বৌদ্ধ ধর্ম - ধর্ম্মতত্ত্ব

ধর্ম্মতত্ত্ব

ধর্ম বিষয়ে জ্ঞান, ধর্ম গ্রন্থ কি , হিন্দু মুসলমান সম্প্রদায়, ইসলাম খ্রীষ্ট মত বিষয়ে তত্ত্ব ও সনাতন ধর্ম নিয়ে আলোচনা

धर्म मानव मात्र का एक है, मानवों के धर्म अलग अलग नहीं होते-Theology

সাম্প্রতিক প্রবন্ধ

Post Top Ad

স্বাগতম

06 August, 2020

বৌদ্ধ ধর্ম

আক্ষরিক অর্থে "বুদ্ধ" বলতে একজন জ্ঞানপ্রাপ্ত, উদ্বোধিত, জ্ঞানী, জাগরিত মানুষকে বোঝায়। উপাসনার মাধ্যমে উদ্ভাসিত আধ্যাত্মিক উপলব্ধি এবং পরম জ্ঞানকে বোধি বলা হয় (যে অশ্বত্থ গাছের নিচে তপস্যা করতে করতে বুদ্ধদেব বুদ্ধত্ব লাভ করেছিলেন তার নাম এখন বোধি বৃক্ষ)। সেই অর্থে যে কোনও মানুষই বোধিপ্রাপ্ত, উদ্বোধিত এবং জাগরিত হতে পারে। সিদ্ধার্থ গৌতম এইকালের এমনই একজন "বুদ্ধ"। বৌদ্ধ ধর্ম গৌতম বুদ্ধ কর্তৃক প্রচারিত একটি ধর্ম বিশ্বাস এবং জীবন দর্শন খ্রিস্টপূর্ব ৫৬৩ অব্দে এক শুভ বৈশাখী পূর্ণিমা তিথিতে লুম্বিনি কাননে (বর্তমান নেপাল) জন্ম নেন সিদ্ধার্থ(গৌতম বুদ্ধ)। উত্তর-পূর্ব ভারতের কপিলাবস্তু নগরীর ক্ষত্রিয় রাজা শুদ্ধোধন এর পুত্র ছিলেন সিদ্ধার্থ (গৌতম বুদ্ধ)। বুদ্ধের দর্শনের প্রধান অংশ হচ্ছে দুঃখের কারণ ও তা নিরসনের উপায়। বাসনা হল সর্ব দুঃখের মূল। বৌদ্ধমতে সর্বপ্রকার বন্ধন থেকে মুক্তিই হচ্ছে প্রধান লক্ষ্য- এটাকে নির্বাণ বলা হয়। নির্বাণ শব্দের আক্ষরিক অর্থ নিভে যাওয়া (দীপনির্বাণ, নির্বাণোন্মুখ প্রদীপ), বিলুপ্তি, বিলয়, অবসান। কিন্তু বৌদ্ধ মতে নির্বাণ হল সকল প্রকার দুঃখ থেকে মুক্তি লাভ। এই সম্বন্ধে বুদ্ধের চারটি উপদেশ যা চারি আর্য সত্য (পালিঃ চত্বারি আর্য্য সত্যানি) নামে পরিচিত। তিনি অষ্টাঙ্গিক মার্গ উপায়ের মাধ্যমে মধ্যপন্থা অবলম্বনের উপর বিশেষ জোর দিয়েছেন।

অষ্টাঙ্গিক মার্গ


"ত্রিপিটক" বৌদ্ধদের ধর্মীয় গ্রন্থের নাম যা পালি ভাষায় লিখিত। এটি মূলত বুদ্ধের দর্শন এবং উপদেশের সংকলন। পালি তি-পিটক হতে বাংলায় ত্রিপিটক শব্দের প্রচলন। 
 বৌদ্ধদর্শন (The Bauddha Philosophy)… (পর্ব-০১) 
১.০ : ভূমিকা…

*বৌদ্ধদর্শনের পশ্চাৎভূমি
*গৌতম বুদ্ধের জীবনী
*বুদ্ধের ধর্মপ্রসার
*বৌদ্ধ সাহিত্য
.
০.০ : বুদ্ধের মতবাদ… (পর্ব-০২)
২.০ : চার আর্যসত্য
২.১ : প্রথম আর্যসত্য : দুঃখ…
২.২ : দ্বিতীয় আর্যসত্য : দুঃখের কারণ…
             ভবচক্রের দ্বাদশ নিদান…
             (১) অবিদ্যা, (২) সংস্কার, (৩) চেতনা বা বিজ্ঞান, (৪) নামরূপ,
             (৫) ষড়ায়তন, (৬) স্পর্শ, (৭) বেদনা বা অনুভূতি, (৮) তৃষ্ণা বা ভোগবাসনা,
             (৯) উপাদান বা বিষয়ানুরাগ, (১০) ভব, (১১) জাতি, (১২) জরামরণ…
২.৩ : তৃতীয় আর্যসত্য : দুঃখ নিরোধ বা নির্বাণ…
             নির্বাণের স্বরূপ…
২.৪ : চতুর্থ আর্যসত্য : দুঃখ নিরোধ মার্গ…
            অষ্টাঙ্গিক মার্গ…
            (ক) সম্যক জ্ঞান বা প্রজ্ঞা…
                (১) প্রথম অঙ্গ: সম্যক দৃষ্টি
                (২) দ্বিতীয় অঙ্গ: সম্যক সংকল্প
            (খ) সম্যক আচার বা শীল…
                (৩) তৃতীয় অঙ্গ: সম্যক বচন
                (৪) চতুর্থ অঙ্গ: সম্যক কর্মান্ত
                (৫) পঞ্চম অঙ্গ: সম্যক আজীব
            (গ) সম্যক যোগ বা সমাধি…
                (৬) ষষ্ঠ অঙ্গ: সম্যক ব্যায়াম
                (৭) সম্যক স্মৃতি
                (৮) সম্যক সমাধি
.
.০ : বৌদ্ধমতের দার্শনিক সিদ্ধান্ত… (পর্ব-০৩)
৩.১ : দুঃখবাদ…
৩.২ : প্রতীত্য-সমুৎপাদ তত্ত্ব…
৩.৩ : কর্মবাদ…
৩.৪ : ক্ষণিকবাদ বা ক্ষণভঙ্গবাদ…
        ক্ষণভঙ্গবাদের দার্শনিক বিশ্লেষণ…
        ক্ষণভঙ্গবাদ প্রমাণে দার্শনিক মতান্তর…
        ক্ষণভঙ্গবাদের দার্শনিক সমালোচনা…
৩.৫ : অনাত্মবাদ বা নৈরাত্ম্যবাদ…
        নৈরাত্ম্যবাদের দার্শনিক মত বিশ্লেষণ…
৩.৬ : নিরীশ্বরবাদ বা অনীশ্বরবাদ…
        নিরীশ্বরবাদের দার্শনিক বিশ্লেষণ…
৩.৭ : বুদ্ধের দশ-অকথনীয়… 
        হীনযান ও মহাযানের ভেদ…
৪.১ : (মহাযান) মাধ্যমিক বৌদ্ধ দর্শন : শূন্যবাদ… (পর্ব-০৫)
        নাগার্জুনের জীবনী…
        শূন্যবাদের দার্শনিক মত…
        শূন্যবাদে অদ্বৈতবেদান্তের সাদৃশ্য…
৪.২ : (মহাযান) যোগাচার বৌদ্ধ দর্শন : বিজ্ঞানবাদ… (পর্ব-০৬)
        অসঙ্গ ও বসুবন্ধুর জীবনী…
        বিজ্ঞানবাদের দার্শনিক মত…
        যোগাচার বিজ্ঞানবাদের দার্শনিক সিদ্ধান্ত…
        মাধ্যমিক দর্শন বা শূন্যবাদ খণ্ডন…
        সর্বাস্তিবাদ খণ্ডন…
        বিজ্ঞানের পরিণাম…
        সর্বাস্তিবাদী সৌত্রান্তিক-সম্প্রদায় কর্তৃক বিজ্ঞানবাদ খণ্ডন…
৪.৩ : সর্বাস্তিবাদী বৌদ্ধ দর্শন : সৌত্রান্তিক ও বৈভাষিক মত… (পর্ব-০৭)
      (ক) (হীনযান) সৌত্রান্তিক মত : বাহ্যানুমেয়বাদ…
            সৌত্রান্তিক মতে জ্ঞান ও অন্যান্য তত্ত্ব
      (খ) (হীনযান) বৈভাষিক মত : বাহ্যপ্রত্যক্ষবাদ…
            বৈভাষিক মতে বাহ্যপ্রত্যক্ষের তত্ত্ব
            বৈভাষিকের সভেদ ধর্ম
            সাস্রব ধর্ম
            অনাস্রব ধর্ম 
        বৌদ্ধমতে প্রমাণ…
        প্রমাণ সংখ্যা…
        (ক) প্রত্যক্ষ প্রমাণ…
             (১) ইন্দ্রিয়জ্ঞান-প্রত্যক্ষ
             (২) মানস-প্রত্যক্ষ
             (৩) স্বসংবেদন-প্রত্যক্ষ
             (৪) যোগী-প্রত্যক্ষ
             প্রত্যক্ষাভাস 
       (খ) অনুমান প্রমাণ…
            অনুমিতির লক্ষণ…
            অনুমানের ভেদ…
গৌতমবুদ্ধের মহপরির্নিবাণের অনেক বছর পর্যন্ত বা গৌতমবুদ্ধের সময়েও বৌদ্ধ ধর্ম তেমন বিস্তৃত হয়নি। প্রায়ই ২৫০-৩০০ বছর পরে বৌদ্ধ ধর্ম বিস্তৃত হয়েছিলো দেশ থেকে দেশান্তরে। তার অন্যতম কারণ ছিলো রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা। সম্রাট অশোকই বৌদ্ধ ধর্মকে দেশবিদেশে ছড়িয়ে দেয়।এমনকি সম্রাট অশোকের পুত্র মহেন্দ্র ও কন্যা সংঘমিত্রা সম্রাট অশোকের আদেশ পেয়ে শ্রীলংকায় বৌদ্ধ ধর্মের প্রচার করেন। এছাড়া বিভিন্ন দুত পাঠিয়ে চীন, কাশ্মীর, গান্ধার, মহারাষ্ট্র, আফগানিস্তান, নেপাল, থাইল্যান্ড, জাপান, প্রভৃতি দেশে ধর্ম প্রচার করেন। ফলে সম্রাট অশোক বৌদ্ধধর্মের এক গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র।
মূলত বিভিন্ন ঘটনা পরিক্রমার মধ্য দিয়ে বিন্দুসারের মৃত্যুর পর বিন্দুসারের পুত্রদের মধ্যে মগধরাজ্য নিয়ে দ্বন্ধ শুরু হয়। মগধ রাজ্যের সম্রাট কে হবে?
সে সময় অশোক হয়ে ওঠেন একজন ক্যারিশমেটিক নেতৃত্ব। বিন্দুসারের ১৬ জন স্ত্রী ছিলো, এই ১৬ জন স্ত্রীর ছিলো সর্বমোট ১০০টি পুত্র। অশোক ছিলেন এই একশো জনের মধ্যে একজন। অশোক বিন্দুসারের জীবিত অবস্থায়ই তক্ষশীলার বিদ্রোহ দমাতে সক্ষম হন। তক্ষশীলার বিদ্রোহ দমানোর পর অশোক তক্ষশীলার দায়িত্বে থেকে যান। কিন্তু বিন্দুসারের মৃত্যুর পর অশোকের মধ্যেও পুরো মগধের সম্রাট হওয়ার এক তীব্র লালসা জন্মাতে শুরু করে। অন্যদিকে নিয়মতান্ত্রিক উপায় কিংবা সরল পথে হাঁটলে এ উদ্দেশ্য সাধন হবে না অশোক তা বেশ ভালোভাবেই বুঝতে পারলেন। অনেক চিন্তাভাবনা করে অশোক এক পর্যায়ে হাতে নিলেন ঝকঝকে তলোয়ার। হত্যা করতে লাগলেন একের পর এক ভাইকে। তখন অশোকের বয়স মাত্র ১৮। এই ১৮ বছরের ছেলে বীতাশোক নামক এক ভাইকে বাদ দিয়ে নির্দয়, বাকী সব ভাইকে হত্যা করে বলে জানা যায়। আবার এই হত্যা ছাড়া মৌর্য সাম্রাজ্যের একক আধিপত্য বিস্তার করার আর কোনো পথও সম্রাট অশোকের সামনে খোলা ছিলো না। সুসীম নামক ভাইকে জলন্ত কয়লা ভর্তি গর্তে ফেলে দিয়ে হত্যা করেন। মগধ রাজ্য নিয়ে এরকম টানা হেঁচড়া ও রক্তারক্তি চলে টানা তিন বছর। এই তিন বছর ধরে বিন্দুসারের পরিবার জুড়ে চলতে থাকে মৃত্যুর মিছিল। এরকম রক্তারক্তির অবসান ঘটে খ্রিষ্ট পূর্ব ২৬৯ সালে। মৌর্য সাম্রাজ্যের সিংহাসনে আরোহণ করেন সম্রাট অশোক। যার সিংহাসনে আরোহণের পেছনে রয়েছে নিজের ৯৮ জন ভাইয়ের লাশ। সিংহাসন লাভের পর এবার নতুন লোভ পেয়ে বসলো অশোককে। আর সেটা হলো সাম্রাজ্যের পরিধি বৃদ্ধি। বর্তমান উড়িষ্যা অর্থাৎ তৎকালীন কলিঙ্গ তখনো মৌর্য সাম্রাজ্যের বাইরে ছিলো। সিংহাসনে আরোহণের মাত্র কয়েক বছরের মাথায় অশোক কলিঙ্গ আক্রমণ করেন। কলিঙ্গ আক্রমণ করার কারণ হল মূলত রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক। কলিঙ্গ খুবই সমৃদ্ধ একটি রাজ্য। অশোকের আগেও অশোকের বাবা বিন্দুসার ও দাদা চন্দ্রগুপ্ত দুজনেই কলিঙ্গ আক্রমণ করেন, তবে পরাজিত হন। তারপর অশোক বাপ দাদার ইচ্ছা পূরণ এবং নিজ রাজ্যের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির কথা বিবেচনা করে কলিঙ্গ আক্রমণ করেন।
মানব সভ্যতার ইতিহাসের অন্যতম একটি রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ হয় কলিঙ্গে। যুদ্ধটি হয় দয়া নদীর তীরে। কলিঙ্গবাসীও বেশ প্রতিরোধ গড়ে তুলতে সক্ষম হয়েছিলো। কিন্তু কলিঙ্গকে আর তারা রক্ষা করতে পারেনি। কলিঙ্গ চলে যায় সম্রাট অশোকের দখলে। এ যুদ্ধে অশোক ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন তার পুরো সেনাবাহিনী নিয়ে। সেই সময় অশোকের সেনাবাহিনীতে ৪ লক্ষের বেশি সৈন্য ছিলো। যুদ্ধে এই চার লক্ষের মধ্যে এক লক্ষই মারা যায়। অন্য দিকে ঠিক প্রায় একই পরিমান কলিঙ্গ যোদ্ধাও মারা যায়।
পুরো কলিঙ্গ শুধু মৃত্যুপুরীতে পরিণত হয়েছিলো তা নয়, জীবিত মানুষের হাহাকার কলিঙ্গের সবাইকে স্তব্ধ করে দিয়েছিলো।
এই কলিঙ্গ যুদ্ধের ভয়াবহতা সম্রাট অশোক থেকে শুরু করে পুরো ভারতবর্ষের মধ্যে ব্যাপক পরিবর্তন সাধন করে। যে অশোক নিজের ভাইদের একের পর এক হত্যা করে মগধের সিংহাসন লাভ করেছিলেন- কলিঙ্গ যুদ্ধের ভয়াবহতা তার মনের বরফকে গলিয়ে দেয়। অশোক এক চরম মানসিক যন্ত্রণায় ভুগতে থাকেন। একসময় অশোক পাল্টে ফেলেন তার জীবনের গতি ধারা। গৌতম বুদ্ধের বাণী এ সময় অশোককে প্রবলভাবে আকৃষ্ট করে। অশোক দীক্ষিত হন বৌদ্ধ ধর্মে।
বৌদ্ধ ভিক্ষু গিরিদত্তের কাছে অশোক দীক্ষা গ্রহণ করলেও আধ্যাত্মিক শিক্ষক ছিলেন বৌদ্ধ ভিক্ষু উপগুপ্ত।
সম্রাট অশোক যে সময় বৌদ্ধ ধর্ম গ্রহণ করেন তা ছিলো গৌতম বুদ্ধের মৃত্যুর আনুমানিক ২৫০-৩০০ বছর পরের ঘটনা। এমন সময়ে সম্রাট অশোকের বৌদ্ধ ধর্ম গ্রহণ পুরো বৌদ্ধ ধর্মের মোড় ঘুরিয়ে দেয়।
সম্রাট অশোক দূত পাঠিয়ে বিভিন্ন রাজ্যের রাজাদের নিকট যুদ্ধ নয়, শান্তির বাণী পাঠাতে লাগলেন। অশোকের পৃষ্টপোষকতায় এশিয়ার বিভিন্ন রাজ্যে বৌদ্ধ ধর্ম প্রচারিত হয়। কলিঙ্গ যুদ্ধের পরবর্তী শিলালিপিগুলো ঘাঁটলে অশোককে একজন উদার সম্রাট হিসেবেই দেখতে পাই।
মূল কথা হচ্ছে বৌদ্ধ ধর্ম গ্রহণ করার পরেও সম্রাট অশোকের রাজত্বকালে পুরো সাম্রাজ্য জুড়ে ভিন্ন ধরনের শোষণ বিরাজিত ছিল। সম্রাট অশোক কলিঙ্গ জয়ের পর যখন অনুতপ্ত হলেন তখন কিন্তু তিনি কলিঙ্গবাসীকে তাদের রাজ্য ফিরিয়ে দেন নি। তাছাড়া যে মানুষগুলোর কান্না হাহাকার অশোকের মতো রক্তপিপাসুর মনের বরফ গলিয়েছিলো সেই মানুষগুলোকে অশোক বুদ্ধের বাণী ছাড়া আর কিছুই দেননি।
অশোক বৌদ্ধ ধর্ম গ্রহণ করে এই ধর্মকে ছড়িয়ে দিতে তিনি রাষ্ট্রীয় কোষাগারের যাচ্ছে তাই ব্যবহার করেছেন। অশোক ৮৪ হাজার চৈত্য নির্মাণ করেছিলেন। সেই চৈত্যগুলোর বর্তমানে যে ধ্বংসাবশেষগুলো পাওয়া যায় তা থেকেই বুঝা যায় কি পরিমাণ জৌলুস ছিল। তাছাড়া বৌদ্ধ ভিক্ষুদের জন্য তিনি রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে অর্থ ব্যয় করে খাবার দিতেন। তৎকালীন প্রায় ৬০ হাজার বৌদ্ধ ভিক্ষুকে অশোক নিয়মিত খাবার সরবরাহ করতেন। অর্থাৎ এই অর্থ সম্রাট অশোকের ব্যক্তিগত অর্থ ছিলো না। ছিলো সাধারণ জনগণের। এই অর্থ দিয়ে এই জনগণেরই উন্নতি সাধন না করে যা করলেন তা-ই তাকে ইতিহাসে বৌদ্ধ ধর্মের কনস্ট্যানটাইন বানিয়ে দিলো। অন্যদিকে মৌর্য সাম্রাজ্যের হতভাগা মানুষকেই বহন করতে হতো এসবের দায়ভার। অবশ্য শেষ জীবনে অশোক তার রাজকোষের সমস্ত সম্পদ সংঘগুলিকে দান করতেন। তিনি সমস্ত সম্পদ দান করে দেবেন এই ভয়ে তার মন্ত্রীরা তাকে রাজকোষে ঢুকতে বাধা দেন। তবে মৃত্যুর পূর্বে তিনি তার ব্যক্তিগত সম্পদ দান করেন।
পুরোপুরি বৌদ্ধ হওয়ার পরও সম্রাট অশোক হত্যার আশ্রয় নেন। পুণ্ড্রবর্ধনের ১৮০০০ আজীবিক সম্প্রদায়কে হত্যা করেন। এবং জৈনদের উৎখাত ও হত্যা করার নির্দেশ দেন। এই হত্যাকান্ডগুলো কিন্তু কোন রাজনৈতিক বা অর্থনৈতিক কারনে হয়নি। কেবলমাত্র ধর্মের কারনে হয়েছিল। কারণ ছিল পুণ্ড্রবর্ধনের এক অধিবাসী একটি চিত্র অঙ্কন করেন যেখানে গৌতম বুদ্ধ নিগণ্ঠ ণাতপুত্তকে পা ছুঁয়ে প্রণাম করছেন বলে দেখা যায়। এক বৌদ্ধধর্মাবলম্বীর অভিযোগ পেয়ে অশোক তাকে গ্রেপ্তার করার নির্দেশ দেন ও পরে পুণ্ড্রবর্ধনের সমস্ত আজীবিক সম্প্রদায়ের মানুষদের হত্যার নির্দেশ দেন ফলে ১৮০০০ আজীবিক সম্প্রদায়ের মানুষ নিহত হন। একই রকমভাবে পাটলিপুত্র নগরীর এক জৈন ধর্মাবলম্বী অনুরূপ একটি চিত্র অঙ্কন করলে অশোক তাকে সপরিবারে জীবন্ত অবস্থায় অগ্নিসংযোগ করে হত্যা করেন এবং ঘোষণা করেন কোন ব্যক্তি জৈন ধর্মাবলম্বীদের কর্তিত মস্তক এনে দিতে পারলে অশোক তাকে একটি করে রৌপ্য মুদ্রা পুরস্কার করবেন পাশাপাশি জৈনদের উৎখাত করারও নির্দেশ দেন।
এই ঘটনাগুলোর বর্ণনা অশোকাবদান গ্রন্থে (মথুরা অঞ্চলের বৌদ্ধ সন্ন্যাসীদের কর্তৃক রচিত অশোকের জীবন সম্বন্ধীয় গ্রন্থ) পাওয়া যাবে। যার ইংরেজী অনুবাদ The Legend of King Aśoka, P 232-234, John S. Strong তাছাড়া The Ajivikas, P 67-70 Beni Madhab Barua গ্রন্থতেও পাওয়া যাবে।

No comments:

Post a Comment

ধন্যবাদ

বৈশিষ্ট্যযুক্ত পোস্ট

যজুর্বেদ অধ্যায় ১২

  ॥ ও৩ম্ ॥ অথ দ্বাদশাऽধ্যায়ারম্ভঃ ও৩ম্ বিশ্বা॑নি দেব সবিতর্দুরি॒তানি॒ পরা॑ সুব । য়দ্ভ॒দ্রং তন্ন॒ऽআ সু॑ব ॥ য়জুঃ৩০.৩ ॥ তত্রাদৌ বিদ্বদ্গুণানাহ ...

Post Top Ad

ধন্যবাদ