পুণর্জন্মের সিদ্ধান্ত একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়ার অন্তর্গত।সহজ কথায় এটা কর্ম চক্রের অন্তর্গত। আপনার কর্ম আপনাকে ভোগ করতে হবে। যত বেশী আপনি উপলব্ধি করবেন, তত আপনার আত্মার বা আধ্যাত্মিক উন্নতির সম্ভাবনা। কিন্তু এটি চেতনা ভিত্তিক উপলব্ধির স্তরে। যারা এই চেতনা জাগ্রিত করতে পেরেছেন, তারাও পূর্ব জন্ম মনে করতে পেরেছেন।
পুনর্জন্ম বলতে কোনো ব্যক্তি বা প্রাণীর মৃত্যুর পরেও আবার নতুন কোনো দেহে তার আত্মার জীবিত হওয়াকে বোঝায়।
তাহলে আত্মা কি করে পুরাতন দেহ ত্যাগের পর ১২ দিন অগ্নি, জল, বায়ু, সূর্য আদি পদার্থ হতে শক্তি লাভ করে? বা ১২ দিনে তাৎপর্য কি?
জাতিস্মর একটি আলাদা বিষয়, যেইক্ষেত্রে মানুষটি কোনো রকম চেতনা জাগ্রিতির ইচ্ছিত পথ অবলম্বন করেনি, কিন্তু ব্যক্তিটি এমন বিবরণ দিতে সক্ষম, যার সাথে প্রথমদ্রষ্টয়া তার কোনোরকম সম্পর্ক থাকার কোনো কারণ থাকে না। মানে সে জীবন, কর্ম চক্র ইত্যাদির কোন গূঢ় রহস্যকে উপলব্ধি করে না, কিন্তু কোনো বিশিষ্ট ঘটনাকে মনে করতে পারে। সবথেকে মজার বিষয় এটি সর্বাধিক দেখা দেয়, খুব অল্প বয়সের শিশুদের মধ্যে। যেই বয়সের শিশুদের ধর্ম, আধ্যাত্ম ইত্যাদি বিষয়ে কোনো গভীর বা গম্ভীর ধারণা থাকে না। উদাহরণের জন্য সংলগ্ন লিংকে আপনি কিছু এমন ঘটনার ব্যাপারে জানতে পারেন।
এমন ঘটনার মধ্যে একটি প্রমুখ ঘটনা ছিল, শান্তি দেবীর, যিনি ১৯২৩ এ দিল্লিতে জন্ম নিয়ে, নিজের বিগত জন্ম নিয়ে অনেক ঘটনা তথ্য মনে করতে পারেন। তিনি গত জীবনে মথুরাতে লুঙ্গডি দেবী নামে পরিচিত ছিলেন ও নিজের তৃতীয় সন্তানের জন্মের ১০ দিনে মারা জান। তিনি গ্রাম, ঠিকানা, নিজের স্বামীর নাম, মৃত্যুর দিন ইত্যাদি বলতে পারেন। দেখা হওয়ার পর তিনি তাকে সহজেই চিনতে পারেন। এই ঘটনা, মহাত্মা গান্ধীর সামনে আসায় সবার নজরে পড়ে। এখানে দুজনের মানে দুইটি জন্মের বৃত্তান্ত উপলব্ধ থাকায় ভারতের স্বনাম ধন্য জ্যোতিষ কে এন রাও সাহেব এই নিয়ে সেই সময় অধ্যয়ন করেন। জ্যোতিষশাস্ত্রে কিছু সিদ্ধান্ত আছে পূর্ব ও আগাম জন্ম বিষয়ে, যদিও সাধারনত নিষেধ করা হয় এই নিয়ে সবাইকে জানাতে। বলা হয় যখন কেউ নিজেকে আধ্যাত্মিক ভাবে উন্নত করবে তখন সে নিজেই সেই বিষয় ও শ্লোক-সিদ্ধান্ত পর্য্যন্ত পৌঁছে যাবে ও বুঝতে পারবে। তিনি এই বিষয়ের একজন মহাগুরু হওয়া সত্বেও একজন ছাত্রের মানসিকতা রেখেই অধ্যয়ন করেন, এখনও করেন। তিনি প্রথমবার লোক সমাজে এই সিদ্ধান্তের সঠিক হওয়া প্রমাণ করতে পারেন ও নিজের বইতে প্রকাশ করেন, যদিও এরপর আরো কিছু ঘটনা পাঞ্জাবের পুরন সিং ইত্যাদির ঘটনা সামনে আনা হয়, জ্যোতিষিয় অধ্যয়নে। কর্মের সিদ্ধান্ত যা হিন্দু মতে পোষন করা হয়, তারই প্রামানিক প্রভাব হয়তো হবে যে শান্তি দেবী বাচ্চা জন্মের কষ্ট ও মৃত্যুর ভয়ে, আর বিবাহ করেন নি।
সংলগ্ন লিঙ্কে আপনি এমন কিছু ঘটনার বিস্তারিত উল্লেখ পাবেন, যেখানের সমাজে হিন্দুধর্মের বা মতামতের বা সিদ্ধান্তের রেশ নেই কিন্তু সংক্রান্ত ঘটনা সমান ভাবেই চমকপ্রদ। অবশ্য তারা মনস্তত্ত্ব ও বৈজ্ঞানিক মতামত নিয়ে এর অধ্যয়ন করেন ও করছেন।এই সংলগ্ন লিঙ্কে এই বিষয়ে কিছু ধারনা পাবেন।
মানব জীবন উপলব্ধি করার জন্য। এটি সবসময় শেষ উত্তর হয়ে আসে না। কিছু প্রশ্নের উত্তর দেয়, আবার আরো গভীরতর প্রশ্নের জন্ম দেয়। আর আমাদের সব প্রশ্নের সহজ ও নিখুঁত উত্তর হবেই, তা আমাদের বৈষয়িক জীবনের মনোভাবে আবদ্ধ হয়ে সম্ভব হবে বলে মনে হয় না তা বৈজ্ঞানিক মত বা ধর্মীয় মত যেই পথেই চলে হোক।
বিভিন্ন সময় পুনর্জন্ম নিয়ে অনেকে গবেষণা করেছেন। তাদের মধ্যে একজন হলেন মনোবিজ্ঞানী ইনা স্টিভেনসন। তিনি ৪০ বছর যাবত পুর্বজন্মের কথা বলতে পারা শিশুদের উপরে ২৫০০ টিরও বেশি তদন্ত করেছেন এবং ১২টি বই লিখেছেন।
এছাড়াও আটলান্টার ইয়ার্কস ন্যাশনাল প্রাইমেট রিসার্চ প্রতিষ্ঠানটিতে কাজ করা দুই গবেষক ব্রায়ান জি. ডায়াস এবং কেরি রেসলার পুনর্জন্ম নিয়ে গবেষণা করেছেন। তারা মত দিয়েছিলেন যে পুনর্জন্ম বলে কিছু নেই। জার্মান থেরাপিস্ট ট্রুটজ হার্ডোর এ বিষয়ে গবেষণা করেছেন। তিনি তার রচিত চিলড্রেন হু হ্যাভ লিভড বিফোর: রিইনকারণেশন টুডে বইতে জানান ড্রুজ আদিবাসীদলের একটি ছেলের কথা উল্লেখ করেছেন যে পুর্বজন্মের কথা বলতে পারতো। এছাড়াও পুনর্জন্ম নিয়ে গবেষণাকালে জিম টাকার একজন শিশুর খোঁজ পান যে তার পুর্বজন্মের কথা বলেছিল। তিনি এরকম আরও অনেকের সাথে দেখা করেছেন যাদের বয়স ২ থেকে ৬ বছরের মধ্য এবং তার পুর্বজন্মের কথা বলতে পারতো।
পুনর্জন্মের প্রমাণ অন্বেষণে হেমেন্দ্রনাথ দাবি করেছিলেন যে, তিনি ৬৮ বার বিশ্ব পরিক্রমা করেছেন, সব দেশেই জাতিস্মর খুঁজে বার করতে পেরেছেন৷
মরণোত্তর জীবন ও প্রেততত্ত্ব নিয়ে গবেষণামুলক কাজ আমেরিকা-ইউরোপে বিংশ শতাব্দীর গোড়া থেকে শুরু হলেও জন্মান্তরবাদ একটা গুরুত্বপূর্ণ গবেষণার বিষয় বলে স্বীকৃত হয়েছিল কয়েকজন বৈজ্ঞানিকের অসাধারণ কিছু আবিষ্কারের ফলে৷ এঁদের মধ্যে প্রথমেই উল্লেখ করতে হয় আমেরিকার ভার্জিনিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের মনস্তত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ড. ইয়ান স্টিভেনসনের নাম৷ তিনি জন্মান্তর নিয়ে কাজ করেছেন চল্লিশ বছরেরও বেশী সময় ধরে৷ জাতিস্মরের সন্ধানে গোটা পৃথিবী ঘুরেছেন, লিখেছেন তিনশোর মতো গবেষণাপত্র এবং চোদ্দটি বই৷ গবেষণার কাজে স্টিভেনসন ভারতবর্ষেও এসেছিলেন৷ জনৈক বিশেষজ্ঞের ভাষায়, স্টিভেনসন ছিলেন একাধারে ঐতিহাসিক, আইনজীবী ও মনস্তাত্বিক, তাই তাঁর কাজ এত নিঁখুত এবং প্রামাণ্য৷ ১৯৬৬ সালে প্রকাশিত হয় তাঁর জগদ্বিখ্যাত বই ‘Twenty Cases Suggestive of Reincarnation’৷ স্টিভেনসনের লেখা পড়লে বোঝা যায়, তিনি ছিলেন অসাধারণ বাকসংযমী ৷ তাঁর লেখায় কখনোই অতিশয়োক্তি থাকতো না৷ তথ্যের বাইরে গিয়ে কোনো মতামত দিতেন না৷ তাই পরিণত বয়সে স্টিভেনসন যখন ঘোষণা করলেন— "সমস্ত তথ্যপ্রমাণ যাচাই করে মনে হচ্ছে পুনর্জন্ম সত্য, মনে হয় লোকে আগেও জন্মেছে এবং মৃত্যুর পরে আবার জন্মাবে", তখনই ইউরোপ-আমেরিকায় জন্মান্তরবাদ সম্পর্কে academic চিন্তা-ভাবনা শুরু হয় এবং খুব স্বল্প সময়ের মধ্যেই Parapsychology বিজ্ঞানের অন্যতম একটি বিষয় রূপে বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে মান্যতা পায়৷
জন্মান্তরবাদ নিয়ে বিজ্ঞানসম্মত গবেষণার সত্যিকারের স্বীকৃতির দরজা খুলে গিয়েছিল সাতের দশকের শেষ থেকে, যেদিন আমেরিকার ভার্জিনিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে, ড. স্টিভেনসনের এক ছাত্রী জন্মান্তর নিয়ে গবেষণা করার জন্য ডক্টরেট ডিগ্রি পেলেন৷ তাঁর নাম সতওয়ন্ত পসরিচা৷ আমাদের অসীম গর্বের বিষয় যে ইনি এক ভারতীয়, যিনি বিদেশে আদৃতা হয়েও তাঁর ভারতীয়ত্ব বিস্মৃত হননি৷ ড. পাসরিচা বিদেশে শিক্ষা সমাপ্ত করে আশির দশকে দেশে ফিরে বেঙ্গালুরুর নিমহ্যানসের (NIMHANS, National Institute of Mental Health And Neurosciences) সঙ্গে যুক্ত হন৷ সম্প্রতি তিনি অবসর নিয়েছেন৷
ভারতের একান্ত নিজস্ব চিন্তা জন্মান্তরবাদের বিশ্বের প্রাঙ্গণে স্বীকৃতির মহাকাব্যে নায়িকা বলে যদি ড. সতওয়ন্ত পসরিচার নাম তুলে ধরি তা হলে একজন প্রতিনায়কের নামও করতে হয়, ঘটনাচক্রে তিনি বাঙালি৷ এবার সেই প্রসঙ্গে দু-চার কথা বলেই আজকের মতো দাঁড়ি টানব৷
পাঁচের দশকের কথা৷ আমি তখন বড় হচ্ছি, সব কিছুতে অসীম কৌতূহল, রোজ খবরের কাগজ পড়া অভ্যাস, একদিন রবিবারের বাংলা কাগজে একজনের নাম আর ছবি চোখে পড়ল৷ তিনি মানুষের পরজন্ম নিয়ে গবেষণা করছেন, নাম হেমেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়৷ ব্যাপারটা ভালো বুঝিনি, মা ও দাদার শরণ নিলাম, তাঁরা আমার বুদ্ধির মাপ অনুযায়ী বিষয়টি সাজিয়ে দিলেন৷ কি বুঝেছিলাম মনে নেই, কিন্তু নামটা মনে গেঁথে গিয়েছিল৷ তার একটা কারণ হয়তো ভদ্রলোক বাঙালি হলেও তাঁর কাজ সব রাজস্থানে, থাকেনও জয়পুরে৷ তখন সবে অবনীন্দ্রনাথের ‘রাজকাহিনী’-র সঙ্গে পরিচিত হচ্ছি, রাজস্থানকে মনে হতো স্বপ্নরাজ্য৷
![]() |
হেমেন্দ্রনাথ |
তার পরেও মাঝে মাঝে কাগজে হেমেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়ের নাম বেরত, বিদেশে তাঁর গবেষণা কীরকম সমাদর পাচ্ছে তার বিবরণ দিয়ে৷ পরে বুঝেছি, সেই সময় জাতিস্মরের সন্ধানে ইয়ান স্টিভেনসন ভারতে এসেছিলেন, হেমেন্দ্রনাথ হয়েছিলেন তাঁর সফরসঙ্গী৷ স্টিভেনসন তাঁকে স্বীকৃতিও দিয়েছিলেন এবং সেই সুবাদে আমেরিকার বিশিষ্ট গবেষকদের সঙ্গে তাঁর পরিচয়ও হয়েছিল৷ ১৯৬৩ সালে রাজস্থানের রাজ্যপাল ড. সম্পূর্ণানন্দ জয়পুরে রাজস্থান বিশ্ববিদ্যালয়ে প্যারাসাইকোলজি বিভাগ খুলে হেমেন্দ্রনাথকে তার প্রধান নিযুক্ত করেন ৷ ভারতে এটিই প্রথম বিশ্ববিদ্যালয় যেখানে পরামনোবিদ্যা স্বীকৃত হয়েছিল৷ এর পরেই সত্যজিৎ রায়ের সঙ্গে হেমেন্দ্রনাথের পরিচয়৷ ‘সোনার কেল্লা’-র নির্মাণে তাঁর বিশেষ ভূমিকা ছিল, সিনেমার শেষে কৃতজ্ঞতা স্বীকারের তালিকায় তাঁর নামও আছে৷ কাহিনির প্যারাসাইকোলজিস্ট ডাঃ হাজরার চরিত্রটি তাঁর আদলে গড়া অনুমান করা যেতে পারে— দু’জনের নামের নৈকট্য— হেমেন্দ্র আর হেমাঙ্গ, চোখে পড়ার মতো৷ সাতের দশকেই হেমেন্দ্রনাথ দেশ ছেড়ে পাকাপাকিভাবে বিদেশে চলে যান৷ কিন্তু বিদেশে যাওয়ার পরে তাঁর কাজ সমাদৃত হয়নি৷
পুনর্জন্মের প্রমাণ অন্বেষণে হেমেন্দ্রনাথ দাবি করেছিলেন যে, তিনি ৬৮ বার বিশ্ব পরিক্রমা করেছেন, সব দেশেই জাতিস্মর খুঁজে বার করতে পেরেছেন৷ কিন্তু আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে সে দাবি স্বীকৃতি পায়নি৷ জন্মান্তর সম্বন্ধে প্রামাণ্য গ্রন্থের লেখক হ্যান্স টেনডাম লিখেছেন— "ব্যানার্জী জনপ্রিয়তা ভালোবাসেন এবং দ্রুত লিখতে পারেন, কিন্তু তাঁর কাজ স্টিভেনসনের ধারেও আসে না৷ তাঁর পুনর্জন্ম সন্বন্ধীয় ধারণা ধর্মভিত্তিক, গবেষণাভিত্তিক নয় (Religious and not empirical)"৷ একজন গবেষণাকারীর এতবড় অসম্মান সচরাচর চোখে পড়ে না৷
এর পরে হেমেন্দ্রনাথকে নিয়ে দেশেও অনেক প্রশ্ন উঠেছিল৷ দর্শনশাস্ত্রের কৃতী ছাত্র হেমেন্দ্রনাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের চৌকাঠ পেরিয়েই গতানুগতিক ছকে না হেঁটে নতুন পথ বেছে শুরু করেছিলেন জন্মান্তর নিয়ে গবেষণা৷ কিন্তু এই গবেষণা করতে উচ্চশিক্ষার সারস্বতকেন্দ্র বলে খ্যাত কলকাতা বা দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয় ছেড়ে তিনি রাজস্থান কেন বেছে নিয়েছিলেন, তার কোনও সদুত্তর মেলেনি৷ পথিকৃৎ হিসাবে দেশে সাফল্য, পরিচিতি এবং খ্যাতি— সবই পেয়েছিলেন হেমেন্দ্রনাথ, কিন্তু যখন তাঁর গবেষণা বিদেশের বৈজ্ঞানিকদের আতসকাঁচের মধ্যে দিয়ে দেখা হল, তখন তাঁর তথ্যসংগ্রহের প্রক্রিয়া থেকে বিশ্লেষণের পদ্ধতি— সবকিছুতেই কেন খামতি প্রকট হয়ে উঠল? কিসের অভাবে তাঁর কাজ বৃহত্তর বিদ্বৎসমাজকে খুশি করতে পারল না? প্রশ্নবাণে বিধ্বস্ত হেমেন্দ্রনাথ কিছুদিনের মধ্যেই হেমাঙ্গ হাজরার রোলমডেল না হয়ে প্রতারক ভবানন্দে পরিণত হলেন— এ শুধু তাঁর একার নয়, আমাদের জাতীয় ট্র্যাজেডি৷
এই বিস্মৃত, ভাগ্যহত, বঙ্গসন্তান যিনি সম্ভবত প্রথম ভারতীয় পরামনোবিদ, সেই হেমেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যাযের কথা দিয়ে এই লেখা শেষ করলাম৷ জন্মান্তরবাদ ও জাতিস্মর নিয়ে বহু প্রামাণ্য গবেষণা দেশে বিদেশে হয়েছে, এবং আজও হচ্ছে৷ অনুসন্ধানকারীরা অনেক চমকপ্রদ তথ্য সংগ্রহ করে জাতিস্মরবাদ সম্পর্কে আমাদের কৌতুহল বাড়িয়ে চলেছেন৷ এর পরে আপনাদের সামনে নিয়ে আসবো সেই সব গবেষকদের অভিজ্ঞতার সঞ্চয় থেকে কিছু মণি-মুক্তা৷
জাতিস্মর তদন্ত ১: দোলনচাপা
ভার্জিনিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ইয়ান স্টিভেনসন তার কেসেস অব দ্য রিইকারনেশন টাইপ’ বইটির প্রথম খণ্ডে একটি বাঙালি মেয়ে দোলনচাপা মিত্র অনেকখানি জায়গা দখল করে রয়েছে। স্বামী লােকেশ্বরানন্দের ‘লাইফ আফটার ডেথ' বইটিতেও রয়েছে দোলনচাপার উল্লেখ। ইতিপূর্বে দোলানাপার জাতিস্মর ক্ষমতার কথা প্রকাশিত হয়েছে ভারতের জনপ্রিয় একটি দৈনিক পত্রিকাসহ আরও বেশ কিছু পত্র-পত্রিকায়। ভারতবিখ্যাত পরামনােবিজ্ঞানী হেমেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় দোলনচাপার বিষয়ে অনুসন্ধান চালিয়েছিলেন। দোলানাপার জাতিস্মর হয়ে ওঠা নিয়ে আমিও দীর্ঘ অনুসন্ধান চালাই।
দোলনের জন্ম ১৯৬৭ সালের ৭ আগস্ট। বাবা মানিক মিত্র নরেন্দ্রপুর রামকৃষ্ণ মিশন-এর গ্রামসেবক ট্রেনিং সেন্টারের লেকচারার। ১৯৭১-এর গ্রীষ্মের এক দুপুরে মা কণিকাদেবী দোলনর মুখ থেকে প্রথম জানতে পারেন, দোলন নাকি আগের জন্মে বর্ধমান শহরের এক ধনী পরিবারে বুল্টি নামের একটি ছেলে ছিল। মা ছিলেন সুন্দরী। নিজেদের মন্দির ছিল। বিরাট করে পুজো হতাে। বাড়িতে ময়ুর ছিল, হরিণ ছিল। কলেজে পড়তে একবার অসুখ করে। মাথার পেছনে ব্যথা হতাে। কলকাতার হাসপাতালে বহুদিন ছিল। ডাক্তাররা রােগ ধরতে পারেননি। ওই রােগই বুল্টি মারা যায়।
১৯৭১-এ স্বামী লােকেশ্বরানন্দজীর নির্দেশে মানিকবাবু ও কণিকাদেবী দোলনকে নিয়ে বর্ধমানে যান। শহর ঘুরেও দোলন বুল্টির বাড়ি খুঁজে বের করতে পারেনি। ফিরে আসার পর দোলন নিজের মাথার পেছনে ব্যথা অনুভব করতে থাকে। ১৯৭২-এর ৩০ মার্চ দোলনের দ্বিতীয়বার বর্ধমান যাত্রা। এবার দোলনকে একটি অন্নপূর্ণা মন্দিরের কাছে নিয়ে যেতে সে চিৎকার করে ওঠে, মা, মা, এই সেই মন্দির। কাছের বিশাল বাড়িটিকে দেখিয়ে জানায়, এটাই বুল্টিদের বাড়ি। দোলন ও তার মা-বাবার দাবি, দোলন বুল্টিদের বাড়ির দেওয়ালে ঝােলানাে গ্রুপ ছবি থেকে বুল্টির বাবাকে চিনিয়ে দিয়েছিল। বুল্টির মা, ছােটভাই শিশির ও ছােট বােন রীতাকে চিনিয়ে দিয়েছিল। বুল্টি নামে সত্যি ওই পরিবারের একটি ছেলে অলৌকিক নয়, লৌকিক (প্রথম খণ্ড) মাথার যন্ত্রণার চিকিৎসা করাতে গিয়ে মারা যায় । | দোলনচাঁপার বিষয়ে আমি একটি দীর্ঘ অনুসন্ধান চালাই। এর আগে ইয়ান স্টিভেনসেন ও ডঃ হেমেন্দ্রনাথ যে অনুসন্ধান চালিয়েছিলেন তাতে বুল্টিদের পরিবারের তরফ থেকে তারা না কি কোনও সহযােগিতা পাননি। আমি অবশ্য বুল্টিদের পরিবারের কাছ থেকে যথেষ্ট সহযােগিতা পেয়েছি। ফলে দোলনের দাবির যথার্থতা পরীক্ষা করার সুযােগ আমার পক্ষে ছিল বেশি। দোলনের অনেক দাবি কাঁটায় কাঁটায় ঠিক বলে যাঁরা সাক্ষ্য নিয়েছিলাম তারা সকলেই একমত দোলন খাঁটি জাতিস্মর দোলনদের অনেক দাবিকেই এককথায় নাকচ করে দিয়েছেন বুল্টির বাবা অনাথ দে, ভাই শিশির দে এবং কাকা অনিল দে। নাকচ করে দেওয়া দাবিগুলাের মধ্যে উল্লেখযােগ্য—বুল্টির বাবা ভাই ও মাকে চিনিয়ে দেওয়ার ঘটনা। বালিকা দোলন এর পরেও অনেকের কাছেই যে-সব প্রশ্ন সবচেয়ে বড় হয়ে দেখা দেয় তা হল দোলন বুল্টিদের বাড়ি চিনল কী করে? বাড়িতে বুল্টি নামের কোনও ছেলে যে জাতিস্মর তদন্ত ১: দোলনচাঁপা ৩১৩ ছিল এবং মাথা ব্যথার একটা অসুখে মারা যায় তা জানল কী করে? দোলনের মাথায় ব্যথা হতাে কেন? বাড়ির সামনের মন্দিরের হদিসই বা জানল কী করে? দোলনের মা ও বাবা কণিকাদেবী এবং মানিকবাবু আমাকে জানিয়েছিলেন, দোলনকে নিয়ে প্রথম বর্ধমান যাত্রার আগে তারা কোনও দিন বর্ধমান যাননি। অনাথবাবু অর্থাৎ বুল্টিদের পরিবারের কারুর সঙ্গেই মানিকবাবুদের পরিবারের পরিচয় ছিল না। অতএব কেউ যদি বলেন—দোলন কারও কাছ থেকে বুল্টির কথা শুনেছিল এবং বুল্টির কাহিনি তাকে গভীর ভাবে নাড়া দিয়েছিল। ফলে বুল্টির কথা ভাবতে ভাবতে মস্তিষ্ককোষের কাজকর্মে বিশৃঙ্খলতার জন্য দোলন নিজেকে বুল্টি বলে ভাবতে শুরু করেছিল। মনােবিজ্ঞানের এই যুক্তি দোলনের ক্ষেত্রে খাটে বলে মানিক মিত্রের বিশ্বাস। বুল্টি ও তার পরিবারের বিভিন্ন ঘটনা দোলনের শােনার সম্ভাবনা ছিল কিনা, এটাই দোলনের জাতিস্মরতার দাবির ক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট। আমি এ-ক্ষেত্রে অন্তত পাঁচটি পরিবারের নাম হাজির করছি যাঁরা দোলন ও বুল্টি উভয় পরিবারেরই পরিচিত। (১) নীলাচল সামন্ত। মানিক মিত্রের বন্ধু। বুল্টির ঠাকুরদার পরিচিত। (২) স্বপ্না সামন্ত নীলাচল সামন্তর স্ত্রী। স্বপ্নাদেবীর বােন বুল্টির আত্মীয়ার ন্ধু। (৩) শশাঙ্ক ঘােষ। মানিকবাবুর বন্ধু। নরেন্দ্রপুর রামকৃষ্ণ মিশনের শিক্ষক। দে পরিবারের বিষয়ে জানতেন। (৪) ডাঃ হেমাঙ্গ চক্রবর্তী। নরেন্দ্রপুরের বাসিন্দা। মানিকবাবুদের সঙ্গে হেমাঙ্গবাবুদের পারিবারিক সখ্যতা ছিল। হেমাঙ্গবাবু ছিলেন বুল্টির বাবার বন্ধু। হেমাঙ্গবাবুর ছেলে ছিল বুল্টির বন্ধু। দোলনেরও পরিচিত (৫) রাজেন্দ্র চক্রবর্তী। বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক। মানিকবাবুর পারিবারিক বন্ধু। বুল্টিদের জানতেন।(৬) কানাই বন্দ্যোপাধ্যায়। মানিকবাবুর পরিবারের ঘনিষ্ঠ বন্ধু। বর্ধমানের মানুষ। দে পরিবারের অনেক কিছুই জানতেন। | এঁদের মধ্যে কেউ কোনও দিন দোলনের উপস্থিতিতে বুল্টির বিষয়ে কোনও কিছুই বলেননি, এমন নিশ্চিত হওয়ার মতাে কোনও তথ্য আমার হাতে নেই। দোলনের মাথায় ব্যথা হওয়ার কারণের পেছনেও অপার্থিব কিছু নেই। কিছু মানুষ বিশেষ গঠন বৈশিষ্ট্যের অধিকারী। এঁরা আবেগপ্রবণ, মস্তিষ্ককোষের সহনশীলতা এঁদের কম। বিশেষ আবেগপ্রবণতার জন্য অনেক সময় এঁরা নিজেদের অজান্তে স্বনির্দেশ পাঠিয়ে অন্যের ব্যথা নিজের শরীরে অনুভব করেন। মানসিক চিকিৎসকদের কাছে এই ধরনের বহু ঘটনার বিবরণ পাওয়া যাবে। দোলন অ আ ক খ থেকেই পড়াশুনাে শুরু করেছিল। দোলন বাস্তবিকই জাতিস্মর হলে তার পূর্বজন্মের অন্যান্য স্মৃতির মধ্যে লেখা-পড়ার স্মৃতিও উজ্জ্বল থাকাটাই ছিল স্বাভাবিক। একজন মানসিক বিশৃঙ্খলার জন্য নিজেকে অন্য কেউ ভেবে তার ব্যবহার অনুকরণ করতে পারে। ৩১৪ অলৌকিক নয়, লৌকি (প্রথম খণ্ড) কিন্তু তার জ্ঞান প্রয়ােগ করা সম্ভব নয়। দোলনের ক্ষেত্রেও এমনটাই ঘটেছিল। দোলন বল্টিদের বাড়ি চিনিয়ে দিয়েছিল ঠিকই, কিন্তু তারমধ্যে কোনও অস্বাভাবিকতা ছিল না। দোলনকে যে মন্দিরের সামনে দাঁড় করানাে হয়েছিল, তার আশে-পাশে বুল্টিদের বাড়িই সবচেয়ে বড়। জাতিস্মর বিজ্ঞানসম্মত পরীক্ষার কোনও বিষয়ই নয়। প্রশ্ন উঠতে পারে, যার কোনও বিজ্ঞানসম্মত ভিত্তিই নেই, তখন তা নিয়ে গবেষণা করব কেন? তবু আমি করেছিলাম এবং ভবিষ্যতেও করব। অপবিজ্ঞানের বিরুদ্ধে লড়াইকে এগিয়ে নিয়ে যেতে, সাধারণ মানুষদের অন্ধ বিশ্বাসকে ভাঙতে এই ধরনের সত্যানুসন্ধানের প্রয়ােজন রয়েছে বলে মনে করি। জাতিস্মর তদন্ত ২ : নতিলক এবার যে ঘটনার কথায় আসছি, তার নায়ক চরিত্রে রয়েছে ইয়ান স্টিভেনসন ও ডঃ হেমেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়। নায়িকা শ্রীলঙ্কার ছ-বছরের মেয়ে জ্ঞানতিলক। মেয়েটি নাকি পূর্বজন্মে ছিল তিলকরত্ন। ১৩ বছর ৯ মাস বয়সে তিলকরত্ন মারা যায়। তিলকরত্নের মৃত্যুর ৫ মাস পরে জ্ঞানতিলকের জন্ম। ১৯৬০ সালের নভেম্বর স্টিভেনসন ও ড: বন্দ্যোপাধ্যায় মেয়েটিকে তার পূর্বজন্মের ওপর ৬১টি প্রশ্ন করেছিলেন। ৪৬টি প্রশ্নের উত্তর ঠিক দিয়েছিল। এবং শুধুমাত্র বেশি সংখ্যায় ঠিক উত্তর দেওয়াকেই জাতিস্মরের অভ্রান্ত প্রমাণ হিসেবে এই দুই পরামনােবিজ্ঞানী গ্রহণ করেছিলেন। জ্ঞানতিলক যেসব প্রশ্নের ঠিক উত্তর দিয়েছিল তার গুটিকতক নমুনা আপনাদের সামনে হাজির করছি, (১) আমার বাবা ছিল (২) আমার মা ছিল। (৩) সমুদ্র দেখেছি। (৪) সমুদ্রের রঙ সবুজ ও নীল (৫) সমুদ্রের ধারে গাছ আছে। (৬) গাছগুলাে নারকেল গাছ। (৭) সমুদ্রের পাড়ে বালি আছে। (৮) আমার বােন ছিল।। (৯) ছােটবেলায় বােনকে মেরেছি। (১০) স্কুলে যেতাম। (১১) মা ছিলেন ফর্সা। (১২) পোেস্ট অফিসে গিয়েছি। কুসংস্কারের বিরুদ্ধে বিজ্ঞান ৩১৫ এমন সব উত্তর জানতে চাওয়ার সার্থকতা কী আমার ঠিক মাথায় ঢুকল না। পরামনােবিজ্ঞানীরা বলেছেন, জ্ঞানতিলক সমুদ্র দেখেনি, অথচ সমুদ্রের জলের রঙের সঠিক বর্ণনা দিয়েছে। সমুদ্রের পাড়ে যে নারকেল গাছ তাও বলতে পেরেছে। সমুদ্রকূলে বালির বর্ণনাও সঠিক দিয়েছে। এই সবই বলতে পেরেছে পূর্বজন্মের তিলকরত্নের সমুদ্র দেখার স্মৃতি উদ্ধার করে। সমুদ্র না দেখলে কী সমুদ্রের বর্ণনা দেওয়া যায় না। নিউ ইয়র্ক না দেখলেও কী নিউ ইয়র্কের বিরাট উঁচু উঁচু বাড়ির বর্ণনা করা অসম্ভব? রবীন্দ্রনাথকে মুখােমুখি দেখলেও কী তার চেহারা আমাদের অপরিচিত? | একটা চার-পাঁচ বছরের বাচ্চাকে হাতি, বাঘ, ভালুক, ঘােড়া, নদী, সমুদ্র, পাহাড়, ট্রেন—এইসব নানা ধরনের জিনিসের ছবি দেখিয়ে দেখবেন আপনার বয়স্ক চোখের চেয়েও ওদের চোখ অনেক বেশি ডিটেলস-এর দিকে নজর রাখে। (ছােটদের ছবি আঁকতে তার পছন্দমতাে রঙের মাঝখানে বসিয়ে দিন, দেখবেন, অনেক সময় ওদের ডিটেলসের কাজ আপনাকে অবাক করে দেবে। একটা ছােট-শিশুকে নদী, পাহাড়, সমুদ্রের রঙচঙে ছবি দেখাবার পর তাকে জিজ্ঞেস করে দেখবেন, সে প্রত্যেকটারই সঠিক বর্ণনা দিয়ে দেবে। জ্ঞানতিলক কোনও দিনই কোনও সমুদ্রের রঙিন ছবি দেখেনি, এমন কোনও প্রমাণ পাওয়া যায়নি। জ্ঞানতিলককে যে অনেক কিছু আগে থেকেই শেখানাে হয়েছিল এই ধরনের অনুমান করার মতাে অনেক ধারণা আছে। | পরামনােবিজ্ঞানীদ্বয়ের সেরা জাতিস্মর জ্ঞানতিলক কিন্তু তার জাতিস্মর ক্ষমতা সুনিশ্চিতভাবে প্রমাণ করতে পারেনি। জাতিস্মর তদন্ত ৩ : ফ্রান্সিস পুনর্জন্ম ১৯৭৭-এর এপ্রিলে শ্রীলঙ্কার কিছু খবরের কাগজে একটি জাতিস্মরের খবর প্রকাশিত হয়ে যথেষ্ট আলােড়ন সৃষ্টি করে। খবরে বলা হয়-মা তারা কাছেরীর মৃত কেরানি ফ্রান্সিস কোদিতুয়াকু তিন বছর আগে জন্ম নিয়েছে কান্দাগােদার এক পরিবারে। ফ্রান্সিস মারা যান ১৯৭৩-এর ১৬ এপ্রিল ৫২ বছর বয়সে। | কিছু পরামনােবিজ্ঞানী, গবেষক ও বৌদ্ধ সন্ন্যাসী শিশুটিকে পরীক্ষা করে জানান—ও সত্যিই জাতিস্মর। ফ্রান্সিসের জীবনের খুঁটিনাটি অনেক ঘটনা ও বর্ণনা করেছে, সেই সঙ্গে চিনিয়েও দিয়েছে পূর্বজন্মের স্ত্রী ও দুই ছেলেকে। শ্রীলঙ্কার র্যাশান্যালিষ্ট অ্যাসােসিয়েশন শিশুটির জাতিস্মর ক্ষমতা পরীক্ষা করতে এগিয়ে এল। ফ্রান্সিসের বাড়ির সঙ্গে শিশুটি আগেই পরিচিত ছিল। বেশ কয়েকবার ওই বাড়িতে গিয়েছে। ফ্রান্সিসের স্ত্রী ও দুই ছেলেকেও ভালােমতাে চেনে। অতএব র্যাশান্যালিস্ট অ্যাসােসিয়েশনের সদস্যরা একটু অন্যরকমভাবে অলৌকিক নয়, লৌকিক (প্রথম খণ্ড) পরীক্ষা নিলেন। তারা ফ্রান্সিসের অফিসের সহকর্মীদের একটি গ্রুপ ছবি সংগ্রহ করে হাজির করলেন ছােট ছেলেটির কাছে। ওই ছবির কোনও সহকর্মীকেই চিনতে পারল না ছেলেটি। ফ্রান্সিসের এক ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিলেন ধর্মদাস। ধমর্দাসের কাছে হাজির করা হলাে ছেলেটিকে। না, এবারও চিনতে পারল না। ফ্রান্সিসের জীবনের ওপর ৭০টি প্রশ্ন রাখা হয়েছিল, ৪টি মাত্র প্রশ্নের সঠিক উত্তর দিতে পেরেছিল ছেলেটি। গােটাটাই যে একটা সাজানাে ব্যাপার তা বুঝতে মােটেই অসুবিধে হয় । কাউকে ঠাকাবার ইচ্ছা থাকলে একজন মৃত ব্যক্তির সম্বন্ধে খুঁটিনাটি খবর জেনে নিয়ে সেগুলাে একটি বালক-বালিকাকে ভালােমতাে শিখিয়ে-পড়িয়ে তার অতীত জীবনের স্মৃতি বলে চালানাে মােটেই কঠিন কাজ নয়। আদিম মানুষের অজ্ঞতা থেকে সৃষ্টি হয়েছিল আত্মার, আর শাসক ও পুরােহিত সম্প্রদায়ের শােষণের সুবিধের জন্য সৃষ্টি হয়েছিল পূর্বজন্মের কর্মফল ও জন্মান্তরবাদ। জাতিস্মর তদন্ত ৪ : সুনীল দত্ত সাক্সেনা। সুনীল দত্ত সাক্সেনা আর এক বিশ্বখ্যাত জাতিস্মর। সুনীলের জাতিস্মর ক্ষমতার তথা প্রথম প্রকাশিত হয় ইণ্ডিয়ান এক্সপ্রেস পত্রিকায় ১৯৬৪’র ৩ জানুয়ারি। সুনীলের জন্ম উত্তরপ্রদেশের ছােট্ট শহর আওনলায় ১৯৫৯-এর ৭ অক্টোবর। ১৯৬৩ সাল থেকে সুনীল নাকি জানাতে থাকে সে আগের জন্মে বুধায়ুন শহরের আদিবাসী ছিল। বুধায়ুন আওনলা থেকে মাত্র ৩৫ কিলােমিটার দূরে। সুনীলের বাবার সম্পর্কে কাকা এস. প্রসাদ বুধায়ুনের বাসিন্দা। তাঁর বাড়িতেই সুনীলকে আনা হয়। এখানে এসে এক এক করে সুনীল অনেক কথাই জানায়। সে ছিল বিশাল ধনী। বিশাল বাড়ি ছিল, ঘােড়া ছিল, মােটর গাড়ি ছিল, ফ্রিজ ছিল, ফ্যাক্টরি ছিল। কলে: ৮ষ্ঠা করছিল। কলেজের অধ্যক্ষ ছিলেন বন্ধু পাঠকজি। চার বিয়ে। তিন স্ত্রীর মৃত্যুর পর চতুর্থ বিয়ে। দুই ছেলে। একটি নিজের, একটি পােষ্য। চতুর্থ স্ত্রী জলে বিষ মিশিয়ে খাইয়েছিলেন। তাতেই মৃত্যু। আগের জন্মে ছিল কিষেণ। | সুনীলের জাতিস্মর ক্ষমতার খবর বুধায়ুনে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ল। সাধারণ মানুষের প্রধান আলােচনার বিষয় হয়ে দাঁড়াল সুনীল। তারা ধরে নিলেন কিষেণ বলতে সুনীল শেঠ শ্রীকৃষ্ণজিকেই বােঝাচ্ছে। শেঠ শ্রীকৃষ্ণজির মৃত্যু সুনীলের জন্মের আগেই। তিনি বুধায়ুনের বিশিষ্ট ধনী। কলেজ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। অধ্যক্ষ পদে বসিয়েছিলেন বন্ধু পাঠকজিকে। তৃতীয় পত্নীর মৃত্যুর পর ১৯৪৩ সালে শেঠজি বিয়ে করেন যােড়শী সুন্দরী শকুন্তলাদেবীকে। শেঠজির দুই ছেলে। বড় দত্তকপুত্র শ্যামপ্রসাদ, ছােট তৃতীয় পত্নীর পুত্র রামপ্রসাদ। সুনীলের দেওয়া আর অনেক তথ্যই মিলে যাচ্ছে। ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসে সুনীলের খবর প্রকাশিত হওয়ার পর ১৯৬৪-র ডিসেম্বরে দুই পরামনােবিজ্ঞানী ইয়ান স্টিভেনসন এবং পি পাল সুনীলের বিষয়ে অসুসন্ধানে কুসংস্কারের বিরুদ্ধে বিজ্ঞান ৩১৭ নামেন। ১৯৭৪-এ অনুসন্ধানে নামলেন আর এক পরামনােবিজ্ঞানী ডঃ এল পি মেহেরােত্ৰা। অনুসন্ধান শেষে তিনজনের দাবি সুনীল জাতিস্মর। সুনীলের দেওয়া বেশির ভাগ তথ্যই না কি আশ্চর্য রকমের ঠিক। সুনীল না কি শ্রীকৃষ্ণজির পুরনাে বন্ধু এবং কর্মচারিদের চিনতে পেরেছিলেন। ইয়ান স্টিভেনসন তাে সুনীলকে নিয়ে বই-ও লিখে ফেললেন। পৃথিবীজুড়ে হই-চই পড়ে গেল। সুনীলকে নিয়ে প্রকাশিত তিন পরামনােবিজ্ঞানীর রিপাের্ট পড়েছি। এই প্রসঙ্গে শকুন্তলাদেবী, রামপ্রসাদ, শ্যামপ্রসাদ, শেঠ শ্রীকৃষ্ণ কলেজের অধ্যক্ষ নরেন্দ্রমােহন পাণ্ডে, ওই কলেজের প্রাক্তন অধ্যক্ষ ও শেঠজির বন্ধু এস পি পাঠকের বক্তব্যও জেনেছি। তাঁদের বক্তব্যে এটা স্পষ্ট যে রামপ্রসাদ, শ্যামপ্রসাদসহ শেঠজির ঘনিষ্ঠ আত্মীয়দের প্রায় সকলকেই চিনতে ব্যর্থ হয়েছিল সুনীল। সুনীলকে শেঠজির প্রতিষ্ঠিত কলেজে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। অধ্যক্ষের চেয়ারে বসা নরেন্দ্রমােহন পাণ্ডেকে পাঠকজি বলে সুনীল চিহ্নিত করেছিল। পাঠকজি ছিলেন শেঠজির জীবনদশায় কলেজের অধ্যক্ষ। রামপ্রসাদ সুনীলকে শেঠজির মােটরগাড়ির ও ঘােড়ার রঙ কী ছিল, জিজ্ঞেস করায় সুনীল জানিয়েছিল গাড়ি ও ঘােড়ার রঙ ছিল কালাে। শকুন্তলাদেবী এবং রামপ্রসাদের জবানিতে জানতে পারি গাড়ির রঙ ছিল চকোলেট এবং ঘােড়ার রঙ ঘন বাদামী। এঁদের জবানিতে আরও জানা যায় শেঠজি কোনদিনই ফ্রিজ ব্যবহার করেননি। এরপরেও অনেকের মনেই এ-প্রশ্ন নিশ্চয়ই উঁকি দিতে পারে, যে-সব তথ্য সুনীল সঠিক দিয়েছিল জাতিস্মর না হলে সেগুলাে জানল কি করে? এখানেও আমি লক্ষ্য করেছি শেঠ শ্রীকৃষ্ণ সম্পর্কে তথ্যগুলাে জানার সমস্তরকম সম্ভাবনাই সুনীলের ছিল। সুনীলের বাবার সম্পর্কে কাকা এস. প্রসাদ ছিলেন শ্রীকৃষ্ণজির যথেষ্ট ঘনিষ্ঠ। প্রসাদজির সঙ্গে সুনীলদেরও সম্পর্ক ছিল খুবই ঘনিষ্ঠ। সুনীলের কাকা জয়নারায়ণ সাক্সেনা ছিলেন ছিলেন রাজ্যের এক মন্ত্রীর পি-এ এবং শ্রীকৃষ্ণজির বিষয়ে তিনি ভালােমতােই ওয়াকিবহাল ছিলেন। সুনীলের বাবা সি এল সাক্সেনা যে স্টোরেজে কাজ করতেন, তার মালিক ছিলেন শেঠ শ্রীকৃষ্ণেরই ঘনিষ্ঠ বন্ধু শিবনারায়ণ দাস। এঁদের কারও কাছ থেকে শেঠজির বিষয় শুনে নিজেকে শেঠজি বলে ভাবতে ভাবতে বিশ্বাস করার সম্ভাবনা সুনীলের ক্ষেত্রে রয়েছে। এটাও অসম্ভব নয় যে শেঠজির বিশাল সম্পত্তিতে ভাগ বসাবার লােভই সুনীলকে পূর্বজন্মের শ্রীকৃষ্ণজি বলে হাজির করা হয়েছিল। " | শেঠজির মৃত্যুর পর শকুন্তলাদেবী শেঠজির দত্তক-পুত্র শ্যামাপ্রসাদকে বিয়ে করায় শকুন্তলাদেবী নাবালক রামপ্রসাদের অভিভাবকত্ব হারান এবং সম্পত্তি নিয়ে একটা গােলমাল পাকিয়ে ওঠে। এই পরিস্থিতিতে সুনীলের পরিবারের তরফ থেকে। সুনীলকেই শেঠজি হিসেবে হাজির করে পত্র-পত্রিকায় ও স্থানীয় মহলে এমন একটা ৩১৮ অলৌকিক নয়, লৌকিক (প্রথম খণ্ড) সােরােল তােলা হয়েছিল যে, স্থানীয় জনগণ সুনীলকে বাস্তবিকই শেঠজি বলে গ্রহণ করেছিলেন। | রামপ্রসাদ এবং পাঠকজি স্পষ্টতই সন্দেহ প্রকাশ করেছিলেন সুনীলের এই জাতিস্মরের দাবির পেছনে শেঠজির সম্পত্তি দাবির অভিসন্ধি লুকনাে ছিল। অর্থাৎ সুনীলের ক্ষেত্রে দুটি সম্ভাবনাই থেকে যাচ্ছে। হয় সে মানসিক রােগী, অথবা প্রতারক। জাতিস্মর তদন্ত ৫ : প্রদীপ | প্রদীপের জন্ম ১৯৮৩-তে। এরই মধ্যে বিভিন্ন হিন্দি পত্র-পত্রিকার কল্যাণে প্রদীপ জাতিস্মর হিসেবে যথেষ্ট প্রচার পেয়েছে। প্রদীপের বাড়ি উত্তরপ্রদেশের আলিগড় জেলার সীতামাই গ্রামে। গ্রামের প্রায় সকলেই গরিব ভূমিহীন কৃষক। প্রদীপরাও এর বাইরে নয়, প্রদীপের বাড়ি বলতে মাটির চার দেওয়ালের ওপর খড়ের চাল। বিভিন্ন পত্র-পত্রিকার প্রতিবেদন থেকে জানতে পারা যায়, প্রদীপ হঠাৎ-ই একদিন বলতে শুরু করল, ওর গত জন্মের নাম ছিল কুল্লো লালা। থাকত মেদু গ্রামে। ব্যবসা করত। যথেষ্ট ধনী ছিল। | প্রদীপের কথায় কেউই মাথা ঘামায়নি। বাচ্চা ছেলের খামখেয়ালি বলে উড়িয়ে দিয়েছেন। মেদু সীতামাই থেকে বারাে কিলােমিটার দূরে। মেদুর এক ফলওয়ালা ফেরি করে ফল বিক্রি করত। সীতামাইতেও যেত ফলের পসরা নিয়ে। সেখানে প্রদীপের মুখে কুল্লো লালা ও মেদু গ্রামের কথা শুনে চমকে উঠল। সত্যিই তাে মেদু গ্রামে কুল্লো লালা ছিলেন। ১৯৮০ সালের ৭ সেপ্টেম্বর চম্বলের ডাকাতদের গুলিতে মারা গেছেন। কতই বা বয়স তখন কুল্লোর? বছর বত্রিশ। ফলওয়ালা প্রদীপের কথা জানাল কুল্লোর দাদা মুন্না লালাকে। মুন্নাও ধনী ব্যবসায়ী। নিজের ধান্দাতেই ব্যস্ত থাকেন। প্রদীপের কথা কানে গেল কুল্লোর স্ত্রী সুধা ও দুই ছেলে রবিকান্ত ও প্রকাশের। প্রধানত সুধা রবি ও প্রকাশের আগ্রহে মুন্না লালা একদিন ফলওয়ালার সঙ্গে সীতামাই গেলেন। প্রদীপের সঙ্গে দেখা করতেই বিস্মিত হলেন। প্রদীপ মুন্নাকে চিনতে পেরেছিল কুল্লোর দাদা বলে। মুন্না প্রদীপকে মেদুতে নিয়ে এলেন। | মেদুতে এসে আরও অনেক চমক দেখাল প্রদীপ। চিনতে পারল স্ত্রী সুধাকে, দুই ছেলে রবিকান্ত ও প্রকাশকে। কুল্লো লালা ফিরে এসেছেন শুনে তার পরচিতেরা অনেকেই এমন এক বিস্ময়কর ঘটনাকে নিজের চোখে দেখতে ছুটে এলেন। প্রদীপ প্রত্যেককে চিনতে পারল। প্রত্যেক ঘটনার আকস্মিকতায় হতবাক। প্রদীপ একটা তাক থেকে কিছু টাকা বের করল। যে টাকা মৃত্যুর আগে কুল্লো রেখেছিল। এই টাকার হদিস কুল্লো ও সুধা ছাড়া আর কারােরই জানা ছিল না। কুসংস্কারের বিরুদ্ধে বিজ্ঞান পত্র-পত্রিকায় এই জাতীয় প্রতিবেদন পড়ার পর সাধারণ মানুষ মাত্রেই ধরে নিয়েছিলেন আত্মা যে অমর, পুনর্জন্ম আছে তারই অব্যর্থ প্রমাণ এই প্রদীপ। প্রদীপের জাতিস্মর রহস্যের উন্মােচন করা ছিল যুক্তিবাদীদের কাছে চ্যালেঞ্জ। যুক্তিবাদী এডামারুকু তথ্যানুসন্ধানে হাজির হলেন মেদু গ্রামে। মুন্না লালা তার বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তরে জানালেন, খবরের কাগজের প্রতিবেদনগুলাে সত্যি নয়। সম্ভবত রঙ-চঙে গল্প ফেঁদে পাঠকদের আকর্ষণ করার জন্য ওইসব লিখেছে। নতুবা এমনসব মিথ্যে লেখার কারণ কি থাকতে পারে? মুন্নার কথায় আসল ঘটনা হলাে, এক ফলবিক্রেতা প্রায় দিনই এসে ঘ্যান ঘ্যান করত সীতামাই গ্রামে নাকি কুল্লো আবার জন্ম নিয়েছে প্রদীপ নামে। ও নাকি হলফ করে বলতে পারে প্রদীপই কুল্লো। ফলবিক্রেতার কথায় একটুও বিশ্বাস করিনি, একটুও আমল দেইনি। তবু দিনের পর দিন ও এসেছে। একই কথা বলে গেছে। শেষ পর্যন্ত কুল্লোর স্ত্রী ও ছেলেদের কথায় প্রদীপকে দেখতে গেছি, সঙ্গী হয়েছিল ওই ফলবিক্রেতা। | প্রদীপের বাড়ি গিয়ে এই ফলবিক্রেতা আমাকে দেখিয়ে বলেছিল, আমি কুল্লোর বড় ভাই মুন্না, আমাকে প্রদীপ চিনতে পারছে কিনা? প্রদীপ বলেছিল, চিনতে পারছে, তারপরই একদৌড়ে খেলতে চলে গিয়েছিল। প্রশ্ন—প্রদীপকে আপনি মেদুতে নিয়ে আসার পর আপনার কি মনে হয়েছিল ও কুলাে? | উত্তর–না মশাই আমি প্রদীপকে আদৌ নিয়ে আসিনি, আমি সীতামাই থেকে ফিরে আসার পর হঠাৎই একদিন প্রদীপকে নিয়ে ওর মা-বাবা ও সেই ফলবিক্রেতা এসে হাজির। সেই সময় ও অবশ্য আমাকে চিনতে পেরেছিল। প্রশ্ন—ওর পূর্বজন্মের স্ত্রীকে কি চিনতে পেরেছিল? উত্তর-না। প্রদীপের বাবা প্রদীপকে জিজ্ঞেস করেছিলেন, বলাে তাে তােমার আগের জন্মের বউয়ের নাম কী? | উত্তরে প্রদীপ জানিয়েছিল—সুধা। ওর মুখে সুধা’ নামটা শুনে আমাদের পরিবারের সকলেই অবাক হয়ে গিয়েছিলাম। পরে অবশ্য মনে হয়েছে—প্রদীপকে হয়তাে শেখানাে হয়েছিল ওর আগের জন্মের স্ত্রীর নাম সুধা। কাছাকাছি গ্রাম। সুতরাং এ-সব বাড়ির খবর কারও জানার ইচ্ছে থাকলে নিশ্চয়ই জেনে নিতে পারে। মুন্না জানিয়েছেন, প্রদীপের তাক থেকে টাকা বের করার কথাটা একেবারেই গপ্পো কথা। মুন্না আরও জানালেন, পত্র-পত্রিকায় যেভাবে লেখা হয়েছে প্রদীপ কুল্লোর ছেলেদের ও পরিচিতজনদের চিনতে পেরেছিল, ব্যাপারটা ঠিক তেমনভাবে ৩২০ অলৌকিক নয়, লৌকিক (প্রথম খণ্ড) ঘটেনি। কুল্লোর পরিচিতজনেরা ও দুই ছেলে প্রদীপকে ঘিরে দাঁড়িয়ে ছিল। তাদের অনেকেই প্রশ্ন করছিল—আমাকে চিনতে পারছ? প্রদীপ একসময় উত্তর দিয়েছিল—তােমাদের প্রত্যেককে আমি চিনতে পারছি। সুধা জানিয়েছিলেন, প্রদীপ তাকে সুধা বলে চিনতে পেরেছিল—কথাটা ঠিক নয়। প্রদীপ জানিয়েছিল তার আগের জন্মের স্ত্রীর নাম সুধা। প্রশ্ন—আপনি কি প্রদীপকে কোনও প্রশ্ন করেছিলেন? উত্তর-হা, বিয়ের রাতে আমার স্বামী আমাকে যে আংটিটা দিয়েছিলেন, সেটা দেখিয়ে প্রদীপকে জিজ্ঞেস করেছিলাম, বলাে তাে এটা কবে আমাকে দিয়েছিলে? প্রশ্ন—কি উত্তর দিল? উত্তর—আমার আংটিটা দেখে কোনও উত্তর না দিয়ে বলল—পরে বলব। কিন্তু আর বলেনি। রবিকান্ত ও প্রকাশ জানালেন তাদের দুজনকে প্রদীপ চিনতে পারেনি। কুল্লোর দুই ছেলের নাম বলেছে। এ তাে সামান্য চেষ্টাতেই আগে থেকে জেনে নেওয়া সম্ভব। প্রদীপ আগের জন্মে বাবা ছিল, এমনটা মেনে নিতে দু'জনেরই ঘােরতর আপত্তি আছে। প্রতিবেদক সীতামাই গ্রামে প্রদীপের বাড়ি হাজির হয়েছিলেন মিথ্যে পরিচয়ে—কুল্লো লালার আত্মীয়। প্রদীপকে যখন প্রশ্ন করা হলাে, “তােমার আগের জন্মের নাম কী ছিল?” “কুল্লো লালা, তাই নয়?” বলে প্রদীপ ওর মায়ের দিকে তাকাল। “তােমার আগের জন্মের স্ত্রীর নাম কি ছিল?” ‘সুধা বলল সুধা।” মা ও বাবা প্রদীপকে উত্তর যুগিয়ে দিলেন। প্রদীপ বলল, “হ্যা সুধা।” | “যখন তুমি কুল্লো ছিলে তখন কোন কলেজে পড়তে মনে আছে? মথুরা কলেজ, না আলিগড় কলেজে?” প্রদীপ মায়ের দিকে তাকাল। প্রতিবেদকের আবার প্রশ্ন-“তুমি আলিগড় কলেজে পড়তে মনে পড়ছে না?” প্রদীপ উত্তর দিল, “হা মনে পড়েছে। আলিগড় কলেজে পড়তাম।” বাস্তবে কুল্লো ক্লাস ফোর পর্যন্ত পড়েছিলেন। ফেরার সময় প্রতিবেদক ১৯৮৭ সালের মডেলের মারুতিতে উঠতে উঠতে প্রদীপকে বলেছিলেন, “মনে পড়ছে, এই গাড়িটা তুমি আগের জন্মে নিজেই ঘলাতে?” প্রদীপ ঘাড় নেড়ে বলল, “হা, মনে পড়েছে।” বুঝুন? ১৯৮৭ সালের মডেল ১৯৮০ সালে মৃত কুল্লো চালাতেন? লালা পরিবারের প্রত্যেকেরই সন্দেহ প্রদীপকে কুল্লো বলে চালাবার পেছনে কুসংস্কারের বিরুদ্ধে বিজ্ঞান প্রদীপের পরিবার ও ফলবিক্রেতার গভীর কোনও উদ্দেশ্য রয়েছে। সম্ভবত ধনী লালা পরিবারের ধনের লােভই প্রদীপকে কুল্লো সাজাতে চাইছে ওরা। জাতিস্মর তদন্ত ৬ : কলকাতায় জাতিস্মর গত শতকের তিনের দশকে কলকাতায় একটি বাঙালি মেয়েকে নিয়ে দস্তুরমত হইচই পড়ে গিয়েছিল। মেয়েটি নাকি জাতিস্মর। পত্র-পত্রিকায় প্রচুর লেখালেখি হলাে। মেয়েটি জানিয়েছিল, পূর্বজন্মে সে কলকাতা থেকে বহুদুরে একটি অখ্যাত পল্লীগ্রামে থাকত। মৃত্যু হয়েছিল জলে ডুবে। মেয়েটি তার পূর্বজন্মের নাম, বাবার নাম, ও গ্রামের নাম জানিয়েছিল। জলে ডুবে যাওয়ার ঘটনাটির একটা মােটামুটি বিশদ বিবরণ দিয়েছিল। মেয়েটির বাবা-মা স্পষ্টতই জানিয়েছিলেন, তারা কেউ কোনও দিনই ওই গ্রামে যাননি। এমনকি ওই গ্রামের নাম পর্যন্ত শােনেননি। না, মেয়েটি তার পূর্বজন্মের বাবার যে নাম বলেছে তার সঙ্গে কোনও রকম পরিচয় বা যােগাযােগ মেয়েটির পরিবারে সঙ্গে ছিল না। সত্যিই আশ্চর্য ব্যাপার! ওইটুকু মেয়ে কীভাবে বানিয়ে বানিয়ে বলেছে? সত্য যাচাই করতে কলকাতা থেকে উৎসাহী সাংবাদিক গেলেন গ্রামটির সন্ধানে। আরও অনেক বিস্ময় সাংবাদিকটির জন্য অপেক্ষা করছিল। সত্যিই ওই নামের গ্রাম খুঁজে পেলেন। জানতে পারলেন, মেয়েটি পূর্বজন্মের যে নামটি জানিয়েছিল সেই নামের একটি নােক ওই গ্রামেই থাকত এবং পনেরাে বছর আগে মারা যায় জলে ডুবেই। মৃতের বাবার নামও—মেয়েটি যা বলেছিল তাই। | মেয়েটির ক্ষেত্রে এমন ঘটনা কেন ঘটল? যতদূর জানা যায় তাতে প্রায় নিশ্চিতভাবেই সাংবাদিকেরা একথা বলতেই পারেন, বালিকাটির পক্ষে মৃত মানুষটির বিষয়ে এত কিছু জানার সম্ভাবনা ও সুযােগ ছিল না। আর ঘটনাটাও এমন টাটকা নয় যে, পত্রিকায় মৃত্যুর খবরটা পড়ে ছিল। মনােবিজ্ঞানী বা মনােরােগ চিকিৎসকরা জন্মান্তরকে অস্বীকার করার তাগিদে অবশ্য জোর করে একটা তথ্য হাজির করার চেষ্টা করতে পারেন—মেয়েটি জলে-ডােবা মানুষটির বিষয়ে শুনেছিল এবং দুর্ঘটনার খবরটি তাকে আকর্ষণ করেছিল, ফলে মেয়েটির চিন্তায় ওই মৃত মানুষটি বারবার হানা দিত। বালিকার কল্পনাপ্রবণ, আবেগপ্রবণ মনে স্থিতিস্থাপকতা ও সহনশীলতা কম থাকার দরুন কল্পনাবিলাসী মন একসময় ভাবতে শুরু করে আমিই সেই মৃত মানুষটি। এই ভাবনাই কোনও একসময় বিশ্বাসে রূপান্তরিত হয়। মনােবিজ্ঞানীদের এমন ব্যাখ্যার পেছনে জানার সুযােগ চাই। এক্ষেত্রে যে সুযোেগ তাে অনুপস্থিত। অতএব? এই জাতিস্মর রহস্য সন্ধানের জন্য ডাঃ গিরীন্দ্রশেখর বসু-কে অনুরােধ করেন। একটি সংবাদপত্র। ডাঃ গিরীন্দ্রশেখর বসু ভারতে মনােরােগ চিকিৎসা এবং অলৌকিক নয়, লৌকিক (প্রথম খণ্ড)- ২১ ৩২২ অলৌকিক নয়, লৌকিক (প্রথম খণ্ড) মনােসমীক্ষণের অন্যতম পথিকৃৎ। ডাঃ বসু ঘটনাটির কারণ বিশ্লেষণের জন্য বালিকাটিকে পরপর কদিন পরীক্ষা ও মনঃসমীক্ষা করেন। | একদিনের ঘটনা ডাঃ বসু মেয়েটিদের বৈঠকখানায় বসে আছেন। হঠাৎই চোখে পড়ল ঐ ঘরের আলমারিতে কতকগুলাে পুরনাে বাঁধানাে সাময়িকী ও পত্রিকার ওপর। আলমারি খােলা। সময় কাটাতে, নিছকই খেয়ালের বশে বাঁধানাে সাময়িকীগুলাে নাড়াচাড়া করতে লাগলেন, পাতা উলটাতে লাগলেন। একটা সাময়িকীর একটা পৃষ্ঠায় এসে ডাঃ বসু উত্তেজিত হয়ে উঠলেন। ঐ পৃষ্ঠাতেই জনৈক গ্রামীণ সংবাদদাতা একটি জলে ডােবার ঘটনা জানিয়েছেন। গ্রামের নাম, মৃতের নাম ও তার বাবার নাম ও বিস্তৃত ঘটনাটি পাঠ করতে করতে পনের বছরের পুরনাে। মেয়েটি যে ডাঃ বসুর মতােই কোনও এক অবসর সময়ে বাঁধানাে বইগুলাে টেনে নিয়ে পড়তে পড়তে এই ঘটনাও পড়ে ফেলেছিল এতে আর কোনও সন্দেহ নেই। তারপর ঐ ঘটনাটি নিয়ে ক্রমাগত ভাবতে ভাবতে অবচেতন মনে সেই জলে ডোেবা মানুষটির সঙ্গে নিজেকে একাত্ম করে নিয়েছিল। ডাঃ বসু মেয়েটিকে ওই পৃষ্ঠাটি দেখানাের পর মেয়েটির স্মৃতি ধীরে ধীরে ফিরে আসে। ও জানায় লেখাটি আগে পড়েছিল। তবে লেখাটি পড়ার কথা ভুলে গিয়েছিল। মনে ছিল শুধু ঘটনাটি। তাই এতদিন অনিচ্ছাকৃতভাবে ভুল বলেছিল- জলে ডােবার ঘটনাটি শােনেনি। মেয়েটি ডাঃ বসুর আকস্মিকভাবে পাওয়া যােগসূত্রের কল্যাণে ‘জাতিস্মর’ নামক মানসিক রােগী হওয়ার হাত থেকে বেঁচে যায়। | তবে স্বভাবতই সবসময় এমন আকস্মিক যােগাযােগ অনুসন্ধানীদের নাও জুটতে পারে। এই না জোটার অর্থ এই নয় যে, জাতিস্মরের বাস্তব অস্তিত্ব সম্ভব। (জাতিস্মর নিয়ে আরও বহু কেস-হিষ্ট্রি’ ও সেসব নিয়ে বিস্তৃত অনুসন্ধান পাবেন ‘অলৌকিক নয়, লৌকিক’ গ্রন্থের ৪র্থ খণ্ডে)
অলৌকিক নয়, লৌকিক ৪র্থ খন্ড - প্রবীর ঘোষ প্রবীর ঘোষ তিনি যুক্তিবাদ প্রসার সহায়ক ও অলৌকিকতা বিরোধী একাধিক গ্রন্থের লেখক। যে মোহাম্মদ আলির মত বিখ্যাত মুষ্টিযোদ্ধাও দাবি করেন যে তিনি শূন্যে ভাসতে পারেন এবং স্বয়ং ঈশ্বর তাকে এ ক্ষমতা দিয়েছেন সেই বিখ্যাত লোকের অলৌকিক ক্ষমতাকেও এই প্রবীর ঘোষ লৌকিক বলে প্রমাণ করেছেন ।আমি আপনাদের অনুরোধ করবো- আপনারা অবশ্যই- অলৌকিক নয় লৌকিক ১ম-৫ম খন্ড পড়বেন ।আমি জোর দিয়ে বলতে পারি বইগুলো পড়ে আপনি যা পাবেন তা হয়ত সারা জীবনেও পাবেননা এবং আমার কথা সারা জীবন মনে রাখা লাগবে । বইগুলো পড়লে ৯৯% অলৌকিক বিশ্বাস দূর হয়ে যাবে । বাকি ১% আপনার নিজের উপর ।একজন আজীবন সংগ্রামী ও যুক্তিবাদী মানুষ হচ্ছেন প্রবীর ঘোষ। তার ‘অলৌকিক নয় লৌকিক’ গ্রন্থটি আক্ষরিক অর্থেই অন্ধকার থেকে আলোতে উত্তোরণের দর্শন। দেশে সুশিক্ষার রাজত্ব গড়ে উঠলে অবক্ষয় ও বিপথগামিতা থেকে তরুণ-তরুণীরা রক্ষা পাবে। আমা্দের মনে রাখা দরকার- আলোর নিয়ম অনুসারে কোন বস্তুর উপর আলো পরলে তা থেকে যদি আলো প্রতিফলিত হয় তবেই সেই বস্তুকে দেখা যাক,যা থেকে যত বেশি আলো নিসৃঃত হবে তাকে তত উজ্জ্বল দেখাবে। (আমারব্লগের রাজিব খানের লেখা থেকে রিভিউটি সংগ্রহীত) Download
জাতিস্মররা হয় মানসিক রােগী, নয় প্রতারক
ছােটবেলা থেকেই হিন্দুরা পুরাণের গল্প, রামায়ণ-মহাভারতের গল্প, অবতারদের গল্প একনাগাড়ে শুনতে শুনতে ও পড়তে পড়তে একসময় বিশ্বাস করতে শুরু করি আত্মা অমর। মৃত্যুতেই সবকিছু শেষ হয়ে যায় না। আমরা আবার জন্মাই। আমাদের মধ্যেই কেউ কেউ পূর্বজন্মের স্মৃতি উদ্ধার করতে পারে। এদেরকেই বলি জাতিস্মর।
মুসলিম বা খ্রিস্টান ধর্ম যেহেতু পুনর্জন্মে বিশ্বাস করে না, তাই
তারা ছােটবেলা থেকেই এমন এক পরিবেশে মানুষ হয়,
যেখানে পুনর্জন্মের কোনও স্থান নেই। সুতরাং
বড় হয়ে ওঠার পর তাদের কাছে।
পুনর্জন্ম এক অবাস্তব চিন্তা।
তারা ছােটবেলা থেকেই এমন এক পরিবেশে মানুষ হয়,
যেখানে পুনর্জন্মের কোনও স্থান নেই। সুতরাং
বড় হয়ে ওঠার পর তাদের কাছে।
পুনর্জন্ম এক অবাস্তব চিন্তা।
পরামনােবিজ্ঞানীরা জন্মান্তরে বিশ্বাস করেন। পূনর্জন্ম বা জন্মান্তরবাদ দাঁড়িয়ে রয়েছে অন্ধবিশ্বাসের ওপর।
কিছু পরামনােবিজ্ঞানী দাবি করেন, তারা সন্মােহন করে সম্মােহিত ব্যক্তির স্মৃতিকে পিছােতে পিছােতে শূন্য বয়স এবং জন্মলগ্ন অতিক্রম করে তার পূর্বজন্মের দিনগুলােতেও নিয়ে যেতে পারেন।
মনােবিজ্ঞান মনে করে কোনও একজন প্রবীণ ব্যক্তিকে সম্মােহন করে তার হারিয়ে যাওয়া শৈশবের কিছু স্মৃতিকে আবার উদ্ধার করা সম্ভব। কারণ সম্মােহিত ব্যক্তির বেশ কিছু শৈশব স্মৃতি মস্তিষ্ক কোষে সঞ্চিত থাকে। যে-ভাবে স্মৃতি সঞ্চিত থাকে কম্পিউটারে। কম্পিউটারকে ঠিকমতাে চালিয়ে যেমন সঞ্চিত স্মৃতি উদ্ধার করা সম্ভব, ঠিক তেমনি করেই সম্মােহনের সাহায্যে মানুষের অতীতের কিছু সঞ্চিত অথচ চাপা পড়ে থাকা স্মৃতিকে উদ্ধার করা সম্ভব।
| মনােবিজ্ঞান সম্মােহনের সাহায্যে অতীত স্মৃতি উদ্ধারের তত্তকে মেনে নিয়েছে। কিন্তু পূর্বজন্মের স্মৃতি উদ্ধারের তত্ত্বকে কখনই মেনে নেয়নি।
পরামনােবিজ্ঞানীদের কথামত আত্মার শরীরও নেই, মস্তিষ্কও
নেই। মস্তিষ্ক না থাকলে মস্তিষ্ক কোষও নেই। মস্তিষ্ক
কোষ না থাকলে স্মৃতি জমা থাকার প্রশ্ন নেই।
পূর্বজন্মের স্মৃতি উদ্ধারেরও প্রশ্ন নেই।
নেই। মস্তিষ্ক না থাকলে মস্তিষ্ক কোষও নেই। মস্তিষ্ক
কোষ না থাকলে স্মৃতি জমা থাকার প্রশ্ন নেই।
পূর্বজন্মের স্মৃতি উদ্ধারেরও প্রশ্ন নেই।
বিজ্ঞানসম্মতভাবে আত্মার অস্তিত্ব প্রমাণিত হয়নি, প্রমাণিত হবেও না। আত্মার
অস্তিত্বই যখন নেই, তখন আত্মার পুনর্জন্ম আসছে কোথা থেকে?
ধরা গেল, কোনও ব্যক্তিকে সম্মােহিত করে তার মধ্যে যদি এই ধারণা সঞ্চারিত করা যায় যে, তিনি গতজন্মে রামবাবু ছিলেন। একুশ বছর বয়সে বিয়ে করেছিলেন শ্যামাসুন্দরীকে। থাকতেন শ্যামপুকুরে। দুই ছেলে ও এক মেয়ের নাম ছিল যথাক্রমে হলধর, গুণধর ও লক্ষ্মী। চাকরি করতেন কলকাতা পুলিশে। একবার হাত ভেঙেছিল, আর একবার নাক। লক্ষ্মীর জন্মের পর একটা প্রমােশন পেয়েছিলেন একান্ন বছর বয়সে। প্রাণ গিয়েছিল ডাকাতের গুলিতে।
এইবার কিছু সাক্ষী-সাবুদের সামনে লােকটিকে আবার সম্মােহিত করে তার গত জন্মের বিষয় জানতে চাইলে তিনি মস্তিষ্কে সঞ্চারিত রামবাবুর কথাই বলে যাবেন।
ধরে নিলাম সম্মােহন করতে জানেন। তিনি যদি জাতিস্মরতা প্রমাণে জন্য কোনও মৃত ব্যক্তির বিষয়ে বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ করে কোনও সম্মােহিত ব্যক্তির মস্তিষ্কে সাজেশন’ পাঠিয়ে তথ্যগুলাে সঞ্চারিত করলেন। পরবর্তীকালে লােকটিকে সম্মােহিত করে সঞ্চারিত তথ্যগুলােতেই আবার বলিয়ে নিতেই পারেন। সুতরাং, এখানে একটা বিরাট ফকির সুযােগ থেকেই যাচ্ছে। সম্মােহনের সাহায্যে একজনকে জাতিস্মর বলে হাজির করার ফঁাকি।
সাধারণত দু-ধরনের জাতিস্মর দেখা যায়। এক: মানসিক রােগী। দুই: প্রতারক। সম্মােহন করে একজনের মস্তিষ্কে কোনও মৃতব্যক্তির জীবনের বিভিন্ন ঘটনার তথ্যাদি ঢুকিয়ে না দিলেও দেখা যায় কিছু কিছু মানুষ হঠাৎ দাবি করেন, তাঁর পূর্বজন্মের কথা মনে পড়ে যাচ্ছে। পরীক্ষা চালালে দেখা যাবে তথাকথিত পূর্বজন্মের মানুষটির জীবনের অনেক তথ্যই সত্য। এর কারণ ভূতে পাওয়া বা ঈশ্বরের ভরের মতই জাতিস্মর একটা মানসিক রােগমাত্র। সাধারণভাবে জাতিস্মরের দাবিদার মানসিক রােগীর অল্পবয়স্ক, কল্পনাপ্রবণ এবং আবেগপ্রবণ | এঁদের মস্তিষ্ককোষের স্থিতিস্থাপকতা বা সহনশীলতা এবং যুক্তি দিয়ে বিচার করার ক্ষমতা কম। সামাজিক, পারিবারিক ও পরিবেশগত কারণে পুনর্জন্মে বিশ্বাসী। কোনও একজনের মৃত্যু ঘটনা তাঁদের বিশেষভাবে নাড়া দেয়। ঐ মৃতব্যক্তি ও তার বাড়ি, পরিবেশ, পরিবার, শৈশব, কর্মক্ষেত্র, পােশাক, মুদ্রাদোষ ইত্যাদি বিষয়ে একনাগাড়ে ভাবতে থাকলে, বিশেষ কিছু মস্তিষ্ককোষ বারবার উত্তেজিত হতে থাকে। এর ফলে অনেকসময় মস্তিষ্ককোষে বিশৃঙ্খলা দেখা যায়। তখন সে বিশ্বাস করে ফেলে আমিই ওই মৃত ব্যক্তি ছিলাম। এই সময় তথাকথিত জাতিস্মরের মা-বাবা যদি ভ্রান্ত ধারণার শিকার না হয়ে মনােরােগ চিকিৎসকের সাহায্য নেন, তবে রােগী তার স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে পারে।
আবার অনেকসময় সন্তানকে বিখ্যাত করার তাগিদে অথবা কোনও ধনীর সম্পত্তির লােভে কিবা ধর্মীয় বিশ্বাসকে প্রতিষ্ঠা করার ইচ্ছায় প্রমাণ করতে চান তাদের সন্তান বাস্তবিকই জাতিস্মর। বিখ্যাত হবার জন্য মা-বাবাই মৃতের তথ্য জেনে সন্তানকে সমস্ত তথ্য দিয়ে তাকে জাতিস্মরের ভূমিকায় অভিনয় করান।
পুনর্জন্ম ধারণে কতটা সময় লাগে বা আত্মা দেহ ত্যাগের কতদিন পর নতুন দেহ ধারণ করে ?
কেউ কেউ বলেন আত্মা পুরাতন দেহ ছেড়ে ১২ দিন ভ্রমণ করে সূর্য, জল বায়ু, আদি পদার্থ হতে শক্তি প্রাপ্ত করে নতুন দেহে গমন করে। এটার সত্যতার উপরই আজ আলোকপাত করবো৷ মূলত শাস্ত্রে নির্দিষ্ট করে সময় বা দিন বলে দেওয়া হয় নি। তবে এ সম্পর্কে মুটামুটি ধারণা লাভের জন্য কিছু তথ্য দেওয়া হয়েছে, সেই সকল তথ্যকে একত্রিত করে তর্ক দ্বারা সিদ্ধান্তে পৌছতে হবে।
সবিতা প্রথমেऽইনগ্নিন্ত্রিতীয়ে বায়ুতীয়ऽআদিত্যশ্চতুর্থে।
চন্দ্ৰমাঃ পঞ্চমऽঋতুঃ ষষ্ঠে মরুতঃ সপ্তমে বৃহস্পতিরষ্টমে মিত্রো নবমে বরুণো দশমऽইন্দ্ৰऽএকাদশে বিশ্বে দেবা দ্বাদশে। [যজুর্বেদ ৩৯/৬]
পদার্থ :- হে মনুষ্যগণ ! এই জীব [প্রথমে] শরীর ত্যাগ করার প্রথম [অহন্] দিন [সবিতা] সূৰ্য [দ্বিতীয়ে] দ্বিতীয় দিন [অগ্নিঃ] অগ্নি [তৃতীয়ে] তৃতীয় দিন [বায়ু] বায়ু [ চতুর্থে ] চতুর্থ দিন [আদিত্য] মাস [পঞ্চমে] পঞ্চম দিন (চন্দ্রমাঃ) চন্দ্র [ ষষ্ঠ ] ষষ্ঠ দিন [ ঋতুঃ] বসন্তাদি ঋতু [সপ্তমে] সপ্তম দিন [ মরুতঃ] মনুষ্যাদি প্রাণী [অষ্টমে] অষ্টম দিন [বৃহস্পতিঃ] সূত্রাত্মা বায়ু [নবমে] নবম দিনে [ মিত্রঃ] প্রাণ [দশম] দশম দিনে [বরুণঃ] উদান [একাদশে] একাদশ দিনে [ইন্দ্রঃ] বিদ্যুৎ এবং [দ্বাদশে] দ্বাদশতম দিন [বিশ্বে] সমস্ত (দেবাঃ) উত্তম গুণ প্ৰাপ্ত করে।
ভাবার্থ - যখন আত্মা দেহ ত্যাগ করে পৃথিবী আদি সহ সকল পদার্থে ভ্রমণ করে, স্বীয় কর্মানুসারে পরমাত্মার বিধিঅনুসারে জন্ম লাভ করে, সুপ্রসিদ্ধ হয়।
মূলত এই মন্ত্রের দ্বারা অনেকেই ভাবেন যে আত্মা শরীর ত্যাগ করার পর সূর্য, জল, বায়ু আদি পদার্থ হতে শক্তি প্রাপ্ত করে তারপর নতুন দেহ ধারণ করে। যদিও উক্ত মন্ত্রে বলা হয় নি শক্তি গ্রহণের পর আত্মা গর্ভাশয়ে প্রবেশ করে । আত্মা যখন পুরাতন দেহ ত্যাগ করে বাইরে আসে, তখন তার পক্ষে প্রকৃতির কোন কিছু ভোগ করা সম্ভব নয়, কারণ তখন আত্মার নিকট স্থুল দেহ থাকে না। এই সম্পর্কে সাংখ্যদর্শনে বলা হয়েছে -
ন কিঞ্চিদপ্যনুশয়িনঃ
( সাংখ্য -৫/১২৫)
ন বুদ্ধ্যাদিনিত্যত্বমাশ্রয়বিশেষেহপিবিহ্নিবৎ। ( সাংখ্য - ৫/১২৬)
আশ্রয়াসিদ্ধেশ্চ।
( সাংখ্য - ৫/১২৭)
অর্থাৎ - যে আত্মা পূর্বতন শরীর ত্যাগ করে নতুন শরীর ধারণ হেতু যাত্রা করে তাকে অনুশয়ী আত্মা বলে। এই অনুশয়ী আত্মার কোন প্রকার চৈতন্য তথা সুখ দুখঃ ইত্যাদির জ্ঞান থাকে না । তাই আত্মা এই সম্পর্কে সম্পুর্ন অজ্ঞ থাকে যে সে কোথায় যাচ্ছে, কি হেতু গমন করছে।
যতক্ষণ পর্যন্ত আত্মা স্থুল শরীরকে প্রাপ্ত না করে ততক্ষন পর্যন্ত আত্মার চৈতন্য হয় না। সুক্ষ্ম শরীরে আত্মা সুখ দুখঃ আদির জ্ঞান লাভ করতে পারে না।
এ সম্পর্কে গীতার একটা শ্লোক উদাহরণ হিসাবে দেওয়া যেতে পারে -
নৈনং ছিন্দন্তি শস্ত্রাণি নৈনং দহতি পাবকঃ। ন চৈনং ক্লেদয়ন্ত্যাপো ন শোষয়তি মারুতঃ॥
( গীতা -২/২৩)
অনুবাদঃ আত্মাকে অস্ত্রের দ্বারা কাটা যায় না, আগুনে পুড়ানো যায় না, জলে ভেজানো যায় না, অথবা হাওয়াতে শুকানো যায় না।
অর্থাৎ আত্মার উপর জল, বায়ু, তাপ আদি কোন কিছুর প্রভাব পড়ে না। যখন আত্মা স্থুল শরীরে অবস্থান করে তখন তাপ, জল, বায়ু ইত্যাদির প্রভাব মূলত স্থুল শরীর ভোগ করে। আত্মা মূলত দেহের মাধ্যমেই শক্তি প্রাপ্ত করে, সুখ ভোগ করে, কষ্ট ভোগ করে। সুতরাং গীতার শ্লোকানুসারেও আমরা দেখতে পাচ্ছি আত্মার স্থুল শরীর ব্যাতিত শক্তি প্রাপ্ত করা অসম্ভব।
তদ্যথা তৃণজলায় কা তৃণস্যান্তং গত্বাহন মারুনমারুন্যাত্মানম,পসংহর তার মেবায়মাত্মেদং শরীরং নিহ ত্যাঽবিদ্যাং গময়িত্বাহ নামারুমমারুম্যাত্মানম,প সংহরতি
[বৃহদারণ্যক ৪/৪/৩ ]
অর্থাৎ - যেরূপে জোঁক একটি তৃণের শেষ প্রান্তে গিয়ে অপর তৃণকে আশ্রয় করে নিজেকে তার উপর উঠিয়ে নেয় তেমনি আত্মাও দেহত্যাগ করিয়া অবিদ্যা দূর করে অন্য একটি দেহকে আশ্রয় করে ও সেখানে গমন করে।
উপনিষদের উক্ত শ্লোকের উদাহরণকে একটু গভীর ভাবে দেখলে বুঝা যায় যে আত্মা দেহ ত্যাগের করে সাথে সাথেই অন্য দেহ ধারণ করে ফেলে। জোঁক যেরকম একটা তৃণের শেষ প্রান্তে এসে আবার অন্য তৃণকেই আশ্রয় করে তার উপর গমন করে সেভাবে আত্মাও । এখানে জোঁক হচ্ছে আত্মা আর তৃণ হচ্ছে আত্মার সেই স্থুল দেহ৷ অর্থাৎ দ্বাদশতম দিন পর্যন্ত আত্মার ভ্রমণের উল্লেখ এখানেও নেই।
মৃত্যুর পরবর্তী সময়ে আত্মাকে সেই পরমাত্মাই তার নিয়মানুসারে ও আত্মার কর্মানুসারে বিভিন্ন যোনি বা লোকে নিয়ে যান। এই সম্পর্কে উপনিষদের বেশ কিছু বর্ণনা পাওয়া যায়, কিন্তু কোথাও আত্মা পুরাতন দেহ ত্যাগ করার পর নতুন দেহ ধারণের আগে ১২ দিন ভ্রমণ করে এরূপ উল্লেখ পাওয়া যায় না।
শতং চৈকা চ হৃদয়স্য নাড্যস্তাসাং মূর্ধানমভিনিঃসৃতৈকা। তয়োমায়ন্নমৃতত্বমেতি বিষন্যা উৎক্রমণে ভবন্তি৷৷
[ কঠোপনিষদ - ২/৩/১৬ ]
পদার্থ - [ হৃদয়স্য ] হৃদয়ের [শতম্ চ একা চ] একশ এক [নাড়্যঃ] নাড়ি আছে [ তাসাম্] তাদের মধ্যে [একা ] একটি [মূর্ধানম্] মস্তকের দিকে [অভিনিঃসৃতা ] বেরিয়েছে (একে সুষুম্না বলে) [ তথা ] তার দ্বারা [ ঊর্ধ্বম্ ] ঊর্ধ্বলোকে [আয়ন্] গিয়ে (মানুষ) [অমৃতত্বম্] মোক্ষ [এতি] প্রাপ্ত হয় [অন্যাঃ] অপর একশত নাড়ি দ্বারা [উৎক্রমণে] মৃত্যুকালে জীবকে [ বিষন্যা] নানাবিধ যোনিতে নিয়ে যাওয়া [ভবন্তি] হয়।
অথৈকয়োর্ধ্ব উদানঃ পুণ্যেন পুণ্যং লোকং নয়তি পাপেন পাপমুভাভ্যামেব মনুষ্যলোকম্॥
[প্রশ্ন উপনিষদ - ৩/৭]
পদার্থ - [অথ] তথা [একয়া] আর একটি নাড়ি আছে, তার দ্বারা [ উদানঃ ঊর্ধ্বঃ ] উদানবায়ু উপরের দিকে গমন করেন [ সঃ পুণ্যেন] তিনি পুণ্যকর্মের দ্বারা (মনুষ্যম) মানুষকে [পুণ্যম্ লোকম্] পুণ্য লোকে [নয়তি] নিয়ে যান [পাপেন] পাপকর্মহেতু [পাপম্ (নয়তি) ] পাপযোনিতে নিয়ে যান।[উভাভ্যাম্ এব] পাপ এবং পুণ্য উভয়বিধ কর্ম দ্বারা (জীবকে) [ মনুষ্যলোকম্] মনুষ্য শরীরে নিয়ে যান৷
যচ্চিত্তস্তেনৈষ প্রাণমায়াতি প্রাণস্তেজসা যুক্তঃ সহায়না যথাসংকল্পিতং লোকং নয়তি।
[প্রশ্নোপনিষদ -৩/১০]
পদার্থ - [এষঃ] এই জীবাত্মা [যচ্চিত্তঃ] যে সংকল্পবান হন [তেন ] সেই সংকল্পের সাথে [ প্রাণম্] মুখ্য প্রাণে [আয়াতি] স্থিত হয়ে যান [প্রাণঃ] মুখ্য প্রাণ [ তেজসা যুক্তঃ] তেজ যুক্ত [আত্মনা সহ ] জীবাত্মাকে [যথাসঙ্কল্পিত] সংকল্পানুসারে [লোকম্] ভিন্ন ভিন্ন লোক অথবা যোনিতে [ নয়তি ] নিয়ে যায়।
উপনিষদের উক্ত শ্লোকগুলোতে মৃত্যুর পরবর্তী সময়ে জীবাত্মার অবস্থা সম্পর্কে বলা হয়েছে। উক্ত শ্লোক সমূহ হতে স্পষ্ট যে জীবাত্মা পুরাতন দেহ ত্যাগ করার পর ঈশ্বর সেই আত্মাকে আর কর্মানুসারে দেহ প্রাপ্ত করান, এখানে আত্মার ভ্রমণের কোন উল্লেখ পাওয়া যায় না। মৃত্যুর পরবর্তী সময়ে আত্মার গতি সম্পর্কে সেকল শ্লোক আছে সেগুলোর মাঝে উক্ত শ্লোকগুলোরই ভাবার্থের পুনরাবৃত্তি ঘটেছে, উক্ত শ্লোক সহ কোথাও আত্মার ১২ দিনের ভ্রমণের উল্লেখ পাওয়া যায় না।
উক্ত প্রমাণ অনুসারে ঋষিগণ যে সিদ্ধান্ত দিয়েছেন তার সারাংশ এই যে - আত্মা শরীর ত্যাগ করে, পৃথিবী আদি পদার্থে ভ্রমণ পূর্বক পরমাত্মার ব্যাবস্থা অনুযায়ী স্বীয় কর্মানুসারে দেহ প্রাপ্ত করে। এবং দেহ পরিত্যাগ করে তৎক্ষণাৎ নতুন দেহে গমন করে।
এখানে অনেকে ভাবেন আত্মা যেহেতু ক্ষণকাল ভ্রমণ করে সেহেতু সেই সময়টাই হচ্ছে ১২ দিন কিন্তু -
পাঠকবৃন্দ লক্ষ করুন - যখন আত্মা পূর্বের শরীর ত্যাগ করে তখন পরমাত্মাই তাকে নতুন দেহ ধারণের জন্য নিয়ে যান, সেই ক্ষণে আত্মার নিকট কেবল সুক্ষ্ম শরীর থাকে। স্থুলশরীর থাকে না। এখন যদি আত্মার ১২ দিন ভ্রমনের বিষয় স্বীকার করা হয় তবে প্রশ্ন আসে, কে তাকে ভ্রমণ করাবেন? এখন যদি এই প্রশ্নের উত্তরে যদি বলা হয় ঈশ্বর, তবে আবার প্রশ্ন আসবে কেন ঈশ্বর এই কার্য করবেন? যেখানে কোন উদ্দেশ্যই থাকে না, কারণ পূর্বেই দর্শন শাস্ত্র তথা গীতার শ্লোক হতে প্রমাণ দিয়ে দেখানো হয়েছে যে আত্মা তখন সুক্ষ্ম শরীরে অবস্থান করে যার ফলে তার জ্ঞান থাকে না, আর আত্মার সুক্ষ্মশরীরের উপর সূর্য, জল, বায়ু আদি পদার্থের কোন প্রভাবই পড়ে না, সুতরাং ১২ দিনের ভ্রমণ করে কি লাভ? কি উদ্দেশ্য ১২ দিন আত্মাকে ভ্রমণ করানো হবে?। যেহেতু সুক্ষ্ম আত্মার উপর প্রকৃতির কোন প্রভাব পড়ে না সেহেতু ১২ দিন ভ্রমণ করানো অর্থহীন কর্ম হয়ে যায়। আর পরমাত্মা কখনোই অর্থহীন কর্ম করেন না। সুতরাং পরমাত্মা কদাপি আত্মাকে ১২ দিন সূর্য, বায়ু, জল আদি পদার্থে ভ্রমণ করান না।

এই কথা সত্য যে আত্মা ১২ দিন পর্যন্ত অগ্নি, জল, বায়ু, সূর্য আদি পদার্থ হতে শক্তি প্রাপ্ত করে, কিন্তু সেটা ১২ দিন ভ্রমনের মাধ্যমে নয়। যখন মাতৃগর্ভে ভ্রুণের সৃষ্টি হয় ও আত্মার জন্য স্থুল শরীরের জন্ম হয়, তখন সেই স্থুল শরীরের মাধ্যমেই আত্মা গর্ভাবস্থায়, অগ্নি, বায়ু, জল, সূর্য আদি পদার্থের হতে শক্তি গ্রহণ করে। কারণ তখন সেই শক্তি গ্রহণ করার মত তথা ভোগ করার উপযোগী স্থুল শরীর সৃষ্টি হয়।
সুতরাং তর্ক তথা শাস্ত্রীয় প্রমাণাদি হতে আমরা এই সিন্ধান্তে উপনীত হতে পারি যে , আত্মা ১২ দিন ভ্রমণ করে না। বরং এক দেহ ত্যাগ করে তৎক্ষনাৎ নতুন দেহে গমন করে, এবং গর্ভাবস্থায় স্থুলশরীরের মাধ্যমে ১২ দিন পর্যন্ত সূর্য, জল, বায়ু আদি পদার্থ হতে শক্তি গ্রহন করে।
No comments:
Post a Comment
ধন্যবাদ