আমাদের পূর্বপুরুষ কি বানর ? - ধর্ম্মতত্ত্ব

ধর্ম্মতত্ত্ব

ধর্ম বিষয়ে জ্ঞান, ধর্ম গ্রন্থ কি , হিন্দু মুসলমান সম্প্রদায়, ইসলাম খ্রীষ্ট মত বিষয়ে তত্ত্ব ও সনাতন ধর্ম নিয়ে আলোচনা

धर्म मानव मात्र का एक है, मानवों के धर्म अलग अलग नहीं होते-Theology

সাম্প্রতিক প্রবন্ধ

Post Top Ad

স্বাগতম

16 August, 2020

আমাদের পূর্বপুরুষ কি বানর ?

আমাদের পূর্বপুরুষ কি বানর ?
প্রায় ১ বর্ষ পূর্বে যখন কেন্দ্রীয় মানব সংসাধন বিকাশ রাজ্যমন্ত্রী সত্যপাল সিং জি এক বক্তৃতায় বলেছিলেন যে ‘Darwin Theory সত্য নয়’, একথা বলতেই অনেক বুদ্ধিজীবী তাকে আক্রমণ করতে থাকে, আর পরদিনই অনেক অধ্যাপক তার বিরুদ্ধে পিটিশন দাখিল করে।
এদিকে নাসার পূর্ব বৈজ্ঞানিক প্রফেসর ড. ওমপ্রকাশ পান্ডে জি সত্যপাল সিং জির কথাকে সমর্থন করেছেন এবং বলেছেন যে ডারউইনের ছেলে নিজেই বিকাশবাদকে তার পিতার কল্পনা বলে মনে করতেন।
তিনিও ডারউইনের Theory কে ভুল মনে করতেন।
সেসময় আচার্য অগ্নিব্রত নৈষ্ঠিক জি সকল ডারউইনের থিওরির উপর অনেক প্রশ্ন লিখে সমস্ত বুদ্ধিজীবীদের চ্যালেঞ্জ করেন এবং অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসরদের কাছে পাঠান, কিন্তু সেসব প্রশ্নের উত্তর কেউ দেননি।
আসুন এখন দেখি আচার্য অগ্নিব্রত জি কি প্রশ্ন করেছিলেন, তার চিঠিটি নীচে দেওয়া হল।
সারা বিশ্বের বিকাশবাদীদের নিকট প্রাথমিক প্রশ্ন :
এই কিছু দিন পূর্বে কেন্দ্রীয় মানবসম্পদ উন্নয়ন রাজ্যমন্ত্রী শ্রীমান ডা০ সত্যপাল সিংহ জীর বক্তব্য যে মানুষের উৎপত্তি বানর থেকে হয় নি, সারা ভারতের বুদ্ধিজীবীদের মধ্যে কোলাহল শুরু হয়ে গেছে।
কিছু বৈজ্ঞানিক চিন্তাধারার মহানুভব এটিকে সাম্প্রদায়িক সংকীর্ণতাজন্য রূঢ়বাদী চিন্তাভাবনার সংজ্ঞা দিচ্ছেন।
আমি সেই মহানুভবদের কাছে নিবেদন করছি যে, মন্ত্রীজীর এই বিচার রূঢ়বাদী নয় বরং সুদৃঢ় তর্কের উপর আধারিত বৈদিক বিজ্ঞানেরই পক্ষ।
এমন নয় যে শুধুমাত্র কিছু ভারতীয় বিদ্বানই বিকাশবাদের বিরোধিতা করেন, অনেক ইউরোপের বিজ্ঞানীরাও তা অস্বীকার করে আসছেন।
আমি সারা বিশ্বের বিকাশবাদীদের প্রশ্ন করতে চাই যারা এর বিরোধিতা করে। এই প্রশ্নগুলি প্রাথমিক, উত্তর পাওয়ার পর আরও প্রশ্ন করা হবে:-
শারীরিক বিকাশ:
১. বিকাশবাদী অ্যামিবা থেকে বিকশিত হয়ে বানরে আবার ধীরে ধীরে মানুষের উৎপত্তিতে বিশ্বাসী। তারা বলুক অ্যামিবার উৎপত্তি কিভাবে হয়েছে?
২. যদি জীবন অন্য গ্রহ থেকে আসে, তাহলে সেখানে কিভাবে উৎপত্তি হলো ? যখন ওখানে উৎপত্তি হতে পারে, তাহলে এই পৃথিবীতে কেন হতে পারে না?
৩. যদি রাসায়নিক বিক্রিয়ার মাধ্যমে কোনো গ্রহে অ্যামিবার উৎপত্তি হয়, তাহলে কেন মানুষের শুক্রাণু ও ডিম্বাণু একইভাবে উৎপন্ন হতে পারবে না?
৪. উড়ার আবশ্যকতা হওয়ার পর নাকি প্রাণীদের ডানা আসার কথা বলা হয়ে থাকে কিন্তু মানুষ্য যখন উৎপন্ন হয়েছে, উড়ার জন্যই বিমান জাহাজ তৈরির চেষ্টা করতে থাকে কিন্তু তাদের ডানা কেন হয় নি? যদি এমনটা হতো তাহলে বিমান জাহাজ আবিষ্কারের দরকারই হতো না।
৫. শীত প্রধান দেশে শরীরে লম্বা লোমের বিকাশের কথা বলা হয়ে থাকে, তবে শীত প্রধান দেশে হওয়া মানুষদের ভাল্লুকের মতো লোম কেন হয় নি ? তাদের কম্বল আদির আবশ্যকতা কেন হয়েছে?
৬. জিরাফের ঘাড় লম্বা হয়েছে কারণ পৃথিবীর ঘাস শুকিয়ে গেলে ঘাড় উঁচু করে গাছের পাতা খেতো বলে। আচ্ছা বলুন তো, কত বছর পর্যন্ত নিচে শুকনো আর গাছের পাতা সবুজ ছিল? অন্যদিকে ছাগল আজও তার দুই পা গাছে দিয়ে পাতা খায়, তার গলা লম্বা হয় নি কেন?
৭. বানরের লেজ অদৃশ্য হয়ে মানুষ হয়ে গেল। কেউ কি বলতে পারবেন বানরের লেজ কিভাবে উধাও হয়ে গেল? তারা কি লেজের উপযোগ বন্ধ করেছে? কেউ কি বলতে পারবেন বানর তার লেজ দিয়ে কী উপযোগ করে আর সেই উপযোগ সে কেন বন্ধ করেছে? যদি এমনই হয় তো মানুষেরও নাক, কান অদৃশ্য হয়ে কেবল ছিদ্র থাকতো । মানুষ লক্ষ লক্ষ বছর ধরে নখ, চুল কেটে আসছে তবু ও বারংবার উৎপন্ন হতে থাকে, এমনটা কেন?
৮. সকলে বানরের বিকাশ হয়ে মানুষ কেন হয় নি? কিছু তো অ্যামিবার রূপেই চলে আসছে, আর আমরা মানুষ হয়েগেছি, এমনটা কেন?
৯. বলছে সাপেরও নাকি আগে পা ছিল, ধীরে ধীরে ঘসে তা অদৃশ্য হয়ে গেছে। একটু ভাবুন পা কিভাবে অদৃশ্য হয়েছে, যেখানে অন্য সব পায়ের প্রাণীরা তাদের পা একেবারেই ঘসা খায় নি।
১০. হাড়হীন প্রাণী থেকে হাড় কারক প্রাণী কিভাবে হয়ে গেল? কেন তাদের সেই হাড়ের প্রয়োজন হলো?
১১. বানর এবং মানুষের মধ্যে যে প্রাণীর শৃঙ্খলা তৈরি হয়েছিল তা কোথায় গেল?
১২. বিকাশ কেন মানুষের মধ্যে এসে থেমে গেল? কে একে থামিয়েছে? তার কি বিকাশের কোনো প্রয়োজন নেই?

 বৌদ্ধিক এবং ভাষা বিকাশ :

১. বলা হয় যে মানুষ ধীরে ধীরে বুদ্ধিমত্তার বিকাশ ঘটিয়েছে, তাহলে প্রশ্ন হলো বানর ও অন্যান্য প্রাণীদের মধ্যে কেন বৌদ্ধিক বিকাশ ঘটেনি?
২. মানুষের জন্মের সময় এই পৃথিবীতে শুধু পশু-পাখিই ছিল, তাহলে কেন তারা তাদের আচরণ শিখলো না? মানুষের আচরণের বিকাশ কিভাবে হয়েছে? কোটি কোটি বনবাসীর মধ্যে এখনো বিশেষ মেধা বিকাশ হয়নি কেন?
৩. গরু, মহিষ, ঘোড়া, ভেড়া, ছাগল, উট, হাতি লক্ষ লক্ষ বছর ধরে মানুষের গৃহপালিত প্রাণী তা সত্ত্বেও তারা মানুষের ভাষা বা মানুষের আচরণও শিখেনি, তাহলে মানুষেরই মধ্যে এই বিকাশ এলো কোথা থেকে?
৪. যে পতঙ্গ প্রদীপে জ্বলে কোটি বছরেও যথেষ্ট বৌদ্ধিক বিকাশ ঘটাতে পারেনি নিজেকে থামাতে প্রদীপ হতে জ্বলতে, আর মানুষ বানরের থেকে এত বুদ্ধিমান হয়ে উঠেছে যে সে মঙ্গল গ্রহে যাত্রা করতে প্রস্তুত? এটা জানার বুদ্ধিও কি বিকাশবাদীদের মধ্যে গড়ে ওঠেনি? আগে সাপুড়িয়া বীণ বাজিয়ে সাপকে ধরতো এবং আজও একই কাজ করে কিন্তু সাপটির এটুকু জ্ঞানেরও বিকাশ ঘটেনি যে সাপুড়িয়ার হাতে যেন ধরা না পরে।
৫. আগের মানুষ শক্তি, স্মৃতিশক্তি এবং শারীরিক প্রতিরোধের দিক থেকে বর্তমানের তুলনায় অনেক বেশি সমৃদ্ধ ছিল, কেন আজ এই পতন ঘটল, বরঞ্চ এদের তো বিকাশ হওয়া উচিত ছিল?
৬. সংস্কৃত ভাষা, যা প্রাচীনতম ভাষা, এর ব্যাকরণ বর্তমান বিশ্বের সকল ভাষার চেয়ে অধিক সমৃদ্ধ ও ব্যবস্থিত, তাহলে ভাষার দৃষ্টিকোণ থেকে উন্নয়নের জায়গায় কেন অবনতি হলো?
৭. প্রাচীন ঋষিদের গ্রন্থে ভরা বিজ্ঞানের সামনে বর্তমান বিজ্ঞান অনেক ক্ষেত্রেই পিছিয়ে আছে, আমি এটা এখনই প্রমাণ করবো, তাহলে বিজ্ঞানের এই অধঃপতন কিভাবে হলো? আগে ঋষিরা কেবল অন্তর্দৃষ্টির মাধ্যমেই বিশ্বজগতের জ্ঞান লাভ করতেন, অতঃপর আজ অনেক সম্পদের মাধ্যমেও সেই জ্ঞান পাওয়া যায় না। কিভাবে এই বিপরীত ক্রম ঘটল?
ভালো করে ভেবে দেখুন যদি পশু-পাখির বৌদ্ধিক বিকাশ হতো তাহলে একটিও পশু পাখি মানুষের নিয়ন্ত্রণে আসতো না।
এটা কেমন অজ্ঞানীভরা ভাবনা ! যারা বিশ্বাস করে যে পশু-পাখির বৌদ্ধিক বিকাশ হয় না কিন্তু শারীরিক বিকাশ তাদেরকে মানুষে পরিণত করে আর মানুষের মধ্যে শারীরিক বিকাশ না হয়ে শুধু ভাষা ও বৌদ্ধিক বিকাশই হয়ে থাকে!
এর কারণ কি বিকাশবাদীরা আমাকে জানাবেন।
আজ বিকাশবাদ ভাষী বক্তারা অথবা পৌরাণিক ভাইয়েরা শ্রী হনুমান জীকে বানর বলে, তাদের বাল্মীকি রামায়ণ সম্পর্কে বিশেষ জ্ঞান নেই।
বস্তুতঃ বানর, ঋক্ষ, গৃধ, কিন্নর, অসুর, দেব, নাগ ইত্যাদি মানব জাতিরই বিভিন্ন বর্গ ছিল।
ঐতিহাসিক গ্রন্থে প্রক্ষেপ (ভেজাল) সনাক্ত করা একটি শ্রমসাধ্য এবং বুদ্ধিমানের কাজ।
অন্যদিকে, জ্ঞানী ব্যক্তিরা যারা বৈজ্ঞানিক জার্নালে একটি গবেষণাপত্র প্রকাশকে সত্যতার মাপকাঠি মনে করেন, তাদের কাছে আমার অতি সংক্ষিপ্ত বিনীত অনুরোধ -
১. Big Bang Theory এবং এর বিরুদ্ধে অনাদি ব্রহ্মান্ড থিওরি, উভয় পক্ষের কাগজপত্র এই ম্যাগাজিনে প্রকাশিত হয়, তাহলে কোন থিওরিকে আপনি সত্য বলে মনে করেন?
২. Black Hole এবং Black Hole না হওয়ার বিরুদ্ধে থিওরি এই পত্রিকায় প্রকাশিত হয়, তাহলে কাকে বিশ্বাস করবেন?
৩. মহাবিশ্বের সম্প্রসারণ এবং এর অ-সম্প্রসারণের থিওরি উভয়ই প্রকাশিত হয়েছে, তাহলে কাকে বিশ্বাস করবেন?
এরকম অনেক উদাহরণ দেওয়া যেতে পারে। এই কারণে আমাদের যে এক বর্গ বিশেষ থেকেই সত্যতার প্রমাণ নেওয়ার প্রয়োজন হবে এটা আবশ্যক নয়।
আমাদের বৈদিক এবং ভারতীয় দৃষ্টিকোণ থেকে, সঠিক যুক্তি, পবিত্র গুরুতর ঊহা এবং যোগসাধনা (ব্যায়াম নয়) থেকে প্রাপ্ত সিদ্ধান্তগুলি বর্তমান সম্পদ দ্বারা করা পরীক্ষা, অনুমান এবং গণিতের চেয়ে বেশি প্রমানিক।
যদি পরীক্ষা-নিরীক্ষা, পর্যবেক্ষণ এবং গণিতের সাথে সঠিক যুক্তি, ঊহা না থাকে, তাহলে বিজ্ঞানীদের পুরো শ্রম বৃথা যেতে পারে।
এই কারণেই যারা পরীক্ষা-নিরীক্ষা, পর্যবেক্ষণ ও গণিতকে ভিত্তি হিসেবে বিশ্বাস করেন তথা বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে, যা এই সম্পদগুলির জন্য প্রতিবছর ট্রিলিয়ন ডলার ব্যয় করে, বিভিন্ন বিরোধী Theory মনগড়া ঢঙে নির্বিচারে সমৃদ্ধ পাচ্ছে আর সবাই নিজেকেই সত্য বলছে। বিজ্ঞান যদি সর্বত্র গণিত এবং পরীক্ষাকে ভিত্তি হিসাবে বিবেচনা করে, তবে গণিত এবং পরীক্ষা-নিরীক্ষার উপর নির্ভর করে কেউ কি বিকাশবাদ দেখাবেন?
এজন্য দেশ ও বিশ্বের শ্রদ্ধেয় বিজ্ঞানী ও প্রবুদ্ধগণের কাছে অনুরোধ যে প্রত্যেক প্রাচীন জ্ঞানের অন্ধবিরোধ তথা বর্তমান পদ্ধতির অন্ধানুকরণ করে বৌদ্ধিক দাসত্বের পরিচয় দেবেন না।
যৌক্তিক দৃষ্টির সাহায্য নিয়ে সত্যকে গ্রহণ করার এবং মিথ্যাকে পরিত্যাগ করার চেষ্টা করুন।
হ্যাঁ, বিজ্ঞানের আগে নিজের সাম্প্রদায়িক রূঢ়বাদী চিন্তাভাবনাকে তুলে ধরার চেষ্টা করা অবশ্যই
আপত্তিকর। ওম্ শম্
-আচার্য অগ্নিব্রত নৈষ্ঠিক
এই গুরুত্বপূর্ণ নিবন্ধটি যখন অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকদের কাছে পাঠানো হয়েছিল, তখন এই গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নের কোনোটিরই উত্তর কেউ দেয়নি।
নাসার পূর্ব বৈজ্ঞানীক প্রফেসর ড. ও.পি. পান্ডে জী এমনও বলেছিলেন যে সত্যপাল সিং জীর বিরুদ্ধে একসাথে অনেক অধ্যাপক দ্বারা আবেদন করা একটি সুচিন্তিত ষড়যন্ত্র, আজ শিশুদের ভুল ইতিহাস শেখানো হচ্ছে, আমাদের পূর্বপুরুষরা বানর ছিল না।

লেখকঃআচার্য অগ্নিব্রত নৈষ্ঠিক
বঙ্গানুবাদ আশীষ আর্য

No comments:

Post a Comment

ধন্যবাদ

বৈশিষ্ট্যযুক্ত পোস্ট

ব্রহ্মচর্য ও য়জ্ঞোপবীত

একাদশ অধ্যায় মেখলা প্রাচীনকালে গুরুকুলগুলোতে বেদের বিদ্বান বেদসংজ্ঞক আচার্য য়জ্ঞোপবীত সংস্কার করাতেন আর তারপর তারা বেদারম্ভসংস্কারের সময়...

Post Top Ad

ধন্যবাদ