।। যজ্ঞেন বাচঃ পদবীয মাযন্তা মন্ববিন্দ ত্রিৃষিষু প্রবিষ্টাম্।
তামা ভৃত্যা ব্যদধুঃ পুরুত্রা তাং সপ্ত রেভা অভি সং নবন্তে।।
(ঋক ১০/৭১/৩)
পশ্যন্তি ওম্ রশ্মির দ্বারা মমনস্তত্বের মধ্য ঘটা প্রাণ রশ্মি এবং ছন্দ রশ্মির কম্পনই বেদ রূপি ঋচা। পরমাত্মার কৃপায় অগ্নি ঋষি,বায়ূ ঋষি,অঙ্গিরা ঋষি এবং আদিত্য ঋষি পরমাত্মার পরা, পশ্যন্তি বেদ বানী তরঙ্গকে তথা সাত ছন্দযুক্ত অক্ষর রশ্মি তরঙ্গকে স্বাভাবিক ভাবে শ্বাস প্রশ্বাস গ্রহনের ন্যায় আকাশ থেকে গ্রহন করে নেয়। সমগ্র অাকাশেই বেদ মন্ত্র ভরা আছে। পরে সেই বানীকে মানব সমাজে বৈখরী বানীর আকার দিয়ে অন্য ঋষিদের মাঝে প্রচার করেন।।
মন্ত্র হল মহতত্ব হইতে জন্ম নেওয়া বিভিন্ন ছোট বড় মনস্তাত্ত্বিক ভাইব্রেশন যাহা পরমাত্মা কর্তৃক সৃষ্টি হইয়া থাকে৷ বিভিন্ন প্রকারের বাঙ্ রশ্মিই মন্ত্র।
বাগ্বৈ মন্ত্রঃ। শ০ ব্রা০ ৬.৪.১.৭। বাঙ রশ্মিই মন্ত্র। মনস্তাত্ত্বিক ফ্লাকচুয়েশন ই বাঙ্ তথ্য । ব্রহ্ম বৈ মন্ত্রঃ। শ০ ব্রা০ ৭.১.১.৫। ব্রহ্ম ই মন্ত্রঃ। ওম্ রশ্মিজাত বিভিন্ন মনস্তাত্ত্বিক ভাইব্রেশনই মন্ত্র। পরা ওম্ রশ্মিই ব্রহ্ম।
বেদ রূপি ঋচা তথা অক্ষর রশ্মি এবং ছন্দ রশ্মি এবং প্রাণরশ্মি। সূর্যাদি সৃষ্টির পূর্বেই পরমাত্মা কতৃক বেদ বানী সৃষ্টি হয়। এই তরঙ্গরূপি বেদ বানীর প্রভাবে সূর্যাদি সকল দৈব পদার্থের সৃষ্টি হয়।।
যাহা কোন কিছুকে উৎপন্ন করে ধারণ পালন পোষণ নিয়ামন,নির্মান করতে থাকেন তাহাই রশ্মি। সৃষ্টির বহু রশ্মি আছে।বেদে যত মন্ত্র আছে ততই রশ্মি সৃষ্টিতে আছে। একেকটি বেদ মন্ত্রই রশ্মি। তাই নিরুক্তকার বলেছেন রশ্মির যমুনাম। বেদ অনন্ত।তাই ব্রাহ্মণ গ্রন্থের ঋষিরা বলছেন। অনন্ত বৈ বেদা। সৃষ্টিতে বেদ অনন্ত। মানবীয় ঋষিগণ তাদের মানবীয় সামর্থ দ্বারা যতটুকু বৈদিক রশ্মিকে শোষণ করে নিতে পেরেছেন ততটুকুই মনুষ্যের জন্য বিদিত হয়েছেন।
যাহা কোন কিছুকে উৎপন্ন করে ধারণ পালন পোষণ নিয়ামন,নির্মান করতে থাকেন তাহাই রশ্মি। সৃষ্টির বহু রশ্মি আছে।বেদে যত মন্ত্র আছে ততই রশ্মি সৃষ্টিতে আছে। একেকটি বেদ মন্ত্রই রশ্মি। তাই নিরুক্তকার বলেছেন রশ্মির যমুনাম। বেদ অনন্ত।তাই ব্রাহ্মণ গ্রন্থের ঋষিরা বলছেন। অনন্ত বৈ বেদা। সৃষ্টিতে বেদ অনন্ত। মানবীয় ঋষিগণ তাদের মানবীয় সামর্থ দ্বারা যতটুকু বৈদিক রশ্মিকে শোষণ করে নিতে পেরেছেন ততটুকুই মনুষ্যের জন্য বিদিত হয়েছেন।
চার বেদের মধ্যে (ঋঃ ৯।১১৪।২) মধ্যে কেবল এক স্থানে মন্ত্রকৃত শব্দের প্রয়োগ হয়েছে।
ঋষে মন্ত্রকৃতাং স্তোমৈঃকশ্যপোদ্ধর্ধয়ন্ গিরঃ।
সোমং নমস্য রাজানং যো জজ্ঞে বীরুধাংপতিরিন্দ্রায়েন্দো পরিস্রব।।
(ঋগবেদ ৯।১১৪।২)
তৈতেরীয় অরণ্যক ৪।৪।১ এ ও "মন্ত্রকৃত" শব্দ এসেছে -
"মন্ত্রকৃদ্ভ্যো মন্ত্রপতিভ্যো মা মামৃষয়ো মন্ত্রকৃতো মন্ত্রপতয়ঃ পরাদুর্মাহমৃষীন্মন্ত্রকৃতো"
উপররোক্ত উদ্ধোরনে ঋষি শব্দের সাহচর্যে "কৃত" শব্দের অর্থ দ্রষ্টা। স্বয়ং আচার্য সায়ন এই কথার সমর্থনে উক্ত অরন্যকের ভাষ্য করেছে -
" যদ্যপ্যপৌরুষেয় বেদে কর্ত্তারো ন সন্তি তথাপি কল্পাদাবীশ্বরানুগ্রহেণ মন্ত্রাণাং লব্ধারো মন্ত্রকৃদিত্যুচ্যন্তে "
অপৌরুষেয় বেদে ঋষিরা মন্ত্রের রচয়িতা নয়। পরন্ত কল্পের আদিতে , ঈশ্বরের অনুগ্রহ দ্বারা মন্ত্রের লাভ করাকে "মন্ত্রকৃত" বলে।
ঐতেরীয় ব্রাহ্মণ " সর্পঋষির্মন্ত্রকৃত্ (৬।১।১) এর উপর টিকা করে সায়ন আচার্য্য লিখেছে-
" ঋষিঃ অতীন্দ্রিয়ার্থমন্ত্রকৃত" (কৃ ধাতুস্তত্র দর্শনার্থঃ) মন্ত্রস্য দ্রষ্টা। অর্থাৎ এই বাক্যে "কৃ" ধাতু দর্শন অর্থে প্রযুক্ত এবং সর্প ঋষি মন্ত্রকৃত্ = মন্ত্রদ্রষ্টা।
অনূরূপভাবে সায়ন আচার্য্য ঋগবেদ ৯।১১৪।২ এ ভাষ্যে "ঋষি মন্ত্রকৃতাং= ঋষি সুক্তদ্রষ্টহে " করেছেন।
বৈদিক সাহিত্যে ঋষি আদি শব্দের প্রয়োগ ঠিক সেই অর্থে হয়েছে যেই অর্থে অর্বাচীন সাহিত্য "আচার্য" শব্দের প্রয়োগ হয়েছে। গুরু বা আচার্যের অর্থেও " মন্ত্রকৃত" শব্দ প্রয়োগ হয়ে থাকে।
নিরুক্তাকারের এই কথন যে - ঋষিদের এরূপ প্রসংশা যে, নানা প্রকার অভিপ্রায় দ্বারা ঋষিদের মন্ত্রদর্শন হয় (ঋষিণাং মন্ত্রদৃষ্টয়ো ভবন্তি ; নিরুক্ত ৭।৩)। ঋষিদের নানা প্রকার দৃষ্টির তাৎপর্য এই যে, তাদের বৃহৎ পুরুষার্থ দ্বারা মন্ত্রের ঠিক ঠিক প্রকার সাক্ষাৎ হয়।
নিরুক্তকার আরো বলেছেন -
"সাক্ষাত্কৃতধর্মোণ ঋষয়ো বভূবুস্তেহবরেভ্যোহসাক্ষাত্ কৃতধর্মস্য উপদেশেন মন্ত্রানসম্প্রাদু ; নিরুক্ত ১।১৯"
অর্থাৎ তপের বল দ্বারা যারা ধর্মের সাক্ষাৎ করেছেন তারাই (ধর্মের সাক্ষাৎ দ্রষ্টা ঋষি)। আর তাহারাই যারা ধর্মের সাক্ষাৎ করে নি তাদের উপদেশ দিয়েছেন।
তৈতেরীয় অরণ্যকের ২।৯।১ এ প্রকার বর্ননা মিলে যে,
"অজান হ বৈ পৃশ্নীংস্তপস্যমানান্ব্রহ্ম স্বয়ম্ভ্বভ্যানর্ষত্ত ঋষয়োহভবন্তদৃষীণামৃষিত্বং তাং "
অর্থাৎ বেদ (ব্রহ্ম) কে (স্বয়ম্ভূ) যা কাহারো রচনা বিনা স্বয়ং (ঈশ্বর দ্বারা) প্রাপ্তকারী (আন্যানর্ষত্) বিনা পাঠে, নিজ বিশেষ তপের কারণে ঋষিদের দিয়েছেন, তাহাই ঋষিদের ঋষিত্ব।
যে লোক মন্ত্রার্থ কে জেনে ধর্ম এবং বিদ্যার প্রচার করেন, সত্যোপদেশ দ্বারা সবার অনুগ্রহ করে, ছল রহিত,মোক্ষ ধর্মের সাধনার জন্য ঈশ্বরের উপাসনা করেন এবং ইচ্ছানুরূপ ফল প্রাপ্ত করার জন্য ভৌতিক অগ্নি আদির গুণ কে জেনে কার্য্য সাধন করেন সেই মনুষ্য "ঋষি" শব্দে গৃহীত হন।
কাত্যায়ন ঋষি তার সর্বানুক্রমণী পঙ্কিতে প্রত্যেক মন্ডলদ্রষ্টা ঋষির বিষয়ে স্পষ্ট বর্ণনা করেছেন -
"গৃৎসমদো দ্বিতীয়ং মন্ডলপশ্যত। গাথিনো বিশ্বামিত্রঃ স তৃতীয়ং মন্ডলপশ্যত্। বামদেবো গৌতমশ্চতুর্থৈ মন্ডলম পশ্যত। বাঈস্পত্যো ভরদ্বাজঃ ষষ্টং মন্ডলমপশ্যত্। সপ্তমং মন্ডলং বসিষ্টোহপশ্যত। ইত্যাদি।।
অর্থাৎ গৃৎস্মদ দ্বিতীয় মন্ডল দর্শন করেছেন। গাথিন বিশ্বামিত্র তৃতীয় মন্ডল দর্শন করেছেন। বামদেব গৌতম চতুর্থ মন্ডল দর্শন করেছেন। বাঈস্পত্য ভরদ্বাজ ষষ্ঠ মন্ডল দর্শন করেছেন। সপ্তম মন্ডল বসিষ্ট দর্শন করেছেন। ইত্যাদি সর্বত্র "দৃশ" ধাতুর প্রয়োগ হয়েছে। কোন স্খানে ঋষিকে প্রতিপাদন করতে কাত্যায়ন "চকার" "কৃতাবান" ইত্যাদি প্রয়োগ করেন নি।
ঋষিদের মন্ত্রদর্শন বিষয়ে কিছু বিদ্বানদের আক্ষেপ এই যে, যেসব ঋষিদের নাম মন্ত্রে মেলে তারাই মন্ত্রের রচনাকারী । আর্য লোক বেদ কে অপৌরুষেয় সিদ্ধ করার জন্য মন্ত্র রচনাকারী ঋষিদের নাম মন্ত্রদ্রষ্টা রেখেছে।
উক্ত আক্ষেপের সমাধান গোপথ ব্রাহ্মণে অতি সুন্দররূপে দেওয়া রয়েছে। সেখানে দেখা যায় এক বেদমন্ত্রের দ্রষ্টা এক ঋষি না হয়ে অনেক ঋষি।
"তান বা এতান্ সম্পাতান্ বিশ্বামিত্রঃ প্রথমম্পশ্যত্। এবাত্বামিন্দ্র বজ্রন্ (ঋ ৪।১৯) তান্ বিশ্বামিত্রেণ দ্রষ্টান্ বামদেবো অসৃজন।। গোঃ ব্রাঃ ৬।১"
অর্থাৎ সম্পাত্ত কে বিশ্বামিত্র প্রথমে দর্শন করেছেন পুনরায় তাকে বামদেব দর্শন করেছেন। এই উদ্ধরণে স্পষ্ট যে, এই মন্ত্র (ঋঃ ৪।১৯) প্রথমে বিদ্যমান ছিলো। তাকে প্রথমে বিশ্বামিত্র দর্শন করেন অর্থাৎ তার ক্রিয়াকান্ড সবার প্রথমে দর্শন করেন। এবং পুনরায় বামদেব তা দর্শন করেন। দুই ঋষি একই সুক্তের মন্ত্রের কর্তা হতে পারে না "সম্পাত্ত " এই মন্ত্র দ্বারা কৃত কর্মকান্ডের সংকেত। সেই কর্মকান্ডের নামেই মন্ত্রের নাম "সম্পাত" হয়েছে। এই বিশেষ কর্মযোগের দর্শনের জন্যই বিশ্বামিত্র এবং বামদেব ঋষির মন্ত্রদ্রষ্টা হওয়ার কারণ। অনুক্রমণীকার ব্রাহ্মণ গ্রন্থে কর্মকান্ড কে দর্শনকারী ঋষি কে ব্রাহ্মণ গ্রন্থে লিপিবদ্ধ করে মন্ত্রের ঋষি আদির নির্ণয় করেছেন।
বেদের সুক্তে যেমন দুই দুই (ঋঃ ৮।১৪) তিন তিন, পাঁচ পাঁচ (ঋঃ ১।১০০) ঋষি রয়েছে। তেমনি এক সুক্তে (ঋঃ ৯।৬৬) একশ ঋষি রয়েছে।
এ থেকে স্পষ্ট প্রমাণ হয় যে, এতগুলো ঋষি মিলে একটি মন্ত্র রচনা করেন নি । বরং একটি মন্ত্রই তারা পর পর দর্শন করেছেন। অতএব ঋষি মন্ত্রের রচনাকারী নয়। বরং তারা মন্ত্র দ্রষ্টা।
সন্দর্ভঃ ঋগবেদ ভাষ্যভূমিকা (জয়দেব শর্মা), বেদ রহস্য (মহাত্মা নারায়ন স্বামী)
অগ্নেঋগবেদো বাযোর্যজুর্বেদঃ সূর্যাৎ সামবেদঃ।।
শতপথ ব্রাক্ষণ-11/5/8/3,গোপথ ব্রাক্ষণ-1/6
অর্থ-পরমাত্না সৃষ্টির আদিতে অগ্নি(ঋগ) বায়ু (যজুর্বেদ) সূর্য বা আদিত্য (সাম) ঋষিদের অন্তরে বেদজ্ঞান প্রকাশিত করেছেন।
No comments:
Post a Comment
ধন্যবাদ