ওল্ড স্টেটমেন্ট - ধর্ম্মতত্ত্ব

ধর্ম্মতত্ত্ব

ধর্ম বিষয়ে জ্ঞান, ধর্ম গ্রন্থ কি , হিন্দু মুসলমান সম্প্রদায়, ইসলাম খ্রীষ্ট মত বিষয়ে তত্ত্ব ও সনাতন ধর্ম নিয়ে আলোচনা

धर्म मानव मात्र का एक है, मानवों के धर्म अलग अलग नहीं होते-Theology

সাম্প্রতিক প্রবন্ধ

Post Top Ad

স্বাগতম

21 August, 2020

ওল্ড স্টেটমেন্ট

ওল্ড স্টেটমেন্ট

আদিপুস্তক (Genesis)

সৃষ্টির কথা
১ শুরুতে, ঈশ্বর আকাশ ও পৃথিবী সৃষ্টি করলেন। প্রথমে পৃথিবী সম্পূর্ণ শূন্য ছিল; পৃথিবীতে কিছুই ছিল না।
২ অন্ধকারে আবৃত ছিল জলরাশি আর ঈশ্বরের আত্মা সেই জলরাশির উপর দিয়ে ভেসে বেড়াচ্ছিল।

৩ তারপর ঈশ্বর বললেন, “আলো ফুটুক!” তখনই আলো ফুটতে শুরু করল।

৪ আলো দেখে ঈশ্বর বুঝলেন, আলো ভাল। তখন ঈশ্বর অন্ধকার থেকে আলোকে পৃথক করলেন।
৫ ঈশ্বর আলোর নাম দিলেন, “দিন” এবং অন্ধকারের নাম দিলেন “রাত্রি।”সন্ধ্যা হল এবং সেখানে সকাল হল। এই হল প্রথম দিন।
৬ তারপর ঈশ্বর বললেন, “জলকে দুভাগ করবার জন্য আকাশমণ্ডলের ব্যবস্থা হোক।”

৭ তাই ঈশ্বর আকাশমণ্ডলের সৃষ্টি করে জলকে পৃথক করলেন। এক ভাগ জল আকাশমণ্ডলের উপরে আর অন্য ভাগ জল আকাশমণ্ডলের নীচে থাকল।
৮ ঈশ্বর আকাশমণ্ডলের নাম দিলেন “আকাশ।” সন্ধ্যা হল আর তারপর সকাল হল। এটা হল দ্বিতীয় দিন।
৯ তারপর ঈশ্বর বললেন, “আকাশের নীচের জল এক জায়গায় জমা হোক যাতে শুকনো ডাঙা দেখা যায়।” এবং তা-ই হল।
১০ ঈশ্বর শুকনো জমির নাম দিলেন, “পৃথিবী” এবং এক জায়গায় জমা জলের নাম দিলেন, “মহাসাগর।” ঈশ্বর দেখলেন ব্যবস্থাটা ভাল হয়েছে।

১১ তখন ঈশ্বর বললেন, “পৃথিবীতে ঘাস হোক, শস্যদায়ী গাছ ও ফলের গাছপালা হোক। ফলের গাছগুলিতে ফল আর ফলের ভেতরে বীজ হোক। প্রত্যেক উদ্ভিদ আপন আপন জাতের বীজ সৃষ্টি করুক। এইসব গাছপালা পৃথিবীতে বেড়ে উঠুক।” আর তাই-ই হল।
১২ পৃথিবীতে ঘাস আর শস্যদায়ী উদ্ভিদ উত্পন্ন হল। আবার ফলদাযী গাছপালাও হল, ফলের ভেতরে বীজ হল। প্রত্যেক উদ্ভিদ আপন আপন জাতের বীজ সৃষ্টি করল এবং ঈশ্বর দেখলেন ব্যবস্থাটা ভাল হয়েছে।
১৩ সন্ধ্যা হল এবং সকাল হল। এভাবে হল তৃতীয় দিন।
১৪ তারপর ঈশ্বর বললেন, “আকাশে আলো ফুটুক। এই আলো দিন থেকে রাত্রিকে পৃথক করবে। এই আলোগুলি বিশেষ সভাশুরু করার বিশেষ বিশেষ সংকেত হিসেবে ব্যবহৃত হবে। আর দিন ও বছর বোঝাবার জন্য এই আলোগুলি ব্যবহৃত হবে।
১৫ পৃথিবীতে আলো দেওয়ার জন্য এই আলোগুলি আকাশে থাকবে।” এবং তা-ই হল।

১৬ তখন ঈশ্বর দুটি মহাজ্যোতি বানালেন। ঈশ্বর বড়টি বানালেন দিনের বেলা রাজত্ব করার জন্য আর ছোটটি বানালেন রাত্রিবেলা রাজত্ব করার জন্য। ঈশ্বর তারকারাজিও সৃষ্টি করলেন।
১৭ পৃথিবীকে আলো দেওয়ার জন্য ঈশ্বর এই আলোগুলিকে আকাশে স্থাপন করলেন।
১৮ দিন ও রাত্রিকে কর্তৃত্ত্ব দেবার জন্য ঈশ্বর এই আলোগুলিকে আকাশে সাজালেন। এই আলোগুলি আলো আর অন্ধকারকে পৃথক করে দিল এবং ঈশ্বর দেখলেন ব্যবস্থাটা ভাল হয়েছে।
১৯ সন্ধ্যা হল এবং সকাল হল। এভাবে চতুর্থ দিন হল।
২০ তারপর ঈশ্বর বললেন, “বহু প্রকার জীবন্ত প্রাণীতে জল পূর্ণ হোক আর পৃথিবীর ওপরে আকাশে ওড়বার জন্য বহু পাখী হোক।”
২১ সুতরাং ঈশ্বর বড় বড় জলজন্তু এবং জলে বিচরণ করবে এমন সমস্ত প্রাণী সৃষ্টি করলেন। অনেক প্রকার সামুদ্রিক জীব রয়েছে এবং সে সবই ঈশ্বরের সৃষ্টি। যত রকম পাখী আকাশে ওড়ে সেইসবও ঈশ্বর বানালেন। এবং ঈশ্বর দেখলেন ব্যবস্থাটি ভাল হয়েছে।

২২ ঈশ্বর এই সমস্ত প্রাণীদের আশীর্বাদ করলেন। ঈশ্বর সামুদ্রিক প্রাণীদের সংখ্যাবৃদ্ধি করে সমুদ্র ভরিয়ে তুলতে বললেন। ঈশ্বর পৃথিবীতে পাখীদের সংখ্যাবৃদ্ধি করতে বললেন। ২৩ সন্ধ্যা হয়ে গেল এবং তারপর সকাল হল। এভাবে পঞ্চম দিন কেটে গেল।
২৪ তারপর ঈশ্বর বললেন, “নানারকম প্রাণী পৃথিবীতে উত্পন্ন হোক। নানারকম বড় আকারের জন্তু জানোয়ার আর বুকে হেঁটে চলার নানারকম ছোট প্রাণী হোক এবং প্রচুর সংখ্যায় তাদের সংখ্যাবৃদ্ধি হোক।” তখন য়েমন তিনি বললেন সব কিছু সম্পন্ন হল।
২৫ সুতরাং ঈশ্বর সব রকম জন্তু জানোয়ার তেমনভাবে তৈরী করলেন। বন্য জন্তু, পোষ্য জন্তু আর বুকে হাঁটার সবরকমের ছোট ছোট প্রাণী ঈশ্বর বানালেন এবং ঈশ্বর দেখলেন প্রতিটি জিনিসই বেশ ভালো হয়েছে।
সৃষ্টির প্রথম মানুষ
২৬ তখন ঈশ্বর বললেন, “এখন এস, আমরা মানুষ সৃষ্টি করি। আমাদের আদলে আমরা মানুষ সৃষ্টি করব। মানুষ হবে ঠিক আমাদের মত। তারা সমুদ্রের সমস্ত মাছের ওপরে আর আকাশের সমস্ত পাখীর ওপরে কর্তৃত্ত্ব করবে। তারা পৃথিবীর সমস্ত বড় জানোয়ার আর বুকে হাঁটা সমস্ত ছোট প্রাণীর উপরে কর্তৃত্ত্ব করবে।”
২৭ তাই ঈশ্বর নিজের মতোই মানুষ সৃষ্টি করলেন। মানুষ হল তাঁর ছাঁচে গড়া জীব। ঈশ্বর তাদের পুরুষ ও স্ত্রীরূপে সৃষ্টি করলেন।

২৮ ঈশ্বর তাদের আশীর্বাদ করে বললেন, “তোমাদের বহু সন্তানসন্ততি হোক। মানুষে মানুষে পৃথিবী পরিপূর্ণ করো এবং তোমরা পৃথিবীর নিয়ন্ত্রণের ভার নাও, সমুদ্রে মাছেদের এবং বাতাসে পাখিদের শাসন করো। মাটির ওপর যা কিছু নড়েচড়ে, যাবতীয় প্রাণীকে তোমরা শাসন করো।”
২৯ ঈশ্বর বললেন, “আমি তোমাদের শস্যদায়ী সমস্ত গাছ ও সমস্ত ফলদাযী গাছপালা দিচ্ছি। ঐসব গাছ বীজযুক্ত ফল উত্‌পাদন করে। এই সমস্ত শস্য ও ফল হবে তোমাদের খাদ্য।
৩০ এবং জানোয়ারদের সমস্ত সবুজ গাছপালা দিচ্ছি। তাদের খাদ্য হবে সবুজ গাছপালা। পৃথিবীর সমস্ত জন্তু জানোয়ার, আকাশের সমস্ত পাখি এবং মাটির উপরে বুকে হাঁটে য়েসব কীট সবাই ঐ খাদ্য খাবে।” এবং এই সব কিছুই সম্পন্ন হল।
৩১ ঈশ্বর যা কিছু সৃষ্টি করেছেন সেসব কিছু দেখলেন এবং ঈশ্বর দেখলেন সমস্ত সৃষ্টিই খুব ভাল হয়েছে। সন্ধ্যা হল, তারপর সকাল হল। এভাবে ষষ্ঠ দিন হল।

আদিপুস্তক ০২

১ এইভাবে পৃথিবী, আকাশ এবং তাদের আভ্যন্তরীণ যাবতীয় জিনিস সম্পূর্ণ হল।
২ য়ে কাজ ঈশ্বর শুরু করেছিলেন তা শেষ করে সপ্তম দিনে তিনি বিশ্রাম নিলেন।
৩ সপ্তম দিনটিকে আশীর্বাদ করে ঈশ্বর সেটিকে পবিত্র দিনে পরিণত করলেন। দিনটিকে ঈশ্বর এক বিশেষ দিনে পরিণত করলেন কারণ ঐ দিনটিতে পৃথিবী সৃষ্টির সমস্ত কাজ থেকে তিনি বিশ্রাম নিলেন।
৪ এই হল আকাশ ও পৃথিবীর ইতিহাস। ঈশ্বর যখন পৃথিবী ও আকাশ সৃষ্টি করেছিলেন, তখন যা কিছু ঘটেছিল এটা তারই গল্প।
৫ পৃথিবীতে তখন কোন গাছপালা ছিল না। মাঠে তখন কিছুই জন্মাতো না। কারণ প্রভু তখনও পৃথিবীতে বৃষ্টি পাঠান নি এবং ক্ষেতে চাষবাস করার জন্য তখন কেউ ছিল না।
৬ পৃথিবী থেকে জলউঠে চারপাশের জমিতে ছড়িয়ে পড়ল।
৭ তখন প্রভু ঈশ্বর মাটি থেকে ধুলো তুলে নিয়ে একজন মানুষ তৈরী করলেন এবং সেই মানুষের নাকে ফুঁ দিয়ে প্রাণবাযু প্রবেশ করালেন এবং মানুষটি জীবন্ত হয়ে উঠল।
এদন বাগান
৮ তখন প্রভু ঈশ্বর পূর্বদিকে একটি বাগান বানালেন আর সেই বাগানটির নাম দিলেন এদন এবং প্রভু ঈশ্বর তাঁর সৃষ্টি করা মানুষটিকে সেই বাগানে রাখলেন।
৯ এবং সেই বাগানে প্রভু ঈশ্বর সবরকমের সুন্দর বৃক্ষ এবং খাদ্যোপযোগী ফল দেয় এমন প্রতিটি বৃক্ষ রোপণ করলেন। বাগানের মাঝখানটিতে প্রভু ঈশ্বর রোপণ করলেন জীবন বৃক্ষটি যা ভাল এবং মন্দ বিষয়ে জ্ঞান দেয়।
১০ এদন হতে এক নদী প্রবাহিত হয়ে সেই বাগান জলসিক্ত করল। তারপর সেই নদী বিভক্ত হয়ে চারটি ছোট ছোট ধারায পরিণত হল।
১১ প্রথম ধারাটির নাম পীশোন। এই নদী ধারা পুরো হবীলা দেশটিকে ঘিরে প্রবাহিত।
১২ (সে দেশে সোনা রয়েছে আর তা উঁচু মানের। এছাড়া এই দেশে গন্ধদ্রব্য, গুগ্গুল আর মূল্যবান গোমেদকমণি পাওয়া যায়।)
১৩ দ্বিতীয় নদীর নাম গীহোন, এই নদীটি সমস্ত কুশ দেশটিকে ঘিরে প্রবাহিত।
১৪ তৃতীয় নদীটির নাম হিদ্দেকল। এই নদী অশূরিয়া দেশের পূর্ব দিকে প্রবাহিত। চতুর্থ নদীটির নাম ফরাত্‌।
১৫ কৃষিকাজ আর বাগানের রক্ষণাবেক্ষণের জন্য প্রভু ঈশ্বর মানুষটিকে এদন বাগানে রাখলেন।
১৬ প্রভু ঈশ্বর মানুষটিকে এই আদেশ দিলেন, “বাগানের য়ে কোনও বৃক্ষের ফল তুমি খেতে পারো।
১৭ কিন্তু য়ে বৃক্ষ ভালো আর মন্দ বিষযে জ্ঞান দেয সেই বৃক্ষের ফল কখনও খেও না। যদি তুমি সেই বৃক্ষের ফল খাও, তোমার মৃত্যু হবে!”
প্রথম স্ত্রীলোক
১৮ তারপরে প্রভু ঈশ্বর বললেন, “মানুষের নিঃসঙ্গ থাকা ভালো নয়। আমি ওকে সাহায্য করার জন্যে ওর মত আর একটি মানুষ তৈরী করব।”
১৯ প্রভু ঈশ্বর পৃথিবীর ওপরে সমস্ত পশু আর আকাশের সমস্ত পাখী তৈরী করবার জন্য মৃত্তিকার ধূলি ব্যবহার করেছিলেন। প্রভু ঈশ্বর ঐ সমস্ত পশুপাখীকে মানুষটির কাছে নিয়ে এলেন আর মানুষটি তাদের প্রত্যেকের আলাদা আলাদা নাম দিল।
২০ মানুষটি সমস্ত গৃহপালিত পশু, আকাশের সমস্ত পাখীর এবং অরণ্যের সমস্ত বন্য প্রাণীর নামকরণ করল। মানুষটি অসংখ্য পশু পাখী দেখল কিন্তু সে তার য়োগ্য সাহায্যকারী কাউকে দেখতে পেল না।
২১ তখন প্রভু ঈশ্বর সেই মানুষঢিকে খুব গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন করলেন। মানুষটি যখন ঘুমোচ্ছিল তখন প্রভু ঈশ্বর তার পাঁজরের একটা হাড় বের করে নিলেন। তারপর প্রভু ঈশ্বর য়েখান থেকে হাড়টি বের করেছিলেন সেখানটা চামড়া দিয়ে ঢেকে দিলেন।
২২ প্রভু ঈশ্বর মানুষটির পাঁজরের সেই হাড় দিয়ে তৈরি করলেন একজন স্ত্রী। তখন সেই স্ত্রীকে প্রভু ঈশ্বর মানুষটির সামনে নিয়ে এলেন।
২৩ এবং সেই মানুষটি বলল,“অবশেষে আমার সদৃশ একজন হল। আমার পাঁজরা থেকে তার হাড়, আর আমার শরীর থেকে তার দেহ তৈরী হয়েছে। য়েহেতু নর থেকে তার সৃষ্টি হয়েছে, সেহেতু ‘নারী’ বলে এর পরিচয় হবে।”
২৪ এইজন্য পুরুষ পিতামাতাকে ত্যাগ করে স্ত্রীর সঙ্গে মিলিত হয় এবং এইভাবে দুজনে এক হয়ে যায়।
২৫ তখন নরনারী উলঙ্গ ছিল, কিন্তু সেজন্যে তাদের কোন লজ্জাবোধ ছিল না।

আদিপুস্তক ০৩

মানুষের অবাধ্যতা
১ প্রভু ঈশ্বর যত রকম বন্য প্রাণী সৃষ্টি করেছিলেন সে সবগুলোর মধ্যে সাপ সবচেয়ে চালাক ছিল। সাপ সেই নারীর সঙ্গে একটা চালাকি করতে চাইল। একদিন সাপটা সেই নারীকে জিজ্ঞেস করল, “নারী, ঈশ্বর কি বাগানের কোনও গাছের ফল না খেতে সত্যিই আদেশ দিয়েছেন?”
২ তখন নারী সাপটাকে বলল, “না! ঈশ্বর তা বলেন নি! বাগানের সব গাছগুলো থেকে আমরা ফল খেতে পারি।

৩ শুধু একটি গাছ আছে যার ফল কিছুতেই খেতে পারি না। ঈশ্বর আমাদের বলেছিলেন, “বাগানের মাঝখানে য়ে গাছটা আছে, তার ফল কোনমতেই খাবে না। এমন কি ঐ গাছটা ছোঁবেও না – ছুঁলেই মরবে।”
৪ কিন্তু সাপটা নারীকে বলল, “না, মরবে না।
৫ ঈশ্বর জানেন, যদি তোমরা ঐ গাছের ফল খাও তাহলে তোমাদের ভালো আর মন্দের জ্ঞান হবে। আর তোমরা তখন ঈশ্বরের মত হয়ে যাবে!”
৬ সেই নারী দেখল গাছটা সুন্দর এবং এর ফল সুস্বাদু, আর এই ভেবে সে উত্তেজিত হল য়ে ঐ গাছ তাকে জ্ঞান দেবে। তাই নারী গাছটার থেকে ফল নিয়ে খেল। তার স্বামী সেখানেই ছিল, তাই সে স্বামীকেও ফলের একটা টুকরো দিল আর তার স্বামীও সেটা খেল।

৭ তখন সেই নারী ও পুরুষ দুজনের মধ্যেই একটা পরিবর্তন ঘটল। য়েন তাদের চোখ খুলে গেল আর তারা সব কিছু অন্যভাবে দেখতে শুরু করল। তারা দেখল তাদের কোনও জামাকাপড় নেই। তারা উলঙ্গ। তাই তারা কযেকটা ডুমুরের পাতা জোগাড় করে সেগুলোকে জুড়ে জুড়ে সেলাই করল এবং সেগুলোকে পোশাক হিসেবে পরল।
৮ প্রভু ঈশ্বর বিকেল বেলা বাগানে বেড়াচ্ছিলেন। তাঁর পাযের শব্দ শুনে সেই পুরুষ ও নারী বাগানে গাছগুলির মাঝখানে গিয়ে লুকালো।

৯ কিন্তু প্রভু ঈশ্বর পুরুষটিকে ডাকলেন, “তুমি কোথায়?”
১০ পুরুষটি বলল, “আপনার পাযের শব্দ শুনে ভয় পেলাম। আমি য়ে উলঙ্গ। তাই আমি লুকিয়ে আছি।”
১১ প্রভু ঈশ্বর মানুষটিকে বললেন, “কে বলল য়ে তুমি উলঙ্গ? তোমার লজ্জা করছে কেন? য়ে গাছটার ফল খেতে আমি বারণ করেছিলাম তুমি কি সেই বিশেষ গাছের ফল খেয়েছ?”
১২ সেই পুরুষ বলল, “আমার জন্য য়ে নারী আপনি তৈরী করেছিলেন সেই নারী গাছটা থেকে আমায় ফল দিয়েছিল, তাই আমি সেটা খেয়েছি।”
১৩ তখন প্রভু ঈশ্বর সেই নারীকে বললেন, “তুমি এ কি করেছ?”সেই নারী বলল, “সাপটা আমার সঙ্গে চালাকি করেছে। সাপটা আমায় ভুলিযে দিল আর আমিও ফলটা খেয়ে ফেললাম।”
ঈশ্বর শাস্তি দিলেন
১৪ সুতরাং প্রভু ঈশ্বর সাপটাকে বললেন,“তুমি ভীষণ খারাপ কাজ করেছ; তার ফলে তোমার খারাপ হবে। অন্যান্য পশুর চেযে তোমার পক্ষে বেশী খারাপ হবে। সমস্ত জীবন তুমি বুকে হেঁটে চলবে আর মাটির ধুলো খাবে।
১৫ তোমার এবং নারীর মধ্যে আমি শত্রুতা আনব এবং তার সন্তানসন্ততি এবং তোমার সন্তান সন্ততির মধ্যে এই শত্রুতা বয়ে চলবে। তুমি কামড় দেবে তার সন্তানের পাযে কিন্তু সে তোমার মাথা চূর্ণ করবে।”

১৬ তারপর প্রভু ঈশ্বর নারীকে বললেন,“তুমি যখন গর্ভবতী হবে, আমি সেই দশাটাকে দুঃসহ করে তুলব, তুমি অসহ্য ব্যথায সন্তানের জন্ম দেবে। তুমি তোমার স্বামীকে আকুলভাবে কামনা করবে কিন্তু সে তোমার উপরে কর্তৃত্ত্ব করবে।”
১৭ তারপর প্রভু ঈশ্বর পুরুষকে বললেন,“আমি তোমায় ঐ গাছের ফল খেতে বারণ করেছিলাম। তবু তুমি নারীর কথা শুনে নিষিদ্ধ গাছের ফল খেয়েছ। তাই তোমার কারণে আমি এই ভূমিকে শাপ দেব। ভূমি তোমাদের য়ে খাদ্য দেবে তার জন্যে এখন থেকে সারাজীবন তোমায় অতি কঠিন পরিশ্রম করতে হবে।

১৮ ভূমি তোমার জন্য কাঁটাঝোপ জন্ম দেবে এবং তোমাকে বুনো গাছপালা খেতে হবে।
১৯ তোমার খাদ্যের জন্যে তুমি কঠোর পরিশ্রম করবে য়ে পর্য্ন্ত না মুখ ঘামে ভরে যায়। তুমি মরণ পর্য্ন্ত পরিশ্রম করবে, তারপর পুনরায় ধূলি হয়ে যাবে। আমি ধুলি থেকে তোমায় সৃষ্টি করেছি এবং যখন তোমার মৃত্যু হবে পুনরায় তুমি ধূলিতে পরিণত হবে।”
২০ আদম তার স্ত্রীর নাম রাখল হবা, কারণ সে সমস্ত জীবিত মানুষের জননী হল।
২১ প্রভু ঈশ্বর পশুর চামড়া দিয়ে আদম ও হবার জন্য পোশাক বানিয়ে তাদের পরিযে দিলেন।
২২ প্রভু ঈশ্বর বললেন, “দেখ, ওরা এখন ভালো আর মন্দ বিষযে জেনে আমাদের মত হয়ে গেছে। এখন মানুষটা জীবনবৃক্ষের ফল পেড়েও খেতে পারে। আর তা যদি খায় তাহলে ওরা চিরজীবি হবে।”

২৩ সুতরাং প্রভু ঈশ্বর মানুষকে এদন উদ্যান ত্যাগ করতে বাধ্য করলেন। য়ে ভুমি থেকে আদমকে তৈরী করা হয়েছিল, বাধ্য হয়ে সে সেই ভুমিতেই কাজ করতে থাকল।
২৪ প্রভু ঈশ্বর মানুষকে ঐ উদ্যান থেকে তাড়িয়ে দিলেন। প্রভু করূব দূতদের উদ্যানের প্রবেশ পথে পাহারায় রাখলেন এবং তিনি আগুনের একটা তরবারিকেও সেখানে রাখলেন। জীবনবৃক্ষের কাছে যাবার পথটি পাহারা দেবার জন্য ঐ তরবারিটি চারদিকে জ্বলজ্বল করছিল।

আদিপুস্তক ০৪

হাবিল ও কাবিল
১ আদম ও তার স্ত্রী হবার মধ্যে য়ৌন সম্পর্ক হল। হবা একটি শিশুর জন্ম দিল। শিশুটির নাম রাখা হল কয়িন। হবা বলল, “প্রভুর সহায়তায আমি একটি মানুষের রূপ দিয়েছি।”
২ পরে সে আর একটি শিশু প্রসব করল। এই শিশুটি হল কয়িনের ভাই হেবল। হেবল হল মেষপালক আর কয়িন হল কৃষক।

৩ ফসল কাটার সময় প্রভুর জন্যে কয়িন কিছু উপহার নিয়ে এল। কয়িন ক্ষেতে যা ফলিযেছিল তার থেকে কিছু ফসল নিয়ে এল।
৪ আর হেবল প্রভুর জন্য তার মেষপাল থেকে বাছাই করা সেরা মেষগুলোর সেরা অংশ নিয়ে এল।প্রভু হেবল ও তার উপহার গ্রহণ করলেন,

৫ কিন্তু প্রভু কয়িন ও তার উপহার প্রত্যাখ্যান করলেন। এতে কয়িনের ভীষণ দুঃখ আর রাগ হল।
৬ প্রভু কয়িনকে জিজ্ঞেস করলেন, “তুমি রাগ করছ কেন? তোমার মুখ বিষন্ন কেন?
৭ তুমি যদি ভাল কাজ কর, তখন আমি তোমায় গ্রহণ করব। কিন্তু যদি অন্যায় কাজ করো সে পাপ থাকবে তোমার জীবনে। তোমার পাপ তোমাকে আযত্তে রাখতে চায়, কিন্তু তোমাকেই সেই পাপকে আযত্তে রাখতে হবে।”

৮ কয়িন তার ভাই হেবলকে বলল, “চলো, মাঠে যাওয়া যাক।” তখন কয়িন আর হেবল বাইরে মাঠে গেল। তখন কয়িন তার ভাই হেবলের উপর ঝাঁপিযে পড়ে তাকে হত্যা করল।
৯ পরে প্রভু কয়িনকে জিজ্ঞেস করলেন, “তোমার ভাই হেবল কোথায়?”কয়িন বলল, “আমি জানি না। ভাইয়ের উপর নজরদারি করা কি আমার কাজ?”
১০ তখন প্রভু বললেন, “তুমি কি করেছ? তোমার ভাইকে তুমি হত্যা করেছ? তার রক্ত মাটির নীচে থেকে আমার উদ্দেশ্যে চিত্কার করছে।

১১ তুমি তোমার ভাইকে হত্যা করেছ এবং তোমার হাত থেকে তার রক্ত নেওয়ার জন্যে পৃথিবী বিদীর্ণ হয়েছে। তাই এখন, আমি এই ভূমিকে অভিশাপ দেব।
১২ অতীতে, তুমি গাছপালা লাগিয়েছ এবং তোমার গাছপালার ভালই বাড়বৃদ্ধি হয়েছে। কিন্তু এখন তুমি গাছপালা লাগাবে এবং মাটি তোমার গাছপালা বাড়তে আর সাহায্য করবে না। এই পৃথিবীতে তোমার কোনও বাড়ী থাকবে না, তুমি এক জায়গা থেকে আর এক জায়গায় ঘুরে ঘুরে বেড়াবে।”
১৩ তখন কয়িন বলল, “এই শাস্তি আমার পক্ষে খুব বেশী!
১৪ দেখ, তুমি আমায় নির্বাসনে য়েতে বাধ্য করছ। আমি তোমার কাছেও আসতে পারব না, তোমার সঙ্গে আর আমার দেখাও হবে না। আমার কোনও ঘরবাড়ী থাকবে না। আমি পৃথিবী জুড়ে এক জায়গা থেকে আর এক জায়গায় ঘুরে বেড়াতে বাধ্য হব এবং আমায় য়ে দেখবে সেই হত্যা করবে।”
১৫ তখন প্রভু কয়িনকে বললেন, “না, আমি তা ঘটতে দেব না। তোমায় যদি কেউ হত্যা করে তাহলে তাকে আরও বেশী শাস্তি দেব।” তখন প্রভু কয়িনের গায়ে একটা চিহ্ন দিলেন যাতে কেউ তাকে হত্যা না করে।
কাবিলের বংশের কথা
১৬ কয়িন প্রভুর কাছ থেকে চলে এল এবং এদনের পূর্বদিকে নোদ নামক এক দেশে বাস করতে লাগল।
১৭ কয়িনের সঙ্গে য়ৌন সম্পর্কের ফলে তার স্ত্রী একটি পুত্রের জন্ম দিল। তার নাম রাখা হল হনোক। কয়িন একটি নগর পত্তন করে তার নামও পুত্রের নামে রাখল হনোক।
১৮ হনোকের ইরদ নামে একটি পুত্র হল। ইরদের পুত্রের নাম মহূয়ায়েল। আর তার পুত্রের নাম মথুশায়েল। আর তার পুত্রের নাম লেমক।
১৯ লেমকের দুজন স্ত্রী ছিল। একজনের নাম আদা, আর একজনের নাম সিল্লা।
২০ আদার গর্ভে জন্ম হল যাবলের। যারা তাঁবুতে বাস করে এবং পশুপালন করে সেই জাতির জনক হল যুবল।
২১ আদার অন্য পুত্রের নাম য়ুবল। তার সন্তানসন্ততি থেকে য়ে জাতির সৃষ্টি হল তারা বীণা ও বাঁশি বাজায।
২২ লেমকের অন্য স্ত্রী সিল্লা এক পুত্রের ও এক কন্যার জন্ম দিল। পুত্রের নাম তুবল কয়িন আর কন্যার নাম নয়মা। তুবল কয়িনের সন্তানসন্ততি পিতল ও লোহার কাজে দক্ষ।
২৩ লেমক তার দুই স্ত্রীর উদ্দেশ্যে বলল,“আদা আর সিল্লা, এদিকে কান দাও। লেমকের স্ত্রীরা, আমার কথা শোনো! একটা লোক আমায় মেরেছিল, তাই তাকে আমি হত্যা করেছি। একজন তরুণ আমায় আঘাত করেছিল, তার বদলে আমি তাকে হত্যা করেছি।
২৪ কয়িনকে হত্যার শাস্তি ছিল সাত গুণ, লেমককে হত্যার শাস্তি সাতাত্তর গুণ বেশী!”
হযরত শিস (আঃ)
২৫ আদমের সঙ্গে য়ৌন সম্পর্কের ফলে হবা আর একটি পুত্রের জন্ম দিল। তারা তার নাম রাখল শেথ। হবা বলল, “ঈশ্বর আমায় আর একটি পুত্র দিয়েছেন। কয়িন হেবলকে মেরে ফেলল, কিন্তু আমার এখন শেথ আছে।”
২৬ শেথেরও একটি পুত্র হল। সে তার নাম রাখল ইনোশ। সেই সময় লোকেরা প্রভুর কাছে প্রার্থনা করতে শুরু করল।”

আদিপুস্তক ০৫


১ এই বই হল আদম পরিবারের বিষয নিয়ে। ঈশ্বর নিজের ছাঁচে মানুষকে সৃষ্টি করেছিলেন।
২ ঈশ্বর মানুষকে পুরুষ ও স্ত্রীরূপে সৃষ্টি করেছিলেন। এবং সেই সৃষ্টির দিনে ঈশ্বর আশীর্বাদ করে তাদের নাম দিলেন “আদম।”

৩ আদমের যখন ১৩০ বছর বয়স তখন তার আর একটি পুত্র হল। পুত্রটিকে দেখতে হুবহু আদমের মতো। আদম তার নাম রাখলেন শেথ।
৪ শেথের জন্মের পর ৮০0 বছর আদম বেঁচে ছিলেন। এই সময়ের মধ্যে আদমের আরও পুত্রকন্যা হল।
৫ সুতরাং আদম মোট ৯৩০ বছর বেঁচে ছিলেন। তারপর তাঁর মৃত্যু হল।

৬ শেথের যখন ১০৫ বছর বয়স তখন তাঁর একটি পুত্র হয়। তার নাম রাখা হয় ইনোশ।
৭ ইনোশের জন্মের পরে শেথ ৮০৭ বছর বেঁচে ছিলেন। ইতিমধ্যে শেথের আরও পুত্রকন্যা হয়।

৮ সুতরাং শেথ বেঁচে ছিলেন মোট ৯১২ বছর। তারপর তাঁর মৃত্যু হয়।
৯ ইনোশের যখন ৯০ বছর বয়স তখন তাঁর কৈনন নামে একটি পুত্র হয়।
১০ কৈননের জন্মের পর ইনোশ ৮১৫ বছর বেঁচে ছিলেন। ইতিমধ্যে তাঁর আরও পুত্রকন্যা হয়।
১১ সুতরাং ইনোশ মোট ৯০৫ বছর বেঁচে ছিলেন। তারপর তাঁর মৃত্যু হয়।
১২ কৈননের ৭০ বছর বয়সে তাঁর মহললেল নামে একটি পুত্র হয়।

১৩ মহললেলের জন্মের পর কৈনন ৮৪০ বছর বেঁচে ছিলেন। ইতিমধ্যে কৈননের আরও পুত্রকন্যা হয়।
১৪ সুতরাং কৈনন মোট ৯১০ বছর বেঁচে ছিলেন। তারপর তাঁর মৃত্যু হয়।
১৫ মহললেলের যখন ৬৫ বছর তখন তাঁর য়েরদ নামে একটি পুত্র হয়।
১৬ য়েরদের জন্মের পর মহললেল ৮৩০ বছর বেঁচে ছিলেন। ইতিমধ্যে তাঁর আরও পুত্রকন্যা হয়।
১৭ সুতরাং মহললেল মোট ৮৯৫ বছর বেঁচে ছিলেন। তারপর তাঁর মৃত্যু হয়।
১৮ য়েরদের যখন ১৬২ বছর বয়স তখন তাঁর হনোক নামে একটি পুত্র হয়।
১৯ হনোকের জন্মের পর য়েরদ ৮০0 বছর বেঁচে ছিলেন। ইতিমধ্যে তাঁর আরও পুত্রকন্যা হয়.
২০ সুতরাং য়েরদ মোট ৯৬২ বছর বেঁচে ছিলেন। তারপর তাঁর মৃত্যু হয়।
২১ হনোকের যখন ৬৫ বছর বয়স তখন মথূশেলহ নামে তাঁর একটি পুত্র হয়।
২২ মথূশেলহর জন্মের পর হনোক আরও ৩০0 বছর ঈশ্বরের সঙ্গে পদচারণা করেন। ইতিমধ্যে তাঁর আরও পুত্রকন্যা হয়।
২৩ সুতরাং হনোক মোট ৩৬৫ বছর বেঁচে ছিলেন।
২৪ একদিন হনোক ঈশ্বরের সঙ্গে পদচারণা করতে করতে অদৃশ্য হয়ে গেলেন। ঈশ্বর তাঁকে নিয়ে নিলেন।
২৫ মথূশেলহর যখন ১৮৭ বছর বয়স তখন তাঁর লেমক নামে একটি পুত্র হয়।
২৬ লেমকের জন্মের পর মথূশেলহ ৭৮২ বছর বেঁচে ছিলেন। ইতিমধ্যে তাঁর আরও পুত্রকন্যা হয়।
২৭ সুতরাং মথূশেলহ মোট ৯৬৯ বছর বেঁচে ছিলেন। তারপর তাঁর মৃত্যু হয়।
২৮ লেমকের যখন ১৮২ বছর বয়স তখন তাঁর একটি পুত্র হল।
২৯ লেমক পুত্রের নাম রাখলেন নোহ। তিনি বললেন, “ঈশ্বর ভূমিকে অভিশাপ দিয়েছেন বলে কৃষকরূপে আমাদের কঠোর পরিশ্রম করতে হয়। কিন্তু নোহ আমাদের বিশ্রাম দেবে।”
৩০ নোহের জন্মের পর লেমক ৫৯৫ বছর বেঁচে ছিলেন। ইতিমধ্যে তাঁর আরও পুত্রকন্যা হয়।
৩১ সুতরাং লেমক মোট ৭৭৭ বছর বেঁচে ছিলেন। তারপর তাঁর মৃত্যু হয়।
৩২ নোহর ৫০0 বছর বয়সে শেম, হাম এবং য়েফত্‌ নামে তিনটি পুত্র হয়।

আদিপুস্তক ০৬


১ পৃথিবীতে মানুষের সংখ্যা ক্রমশঃ বেড়ে চলল। অনেকের অনেক কন্যা হল।
২ ঈশ্বরের পুত্রেরা দেখল য়ে তারা সুন্দরী। সুতরাং ঈশ্বরের পুত্রেরা যার যাকে পছন্দ সে তাকে বিয়ে করল।এই নারীরা সন্তানের জন্ম দিল। সেই সময় এবং পরবর্তীকালে পৃথিবীতে নেফিলিম জাতীয মানুষরা বাস করত। প্রাচীনকাল থেকেই নেফিলিমরা মহাবীররূপে বিখ্যাত ছিল।তখন প্রভু বললেন, “মানুষ নেহাতই রক্তমাংসের জীব মাত্র। ওদের দ্বারা আমি আমার আত্মাকে চিরকাল পীড়িত হতে দেব না। আমি ওদের ১২০ বছর করে আযু দেব।”


৫ প্রভু দেখলেন য়ে পৃথিবীতে লোকে শুধু মন্দ কাজই করছে। তিনি দেখলেন য়ে লোক সারাক্ষণ মন্দ জিনিসের কথাই চিন্তা করছে।
৬ পৃথিবীতে মানুষ সৃষ্টি করার জন্যে প্রভুর অনুশোচনা হল এবং তাঁর হৃদয় বেদনায় পূর্ণ হল।

৭ তাই তিনি বললেন, “পৃথিবীতে যত মানুষ সৃষ্টি করেছি সবাইকে আমি ধ্বংস করব। প্রত্যেক মানুষ, প্রত্যেক জানোয়ার এবং পৃথিবীর উপরে যা কিছু চলে ফিরে বেড়ায সব কিছুকে আমি ধ্বংস করব। বাতাসে যত পাখী ওড়ে সেগুলোকেও আমি ধ্বংস করব। কেন? কারণ এই সবকিছু সৃষ্টি করেছি বলে আমি দুঃখিত।”
৮ পৃথিবীতে শুধু একজন মানুষের প্রতি প্রভু সন্তুষ্ট ছিলেন – সে হল নোহ।

৯ এই হল নোহের পরিবারের বৃতান্ত। নোহ তাঁর প্রজন্মের একজন ভাল ও সত্‌ মানুষ ছিলেন এবং তিনি সর্বদা ঈশ্বরকে অনুসরণ করতেন।
১০ নোহের তিন পুত্র ছিল: শেম, হাম আর য়েফত্‌।
১১ ঈশ্বর নীচে পৃথিবীর দিকে দৃষ্টিপাত করলেন এবং দেখলেন য়ে মানুষ তা ধ্বংস করেছে। সর্বত্র হিংসাত্মক ক্রিয়াকলাপ। মানুষ দুষ্ট এবং নিষ্ঠুর হয়ে গেছে এবং নিজেদের জীবন নষ্ট করেছে।
১২
১৩ তাই ঈশ্বর নোহকে বললেন, “সমস্ত লোক ক্রোধ আর হিংসা দিয়ে পৃথিবী পরিপূর্ণ করেছে। তাই আমি সমস্ত জীবন্ত প্রাণীদের ধ্বংস করব। পৃথিবী থেকে সব কিছু মুছে ফেলব।
১৪ গোফর কাঠ দিয়ে একটা নৌকা বানাও। নৌকোর ভেতরে অনেকগুলি কক্ষ তৈরী করবে এবং কাঠ সংরক্ষণের জন্য বাইরে আলকাতরা লাগাবে।

১৫ “নৌকোটা ৩০0 হাত লম্বা, ৫০ হাত চওড়া আর ৩০ হাত উঁচু করে তৈরী করবে।
১৬ ছাদের থেকে প্রায় ১৮ ইঞ্চি নীচে একটা জানালা তৈরী করবে। নৌকোর পাশের দিকে একটা দরজা তৈরী করবে। উপরের তলা, মাঝের তলা আর নীচের তলা – এইভাবে নৌকোর তিনটে তলা থাকবে।
১৭ “এবার যা বলছি, মন দিয়ে শোন। পৃথিবীতে আমি এক মহাপ্লাবন ঘটাবো। আকাশের নীচের যত জীবন্ত প্রাণী আছে, সব ধ্বংস করবো। পৃথিবীর সমস্ত কিছুর মৃত্যু হবে।
১৮ কিন্তু তোমার সঙ্গে আমার একটা বিশেষ চুক্তি হবে। তুমি, তোমার স্ত্রী, তোমার পুত্রেরা, তোমার পুত্রবধূরা – তোমরা সবাই ঐ নৌকোতে উঠবে।

১৯ আর পৃথিবীর সমস্ত প্রাণীর থেকে তুমি একটি করে পুরুষ আর একটি করে স্ত্রী বেছে নেবে। তুমি অবশ্যই তাদের নৌকোতে তুলে নেবে এবং তোমাদের সঙ্গে তাদেরও বাঁচিয়ে রাখবে।
২০ সমস্ত রকম পাখীর এক জোড়া, সমস্ত রকম পশুর এক জোড়া এবং মাটিতে বুকে হেঁটে চলে সেরকম সব প্রাণীর এক-এক জোড়া খুঁজে বের করো। পৃথিবীতে যত রকম জীবজন্তু আছে সে সব গুলোর এক জোড়া স্ত্রী পুরুষ জোগাড় করে তোমার নৌকোতে তাদের বাঁচিয়ে রাখবে।
২১ তোমাদের জন্য আর অন্যান্য পশুপাখীর জন্য সমস্ত রকম খাবারও অবশ্যই জোগাড় করে রাখবে।”
২২ এই সমস্ত কিছুই নোহ করলেন। ঈশ্বর য়েমন আজ্ঞা দিয়েছিলেন, নোহ সবকিছু ঠিক সেইভাবেই পালন করলেন।

আদিপুস্তক ০৭


১ তখন প্রভু নোহকে বললেন, “তুমি য়ে একজন সত্‌ মানুষ তা আমি লক্ষ্য করেছি। এমনকি এই য়ুগের দুষ্ট লোকদের মধ্যেও তুমি নিজেকে সত্‌ রেখেছ। সুতরাং তোমার পরিবারের সবাইকে নিয়ে তুমি গিয়ে নৌকোতে ওঠো।
২ পৃথিবীর সমস্ত শুচি পশুপাখীরসাত সাত জোড়া এবং অন্যান্য প্রত্যেক পশুর এক এক জোড়া নাও। এই সমস্ত পশুপাখীদের তুমি ঐ নৌকোতে তোমার সঙ্গে নেবে।

৩ সমস্ত রকম পাখীর সাতটি করে জোড়া নেবে। এর ফলে পৃথিবীর অন্যান্য সমস্ত পশুপাখী আমি ধ্বংস করে ফেলার পরেও এইসব পশুপাখী সম্পূর্ণভাবে বংশলোপের হাত থেকে রক্ষা পাবে।
৪ এখন থেকে ঠিক সাতদিন পরে আমি পৃথিবীতে প্রবল বর্ষণ ঘটাবো। ৪০ দিন ৪০ রাত ধরে বৃষ্টি হবে। আমি পৃথিবীর সমস্ত জীবন্ত প্রাণী ধ্বংস করে দেব। যা কিছু আমি সৃষ্টি করেছি, সব নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে।”
৫ প্রভু যা যা করতে বললেন, নোহ সে সমস্তই করলেন।
৬ যখন সেই বর্ষন শুরু হল তখন নোহের বয়স ৬০0 বছর।
৭ নোহ এবং তাঁর পরিবার মহাপ্লাবন থেকে পরিত্রাণের জন্যে নৌকোতে প্রবেশ করলেন। নোহের সঙ্গে তাঁর স্ত্রী, তাঁর পুত্রেরা ও পুত্রবধূরা সবাই নৌকোতে ছিলেন।
৮ সমস্ত শুচি ও অশুচি পশুপাখী এবং মাটিতে যারা বুকে হেঁটে চলে সেইসব প্রাণী

৯ নোহের সঙ্গে নৌকোতে গিয়ে উঠল। ঈশ্বর য়েমনটি আদেশ করেছিলেন ঠিক তেমনভাবে স্ত্রী ও পুরুষে জুটি বেঁধে সমস্ত পশুপাখী নৌকোতে চড়লে,
১০ সাত দিন পরে শুরু হল প্লাবন। পৃথিবীতে শুরু হলো বর্ষা।

১১ নোহর ৬০0তম বছরের দ্বিতীয় মাসের ১৭তম দিনে সমস্ত ভূগর্ভস্থ প্রস্রবণ ফেটে বেরিয়ে এল, মাটি থেকে জল বইতে শুরু করল। ঐদিন মুষলধারে বৃষ্টি শুরু হল, বাঁধ ভেঙে গেল এবং সমস্ত পৃথিবী জলপ্লাবিত হলো। সেই একই দিনে প্রচণ্ড বেগে বৃষ্টিপাত শুরু হল য়েন আকাশের সমস্ত জানালা খুলে গেল। ৪০ দিন ৪০ রাত ধরে সমানে বৃষ্টি হলো। সেই দিনটিতেই নোহ ও তাঁর স্ত্রী এবং তাঁদের তিন পুত্র শেম, হাম, য়েফত্‌ আর তাদের তিন স্ত্রী সকলেই নৌকোয প্রবেশ করল।
১২
১৩
১৪ ঐ সব মানুষ আর পৃথিবীর যাবতীয় পশুপাখী নৌকোর মধ্যে আশ্রয় নিলো। সব রকমের গৃহপালিত জন্তু এবং পৃথিবীতে যতরকমের পশুপাখী চলে ফিরে আর উড়ে বেড়ায সবাই নৌকোর ভেতরে নিরাপদে থাকলো।
১৫ সমস্ত জন্তু জানোয়ার, পাখী ইত্যাদি নোহর সঙ্গে নৌকোতে জোড়ায় জোড়ায় থাকল।

১৬ ঈশ্বর য়েমন আদেশ দিয়েছিলেন, নোহ সেই অনুসারে পৃথিবীর যাবতীয় প্রাণীর এক এক জোড়া নৌকোতে তুললে, প্রভু বাইরে থেকে নৌকোর দরজা বন্ধ করে দিলেন।
১৭ পৃথিবীতে ৪০ দিন ধরে বন্যা চলল। জলের মাত্রা ক্রমশঃ উঁচু হতে লাগল আর সেই নৌকো মাটি ছেড়ে জলের উপরে ভাসতে থাকলো।
১৮ জল বাড়তেই থাকল আর নৌকো মাটি ছেড়ে অনেক উঁচুতে ভাসতে লাগল।
১৯ জল এত বাড়লো য়ে সবচেয়ে উঁচু পর্বতগুলো পর্য্ন্ত ডুবে গেল।

২০ পর্বতগুলোর মাথা ছাপিযে জল বাড়তে লাগল। সবচেয়ে উঁচু পর্বতের উপরেও ২০ ফুটের বেশী জল দাঁড়াল।
২১ পৃথিবীর সমস্ত জীব মারা গেল। প্রতিটি পুরুষ ও স্ত্রী এবং পৃথিবীর সমস্ত জন্তু জানোয়ার মারা পড়ল। সমস্ত বন্য প্রাণী, সরীসৃপ ধ্বংস হয়ে গেল। স্থলচর যত প্রাণী শ্বাস প্রশ্বাস নেয় তারাও মারা গেল।
২২
২৩ এইভাবে ঈশ্বর পৃথিবীকে একেবারে পরিষ্কার করে ফেললেন। পৃথিবীর সমস্ত জীবন্ত অস্তিত্ব ধ্বংস করে ফেললেন। সমস্ত মানুষ, সমস্ত জন্তু জানোয়ার, বুকে হাঁটা সমস্ত প্রাণী এবং সমস্ত পাখী এই সব কিছুই পৃথিবী থেকে নিশ্চিহ্ন হয়ে গেল। নোহ আর নোহের পরিবার পরিজন এবং নৌকোতে আশ্রয় পাওয়া পশুপাখী – কেবলমাত্র এইসব প্রাণের অবশেষ পৃথিবীতে বেঁচে থাকলো।
২৪ একটানা ১৫০ দিন পৃথিবী বিপুল জলরাশিতে ডুবে থাকলো।

আদিপুস্তক ০৮


১ কিন্তু ঈশ্বর নোহর কথা ভুলে যান নি। নোহ এবং নোহের নৌকোয আশ্রয় পাওয়া সব জীবজন্তুর কথাই ঈশ্বরের মনে ছিল। পৃথিবীর উপর দিয়ে তিনি এক বাতাস বইয়ে দিলেন। এবং সমস্ত জল সরে য়েতে শুরু করল।
২ আকাশ থেকে অবিশ্রান্ত বর্ষন বন্ধ হল। ভূগর্ভস্ত প্রস্রবণগুলি থেকে জল নির্গত হওয়া বন্ধ হল।

৩ পৃথিবীর উপর থেকে জলরাশি ক্রমশঃ নেমে য়েতে লাগল। ১৫০ দিন পরে জল এতটাই নেমে গেল য়ে নৌকোটা আবার মাটি স্পর্শ করলো। নৌকা গিয়ে ঠেকল অরারটের একটা পর্বতে। সেটা ছিল সপ্তম মাসের ১৭ তম দিন।

৫ জল ক্রমাগত নেমে য়েতে লাগলো এবং দশম মাসের প্রথম দিনে পর্বতের মাথাগুলো জলের উপরে জেগে উঠলো।
৬ আরও ৪০ দিন পরে নোহ নিজের তৈরী নৌকোর জানালাটা খুললেন।

৭ তারপর তিনি নৌকো থেকে একটা দাঁড়কাক উড়িয়ে দিলেন। এবং যতদিন না জল নেমে গিয়ে শুকনো ডাঙা দেখা দিল ততদিন সেই দাঁড়কাকটা নৌকো থেকে উড়ে গিয়ে এক জায়গা থেকে আর এক জায়গায় উড়ে বেড়াতে লাগল।
৮ নোহ একটা পায়রাও উড়িয়ে দিলেন। পায়রাটা শুকনো ডাঙা খুঁজে পায় কিনা তা নোহ জানতে চাইছিলেন। তিনি জানতে চাইছিলেন য়ে পৃথিবী এখনও জলে ডুবে আছে কি না।

৯ পৃথিবী তখনও জলে ঢাকা, তাই পায়রাটা বসার জায়গা না পেয়ে ফিরে এল নৌকোতে। নোহ হাত বাড়িযে পায়রাটাকে ধরে নৌকোর ভিতরে টেনে নিলেন।
১০ সাত দিন পরে নোহ আবার পায়রাটা উড়িয়ে দিলেন।
১১ এবং সেদিন বিকেলে পায়রাটা জলপাইয়ের একটা কচি পাতা ঠোঁটে নিয়ে ফিরে এল। পৃথিবীতে য়ে আবার ডাঙা জেগে উঠতে শুরু করেছে ঐ কচি পাতাটি তারই চিহ্ন।
১২ সাত দিন পরে নোহ আবার পায়রাটা উড়িয়ে দিলেন। কিন্তু এবার পায়রাটা আর ফিরে এল না।
১৩ তারপর নোহ নৌকোর দরজাটা খুললেন। নোহ তাকিযে শুকনো ডাঙা দেখতে পেলেন। সেটা ছিল বছরের প্রথম মাসের প্রথম দিন। নোহর বয়স তখন ৬০১ বছর।
১৪ দ্বিতীয় মাসের ২৭তম দিনের মধ্যে ডাঙা সম্পূর্ণ শুকনো হয়ে গেল।
১৫ ঈশ্বর তখন নোহকে বললেন,
১৬ “নৌকো থেকে নেমে এস। তুমি, তোমার স্ত্রী, তোমার পুত্ররা আর তাদের বধূরা নৌকো থেকে এবার বাইরে যাও।
১৭ তোমাদের সঙ্গে নৌকোর সমস্ত পশুপাখী নিয়ে বাইরে যাও। সমস্ত পাখী, সমস্ত জন্তু জানোয়ার এবং বুকে হেঁটে চলে এরকম সমস্ত প্রাণী নিয়ে বাইরে এসো। ঐসব পশুপাখী আরও অনেক পশুপাখীর জন্ম দেবে আর সে সবে আবার পৃথিবী ভরে যাবে।”

১৮ অতএব নোহ, তাঁর স্ত্রী, পুত্র ও পুত্রবধূদের নিয়ে নৌকো থেকে মাটিতে নামলেন।
১৯ সমস্ত জন্তু জানোয়ার, সমস্ত প্রাণী যা বুকে হাঁটে এবং সমস্ত পাখী নৌকো ছেড়ে বাইরে বেরিয়ে এল। নৌকো ছেড়ে এল জোড়ায জোড়ায সমস্ত পশুপাখী।
২০ তখন নোহ প্রভুর জন্যে একটা বেদী তৈরী করলেন। নোহ কয়েকটি শুচি পশু ও কয়েকটি শুচি পাখী ঈশ্বরের উদ্দেশ্যে নিবেদন করে সেই বেদীতে হোম করলেন।
২১ প্রভু হোমের গন্ধ আঘ্রাণ করে প্রীত হলেন। আপন মনে প্রভু বললেন, “মানুষকে শাস্তি দেওয়ার জন্যে আমি আর কখনও মৃত্তিকাকে অভিশাপ দেব না। কারণ বাল্যকাল থেকে মানুষের স্বভাব মন্দ। সুতরাং এইমাত্র আমি য়েমনটি করেছিলাম আর কখনও সেভাবে পৃথিবীর সমস্ত প্রাণীদের ধ্বংস করব না।
২২ যতদিন পৃথিবী থাকবে ততদিন শস্যের চারা রোপণের আর ফসল কাটার নির্দিষ্ট সময় থাকবে। ততদিন ঠাণ্ডা, গরম, শীতকাল আর গ্রীষ্মকাল এবং দিন, রাত হয়ে চলবে।”

আদিপুস্তক ০৯


১ ঈশ্বর নোহ আর তাঁর পুত্রদের আশীর্বাদ করলেন। ঈশ্বর তাদের বললেন, “তোমাদের বহু সন্তান হোক। তোমাদের উত্তরপুরুষরা পৃথিবী পরিপূর্ণ করুক।
২ পৃথিবীর সমস্ত জন্তু জানোয়ার, আকাশের সমস্ত পাখী, যতরকমের সরীসৃপ জাতীয জীব যারা মাটির উপরে বুকে হেঁটে চলে এবং জলের সমস্ত মাছ প্রত্যেকে তোমাদের ভয় করবে। সমস্ত প্রাণীগণই তোমাদের শাসনে থাকবে।

৩ অতীতে তোমাদের খাদ্য হিসেবে আমি শুধু সবুজ উদ্ভিদ তোমাদের দিয়েছিলাম। এখন থেকে সমস্ত জানোয়ারই তোমাদের খাদ্য হবে। পৃথিবীর সমস্ত কিছুই আমি তোমাদের দিচ্ছি। সব কিছুই তোমাদের।
৪ য়ে মাংসের মধ্যে সেই প্রাণীর প্রাণ (রক্ত) আছে সেই মাংস কখনও খাবে না।
৫ আমি তোমাদের জীবনের জন্য তোমাদের রক্ত দাবি করব। অর্থাত্‌ যদি কোনও জানোয়ার কোনও মানুষকে হত্যা করে তাহলে আমি তার প্রাণ দাবী করব এবং যদি কোন মানুষ অন্য কোনও মানুষের প্রাণ নেয় আমি তারও প্রাণ দাবী করব।

৬ “ঈশ্বর মানুষকে আপন ছাঁচে তৈরী করেছেন। তাই য়ে মানুষ অপর মানুষকে হত্যা করে তার অবশ্যই মানুষের হাতে মৃত্যু হবে।
৭ “নোহ, তুমি ও তোমার পুত্রদের অনেক সন্তানসন্ততি হোক। আপন পরিজনদের দিয়ে পৃথিবী পরিপূর্ণ করো।”
৮ তারপর ঈশ্বর নোহ ও তাঁর পুত্রদের বললেন,
৯ “আমি এখন তোমাকে এবং তোমার লোকদের, যারা তোমার পরে বর্ত্তমান থাকবে তাদের প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি।
১০ নৌকোর মধ্যে থেকে তোমার সঙ্গে য়েসব পাখী, য়েসব গৃহপালিত জন্তু এবং অন্যান্য য়েসব জানোয়ার নেমেছে তাদের সবাইকে আমার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি। পৃথিবীর সমস্ত প্রাণীর কাছে আমার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি।

১১ তোমাদের কাছে আমার প্রতিশ্রুতি হল এই: পৃথিবীর সমস্ত প্রাণ বন্যা দিয়ে ধ্বংস করা হয়েছিল। কিন্তু এমন ঘটনা আর কখনও হবে না। কোনও বন্যা আর কখনও পৃথিবী থেকে সমস্ত প্রাণ নিশ্চিহ্ন করবে না।”
১২ ঈশ্বর আরও বললেন, “আর আমি য়ে এই প্রতিশ্রুতি দিলাম এর প্রমাণস্বরূপ আমি তোমাদের একটা জিনিস দেব। এই প্রমাণ থেকে সকলে জানবে য়ে আমি তোমার সঙ্গে এবং পৃথিবীর সমস্ত জীবন্ত জিনিসের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ। এই চুক্তি চিরকালীন।
১৩ প্রমাণটা এই য়ে, আকাশে আমি মেঘে মেঘে সাতরঙের এক রঙধনু বানিয়েছি। ঐ রঙধনুই হল আমার আর পৃথিবীর মধ্যে চুক্তির চিহ্ন।

১৪ আমি যখন পৃথিবীর উপরে মেঘমালা ছড়িয়ে দেব, তখন তোমরা মেঘে ঐ রঙধনু দেখতে পাবে।
১৫ আর আমি যখন ঐ রঙধনু দেখতে পাবো, আমার তখন তোমার ও পৃথিবীর যাবতীয় জীবন্ত জিনিসের সঙ্গে চুক্তির কথা মনে পড়বে। এই চুক্তির মর্ম হল য়ে পৃথিবীতে আর কখনও সর্ব বিধ্বংসী এমন বন্যা হবে না।
১৬ আমি যখন মেঘের মধ্যে ঐ রঙধনু দেখবো তখন চিরকালের জন্য সম্পন্ন ঐ চুক্তির কথা আমার মনে পড়ে যাবে। আমার আর পৃথিবীর প্রত্যেক প্রাণীর মধ্যে ঐ চুক্তির কথা আমি মনে রাখব।”
১৭ তারপর প্রভু নোহকে বললেন, “পৃথিবীর সমস্ত প্রাণীর সঙ্গে আমি য়ে একটা চুক্তি করেছি ঐ রঙধনুই তার প্রমাণ।”
১৮ নোহর সঙ্গে তাঁর পুত্রেরাও নৌকো থেকে বেরিয়ে এলো। তাদের নাম শেম, হাম আর য়েফত্‌। (হামই কনানের পিতা।)
১৯ ঐ তিনজন হল নোহর পুত্র। ঐ তিন পুত্র হতেই পৃথিবীর সমস্ত মানুষ এসেছে।
২০ মাটিতে নেমে নোহ কৃষিকাজ শুরু করলেন। একটা জমিতে তিনি দ্রাক্ষা চাষ করলেন।
২১ সেই দ্রাক্ষা থেকে নোহ দ্রাক্ষারস বানালেন, তারপর সেই দ্রাক্ষারস পান করে নেশায চুর হয়ে তাঁবুর ভিতরে শুয়ে পড়লেন। নোহর গায়ে আবরণ থাকল না।
২২ কনানের পিতা হাম সেই উলঙ্গ অবস্থায় নিজের পিতাকে দেখে ফেললো। তাঁবুর বাইরে গিয়ে সে কথা ভাইদের বলল।
২৩ তখন শেম আর য়েফত্‌ এক খণ্ড বস্ত্র নিয়ে নিজেদের পিঠের উপর ছড়িয়ে নিলো। তারপর পিছন দিকে হেঁটে হেঁটে তাঁবুর ভিতরে ঢুকে ঐ বস্ত্রখণ্ড দিয়ে পিতাকে ঢেকে দিল। এইভাবে, তাদের মুখ বিপরীত দিকে ছিল বলে তাদের পিতার নগ্নতা তারা দেখেনি।
২৪ দ্রাক্ষারসের প্রভাবে নোহ ঘুমিয়ে পড়েছিলেন। তিনি যখন ঘুম থেকে উঠলেন তখন জানতে পারলেন তাঁর তরুণ পুত্র হাম তাঁর প্রতি কি করেছে।
২৫ তখন নোহ বললেন,“অভিশাপ কনানের উপরে পড়ুক। তাকে চিরকাল তার ভাইদের দাস হয়ে থাকতে হবে।”
২৬ নোহ আরও বললেন,“শেমের প্রভু ঈশ্বরের প্রশংসা কর! কনান য়েন শেমের দাস হয়।
২৭ ঈশ্বর য়েফত্‌কে আরও জমি দিন, ঈশ্বর শেমের তাঁবুতে অবস্থান করুন এবং কনান তাদের দাস হউক।”
২৮ বন্যার পরে নোহ ৩৫০ বছর বেঁচেছিলেন।
২৯ নোহ বেঁচেছিলেন মোট ৯৫০ বছর; তারপর তাঁর মৃত্যু হয়।

আদিপুস্তক ১০


১ শেম, হাম ও য়েফত্‌ এই তিনজন ছিল নোহর পুত্র। বন্যার পরে এই তিনজনের আরও বহু সন্তান সন্ততির জন্ম হল। শেম, হাম ও য়েফতের উত্তরপুরুষরা:
২ য়েফতের পুত্রগণ হল: গোমর, মাগোগ, মাদয়, য়বন, তূবল, মেশক এবং তীরস।
৩ গোমরের পুত্রগণ হল: অস্কিনস, রীফত্‌ এবং তোগর্ম।
৪ যবনের পুত্রগণ হল: ইলীশা, তর্শীশ, কিত্তীম এবং দোদানীম।
৫ ভূমধ্যসাগর অঞ্চলে য়ে সকল মানুষের বাস তারা সকলেই য়েফতের সন্তানসন্ততি। প্রত্যেক পুত্রের নিজস্ব ভূমি ছিল। সমস্ত পরিবারই বৃদ্ধি পেতে পেতে একটি জাতিতে পরিণত হয়। প্রত্যেক জাতির নিজস্ব ভাষা ছিল।
৬ হামের পুত্রগণ হল: কূশ, মিশর, পূট এবং কনান।
৭ কূশের পুত্রগণ হল: সবা, হবীলা, সপ্তা, রযমা এবং সপ্তক।রযমার পুত্রগণ হল: শিবা এবং দদান।
৮ নিম্রোদ নামেও কুশের এক পুত্র ছিল। কালক্রমে নিম্রোদ দারুন শক্তিমান পুরুষে পরিণত হয়।

৯ প্রভুর সম্মুখে নিম্রোদ একজন বড় শিকারী হয়ে উঠল। সেজন্য তার সঙ্গে অন্যান্য লোকদের তুলনা করে সকলে বলতো, “ঐ মানুষটি নিম্রোদের মত, এমন কি প্রভুর সামনেও দারুণ শিকারী।”
১০ নিম্রোদের রাজত্ব বাবিল থেকে শিনিযর দেশে এরক অক্কদ এবং কল্নী পর্য্ন্ত বিস্তৃত হয়েছিল।
১১ নিম্রোদ অশূরেও গিয়েছিল। নিম্রোদ অশূর দেশে নীনবী, রহোবোত্‌-পুরী, কেলহ এবং

১২ রেষণ (নীনবী এবং কেলহের মধ্যবর্তী ভুভাগে রেষণ মহানগরের পত্তন হয়।)
১৩ মিশর ছিল লূদীয়, অনামীয়, লহাবীয়, নপ্তুহীয়,
১৪ পথ্রোষীয়, কস্লূহীয় আর কপ্তোরীয় অঞ্চলগুলির অধিবাসীদের জনক। (পলেষ্টীয়রা কস্লূহীয় দেশ থেকে এসেছিল।)
১৫ কনান ছিল সীদোনের পিতা। সীদোন কনানের প্রথম সন্তান। কনান হিত্তীয়দের পূর্বপুরুষ ‘হেতেরও’ পিতা ছিলেন। হেত্‌ থেকে হিত্তীয়দের উদ্ভব।

১৬ কনান ছিলেন যিবুষীয়, ইমোরীয় জনগোষ্ঠী, গির্গাশীয়দের পিতা।
১৭ হিব্বীয় জনগোষ্ঠী, অর্কীয় জনগোষ্ঠী, সীনীয় জনগোষ্ঠী,
১৮ অর্বদীয় জনগোষ্ঠী, সমারীয় জনগোষ্ঠী এবং হমাতীয় জনগোষ্ঠী কনান থেকে উদ্ভুত হয়। পরে কনানীয় গোষ্ঠীগুলি পৃথিবীর বিভিন্ন অংশে ছড়িয়ে পড়ল।
১৯ কনানীয়দের দেশ উত্তরে সীদোন থেকে দক্ষিণে গরার পর্য্ন্ত, পশ্চিমে ঘসা থেকে পূর্বে সদোম ও ঘমোরা পর্য্ন্ত এবং অদ্মা ও সবোযীর থেকে লাশা পর্য্ন্ত বিস্তৃত ছিল।

২০ এই সমস্ত মানুষই ছিল হামের উত্তরপুরুষ। এইসব পরিবারগুলির নিজস্ব ভাষা ও নিজস্ব দেশ ছিল। তারা ক্রমে ক্রমে পৃথক পৃথক জাতি হয়ে উঠল।
২১ য়েফতের বড় ভাই ছিল শেম। শেমের একজন উত্তরপুরুষ হল এবর এবং এবর সমস্ত হিব্রু জনগোষ্ঠীর জনক রূপে পরিচিত।
২২ শেমের পুত্ররা হল: এলম, অশূর, অর্ফক্ষদ, লূদ এবং অরাম।
২৩ অরামের পুত্রেরা হল: উষ, হূল, গোখর এবং মশ।
২৪ অর্ফক্ষদের পুত্র শেলহ, শেলহের পুত্র এবর।
২৫ এবরের দুই পুত্র। এক পুত্রের নাম পেলগ। তার আমলে পৃথিবী বিভক্ত হয় বলে তার ঐ নাম হয়। অন্য পুত্রের নাম য়ক্তন।
২৬ য়ক্তনের পুত্রেরা হল: অল্মোদদ, শেলফ, হত্‌সমবিত্‌, য়েরহ,
২৭ হদোরাম, উবল, দিক্ল,
২৮ ওবল, অবীমায়েল, শিবা,
২৯ ওফীর, হবীলা এবং য়োবব। এরা সবাই ছিল যক্তনের পুত্র।
৩০ পূর্ব দিকেমেষা এবং পার্বত্য দেশের মধ্যবর্তী ভুভাগে তারা বাস করত। মেষা ছিল সফার দেশের দিকে।
৩১ এরা সবাই ছিল শেমের পরিবারের অন্তর্গত। পরিবার, ভাষা, দেশ ও জাতি অনুসারেই তাদের সাজানো হয়েছে।
৩২ এই সবগুলোই নোহের পুত্রদের পরিবার। পরিবারগুলি তালিকা তাদের জাতি অনুসারে প্রস্তুত করা হয়েছে। প্লাবনের পরে এই পরিবারগুলি থেকেই সারা পৃথিবীতে মনুষ্য সমাজের বিস্তার হয়েছে।

আদিপুস্তক ১১


১ প্লাবনের পরে সমস্ত পৃথিবী এক ভাষাতে কথা বলত। সমস্ত মানুষ একই শব্দগুলি ব্যবহার করত।
২ সেই লোকেরা পূর্ব দিক থেকে ঘুরতে ঘুরতে শিনিয়র দেশে এসে সমতল ভূমি পেল। তারা সেখানে বসবাস শুরু করল।

৩ তারা বলল, “আমরা মাটি দিয়ে ইঁট তৈরী করব, তারপর আরও শক্ত করার জন্যে ইঁটগুলো পোড়াব।” তখন মানুষ পাথরের বদলে ইঁট দিয়ে বাড়ী তৈরী করল। আর গাঁথনি শক্ত করার জন্যে সিমেন্টের বদলে আলকাতরা ব্যবহার করল।
৪ তারা বলল, “এস আমরা আমাদের জন্যে এক বড় শহর বানাই। আর এমন একটি উঁচু স্তম্ভ বানাই যা আকাশ স্পর্শ করবে। তাহলে আমরা বিখ্যাত হব এবং এটা আমাদের এক সঙ্গে ধরে রাখবে। সারা পৃথিবীতে আমরা ছড়িয়ে থাকব না।”

৫ সেই শহর আর সেই আকাশস্পর্শী স্তম্ভ দেখতে প্রভু পৃথিবীতে নেমে এলেন। মানুষ কি কি তৈরী করেছে সেসব প্রভু দেখলেন।
৬ প্রভু বললেন, “সব মানুষ একই ভাষাতে কথা বলছে। আর দেখতে পাচ্ছি য়ে এসব কাজ করার জন্যে তারা ঐক্যবদ্ধ। তারা কি করতে পারে এ তো সবে তার শুরু। শীঘ্রই তারা যা চায় তাই করতে পারবে।

৭ তাহলে এস আমরা নীচে গিয়ে ওদের এক ভাষাকে নানারকম ভাষা করে দিই। তাহলে তারা পরস্পরকে বুঝতে পারবে না।”
৮ সুতরাং প্রভু সমস্ত লোকেদের সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে দিলেন। ফলে মানুষ আর সেই শহর তৈরির কাজ শেষ করতে পারল না।
৯ এই সেই স্থান যেখানে প্রভু সমস্ত পৃথিবীর এক ভাষাকে অনেক ভাষাতে বিভ্রান্ত করলেন। তাই এই স্থানটির নাম হলো বাবিল। এইভাবে প্রভু তাঁদের সেই স্থান থেকে পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে দিলেন।
১০ এটা হল শেমের পরিবারের কাহিনী। প্লাবনের দু বছর পরে, যখন শেমের বয়স ১০0 বছর তখন তার অর্ফক্ষদ নামে পুত্রটির জন্ম হয়।

১১ তারপরে শেম ৫০0 বছর বেঁচেছিলেন। তাঁর আরও পুত্রকন্যা ছিল।
১২ অর্ফক্ষদের ৩৫ বছর বয়সে তাঁর পুত্র শেলহের জন্ম হয়।
১৩ শেলহের জন্মের পরে অর্ফক্ষদ ৪০0 বছর বেঁচেছিলেন। ইতিমধ্যে তাঁর আরও পুত্রকন্যা হয়।
১৪ যখন শেলহের বয়স ৩০ বছর তখন এবর নামে তাঁর এক পুত্র হয়।

১৫ এবরের জন্মের পরে শেলহ ৪০0 বছর বেঁচেছিলেন। ইতিমধ্যে তাঁর আরও পুত্রকন্যা হয়।
১৬ এবরের যখন ৩৪ বছর বয়স তখ পেলগ নামে তাঁর এক পুত্র হয়।
১৭ পেলগের জন্মের পর এবর ৪৩০ বছর বেঁচেছিলেন। ইতিমধ্যে তাঁর আরও পুত্রকন্যা হয়।
১৮ পেলগের যখন ৩০ বছর বয়স তখন রিযু নামে তাঁর এক পুত্র হয়।
১৯ রিযুর জন্মের পরে পেলগ আরও ২০0 বছর বেঁচেছিলেন। ইতিমধ্যে তাঁর আরও পুত্রকন্যা হয়েছিল।
২০ রিযুর যখন ৩২ বছর বয়স তখন সরূগ নামে তাঁর এক পুত্র হয়।
২১ সরূগের জন্মের পরে রিযু ২০৭ বছর বেঁচেছিলেন। ইতিমধ্যে তাঁর আরও পুত্রকন্যা হয়েছিল।
২২ সরূগের যখন ৩০ বছর বয়স তখন নাহোর নামে তাঁর এক পুত্র হয়।
২৩ নাহোরের জন্মের পরে সরূগ ২০0 বছর বেঁচেছিলেন। ইতিমধ্যে তাঁর আরও পুত্রকন্যা হয়েছিল।
২৪ নাহোরের যখন ২৯ বছর বয়স তখন তেরহ নামে তাঁর এক পুত্র হয়।
২৫ তেরহের জন্মের পরে নাহোর আরও ১১৯ বছর বেঁচেছিলেন। ইতিমধ্যে তাঁর আরও পুত্রকন্যা হয়েছিল।
২৬ তেরহ ৭০ বছর বয়সে যথাক্রমে অব্রাম, নাহোর ও হারণ নামে পুত্রদের জন্ম দিলেন।
২৭ এটা হল তেরহের পরিবারের কাহিনী। তেরহ হল অব্রাম, নাহোর ও হারণের জনক। হারণ ছিল লোটের জনক।
২৮ কিন্তু তেরহের জীবদ্দশাতেই আপন জন্মস্থান কলদীয় দেশের উরে হারণের মৃত্যু হয়।
২৯ অব্রাম ও নাহোর দুজনেই বিবাহ করেন। অব্রামের স্ত্রীর নাম সারী আর নাহোরের স্ত্রীর নাম মিল্কা। মিল্কা ছিল হারণের কন্যা। হারণ ছিলেন মিল্কা ও য়িষ্কার জনক।
৩০ সারী বন্ধ্যা ছিল তাই তাঁর কোনও সন্তান হয় নি।
৩১ তেরহ তাঁর পরিবার নিয়ে কলদীয় দেশের উর পরিত্যাগ করলেন। তাঁদের পরিকল্পনা ছিল কনান দেশে যাওয়ার। তেরহ তাঁর পুত্র অব্রাম, তাঁর পৌত্র লোট এবং পুত্রবধূ সারীকে সঙ্গে নিলেন। তাঁরা হারণ নামে একটা শহরে পৌঁছে সেখানেই বাস করার সিদ্ধান্ত নিলেন।
৩২ তেরহ ২০৫ বছর বেঁচেছিলেন এবং হারণেই তাঁর মৃত্যু হয়।

আদিপুস্তক ১২


১ প্রভু অব্রামকে বললেন, “তুমি এই দেশ, নিজের জাতিকুটুম্ব এবং পিতার পরিবার ত্যাগ করে, আমি য়ে দেশের পথ দেখাব সেই দেশে চল।
২ তোমা হতে আমি এক মহাজাতি উত্পন্ন করব। তোমাকে আশীষ দেব এবং তুমি বিখ্যাত হবে। অন্যকে আশীর্বাদ জানাতে লোকে তোমার নাম নেবে।

৩ যারা তোমাকে আশীর্বাদ করবে, সেই লোকেদের আমি আশীর্বাদ করব এবং যারা তোমাকে অভিশাপ দেবে, সেই লোকেদের আমি অভিশাপ দেব। তোমার মাধ্যমে আমি পৃথিবীর সব লোকেদের আশীর্বাদ করব।”
৪ অতঃপর অব্রাম প্রভুর আজ্ঞা পালন করলেন। তিনি হারণ ত্যাগ করলেন এবং লোট তাঁর সঙ্গে গেলেন। অব্রামের বয়স তখন ৭৫ বছর।

৫ অব্রাম সঙ্গে নিলেন স্ত্রী সারী, ভ্রাতুষ্পুত্র লোট এবং হারণে তাঁদের যা কিছু ছিল সে সবই নিয়ে গেলেন। হারণে অব্রামের য়েসব দাসদাসী ছিল তাদেরও তিনি সঙ্গে নিলেন। দলবল সমেত হারণ ত্যাগ করে অব্রাম কনান দেশে যাত্রা করলেন।
৬ অব্রাম কনান দেশের মধ্য দিয়ে শিখিম শহরে গেলেন এবং তারপরে মোরিতে এক বিশাল গাছের কাছে গেলেন। সেই সময় কনানীযরা সেখানে বাস করতো।

৭ প্রভু অব্রামের সকাশে আত্মপ্রকাশ করলেন। প্রভু বললেন, “তোমার উত্তরপুরুষদের আমি এই দেশ দেব।”প্রভু যেখানে অব্রামকে দর্শন দিয়েছিলেন সেখানে অব্রাম প্রভুর উদ্দেশ্যে উত্সর্গ সম্পাদনের জন্যে পাথরের একটা বেদী নির্মাণ করলেন।
৮ তারপর অব্রাম সেই স্থান ত্যাগ করে গেলেন বৈথেলের পূর্বদিকে অবস্থিত পর্বতে এবং সেখানে তাঁর শিবির স্থাপন করলেন। বৈথেল নগর ছিল পশ্চিম দিকে আর অয় ছিল পূর্ব দিকে। সেখানে অব্রাম আর একটি বেদী নির্মাণ করলেন এবং প্রভুর উপাসনা করলেন।
৯ অতঃপর তিনি পুনরায় তাঁর যাত্রা শুরু করলেন। তিনি নেগেভের দিকে অগ্রসর হলেন।

১০ তখন দেশটা ছিল খুব শুষ্ক। অনাবৃষ্টির জন্যে কোনও শস্য উত্পাদন সম্ভব ছিল না। তাই অব্রাম বসবাসের জন্য আরও দক্ষিণে মিশরে গেলেন।
১১ তিনি খেয়াল করলেন য়ে তাঁর স্ত্রী সারী কত সুন্দরী। তাই মিশরে প্রবেশের ঠিক আগে সারীকে বললেন, “আমি জানি তুমি সুন্দরী।
১২ মিশরীয পুরুষরা তোমায় দেখবে। তারা বলবে, ‘এই মহিলা ঐ লোকটার স্ত্রী।’ তারা তখন তোমাকে পাওয়ার জন্যে আমায় মেরে ফেলবে।

১৩ তাই সবাইকে বলবে য়ে তুমি আমার বোন। তাহলে তারা আর আমায় হত্যা করবে না। তারা আমায় তোমার ভাই ভাববে, আমার সঙ্গে ভাল ব্যবহার করবে। এইভাবে তুমি আমার প্রাণ বাঁচাবে।”
১৪ তখন অব্রাম মিশরে গেলেন। মিশরীয পুরুষরা দেখল য়ে সারী কত সুন্দরী।
১৫ মিশরের নেতারা কেউ কেউ তাঁকে দেখলেন। সারী য়ে কত সুন্দরী সে কথা তাঁরা বয়ং ফরৌণের কানে তুললেন। তাঁরা সারীকে ফরৌণের প্রাসাদে নিয়ে গেলেন।
১৬ অব্রামকে সারীর ভাই মনে করে ফরৌণ অব্রামের প্রতি সদয় ব্যবহার করলেন। অব্রামকে ফরৌণ মেষ, গবাদি পশু এবং বোঝা বইবার জন্য গাধা দিলেন। সেই সঙ্গে দাসদাসী এবং উটও পেলেন অব্রাম।
১৭ আর ফরৌণ অব্রামের স্ত্রীকে নিলেন। এই কারণে ফরৌণ এবং তাঁর প্রাসাদের সব লোকেদের প্রভু ভয়ঙ্কর অসুখ দিলেন।
১৮ তখন ফরৌণ অব্রামকে ডেকে বললেন, “তুমি আমার প্রতি খুব অন্যায় করেছ! সারী য়ে তোমার স্ত্রী সে কথা আমায় বলো নি কেন?
১৯ তুমি কেন বলেছিলে য়ে সারী তোমার বোন? তোমার বোন মনে করে আমি ওকে আমার স্ত্রী করব বলে এনেছিলাম। কিন্তু এখন তোমায় তোমার স্ত্রী ফেরত দিচ্ছি। ওকে নিয়ে তুমি চলে যাও!”
২০ তারপর ফরৌণ তাঁর লোকজনদের আদেশ করলেন, “অব্রামকে মিশরের বাইরে নিয়ে যাও।” সুতরাং অব্রাম ও তার স্ত্রী সেই দেশ ত্যাগ করলেন। এবং সঙ্গে তাঁদের সমস্ত জিনিসপত্রও নিয়ে গেলেন।

আদিপুস্তক ১৩

No comments:

Post a Comment

ধন্যবাদ

বৈশিষ্ট্যযুক্ত পোস্ট

ব্রহ্মচর্য ও য়জ্ঞোপবীত

একাদশ অধ্যায় মেখলা প্রাচীনকালে গুরুকুলগুলোতে বেদের বিদ্বান বেদসংজ্ঞক আচার্য য়জ্ঞোপবীত সংস্কার করাতেন আর তারপর তারা বেদারম্ভসংস্কারের সময়...

Post Top Ad

ধন্যবাদ