কুন্তী মথুরার যাদববংশীয় রাজা শূরসেনের((জন্মদাতা পিতা)) কন্যা,বাসুদেবের বোন।কুন্তীর প্রকৃত নাম পৃথ্বা / পৃথা।পৃথা মানুষ হয়েছিলেন ওঁর পিতার পিসীমাতার(শূরসেনের ভাই)পুত্র সন্তানহীন কুন্তিভোজের(পালক পিতা) কাছে।কুন্তিভোজ বংশের নাম। বৃদ্ধ কুন্তিভোজ বসুদেবের পিতা শূরের পিতৃষ্বসৃপুত্র। পাণ্ডবমাতা কুন্তী তাঁহার ভবনে প্রতিপালিতা হয়েন। পুরুজিৎ এ সম্বন্ধে পাণ্ডব-মাতুল।
সেই জন্য ওঁর নাম হয় কুন্তি।পৃথা / প্রথার পুত্র ছিলেন কর্ণ। প্রথার দেশ ছিল বর্তমান ইরানের দক্ষিণ অংশে যেখানে কারুন নদী প্রবাহিত হচ্ছে। এই কারুণ নদী আজও আজছে। ইরানীরা এই নদীটাকে কারুণ নদী বলে ডাকে। মূলত কর্ণ নামের অপভ্রংশ হল কারুণ। এই নদীতে কর্ণকে ভাসিয়ে দেওয়া হয়।ঋষি দূর্বাসার আশ্রমে অনেক বিদ্বান ছিলেন সেখানে প্রথার সাথে এক বিদ্বানের(সূর্য দেব নামক এক বিদ্বান) প্রেম হয়ে যায় ঋষি দূর্বাসার আশির্বাদের দুজনের গান্ধর্ব বিবাহ হয়। গান্ধর্ব বিবাহের ফলে কুন্তী ওরফে প্রথা গর্ভবতী হন এবং কর্নের জন্ম দেন। এই ঘটনা কুন্তির আত্মীয় স্বজন ও পিতৃমাতৃকূল সম্পূর্ণ অজ্ঞাত ছিলেন। যখন সবার জানাজানি হয়ে যায় তখন কর্ণকে কুন্তী নদীতে ভাসিয়ে দেয়।এ দিকে লোকলজ্জার ভয়ে কুন্তীকে বর্তমান ইরান হতে কুন্তীভোজ (পালক পিতা) রাজার নিকট পাঠিয়ে দেওয়া হয়। সেখান থেকে কুন্তীর সাথে পান্ডুর বিবাহ হয়। এদিকে কর্ণকে অধিরথ সুশেন নামের এক ব্যক্তি নদী হতে উদ্ধার করেন এবং লালন পালন করেন। অধিরথের কর্মস্থল ছিলেন হস্তিনাপুরে। মহামহীম ভীষ্মের রথের সারথি হয়ে তিনি জীবিকা পরিচালনা করতেন।
পৃথা হল কুন্তীর পূর্বের নাম যেটা ইরানে প্রচলিত ছিল পরে কুন্তীভোজের নিকট এসে কুন্তী নাম ধারণ করেন। পৃথা থেকে ইরানের নাম হয় প্রথিয়া আবার প্রথিয়া থেকে পারসিয়া নাম হয়। আজ ও ইরানে সেই প্রথিয়া নগর আছে। যে নদীতে কর্ণকে ভাসানো হয় সেই নদীর নাম আজ কারুন নদী। কর্ণ হতে কারুণ নদী হয়েছে।ভীষ্মের রথের সারথী অধিরথ ও তার স্ত্রী রাধা দেবী তাঁকে উদ্ধার করেন। তারা কর্ণকে পুত্রস্নেহে পালন করতে থাকে এবং তাঁর নাম হয় বসু্ষেন। কর্ণকে 'রাধেয়' নামেও ডাকা হয়ে থাকে।
কর্ণের মূল পিতা ছিল ঋষিদূর্বাসার আশ্রমের সূর্য দেব নামক এক বিদ্বান। যিনি কুন্তীর সাথে গান্ধর্ব বিবাহ করেন। কুন্তী এবং সূর্যজীর সম্ভোগই ছিল গান্ধর্ব বিবাহ। সম্ভোগের আরেক নাম বিবাহ বলে জানিও।
যখন কুন্তী গর্ভবতী তখন দূর্বাসা কুন্তীর গর্ভকে অবৈধ জেনে ও সুরক্ষার ব্যবস্থা করেন যাহার ফলে কর্ণ সুস্থভাবে দূর্বাসার আশ্রমেই কর্ণের জন্মদেন। মূলত দূর্বাসার মন্ত্রনায় কুন্তী তাহার সন্তানকে গর্ভে বিনষ্ট করেন নি। একমাত্র ঋষি দূর্বাসা সূ্র্যদেব আর কুন্তীর গান্ধর্ববিবাহকে মেনে নিয়েছিলেন।যখন ঘটনাটি জানাজানি হয় তখন কুন্তীকে দূরে সরিয়ে দেয়া হয়।
বাল্যকাল থেকে কর্ণ ধনুর্বিদ্যায় আগ্রহী ছিলেন। তিনি কুরু রাজকুমারদের অস্ত্রগুরু দ্রোণাচার্যের কাছে শিক্ষালাভ করেন।পরবর্তীকালে মহর্ষি ভার্গব পরশুরামের কাছে দৈব্য়াস্ত্রের জ্ঞান লাভ করেন।পরশুরামের কাছে অস্ত্রশিক্ষা সমাপ্ত করে ইনি কলিঙ্গরাজের কন্যার স্বয়ংবর সভায় উপস্থিত হন। সেখানে কলিঙ্গরাজ জরাসন্ধের সাথে যুদ্ধ হয়। এই যুদ্ধে জরাসন্ধ সন্তুষ্ট হয়ে কর্ণকে মালিনীনগর দান করেন। কর্ণ দুর্যোধনের পরামর্শদাতাদের অন্যতম ছিলেন।
কর্ণের স্ত্রীর নাম ছিল পদ্মাবতী। ইনি অঙ্গরাজ্যের অধিপতি ছিলেন বলে- এঁর অন্যান্য নাম ছিল- অঙ্গরাজ, অঙ্গাধিপ, অঙ্গাধিপতি, অঙ্গাধীশ, অঙ্গাধীশ্বর। সূর্যের পুত্র হিসাবে তাঁর নাম ছিল- অরুণাত্মজ, অর্কতনয়, অর্কনন্দন, অর্কপুত্র, অর্কসূত, অর্কসূনু।
দ্রৌপদীর স্বয়ম্বর সভায় কর্ণ অন্যতম পাণিপ্রার্থী ছিলে কিন্তু অন্য অনেক রাজার মতই বীর্যপ্রদর্শনের প্রতিযোগিতায় লক্ষ্যভেদ করতে ব্যর্থ হন। এই স্বয়ম্বর সভায় পান্ডবরাও ব্রাহ্মণের ছদ্মবেশে উপস্থিত ছিলেন এবং অর্জুন লক্ষ্যভেদ করে দ্রৌপদীকে লাভ করেন। যখন অর্জুনের পরিচয় প্রকাশিত হয় তখন তার প্রতি কর্ণের বিদ্বেষ আরও তীব্র হয়ে ওঠে।
ভীষ্মের পতনের পর একাদশ দিনে দ্রোণ কৌরব বাহিনীর সেনাপতি হন এবং কর্ণ যুদ্ধক্ষেত্রে প্রবেশ করেন। ত্রয়োদশ দিন শেষ হয় চক্রব্যূহে অর্জুনপুত্র অভিমন্যুর মৃত্যু দিয়ে। চতুর্দশ দিনে কর্ণ ভীম এবং সহদেবকে দ্বৈরথ যুদ্ধে পরাজিত করেন এবং একই দিন রাত্রিকালীন যুদ্ধে ভীমপুত্র ঘটোৎকচকে ইন্দ্রের একপুরুষঘাতিনী/বাসবিশক্তি অস্ত্র দ্বারা হত্যা করেন। পঞ্চদশ দিনে কর্ণ আবার ভীমকে দ্বৈরথ যুদ্ধে পরাজিত করেন।এদিন দ্রোণাচার্য দ্রৌপদীর ভাই ধৃষ্টদ্যুম্নের হাতে নিহত হন। দ্রোণের মৃত্যুর পর ষোড়শ দিনে কর্ণ কৌরব পক্ষের সেনাপতি হন। এদিন নকুল কর্ণের নিকট দ্বৈরথ যুদ্ধে পরাজিত হন। এদিন পাণ্ডব সেনাপতিরা কর্ণকে ঘিরে ফেলেছিলেন, কিন্তু তাঁরা কর্ণকে পরাজিত করতে ব্যর্থ হন। সূর্যাস্তের সময় কর্ণ সৈন্য প্রত্যাহার করেন।
কর্ণের স্ত্রীর নাম ছিল পদ্মাবতী। ইনি অঙ্গরাজ্যের অধিপতি ছিলেন বলে- এঁর অন্যান্য নাম ছিল- অঙ্গরাজ, অঙ্গাধিপ, অঙ্গাধিপতি, অঙ্গাধীশ, অঙ্গাধীশ্বর। সূর্যের পুত্র হিসাবে তাঁর নাম ছিল- অরুণাত্মজ, অর্কতনয়, অর্কনন্দন, অর্কপুত্র, অর্কসূত, অর্কসূনু।
দ্রৌপদীর স্বয়ম্বর সভায় কর্ণ অন্যতম পাণিপ্রার্থী ছিলে কিন্তু অন্য অনেক রাজার মতই বীর্যপ্রদর্শনের প্রতিযোগিতায় লক্ষ্যভেদ করতে ব্যর্থ হন। এই স্বয়ম্বর সভায় পান্ডবরাও ব্রাহ্মণের ছদ্মবেশে উপস্থিত ছিলেন এবং অর্জুন লক্ষ্যভেদ করে দ্রৌপদীকে লাভ করেন। যখন অর্জুনের পরিচয় প্রকাশিত হয় তখন তার প্রতি কর্ণের বিদ্বেষ আরও তীব্র হয়ে ওঠে।
ভীষ্মের পতনের পর একাদশ দিনে দ্রোণ কৌরব বাহিনীর সেনাপতি হন এবং কর্ণ যুদ্ধক্ষেত্রে প্রবেশ করেন। ত্রয়োদশ দিন শেষ হয় চক্রব্যূহে অর্জুনপুত্র অভিমন্যুর মৃত্যু দিয়ে। চতুর্দশ দিনে কর্ণ ভীম এবং সহদেবকে দ্বৈরথ যুদ্ধে পরাজিত করেন এবং একই দিন রাত্রিকালীন যুদ্ধে ভীমপুত্র ঘটোৎকচকে ইন্দ্রের একপুরুষঘাতিনী/বাসবিশক্তি অস্ত্র দ্বারা হত্যা করেন। পঞ্চদশ দিনে কর্ণ আবার ভীমকে দ্বৈরথ যুদ্ধে পরাজিত করেন।এদিন দ্রোণাচার্য দ্রৌপদীর ভাই ধৃষ্টদ্যুম্নের হাতে নিহত হন। দ্রোণের মৃত্যুর পর ষোড়শ দিনে কর্ণ কৌরব পক্ষের সেনাপতি হন। এদিন নকুল কর্ণের নিকট দ্বৈরথ যুদ্ধে পরাজিত হন। এদিন পাণ্ডব সেনাপতিরা কর্ণকে ঘিরে ফেলেছিলেন, কিন্তু তাঁরা কর্ণকে পরাজিত করতে ব্যর্থ হন। সূর্যাস্তের সময় কর্ণ সৈন্য প্রত্যাহার করেন।
সপ্তদশ দিনে যুধিষ্ঠির এবং ভীম কর্ণকে আক্রমণ করেন, কিন্তু দ্বৈরথ যুদ্ধে কর্ণের নিকট পরাজিত হন নকুল কর্ণের ছেলে বৃষসেনের নিকট পরাজিত হন, কিন্তু অর্জুনের নিকট বৃষসেন পরাজিত ও নিহত হন। একই সময়ে ভীম দুঃশাসনকে পরাজিত করেন এবং নির্মমভাবে হত্যা করেন।
কর্ণ ক্ষিপ্ত হয়ে অর্জুনের সঙ্গে যুদ্ধে লিপ্ত হন। ভীষণ যুদ্ধ লাগে। দুইজন সমান যোদ্ধা হওয়ার কারণে কেউ কাউকে ছাড় দিচ্ছিলেন না। সবাই নিজ নিজ যুদ্ধ ভুলে অর্জুন এবং কর্ণের যুদ্ধ দেখতে লাগলেন। কর্ণের রথের সারথী ছিলেন শল্য, যিনি ছিলেন সম্পর্কে পাণ্ডবদের মামা। তিনি কর্ণকে নানা কথায় কাবু করতে লাগলেন।
অর্জুন অঞ্জলীক বাণ দ্বারা কর্ণের মস্তক ছেদন করলেন। তখন কর্ণের দেহ থেকে এক দিব্যজ্যোতি নির্গত হয়ে সূর্যমন্ডলে মিশে যায়। এভাবে কর্ণের মৃত্যু হয়।
মহাযুদ্ধের শেষে যুধিষ্ঠির সিংহাসনে আরোহণ করার পর কুন্তি প্রায় পনেরো বৎসর গান্ধারী ও ধৃতরাষ্ট্রের দেখাশোনা করেছেন। ধৃতরাষ্ট্র ও গান্ধারী যখন বানপ্রস্থ নেবার সঙ্কল্প করলেন।অনেক আক্ষেপ করে কুন্তি জানালেন যে, তিনিও ধৃতরাষ্ট্রদের সঙ্গে যাবেন। পুত্ররা ওঁকে আটকাতে পারলেন না। শতযূপের আশ্রমে যখন কুন্তিরা আছেন,তখন ব্যাসদেব সেখানে আসেন।এর কয়েক বৎসর পর হরিদ্বারের কাছে এক গভীর অরণ্যের দাবাগ্নিতে যোগযুক্ত অবস্থায় ধৃতরাষ্ট্র, গান্ধারী ও কুন্তি প্রাণত্যাগ করেন।
No comments:
Post a Comment
ধন্যবাদ