ, হরমোনের ভারসাম্যহীনতা, বংশগত সমস্যা এবং কিছু ধরণের ওষুধের ব্যবহার। তুলসী অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের ভাণ্ডার যেটিকে চুল পাকা কমিয়ে দেওয়া এবং দূষণ এবং ইউভি থেকে হওয়া ক্ষয় কমিয়ে দিতে দেখা গেছে।
উভয় লিঙ্গের টাক পরে যাওয়া একটি সমস্যা যেটি অতিরিক্ত চুল পড়া এবং টাক পরে যাওয়া দিয়ে চিহ্নিত। একটি গবেষণা প্রদর্শিত করে যে তুলসীর এই সমস্যা প্রতিরোধ করার সম্ভাব্যতা রয়েছে। এই গবেষণা অনুযায়ী তুলসীর মূলের সংস্কৃতি সেই এনজাইমের ক্রিয়া প্রতিরোধ করে যেটি চুল পড়ার জন্য দায়ী। এই মূলের সংস্কৃতি নতুন করে চুল গজানোর ক্ষেত্রেও সাহায্য করে। এই গবেষণাটি প্রদর্শিত করে যে মাত্র দুই মাস এটি ব্যবহার করার ফলে 31% চুল পড়া কমে।
ত্বকের জন্য তুলসীর উপকারিতা -
তুলসী আমাদের ত্বকের জন্য একটি আশীর্বাদ। প্রথাগত চিকিৎসা তুলসীর বিভিন্ন ত্বক নিরাময়কারী উপকারিতার শপথ নেয়। প্রচুর গবেষণা ইঙ্গিত করে যে তুলসীর চর্মরোগ, সোরিয়াসিস, কুষ্ঠের মত বিভিন্ন ত্বকের সমস্যা থেকে রক্ষা করার সম্ভাব্যতা রয়েছে।
তুলসীর নির্যাসের ছত্রাক-বিরোধী, জীবাণু-বিরোধী বৈশিষ্ট্য রয়েছে। সেহেতু খোলা ঘায়ের ওপর এটি একটি দুর্দান্ত অ্যান্টিসেপটিকের কাজ করে। আয়ুর্বেদে তুলসীর পাতা থেকে তৈরি করা পেস্ট ত্বকের ওপর লাগালে সেটি পোকার কামড় থেকে হওয়া অস্বস্তি প্রতিরোধ করতে পারে। তুলসীতে আরসলিক অ্যাসিডের উপস্থিতি বলিরেখা প্রতিরোধ করে, ত্বক আরও প্রাণবন্ত করে তোলে, ক্ষত সারায় তাড়াতাড়ি এবং ত্বকের ক্যানসার থেকে রক্ষা করে।
আরেকটি গবেষণা প্রস্তাবিত করে যে তুলসীর পাতা এস অউরিয়াসের বিরদ্ধে কার্যকর যা ত্বকের সংক্রমণের জন্য প্রধানত দায়ী। তুলসীর জীবাণু-বিরোধী ক্রিয়া ক্যাম্ফর, ইউক্যালিপটল, ইউজেনল এবং β-ক্যারোফিলিনের উপস্থিতির কারণে।
দাঁত এবং মাড়ির জন্য তুলসীর উপকারিতা - Basil benefits for teeth and gums in Bengali
গবেষণা প্রস্তাবিত করে যে তুলসীর কয়েকটা পাতা চিবলে তা দাঁতের স্বাস্থ্যবিধি ভাল রাখে। তুলসী স্ট্রেপটোকোকাস মিউটান্স নামক এক বিশেষ ধরণের ব্যাকটেরিয়া যা দাঁতের ক্ষয়ের কারণ, তার বিরুদ্ধে কার্যকর। এটি তুলসী গাছে ক্যারাকল, তেতপিন এবং সেসকুইতেরপিন বি-ক্যারফিলিন থাকার কারণে হয়।
তুলসীতে থাকা ইউজিনল এটিকে একটি ভাল বেদনানাশক বানায় যা দাঁতের ব্যথা কমায়। রদে শুকানো তুলসীর পাতাকে পাউডার বানিয়ে তা দাঁতের পাউডার হিসেবে ব্যবহার করা যায়।
জিঞ্জিভাইটিস খুবই সাধারণ একটি মাড়ির সমস্যা যার কারণে মাড়ি ফুলে যায়। তুলসীর পাউডার দিয়ে মাড়ি মালিশ করলে এই রোগ প্রতিরধজ করা সম্ভব।
পাকতন্ত্রজনিত রোগের জন্য তুলসী -
পাকতন্ত্রজনিত রোগের মধ্যে পরে বিরক্তিজনক পেটের সমস্যা, কোষ্ঠকাঠিন্য এবং পায়ুর চিড়। এর মধ্যে কিছু অবস্থা দীর্ঘস্থায়ী এবং তা মলাশয়ের ক্যানসারের মত জটিল সমস্যায় রূপান্তরিত হতে পারে। গবেষণা ইঙ্গিত করে যে তুলসীর পাতায় পাকতন্ত্রজনিত রোগের চিকিৎসার সম্ভাব্যতা রয়েছে। তুলসী থেকে তৈরি পাচন এই রোগ তাড়াতাড়ি সারায় বলে শোনা যায়। তুলসী খিদে বাড়ায়। তুলসীর রেচকের বৈশিষ্ট্য রয়েছে যা কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধ করে এবং পয়ঃপ্রণালী নিয়মিত রাখে।
তুলসীপাতার রস ডিসেনট্রি এবং পরিপাক নালীর প্রদাহ (ডিসপেপসিয়া) । একটি প্রাক ক্লিনিকাল গবেষণা জানিয়েছে যে তুলসীর সেবনে অম্বল এবং গ্যাস্ট্রিক আলসার কমে.
ধকলের জন্য তুলসী -
তুলসীকে একটি ধকল-বিরোধী প্রতিনিধি হিসেবে গণ্য করা হয়। প্রচুর গবেষণা থেকে দেখা গেছে যে তুলসী শারীরিক, মানসিক, রাসায়নিকের পাশাপাশি বিপাকীয় চাপের বিরুদ্ধেও কার্যকর।
একটি প্রাকক্লিনিকাল গবেষণা করা হয়েছিল তুলসীর ধকল বিরোধী প্রভাব পরীক্ষা করে দেখতে এবং তাতে পাওয়া যায় যে এটি করটিসল, যা শরীরে ধকল তৈরিকারী হরমোন, তার বেড়ে ওঠা প্রতিরোধ করে। গবেষণাটি আরও ইঙ্গিত করে যে তুলসীতে থাকা আরসলিক অ্যাসিড এই ধকল-বিরোধী বৈশিষ্ট্যের জন্য দায়ী।
চোখের জন্য তুলসীর উপকারিতা -
চোখ হল সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সংজ্ঞাবহ অঙ্গগুলির একটি। যদিও, আমাদের যত বয়স বাড়তে থাকে, তত আমাদের দৃষ্টিশক্তি দুর্বল হতে থাকে এবং চোখের রোগ হওয়ার সম্ভাবনা তীব্রভাবে বৃদ্ধি পায়। চোখের কিছু খুব সাধারণ রোগগুলি হল বয়স-জনিত ম্যাকুলার ক্ষয়, ছানি এবং গ্লুকোমা (চোখের প্রেশার বেড়ে ওঠা) ।
আয়ুর্বেদ চিরকাল তুলসীকে মুল উপাদান হিসেবে ব্যবহার করে এসেছে চোখের ওষুধের জন্য। আয়ুর্বেদ অনুযায়ী, তুলসীপাতার নির্যাস যখন চোখের ড্রপ হিসেবে ব্যবহার করা হয়, গ্লুকোমা, ছানি এবং আঞ্জনির মত কষ্টকর চোখের সমস্যা প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে।
কানের জন্য তুলসীর উপকারিতা -
প্রদাহের কারণে কানে ব্যথা হতে পারে, বা হতে পারে কোন ক্ষত বা কানে সংক্রমণের কারণে। গবেষণা প্রস্তাবিত করে যে তুলসী কানের ব্যথা এবং সংক্রমণ কমাতে কার্যকর। তুলসীপাতা এবং টাটকা রসুনের রস থেকে তৈরি করা তুলসী তেল ব্যবহার করা যেতে পারে কানের ব্যথা কমাতে।
তীব্র ওটাইটিস মিডিয়া হল একটি বেদনাদায়ক অবস্থা যেখানে মধ্য কান হ্যামোফিলাস ইনফ্লুয়েঞ্জা নামক একটি ব্যাকটেরিয়া দ্বারা সংক্রমিত হয়ে পরে। একটি প্রাক-ক্লিনিকাল গবেষণা করা হয়েছিল তুলসীর তেলের জীবাণু-বিরোধী ক্রিয়া পরীক্ষা করে দেখার জন্য তীব্র ওটাইটিস মিডিয়ার বিরুদ্ধে। গবেষণাটি প্রদর্শিত করে যে তুলসীর তেল কানে দিলে এই রোগের কার্যকর চিকিৎসা করা সম্ভব।
তুলসীর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া -
অতিরিক্ত পরিমাণে তুলসীর সেবন গর্ভবতী মহিলাদের দীর্ঘমেয়াদি জটিলতার সম্মুখীন করে মা এবং বাচ্ছা উভয়কেই। তুলসীর জরায়ু সঙ্কোচন করার সম্ভাবনা রয়েছে। টাই গর্ভবতী মহিলাদের তুলসীর সেবন করার আগে ডাক্তারের পরামর্শ একান্তই করে নেওয়া উচিৎ।
প্রাক-ক্লিনিকাল গবেষণা বিবৃত করে যে তুলসী শরীরের উর্বরতার মাত্রা কমায়। যেসব মহিলারা গর্ভধারণের চেষ্টা করছেন বা যারা বাচ্ছাদের বুকের দুধ খাওয়ান, তাদের তুলসী এড়ানো উচিৎ। তুলসীর নিয়মিত সেবন পুরুষদের মধ্যেও উর্বরতার মাত্রা কমায়, যেমন শুক্রাণুর গুন্তি কমতে দেখা গেছে।
ইউজিনল হল তুলসীতে একটি শক্তিশালী যৌগ। এটির মধ্যে প্রদাহ-বিরোধী, জীবাণু-বিরোধী, এবং অ্যান্টিসেপ্টিক বৈশিষ্ট্য রয়েছে। তবুও, ইউজিনলের অপরিমিত মাত্রা অগভীর শ্বাস, মুখ এবং গলার প্রদাহ, বমিভাব, দ্রুত হৃদস্পন্দন, হৃদরোগ এবং ঝিমুনির কারণ হতে পারে।
উপসংহার -
তুলসী, জীবনের একটি স্পর্শমণি, যার প্রচুর স্বাস্থপকারিতা রয়েছে। এটি শুধুমাত্র চক সুরক্ষিত রাখে তাই নয়, কান এবং দাঁতও সুরক্ষিত রাখে এবং এটি একটি সম্ভাব্য ক্যানসার-বিরোধী প্রতিনিধি। এটি ব্যাকটেরিয়া-বিরোধী, জীবাণু-বিরোধী এবং ছত্রাক-বিরোধী বৈশিষ্ট্য প্রদর্শন করে এবং এটি অ্যান্টিঅক্সিডেন্টে ঠাসা। তবুও, গর্ভবতী মহিলাদের এবং যেসব মহিলারা গর্ভধারণ করতে চাইছেন তাদের তুলসী এড়িয়ে চলা উচিৎ। এটি পুরুষদের মধ্যে শুক্রাণুর গুন্তি কমিয়ে দেয় বলেও জানা যায়। সুতরাং তুলসী মাঝারি পরিমাণে সেবন করলে তা স্বাস্থ্যের পক্ষে লাভজনক হবে।
References
- United States Department of Agriculture Agricultural Research Service. Basic Report: 02044, Basil, fresh. National Nutrient Database for Standard Reference Legacy Release [Internet]
- Yuvaraj Ponnusam et al. Antioxidant Activity of The Ancient Herb, Holy Basil in CCl4-Induced Liver Injury in Rats. Ayurvedic. 2015 Nov; 2(2): 34–38. PMID: 26925464
- Eshrat Halim M. A. Hussain, Kaiser Jamil, Mala Rao. Hypoglycaemic, hypolipidemic and antioxidant properties of tulsi (Ocimum sanctum linn) on streptozotocin induced diabetes in rats. Indian J Clin Biochem. 2001 Jul; 16(2): 190–194. PMID: 23105316
- Marc Maurice Cohen. Tulsi - Ocimum sanctum: A herb for all reasons. J Ayurveda Integr Med. 2014 Oct-Dec; 5(4): 251–259. PMID: 25624701
- Manikandan P, Vidjaya Letchoumy P, Prathiba D, Nagini S. Combinatorial chemopreventive effect of Azadirachta indica and Ocimum sanctum on oxidant-antioxidant status, cell proliferation, apoptosis and angiogenesis in a rat forestomach carcinogenesis model.. Singapore Med J. 2008 Oct;49(10):814-22. PMID: 18946617
- Seth Rakoff-Nahoum. Why Cancer and Inflammation? Yale J Biol Med. 2006 Dec; 79(3-4): 123–130. PMID: 17940622
- Hanaa A. Yamani et al. Antimicrobial Activity of Tulsi (Ocimum tenuiflorum) Essential Oil and Their Major Constituents against Three Species of Bacteria. Front Microbiol. 2016; 7: 681. PMID: 27242708
- Fernández E et al. Efficacy of antioxidants in human hair. J Photochem Photobiol B. 2012 Dec 5;117:146-56. PMID: 23123594
- Kristinsson KG et al. Effective treatment of experimental acute otitis media by application of volatile fluids into the ear canal. J Infect Dis. 2005 Jun 1;191(11):1876-80. Epub 2005 Apr 29. PMID: 15871121
- Marc Maurice Cohen. Tulsi - Ocimum sanctum: A herb for all reasons. J Ayurveda Integr Med. 2014 Oct-Dec; 5(4): 251–259. PMID: 25624701
- Hojjat Rouhi-Boroujeni et al. Use of lipid-lowering medicinal herbs during pregnancy: A systematic review on safety and dosage. ARYA Atheroscler. 2017 May; 13(3): 135–155. PMID: 29147122
Dr. Laxmidutta Shukla
BAMS,MD, Ayurveda
No comments:
Post a Comment
ধন্যবাদ