ত্রিফলা - ধর্ম্মতত্ত্ব

ধর্ম্মতত্ত্ব

ধর্ম বিষয়ে জ্ঞান, ধর্ম গ্রন্থ কি , হিন্দু মুসলমান সম্প্রদায়, ইসলাম খ্রীষ্ট মত বিষয়ে তত্ত্ব ও সনাতন ধর্ম নিয়ে আলোচনা

धर्म मानव मात्र का एक है, मानवों के धर्म अलग अलग नहीं होते-Theology

সাম্প্রতিক প্রবন্ধ

Post Top Ad

স্বাগতম

31 August, 2019

ত্রিফলা


ত্রিফলা হল একটি অতি প্রসিদ্ধ আয়ুর্বেদিক প্রণালি যেটি আমলা(এম্বলিকা অফিসিনালিস), বিভিতকি বা বহেড়া(তারমিনালিয়া বেলিরিকা)এবং হরিতকি বা হরদ(তারমিনালিয়া চেবুলা) এই তিনটি ফল থেকে তৈরি করা হয়। বস্তুত ত্রিফলা শব্দের আক্ষরিক অনুবাদ করলে দাঁড়ায় “তিনটি ফল”(ত্রি=তিন ও ফলা=ফল)। আয়ুর্বেদে ত্রিফলা উল্লেখযোগ্য তার রাসায়নিক গুণাবলীর জন্য যার অর্থ এটি আমাদের শরীরস্বাস্থ্য ও জীবনীশক্তি বজায় রাখতে এবং রোগ থেকে আমাদের দূরে রাখতে সাহায্য করে।
আয়ুুর্বেদ শাস্ত্রে বলা হয়েছে, মানবদেহ তিনটি মূল বা সারবস্তুর সমন্বয়ে গঠিত। এই সারবস্তু তিনটি হলো বাতা (Vata), পিত্ত (Pitta) ও কাফা (Kapha)। ‘বাতা যার বাংলা মানে হচ্ছে বায়ু, যা আমাদের মন ও স্নায়ুতন্ত্রের সাথে জড়িত। এর স্বভাব বা প্রকৃতি হচ্ছে শুষ্ক, ঠান্ডা, হালকা ও শক্তিশালী। দ্বিতীয়টি হলো ‘পিত্ত’ যার বাংলা মানে হচ্ছে অগ্নি। এটি আমাদের বিপাকক্রিয়ার সাথে সম্পর্কিত, যা আমাদের দেহে যাবতীয় খাদ্যের হজমক্রিয়ায় জড়িত। শেষের ‘কাফা’ যার মানে হলো পানি বা শ্লেষ্মা। অনেক সময় পানি বা শ্লেষ্মাকে জীবনের মূল ভিত্তি বলা হয়। এটি আমাদের দেহের সব গঠনক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ করে। এটি আমাদের দেহের নিত্যনতুন কোষ তৈরি, মাংসপেশির গঠন, হাড়ের গঠন ও বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণ করে। এর প্রকৃতি বা স্বভাব হলো ঠান্ডা, আর্দ্র ও ভারী।
এই বাতা, পিত্ত ও কাফার সমন্বয়ে আমাদের দেহ গঠিত বলে এগুলোর যেকোনো একটির ভারসাম্যহীনতা বা অস্বাভাবিকতা আমাদের দেহে বিভিন্ন প্রকারের রোগ সৃষ্টি করে। আর ত্রিফলাতে রয়েছে এই সারবস’গুলোর মধ্যে ভারসাম্য রক্ষার কার্যকর উপাদান। এ তিন সারবস্তুর ভারসাম্য রক্ষা করতে পারে বলে একে বলা হয় ত্রিদোষনাশক। ত্রিফলার (আমলকী, হরীতকী ও বহেড়া) প্রতিটি ফলের ত্রিদোষনাশক গুণাবলি থাকলেও এর একেকটি ফল একেকটি সারবস্তুর (বাতা, পিত্ত ও কাফা) ভারসাম্য রক্ষায় বেশি কার্যকর।আয়ুর্বেদিক চিকিৎসায় বলা আছে যে ত্রিফলাতে পাঁচ ধরণের রস বা স্বাদ আছে। এতে মিষ্টি, তিক্ত, তীব্র, তিক্ত ও কষা স্বাদ বর্তমান। শুধুমাত্র নোনতা স্বাদটাই এখানে বিদ্যমান নয়।

বহুভেষজ(একাধিক ভেষজ গাছড়া থেকে নির্মিত) প্রচুর প্রণালীর উল্লেখ “শরঙ্গধার সংহিতা” নামক একটি প্রাচীন আয়ুর্বেদিক গ্রন্থে পাওয়া যায়, বিশেষত ত্রিফলার গুনাগুণ সম্পর্কে তথ্য “চরক সংহিতা”-তে বিশদে পাওয়া যায়।

কোন ফলটি কোন ভারসাম্য রক্ষায় বেশি কার্যকর তা নিম্নে আলোচনা করা হলো।
হরীতকী(তারমিনালিয়া চেবুলা): এ ফলটি তিক্ত স্বাদযুক্ত যা আমাদের ‘বাতা’ নামক সারবস্তু তথা মস্তিষ্ক ও স্নায়ুতন্ত্রের কার্যাবলি নিয়ন্ত্রণ ও ভারসাম্য রক্ষা করে। তাই মস্তিষ্ক ও স্নায়ুবিক কোনো রোগে হরীতকী খুবই কার্যকর। হরীতকী রেচক, সঙ্কোচক, পিচ্ছিলকারক, পরজীবীনাশক, মাংসপেশির সঙ্কোচক প্রতিরোধক এবং স্নায়ুবিক দুর্বলতা প্রতিরোধী গুণসম্পন্ন। তাই দীর্ঘকালীন কোষ্ঠকাঠিন্য, স্নায়ুবিক দুর্বলতা, উদ্বিগ্নতা এবং অল্পতেই হƒদকম্পন বেড়ে যাওয়ার চিকিৎসায় হরীতকী ব্যবহƒত হয়। ত্রিফলার তিনটি ফলের মধ্যে হরীতকী সর্বশ্রেষ্ঠ রেচক এবং দ্রব্যগুণেও সর্বশ্রেষ্ঠ।আয়ুর্বেদে বর্ণিত ভেষজ উদ্ভিদগুলির মধ্যে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ হল হরদ। এটির স্বাস্থ্যপোকারীতা অপরিসীম। অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, প্রদাহবিরোধী ও বার্ধক্যবিরোধী হওয়ার পাশাপাশি চমৎকার ক্ষয়প্রশমণকারী হিসেবেও এর সুখ্যাতি আছে। যক্কৃৎ, পাকস্থলী, হৃদয় এবং মুত্রাশয়ের স্বাভাবিকতা পুনরুদ্ধার ও বজায় রাখার ক্ষেত্রেও আয়ুর্বেদে এর সুখ্যাতি আছে। সেই কারণেই একে “ওষুধের রাজা” বলাটাও যথার্থ।
আমলা:(এম্বলিকা অফিসিনালিসদেশের সর্বত্র সবচেয়ে সহজপ্রাপ্য ফলগুলির একটি, এটিকে সাধারণত ভারতীয় গুজবেরিও বলা হয়ে থাকে। আমলা ফলটি ফাইবার, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও খনিজ পদার্থে সমৃদ্ধ এবং এটি ভিটামিন সি-এর বিশ্বের উৎকৃষ্টতম উৎস। সাধারণত এটি ব্যবহৃত হয়ে থাকে অন্ত্রের স্বাস্থ্য ভাল রাখতে, কোষ্ঠকাঠিন্য এড়াতে এবং বার্ধক্যপ্রতিরোধী একটি ফল হিসেবে।আমলকী অম্ল বা টকস্বাদযুক্ত যা পিত্ত নামক সারবস্তুর ভারসাম্য রক্ষায় খুবই কার্যকর। এটি ঠান্ডাকারক, সঙ্কোচক, মৃদু বিরেচক গুণসম্পন্ন তাই আমাদের বিপাক জনিত বিভিন্ন সমস্যা যেমন- আলসার, পাকস’লীর প্রদাহ, আন্ত্রিক প্রদাহ, কোষ্ঠকাঠিন্য, ডায়রিয়া, কলিজা বা লিভারের জ্বালাপোড়া, যকৃতের সংক্রামণ এবং শরীরের জ্বালাপোড়া নিরাময়ে আমলকী খুবই কার্যকর। আধুনিক কালের অসংখ্য গবেষণায় আমলকীর ব্যাকটেরিয়া ও ভাইরাস প্রতিরোধী, কফ নিঃসারক এবং হৃৎপিন্ডের টনিক গুণাবলির প্রমাণ পাওয়া যায়। আমলকী ভিটামিন-সি রয়েছে এবং এর ভিটামিন-সি তাপে নষ্ট হয় না। এমনকি অতি উচ্চ তাপেও এর ভিটামিন-সি নষ্ট হয় না। তাই আমলকীর পুষ্টি ও ঔষধিগুণ অপরিবর্তিত রেখে শুকিয়ে এক বছর পর্যন্ত সংরক্ষণ করা যায়। আমলকীর ভিটামিন-সি দীর্ঘস্থায়ী ও তাপ সহ্যকারী হওয়ার মূল কারণ হলো এতে বিদ্যমান ট্যানিন ভিটামিন-সির সাথে বন্ধন তৈরি করে এবং এর ক্রমাগত হ্রাস বা ধ্বংস হওয়া প্রতিরোধ করে।
বহেড়া (তারমিনালিয়া বেলিরিকা): ভারতীয় উপমহাদেশের সর্বত্র উপলব্ধ এই ফলটি আয়ুর্বেদ এবং অন্যান্য চিকিৎসা ব্যবস্থায় জায়গা করে নিয়েছে জ্বর প্রতিরোধকারী, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও যক্কৃত সুরক্ষাকারী  হিসেবে, শ্বাসযন্ত্রের সমস্যার চিকিৎসা সাধনকারী হিসেবে এবং ডায়বিটিস বিরোধী মহৌষধ হিসেবে। আয়ুর্বেদ অনুযায়ী গ্লুকোসাইড, ট্যানিন, গ্যালিক এসিড, ইথাইল গ্যালেটের মত একগুচ্ছ জৈব উপাদানে সমৃদ্ধ এই বহেড়া ফল। একত্রে এইসব উপাদানগুলিই হল বহেরার স্বাস্থ্যপোকারী বৈশিষ্ট্য। বহেড়া কষায় স্বাদযুক্ত ফল। এটি ‘কাফা’ নামক সারবস’র ভারসাম্য রক্ষায় খুবই কার্যকর। বহেড়া সঙ্কোচক, টনিক, হজমশক্তির বৃদ্ধিকারক এবং মাংসপেশির সঙ্কোচন প্রতিরোধক গুণসম্পন্ন। বহেড়া দেহের প্রধান জীবনীশক্তি শ্লেষ্মা তথা রসকে বিশুদ্ধ করে এবং এর ভারসাম্য রক্ষা করে। তাই বহেড়া হাঁপানি, অ্যালার্জি, ব্রঙ্কাইটিস ও কাশির ক্ষেত্রে খুবই কার্যকর।

ত্রিফলার কিছু গুণ: ১. হজমশক্তি বৃদ্ধি করে ২. অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে ৩. দেহে রক্তসঞ্চালন বাড়ায় ৪. রক্তচাপ কমায় ৫. হৃদরোগ কমায় ৬. রক্তে কোলেস্টেরল কমায় ৭. যকৃৎ বা লিভারের রোগপ্রতিরোধ করে ৮. লিভারের পিত্ত নিঃসরণ বাড়ায় ৯. কফ নিঃসরণ করে ১০. ক্যান্সার প্রতিরোধ করে ১১. ওজন হ্রাস করে ১২. ব্যাকটেরিয়া প্রতিরোধ করে ১৩. এইডস প্রতিরোধ করে প্রভৃতি।
ত্রিফলা কিভাবে কাজ করে: ত্রিফলা এক অতি চমৎকার ভেষজ মিশ্রণ, যা আমাদের শরীরের সব অঙ্গপত্যঙ্গের ওপর উপকারী ও কার্যকর ভ‚মিকা পালন করে। নিম্ন বিভিন্ন তন্ত্রের ওপর এর কার্যকারিতা ব্যাখ্যা করা হলো।
বাহ্যিক ব্যবহারে: ত্রিফলা চ‚র্ণ চোখের জন্য খুবই উপকারী। ত্রিফলা দৃষ্টিশক্তি বাড়ায় এবং চোখের অনেক রোগ দূর করে। ত্রিফলা ঘৃত, এক আয়ুর্বেদি ওষুধ যা চোখের পেশিগুলোকে শক্তিশালী করে। চোখের রোগের চিকিৎসায় ত্রিফলার কাথ খুবই কার্যকর। এ ছাড়া ত্রিফলার পেস্ট ক্ষত নিরাময় এবং ফেলা কমাতে খুবই কার্যকর।
স্নায়ুতন্ত্রের ভারসাম্যতায়: আমাদের স্নায়ুতন্ত্রের ওপর রয়েছে ত্রিফলার বিশাল উপকারী ভ‚মিকা। ত্রিফলা আমাদের স্নায়ুতন্ত্রকে উদ্দীপিত করে এবং কর্মক্ষমতা বাড়ায়। ফলে মস্তিষ্ক দ্রæত কোনো কাজের সিদ্ধান্ত নিতে পারে। আয়ুর্বেদ শাস্ত্র মতে, যেকোনো স্নায়ুবিক রোগই বাতা নামক সারবস্তুর ভারসাম্যহীনতার ফলে হয়। ত্রিফলা শুধু বাতা নয়, পিত্ত ও কাফা অর্থাৎ তিনটির ভারসাম্য রক্ষা করতে পারে। তাই মস্তিষ্ক ও স্নায়ু সম্পর্কিত যেকোনো রোগ নিরাময়ে ত্রিফলা খুবই উপকারী ভ‚মিকা পালন করতে পারে।
পরিপাকতন্ত্রে: হজমশক্তি বৃদ্ধিতে ত্রিফলা খুবই কার্যকর। এটি শুধু হজমশক্তি বৃদ্ধি করে না বরং খাদ্যের উপাদানগুলোর শোষণেও সহায়তা করে। এটি পৌষ্টিক নালীর সঙ্কোচন প্রসারণ স্বাভাবিক রাখে। এটি যকৃৎ থেকে পিত্ত নিঃসরণসহ অন্যান্য অঙ্গের পাচক রস নিঃসরণ বাড়ায়। এটি পাকস্থলীর অম্লীয় ও ক্ষারীয় অবস্থা নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে হজমশক্তি বৃদ্ধি করে এবং সঠিক হজমক্রিয়া পরিচালনা করে। এটি ক্ষুধামান্দ্য দূর করে এবং আমাদের মাঝে আহার করার প্রবণতা সৃষ্টি করে। এটি আমাদের অন্ত্রের সঙ্কোচন প্রসারণ বাড়ায় এবং কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে। সর্বোপরি এটি আমাদের পাকস্থলীর মসৃণ পেশির টান বা সঙ্কোচন প্রতিরোধ করে এবং এর স্বাভাবিক কার্যাবলি সাধনে সাহায্য করে।
প্রজননতন্ত্রে: প্রজননতন্ত্রের কর্মক্ষমতা বৃদ্ধিতে ত্রিফলা খুবই উপকারী। এটি প্রজনন অঙ্গগুলোর ঢ়ঐ লেভেল নিয়ন্ত্রণ করে, যা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এটি আমাদের প্রজনন অঙ্গকে শক্তিশালী করে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো ত্রিফলা পুরুষের শুক্রাণু বৃদ্ধি করে এবং মহিলাদের মাসিক চক্র নিয়মিত করে। তাই প্রজননতন্ত্রের সমস্যায় ত্রিফলার ব্যবহার খুবই ফলপ্রসূ। চামড়া সজীব রাখতে- এটি আমাদের চামড়ার স্বাভাবিক গঠন নিয়ন্ত্রণ ও রক্ষা করতে পারে। ত্রিফলা দেহে রক্তসঞ্চালন বাড়ায় ফলে চামড়া পরিপূর্ণ পুষ্টি পায়। অপর দিকে বেশি রক্তসঞ্চালন হওয়ায় চামড়ার মৃত কোষগুলোর অপসারণ হয়। ত্রিফলা বয়সের ফলে চামড়ার ভাঁজ ও চুল সাদা হয়ে যাওয়া প্রতিরোধ করে। ত্রিফলা দেহে রক্ত ও পানির সুসামঞ্জস্য রক্ষা করে, ফলে ত্বক উজ্জ্বল ও আর্দ্র থাকে এবং বয়সের ছাপ পড়ে না।
ত্রিফলার কিছু স্বাস্থপোকারী গুণঃ

ওজন কমানোঃ
বিভিন্ন ক্লিনিকাল গবেষণায় দেখা গেছে যে ত্রিফলা সেবন ওজন কমাতে সহায়তা করে। নিয়ন্ত্রণের পরিবর্তে যাদের ত্রিফলা দেওয়া হয়, দেখা যায় যে তাদের মধ্যে ওজন কমার পরিমাণ বেশি এবং তাদের কোমর এবং নিতম্বের পরিধিও হ্রাস পেয়েছে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে।
চোখ :
ছানি ও গ্লকোমা নিয়ন্ত্রণে ত্রিফলা আয়ুর্বেদিক মিশ্রণ তৈরিতে কাজে লাগে। ক্লিনিকাল গবেষণা  প্রমাণ করে ছানিবিরোধী ও দৃষ্টিশক্তির উন্নতিসাধনে এই ভেষজের উপকারিতা।
চুলের সমস্যাঃ
ত্রিফলা চুলের সুরক্ষাকারী গুণাবলীর জন্য পরিচিত ও সাধারণত অকালে চুল পাকা রোধ করতে সাহায্য করে। চুল পড়ার সমসস্যা কমায় এবং পরিমিত ব্যবহারে খুলিতে আকাঙ্ক্ষিত পুষ্টি প্রদান করে।
পেটের সমস্যাঃ
পেটে ফাঁপাভাব, কোষ্ঠকাঠিন্য, পেট ফুলে যাওয়া এবং অনিয়মিত অন্ত্রের সমস্যাই পেটের প্রধান সমস্যা হিসেবে চিন্হিত। গবেষণায় দেখা গেছে যে খাদ্যাভ্যাসের মধ্যে ত্রিফলা অন্তর্ভুক্ত করলে পাচনতন্ত্রের সাধারণ সমস্যাগুলি সামাল দেওয়া যায় এবং এটি শরীর থেকে অতিরিক্ত টক্সিন বার করে দেয়।
পিরিওদন্তাইটীসঃ
জীবাণুবিরোধী কার্যকলাপের জন্য ত্রিফলা ব্যবহৃত হয়ে থাকে মাড়ির সমস্যা, পিরিওদন্তাইটিস ও অন্যান্য মৌখিক সমস্যার বিরুদ্ধে। ক্লোরহেক্সিডাইনের সাথে মুখ ধোওয়ার তরল হিসেবে ব্যবহার করলে তা প্লাক জমা রোধ করে এবং মুখের স্বাস্থ্য ভাল রাখে।
জীবাণুবিরোধীঃ
ত্রিফলা বিভিন্ন চিকিৎসায় সংক্রমণ আটকানোর প্রতিনিধি হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে থাকে এবং এই ব্যবহার গবেষণায় স্বীকৃত। শুধু তাই নয়, এসচেচিয়া কোলি, সালমেনেলা টাইফি, সুডোমোনাস এরেগিনোসা, স্টাফাইলোকোকাস অরেয়াস, ভিব্রিও কোলেরির বিরুদ্ধেও এর কার্যকারিতা প্রমাণিত।
অ্যান্টিঅক্সিডেন্টঃ
ভিটামিন-সি তে সমৃদ্ধ হওয়ার কারণে ত্রিফলাকে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট খাওয়ার হিসেবে নিশ্চিতভাবে চিহ্নিত করা হয়েছে। সেই কারণে এটি আমাদের শরীরকে ফ্রি র‌্যাডিকালের প্রভাব থেকে রক্ষা করে।
ডায়াবেটিসঃ

ইনসুলিন হরমোনের ওপর ক্রিয়ার ফলে ত্রিফলা যে ডায়াবেটিসবিরোধী তা আজ প্রমাণিত সত্য। এটি রক্তস্রোতে গ্লুকোজ জমা হওয়া বা বিমুক্ত হওয়া নিয়ন্ত্রণ করে থাকে।

ত্রিফলার ক্যানসাররোধী কার্যকারিতার বিষয়ে জানতে অসংখ্য গবেষণা করা হয়েছে এবং এই সকল গবেষণাই দাবি করে যে ত্রিফলা সম্ভাবনাসূচক একটি ক্যানসার রোধী ওষুধ। ভারতে হওয়া একটি সাম্প্রতিক গবেষণা থেকে আমরা জানতে পারি ত্রিফলার একটি অত্যন্ত শক্তিশালী বিস্তারবিরোধী (বেড়ে যাওয়া আটকায়) ও অ্যাপোপটোটিক (ক্যানসার কোষগুলিকে মেরে ফেলে) বিশেষত্ব রয়েছে। প্রস্টেট ক্যানসারের ওপর হওয়া আরেকটি গবেষণা দাবি করে যে ত্রিফলার মধ্যে থাকা গ্যলিক অ্যসিড (একটি রাসায়নিক যৌগ) এর ক্যানসারবিরোধী কার্যকলাপের জন্য দায়ি। শুধু তাই নয়, অ্যাপোপটোটিক (কোষ মেরে ফেলা) বিশেষত্বের কারণে সাধারণ কোষ ও ক্যানসার-কবলিত কোষগুলির ওপর ভিন্ন প্রভাব দেখা যায়। এটি ক্যানসার-কবলিত কোষগুলিকে মেরে ফেলে সাধারণ কোষগুলির ওপর কোন প্রভাব না ফেলেই। যদিও মানুষের ওপর ত্রিফলার ক্যানসাররোধী প্রভাবের বিষয়ে জানার কোনওরকম গবেষণা এখনও পর্যন্ত হয়নি। সেই কারণে ত্রিফলার ক্যানসাররোধী প্রভাবের বিষয়ে জানতে আয়ুর্বেদিক ডাক্তারের সাথে পরামর্শ একান্তই বাঞ্ছনীয়।

ত্রিফলার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া
ত্রিফলা সাধারণত দীর্ঘমেয়াদী সেবনের জন্য খুবই নিরাপদ হিসেবে গণ্য করা হয়। অন্যভাবে বলতে গেলে একজন সুস্থ ব্যাক্তিও ত্রিফলার পুষ্টিকর উপকারিতার জন্য এটি সেবন করতে পারেন। কিন্তু ত্রিফলার কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থাকার ফলে খাদ্যাভাসে এটিকে যোগ করার আগে বিবেচনা করে দেখা উচিৎ।

 ত্রিফলা হল একটি প্রাকৃতিক জোলাপ। এটি স্বল্প পরিমাণে সেবন করা যেমন উপকারী, অপরিমিত পরিমাণে সেবন করলে তা ডাইরিয়া ও ডিসেন্ট্রির আকার ধারণ করে।
 যদি আপনি নির্ধারিত ওষুধ সেবন করে থাকেন, তাহলে ত্রিফলা খাদ্যাভাসে যোগ করার আগে আপনার আয়ুর্বেদের ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করে নেওয়া বাঞ্ছনীয় কারণ ত্রিফলা অন্যান্য ওষুধের কাজে হস্তক্ষেপ করতে পারে।
 ত্রিফলা সেবন যে গর্ভবতী ও শিশু প্রতিপালনকারী মায়েদের জন্য নিরাপদ তার কোন বৈজ্ঞানিক প্রমান নেই। সেহেতু গর্ভবতী মহিলাদের বলা হয় কোন প্রকারের ত্রিফলা সেবন না করতে অথবা ব্যবহারের আগে ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করে নিতে।
বাচ্চাদের ত্রিফলা দেওয়া উচিৎ নয়।
কিছু লোক ঘুমে ব্যাঘাত ঘটার অভিযোগ জানান ত্রিফলা সেবনের ফলে কিন্তু সেটা নির্ভর করে পাউডার  মাত্রার ওপর।
কিভাবে ব্যবহার করবেন ত্রিফলা - How to use triphala in Bengali
ত্রিফলা সাধারণত ত্রিফলা “চূর্ণ” হিসেবেই সেবন করা হয়ে থাকে। কিন্তু বাণিজ্যিক ভাবে এটি ট্যাবলেট, ক্যাপসুল ও ত্রিফলা রসের আকারে উপলব্ধ। সাময়িক ব্যাবহারের জন্য ত্রিফলা তেলের আকারেও ব্যবহৃত হয়ে থাকে।

ত্রিফলার তিনটি ভেষজের অনুপাত পৃথক শরীরের ধরণের ওপর নির্ভর করে, তবে সাধারণত যে অনুপাতে ব্যাবহার করা হয় টা হল 1 (হরদ) , 2 (বহেড়া) ও 4 (আমলা) । ½ চা চামচ পাউডার জলের সাথে মিশিয়ে (চা হিসেবে) হয় সকালে বা রাতে খাওয়ার পরে খাওয়া যেতে পারে। আয়ুর্বেদিক ডাক্তারেরা পরামর্শ দিয়ে থাকেন ত্রিফলা আলাদা করে তিনটি চূর্ণ 1:2:4 অনুপাতে খেতে। বহেড়া চূর্ণটি খাওয়ার আগে, আমলা চূর্ণটি খাওয়ার পরে ও হরদ চূর্ণটি খাওয়ার 2-3 ঘণ্টা পর খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। আয়ুর্বেদ অনুযায়ী সেরা ফলাফলের জন্য এই সকল পাউডার ঘি এবং মধুর সাথে সেবন করা উচিৎ। ত্রিফলার নিয়মিত সেবন পাচনতন্ত্র উন্নত করে এবং শরীরে বিভিন্ন খনিজ পুষ্টিকর পদার্থের সমপূরক হিসেবে কাজ করে। তবুও যদি আপনি বাড়িতে এই স্বাস্থ্যবর্ধক প্রণালি তৈরি করতে চান, তাহলে আয়ুর্বেদের ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করে নেওয়া অত্যন্ত বাঞ্ছনীয়।

ত্রিফলাকে প্রায়শই ত্রিফলা গুজ্ঞুলুর সাথে গুলিয়ে ফেলা হয়। এটি একটি ভিন্ন প্রণালী যাতে লম্বা পাইপার ও গুজ্ঞুলু (গন্ধরসসহ রজন) ত্রিফলা ফলের সাথে যোগ করা হয় যা আয়ুর্বেদে প্রদাহবিরোধী একটি প্রণালী হিসেবে ব্যাবহার করা হয়।

ত্রিফলার মাত্রা - 
চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ত্রিফলা খালি পেটে বা খাওয়ার পরে খাওয়া যায়। সাধারণত ½ চা চামচ ত্রিফলা পাউডার চায়ের মত করে দিনে দুবার খাওয়া যায়। ত্রিফলা পাউডার ঘি বা মধুর সাথেও দিনে দুবার খাওয়া যায় কিন্তু সে ক্ষেত্রে জলের সাথে খাওয়ার পরিমাণের সাথে তার তারতম্য ঘটে। চেহারার ধরণ, বয়স, লিঙ্গ এবং অন্যান্য কারনের ভিত্তিতে ত্রিফলা সেবনের মাত্রার তারতম্য ঘটে তবে আয়ুর্বেদিক ডাক্তারেরা বলে থাকেন প্রাপ্তবয়স্কদের ক্ষেত্রে ত্রিফলা সেবনের দৈনিক মাত্রা যেন 2 চা চামচের বেশি না হয়।

ত্রিফলা ক্যাপসুল, সিরাপ এবং ট্যাবলেটের সেবনের মাত্রা ত্রিফলা পণ্যটির কার্যকারিতা অনুযায়ী এবং চেহারার ধরণ ও দেহতত্ত্ব অনুযায়ী পাল্টায়। সেই কারণে যদি আপনি এই আয়ুর্বেদিক চূর্ণটির বিশেষ আরোগ্যকারী কোনও সুবিধা পেতে চান, সেই ক্ষেত্রে একজন আয়ুর্বেদিক ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করে জানুন আপনার ক্ষেত্রে ত্রিফলার সঠিক পরিমাণ।
References

  1. Subramani Parasuraman, Gan Siaw Thing, and Sokkalingam Arumugam Dhanaraj. Polyherbal formulation: Concept of ayurveda. Pharmacogn Rev. 2014 Jul-Dec; 8(16): 73–80. PMID: 25125878
  2. Ganesh Muguli et al. A contemporary approach on design, development, and evaluation of Ayurvedic formulation - Triphala Guggulu. Ayu. 2015 Jul-Sep; 36(3): 318–322. PMID: 27313420
  3. Kalaiselvan S1, Rasool M. Triphala exhibits anti-arthritic effect by ameliorating bone and cartilage degradation in adjuvant-induced arthritic rats.. Immunol Invest. 2015;44(4):411-26. PMID: 25942351
  4. Kalaiselvan S1, Rasool MK. The anti-inflammatory effect of triphala in arthritic-induced rats.. Pharm Biol. 2015 Jan;53(1):51-60. PMID: 25289531
  5. V. Lobo, A. Patil, A. Phatak, N. Chandra. Free radicals, antioxidants and functional foods: Impact on human health. Pharmacogn Rev. 2010 Jul-Dec; 4(8): 118–126. PMID: 22228951
  6. Rajan SS1, Antony S. Hypoglycemic effect of triphala on selected non insulin dependent Diabetes mellitus subjects. Anc Sci Life. 2008 Jan;27(3):45-9. PMID: 22557278
  7. Christine Tara Peterson, Kate Denniston, BS, Deepak Chopra. Therapeutic Uses of Triphala in Ayurvedic Medicine. J Altern Complement Med. 2017 Aug 1; 23(8): 607–614. PMID: 28696777
  8. Srikumar R. Evaluation of the growth inhibitory activities of Triphala against common bacterial isolates from HIV infected patients.. Phytother Res. 2007 May;21(5):476-80. PMID: 17273983
  9. Neeti Bajaj, Shobha Tandon1. The effect of Triphala and Chlorhexidine mouthwash on dental plaque, gingival inflammation, and microbial growth. Int J Ayurveda Res. 2011 Jan-Mar; 2(1): 29–36. PMID: 21897640
  10. Ritam S. Naiktari, Pratima Gaonkar, Abhijit N. Gurav, Sujeet V. Khiste. A randomized clinical trial to evaluate and compare the efficacy of triphala mouthwash with 0.2% chlorhexidine in hospitalized patients with periodontal diseases. J Periodontal Implant Sci. 2014 Jun; 44(3): 134–140. PMID: 24921057
  11. Sandhya T1, Lathika KM, Pandey BN, Mishra KP. Potential of traditional ayurvedic formulation, Triphala, as a novel anticancer drug.. Cancer Lett. 2006 Jan 18;231(2):206-14. PMID: 15899544
  12. Ramakrishna Vadde, Sridhar Radhakrishnan, Lavanya Reddivari, Jairam K. P. Vanamala. Triphala Extract Suppresses Proliferation and Induces Apoptosis in Human Colon Cancer Stem Cells via Suppressing c-Myc/Cyclin D1 and Elevation of Bax/Bcl-2 Ratio. Biomed Res Int. 2015; 2015: 649263. PMID: 26167492
  13. Russell LH Jr et al. Differential cytotoxicity of triphala and its phenolic constituent gallic acid on human prostate cancer LNCap and normal cells. Anticancer Res. 2011 Nov;31(11):3739-45. PMID: 22110195
  14. Suresh Kumar Gupta. Evaluation of anticataract potential of Triphala in selenite-induced cataract: In vitro and in vivo studies. J Ayurveda Integr Med. 2010 Oct-Dec; 1(4): 280–286. PMID: 21731375
  15. Viroj Wiwanitkit. Anticataract potential of Triphala. J Ayurveda Integr Med. 2011 Apr-Jun; 2(2): 51. PMID: 21760687

No comments:

Post a Comment

ধন্যবাদ

বৈশিষ্ট্যযুক্ত পোস্ট

যজুর্বেদ অধ্যায় ১২

  ॥ ও৩ম্ ॥ অথ দ্বাদশাऽধ্যায়ারম্ভঃ ও৩ম্ বিশ্বা॑নি দেব সবিতর্দুরি॒তানি॒ পরা॑ সুব । য়দ্ভ॒দ্রং তন্ন॒ऽআ সু॑ব ॥ য়জুঃ৩০.৩ ॥ তত্রাদৌ বিদ্বদ্গুণানাহ ...

Post Top Ad

ধন্যবাদ