কোন ভাষার উচ্চারণের ক্ষুদ্রতম এককই হলো ধ্বনি। ভাষাকে বা ভাষার বাক প্রবাহকে বিশেলষণ করলে কতগুলো ক্ষুদ্রতম একক বা মৌলিক ধ্বনি পাওয়া যায়। যেমন- অ, আ, ক্, খ্, ইত্যাদি।
প্রকারভেদ
ধ্বনি মূলত ২ প্রকার- স্বরধ্বনি ও ব্যঞ্জনধ্বনি।
১. স্বরধ্বনি
ধ্বনি উচ্চারণের সময় মানুষ ফুসফুস থেকে কিছু বাতাস ছেড়ে দেয়। এবং সেই বাতাস ফুসফুস কণ্ঠনালী দিয়ে এসে মুখ দিয়ে বের হওয়ার পথে বিভিন্ন জায়গায় ধাক্কা খেয়ে বা বাঁক খেয়ে একেক ধ্বনি উচ্চারণ করে। যে ধ্বনিগুলো উচ্চারণের সময় এই বাতাস কোথাও বাধা পায় না, বা ধাক্কা খায় না, তাদেরকে স্বরধ্বনি বলে। যেমন, অ, আ, ই, ঈ, উ, ঊ, ইত্যাদি। এগুলো উচ্চারণের সময় বাতাস ফুসফুস থেকে মুখের বাহিরে আসতে কোথাও ধাক্কা খায় না।
২. ব্যঞ্জনধ্বনি
যে সব ধ্বনি উচ্চারণের সময় ফুসফুস থেকে বাতাস মুখের বাহিরে আসার পথে কোথাও না কোথাও ধাক্কা খায়, বা বাধা পায়, তাকে ব্যঞ্জনধ্বনি বলে। যেমন- ক্, খ্, গ্, ঘ্, ইত্যাদি। এই ধ্বনিগুলো উচ্চারণের সময় বাতাস জিহবামূল বা কণ্ঠ্যে ধাক্কা খায়। তাই এগুলো ব্যঞ্জনধ্বনি।
ধ্বনি পরিবর্তন
ভাষা সর্বদা পরিবর্তনশীল। কোন ভাষার পরিবর্তন নিয়ম বা ব্যাকরণ দিয়ে বন্ধ করে দিলে সে ভাষা আস্তে আস্তে মরে যায়। যেমন মরে গেছে সংস্কৃত ভাষা। মানুষের মুখে মুখে উচ্চারণের সুবিধার্থে ভাষার শব্দ, মূলত শব্দের অন্তর্গত ধ্বনি নানাভাবে পরিবর্তিত হয়। তবে এই পরিবর্তনও কিছু নিয়ম মেনে হয়ে থাকে। ধ্বনির এই পরিবর্তনই মূলত ভাষার পরিবর্তন ঘটায়। ধ্বনির পরিবর্তনের নিয়ম বা প্রক্রিয়াগুলো নিচে দেয়া হলো-
[শব্দ ভাঙার কৌশল : ধ্বনি পরিবর্তন পড়ার আগে একটি কৌশল শিখে নেয়া জরুরি। শব্দের অন্তর্গত ধ্বনিগুলো আলাদা করার বা ভাঙার কৌশল। শব্দ ভাঙার সময় যেই ধ্বনি আগে উচ্চারিত হয়েছে, সেটিকে আগে লিখতে হবে। শব্দে স্বরধ্বনি ও ব্যঞ্জনধ্বনি পূর্ণাঙ্গ রূপে থাকার পাশাপাশি সংক্ষিপ্ত রূপে কার ও ফলা আকারেও থাকে। শব্দ ভাঙার সময় এগুলোকেও বিবেচনা করতে হবে। এছাড়া একটি স্বরধ্বনির কোন সংক্ষিপ্ত রূপ বা ‘কার’ নেই- ‘অ’-এর। এটি বিভিন্ন ব্যঞ্জনধ্বনির সঙ্গে মিলিত রূপে উচ্চারিত হয়, কিন্তু তার কোন প্রতীক বা ‘কার’ আমরা লেখি না। শব্দ ভাঙার সময় এই উহ্য ‘অ’-কেও লিখতে হবে। যেমন- ‘এখানে বসতি গাড়ে এক দঙ্গল পশু’ বাক্যটির সবগুলো শব্দ ভাঙলে হবে-
এখানে = এ+খ+আ+ন+এ
বসতি = ব+অ+স+অ+ত+ই
গাড়ে = গ+আ+ড়+এ
এক = এ+ক
দঙ্গল = দ+ঙ+গ+অ+ল
পশু = প+শ+উ
উল্লেখ্য, যুক্তব্যঞ্জনের ভেতরে কোন উহ্য ‘অ’ থাকে না।]
এখানে = এ+খ+আ+ন+এ
বসতি = ব+অ+স+অ+ত+ই
গাড়ে = গ+আ+ড়+এ
এক = এ+ক
দঙ্গল = দ+ঙ+গ+অ+ল
পশু = প+শ+উ
উল্লেখ্য, যুক্তব্যঞ্জনের ভেতরে কোন উহ্য ‘অ’ থাকে না।]
১. আদি স্বরাগম
শব্দের আদিতে বা শুরচতে স্বরধ্বনি এলে তাকে বলা হয় আদি স্বরাগম। যেমন, ‘স্কুল’ শব্দটি উচ্চারণের সুবিধার জন্য শুরচতে ‘ই’ স্বরধ্বনি যুক্ত হয়ে ‘ইস্কুল’ হয়ে গেছে। এটি আদি স্বরাগম। এরকম- স্টেশন˃ ইস্টিশন, স্ট্যাবল˃ আস্তাবল, স্পর্ধা˃ আস্পর্ধা
২. মধ্য স্বরাগম, বিপ্রকর্ষ বা স্বরভক্তি
শব্দের মাঝখানে স্বরধ্বনি আসলে তাকে বলে মধ্য স্বরাগম। যেমন, ‘রত্ন’ (র+অ+ত+ন+অ) শব্দের ‘ত’ ও ‘ন’-র মাঝখানে একটি অ যুক্ত হয়ে হয়েছে ‘রতন’। এটি মধ্য স্বরাগম। এরকম- ধর্ম˃ ধরম, স্বপ্ন˃ স্বপন, হর্ষ˃ হরষ, প্রীতি˃ পিরীতি, ক্লিপ˃ কিলিপ, ফিল্ম˃ ফিলিম, মুক্তা˃ মুকুতা, তুর্ক˃ তুরুক, ভ্রু˃ ভুরু, গ্রাম˃ গেরাম, প্রেক˃ পেরেক, স্রেফ˃ সেরেফ, শ্লোক˃ শোলোক, মুরগ˃ মুরোগ˃ মোরোগ,
৩. অন্ত্যস্বরাগম
শব্দের শেষে একটা অতিরিক্ত স্বরধ্বনি আসলে তাকে বলে অন্ত্যস্বরাগম। যেমন, ‘দিশ্’-র সঙ্গে অতিরিক্ত ‘আ’ স্বরধ্বনি যুক্ত হয়ে হয়েছে ‘দিশা’। এরকম- পোক্ত্˃ পোক্ত, বেঞ্চ˃ বেঞ্চি, সত্য˃ সত্যি
৪. অপিনিহিতি
পরের ‘ই’ বা ‘উ’ স্বরধ্বনি আগে উচ্চারিত হলে কিংবা যুক্ত ব্যঞ্জনধ্বনির আগে ‘ই’ বা ‘উ’ স্বরধ্বনি উচ্চারিত হলে তাকে অপিনিহিতি বলে। যেমন, ‘আজি (আ+জ+ই) শব্দের ‘ই’ আগে উচ্চারিত হয়ে হয়েছে ‘আইজ’ (আ+ই+জ)। এরকম- সাধু˃ সাউধ, রাখিয়া˃ রাইখ্যা, বাক্য˃ বাইক্য, সত্য˃ সইত্য, চারি˃ চাইর, মারি˃ মাইর
৫. অসমীকরণ
দুটো একই ধ্বনির পুনরাবৃত্তি দূর করার জন্য মাঝখানে একটি অতিরিক্ত স্বরধ্বনি যুক্ত হলে তাকে বলে অসমীকরণ। যেমন, ধপ+ধপ˃ (মাঝখানে একটি অতিরিক্ত আ যোগ হয়ে) ধপাধপ। এরকম- টপ+টপ˃ টপাটপ
৬. স্বরসঙ্গতি
দুটি স্বরধ্বনির মধ্যে সঙ্গতি রক্ষার্থে একটির প্রভাবে আরেকটি পরিবর্তিত হলে তাকে স্বরসঙ্গতি বলে। যেমন, ‘দেশি’ (দ+এ+শ+ই)˃ (‘ই’-র প্রভাবে ‘এ’ পরিবর্তিত হয়ে ‘ই’ হয়ে) ‘দিশি’। স্বরসঙ্গতি ৫ প্রকার-
ক. প্রগত :আগের স্বরধ্বনি অনুযায়ী পরের স্বরধ্বনি পরিবর্তিত হলে, তাকে প্রগত স্বরসঙ্গতি বলে। যেমন, মুলা˃ মুলো, শিকা˃ শিকে, তুলা˃ তুলো
খ.পরাগত : পরের স্বরধ্বনি অনুযায়ী আগের স্বরধ্বনি পরিবর্তিত হলে, তাকে পরাগত স্বরসঙ্গতি বলে। যেমন, আখো˃ আখুয়া˃ এখো, দেশি˃ দিশি
গ. মধ্যগত : অন্যান্য স্বরধ্বনির প্রভাবে মধ্যবর্তী স্বরধ্বনি পরিবর্তিত হলে, তাকে মধ্যগত স্বরসঙ্গতি বলে। যেমন, বিলাতি˃ বিলিতি
ঘ. অন্যোন্য : আগের ও পরের স্বরধ্বনি দুইয়ের প্রভাবে যদি দুইটি-ই পরিবর্তিত হয়ে যায়, তাকে অন্যোন্য স্বরসঙ্গতি বলে। যেমন, মোজা˃ মুজো
ঙ. চলিত বাংলায় স্বরসঙ্গতি : গিলা˃ গেলা, মিলামিশা˃ মেলামেশা। মিঠা˃ মিঠে, ইচ্ছা˃ ইচ্ছে। মুড়া˃ মুড়ো, চুলা˃ চুলো। উড়ুনি˃ উড়নি, এখুনি˃ এখনি।
ক. প্রগত :আগের স্বরধ্বনি অনুযায়ী পরের স্বরধ্বনি পরিবর্তিত হলে, তাকে প্রগত স্বরসঙ্গতি বলে। যেমন, মুলা˃ মুলো, শিকা˃ শিকে, তুলা˃ তুলো
খ.পরাগত : পরের স্বরধ্বনি অনুযায়ী আগের স্বরধ্বনি পরিবর্তিত হলে, তাকে পরাগত স্বরসঙ্গতি বলে। যেমন, আখো˃ আখুয়া˃ এখো, দেশি˃ দিশি
গ. মধ্যগত : অন্যান্য স্বরধ্বনির প্রভাবে মধ্যবর্তী স্বরধ্বনি পরিবর্তিত হলে, তাকে মধ্যগত স্বরসঙ্গতি বলে। যেমন, বিলাতি˃ বিলিতি
ঘ. অন্যোন্য : আগের ও পরের স্বরধ্বনি দুইয়ের প্রভাবে যদি দুইটি-ই পরিবর্তিত হয়ে যায়, তাকে অন্যোন্য স্বরসঙ্গতি বলে। যেমন, মোজা˃ মুজো
ঙ. চলিত বাংলায় স্বরসঙ্গতি : গিলা˃ গেলা, মিলামিশা˃ মেলামেশা। মিঠা˃ মিঠে, ইচ্ছা˃ ইচ্ছে। মুড়া˃ মুড়ো, চুলা˃ চুলো। উড়ুনি˃ উড়নি, এখুনি˃ এখনি।
৭. সম্প্রকর্ষ বা স্বরলোপ
শব্দের মধ্যবর্তী কোন স্বরধ্বনি লোপ পেলে তাকে সম্প্রকর্ষ বা স্বরলোপ বলে। যেমন, ‘বসতি’ (ব+অ+স+অ+ত+ই)-র মাঝের ‘অ’ স্বরধ্বনি লোপ পেয়ে হয়েছে ‘বস্তি’ (ব+অ+স+ত+ই)। স্বরলোপ ৩ প্রকার-
ক. আদিস্বরলোপ : শব্দের শুরুর স্বরধ্বনি লোপ পেলে তাকে আদি স্বরাগম বলে। যেমন, অলাবু˃ লাবু˃ লাউ, এড়ন্ড˃ (‘এ’ লোপ পেয়ে) রেড়ী, উদ্ধার˃ উধার˃ ধার।
খ. মধ্যস্বরলোপ : শব্দের মধ্যবর্তী কোন স্বরধ্বনি লোপ পেলে তাকে মধ্যস্বরাগম বলে। যেমন, অগুরু˃ অগ্রু, সুবর্ণ˃ স্বর্ণ
গ. অন্ত্যস্বরালোপ : শব্দের শেষের স্বরধ্বনি লোপ পেলে তাকে অন্ত্যস্বরাগম বলে। যেমন, আশা˃ আশ, আজি˃ আজ, চারি˃ চার, সন্ধ্যা˃ সঞ্ঝ্যা˃ সাঁঝ
(স্বরলোপ স্বরাগম-এর বিপরীত প্রক্রিয়া।)
ক. আদিস্বরলোপ : শব্দের শুরুর স্বরধ্বনি লোপ পেলে তাকে আদি স্বরাগম বলে। যেমন, অলাবু˃ লাবু˃ লাউ, এড়ন্ড˃ (‘এ’ লোপ পেয়ে) রেড়ী, উদ্ধার˃ উধার˃ ধার।
খ. মধ্যস্বরলোপ : শব্দের মধ্যবর্তী কোন স্বরধ্বনি লোপ পেলে তাকে মধ্যস্বরাগম বলে। যেমন, অগুরু˃ অগ্রু, সুবর্ণ˃ স্বর্ণ
গ. অন্ত্যস্বরালোপ : শব্দের শেষের স্বরধ্বনি লোপ পেলে তাকে অন্ত্যস্বরাগম বলে। যেমন, আশা˃ আশ, আজি˃ আজ, চারি˃ চার, সন্ধ্যা˃ সঞ্ঝ্যা˃ সাঁঝ
(স্বরলোপ স্বরাগম-এর বিপরীত প্রক্রিয়া।)
৮. ধ্বনি বিপর্যয়
শব্দের মধ্যবর্তী দুটো ব্যঞ্জনধ্বনি অদলবদল হলে তাকে ধ্বনি বিপর্যয় বলে। যেমন, বাক্স˃ বাস্ক, রিক্সা˃ রিস্কা, পিশাচ˃ পিচাশ, লাফ˃ ফাল
৯. সমীভবন
(স্বরসঙ্গতির মতো, কিন্তু ব্যঞ্জন ধ্বনির পরিবর্তন হয়) দুটি ব্যঞ্জনধ্বনির একে অপরের প্রভাবে পরিবর্তিত হয়ে সমতা লাভ করলে তাকে সমীভবন বলে। যেমন, ‘জন্ম’ (জ+অ+ন+ম+অ)-এর ‘ন’, ‘ম’-র প্রভাবে পরিবর্তিত হয়ে হয়েছে ‘জম্ম’। সমীভবন মূলত ৩ প্রকার-
ক. প্রগত সমীভবন : আগের ব্যঞ্জনধ্বনির প্রভাবে পরবর্তী ব্যঞ্জনধ্বনির পরিবর্তন। যেমন, চক্র˃ চক্ক, পক্ব˃ পক্ক, পদ্ম˃ পদ্দ, লগ্ন˃ লগ্গ
খ. পরাগত সমীভবন : পরের ব্যঞ্জনধ্বনির প্রভাবে আগের ব্যঞ্জনধ্বনির পরিবর্তন। যেমন, তৎ+জন্য˃ তজ্জন্য, তৎ+হিত˃ তদ্ধিত, উৎ+মুখ˃ উন্মুখ
গ. অন্যোন্য সমীভবন : পাশাপাশি দুটো ব্যঞ্জনধ্বনি দুইয়ের প্রভাবে দু’টিই পরিবর্তিত হলে তাকে অন্যোন্য সমীভবন বলে। যেমন, সত্য (সংস্কৃত)˃ সচ্চ (প্রাকৃত), বিদ্যা (সংস্কৃত)˃ বিজ্জা (প্রাকৃত)
ক. প্রগত সমীভবন : আগের ব্যঞ্জনধ্বনির প্রভাবে পরবর্তী ব্যঞ্জনধ্বনির পরিবর্তন। যেমন, চক্র˃ চক্ক, পক্ব˃ পক্ক, পদ্ম˃ পদ্দ, লগ্ন˃ লগ্গ
খ. পরাগত সমীভবন : পরের ব্যঞ্জনধ্বনির প্রভাবে আগের ব্যঞ্জনধ্বনির পরিবর্তন। যেমন, তৎ+জন্য˃ তজ্জন্য, তৎ+হিত˃ তদ্ধিত, উৎ+মুখ˃ উন্মুখ
গ. অন্যোন্য সমীভবন : পাশাপাশি দুটো ব্যঞ্জনধ্বনি দুইয়ের প্রভাবে দু’টিই পরিবর্তিত হলে তাকে অন্যোন্য সমীভবন বলে। যেমন, সত্য (সংস্কৃত)˃ সচ্চ (প্রাকৃত), বিদ্যা (সংস্কৃত)˃ বিজ্জা (প্রাকৃত)
১০. বিষমীভবন
পাশাপাশি একই ব্যঞ্জনধ্বনি দু’বার থাকলে তাদের একটি পরিবর্তিত হলে তাকে বিষমীভবন বলে। যেমন, শরীর˃ শরীল, লাল˃ নাল
১১. দ্বিত্ব ব্যঞ্জন বা ব্যঞ্জনদ্বিত্বতা
শব্দের কোন ব্যঞ্জন দ্বিত্ব হলে, অর্থাৎ দুইবার উচ্চারিত হলে তাকে দ্বিত্ব ব্যঞ্জন বা ব্যঞ্জনদ্বিত্বতা বলে। মূলত জোর দেয়ার জন্য দ্বিত্ব ব্যঞ্জন হয়। যেমন, পাকা˃ পাক্কা, সকাল˃ সক্কাল
১২. ব্যঞ্জন বিকৃতি
কোন ব্যঞ্জনধ্বনি পরিবর্তিত হয়ে অন্য কোন ব্যঞ্জনধ্বনি হলে তাকে ব্যঞ্জন বিকৃতি বলে। যেমন, কবাট˃ কপাট, ধোবা˃ ধোপা, ধাইমা˃ দাইমা
১৩. ব্যঞ্জনচ্যুতি
পাশাপাশি দুটি একই উচ্চারণের ব্যঞ্জন থাকলে তার একটি লোপ পেলে তাকে বলে ব্যঞ্জনচ্যুতি। যেমন, বউদিদি˃ বউদি, বড় দাদা˃ বড়দা,
১৪. অন্তর্হতি
কোন ব্যঞ্জনধ্বনি লোপ পেলে তাকে বলে অন্তর্হতি। যেমন, ফাল্গুন˃ ফাগুন (‘ল’ লোপ), ফলাহার˃ ফলার, আলাহিদা˃ আলাদা
১৫. অভিশ্রুতি
যদি অন্য কোন প্রক্রিয়ায় কোন স্বরধ্বনি পরিবর্তিত হয়, এবং পরিবর্তিত স্বরধ্বনি তার আগের স্বরধ্বনির সঙ্গে মিলে যায়, এবং সেই মিলিত স্বরধ্বনির প্রভাবে তার পরের স্বরধ্বনিও পরিবর্তিত হয়, তবে তাকে অভিশ্রুতি বলে। যেমন, ‘করিয়া’ (ক+অ+র+ই+য়+আ) থেকে অপিনিহিতির মাধ্যমে (র+ই-এর আগে আরেকটা অতিরিক্ত ‘ই’ যোগ হয়ে) ‘কইরিয়া’ হলো। অর্থাৎ অন্য কোন প্রক্রিয়ায় ‘ই’ স্বরধ্বনিটির পরিবর্তন হলো। আবার ‘কইরিয়া’-এর র+ই-এর ‘ই’ তার আগের ‘ই’-র সঙ্গে মিলে গেলে হলো ‘কইরয়া’ বা ‘কইরা’। এবার ‘কইরা’-র ‘ই’ ও ‘আ’ পরিবর্তিত হয়ে হলো ‘করে’। এটিই অভিশ্রুতি। এরকম, শুনিয়া˃ শুইনিয়া˃ শুইনা˃ শুনে, বলিয়া˃ বইলিয়া˃ বইলা˃ বলে, হাটুয়া˃ হাউটুয়া˃ হাউটা˃ হেটো, মাছুয়া˃ মাউছুয়া˃ মাউছা˃ মেছো
১৬. র-কার লোপ
(আধুনিক চলিত বাংলায় প্রচলিত) শব্দের ‘র’ ধ্বনি বা ‘র-কার’ লোপ পেয়ে পরবর্তী ব্যঞ্জন দ্বিত্ব হলে তাকে র-কার লোপ বলে। যেমন, তর্ক˃ তক্ক, করতে˃ কত্তে, মারল˃ মালল, করলাম˃ কল্লাম
১৭. হ-কার লোপ
(আধুনিক চলিত বাংলায় প্রচলিত) অনেক সময় দুইটি স্বরধ্বনির মধ্যবর্তী ‘হ’ ধ্বনি বা ‘হ-কার’ লোপ পায়। একে হ-কার লোপ বলে। যেমন, ‘গাহিল’ (গ+আ+হ+ই+ল+অ)-এর ‘আ’ ও ‘ই’ স্বরধ্বনি দুটির মধ্যবর্তী ‘হ’ লোপ পেয়ে হয়েছে ‘গাইল’। এরকম, পুরোহিত˃ পুরুত, চাহে˃ চায়, সাধু˃ সাহু˃ সাউ, আল্লাহ˃ আল্লা, শাহ˃ শা
১৮. অ-শ্রুতি ও ব-শ্রুতি
পাশাপাশি দুটো স্বরধ্বনি উচ্চারিত হলে, এবং সেই দুটি স্বরধ্বনি মিলে কোন যৌগিক স্বর তৈরি না করলে উচ্চারণের সুবিধার জন্য মাঝে একটি অন্তঃস্থ ‘য়’ বা অন্তঃস্ত ‘ব’ উচ্চারিত হয়। একে অ-শ্রুতি ও ব-শ্রুতি বলে। যেমন, ‘যা+আ’, এখানে পরপর দুটি ‘আ’ স্বরধ্বনি আছে। দুটি যুক্ত হয়ে কোন যৌগিক স্বর তৈরি করছে না। তাই এখানে মাঝখানে একটি অন্তঃস্থ ‘য়’ উচ্চারিত হয়ে হবে ‘যাওয়া’। এরকম, নাওয়া, খাওয়া, দেওয়া,
বর্ণ
বিভিন্ন ধ্বনিকে লেখার সময় বা নির্দেশ করার সময় যে চিহ্ন ব্যবহার করা হয়, তাকে বর্ণ বলে।
প্রকারভেদ
বর্ণ দুইপ্রকার- স্বরবর্ণ ও ব্যঞ্জনবর্ণ।
১. স্বরবর্ণ
স্বরধ্বনি নির্দেশ করার জন্য ব্যবহৃত বর্ণকে স্বরবর্ণ বলে।
২. ব্যঞ্জনবর্ণ
ব্যঞ্জনধ্বনি নির্দেশ করার জন্য ব্যবহৃত বর্ণকে ব্যঞ্জনবর্ণ বলে।
হসন্ত বা হলন্ত ধ্বনি : আমরা যখন ব্যঞ্জনধ্বনি উচ্চারণ করি, তখন তার শেষে একটি স্বরধ্বনি ‘অ’-ও উচ্চারণ করি। যেমন, ‘ক্’ কে উচ্চারণ করি (ক্ + অ =) ‘ক’। উচ্চারণের সুবিধার জন্য আমরা এই কাজ করি। কিন্তু স্বরধ্বনি ছাড়া ‘ক্’ উচ্চারণ করলে সেটা প্রকাশ করার জন্য ‘ক’-এর নিচে যে চিহ্ন (& )দেয়া হয়, তাকে বলে হস্ / হল চিহ্ন। আর যে ধ্বনির পরে এই চিহ্ন থাকে, তাকে বলে হসন্ত বা হলন্ত ধ্বনি। কোন বর্ণের নিচে এই চিহ্ন দেয়া হলে তাকে বলে হসন্ত বা হলন্ত বর্ণ।
বাংলা বর্ণমালা
বাংলা বর্ণমালায় বর্ণ আছে মোট ৫০টি। নিচে বর্ণমালা অন্যান্য তথ্য সহকারে দেয়া হলো-
পূর্ণমাত্রা | অর্ধমাত্রা | মাত্রাহীন | ||||||||||||||
স্বরবর্ণ | অ | আ | ই | ঈ | উ | ঊ | ঋ | এ | ঐ* | ও | ঔ* | ৬ | ১ | ৪ | ||
ব্যঞ্জনবর্ণ | ক | খ | গ | ঘ | ঙ | ২ | ২ | ১ | ||||||||
চ | ছ | জ | ঝ | ঞ | ৪ | – | ১ | |||||||||
ট | ঠ | ড | ঢ | ণ | ৪ | ১ | – | |||||||||
ত | থ | দ | ধ | ন | ৩ | ২ | – | |||||||||
প | ফ | ব | ভ | ম | ৪ | ১ | – | |||||||||
য | র | ল | ৩ | – | – | |||||||||||
শ | ষ | স | হ | ৩ | ১ | – | ||||||||||
ড় | ঢ় | য় | ৎ | ৩ | – | ১ | ||||||||||
ংঃ | ঁ | – | – | ৩ | ||||||||||||
মোট স্বরবর্ণ | ১১ | মোট ব্যঞ্জনবর্ণ | ৩৯ | মোট বর্ণ | ৫০ | পূর্ণ, অর্ধ ও মাত্রাহীন বর্ণ | ৩২ | ৮ | ১০ | |||||||
* এই দুটি স্বরধ্বনিকে দ্বিস্বর বা যুগ্ম স্বরধ্বনি বলে। কারণ, এই দুটি মূলত ২টি স্বরধ্বনির মিশ্রণ। যেমন- অ+ই = ঐ, অ+উ = ঔ বা ও+উ = ঔ। অর্থাৎ, বাংলা ভাষায় মৌলিক স্বরধ্বনি মূলত ৯টি।
বর্ণের সংক্ষিপ্ত রূপ; কার ও ফলা
প্রতিটি স্বরবর্ণ ও কিছু কিছু ব্যঞ্জনবর্ণ দুটো রূপে ব্যবহৃত হয়। প্রথমত, স্বাধীনভাবে শব্দের মাঝে ব্যবহৃত হয়। আবার অনেক সময় অন্য কোন বর্ণে যুক্ত হয়ে সংক্ষিপ্ত রূপে বা আশ্রিত রূপেও ব্যবহৃত হয়। যেমন, ‘আ’ বর্ণটি ‘আমার’ শব্দের স্বাধীনভাবে ব্যবহৃত হয়েছে, আবার ‘ম’-র সঙ্গে আশ্রিত হয়ে সংক্ষিপ্ত রূপেও (া ) ব্যবহৃত হয়েছে।
স্বরবর্ণের এই আশ্রিত সংক্ষিপ্ত রূপকে বলে কার, আর ব্যঞ্জনবর্ণের আশ্রিত সংক্ষিপ্ত রূপকে বলে ফলা। উপরে ‘আমার’ শব্দে ‘ম’-র সঙ্গে যুক্ত ‘আ’-র সংক্ষিপ্ত রূপটিকে (া ) বলা হয় আ-কার। এমনিভাবে ই-কার ( w ), ঈ-কার ( x ), উ-কার ( y ), ঊ-কার ( ~ ), ঋ-কার (ৃ ), এ-কার ( † ), ঐ-কার ( ˆ ), ও-কার ( ো), ঔ-কার ৌ) কার। তবে ‘অ’ এর কোন কার নেই।
আবার আম্র শব্দে ‘ম’-র সঙ্গে ‘র’ সংক্ষিপ্ত রূপে বা ফলা যুক্ত হয়েছে। অর্থাৎ সংক্ষিপ্ত রূপটি (ª ) র-ফলা। এরকম ম-ফলা ( ¨ ), ল-ফলা ( ), ব-ফলা ( ^ ), ইত্যাদি।
উচ্চারণবিধি
স্বরধ্বনির উচ্চারণ
স্বরধ্বনির উচ্চারণের সময় বাতাস ফুসফুস থেকে বের হয়ে কোথাও বাধা পায় না। মূলত জিহবার অবস্থান ও ঠোঁটের বিভিন্ন অবস্থার পরিবর্তনের কারণে বিভিন্ন স্বরধ্বনি উচ্চারিত হয়। নিচে স্বরধ্বনির উচ্চারণ একটি ছকের মাধ্যমে দেখানো হলো-
জিহবার অবস্থান
| জিহবা সামনে আগাবে
ঠোঁটের প্রসারণ ঘটবে
| জিহবা শায়িত অবস্থায়
ঠোঁট স্বাভাবিক/ বিবৃত
| জিহবা পিছিয়ে আসবে
ঠোঁট গোলাকৃত হবে
|
উচ্চে | ই ঈ
(উচ্চসম্মুখ স্বরধ্বনি)
| উ ঊ
(উচ্চ পশ্চাৎ স্বরধ্বনি)
| |
উচ্চমধ্যে | এ
(মধ্যাবস্থিত সম্মুখ স্বরধ্বনি)
| ও
(মধ্যাবস্থিত পশ্চাৎ স্বরধ্বনি)
| |
নিম্নমধ্যে | অ্যা
(নিম্নাবস্থিত সম্মুখ স্বরধ্বনি)
| অ
(নিম্নাবস্থিত পশ্চাৎ স্বরধ্বনি)
| |
নিম্নে | আ
(কেন্দ্রীয় নিমণাবস্থিত স্বরধ্বনি, বিবৃত ধ্বনি)
|
যৌগিক স্বরধ্বনি
পাশাপাশি দুটি স্বরধ্বনি থাকলে তারা উচ্চারণের সময় সাধারণত একটি স্বরধ্বনি রূপে উচ্চারিত হয়ে থাকে। পাশাপাশি দুটি স্বরধ্বনি একটি স্বরধ্বনি রূপে উচ্চারিত হলে মিলিত স্বরধ্বনিটিকে বলা হয় যৌগিক স্বর, সন্ধিস্বর, সান্ধ্যক্ষর বা দ্বি-স্বর।
বাংলা ভাষায় যৌগিক স্বর মোট ২৫টি। তবে যৌগিক স্বরবর্ণ মাত্র ২টি- ঐ, ঔ। অন্য যৌগিক স্বরধ্বনিগুলোর নিজস্ব প্রতীক বা বর্ণ নেই।
ব্যঞ্জনধ্বনির উচ্চারণ
উচ্চারণ অনুযায়ী ব্যঞ্জনধ্বনিগুলো অনেকগুলো ভাগে ভাগ করা হয়েছে।
স্পর্শ ব্যঞ্জন : ক থেকে ম পর্যন্ত প্রথম ২৫ টি ব্যঞ্জনধ্বনি উচ্চারিত হওয়ার সময় ফুসফুস থেকে বের হওয়া বাতাস মুখগহবরের কোন না কোন জায়গা স্পর্শ করে যায়। এজন্য এই ২৫টি বর্ণকে বলা হয় স্পর্শধ্বনি বা স্পৃষ্টধ্বনি।
অল্পপ্রাণ ও মহাপ্রাণ ধ্বনি : যে ধ্বনি উচ্চারণের সময় নিঃশ্বাস জোরে সংযোজিত হয় বা ফুসফুস থেকে বের হওয়া বাতাসের জোর বেশি থাকে, তাকে মহাপ্রাণ ধ্বনি বলে। আর যে ধ্বনিগুলোতে বাতাসের জোর কম থাকে, নিঃশ্বাস জোরে সংযোজিত হয় না, তাদেরকে মহাপ্রাণ ধ্বনি বলে। ক, গ, চ, জ- এগুলো অল্পপ্রাণ ধ্বনি। আর খ, ঘ, ছ, ঝ- এগুলো মহাপ্রাণ ধ্বনি।
ঘোষ ও অঘোষ ধ্বনি : যে সকল ধ্বনি উচ্চারণের সময় স্বরতন্ত্রী অনুরণিত হয়, অর্থাৎ গলার মাঝখানের উঁচু অংশে হাত দিলে কম্পন অনুভূত হয়, তাদেরকে ঘোষ ধ্বনি বলে। আর যে সব ধ্বনি উচ্চারণের সময় স্বরতন্ত্রী অনুরণিত হয় না, তাদেরকে অঘোষ ধ্বনি বলে। যেমন, ক, খ, চ, ছ- এগুলো অঘোষ ধ্বনি। আর গ, ঘ, জ, ঝ- এগুলো ঘোষ ধ্বনি।
উষ্মধ্বনি বা শিশধ্বনি : শ, ষ, স, হ- এই চারটি ধ্বনি উচ্চারণের শেষে যতক্ষণ ইচ্ছা শ্বাস ধরে রাখা যায়, বা শিশ্ দেয়ার মতো করে উচ্চারণ করা যায়। এজন্য এই চারটি ধ্বনিকে বলা হয় উষ্মধ্বনি বা শিশধ্বনি। এগুলোর মধ্যে শ, ষ, স- অঘোষ অল্পপ্রাণ, হ- ঘোষ মহাপ্রাণ।ঃ
ঃ (বিসর্গ) : অঘোষ ‘হ’-র উচ্চারণে প্রাপ্ত ধ্বনিই হলো ‘ঃ’। বাংলায় একমাত্র বিস্ময়সূচক অব্যয়ের শেষে বিসর্গ ধ্বনি পাওয়া যায়। পদের মধ্যে ‘ঃ’ বর্ণটি থাকলে পরবর্তী ব্যঞ্জনের উচ্চারণ দুইবার হয়, কিন্তু ‘ঃ’ ধ্বনির উচ্চারণ হয় না।
কম্পনজাত ধ্বনি- র : ‘র’ ধ্বনি উচ্চারণের সময় জিহবার অগ্রভাগ কম্পিত হয়, বা কাঁপে এবং দন্তমূলকে কয়েকবার আঘাত করে ‘র’ উচ্চারিত হয়। এজন্য ‘র’-কে বলা হয় কম্পনজাত ধ্বনি।
তাড়নজাত ধ্বনি- ড় ও ঢ় : ‘ড়’ ও ‘ঢ়’ উচ্চারণের সময় জিহবার অগ্রভাগের নিচের দিক বা তলদেশ ওপরের দাঁতের মাথায় বা দন্তমূলে দ্রচত আঘাত করে বা তাড়না করে উচ্চারিত হয়। এজন্য এদেরকে তাড়নজাত ধ্বনি বলে। মূলত ‘ড’ ও ‘র’ দ্রচত উচ্চারণ করলে যে মিলিত রূপ পাওয়া যায় তাই ‘ড়’ এর উচ্চারণ। একইভাবে ‘ঢ়’, ‘ঢ’ ও ‘র’-এর মিলিত উচ্চারণ।
পার্শ্বিক ধ্বনি- ল : ‘ল’ উচ্চারণের সময় জিহবার অগ্রভাগ উপরের দাঁতের মাথায় বা দন্তমূলে ঠেকিয়ে জিহবার দু’পাশ দিয়ে বাতাস বের করে দেয়া হয়। দু’পাশ দিয়ে বাতাস বের হয় বলে একে পার্শ্বিক ধ্বনি বলে।
আনুনাসিক বা নাসিক্য ধ্বনি : ঙ, ঞ, ণ, ন, ম- এদের উচ্চারণের সময় এবং ং, ঁ কোন ধ্বনির সঙ্গে থাকলে তাদের উচ্চারণের সময় মুখ দিয়ে বাতাস বের হওয়ার সময় কিছু বাতাস নাক দিয়ে বা নাসারন্ধ্র দিয়েও বের হয়। উচ্চারণ করতে নাক বা নাসিক্যের প্রয়োজন হয় বলে এগুলোকে বলা হয় আনুনাসিক বা নাসিক্য ধ্বনি।
পরাশ্রয়ী বর্ণ : ং,ঃ,ঁ – এই ৩টি বর্ণ যে ধ্বনি নির্দেশ করে তারা কখনো স্বাধীন ধ্বনি হিসেবে শব্দে ব্যবহৃত হয় না। এই ধ্বনিগুলো অন্য ধ্বনি উচ্চারণের সময় সেই ধ্বনির সঙ্গে মিলিত হয়ে উচ্চারিত হয়। নির্দেশিত ধ্বনি নিজে নিজে উচ্চারিত না হয়ে পরের উপর আশ্রয় করে উচ্চারিত হয় বলে এই বর্ণগুলোকে পরাশ্রয়ী বর্ণ বলে।
নিচে স্পর্শধ্বনির (ও অন্যান্য কিছু গুরুত্বপূর্ণ ধ্বনি) একটি পূর্ণাঙ্গ বর্ণনা ছক আকারে দেয়া হলো-
স্পর্শধ্বনি/ বর্গীয় ধ্বনি (বর্গগুলো এই পর্যন্ত সীমিত) | ||||||||||
নাম | উচ্চারণ প্রণালী | অঘোষ | ঘোষ | নাসিক্য | অঘোষ | অঘোষ | ঘোষ | |||
অল্পপ্রাণ | মহাপ্রাণ | অল্পপ্রাণ | মহাপ্রাণ | অল্পপ্রাণ | মহাপ্রাণ | মহাপ্রাণ | ||||
ক-বর্গীয় ধ্বনি
(কণ্ঠ্য ধ্বনি)
| জিহবার গোড়া নরম তালুর পেছনের অংশ স্পর্শ করে | ক | খ | গ | ঘ | ঙ | ||||
চ-বর্গীয় ধ্বনি
(তালব্য ধ্বনি)
| জিহবার অগ্রভাগ চ্যাপ্টা ভাবে তালুর সামনের দিকে ঘষা খায় | চ | ছ | জ | ঝ | ঞ | য য় | শ | ||
ট-বর্গীয় ধ্বনি
(মূর্ধন্য ধ্বনি)
| জিহবার অগ্রভাগ কিছুটা উল্টিয়ে ওপরের মাড়ির গোড়ার শক্ত অংশ স্পর্শ করে | ট | ঠ | ড | ঢ | ণ | র
ড়
ঢ়
| ষ | ||
ত-বর্গীয় ধ্বনি
(দন্ত্য ধ্বনি)
| জিহবা সামনের দিকে এগিয়ে ওপরের দাঁতের পাটির গোড়া স্পর্শ করে | ত | থ | দ | ধ | ন | ল | স | ||
প-বর্গীয় ধ্বনি
(ওষ্ঠ্য ধ্বনি)
| দুই ঠোঁট বা ওষ্ঠ ও অধর জোড়া লেগে উচ্চারিত হয় | প | ফ | ব | ভ | ম | ||||
ঃ | হ |
- উল্লেখ্য, কণ্ঠ্য ধ্বনিকে জিহবামূলীয় এবং মূর্ধণ্য ধ্বনিকে দন্তমূল প্রতিবেষ্টিত ধ্বনিও বলে।
অন্তঃস্থ ধ্বনি : য, র, ল, ব- এদেরকে অন্তঃস্থ ধ্বনি বলা হয়। তবে অন্তঃস্থ ‘ব’ এখন আর বর্ণমালায় নেই, এবং এখন আর এটি শব্দে স্বাধীনভাবে ব্যবহৃত হয় না। তবে ব্যাকরণের বিভিন্ন ক্ষেত্রে, বিশেষত সন্ধিতে এর প্রয়োগ দেখা যায়।
কতগুলো গুরুত্বপূর্ণ যুক্তবর্ণ
ক+ত = ক্ত | জ+ঞ = জ্ঞ | ত+ত = ত্ত | ন+থ = ন্থ | র+উ = রু | ষ+ম = ষ্ম | হ+উ = হু |
ক+ষ = ক্ষ | ঞ+জ = ঞ্জ | ত+থ = ত্থ | ন+ধ = ন্ধ | র+ঊ = রূ | ষ+ণ = ষ্ণ | হ+ঋ = হৃ |
ক+য = ক্য | ঞ+চ = ঞ্চ | ত+ম = ত্ম | র+ধ = র্ধ | স+র = স্র | হ+ব = হ্ব | |
ক+র = ক্র | ঞ+ছ = ঞ্ছ | ত+র = ত্র | ব+ধ = ব্ধ | ল+ল = ল্ল | স+ন = স্ন | হ+ণ = হ্ণ |
গ+উ = গু | ট+ট = ট্ট | ত+র+উ = ত্রু | ভ+র = ভ্র | স+ব = স্ব | হ+ন = হ্ন | |
ঙ+গ = ঙ্গ | ণ+ড = ণ্ড | দ+য = দ্য | ভ+র+উ = ভ্রু | শ+উ = শু | স+ত = স্ত | হ+ম = হ্ম |
ঙ+ক = ঙ্ক | দ+ম = দ্ম | ম+ব = ম্ব | শ+র+উ = শ্রু | স+য = স্য | ||
দ+ধ = দ্ধ | শ+র+ঊ = শ্রূ | স+থ = স্থ |
পদ
বাক্যে ব্যবহৃত প্রতিটি শব্দকে পদ বলে।
বাক্যে যখন শব্দ ব্যবহৃত হয়, তখন শব্দগুলোর মধ্যে সম্পর্ক সৃষ্টির জন্য প্রতিটি শব্দের সঙ্গে কিছু অতিরিক্ত শব্দাংশ যুক্ত হয়। এগুলোকে বলে বিভক্তি। যে সব শব্দে আপাত দৃষ্টিতে মনে হয় কোন বিভক্তি যুক্ত হয়নি, সে সব শব্দেও একটি বিভক্তি যুক্ত হয়। একে প্রথমা বিভক্তি বা শূণ্য বিভক্তি বলে। ব্যাকরণ অনুযায়ী কোন শব্দ বাক্যে ব্যবহৃত হলে তাতে বিভক্তি যুক্ত হতে হয়। আর তাই কোন শব্দ বাক্যে বিভক্তি না নিয়ে ব্যবহৃত হলেও তার সঙ্গে একটি বিভক্তি যুক্ত হয়েছে বলে ধরে নিয়ে তাকে শূণ্য বিভক্তি বলা হয়।
অর্থাৎ, বিভক্তিযুক্ত শব্দকেই পদ বলে।
পদের প্রকারভেদ
পদ প্রধানত ২ প্রকার- সব্যয় পদ ও অব্যয় পদ।
সব্যয় পদ আবার ৪ প্রকার- বিশেষ্য, বিশেষণ, সর্বনাম ও ক্রিয়া।
অর্থাৎ, পদ মোট ৫ প্রকার–
১. বিশেষ্য
২. বিশেষণ
৩. সর্বনাম
৪. ক্রিয়া
৫. অব্যয়
[শব্দের শ্রেণীবিভাগ হলো- তৎসম, অর্ধ-তৎসম, তদ্ভব, দেশি ও বিদেশি। অন্যদিকে পদের শ্রেণীবিভাগ হলো- বিশেষ্য, বিশেষণ, সর্বনাম, ক্রিয়া ও অব্যয়। দুইটিই ৫ প্রকার।]
যখন পর্যন্ত কোন শব্দ বাক্যে ব্যবহৃত হচ্ছে না, তখনো সেটি কোন পদ নয়। কোন শব্দ কোন পদ হবে তা নির্ভর করে বাক্যে কিভাবে ব্যবহৃত হলো তার উপর। তাই কোন শব্দকে আগেই বিশেষ্য বা বিশেষণ বলে দেয়া ঠিক নয়। যেমন-
তোমার হাতে কি?
ডাকাত আমার সব হাতিয়ে নিয়েছে।
জঙ্গীরা হাত বোমা মেরে পালিয়ে গেলো।
প্রথম বাক্যে হাত শব্দটি বিশেষ্য। আবার দ্বিতীয় বাক্যে এই হাত শব্দটিই একটু পরিবর্তিত হয়ে ক্রিয়া হয়ে গেছে। আবার তৃতীয় বাক্যেই আবার হাত শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে বিশেষণ হিসেবে।
[তবে প্রশ্নে শুধু শব্দ দিয়ে সেটি কোন পদ জিজ্ঞেস করলে সাধারণত শব্দটি যে পদ হিসেবে ব্যবহৃত হয় সেটি দিতে হবে। এক্ষেত্রে খেয়াল রাখতে হবে, প্রতিটি শব্দই সাধারণত একেক পদ হিসেবে ব্যবহৃত হওয়ার সময় একেক রূপ নেয়। যেমন, ‘হাত’ শব্দটি বিশেষণ হিসেবে কোন বিভক্তি নেয়নি, কিন্তু বিশেষ্য হিসেবে ব্যবহৃত হওয়ার সময় বিভক্তি নিয়েছে। আবার ক্রিয়া হিসেবে ব্যবহৃত হওয়ার সময় প্রত্যয় নিয়েছে। এভাবে প্রশ্নের শব্দটিকে বিভিন্ন বাক্যে ব্যবহার করে কোন পদ নির্ণয় করা যেতে পারে।]
বিশেষ্য পদ
কোন কিছুর নামকেই বিশেষ্য বলে।
যে পদ কোন ব্যক্তি, বস্ত্ত, প্রাণী, সমষ্টি, স্থান, কাল, ভাব, কর্ম, গুণ ইত্যাদির নাম বোঝায়, তাকে বিশেষ্য পদ বলে।
প্রকারভেদ
বিশেষ্য পদ ৬ প্রকার-
১. নামবাচক বা সংজ্ঞাবাচক বিশেষ্য
(ক) ব্যাক্তির নাম : নজরুল, ওমর, আনিস, মাইকেল
(খ) ভৌগোলিক স্থানের নাম : ঢাকা, দিলিল, লন্ডন, মক্কা
(গ) ভৌগোলিক নাম (নদী, পর্বত, সমুদ্র ইত্যাদির নাম) : মেঘনা, হিমালয়, আরব সাগর
(ঘ) গ্রন্থের নাম : গীতাঞ্জলি, অগ্নিবীণা, দেশেবিদেশে, বিশ্বনবী
২. জাতিবাচক বিশেষ্য :
(এক জাতীয় প্রাণী বা পদার্থের নাম) মানুষ, গরু, গাছ, পাখি, পর্বত, নদী, ইংরেজ
৩. বস্তুবাচক বা দ্রব্যবাচক বিশেষ্য :
বই, খাতা, কলম, থালা, বাটি, মাটি, চাল, চিনি, লবন, পানি
৪. সমষ্টিবাচক বিশেষ্য (ব্যক্তি বা প্রাণীর সমষ্টি) :
সভা, জনতা, পঞ্চায়েত, মাহফিল, ঝাঁক, বহর, দল
৫. ভাববাচক বিশেষ্য (ক্রিয়ার ভাব বা কাজের ভাব বা কাজের নাম বোঝায়) :
গমন, শয়ন, দর্শন, ভোজন. দেখা, শোনা, যাওয়া, শোয়া
৬. গুণবাচক বিশেষ্য :
মধুরতা, তারল্য, তিক্ততা, তারুণ্য, সৌরভ, স্বাস্থ্য, যৌবন, সুখ, দুঃখ
বিশেষণ পদ
যে পদ বাক্যের অন্য কোন পদের দোষ, গুণ, অবস্থা, সংখ্যা, পরিমাণ ইত্যাদি প্রকাশ করে, তাকে বিশেষণ পদ বলে।
অর্থাৎ, বিশেষণ পদ অন্য কোন পদ সম্পর্কে তথ্য বা ধারণা প্রকাশ করে, বা অন্য পদকে বিশেষায়িত করে।
কিছু বিশেষণ পদ : (‘একটি ফটোগ্রাফ’ কবিতা থেকে)
- সফেদ দেয়াল
- শান্ত ফটোগ্রাফ
- জিজ্ঞাসু অতিথি
- ছোট ছেলে
- নিস্পৃহ কণ্ঠস্বর
- তিনটি বছর (সংখ্যাবাচক বিশেষণ)
- রুক্ষ চর
- প্রশ্নাকুল চোখ
- ক্ষীয়মাণ শোক
- সহজে হয়ে গেল বলা (ক্রিয়া বিশেষণ)
প্রকারভেদ
বিশেষণ পদ ২ প্রকার- নাম বিশেষণ ও ভাব বিশেষণ।
১. নাম বিশেষণ :
যে বিশেষণ পদ কোন বিশেষ্য বা সর্বনাম পদকে বিশেষায়িত করে, অর্থাৎ অন্য কোন পদ সম্পর্কে কিছু বলে, তাকে নাম বিশেষণ বলে। যেমন-
- বিশেষ্যের বিশেষণ : নীল আকাশ আর সবুজ মাঠের মাঝ দিয়ে একটি ছোট্ট পাখি উড়ে যাচ্ছে।
- সর্বনামের বিশেষণ : সে রূপবান ও গুণবান।
২. ভাব বিশেষণ :
যে বিশেষণ পদ বিশেষ্য বা সর্বনাম পদ ছাড়া অন্য কোন পদকে বিশেষায়িত করে, অর্থাৎ অন্য কোন পদ সম্পর্কে কিছু বলে, তাকে ভাব বিশেষণ বলে। ভাব বিশেষণ ৪ প্রকার-
- ক্রিয়া বিশেষণ : ধীরে ধীরে বায়ু বয়। পরে এক বার এসো।
- বিশেষণের বিশেষণ (কোন বিশেষণ যদি অন্য একটি বিশেষণকেও বিশেষায়িত করে, তাকে বিশেষণের বিশেষণ বলে) :
- নাম বিশেষণের বিশেষণ : সামান্য একটু দুধ দাও। এ ব্যাপারে সে অতিশয় দুঃখিত।
- ক্রিয়া বিশেষণের বিশেষণ : রকেটি অতি দ্রুত চলে।
- অব্যয়ের বিশেষণ (অব্যয় পদ বা অব্যয় পদের অর্থকে বিশেষায়িত করে) : ধিক তারে, শত ধিক নির্লজ্জ যে জন।
- বাক্যের বিশেষণ (কোন পদকে বিশেষায়িত না করে সম্পূর্ণ বাক্যটিকেই বিশেষায়িত করে) : দুর্ভাগ্যক্রমে দেশ আবার নানা সমস্যাজালে আবদ্ধ হয়ে পড়েছে। বাস্তবিকই আজ আমাদের কঠিন পরিশ্রমের প্রয়োজন।
[না-বাচক ক্রিয়া বিশেষণ :
নি-
- এখনো দেখ নি তুমি?
- ফুল কি ফোটে নি শাখে?
- পুষ্পারতি লভে নি কি ঋতুর রাজন? রাখি নি সন্ধান
- রহে নি, সে ভুলে নি তো
না-
- বসন্তে বরিয়া তুমি লবে না কি তব বন্দনায়?
- রচিয়া লহ না আজও গীতি।
- ভুলিতে পারি না কোন মতে।
নাই-
- শুনি নাই, রাখি নি সন্ধান
- নাই হল, না হোক এবারে
- করে নাই অর্ঘ্য বিরুন?]
নির্ধারক বিশেষণ : দ্বিরুক্ত শব্দ ব্যবহার করে যখন একের বেশি কোনো কিছুকে বোঝানো হয় তাকে নির্ধারক বিশেষণ বলে। যেমন-
- রাশি রাশি ভারা ভারা ধান (সোনার তরী)
- লাল লাল কৃষ্ণচূড়ায় গাছ ভরে আছে।
- নববর্ষ উপলক্ষে ঘরে ঘরে সাড়া পড়ে গেছে।
- এত ছোট ছোট উত্তর লিখলে হবে না।
[বিশেষণবাচক ‘কী’
কী-শব্দটির একটি লক্ষণীয় দিক হচ্ছে বিশেষণ হিসেবে এর ব্যবহার।
যেমন, ‘একটি ফটোগ্রাফ’ কবিতায় :
- এই যে আসুন, তারপর কী খবর?
- নিজেই চমকে, কী নিস্পৃহ, কেমন শীতল।
- কী সহজে হয়ে গেল বলা। (ক্রিয়াবিশেষণের বিশেষণ/ বিশেষণের বিশেষণ)]
[বিশেষণ সম্বন্ধ
- পাথরের টুকরো
- আমাদের গ্রামের পুকুর
- গ্রীষ্মের পুকুর
- শোকের নদী
- আমার সন্তান]
বিশেষণের অতিশায়ন (degree)
বিশেষণ পদ যখন দুই বা ততোধিক বিশেষ্য বা সর্বনাম পদের মধ্যে তুলনা বোঝায়, তখন তাকে বিশেষণের অতিশায়ন বলে। বাংলা ভাষায় খাঁটি বাংলা শব্দের বা তদ্ভব শব্দের একরকম অতিশায়ন প্রচলিত আছে, আবার তৎসম শব্দে সংস্কৃত ভাষার অতিশায়নের নিয়মও প্রচলিত আছে।
ক) বাংলা শব্দের বা তদ্ভব শব্দের অতিশায়ন
১. দুয়ের মধ্যে অতিশায়ন বোঝাতে দুইটি বিশেষ্য বা সর্বনামের মাঝে চাইতে, হইতে, হতে, থেকে, চেয়ে, অপেক্ষা, ইত্যাদি ব্যবহৃত হয়। প্রায়ই প্রথম বিশেষ্যটির সঙ্গে ষষ্ঠী বিভক্তি (র, এর) যুক্ত হয়। যেমন-
- গরুর থেকে ঘোড়ার দাম বেশি।
- বাঘের চেয়ে সিংহ বলবান।
ব্যতিক্রম : কখনো কখনো প্রথম বিশেষ্যের শেষের ষষ্ঠী বিভক্তিই হতে, থেকে, চেয়ে-র কাজ করে। যেমন-
- এ মাটি সোনার বাড়া। (সোনার চেয়েও বাড়া)
২. বহুর মধ্যে অতিশায়নে বিশেষণের পূর্বে সবচাইতে, সর্বাপেক্ষা, সবথেকে, সবচেয়ে,সর্বাধিক, ইত্যাদি শব্দ ব্যবহৃত হয়। যেমন-
- তোমাদের মধ্যে করিম সবচেয়ে বুদ্ধিমান।
- পশুর মধ্যে সিংহ সর্বাপেক্ষা বলবান।
৩. দুয়ের মধ্যে অতিশায়নে জোর দিতে গেলে মূল বিশেষণের আগে অনেক, অধিক, বেশি, অল্প, কম অধিকতর, ইত্যাদি শব্দ যোগ করতে হয়। যেমন-
- পদ্মফুল গোলাপের চাইতে বেশি সুন্দর।
- ঘিয়ের চেয়ে দুধ বেশি উপকারী।
- কমলার চাইতে পাতিলেবু অল্প ছোট।
খ) তৎসম শব্দের অতিশায়ন
১. দুয়ের মধ্যে তুলনা বোঝালে বিশেষণের শেষে ‘তর’ যোগ হয়
বহুর মধ্যে তুলনা বোঝালে বিশেষণের শেষে ‘তম’ যোগ হয়। যেমন-
- গুরু- গুরুতর- গুরুতম
- দীর্ঘ- দীর্ঘতর- দীর্ঘতম
[তবে কোনো বিশেষণের শেষে ‘তর’ যোগ করলে সেটা যদি আবার শ্রচতিকটু হয়ে যায়, শুনতে খারাপ লাগে, তখন বিশেষণটির শেষে ‘তর’ যোগ না করে বিশেষণের আগে ‘অধিকতর’ শব্দটি যোগ করা হয়। যেমন- ‘অধিকতর সুশ্রী’।]
২. আবার, দুয়ের মধ্যে তুলনা বোঝালে বিশেষণের শেষে ‘ঈয়স’ প্রত্যয় যুক্ত হয়
বহুর মধ্যে তুলনা বোঝালে বিশেষণের শেষে ‘ইষ্ঠ’ প্রত্যয় যুক্ত হয়। যেমন-
- লঘু- লঘীয়ান- লঘিষ্ঠ
- অল্প- কনীয়ান- কনিষ্ঠ
- বৃদ্ধ- জ্যায়ান- জ্যেষ্ঠ
- শ্রেয়- শ্রেয়ান- শ্রেষ্ঠ
[দুয়ের তুলনায় এই নিয়মের ব্যবহার বাংলায় হয় না। অর্থাৎ, বাংলায় লঘীয়ান, কনীয়ান, জ্যায়ান, শ্রেয়ান, ইত্যাদি শব্দগুলোর প্রচলন নেই। তবে ‘ঈয়স’ প্রত্যয়যুক্ত কতোগুলো শব্দের স্ত্রীলিঙ্গ বাংলায় প্রচলিত রয়েছে। যেমন- ভূয়সী প্রশংসা।]
সর্বনাম পদ
বিশেষ্য পদের পরিবর্তে যে পদ ব্যবহৃত হয়, তাকেই সর্বনাম পদ বলে।
অনুচ্ছেদে বা প্যারাগ্রাফে একই বিশেষ্য পদ বারবার আসতে পারে। সেক্ষেত্রে একই পদ বারবার ব্যবহার করলে তা শুনতে খারাপ লাগাটাই স্বাভাবিক। এই পুনরাবৃত্তি রোধ করার জন্য বিশেষ্য পদের পরিবর্তে অনুচ্ছেদে যে বিকল্প শব্দ ব্যবহার করে সেই বিশেষ্য পদকেই বোঝানো হয়, তাকে সর্বনাম পদ বলে।
[সর্বনাম পদগুলো সব বিশেষ্য বা নামের পরিবর্তে বসতে পারে বলে এদেরকে ‘সর্বনাম’ বলে।]
‘বাংলাদেশ অত্যন্ত সুন্দর একটি দেশ। এই দেশটি যেমন সুন্দর, এই দেশের মানুষগুলোও তেমনি ভালো। তারা এতোটাই ভদ্র ও মার্জিত যে, তাদের কাছে ভিখারি ভিক্ষা চাইতে আসলে তারা তাদের বিতাড়িত করে না। বরং মার্জিতভাবে বলে, মাফ করেন।’
উপরের অনুচ্ছেদে মূলত ৩টি বিশেষ্য সম্পর্কে বলা হয়েছে- ‘বাংলাদেশ’, ‘বাংলাদেশের মানুষ’ ও ‘ভিখারি’। এবং প্রথমবার উল্লেখের পর দ্বিতীয়বার কোন বিশেষ্যই আর উল্লেখ করা হয়নি। পরের বার থেকে ‘বাংলাদেশ’-র বদলে ‘এই দেশ’; ‘বাংলাদেশের (এই দেশের) মানুষ’-র বদলে ‘তারা’ ও ‘তাদের’ এবং ‘ভিখারি’-র বদলে ‘তাদের’ শব্দগুলো ব্যবহৃত হয়েছে। বিশেষ্য পদের বদলে ব্যবহৃত এই শব্দগুলোই হলো সর্বনাম পদ।
প্রকারভেদ
সর্বনাম পদগুলোকে মূলত ১০ ভাগে ভাগ করা যায়। যেমন-
১. ব্যক্তিবাচক বা পুরুষবাচক : আমি, আমরা, তুমি, তোমরা, সে, তারা, তাহারা, তিনি, তাঁরা, এ, এরা, ও, ওরা
২. আত্মবাচক : স্বয়ং, নিজ, খোদ, আপনি
৩. সামীপ্যবাচক : এ, এই, এরা, ইহারা, ইনি
৪. দূরত্ববাচক : ঐ, ঐসব, সব
৫. সাকল্যবাচক : সব, সকল, সমুদয়, তাবৎ
৬. প্রশ্নবাচক : কে, কি, কী, কোন, কাহার, কার, কিসে
৭. অনির্দিষ্টতাজ্ঞাপক : কোন, কেহ, কেউ, কিছু
৮. ব্যতিহারিক : আপনা আপনি, নিজে নিজে, আপসে, পরস্পর
৯. সংযোগজ্ঞাপক : যে, যিনি, যাঁরা, যাহারা
১০. অন্যাদিবাচক : অন্য, অপর, পর
সাপেক্ষ সর্বনাম : কখনও কখনও পর্সপর সম্পর্কযুক্ত একাধিক সর্বনাম পদ একই সঙ্গে ব্যবহৃত হয়ে দুটি বাক্যের সংযোগ সাধন করে থাকে। এদেরকে বলা হয় সাপেক্ষ সর্বনাম। যেমন-
- যত চাও তত লও (সোনার তরী)
- যত চেষ্টা করবে ততই সাফল্যের সম্ভাবনা।
- যত বড় মুখ নয় তত বড় কথা।
- যত গর্জে তত বর্ষে না।
- যেই কথা সেই কাজ।
- যেমন কর্ম তেমন ফল।
- যেমন বুনো ওল তেমনি বাঘা তেঁতুল।
কারক
কারক শব্দের আক্ষরিক অর্থ ‘যা ক্রিয়া সম্পাদন করে’।
বাক্যের ক্রিয়াপদের সঙ্গে নামপদের সম্পর্ককে কারক বলে। অর্থাৎ, বাক্যের ক্রিয়াপদের সঙ্গে অন্যান্য পদের যে সম্পর্ক, তাকে কারক বলে।
প্রচলিত বাংলা ব্যাকরণের সংজ্ঞায় বলা হয়– বাক্যের ক্রিয়াপদের সাথে অন্যান্য পদের সম্বন্ধই হলো– কারক। বাংলা ব্যাকরণের এই সংজ্ঞাকে গ্রহণ করা হয়েছে, পাণিনির অষ্টাধ্যায়ী ব্যাকরণ অনুসারে। এই ব্যাকরণের ‘ক্রিয়ান্বয়ি কারকম’ বাক্যটির সরল বাংলা দাঁড়ায় ক্রিয়ার সহিত যাহার অন্বয় হয়, তাকে কারক বলে।
সংস্কৃত ব্যাকরণ অনুসারে তিনটি পদ কারক হিসাবে বিবেচিত হয় না। এই পদ তিনটি হলো–
১. ক্রিয়াপদ।
২. সম্বোধন পদ কারক হবে না। যেমন– ওহে, বাড়ি চলো। এখানে ‘ওহে’ কারক হবে না।
৩. সম্বন্ধ পদ কারক হবে না। যেমন রাজার ছেলে বাড়ি যায়। এখানে ‘রাজার’ শব্দটির সাথে ক্রিয়ার সম্পর্ক নেই, আছে ছেলের সাথে।
১. ক্রিয়াপদ।
২. সম্বোধন পদ কারক হবে না। যেমন– ওহে, বাড়ি চলো। এখানে ‘ওহে’ কারক হবে না।
৩. সম্বন্ধ পদ কারক হবে না। যেমন রাজার ছেলে বাড়ি যায়। এখানে ‘রাজার’ শব্দটির সাথে ক্রিয়ার সম্পর্ক নেই, আছে ছেলের সাথে।
পাণিনির অষ্টাধ্যায়ী মতে –
অপাদান-সম্প্রদান-করণাধার-কর্মণাম্।
কর্ত্তুশ্চান্যোন্য-সন্দেহে, পরমেকং প্রবর্ত্ততে॥
অপাদান-সম্প্রদান-করণাধার-কর্মণাম্।
কর্ত্তুশ্চান্যোন্য-সন্দেহে, পরমেকং প্রবর্ত্ততে॥
এই বিচারে কারককে সংখ্যা ৬টি। এগুলো হলো- অপাদান, সম্প্রদান, করণ, অধিকরণ, কর্ম, কর্তা।
পাশ্চাত্য ব্যাকরণে সম্বন্ধপদকে কারক হিসাবে বিবেচনা করা হয়। Wordnet -এর মতে– case, grammatical case–nouns or pronouns or adjectives (often marked by inflection) related in some way to other words in a sentence)। এই সূত্রে সংস্কৃত রীতি অনুসারে সৃষ্ট বাংলা কারক এবং পাশ্চাত্য ব্যাকরণের কারক একরকম হয় না। যেমন–
১. কর্তা, কর্ম, করণ, অপাদান, অধিকরণ কারকের সাথে পাশ্চাত্য কারকের মিল পাওয়া গেলেও, অন্যান্য কারকের ক্ষেত্রে মিল পাওয়া যায় না। যেমন-
১. পাশ্চাত্য ব্যাকরণে সম্প্রদানকারক নাই।
২. সম্বন্ধ এবং সম্বোধন পদ বাংলাতে কারক নয়, কিন্তু পাশ্চাত্য মতে এই দুটি পদ পৃথক কারক হিসাবে বিবেচনা করা হয়।
১. পাশ্চাত্য ব্যাকরণে সম্প্রদানকারক নাই।
২. সম্বন্ধ এবং সম্বোধন পদ বাংলাতে কারক নয়, কিন্তু পাশ্চাত্য মতে এই দুটি পদ পৃথক কারক হিসাবে বিবেচনা করা হয়।
বাংলা এবং পাশ্চাত্য ব্যাকরণ মতে কারকের যে কয়টি নাম পাওয়া যায়, তা হলো–
১. কর্তৃ বা কর্তা কারক : nominative case
২. কর্ম কারক accusative case
৩. করণ কারক : instrumental case
৪. অপাদান কারক : ablative case
৫. অধিকরণ কারক : locative case
৬. সম্বন্ধ পদ (বাংলাতে কারক নয়) : genitive case, Possessive case
৭. সম্বোধন পদ (বাংলাতে কারক নয়) : vocative case
৮. সম্প্রদান কারক : dative case
২. কর্ম কারক accusative case
৩. করণ কারক : instrumental case
৪. অপাদান কারক : ablative case
৫. অধিকরণ কারক : locative case
৬. সম্বন্ধ পদ (বাংলাতে কারক নয়) : genitive case, Possessive case
৭. সম্বোধন পদ (বাংলাতে কারক নয়) : vocative case
৮. সম্প্রদান কারক : dative case
বাংলায় কারক ৬ প্রকার-
১. কর্তৃ কারক
২. কর্ম কারক
৩. করণ কারক
৪. সম্প্রদান কারক
৫. অপাদান কারক
৬. অধিকরণ কারক
২. কর্ম কারক
৩. করণ কারক
৪. সম্প্রদান কারক
৫. অপাদান কারক
৬. অধিকরণ কারক
নিচে কারক নির্ণয়ের উপায় সংক্ষেপে ছক আকারে দেয়া হলো-
ক্রিয়াকে প্রশ্ন | উত্তর যে কারক |
কে, কারা? | কর্তৃকারক |
কী, কাকে? | কর্মকারক |
কী দিয়ে? | করণকারক |
কাকে দান করা হল? | সম্প্রদান কারক |
কি হতে বের হল? | অপাদান কারক |
কোথায়, কখন, কী বিষয়ে? | অধিকরণ কারক |
১. কর্তৃ বা কর্তা কারক
বাক্যস্থিত যে বিশেষ্য বা সর্বনাম পদ ক্রিয়া সম্পন্ন করে, তাকে ক্রিয়ার কর্তা বা কর্তৃকারক বলে।
ক্রিয়াকে ‘কে/ কারা’ দিয়ে প্রশ্ন করলে যে উত্তর পাওয়া যায়, সেটিই কর্তৃকারক। (কর্মবাচ্য ও ভাববাচ্যের বাক্যে এই নিয়ম খাটবে না। সেক্ষেত্রে একটু সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে।)
উদাহরণ-
- গরু ঘাস খায়। (কে খায়) : কর্তৃকারকে শূণ্য বিভক্তি
২. কর্ম কারক
যাকে অবলম্বন করে কর্তা ক্রিয়া সম্পাদন করে, তাকে ক্রিয়ার কর্ম বা কর্মকারক বলে।
ক্রিয়াকে ‘কী/ কাকে’ দিয়ে প্রশ্ন করলে যে উত্তর পাওয়া যায়, সেটিই কর্মকারক।
বাক্যে দুইটি কর্ম থাকলে বস্ত্তবাচক কর্মটিকে প্রধান বা মুখ্য কর্ম ও ব্যক্তিবাচক কর্মটিকে গৌণ কর্ম বলে। তবে দুইটি একই ধরনের কর্ম থাকলে প্রথম কর্মটিকে উদ্দেশ্য কর্ম ও দ্বিতীয়টিকে বিধেয় কর্ম বলে। যেমন- ‘দুধকে মোরা দুগ্ধ বলি, হলুদকে বলি হরিদ্রা’। এখানে ‘দুধ’ ও ‘হলুদ’ উদ্দেশ্য কর্ম, ‘দুগ্ধ’ ও ‘হরিদ্রা’ বিধেয় কর্ম।
কর্তা নিজে কাজ না করে কর্মকে দিয়ে কাজ করিয়ে নিলে তাকে প্রযোজক ক্রিয়ার কর্ম বলে।
ক্রিয়াপদ ও কর্মপদ একই ধাতু থেকে গঠিত হলে তাকে সমধাতুজ কর্ম বলে। [ক্রিয়াপদ]
উদাহরণ-
বাবা আমাকে একটি ল্যাপটপ কিনে দিয়েছেন। (কাকে দিয়েছেন? আমাকে। কী দিয়েছেন? ল্যাপটপ) : আমাকে- কর্মকারকে দ্বিতীয়া বিভক্তি (গৌণ কর্ম), ল্যাপটপ- কর্মকারকে শূণ্য বিভক্তি (মুখ্য কর্ম)
ডাক্তার ডাক। (কাকে ডাক?) : কর্মকারকে শূণ্য বিভক্তি
আমাকে একটা বই দাও। (কাকে দাও? আমাকে। কী দাও? বই) : আমাকে- কর্মকারকে দ্বিতীয়া বিভক্তি (গৌণ কর্ম), বই- কর্মকারকে দ্বিতীয়া বিভক্তি (মুখ্য কর্ম)
আমারে তুমি করিবে ত্রাণ, এ নহে মোর প্রার্থণা। (কাকে করিবে? আমারে) : কর্মকারকে দ্বিতীয়া বিভক্তি
তোমার দেখা নাই। (কার দেখা? তোমার) : কর্মকারকে ষষ্ঠী বিভক্তি
জিজ্ঞাসিবে জনে জনে। (কাকে জিজ্ঞাসিবে? জনে জনে) : কর্মকারকে সপ্তমী বিভক্তি
৩. করণ কারক
করণ শব্দের অর্থ যন্ত্র, সহায়ক বা উপায়।
যে উপাদান বা উপায়ে ক্রিয়া সম্পাদন করা হয়, তাকে করণ কারক বলে।
ক্রিয়াকে ‘কী দিয়ে/ কী উপায়ে’ দিয়ে প্রশ্ন করলে যে উত্তর পাওয়া যায়, তাই করণ কারক।
উদাহরণ-
পিয়াল কলম দিয়ে লিখছে। (কী দিয়ে লেখে? কলম দিয়ে) :করণ কারকে তৃতীয়া বিভক্তি
কীর্তিমান হয় সাধনায়। (কী উপায়ে হয়? সাধনায়) : করণ কারকে সপ্তমী বিভক্তি
ডাকাতেরা গৃহকর্তার মাথায় লাঠি মেরেছে। (কী দিয়ে মেরেছে? গুলি): করণ কারকে শূণ্য বিভক্তি
লাঙ্গল দিয়ে জমি চাষ করা হয়। (কী দিয়ে চাষ করা হয়? লাঙ্গল দিয়ে): করণ কারকে তৃতীয়া বিভক্তি
মন দিয়ে পড়াশুনা কর। (কী উপায়ে/ দিয়ে কর? মন দিয়ে) :করণ কারকে তৃতীয়া বিভক্তি
ফুলে ফুলে ঘর ভরেছে। (কী দিয়ে ভরেছে? ফুলে ফুলে) : করণ কারকে সপ্তমী বিভক্তি
শিকারি বিড়াল গোঁফে চেনা যায়। (কী দিয়ে/ উপায়ে চেনা যায়? গোঁফে): করণ কারকে সপ্তমী বিভক্তি
সাধনায় সব হয়। (কী উপায়ে সব হয়? সাধনায়) : করণ কারকে সপ্তমী বিভক্তি
এ সুতায় কাপড় হয় না। (কী দিয়ে হয় না? সুতায়) : করণ কারকে সপ্তমী বিভক্তি
৪. সম্প্রদান কারক
যাকে স্বত্ব ত্যাগ করে কিছু দেয়া হয়, তাকে সম্প্রদান কারক বলে।
‘কাকে দান করা হল’ প্রশ্নের উত্তরই হলো সম্প্রদান কারক।
সম্প্রদান কারকের নিয়ম অন্যান্য নিয়মের মতোই সংস্কৃত ব্যাকরণ থেকেই এসেছে। তবে অনেক বাংলা ব্যাকরণবিদ/ বৈয়াকরণ একে আলাদা কোন কারক হিসেবে স্বীকার করেন না। তারা একেও কর্ম কারক হিসেবেই গণ্য করেন। কর্মকারক ও সম্প্রদান কারকের বৈশিষ্ট্যও একই। কেবল স্বত্ব ত্যাগ করে দান করার ক্ষেত্রে কর্মকারক হিসেবে গণ্য না করে কর্মপদটিকে সম্প্রদান কারক হিসেবে গণ্য করা হয়।
সম্প্রদান কারকে দ্বিতীয়া বিভক্তির বদলে চতুর্থী বিভক্তি যুক্ত হয়। চতুর্থী বিভক্তি আর কোথাও যুক্ত হয় না। অর্থাৎ, ‘কে/ রে’ বিভক্তি দুটি সম্প্রদান কারকের সঙ্গে থাকলে তা চতুর্থী বিভক্তি। অন্য কোন কারকের সঙ্গে থাকলে তা দ্বিতীয়া বিভক্তি।
তবে কোথাও নিমিত্তার্থে ‘কে’ বিভক্তি যুক্ত হলে তা চতুর্থী বিভক্তি হয়। যেমন- বেলা যে পড়ে এল, জলকে চল। (নিমিত্তার্থে চতুর্থী বিভক্তি)
উদাহরণ-
ভিখারিকে ভিক্ষা দাও। (কাকে দান করা হল? ভিখারিকে।) : সম্প্রদান কারকে চতুর্থী বিভক্তি
অসহায়কে খাদ্য দাও। (কাকে দান করা হল? অসহায়কে।) : সম্প্রদান কারকে চতুর্থী বিভক্তি
অন্ধজনে দেহ আলো, মৃতজনে দেহ প্রাণ। (কাকে দান করা হল? অন্ধজনে।): সম্প্রদান কারকে সপ্তমী বিভক্তি
সমিতিতে চাঁদা দাও। (কাকে দান করা হল? সমিতিতে।) : সম্প্রদান কারকে সপ্তমী বিভক্তি
৫. অপাদান কারক
যা থেকে কোন কিছু গৃহীত, বিচ্যুত, জাত, বিরত, আরম্ভ, দূরীভূত, রক্ষিত, ভীত হয়, তাকে অপাদান কারক বলে।
অর্থাৎ, অপাদান কারক থেকে কোন কিছু বের হওয়া বোঝায়।
‘কি হতে বের হল’ প্রশ্নের উত্তরই অপাদান কারক।
উদাহরণ-
- গাছ থেকে পাতা পড়ে। (কি হতে বের হল/ পড়ল? গাছ থেকে): অপাদান কারকে পঞ্চমী বিভক্তি
- শুক্তি থেকে মুক্তি মেলে। (কি হতে বের হল? শুক্তি থেকে) : অপাদান কারকে পঞ্চমী বিভক্তি
- জমি থেকে ফসল পাই। (কি হতে বের হল? জমি থেকে) : অপাদান কারকে পঞ্চমী বিভক্তি
- দেশ থেকে হায়েনারা চলে গেছে। (কি হতে বের হল? দেশ থেকে):অপাদান কারকে পঞ্চমী বিভক্তি
- বিপদ থেকে বাঁচাও। (কি হতে বাঁচাও? বিপদ হতে) : অপাদান কারকে পঞ্চমী বিভক্তি
- বাঘকে ভয় পায় না কে? (কি হতে ভয় বের হল? বাঘ হতে): অপাদান কারকে দ্বিতীয়া বিভক্তি
- মনে পড়ে সেই জৈষ্ঠ্যের দুপুরে পাঠশালা পলায়ন। (কি হতে বের হল/ পলায়ন? পাঠশালা হতে) : অপাদান কারকে শূণ্য বিভক্তি
- বাবাকে বড্ড ভয় পাই। (কি হতে ভয় বের হয়? বাবা হতে): অপাদান কারকে দ্বিতীয়া বিভক্তি
- তিনি চট্টগ্রাম থেকে এসেছেন। (কি হতে বের হয়েছেন/ এসেছেন? চট্টগ্রাম হতে): অপাদান কারকে পঞ্চমী বিভক্তি
- বিমান থেকে বোমা ফেলা হয়েছিলো। (কি হতে বের হল/ ফেলা হল? বিমান হতে): অপাদান কারকে পঞ্চমী বিভক্তি
প্রচলিত বাংলা ব্যাকরণের কারক-এর একটি শ্রেণি। বাংলা ব্যাকরণে অপাদান কারক এসেছে পাণিনি’র অষ্টাধ্যায়ী অনুসরণে। পাণিনির মতে-
‘ধ্রুবমপায়েহপাদানাম্।
অপায়ে যদুদার্সীনং চলং বা যদি বাচলম্।
ধ্রুবমেবাতদাবেশাৎ তদপাদানমুচ্যতে॥’
‘ধ্রুবমপায়েহপাদানাম্।
অপায়ে যদুদার্সীনং চলং বা যদি বাচলম্।
ধ্রুবমেবাতদাবেশাৎ তদপাদানমুচ্যতে॥’
বিদ্যাসাগর এর সংজ্ঞা দিয়েছেন- ‘যাহা হইতে বিশ্লেষ হয়, তাহাকে অপাদান কারক বলে।
সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায় তাঁর ‘ভাষা-প্রকাশ বাঙ্গালা-ব্যাকরণ ‘ গ্রন্থে এই কারকের সংজ্ঞা দিয়েছেন– ‘যাহা হইতে কোনও বস্তু বা ব্যক্তি উৎপন্ন, চলিত, নির্গত, নিঃসৃত, উত্থিত, পতিত, প্রেরিত, গৃহীত, দৃষ্ট, শ্রুত, সূচিত, নিবারিত, অন্তর্হিত, রক্ষিত ইত্যাদি হয়— তাহাকে অপাদান-কারক বলে।’
সুনীতি চট্টোপাধ্যায়ের সংজ্ঞাটিই বাংলা ব্যাকরণে প্রমিত সংজ্ঞা হিসাবে বিবেচনা করা হয়। এই কারক নির্ণয়ের সূত্র হলো- বাক্যানুসারে ‘কি থেকে’ বা ‘কিসের থেকে’ প্রশ্ন সাপক্ষে যদি উত্তর পাওয়া যায়, তবে তা অপাদান কারক হিসাবে বিবেচিত হবে।
ছাদ থেকে পানি পড়ছে। পুকুর থেকে ফিরে এলাম। ইত্যাদি।
এই কারকের জন্য সাধারণত হইতে>হতে, থেকে, চাহিয়া>চেয়ে বিভক্তি হিসাবে বিবেচনা করা হয়। ব্যাকরণ এগুলোকে কারক-বিভক্তির তালিকায় পঞ্চমী বিভক্তি বলা হয়। এই বিভক্তিগুলো শব্দের সাথে যুক্ত অবস্থায় ব্যবহৃত হয়। তাই এগুলোর মান দাঁড়ায় অনুসর্গের মতো। যেমন-
ছাদ থেকে পানি পড়ছে। পুকুর থেকে ফিরে এলাম। ইত্যাদি।
ছাদ থেকে পানি পড়ছে। পুকুর থেকে ফিরে এলাম। ইত্যাদি।
পঞ্চমী বিভক্তি ছাড়াও অপাদান কারক হতে পারে। যেমন–
১. এ বিভক্তি : লোকমুখে এ কথা জেনেছি।
২. তে বিভক্তি : খনিতে সোনা পাওয়া যায়।
৩. র/এর : রাতে বাঘের ভয়ে ঘরের বাহির হই না।
১. এ বিভক্তি : লোকমুখে এ কথা জেনেছি।
২. তে বিভক্তি : খনিতে সোনা পাওয়া যায়।
৩. র/এর : রাতে বাঘের ভয়ে ঘরের বাহির হই না।
সম্বন্ধ পদ ও অপাদানের সম্পর্ক
অনেক ক্ষেত্রেই অনুসর্গের পূর্বপদের সাথে একটি সম্পর্ক সৃষ্টি হয়। এ ক্ষেত্রে পূর্ব পদে ষষ্ঠী বিভক্তি যুক্ত হলেও কারক বিভক্তি হিসাবে এই ষষ্ঠী বিভক্তি মূল্য পায় না। এক্ষেত্রে ষষ্ঠী বিভক্তি কতকগুলো বিশেষ রীতি অনুসরণ করে।
১. তুলনা-বাচক ভাবের ক্ষেত্রে পূর্ব পদে র বা এর বসে। যেমন- রামের চেয়ে শ্যাম ছোটো।
২. সর্বনামের পরে চেয়ে, থেকে, হতে অনুসর্গ থাকলে, সর্বনামের পরে ষষ্ঠী বিভক্তি বসে। যেমন–
আমার থেকে সে বেশি জানে না।
তার চেয়ে শ্যাম ভালো লোক।
তোমার চেয়ে এ কাজ আর কে ভালো করবে?
২. সর্বনামের পরে চেয়ে, থেকে, হতে অনুসর্গ থাকলে, সর্বনামের পরে ষষ্ঠী বিভক্তি বসে। যেমন–
আমার থেকে সে বেশি জানে না।
তার চেয়ে শ্যাম ভালো লোক।
তোমার চেয়ে এ কাজ আর কে ভালো করবে?
কিন্তু যখন কোনো কিছু প্রাপ্তি বা অপ্রাপ্তি (ভয়, আশা, বিশ্বাস ইত্যাদি অর্থে) বিষয়টি এর সাথে যুক্ত হয়, তখন অতিরিক্ত অনুসর্গ যুক্ত হতে পারে। যেমন–
তার কাছ থেকে ১০০ টাকা পেয়েছি।
তোমার কাছ থেকে এটা আশা করি নি।
তার কাছ থেকে ১০০ টাকা পেয়েছি।
তোমার কাছ থেকে এটা আশা করি নি।
তবে এই অতিরিক্ত অনুসর্গ বাদ দিয়েও বাক্য হতে পারে। যেমন–
তার থেকে ১০০ টাকা পেয়েছি।
তার থেকে ১০০ টাকা পেয়েছি।
৩. বিশেষ্য পদের ‘র’ বা ‘এর’ ব্যবহৃত হয়। তবে বাহুল্য বিবেচনায় অনেক সময় তা বর্জিত হয়। যেমন–
তুমি দেশের থেকে কবে ফিরলে?
কিম্বা
তুমি দেশ থেকে কবে ফিরলে?
তুমি দেশের থেকে কবে ফিরলে?
কিম্বা
তুমি দেশ থেকে কবে ফিরলে?
অপাদান ও অধিকরণের সম্পর্ক
অধিকাংশ ক্ষেত্রে অপাদান কারকের সাথে অধিকরণের একটি নিবিড় সম্পর্ক লক্ষ্য করা যায়। যেমন–
১. স্থানবাচক অপাদান : ঢাকা থেকে বাড়ি ফিরলাম। [‘ঢাকা’ স্থান, কিন্তু কারকের বিচারে ‘ঢাকা থেকে’ অপাদান]
২. কাল বাচক অপাদন : সকাল থেকে বৃষ্টি হচ্ছে। [‘সকাল’ কাল বা সময়, কিন্তু কারকের বিচারে ‘সকাল থেকে’ অপাদান]
৩. আধার বাচক অপাদান : তিল থেকে তেল হয়। [‘তিল’ আধার বা পাত্র, কিন্তু কারকের বিচারে ‘তিল থেকে’ অপাদান]
১. স্থানবাচক অপাদান : ঢাকা থেকে বাড়ি ফিরলাম। [‘ঢাকা’ স্থান, কিন্তু কারকের বিচারে ‘ঢাকা থেকে’ অপাদান]
২. কাল বাচক অপাদন : সকাল থেকে বৃষ্টি হচ্ছে। [‘সকাল’ কাল বা সময়, কিন্তু কারকের বিচারে ‘সকাল থেকে’ অপাদান]
৩. আধার বাচক অপাদান : তিল থেকে তেল হয়। [‘তিল’ আধার বা পাত্র, কিন্তু কারকের বিচারে ‘তিল থেকে’ অপাদান]
এছাড়া তারতম্যের বিচারে অপাদান হয়। যেমন– আমার চেয়ে সে চালাক।
৬. অধিকরণ কারক
ক্রিয়া সম্পাদনের কাল এবং আধারকে (সময় এবং স্থানকে) অধিকরণ কারক বলে।
ক্রিয়াকে ‘কোথায়/ কখন/ কী বিষয়ে’ দিয়ে প্রশ্ন করলে যে উত্তর পাওয়া যায়, তাই অধিকরণ কারক।
উদাহরণ-
- পুকুরে মাছ আছে। (কোথায় আছে? পুকুরে) : অধিকরণ কারকে সপ্তমী বিভক্তি
- বনে বাঘ আছে। (কোথায় আছে? বনে) : অধিকরণ কারকে সপ্তমী বিভক্তি
- ঘাটে নৌকা বাঁধা আছে। (কোথায় বাঁধা আছে? ঘাটে) : অধিকরণ কারকে সপ্তমী বিভক্তি
- রাজার দুয়ারে হাতি বাঁধা। (কোথায় বাঁধা? দুয়ারে) : অধিকরণ কারকে সপ্তমী বিভক্তি
- সকালে সূর্য ওঠে। (কখন ওঠে? সকালে) : অধিকরণ কারকে সপ্তমী বিভক্তি
- এ বাড়িতে কেউ নেই। (কোথায় কেউ নেই? বাড়িতে) : অধিকরণ কারকে সপ্তমী বিভক্তি
- নদীতে পানি আছে। (কোথায় আছে? নদীতে) : অধিকরণ কারকে সপ্তমী বিভক্তি
- রবিন অঙ্কে কাঁচা। (কী বিষয়ে কাঁচা? অঙ্কে) : অধিকরণ কারকে সপ্তমী বিভক্তি
- সজিব ব্যাকরণে ভাল। (কী বিষয়ে কাঁচা? ব্যাকরণে) : অধিকরণ কারকে সপ্তমী বিভক্তি
- ঘরের মধ্যে কে রে? (কোথায়? ঘরে) : অধিকরণ কারকে অনুসর্গ মধ্যে
- বাড়ি থেকে নদী দেখা যায়। (কোথায় থেকে দেখা যায়? বাড়ি থেকে):অধিকরণে পঞ্চমী বিভক্তি*
- শেষ উদাহরণটিতে নদী বাড়ি থেকে বের হয়নি, তাই এটি অপাদান কারক নয়। নদী বাড়ি থেকেই দেখা যায়। অর্থাৎ, ক্রিয়াটি বাড়িতেই ঘটছে, তাই এটি অধিকরণ কারক।
অপাদান-অধিকরণ কারকের পার্থক্য
অপাদান ও অধিকরণ কারক আলাদা করতে গিয়ে অনেকেরই সমস্যা হয়। অপাদান ও অধিকরণ কারককে আলাদা করে চেনার সহজ উপায় হলো, অপাদান কারক থেকে কোন কিছু বের হয় বোঝায়। আর অধিকরণ কারকের মাঝেই ক্রিয়া সম্পাদিত হয়।
যেমন- ‘তিলে থেকে তেল হয়’ আর ‘তিলে তেল আছে’।
প্রথম বাক্যে তিলের ভেতর ক্রিয়া সংঘটিত হয়নি। বরং তিল থেকে তেল বের হওয়ার কথা বোঝাচ্ছে।
আর দ্বিতীয় বাক্যে তিলের ভেতরই তিল থাকার কথা বলছে। এই ‘আছে’ ক্রিয়াটি তিলের ভেতরে থেকেই কাজ করছে।
এরকম-
- বিপদ থেকে বাঁচাও- অপাদান কারক
- বিপদে বাঁচাও- অধিকরণ কারক
- শুক্তি থেকে মুক্তি মেলে- অপাদান কারক
- শুক্তিতে মুক্তি হয়- অধিকরণ কারক
- জমি থেকে ফসল পাই- অপাদান কারক
- জমিতে ফসল হয়- অধিকরণ কারক
- ক্রিয়া পদযে পদ দিয়ে কোন কাজ করা বোঝায়, তাকে ক্রিয়া পদ বলে।অর্থাৎ, বাক্যের অন্তর্গত যে পদ দ্বারা কোন কাজ সম্পাদন করা বা কোন কাজ সংঘটন হওয়াকে বোঝায়, তাকে ক্রিয়া পদ বলে।ক্রিয়ামূল বা ধাতুর সঙ্গে পুরুষ ও কাল অনুযায়ী ক্রিয়াবিভক্তি যুক্ত হয়ে ক্রিয়াপদ গঠিত হয়। যেমন, ‘পড়্’ একটি ধাতু। এর সঙ্গে উত্তম পুরুষ ও সাধারণ বর্তমান কাল অনুযায়ী ‘ই’ প্রত্যয় যুক্ত হয়ে গঠিত হয় ‘পড়ি’ ক্রিয়াপদটি। আবার মধ্যম পুরুষের জন্য হবে ‘পড়ো’। নাম পুরুষের জন্য হবে ‘পড়ে’। আবার উত্তম পুরুষের জন্য ঘটমান বর্তমান কালের জন্য হবে ‘পড়ছি’। সাধারণ অতীত কালের জন্য হবে ‘পড়েছি’।[ক্রিয়া পদ বাক্যের অপরিহার্য অঙ্গ। শুধু ক্রিয়াপদ নিয়ে একটি বাক্য গঠিত হতে পারে। কিন্তু ক্রিয়া পদ ছাড়া কোন বাক্য গঠিত হতে পারে না। তবে মাঝে মাঝে অনেক বাক্যের ক্রিয়াপদটি উহ্য থাকে। যেমন- ‘রমেশ আমার ভাই (হয়)।’ এই বাক্যে ‘হয়’ ক্রিয়াটি উহ্য থাকে, এটি না লিখলেও সবাই বুঝতে পারে। আর তাই এটি লেখাও হয় না। কিন্তু এটা আবার ইংরেজি করলে ‘হয়’-র ইংরেজি লেখা হয়- Ramesh is my brother.সাধারণত, ‘হ্’ ও আছ্’ ধাতু বা ক্রিয়ামূল দ্বারা গঠিত ক্রিয়া পদগুলো উহ্য থাকে।]ক্রিয়ার প্রকারভেদ১. সমাপিকা-অসমাপিকা ক্রিয়াবাক্যের ভাব প্রকাশের উপর ভিত্তি করে ক্রিয়াপদকে সমাপিকা ক্রিয়া ও অসমাপিকা ক্রিয়া, এই দুইভাগে ভাগ করা হয়েছে।সমাপিকা ক্রিয়া : যে ক্রিয়া পদ বাক্যের ভাবের পরিসমাপ্তি ঘটায়, তাকে সমাপিকা ক্রিয়া বলে। অর্থাৎ, যে ক্রিয়া পদ বাক্যকে সম্পূর্ণ করে, আর কিছু শোনার আকাঙ্ক্ষা বাকি থাকে না, তাকে সমাপিকা ক্রিয়া বলে।একটি বাক্যে একটি সমাপিকা ক্রিয়া থাকতেই হয়। এবং একটি বাক্যে একটার বেশি সমাপিকা ক্রিয়া থাকতে পারে না। যেমন-
- ছেলেরা খেলছে। ছেলেরা খেলা করছে।
দ্বিতীয় বাক্যে ‘খেলা’ সমাপিকা ক্রিয়া নয়। এ জন্য ‘করছে’ সমাপিকা ক্রিয়া আনতে হয়েছে। নয়তো বাক্যটি সম্পূর্ণ হচ্ছে না।অসমাপিকা ক্রিয়া : যে ক্রিয়া পদ দ্বারা বাক্যের ভাবের পরিসমাপ্তি ঘটে না, তাকে অসমাপিকা ক্রিয়া বলে। অর্থাৎ, যে ক্রিয়া দ্বারা বাক্য সম্পূর্ণ হয় না, আরো কিছু শোনার আকাঙ্ক্ষা থেকেই যায়, তাকে অসমাপিকা ক্রিয়া বলে।অসমাপিকা ক্রিয়া ব্যবহারের পরও বাক্যে সমাপিকা ক্রিয়া ব্যবহার করতে হয়। শুধু অসমাপিকা ক্রিয়া দিয়ে বাক্য গঠিত হয় না।একটি বাক্যে যতোগুলো ইচ্ছা অসমাপিকা ক্রিয়া ব্যবহার করা যায়। কিন্তু একটি সমাপিকা ক্রিয়া আনতেই হয়। যেমন-- ছেলেরা খেলা।
এখানে খেলা একটি অসমাপিকা ক্রিয়া। ক্রিয়া পদ হলেও এটি দিয়ে বাক্যটি সম্পূর্ণ হয়নি, আরো কিছু শোনার আকাঙ্ক্ষা থেকেই যাচ্ছে। এর সঙ্গে আরেকটি সমাপিকা ক্রিয়া ‘করছে’ যোগ করলেই কেবল বাক্যটি সম্পূর্ণ হবে।- ছেলেরা খেলা করছে।
সাধারণত অসমাপিকা ক্রিয়ার শেষে ইয়া, ইলে, ইতে, এ, লে, তে বিভক্তিগুলো যুক্ত থাকে।২. সকর্মক-অকর্মক-দ্বিকর্মক ক্রিয়াবাক্যে ক্রিয়ার কর্মের উপর ভিত্তি করে ক্রিয়াপদকে অকর্মক, সকর্মক ও দ্বিকর্মক- এই ৩ ভাগে ভাগ করা হয়।কর্ম পদ : যে পদকে আশ্রয় করে ক্রিয়া পদ তার কাজ সম্পাদন বা সংঘটন করে, তাকে কর্ম পদ বলে। অর্থাৎ, ক্রিয়া পদ কাজ করার জন্য যেই পদকে ব্যবহার করে, তাকে কর্ম পদ বলে।ক্রিয়া পদকে ‘কী/ কাকে’ দিয়ে প্রশ্ন করলে যে উত্তর পাওয়া যায়, সেটিই কর্মপদ। আর যদি উত্তর না পাওয়া যায়, তবে সেই ক্রিয়ার কোন কর্মপদ নেই। যেমন-- মেয়েটি কলম কিনেছে।
- মেয়েটি হাসে।
এখানে প্রথম বাক্যে ক্রিয়াপদ ‘কিনেছে’কে ‘কী’ দিয়ে প্রশ্ন করলে উত্তর পাওয়া যায় ‘কলম’। (কী কিনেছে?- কলম) অর্থাৎ, প্রথম বাক্যের ক্রিয়ার কর্মপদ কলম।আবার দ্বিতীয় বাক্যের ক্রিয়াপদ ‘হাসে’কে ‘কী/ কাকে’ কোনটা দিয়ে প্রশ্ন করলেই কোন উত্তর পাওয়া যাচ্ছে না। সুতরাং, এই বাক্যের ক্রিয়াপদের কোন কর্ম নেই।অকর্মক ক্রিয়া : যে ক্রিয়াপদের কোন কর্ম নেই তাকে অকর্মক ক্রিয়া বলে।সকর্মক ক্রিয়া : যে ক্রিয়াপদের কর্ম পদ আছে তাকে সকর্মক ক্রিয়া বলে।দ্বিকর্মক ক্রিয়া : কখনো কখনো একটি বাক্যে একই ক্রিয়াপদের দুটি কর্ম পদ থাকে। তখন সেই ক্রিয়াপদকে দ্বিকর্মক ক্রিয়া বলে। এক্ষেত্রে, বস্তুবাচক কর্মপদকে প্রধান বা মুখ্য কর্ম বলে এবং ব্যক্তিবাচক কর্মপদকে গৌণ কর্ম বলে। অর্থাৎ, বস্তুবাচক কর্মটিকেই বেশি গুরুত্ব দেয়া হয়। যেমন- ‘বাবা আমাকে একটি ল্যাপটপ কিনে দিয়েছেন।’এখানে ‘কিনে দিয়েছেন’ ক্রিয়ার কর্মপদ দুটি, ‘আমাকে’ (কাকে কিনে দিয়েছেন?) ও ‘ল্যাপটপ’ (কী কিনে দিয়েছেন?)। এখানে বস্ত্তবাচক কর্মপদ ‘ল্যাপটপ’, আর ব্যক্তিবাচক কর্মপদ ‘আমাকে’। সুতরাং এখানে মুখ্য বা প্রধান কর্মপদ ‘ল্যাপটপ’ আর গৌণ বা অপ্রধান কর্ম ‘আমাকে’।সমধাতুজ কর্ম : বাক্যের ক্রিয়াপদ ও কর্মপদ যদি একই ধাতু বা ক্রিয়ামূল থেকে গঠিত হয়, তবে তাকে সমধাতুজ কর্মপদ বলে। অর্থাৎ, ক্রিয়াপদ ও কর্মপদ একই শব্দমূল থেকে গঠিত হলে তাকে সমধাতুজ কর্মপদ বলে। যেমন-- আজ এমন ঘুম ঘুমিয়েছি।
এখানে ক্রিয়াপদ ‘ঘুমিয়েছি’, আর কর্মপদ ‘ঘুম’ (কী ঘুমিয়েছি?)। আর এই ‘ঘুমিয়েছি’ আর ‘ঘুম’ দুটি শব্দেরই শব্দমূল ‘ঘুম্’। অর্থাৎ, শব্দ দুইটি একই ধাতু হতে গঠিত (ক্রিয়ার মূলকে ধাতু বলে)। সুতরাং, এই বাক্যে ‘ঘুম’ কর্মটি একটি সমধাতুজ কর্ম। এরকম-- আজ কী খেলা খেললাম। (খেল্)
- আর মায়াকান্না কেঁদো না। (কাঁদ্)
- এমন মরণ মরে কয়জনা? (মর্)
৩. প্রযোজক ক্রিয়াযে ক্রিয়া একজনের প্রযোজনায় আরেকজন করে তাকে প্রযোজক ক্রিয়া বলে।প্রযোজক ক্রিয়ার দু’জন কর্তা থাকে। এরমধ্যে একজন কর্তা কাজটি আরেকজন কর্তাকে দিয়ে করান। অর্থাৎ, একজন যখন আরেকজনকে দিয়ে কোন কাজ করিয়ে নেয়, তখন সেই ক্রিয়াপদটিকে বলে প্রযোজক ক্রিয়া। [সংস্কৃত ব্যাকরণে এরই নাম ণিজন্ত ক্রিয়া।]প্রযোজক ক্রিয়ার দুইজন কর্তার মধ্যে যিনি কাজটি করান, তাকে বলে প্রযোজক কর্তা। আর যিনি কাজটি করেন, তাকে বলে প্রযোজ্য কর্তা। তাকে দিয়ে কাজটি প্রযোজ্য করা হয় বলে তাকে প্রযোজ্য কর্তা বলে। যেমন-- মা শিশুকে চাঁদ দেখাচ্ছেন।
এখানে চাঁদ দেখার কাজটি করছে ‘শিশু’, কিন্তু চাঁদ দেখাচ্ছেন ‘মা’। অর্থাৎ, ‘মা’ কাজটি প্রযোজনা করছেন। তাই ‘মা’ এখানে প্রযোজক কর্তা। আর চাঁদ দেখার কাজটি আসলে ‘শিশু’ করছে, তাই ‘শিশু’ এখানে প্রযোজ্য কর্তা। এরকম-- সাপুড়ে সাপ খেলায়। (এখানে সাপুড়ে প্রযোজক কর্তা, আর সাপ প্রযোজ্য কর্তা)
৪. নামধাতুর ক্রিয়াবিশেষ্য, বিশেষণ ধ্বন্যাত্মক অব্যয়ের পরে ‘আ’ প্রত্যয় যুক্ত হয়ে যে সব ধাতু গঠিত হয়, তাদেরকে নামধাতু বলে। নামধাতুর সঙ্গে ক্রিয়াবিভক্তি যুক্ত হয়ে যেসব ক্রিয়াপদ গঠন করে, তাদেরকেই নামধাতুর ক্রিয়া বলে।যেমন-- বিশেষ্য = বেত+আ = বেতা, ক্রিয়াপদ = বেতানো, বেতাচ্ছেন, বেতিয়ে
- বিশেষণ = বাঁকা+আ = বাঁকা, ক্রিয়াপদ = বাঁকানো, বাঁকাচ্ছেন, বাঁকিয়ে
- ধ্বন্যাত্মক অব্যয় = কন কন+আ = কনকনা, ক্রিয়াপদ = কনকনাচ্ছে, কনকনিয়ে
বাক্যে প্রয়োগ- লোকটি ছেলেটিকে বেতাচ্ছে।- কঞ্চিটি বাঁকিয়ে ধর।
- দাঁত ব্যথায় কনকনাচ্ছে। অজগরটি ফোঁসাচ্ছে।
ব্যতিক্রম : কয়েকটি নামধাতু ‘আ’ প্রত্যয় ছাড়াই ধাতু হিসেবে ব্যবহৃত হয়। যেমন-- ফল = বাগানে এবার অনেক আম ফলেছে।
- টক = তরকারি বাসি হলে টকে।
- ছাপা = প্রকাশক তার বইটা এবার মেলায় ছেপেছে।
৫. যৌগিক ক্রিয়াএকটি সমাপিকা ক্রিয়া ও একটি অসমাপিকা ক্রিয়া পাশাপাশি বসে যদি কোন বিশেষ বা সম্প্রসারিত অর্থ প্রকাশ করে, তাকে যৌগিক ক্রিয়া বলে। অর্থাৎ, একটি সমাপিকা ও একটি অসমাপিকা ক্রিয়া মিলে যদি তাদের সাধারণ অর্থ প্রকাশ না করে কোন বিশেষ অর্থ প্রকাশ করে, তখন তাকে যৌগিক ক্রিয়া বলে। যেমন-- ঘটনাটা শুনে রাখ। (শোনার বদলে তাগিদ দেয়া অর্থ বুঝিয়েছে)
- তিনি বলতে লাগলেন। (বলার অর্থ সম্প্রসারণ করে নিরন্তর বলা বুঝিয়েছে)
- ছেলেমেয়েরা শুয়ে পড়ল। (শোওয়ার পাশাপাশি দিনের কার্যসমাপ্তিও বোঝাচ্ছে)
- সাইরেন বেজে উঠল। (আকস্মিক সাইরেন বাজার কথা বলা হচ্ছে)
- শিক্ষায় মন সংস্কারমুক্ত হয়ে থাকে। (অভ্যস্ততা অর্থে, ধীরে ধীরে সংস্কারমুক্ত হয় বোঝাচ্ছে)
- এখন যেতে পার। (যাওয়ার বদলে অনুমোদন অর্থে)
৬. মিশ্র ক্রিয়াবিশেষ্য, বিশেষণ ও ধ্বন্যাত্মক অব্যয়ের সঙ্গে কর্, হ্, দে, পা, যা, কাট্, গা, ছাড়্, ধর্, মার্, প্রভৃতি ধাতু যোগ হয়ে ক্রিয়াপদ গঠন করে কোন বিশেষ অর্থ প্রকাশ করলে তাকে মিশ্র ক্রিয়া বলে। যেমন-বিশেষ্যের পরে :- আমরা তাজমহল দর্শন করলাম।
- গোল্লায় যাও।
বিশেষেণের পরে :- তোমাকে দেখে বিশেষ প্রীত হলাম।
ধ্বন্যাত্মক অব্যয়ের পরে :- মাথা ঝিম ঝিম করছে। ঝম ঝম করে বৃষ্টি পড়ছে।
[খেয়াল রাখতে হবে, যৌগিক ক্রিয়া দুইটি ক্রিয়ার মাধ্যমে গঠিত হয়, যার একটি সমাপিকা ক্রিয়া আরেকটি অসমাপিকা ক্রিয়া। অন্যদিকে, মিশ্র ক্রিয়া বিশেষ্য, বিশেষণ বা ধ্বন্যাত্মক অব্যয়ের পরে ক্রিয়াপদ বসে গঠিত হয়।]পুরুষভেদে ক্রিয়ার রূপপুরুষ সাধারণ সম্ভ্রমাত্মক তুচ্ছার্থক/ ঘনিষ্ঠার্থক উত্তম পুরুষ আমি যাই
আমরা যাই——— ——– মধ্যম পুরুষ তুমি যাও
তোমরা যাওআপনি যান
আপনারা যানতুই যা
তোরা যানাম পুরুষ সে যায়
তারা যায়তিনি যান
তাঁরা যানএটা যায়
এগুলো যায়[উত্তম পুরুষ : বাক্যের বক্তাই উত্তম পুরুষ। অর্থাৎ, যেই ব্যক্তি বাক্যটি বলেছে, সেই উত্তম পুরুষ। উত্তম পুরুষের সর্বনামের রূপ হলো- আমি, আমরা, আমাকে, আমাদের, ইত্যাদি।মধ্যম পুরুষ : বাক্যের উদ্দিষ্ট শ্রোতাই মধ্যম পুরুষ। অর্থাৎ, উত্তম পুরুষ যাকে উদ্দেশ্য করে বাক্যটি বলে, এবং পাশাপাশি বাক্যেও উল্লেখ করে, তাকে মধ্যম পুরুষ বলে। অর্থাৎ, প্রত্যক্ষভাবে উদ্দিষ্ট শ্রোতাই মধ্যম পুরুষ। মধ্যম পুরুষের সর্বনামের রূপ হলো- তুমি, তোমরা, তোমাকে, তোমাদের, তোমাদিগকে, আপনি, আপনার, আপনাদের, ইত্যাদি।নামপুরুষ : বাক্যে বক্তা অনুপস্থিত যেসব ব্যক্তি, বস্ত্ত বা প্রাণীর উল্লেখ করেন, তাদের নামপুরুষ বলে। অর্থাৎ, বক্তার সামনে নেই এমন যা কিছুর কথা বক্তা বাক্যে বলেন, সবগুলোই নামপুরুষ। নাম পুরুষের সর্বনামের রূপ হলো- সে, তারা, তাহারা, তাদের, তাহাকে, তিনি, তাঁকে, তাঁরা, তাঁদের, ইত্যাদি।]
ধাতু
ক্রিয়ার মূল কিংবা এর যে অবিভাজ্য অংশ এর অন্তর্নিহিত মূল ভাবটির দ্যোতনা (দ্যোতনা=সূচনা, প্রকাশনা) করে, অথবা বিশ্লেষণ করা যায় না এ রকম যে ক্ষুদ্রতম ধ্বনি-সমষ্টি ক্রিয়ার বস্তু বা গুণ বা অবস্থান বুঝায় তাকে ধাতু বলে। যেমন- ‘করা’ ক্রিয়ার মূল ‘কর্’ একটি ধাতু।
ধাতুর প্রকারভেদ
ধাতু প্রধানত তিন প্রকার।
- মৌলিক বা সিদ্ধ ধাতু
যে সকল ধাতু বিশ্লেষণ করলে কোন প্রত্যয় পাওয়া যায় না বা যারা সয়ংসিদ্ধ ধাতু, তাদেরকে মৌলিক ধাতু কিংবা সিদ্ধ ধাতু বলে। যেমন- _/কর্, _/চল, _/দেখ্। - সাধিত ধাতু
কোন মৌলিক ধাতু কিংবা নাম শব্দের সাথে প্রত্যয় যুক্ত হয়ে যে ধাতু গঠিত হয় তাকে সাধিত ধাতু বলে। যেমন- _/কর + আ = _/করা, _/দেখ্ + আ = _/দেখা। - সংযোগমূলক বা যৌগিক ধাতু
বিশেষ্য, বিশেষণ ইত্যাদির সাথে যুক্ত হয়ে যে ধাতু গঠন করে তাকে সংযোগমূলক বা যৌগিক ধাতু বলে। যেমন- পূজা কর্, রাজি হ, কষ্ট পা, শাস্তি দে।
অন্যান্য ধাতুসমূহ
- নাম ধাতু
নাম শব্দ অথ্যাৎ বিশেষ্য, বিশেষণ, অব্যয় প্রভৃতি শব্দ কখনও কখনও প্রত্যয়যোগে, কখনওবা প্রত্যয় যুক্ত না হয়ে ক্রিয়ারূপে ব্যবহৃত হয়। এ ধরনের ক্রিয়ার মূলকে নাম ধাতু বলে। যেমন- জুতা > জুতানো, বেত > বেতানো, হাত > হাতানো। - ণিজন্ত বা প্রযোজন ধাতু
মৌলিক ধাতুর সাথে ‘আ’ বা ‘ওয়া’ যুক্ত হয়ে ণিজন্ত বা প্রযোজন ধাতু গঠিত হয়। এটা এক ধরনের সাধিত ধাতু। যেমন- _/কর + আ =করা। - ধ্বন্যাত্মক ধাতু
ধাতুরূপে ব্যবহৃত অনুকার (অনুকার = সাদৃশ্যকরণ, অনুকরণ) ধ্বনিকে ধ্বন্যাত্মক ধাতু বলে। যেমন- ফোঁসা, হাঁপা, মচ্মচা, টল্টলা। - নঞ্র্থক ধাতু
‘অস্তি’ বাচক ‘হ’ ধাতুর পূর্বে নঞ্র্থক ‘ন’ শব্দের যোগে গঠিত ‘নহ্’ ধাতুকে নঞ্র্থক ধাতু বলে। যেমন- নহি, নই, নহ, নও, নহে, নয়।
- অব্যয় পদঅব্যয় শব্দকে ভাঙলে পাওয়া যায় ‘ন ব্যয়’, অর্থাৎ যার কোন ব্যয় নেই।যে পদের কোন ব্যয় বা পরিবর্তন হয় না, তাকে অব্যয় পদ বলে। অর্থাৎ, যে পদ সর্বদা অপরিবর্তনীয় থাকে, যার সঙ্গে কোন বিভক্তি যুক্ত হয় না এবং পুরুষ বা বচন বা লিঙ্গ ভেদে যে পদের রূপের বা চেহারারও কোন পরিবর্তন হয় না, তাকে অব্যয় পদ বলে।অব্যয় পদ বাক্যে কোন পরিবর্তন ছাড়াই ব্যবহৃত হয় এবং বাক্যে ব্যবহৃত হয়ে কখনো বাক্যকে আরো শ্রচতিমধুর করে, কখনো একাধিক পদ বা বাক্যাংশ বা বাক্যের মধ্যে সম্পর্ক সৃষ্টি করে।বাংলা ভাষায় ৩ ধরনের অব্যয় শব্দ ব্যবহৃত হয়-১. বাংলা অব্যয় শব্দ : আর, আবার, ও, হাঁ, না২. তৎসম অব্যয় শব্দ : যদি, যথা, সদা, সহসা, হঠাৎ, অর্থাৎ, দৈবাৎ, বরং, পুনশ্চ, আপাতত, বস্ত্তত।‘এবং’ ও ‘সুতরাং’ এই দুটি অব্যয় শব্দও তৎসম, অর্থাৎ সংস্কৃত ভাষা থেকে এসেছে। তবে এ দুটি অব্যয় শব্দের অর্থ বাংলা ভাষায় এসে পরিবর্তিত হয়ে গেছে। সংস্কৃতে ‘এবং = এমন’ আর ‘সুতরাং = অত্যন্ত, অবশ্য’বাংলায় ‘এবং = ও’ আর ‘সুতরাং = অতএব’৩. বিদেশি অব্যয় শব্দ : আলবত, বহুত, খুব, শাবাশ, খাসা, মাইরি, মারহাবাঅব্যয়ের প্রকারভেদঅব্যয় পদ মূলত ৪ প্রকার-১. সমুচ্চয়ী অব্যয় :যে অব্যয় পদ একাধিক পদের বা বাক্যাংশের বা বাক্যের মধ্যে সম্পর্ক স্থাপন করে, তাকে সমুচ্চয়ী অব্যয় বলে। এই সম্পর্ক সংযোজন, বিয়োজন বা সংকোচন যে কোনটিই হতে পারে। একে সম্বন্ধবাচক অব্যয়ও বলে।সংযোজক অব্যয় : উচ্চপদ ও সামাজিক মর্যাদা সকলেই চায়। (উচ্চপদ, সামাজিক মর্যাদা- দুটোই চায়)তিনি সৎ, তাই সকলেই তাঁকে শ্রদ্ধা করে। (তাই অব্যয়টি ‘তিনি সৎ’ ও ‘সকলেই তাকে শ্রদ্ধা করে’ বাক্য দুটির মধ্যে সংযোগ ঘটিয়েছে।এরকম- ও, আর, তাই, অধিকন্তু, সুতরাং, ইত্যাদি।ক) বিয়োজক অব্যয় :আবুল কিংবা আব্দুল এই কাজ করেছে। (আবুল, আব্দুল- এদের একজন করেছে, আরেকজন করেনি। সম্পর্কটি বিয়োগাত্মক, একজন করলে অন্যজন করেনি।)
মন্ত্রের সাধন কিংবা শরীর পাতন। (‘মন্ত্রের সাধন’ আর ‘শরীর পাতন’ বাক্যাংশ দুটির একটি সত্য হবে, অন্যটি মিথ্যা হবে।)
এরকম- কিংবা, বা, অথবা, নতুবা, না হয়, নয়তো, ইত্যাদি।খ) সংকোচক অব্যয় :তিনি শিক্ষিত, কিন্তু অসৎ। (এখানে ‘শিক্ষিত’ ও ‘অসৎ’ দুটোই সত্য, কিন্তু শব্দগুলোর মধ্যে সংযোগ ঘটেনি। কারণ, বৈশিষ্ট্য দুটো একরকম নয়, বরং বিপরীতধর্মী। ফলে তিনি অসৎ বলে তিনি শিক্ষিত বাক্যাংশটির ভাবের সংকোচ ঘটেছে।)
এরকম- কিন্তু, বরং, তথাপি, যদ্যপি, ইত্যাদি।২. অনন্বয়ী অব্যয় : যে সব অব্যয় পদ নানা ভাব বা অনুভূতি প্রকাশ করে, তাদেরকে অনন্বয়ী অব্যয় বলে। এগুলো বাক্যের অন্য কোন পদের সঙ্গে কোন সম্পর্ক না রেখে স্বাধীনভাবে বাক্যে ব্যবহৃত হয়। যেমন-উচ্ছ্বাস প্রকাশে : মরি মরি! কী সুন্দর সকাল!স্বীকৃতি বা অস্বীকৃতি প্রকাশে : হ্যা, আমি যাব। না, তুমি যাবে না।সম্মতি প্রকাশে : আমি আজ নিশ্চয়ই যাব।অনুমোদন প্রকাশে : এতো করে যখন বললে, বেশ তো আমি আসবো।সমর্থন প্রকাশে : আপনি তো ঠিকই বলছেন।যন্ত্রণা প্রকাশে : উঃ! বড্ড লেগেছে।ঘৃণা বা বিরক্তি প্রকাশে : ছি ছি, তুমি এতো খারাপ!সম্বোধন প্রকাশে : ওগো, তোরা আজ যাসনে ঘরের বাহিরে।সম্ভাবনা প্রকাশে : সংশয়ে সংকল্প সদা টলে/ পাছে লোকে কিছু বলে।বাক্যালংকার হিসেবে : কত না হারানো স্মৃতি জাগে আজ মনে।: হায়রে ভাগ্য, হায়রে লজ্জা, কোথায় সভা, কোথায় সজ্জা।৩. অনুসর্গ অব্যয় :যেসব অব্যয় শব্দ বিশেষ্য ও সর্বনাম পদের বিভক্তির কাজ করে, এবং কারকবাচকতা প্রকাশ করে, তাকে অনুসর্গ অব্যয় বলে। অর্থাৎ, যেই অব্যয় অনুসর্গের মতো ব্যবহৃত হয়, তাকে অনুসর্গ অব্যয় বলে। যেমন-ওকে দিয়ে এ কাজ হবে না। (এখানে ‘দিয়ে’ তৃতীয়া বিভক্তির মতো কাজ করেছে, এবং ‘ওকে’ যে কর্ম কারক, তা নির্দেশ করেছে। এই ‘দিয়ে’ হলো অনুসর্গ অব্যয়।)[কারক ও বিভক্তি] [অনুসর্গ]৪. অনুকার বা ধ্বন্যাত্মক অব্যয় :বিভিন্ন শব্দ বা প্রাণীর ডাককে অনুকরণ করে যেসব অব্যয় পদ তৈরি করা হয়েছে, তাদেরকে অনুকার বা ধ্বন্যাত্মক অব্যয় বলে।মানুষ আদিকাল থেকেই অনুকরণ প্রিয়। তারা বিভিন্ন ধরনের শব্দ, প্রাকৃতিক শব্দ, পশুপাখির ডাক, যেগুলো তারা উচ্চারণ করতে পারে না, সেগুলোও উচ্চারণ করার চেষ্টা করেছে। এবং তা করতে গিয়ে সে সকল শব্দের কাছাকাছি কিছু শব্দ তৈরি করেছে। বাংলা ভাষার এ সকল শব্দকে বলা হয় অনুকার বা ধ্বন্যাত্মক অব্যয়। যেমন-- বজ্রের ধ্বনি- কড় কড়
- তুমুল বৃষ্টির শব্দ- ঝম ঝম
- স্রোতের ধ্বনি- কল কল
- বাতাসের শব্দ- শন শন
- নূপুরের আওয়াজ- রুম ঝুম
- সিংহের গর্জন- গর গর
- ঘোড়ার ডাক- চিঁহি চিঁহি
- কোকিলের ডাক- কুহু কুহু
- চুড়ির শব্দ-টুং টাং
শুধু বিভিন্ন শব্দই না, মানুষ তাদের বিভিন্ন অনুভূতিকেও শব্দের আকারে ভাষায় প্রকাশ করার চেষ্টা করেছে। ফলে বিভিন্ন ধরনের অনুভূতি প্রকাশের জন্য তারা বিভিন্ন শব্দ তৈরি করেছে। এগুলোও অনুকার অব্যয়। যেমন-- ঝাঁ ঝাঁ (প্রখরতা)
- খাঁ খাঁ (শূণ্যতা)
- কচ কচ
- কট কট
- টল মল
- ঝল মল
- চক চক
- ছম ছম
- টন টন
- খট খট
কিছু বিশেষ অব্যয়১. অব্যয় বিশেষণ : কোন অব্যয় বাক্যে ব্যবহৃত হয়ে বিশেষণের কাজ করলে, তাকে অব্যয় বিশেষণ বলে।- নাম বিশেষণ : অতি ভক্তি চোরের লক্ষণ।
- ক্রিয়া বিশেষণ : আবার যেতে হবে।
- বিশেষণীয় বিশেষণ : রকেট অতি দ্রচত চলে।
২. নিত্য সম্বন্ধীয় বিশেষণ : কিছু কিছু যুগ্ম অব্যয় আছে, যারা বাক্যে একসাথে ব্যবহৃত হয়, এবং তাদের একটির অর্থ আরেকটির উপর নির্ভর করে। এদের নিত্য সম্বন্ধীয় বিশেষণ বলে। যেমন- যথা-তথা, যত-তত, যখন-তখন, যেমন-তেমন, যে রূপ-সে রূপ, ইত্যাদি। উদাহরণ-- যত গর্জে তত বর্ষে না।
- যেমন কর্ম তেমন ফল।
৩. ত প্রত্যয়ান্ত বিশেষণ : ত প্রত্যয়ান্ত কিছু তৎসম অব্যয় বাংলায় ব্যবহৃত হয়। সংস্কৃততে প্রত্যয়টি ছিল ‘তস্’, বাংলায় তা হয়েছে ‘ত’। যেমন- ধর্মত, দুর্ভাগ্যবশত, অন্তত, জ্ঞানত, ইত্যাদি।
সর্বনামের পুরুষ [PERSON]
[বিশেষ্য, সর্বনাম ও ক্রিয়াপদের পুরুষভেদে ভিন্ন রূপ দেখা যায়। বিশেষণ ও অব্যয় পদের কোন পুরুষভেদ নেই।]
পুরুষ ৩ প্রকার। সুতরাং, সর্বনাম পদের পুরুষও ৩টি-
উত্তম পুরুষ :
বাক্যের বক্তাই উত্তম পুরুষ। অর্থাৎ, যেই ব্যক্তি বাক্যটি বলেছে, সেই উত্তম পুরুষ। উত্তম পুরুষের সর্বনামের রূপ হলো- আমি, আমরা, আমাকে, আমাদের, ইত্যাদি।
মধ্যম পুরুষ :
বাক্যের উদ্দিষ্ট শ্রোতাই মধ্যম পুরুষ। অর্থাৎ, উত্তম পুরুষ যাকে উদ্দেশ্য করে বাক্যটি বলে, এবং পাশাপাশি বাক্যেও উল্লেখ করে, তাকে মধ্যম পুরুষ বলে। অর্থাৎ, প্রত্যক্ষভাবে উদ্দিষ্ট শ্রোতাই মধ্যম পুরুষ। মধ্যম পুরুষের সর্বনামের রূপ হলো- তুমি, তোমরা, তোমাকে, তোমাদের, তোমাদিগকে, আপনি, আপনার, আপনাদের, ইত্যাদি।
নামপুরুষ :
বাক্যে বক্তা অনুপস্থিত যেসব ব্যক্তি, বস্ত্ত বা প্রাণীর উল্লেখ করেন, তাদের নামপুরুষ বলে। অর্থাৎ, বক্তার সামনে নেই এমন যা কিছুর কথা বক্তা বাক্যে বলেন, সবগুলোই নামপুরুষ। নাম পুরুষের সর্বনামের রূপ হলো- সে, তারা, তাহারা, তাদের, তাহাকে, তিনি, তাঁকে, তাঁরা, তাঁদের, ইত্যাদি।]
[সমস্ত বিশেষ্য পদই নামপুরুষ।]
প্রকৃতি
১. শব্দমূল বা শব্দের যে অংশকে আর ভাঙা যায় না, তাকে প্রকৃতি বলে। প্রত্যয় যুক্ত প্রতিটি মৌলিক শব্দ তথা প্রত্যয় যুক্ত প্রতিটি প্রাতিপদিক ও ধাতুই একেকটি প্রকৃতি। কিন্তু মৌলিক শব্দকে প্রকৃতি বলা যায় না। যখনই সেই শব্দের সঙ্গে বা অতিরিক্ত শব্দাংশ বা প্রত্যয় যুক্ত হয়ে নতুন শব্দ গঠন করে, তখনই কেবল নতুন সৃষ্ট শব্দটির মূল শব্দটিকে প্রকৃতি বলা যায়।
অর্থাৎ, প্রত্যয় সাধিত শব্দের মূলশব্দকে বলা হয় প্রকৃতি। কিন্তু শব্দটি থেকে প্রত্যয় সরিয়ে ফেললে, মূলশব্দটিকে তখন আর প্রকৃতি বলা যাবে না।
যেমন- লাজুক, বড়াই, ঘরামি, পড়ুয়া, নাচুনে, জিতা শব্দগুলোর মূলশব্দ যথাক্রমে লাজ, বড়, ঘর, পড়, নাচ, জিত। এখানে, লাজুক, বড়াই, ঘরামি, পড়ুয়া, নাচুনে, জিতা শব্দগুলো প্রত্যয়সাধিত (মূলশব্দের সঙ্গে অতিরিক্ত শব্দাংশ বা প্রত্যয় যুক্ত হয়েছে।) আর এই শব্দগুলোর মূলশব্দ লাজ, বড়, ঘর, পড়, নাচ, জিত। অর্থাৎ লাজ, বড়, ঘর, পড়, নাচ, জিত- এগুলো লাজুক, বড়াই, ঘরামি, পড়ুয়া, নাচুনে, জিতা শব্দগুলোর প্রকৃতি। কিন্তু আলাদাভাবে উল্লেখ করলে এগুলো আর প্রকৃতি নয়, এগুলো তখন স্রেফ কতোগুলো মৌলিক শব্দ।
২. শব্দ বা ধাতুর মূলকে প্রকৃতি বলে। শব্দের মূল বলতে মৌলিক শব্দকে এবং ধাতুর মূল বলতে সিদ্ধ বা মৌলিক ধাতুকেই সাধারণত বুঝায়। যেমন- ‘দোকান’ শব্দের মূল ‘দোকান’, ‘ঢাকা’ শব্দের মূল ‘ঢাকা’ এবং _/লিখ ধাতুর মূল ‘লিখ্’, _/কর ধাতুর মূল ‘কর,’।
প্রকৃতি দুই প্রকার। যথা-
- নাম-প্রকৃতি
শব্দের মূলকে নাম-প্রকৃতি বলে। নাম-প্রকৃতির আগে বা পরে কিছু যোগ না করলেও এইগলো শব্দ বলে গণ্য হয়। তাবুও বাক্যে ব্যবহার করতে গেলে এ নাম-প্রকৃতির সাথে বিভক্তি চিহ্ন যোগ করতে হয়। যেমন- ঢাকা, দোকান।
অন্যভাবে- প্রাতিপদিকের সঙ্গে প্রত্যয় যুক্ত হলে প্রাতিপদিকটিকে নাম প্রকৃতি বলে। যেমন, উপরের লাজ, বড়, ঘর- এগুলো নাম প্রকৃতি। - ক্রিয়া-প্রকৃতি
ধাতুর মূলকে ধাতু-প্রকৃতি বা ক্রিয়া-প্রকৃতি বলে। ধাতু-প্রকৃতি বা ক্রিয়া-প্রকৃতি প্রত্যয় বা বিভক্তিযুক্ত না হয়ে শব্দরূপে ব্যবহৃত হয় না। যে সমস্ত ধাতু শব্দরূপে ব্যবহৃত হতে দেখা যায়, সে গুলোতে একটি শূন্য প্রত্যয় যুক্ত আছে বলে ধরে নেওয়া হয়। যেমন- লিখ্, কর্।
অন্যভাবে- ধাতুর সঙ্গে প্রত্যয় যুক্ত হলে ধাতুটিকে ক্রিয়া প্রকৃতি বলে। যেমন, উপরের √পড়, √নাচ, √জিত- এগুলো ক্রিয়া প্রকৃতি।
প্রত্যয়
মূলশব্দ বা মৌলিক শব্দের সঙ্গে যে অতিরিক্ত শব্দাংশ যুক্ত হয়ে নতুন নামপদ গঠন করে, তাকে প্রত্যয় বলে। [যা ক্রিয়ামূল ও শব্দমূলের সাথে যুক্ত হয়ে নূতন পদ সৃষ্টি করে বা বাক্যস্থ শব্দের ভিতরে সম্পর্ক সৃষ্টিতে সহায়তা করে, এমন ধ্বনি বা ধ্বনিগুচ্ছকে প্রত্যয় বলা হয়। ইংরেজি suffix, postfix। ] অর্থাৎ, প্রাতিপদিক ও ধাতুর সঙ্গে যেই শব্দাংশ যুক্ত হয়ে নতুন শব্দ গঠন করে, তাদেরকেই প্রত্যয় বলে। উপরের উদাহরণে, লাজুক শব্দের প্রকৃতি ‘লাজ’-এর সঙ্গে প্রত্যয় ‘উক’ যুক্ত হয়ে গঠিত হয়েছে ‘লাজুক’ শব্দটি। এমনিভাবে-
প্রকৃতি + প্রত্যয় = প্রত্যয়সাধিত শব্দ
- √বড় + আই = বড়াই
- √ঘর + আমি = ঘরামি
- √পড় + উয়া = পড়ুয়া
- √নাচ + উনে = নাচুনে
- √জিত + আ = জিতা
- √চল্ (গমন করা) +ই =চলি
- √অৎ (গমন করা) +ই =অতি (অধিক)
বাংলা ভাষায় ব্যবহৃত প্রত্যয়গুলোকে ভাষাগত প্রকৃতি অনুসারে তিনটি ভাগে ভাগ করা হয়। এই ভাগগুলো হলো—
১. সংস্কৃত প্রত্যয় :
এই প্রত্যয়কে মোট পাঁচটি ভাগে ভাগ করা হয়ে থাকে। এ গুলি হলো—
- কৃৎপ্রত্যয় (Primary suffix)
- তদ্ধিত প্রত্যয় (Secondary suffix)
- স্ত্রী-প্রত্যয় (faminine suffix)
- ধাত্ববয়ব (Parts of roots)
- বিভক্তি (Inflection)
২. বাংলা প্রত্যয় :
দেশী প্রত্যয়কেই বলা হয়, বাংলা প্রত্যয়।
৩. বিদেশী প্রত্যয় :
সংস্কৃত ও বাংলা ব্যতীত অন্যান্য প্রত্যয়গুলো বিদেশী প্রত্যয় বলা হয়।
সংস্কৃত প্রত্যয়
এই প্রত্যয়কে মোট পাঁচটি ভাগে ভাগ করা হয়ে থাকে। প্রত্যয় প্রধানত পাঁচ প্রকার। এ গুলি হলো—
১. কৃৎপ্রত্যয় (Primary suffix)
২. তদ্ধিত প্রত্যয় (Secondary suffix)
৩. স্ত্রী-প্রত্যয় (faminine suffix)
৪. ধাত্ববয়ব (Parts of roots)
৫. বিভক্তি (Inflection)
২. তদ্ধিত প্রত্যয় (Secondary suffix)
৩. স্ত্রী-প্রত্যয় (faminine suffix)
৪. ধাত্ববয়ব (Parts of roots)
৫. বিভক্তি (Inflection)
কৃৎপ্রত্যয়
সংস্কৃত কৃৎপ্রত্যয়>বাংলা কৃৎপ্রত্যয়।
বাংলা ব্যকরণে পাঁচটি প্রত্যয় -এর একটি।
যে প্রত্যয় ক্রিয়ামূলের শেষে যুক্ত হয়ে নূতন শব্দ তৈরি করে, তাকে কৃৎপ্রত্যয় বলে। বিদ্যাসাগর প্রণীত ব্যাকরণ কৌমুদী -তে এর ইংরেজি সমার্থ শব্দ হিসাবে বলা হয়েছে-primary suffix। যেমন—
√চল্ (গমন করা) +ই =চলি
বাংলা ব্যকরণে পাঁচটি প্রত্যয় -এর একটি।
যে প্রত্যয় ক্রিয়ামূলের শেষে যুক্ত হয়ে নূতন শব্দ তৈরি করে, তাকে কৃৎপ্রত্যয় বলে। বিদ্যাসাগর প্রণীত ব্যাকরণ কৌমুদী -তে এর ইংরেজি সমার্থ শব্দ হিসাবে বলা হয়েছে-primary suffix। যেমন—
√চল্ (গমন করা) +ই =চলি
কৃৎপ্রত্যয়ের তালিকা
অ (অ)
অ (অঙ)
অ (অচ্)
অ (অণ্)
অ (অন্)
অ (অপ্)
অ (ক)
অ (কঞ্)
অ (খচ্)
অ (খল্)
অ (খশ্)
অ (ঘ)
অ (ঘঞ্)
অ (ট)
অ (টক্)
অ (টচ্)
অ (ড)
অ (ডট)
অ (ণ)
অ (শ)
অ (ষ)
অ (ষ্ণ)
অই
অক (কুন)
অক (ণ্বুল)
অঙ্গ (অঙ্গচ্)
অট্ (অটন)
অটি
অণ্ড (অণ্ডক)
অৎ (অতি)
অৎ (শতৃ)
অত (অতক)
অতি (অতিচ)
অতি (ডতি)
অত্র (অত্রন্)
অন
অন্ (অনট)
অন্ (ল্যুট)
অন (কনিন্)
অন (ক্যুন)
অন (যুচ্)
অন (ল্যু)
অনীয় (অনীয়রঃ)
অন্ত (ঋচ্)
অন্ত (ঝ)
অন্য
অ (অঙ)
অ (অচ্)
অ (অণ্)
অ (অন্)
অ (অপ্)
অ (ক)
অ (কঞ্)
অ (খচ্)
অ (খল্)
অ (খশ্)
অ (ঘ)
অ (ঘঞ্)
অ (ট)
অ (টক্)
অ (টচ্)
অ (ড)
অ (ডট)
অ (ণ)
অ (শ)
অ (ষ)
অ (ষ্ণ)
অই
অক (কুন)
অক (ণ্বুল)
অঙ্গ (অঙ্গচ্)
অট্ (অটন)
অটি
অণ্ড (অণ্ডক)
অৎ (অতি)
অৎ (শতৃ)
অত (অতক)
অতি (অতিচ)
অতি (ডতি)
অত্র (অত্রন্)
অন
অন্ (অনট)
অন্ (ল্যুট)
অন (কনিন্)
অন (ক্যুন)
অন (যুচ্)
অন (ল্যু)
অনীয় (অনীয়রঃ)
অন্ত (ঋচ্)
অন্ত (ঝ)
অন্য
অভ (অভচ্)
অম
অম্ব (অম্বচ্)
অর্
অর (অরন্)
অরি
অরু
অল (অলচ্)
অল (কল)
অল (কলচ)
অলি (অলিচ)
অস্
অস্ (অসচ্)
অস (অসুন)
আ
আতু
আন (আনক্)
আন (মান)
আর (আরন)
আলু (আলুচ)
ই (ই)
ই (ইচ্)
ই (ইন্)
ই (ইঞ্)
ই (কি)
ইৎ
ইত
ইন্
ইন্ (ইনচ্)
ইন (ইনি)
ইন্ (ঘিনুণ্)
ইন্ (ণিনি)
ইম (ইমচ)
ইর (ইরন)
ইর্ (কিরচ)
ইল (ইলচ)
ইষ্ (ইষচ্)
ইষ্ (টিষচ্)
ইষ্ণু (ইষ্ণুচ্)
ঈ
ঈক (ঈকন)
ঈর (ঈরচ)
অম
অম্ব (অম্বচ্)
অর্
অর (অরন্)
অরি
অরু
অল (অলচ্)
অল (কল)
অল (কলচ)
অলি (অলিচ)
অস্
অস্ (অসচ্)
অস (অসুন)
আ
আতু
আন (আনক্)
আন (মান)
আর (আরন)
আলু (আলুচ)
ই (ই)
ই (ইচ্)
ই (ইন্)
ই (ইঞ্)
ই (কি)
ইৎ
ইত
ইন্
ইন্ (ইনচ্)
ইন (ইনি)
ইন্ (ঘিনুণ্)
ইন্ (ণিনি)
ইম (ইমচ)
ইর (ইরন)
ইর্ (কিরচ)
ইল (ইলচ)
ইষ্ (ইষচ্)
ইষ্ (টিষচ্)
ইষ্ণু (ইষ্ণুচ্)
ঈ
ঈক (ঈকন)
ঈর (ঈরচ)
উ
উ (উঙ্)
উ (উন)
উ (কু)
উ (কূ)
উ (ডু)
উক্ (উক্ঞ)
উক্ (উকন)
উৎ (উতি)
উত (ডুতচ)
উন (উনট্)
উন্ (উনন্)
উন্য
উম
উর্
উ (উঙ্)
উ (উন)
উ (কু)
উ (কূ)
উ (ডু)
উক্ (উক্ঞ)
উক্ (উকন)
উৎ (উতি)
উত (ডুতচ)
উন (উনট্)
উন্ (উনন্)
উন্য
উম
উর্
উর্ (উরন্)
উর্চ (ডুর্চ)
উল
উল্ (উলচ্)
উল (ঘুল)
উলি
উশ্
উষ (উষচ্)
উষ (কুষন্)
উস (উসি)
ঊর
ঊষ্ (ঊষন্)
এণু
ওর (ওরন)
ওল্ (ওলচ্)
ওল (ওলট)
ক
ক (কন)
ক্বিপ্ (০)
খ
গ (গক্)
ঠ
ড
উর্চ (ডুর্চ)
উল
উল্ (উলচ্)
উল (ঘুল)
উলি
উশ্
উষ (উষচ্)
উষ (কুষন্)
উস (উসি)
ঊর
ঊষ্ (ঊষন্)
এণু
ওর (ওরন)
ওল্ (ওলচ্)
ওল (ওলট)
ক
ক (কন)
ক্বিপ্ (০)
খ
গ (গক্)
ঠ
ড
ত (ক্ত)
ত (তন্)
তব্য
তব্য (তব্যৎ)
তি
তি (ক্তিচ্)
তি (ক্তিন্)
তু
তু (তুন্)
তৃ (তৃচ্)
ত্যু (ত্যুক)
ত্র
ত্র (ত্রক)
ত্র (ত্রন্)
ত্র (ষ্ট্রন)
ত্রিম (ত্রিমক)
থ (কথন)
থ (থক)
থ (থন্)
থি (কথিন)
ন
ন (নক্)
ন (নঙ্)
ন (নন্)
নি
প
পাস
ব (ক্বন)
ব (বন্)
বন্ (ঙ্বনিপ্)
বর (বরচ্)
ভ (ভন্)
ম (মক্)
ম (মন্)
মন্ (মনিন্)
মল (ক্মলচ)
মান (শানচ্)
মি
য
য (ক্যপ)
য (ণ্যৎ)
য (যৎ)
যু (যুচ্)
র
র (ড্রট)
র (রক্)
র (রন)
রি (ক্রিন)
শ
স
স (সন্)
সর
সর (সরন্)
সি (কসি)
স্রাবি
স্রু
হন্
ত (তন্)
তব্য
তব্য (তব্যৎ)
তি
তি (ক্তিচ্)
তি (ক্তিন্)
তু
তু (তুন্)
তৃ (তৃচ্)
ত্যু (ত্যুক)
ত্র
ত্র (ত্রক)
ত্র (ত্রন্)
ত্র (ষ্ট্রন)
ত্রিম (ত্রিমক)
থ (কথন)
থ (থক)
থ (থন্)
থি (কথিন)
ন
ন (নক্)
ন (নঙ্)
ন (নন্)
নি
প
পাস
ব (ক্বন)
ব (বন্)
বন্ (ঙ্বনিপ্)
বর (বরচ্)
ভ (ভন্)
ম (মক্)
ম (মন্)
মন্ (মনিন্)
মল (ক্মলচ)
মান (শানচ্)
মি
য
য (ক্যপ)
য (ণ্যৎ)
য (যৎ)
যু (যুচ্)
র
র (ড্রট)
র (রক্)
র (রন)
রি (ক্রিন)
শ
স
স (সন্)
সর
সর (সরন্)
সি (কসি)
স্রাবি
স্রু
হন্
তদ্ধিত প্রত্যয়
আক্ষরিক অর্থ -তাহার জন্য হিতকর। কিন্তু ব্যাকরণে এটি একটি প্রত্যয় হিসাবে ব্যবহৃত হয়। এই কারণে, এর পূর্ণাঙ্গ নাম -তদ্ধিত প্রত্যয়।
বাংলা ব্যকরণে পাঁচটি প্রত্যয়ের একটি হলো তদ্ধিত প্রত্যয়। যে প্রত্যয় শব্দমূলের শেষে যুক্ত হয়ে নূতন শব্দ তৈরি করে, তাকে তদ্ধিত-প্রত্যয় বলে। বিদ্যাসাগর প্রণীত ব্যাকরণ কৌমুদী এর ইংরেজি সমার্থ শব্দ হিসাবে বলা হয়েছে-secondery suffix । বাংলা শব্দে ব্যবহৃত তদ্ধিত প্রত্যয়ের তালিকা নিচে তুলে ধরা হলো-
অ (অচ)
অ (অঞ্)
অ (অণ্)
অ (ডট্)
অক (বুঞ্)
অক্ (ষ্কন্)
অঠ (অঠন্)
অয় (অয়চ্)
অয় (কয়ন)
আ
আৎ
ই
ই (ইঞ্)
ইক (ঠক্)
ইক (ঠঞ্)
ইক (ঠন্)
ইষ্ঠ (ইষ্ঠন)
ইত (ইতচ্)
ইন্ (ইনি)
ইম [ডিমচ]
ইমন্ (ইমনিচ্)
ইয় (ঘ)
ঈন (খ)
ঈয় (ছ)
ঈয়স্ (ঈয়সুন্)
এ
ক
ক্ (কন্)
ক (কপ্)
ণিচ্
ত (তপ)
তঃ (তস্)
তা (তল্)
তীয়
ত্ব
দার
দারি
বৎ (বতুপ)
মৎ (মতুপ)
মন্দ
ময় (ময়ট্)
য (যক)
য (যৎ)
য (ষ্যঞ্)
ল (লচ্)
অ (অঞ্)
অ (অণ্)
অ (ডট্)
অক (বুঞ্)
অক্ (ষ্কন্)
অঠ (অঠন্)
অয় (অয়চ্)
অয় (কয়ন)
আ
আৎ
ই
ই (ইঞ্)
ইক (ঠক্)
ইক (ঠঞ্)
ইক (ঠন্)
ইষ্ঠ (ইষ্ঠন)
ইত (ইতচ্)
ইন্ (ইনি)
ইম [ডিমচ]
ইমন্ (ইমনিচ্)
ইয় (ঘ)
ঈন (খ)
ঈয় (ছ)
ঈয়স্ (ঈয়সুন্)
এ
ক
ক্ (কন্)
ক (কপ্)
ণিচ্
ত (তপ)
তঃ (তস্)
তা (তল্)
তীয়
ত্ব
দার
দারি
বৎ (বতুপ)
মৎ (মতুপ)
মন্দ
ময় (ময়ট্)
য (যক)
য (যৎ)
য (ষ্যঞ্)
ল (লচ্)
লব
ষ (ণ্য)
সাৎ
ষ (ণ্য)
সাৎ
স্ত্রী-প্রত্যয়
বাংলা ব্যকরণে পাঁচটি প্রত্যয়ের একটি। ব্যাকরণে বর্ণিত স্ত্রীবাচক শব্দ উৎপন্ন হওয়ার ক্ষেত্রে যে সকল প্রত্যয় ক্রিয়ামূলের শেষে যুক্ত হয়, এদেরকে স্ত্রী-প্রত্যয় বলা হয়। বিদ্যাসাগর প্রণীত ব্যাকরণ কৌমুদী এর ইংরেজি সমার্থ শব্দ হিসাবে বলা হয়েছে- feminine Affix। বাংলা ভাষায় স্ত্রীবাচক শব্দ সৃষ্টির ক্ষেত্রে ব্যবহৃত স্ত্রী-প্রত্যয়ের দুটি উৎস পাওয়া যায়। এই উৎস দুটি হলো- সংস্কৃত স্ত্রী-প্রত্যয় এবং বাংলা স্ত্রী-প্রত্যয়। নিচে বাংলাতে ব্যবহৃত স্ত্রী-প্রত্যয়ের তালিকা তুলে ধরা হলো-
আ (টাপ্)
ঈ (ঈপ্)
ঈ (ঙীপ্)
ঈ (ঙীষ)
নী
ঈ (ঈপ্)
ঈ (ঙীপ্)
ঈ (ঙীষ)
নী
ধাত্ববয়ব
সংস্কৃত ব্যাকরণ থেকে গৃহীত পাঁচটি প্রত্যয়ের একটি। বিদ্যাসাগর প্রণীত ব্যাকরণ কৌমুদীতে বলা হয়েছে- ধাতুর উত্তর ই (ণিচ), স (সন্) প্রভৃতি এবং প্রাতিপাদিকের উত্তর য, কাম্য প্রভৃতি যে সমস্ত প্রত্যয় হয়, তাহাদিগকে ধাত্ববয়ব (Parts of roots) বলে। এই বিচারে যে সকল প্রত্যয়কে ধাত্বয়ব বলা হয়। মূলত এই প্রত্যয় কোন ক্রিয়ামূলের সাথে যুক্ত হয়ে নতুন ক্রিয়ামূল তৈরি করে। ফলে এই প্রত্যয় মূল ক্রিয়ামূলের অংশ (Parts of roots) অংশ হিসাবে বিবেচনা করা হয়।
যেমন- √চল্ (গমন করা) + ই (ণিচ)= √চালি।
√চল্ (গমন করা) + য (যঙ্)= √চঞ্চল।
√শ্রু (শ্রবণ) +স (সন্) =√শুশ্রুষ্
√চল্ (গমন করা) + য (যঙ্)= √চঞ্চল।
√শ্রু (শ্রবণ) +স (সন্) =√শুশ্রুষ্
নিচে ধাত্ববয়বের তালিকা দেওয়া হলো
ই (ণিচ)
য (যঙ্)
স (সন্)
য (যঙ্)
স (সন্)
বাংলা প্রত্যয়
যে সকল দেশীয় প্রত্যয় ক্রিয়ামূল ও শব্দমূলের সাথে যুক্ত হয়ে নূতন পদ সৃষ্টি করে। নিচে এই প্রত্যয়ের তালিকা তুলে ধরা হলো।
আনো
এই প্রত্যয় ক্রিয়ামূলের সাথে যুক্ত হয়ে ভাববাচক বিশেষ্য তৈরি করে। যেমন–
অংশ্ (ভাগ করা) + আনো=অংশানো
এই প্রত্যয় ক্রিয়ামূলের সাথে যুক্ত হয়ে ভাববাচক বিশেষ্য তৈরি করে। যেমন–
অংশ্ (ভাগ করা) + আনো=অংশানো
ই
তদ্ধিত প্রত্যয়। এই প্রত্যয় শব্দের সাথে বিভিন্ন অর্থে ব্যবহৃত হয়। যেমন–
ই (বৃত্তি অর্থে) : অংশীদার+ই=অংশীদারি।
তদ্ধিত প্রত্যয়। এই প্রত্যয় শব্দের সাথে বিভিন্ন অর্থে ব্যবহৃত হয়। যেমন–
ই (বৃত্তি অর্থে) : অংশীদার+ই=অংশীদারি।
ইনি
স্ত্রীবাচক প্রত্যয়। এই প্রত্যয় পুরুষবাচক শব্দের পরে বসে স্ত্রীবাচক শব্দে পরিণত করে।
স্ত্রীবাচক প্রত্যয়। এই প্রত্যয় পুরুষবাচক শব্দের পরে বসে স্ত্রীবাচক শব্দে পরিণত করে।
বিদেশী প্রত্যয়
যে সকল সংস্কৃত ও দেশী প্রত্যয় ছাড়া সকল প্রত্যয়কে বিদেশী প্রত্যয় হিসাবে বিবেচনা করা হয়। নিচে এই জাতীয় প্রত্যয়ের তালিকা তুলে ধরা হলো।
দার
ফার্স তদ্ধিত প্রত্যয়। ফার্সি دار দার (ফার্সি প্রত্যয়)>বাংলা দার।
বিভিন্ন ভাব বা অবস্থা প্রকাশে এই প্রত্যয় শব্দের সাথে যুক্ত হয়। যেমন-
১.১ অধিকারী অর্থে – অংশী +দার=অংশীদার, পাওনাদার
১.২. মালিক অর্থে- জমি +দার=জমিদার, আড়ৎদার
১.৩. পরিচালক অর্থে- চৌকি +দার=চৌকিদার। দফাদার।
১.৪. বৃত্তি অর্থে- দোকান +দার=দোকানদার, অজুরদার।
১.৫. বিশিষ্ট বা যুক্ত অর্থে – নকশা +দার=নকশাদার।
ফার্স তদ্ধিত প্রত্যয়। ফার্সি دار দার (ফার্সি প্রত্যয়)>বাংলা দার।
বিভিন্ন ভাব বা অবস্থা প্রকাশে এই প্রত্যয় শব্দের সাথে যুক্ত হয়। যেমন-
১.১ অধিকারী অর্থে – অংশী +দার=অংশীদার, পাওনাদার
১.২. মালিক অর্থে- জমি +দার=জমিদার, আড়ৎদার
১.৩. পরিচালক অর্থে- চৌকি +দার=চৌকিদার। দফাদার।
১.৪. বৃত্তি অর্থে- দোকান +দার=দোকানদার, অজুরদার।
১.৫. বিশিষ্ট বা যুক্ত অর্থে – নকশা +দার=নকশাদার।
দ্বিরুক্ত শব্দকে ভাঙলে পাওয়া যায় ‘দ্বি+উক্ত’। অর্থাৎ, যা দুইবার বলা হয়েছে।
বাংলা ভাষায় অনেক শব্দ বা পদ দুইবার ব্যবহৃত হয়ে অন্য একটি বিশেষ অর্থ প্রকাশ করে। কোন শব্দ বা পদ পরপর দুইবার ব্যবহৃত হয়ে কোন বিশেষ অর্থ প্রকাশ করলে তাকে দ্বিরুক্ত শব্দ বলে। যেমন- ‘আমার জ্বর জ্বর লাগছে।’ এখানে ‘জ্বর জ্বর’ দ্বিরুক্ত শব্দটি ঠিক ‘জ্বর’ অর্থ প্রকাশ করছে না। জ্বরের ভাব প্রকাশ করছে।
দ্বিরুক্ত শব্দ ৩ প্রকার- শব্দের দ্বিরুক্তি, পদের দ্বিরুক্তি ও অনুকার দ্বিরুক্তি।
ক) শব্দের দ্বিরুক্তি
১. একই শব্দ অবিকৃতভাবে দুইবার ব্যবহৃত হয়ে দ্বিরুক্ত শব্দ গঠন করতে পারে। যেমন- ভাল ভাল বই, ফোঁটা ফোঁটা জল, বড় বড় বাড়ি, ইত্যাদি।
২. সহচর শব্দযোগে দ্বিরুক্ত শব্দ গঠিত হতে পারে। দুটি সম্পর্কিত শব্দকে সহচর শব্দ বলা যায়। যেমন, ‘কাপড়-চোপড়’ সহচর শব্দযোগে গঠিত দ্বিরুক্ত শব্দ। ‘কাপড়’ অর্থ গা ঢাকার জন্য যেসব পরা হয়। আর কাপড়ের সঙ্গে অনুষঙ্গ হিসেবে যেগুলো পরা হয় সেগুলোই ‘চোপড়’। অর্থাৎ, এই দুটি শব্দ পরস্পর সম্পর্কিত। তাই এই দুটি শব্দ সহচর শব্দ। এরকম- লালন-পালন, খোঁজ-খবর, ইত্যাদি।
৩. একই শব্দ দুইবার ব্যবহৃত হয়ে পরেরবার একটু পরিবর্তিত হয়ে দ্বিরুক্ত শব্দ হতে পারে। যেমন- মিট-মাট, ফিট-ফাট, বকা-ঝকা, তোড়-জোড়, গল্প-সল্প, রকম-সকম, ইত্যাদি।
৪. সমার্থক শব্দযোগে দ্বিরুক্ত শব্দ হতে পারে। যেমন- ধন-দৌলত, বলা-কওয়া, টাকা-পয়সা, ইত্যাদি।
৫. বিপরীতার্থক শব্দযোগেও দ্বিরুক্ত শব্দ গঠিত হতে পারে। যেমন- লেন-দেন, দেনা-পাওনা, ধনী-গরিব, আসা-যাওয়া, ইত্যাদি।
২. সহচর শব্দযোগে দ্বিরুক্ত শব্দ গঠিত হতে পারে। দুটি সম্পর্কিত শব্দকে সহচর শব্দ বলা যায়। যেমন, ‘কাপড়-চোপড়’ সহচর শব্দযোগে গঠিত দ্বিরুক্ত শব্দ। ‘কাপড়’ অর্থ গা ঢাকার জন্য যেসব পরা হয়। আর কাপড়ের সঙ্গে অনুষঙ্গ হিসেবে যেগুলো পরা হয় সেগুলোই ‘চোপড়’। অর্থাৎ, এই দুটি শব্দ পরস্পর সম্পর্কিত। তাই এই দুটি শব্দ সহচর শব্দ। এরকম- লালন-পালন, খোঁজ-খবর, ইত্যাদি।
৩. একই শব্দ দুইবার ব্যবহৃত হয়ে পরেরবার একটু পরিবর্তিত হয়ে দ্বিরুক্ত শব্দ হতে পারে। যেমন- মিট-মাট, ফিট-ফাট, বকা-ঝকা, তোড়-জোড়, গল্প-সল্প, রকম-সকম, ইত্যাদি।
৪. সমার্থক শব্দযোগে দ্বিরুক্ত শব্দ হতে পারে। যেমন- ধন-দৌলত, বলা-কওয়া, টাকা-পয়সা, ইত্যাদি।
৫. বিপরীতার্থক শব্দযোগেও দ্বিরুক্ত শব্দ গঠিত হতে পারে। যেমন- লেন-দেন, দেনা-পাওনা, ধনী-গরিব, আসা-যাওয়া, ইত্যাদি।
খ) পদের দ্বিরুক্তি/ পদাত্মক দ্বিরুক্তি
পদ বা বিভক্তিযুক্ত শব্দ দুইবার ব্যবহৃত হয়ে কোন বিশেষ অর্থ প্রকাশ করলে তাকে পদের দ্বিরুক্তি বা পদাত্মক দ্বিরুক্তি বলে।
পদাত্মক দ্বিরুক্তি নিম্নোক্তভাবে গঠিত হতে পারে-
১. একই পদ অবিকৃতভাবে পরপর দুইবার ব্যবহৃত হয়ে। যেমন- ঘরে ঘরে লেখাপড়া হচ্ছে। দেশে দেশে ধন্য ধন্য পড়ে গেলো। মনে মনে আমিও এ কথাই ভাবছিলাম।
২. দ্বিতীয় পদ কিছুটা পরিবর্তিত হয়ে। তবে এক্ষেত্রেও পদ-বিভক্তি অপরিবর্তিত থাকে। অর্থাৎ, মূল শব্দ কিছুটা পরিবর্তিত হয়, কিন্তু বিভক্তি অপরিবর্তিত থাকে। যেমন- আমরা হাতে-নাতে চোরটাকে ধরেছি।
৩. সহচর, সমার্থক বা বিপরীতার্থক শব্দ একই বিভক্তি যুক্ত হয়ে পরপর ব্যবহৃত হয়ে দ্বিরুক্ত শব্দ গঠন করতে পারে। যেমন- আমার সমত্মান যেন থাকে দুধে-ভাতে। দেশে বিদেশে বইটি লিখেছেন সৈয়দ মুজতবা আলী, আর পথে-প্রবাসে লিখেছেন মুহম্মদ এনামুল হক।
২. দ্বিতীয় পদ কিছুটা পরিবর্তিত হয়ে। তবে এক্ষেত্রেও পদ-বিভক্তি অপরিবর্তিত থাকে। অর্থাৎ, মূল শব্দ কিছুটা পরিবর্তিত হয়, কিন্তু বিভক্তি অপরিবর্তিত থাকে। যেমন- আমরা হাতে-নাতে চোরটাকে ধরেছি।
৩. সহচর, সমার্থক বা বিপরীতার্থক শব্দ একই বিভক্তি যুক্ত হয়ে পরপর ব্যবহৃত হয়ে দ্বিরুক্ত শব্দ গঠন করতে পারে। যেমন- আমার সমত্মান যেন থাকে দুধে-ভাতে। দেশে বিদেশে বইটি লিখেছেন সৈয়দ মুজতবা আলী, আর পথে-প্রবাসে লিখেছেন মুহম্মদ এনামুল হক।
পদাত্মক দ্বিরুক্তির প্রয়োগ
বিশেষ্য পদের দ্বিরুক্তি
(উল্লেখ্য, বিশেষ্য পদের দ্বিরুক্তি হলে সেগুলো বিশেষণ পদের মত কাজ/ আচরণ করে। অর্থাৎ, বিশেষ্য পদের দ্বিরুক্তি হলে সেগুলো বিশেষণ হিসেবে ব্যবহৃত হয়।)
(উল্লেখ্য, বিশেষ্য পদের দ্বিরুক্তি হলে সেগুলো বিশেষণ পদের মত কাজ/ আচরণ করে। অর্থাৎ, বিশেষ্য পদের দ্বিরুক্তি হলে সেগুলো বিশেষণ হিসেবে ব্যবহৃত হয়।)
১. আধিক্য বোঝাতে : রাশি রাশি ধন, ধামা ধামা ধান
২. সামান্য বোঝাতে : আমার জ্বর জ্বর লাগছে। কবি কবি ভাব।
৩. পরস্পরতা বা ধারাবাহিকতা বোঝাতে : তুমি দিন দিন রোগা হয়ে যাচ্ছ। ওরা বাড়ি বাড়ি হেঁটে চাঁদা তুলছে।
৪. ক্রিয়া বিশেষণ : ধীরে ধীরে যায়, ফিরে ফিরে চায়।
৫. অনুরূপ কিছু বোঝাতে : তার সঙ্গী সাথী কেউ নেই।
৬. আগ্রহ বোঝাতে : ও দাদা দাদা বলে ডাকছে।
২. সামান্য বোঝাতে : আমার জ্বর জ্বর লাগছে। কবি কবি ভাব।
৩. পরস্পরতা বা ধারাবাহিকতা বোঝাতে : তুমি দিন দিন রোগা হয়ে যাচ্ছ। ওরা বাড়ি বাড়ি হেঁটে চাঁদা তুলছে।
৪. ক্রিয়া বিশেষণ : ধীরে ধীরে যায়, ফিরে ফিরে চায়।
৫. অনুরূপ কিছু বোঝাতে : তার সঙ্গী সাথী কেউ নেই।
৬. আগ্রহ বোঝাতে : ও দাদা দাদা বলে ডাকছে।
বিশেষণ পদের দ্বিরুক্তি
১. আধিক্য বোঝাতে : ভাল ভাল আম। ছোট ছোট ডাল।
২. তীব্রতা বা সঠিকতা বোঝাতে : গরম গরম জিলাপী। নরম নরম হাত।
৩. সামান্যতা বোঝাতে : উড়ু উড়ু ভাব। কাল কাল চেহারা।
২. তীব্রতা বা সঠিকতা বোঝাতে : গরম গরম জিলাপী। নরম নরম হাত।
৩. সামান্যতা বোঝাতে : উড়ু উড়ু ভাব। কাল কাল চেহারা।
সর্বনাম পদের দ্বিরুক্তি
১. বহুবচন বা আধিক্য বোঝাতে : সে সে লোক কোথায় গেল? কে কে এল? কেউ কেউ বলে।
ক্রিয়াপদের/ ক্রিয়াবাচক পদের দ্বিরুক্তি
১. বিশেষণ রূপে : রোগীর তো যায় যায় অবস্থা। তোমার নেই নেই ভাব আর গেল না।
২. স্বল্পকাল স্থায়ী বোঝাতে : দেখতে দেখতে আকাশ কাল হয়ে এল।
৩. ক্রিয়া বিশেষণ : দেখে দেখে যাও। ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে শুনলে কিভাবে?
৪. পৌনঃপুনিকতা বোঝাতে : ডেকে ডেকে হয়রান হয়ে গেছি।
২. স্বল্পকাল স্থায়ী বোঝাতে : দেখতে দেখতে আকাশ কাল হয়ে এল।
৩. ক্রিয়া বিশেষণ : দেখে দেখে যাও। ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে শুনলে কিভাবে?
৪. পৌনঃপুনিকতা বোঝাতে : ডেকে ডেকে হয়রান হয়ে গেছি।
অব্যয় পদের দ্বিরুক্তি
১. ভাবের গভীরতা বোঝাতে : সবাই হায় হায় করতে লাগল। ছি ছি, তুমি এত খারাপ!
২. পৌনঃপুনিকতা বোঝাতে : বার বার সে কামান গর্জে উঠল।
৩. অনুভূতি বা ভাব বোঝাতে : ভয়ে গা ছম ছম করছে। ফোঁড়াটা টন টন করছে।
৪. বিশেষণ বোঝাতে : পিলসুজে বাতি জ্বলে মিটির মিটির।
৫. ধ্বনিব্যঞ্জনা : ঝির ঝির করে বাতাস বইছে। বৃষ্টি পড়ে টাপুর টুপুর।
২. পৌনঃপুনিকতা বোঝাতে : বার বার সে কামান গর্জে উঠল।
৩. অনুভূতি বা ভাব বোঝাতে : ভয়ে গা ছম ছম করছে। ফোঁড়াটা টন টন করছে।
৪. বিশেষণ বোঝাতে : পিলসুজে বাতি জ্বলে মিটির মিটির।
৫. ধ্বনিব্যঞ্জনা : ঝির ঝির করে বাতাস বইছে। বৃষ্টি পড়ে টাপুর টুপুর।
বিশিষ্টার্থক বাগধারায় দ্বিরুক্ত শব্দের প্রয়োগ
সতর্কতা বোঝাতে : ছেলেটিকে চোখে চোখে রেখো।
ভাবের প্রগাঢ়তা বোঝাতে : ভুলগুলো তুই আনরে বাছা বাছা।
কালের বিসত্মার বোঝাতে : থেকে থেকে শিশুটি কাঁদছে।
আধিক্য বোঝাতে : লোকটা হাড়ে হাড়ে শয়তান।
: খাঁচার ফাঁকে ফাঁকে, পরশে মুখে মুখে, নীরবে চোখে চোখে চায়।
ভাবের প্রগাঢ়তা বোঝাতে : ভুলগুলো তুই আনরে বাছা বাছা।
কালের বিসত্মার বোঝাতে : থেকে থেকে শিশুটি কাঁদছে।
আধিক্য বোঝাতে : লোকটা হাড়ে হাড়ে শয়তান।
: খাঁচার ফাঁকে ফাঁকে, পরশে মুখে মুখে, নীরবে চোখে চোখে চায়।
গ) অনুকার দ্বিরুক্তি
?
অর্থমূলক শ্রেণীবিভাগ
শব্দের অর্থমূলক শ্রেণীবিভাগ জানার আগে শব্দের ব্যুৎপত্তিগত অর্থ ও ব্যবহারিক অর্থ সম্পর্কে পরিস্কার ধারণা থাকা দরকার।
ব্যুৎপত্তিগত অর্থ: কোন শব্দ যে শব্দ বা শব্দমূল হতে গঠিত হয়েছে তার অর্থ দিয়ে শব্দটির যে অর্থ ধারণ করার কথা, তাকে শব্দটির ব্যুৎপত্তিগত অর্থ বলে। অর্থাৎ, উৎপত্তিগত ভাবে শব্দটির যে অর্থ দাঁড়ায়, তাকেই ব্যুৎপত্তিগত অর্থ বলে।
যেমন, ‘মধুর’ শব্দটি গঠিত হয়েছে ‘মধু+র’ অর্থাৎ ‘মধু’ শব্দ হতে। তাই ‘মধুর’ শব্দটির ব্যুৎপত্তিগত অর্থ হওয়া উচিত মধু সংশ্লিষ্ট কোন অর্থ। আর ‘মধুর’ শব্দের অর্থ ‘মধুর মত মিষ্টি গুণযুক্ত’। অর্থাৎ, ‘মধুর’ শব্দটির ব্যুৎপত্তিগত অর্থ বজায় থেকেছে।
আবার, ‘হস্তী’ শব্দটি গঠিত হয়েছে ‘হস্ত+ইন’ অর্থাৎ ‘হস্ত’ শব্দ হতে। তাই ‘হস্তী’ শব্দটির ব্যুৎপত্তিগত অর্থ হওয়া উচিত হস্ত বা হাত সংশ্লিষ্ট। কিন্তু ‘হস্তী’ বলতে একটি বিশেষ পশুকে বোঝায়, যার আদপে কোন হাত-ই নেই। অর্থাৎ, শব্দটির ব্যুৎপত্তিগত অর্থ বজায় থাকেনি।
ব্যবহারিক অর্থ: কোন শব্দ প্রকৃতঅর্থে যে অর্থে ব্যবহৃত হয়, বা যে অর্থ প্রকাশ করে, তাকে সেই শব্দের ব্যবহারিক অর্থ বলে। যেমন, উপরের উদাহরণগুলোতে, ‘মধুর’ শব্দটির ব্যবহারিক অর্থ ‘মধুর মত মিষ্টি গুণযুক্ত’, আর ‘হস্তী’র ব্যবহারিক অর্থ ‘একটি বিশেষ পশু’।
অর্থগত ভাবে শব্দসমূহকে ৪ ভাগে ভাগ করা যায়–
১. যৌগিক শব্দ
যে সব শব্দের ব্যুৎপত্তিগত অর্থ ও ব্যবহারিক অর্থ একই, তাদের যৌগিক শব্দ বলে।
অর্থাৎ, শব্দগঠনের প্রক্রিয়ায় যাদের অর্থ পরিবর্তিত হয় না, তাদেরকে যৌগিক শব্দ বলে। যেমন-
মূল শব্দ | শব্দ গঠন (অর্থ) | অর্থ |
গায়ক | গৈ+অক | যে গান করে |
কর্তব্য | কৃ+তব্য | যা করা উচিত |
বাবুয়ানা | বাবু+আনা | বাবুর ভাব |
মধুর | মধু+র | মধুর মত মিষ্টি গুণযুক্ত |
দৌহিত্র | দুহিতা+ষ্ণ্য (দুহিতা= মেয়ে, ষ্ণ্য= পুত্র) | কন্যার মত, নাতি |
চিকামারা | চিকা+মারা | দেওয়ালের লিখন |
২. রূঢ় বা রূঢ়ি শব্দ
প্রত্যয় বা উপসর্গ যোগে গঠিত যে সব শব্দের ব্যুৎপত্তিগত অর্থ ও ব্যবহারিক অর্থ আলাদা হয়, তাদেরকে রূঢ় বা রূঢ়ি শব্দ বলে। যেমন-
মূল শব্দ | শব্দ গঠন | ব্যুৎপত্তিগত অর্থ | ব্যবহারিক/ মূল অর্থ |
হস্তী | হস্ত+ইন | হাত আছে যার | একটি বিশেষ প্রাণী, হাতি |
গবেষণা | গো+এষণা | গরম্ন খোঁজা | ব্যাপক অধ্যয়ন ও পর্যালোচনা |
বাঁশি | বাঁশ+ইন | বাঁশ দিয়ে তৈরি | বাঁশের তৈরি বিশেষ বাদ্যযন্ত্র |
তৈল | তিল+ষ্ণ্য | তিল থেকে তৈরি সেণহ পদার্থ | উদ্ভিদ থেকে তৈরি যে কোন সেণহ পদার্থ |
প্রবীণ | প্র+বীণা | প্রকৃষ্টরূপে বীণা বাজায় যিনি | অভিজ্ঞ বয়স্ক ব্যক্তি |
সন্দেশ | সম+দেশ | সংবাদ | মিষ্টান্ন বিশেষ |
৩. যোগরূঢ় শব্দ
সমাস নিষ্পন্ন যে সব শব্দের ব্যুৎপত্তিগত অর্থ আর ব্যবহারিক অর্থ আলাদা হয়, তাদেরকে যোগরূঢ় শব্দ বলে। যেমন-
মূল শব্দ | শব্দ গঠন | ব্যবহারিক অর্থ |
পঙ্কজ | পঙ্কে জন্মে যা | পদ্মফুল |
রাজপুত | রাজার পুত্র | একটি জাতি বিশেষ, ভারতের একটি জাতি |
মহাযাত্রা | মহাসমারোহে যাত্রা | মৃত্যু |
জলধি | জল ধারণ করে যা/ এমন | সাগর |
৪. নবসৃষ্ট বা পরিশব্দ বা পারিভাষিক শব্দ
বিভিন্ন বিদেশি শব্দের অনুকরণে ভাবানুবাদমূলক যেসব প্রতিশব্দ সৃষ্টি করা হয়েছে, সেগুলোকে নবসৃষ্ট বা পরিশব্দ বা পারিভাষিক শব্দ বলে। মূলত প্রচলিত বিদেশি শব্দেরই এরকম পারিভাষিক শব্দ তৈরি করা হয়েছে।
যেমন-
পারিভাষিক শব্দ | মূল বিদেশি শব্দ | পারিভাষিক শব্দ | মূল বিদেশি শব্দ |
অম্লজান | Oxygen | সচিব | Secretary |
উদযান | Hudrogen | স্নাতক | Graduate |
নথি | File | স্নাতকোত্তর | Post Graduate |
প্রশিক্ষণ | Training | সমাপ্তি | Final |
ব্যবস্থাপক | Manager | সাময়িকী | Periodical |
বেতার | Radio | সমীকরণ | Equation |
মহাব্যবস্থাপক | General Manager |
[কিন্তু, যেসব বিদেশি শব্দ আমাদের ভাষায় প্রচলিত হয়ে গেছে, আমাদের ভাষায় ঢুকে গেছে, সেগুলোও বাংলা ভাষার শব্দ; সেই শব্দগুলোও আমাদের ভাষার সম্পদ। সমৃদ্ধ শব্দভাণ্ডার একটি সমৃদ্ধ ভাষার সবচেয়ে বড়ো লক্ষণ। যে ভাষার শব্দভাণ্ডার যতো বড়ো, সেই ভাষা ততো বেশি সমৃদ্ধ ও উন্নত ভাষা। আর শব্দভাণ্ডার বৃদ্ধির একটি প্রধান কৌশল বিদেশি শব্দ আত্মীকরণ বা গ্রহণ। আর তাই বাংলা ভাষায় প্রচলিত বিদেশি শব্দের ভাবানুবাদমূলক কঠিনতর পরিভাষা তৈরি করা নিষ্প্রয়োজন। এবং তা সাধারণ মানুষ গ্রহণও করে না। ভাষায় তা-ই টিকে থাকে, যা সাধারণ মানুষ গ্রহণ করে। মানুষ কখনো বলে না, ‘আমরা নিশ্বাসের সঙ্গে অম্লজান গ্রহণ করি।’ বলে, ‘আমরা নিশ্বাসের সঙ্গে অক্সিজেন গ্রহণ করি।’]
শব্দের উৎপত্তিগত শ্রেণীবিভাগ
বাংলা ভাষার শব্দকে উৎপত্তিগত দিক দিয়ে ৫ ভাগে ভাগ করা হয়েছে। এই ৫টি বিভাজন সম্পর্কে জানার আগে বাংলা ভাষার উৎপত্তি সম্পর্কে কিছু মৌলিক তথ্য জানা জরুরি।
বাংলা ভাষার উৎপত্তি: বাংলা ভাষার উৎপত্তি মূলত ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষাবংশ থেকে। এই বংশের অন্যতম একটি শাখা সংস্কৃত। বাংলা ভাষা সংস্কৃত ভাষার বংশেরই উত্তরসূরী। কিন্তু বাংলা ভাষা সরাসরি সংস্কৃত ভাষা থেকে আসেনি। সংস্কৃত সবসময়েই ছিলো সমাজের সম্ভ্রান্ত মানুষদের ব্যবহৃত ভাষা। আর বাংলা শুরু থেকেই সমাজের নিম্ন স্তরের মানুষের ভাষা। এ থেকেই বোঝা যায় সংস্কৃত আর বাংলার মাঝেও কোনো ভাষা ছিলো। কিন্তু এ ব্যাপারে ভাষাবিদেরা একমত হতে পারেননি। পূর্বে সম্ভ্রান্ত মানুষেরা সংস্কৃত ব্যবহার করতো। আর সাধারণ মানুষ যে সব ভাষায় কথা বলতো, সেগুলোকে বলা হতো প্রাকৃত বা অপভ্রংশ ভাষা। অপভ্রংশ মানে বিকৃত, সংস্কৃত ভাষার শব্দকে মানুষ পরিবর্তন করে তাদের সুবিধামতো করে উচ্চারণ করতো বলে এগুলোকে পন্ডিতরা বলতেন অপভ্রংশ বা বিকৃত ভাষা। এগুলো আঞ্চলিক ভাষার মতোই একেক জায়গায় ছিলো একেক রকম। ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহর মতে বাংলা এসেছে গৌড়ীয় প্রাকৃত বা অপভ্রংশ থেকে। আর ড. সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায়ের মতে, বাংলা এসেছে মাগধী অপভ্রংশ থেকে। এই অপভ্রংশগুলোতে সংস্কৃত ভাষার যে পরিবর্তিত বা বিকৃত রূপ পাওয়া যায়, তারই আরো পরিবর্তিত আর সহজ রূপ নিয়ে আবির্ভূত হয় বাংলা ভাষা। দিন দিন মানুষের ব্যবহারের মধ্য দিয়ে আমাদের বাংলা ভাষাও অনেক সহজ হয়ে এসেছে। এবং তা আরো পরিবর্তিত হয়ে দিন দিন আরো সহজ ও সংক্ষিপ্ত হবে। পাশাপাশি নতুন নতুন প্রয়োজনে আরো অনেক নতুন শব্দও তৈরি হবে বা অন্য ভাষা থেকে আমাদের ভাষায় ঢুকে যাবে।
শ্রেণীবিভাগ
উৎপত্তিগত দিক দিয়ে শব্দের ৫টি বিভাজন হলো- তৎসম, অর্ধ-তৎসম, তদ্ভব, দেশি আর বিদেশি শব্দ।
১. তৎসম শব্দ:
সংস্কৃত ভাষার যে সব শব্দ প্রাকৃত বা অপভ্রংশের মাধ্যমে পরিবর্তিত হয়নি, বরং সংস্কৃত ভাষা থেকে সরাসরি বাংলা ভাষায় গৃহীত হয়েছে, সে সব শব্দকেই বলা হয় তৎসম শব্দ। উদাহরণ- চন্দ্র, সূর্য, নক্ষত্র, ভবন, ধর্ম, পাত্র, মনুষ্য,
অনেক তৎসম শব্দেরই অর্ধ-তৎসম ও তদ্ভব রূপও বাংলায় ব্যবহৃত হয়। যেমন, সূর্য˃ সুরুয, মনুষ্য˃ মানুষ।
শুধু তৎসম শব্দেই ষ, ণ ব্যবহৃত হয়।
২. অর্ধ-তৎসম শব্দ:
যে সব সংস্কৃত শব্দ কিছুটা পরিবর্তিত হয়ে বাংলা ভাষায় ব্যবহৃত গৃহীত হয়েছে, সেগুলোকে বলা হয় অর্ধ-তৎসম। এগুলো সরাসরি সংস্কৃত ভাষা থেকেই কিছুটা সহজ আকারে গৃহীত হয়েছে। সংস্কৃত থেকে প্রাকৃত বা অপভ্রংশ ভাষার মাধ্যমে বাংলায় আসেনি। যেমন, জ্যোৎস্না˂ জ্যোছনা, শ্রাদ্ধ˂ ছেরাদ্দ, গৃহিণী˂ গিন্নী, বৈষ্ণব˂ বোষ্টম, কুৎসিত˂ কুচ্ছিত।
৩. তদ্ভব শব্দ:
বাংলা ভাষা গঠনের সময় প্রাকৃত বা অপভ্রংশ থেকে যে সব শব্দ পরিবর্তিত হয়ে বাংলা ভাষায় গৃহীত হয়েছিলো, সেগুলোকেই বলা হয় তদ্ভব শব্দ। অবশ্য, তদ্ভব শব্দের মূল অবশ্যই সংস্কৃত ভাষায় থাকতে হবে। অর্থাৎ, যে সব শব্দ সংস্কৃত থেকে পরিবর্তিত হয়ে প্রাকৃত বা অপভ্রংশে ব্যবহৃত হয়েছিলো, পরে আবার প্রাকৃত থেকে পরিবর্তিত হয়ে বাংলায় গৃহীত হয়েছে, সেগুলোকেই বলা হয় তদ্ভব শব্দ। বাংলা ভাষার উৎপত্তির ইতিহাস থেকেই বোঝা যায়, মূলত এই শব্দগুলোই বাংলা ভাষা গঠন করেছে। আর তাই এই শব্দগুলোকে বলা হয় খাঁটি বাংলা শব্দ। যেমন, সংস্কৃত ‘হস্ত’ শব্দটি প্রাকৃততে ‘হত্থ’ হিসেবে ব্যবহৃত হতো। আর বাংলায় এসে সেটা আরো সহজ হতে গিয়ে হয়ে গেছে ‘হাত’। তেমনি, চর্মকার˂ চম্মআর˂ চামার,
৪.দেশি শব্দ:
বাংলা ভাষাভাষীদের ভূখণ্ডে অনেক আদিকাল থেকে যারা বাস করতো, সেইসব আদিবাসীদের ভাষার যে সব শব্দ বাংলা ভাষায় গৃহীত হয়েছে, সে সব শব্দকে বলা হয় দেশি শব্দ। এই আদিবাসীদের মধ্যে আছে- কোল, মুণ্ডা, ভীম, ইত্যাদি। মেমন, কুড়ি (বিশ)- কোলভাষা, পেট (উদর)- তামিল ভাষা, চুলা (উনুন)- মুণ্ডারী ভাষা।
৫. বিদেশি শব্দ:
বিভিন্ন সময়ে বাংলা ভাষাভাষী মানুষেরা অন্য ভাষাভাষীর মানুষের সংস্পর্শে এসে তাদের ভাষা থেকে যে সব শব্দ গ্রহণ করেছে, বাংলা ভাষার শব্দ ভান্ডারে অন্য ভাষার শব্দ গৃহীত হয়েছে, সেগুলোকে বলা হয় বিদেশি শব্দ। যে কোনো ভাষার সমৃদ্ধির জন্য বিদেশি শব্দের আত্মীকরণ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আর এদিক দিয়ে বাংলা ভাষা বেশ উদারও বটে।
আরবি শব্দ : আল্লাহ, ইসলাম, ঈমান, ওযু, কোরবানি, কুরআন, কিয়ামত, গোসল, জান্নাত, জাহান্নাম, হওবা, হসবি, যাকাত, হজ, হাদিস, হারাম, হালাল
আদালত, আলেম, ইনসান, ঈদ, উকিল, ওজর, এজলাস, এলেম, কানুন, কলম, কিতাব, কেচ্ছা, খারিজ, গায়েব, দোয়াত, নগদ, বাকি, মহকুমা, মুন্সেফ, মোক্তার, রায়
আদালত, আলেম, ইনসান, ঈদ, উকিল, ওজর, এজলাস, এলেম, কানুন, কলম, কিতাব, কেচ্ছা, খারিজ, গায়েব, দোয়াত, নগদ, বাকি, মহকুমা, মুন্সেফ, মোক্তার, রায়
ফারসি শব্দ: খোদা, গুনাহ, দোযখ, নামায, পয়গম্বর, ফেরেশতা, বেহেশত, রোযা
কারখানা, চশমা, জবানবন্দি, তারিখ, তোশক, দফতর, দরবার, দোকান,দস্তখত, দৌলত, নালিশ, বাদশাহ, বান্দা, বেগম, মেথর, রসদ
আদমি, আমদানি, জানোয়ার, জিন্দা, নমুনা, বদমাস, রফতানি, হাঙ্গামা
কারখানা, চশমা, জবানবন্দি, তারিখ, তোশক, দফতর, দরবার, দোকান,দস্তখত, দৌলত, নালিশ, বাদশাহ, বান্দা, বেগম, মেথর, রসদ
আদমি, আমদানি, জানোয়ার, জিন্দা, নমুনা, বদমাস, রফতানি, হাঙ্গামা
ইংরেজি শব্দ: প্রায় অপরিবর্তিত উচ্চারণে- চেয়ার, টেবিল
পরিবর্তিত উচ্চারণে- আফিম (opium), ইস্কুল (school), বাক্স (box), হাসপাতাল (hospitai), বোতল (bottle)
পরিবর্তিত উচ্চারণে- আফিম (opium), ইস্কুল (school), বাক্স (box), হাসপাতাল (hospitai), বোতল (bottle)
পর্তুগিজ শব্দ : আনারস, আলপিন, আলমারি, গির্জা, গুদাম, চাবি, পাউরুটি, পাদ্রি, বালতি
ফরাসি শব্দ : কার্তুজ, কুপন , ডিপো, রেস্তোঁরা
ওলন্দাজ শব্দ : ইস্কাপন, টেক্কা, তুরুপ, রুইতন, হরতন (তাসের নাম)
গুজরাটি শব্দ : খদ্দর, হরতাল
পাঞ্জাবি শব্দ : চাহিদা, শিখ
তুর্কি শব্দ : চাকর, চাকু, তোপ, দারোগা
চিনা শব্দ : চা, চিনি, লুচি
মায়ানমার/ বর্মি শব্দ : ফুঙ্গি, লুঙ্গি
জাপানি শব্দ : রিক্সা, হারিকিরি
ফরাসি শব্দ : কার্তুজ, কুপন , ডিপো, রেস্তোঁরা
ওলন্দাজ শব্দ : ইস্কাপন, টেক্কা, তুরুপ, রুইতন, হরতন (তাসের নাম)
গুজরাটি শব্দ : খদ্দর, হরতাল
পাঞ্জাবি শব্দ : চাহিদা, শিখ
তুর্কি শব্দ : চাকর, চাকু, তোপ, দারোগা
চিনা শব্দ : চা, চিনি, লুচি
মায়ানমার/ বর্মি শব্দ : ফুঙ্গি, লুঙ্গি
জাপানি শব্দ : রিক্সা, হারিকিরি
এছাড়াও আরেকটি বিশেষ ধরনের শব্দ আছে। দুইটি ভিন্ন ধরনের শব্দ সমাসবদ্ধ হয়ে বা অন্য কোনো উপায়ে একত্রিত হলে ঐ নতুন শব্দটিকে বলা হয় মিশ্র শব্দ। এক্ষেত্রে যে দুইটি শব্দ মিলিত হলো, তাদের শ্রেণীবিভাগ চিনতে পারাটা খুব জরুরি। যেমন-
রাজা-বাদশা (তৎসম+ফারসি)
হাট-বাজার (বাংলা+ফারসি)
হেড-মৌলভী (ইংরেজি+ফারসি)
হেড-পন্ডিত (ইংরেজি+তৎসম)
খ্রিস্টাব্দ (ইংরেজি+তৎসম)
ডাক্তারখানা (ইংরেজি+ফারসি)
পকেট-মার (ইংরেজি+বাংলা)
চৌ-হদ্দি (ফারসি+আরবি)
রাজা-বাদশা (তৎসম+ফারসি)
হাট-বাজার (বাংলা+ফারসি)
হেড-মৌলভী (ইংরেজি+ফারসি)
হেড-পন্ডিত (ইংরেজি+তৎসম)
খ্রিস্টাব্দ (ইংরেজি+তৎসম)
ডাক্তারখানা (ইংরেজি+ফারসি)
পকেট-মার (ইংরেজি+বাংলা)
চৌ-হদ্দি (ফারসি+আরবি)
শব্দের গঠনমূলক শ্রেণীবিভাগ
গঠন অনুসারে শব্দ ২ প্রকার-
১. মৌলিক শব্দ
যে সব শব্দকে বিশ্লেষণ করলে আর কোন শব্দ পাওয়া যায় না, তাকে মৌলিক শব্দ বলে। অর্থাৎ, যে সব শব্দকে ভাঙলে আর কোন অর্থসঙ্গতিপূর্ণ শব্দ পাওয়া যায় না, তাকে মৌলিক শব্দ বলে। যেমন- গোলাপ, নাক, লাল, তিন, ইত্যাদি।
এই শব্দগুলোকে আর ভাঙা যায় না, বা বিশ্লেষণ করা যায় না। আর যদি ভেঙে নতুন শব্দ পাওয়াও যায়, তার সঙ্গে শব্দটির কোন অর্থসঙ্গতি থাকে না। যেমন, উদাহরণের গোলাপ শব্দটি ভাঙলে গোল শব্দটি পাওয়া যায়। কিন্তু গোলাপ শব্দটি গোল শব্দ থেকে গঠিত হয়নি। এই দুটি শব্দের মাঝে কোন অর্থসঙ্গতিও নেই। তেমনি নাক ভেঙে না বানানো গেলেও নাক না থেকে আসেনি। অর্থাৎ, এই শব্দগুলোই মৌলিক শব্দ। ‘গোলাপ’ শব্দটির সঙ্গে ‘ই’ প্রত্যয় যোগ করে আমরা ‘গোলাপী’ শব্দটি বানাতে পারি। তেমনি ‘নাক’-র সঙ্গে ‘ফুল’ শব্দটি যোগ করে আমরা ‘নাকফুল’ শব্দটি গঠন করতে পারি।
২. সাধিত শব্দ
যে সব শব্দকে বিশ্লেষণ করলে অর্থসঙ্গতিপূর্ণ ভিন্ন একটি শব্দ পাওয়া যায়, তাদেরকে সাধিত শব্দ বলে। মূলত, মৌলিক শব্দ থেকেই বিভিন্ন ব্যাকরণসিদ্ধ প্রক্রিয়ায় সাধিত শব্দ গঠিত হয়।
মৌলিক শব্দ সমাসবদ্ধ হয়ে কিংবা প্রত্যয় বা উপসর্গ যুক্ত হয়ে সাধিত শব্দ গঠিত হয়। যেমন-
- সমাসবদ্ধ হয়ে- চাঁদের মত মুখ = চাঁদমুখ
- প্রত্যয় সাধিত- ডুব+উরি = ডুবুরি
- উপসর্গযোগে- প্র+শাসন = প্রশাসন
লিঙ্গ
ছেলে মেয়ের ধারণাকে বলা হয় লিঙ্গ। অর্থাৎ, পুংলিঙ্গ মানে পুরুষ, আর স্ত্রীলিঙ্গ মানে নারী বা মেয়ে বা স্ত্রী। এই বিভাজনই হলো লিঙ্গভেদ।
অন্যান্য ভাষার মতোই বাংলা ভাষাতেও লিঙ্গভেদে শব্দের রূপ পরিবর্তিত হয়। আবার অনেক সময় দুই লিঙ্গের দুইটি পৃথক শব্দও ব্যবহৃত হয়।
পুরুষবাচক শব্দ
যে শব্দ পুরুষ বা ছেলে বোঝায়, তাকে পুরুষবাচক শব্দ বলে। যেমন- বাপ, ভাই, ছেলে, ইত্যাদি।
স্ত্রীবাচক শব্দ
যে শব্দ নারী বা স্ত্রী বা মেয়ে বোঝায়, তাকে স্ত্রীবাচক শব্দ বলে। যেমন- মা, বোন, মেয়ে, ইত্যাদি।
উলেলখ্য, মূলত বিশেষ্য ও বিশেষণ পদের লিঙ্গভেদ আছে। সংস্কৃত ভাষায় পুরুষবাচক বিশেষ্য পদের সঙ্গে পুরুষবাচক বিশেষণ পদ আর স্ত্রীবাচক বিশেষ্য পদের স্ত্রীবাচক বিশেষণ পদ ব্যবহৃত হয়। কিন্তু বাংলা ভাষায় এই নিয়ম মানা হয় না। বাংলা ভাষায় বিশেষণ পদের লিঙ্গভেদ করা হয় না। অর্থাৎ, বাংলা ভাষায় কেবল বিশেষ্য পদের লিঙ্গভেদ হয়। যেমন- সংস্কৃত ভাষায় ‘সুন্দর বালক ও সুন্দরী বালিকা’। কিন্তু বাংলা ভাষায় ‘সুন্দর বালক ও সুন্দর বালিকা’।
পুরুষ ও স্ত্রীবাচক শব্দগুলোকে সাধারণত ২টি ভাগে ভাগ করা যায়-
১. পতি ও পত্নীবাচক অর্থে পুরুষ ও স্ত্রীবাচক শব্দ : আববা-আম্মা, বাবা-মা, চাচা-চাচি, কাকা-কাকি, জেঠা-জেঠি, দাদা-দাদি, নানা-নানি, নন্দাই-ননদ, দেওর-জা, ভাই-ভাবি/বৌদি, ইত্যাদি।
২. সাধারণ পুরুষ ও স্ত্রী জাতীয় অর্থে পুরুষ ও স্ত্রীবাচক শব্দ : খোকা-খুকি, পাগল-পাগলি, বামন-বামনি, ভেড়া-ভেড়ী, মোরগ-মুরগি, বালক-বালিকা, দেওর-ননদ, ইত্যাদি।
পুরুষ ও স্ত্রীবাচক শব্দের গঠন
মূলত পুরুষবাচক শব্দের শেষে স্ত্রীবাচক প্রত্যয় যুক্ত হয়ে স্ত্রীবাচক শব্দ গঠিত হয়। অর্থাৎ, পুরুষবাচক শব্দের শেষে একটি অতিরিক্ত শব্দাংশ যুক্ত হয়ে স্ত্রীবাচক শব্দ গঠিত হয়। এই স্ত্রীবাচক প্রত্যয় ২ প্রকার- বাংলা স্ত্রী বাচক প্রত্যয় ও সংস্কৃত স্ত্রী বাচক প্রত্যয়। বাংলা স্ত্রী বাচক প্রত্যয়গুলো বাংলা শব্দের সঙ্গে আর সংস্কৃত স্ত্রী বাচক প্রত্যয়গুলো সংস্কৃত শব্দের সঙ্গে যুক্ত হয়।
শব্দের শেষে প্রত্যয় যুক্ত হওয়া ছাড়াও আরো কিছু বিশেষ নিয়মে পুরুষবাচক ও স্ত্রীবাচক শব্দ গঠিত হয়ে থাকে।
নিচে বাংলা ও সংস্কৃত শব্দের পুরুষ ও স্ত্রী বাচক শব্দের গঠন সম্পর্কে আলোচনা করা হলো।
বাংলা শব্দের পুরুষ ও স্ত্রীবাচক শব্দের গঠন
বাংলা স্ত্রী প্রত্যয় যোগে পুরুষ হতে স্ত্রীবাচক শব্দ গঠন :
১. ঈ-প্রত্যয় : বেঙ্গম-বেঙ্গমী, ভাগনা/ভাগনে- ভাগনী
২. নী-প্রত্যয় : কামার-কামারনী, জেলে-জেলেনী, কুমার-কুমারনী, ধোপা-ধোপানী, মজুর-মজুরনী
পুরুষবাচক শব্দের শেষে ‘ঈ’ থাকলে নী-প্রত্যয় যোগ হলে আগের ‘ঈ’, ‘ই’ হয়। যেমন- ভিখারী- ভিখারিনী
৩. আনী-প্রত্যয় : ঠাকুর-ঠাকুরানী, নাপিত-নাপিতানী, মেথর-মেথরানী, চাকর-চাকরানী
৪. ইনী-প্রত্যয় : কাঙাল-কাঙালিনী, গোয়ালা- গোয়ালিনী, বাঘ-বাঘিনী
৫. উন-প্রত্যয় : ঠাকুর-ঠাকরুন
৬. আইন-প্রত্যয় : (এরকম আরো নতুন নতুন প্রত্যয়ের প্রয়োগ দেখা যায়) ঠাকুর-ঠাকুরাইন
১. ঈ-প্রত্যয় : বেঙ্গম-বেঙ্গমী, ভাগনা/ভাগনে- ভাগনী
২. নী-প্রত্যয় : কামার-কামারনী, জেলে-জেলেনী, কুমার-কুমারনী, ধোপা-ধোপানী, মজুর-মজুরনী
পুরুষবাচক শব্দের শেষে ‘ঈ’ থাকলে নী-প্রত্যয় যোগ হলে আগের ‘ঈ’, ‘ই’ হয়। যেমন- ভিখারী- ভিখারিনী
৩. আনী-প্রত্যয় : ঠাকুর-ঠাকুরানী, নাপিত-নাপিতানী, মেথর-মেথরানী, চাকর-চাকরানী
৪. ইনী-প্রত্যয় : কাঙাল-কাঙালিনী, গোয়ালা- গোয়ালিনী, বাঘ-বাঘিনী
৫. উন-প্রত্যয় : ঠাকুর-ঠাকরুন
৬. আইন-প্রত্যয় : (এরকম আরো নতুন নতুন প্রত্যয়ের প্রয়োগ দেখা যায়) ঠাকুর-ঠাকুরাইন
নিত্য স্ত্রীবাচক শব্দ
কতগুলো শব্দ নিত্য স্ত্রীবাচক। অর্থাৎ, এগুলো সর্বদাই স্ত্রীবাচক, এগুলোর কোন পুরুষবাচক শব্দই নেই। যেমন- সতীন, সৎমা, এয়ো, দাই, সধবা, ইত্যাদি।
শব্দের আগে পৃথক শব্দ যোগ করে :
কতগুলো শব্দের আগে পুরুষবাচক শব্দ গঠনের জন্য নর, মদ্দা, ইত্যাদি ও স্ত্রীবাচক শব্দ গঠনের জন্য স্ত্রী, মাদী, মাদা, ইত্যাদি শব্দ যোগ করা হয়। যেমন- মর/ মদ্দা/ হুলো বিড়াল- মেনি বিড়াল, মদ্দা হাঁস- মাদী হাঁস, মদ্দা ঘোড়া- মাদী ঘোড়া, পুরুষলোক-মেয়েলোক, বেটাছেলে- মেয়েছেলে, পুরুষ কয়েদী- স্ত্রী/ মেয়ে কয়েদী, এঁড়ে বাছুর-বকনা বাছুর, বলদ গরু- গাই গরু
কতগুলো শব্দের আগে পুরুষবাচক শব্দ গঠনের জন্য নর, মদ্দা, ইত্যাদি ও স্ত্রীবাচক শব্দ গঠনের জন্য স্ত্রী, মাদী, মাদা, ইত্যাদি শব্দ যোগ করা হয়। যেমন- মর/ মদ্দা/ হুলো বিড়াল- মেনি বিড়াল, মদ্দা হাঁস- মাদী হাঁস, মদ্দা ঘোড়া- মাদী ঘোড়া, পুরুষলোক-মেয়েলোক, বেটাছেলে- মেয়েছেলে, পুরুষ কয়েদী- স্ত্রী/ মেয়ে কয়েদী, এঁড়ে বাছুর-বকনা বাছুর, বলদ গরু- গাই গরু
পুরুষবাচক শব্দের আগে স্ত্রীবাচক শব্দ প্রয়োগে :
কিছু কিছু পুরুষবাচক শব্দের আগে স্ত্রীবাচক শব্দ যোগ করে স্ত্রীবাচক শব্দ গঠন করা হয়। যেমন- কবি- মহিলা কবি, ডাক্তার- মহিলা ডাক্তার, সভ্য- মহিলা সভ্য, কর্মী- মহিলা কর্মী, শিল্পী- মহিলা শিল্পী/ নারী শিল্পী, সৈন্য- নারী সৈন্য/ মহিলা সৈন্য, পুলিশ- মহিলা পুলিশ
কিছু কিছু পুরুষবাচক শব্দের আগে স্ত্রীবাচক শব্দ যোগ করে স্ত্রীবাচক শব্দ গঠন করা হয়। যেমন- কবি- মহিলা কবি, ডাক্তার- মহিলা ডাক্তার, সভ্য- মহিলা সভ্য, কর্মী- মহিলা কর্মী, শিল্পী- মহিলা শিল্পী/ নারী শিল্পী, সৈন্য- নারী সৈন্য/ মহিলা সৈন্য, পুলিশ- মহিলা পুলিশ
শব্দের শেষে পৃথক শব্দ যোগ করে :
শব্দের শেষে পুরুষ বা স্ত্রীবাচক শব্দ যোগ করেও পুরুষ বা স্ত্রীবাচক শব্দ তৈরি করা যায়। যেমন- বোন-পো- বোন-ঝি, ঠাকুর-পো- ঠাকুর-ঝি, ঠাকুর দাদা/ ঠাকুরদা- ঠাকুরমা, গয়লা- গয়লা-বউ, জেলে- জেলে-বউ
শব্দের শেষে পুরুষ বা স্ত্রীবাচক শব্দ যোগ করেও পুরুষ বা স্ত্রীবাচক শব্দ তৈরি করা যায়। যেমন- বোন-পো- বোন-ঝি, ঠাকুর-পো- ঠাকুর-ঝি, ঠাকুর দাদা/ ঠাকুরদা- ঠাকুরমা, গয়লা- গয়লা-বউ, জেলে- জেলে-বউ
ভিন্ন শব্দ প্রয়োগে :
দুটি ভিন্ন ভিন্ন শব্দের মাধ্যমে পুরুষ ও স্ত্রী বাচক বোঝানো যেতে পারে। যেমন- বাবা-মা, ভাই-বোন, কর্তা-গিন্নী, ছেলে-মেয়ে, সাহেব- বিবি, জামাই-মেয়ে, বর-কনে, দুলহা-দুলাইন/ দুলহিন, বেয়াই-বেয়াইন, তাঐ-মাঐ, বাদশা-বেগম, শুক-সারী
দুটি ভিন্ন ভিন্ন শব্দের মাধ্যমে পুরুষ ও স্ত্রী বাচক বোঝানো যেতে পারে। যেমন- বাবা-মা, ভাই-বোন, কর্তা-গিন্নী, ছেলে-মেয়ে, সাহেব- বিবি, জামাই-মেয়ে, বর-কনে, দুলহা-দুলাইন/ দুলহিন, বেয়াই-বেয়াইন, তাঐ-মাঐ, বাদশা-বেগম, শুক-সারী
সংস্কৃত শব্দের পুরুষ ও স্ত্রীবাচক শব্দের গঠন
সংস্কৃত স্ত্রী প্রত্যয় যোগে পুরুষ হতে স্ত্রীবাচক শব্দ গঠন :
১. আ-প্রত্যয় :
১. আ-প্রত্যয় :
মৃত-মৃতা, বিবাহিত-বিবাহিতা, মাননীয়-মাননীয়া, বৃদ্ধ-বৃদ্ধা, প্রিয়-প্রিয়া, প্রথম-প্রথমা, চতুর-চতুরা, চপল-চপলা,নবীন-নবীনা, কনিষ্ঠ-কনিষ্ঠা, মলিন-মলিনা, অজ-অজা, কোকিল-কোকিলা, শিষ্য-শিষ্যা, ক্ষত্রিয়-ক্ষত্রিয়া, শূদ্র-শূদ্রা
২. ঈ-প্রত্যয় :
নিশাচর-নিশাচরী, ভয়ংকর-ভয়ংকরী, রজক-রজকী, কিশোর-কিশোরী, সুন্দর-সুন্দরী, চতুর্দশ-চতুর্দশী, ষোড়শ-ষোড়শী, সিংহ-সিংহী, ব্রাহ্মণ-ব্রাহ্মণী, মানব-মানবী, বৈষ্ণব-বৈষ্ণবী, কুমার-কুমারী, ময়ূর-ময়ূরী
৩. ইকা-প্রত্যয় :
(ক) শব্দের শেষে অক থাকলে ইকা-প্রত্যয় যোগ হয় এবং অক’-র স্থলে ইকা হয়। যেমন- বালক-বালিকা, নায়ক-নায়িকা, গায়ক-গায়িকা, সেবক-সেবিকা, অধ্যাপক-অধ্যাপিকা।
ব্যতিক্রম : গণক-গণকী (গণিকা- বেশ্যা), নর্তক-নর্তকী, চাতক-চাতকী, রজক-রজকী/ রজকিনী (বাংলায়)
ব্যতিক্রম : গণক-গণকী (গণিকা- বেশ্যা), নর্তক-নর্তকী, চাতক-চাতকী, রজক-রজকী/ রজকিনী (বাংলায়)
(খ) অনেক সময় ক্ষুদ্রার্থেও ইকা প্রত্যয় যোগ হয়। তখন সেটা আর স্ত্রী প্রত্যয় থাকে না, এগুলো ক্ষুদ্রার্থক প্রত্যয়। যেমন- নাটক-নাটিকা (ক্ষুদ্র নাটক, নাটকের স্ত্রী রূপ নয়), মালা-মালিকা (ক্ষুদ্র মালা), গীত-গীতিকা (ক্ষুদ্র গান), পুস্তক-পুস্তিকা (ক্ষুদ্র বই)।
৪. আনী-প্রত্যয় :
ইন্দ্র-ইন্দ্রানী, মাতুল-মাতুলানী, আচার্য-আচার্যানী (আচার্যের স্ত্রী, কিন্তু আচার্যের কাজে নিয়োজিত নারীও ‘আচার্য’), শূদ্র-শূদ্রানী (শূদ্রের স্ত্রী, সাধারণ শূদ্র জাতীয় মহিলা ‘শূদ্রা’), ক্ষত্রিয়-ক্ষত্রিয়ানী (ক্ষত্রিয়ের স্ত্রী, ক্ষত্রিয় জাতের মহিলা ক্ষত্রিয়া)
কখনো কখনো আনী-প্রত্যয় অর্থেরও পরিবর্তন ঘটায়। তখন সেটা আর স্ত্রী প্রত্যয় থাকে না। যেমন- অরণ্য-অরণ্যানী (বৃহৎ অরণ্য), হিম-হিমানী (জমানো বরফ)।
কখনো কখনো আনী-প্রত্যয় অর্থেরও পরিবর্তন ঘটায়। তখন সেটা আর স্ত্রী প্রত্যয় থাকে না। যেমন- অরণ্য-অরণ্যানী (বৃহৎ অরণ্য), হিম-হিমানী (জমানো বরফ)।
৫. নী, ঈনী-প্রত্যয় :
মায়াবী-মায়াবিনী, কুহক-কুহকিনী, যোগী-যোগিনী, মেধাবী-মেধাবিনী, দুঃখী-দুঃখিনী
বিশেষ নিয়মে সাধিত স্ত্রীবাচক শব্দ
বিশেষ নিয়মে সাধিত স্ত্রীবাচক শব্দ
১. যে সব পুরুষবাচক শব্দের শেষে ‘তা’ আছে, সেগুলোর শেষে ‘ত্রী’ হয়। যেমন- ধাতা-ধাত্রী, নেতা-নেত্রী, কর্তা-কর্ত্রী, শ্রোতা- শ্রোত্রী
২. পুরুষবাচক শব্দের শেষে অত, বান, মান, ঈয়ান থাকলে স্ত্রীবাচক শব্দে যথাক্রমে অতী, বতী, মতী, ঈয়সী হয়। যেমন- সৎ-সতী, মহৎ-মহতী, গুণবান-গুণবতী, রূপবান-রূপবতী, শ্রীমান-শ্রীমতি, বুদ্ধিমান-বুদ্ধিমতী, গরীয়ান-গরিয়সী
৩. বিশেষ নিয়মে গঠিত স্ত্রীবাচক শব্দ : সম্রাট- সম্রাজ্ঞী, রাজা-রাণী, যুবক-যুবতী, শ্বশুর-শ্বশ্রূ, নর-নারী, বন্ধু-বান্ধবী, দেবর- জা, শিক্ষক- শিক্ষয়িত্রী, স্বামী-স্ত্রী, পতি-পত্নী, সভাপতি-সভানেত্রী
নিত্য স্ত্রীবাচক তৎসম শব্দ
কতগুলো সংস্কৃত শব্দ নিত্য স্ত্রীবাচক। অর্থাৎ, এগুলো সর্বদাই স্ত্রীবাচক, এগুলোর কোন পুরুষবাচক শব্দই নেই। যেমন- সতীন, সৎমাতা, সধবা, কুলটা ইত্যাদি।
বিদেশি পুরুষ ও স্ত্রীবাচক শব্দ
বিদেশি পুরুষ ও স্ত্রীবাচক শব্দ
খান- খানম
মরদ- জেনানা
মালেক- মালেকা
মুহতারিম- মুহতারিমা
সুলতান- সুলতানা
মরদ- জেনানা
মালেক- মালেকা
মুহতারিম- মুহতারিমা
সুলতান- সুলতানা
দ্রষ্টব্য
১. কতোগুলো বাংলা শব্দ পুরুষ ও স্ত্রী দুই-ই বোঝায়। যেমন- জন, পাখি, শিশু, সন্তান, শিক্ষিত, গুরু
২. কতোগুলো শব্দ শুধু পুরুষ বোঝায়। যেমন- কবিরাজ, ঢাকী, কৃতদার, অকৃতদার
৩. কতোগুলো শব্দ শুধু স্ত্রীবাচক হয়। যেমন- সতীন, সৎমা, সধবা
৪. কিছু পুরুষবাচক শব্দের দুটো করে স্ত্রীবাচক শব্দ আছে-
দেবর- ননদ (দেবরের বোন), জা (দেবরের স্ত্রী)
ভাই- বোন, ভাবি/ বৌদি (ভাইয়ের স্ত্রী)
শিক্ষক- শিক্ষয়িত্রী (নারী শিক্ষক), শিক্ষকপত্নী (শিক্ষকের স্ত্রী)
বন্ধু- বান্ধবী মেয়ে বন্ধু), বন্ধুপত্নী (বন্ধুর স্ত্রী)
দাদা-দিদি (বড় বোন), বৌদি (দাদার স্ত্রী)
ভাই- বোন, ভাবি/ বৌদি (ভাইয়ের স্ত্রী)
শিক্ষক- শিক্ষয়িত্রী (নারী শিক্ষক), শিক্ষকপত্নী (শিক্ষকের স্ত্রী)
বন্ধু- বান্ধবী মেয়ে বন্ধু), বন্ধুপত্নী (বন্ধুর স্ত্রী)
দাদা-দিদি (বড় বোন), বৌদি (দাদার স্ত্রী)
৫. বাংলা স্ত্রীবাচক শব্দের বিশেষণ স্ত্রীবাচক হয় না। যেমন- সুন্দর বলদ- সুন্দর গাই, সুন্দর ছেলে- সুন্দর মেয়ে, মেজ খুড়ো- মেজ খুড়ি
৬. বাংলায় বিশেষণ পদের স্ত্রীবাচক হয় না। যেমন- মেয়েটি পাগল হয়ে গেছে (পাগলি হবে না)। নদী ভয়ে অস্থির হয়ে গেছে (অস্থিরা হবে না)।
৭. কুল-উপাধি-বংশ ইত্যাদিরও স্ত্রীবাচক রূপ আছে। যেমন- ঘোষ- ঘোষজা (কন্যা অর্থে), ঘোষজায়া (পত্নী অর্থে)
সমাস হচ্ছে দুই বা ততোধিক পদের একপদীকরণ। যেমনঃ সু (শোভন) ব্রত যাহার = সুব্রত।
অর্থবাচকতা
সমাস শব্দের অর্থ সংক্ষেপ, সমর্থন, সংগ্রহ, মিলন।
প্রকারভেদ
সমাস ছয় প্রকার। যথাঃ দ্বন্দ্ব, বহুব্রীহি, কর্মধারয়, তৎপুরুষ, দ্বিগু এবং অব্যয়ীভাব।
- দ্বন্দ্ব সমাস
যে সমাসে সমস্যমান প্রত্যেক পদের অর্থই প্রধানরূপে প্রতীয়মান হয়, তাকে দ্বন্দ্ব সমাস বলে। যেমনঃ রূপ ও রস ও গন্ধ ও শব্দ ও স্পর্শ = রূপরসগন্ধশব্দস্পর্শ; অন্ন ও বস্ত্র = অন্নবস্ত্র। - বহুব্রীহি সমাস
যে সমাসে মূখ্যভাবে সমস্যবান পদসমূহের অর্থপ্রতীতি না হয়ে অন্য পদের অর্থ মূখ্যরূপে প্রতীয়মান হয়, তাকে বহুব্রীহি সমাস বলে। যথাঃ পীত হইয়াছে অম্বর যাহার = পীতাম্বর (অর্থ শ্রীকৃষ্ণ)। এর ব্যাসবাক্যে একটি যদ্ শব্দের প্রয়োগ থাকে। - কর্মধারয় সমাস
বিশেষ্যের সাথে বিশেষণের সমাসকে কর্মধারয় সমাস বলে। যথাঃ নীল যে উৎপল = নীলোৎপল। কর্মধারয় সমাসে উত্তর পদের অর্থ প্রধানভাবে থাকে।
কর্মধারয় সমাস প্রধানতঃ চার প্রকার। যথাঃ-- মধ্যপদলোপী কর্মধারয় সমাসঃ কর্মধারয় সমাসে কোন কোন স্থানে মধ্যপদের লোপ হয়। সেজন্যেই একে মধ্যপদলোপী কর্মধারয় সমাস বলে। যথাঃ হিমালয় নামক পবর্ত = হিমালয়পবর্ত। এখানে ‘নামক’ মধ্যপদের লোপ হয়েছে।
- উপমিত কর্মধারয় সমাসঃ সমান ধর্মবাচক পদের প্রয়োগ না থাকলে উপমেয় ও উপমান পদের যে সমাস হয়, তাকে উপমিত কর্মধারয় সমাস বলে। যেমনঃ মুখ চন্দ্রসদৃশ = মুখচন্দ্র।
- রূপক কর্মধারয় সমাসঃ উপমেয় পদে উপমানের আরোপ করে যে সমাস হয়, তাকে রূপক কর্মধারয় সমাস বলে। এতে উপমেয় পদে রূপ শব্দের যোগ থাকে। যেমনঃ বিদ্যারূপ ধন = বিদ্যাধন। এখানে ‘রূপ’ শব্দের যোগ রয়েছে।
- উপমান কর্মধারয় সমাসঃ উপমানবাচক পদের সাথে সমান ধর্মবাচক পদের মিলনে যে সমাস হয়, তাকে উপমান কর্মধারয় সমাস বলে। যেমনঃ শশের (খরগোশের) ন্যায় ব্যস্ত = শশব্যস্ত।
- তৎপুরুষ সমাস
দ্বিতীয়াদি বিভক্তান্ত পদ পূর্বে থেকে যে সমাস হয়, তাকে তৎপুরুষ সমাস বলে। এতে উত্তরপদের অর্থ প্রধানভাবে থাকে। যেমনঃ লবণ দ্বারা অক্ত (যুক্ত) = লবণাক্ত।
তৎপুরুষ সমাস ছয় প্রকার। যথাঃ-- দ্বিতীয়া-তৎপুরুষঃ দ্বিতীয়া-বিভক্ত্যন্ত পদ পূর্বে থেকে সমাস হলে, তাকে দ্বিতীয়া-তৎপুরুষ বলে। যেমনঃ স্বর্গকে গত = স্বর্গগত।
- তৃতীয়া-তৎপুরুষঃ তৃতীয়া-বিভক্ত্যন্ত পদ পূর্বে থেকে সমাস হলে, তাকে তৃতীয়া-তৎপুরুষ বলে। যেমনঃ রজ্জু দ্বারা বন্ধ = রজ্জুবন্ধ।
- চতুর্থী-তৎপুরুষঃ চতুর্থী-বিভক্ত্যন্ত পদ পূর্বে থেকে সমাস হলে, তাকে চতুর্থী-তৎপুরুষ বলে। যেমনঃ যজ্ঞের নিমিত্ত ভূমি = যজ্ঞভূমি।
- পঞ্চমী-তৎপুরুষঃ পঞ্চমী-বিভক্ত্যন্ত পদ পূর্বে থেকে সমাস হলে, তাকে পঞ্চমী-তৎপুরুষ বলে। যেমনঃ মুখ হইতে ভ্রষ্ট = মুখভ্রষ্ট।
- ষষ্ঠী-তৎপুরুষঃ ষষ্ঠী-বিভক্ত্যন্ত পদ পূর্বে থেকে সমাস হলে, তাকে ষষ্ঠী-তৎপুরুষ বলে। যেমনঃ দীনের বন্ধু = দীনবন্ধু।
- সপ্তমী-তৎপুরুষঃ সপ্তমী-বিভক্ত্যন্ত পদ পূর্বে থেকে সমাস হলে, তাকে সপ্তমী-তৎপুরুষ বলে। যেমনঃ দিবাতে নিদ্রা = দিবানিদ্রা।
এছাড়াও, নঞ্ অব্যয় পূর্বে থেকে যে সমাস হয়, তাকে নঞ্তৎপুরুষ বলে। যেমনঃ ন উক্ত = অনুক্ত।
- দ্বিগু সমাস
তদ্ধিতার্থে, উত্তরপদ পরে ও সমাহার বুঝালে সংখ্যাবাচক শব্দ পূর্বে থেকে যে সমাস হয়, তাকে দ্বিগু সমাস বলে। তদ্ধিতার্থে, যথাঃ পঞ্চ (পাঁচটি) গো দ্বারা ক্রীত = পঞ্চগু। উত্তরপদ পরে, যথাঃ পঞ্চ হস্ত প্রমাণ ইহার = পঞ্চহস্তপ্রমাণ। [এখানে প্রমাণ শব্দ উত্তরপদ পরে থাকায় পঞ্চ ও হস্ত এই দুই পদের দ্বিগু সমাস হয়েছে]। সমাহারে, যথাঃ ত্রি (তিন) লোকের সমাহার = ত্রিলোকী। - অব্যয়ীভাব সমাস
অব্যয় পদ পূর্বে থেকে যে সমাস হয় এবং যাতে পূর্ব পদের অর্থেরই প্রাধান্য থাকে, তাকে অব্যয়ীভাব সমাস বলে। যেমনঃ আত্মাকে অধি (অধিকার করিয়া) = অধ্যাত্ম।
অন্যান্য সমাস
- নিত্য সমাসঃ যে সমাসে সমস্যমান পদ দ্বারা সমাস-বাক্য হয় না, অন্য পদের দ্বারা সমস্ত পদের অর্থ প্রকাশ করতে হয়, তাকে নিত্য সমাস বলে। যেমনঃ অন্য গ্রাম = গ্রামান্তর।
- উপপদ সমাসঃ কৃদন্ত-পদের পূর্বে যে পদ থাকে, তাকে উপপদ বলে এবং উপপদের সাথে কৃদন্ত-পদের যে সমাস হয়, তাকে উপপদ সমাস বলে। যেমনঃ কুম্ভ করে যে = কুম্ভকার।
- প্রাদি সমাসঃ প্র, পরা প্রভৃতি ২০টি উপসর্গের সাথে তৎপুরুষ সমাস হলে, তাকে প্রাদি সমাস বলে। যেমনঃ সম্ (সম্যক্) যে আদর = সমাদর।
অব্যয়ীভাব সমাস
সমাসের পূর্বপদ হিসেবে যদি অব্যয় পদ ব্যবহৃত হয়, এবং সেই অব্যয়ের অর্থই প্রধান হয়, তবে সেই সমাসকে বলা হয় অব্যয়ীভাব সমাস। যেমন, ‘মরণ পর্যন্ত = আমরণ’। এখানে পূর্বপদ হিসেবে পর্যন্ত অর্থে ‘আ’ উপসর্গ ব্যবহৃত হয়েছে। আর পরপদ ‘মরণ’। কিন্তু এখানে সমস্ত পদটিকে নতুন অর্থ দিয়েছে ‘আ’ উপসর্গটি। অর্থাৎ, এখানে ‘আ’ উপসর্গ বা অব্যয় বা পূর্বপদের অর্থ প্রাধান্য পেয়েছে। তাই এটি অব্যয়ীভাব সমাস। (উপসর্গ এক ধরনের অব্যয়সূচক শব্দাংশ। উপসর্গ বচন বা লিঙ্গ ভেদে পরিবর্তিত হয় না কিংবা বাক্যের অন্য কোন পদের পরিবর্তনেও এর কোন পরিবর্তন হয় না। এরকম আরেকটি অব্যয়সূচক শব্দাংশ হলো অনুসর্গ।)
কর্মধারয় সমাস
কর্মধারয় সমাসে পরপদের অর্থ প্রাধান্য পায়। মূলত, এই সমাসে বিশেষণ বা বিশেষণ ভাবাপন্ন পদ পূর্বপদ ও বিশেষ্য বা বিশেষ্য ভাবাপন্ন পদ পরপদ হিসেবে ব্যবহৃত হয়। আর ব্যাসবাক্যটিতে ঐ বিশেষ্য বা বিশেষ্য ভাবাপন্ন পদটি সম্পর্কে কিছু বলা হয়। অর্থাৎ পরপদের অর্থ প্রাধান্য পায়।
যেমন- নীল যে পদ্ম = নীলপদ্ম। এখানে, পূর্বপদ ‘নীল’ বিশেষণ ও পরপদ ‘পদ্ম’ বিশেষ্য। ব্যাসবাক্যে ‘পদ্ম’ সম্পর্কে বলা হয়েছে পদ্মটি ‘নীল’ রঙের। অর্থাৎ, ‘পদ্ম’ বা পরপদের অর্থই এখানে প্রধান, পরপদ ছাড়া পূর্বপদের কোন প্রয়োজনীয়তা নেই। তাই এটি কর্মধারয় সমাস।
কর্মধারয় সমাসের কয়েকটি বিশেষ নিয়ম-
- দুইটি বিশেষণ একই বিশেষ্য বোঝালে সেটি কর্মধারয় সমাস হয়। যেমন, যে চালাক সেই চতুর = চালাক-চতুর। এখানে পরবর্তী বিশেষ্যটি অপেক্ষাকৃত বেশি গুরুত্ব পাচ্ছে বলে এটি দ্বন্দ্ব সমাস হবে না।
- দুইটি বিশেষ্য একই ব্যক্তি বা বস্তুকে বোঝালে সেটিও কর্মধারয় সমাস হয়। যেমন, যিনি জজ তিনি সাহেব = জজসাহেব। একই কারণে এটি দ্বন্দ্ব না কর্মধারয় হবে।
- কার্যে পরপম্পরা বোঝাতে দুটি কৃদন্ত বিশেষণ বা ক্রিয়াবাচক বিশেষণ পদেও কর্মধারয় সমাস হয়। যেমন, আগে ধোয়া পরে মোছা = ধোয়ামোছা। এখানে ‘মোছা’ কাজটি বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
- পূর্বপদে স্ত্রীবাচক বিশেষণ থাকলে তা পুরুষবাচক হয়ে যাবে। যেমন, সুন্দরী যে লতা = সুন্দরলতা
- বিশেষণবাচক মহান বা মহৎ শব্দ পূর্বপদ হলে মহা হয়। মহৎ যে জ্ঞান = মহাজ্ঞান
- পূর্বপদে ‘কু’ বিশেষণ থাকলে এবং পরপদের প্রথমে স্বরধ্বনি থাকলে ‘কু’, ‘কৎ’ হয়। যেমন, কু যে অর্থ = কদর্থ।
- পরপদে ‘রাজা’ থাকলে ‘রাজ’ হয়। যেমন, মহান যে রাজা = মহারাজ।
- বিশেষণ ও বিশেষ্য পদে কর্মধারয় সমাস হলে কখনো কখনো বিশেষ্য আগে এসে বিশেষণ পরে চলে যায়। যেমন, সিদ্ধ যে আলু = আলুসিদ্ধ।
কর্মধারয় সমাস মূলত ৪ প্রকার-
- মধ্যপদলোপী কর্মধারয়: যে কর্মধারয় সমাসের ব্যাসবাক্যের মধ্যবর্তী পদগুলো লোপ পায়, তাকে মধ্যপদলোপী কর্মধারয় সমাস বলে। যেমন, ‘স্মৃতি রক্ষার্থে সৌধ = স্মৃতিসৌধ’। এখানে ব্যাসবাক্যের মধ্যবর্তী পদ ‘রক্ষার্থে’ লোপ পেয়েছে। পূর্বপদ ‘স্মৃতি’ এখানে বিশেষণ ভাব বোঝাচ্ছে। আর ‘সৌধ’ বিশেষ্য। এটিরই অর্থ প্রধান। সুতরাং এটি মধ্যপদলোপী কর্মধারয়।
(উপমান ও উপমিত কর্মধারয় সমাস আলাদা করে চেনার আগে কতোগুলো সংজ্ঞা/ টার্মস জানা জরুরি। সেগুলো হলো- উপমান, উপমেয় ও সাধারণ ধর্ম। কোন ব্যক্তি বা বস্ত্তকে অন্য কোন ব্যক্তি বা বস্ত্তর সঙ্গে তুলনা করা হলে যাকে তুলনা করা হলো, তাকে বলা হয় উপমেয়। আর যার সঙ্গে তুলনা করা হয় তাকে বলে উপমান। আর উপমেয় আর উপমানের যে গুণটি নিয়ে তাদের তুলনা করা হয়, সেই গুণটিকে বলা হয় সাধারণ ধর্ম। যেমন, ‘অরুণের ন্যায় রাঙা প্রভাত’। এখানে ‘প্রভাত’কে ‘অরুণ’র মতো ‘রাঙা’ বলে তুলনা করা হয়েছে। সুতরাং, এখানে ‘প্রভাত’ উপমেয়। উপমান হলো ‘অরুণ’। আর প্রভাত আর অরুণের সাধারণ ধর্ম হলো ‘রাঙা’।) - উপমান কর্মধারয় সমাস: সাধারণ ধর্মবাচক পদের সঙ্গে উপমান পদের যে সমাস হয়, তাকে উপমান কর্মধারয় সমাস বলে। অর্থাৎ, উপমান ও উপমেয় কর্মধারয়ের মধ্যে যেটিতে সাধারণ ধর্মবাচক পদ থাকবে, সেটিই উপমান কর্মধারয়। যেমন, তুষারের ন্যায় শুভ্র = তুষারশুভ্র। এখানে ‘তুষার’র সঙ্গে কোন ব্যক্তি বা বস্ত্তকে তুলনা করা হচ্ছে। অর্থাৎ এটি উপমান। আর সাধারণ ধর্ম হলো ‘শুভ্র’। উপমেয় এখানে নেই। সুতরাং, এটি উপমান কর্মধারয় সমাস।
- উপমিত কর্মধারয় সমাস: উপমেয় ও উপমান পদের যে সমাস হয়, তাকে উপমিত কর্মধারয় সমাস বলে। এই সমাসে সাধারণ ধর্ম উল্লেখ করা থাকে না। অর্থাৎ, উপমান ও উপমিত কর্মধারয়ের মধ্যে যেটিতে সাধারণ ধর্মবাচক পদ থাকবে না, সেটিই উপমিত কর্মধারয় সমাস। যেমন, ‘পুরুষ সিংহের ন্যায় = পুরুষসিংহ’। এখানে ‘পুরুষ’কে ‘সিংহ’র সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে। অর্থাৎ এখানে ‘পুরুষ’ উপমেয় আর ‘সিংহ’ উপমান। সাধারণ ধর্মের উল্লেখ নেই। সুতরাং, এটি উপমিত কর্মধারয় সমাস।
- রূপক কর্মধারয় সমাস: উপমান ও উপমেয় পদের মধ্যে অভিন্নতা কল্পনা করা হলে, তাকে রূপক কর্মধারয় সমাস বলে। এটির ব্যাসবাক্যে উপমেয় ও উপমান পদের মাঝে ‘রূপ’ শব্দটি অথবা ‘ই’ শব্দাংশটি ব্যবহৃত হয়। যেমন, ‘মন রূপ মাঝি = মনমাঝি’। এখানে ‘মন’ উপমেয় ও ‘মাঝি’ উপমান। কিন্তু এখানে তাদের কোন নির্দিষ্ট গুণের তুলনা করা হয়নি। মনকেই মাঝি হিসেবে কল্পনা করা হয়েছে।
তৎপুরুষ সমাস
যে সমাসে পূর্বপদের শেষের বিভক্তি লোপ পায়, এবং পরপদের অর্থ প্রাধান্য পায়, তাকে তৎপুরুষ সমাস বলে। পূর্বপদের যে বিভক্তি লোপ পায়, সেই বিভক্তি অনুযায়ী তৎপুরুষ সমাসের নামকরণ করা হয়। তবে মাঝে মাঝে পূর্বপদের বিভক্তি লোপ না পেয়ে অবিকৃত থেকে যায়। তখন সেটাকে বলা হয় অলুক তৎপুরুষ। (অলুক মানে লোপ না পাওয়া, অ-লোপ)।
যেমন, দুঃখকে প্রাপ্ত = দুঃখপ্রাপ্ত। এখানে পূর্বপদ ‘দুঃখ’র সঙ্গে থাকা দ্বিতীয়া বিভক্তি ‘কে’ লোপ পেয়েছে। আবার পরপদ ‘প্রাপ্ত’র অর্থই এখানে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। দুঃখ প্রাপ্ত হয়েছে বলেই নতুন শব্দের প্রয়োজন হয়েছে, যার জন্য বাক্যাংশটিকে সমাস করে নতুন শব্দ বানানো হয়েছে। অর্থাৎ, এখানে পূর্বপদের শেষের বিভক্তি লোপ পেয়েছে, এবং পরপদের অর্থের প্রাধান্য রক্ষিত হয়েছে। তাই এটি তৎপুরুষ সমাস।
দ্বন্দ্ব সমাস
যে সমাসে পূর্বপদ ও পরপদ- উভয়েরই অর্থের প্রাধান্য থাকে, তাকে দ্বন্দ্ব সমাস বলে। এই সমাসে ব্যাসবাক্যে পূর্বপদ ও পরপদের সম্বন্ধ স্থাপনে ও, এবং, আর- এই তিনটি অব্যয় ব্যবহৃত হয়।
যেমন- মা ও বাপ = মা-বাপ। এখানে পূর্বপদ ‘মা’ ও পরপদ ‘বাপ’। ব্যাসবাক্যে ‘মা’ ও ‘বাপ’ দুইজনকেই সমান প্রাধান্য দেয়া হয়েছে, এবং দুজনকেই বোঝানো হয়েছে। অর্থাৎ, পূর্বপদ ও পরপদ, উভয়েরই অর্থের প্রাধান্য রক্ষিত হয়েছে। তাই এটি দ্বন্দ্ব সমাস।
দ্বিগু সমাস
দ্বিগু সমাসের সঙ্গে কর্মধারয় সমাসের বেশ মিল রয়েছে। এজন্য একে অনেকেই কর্মধারয় সমাসের অন্তর্ভূক্ত করে থাকেন। দ্বিগু সমাসেও পরপদের অর্থই প্রধান। এবং এই সমাসেও বিশেষণ পদের সঙ্গে বিশেষ্য পদের সমাস হয়। তবে এখানে বিশেষণ পদটি সর্বদাই সংখ্যাবাচক হয়, এবং সমাস হয় সমাহার বা মিলন অর্থে।
অর্থাৎ, সমাহার বা মিলন অর্থে সংখ্যাবাচক বিশেষণের সঙ্গে বিশেষ্য পদের যে সমাস হয়, এবং পরপদের অর্থই প্রাধান্য পায়, তাকে দ্বিগু সমাস বলে। যেমন, ‘অষ্ট ধাতুর সমাহার = অষ্টধাতু’। এখানে পূর্বপদ ‘অষ্ট’ একটি সংখ্যাবাচক বিশেষণ। আর পরপদ ‘ধাতু’ বিশেষ্য। অষ্ট ধাতুর মিলন বা সমাহার অর্থে সমাস হয়ে ‘অষ্টধাতু’ সমস্ত পদটি তৈরি হয়েছে যাতে ‘ধাতু’ সম্পর্কে বলা হয়েছে। অর্থাৎ, পরপদের অর্থ প্রধান হিসেবে দেখা দিয়েছে। সুতরাং, এটি দ্বিগু সমাস।
নিত্য সমাস
যে সমাসের সমস্ত পদই ব্যাসবাক্যের কাজ করে, আলাদা করে ব্যাসবাক্য তৈরি করতে হয় না, তাকে নিত্য সমাস বলে। যেমন, অন্য গ্রাম = গ্রামান্তর। এখানে ‘অন্য গ্রাম’ আর ‘গ্রামান্তর’, এই বাক্যাংশ ও শব্দটির মধ্যে তেমন বিশেষকোন পার্থক্য নেই। কেবল ‘অন্য’ পদের বদলে ‘অন্তর’ পদটি ব্যবহার করা হয়েছে। তাই এটি নিত্য সমাস।
প্রাদি সমাস
প্র, প্রতি, অনু, পরি, ইত্যাদি অব্যয় বা উপসর্গের সঙ্গে কৃৎ প্রত্যয় সাধিত বিশেষ্য বা ক্রিয়াবাচক বিশেষ্যর সমাস হলে তাকে প্রাদি সমাস বলে। যেমন, প্র (প্রকৃষ্ট) যে বচন = প্রবচন। এখানে বচন সমস্যমান পদটি একটি বিশেষ্য, যার মূল (ধাতু)বচ ধাতু বা কৃৎ প্রত্যয়। ‘প্র’ অব্যয়ের সঙ্গে কৃৎ প্রত্যয় সাধিত বিশেষ্য ‘বচন’র সমাস হয়ে সমস্ত পদ ‘প্রবচন’ শব্দটি তৈরি হয়েছে। সুতরাং, এটি প্রাদি সমাস।
বহুব্রীহি সমাস
যে সমাসে পূর্বপদ বা পরপদ কোনটিরই অর্থের প্রাধান্য রক্ষিত হয় না, বরং সমস্ত পদ তৃতীয় কোন শব্দকে বোঝায়, তাকে বহুব্রীহি সমাস বলে। যেমন, মহান আত্মা যার = মহাত্মা। এখানে পূর্বপদ ‘মহান’ (মহা) ও পরপদ ‘আত্মা’। কিন্তু সমস্ত পদ ‘মহাত্মা’ দ্বারা মহান বা আত্মা কোনটাকেই না বুঝিয়ে এমন একজনকে বোঝাচ্ছে, যিনি মহান, যার আত্মা বা হৃদয় মহৎ। আবার, মহাত্মা বলতে মহাত্মা গান্ধীকেও বোঝানো হয়ে থাকে। কিন্তু কোন অর্থেই পূর্বপদ বা পরপদকে বোঝানো হচ্ছে না। অর্থাৎ, পূর্বপদ বা পরপদ, কোনটারই অর্থ প্রাধান্য পাচ্ছে না। সুতরাং, এটি বহুব্রীহি সমাসের উদাহরণ।
(উল্লেখ্য, বহুব্রীহি সমাস, বিশেষ করে কিছু ব্যধিকরণ বহুব্রীহি সমাস ও উপপদ তৎপুরুষ সমাসের সমস্ত পদ প্রায় একই ধরনের হয়। ফলে এদের সমস্ত পদ দেখে আলাদা করে চেনার তেমন কোন উপায় নেই। এগুলোর সমাস নির্ণয়ের ক্ষেত্রে তাই একই ব্যাসবাক্য ও সমাস নির্ণয় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আর পরীক্ষায় মূলত এগুলো উপপদ তৎপুরুষ সমাসের উদাহরণ হিসেবেই আসে।)
সমাস অনুশীলন
শকুন্তলা
শব্দ | ব্যাসবাক্য | সমাসের নাম |
বনমধ্যে | বনের মধ্যে | ষষ্ঠী তৎপুরুষ |
প্রাণভয় | প্রাণ যাওয়ার ভয় | মধ্যপদলোপী কর্মধারয় |
রথারোহণ | রথে আরোহণ | সপ্তমী তৎপুরুষ |
রথচালন | রথকে চালন | দ্বিতীয় তৎপুরুষ |
শরনিক্ষেপ | শরকে নিক্ষেপ | দ্বিতীয় তৎপুরুষ |
শরের নিক্ষেপ | ষষ্ঠী তৎপুরুষ | |
প্রাণবধ | প্রাণের বধ | ষষ্ঠী তৎপুরুষ |
অতিমাত্র | মাত্রাকে অতিক্রান্ত | প্রাদি |
বেগসংবরণ | বেগকে সংবরণ | দ্বিতীয়া তৎপুরুষ |
বজ্রসম | বজ্রের সম | ষষ্ঠী তৎপুরুষ |
ক্ষীণজীবী | ক্ষীণভাবে বাঁচে যে | উপপদ তৎপুরুষ |
অল্পপ্রাণ | অল্পপ্রাণ যার | বহুব্রীহি |
পুত্রলাভ | পুত্রকে লাভ | দ্বিতীয়া তৎপুরুষ |
কার্যক্ষতি | কার্যরে ক্ষতি | ষষ্ঠী তৎপুরুষ |
অতিথি সৎকার | অতিথির সৎকার | ষষ্ঠী তৎপুরুষ |
ধর্মকার্য | ধর্মবিহিত কার্য | মধ্যপদলোপী কর্মধারয় |
ভুজবল | ভুজের বল | ষষ্ঠী তৎপুরুষ |
ভারার্পণ | ভারের অর্পণ | ষষ্ঠী তৎপুরুষ |
তপোবন | তপের নিমিত্ত বন | চতুর্থী তৎপুরুষ |
তপোবনদর্শন | তপোবনকে দর্শন | দ্বিতীয়া তৎপুরুষ |
কোটরস্থিত | কোটরে স্থিত | সপ্তমী তৎপুরুষ |
মুখভ্রষ্ট | মুখ থেকে ভ্রষ্ট | পঞ্চমী তৎপুরুষ |
উপলখণ্ড | উপলের খণ্ড | ষষ্ঠী তৎপুরুষ |
বিস্ময়াপন্ন | বিস্ময়কে আপন্ন | দ্বিতীয়া তৎপুরুষ |
কর্ণকুহর | কর্ণের কুহর | ষষ্ঠী তৎপুরুষ |
তপস্বিকন্যা | তপস্বীর কন্যা | ষষ্ঠী তৎপুরুষ |
অনতিবৃহৎ | নয় অতি বৃহৎ | নঞ তৎপুরুষ |
সেচনকলস | সেচনের নিমিত্ত কলস | চতুর্থী তৎপুরুষ |
জলসেচন | জলদ্বারা সেচন | তৃতীয়া তৎপুরুষ |
অনসূয়া | নেই অসূয়া (ঈর্ষা) যার | বহুব্রীহি |
প্রিয়ংবদা | প্রিয়ম্ (প্রিয়বাক্য) বলে যে (স্ত্রী) | উপপদ |
কণ্বতনয়া | কণ্বের তনয়া | ষষ্ঠী তৎপুরুষ |
মনোহারিণী | মন হরণ করে যে নারী | উপপদ তৎপুরুষ |
স্বভাবসিদ্ধ | স্বভাব দ্বারা সিদ্ধ | তৃতীয়া তৎপুরুষ |
অঙ্গুলি সংকেত | অঙ্গুলি দ্বারা সংকেত | তৃতীয়া তৎপুরুষ |
নবযৌবন | নব যে যৌবন | কর্মধারয় |
যৌবনের গান
শব্দ | ব্যাসবাক্য | সমাসের নাম |
মমতারস | মমতা মিশ্রিত রস | মধ্যপদলোপী কর্মধারয় |
অলসতন্দ্রা | অলস যে তন্দ্রা | কর্মধারয় |
মোহনিদ্রা | মোহ রূপ নিদ্রা | রূপক কর্মধারয় |
সৈন্যসামন্ত | সৈন্য ও সামন্ত | দ্বন্দ্ব |
সংগীতগুঞ্জন | সংগীতের গুঞ্জন | ষষ্ঠী তৎপুরুষ |
ঝরনাধারা | ঝরনার ধারা | ষষ্ঠী তৎপুরুষ |
জবাকুসুমসঙ্কাশ | জবাকুসুমের সঙ্কাশ | ষষ্ঠী তৎপুরুষ |
তিমিরবিদারী | তিমিরকে বিদীর্ণ করে যা | কর্মধারয় |
যৌবনসূর্য | যৌবন রূপ সূর্য | রূপক কর্মধারয় |
তিমিরকুন্তলা | তিমিরের ন্যায় কুন্তল যার | উপমিত কর্মধারয় |
পাষাণস্তুপ | পাষাণের স্তুপ | ষষ্ঠী তৎপুরুষ |
আলোকপিয়াসী | আলোকের পিয়াসী | ষষ্ঠী তৎপুরুষ |
প্রাণচঞ্চল | প্রাণ চঞ্চল যার | বহুব্রীহি |
মেঘলুপ্ত | মেঘে লুপ্ত | সপ্তমী তৎপুরুষ |
জয়মুকুট | জয়ের জন্য যে মুকুট | মধ্যপদলোপী কর্মধারয় |
মার্তণ্ডপ্রায় | মার্তণ্ডের প্রায় | ষষ্ঠী তৎপুরুষ |
নবপৃথিবী | নব যে পৃথিবী | কর্মধারয় |
সলিলসমাধি | সলিলে সমাধি | সপ্তমী তৎপুরুষ |
একটি তুলসী গাছের কাহিনী
শব্দ | ব্যাসবাক্য | সমাসের নাম |
গল্পপ্রেমিক | গল্প প্রেমিক যে | কর্মধারয় |
পুষ্পসৌরভ | পুষ্পের সৌরভ | ষষ্ঠী তৎপুরুষ |
জ্যোৎস্নারাত | জ্যোৎস্না শোভিত রাত | মধ্যপদলোপী কর্মধারয় |
পৃষ্ঠপ্রদর্শন | পৃষ্ঠকে প্রদর্শন | দ্বিতীয়া তৎপুরুষ |
দেশভঙ্গ | দেশকে ভঙ্গ | দ্বিতীয়া তৎপুরুষ |
জনমানব | জন ও মানব | দ্বন্দ্ব |
দেশপলাতক | দেশ থেকে পলাতক | পঞ্চমী তৎপুরুষ |
আম-কুড়ানো | আমকে কুড়ানো | দ্বিতীয়া তৎপুরুষ |
অনাশ্রিত | নয় আশ্রিত যে | বহুব্রীহি |
সমবেদনা-ভরা | সমবেদনা দিয়ে ভরা | তৃতীয়া তৎপুরুষ |
মন্দভাগ্য | মন্দ যে ভাগ্য | কর্মধারয় |
মন্দ ভাগ্য যার | বহুব্রীহি | |
ন্যায়সঙ্গত | ন্যায় দ্বারা সঙ্গত | তৃতীয়া তৎপুরুষ |
জীবনসঞ্চার | জীবনের সঞ্চার | ষষ্ঠী তৎপুরুষ |
আবর্জনা-ভরা | আবর্জনা দ্বারা ভরা | তৃতীয়া তৎপুরুষ |
গানের আসর | গানের আসর | অলুক ষষ্ঠী তৎপুরুষ |
রান্নাঘর | রান্না করা ঘর | মধ্যপদলোপী কর্মধারয় |
রান্নার নিমিত্ত ঘর | চতুর্থী তৎপুরুষ | |
বেওয়ারিশ | বে (নেই) ওয়ারিশ যার | নঞর্থক বহুব্রীহি |
সন্ধ্যাপ্রদীপ | সন্ধ্যার প্রদীপ | ষষ্ঠী তৎপুরুষ |
জীবনপ্রদীপ | জীবন রূপ প্রদীপ | রূপক কর্মধারয় |
সুখসময় | সুখের সময় | ষষ্ঠী তৎপুরুষ |
গৃহকর্ত্রী | গৃহের কর্ত্রী | ষষ্ঠী তৎপুরুষ |
বাকবিতণ্ডা | বাক দ্বারা বিতণ্ডা | তৃতীয়া তৎপুরুষ |
অত্যাচার অবিচার | অত্যাচার ও অবিচার | দ্বন্দ্ব |
শ্বাস-প্রশ্বাস | শ্বাস ও প্রশ্বাস | দ্বন্দ্ব |
কচুকাটা | কচুর মত কাটা | উপমান কর্মধারয় |
অক্ষত | নয় ক্ষত | নঞ তৎপুরুষ |
অবিশ্বাস্য | নয় বিশ্বাস্য | নঞ তৎপুরুষ |
বেআইনি | বে (নয়) আইনি | নঞ তৎপুরুষ |
অপর্যাপ্ত | নয় পর্যাপ্ত | নঞ তৎপুরুষ |
যৌবনের গান
শব্দ | ব্যাসবাক্য | সমাসের নাম |
শ্রম-কিণাঙ্ক-কঠিন | শ্রম-কিণাঙ্কের ন্যায় কঠিন | উপমান কর্মধারয় |
বন্য-শ্বাপদ-সঙ্কুল | বন্য-শ্বাপদে সঙ্কুল | সপ্তমী তৎপুরুষ |
জরা-মৃত্যু-ভীষণা | জরা-মৃত্যুতে ভীষণা | সপ্তমী তৎপুরুষ |
ধরণী-মেরী | ধরনী রূপ মেরী | রূপক কর্মধারয় |
খেয়াল-খুশি | খেয়াল ও খুশি | দ্বন্দ্ব |
জীবন-আবেগ | জীবনের আবেগ | ষষ্ঠী তৎপুরুষ |
উদ্ধত-শির | উদ্ধত শির যার | বহুব্রীহি |
সিন্ধু-নীর | সিন্ধুর নীর | ষষ্ঠী তৎপুরুষ |
যৌবন-বেগ | যৌবনের বেগ | ষষ্ঠী তৎপুরুষ |
মরু-কবি | মরুর কবি | ষষ্ঠী তৎপুরুষ |
বিপ্লব-অভিযান | বিপ্লব ও অভিযান | দ্বন্দ্ব |
গরল-পিয়ালা | গরলের পিয়ালা | ষষ্ঠী তৎপুরুষ |
গিরি-নিঃস্রাব | গিরি হতে নিঃসৃত যা | বহুব্রীহি |
কূপমণ্ডুক | কূপের মণ্ডুক | ষষ্ঠী তৎপুরুষ |
সন্ধি
পাশাপাশি অবস্থিত দুটি ধ্বনির মিলনকে সন্ধি বলে। অর্থাৎ, এখানে দুটি ধ্বনির মিলন হবে, এবং সেই দুটি ধ্বনি পাশাপাশি অবস্থিত হবে। যেমন, ‘নর + অধম = নরাধম’। এখানে ‘নর’র শেষ ধ্বনি ‘অ’ (ন+অ+র+ অ), এবং ‘অধম’র প্রথম ধ্বনি ‘অ’। এখানে ‘অ’ ও ‘অ’ মিলিত হয়ে ‘আ’ হয়েছে। অর্থাৎ পাশাপাশি অবস্থিত দুইট ধ্বনি ‘অ’ ও ‘অ’ মিলিত হয়ে ‘আ’ হলো।
সন্ধি ধ্বনির মিলন : সন্ধি নতুন শব্দ তৈরির একটি কৌশল, তবে এখানে সমাসের মতো নতুনভাবে সম্পূর্ণ শব্দ তৈরি হয় না। কেবল দুটো শব্দ মিলিত হওয়ার সময় পাশাপাশি অবস্থিত ধ্বনি দুটি মিলিত হয়। এই দুটি ধ্বনির মিলনের মধ্য দিয়ে দুটি শব্দ মিলিত হয়ে নতুন একটি শব্দ তৈরি করে। অর্থাৎ শব্দ দুটি মিলিত হয় না, ধ্বনি দুটি মিলিত হয়। উল্লেখ্য, একাধিক শব্দের বা পদের মিলন হলে তাকে বলে সমাস।
সন্ধির উদ্দেশ্য : সন্ধি মূলত দুটো উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে করা হয়। সুতরাং যেখানে সন্ধির মাধ্যমে এই দুটি উদ্দেশ্যই পূরণ হবে, সেখানেই কেবল সন্ধি করা যাবে। এগুলো হলো-
১. সন্ধির ফলে উচ্চারণ আরো সহজ হবে (স্বাভাবিক উচ্চারণে সহজপ্রবণতা),
১. সন্ধির ফলে উচ্চারণ আরো সহজ হবে (স্বাভাবিক উচ্চারণে সহজপ্রবণতা),
২. সন্ধি করার পর শুনতে আরো ভালো লাগবে (ধ্বনিগত মাধুর্য সম্পাদন)
সন্ধি পড়ার জন্য স্পর্শ বর্ণের তালিকাটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাই ধ্বনি প্রকরণ ও উচ্চারণ বিধির অন্তর্গত তালিকাটি এখানে দেয়া হলো-
নাম
|
অঘোষ
|
ঘোষ
|
নাসিক্য
| ||
অল্পপ্রাণ
|
মহাপ্রাণ
|
অল্পপ্রাণ
|
মহাপ্রাণ
| ||
ক-বর্গীয় ধ্বনি (কণ্ঠ্য ধ্বনি) | ক | খ | গ | ঘ | ঙ |
চ-বর্গীয় ধ্বনি (তালব্য ধ্বনি) | চ | ছ | জ | ঝ | ঞ |
ট-বর্গীয় ধ্বনি (মূর্ধন্য ধ্বনি) | ট | ঠ | ড | ঢ | ণ |
ত-বর্গীয় ধ্বনি (দন্ত্য ধ্বনি) | ত | থ | দ | ধ | ন |
প-বর্গীয় ধ্বনি (ওষ্ঠ্য ধ্বনি) | প | ফ | ব | ভ | ম |
বাংলা শব্দের সন্ধি
খাঁটি বাংলা শব্দ বা তদ্ভব শব্দের যে সন্ধি, সেগুলোকেই বাংলা শব্দের সন্ধি বলে। বাংলাতে এই সন্ধি ঘটে থাকে দুই ভাবে। বাংলা স্বরসন্ধি ও বাংলা ব্যঞ্জনসন্ধি।
১। বাংলা স্বরসন্ধি
বাংলা শব্দের সংযোজনের সময় যদি স্বরবর্ণের সাথে স্বরবর্ণের মিল ঘটে তবে তাকে বাংলা স্বরসন্ধি বলা হয়। নিচে বাংলা স্বরসন্ধি সমূহ দেখানো হলো-
বাংলা শব্দের সংযোজনের সময় যদি স্বরবর্ণের সাথে স্বরবর্ণের মিল ঘটে তবে তাকে বাংলা স্বরসন্ধি বলা হয়। নিচে বাংলা স্বরসন্ধি সমূহ দেখানো হলো-
বাংলা স্বরসন্ধির সূত্রাবলী
১। অ + অ =আ পোস্ট +অফিস =পোস্টাফিস
২। অ + আ =আ থাল + আ =থালা
৩। অ + ই =ই তাঁত + ই =তাঁতি
৪। অ + উ =উ দুষ্ট + উ =দুষ্টু
৫। অ + এ =এ শত + এক =শতেক
৬। আ + আ =আ শাঁখা + আরি =শাঁখারি
৭। আ + ই =এ যা + ইচ্ছেতাই =যাচ্ছেতাই
৮। আ + ঈ =এ ঢাকা + ঈশ্বর =ঢাকেশ্বর
৯। আ + উ =উ মিথ্যা + উক =মিথ্যুক
১০। আ + এ =য় আমা + এ =আমায়
১১। ই + ই =ই ঘড়ি + ইয়াল =ঘড়িয়াল
১২। ই + এ = য় দই + এ =দইয়ে
১৩। ই + ও = ইও বাড়ি + ওয়ালা =বাড়িওয়ালা
১৪। ঈ + উ =ও ঈদ + উৎসব =ঈদোৎসব
১৫। উ + আ = য়া বাবু + আনা = বাবুয়ানা
১৬। এ + আ = এ মেয়ে + আলি = মেয়েলি
১৭। এ + এ = এ বোঁদে + এর = বোঁদের
১৮। ও + আ =য়া শো + আ = শোয়া
১৯। ও + এ =য় আলো + এ = আলোয়
১। অ + অ =আ পোস্ট +অফিস =পোস্টাফিস
২। অ + আ =আ থাল + আ =থালা
৩। অ + ই =ই তাঁত + ই =তাঁতি
৪। অ + উ =উ দুষ্ট + উ =দুষ্টু
৫। অ + এ =এ শত + এক =শতেক
৬। আ + আ =আ শাঁখা + আরি =শাঁখারি
৭। আ + ই =এ যা + ইচ্ছেতাই =যাচ্ছেতাই
৮। আ + ঈ =এ ঢাকা + ঈশ্বর =ঢাকেশ্বর
৯। আ + উ =উ মিথ্যা + উক =মিথ্যুক
১০। আ + এ =য় আমা + এ =আমায়
১১। ই + ই =ই ঘড়ি + ইয়াল =ঘড়িয়াল
১২। ই + এ = য় দই + এ =দইয়ে
১৩। ই + ও = ইও বাড়ি + ওয়ালা =বাড়িওয়ালা
১৪। ঈ + উ =ও ঈদ + উৎসব =ঈদোৎসব
১৫। উ + আ = য়া বাবু + আনা = বাবুয়ানা
১৬। এ + আ = এ মেয়ে + আলি = মেয়েলি
১৭। এ + এ = এ বোঁদে + এর = বোঁদের
১৮। ও + আ =য়া শো + আ = শোয়া
১৯। ও + এ =য় আলো + এ = আলোয়
ব্যতিক্রম : কুড়ি + এক = কুড়িক
২। বাংলা ব্যঞ্জনসন্ধি :
বাংলা শব্দের সংযোজনের সময় যদি স্বরবর্ণের সাথে ব্যঞ্জনবর্ণের, ব্যঞ্জনবর্ণের সাথে ব্যঞ্জনবর্ণের কিম্বা ব্যঞ্জনবর্ণের সাথে স্বরবর্ণের মিল ঘটে তবে তাকে বাংলা ব্যঞ্জনসন্ধি বলা হয়। বাংলা ব্যঞ্জনসন্ধিজাত ধ্বনি গুলো সংস্কৃত সন্ধির অনুরূপ নয়। এক্ষেত্রে বাঙলাতে যে সন্ধিজাত ধ্বনি পাই তার সবগুলোই বাঙলার নিজস্ব রীতিতে উচ্চারিত হয়। ফলে সব সময় বাংলা সন্ধি সুনির্দিষ্ট কোন রীতিকে অনুসরণ করে না। তারপরেও কিছু কিছু সাধারণ রীতি অনুসৃত হয়, তা পর্যায়ক্রমে নিচে আলোচনা করা হলো।
২.১। বাংলা স্বর-ব্যঞ্জন সন্ধি :
বাংলা স্বর-ব্যঞ্জন সন্ধির সূত্র : পূর্বপদের শেষে স্বরধ্বনিযুক্ত ব্যঞ্জনধ্বনি থাকলে এবং পরপদের প্রথম বর্ণ ব্যঞ্জনধ্বনি হলে, কখনো পূর্বপদের স্বরধ্বনি লোপ পায়।
উদাহরণ : বড় + দাদা =বড়্দাদা (অ লোপ)
মিশি +কালো =মিশ্কালো (ই লোপ)
পেটে +ব্যথা =পেটব্যথা (এ লোপ)
বাংলা স্বর-ব্যঞ্জন সন্ধির সূত্র : পূর্বপদের শেষে স্বরধ্বনিযুক্ত ব্যঞ্জনধ্বনি থাকলে এবং পরপদের প্রথম বর্ণ ব্যঞ্জনধ্বনি হলে, কখনো পূর্বপদের স্বরধ্বনি লোপ পায়।
উদাহরণ : বড় + দাদা =বড়্দাদা (অ লোপ)
মিশি +কালো =মিশ্কালো (ই লোপ)
পেটে +ব্যথা =পেটব্যথা (এ লোপ)
২.২। বাংলা ব্যঞ্জন-স্বর সন্ধি
বাংলা ব্যঞ্জন-স্বর সন্ধির সূত্র : পূর্বপদের শেষ বর্ণটি ব্যঞ্জনধ্বনি হলে এবং পরপদের আদ্য বর্ণ স্বরবর্ণ হলে, উক্ত স্বরবর্ণ অবিকৃতভাবে পূর্বপদের শেষ বর্ণে যুক্ত হয়।
উদাহরণ : এক + এক =একেক
কয় + এক =কয়েক
তখন + ই =তখনই
মাস + এক =মাসেক
বাংলা ব্যঞ্জন-স্বর সন্ধির সূত্র : পূর্বপদের শেষ বর্ণটি ব্যঞ্জনধ্বনি হলে এবং পরপদের আদ্য বর্ণ স্বরবর্ণ হলে, উক্ত স্বরবর্ণ অবিকৃতভাবে পূর্বপদের শেষ বর্ণে যুক্ত হয়।
উদাহরণ : এক + এক =একেক
কয় + এক =কয়েক
তখন + ই =তখনই
মাস + এক =মাসেক
২.৩। বাংলা ব্যঞ্জন-ব্যঞ্জন সন্ধি
বাংলা ব্যঞ্জন-ব্যঞ্জন সন্ধির সূত্র : ১। পূর্বপদের শেষ বর্ণটি ত, দ থাকলে এবং পরের বর্ণে জ থাকলে, জ্জ হয়।
উদাহরণ : ত্ +জ =জ্জ নাত্ +জন =নাজ্জামাই
দ্ +জ =জ্জ বদ্ +জাত =বজ্জাত
বাংলা ব্যঞ্জন-ব্যঞ্জন সন্ধির সূত্র : ১। পূর্বপদের শেষ বর্ণটি ত, দ থাকলে এবং পরের বর্ণে জ থাকলে, জ্জ হয়।
উদাহরণ : ত্ +জ =জ্জ নাত্ +জন =নাজ্জামাই
দ্ +জ =জ্জ বদ্ +জাত =বজ্জাত
বাংলা ব্যঞ্জন-ব্যঞ্জন সন্ধির সূত্র : ২। পূর্বপদের শেষ বর্ণটি চ-বর্গীয় হলে এবং পরপদে জ, শ, ষ, স থাকলে তা দ্বিত্ব হয়।
উদাহরণ : চ্ +জ =জ্জ পাঁচ্ +জন =পাঁজ্জন>পাজ্জ্ন
চ্ +শ =শ্শো পাঁচ্ +শ =পাঁশ্শো
চ্ +স =স্স পাঁচ +সের =পাঁস্সের
উদাহরণ : চ্ +জ =জ্জ পাঁচ্ +জন =পাঁজ্জন>পাজ্জ্ন
চ্ +শ =শ্শো পাঁচ্ +শ =পাঁশ্শো
চ্ +স =স্স পাঁচ +সের =পাঁস্সের
বাংলা ব্যঞ্জন-ব্যঞ্জন সন্ধির সূত্র : ৩। পূর্বপদের শেষ বর্ণটি ত থাকলে এবং পরপদে দ=দ্দ এবং স থাকলে চ্ছ হয়।
উদাহরণ : ত্ +দ =দ্দ তৎ +দিন =তদ্দিন
ত্ +স =চ্ছ উৎ +সন্ন =উচ্ছন্ন
উদাহরণ : ত্ +দ =দ্দ তৎ +দিন =তদ্দিন
ত্ +স =চ্ছ উৎ +সন্ন =উচ্ছন্ন
বাংলা ব্যঞ্জন-ব্যঞ্জন সন্ধির সূত্র : ৪। পূর্বপদের শেষ বর্ণটি ব্যঞ্জনবর্ণ হলে এবং পরের বর্ণটি ব্যঞ্জনবর্ণ হলে, সাধারণত ব্যঞ্জনবর্ণ দুটি পাশাপাশি বসে।
উদাহরণ : শাক্ +ভাত =শাকভাত।
উদাহরণ : শাক্ +ভাত =শাকভাত।
সমীভবন
দুটি ব্যঞ্জনধ্বনির একে অপরের প্রভাবে পরিবর্তিত হয়ে সমতা লাভ করলে তাকে সমীভবন বলে। যেমন, ‘জন্ম’ (জ+অ+ন+ম+অ)-এর ‘ন’, ‘ম’-র প্রভাবে পরিবর্তিত হয়ে হয়েছে ‘জম্ম’। সমীভবন মূলত ৩ প্রকার-
ক. প্রগত সমীভবন : আগের ব্যঞ্জনধ্বনির প্রভাবে পরবর্তী ব্যঞ্জনধ্বনির পরিবর্তন। যেমন, চক্র˃ চক্ক, পক্ব˃ পক্ক, পদ্ম˃ পদ্দ, লগ্ন˃ লগ্গ, ইত্যাদি।
খ. পরাগত সমীভবন : পরের ব্যঞ্জনধ্বনির প্রভাবে আগের ব্যঞ্জনধ্বনির পরিবর্তন। যেমন, তৎ+জন্য˃ তজ্জন্য, তৎ+হিত˃ তদ্ধিত, উৎ+মুখ˃ উন্মুখ, ইত্যাদি।
গ. অন্যোন্য সমীভবন : পাশাপাশি দুটো ব্যঞ্জনধ্বনি দুইয়ের প্রভাবে দু’টিই পরিবর্তিত হলে তাকে অন্যোন্য সমীভবন বলে। যেমন, সত্য (সংস্কৃত)˃ সচ্চ (প্রাকৃত), বিদ্যা (সংস্কৃত)˃ বিজ্জা (প্রাকৃত), ইত্যাদি।]
দুটি ব্যঞ্জনধ্বনির একে অপরের প্রভাবে পরিবর্তিত হয়ে সমতা লাভ করলে তাকে সমীভবন বলে। যেমন, ‘জন্ম’ (জ+অ+ন+ম+অ)-এর ‘ন’, ‘ম’-র প্রভাবে পরিবর্তিত হয়ে হয়েছে ‘জম্ম’। সমীভবন মূলত ৩ প্রকার-
ক. প্রগত সমীভবন : আগের ব্যঞ্জনধ্বনির প্রভাবে পরবর্তী ব্যঞ্জনধ্বনির পরিবর্তন। যেমন, চক্র˃ চক্ক, পক্ব˃ পক্ক, পদ্ম˃ পদ্দ, লগ্ন˃ লগ্গ, ইত্যাদি।
খ. পরাগত সমীভবন : পরের ব্যঞ্জনধ্বনির প্রভাবে আগের ব্যঞ্জনধ্বনির পরিবর্তন। যেমন, তৎ+জন্য˃ তজ্জন্য, তৎ+হিত˃ তদ্ধিত, উৎ+মুখ˃ উন্মুখ, ইত্যাদি।
গ. অন্যোন্য সমীভবন : পাশাপাশি দুটো ব্যঞ্জনধ্বনি দুইয়ের প্রভাবে দু’টিই পরিবর্তিত হলে তাকে অন্যোন্য সমীভবন বলে। যেমন, সত্য (সংস্কৃত)˃ সচ্চ (প্রাকৃত), বিদ্যা (সংস্কৃত)˃ বিজ্জা (প্রাকৃত), ইত্যাদি।]
১. অঘোষ ধ্বনির পর ঘোষ ধ্বনি আসলে অঘোষ ধ্বনিটিও ঘোষ ধ্বনি হয়ে যাবে। যেমন, ছোট+দা = ছোড়দা।
২. হলন্ত র (র্) -এর পরে অন্য কোন ব্যঞ্জন ধ্বনি থাকলে ‘র্’ লুপ্ত হবে, পরবর্তী ব্যঞ্জনধ্বনি দ্বিত্ব হবে। যেমন, আর্+না = আন্না, চার্+টি = চাট্টি, ধর্+না = ধন্না, দুর্+ছাই = দুচ্ছাই
৩. ত-বর্গীয় ধ্বনির (ত, থ, দ, ধ, ন) পরে চ-বর্গীয় ধ্বনি (চ, ছ, জ, ঝ, ঞ) আসলে আগের ধ্বনি লোপ পায়, পরের ধ্বনি (চ-বর্গীয় ধ্বনি) দ্বিত্ব হয়। যেমন, নাত্+জামাই = নাজ্জামাই, বদ্+জাত = বজ্জাত, হাত+ছানি = হাচ্ছানি
৪. ‘প’ এর পরে ‘চ’ এলে আর ‘স’ এর পরে ‘ত’ এলে ‘চ’ ও ‘ত’ এর জায়গায় ‘শ’ হয়। যেমন, পাঁচ+শ = পাঁশশ, সাত+শ = সাশশ, পাঁচ+সিকা = পাঁশশিকা
৫. হলন্ত ধ্বনির সঙ্গে স্বরধ্বনি যুক্ত হলে স্বরধ্বনিটি লোপ পাবে না। যেমন, বোন+আই = বোনাই, চুন+আরি = চুনারি, তিল+এক = তিলেক, বার+এক = বারেক, তিন+এক = তিনেক
৬. স্বরধ্বনির পরে ব্যঞ্জনধ্বনি এলে স্বরধ্বনিটি লুপ্ত হয়। যেমন, কাঁচা+কলা = কাঁচকলা, নাতি+বৌ = নাতবৌ, ঘোড়া+দৌড় = ঘোড়দৌড়, ঘোড়া+গাড়ি = ঘোড়গাড়ি
রূপতত্ত্বের বিচারে সন্ধি হল- সম-Öধা (ধারণ করা) +ই (কি), ভাববাচ্য। এর সমার্থ হলে— সংযোগ, সংশ্লেষ, মিলন। পাণিনীয় ব্যাকরণের সূত্রে বাংলা ব্যাকরণে এর প্রবেশ ঘটেছে। গোড়ার দিকে বাংলা ব্যাকরণে তৎসম শব্দের সন্ধি প্রবেশ করেছিল প্রত্যক্ষভাবে সংস্কৃত ব্যাকরণে অনুলিপি হিসাবে। পরে বাংলা ব্যাকরণে বাংলা সন্ধি যুক্ত হয়েছে, বাংলা উচ্চারণ ও বানান রীতি অনুসারে।
পাণিনীয় ব্যাকরণ মতে- পরঃ সন্নিকর্ষঃ সংহিতা (১।৪।১০৯)। বিদ্যাসাগরের সমগ্র ব্যাকরণ কৌমুদী (ডিসেম্বর ২০০৩) -এর বাংলা বর্ণনায় বলা হয়েছে— ‘দুই বর্ণ পরস্পর অত্যন্ত সন্নিহিত হইলে উভয়ে মিলিত হয়’। লক্ষ্যণীয় বিষয় পাণিনী সংজ্ঞায় যাকে সংহিতা বলা হয়েছে— তাই বাংলা ব্যাকরণে সন্ধি। সংস্কৃত ব্যাকরণে প্রত্যক্ষভাবে সন্ধিতে উচ্চারণের বিষয়টি পাওয়া যায় না।
ডঃ মুহম্মদ শহীদুল্লাহর মতও পাণিনি’র অনুরূপ (..বর্ণদ্বয়ের মিলনকে সন্ধি বলে। বাঙ্গালা ব্যাকরণ (মাওলা ব্রাদ্রাস, ফাল্গুন ১৩৪২ )। এই সন্ধির সংজ্ঞার ব্যাপক পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায় সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায়ের ভাষা-প্রকাশ বাঙ্গালা ব্যাকরণ (বৈশাখ ১৩৯৬) –এ। এই ব্যাকরণে সন্ধির সংজ্ঞায় বলা হয়েছে ‘দুইটি (বা ক্বচিৎ দুইটির অধিক) ধ্বনি একই পদে, অথবা দুইটি বিভিন্ন পদে, পাশাপাশি অবস্থান করিলে, দ্রুত উচ্চারণের সময় তাহাদের মধ্যে আংশিক বা পূর্ণভাবে মিলন হয়; কিংবা একটির লোপ হয়, অথবা একটি অপরটির প্রভাবে পরিবর্তিত হয়। এইরূপ মিলন বা পরিবর্তনকে সন্ধি বলে।
সুনীতিকুমারের এই সংজ্ঞায় ধ্বনিটাই প্রধান। কিন্তু বাস্তবে এই সংজ্ঞা আমাদের কিছুটা বিভ্রান্ত করে। ধরা যাক- সন্ধির নিয়মে বলা হচ্ছে, অ +অ=আ। কিন্তু বাস্তবে অ+অ হওয়া উচিৎ অঅ। কারণ, অনন্ত কাল ধরে চেষ্টা করলেও ‘অ +অ’ কে আ ধ্বনিতে পরিণত করা যায় না। কিন্তু যখন বিশেষভাবে বলে দেওয়া হবে যে- ‘অ +অ’ যুক্ত করলে আ হবেই, তখন ধ্বনির স্বাভাবিক বৈশিষ্ট্য ত্যাগ করে, বলতেই হবে, অ +অ=আ। এর ফলে ধ্বনিতত্ত্বে সন্ধি একটি কৃত্রিম রীতি হিসাবেই প্রতিষ্ঠা পাবে। প্রকৃষ্ট বিচারে দুই বর্ণের মিলনে যখন যুক্তবর্ণ তৈরি হয়, প্রাথমিকভাবে যুক্তবর্ণ বানানরীতিকে প্রকাশ করে, দ্বিতীয় পর্যায়ে যখন তা ধ্বনির দ্বারা যখন প্রকাশিত হয়, তখন সন্ধির কৃত্রিম রীতিকে প্রতিষ্ঠিত করে। বানানরীতির বিষয় এখানে যুক্ত করায়- আপত্তি উঠতেই পারে। তা হলে- বিষয়টির কিছু ব্যাখ্যা দেওয়া যাক। ধরা যাক একটি শব্দ ‘নবান্ন’। স্বরসন্ধির নিয়মে এর বিশ্লেষণ হবে—
নব + অন্ন =নবান্ন
নব + অন্ন =নবান্ন
প্রাথমিকভাবে বানানরীতি অনুসারে বলা যেতে পারে—
১। পূর্ব-পদের শেষ বর্ণটি যদি কারচিহ্ন বর্জিত এবং হসন্তহীন ব্যঞ্জনবর্ণ হয়,
২। এবং পরপদের প্রথম বর্ণ যদি অ বা কারচিহ্ন বর্জিত হসন্তহীন ব্যঞ্জনবর্ণ হয়,
৩। তবে প্রথম পদের শেষবর্ণে আকার যুক্ত হবে। যেমন—
১। পূর্ব-পদের শেষ বর্ণটি যদি কারচিহ্ন বর্জিত এবং হসন্তহীন ব্যঞ্জনবর্ণ হয়,
২। এবং পরপদের প্রথম বর্ণ যদি অ বা কারচিহ্ন বর্জিত হসন্তহীন ব্যঞ্জনবর্ণ হয়,
৩। তবে প্রথম পদের শেষবর্ণে আকার যুক্ত হবে। যেমন—
- নব (শেষ বর্ণ কারচিহ্ন বর্জিত এবং হসন্তহীন ব্যঞ্জনধ্বনি) + অন্ন (প্রথম বর্ণ অ) =ব (প্রথম পদের শেষবর্ণ) +আ=বআ
৪। এই আ, ব্যঞ্জনবর্ণের সাথে আ-কার হিসাবে যুক্ত হবে।
- নব +অন্ন=নবআন্ন>নবান্ন।
এখানে উৎপন্ন নবান্ন শব্দের ‘বা’ ধ্বনির ব্যাখ্যাকে ধ্বনির বিশ্লেষণ করে, যে সংজ্ঞাই দেওয়া হোক না কেন, তা হবে একটি কৃত্রিম পদ্ধতি। লক্ষ্য করুন, এই বিচারে উচ্চারণ ত্রুটির চেয়ে আমরা বানানের শুদ্ধতাকে প্রাধান্য দেই বেশি। এক্ষেত্রে আর একটি উদাহরণ দেওয়া যাক। নমুনা- শব্দটি ‘রবীন্দ্র’ । বাংলা উচ্চারণরীতিতে ‘ই’ ঈকারে প্রভেদ নেই। তাই ‘রবীন্দ্র’ আর ‘রবিন্দ্র’ দুটোর উচ্চারণ হবে একই। সন্ধির নিয়মে আমরা যদি বিষয়টি পরপর লিখি, তাহলে বিশ্লেষণটা নিচের মতো হতে পারে।
- রবি + ইন্দ্র=রবীন্দ্র (বানানরীতে শুদ্ধ, উচ্চারণরীতিতে হবে -রো.বিন্.দ্রো )
- রবি + ইন্দ্র=রবিন্দ্র (বানানরীতে অশুদ্ধ, উচ্চারণরীতিতে হবে -রো.বিন্.দ্রো)
লক্ষ্য করুন। ‘রবীন্দ্র’ ও ‘রবিন্দ্র’ দুটির উচ্চারণ একই। তাই সন্ধির সূত্র এখানে কোন কাজই করছে না। কিন্তু বানান রীতিতে সন্ধির রীতি (ই +ই=ঈ) অপরিহার্য।
সন্ধির সূত্রে বাংলাতে বানানরীতির পাশাপাশি ধ্বনি তত্ত্বের যে কৃত্রিম রীতি পাই, তারই আলোকে আমি সন্ধির প্রথাগত বিষয়গুলো নিয়ে আমি আলোচনা করেছি। বলাই বাহুল্য বাংলা ধ্বনিতত্ত্বের সন্ধির সূত্রগুলো প্রত্যক্ষ প্রভাব ফেলে না বটে, কিন্তু সন্ধিজাত শব্দের উচ্চরণে কৃত্রিম ধ্বনিরীতিকে বিশেষ নিয়ম হিসাবে মানা যেতে পারে।
সন্ধির প্রকারভেদ
ধ্বনির মিলনকে সন্ধি হিসাবে বিবেচনা করলেও প্রথমেই তা বিচার করতে হবে, মৌলিক ধ্বনির বিচারে। ধ্বনির বিচারে প্রাথমিক প্রধান দুটি ভাগ হলো- স্বরধ্বনি ও ব্যঞ্জনধ্বনি। যদিও বাংলাতে মৌলিক স্বরধ্বনি সংখ্যা রয়েছ মাত্র সাতটি। কিন্তু প্রচলিত সন্ধির নিয়মাবলীর ভিতরে ১১টি স্বরবর্ণেরই ব্যবহার লক্ষ্য করা যায়। এই তালিকায় অবশ্যই এ্যা নামক মৌলিকধ্বনিটি নেই। কারণ এ্যা নামক কোন বর্ণ বাংলা বর্ণমালায় নেই। কিন্তু সন্ধিজাত শব্দে পাওয়া যায়।
যেমন — অতি + আচার =অত্যাচার।
যেমন — অতি + আচার =অত্যাচার।
সংস্কৃত তথা তৎসম সন্ধিতে যে নিয়মে নূতন শব্দ তৈরি হয়, অ-তৎসম শব্দের ক্ষেত্রে তা খাটে না। মূলত এই অ-তৎসম শব্দ বাংলা সন্ধি হিসাবে বিবেচিত হয়ে থাকে। এই সব বিবেচনায় গোড়াতেই সন্ধিকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়। এই ভাগ দুটো হলো-
- সংস্কৃত বা তৎসম শব্দের সন্ধি
- বাংলা শব্দের সন্ধি
তৎসম শব্দের সন্ধি
তৎসম শব্দ অর্থাৎ সংস্কৃত ভাষার যে সব শব্দ অবিকৃত অবস্থায় (সংকলিত ও নির্বাচিত) বাংলা ভাষায় ব্যবহৃত হয়, সে সব শব্দের যে সন্ধি হয়, তাকে বলে তৎসম শব্দের সন্ধি। মূলত সন্ধি বলতে এই তৎসম শব্দের সন্ধিকেই বোঝানো হয়। বাংলা ভাষায় ৩ ধরনের তৎসম শব্দের সন্ধি হয়- স্বরসন্ধি, ব্যঞ্জনসন্ধি ও বিসর্গসন্ধি।
স্বরবর্ণ ও ব্যঞ্জনবর্ণের মিলনের প্রকৃতি অনুসারে এই সন্ধিকে যে ভাবে পাই তা হল—
১. স্বর-স্বর সন্ধি। বিদ্যা + আলয় = বিদ্যালয়
২. ব্যঞ্জন-স্বর সন্ধি। বাক্ + ঈশ =বাগীশ
৩. ব্যঞ্জন-ব্যঞ্জন সন্ধি। তৎ + সম =তৎসম
১. স্বর-স্বর সন্ধি। বিদ্যা + আলয় = বিদ্যালয়
২. ব্যঞ্জন-স্বর সন্ধি। বাক্ + ঈশ =বাগীশ
৩. ব্যঞ্জন-ব্যঞ্জন সন্ধি। তৎ + সম =তৎসম
সংস্কৃত স্বরসন্ধি (স্বর-স্বর সন্ধি)
স্বরবর্ণের সাথে স্বরবর্ণের মিলন এবং সেখান থেকে রূপান্তরিত স্বরবর্ণের উদ্ভবকেই স্বরসন্ধি বলা হয়। এক্ষেত্রে যে সকল রীতি অনুসৃত হয়, সেগুলোই স্বরসন্ধির নিয়ম হিসাবে প্রচলিত আছে। নিচে এই নিয়মগুলো ব্যাখ্যা করা হলো—
স্বরসন্ধি সূত্র : ১। পূর্বপদের শেষ বর্ণটি অ, অ-কার, আ, আ-কার হলে এবং পরপদের আদ্যবর্ণ অ, অ-কার, আ, আ-কার হলে উভয় মিলে আ-কার হয় এবং আ-কার পূর্ব বর্ণে যুক্ত হয়। যেমন—
অ + অ =আ নব + অন্ন =নবান্ন
অ + আ =আ হিম + আলয় =হিমালয়
আ + অ =আ আশা + অতিরিক্ত =আশাতিরিক্ত
আ + আ =আ বিদ্যা + আলয় =বিদ্যালয়
অ + আ =আ হিম + আলয় =হিমালয়
আ + অ =আ আশা + অতিরিক্ত =আশাতিরিক্ত
আ + আ =আ বিদ্যা + আলয় =বিদ্যালয়
স্বরসন্ধি সূত্র : ২। পূর্বপদের শেষ বর্ণটি অ, অ-কার, আ, আ-কার হলে এবং পরপদের আদ্যবর্ণ ই, ই-কার, ঈ, ঈ-কার হলে উভয় মিলে এ-কার হয় এবং এ-কার পূর্ব বর্ণে যুক্ত হয়। যেমন—
অ + ই =এ রাজ + ইন্দ্র =রাজেন্দ্র
অ + ঈ =এ পরম + ঈশ্বর =পরমেশ্বর
আ + ই =এ যথা + ইষ্ট =যথেষ্ট
আ + ঈ =এ রমা + ঈশ =রমেশ
অ + ঈ =এ পরম + ঈশ্বর =পরমেশ্বর
আ + ই =এ যথা + ইষ্ট =যথেষ্ট
আ + ঈ =এ রমা + ঈশ =রমেশ
স্বরসন্ধি সূত্র : ৩। পূর্বপদের শেষ বর্ণটি অ, অ-কার, আ, আ-কার হলে এবং পরপদের আদ্যবর্ণ উ, উ-কার, ঊ, ঊ-কার হলে উভয় মিলে ও-কার হয় এবং ও-কার পূর্ব বর্ণে যুক্ত হয়। যেমন—
অ + উ =ও হিত + উপদেশ =হিতোপদেশ
অ + ঊ =ও পর্বত + ঊধ্ব =পর্বতোধ্ব
আ + উ =ও মহা + উদয় =মহোদয়
আ + ঊ =ও মহা + ঊর্মি =মহোর্মি
অ + ঊ =ও পর্বত + ঊধ্ব =পর্বতোধ্ব
আ + উ =ও মহা + উদয় =মহোদয়
আ + ঊ =ও মহা + ঊর্মি =মহোর্মি
স্বরসন্ধি সূত্র : ৪। পূর্বপদের শেষ বর্ণটি অ, অ-কার, আ, আ-কার হলে এবং পরপদের আদ্যবর্ণ ঋ হলে উভয় মিলে অর্ হয় এবং অর্ পূর্ববর্ণে যুক্ত হয়। যেমন—
অ + ঋ =অ দেব + ঋষি =দেবর্ষি
আ + ঋ =অ মহা + ঋষি =মহর্ষি
অ + ঋ =অ দেব + ঋষি =দেবর্ষি
আ + ঋ =অ মহা + ঋষি =মহর্ষি
স্বরসন্ধি সূত্র : ৫। পূর্বপদের শেষ বর্ণটি অ, অ-কার, আ, আ-কার হলে এবং পরপদের আদ্যবর্ণ ঋত হলে উভয় মিলে আর্ হয় এবং আর্ পূর্ববর্ণে যুক্ত হয়। যেমন—
অ + ঋত =আর শীত + ঋত =শীতার্ত
আ + ঋত =আর তৃষ্ণা + ঋত =তৃষ্ণার্ত
অ + ঋত =আর শীত + ঋত =শীতার্ত
আ + ঋত =আর তৃষ্ণা + ঋত =তৃষ্ণার্ত
স্বরসন্ধি সূত্র : ৬। পূর্বপদের শেষ বর্ণটি অ, অ-কার, আ, আ-কার হলে এবং পরপদের আদ্যবর্ণ এ, এ-কার, ঐ, ঐ-কার হলে উভয় মিলে ঐ-কার হয় এবং ঐ-কার পূর্ববর্ণে যুক্ত হয়। যেমন—
অ + এ =ঐ এক + এক =একৈক
অ + ঐ =ঐ মত + ঐক্য =মতৈক্য
আ + এ =ঐ সদা + এব =সদৈব
আ + ঐ =ঐ মহা + ঐশ্বর্য্য =মহৈশ্বর্য্য
অ + এ =ঐ এক + এক =একৈক
অ + ঐ =ঐ মত + ঐক্য =মতৈক্য
আ + এ =ঐ সদা + এব =সদৈব
আ + ঐ =ঐ মহা + ঐশ্বর্য্য =মহৈশ্বর্য্য
স্বরসন্ধি সূত্র : ৭। পূর্বপদের শেষ বর্ণটি অ, অ-কার, আ, আ-কার হলে এবং পরপদের আদ্যবর্ণ ও, ও-কার, ঔ, ঔ-কার হলে উভয় মিলে ঔ-কার হয় এবং ঔ-কার পূর্ববর্ণে যুক্ত হয়। যেমন—
অ + ও =ঔ মাংস + ওদন =মাংসৌদন
অ + ঔ =ঔ দিব্য + ঔষধ =দিব্যৌষধ
আ + ও =ঔ মহা + ওষধি =মহৌষধি
আ + ঔ =ঔ মহা + ঔষধ =মহৌষধ
অ + ও =ঔ মাংস + ওদন =মাংসৌদন
অ + ঔ =ঔ দিব্য + ঔষধ =দিব্যৌষধ
আ + ও =ঔ মহা + ওষধি =মহৌষধি
আ + ঔ =ঔ মহা + ঔষধ =মহৌষধ
স্বরসন্ধি সূত্র : ৮। পূর্বপদের শেষ বর্ণটি ই, ই-কার, ঈ, ঈ-কার হলে এবং পরপদের আদ্যবর্ণ অ, অ-কার হলে উভয় মিলে য (য-ফলা) হয় এবং য-কার পূর্ববর্ণে যুক্ত হয়। যেমন—
ই + অ =এ্য অতি + অন্ত =অত্যন্ত
ঈ +অ =এ্য নদী +অম্বু =নদ্যম্বু
ই + অ =এ্য অতি + অন্ত =অত্যন্ত
ঈ +অ =এ্য নদী +অম্বু =নদ্যম্বু
স্বরসন্ধি সূত্র : ৯। পূর্বপদের শেষ বর্ণটি ই, ই-কার, ঈ, ঈ-কার হলে এবং পরপদের আদ্যবর্ণ আ, আ-কার হলে উভয় মিলে য্আ (এ্যা) হয় এবং এ্যা পূর্ববর্ণে যুক্ত হয়। যেমন—
ই + আ =এ্যা অতি + আচার =অত্যাচার
ঈ + আ =এ্যা মসী + আধার =মস্যাধার
ই + আ =এ্যা অতি + আচার =অত্যাচার
ঈ + আ =এ্যা মসী + আধার =মস্যাধার
স্বরসন্ধি সূত্র : ১০। পূর্বপদের শেষ বর্ণটি ই, ই-কার, ঈ, ঈ হলে এবং পরপদের আদ্যবর্ণ ই, ই-কার, ঈ, ঈ হলে উভয় মিলে ঈ হয় এবং তা পূর্ববর্ণে যুক্ত হয়। যেমন—
ই + ই =ঈ গিরি + ইন্দ্র =গিরীন্দ্র
ই + ঈ =ঈ প্রতি + ঈক্ষা =প্রতক্ষা
ঈ + ই =ঈ মহী + ইন্দ্র = মহী্ন্দ্র
ঈ + ঈ =ঈ সতী + ঈশ =সতীশ
ই + ই =ঈ গিরি + ইন্দ্র =গিরীন্দ্র
ই + ঈ =ঈ প্রতি + ঈক্ষা =প্রতক্ষা
ঈ + ই =ঈ মহী + ইন্দ্র = মহী্ন্দ্র
ঈ + ঈ =ঈ সতী + ঈশ =সতীশ
স্বরসন্ধি সূত্র : ১১। পূর্বপদের শেষ বর্ণটি ই, ই-কার, ঈ, ঈ হলে এবং পরপদের আদ্যবর্ণ উ, উ-কার, ঊ, ঊ-কার হলে উভয় মিলে য্উ (এ্যউ) হয় এবং তা পূর্ববর্ণে যুক্ত হয়। যেমন—
ই + উ =এ্যউ প্রতি + উত্তর =প্রত্যুত্তর
ই + ঊ =এ্যঊ প্রতি + ঊষ =প্রত্যূষ
ই + উ =এ্যউ প্রতি + উত্তর =প্রত্যুত্তর
ই + ঊ =এ্যঊ প্রতি + ঊষ =প্রত্যূষ
স্বরসন্ধি সূত্র : ১২। পূর্বপদের শেষ বর্ণটি ই, ই-কার, ঈ, ঈ হলে এবং পরপদের আদ্যবর্ণ এ, এ-কার হলে উভয় মিলে য্এ (এ্যএ) হয় এবং তা পূর্ববর্ণে যুক্ত হয়। যেমন—
ই + এ =এ্যএ প্রতি + এক =প্রত্যেক
ই + এ =এ্যএ প্রতি + এক =প্রত্যেক
স্বরসন্ধি সূত্র : ১৩। পূর্বপদের শেষ বর্ণটি ই, ই-কার, ঈ, ঈ হলে এবং পরপদের আদ্যবর্ণ ঐ, ঐ-কার, হলে উভয় মিলে য্ঐ (এ্যঐ) হয় এবং তা পূর্ববর্ণে যুক্ত হয়। যেমন—
ই + ঐ =এ্যঐ প্রতি + ঐশ্বর্য =অত্যৈশ্বর্য
ই + ঐ =এ্যঐ প্রতি + ঐশ্বর্য =অত্যৈশ্বর্য
স্বরসন্ধি সূত্র : ১৪। পূর্বপদের শেষ বর্ণটি ই, ই-কার, ঈ, ঈ হলে এবং পরপদের আদ্যবর্ণ ও, ও-কার থাকলে উভয় মিলে য্ও (এ্যও) হয় এবং তা পূর্ববর্ণে যুক্ত হয়। যেমন—
ই + ও =এ্যও ইতি + ওম =ইত্যোম
ই + ও =এ্যও ইতি + ওম =ইত্যোম
স্বরসন্ধি সূত্র : ১৫। পূর্বপদের শেষ বর্ণটি উ, উ-কার, ঊ, ঊ-কার হলে এবং পরপদের আদ্যবর্ণ অ, অ-কার, আ, আ-কার, ই, ই-কার হলে উভয় মিলে বয় (অয়), বায়, বি, বী হয় এবং তা পূর্ববর্ণে যুক্ত হয়। যেমন—
উ + অ =বয় (অয়) অনু +অয় =অন্বয়
উ + আ =বা (আ) সু + আগত =স্বাগত
উ + ই =বি অনু +ইত =অন্বিত
উ + ঈ =বী অনু + ঈক্ষা =অন্বীক্ষা
উ + অ =বয় (অয়) অনু +অয় =অন্বয়
উ + আ =বা (আ) সু + আগত =স্বাগত
উ + ই =বি অনু +ইত =অন্বিত
উ + ঈ =বী অনু + ঈক্ষা =অন্বীক্ষা
স্বরসন্ধি সূত্র : ১৬। পূর্বপদের শেষ বর্ণটি উ, উ-কার, ঊ, ঊ-কার হলে এবং পরপদের আদ্যবর্ণ উ, উ-কার, ঊ, ঊ-কার হলে উভয় মিলে ঊ হয়। যেমন—
উ + উ =ঊ সু + উক্ত =সূক্ত
উ + ঊ =ঊ লঘু + ঊর্মি =লঘূর্মি
ঊ + উ =ঊ বধূ + উক্তি =বধূক্তি
ঊ + ঊ =ঊ ভূ + ঊর্ধ্ব =ভূর্ধ্ব
উ + উ =ঊ সু + উক্ত =সূক্ত
উ + ঊ =ঊ লঘু + ঊর্মি =লঘূর্মি
ঊ + উ =ঊ বধূ + উক্তি =বধূক্তি
ঊ + ঊ =ঊ ভূ + ঊর্ধ্ব =ভূর্ধ্ব
স্বরসন্ধি সূত্র : ১৭। পূর্বপদের শেষ বর্ণটি উ, উ-কার, ঊ, ঊ-কার হলে এবং পরপদের আদ্যবর্ণ ঋ, ঋ-কার হলে উভয় মিলে ঋ, ঋ-কার হয়। যেমন—
উ + ঋ =বৃ বহু +ঋচ্ =বহ্বৃচ
উ + ঋ =বৃ বহু +ঋচ্ =বহ্বৃচ
স্বরসন্ধি সূত্র : ১৮। পূর্বপদের শেষ বর্ণটি উ, উ-কার, ঊ, ঊ-কার হলে এবং পর পদের আদ্যবর্ণ এ-কার লে উভয় মিলে এ হয়। যেমন—
ঊ + এ =বে (এয়) অনু +এষণ =অন্বেষণ
ঊ + এ =বে (এয়) অনু +এষণ =অন্বেষণ
স্বরসন্ধি সূত্র : ১৯। পূর্বপদের শেষ বর্ণটি ঋ-কার হলে এবং পরপদের আদ্যবর্ণে স্বরবর্ণ যুক্ত হলে উভয় মিলে ঋ-কার হয় এবং পরপদের স্বরবর্ণ ঋ-কারের সাথে যুক্ত হয়। যেমন—
ঋ + অ =র্অ পিতৃ + অর্থে =পিত্রর্থে
ঋ + আ =র্আ পিতৃ + আলয় =পিত্রালয়
ঋ + ই =র্ই পিতৃ + ইচ্ছা =পিত্রিচ্ছা
ঋ + উ =র্উ পিতৃ + উপদেশ =পিত্রূপদেশ
ঋ + ঋ =ৠ পিতৃ +ঋণ =পিতৄন (বাংলাতে এইরূপটি অপ্রচলিত)
ঋ + এ =র্এ ভাতৃ +এষণা =ভার্এষণা
ঋ + অ =র্অ পিতৃ + অর্থে =পিত্রর্থে
ঋ + আ =র্আ পিতৃ + আলয় =পিত্রালয়
ঋ + ই =র্ই পিতৃ + ইচ্ছা =পিত্রিচ্ছা
ঋ + উ =র্উ পিতৃ + উপদেশ =পিত্রূপদেশ
ঋ + ঋ =ৠ পিতৃ +ঋণ =পিতৄন (বাংলাতে এইরূপটি অপ্রচলিত)
ঋ + এ =র্এ ভাতৃ +এষণা =ভার্এষণা
স্বরসন্ধি সূত্র : ২০। পূর্বপদের শেষ বর্ণটি এ, এ-কার হলে এবং পরপদের আদ্যবর্ণে অ, অ-কার হলে, উভয় মিলে অয় হয় এবং তা পূর্ববর্ণের সাথে যুক্ত হয়। যেমন—
এ + অ =অয় শী>শে + অন =শয়ন
এ + অ =অয় শী>শে + অন =শয়ন
স্বরসন্ধি সূত্র : ২১। পূর্বপদের শেষ বর্ণটি ঐ, ঐ-কার হলে এবং পরপদের আদ্যবর্ণে অ, অ-কার হলে, উভয় মিলে আয় হয় এবং তা পূর্ববর্ণের সাথে যুক্ত হয়। যেমন—
ঐ + অ =আয় নৈ + অক =নায়ক
ঐ + অ =আয় নৈ + অক =নায়ক
স্বরসন্ধি সূত্র : ২২। পূর্বপদের শেষ বর্ণটি ও, ও-কার হলে এবং পরপদের আদ্যবর্ণে অ, অ-কার, আ, আ-কার, এ, এ-কার হলে, উভয় মিলে যথাক্রমে অব, অবা, অবে হয় এবং তা পূর্ববর্ণের সাথে যুক্ত হয়। যেমন—
ও + অ =অব ভো + অন =ভবন
ও + আ =অবা গো +আদি =গবাদি
ও + ই =অবি পো + ইত্র =পবিত্র
ও + এ =অবে গো + এষণা =গবেষণা
ও + অ =অব ভো + অন =ভবন
ও + আ =অবা গো +আদি =গবাদি
ও + ই =অবি পো + ইত্র =পবিত্র
ও + এ =অবে গো + এষণা =গবেষণা
স্বরসন্ধি সূত্র : ২৩। পূর্বপদের শেষ বর্ণটি ঔ, ঔ-কার হলে এবং পরপদের আদ্যবর্ণে অ, অ-কার, ই, ই-কার, উ, উ-কার হলে, উভয় মিলে যথাক্রমে আব ও আবি, আবু হয় এবং তা পূর্ববর্ণের সাথে যুক্ত হয়। যেমন—
ঔ + অ =আব পৌ + অক =পাবক
ঔ + ই =আবি নৌ + ইক =নাবিক
ঔ + উ =আবু ভৌ +উক =ভাবুক
ঔ + অ =আব পৌ + অক =পাবক
ঔ + ই =আবি নৌ + ইক =নাবিক
ঔ + উ =আবু ভৌ +উক =ভাবুক
নিপাতনে সিদ্ধ :
অক্ষ + ঊহিণী =অক্ষৌহিণী অন্য + অন্য=অন্যান্য, অন্যোন্য
কুল + অটা =কুলটা গব্ + ঈশ্বর =গবীশ্বর
গো + অক্ষ =গবাক্ষ গো + অস্থি = গবাস্থি
গো + ইন্দ্র =গবেন্দ্র পর + পর =পরস্পর
প্র + ঊঢ় =প্রৌঢ় প্র + এষণ =প্রেষণ
বিম্ব + ঔষ্ঠ =বিম্বৌষ্ঠ মনস্ + ঈষা =মনীষা
মার্ত + অণ্ড =মার্তণ্ড রক্ত + ঔষ্ঠ =রক্তোষ্ঠ
শুদ্ধ + ওদন=শুদ্ধোদন সার + অঙ্গ =সারঙ্গ
সীম + অন্ত =সীমন্ত (সীঁথি) স্ব + ঈর =স্বৈর।
অক্ষ + ঊহিণী =অক্ষৌহিণী অন্য + অন্য=অন্যান্য, অন্যোন্য
কুল + অটা =কুলটা গব্ + ঈশ্বর =গবীশ্বর
গো + অক্ষ =গবাক্ষ গো + অস্থি = গবাস্থি
গো + ইন্দ্র =গবেন্দ্র পর + পর =পরস্পর
প্র + ঊঢ় =প্রৌঢ় প্র + এষণ =প্রেষণ
বিম্ব + ঔষ্ঠ =বিম্বৌষ্ঠ মনস্ + ঈষা =মনীষা
মার্ত + অণ্ড =মার্তণ্ড রক্ত + ঔষ্ঠ =রক্তোষ্ঠ
শুদ্ধ + ওদন=শুদ্ধোদন সার + অঙ্গ =সারঙ্গ
সীম + অন্ত =সীমন্ত (সীঁথি) স্ব + ঈর =স্বৈর।
সংস্কৃত ব্যঞ্জন সন্ধি
ব্যঞ্জনসন্ধির প্রকৃতি অনুসারে, একে তিন ভাগে ভাগ করা যেতে পারে। এই ভাগ তিনটি হলো-
- ১। স্বর-ব্যঞ্জন সন্ধি
- ২। ব্যঞ্জন-স্বর সন্ধি।
- ৩। ব্যঞ্জনধ্বনি + ব্যঞ্জনধ্বনি
১। স্বর-ব্যঞ্জন সন্ধি
স্বর-ব্যঞ্জন-সন্ধি সূত্র : ১ । পূর্বপদের শেষ ব্যঞ্জন বর্ণটিতে যদি স্বরধ্বনি যুক্ত থাকে এবং পরপদের প্রথম বর্ণটি ছ হয় (যেমন : ছন্ন, ছায়া ইত্যাদি)। তবে পূর্বপদের শেষ ছ=চ্ছ হয় এবং পরপদের ব্যঞ্জনবর্ণের সাথের স্বরবর্ণটি পূর্বপদে যুক্ত হবে।
ব্যাখ্যা : ধরা যাক পূর্বপদটি ‘কথা’। এর শেষ ব্যঞ্জনবর্ণটি থ এবং এর সাথে আ ব্যঞ্জন ধ্বনি রয়েছে। আবার ধরা যাক পরপদটি ‘ছলে’। এই পদটির প্রথম বর্ণটি ছ। অর্থাৎ ছ্ +অ। তাহলে সূত্র অনুসারে সন্ধির ফলাফল হবে আ + ছ =আচ্ছ। সব মিলিয়ে দাঁড়াবে- কথা +ছলে=কথাচ্ছলে। এরূপ—
অ +ছ =অচ্ছ। প্র +ছদ =প্রচ্ছদ
আ + ছ =আচ্ছ। আ +ছন্ন =আচ্ছন্ন
ই + ছ =ইচ্ছ। পরি +ছন্ন =পরিচ্ছন্ন
উ + ছ =উচ্ছ। তরু +ছায়া =তরুচ্ছায়া
আ + ছ =আচ্ছ। আ +ছন্ন =আচ্ছন্ন
ই + ছ =ইচ্ছ। পরি +ছন্ন =পরিচ্ছন্ন
উ + ছ =উচ্ছ। তরু +ছায়া =তরুচ্ছায়া
২. ব্যঞ্জন-স্বর সন্ধি
ব্যঞ্জন-স্বর-সন্ধি সূত্র : ১। পূর্বপদের শেষ বর্ণটি যদি ক্, চ্, ট্, ত্ (ৎ), প্ হয় এবং পরপদের আদ্য বর্ণটি স্বরবর্ণ যুক্ত থাকে, তবে পূর্বপদের শেষ ক, চ, ট, ত (ৎ), প পরিবর্তিত হয়ে বর্গের তৃতীয় বর্ণে পরিণত হবে। একই সাথে পরপদের স্বরবর্ণটি পূর্বপদে যুক্ত হবে।
ব্যাখ্যা : সূত্রানুসারে ক্, চ্, ট্, ত্ (ৎ), প্ বর্গের তৃতীয় বর্ণে পরিণত হবে। অর্থাৎ এই নিয়মে ক =গ, চ =জ, ট =ড়, ত (ৎ) =দ এবং প =ব হবে। অপর দিকে পরপদের স্বরবর্ণটি পূর্বপদে যুক্ত হবে। অর্থাৎ এই সূত্রে পরিবর্তনের রূপ হবে
ক +অ =গ, ক +আ=গা ইত্যাদি।
উদাহরণ : ক্ + অ =গ। দিক্ +অন্ত =দিগন্ত
চ্ + অ =জ। ণিচ্ +অন্ত =ণিজন্ত
ট্ + আ =ড়। ষট্ +আনন =ষড়ানন
ত্ + ঈ =দী। জগত্ +ঈশ্বর =জগদীশ্বর
প্ + অ =ব। সুপ্ + অন্ত =সুবন্ত।
ক +অ =গ, ক +আ=গা ইত্যাদি।
উদাহরণ : ক্ + অ =গ। দিক্ +অন্ত =দিগন্ত
চ্ + অ =জ। ণিচ্ +অন্ত =ণিজন্ত
ট্ + আ =ড়। ষট্ +আনন =ষড়ানন
ত্ + ঈ =দী। জগত্ +ঈশ্বর =জগদীশ্বর
প্ + অ =ব। সুপ্ + অন্ত =সুবন্ত।
ব্যতিক্রম : যাচ্ +অক=যাচক।
৩. ব্যঞ্জন-ব্যঞ্জন-সন্ধি সূত্র :
ব্যঞ্জনবর্ণের সাথে ব্যঞ্জনবর্ণের মিলনের ফলে যে সন্ধির সৃষ্টি হয়। ব্যঞ্জনবর্ণের ব্যবহারিক প্রকৃতির বিচারে তিনটি বর্ণকে পরাশ্রায়ী বলা হয়। এই বর্ণ তিনটি হলো- ং, ঃ ও ঁ। এই তিনটি বর্ণের মধ্যে ‘ঃ’-এর ব্যবহার সন্ধিতে বিশেষভাবে লক্ষ্য করা যায়। এই কারণে- প্রচলিত বাংলা ব্যাকরণে বিসর্গ সন্ধিকে পৃথকভাবে উল্লেখ করা হয়। প্রচলিত ব্যাকরণের সাথে সমাঞ্জস্য রেখে আমরা ব্যঞ্জন-ব্যঞ্জন সন্ধিকে দুটি ধারায় ভাগ করতে পারি। ভাগ দুটি হলো-
- ৩.১. ব্যঞ্জন-ব্যঞ্জন (স্বাধীন) সন্ধি
- ৩.২ ব্যঞ্জন-ব্যঞ্জন (পরাশ্রয়ী) সন্ধি বা বিসর্গ সন্ধি।
নিচে উভয় সন্ধির নিয়মাবলিকে পর্যায়ক্রমে আলোচনা করা হলো।
৩.১. ব্যঞ্জন-ব্যঞ্জন (স্বাধীন) সন্ধি:
পরাশ্রায়ী ব্যঞ্জনবর্ণ ছাড়া অন্যান্য সকল ব্যঞ্জন বর্ণ অন্য ব্যঞ্জনবর্ণের সাথে যুক্ত হলে, তা ব্যঞ্জন- ব্যঞ্জন (স্বাধীন) সন্ধি হবে। এক্ষেত্রে সন্ধির সূত্রগুলো হবে—
৩.১.১ । পূর্বপদের শেষ বর্ণটি ক্, চ্, ট্, ত্, প্ হয় এবং পরপদের আদ্যবর্ণ বর্গের তৃতীয় চতুর্থ বর্ণ বা অন্তঃস্থ বর্ণ হয়, তবে ক, চ, ট, ত, প বর্গের তৃতীয় বর্ণে পরিণত হবে। একই সাথে পরপদের স্বরবর্ণটি পূর্বপদে যুক্ত হবে।
ব্যাখ্যা : বর্গের (ক, চ, ট, ত, প) তৃতীয় ও চতুর্থ বর্ণগুলো হলো- যথাক্রমে গ, ঘ, জ, ঝ, ড, ঢ, দ, ধ, ব এবং ভ। পক্ষান্তরে অন্তঃস্থ বর্ণগুলো হলো- য (য়), র, ল ও অন্তঃস্থ ব। এই বর্ণগুলো যদি পরপদে থাকে এবং পূর্বপদের শেষ বর্ণ যদি ক্, চ্, ট্, ত্ এবং প হয়, তবে এই পাঁচটি বর্ণ যে রূপ লাভ করবে তা হলো- ক্=গ, চ্=জ, ট্ =ড (ড়), ত=দ এবং প=ব।
উদাহরণ : ক্ + গ =গ্গ দিক্ +গজ =দিগ্গজ
ক্ + জ =গ্জ বাক্ +জাল =বাগ্জাল
ক্ + দ =গ্দ বাক্ + দত্তা =বাগ্দত্তা
ক্ + ধ =গ্ধ স্রক্ + ধরা =স্রগ্ধরা
ক্ + ব =গ্ব দিক্ + বিজয় =দিগ্বজয়
ক্ + ভ =গ্ভ্র দিক্ + ভ্রম =দিগ্ভ্রম
ক্ + ল =গ্ল বাক্ + লোপ =বাগ্লোপ
ট্ +জ=ড়জ ষট্ +জ=ষড়জ
ট্ + দ =ড়্দ ষট্ + দর্শন =ষড়্দর্শন
ট্ + ধ =ড়্ধ ষট্ + ধা =ষড়্ধা
ট্ + ব =ড়্ব ষট্ + বর্গ =ষড়্বর্গ
ট্ + ভ =ড়্ভ ষট্ + ভুজ =ষড়্ভুজ
ত্ + গ =দ্গ উত্ + গত =উদ্গত
ত্ + ঘ =দ্ঘ উত্ +ঘাটন =উদ্ঘাটন
ত্ + জ =জ্জ উত্ +জীবিত =উজ্জীবিত
ত্ + ড =ড্ড উত্ +ডীন =উড্ডীন
ত্ + ধ =দ্ধ বৃহত্ +ধর্ম =বৃহদ্ধর্ম
ত্ + ব =দ্ব জগত্ +বন্ধু =জগদ্বন্ধু
ত্ + ভ =দ্ভ উত্ +ভব =উদ্ভব
ত্ + য =দ্য উত্ +যোগ =উদ্যোগ
ত্+ র =দ্র বৃহত্ +রথ =বৃহদ্রথ
দ্ + ঘ =দ্ঘ উদ্ +ঘাটন =উদ্ঘাটন
প্ + জ =ব্জ অপ্ + জ =অব্জ
প্ + ধ =ব্ধ অপ্ + ধি =অব্ধি
ক্ + জ =গ্জ বাক্ +জাল =বাগ্জাল
ক্ + দ =গ্দ বাক্ + দত্তা =বাগ্দত্তা
ক্ + ধ =গ্ধ স্রক্ + ধরা =স্রগ্ধরা
ক্ + ব =গ্ব দিক্ + বিজয় =দিগ্বজয়
ক্ + ভ =গ্ভ্র দিক্ + ভ্রম =দিগ্ভ্রম
ক্ + ল =গ্ল বাক্ + লোপ =বাগ্লোপ
ট্ +জ=ড়জ ষট্ +জ=ষড়জ
ট্ + দ =ড়্দ ষট্ + দর্শন =ষড়্দর্শন
ট্ + ধ =ড়্ধ ষট্ + ধা =ষড়্ধা
ট্ + ব =ড়্ব ষট্ + বর্গ =ষড়্বর্গ
ট্ + ভ =ড়্ভ ষট্ + ভুজ =ষড়্ভুজ
ত্ + গ =দ্গ উত্ + গত =উদ্গত
ত্ + ঘ =দ্ঘ উত্ +ঘাটন =উদ্ঘাটন
ত্ + জ =জ্জ উত্ +জীবিত =উজ্জীবিত
ত্ + ড =ড্ড উত্ +ডীন =উড্ডীন
ত্ + ধ =দ্ধ বৃহত্ +ধর্ম =বৃহদ্ধর্ম
ত্ + ব =দ্ব জগত্ +বন্ধু =জগদ্বন্ধু
ত্ + ভ =দ্ভ উত্ +ভব =উদ্ভব
ত্ + য =দ্য উত্ +যোগ =উদ্যোগ
ত্+ র =দ্র বৃহত্ +রথ =বৃহদ্রথ
দ্ + ঘ =দ্ঘ উদ্ +ঘাটন =উদ্ঘাটন
প্ + জ =ব্জ অপ্ + জ =অব্জ
প্ + ধ =ব্ধ অপ্ + ধি =অব্ধি
৩.১.২। পূর্বপদের শেষ বর্ণটি যদি ক্, চ্, ট্, ত্, প্ হয় এবং পরপদের আদ্যবর্ণ ন, ম হয় তা হলে পূর্বপদের ক্, চ্, ট্, ত্, প্ যথাক্রমে গ, জ, ড (ড়্), দ ও ব হয় কিম্বা বিকল্পে ঐ বর্গের নাসিক্য-বর্ণে পরিণত হয়।
ব্যাখ্যা : পূবপদের শেষ বর্ণ ক্, চ্, ট্, ত্, প্ হয়। যেমন : বাক্, বচ্ ইত্যাদি। পরপদের আদ্যবর্ণ ন, ম হয়। যেমন : নির্ণয়, মন্দির ইত্যাদি। এক্ষেত্রে সন্ধিজাত শব্দ তৈরিতে ক=গ, চ=জ, ট=ড (ড়), ত=দ এবং প=ব হবে। বিকল্পে ঐ বর্গের নাসিক্য-বর্ণে পরিণত হয়। যেমন ষট্ + মাস= ষড়্মাস বা বিকল্পে ষণ্মাস। এখানে ট্=ড় হয়েছে। পক্ষান্তরে ট-বর্গের নাসিক্য বর্ণ ণ যুক্ত হয়েছে।
উদাহারণ : ক্ +ন =গ্ বা ঙ্ দিক্ + নাগ=দিগ্নাগ বা দিঙ্নাগ।
ক্ +ম =ঙ। বাক্ + ময়=বাঙ্ময়।
চ্ +ন =ঞ্ যাচ্ + না=যাচঞা
ট্ +ন =ণ ষট্ +নবতি=ষণ্ণবতি
ট্ +ম =ড (ড়) বা ণ ষট্ + মাস= ষড়্মাস বা ষণ্মাস।
ত্ +ন =দ্ বা ন জগৎ + নাথ=জগদ্নাগ বা জগন্নাথ।
ত্ +ম =দ্ বা ন। তৎ + মধ্য=তদ্মধ্য বা তন্মধ্য।
প্ +ম =ম। অপ্ +ময় =অম্ময়।
ক্ +ম =ঙ। বাক্ + ময়=বাঙ্ময়।
চ্ +ন =ঞ্ যাচ্ + না=যাচঞা
ট্ +ন =ণ ষট্ +নবতি=ষণ্ণবতি
ট্ +ম =ড (ড়) বা ণ ষট্ + মাস= ষড়্মাস বা ষণ্মাস।
ত্ +ন =দ্ বা ন জগৎ + নাথ=জগদ্নাগ বা জগন্নাথ।
ত্ +ম =দ্ বা ন। তৎ + মধ্য=তদ্মধ্য বা তন্মধ্য।
প্ +ম =ম। অপ্ +ময় =অম্ময়।
৩.১.৩। পূর্বপদের শেষ বর্ণটি যদি চ-বর্গীয় হয় এবং পরপদের প্রথম বর্ণ ন হয়, তবে তা (ন) ঞ হয়।
উদাহরণ : চ্ +ন যাচ্ +না =যাচঞা
জ্ +ন রাজ্ +নী =রাজ্ঞী (জ্ঞ=জ্ঞ)
উদাহরণ : চ্ +ন যাচ্ +না =যাচঞা
জ্ +ন রাজ্ +নী =রাজ্ঞী (জ্ঞ=জ্ঞ)
৩.১.৪। পূর্বপদের শেষ বর্ণটি যদি ত্ বা দ্ হয় এবং পরপদের প্রথম বর্ণ ক, খ, চ, ছ, ট, ঠ, ত, থ, প, ফ এবং স থাকে, তবে দ ও ধ স্থানে ত্ হয়।
উদাহরণ : দ্ + ক =ত্ তদ্ + কাল =তৎকাল
দ্ + ত =ত্ তদ্ +ত্ব =তত্ত্ব
দ্ + প =ত্ তদ্ +পর =তৎপর
দ্ + ফ =ত্ তদ্ +ফল =তৎফল
দ্ + স =ত্ তদ্ +সম =তৎসম
ধ্ + ক =ত্ ক্ষুধ্ +কাতর =ক্ষুৎকাতর
ধ্ + প =ত্ ক্ষুধ্ +পিপাসা =ক্ষুৎপিপাসা
উদাহরণ : দ্ + ক =ত্ তদ্ + কাল =তৎকাল
দ্ + ত =ত্ তদ্ +ত্ব =তত্ত্ব
দ্ + প =ত্ তদ্ +পর =তৎপর
দ্ + ফ =ত্ তদ্ +ফল =তৎফল
দ্ + স =ত্ তদ্ +সম =তৎসম
ধ্ + ক =ত্ ক্ষুধ্ +কাতর =ক্ষুৎকাতর
ধ্ + প =ত্ ক্ষুধ্ +পিপাসা =ক্ষুৎপিপাসা
৩.১.৫। পূর্বপদের শেষ বর্ণটি যদি ৎ বা দ্ হয় এবং পরপদের প্রথম বর্ণ চ, ছ, জ, ঝ থাকে, তবে পূর্বপদের ত্ বা দ্ লোপ পাবে এবং পরপদের চ=চ্চ, ছ=চ্ছ, জ=জ্জ এবং ঝ=জ্ঝ হবে। একই সাথে পরপদের ব্যঞ্জনবর্ণের সাথে যুক্ত স্বরবর্ণটি পূর্বপদে যুক্ত হবে।
ব্যাখ্যা : পূর্বদের শেষ বর্ণটি খাঁটি ব্যঞ্জন ধ্বনি হলে তার সাথে হসন্ত যুক্ত হবে। যেমন- যেমন- সৎ, বিপদ্ ইত্যাদি। পক্ষান্তরে পরপদের ব্যঞ্জনবর্ণের সাথে যুক্ত স্বরবর্ণটি পূর্বপদে যুক্ত হবে। যেমন- পরপদের শব্দের শব্দটি যদি চিত্র হয়, তা হলে- এর আদ্য চি ধ্বনিটি হবে চ্ + ই। এক্ষেত্রে সন্ধিজাত চ্চ, চ্ছ, জ্জ, জ্ঝ-এর সাথে পরপদের ব্যঞ্জনবর্ণের সাথে যুক্ত স্বরবর্ণটি যুক্ত হবে।
উদাহরণ : ৎ + চ =চ্চ চলৎ + চিত্র =চলচ্চিত্র
ৎ + ছ =চ্ছ উৎ + ছেদ =উচ্ছেদ
ৎ + জ =জ্জ যাবৎ +জীবন =যাবজ্জীবন
ৎ + ঝ =জ্ঝ কুৎ +ঝটিকা =কুজ্ঝটিকা
দ + চ =চ্চ তদ্ +চিন্তা =তচ্চিন্তা
দ + ছ =চ্ছ তদ্ +ছবি =তচ্ছবি
দ + জ =জ্জ তদ্ +জন্য =তজ্জন্য
দ + ঝ =জ্ঝ বিপদ +ঝঞ্ঝা =বিপজ্ঝঞ্ঝা।
উদাহরণ : ৎ + চ =চ্চ চলৎ + চিত্র =চলচ্চিত্র
ৎ + ছ =চ্ছ উৎ + ছেদ =উচ্ছেদ
ৎ + জ =জ্জ যাবৎ +জীবন =যাবজ্জীবন
ৎ + ঝ =জ্ঝ কুৎ +ঝটিকা =কুজ্ঝটিকা
দ + চ =চ্চ তদ্ +চিন্তা =তচ্চিন্তা
দ + ছ =চ্ছ তদ্ +ছবি =তচ্ছবি
দ + জ =জ্জ তদ্ +জন্য =তজ্জন্য
দ + ঝ =জ্ঝ বিপদ +ঝঞ্ঝা =বিপজ্ঝঞ্ঝা।
৩.১.৬। পূর্বপদের শেষ বর্ণটি যদি ৎ বা দ্ হয় এবং পরপদের প্রথম বর্ণ ট, ড, ঢ থাকে, তবে পূর্বপদের ত্ বা দ্ লোপ পাবে এবং পরপদের ট=ট্ট, ড=ডড, ঢ=ড্ঢ হবে। একই সাথে পরপদের ব্যঞ্জনবর্ণের সাথে যুক্ত স্বরবর্ণটি পূর্বপদে যুক্ত হবে।
উদাহরণ : ৎ + ট =ট্ট তৎ + টীকা =তট্টীকা
ৎ + ড =ড্দ উৎ + ডীন =উড্ডীন
ৎ + ঢ =ড্ঢ। বৃহৎ +ঢা =বৃহড্ঢা
দ + ট =ট্ট তদ্ + টীকা =তট্টীকা
দ্ + ঢ =ড্ঢ এতদ্ +ঢা =এতড্ঢা
উদাহরণ : ৎ + ট =ট্ট তৎ + টীকা =তট্টীকা
ৎ + ড =ড্দ উৎ + ডীন =উড্ডীন
ৎ + ঢ =ড্ঢ। বৃহৎ +ঢা =বৃহড্ঢা
দ + ট =ট্ট তদ্ + টীকা =তট্টীকা
দ্ + ঢ =ড্ঢ এতদ্ +ঢা =এতড্ঢা
৩.১.৭। পূর্বপদের শেষ বর্ণটি যদি ৎ, দ্, ধ্ হয় এবং পরপদের ন বা ম থাকলে, ৎ বা দ্ এর স্থানে ন হয়।
উদাহরণ : ৎ +ন =ন উৎ + নতি =উন্নতি
ত্ +ম =ন মৃৎ + নয় =মৃন্ময়
দ্ +ন =ন তদ্ + নিমিত্ত =তন্নিমিত্ত
দ্ +ম =ন তদ্ + ময় =তন্ময়
ধ্ +ন =ন ক্ষুধ্ +নিবৃত্তি =ক্ষুণ্ণিবৃত্তি
উদাহরণ : ৎ +ন =ন উৎ + নতি =উন্নতি
ত্ +ম =ন মৃৎ + নয় =মৃন্ময়
দ্ +ন =ন তদ্ + নিমিত্ত =তন্নিমিত্ত
দ্ +ম =ন তদ্ + ময় =তন্ময়
ধ্ +ন =ন ক্ষুধ্ +নিবৃত্তি =ক্ষুণ্ণিবৃত্তি
৩.১.৮। পূর্বপদের শেষ বর্ণটি যদি ৎ বা দ্ হয় এবং পরপদের প্রথম বর্ণ শ থাকে. তবে শ স্থানে চ্ছ হয়।
উদাহরণ : ৎ + শ =চ্ছ উৎ +শ্বাস =উচ্ছ্বাস
দ্ + শ =চ্ছ তদ্ +শক্তি =তচ্ছক্তি
উদাহরণ : ৎ + শ =চ্ছ উৎ +শ্বাস =উচ্ছ্বাস
দ্ + শ =চ্ছ তদ্ +শক্তি =তচ্ছক্তি
৩.১.৯। পূর্বপদের শেষ বর্ণটি যদি ৎ হয় এবং পরপদের প্রথম বর্ণ হ হয়, তবে পূর্বপদের ৎ =দ্ এবং পরপদের হ =ধ হবে।
উদাহরণ : ৎ +হ =দ্ধ>দ্ধ উৎ +হার =উদ্ধার
দ্ +হ =দ্ধ>দ্ধ পদ্ +হতি =পদ্ধতি
উদাহরণ : ৎ +হ =দ্ধ>দ্ধ উৎ +হার =উদ্ধার
দ্ +হ =দ্ধ>দ্ধ পদ্ +হতি =পদ্ধতি
৩.১.১০। পূর্বপদের শেষ বর্ণটি যদি ৎ বা দ্ হয় এবং পরপদের প্রথম বর্ণ ল হয়, তবে উক্ত ল-দ্বিত্ব বর্ণে পরিণত হয়।।
উদাহরণ : ৎ +ল =ল্ল উৎ +লেখ =উল্লেখ
দ্ +ল =ল্ল তদ্ +লোক =তল্লোক
৩.১.১১। পূর্বপদের শেষ বর্ণটি যদি ধ্, ভ্ ও হ্ হয় এবং পরপদের প্রথম বর্ণ ত হয়, তবে পূর্বপদের ত+ধ =দ্ধ, ভ্ +ত=দ্ধ এবং হ্ +ধ=গ্ধ হবে।
উদাহরণ : ৎ +ল =ল্ল উৎ +লেখ =উল্লেখ
দ্ +ল =ল্ল তদ্ +লোক =তল্লোক
৩.১.১১। পূর্বপদের শেষ বর্ণটি যদি ধ্, ভ্ ও হ্ হয় এবং পরপদের প্রথম বর্ণ ত হয়, তবে পূর্বপদের ত+ধ =দ্ধ, ভ্ +ত=দ্ধ এবং হ্ +ধ=গ্ধ হবে।
উদাহরণ : ধ্ +ত =দ্ধ বুধ্ +ত =বুদ্ধ
ভ্ +ত =দ্ধ লভ্ +ত =লব্ধ
হ্ +ত =গ্ধ দুহ্ +ত =দুগ্ধ
ভ্ +ত =দ্ধ লভ্ +ত =লব্ধ
হ্ +ত =গ্ধ দুহ্ +ত =দুগ্ধ
৩.১.১২। পূর্বপদের শেষ বর্ণটি যদি ম্ হয় এবং পরপদের প্রথম বর্ণ ক, খ, গ, ঘ, য, র, ল, ব, শ, স এবং হ হয়, তবে পূর্বপদের ম ধ্বনি ং বা ঙ-তে পরিণত হয়।
উদাহরণ : ম্ +ক=ঙ্ক অহম্ +কার =অহঙ্কার
ম্ +খ =ঙ্খ সম্ +খ্য =সংখ্যা
ম্ +গ =ঙ্গ ম্ +গীত =সঙ্গীত
ম্ +ঘ =ঙ্ঘ সম্ +ঘ =সঙ্ঘ
ম্ +ব =ম্ব কিম্ +বা =কিংবা
ম্ +য =ংয সম্ +যত =সংযত
ম্ +র =ংর সম্ +রাগ =সংরাগ
ম্ +ল =ংল সম্ +লাপ =সংলাপ
ম্ +শ =ংশ সম্ +শোধন =সংশোধন
ম্ +স =ংস সম্ + সার =সংসার
ম্ +হ =ংহ সম্ +হার =সংসার
উদাহরণ : ম্ +ক=ঙ্ক অহম্ +কার =অহঙ্কার
ম্ +খ =ঙ্খ সম্ +খ্য =সংখ্যা
ম্ +গ =ঙ্গ ম্ +গীত =সঙ্গীত
ম্ +ঘ =ঙ্ঘ সম্ +ঘ =সঙ্ঘ
ম্ +ব =ম্ব কিম্ +বা =কিংবা
ম্ +য =ংয সম্ +যত =সংযত
ম্ +র =ংর সম্ +রাগ =সংরাগ
ম্ +ল =ংল সম্ +লাপ =সংলাপ
ম্ +শ =ংশ সম্ +শোধন =সংশোধন
ম্ +স =ংস সম্ + সার =সংসার
ম্ +হ =ংহ সম্ +হার =সংসার
৩.১.১৩। পূর্বপদের শেষ বর্ণটি যদি ম্ হয় এবং পরপদের প্রথম বর্ণ চ, ট, ত প-বর্গের হয়, তবে সন্ধির ফলে বর্গের পঞ্চম বর্ণ হবে।
ব্যাখ্যা : পরিচর্তনের ফলে (চ, ছ, জ, ঝ, ঞ)=ঞ,(ট, ঠ, ড, ঢ, ণ)=ণ, (ত, থ, দ, ধ, ন) =ন এবং (প, ফ, ব, ভ, ম)=ম হবে।
উদাহরণ : ম্ +চ =ঞচ্>ঞ্চ সম্ +চয় =সঞ্চয়।
ম্ +জ =ঞ্জ>ঞ্জ সম্ +জয় =সঞ্জয়।
ম্ +ত =ন্ত গম্ +তব্য =গন্তব্য।
ম্ +ধ =ন্ধ সম্ +ধান =সন্ধান।
ম্ +ন =ন্ন কিম্ +নর =কিন্নর।
ম্ +প =ম্প সম্ +পূর্ণ =সম্পূর্ণ
ম্ +ব =ম্ব সম্ +বোধন =সম্বোধন।
ম্ +ভ =ম্ভ কিম্ +ভূত =কিম্ভূত
ম্ +ম্ =ম্ম সম্ +মান =সম্মান
উদাহরণ : ম্ +চ =ঞচ্>ঞ্চ সম্ +চয় =সঞ্চয়।
ম্ +জ =ঞ্জ>ঞ্জ সম্ +জয় =সঞ্জয়।
ম্ +ত =ন্ত গম্ +তব্য =গন্তব্য।
ম্ +ধ =ন্ধ সম্ +ধান =সন্ধান।
ম্ +ন =ন্ন কিম্ +নর =কিন্নর।
ম্ +প =ম্প সম্ +পূর্ণ =সম্পূর্ণ
ম্ +ব =ম্ব সম্ +বোধন =সম্বোধন।
ম্ +ভ =ম্ভ কিম্ +ভূত =কিম্ভূত
ম্ +ম্ =ম্ম সম্ +মান =সম্মান
৩.১.১৪। পূর্বপদের শেষ বর্ণটি যদি ষ হয় এবং পরপদের প্রথম বর্ণ ত বা থ থাকলে, ত=ট, থ=ঠ হয়।
উদাহরণ : ষ্ +ত =ট বৃষ্ + তি =বৃষ্টি
ষ্ +থ =ঠ ষষ্ + থ =ষষ্ঠ
উদাহরণ : ষ্ +ত =ট বৃষ্ + তি =বৃষ্টি
ষ্ +থ =ঠ ষষ্ + থ =ষষ্ঠ
৩.১.১৫। উৎ-উপসর্গের স্থা ধাতু যোগে যে সন্ধি হয়, তার প্রথম ধ্বনি (স) লোপ পায়।
উদাহরণ : উৎ +স্থা=স্থা উৎ +স্থান =উত্থান
উত্ +স্থি=ত্থি উৎ +স্থিত =উত্থিত
উদাহরণ : উৎ +স্থা=স্থা উৎ +স্থান =উত্থান
উত্ +স্থি=ত্থি উৎ +স্থিত =উত্থিত
৩.১.১৬। সম্ উপসর্গের পরে কৃ-ধাতু যুক্ত হলে, ধাতুর আগে স যুক্ত হয়। যেমন-
সম্ +কার =সংস্কার।
সম্ +কার =সংস্কার।
কিন্তু পরি উপসর্গের পরে ষত্ব বিধানের নিয়মে স>ষ হয়। যেমন-
পরি +কার =পরিস্কার>পরিষ্কার।
পরি +কার =পরিস্কার>পরিষ্কার।
৩.২। বিসর্গ সন্ধি
পদের অন্তস্থিত র্ ও স (ষ) স্থানে বিসর্গ হয়। র-স্থানের বিসর্গকে র-জাত বিসর্গ বলে। আর স-স্থানের বিসর্গকে স-জাত বিসর্গ বলে। বাংলায় এই ধ্বনিগুলি উচ্চারিত হয় না। যে সন্ধিতে এই ধ্বনির আবির্ভাব হয়, তাকেই বিসর্গ সন্ধি বলে। নিচে বিসর্গ সন্ধির নিয়মাবলী দেওয়া হলো।
৩.২.১। পূর্ব পদের অঃ থাকলে এবং পর পদে বর্গের তৃতীয়, চতুর্থ ও পঞ্চম বর্ণ কিংবা য, র, ল, ব, হ পরে থাকলে, এবং উভয় মিলে ও-কার হয় এবং উক্ত ও-কার পূর্ব পদে যুক্ত হয়।
উদাহরণ : অঃ +গ =ও মনঃ +গত =মনোগত
অঃ +জ =ও সদ্যঃ +জাত =সদ্যোজাত
অঃ +দ =ও ত্রয়ঃ +দশ =ত্রয়োদশ
অঃ +ধ =ও তিরঃ +ধান =তিরোধান
অঃ +ন =ও মনঃ +নয়ন =মনোনয়ন
অঃ +ব =ও সরঃ +বর =সরোবর
অঃ +ভ =ও মনঃ +ভাব =মনোভাব
অঃ +ম =ও অধঃ +মুখ =অধোমুখ।
অঃ +য =ও মনঃ +যোগ =মনোযোগ
অঃ +র =ও মনঃ +রম =মনোরম।
অঃ +ল =ও যশঃ +লাভ =যশোলাভ
অঃ +হ =ও পুরঃ +হিত =পুরোহিত
অঃ +জ =ও সদ্যঃ +জাত =সদ্যোজাত
অঃ +দ =ও ত্রয়ঃ +দশ =ত্রয়োদশ
অঃ +ধ =ও তিরঃ +ধান =তিরোধান
অঃ +ন =ও মনঃ +নয়ন =মনোনয়ন
অঃ +ব =ও সরঃ +বর =সরোবর
অঃ +ভ =ও মনঃ +ভাব =মনোভাব
অঃ +ম =ও অধঃ +মুখ =অধোমুখ।
অঃ +য =ও মনঃ +যোগ =মনোযোগ
অঃ +র =ও মনঃ +রম =মনোরম।
অঃ +ল =ও যশঃ +লাভ =যশোলাভ
অঃ +হ =ও পুরঃ +হিত =পুরোহিত
৩.২.২। পূর্ব পদের বিসর্গের পূর্বে অ থাকলে এবং পর পদের অ ব্যতীত অন্য স্বরবর্ণ থাকলে ঃ লোপ পায় এবং সন্ধি না হয়ে, পূর্বপদ ও পরপদ পাশাপাশি বসে।
উদাহরণ : অঃ +আ =অআ মনঃ +আশা =মন-আশা
অঃ +ই =অই যশঃ +ইচ্ছা =যশ-ইচ্ছা
অঃ +উ =অউ সদ্যঃ +উল্লিখিত =সদ্য-উল্লিখিত
অঃ +এ =অএ অতঃ +এব =অতএব
উদাহরণ : অঃ +আ =অআ মনঃ +আশা =মন-আশা
অঃ +ই =অই যশঃ +ইচ্ছা =যশ-ইচ্ছা
অঃ +উ =অউ সদ্যঃ +উল্লিখিত =সদ্য-উল্লিখিত
অঃ +এ =অএ অতঃ +এব =অতএব
৩.২.৩। পূর্ব পদের বিসর্গের পূর্বে ই বা উ থাকলে এবং পর পদের প্রথম বর্ণ র হলে, পূর্বপদের ই=ঈ বা উ=ঈ হয় এবং পরপদের র অপরিবর্তিত থাকে।
উদাহরণ : ইঃ + র =ঈর নিঃ +রব =নীরব।
উঃ + র =ঊর চক্ষুঃ +রোগ =চক্ষূরোগ
উদাহরণ : ইঃ + র =ঈর নিঃ +রব =নীরব।
উঃ + র =ঊর চক্ষুঃ +রোগ =চক্ষূরোগ
৩.২.৪। পূর্ব পদের শেষে বিসর্গ থাকলে এবং পরপদে বর্গের স্বরবর্ণ থাকলে, পরপদে র্ যুক্ত হয় এবং তা পরপদের আদ্যবর্ণের সাথে যুক্ত স্বরবর্ণ প্রকাশিত হয়।
উদাহরণ : ঃ + অ =র্অ>র নিঃ +অবধি =নিরবধি।
ঃ + আ =র্আ>রা নিঃ +আকার =নিরাকার।
ঃ + ই =র্ই>রি জ্যোতিঃ +ইন্দ্র =জ্যোতিরিন্দ্র
ঃ + ঈ =র্ঈ>রী অন্তঃ + ঈক্ষ =অন্তরীক্ষ
ঃ + উ =র্উ>রু চক্ষুঃ +উন্মীলন>চক্ষুরুন্মীলন
ঃ + ঊ =র্ঊ>রূ দুঃ + উহ =দুরূহ
উদাহরণ : ঃ + অ =র্অ>র নিঃ +অবধি =নিরবধি।
ঃ + আ =র্আ>রা নিঃ +আকার =নিরাকার।
ঃ + ই =র্ই>রি জ্যোতিঃ +ইন্দ্র =জ্যোতিরিন্দ্র
ঃ + ঈ =র্ঈ>রী অন্তঃ + ঈক্ষ =অন্তরীক্ষ
ঃ + উ =র্উ>রু চক্ষুঃ +উন্মীলন>চক্ষুরুন্মীলন
ঃ + ঊ =র্ঊ>রূ দুঃ + উহ =দুরূহ
৩.২.৫। পূর্ব পদের শেষে বিসর্গ থাকলে এবং পরপদে বর্গের স্বরবর্ণ, তৃতীয়, চতুর্থ ও পঞ্চম বর্ণ কিংবা য, র, ল, ব, হ পর থাকলে অ-কারের পরস্থিত র-জাত বিসর্গের স্থানে র্ হয় এবং তা পরপদের আদ্যবর্ণের সাথে যুক্ত হয়।
উদাহরণ : ঃ + অ =র্অ>র নিঃ +অবধি =নিরবধি।
ঃ + আ =র্আ>রা নিঃ +আকার =নিরাকার।
ঃ + ই =র্ই>রি জ্যোতিঃ +ইন্দ্র = জ্যোতিরিন্দ্র
ঃ + উ =র্উ>রু চক্ষুঃ +উন্মীলন>চক্ষুরুন্মীলন
ঃ + গ =র্গ নিঃ +গত =নির্গত।
ঃ + ঘ =র্ঘ দুঃ +ঘটনা =দুর্ঘটনা।
ঃ+ জ =র্জ দুঃ +জন =দুর্জন।
ঃ + ঝ =র্ঝ নিঃ +ঝর =নিঃর্ঝর
ঃ + দ =র্দ নিঃ +দিষ্ট =দুর্জন।
ঃ + ধ =র্ধ অন্তঃ +ধান =অন্তর্ধান।
ঃ + ন =র্ন>র্ণ নিঃ +নয় =নির্ণয়
ঃ + ব =র্ব দুঃ +বহ =দুর্বহ।
ঃ + ভ =র্ভ দুঃ +ভাগ্য =দুর্ভাগ্য
ঃ + ম =র্ম নিঃ +মান =নির্মাণ
ঃ + য =র্য নিঃ +যাতন =নির্যাতন
ঃ + ল =র্ল নিঃ +লজ্জ =নির্লজ্জ
ঃ + হ =র্হ অন্তঃ +হিত =অন্তর্হিত
উদাহরণ : ঃ + অ =র্অ>র নিঃ +অবধি =নিরবধি।
ঃ + আ =র্আ>রা নিঃ +আকার =নিরাকার।
ঃ + ই =র্ই>রি জ্যোতিঃ +ইন্দ্র = জ্যোতিরিন্দ্র
ঃ + উ =র্উ>রু চক্ষুঃ +উন্মীলন>চক্ষুরুন্মীলন
ঃ + গ =র্গ নিঃ +গত =নির্গত।
ঃ + ঘ =র্ঘ দুঃ +ঘটনা =দুর্ঘটনা।
ঃ+ জ =র্জ দুঃ +জন =দুর্জন।
ঃ + ঝ =র্ঝ নিঃ +ঝর =নিঃর্ঝর
ঃ + দ =র্দ নিঃ +দিষ্ট =দুর্জন।
ঃ + ধ =র্ধ অন্তঃ +ধান =অন্তর্ধান।
ঃ + ন =র্ন>র্ণ নিঃ +নয় =নির্ণয়
ঃ + ব =র্ব দুঃ +বহ =দুর্বহ।
ঃ + ভ =র্ভ দুঃ +ভাগ্য =দুর্ভাগ্য
ঃ + ম =র্ম নিঃ +মান =নির্মাণ
ঃ + য =র্য নিঃ +যাতন =নির্যাতন
ঃ + ল =র্ল নিঃ +লজ্জ =নির্লজ্জ
ঃ + হ =র্হ অন্তঃ +হিত =অন্তর্হিত
৩.২.৬। পূর্বপদে বিসর্গ থাকলে এবং পরপদে চ ও ছ থাকলে পূর্বপদের বিসর্গ শ হয়।
উদাহরণ : ঃ + চ =শ নিঃ +চয় = নিশ্চয়
ঃ + ছ =শ শিরঃ + ছেদ = শিরোশ্ছেদ
উদাহরণ : ঃ + চ =শ নিঃ +চয় = নিশ্চয়
ঃ + ছ =শ শিরঃ + ছেদ = শিরোশ্ছেদ
৩.২.৭। পূর্বপদে বিসর্গ থাকলে এবং পরপদে ট ও ঠ থাকলে পূর্বপদের বিসর্গ ষ হয়। এবং পরপদের ট বা ঠ উক্ত ষ-এর সাথে যুক্ত বর্ণ তৈরি করে।
উদাহরণ : ঃ + ট =ষ্ট চতুঃ +টয় = চতুষ্টয়
ঃ + ঠ =ষ্ঠ নিঃ +ঠুর = নিষ্ঠুর
উদাহরণ : ঃ + ট =ষ্ট চতুঃ +টয় = চতুষ্টয়
ঃ + ঠ =ষ্ঠ নিঃ +ঠুর = নিষ্ঠুর
৩.২.৮। পূর্বপদে ই বা উ যুক্ত বিসর্গ থাকলে এবং পরপদের প্রথম বর্ণ ক, খ, প, ফ পরে থাকলে, বিসর্গ ষ-তে পরিণত হয়।
উদাহরণ : ইঃ + ক =ষ্ক আবিঃ +কার =আবিষ্কার
ইঃ + প =ষ্প নিঃ +পত্তি =নিষ্পত্তি
ইঃ + ফ =ষ্ফ নিঃ +ফল =নিষ্ফল
উঃ + ক =ষ্ক দুঃ +কৃতি =দুষ্কৃতি
উঃ + প =ষ্প চতুঃ +পদ =চতুষ্পদ
উদাহরণ : ইঃ + ক =ষ্ক আবিঃ +কার =আবিষ্কার
ইঃ + প =ষ্প নিঃ +পত্তি =নিষ্পত্তি
ইঃ + ফ =ষ্ফ নিঃ +ফল =নিষ্ফল
উঃ + ক =ষ্ক দুঃ +কৃতি =দুষ্কৃতি
উঃ + প =ষ্প চতুঃ +পদ =চতুষ্পদ
৩.২.৯। পূর্বপদে অ বা আ যুক্ত বিসর্গ থাকলে এবং পরপদের প্রথম বর্ণ ক, খ, প, ফ পরে থাকলে, বিসর্গ স-তে পরিণত হয়।
উদাহরণ : অঃ +ক =স্ক পুরঃ + কার =পুরস্কার
অঃ +প =স্প বাচঃ +পতি =বাচস্পতি
আঃ +ক =স্ক ভাঃ + কর =ভাস্কর
উদাহরণ : অঃ +ক =স্ক পুরঃ + কার =পুরস্কার
অঃ +প =স্প বাচঃ +পতি =বাচস্পতি
আঃ +ক =স্ক ভাঃ + কর =ভাস্কর
৩.২.১০। পূর্বপদে বিসর্গ থাকলে এবং পরপদের প্রথম বর্ণ ক, ক্ষ, খ, প, ফ, র, শ, স থাকলে বিসর্গ লোপ পায় না।
উদাহরণ : ঃ + ক =ঃক অন্তঃ +করণ =অন্তঃকরণ
ঃ + খ =ঃখ দুঃ + খ =দুঃখ
ঃ + প =ঃপ অধঃ +পাত =অধঃপাত
ঃ + র =ঃর অন্তঃ +রাষ্ট্রীয় =অন্তঃরাষ্ট্রীয়
ঃ + শ =ঃশ দুঃ +শাসন =দুঃশাসন
ঃ + স =ঃস নিঃ +সন্দেহ =নিঃসন্দেহ
উদাহরণ : ঃ + ক =ঃক অন্তঃ +করণ =অন্তঃকরণ
ঃ + খ =ঃখ দুঃ + খ =দুঃখ
ঃ + প =ঃপ অধঃ +পাত =অধঃপাত
ঃ + র =ঃর অন্তঃ +রাষ্ট্রীয় =অন্তঃরাষ্ট্রীয়
ঃ + শ =ঃশ দুঃ +শাসন =দুঃশাসন
ঃ + স =ঃস নিঃ +সন্দেহ =নিঃসন্দেহ
৩.৩.১১। পূর্বপদের শেষে বিসর্গ থাকলে এবং পরপদে স্ত, স্থ, স্প থাকলে বিসর্গের লোপ হয়।
উদাহরণ : ঃ +স্ত =স্ত নিঃ +স্তব্ধ =নিঃস্তব্ধ
ঃ +স্থ =স্থ অন্তঃ +স্থ =অন্তঃস্থ
ঃ +স্প =স্প নিঃ+স্পন্দ =নিঃস্পন্দ
উদাহরণ : ঃ +স্ত =স্ত নিঃ +স্তব্ধ =নিঃস্তব্ধ
ঃ +স্থ =স্থ অন্তঃ +স্থ =অন্তঃস্থ
ঃ +স্প =স্প নিঃ+স্পন্দ =নিঃস্পন্দ
নিপাতনে সিদ্ধ সন্ধি :
আ +চর্য =আশ্চর্য আ +পদ =আস্পদ
অহঃ +কর =অহঙ্কর অহঃ +পতি =অহস্পতি>অহর্পতি
অহঃ +রাত্র =অহোরাত্রি অহন্ +অহন্ =অহরহঃ
অহন্ +নিশি =অহর্নিশি গীঃ +গীত =গীস্পতি
গো +পদ =গোস্পদ তদ্ +কর =তস্কর
দিব্ +লোক =দ্যূলোক পতত্ +অঞ্জলি =পতঞ্জলি
পশ্চাত্ +অর্ধ =পশ্চার্থ পুংস্ +জাতি =পুংজাতি
পুংস্ +লিঙ্গ =পুংলিঙ্গ বন +পতি =বনস্পতি
বৃহত্ +পতি =বৃহস্পতি ষট্ +দশ =ষোড়শ
হরি +চন্দ্র =হরিশ্চন্দ্র
অহঃ +কর =অহঙ্কর অহঃ +পতি =অহস্পতি>অহর্পতি
অহঃ +রাত্র =অহোরাত্রি অহন্ +অহন্ =অহরহঃ
অহন্ +নিশি =অহর্নিশি গীঃ +গীত =গীস্পতি
গো +পদ =গোস্পদ তদ্ +কর =তস্কর
দিব্ +লোক =দ্যূলোক পতত্ +অঞ্জলি =পতঞ্জলি
পশ্চাত্ +অর্ধ =পশ্চার্থ পুংস্ +জাতি =পুংজাতি
পুংস্ +লিঙ্গ =পুংলিঙ্গ বন +পতি =বনস্পতি
বৃহত্ +পতি =বৃহস্পতি ষট্ +দশ =ষোড়শ
হরি +চন্দ্র =হরিশ্চন্দ্র
সংস্কৃত স্বরসন্ধি (স্বর-স্বর সন্ধি)
স্বরবর্ণের সাথে স্বরবর্ণের মিলন এবং সেখান থেকে রূপান্তরিত স্বরবর্ণের উদ্ভবকেই স্বরসন্ধি বলা হয়। এক্ষেত্রে যে সকল রীতি অনুসৃত হয়, সেগুলোই স্বরসন্ধির নিয়ম হিসাবে প্রচলিত আছে। নিচে এই নিয়মগুলো ব্যাখ্যা করা হলো—
স্বরসন্ধি সূত্র : ১। পূর্বপদের শেষ বর্ণটি অ, অ-কার, আ, আ-কার হলে এবং পরপদের আদ্যবর্ণ অ, অ-কার, আ, আ-কার হলে উভয় মিলে আ-কার হয় এবং আ-কার পূর্ব বর্ণে যুক্ত হয়। যেমন—
স্বরবর্ণের সাথে স্বরবর্ণের মিলন এবং সেখান থেকে রূপান্তরিত স্বরবর্ণের উদ্ভবকেই স্বরসন্ধি বলা হয়। এক্ষেত্রে যে সকল রীতি অনুসৃত হয়, সেগুলোই স্বরসন্ধির নিয়ম হিসাবে প্রচলিত আছে। নিচে এই নিয়মগুলো ব্যাখ্যা করা হলো—
স্বরসন্ধি সূত্র : ১। পূর্বপদের শেষ বর্ণটি অ, অ-কার, আ, আ-কার হলে এবং পরপদের আদ্যবর্ণ অ, অ-কার, আ, আ-কার হলে উভয় মিলে আ-কার হয় এবং আ-কার পূর্ব বর্ণে যুক্ত হয়। যেমন—
অ + অ =আ নব + অন্ন =নবান্ন
অ + আ =আ হিম + আলয় =হিমালয়
আ + অ =আ আশা + অতিরিক্ত =আশাতিরিক্ত
আ + আ =আ বিদ্যা + আলয় =বিদ্যালয়
অ + আ =আ হিম + আলয় =হিমালয়
আ + অ =আ আশা + অতিরিক্ত =আশাতিরিক্ত
আ + আ =আ বিদ্যা + আলয় =বিদ্যালয়
স্বরসন্ধি সূত্র : ২। পূর্বপদের শেষ বর্ণটি অ, অ-কার, আ, আ-কার হলে এবং পরপদের আদ্যবর্ণ ই, ই-কার, ঈ, ঈ-কার হলে উভয় মিলে এ-কার হয় এবং এ-কার পূর্ব বর্ণে যুক্ত হয়। যেমন—
অ + ই =এ রাজ + ইন্দ্র =রাজেন্দ্র
অ + ঈ =এ পরম + ঈশ্বর =পরমেশ্বর
আ + ই =এ যথা + ইষ্ট =যথেষ্ট
আ + ঈ =এ রমা + ঈশ =রমেশ
অ + ঈ =এ পরম + ঈশ্বর =পরমেশ্বর
আ + ই =এ যথা + ইষ্ট =যথেষ্ট
আ + ঈ =এ রমা + ঈশ =রমেশ
স্বরসন্ধি সূত্র : ৩। পূর্বপদের শেষ বর্ণটি অ, অ-কার, আ, আ-কার হলে এবং পরপদের আদ্যবর্ণ উ, উ-কার, ঊ, ঊ-কার হলে উভয় মিলে ও-কার হয় এবং ও-কার পূর্ব বর্ণে যুক্ত হয়। যেমন—
অ + উ =ও হিত + উপদেশ =হিতোপদেশ
অ + ঊ =ও পর্বত + ঊধ্ব =পর্বতোধ্ব
আ + উ =ও মহা + উদয় =মহোদয়
আ + ঊ =ও মহা + ঊর্মি =মহোর্মি
অ + ঊ =ও পর্বত + ঊধ্ব =পর্বতোধ্ব
আ + উ =ও মহা + উদয় =মহোদয়
আ + ঊ =ও মহা + ঊর্মি =মহোর্মি
স্বরসন্ধি সূত্র : ৪। পূর্বপদের শেষ বর্ণটি অ, অ-কার, আ, আ-কার হলে এবং পরপদের আদ্যবর্ণ ঋ হলে উভয় মিলে অর্ হয় এবং অর্ পূর্ববর্ণে যুক্ত হয়। যেমন—
অ + ঋ =অ দেব + ঋষি =দেবর্ষি
আ + ঋ =অ মহা + ঋষি =মহর্ষি
অ + ঋ =অ দেব + ঋষি =দেবর্ষি
আ + ঋ =অ মহা + ঋষি =মহর্ষি
স্বরসন্ধি সূত্র : ৫। পূর্বপদের শেষ বর্ণটি অ, অ-কার, আ, আ-কার হলে এবং পরপদের আদ্যবর্ণ ঋত হলে উভয় মিলে আর্ হয় এবং আর্ পূর্ববর্ণে যুক্ত হয়। যেমন—
অ + ঋত =আর শীত + ঋত =শীতার্ত
আ + ঋত =আর তৃষ্ণা + ঋত =তৃষ্ণার্ত
অ + ঋত =আর শীত + ঋত =শীতার্ত
আ + ঋত =আর তৃষ্ণা + ঋত =তৃষ্ণার্ত
স্বরসন্ধি সূত্র : ৬। পূর্বপদের শেষ বর্ণটি অ, অ-কার, আ, আ-কার হলে এবং পরপদের আদ্যবর্ণ এ, এ-কার, ঐ, ঐ-কার হলে উভয় মিলে ঐ-কার হয় এবং ঐ-কার পূর্ববর্ণে যুক্ত হয়। যেমন—
অ + এ =ঐ এক + এক =একৈক
অ + ঐ =ঐ মত + ঐক্য =মতৈক্য
আ + এ =ঐ সদা + এব =সদৈব
আ + ঐ =ঐ মহা + ঐশ্বর্য্য =মহৈশ্বর্য্য
অ + এ =ঐ এক + এক =একৈক
অ + ঐ =ঐ মত + ঐক্য =মতৈক্য
আ + এ =ঐ সদা + এব =সদৈব
আ + ঐ =ঐ মহা + ঐশ্বর্য্য =মহৈশ্বর্য্য
স্বরসন্ধি সূত্র : ৭। পূর্বপদের শেষ বর্ণটি অ, অ-কার, আ, আ-কার হলে এবং পরপদের আদ্যবর্ণ ও, ও-কার, ঔ, ঔ-কার হলে উভয় মিলে ঔ-কার হয় এবং ঔ-কার পূর্ববর্ণে যুক্ত হয়। যেমন—
অ + ও =ঔ মাংস + ওদন =মাংসৌদন
অ + ঔ =ঔ দিব্য + ঔষধ =দিব্যৌষধ
আ + ও =ঔ মহা + ওষধি =মহৌষধি
আ + ঔ =ঔ মহা + ঔষধ =মহৌষধ
অ + ও =ঔ মাংস + ওদন =মাংসৌদন
অ + ঔ =ঔ দিব্য + ঔষধ =দিব্যৌষধ
আ + ও =ঔ মহা + ওষধি =মহৌষধি
আ + ঔ =ঔ মহা + ঔষধ =মহৌষধ
স্বরসন্ধি সূত্র : ৮। পূর্বপদের শেষ বর্ণটি ই, ই-কার, ঈ, ঈ-কার হলে এবং পরপদের আদ্যবর্ণ অ, অ-কার হলে উভয় মিলে য (য-ফলা) হয় এবং য-কার পূর্ববর্ণে যুক্ত হয়। যেমন—
ই + অ =এ্য অতি + অন্ত =অত্যন্ত
ঈ +অ =এ্য নদী +অম্বু =নদ্যম্বু
ই + অ =এ্য অতি + অন্ত =অত্যন্ত
ঈ +অ =এ্য নদী +অম্বু =নদ্যম্বু
স্বরসন্ধি সূত্র : ৯। পূর্বপদের শেষ বর্ণটি ই, ই-কার, ঈ, ঈ-কার হলে এবং পরপদের আদ্যবর্ণ আ, আ-কার হলে উভয় মিলে য্আ (এ্যা) হয় এবং এ্যা পূর্ববর্ণে যুক্ত হয়। যেমন—
ই + আ =এ্যা অতি + আচার =অত্যাচার
ঈ + আ =এ্যা মসী + আধার =মস্যাধার
ই + আ =এ্যা অতি + আচার =অত্যাচার
ঈ + আ =এ্যা মসী + আধার =মস্যাধার
স্বরসন্ধি সূত্র : ১০। পূর্বপদের শেষ বর্ণটি ই, ই-কার, ঈ, ঈ হলে এবং পরপদের আদ্যবর্ণ ই, ই-কার, ঈ, ঈ হলে উভয় মিলে ঈ হয় এবং তা পূর্ববর্ণে যুক্ত হয়। যেমন—
ই + ই =ঈ গিরি + ইন্দ্র =গিরীন্দ্র
ই + ঈ =ঈ প্রতি + ঈক্ষা =প্রতক্ষা
ঈ + ই =ঈ মহী + ইন্দ্র = মহী্ন্দ্র
ঈ + ঈ =ঈ সতী + ঈশ =সতীশ
ই + ই =ঈ গিরি + ইন্দ্র =গিরীন্দ্র
ই + ঈ =ঈ প্রতি + ঈক্ষা =প্রতক্ষা
ঈ + ই =ঈ মহী + ইন্দ্র = মহী্ন্দ্র
ঈ + ঈ =ঈ সতী + ঈশ =সতীশ
স্বরসন্ধি সূত্র : ১১। পূর্বপদের শেষ বর্ণটি ই, ই-কার, ঈ, ঈ হলে এবং পরপদের আদ্যবর্ণ উ, উ-কার, ঊ, ঊ-কার হলে উভয় মিলে য্উ (এ্যউ) হয় এবং তা পূর্ববর্ণে যুক্ত হয়। যেমন—
ই + উ =এ্যউ প্রতি + উত্তর =প্রত্যুত্তর
ই + ঊ =এ্যঊ প্রতি + ঊষ =প্রত্যূষ
ই + উ =এ্যউ প্রতি + উত্তর =প্রত্যুত্তর
ই + ঊ =এ্যঊ প্রতি + ঊষ =প্রত্যূষ
স্বরসন্ধি সূত্র : ১২। পূর্বপদের শেষ বর্ণটি ই, ই-কার, ঈ, ঈ হলে এবং পরপদের আদ্যবর্ণ এ, এ-কার হলে উভয় মিলে য্এ (এ্যএ) হয় এবং তা পূর্ববর্ণে যুক্ত হয়। যেমন—
ই + এ =এ্যএ প্রতি + এক =প্রত্যেক
ই + এ =এ্যএ প্রতি + এক =প্রত্যেক
স্বরসন্ধি সূত্র : ১৩। পূর্বপদের শেষ বর্ণটি ই, ই-কার, ঈ, ঈ হলে এবং পরপদের আদ্যবর্ণ ঐ, ঐ-কার, হলে উভয় মিলে য্ঐ (এ্যঐ) হয় এবং তা পূর্ববর্ণে যুক্ত হয়। যেমন—
ই + ঐ =এ্যঐ প্রতি + ঐশ্বর্য =অত্যৈশ্বর্য
ই + ঐ =এ্যঐ প্রতি + ঐশ্বর্য =অত্যৈশ্বর্য
স্বরসন্ধি সূত্র : ১৪। পূর্বপদের শেষ বর্ণটি ই, ই-কার, ঈ, ঈ হলে এবং পরপদের আদ্যবর্ণ ও, ও-কার থাকলে উভয় মিলে য্ও (এ্যও) হয় এবং তা পূর্ববর্ণে যুক্ত হয়। যেমন—
ই + ও =এ্যও ইতি + ওম =ইত্যোম
ই + ও =এ্যও ইতি + ওম =ইত্যোম
স্বরসন্ধি সূত্র : ১৫। পূর্বপদের শেষ বর্ণটি উ, উ-কার, ঊ, ঊ-কার হলে এবং পরপদের আদ্যবর্ণ অ, অ-কার, আ, আ-কার, ই, ই-কার হলে উভয় মিলে বয় (অয়), বায়, বি, বী হয় এবং তা পূর্ববর্ণে যুক্ত হয়। যেমন—
উ + অ =বয় (অয়) অনু +অয় =অন্বয়
উ + আ =বা (আ) সু + আগত =স্বাগত
উ + ই =বি অনু +ইত =অন্বিত
উ + ঈ =বী অনু + ঈক্ষা =অন্বীক্ষা
উ + অ =বয় (অয়) অনু +অয় =অন্বয়
উ + আ =বা (আ) সু + আগত =স্বাগত
উ + ই =বি অনু +ইত =অন্বিত
উ + ঈ =বী অনু + ঈক্ষা =অন্বীক্ষা
স্বরসন্ধি সূত্র : ১৬। পূর্বপদের শেষ বর্ণটি উ, উ-কার, ঊ, ঊ-কার হলে এবং পরপদের আদ্যবর্ণ উ, উ-কার, ঊ, ঊ-কার হলে উভয় মিলে ঊ হয়। যেমন—
উ + উ =ঊ সু + উক্ত =সূক্ত
উ + ঊ =ঊ লঘু + ঊর্মি =লঘূর্মি
ঊ + উ =ঊ বধূ + উক্তি =বধূক্তি
ঊ + ঊ =ঊ ভূ + ঊর্ধ্ব =ভূর্ধ্ব
উ + উ =ঊ সু + উক্ত =সূক্ত
উ + ঊ =ঊ লঘু + ঊর্মি =লঘূর্মি
ঊ + উ =ঊ বধূ + উক্তি =বধূক্তি
ঊ + ঊ =ঊ ভূ + ঊর্ধ্ব =ভূর্ধ্ব
স্বরসন্ধি সূত্র : ১৭। পূর্বপদের শেষ বর্ণটি উ, উ-কার, ঊ, ঊ-কার হলে এবং পরপদের আদ্যবর্ণ ঋ, ঋ-কার হলে উভয় মিলে ঋ, ঋ-কার হয়। যেমন—
উ + ঋ =বৃ বহু +ঋচ্ =বহ্বৃচ
উ + ঋ =বৃ বহু +ঋচ্ =বহ্বৃচ
স্বরসন্ধি সূত্র : ১৮। পূর্বপদের শেষ বর্ণটি উ, উ-কার, ঊ, ঊ-কার হলে এবং পর পদের আদ্যবর্ণ এ-কার লে উভয় মিলে এ হয়। যেমন—
ঊ + এ =বে (এয়) অনু +এষণ =অন্বেষণ
ঊ + এ =বে (এয়) অনু +এষণ =অন্বেষণ
স্বরসন্ধি সূত্র : ১৯। পূর্বপদের শেষ বর্ণটি ঋ-কার হলে এবং পরপদের আদ্যবর্ণে স্বরবর্ণ যুক্ত হলে উভয় মিলে ঋ-কার হয় এবং পরপদের স্বরবর্ণ ঋ-কারের সাথে যুক্ত হয়। যেমন—
ঋ + অ =র্অ পিতৃ + অর্থে =পিত্রর্থে
ঋ + আ =র্আ পিতৃ + আলয় =পিত্রালয়
ঋ + ই =র্ই পিতৃ + ইচ্ছা =পিত্রিচ্ছা
ঋ + উ =র্উ পিতৃ + উপদেশ =পিত্রূপদেশ
ঋ + ঋ =ৠ পিতৃ +ঋণ =পিতৄন (বাংলাতে এইরূপটি অপ্রচলিত)
ঋ + এ =র্এ ভাতৃ +এষণা =ভার্এষণা
ঋ + অ =র্অ পিতৃ + অর্থে =পিত্রর্থে
ঋ + আ =র্আ পিতৃ + আলয় =পিত্রালয়
ঋ + ই =র্ই পিতৃ + ইচ্ছা =পিত্রিচ্ছা
ঋ + উ =র্উ পিতৃ + উপদেশ =পিত্রূপদেশ
ঋ + ঋ =ৠ পিতৃ +ঋণ =পিতৄন (বাংলাতে এইরূপটি অপ্রচলিত)
ঋ + এ =র্এ ভাতৃ +এষণা =ভার্এষণা
স্বরসন্ধি সূত্র : ২০। পূর্বপদের শেষ বর্ণটি এ, এ-কার হলে এবং পরপদের আদ্যবর্ণে অ, অ-কার হলে, উভয় মিলে অয় হয় এবং তা পূর্ববর্ণের সাথে যুক্ত হয়। যেমন—
এ + অ =অয় শী>শে + অন =শয়ন
এ + অ =অয় শী>শে + অন =শয়ন
স্বরসন্ধি সূত্র : ২১। পূর্বপদের শেষ বর্ণটি ঐ, ঐ-কার হলে এবং পরপদের আদ্যবর্ণে অ, অ-কার হলে, উভয় মিলে আয় হয় এবং তা পূর্ববর্ণের সাথে যুক্ত হয়। যেমন—
ঐ + অ =আয় নৈ + অক =নায়ক
ঐ + অ =আয় নৈ + অক =নায়ক
স্বরসন্ধি সূত্র : ২২। পূর্বপদের শেষ বর্ণটি ও, ও-কার হলে এবং পরপদের আদ্যবর্ণে অ, অ-কার, আ, আ-কার, এ, এ-কার হলে, উভয় মিলে যথাক্রমে অব, অবা, অবে হয় এবং তা পূর্ববর্ণের সাথে যুক্ত হয়। যেমন—
ও + অ =অব ভো + অন =ভবন
ও + আ =অবা গো +আদি =গবাদি
ও + ই =অবি পো + ইত্র =পবিত্র
ও + এ =অবে গো + এষণা =গবেষণা
ও + অ =অব ভো + অন =ভবন
ও + আ =অবা গো +আদি =গবাদি
ও + ই =অবি পো + ইত্র =পবিত্র
ও + এ =অবে গো + এষণা =গবেষণা
স্বরসন্ধি সূত্র : ২৩। পূর্বপদের শেষ বর্ণটি ঔ, ঔ-কার হলে এবং পরপদের আদ্যবর্ণে অ, অ-কার, ই, ই-কার, উ, উ-কার হলে, উভয় মিলে যথাক্রমে আব ও আবি, আবু হয় এবং তা পূর্ববর্ণের সাথে যুক্ত হয়। যেমন—
ঔ + অ =আব পৌ + অক =পাবক
ঔ + ই =আবি নৌ + ইক =নাবিক
ঔ + উ =আবু ভৌ +উক =ভাবুক
ঔ + অ =আব পৌ + অক =পাবক
ঔ + ই =আবি নৌ + ইক =নাবিক
ঔ + উ =আবু ভৌ +উক =ভাবুক
নিপাতনে সিদ্ধ :
অক্ষ + ঊহিণী =অক্ষৌহিণী অন্য + অন্য=অন্যান্য, অন্যোন্য
কুল + অটা =কুলটা গব্ + ঈশ্বর =গবীশ্বর
গো + অক্ষ =গবাক্ষ গো + অস্থি = গবাস্থি
গো + ইন্দ্র =গবেন্দ্র পর + পর =পরস্পর
প্র + ঊঢ় =প্রৌঢ় প্র + এষণ =প্রেষণ
বিম্ব + ঔষ্ঠ =বিম্বৌষ্ঠ মনস্ + ঈষা =মনীষা
মার্ত + অণ্ড =মার্তণ্ড রক্ত + ঔষ্ঠ =রক্তোষ্ঠ
শুদ্ধ + ওদন=শুদ্ধোদন সার + অঙ্গ =সারঙ্গ
সীম + অন্ত =সীমন্ত (সীঁথি) স্ব + ঈর =স্বৈর।
অক্ষ + ঊহিণী =অক্ষৌহিণী অন্য + অন্য=অন্যান্য, অন্যোন্য
কুল + অটা =কুলটা গব্ + ঈশ্বর =গবীশ্বর
গো + অক্ষ =গবাক্ষ গো + অস্থি = গবাস্থি
গো + ইন্দ্র =গবেন্দ্র পর + পর =পরস্পর
প্র + ঊঢ় =প্রৌঢ় প্র + এষণ =প্রেষণ
বিম্ব + ঔষ্ঠ =বিম্বৌষ্ঠ মনস্ + ঈষা =মনীষা
মার্ত + অণ্ড =মার্তণ্ড রক্ত + ঔষ্ঠ =রক্তোষ্ঠ
শুদ্ধ + ওদন=শুদ্ধোদন সার + অঙ্গ =সারঙ্গ
সীম + অন্ত =সীমন্ত (সীঁথি) স্ব + ঈর =স্বৈর।
সংস্কৃত ব্যঞ্জন সন্ধি
ব্যঞ্জনসন্ধির প্রকৃতি অনুসারে, একে দুটি ভাগে ভাগ করা যেতে পারে। এই ভাগ দুটো হলো-
১। স্বর-ব্যঞ্জন সন্ধি
২। ব্যঞ্জন-স্বর সন্ধি।
ব্যঞ্জনসন্ধির প্রকৃতি অনুসারে, একে দুটি ভাগে ভাগ করা যেতে পারে। এই ভাগ দুটো হলো-
১। স্বর-ব্যঞ্জন সন্ধি
২। ব্যঞ্জন-স্বর সন্ধি।
১। স্বর-ব্যঞ্জন সন্ধি
স্বর-ব্যঞ্জন-সন্ধি সূত্র : ১ । পূর্বপদের শেষ ব্যঞ্জন বর্ণটিতে যদি স্বরধ্বনি যুক্ত থাকে এবং পরপদের প্রথম বর্ণটি ছ হয় (যেমন : ছন্ন, ছায়া ইত্যাদি)। তবে পূর্বপদের শেষ ছ=চ্ছ হয় এবং পরপদের ব্যঞ্জনবর্ণের সাথের স্বরবর্ণটি পূর্বপদে যুক্ত হবে।
স্বর-ব্যঞ্জন-সন্ধি সূত্র : ১ । পূর্বপদের শেষ ব্যঞ্জন বর্ণটিতে যদি স্বরধ্বনি যুক্ত থাকে এবং পরপদের প্রথম বর্ণটি ছ হয় (যেমন : ছন্ন, ছায়া ইত্যাদি)। তবে পূর্বপদের শেষ ছ=চ্ছ হয় এবং পরপদের ব্যঞ্জনবর্ণের সাথের স্বরবর্ণটি পূর্বপদে যুক্ত হবে।
ব্যাখ্যা : ধরা যাক পূর্বপদটি ‘কথা’। এর শেষ ব্যঞ্জনবর্ণটি থ এবং এর সাথে আ ব্যঞ্জন ধ্বনি রয়েছে। আবার ধরা যাক পরপদটি ‘ছলে’। এই পদটির প্রথম বর্ণটি ছ। অর্থাৎ ছ্ +অ। তাহলে সূত্র অনুসারে সন্ধির ফলাফল হবে আ + ছ =আচ্ছ। সব মিলিয়ে দাঁড়াবে- কথা +ছলে=কথাচ্ছলে। এরূপ—
অ +ছ =অচ্ছ। প্র +ছদ =প্রচ্ছদ
আ + ছ =আচ্ছ। আ +ছন্ন =আচ্ছন্ন
ই + ছ =ইচ্ছ। পরি +ছন্ন =পরিচ্ছন্ন
উ + ছ =উচ্ছ। তরু +ছায়া =তরুচ্ছায়া
আ + ছ =আচ্ছ। আ +ছন্ন =আচ্ছন্ন
ই + ছ =ইচ্ছ। পরি +ছন্ন =পরিচ্ছন্ন
উ + ছ =উচ্ছ। তরু +ছায়া =তরুচ্ছায়া
২. ব্যঞ্জন-স্বর সন্ধি
ব্যঞ্জন-স্বর-সন্ধি সূত্র : ১। পূর্বপদের শেষ বর্ণটি যদি ক্, চ্, ট্, ত্ (ৎ), প্ হয় এবং পরপদের আদ্য বর্ণটি স্বরবর্ণ যুক্ত থাকে, তবে পূর্বপদের শেষ ক, চ, ট, ত (ৎ), প পরিবর্তিত হয়ে বর্গের তৃতীয় বর্ণে পরিণত হবে। একই সাথে পরপদের স্বরবর্ণটি পূর্বপদে যুক্ত হবে।
ব্যঞ্জন-স্বর-সন্ধি সূত্র : ১। পূর্বপদের শেষ বর্ণটি যদি ক্, চ্, ট্, ত্ (ৎ), প্ হয় এবং পরপদের আদ্য বর্ণটি স্বরবর্ণ যুক্ত থাকে, তবে পূর্বপদের শেষ ক, চ, ট, ত (ৎ), প পরিবর্তিত হয়ে বর্গের তৃতীয় বর্ণে পরিণত হবে। একই সাথে পরপদের স্বরবর্ণটি পূর্বপদে যুক্ত হবে।
ব্যাখ্যা : সূত্রানুসারে ক্, চ্, ট্, ত্ (ৎ), প্ বর্গের তৃতীয় বর্ণে পরিণত হবে। অর্থাৎ এই নিয়মে ক =গ, চ =জ, ট =ড়, ত (ৎ) =দ এবং প =ব হবে। অপর দিকে পরপদের স্বরবর্ণটি পূর্বপদে যুক্ত হবে। অর্থাৎ এই সূত্রে পরিবর্তনের রূপ হবে
ক +অ =গ, ক +আ=গা ইত্যাদি।
উদাহরণ : ক্ + অ =গ। দিক্ +অন্ত =দিগন্ত
চ্ + অ =জ। ণিচ্ +অন্ত =ণিজন্ত
ট্ + আ =ড়। ষট্ +আনন =ষড়ানন
ত্ + ঈ =দী। জগত্ +ঈশ্বর =জগদীশ্বর
প্ + অ =ব। সুপ্ + অন্ত =সুবন্ত।
ক +অ =গ, ক +আ=গা ইত্যাদি।
উদাহরণ : ক্ + অ =গ। দিক্ +অন্ত =দিগন্ত
চ্ + অ =জ। ণিচ্ +অন্ত =ণিজন্ত
ট্ + আ =ড়। ষট্ +আনন =ষড়ানন
ত্ + ঈ =দী। জগত্ +ঈশ্বর =জগদীশ্বর
প্ + অ =ব। সুপ্ + অন্ত =সুবন্ত।
ব্যতিক্রম : যাচ্ +অক=যাচক।
৩. ব্যঞ্জন-ব্যঞ্জন-সন্ধি সূত্র : ব্যঞ্জনবর্ণের সাথে ব্যঞ্জনবর্ণের মিলনের ফলে যে সন্ধির সৃষ্টি হয়। ব্যঞ্জনবর্ণের ব্যবহারিক প্রকৃতির বিচারে তিনটি বর্ণকে পরাশ্রায়ী বলা হয়। এই বর্ণ তিনটি হলো- ং, ঃ ও ঁ। এই তিনটি বর্ণের মধ্যে ‘ঃ’-এর ব্যবহার সন্ধিতে বিশেষভাবে লক্ষ্য করা যায়। এই কারণে- প্রচলিত বাংলা ব্যাকরণে বিসর্গ সন্ধিকে পৃথকভাবে উল্লেখ করা হয়। প্রচলিত ব্যাকরণের সাথে সমাঞ্জস্য রেখে আমরা ব্যঞ্জন-ব্যঞ্জন সন্ধিকে দুটি ধারায় ভাগ করতে পারি। ভাগ দুটি হলো-
৩.১. ব্যঞ্জন-ব্যঞ্জন (স্বাধীন) সন্ধি
৩.২ ব্যঞ্জন-ব্যঞ্জন (পরাশ্রয়ী) সন্ধি বা বিসর্গ সন্ধি।
৩.২ ব্যঞ্জন-ব্যঞ্জন (পরাশ্রয়ী) সন্ধি বা বিসর্গ সন্ধি।
নিচে উভয় সন্ধির নিয়মাবলিকে পর্যায়ক্রমে আলোচনা করা হলো।
৩.১. ব্যঞ্জন-ব্যঞ্জন (স্বাধীন) সন্ধি: পরাশ্রায়ী ব্যঞ্জনবর্ণ ছাড়া অন্যান্য সকল ব্যঞ্জন বর্ণ অন্য ব্যঞ্জনবর্ণের সাথে যুক্ত হলে, তা ব্যঞ্জন- ব্যঞ্জন (স্বাধীন) সন্ধি হবে। এক্ষেত্রে সন্ধির সূত্রগুলো হবে—
৩.১.১ । পূর্বপদের শেষ বর্ণটি ক্, চ্, ট্, ত্, প্ হয় এবং পরপদের আদ্যবর্ণ বর্গের তৃতীয় চতুর্থ বর্ণ বা অন্তঃস্থ বর্ণ হয়, তবে ক, চ, ট, ত, প বর্গের তৃতীয় বর্ণে পরিণত হবে। একই সাথে পরপদের স্বরবর্ণটি পূর্বপদে যুক্ত হবে।
ব্যাখ্যা : বর্গের (ক, চ, ট, ত, প) তৃতীয় ও চতুর্থ বর্ণগুলো হলো- যথাক্রমে গ, ঘ, জ, ঝ, ড, ঢ, দ, ধ, ব এবং ভ। পক্ষান্তরে অন্তঃস্থ বর্ণগুলো হলো- য (য়), র, ল ও অন্তঃস্থ ব। এই বর্ণগুলো যদি পরপদে থাকে এবং পূর্বপদের শেষ বর্ণ যদি ক্, চ্, ট্, ত্ এবং প হয়, তবে এই পাঁচটি বর্ণ যে রূপ লাভ করবে তা হলো- ক্=গ, চ্=জ, ট্ =ড (ড়), ত=দ এবং প=ব।
উদাহরণ : ক্ + গ =গ্গ দিক্ +গজ =দিগ্গজ
ক্ + জ =গ্জ বাক্ +জাল =বাগ্জাল
ক্ + দ =গ্দ বাক্ + দত্তা =বাগ্দত্তা
ক্ + ধ =গ্ধ স্রক্ + ধরা =স্রগ্ধরা
ক্ + ব =গ্ব দিক্ + বিজয় =দিগ্বজয়
ক্ + ভ =গ্ভ্র দিক্ + ভ্রম =দিগ্ভ্রম
ক্ + ল =গ্ল বাক্ + লোপ =বাগ্লোপ
ট্ +জ=ড়জ ষট্ +জ=ষড়জ
ট্ + দ =ড়্দ ষট্ + দর্শন =ষড়্দর্শন
ট্ + ধ =ড়্ধ ষট্ + ধা =ষড়্ধা
ট্ + ব =ড়্ব ষট্ + বর্গ =ষড়্বর্গ
ট্ + ভ =ড়্ভ ষট্ + ভুজ =ষড়্ভুজ
ত্ + গ =দ্গ উত্ + গত =উদ্গত
ত্ + ঘ =দ্ঘ উত্ +ঘাটন =উদ্ঘাটন
ত্ + জ =জ্জ উত্ +জীবিত =উজ্জীবিত
ত্ + ড =ড্ড উত্ +ডীন =উড্ডীন
ত্ + ধ =দ্ধ বৃহত্ +ধর্ম =বৃহদ্ধর্ম
ত্ + ব =দ্ব জগত্ +বন্ধু =জগদ্বন্ধু
ত্ + ভ =দ্ভ উত্ +ভব =উদ্ভব
ত্ + য =দ্য উত্ +যোগ =উদ্যোগ
ত্+ র =দ্র বৃহত্ +রথ =বৃহদ্রথ
দ্ + ঘ =দ্ঘ উদ্ +ঘাটন =উদ্ঘাটন
প্ + জ =ব্জ অপ্ + জ =অব্জ
প্ + ধ =ব্ধ অপ্ + ধি =অব্ধি
ক্ + জ =গ্জ বাক্ +জাল =বাগ্জাল
ক্ + দ =গ্দ বাক্ + দত্তা =বাগ্দত্তা
ক্ + ধ =গ্ধ স্রক্ + ধরা =স্রগ্ধরা
ক্ + ব =গ্ব দিক্ + বিজয় =দিগ্বজয়
ক্ + ভ =গ্ভ্র দিক্ + ভ্রম =দিগ্ভ্রম
ক্ + ল =গ্ল বাক্ + লোপ =বাগ্লোপ
ট্ +জ=ড়জ ষট্ +জ=ষড়জ
ট্ + দ =ড়্দ ষট্ + দর্শন =ষড়্দর্শন
ট্ + ধ =ড়্ধ ষট্ + ধা =ষড়্ধা
ট্ + ব =ড়্ব ষট্ + বর্গ =ষড়্বর্গ
ট্ + ভ =ড়্ভ ষট্ + ভুজ =ষড়্ভুজ
ত্ + গ =দ্গ উত্ + গত =উদ্গত
ত্ + ঘ =দ্ঘ উত্ +ঘাটন =উদ্ঘাটন
ত্ + জ =জ্জ উত্ +জীবিত =উজ্জীবিত
ত্ + ড =ড্ড উত্ +ডীন =উড্ডীন
ত্ + ধ =দ্ধ বৃহত্ +ধর্ম =বৃহদ্ধর্ম
ত্ + ব =দ্ব জগত্ +বন্ধু =জগদ্বন্ধু
ত্ + ভ =দ্ভ উত্ +ভব =উদ্ভব
ত্ + য =দ্য উত্ +যোগ =উদ্যোগ
ত্+ র =দ্র বৃহত্ +রথ =বৃহদ্রথ
দ্ + ঘ =দ্ঘ উদ্ +ঘাটন =উদ্ঘাটন
প্ + জ =ব্জ অপ্ + জ =অব্জ
প্ + ধ =ব্ধ অপ্ + ধি =অব্ধি
৩.১.২। পূর্বপদের শেষ বর্ণটি যদি ক্, চ্, ট্, ত্, প্ হয় এবং পরপদের আদ্যবর্ণ ন, ম হয় তা হলে পূর্বপদের ক্, চ্, ট্, ত্, প্ যথাক্রমে গ, জ, ড (ড়্), দ ও ব হয় কিম্বা বিকল্পে ঐ বর্গের নাসিক্য-বর্ণে পরিণত হয়।
ব্যাখ্যা : পূবপদের শেষ বর্ণ ক্, চ্, ট্, ত্, প্ হয়। যেমন : বাক্, বচ্ ইত্যাদি। পরপদের আদ্যবর্ণ ন, ম হয়। যেমন : নির্ণয়, মন্দির ইত্যাদি। এক্ষেত্রে সন্ধিজাত শব্দ তৈরিতে ক=গ, চ=জ, ট=ড (ড়), ত=দ এবং প=ব হবে। বিকল্পে ঐ বর্গের নাসিক্য-বর্ণে পরিণত হয়। যেমন ষট্ + মাস= ষড়্মাস বা বিকল্পে ষণ্মাস। এখানে ট্=ড় হয়েছে। পক্ষান্তরে ট-বর্গের নাসিক্য বর্ণ ণ যুক্ত হয়েছে।
উদাহারণ : ক্ +ন =গ্ বা ঙ্ দিক্ + নাগ=দিগ্নাগ বা দিঙ্নাগ।
ক্ +ম =ঙ। বাক্ + ময়=বাঙ্ময়।
চ্ +ন =ঞ্ যাচ্ + না=যাচঞা
ট্ +ন =ণ ষট্ +নবতি=ষণ্ণবতি
ট্ +ম =ড (ড়) বা ণ ষট্ + মাস= ষড়্মাস বা ষণ্মাস।
ত্ +ন =দ্ বা ন জগৎ + নাথ=জগদ্নাগ বা জগন্নাথ।
ত্ +ম =দ্ বা ন। তৎ + মধ্য=তদ্মধ্য বা তন্মধ্য।
প্ +ম =ম। অপ্ +ময় =অম্ময়।
ক্ +ম =ঙ। বাক্ + ময়=বাঙ্ময়।
চ্ +ন =ঞ্ যাচ্ + না=যাচঞা
ট্ +ন =ণ ষট্ +নবতি=ষণ্ণবতি
ট্ +ম =ড (ড়) বা ণ ষট্ + মাস= ষড়্মাস বা ষণ্মাস।
ত্ +ন =দ্ বা ন জগৎ + নাথ=জগদ্নাগ বা জগন্নাথ।
ত্ +ম =দ্ বা ন। তৎ + মধ্য=তদ্মধ্য বা তন্মধ্য।
প্ +ম =ম। অপ্ +ময় =অম্ময়।
৩.১.৩। পূর্বপদের শেষ বর্ণটি যদি চ-বর্গীয় হয় এবং পরপদের প্রথম বর্ণ ন হয়, তবে তা (ন) ঞ হয়।
উদাহরণ : চ্ +ন যাচ্ +না =যাচঞা
জ্ +ন রাজ্ +নী =রাজ্ঞী (জ্ঞ=জ্ঞ)
উদাহরণ : চ্ +ন যাচ্ +না =যাচঞা
জ্ +ন রাজ্ +নী =রাজ্ঞী (জ্ঞ=জ্ঞ)
৩.১.৪। পূর্বপদের শেষ বর্ণটি যদি ত্ বা দ্ হয় এবং পরপদের প্রথম বর্ণ ক, খ, চ, ছ, ট, ঠ, ত, থ, প, ফ এবং স থাকে, তবে দ ও ধ স্থানে ত্ হয়।
উদাহরণ : দ্ + ক =ত্ তদ্ + কাল =তৎকাল
দ্ + ত =ত্ তদ্ +ত্ব =তত্ত্ব
দ্ + প =ত্ তদ্ +পর =তৎপর
দ্ + ফ =ত্ তদ্ +ফল =তৎফল
দ্ + স =ত্ তদ্ +সম =তৎসম
ধ্ + ক =ত্ ক্ষুধ্ +কাতর =ক্ষুৎকাতর
ধ্ + প =ত্ ক্ষুধ্ +পিপাসা =ক্ষুৎপিপাসা
উদাহরণ : দ্ + ক =ত্ তদ্ + কাল =তৎকাল
দ্ + ত =ত্ তদ্ +ত্ব =তত্ত্ব
দ্ + প =ত্ তদ্ +পর =তৎপর
দ্ + ফ =ত্ তদ্ +ফল =তৎফল
দ্ + স =ত্ তদ্ +সম =তৎসম
ধ্ + ক =ত্ ক্ষুধ্ +কাতর =ক্ষুৎকাতর
ধ্ + প =ত্ ক্ষুধ্ +পিপাসা =ক্ষুৎপিপাসা
৩.১.৫। পূর্বপদের শেষ বর্ণটি যদি ৎ বা দ্ হয় এবং পরপদের প্রথম বর্ণ চ, ছ, জ, ঝ থাকে, তবে পূর্বপদের ত্ বা দ্ লোপ পাবে এবং পরপদের চ=চ্চ, ছ=চ্ছ, জ=জ্জ এবং ঝ=জ্ঝ হবে। একই সাথে পরপদের ব্যঞ্জনবর্ণের সাথে যুক্ত স্বরবর্ণটি পূর্বপদে যুক্ত হবে।
ব্যাখ্যা : পূর্বদের শেষ বর্ণটি খাঁটি ব্যঞ্জন ধ্বনি হলে তার সাথে হসন্ত যুক্ত হবে। যেমন- যেমন- সৎ, বিপদ্ ইত্যাদি। পক্ষান্তরে পরপদের ব্যঞ্জনবর্ণের সাথে যুক্ত স্বরবর্ণটি পূর্বপদে যুক্ত হবে। যেমন- পরপদের শব্দের শব্দটি যদি চিত্র হয়, তা হলে- এর আদ্য চি ধ্বনিটি হবে চ্ + ই। এক্ষেত্রে সন্ধিজাত চ্চ, চ্ছ, জ্জ, জ্ঝ-এর সাথে পরপদের ব্যঞ্জনবর্ণের সাথে যুক্ত স্বরবর্ণটি যুক্ত হবে।
উদাহরণ : ৎ + চ =চ্চ চলৎ + চিত্র =চলচ্চিত্র
ৎ + ছ =চ্ছ উৎ + ছেদ =উচ্ছেদ
ৎ + জ =জ্জ যাবৎ +জীবন =যাবজ্জীবন
ৎ + ঝ =জ্ঝ কুৎ +ঝটিকা =কুজ্ঝটিকা
দ + চ =চ্চ তদ্ +চিন্তা =তচ্চিন্তা
দ + ছ =চ্ছ তদ্ +ছবি =তচ্ছবি
দ + জ =জ্জ তদ্ +জন্য =তজ্জন্য
দ + ঝ =জ্ঝ বিপদ +ঝঞ্ঝা =বিপজ্ঝঞ্ঝা।
উদাহরণ : ৎ + চ =চ্চ চলৎ + চিত্র =চলচ্চিত্র
ৎ + ছ =চ্ছ উৎ + ছেদ =উচ্ছেদ
ৎ + জ =জ্জ যাবৎ +জীবন =যাবজ্জীবন
ৎ + ঝ =জ্ঝ কুৎ +ঝটিকা =কুজ্ঝটিকা
দ + চ =চ্চ তদ্ +চিন্তা =তচ্চিন্তা
দ + ছ =চ্ছ তদ্ +ছবি =তচ্ছবি
দ + জ =জ্জ তদ্ +জন্য =তজ্জন্য
দ + ঝ =জ্ঝ বিপদ +ঝঞ্ঝা =বিপজ্ঝঞ্ঝা।
৩.১.৬। পূর্বপদের শেষ বর্ণটি যদি ৎ বা দ্ হয় এবং পরপদের প্রথম বর্ণ ট, ড, ঢ থাকে, তবে পূর্বপদের ত্ বা দ্ লোপ পাবে এবং পরপদের ট=ট্ট, ড=ডড, ঢ=ড্ঢ হবে। একই সাথে পরপদের ব্যঞ্জনবর্ণের সাথে যুক্ত স্বরবর্ণটি পূর্বপদে যুক্ত হবে।
উদাহরণ : ৎ + ট =ট্ট তৎ + টীকা =তট্টীকা
ৎ + ড =ড্দ উৎ + ডীন =উড্ডীন
ৎ + ঢ =ড্ঢ। বৃহৎ +ঢা =বৃহড্ঢা
দ + ট =ট্ট তদ্ + টীকা =তট্টীকা
দ্ + ঢ =ড্ঢ এতদ্ +ঢা =এতড্ঢা
উদাহরণ : ৎ + ট =ট্ট তৎ + টীকা =তট্টীকা
ৎ + ড =ড্দ উৎ + ডীন =উড্ডীন
ৎ + ঢ =ড্ঢ। বৃহৎ +ঢা =বৃহড্ঢা
দ + ট =ট্ট তদ্ + টীকা =তট্টীকা
দ্ + ঢ =ড্ঢ এতদ্ +ঢা =এতড্ঢা
৩.১.৭। পূর্বপদের শেষ বর্ণটি যদি ৎ, দ্, ধ্ হয় এবং পরপদের ন বা ম থাকলে, ৎ বা দ্ এর স্থানে ন হয়।
উদাহরণ : ৎ +ন =ন উৎ + নতি =উন্নতি
ত্ +ম =ন মৃৎ + নয় =মৃন্ময়
দ্ +ন =ন তদ্ + নিমিত্ত =তন্নিমিত্ত
দ্ +ম =ন তদ্ + ময় =তন্ময়
ধ্ +ন =ন ক্ষুধ্ +নিবৃত্তি =ক্ষুণ্ণিবৃত্তি
উদাহরণ : ৎ +ন =ন উৎ + নতি =উন্নতি
ত্ +ম =ন মৃৎ + নয় =মৃন্ময়
দ্ +ন =ন তদ্ + নিমিত্ত =তন্নিমিত্ত
দ্ +ম =ন তদ্ + ময় =তন্ময়
ধ্ +ন =ন ক্ষুধ্ +নিবৃত্তি =ক্ষুণ্ণিবৃত্তি
৩.১.৮। পূর্বপদের শেষ বর্ণটি যদি ৎ বা দ্ হয় এবং পরপদের প্রথম বর্ণ শ থাকে. তবে শ স্থানে চ্ছ হয়।
উদাহরণ : ৎ + শ =চ্ছ উৎ +শ্বাস =উচ্ছ্বাস
দ্ + শ =চ্ছ তদ্ +শক্তি =তচ্ছক্তি
উদাহরণ : ৎ + শ =চ্ছ উৎ +শ্বাস =উচ্ছ্বাস
দ্ + শ =চ্ছ তদ্ +শক্তি =তচ্ছক্তি
৩.১.৯। পূর্বপদের শেষ বর্ণটি যদি ৎ হয় এবং পরপদের প্রথম বর্ণ হ হয়, তবে পূর্বপদের ৎ =দ্ এবং পরপদের হ =ধ হবে।
উদাহরণ : ৎ +হ =দ্ধ>দ্ধ উৎ +হার =উদ্ধার
দ্ +হ =দ্ধ>দ্ধ পদ্ +হতি =পদ্ধতি
উদাহরণ : ৎ +হ =দ্ধ>দ্ধ উৎ +হার =উদ্ধার
দ্ +হ =দ্ধ>দ্ধ পদ্ +হতি =পদ্ধতি
৩.১.১০। পূর্বপদের শেষ বর্ণটি যদি ৎ বা দ্ হয় এবং পরপদের প্রথম বর্ণ ল হয়, তবে উক্ত ল-দ্বিত্ব বর্ণে পরিণত হয়।।
উদাহরণ : ৎ +ল =ল্ল উৎ +লেখ =উল্লেখ
দ্ +ল =ল্ল তদ্ +লোক =তল্লোক
৩.১.১১। পূর্বপদের শেষ বর্ণটি যদি ধ্, ভ্ ও হ্ হয় এবং পরপদের প্রথম বর্ণ ত হয়, তবে পূর্বপদের ত+ধ =দ্ধ, ভ্ +ত=দ্ধ এবং হ্ +ধ=গ্ধ হবে।
উদাহরণ : ৎ +ল =ল্ল উৎ +লেখ =উল্লেখ
দ্ +ল =ল্ল তদ্ +লোক =তল্লোক
৩.১.১১। পূর্বপদের শেষ বর্ণটি যদি ধ্, ভ্ ও হ্ হয় এবং পরপদের প্রথম বর্ণ ত হয়, তবে পূর্বপদের ত+ধ =দ্ধ, ভ্ +ত=দ্ধ এবং হ্ +ধ=গ্ধ হবে।
উদাহরণ : ধ্ +ত =দ্ধ বুধ্ +ত =বুদ্ধ
ভ্ +ত =দ্ধ লভ্ +ত =লব্ধ
হ্ +ত =গ্ধ দুহ্ +ত =দুগ্ধ
ভ্ +ত =দ্ধ লভ্ +ত =লব্ধ
হ্ +ত =গ্ধ দুহ্ +ত =দুগ্ধ
৩.১.১২। পূর্বপদের শেষ বর্ণটি যদি ম্ হয় এবং পরপদের প্রথম বর্ণ ক, খ, গ, ঘ, য, র, ল, ব, শ, স এবং হ হয়, তবে পূর্বপদের ম ধ্বনি ং বা ঙ-তে পরিণত হয়।
উদাহরণ : ম্ +ক=ঙ্ক অহম্ +কার =অহঙ্কার
ম্ +খ =ঙ্খ সম্ +খ্য =সংখ্যা
ম্ +গ =ঙ্গ ম্ +গীত =সঙ্গীত
ম্ +ঘ =ঙ্ঘ সম্ +ঘ =সঙ্ঘ
ম্ +ব =ম্ব কিম্ +বা =কিংবা
ম্ +য =ংয সম্ +যত =সংযত
ম্ +র =ংর সম্ +রাগ =সংরাগ
ম্ +ল =ংল সম্ +লাপ =সংলাপ
ম্ +শ =ংশ সম্ +শোধন =সংশোধন
ম্ +স =ংস সম্ + সার =সংসার
ম্ +হ =ংহ সম্ +হার =সংসার
উদাহরণ : ম্ +ক=ঙ্ক অহম্ +কার =অহঙ্কার
ম্ +খ =ঙ্খ সম্ +খ্য =সংখ্যা
ম্ +গ =ঙ্গ ম্ +গীত =সঙ্গীত
ম্ +ঘ =ঙ্ঘ সম্ +ঘ =সঙ্ঘ
ম্ +ব =ম্ব কিম্ +বা =কিংবা
ম্ +য =ংয সম্ +যত =সংযত
ম্ +র =ংর সম্ +রাগ =সংরাগ
ম্ +ল =ংল সম্ +লাপ =সংলাপ
ম্ +শ =ংশ সম্ +শোধন =সংশোধন
ম্ +স =ংস সম্ + সার =সংসার
ম্ +হ =ংহ সম্ +হার =সংসার
৩.১.১৩। পূর্বপদের শেষ বর্ণটি যদি ম্ হয় এবং পরপদের প্রথম বর্ণ চ, ট, ত প-বর্গের হয়, তবে সন্ধির ফলে বর্গের পঞ্চম বর্ণ হবে।
ব্যাখ্যা : পরিচর্তনের ফলে (চ, ছ, জ, ঝ, ঞ)=ঞ,(ট, ঠ, ড, ঢ, ণ)=ণ, (ত, থ, দ, ধ, ন) =ন এবং (প, ফ, ব, ভ, ম)=ম হবে।
উদাহরণ : ম্ +চ =ঞচ্>ঞ্চ সম্ +চয় =সঞ্চয়।
ম্ +জ =ঞ্জ>ঞ্জ সম্ +জয় =সঞ্জয়।
ম্ +ত =ন্ত গম্ +তব্য =গন্তব্য।
ম্ +ধ =ন্ধ সম্ +ধান =সন্ধান।
ম্ +ন =ন্ন কিম্ +নর =কিন্নর।
ম্ +প =ম্প সম্ +পূর্ণ =সম্পূর্ণ
ম্ +ব =ম্ব সম্ +বোধন =সম্বোধন।
ম্ +ভ =ম্ভ কিম্ +ভূত =কিম্ভূত
ম্ +ম্ =ম্ম সম্ +মান =সম্মান
উদাহরণ : ম্ +চ =ঞচ্>ঞ্চ সম্ +চয় =সঞ্চয়।
ম্ +জ =ঞ্জ>ঞ্জ সম্ +জয় =সঞ্জয়।
ম্ +ত =ন্ত গম্ +তব্য =গন্তব্য।
ম্ +ধ =ন্ধ সম্ +ধান =সন্ধান।
ম্ +ন =ন্ন কিম্ +নর =কিন্নর।
ম্ +প =ম্প সম্ +পূর্ণ =সম্পূর্ণ
ম্ +ব =ম্ব সম্ +বোধন =সম্বোধন।
ম্ +ভ =ম্ভ কিম্ +ভূত =কিম্ভূত
ম্ +ম্ =ম্ম সম্ +মান =সম্মান
৩.১.১৪। পূর্বপদের শেষ বর্ণটি যদি ষ হয় এবং পরপদের প্রথম বর্ণ ত বা থ থাকলে, ত=ট, থ=ঠ হয়।
উদাহরণ : ষ্ +ত =ট বৃষ্ + তি =বৃষ্টি
ষ্ +থ =ঠ ষষ্ + থ =ষষ্ঠ
উদাহরণ : ষ্ +ত =ট বৃষ্ + তি =বৃষ্টি
ষ্ +থ =ঠ ষষ্ + থ =ষষ্ঠ
৩.১.১৫। উৎ-উপসর্গের স্থা ধাতু যোগে যে সন্ধি হয়, তার প্রথম ধ্বনি (স) লোপ পায়।
উদাহরণ : উৎ +স্থা=স্থা উৎ +স্থান =উত্থান
উত্ +স্থি=ত্থি উৎ +স্থিত =উত্থিত
উদাহরণ : উৎ +স্থা=স্থা উৎ +স্থান =উত্থান
উত্ +স্থি=ত্থি উৎ +স্থিত =উত্থিত
৩.১.১৬। সম্ উপসর্গের পরে কৃ-ধাতু যুক্ত হলে, ধাতুর আগে স যুক্ত হয়। যেমন-
সম্ +কার =সংস্কার।
সম্ +কার =সংস্কার।
কিন্তু পরি উপসর্গের পরে ষত্ব বিধানের নিয়মে স>ষ হয়। যেমন-
পরি +কার =পরিস্কার>পরিষ্কার।
পরি +কার =পরিস্কার>পরিষ্কার।
৩.২। বিসর্গ সন্ধি
পদের অন্তস্থিত র্ ও স (ষ) স্থানে বিসর্গ হয়। র-স্থানের বিসর্গকে র-জাত বিসর্গ বলে। আর স-স্থানের বিসর্গকে স-জাত বিসর্গ বলে। বাংলায় এই ধ্বনিগুলি উচ্চারিত হয় না। যে সন্ধিতে এই ধ্বনির আবির্ভাব হয়, তাকেই বিসর্গ সন্ধি বলে। নিচে বিসর্গ সন্ধির নিয়মাবলী দেওয়া হলো।
পদের অন্তস্থিত র্ ও স (ষ) স্থানে বিসর্গ হয়। র-স্থানের বিসর্গকে র-জাত বিসর্গ বলে। আর স-স্থানের বিসর্গকে স-জাত বিসর্গ বলে। বাংলায় এই ধ্বনিগুলি উচ্চারিত হয় না। যে সন্ধিতে এই ধ্বনির আবির্ভাব হয়, তাকেই বিসর্গ সন্ধি বলে। নিচে বিসর্গ সন্ধির নিয়মাবলী দেওয়া হলো।
৩.২.১। পূর্ব পদের অঃ থাকলে এবং পর পদে বর্গের তৃতীয়, চতুর্থ ও পঞ্চম বর্ণ কিংবা য, র, ল, ব, হ পরে থাকলে, এবং উভয় মিলে ও-কার হয় এবং উক্ত ও-কার পূর্ব পদে যুক্ত হয়।
উদাহরণ : অঃ +গ =ও মনঃ +গত =মনোগত
অঃ +জ =ও সদ্যঃ +জাত =সদ্যোজাত
অঃ +দ =ও ত্রয়ঃ +দশ =ত্রয়োদশ
অঃ +ধ =ও তিরঃ +ধান =তিরোধান
অঃ +ন =ও মনঃ +নয়ন =মনোনয়ন
অঃ +ব =ও সরঃ +বর =সরোবর
অঃ +ভ =ও মনঃ +ভাব =মনোভাব
অঃ +ম =ও অধঃ +মুখ =অধোমুখ।
অঃ +য =ও মনঃ +যোগ =মনোযোগ
অঃ +র =ও মনঃ +রম =মনোরম।
অঃ +ল =ও যশঃ +লাভ =যশোলাভ
অঃ +হ =ও পুরঃ +হিত =পুরোহিত
অঃ +জ =ও সদ্যঃ +জাত =সদ্যোজাত
অঃ +দ =ও ত্রয়ঃ +দশ =ত্রয়োদশ
অঃ +ধ =ও তিরঃ +ধান =তিরোধান
অঃ +ন =ও মনঃ +নয়ন =মনোনয়ন
অঃ +ব =ও সরঃ +বর =সরোবর
অঃ +ভ =ও মনঃ +ভাব =মনোভাব
অঃ +ম =ও অধঃ +মুখ =অধোমুখ।
অঃ +য =ও মনঃ +যোগ =মনোযোগ
অঃ +র =ও মনঃ +রম =মনোরম।
অঃ +ল =ও যশঃ +লাভ =যশোলাভ
অঃ +হ =ও পুরঃ +হিত =পুরোহিত
৩.২.২। পূর্ব পদের বিসর্গের পূর্বে অ থাকলে এবং পর পদের অ ব্যতীত অন্য স্বরবর্ণ থাকলে ঃ লোপ পায় এবং সন্ধি না হয়ে, পূর্বপদ ও পরপদ পাশাপাশি বসে।
উদাহরণ : অঃ +আ =অআ মনঃ +আশা =মন-আশা
অঃ +ই =অই যশঃ +ইচ্ছা =যশ-ইচ্ছা
অঃ +উ =অউ সদ্যঃ +উল্লিখিত =সদ্য-উল্লিখিত
অঃ +এ =অএ অতঃ +এব =অতএব
উদাহরণ : অঃ +আ =অআ মনঃ +আশা =মন-আশা
অঃ +ই =অই যশঃ +ইচ্ছা =যশ-ইচ্ছা
অঃ +উ =অউ সদ্যঃ +উল্লিখিত =সদ্য-উল্লিখিত
অঃ +এ =অএ অতঃ +এব =অতএব
৩.২.৩। পূর্ব পদের বিসর্গের পূর্বে ই বা উ থাকলে এবং পর পদের প্রথম বর্ণ র হলে, পূর্বপদের ই=ঈ বা উ=ঈ হয় এবং পরপদের র অপরিবর্তিত থাকে।
উদাহরণ : ইঃ + র =ঈর নিঃ +রব =নীরব।
উঃ + র =ঊর চক্ষুঃ +রোগ =চক্ষূরোগ
উদাহরণ : ইঃ + র =ঈর নিঃ +রব =নীরব।
উঃ + র =ঊর চক্ষুঃ +রোগ =চক্ষূরোগ
৩.২.৪। পূর্ব পদের শেষে বিসর্গ থাকলে এবং পরপদে বর্গের স্বরবর্ণ থাকলে, পরপদে র্ যুক্ত হয় এবং তা পরপদের আদ্যবর্ণের সাথে যুক্ত স্বরবর্ণ প্রকাশিত হয়।
উদাহরণ : ঃ + অ =র্অ>র নিঃ +অবধি =নিরবধি।
ঃ + আ =র্আ>রা নিঃ +আকার =নিরাকার।
ঃ + ই =র্ই>রি জ্যোতিঃ +ইন্দ্র =জ্যোতিরিন্দ্র
ঃ + ঈ =র্ঈ>রী অন্তঃ + ঈক্ষ =অন্তরীক্ষ
ঃ + উ =র্উ>রু চক্ষুঃ +উন্মীলন>চক্ষুরুন্মীলন
ঃ + ঊ =র্ঊ>রূ দুঃ + উহ =দুরূহ
উদাহরণ : ঃ + অ =র্অ>র নিঃ +অবধি =নিরবধি।
ঃ + আ =র্আ>রা নিঃ +আকার =নিরাকার।
ঃ + ই =র্ই>রি জ্যোতিঃ +ইন্দ্র =জ্যোতিরিন্দ্র
ঃ + ঈ =র্ঈ>রী অন্তঃ + ঈক্ষ =অন্তরীক্ষ
ঃ + উ =র্উ>রু চক্ষুঃ +উন্মীলন>চক্ষুরুন্মীলন
ঃ + ঊ =র্ঊ>রূ দুঃ + উহ =দুরূহ
৩.২.৫। পূর্ব পদের শেষে বিসর্গ থাকলে এবং পরপদে বর্গের স্বরবর্ণ, তৃতীয়, চতুর্থ ও পঞ্চম বর্ণ কিংবা য, র, ল, ব, হ পর থাকলে অ-কারের পরস্থিত র-জাত বিসর্গের স্থানে র্ হয় এবং তা পরপদের আদ্যবর্ণের সাথে যুক্ত হয়।
উদাহরণ : ঃ + অ =র্অ>র নিঃ +অবধি =নিরবধি।
ঃ + আ =র্আ>রা নিঃ +আকার =নিরাকার।
ঃ + ই =র্ই>রি জ্যোতিঃ +ইন্দ্র = জ্যোতিরিন্দ্র
ঃ + উ =র্উ>রু চক্ষুঃ +উন্মীলন>চক্ষুরুন্মীলন
ঃ + গ =র্গ নিঃ +গত =নির্গত।
ঃ + ঘ =র্ঘ দুঃ +ঘটনা =দুর্ঘটনা।
ঃ+ জ =র্জ দুঃ +জন =দুর্জন।
ঃ + ঝ =র্ঝ নিঃ +ঝর =নিঃর্ঝর
ঃ + দ =র্দ নিঃ +দিষ্ট =দুর্জন।
ঃ + ধ =র্ধ অন্তঃ +ধান =অন্তর্ধান।
ঃ + ন =র্ন>র্ণ নিঃ +নয় =নির্ণয়
ঃ + ব =র্ব দুঃ +বহ =দুর্বহ।
ঃ + ভ =র্ভ দুঃ +ভাগ্য =দুর্ভাগ্য
ঃ + ম =র্ম নিঃ +মান =নির্মাণ
ঃ + য =র্য নিঃ +যাতন =নির্যাতন
ঃ + ল =র্ল নিঃ +লজ্জ =নির্লজ্জ
ঃ + হ =র্হ অন্তঃ +হিত =অন্তর্হিত
উদাহরণ : ঃ + অ =র্অ>র নিঃ +অবধি =নিরবধি।
ঃ + আ =র্আ>রা নিঃ +আকার =নিরাকার।
ঃ + ই =র্ই>রি জ্যোতিঃ +ইন্দ্র = জ্যোতিরিন্দ্র
ঃ + উ =র্উ>রু চক্ষুঃ +উন্মীলন>চক্ষুরুন্মীলন
ঃ + গ =র্গ নিঃ +গত =নির্গত।
ঃ + ঘ =র্ঘ দুঃ +ঘটনা =দুর্ঘটনা।
ঃ+ জ =র্জ দুঃ +জন =দুর্জন।
ঃ + ঝ =র্ঝ নিঃ +ঝর =নিঃর্ঝর
ঃ + দ =র্দ নিঃ +দিষ্ট =দুর্জন।
ঃ + ধ =র্ধ অন্তঃ +ধান =অন্তর্ধান।
ঃ + ন =র্ন>র্ণ নিঃ +নয় =নির্ণয়
ঃ + ব =র্ব দুঃ +বহ =দুর্বহ।
ঃ + ভ =র্ভ দুঃ +ভাগ্য =দুর্ভাগ্য
ঃ + ম =র্ম নিঃ +মান =নির্মাণ
ঃ + য =র্য নিঃ +যাতন =নির্যাতন
ঃ + ল =র্ল নিঃ +লজ্জ =নির্লজ্জ
ঃ + হ =র্হ অন্তঃ +হিত =অন্তর্হিত
৩.২.৬। পূর্বপদে বিসর্গ থাকলে এবং পরপদে চ ও ছ থাকলে পূর্বপদের বিসর্গ শ হয়।
উদাহরণ : ঃ + চ =শ নিঃ +চয় = নিশ্চয়
ঃ + ছ =শ শিরঃ + ছেদ = শিরোশ্ছেদ
উদাহরণ : ঃ + চ =শ নিঃ +চয় = নিশ্চয়
ঃ + ছ =শ শিরঃ + ছেদ = শিরোশ্ছেদ
৩.২.৭। পূর্বপদে বিসর্গ থাকলে এবং পরপদে ট ও ঠ থাকলে পূর্বপদের বিসর্গ ষ হয়। এবং পরপদের ট বা ঠ উক্ত ষ-এর সাথে যুক্ত বর্ণ তৈরি করে।
উদাহরণ : ঃ + ট =ষ্ট চতুঃ +টয় = চতুষ্টয়
ঃ + ঠ =ষ্ঠ নিঃ +ঠুর = নিষ্ঠুর
উদাহরণ : ঃ + ট =ষ্ট চতুঃ +টয় = চতুষ্টয়
ঃ + ঠ =ষ্ঠ নিঃ +ঠুর = নিষ্ঠুর
৩.২.৮। পূর্বপদে ই বা উ যুক্ত বিসর্গ থাকলে এবং পরপদের প্রথম বর্ণ ক, খ, প, ফ পরে থাকলে, বিসর্গ ষ-তে পরিণত হয়।
উদাহরণ : ইঃ + ক =ষ্ক আবিঃ +কার =আবিষ্কার
ইঃ + প =ষ্প নিঃ +পত্তি =নিষ্পত্তি
ইঃ + ফ =ষ্ফ নিঃ +ফল =নিষ্ফল
উঃ + ক =ষ্ক দুঃ +কৃতি =দুষ্কৃতি
উঃ + প =ষ্প চতুঃ +পদ =চতুষ্পদ
উদাহরণ : ইঃ + ক =ষ্ক আবিঃ +কার =আবিষ্কার
ইঃ + প =ষ্প নিঃ +পত্তি =নিষ্পত্তি
ইঃ + ফ =ষ্ফ নিঃ +ফল =নিষ্ফল
উঃ + ক =ষ্ক দুঃ +কৃতি =দুষ্কৃতি
উঃ + প =ষ্প চতুঃ +পদ =চতুষ্পদ
৩.২.৯। পূর্বপদে অ বা আ যুক্ত বিসর্গ থাকলে এবং পরপদের প্রথম বর্ণ ক, খ, প, ফ পরে থাকলে, বিসর্গ স-তে পরিণত হয়।
উদাহরণ : অঃ +ক =স্ক পুরঃ + কার =পুরস্কার
অঃ +প =স্প বাচঃ +পতি =বাচস্পতি
আঃ +ক =স্ক ভাঃ + কর =ভাস্কর
উদাহরণ : অঃ +ক =স্ক পুরঃ + কার =পুরস্কার
অঃ +প =স্প বাচঃ +পতি =বাচস্পতি
আঃ +ক =স্ক ভাঃ + কর =ভাস্কর
৩.২.১০। পূর্বপদে বিসর্গ থাকলে এবং পরপদের প্রথম বর্ণ ক, ক্ষ, খ, প, ফ, র, শ, স থাকলে বিসর্গ লোপ পায় না।
উদাহরণ : ঃ + ক =ঃক অন্তঃ +করণ =অন্তঃকরণ
ঃ + খ =ঃখ দুঃ + খ =দুঃখ
ঃ + প =ঃপ অধঃ +পাত =অধঃপাত
ঃ + র =ঃর অন্তঃ +রাষ্ট্রীয় =অন্তঃরাষ্ট্রীয়
ঃ + শ =ঃশ দুঃ +শাসন =দুঃশাসন
ঃ + স =ঃস নিঃ +সন্দেহ =নিঃসন্দেহ
উদাহরণ : ঃ + ক =ঃক অন্তঃ +করণ =অন্তঃকরণ
ঃ + খ =ঃখ দুঃ + খ =দুঃখ
ঃ + প =ঃপ অধঃ +পাত =অধঃপাত
ঃ + র =ঃর অন্তঃ +রাষ্ট্রীয় =অন্তঃরাষ্ট্রীয়
ঃ + শ =ঃশ দুঃ +শাসন =দুঃশাসন
ঃ + স =ঃস নিঃ +সন্দেহ =নিঃসন্দেহ
৩.৩.১১। পূর্বপদের শেষে বিসর্গ থাকলে এবং পরপদে স্ত, স্থ, স্প থাকলে বিসর্গের লোপ হয়।
উদাহরণ : ঃ +স্ত =স্ত নিঃ +স্তব্ধ =নিঃস্তব্ধ
ঃ +স্থ =স্থ অন্তঃ +স্থ =অন্তঃস্থ
ঃ +স্প =স্প নিঃ+স্পন্দ =নিঃস্পন্দ
উদাহরণ : ঃ +স্ত =স্ত নিঃ +স্তব্ধ =নিঃস্তব্ধ
ঃ +স্থ =স্থ অন্তঃ +স্থ =অন্তঃস্থ
ঃ +স্প =স্প নিঃ+স্পন্দ =নিঃস্পন্দ
নিপাতনে সিদ্ধ সন্ধি : আ +চর্য =আশ্চর্য আ +পদ =আস্পদ
অহঃ +কর =অহঙ্কর অহঃ +পতি =অহস্পতি>অহর্পতি
অহঃ +রাত্র =অহোরাত্রি অহন্ +অহন্ =অহরহঃ
অহন্ +নিশি =অহর্নিশি গীঃ +গীত =গীস্পতি
গো +পদ =গোস্পদ তদ্ +কর =তস্কর
দিব্ +লোক =দ্যূলোক পতত্ +অঞ্জলি =পতঞ্জলি
পশ্চাত্ +অর্ধ =পশ্চার্থ পুংস্ +জাতি =পুংজাতি
পুংস্ +লিঙ্গ =পুংলিঙ্গ বন +পতি =বনস্পতি
বৃহত্ +পতি =বৃহস্পতি ষট্ +দশ =ষোড়শ
হরি +চন্দ্র =হরিশ্চন্দ্র
অহঃ +কর =অহঙ্কর অহঃ +পতি =অহস্পতি>অহর্পতি
অহঃ +রাত্র =অহোরাত্রি অহন্ +অহন্ =অহরহঃ
অহন্ +নিশি =অহর্নিশি গীঃ +গীত =গীস্পতি
গো +পদ =গোস্পদ তদ্ +কর =তস্কর
দিব্ +লোক =দ্যূলোক পতত্ +অঞ্জলি =পতঞ্জলি
পশ্চাত্ +অর্ধ =পশ্চার্থ পুংস্ +জাতি =পুংজাতি
পুংস্ +লিঙ্গ =পুংলিঙ্গ বন +পতি =বনস্পতি
বৃহত্ +পতি =বৃহস্পতি ষট্ +দশ =ষোড়শ
হরি +চন্দ্র =হরিশ্চন্দ্র
অনুসর্গ
ব্যাকরণে বর্ণিত অব্যয় পদের একটি বিভাগ বিশেষ। এই জাতীয় অব্যয় অন্য পদের পরে পৃথকভাবে বসে পদটিকে বাক্যের অন্যান্য অংশের সাথে সম্পর্কিত করে বা বিভক্তির ন্যায় আচরণ করে। এদের অন্যান্য নাম পরসর্গ, কর্মপ্রবচনীয় (post position)।
প্রকারভেদ
অনুসর্গ কোন পদের পরে বসে বাক্যের সাথে ওই পদকে সম্পর্কিত করতে পারে, তার প্রকৃতি বিচার করে ৩টি ভাগে ভাগ করা যেতে পারে।
১. বিশেষ্য অনুসর্গ : এই জাতীয় বিশেষ্য পদের পরে বসে। যেমন–
- প্রাণের চেয়ে প্রিয়
- ছাদের উপর খোলা আকাশ
২. সর্বনাম উপসর্গ : এই জাতীয় সর্বনাম পদের পরে বসে। যেমন–
- আমার চেয়ে সে বড়।
- ওর কাছে বইটি আছে।
৩. বিশেষণ উপসর্গ : এই জাতীয় বিশেষণ পদের পরে বসে। যেমন–
- মন্দের চেয়ে একটু ভালো
- খারাপের চেয়ে খারাপ
উৎস ও উৎপন্নের বিচারে অনুসর্গ
উৎসের বিচারে অনুসর্গ তিন প্রকার।
১. সংস্কৃত উপসর্গ : সংস্কৃত শব্দ সরাসরি বসেছে এমন উপসর্গ। যেমন–
- অপেক্ষা, অভিমুখে, উপরে, কর্তৃক, ইত্যাদি।
২. সংস্কৃত-বিবর্তিত : সংস্কৃত শব্দের ক্রমবিবর্তনের মধ্য আগত কোন শব্দ যখন অনুসর্গ হিসাবে ব্যবহৃত হয়। যেমন–
- সংস্কৃত অগ্রে>প্রাকৃত অগ্গে>বাংলা আগে।
এরূপ অন্যান্য অনুসর্গ হতে পারে কাছে, ছাড়া, পাশে
৩. বিদেশী অনুসর্গ : বাংলা, সংস্কৃত, সংস্কৃত থেকে ক্রমবিবর্তিত অপরাপর শব্দ যা অনুসর্গ হিসাবে ব্যবহৃত হয়। যেমন–
- ফারসি : দরুন, বদলে,বনাম।
উৎপন্নের বিচারে অনুসর্গ দুই প্রকার।
১. নামজাত অনুসর্গ : ক্রিয়ামূল থেকে উৎপন্ন অনুসর্গ ছাড়া অন্যান্য অনুসর্গের সাধারণ পরিচয় দেওয়া হয় নামজাত অনুসর্গ বলা হয়। যেমন-
- উপরে, অপেক্ষা ইত্যাদি।
২. ক্রিয়াজাত অনুসর্গ : কোনো ক্রিয়ামূলের সাথে থেকে উৎপন্ন এমন কিছু শব্দ, যেগুলো অনুসর্গ হিসাবে ব্যবহৃত হয়। যেমন–
√কর্+ইয়া=করিয়া>করে বা ক’রে। [ভালো করে কাজ করো]
√কর্+ইয়া=করিয়া>করে বা ক’রে। [ভালো করে কাজ করো]
বিভক্তির সংযুক্তির বিচারে অনুসর্গ
অনুসর্গের সাথে বিভক্তি আছে কি নেই তার উপর ভিত্তি করে, অনুসর্গকে দুই ভাগে ভাগ করা যায়। যেমন–
১. বিভক্তিহীন অনুসর্গ : এই সকল অনুসর্গের সাথে কোনো বিভক্তি থাকে না বা বিভক্তি যুক্ত করা যায় না। যেমন–
- দ্বারা, কর্তৃক, নাগাদ ইত্যাদি।
২. বিভক্তিযুক্ত অনুসর্গ : এই সকল অনুসর্গের সাথে বিভক্তি যুক্ত থাকে।
নামজাত অনুসর্গে ‘এ’ বিভক্তি যুক্ত থাকে। যেমন–
- আগ>আগে, উপর>উপরে, কারণ>কারণে
ক্রিয়ামূলজাত অনুসর্গে ‘ইয়া’ বিভক্তযুক্ত হয়ে অনুসর্গ তৈরি হয়। যা সাধু রূপে ব্যবহৃত হয়। চলিত রূপে এর সংক্ষিপ্ত রূপ ব্যবহৃত হয়। যেমন–
- √কর্+ইয়া=করিয়া>করে বা ক’রে।
- √ধর্+ইয়া=ধরিয়া>ধরে বা ধ’রে।
উক্তি
কারো বক্তব্য বা কথাকেই উক্তি বলে। কোন বক্তা বা কথকের বাককর্ম বা কথাকেই বলা হয় উক্তি।
প্রকারভেদ
উক্তি ২ প্রকার- প্রত্যক্ষ উক্তি ও পরোক্ষ উক্তি।
প্রত্যক্ষ উক্তি
যে বাক্যে বক্তার কথা অবিকল উদ্ধৃত হয়, তাকে প্রত্যক্ষ উক্তি বলে। প্রত্যক্ষ উক্তিতে বক্তার কথা উদ্ধরণ চিহ্ন (‘ ’/“ ”)-এর মধ্যে থাকে এবং বক্তার কথা উদ্ধৃত করার আগে কমা (,) ব্যবহার করা হয়। এগুলো দেখে সহজেই প্রত্যক্ষ উক্তি চেনা যায়।
পরোক্ষ উক্তি
যে বাক্যে বক্তার কথা অন্যের জবানীতে পরিবর্তিত/রূপান্তরিত ভাবে প্রকাশিত হয়, তাকে পরোক্ষ উক্তি বলে। পরোক্ষ উক্তিতে কোনো উদ্ধরণ চিহ্ন থাকে না, এবং প্রধম উদ্ধরণ চিহ্নে জায়গায় ‘যে’ শব্দটি ব্যবহৃত হয়। বেশিরভাগ পরোক্ষ উক্তিতেই ‘যে’ সংযোজক অব্যয়টি থাকে বলে একে দেখে পরোক্ষ উক্তি চেনা যেতে পারে। তবে ‘যে’ ছাড়াও অনেক পরোক্ষ উক্তি গঠিত হতে পারে।
উক্তি পরিবর্তনের নিয়ম
[উক্তি পরিবর্তন অনেকটাই ইংরেজি Narration-এর নিয়ম অনুযায়ী করা হয়।]
১. উদ্ধরণি চিহ্ন (‘ ’/“ ”) তুলে দিতে হবে এবং প্রথম উদ্ধরণ চিহ্নের জায়গায় ‘যে’ সংযোজক অব্যয় বসাতে হবে। যেমন-
প্রত্যক্ষ : আমি বললাম, ‘আমি খেলছি।’
পরোক্ষ : খোকন বললাম যে আমি খেলছি।
পরোক্ষ : খোকন বললাম যে আমি খেলছি।
২. প্রয়োজন অনুযায়ী সর্বনামের পরিবর্তন করতে হয়। যেমন-
খোকন বলল, ‘আমি খেলছি।’
খোকন বলল যে খোকন খেলছে।
খোকন বলল যে খোকন খেলছে।
খোকন বলল, ‘আমার বাবা কাজ করছে।’
খোকন বলল যে ওর বাবা কাজ করছে।
খোকন বলল যে ওর বাবা কাজ করছে।
খোকন ছোটনকে বলল, ‘তুমি খুব ভালো ছেলে।’
খোকন ছোটনকে বলল যে ছোটন খুব ভালো ছেলে।
খোকন ছোটনকে বলল যে ছোটন খুব ভালো ছেলে।
খোকন ছোটনকে বলল, ‘তোমার বাবা কাজ করছে।’
খোকন ছোটনকে বলল যে ছোটনের বাবা কাজ করছে।
খোকন ছোটনকে বলল যে ছোটনের বাবা কাজ করছে।
৩. নিম্নোক্ত সর্বনাম ও কালসূচক পদগুলো উল্লিখিতভাবে পরিবর্তন করতে হবে :
প্রত্যক্ষ উক্তিতে | পরোক্ষ উক্তিতে | প্রত্যক্ষ উক্তিতে | পরোক্ষ উক্তিতে |
এই | সেই | গত কাল | আগের দিন |
ইহা | তাহা | গত কল্য | পূর্ব দিন |
এ | সে | ওখানে | ঐখানে |
আজ | সে দিন | এখানে | সেখানে |
আগামী কাল | পর দিন | এখন | তখন |
আগামীকল্য | পরবর্তী দিন |
যেমন-
খোকন বলল, ‘কাল স্কুল ছুটি’।
খোকন বলল যে পর দিন স্কুল ছুটি।
খোকন বলল যে পর দিন স্কুল ছুটি।
খোকন বলল, ‘আমি এখনই খাব।’
খোকন বলল যে সে তখনই খাবে।
খোকন বলল যে সে তখনই খাবে।
৪. প্রয়োজন অনুযায়ী ক্রিয়াপদের পরিবর্তন করতে হবে। যেমন-
খোকন বলল, ‘আমি খাচ্ছি।’
খোকন বলল যে সে খাচ্ছে।
খোকন বলল যে সে খাচ্ছে।
খোকন বলল, ‘আমি এখনই আসছি।’
খোকন বলল যে সে তখনই যাচ্ছে।
খোকন বলল যে সে তখনই যাচ্ছে।
খোকন বলেছিল, ‘আমি খেলছি।’
খোকন বলেছিল যে সে খেলছিলো।
খোকন বলেছিল যে সে খেলছিলো।
তবে অনেক সময় ক্রিয়াপদকে কাল অনুযায় পরিবর্তন না করলেও চলে।
খোকন বলেছিল, ‘শহরে খুব গরম পড়েছে’।
খোকন বলেছিল যে শহরে খুব গরম পড়েছিল।
খোকন বলেছিল যে শহরে খুব গরম পড়েছিল।
অথবা, খোকন বলেছিল যে শহরে খুব গরম পড়েছে।
খোকন বলেছিল, ‘আমি বাজারে যাচ্ছি।’
খোকন বলেছিল, ‘আমি বাজারে যাচ্ছি।’
খোকন বলেছিল যে সে বাজারে যাচ্ছিলো।
অথবা, খোকন বলেছিল যে সে বাজারে যাচ্ছে।
অথবা, খোকন বলেছিল যে সে বাজারে যাচ্ছে।
৫. প্রত্যক্ষ উক্তিতে কোন চিরন্তন সত্যের উদ্ধৃতি থাকলে উক্তির কালের কোনো পরিবর্তন হয় না। যেমন-
খোকন বলেছিল, ‘সূর্য পৃথিবীর চারিদিকে ঘোরে।’
খোকন বলেছিল যে সূর্য পৃথিবীর চারিদিকে ঘোরে।
খোকন বলেছিল যে সূর্য পৃথিবীর চারিদিকে ঘোরে।
৬. প্রশ্নবোধক, অনুজ্ঞাসূচক বা আবেগসূচক বাক্যের উক্তি পরিবর্তন করতে হয় বাক্যের ভাব অনুযায়ী। যেমন-
প্রশ্নবোধক বাক্যের উক্তি পরিবর্তন-
খোকন বলল, ‘আজ কি স্কুল ছুটি?’
খোকন জিজ্ঞাসা করল, আজ স্কুল ছুটি কি না।
খোকন জিজ্ঞাসা করল, আজ স্কুল ছুটি কি না।
বাবা খোকনকে জিজ্ঞাসা করলেন, ‘তোমার পরীক্ষার ফল দিয়েছে?’
বাবা খোকনকে জিজ্ঞাসা করলেন, খোকনদের পরীক্ষার ফল দিয়েছে কি না।
বাবা খোকনকে জিজ্ঞাসা করলেন, খোকনদের পরীক্ষার ফল দিয়েছে কি না।
অনুজ্ঞাসূচক বাক্যের উক্তি পরিবর্তন-
খোকন বলল, ‘তোমরা আগামীকাল একবার এসো।’
খোকন তাদেরকে পরদিন একবার আসতে(বা যেতে) বলল।
খোকন তাদেরকে পরদিন একবার আসতে(বা যেতে) বলল।
খোকন তার গৃহশিক্ষককে বলল, ‘দয়া করে ভেতরে আসুন।’
খোকন তার গৃহশিক্ষককে ভেতরে আসতে অনুরোধ করল।
খোকন তার গৃহশিক্ষককে ভেতরে আসতে অনুরোধ করল।
আবেগসূচক বাক্যের উক্তি পরিবর্তন-
খোকন বলল, ‘বাঃ! পাখিটি তো চমৎকার।’
খোকন অবাক হয়ে/আনন্দের সাথে বলল যে, পাখিটি চমৎকার।
খোকন অবাক হয়ে/আনন্দের সাথে বলল যে, পাখিটি চমৎকার।
খোকন বলল, ‘ইস! শীতে কতো মানুষই না কষ্ট পায়।’
খোকন দুঃখের সাথে বলল যে, শীতে অনেক মানুষ কষ্ট পায়।
খোকন দুঃখের সাথে বলল যে, শীতে অনেক মানুষ কষ্ট পায়।
খোকন দুঃখের সাথে বলল, ‘শীতে আমরা কতোই না কষ্ট পাই।’
খোকন দুঃখের সাথে বলল যে শীতে তারা(খোকনরা) বড়/অনেক কষ্ট পায়।
খোকন দুঃখের সাথে বলল যে শীতে তারা(খোকনরা) বড়/অনেক কষ্ট পায়।
No comments:
Post a Comment
ধন্যবাদ