গান্ধীজির অপকর্ম |
মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধী বা মহাত্মা গান্ধী (২রা অক্টোবর, ১৮৬৯ - ৩০শে জানুয়ারি, ১৯৪৮) একজন অন্যতম ভারতীয় রাজনীতিবিদ, ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের অগ্রগামী ব্যক্তিদের একজন এবং প্রভাবশালী আধ্যাত্মিক নেতা।ধর্ম সম্পর্কে মন্তব্য করতে গিয়ে তিনি বলেন: যদি আমি খ্রিস্টান ধর্মকে নিখুঁত এবং শ্রেষ্ঠতম ধর্ম হিসেবে মেনে নিতে না পারি, তবে হিন্দু ধর্মকেও সেভাবে মেনে নিতে পারি না। হিন্দুধর্মের ত্রুটিগুলি আমার দৃষ্টিগোচর হয়েছে। যদি অস্পৃশ্যতা হিন্দু ধর্মের অংশ হয় তবে, এটি একটি পচা অংশ বা আঁচিল। বেদবাক্যগুলোকে ঈশ্বরের অনুপ্রাণিত উক্তি বলার কারণ কি? যদি এগুলো অনুপ্রাণিত হয় তবে বাইবেল বা কোরান কেন নয়? খ্রিস্টান বন্ধুরা যেভাবে আমাকে ধর্মান্তরিত করতে প্রবল চেষ্টা করেছেন তেমনি মুসলিম বন্ধুরাও করেছেন। আবদুল্লাহ শেঠ ইসলাম চর্চা করার জন্য আমাকে উৎসাহিত করে চলেছেন এবং এর সৌন্দর্য সম্পর্কে সবসময়ই তিনি বলেছেন। যখনি আমরা নৈতিক ভিত্তি হারিয়ে ফেলি, আমরা ধার্মিক হওয়া থেকে ক্ষান্ত হই। নৈতিকতা হারিয়ে ধার্মিক হওয়া বলতে কিছু নেই। উদাহরণস্বরূপ, মানুষ মিথ্যাবাদী, নির্মম এবং আত্মসংযমহীন হয়ে দাবি করতে পারে না যে ঈশ্বর তার সাথে আছেন। পরবর্তী জীবনে তাকে যখন জিজ্ঞেস করা হয় তিনি হিন্দু কিনা- তিনি বলেন, হ্যাঁ, আমি তাই। এ ছাড়াও আমি একজন খ্রিস্টান, একজন মুসলিম, একজন বৌদ্ধ এবং একজন ইহুদি। গান্ধী ছিলেন বহুমুখী লেখক, সম্পাদক। দশক ধরে তিনি সম্পাদনা করেছেন গুজরাটি, হিন্দি ও ইংরেজি ভাষায় প্রকাশিত পত্রিকা হরিজন।
১৯৪৮ সালের ৩০ জানুয়ারি গান্ধীকে গুলি করে হত্যা করা হয়। সে সময় তিনি নতুন দিল্লীর বিরলা ভবন (বিরলা হাউস) মাঝে রাত্রিকালীন পথসভা করছিলেন। তার হত্যাকারী নাথুরাম গডসে ছিলেন একজন হিন্দু মৌলবাদী যার সাথে চরমপন্থী "হিন্দু মহাসভার" যোগাযোগ ছিল।
ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের পুরোধা মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধীর জীবনকালে তাঁর অদ্ভুত যৌনজীবন নিয়ে বিস্তর আলোচনা-সমালোচনা হয়েছিল। তিনি নিজেও এ নিয়ে খোলাখুলি কথা বলতেন, অনেক সময় প্ররোচনাও দিতেন। কিন্তু তাঁর মৃত্যুর পর এ বিষয়ে খুব বেশি আলোচনা হয়নি।ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহেরু মোহনদাস গান্ধীর যৌনাচারকে ‘অস্বাভাবিক ও অপ্রাকৃতিক’ বলে অভিহিত করেছিলেন। তবে এ নিয়ে গান্ধী ছিলেন অবিচল। কারণ, তিনি একে তাঁর নীতি-আদর্শ ও ধর্মাচরণের অংশ বলেই বিশ্বাস করতেন।‘গান্ধী: ন্যাকেড অ্যাম্বিশন’ বইয়ের লেখক জাড অ্যাডামসের মতে, যখন মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধীকে ‘মহাত্মা’ ও ‘জাতির পিতা’ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার প্রয়োজন দাঁড়াল, তখন তাঁর বিভিন্ন বিতর্কিত কর্মকাণ্ড তো বটেই, ‘অদ্ভুত খেয়াল’ নিয়েও আলোচনার দ্বার সংকুচিত হয়েছে।
বিনোবাভাবের বক্তব্য- তিনি যদি ব্রহ্মচারী হন্তবে পরীক্ষার প্রয়োজন নেই। আর তিনি যদি ব্রহ্মচারী না হন তাবে এই পরীক্ষা অকারণ ঝুঁকিপূর্ণ। এ যেন কৃষ্ণলীলা। অধ্যাপক নির্মল বসু গান্ধীজির এই ধরণের রাত্রিযাপন সুনজরে দেখেননি। গান্ধীজি নিজে নগ্ন হয়ে সুন্দরী নারীদের নগ্ন করে শয্যা-সঙ্গিনী করাটা তাঁর বিকৃত যৌনাচার ছাড়া কিছু নয়।
তার ফলে গান্ধীজি তাদের মানসিক রোগের কারণ হয়েছিলেন। সেই সব মেয়েরা মূর্ছা যেত। অর্থাৎ, মৃগি রোগে আক্রান্ত হয়েছিল। নির্মল বসু এই নোংরা ব্যাপার নিয়ে গান্ধীজির বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন। নিজের নাতনি মনু গান্ধীর সঙ্গে উলঙ্গ হয়ে শুয়ে থাকতেন গান্ধীজি।
মনু একদিন বলেছিলেন, ‘তুমি আমাকে একেবারে শেষ করে দিয়েছ’। গান্ধীজির এই সব নোংরামি দেখে তাঁর একান্ত অনুগত গান্ধীভক্ত স্টেনোগ্রাফার পরশুরাম তাঁর কাছ থেকে চলে যান। বিশেষ করে নিজের নাতনির সঙ্গে গান্ধীজির চরম নোংরামি দেখে তিনি সহ্য করতে পারেননি। এই ভাবে অনেকেই গান্ধীজির এই সব নোংরামির জন্য তিতিবিরক্ত হন। অনেকে তাঁকে ছেরে চলে যান।
অনেকে আশ্রমে থেকেই প্রতিবাদ করতেন। অনেকে আবার তাঁকে মানতেন না। অনেককে ভয়ও করতেন তিনি। আগেই বলেছি পাঁচ ছেলের (একজন জন্মের পর পরই মারা যায়) পিতার ব্রহ্মচর্য পরীক্ষা করা কি আদৌ বিশ্বাসযোগ্য? না। অবিশ্বাস্য! অকল্পনীয়! অবাস্তব! এটা স্রেফ গান্ধী মহারাজের বিকৃত যৌনাচার।
পূর্বের পোস্ট সস্তার ঠেঙ্গো ধুতির আড়ালে গান্ধীজির অপকর্ম পরবর্তী পোস্ট গান্ধীজির জন্য কী ভাবে দেশের ক্ষতি হয়েছে গান্ধীজি অহিংস ছিলেন না। অহিংস ছিল তাঁর মুখোশ। নেতাজি সুভাষকে তিনি কংগ্রেস থেকে সরিয়েছিলেন হিংসার অনলে জ্বলে… ।সোর্স: http://www.somewhereinblog.net
১৯৪৮ সালের ৩০ জানুয়ারি গান্ধীকে গুলি করে হত্যা করা হয়। সে সময় তিনি নতুন দিল্লীর বিরলা ভবন (বিরলা হাউস) মাঝে রাত্রিকালীন পথসভা করছিলেন। তার হত্যাকারী নাথুরাম গডসে ছিলেন একজন হিন্দু মৌলবাদী যার সাথে চরমপন্থী "হিন্দু মহাসভার" যোগাযোগ ছিল।
ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের পুরোধা মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধীর জীবনকালে তাঁর অদ্ভুত যৌনজীবন নিয়ে বিস্তর আলোচনা-সমালোচনা হয়েছিল। তিনি নিজেও এ নিয়ে খোলাখুলি কথা বলতেন, অনেক সময় প্ররোচনাও দিতেন। কিন্তু তাঁর মৃত্যুর পর এ বিষয়ে খুব বেশি আলোচনা হয়নি।ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহেরু মোহনদাস গান্ধীর যৌনাচারকে ‘অস্বাভাবিক ও অপ্রাকৃতিক’ বলে অভিহিত করেছিলেন। তবে এ নিয়ে গান্ধী ছিলেন অবিচল। কারণ, তিনি একে তাঁর নীতি-আদর্শ ও ধর্মাচরণের অংশ বলেই বিশ্বাস করতেন।‘গান্ধী: ন্যাকেড অ্যাম্বিশন’ বইয়ের লেখক জাড অ্যাডামসের মতে, যখন মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধীকে ‘মহাত্মা’ ও ‘জাতির পিতা’ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার প্রয়োজন দাঁড়াল, তখন তাঁর বিভিন্ন বিতর্কিত কর্মকাণ্ড তো বটেই, ‘অদ্ভুত খেয়াল’ নিয়েও আলোচনার দ্বার সংকুচিত হয়েছে।
গান্ধীজির যৌনাচার বর্জনের এ চর্চার শুরু কোথা থেকে, তা নিশ্চিতভাবে বলা মুশকিল। তবে ১৯০৬ সালে যখন তাঁর বয়স ৩৮, তখন থেকে তিনি ব্রহ্মাচর্য গ্রহণ করেন এবং তেমন জীবনযাপন শুরু করেন। এ জীবনের একান্ত অনুষঙ্গ হলো ওই কৌমার্যব্রত বা যৌনাচারহীন জীবনযাপন।
সম্প্রতি গান্ধীর কৌমার্যব্রত-চর্চার সঙ্গী মানু গান্ধীর ডায়েরির কিছু তথ্য প্রকাশিত হয়েছে ‘ইন্ডিয়া টুডে’ সাময়িকীতে। এসব ডায়েরির প্রকাশ এত দিন ‘নিষিদ্ধ’ ছিল। গান্ধীর পরিবার কখনোই চায়নি এসব তথ্য বাইরে প্রকাশিত হোক। এমনকি মানু গান্ধী যেন এসব তথ্য বাইরের কাউকে না জানান, সেজন্য গান্ধীর পরিবারের লোকেরা তাঁকে বিশেষভাবে ‘আদেশ’ করেছিলেন।
কিন্তু কেন এমন আদেশ? কেমন ছিল গান্ধীর কৌমার্যব্রত? যে চর্চা গান্ধী সবার মধ্যে ছড়িয়ে দিতে চেয়েছিলেন, সেটি নিয়ে প্রচার দূরে থাক, আলাপ করাই নিষিদ্ধ হয়ে দাঁড়াল কেন?
মানুর ডায়েরি থেকে এসব প্রশ্নের উত্তর মেলেনি। তবে গান্ধীর কৌমার্যব্রতের চর্চা কিশোরীদের ওপর কী ধরনের মনস্তাত্ত্বিক প্রভাব ফেলেছিল, তা কিছুটা হলেও বোঝা যায়। এ ছাড়া, তা গান্ধীর সঙ্গী নারীদের মধ্যে যে রেষারেষি তৈরি করেছিল, তা-ও বেরিয়ে আসে।
মানু গান্ধীর আসল নাম মৃদুলা গান্ধী। মানু ছিল তাঁর ডাকনাম। এখন পর্যন্ত তাঁর ১০টি ডায়েরির সন্ধান মিলেছে। গুজরাটি ভাষায় লেখা ডায়েরির প্রথম অন্তর্ভুক্তি ১৯৪৩ সালের ১১ এপ্রিল। মানু ছিলেন গান্ধীর ভাতিজা জয়সুখলালের কন্যা। মানু তাঁর ডায়েরি গান্ধীকে নিয়মিত দেখাতেন। তিনি প্রয়োজনে ডায়েরির পাশে মন্তব্য লিখতেন।
১৯৪২ সালে গান্ধীর স্ত্রী কস্তুরবাকে দেখভালের জন্য মানু পুনে শহরের আগা খান প্রাসাদে যান। গান্ধী তখন তাঁর পরিবার নিয়ে ওই বাড়িতে বাস করতেন। মানুর কাজ ছিল অসুস্থ কস্তুরবার সেবা করা। ১৯৪৪ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি কস্তুরবার মৃত্যুর পর গান্ধীর সঙ্গে থেকে যান মানু। গান্ধীর সঙ্গে তাঁর সম্পর্কের বিষয়ে মানু ডায়েরিতে লিখেছেন: ‘বাপু (মোহনদাসকে এ নামে ডাকা হতো) আমার মা। তিনি তাঁর চরিত্র গঠনের মহাযজ্ঞের ব্রহ্মাচর্য পালনের অংশে আমাকে সঙ্গী করে মানবজীবনের এক উচ্চতায় উন্নীত করেছেন। এই চর্চার বিষয়ে যেকোনো চটুল আলাপ নিষিদ্ধ।’
মহাত্মা গান্ধীর সচিব ছিলেন পিয়ারেলাল। তিনি তাঁর ‘মহাত্মা গান্ধী: দ্য লাস্ট ফেজ’ বইয়ে লিখেছেন: ‘একজন মা তাঁর মেয়ের জন্য যা কিছু করেন, তিনি (মোহনদাস) তাঁর (মানু) জন্য তা-ই করতেন। তিনি তাঁর পড়াশোনার খবর রাখতেন; খাবার, পোশাক, বিশ্রাম ও ঘুমের তদারক করতেন। ভালোভাবে দেখভালের জন্য তিনি তাঁর সঙ্গে একই বিছানায় ঘুমাতেন। একজন পরিণত নারী হিসেবে (যদিও সে নির্মল) মায়ের সঙ্গে ঘুমাতে সে লজ্জা বোধ করত না।’ ঘনিষ্ঠ সহচর হিসেবে মানু তাঁর (মোহনদাসের) দেহ মালিশ করে দিত, গোসল করিয়ে দিত এবং তাঁর জন্য রান্নাও করত।’
মানুর ডায়েরিতে গান্ধীর অন্যান্য নারী সঙ্গীর প্রসঙ্গও এসেছে। তাঁদের অন্যতম ডাক্তার সুশীলা নায়ার। তিনি ছিলেন গান্ধীর ব্যক্তিগত চিকিত্সক এবং পিয়ারেলালের বোন। পরে সুশীলা স্বাধীন ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের স্বাস্থ্যমন্ত্রী হয়েছিলেন। আরেকজন নারী হলেন বিবি আমাতুসসালাম।
গান্ধীর কৌমার্যচর্চার অংশ কে হবেন, তা নিয়ে এই নারীকূলের মধ্যে প্রতিযোগিতা ছিল তীব্র।
১৯৪৭ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি মানু তাঁর ডায়েরিতে লিখেছেন: ‘আজ বাপু আমাতুসসালামকে খুব শক্ত ভাষায় এক চিঠিতে জানিয়েছেন, কৌমার্যচর্চার অংশ হতে না পেরে আমাতুসসালামের যে অনুতাপ হচ্ছে, তা তাঁর চিঠি থেকে স্পষ্ট বোঝা গেছে।’
মানুর এসব ডায়েরি ২০১০ সালে জাতীয় সংগ্রহশালায় পাঠানো হয়েছে। গান্ধীর কৌমার্যচর্চা নিয়ে দলের নেতাদের সঙ্গে তাঁর মতবিরোধের বিষয়টিও এসব ডায়েরি থেকে পরিষ্কার হয়েছে। ১৯৪৭ সালের ৩১ জানুয়ারি বিহারের নবগ্রাম থেকে মানু লিখেছেন, গান্ধীর অনুসারী কিশোরীলাল মাসরুওয়ালা গান্ধীজিকে লেখা এক চিঠিতে মানুকে ‘মায়া’ (মায়াবি নারী) হিসেবে অভিহিত করেছেন এবং গান্ধীজিকে এ থেকে মুক্ত হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। এর জবাবে গান্ধী কিশোরীলালকে লিখেছিলেন, ‘তোমার যা ইচ্ছে করো। কিন্তু আমি আমার পরীক্ষা নিয়ে নিঃশঙ্ক।’
গান্ধীর কৌমার্যব্রত নিয়ে একই রকম আপত্তি করেছিলেন তাঁর সচিব আর পি পরশুরাম ও নির্মল কুমার বসু। নির্মল বসু পরে ভারতের প্রত্নতাত্ত্বিক সমাজের পরিচালক হয়েছিলেন। গান্ধী যখন মানুকে সঙ্গে নিয়ে নোয়াখালী আসেন, তখন এ দুজন গান্ধীর চর্চা নিয়ে তীব্র আপত্তি তোলেন। একই ধরনের প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছিলেন সরদার বল্লভভাই প্যাটেল। ১৯৪৭ সালের ২৫ জানুয়ারি লেখা এক চিঠিতে তিনি গান্ধীজিকে তাঁর এসব চর্চা পরিত্যাগ করতে বলেন। তিনি আরও বলেন, এসব চর্চা হলো ‘পুরোপুরি কেলেঙ্কারি’ এবং এতে গান্ধীর অনুসারীরা ‘যারপরনাই ব্যথিত’ হবেন।
গান্ধীর এ চর্চা মানুর ওপর কতখানি প্রভাব ফেলেছিল এবং এ জন্য দেশের বড় নেতারাও কতখানি উত্কণ্ঠিত ছিলেন, তার প্রমাণ মেলে মোরারজি দেশাইয়ের এক চিঠিতে। বোম্বে হাসপাতালে চিকিত্সাধীন মানুকে দেখে ফেরার পর ১৯৫৫ সালের ১৯ আগস্ট তত্কালীন প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহেরুকে লেখা চিঠিতে দেশাই বলেন, ‘মানুর সমস্যা যত না শারীরিক, তার চেয়ে বেশি মানসিক। জীবন নিয়ে তাঁর এক নৈরাশ্য তৈরি হয়েছে এবং কোনো ওষুধই তাঁর ওপর ক্রিয়া করছে না।’
১৯৪৮ সালের ৩০ জানুয়ারি দিল্লিতে গান্ধীজি উগ্র হিন্দুত্ববাদী নথুরাম গডসের গুলিতে মারা যান। এ সময় তাঁর পাশে ছিলেন মানু। অন্য পাশে ছিলেন আভা গান্ধী। গান্ধীর ভাতিজা কানুর স্ত্রী ছিলেন আভা। এর পরের দিন মানু লিখেছেন, ‘চিতার আগুন যখন বাপুর শরীরটা গিলে ফেলছিল, আমি নিশ্চুপ বসে ছিলাম আগুন না নেভা পর্যন্ত। সরদার প্যাটেল আমাকে সান্ত্বনা দিলেন; বাসায় নিয়ে গেলেন। আমি পুরোপুরি উন্মাদ হয়ে গিয়েছিলাম।’
মানু শেষ ডায়েরি লিখেছেন ১৯৪৮ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি। এদিন তিনি দিল্লি ছেড়ে চলে যান। তিনি লিখেছেন: ‘ডায়েরির কথা কাউকে বলতে নিষেধ করেছেন কাকা (গান্ধীর ছোট ছেলে দেবদাস) এবং গুরুত্বপূর্ণ চিঠিগুলো ফাঁস করতে বারণ করেছেন। তিনি বলেন, “তুমি এখনো ছোট, কিন্তু তোমার কাছে অনেক গুরুত্বপূর্ণ লেখালেখি থাকল। আর তুমি অনেক সহজ-সরল।”’
মানু তাঁর ৬৮ পৃষ্ঠার স্মৃতিকথার কোথাও গান্ধীর যৌনাচার নিয়ে কথা বলেননি। গান্ধীর এসব আচরণে কেমন বোধ করেছিলেন, তাও তিনি কখনো বলে যাননি। ‘বাপু: মাই মাদার’ শিরোনামের বইটিতে তিনি লিখেছেন, কস্তুরবার মৃত্যুর ১০ মাস পর গান্ধীজি তাঁকে চিঠি লেখেন। সেটিতে তাঁকে পড়াশোনা চালিয়ে যেতে বলেন তিনি। মানুর ভাষায়, সেদিন থেকে ‘বাপু তাঁর মা’ হয়ে গেছেন। ছোটবেলায় মানু যে মাকে হারিয়েছিলেন, তাঁকেই তিনি খুঁজে পেয়েছেন গান্ধীর মধ্যে।
জীবনের বাকিটা সময় মানু কাটিয়েছেন খুব নীরবে। গান্ধীর মৃত্যুর পর ২১ বছর তিনি গুজরাটের ভাবনগরের কাছে মাহুভায় থাকতেন। এ সময় তিনি শিশুদের একটি স্কুল চালাতেন। এ ছাড়া তিনি ‘ভগিনি সমাজ’ নামের একটি নারীসংগঠন গড়ে তুলেছিলেন। এ সময় তাঁর ঘনিষ্ঠ সঙ্গী ছিলেন ভানু লাহিড়ী। ভানু জানিয়েছেন, মানু প্রায়ই তাঁকে নিজের অনুভূতির কথা বলতেন। মানু বলতেন, ‘নিজেকে আমার মিরাবাঈয়ের (মধ্যযুগের কৃষ্ণভক্ত এক বিখ্যাত নারী সন্ন্যাসিনী) মতো মনে হয়, যে কেবল শ্যামকে (কৃষ্ণ) ভালোবাসার জন্য জন্মেছিল।’
মানুর ডায়েরিগুলো পর্যবেক্ষণ করে মনস্তাত্ত্বিক সুধীর কর লিখেছেন, ‘নিজের পরীক্ষা নিয়ে মহাত্মা এতটাই অনুরক্ত ছিলেন যে, এতে বাকি নারীদের ওপর কী প্রভাব পড়ছে, তা তিনি চেয়ে দেখেননি। কয়েকজন নারীর মধ্যে তীব্র রেষারেষি ছাড়া এসব পরীক্ষা নারীদের ওপর কোনো মনস্তাত্ত্বিক প্রভাব ফেলেছিল কি না, তা আমরা জানতে পারি না।’
গান্ধীজির ব্রহ্মচর্য পরীক্ষা ও বিকৃত যৌনাচার
দিনের পর দিন নিজে উলঙ্গ অবস্থায় থেকে উলঙ্গ সুন্দরী যুবতীদের সঙ্গে রাত্রিযাপন করতেন গান্ধীজি। এই বিকৃত যৌনাচার সম্বন্ধে তাঁরই শীষ্যদের কথা তুলে দিচ্ছি। বল্লভভাই প্যাটেল পরিষ্কার বলেন-আপনি ব্রহ্মচারী নন, অধর্মচারী। ব্রহ্মচারী হলে এমন পরীক্ষার প্রয়োজন নেই। আর ব্রহ্মচারী না হলে এই কাজ অধর্মের।বিনোবাভাবের বক্তব্য- তিনি যদি ব্রহ্মচারী হন্তবে পরীক্ষার প্রয়োজন নেই। আর তিনি যদি ব্রহ্মচারী না হন তাবে এই পরীক্ষা অকারণ ঝুঁকিপূর্ণ। এ যেন কৃষ্ণলীলা। অধ্যাপক নির্মল বসু গান্ধীজির এই ধরণের রাত্রিযাপন সুনজরে দেখেননি। গান্ধীজি নিজে নগ্ন হয়ে সুন্দরী নারীদের নগ্ন করে শয্যা-সঙ্গিনী করাটা তাঁর বিকৃত যৌনাচার ছাড়া কিছু নয়।
তার ফলে গান্ধীজি তাদের মানসিক রোগের কারণ হয়েছিলেন। সেই সব মেয়েরা মূর্ছা যেত। অর্থাৎ, মৃগি রোগে আক্রান্ত হয়েছিল। নির্মল বসু এই নোংরা ব্যাপার নিয়ে গান্ধীজির বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন। নিজের নাতনি মনু গান্ধীর সঙ্গে উলঙ্গ হয়ে শুয়ে থাকতেন গান্ধীজি।
মনু একদিন বলেছিলেন, ‘তুমি আমাকে একেবারে শেষ করে দিয়েছ’। গান্ধীজির এই সব নোংরামি দেখে তাঁর একান্ত অনুগত গান্ধীভক্ত স্টেনোগ্রাফার পরশুরাম তাঁর কাছ থেকে চলে যান। বিশেষ করে নিজের নাতনির সঙ্গে গান্ধীজির চরম নোংরামি দেখে তিনি সহ্য করতে পারেননি। এই ভাবে অনেকেই গান্ধীজির এই সব নোংরামির জন্য তিতিবিরক্ত হন। অনেকে তাঁকে ছেরে চলে যান।
অনেকে আশ্রমে থেকেই প্রতিবাদ করতেন। অনেকে আবার তাঁকে মানতেন না। অনেককে ভয়ও করতেন তিনি। আগেই বলেছি পাঁচ ছেলের (একজন জন্মের পর পরই মারা যায়) পিতার ব্রহ্মচর্য পরীক্ষা করা কি আদৌ বিশ্বাসযোগ্য? না। অবিশ্বাস্য! অকল্পনীয়! অবাস্তব! এটা স্রেফ গান্ধী মহারাজের বিকৃত যৌনাচার।
পূর্বের পোস্ট সস্তার ঠেঙ্গো ধুতির আড়ালে গান্ধীজির অপকর্ম পরবর্তী পোস্ট গান্ধীজির জন্য কী ভাবে দেশের ক্ষতি হয়েছে গান্ধীজি অহিংস ছিলেন না। অহিংস ছিল তাঁর মুখোশ। নেতাজি সুভাষকে তিনি কংগ্রেস থেকে সরিয়েছিলেন হিংসার অনলে জ্বলে… ।সোর্স: http://www.somewhereinblog.net
ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের নেতা মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধী চাইতেন - শুধু আনন্দের জন্য যৌনমিলন করাকে নারীরা যেন প্রতিরোধ করে। তাঁর মতে নর-নারীর যৌনসম্পর্ক হবে শুধু সন্তান উৎপাদনের জন্য যতটুকু দরকার - ততটুকুই।
একজন আমেরিকান জন্মনিয়ন্ত্রণকর্মী এবং যৌন শিক্ষাবিদ মার্গারেট স্যাঙ্গারের সাথে ১৯৩৫ সালে মি. গান্ধীর যে কথোপকথন হয়েছিল - তার সম্প্রতি-প্রকাশিত বিবরণ থেকে এসব জানা গেছে।
সম্প্রতি মি. গান্ধীর এক নতুন জীবনীগ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে যা লিখেছেন ইতিহাসবিদ রামচন্দ্র গুহ। এ বইতে নারী অধিকার, যৌনতা এবং কৌমার্য বিষয়ে গান্ধীর ভাবনা উঠে এসেছে। মার্গারেট স্যাঙ্গারের সাথে গান্ধীর কথোপকথনের বিস্তারিত নোট নিয়েছিলেন গান্ধীর সচিব মহাদেব দেশাই।
তিনি লিখছেন: 'মনে হচ্ছিল দু'জনেই একমত যে নারীর মুক্তি হওয়া উচিৎ - তার নিজের ভাগ্যের নিয়ন্তা হওয়া উচিৎ' - কিন্তু খুব দ্রুতই তাদের মধ্যে মতভেদ দেখা গেল।
মিসেস স্যাঙ্গার ১৯১৬ সালের নিউ ইয়র্কে খুলেছিলেন আমেরিকার প্রথম পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্র। তিনি মনে করতেন, জন্মনিরোধকই হচ্ছে নারীর মুক্তির সবচেয়ে নিরাপদ পথ।
কিন্তু গান্ধী বললেন, পুরুষদের উচিৎ তার 'জান্তব কামনা'কে সংযত করা, আর নারীদের উচিৎ তাদের স্বামীদের বাধা দেয়া।
তিনি মিসেস স্যাঙ্গারকে বললেন, যৌনক্রিয়া করা উচিৎ শুধু সন্তান উৎপাদনের জন্যই।
সে বছর ভারতের ১৮টি শহরে সফর করেছিলেন মিজ স্যাঙ্গার, কথা বলেছিলেন ডাক্তার ও কর্মীদের সাথে। কথাবার্তার বিষয়বস্তু ছিল - জন্ম নিয়ন্ত্রণ এবং নারীমুক্তি।
তিনি মহারাষ্ট্র রাজ্যে গান্ধীর আশ্রমেও গিয়েছিলেন, এবং সেখানেই তার সাথে মিজ স্যাঙ্গারের এই কৌতুহলোদ্দীপক আলোচনা হয়।
তবে গান্ধীর মতামত শুনেও মিসেস স্যাঙ্গার দমে গেলেন না। তিনি বিতর্ক চালিয়ে গেলেন।
"কিন্তু নারীরও তো গভীর যৌন অনুভুতি আছে, তারা পুরুষের মতোই গভীর এবং তীব্র" - তিনি বললেন, "এমন সময় আছে যখন নারীরাও ঠিক তাদের স্বামীদের মতোই শারীরিক মিলন চায়।"
"আপনি কি মনে করেন যে যখন একজন নারী ও পুরুষ পরস্পরের প্রেমে আবদ্ধ এবং সুখী, তখন তারা শুধু বছরে দু'একবার যখন সন্তান চাইবে তখনই যৌনমিলন করবে - এটা কি সম্ভব?" প্রশ্ন করলেন মিসেস স্যাঙ্গার।
তিনি যুক্তি দিলেন - "ঠিক এই ক্ষেত্রেই জন্মনিয়ন্ত্রণ খুবই সুবিধাজনক - যা নারীকে অবাঞ্ছিত গর্ভধারণ থেকে রক্ষা করবে এবং তার দেহের ওপর তার নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করবে।"
কিন্তু গান্ধী একগুঁয়েভাবে তার বিরোধিতা করতে থাকলেন।
বিবিসি বাংলায় আরো পড়ুন:
তিনি স্যাঙ্গারকে বললেন, তিনি সব যৌনতাকেই 'কামনা' বলে মনে করেন।
গান্ধী বললেন, তার স্ত্রী কস্তুরবার সাথে তার সম্পর্ক তখনই 'আধ্যাত্মিক' হয়ে উঠেছিল যখন তিনি 'শারীরিক কামনার জীবনকে বিদায় দিয়েছিলেন।'
এগারোশ' উনত্রিশ পাতার এই বইয়ে পৃথিবীর সবচেয়ে বিখ্যাত শান্তিবাদী নেতার ১৯১৫ সালে দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে ভারতে প্রত্যাবর্তন থেকে শুরু করে ১৯৪৮ সাথে তার নিহত হওয়া পর্যন্ত সময়কালকে তুলে ধরা হয়েছে।
গান্ধী বিয়ে করেছিলেন মাত্র ১৩ বছর বয়েসে। এর পর ৩৮ বছর বয়েসে - যখন তিনি চার সন্তানের পিতা - তখন তিনি 'ব্রহ্মচর্য' বা যৌনসম্পর্কবিরহিত জীবনযাপন শুরু করেন।
গান্ধী নিজেই আত্মজীবনীতে লিখেছেন, তার পিতা যখন মারা যান - তখন তিনি তার স্ত্রীর সাথে যৌনমিলন করছিলেন বলে পিতার পাশে থাকতে পারেন নি - এই অপরাধবোধ তাকে তাড়া করছিল।
অবশ্য, মার্গারেট স্যাঙ্গারের সাথে কথাবার্তার শেষ দিকে গান্ধী তার সাথে কিছুটা একমত হলেন।
তিনি বললেন, পুরুষের স্বেচ্ছামূলক বন্ধ্যাকরণে তার আপত্তি নেই, কারণ পুরুষই মুখ্য ভুমিকা নেয়। তা ছাড়া গর্ভনিরোধক ব্যবহারের চাইতে প্রতিমাসে নারীর যে 'নিরাপদ সময়' থাকে তখন স্বামী-স্ত্রী যৌনমিলন করতে পারে।
মিসেস স্যাঙ্গারের এসব যুক্তি খুব পছন্দ হলো না। তার ভাবনাকে গান্ধী যে স্বীকৃতি দিলেন না এতে তিনি গভীরভাবে মর্মাহত হয়েছিলেন।
তিনি পরে লিখেছিলেন, প্রবৃত্তিকে প্রশ্রয় দেয়া এবং অবাধ যৌনাচার সম্পর্কে গান্ধীর প্রচন্ড ভীতি আছে।
মি গান্ধীর দিক থেকে জন্মনিয়ন্ত্রণের বিরোধিতা অবশ্য এই প্রথম নয়।
তিনি একবার একজন নারী-অধিকার কর্মীকে বলেছিলেন: "আপনি কি মনে করেন যে জন্মনিরোধক দিয়ে শরীরের স্বাধীনতা পাওয়া সম্ভব? নারীদের বরং শেখা উচিৎ কিভাবে তাদের স্বামীদের ঠেকাতে হয়। পশ্চিমা দেশের মতো গর্ভনিরোধক ব্যবহার করলে ভয়াবহ পরিণতি হবে, নারী আর পুরুষ বাঁচবে শুধু যৌনতার জন্য, তাদের মস্তিষ্ক হবে দুর্বল । নীতিবোধ ভেঙে পড়বে।"
'দি ইয়ার্স দ্যাট চেঞ্জড দি ওয়ার্ল্ড' নামের বইটিতে রামচন্দ্র গুহ বলছেন, গান্ধী মনে করতেন যৌনতা হচ্ছে 'জান্তব কামনা' মাত্র, যা বংশবৃদ্ধির জন্য দরকার। আর জন্মনিয়ন্ত্রণ এই জান্তব কামনাকে বৈধতা দিয়ে দিচ্ছে।
এর অনেক বছর পর বঙ্গ প্রদেশের নোয়াখালীতে ভারত ভাগকে কেন্দ্র করে যথন ভয়াবহ হিন্দু-মুসলিম দাঙ্গা চলছে - তখন গান্ধী এক বিতর্কিত পরীক্ষায় অবতীর্ণ হলেন। তিনি তার নাতনী এবং সর্বক্ষণের সঙ্গী মানু গান্ধীকে বললেন, তার সঙ্গে একই বিছানায় ঘুমাতে।
তিনি চাইছিলেন এটা পরীক্ষা করতে যে তিনি তার যৌন আকাঙ্খাকে সম্পূর্ণ জয় করতে পেরেছেন কিনা।
মি. গুহ লিখছেন, গান্ধী মনে করতেন - তিনি যে পরিপূর্ণ ব্রহ্মচারী হতে ব্যর্থ হয়েছেন তার সাথে ভারতের ধর্মীয় সংঘাতের একটা সম্পর্ক আছে।
তবে মানু গান্ধীকে নিয়ে ঘুমানোর পরীক্ষার কথা যখন গান্ধী তার সহযোগীদের বললেন, তখন তারা সতর্ক করেছিলেন যে তিনি যেন এটা না করেন এবং এতে তার সুনাম ক্ষুণ্ণ হবে।
একজন সহকারী বলেছিলেন, এটা দুর্বোধ্য এবং সমর্থনের অযোগ্য। আরেক জন এর প্রতিবাদে গান্ধীর সাথে কাজ করা ছেড়ে দিয়েছিলেন।
স্পষ্টতই নারীদের সাথে গান্ধীর সম্পর্ক ছিল জটিল।
যে নারীরা পুরুষদের কাছে নিজেদের আকর্ষণীয় করার চেষ্টা করে তাদের তিনি দেখতে পারতেন না। "আধুনিক চুলের স্টাইল এবং পোশাক সম্পর্কে তার ছিল তীব্র ঘৃণা।"
মানু গান্ধীকে তিনি লিখেছিলেন, তিনি মুসলিম নারীদের বোরকারও বিরোধী ছিলেন।
অন্যদিকে তিনি আবার নারীদের শিক্ষা, কাজ করার অধিকার এবং নারীপুরুষের সাম্যেরও সমর্থক ছিলেন।
তিনি নারীদের সামাজিক-রাজনৈতিক আন্দোলনে যুক্ত করেছিলেন, সরোজিনী নাইডুকে কংগ্রেসের নেত্রী বানিয়েছিলেন - যখন পশ্চিমা দেশেও নারী রাজনৈতিক নেত্রী ছিলেন খুবই কম।
তবে গান্ধী এটাও মনে করতেন যে সন্তান লালন-পালন এবং গৃহকর্ম নারীদেরই কাজ।
তার একজন সহযোগী বলেছিলেন, তার মানসিকতা ছিল অনেকটা মধ্যযুগের খ্রীষ্টান সন্তদের বা জৈন সাধুদের মত।
ইতিহাসবিদ প্যাট্রিক ফ্রেঞ্চ বলেছিলেন, গান্ধীর চিন্তাধারা প্রাচীন হিন্দু দর্শনে প্রোথিত মনে হলেও, আসলে তিনি ছিলেন ইংল্যান্ডের ভিক্টোরিয়ান যুগের একজন প্রতিভূ।
রামচন্দ্র গুহ লিখেছেন, আজকের মাপকাঠিতে বিচার করলে গান্ধীকে রক্ষণশীল বলা যায়, তবে তার নিজ সময়ের বিচারে তিনি নি:সন্দেহে প্রগতিশীল ছিলেন।
গান্ধীজীর উদার নীতি মুসলমানদের এবং উদারপন্থীদের হিন্দুদের মনে এক আশার আলো জ্বালিয়ে তোলে। কিন্তু ১৯২৫ সালে লালা লাজপং রায়ের সভাপতিত্বে তিলক, অরবিন্দ ঘোষ প্রভৃতি মুসলমানবিদ্বেষী নেতারা হিন্দু মহাসভা গ� ন করলেন। এদিকে গান্ধীকে মুসলমানের দালাল ইত্যাদি উপাধিতে আখ্যায়িত করা হয়, তখন গান্ধীজী দেখলেন যে, মুসলমানরা তো আমাকে হিন্দু বলেই জানেন। কিন্তু সংখ্যাগরিষ্� হিন্দু সম্প্রদায় যদি আমাকে অহিন্দু বলে মনে করে তাহলে আমার নেতা হয়ে প্রশংসা অর্জন করা সম্ভব নয়। তাই ১৯২১-২২ সালে যখন তিনি আন্দোলনের পুরোভাগে ভারতের অবিসংবাদিত নেতারূপে সুপ্রতিষ্� িত; যখন খিলাফত কমিটির সহযোগিতায় হিন্দু-মুসলমান ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে সংহত ও সক্রিয় তখন তিনি গোঁড়া হিন্দুদের সঙ্গে সুর মিলিয়ে ঘোষণা করলেন, "I call myself a Sanatanist Hindoo because (a) I believe in the bedas, the upanishad, the Puranas and all the gose by the name Hindoo Seriphires and therefore in avatars and rebirth; (b) I believe in the Varnasram Dharma in a sense in my opinion stricly vedic but not in its present, popular and crude sense; (c) I believe in the protaction of the cow in its much larger sense than the popular, (d) I do not disbelieve in idol warship" (Young India oct. 12, 1921) অর্থাৎ ‘‘আমি নিজেকে প্রাচীনপন্থী সনাতনী হিন্দু বলি যেহেতু (ক) আমি বেদ, উপনিষদ, পুরান অর্থাৎ হিন্দুশাস্ত্র মতে যাহা কিছু বুঝায় সুতরাং অবতারবাদ এবং পুনর্জন্ম বিশ্বাস করি। (খ) বেদের বিধানসম্মত বর্ণাশ্রম ধর্ম আমি বিশ্বাস করি অবশ্য প্রচলিত অবস্থায় আমার আস্থা নেই। (গ) প্রচলিত অর্থে নয় বৃহত্তর অর্থে আমি গো-রক্ষানীতি সমর্থন করি। (ঘ) মূর্তিপূজা আমি অ-বিশ্বাস করি না।’’ গান্ধীর উপর যাদের ধারণা ছিল তিনি হিন্দু-মুসলমানের মিলনের মিলন সেতু তাদের ঐ ধারণা উপরোক্ত মন্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে বদলে যেতে বাধ্য হয়। হিন্দু মহাসভাও তার দুর্বলতা লক্ষ্য করে তার উপর নতুন আশা-আকাঙ্ক্ষা পোষণ করতে থাকে। তাই স্বাধীনতার প্রত্যক্ষ সংগ্রামী সত্যেন সেন বলেন যে, ‘‘ব্রিটিশ সরকার গণআন্দোলন দমন করিবার জন্য সাম্প্রদায়িক ভেদ বৈষম্যের সুযোগ লইয়াছিল সন্দেহ নাই; কিন্তু সেই ভেদ নীতির অস্ত্রকে তিলক ও গান্ধীবাদ যে তীক্ষ্ণ ধার করিয়াছে
গান্ধীজিকে যে কারনে হত্যা করা হয়েছিল ।।........
নাথুরাম গডসে ১৯৪৮ সালের ৩০ জানুয়ারি বিকেল পাঁচটায় মহাত্মা করম চাঁদ গান্ধীকে পিস্তলের গুলিতে হত্যা করে। ১৫ নভেম্বর ১৯৪৯ সালে নাথুরামের ফাঁসি হয়।
তার বিচার কার্য সম্পন্ন হতে ছয়শত পঞ্চান্ন দিন লেগেছিল। নাথুরাম আপিল মামলায় উকিল নিযুক্ত না করে নিজেই সাফাই বক্তব্য দেন। নাথুরাম গডসের সাফাই বক্তব্য ভারত সরকার প্রকাশ নিষিদ্ধ করেন। ১৯৬৮ সালে বোম্বে হাইকোর্ট নাথুরাম গডসের জবানবন্দীর উপর দায়ের করা মামলায় জবানবন্দী প্রকাশের পক্ষে রায় দেন। তার নয় বৎসর পর ১৯৭৭ সালে যে আপিল বিভাগ মৃত্যুদণ্ডাদেশ বহাল রাখে তার একজন বিচারপতি জাস্টিস জি.ডি. খোসলা একটি বই লেখেন। এই বইয়ের পর নাথুরাম গডসের ভাই গোপাল গডসে নাথুরামের জীবন, কেন সে মহাত্মা গান্ধীকে হত্যা করেছিল-তা নিয়ে এক বই লিখেন। বইটির নাম ‘‘Gandhi Hatya Ani Mee’’। (‘গান্ধী হত্যা আর আমি)। এই বইয়ে মূলতঃ মহাত্মা গান্ধী হত্যার প্রেক্ষাপট, হত্যার কারণ নিয়ে নাথুরাম মামলায় যে জবানবন্দী দিয়েছে তা-ই অত্যন্ত আবেগপূর্ণ ভাষায় বর্ণিত হয়েছে।
নাথুরাম ভারতের বোম্বাই শহরের কাছে পুনায় জন্মগ্রহণ করে। কলেজ জীবন থেকে সে সাভারকাবের হিন্দু মহাসভা ও আরএসএস এর ফ্লাটফরমে কাজ করতো। হিন্দু মহাসভার কর্মীরা ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনে নেহেরু ও মহাত্মা গান্ধীর নীতির সমর্থন করতো না। ১৯৪০ সালের পর মুসলমানদের পৃথক রাষ্ট্র গঠনের প্রশ্নে হিন্দু মহাসভার কর্মীরা কংগ্রেসের উপর ক্ষেপে যায়। ১৯৪৭ সালে ভারত ভাগ হয়ে যাবার নিশ্চিত মুহূর্তে পুরো উপমহাদেশে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা ছড়িয়ে পড়ে। এই দাঙ্গা পরবর্তী সময়ে মহাত্মা গান্ধী সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষায় মরিয়া হয়ে ওঠেন। গান্ধী তার স্বভাবসুলভ প্রক্রিয়ায় সরকারের উপর চাপ সৃষ্টি করার জন্য অনশন কর্মসূচি করতে থাকেন। গান্ধীর এসব কাণ্ড হিন্দু মহাসভার কর্মীরা হিন্দু বিরোধী ও মুসলিম তোষণ রূপে দেখে। ভারত স্বাধীন হয়ে গেলে হিন্দু মহাসভার পুরান নেতৃত্ব কংগ্রেস সরকারকে জাতীয় সরকার হিসেবে সমর্থন দেয়া প্রয়োজন মনে করলেও নাথুরাম গডসের মত তরুণ আর এস এস কর্মীরা কংগ্রেসকে ভারত বিভক্তির জন্য ও মুসলিম তোষণের জন্য দায়ী করতে থাকে। তারা তখনো কংগ্রেস এর বিরুদ্ধে ‘অখণ্ড ভারতের’ স্লোগান তোলে।
নাথুরাম গডসে ও তার বন্ধু নারায়ন আপতে ‘অগ্রণী’ ও ‘হিন্দু রাষ্ট্র’ নামে দুটো পত্রিকা বের করেন পুনা থেকে। এই দুটো পত্রিকাতেই গান্ধী ও নেহেরুর মুসলিম তোষণের বিরুদ্ধে প্রচারণা চালানো হতো। সাভারকার ও পুরাতন সিনিয়র হিন্দু মহাসভার নেতাদের মত বিরুদ্ধে গিয়ে নাথুরামসহ তরুণ কিছু সদস্য দিল্লী গিয়ে গান্ধীজির ধর্মসভায় হৈ চৈ করা ও বিক্ষোভ দেখানোর সিদ্ধান্ত নেয়।
মহাত্মা গান্ধীর হত্যাকাণ্ড
গান্ধীজি ১৯৪৭ পরবর্তী সাম্প্রদায়িক হানাহানি বন্ধের জন্য সর্বদলীয় ও সর্বধর্মীয় প্রার্থনা সভা শুরু করেন দিল্লীর বিড়ালা ভবনে। নাথুরাম ও তার সঙ্গীরা কয়েক দফা বিক্ষোভ করেও গান্ধীকে এ প্রার্থনা সভা থেকে বিরত রাখতে পারেনি। পাকিস্তান ও ভারত ভাগাভাগি হওয়ার ছয়মাসের মধ্যে যে সমস্ত যৌথ সম্পদ ভারতে রয়ে গেছে তার বিনিময়ে ভারত পাকিস্তানকে ৫৫ কোটি টাকা শোধ করার কথা ছিল। কিন্তু সর্দার প্যাটেল এই টাকা শোধ করতে গড়িমসি করে। প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী পাওনা টাকা শোধ না করায় গান্ধীজি নেহেরু ও প্যাটেলের উপর ক্ষেপে গিয়ে অনশন শুরু করেন। তার অনশন এর খবরে ভারত সরকার এই টাকা পাকিস্তানকে শোধ করে দেয়।
এই ঘটনায় হিন্দু মহাসভার তরুণ কর্মীরা গান্ধীজি ও মুসলমানদের উপর আরো রেগে যায়। তারা মনে করে যে গান্ধীজি বেঁচে থাকলে তার এই মুসলমান তোষণ চলতেই থাকবে। এর মাঝে গান্ধীজি আরো এক কাণ্ড করে বসেন। তিনি বিভিন্ন হিন্দু মন্দিরে কোরানের সম্প্রীতি বিষয়ক আয়াতগুলো পাঠ করে হিন্দুদেরকে শোনাতে লাগলেন। গান্ধীজি হোসেন সোহরাওয়ার্দীকে ‘শহিদ’ বলে উল্লেখ করলে হিন্দু তরুণরা আরো ক্ষেপে যায়। তবে তাদের কেউই গান্ধীজীকে নিহত করার পক্ষে ছিলেন না।
গান্ধী ও নেহেরু
১৯৪৮ সালের ৩০ জানুয়ারি বিকেল ৪ টা ৫০ মিনিটে গান্ধীজি রুটিন মাফিক সর্বধর্মীয় প্রার্থনা সভায় বক্তব্য দিতে বের হন। তাকে বের করতেন দুজন তরুণী। এদের কাঁধে ভর দিয়ে বের হতেই নাথুরাম গডসে খুব কাছে থেকে গান্ধীজিকে রিভলবার থেকে গুলি করে। দু’মিনিটেই স্তব্ধ হয়ে যায় একটি ইতিহাসের অধ্যায়। নাথুরাম এক পাও নড়লেন না। পিস্তলের গুলি যাতে অন্য কাউকেও আহত না করে সেজন্য পিস্তলসহ হাত উঁচু করে ধরে রাখলেন যতক্ষণ না পুলিশ এসে তাকে নিয়ে গেলেন। এক মাসের মধ্যে আরো সাতজনকে গ্রেফতার করে বিচার কার্য শুরু হয় ৷ গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে নাথুর ভাই গোপাল গডসেও ছিলেন।
গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে দিগম্বর বাদজে রাজসাক্ষী হয়ে যায়। দীর্ঘ বিচার প্রক্রিয়ায় নাথুরাম স্বীকার করেন যে তিনি একাই এবং একক সিদ্ধান্তে গান্ধীজিকে হত্যা করেন। হত্যার কারণ- অখণ্ড ভারতকে বিভক্ত করার জন্য এবং লক্ষ লক্ষ হিন্দুর রিফিউজি হওয়া ও মৃত্যুর জন্য গান্ধীই দায়ী। শুধু এ কারণে তিনি গান্ধীকে হত্যা করেন। হত্যার ষড়যন্ত্র সম্বন্ধীয় যাবতীয় অভিযোগ নাথুরাম অস্বীকার করলেও হত্যার দায় স্বীকার করে জবানবন্দী দেন। তার বিশদ জবানবন্দীতে তিনি নেহেরু ও গান্ধীর রাজনীতির কড়া সমালোচনা করেন।
জেলে থাকা অবস্থায় কিছু চমকপ্রদ ঘটনা ঘটে। গান্ধীজির ছেলে রামদাস গান্ধী পিতার হত্যাকারী নাথুরামকে কয়েকটি চিঠি লিখেন। রামদাস নাথুকে ভগবত গীতা ও উপনিষদের বিভিন্ন উদ্ধৃতি দিয়ে প্রশ্ন করেন একজন বৃদ্ধ মানুষকে গুলি করে মারা তার ধার্মিক হৃদয় কিভাবে দেখে ? রামদাস এই হত্যার জন্য অনুতপ্ত হয়ে নাথুকে ভগবানের কাছে ক্ষমা চাইতে উপদেশ দেন। নাথুরাম ভদ্র ভাষায় গান্ধীজির ছেলেকে প্রতি চিঠির উত্তর দেন। এসব চিঠির সারকথা হল অখণ্ড ভারত এর জন্যই তিনি গান্ধীজিকে হত্যা করেন দেশ ও মানুষের স্বার্থে।
নাথুরাম কোন উকিল গ্রহণ করেনি। নিজ বক্তব্য নিজেই এজলাসে দিয়েছেন অনলবর্ষী ভাষায়। তার বক্তব্যের শ্রোতা পূর্ণ ছিল ভিআইপি গ্যালারী। এসব ভি.আই.পি’র মধ্যে পুরুষ ছিলেন না। সবাই ছিলেন জজ ব্যারিস্টারদের বউ। মৃত্যুদণ্ডাদেশের চারদিনের মধ্যে নাথুরাম আপিল করেন। কিন্তু সেখানেও তিনি অন্যান্য অভিযোগ অস্বীকার করেন ও হত্যার দায় নিজে নেন। তখন লক্ষ লক্ষ হিন্দু মুসলমান নিহত, গৃহত্যাগী, উদ্বাস্তু। এসব কিছুর জন্য এজলাসে নাথুরাম গান্ধীজিকে দায়ী করেন। বিচারক জি.ডি খোসলা আপিল বিভাগের তিনজন বিচারকের একজন ছিলেন। তিনি গান্ধী হত্যা সম্বন্ধে স্মৃতিচারণমূলক বইয়ে লিখেছেন যে- সেদিন নাথুরামের আপিল বক্তব্যে উপস্থিত অনেকেই চোখের জল মুচেছেন। তারা গান্ধীর পরিবর্তে নাথুরামের জন্যই বোধ হয় কেঁদেছিল। বিচারক খোসলার মন্তব্যঃ সেদিন এজলাসে উপস্থিতরা যদি রায় দিত তবে নাথুরামকে নির্দোষ হিসেবে রায় দিলে আশ্চর্য হবার কিছু ছিল না।
ফাঁসির আগে নাথুরামের স্লোগান ছিল – “অখণ্ড ভারত-অমর রহে”।
নাথুরামের বিচার
নাথুরাম মৃত্যুর একঘণ্টা আগে একটা উইল করে গিয়েছিলেন তার চিতা ভস্ম যেন গঙ্গায় না ফেলা হয়। যেদিন অখণ্ড ভারত পুনঃস্থাপিত হবে সেদিন যেন তার চিতা ভস্ম সিন্ধু নদীতে বিসর্জন দেয়া হয়। নাথুরামের পরিবারের কাছে এ ভস্ম রক্ষিত আছে। যতদিন অখণ্ড ভারত না হবে ততদিন এই ভস্ম বংশ পরম্পরায় রক্ষিত হবে। প্রতিবছর নাথুরামের মৃত্যুবার্ষিকীতে উৎসাহী তরুণরা এই ভস্ম সামনে নিয়ে তার স্মৃতি রোমন্থন করেন। ফাঁসির ৪৫ মিনিট আগে ১০০ রুপী সোমনাথ মন্দিরের জন্য দান করেন।
ইতিহাস লিখিত হয় বিজয়ীদের দ্বারা। বর্তমানে ভারতে নাথুরামের আদর্শের দল ক্ষমতাসীন। তারা প্রথম ধাক্কাতেই নেহেরু ও গান্ধীর মৃত্যুবার্ষিকী কাটসাট করে তিলকের আদর্শের দিকে ঝুঁঁকে পড়েছে। বিজয়ীরা রাষ্ট্রের বিভিন্ন নীতিতে নেহেরু ও গান্ধীর ‘সেকুলারিজম’ থেকে সরে আসার ইঙ্গিত দিচ্ছে এবং বাস্তব কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করে সংখ্যা গরিষ্ঠের রাজত্ব কায়েমের চেষ্টা করছে। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে ৪৭ আর ২০১৫ এক নয়। গ্লোবাইলাইজেশন এর যুগে ভারতের অভ্যন্তরীণ ও বহির্বিশ্বের ফেব্রিক এর যে পরিবর্তনটা এসেছে তাতে ১০০ বছর পেছনে ফিরে যাওয়াটা কতটুকু সম্ভব তা দেখার অপেক্ষায় বিশ্ববাসী !
গান্ধী হত্যাকারী নাথুরাম গডসের কিছু জবানবন্দী :-
**********************************************
পাঞ্জাবের অম্বালা কারাগারে নাথুরাম গডসে এবং নারায়ন আপ্তেকে ফাঁসিতে ঝোলানো হয়েছিল ১৫ই নভেম্বর, ১৯৪৯ খ্রীস্টাব্দে। মৃত্যুর সময় তারা উচ্চারন করেছিল, “অখণ্ড ভারত অমর রাহে, বন্দেমাতরম।” বিচারপতি জি.ডি. খোসলা ভেবেছিলেন নাথুরাম উচ্চতর আদালতে আত্মপক্ষের সমর্থনে আবেদন করবেন কিন্তু জবানবন্দী দেবার পরে নাথুরাম গডসে কোন অবেদন করেন নি। ৩০২ ধারায় তাকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়।
গান্ধী হত্যার পরে নাথুরাম গডসেকে আদালতে তুলে প্রধান বিচারপতি জি.ডি খোসলা আত্মপক্ষ সমর্থনের জন্য কিছু বলতে বলেন। প্রায় একসপ্তাহ ধরে চলেছিল এই বিচার পর্ব। গান্ধীজীকে হত্যার পেছনে একটা দুটো নয় অন্ততপক্ষে ১৫০ টা কারন দেখিয়ে ছিলেন নাথুরাম গডসে। নাথুরামের যুক্তি শুনে প্রধান বিচারপতি সহ আদালতে উপস্থিত ব্যক্তিবর্গ আশ্চর্যচকিত হয়ে গেছিলেন। শেষে বিচারপতি খোসলা বলেন, “আদালতে নাথুরামের জবানবন্দী সবচেয়ে আকর্ষনের জিনিস ছিল। আমি যদি উপস্থিত ব্যক্তিবর্গের সকলকে বলতাম আপনারাই নাথুরামের বিচার করুন তাহলে অধিকাংশ ব্যক্তি নাথুরামকে নির্দোষ ঘোষনা করত সেটাই আমার বিশ্বাস।” নাথুরামের জবানবন্দী যাতে জনসমক্ষে না আসে সেইজন্য তৎকালিন ভারত সরকার নাথুরামের জবানবন্দীকে নিষিদ্ধ ঘোষনা করেছিলেন কিন্তু নাথুরামের ভাই গোপাল গডসে কয়েক দশক ধরে আইনি লড়াই চালান। শেষে সুপ্রিমকোর্টের রায়ে ভারত সরকার নাথুরামের জবানবন্দীর উপর নিষেধাজ্ঞা তুলে নেন।
জবানবন্দীর কিছু অংশ….
************************
১. হিন্দু দর্শন, শাস্ত্র পড়ার পরে নিজেকে হিন্দু বলে পরিচয় দিতে গর্ববোধ করি……
২. আমি জীবনে গোখলে, বিবেকানন্দ সহ আরো অনেক মহাপুরুষের জীবনী পাঠ করেছি। সবচেয়ে বেশি কাউকে নিয়ে যদি পড়াশোনা করে থাকি তবে সেটা নিঃসন্দেহে গান্ধীজী। উনার দ্বারা খুব প্রভাবিত হয়েছিলাম……
৩. আমি জানি আমি কি করেছি। আমি গান্ধীজীর মত নেতাকে মেরেফেলেছি। আমি আমার জীবন নষ্ট করে ফেলেছি। আগামীদিনের ভারতবাসীর কাছে আমি জাতীর জনকের হত্যাকারী রূপে চিহ্নিত হব। আমার কোন দুঃখ নেই আমি গান্ধীকে মেরেছি…..
৪. গান্ধী অহিংসা, অহিংসা করে এতটাই মত্ত হয়ে উঠেছিলেন যে হিংসা এবং অহিংসার মধ্যে পার্থক্য কি সেটাই ভুলতে বসেছিলেন……
৫. গান্ধী হিন্দুদের জন্য কিছু করেন নি। কংগ্রেস চলত গান্ধীর কথায়। করাচি থেকে দিল্লী পর্যন্ত লক্ষ হিন্দু মারা গেছে স্রেফ গান্ধীর জন্য…….
৬. লর্ড মাউন্টব্যাটেন কংগ্রেসের কাছে সবচেয়ে ভাল ভাইসরয় যে লোকটা ধর্মের ভিত্তিতে একটা দেশকে দুই ভাগে ভাগ করে দিল। দেশ ভাগের জন্যও গান্ধী দায়ী…….
৭. জুলাই, ১৯৪৭ সালের কংগ্রেস মিটিংয়ে অধিকাংশ নেতা দেশভাগের বিরোধিতা করেন কিন্তু মিটিং শেষ হবার আগে গান্ধী সেখানে গিয়ে দেশভাগের সমর্থনে চুড়ান্ত সইটি করেন। এক সময় যিনি বলেছিলেন “কংগ্রেস দেশ ভাগে উদ্যোগী হলে সেটা যেন আমার মৃতদেহের উপর দিয়ে হয়।”……….
৮. ১৯৪৮ সানে ৩০শে ভারতের স্বাধীনতা পাওয়ার কথা ছিল কিন্তু তার ১০ মাস আগেই দেশের একটা খণ্ড নিয়ে আরেকটা দেশ বানিয়ে দেওয়া হল। এসবের জন্য গান্ধী দায়ী……..
৯. কখন সত্যাগ্রহ আন্দোলন করতে হবে, কখন সেটা প্রত্যাহার করে নিতে হবে সেটা গান্ধীই জানত। ভারতের আর কেউ জানত না। সত্যাগ্রহ প্রকৃতপক্ষে কি জিনিস সেটা গান্ধী হয়ত নিজেই জানত না…..
১০. দেশের স্বাধীনতা, অখণ্ডতা বজার রাখার জন্য হিংসার আশ্রয় নিতে হয়। এর মধ্যে আমি কোন পাপ দেখি না। মহারানা প্রতাপ সিং, ছত্রপতি শিবাজী, গুরুগোবিন্দ সিং এরাও তো হিংসার পথেই চলেছিল। হিংসা মানেই গান্ধীর চোখে সেটা পাপ……
১১. ১৯৩৯ সালে হরিপুরা অধিবেশনে নেতাজী সভাপতি নির্বাচিত হন কিন্তু এই গান্ধী পরাজিত পট্টভি সীতারামাইয়ার পক্ষ অবলম্বন করে নেতাজির বিরোধিতা করেন এবং নেতাজিকে দল ত্যাগ করতে বাধ্য করেন। এটা কি কোন হিংসার পথ নয়?……
১২. ভগৎ সিং, রাজগুরু এবং শুকদেবের ফাঁসি রধের জন্য ভারতবাসীরা গান্ধীর শরনাপন্ন হয়েছিল তখন গান্ধী তাদের আবেদনের বিরোধিতা করে ভগৎ সিংদের বিপথগামী তরুন আখ্যা দিয়ে ফাঁসির দণ্ডাদেশকে সমর্থন করেন……..
১৩. জালিয়ানওয়ালাবাগের হত্যাকাণ্ডের পরে ক্ষিপ্ত ভারতীয়রা চেয়েছিল ডায়ারের বিচার হোক কিন্তু গান্ধী সেই সিদ্ধান্তেরও বিরোধিতা করেন। উধম সিং জেনারেল ডায়ার কে হত্যা করলে গান্ধী প্রবল অসন্তোষ প্রকাশ করে উধম সিংকে বিপথগামী তরুন আখ্যা দেন………
১৪. ভারতের প্রধানমন্ত্রী নির্বাচনের ক্ষেত্রে ১৫ জন সদস্যের মধ্যে ১ জন অনুপুস্থিত ছিলেন। ১৪ ভোটের মধ্যে সর্দার প্যাটেল ১৩ – ১ ব্যবধানে নেহেরুকে পরাজিত করেন। গান্ধীই, সর্দার প্যাটেলকে প্রধানমন্ত্রীর পদ গ্রহনে বাঁধা দেন এবং নেহেরুকে গদিতে বসান………
১৫. দেশভাগের পরে হিন্দু শরনার্থীরা দিল্লির মসজিদে কিছুদিনের জন্য আশ্রয় নিলে গান্ধী তার প্রবল বিরোধিতা করেন এবং সেইসব শরনার্থীদের রাস্তায় বাস করতে বাধ্য করেন…….
১৬. গান্ধী হচ্ছে সেই লোক যে সশস্ত্র দেশীয় বিপ্লবীদের বখে যাওয়া তরুন বলে ভৎসনা করে অথচ বুলেদের আঘাতে হাজার হাজার ভারতবাসীর প্রান নিয়ে নেওয়া ইংরেজদের বিশ্বযুদ্ধের মত সশস্ত্র ও হিংস্রতায় পরিপূর্ন প্রানঘাতী যুদ্ধে ভারতীয় সৈন্য দিয়ে সাহায্য করার সময় সেখানে হিংসাকে আন্তরীকভাবে সমর্থন জানান……..
১৭. গান্ধী ভারতের জাতির জনক হতেই পারেন না কারন গান্ধী অখণ্ড ভারত গড়েন নি। গান্ধী ভারতবর্ষের জন্মদাতাও নন তার থেকে গান্ধীকে পাকিস্তানের জনক বলাই ভাল কারন গান্ধীর জন্যই ভারত দেশের একটা অংশ কেটে নিয়ে অন্য একটা দেশ পাকিস্তান বানিয়ে দেওয়া হল…….
১৮. গান্ধীর দ্বারা দেশের কোন উপকার হবার ছিল না। আমার কাছে সবার আগে দেশ, তার আগে কেউ না। গান্ধীও না। আমার মনে হয় না গান্ধীকে মেরে আমি কোন অপরাধ করেছি…….
Nice post 😊.......😊
ReplyDelete