গোক্ষুরা একটি শক্তিশালী ঔষধি ভেষজ এবং বিভিন্ন চিকিৎসাতে একে ব্যবহার করা হয়েছে। এই উদ্ভিদের ফল এবং শিকড় ভারতীয় আয়ুর্বেদে এবং চিন দেশের প্রথাগত চিকিৎসাতে ব্যবহার করা হয়েছে। গোক্ষুরার ফলের মূত্রবর্ধক, কামোদ্দীপক এবং প্রদাহ-বিরোধী গুণ আছে। এই উদ্ভিদের শিকড় ব্যবহৃত হয় হাঁপানি, কাশি, রক্তাল্পতা এবং দেহের অভ্যন্তরের প্রদাহের চিকিৎসার জন্য। রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস রোগের চিকিৎসায় এই উদ্ভিদের পোড়া ছাই ব্যবহার করা হয়।
চরক, ভারতীয় চিকিৎসাবিদ্যার জনক, জানিয়েছিলেন যে এই উদ্ভিদটি কামোদ্দীপক, অর্থাৎ যৌন কামনা বৃদ্ধিকারী, মূত্রবর্ধক এবং দেহ থেকে মূত্রের মাধ্যমে টক্সিন বার করে দেয়।
ট্রিবিউলাস টেরেস্ট্রিস, সাধারণত গোক্ষুরা নামে পরিচিত, একটি বার্ষিক ঔষধি যা সারা বিশ্বে পাওয়া যায়। গোক্ষুরা একটি সংস্কৃত শব্দ, যার অর্থ “গরুর ক্ষুর”। মাঠে চরবার সময় গরুর ক্ষুরে এই ছোট কাঁটাযুক্ত ফল আটকে যায়, তাই বোধহয় এর এই নামকরণ হয়েছে। গোক্ষুর গাছ অত্যন্ত চরম অবস্থার মধ্যেও বেঁচে থাকতে পারে, এবং শুষ্ক জলবায়ুতেও চাষ হতে পারে যেখানে অন্যান্য উদ্ভিদ বেঁচে থাকতে পারে না।
গোক্ষুরা সম্পর্কে কিছু প্রাথমিক তথ্য:
বৈজ্ঞানিক নাম: ট্রিবিউলাস টেরেস্ট্রিস
পরিবার: জাইগোফিলিয়েসি
সাধারণ নাম: গোখরু, গোকশুর, চটগোখরু
ব্যবহৃত অংশ: মূল এবং ফল ঔষধ ব্যবহৃত হয়।
আদি উৎপত্তি এবং ভৌগলিক বিতরণ: এই ঔষধি উদ্ভিদ ভারতে উদ্ভূত। এটি ব্যাপকভাবে ভারত ও আফ্রিকা জুড়ে পাওয়া গেলেও এশিয়ার কিছু অংশ, মধ্য প্রাচ্য এবং ইউরোপেও পাওয়া যায়।
গোক্ষুরার পুষ্টি সংক্রান্ত তথ্য -
সমগ্র ট্রিবিউলাস প্ল্যান্টের বিভিন্ন অংশে অনেকগুলি রাসায়নিক উপাদান রয়েছে যা নিরাময়কারী এবং পুষ্টিকর হিসাবে মূল্যবান।
এর পাতায় রয়েছে ক্যালসিয়াম কার্বোনেট, লোহা, প্রোটিন, ইত্যাদি যা হারকে শক্ত করে। গোক্ষুরার বীজ চর্বি এবং প্রোটিন সমৃদ্ধ, এবং গোক্ষুরার ফল হল ওলিক অ্যাসিড, স্টিয়ারিক অ্যাসিড এবং গ্লুকোজ সমৃদ্ধ।
ইন্টারন্যাশনাল জার্নাল অফ হোম সায়েন্স অনুযায়ী গোক্ষুরা চূর্ণতে এই পুষ্টিগুলি বর্তমান:
পুষ্টি মান/100 গ্রাম
শক্তি 73.48 কিলো ক্যালোরি
কার্বোহাইড্রেট 15.9 গ্রাম
প্রোটিন 1.3 গ্রাম
ফ্যাট 0.25 গ্রাম
ফ্ল্যাভোনয়েডস 19.92
ভিটামিন
ভিটামিন সি 14.2 মিলিগ্রাম
খনিজ পদার্থ
ক্যালসিয়াম 59 মিলিগ্রাম
স্বাস্থ্যের উপকারে গোক্ষুরা -
উচ্চ ঔষধিগুণের জন্য এই উদ্ভিদগুলি প্রচলিত চিকিৎসা পদ্ধতিতে বিভিন্ন রোগের প্রতিকারে ব্যবহৃত হয়েছে। গোক্ষুরার সম্ভাব্য স্বাস্থ্য সংক্রান্ত উপকারগুলি হল:
শরীরচর্চার জন্য: পেশির শক্তি বৃদ্ধি এবং দেহের গঠনের জন্য গোক্ষুরা ব্যবহার করা হয় এবং এটি স্টেরয়েডের একটি প্রাকৃতিক বিকল্প হতে পারে।
মানসিক স্বাস্থ্যের বিশৃঙ্খলায়: গোক্ষুরা তে স্যাপিওনিনস থাকায় এর অবসাদ বিরোধী এবং উদ্বেগ নাশক গুণ আছে। কাজেই অবসাদ এবং উদ্বেগের ব্যবস্থাপনাতে একে ব্যবহার করা যেতে পারে।
হৃদযন্ত্রের জন্য: গোক্ষুরা তে প্রচুর অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট থাকায় এর কার্ডিয়ো-প্রোটেকটিভ গুণ আছে। গোক্ষুরা রক্তচাপ এবং কোলেস্টেরল হ্রাস করতে সহায়তা করে, তাই এথেরোস্ক্লেরোসিস এবং হৃদযন্ত্রের অন্যান্য সমস্যা প্রতিরোধ করতে পারে।
বৃক্ক (কিডনি) 'র জন্য: গোক্ষুরা একটি মূত্রবর্ধক। কাজেই শরীর থেকে অতিরিক্ত খনিজ পদার্থ বার করে দিয়ে বৃক্কে পাথর (কিডনি স্টোন) জমা হওয়া প্রতিরোধ করতে পারে। বৃক্কের কর্মক্ষমতাও উন্নত হয়।
মহিলাদের জন্য: মহিলাদের স্বাস্থ্যের উন্নতিতে গোক্ষুরার বহুবিধ প্রভাব আছে। নিয়মিত সেবন করলে কামজ এবং যৌন ইচ্ছা বৃদ্ধি পায়। এছাড়া পিসিওএস (পলিসিস্টিক ওভারিয়ান সিন্ড্রোম) এবং ইউটিআই (ইউরিনারি ট্র্যাক্ট ইনফেকশান) 'এর বিরুদ্ধেও কাজ করে।
অন্যান্য উপকার: ত্বকের বিভিন্ন সমস্যা যেমন ব্রণ, একজিমা, চুলকানি এবং ত্বকের অস্বস্তি দূর করে। চুল এবং ত্বকের বয়োবৃদ্ধির চিহ্নগুলি আসতে দেরি করায়। আধকপালে, অর্শ এবং ফিস্টুলা রোগেও উপকার দেয়।
মূত্রনালির সংক্রমণ ও গোক্ষুরা -
গবেষণা অনুযায়ী মূত্রনালির সংক্রমণের চিকিৎস্যয় গোক্ষুরা সফল ভাবে ব্যবহার করে যেতে পারে এবং এর কোন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই। এর মূত্রবর্ধক গুণ থাকায় গোক্ষুরা প্রস্রাবের পরিমাণ বৃদ্ধি করে। ক্ষতিকারক ব্যাকটেরিয়াগুলিকে প্রস্রাবের সাথে বার করে দিয়ে মূত্রনালির সংক্রমণ কমাতে পারে।
বিশ্বাস করা হয় যে গোক্ষুরার পুনর্জন্ম দেওয়ার মত বৈশিষ্ট্য আছে। গোক্ষুরা খেলে দেহের টক্সিন হ্রাস পায় এবং মূত্রনালির এবং ব্লাডারের সংক্রমণ হ্রাস করে। যেহেতু গোক্ষুরাকে নিরাপদ মনে করা হয়, এটি অ্যান্টি-বায়োটিকের ভাল বিকল্প হতে পারে।
পিসিওএস'এর জন্য গোক্ষুরা -
বর্তমান বছরগুলিতে সব বয়সী মহিলাদের পিসিওএস হচ্ছে, বিশেষত বয়স্কদের এবং টিন এজারদের। স্বাস্থ্যের এই সমস্যার ফলে ব্রণ, অনিয়মিত মাসিক, ওজন বৃদ্ধি, মেজাজের ঘন ঘন পরিবর্তন, চুল পড়া, ইত্যাদি হতে পারে। এ'ছাড়াও গর্ভধারণে হস্তক্ষেপ করে মহিলাদের উর্বরতাকে নেতিবাচক ভাবে প্রভাবিত করতে পারে, এবং গর্ভাবস্থায় জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে।
গবেষণা দেখাচ্ছে যে সমস্ত মহিলারা পিসিওএস'এর সমস্যায় ভুগছেন, তারা গোক্ষুরা সেবন করলে সিস্ট'এর সংখ্যা এবং আকার হ্রাস পাবে।
আরেকটি গবেষণা দেখাচ্ছে যে গোক্ষুরা নিয়মিত খেলে শরীরে ফলিকেল স্টিমুলেটিং হরমোন'এর পরিমাণ বৃদ্ধি পায়, যা ডিম্বাশয়ের বীজকোষের বিকাশে অত্যাবশ্যক। ইউনানি চিকিৎসায় অশ্বগন্ধা এবং গোক্ষুরার মিশ্রণ পিসিওএস'এর উপসর্গগুলি কম করার জন্য ব্যবহার করা হয়।
পিসিওএস প্রভাবিত মহিলাদের অবাঞ্ছিত ওজন বৃদ্ধি প্রতিরোধ করতে গোক্ষুরা সহায়তা করে।
বৃক্কের পাথর ও গোক্ষুরা -
বিভিন্ন দেশে বৃক্কের পাথর নানা কারণে একটি জ্বলন্ত সমস্যা হয়ে উঠেছে। একটি গবেষণা দেখাচ্ছে যে বিশ্বের জনসংখ্যার 12% মানুষ বৃক্কের পাথরের সমস্যায় ভুগছেন, এবং একবার নিরাময় হয়ে যাওয়ার পর আবার এই সমস্যা ফিরে আসার হার হল 50% থেকে 80%। দেখা গিয়েছে যে গোক্ষুরা বিভিন্ন উপায়ে বৃকের পাথর হওয়া হ্রাস করতে পারে।
গোক্ষুরা রক্তের ক্যালসিয়াম'এর মাত্রা হ্রাস করাতে পারে, ফলে বৃক্কে পাথর জমার সম্ভাবনা হ্রাস পাবে।
গোক্ষুরা একটি মূত্রবর্ধক। মূত্রের পরিমাণ বৃদ্ধি করে দেহের অতিরিক্ত খনিজ পদার্থগুলিকে বাইরে নিক্ষেপ করে। ফলে বৃক্কে পাথর জমার সম্ভাবনা হ্রাস পায়।
আবার গোক্ষুরার অ্যান্ট-অক্সিডেন্ট গুণ বৃক্কের পাথর তৈরি বন্ধ করতে পারে এবং সাথে সাথে বৃক্কের কর্মক্ষমতারও বৃদ্ধি হয়।
মহিলাদের কামোত্তেজনার জন্য গোক্ষুরা -
ঐতিহ্যগত ভাবে গোক্ষুরা কামোত্তেজ ঔষধি। মহিলাদের কামোত্তেজনা বৃদ্ধি করতে গোক্ষুরার প্রভাব নিয়ে অনেক গবেষণা হয়েছে। ক্লিনিক্যাল পরীক্ষা দেখাচ্ছে, যে মহিলাদের কামোত্তেজনা কম তাদের যদি চার সপ্তাহ ধরে দৈনিক 7.5 মিলিগ্রাম গোক্ষুরার নির্যাস খেতে দেওয়া হয় তাহলে তাদের কামোত্তেজনা বৃদ্ধি পায়।
রজোবন্ধের আগে এবং পরের অবস্থার মহিলাদের নিয়ে একটি সাম্প্রতিক গবেষণা দেখাচ্ছে নিয়মিত ভাবে গোক্ষুরা সেবন করলে তাদের উত্তেজনা এবং যৌনতৃপ্তি বৃদ্ধি পায়। এর কারণ হল তাদের রক্তে টেস্টোস্টেরণ'এর মাত্রা বৃদ্ধি পায়।
হৃদপিণ্ডের স্বাস্থ্যের জন্য গোক্ষুরা -
গবেষণা অনুসারে, ট্রিবুলাস টেরেস্ট্রিস অথবা গোক্ষুরাতে আন্টি-অক্সিডেন্ট থাকার কারণে এর কার্ডিয়ো-প্রোটেকটিভ ধর্ম আছে। ইংরাজি 'ইনফারাক্ট' শব্দটির অর্থ হল 'রক্তের যোগান বন্ধ হয়ে যাওয়ার ফলে মৃত টিস্যুদের অঞ্চল'। গোক্ষুরা এই ইনফারাক্ট'এর অঞ্চলকে আকারে ছোট করে দিতে পারে। দেহে এটিপি'র মাত্রা বৃদ্ধি করে গোক্ষুরা হৃদপিণ্ডে রক্তের সঞ্চালন বৃদ্ধি করে এবং হৃদযন্ত্রের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
একটি ক্লিনিক্যাল পরীক্ষা দেখিয়েছে যে নিয়মিত ভাবে গোক্ষুরা সেবন করলে উল্লেখযোগ্য অ্যান্টি-হাইপারটেন্সিভ প্রভাব পড়ে এবং এর কোন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই। গবেষণাগুলি দেখিয়েছে যে অল্প থেকে মাঝারি মাত্রার রক্তচাপের রোগীদের দীর্ঘদিন ধরে গোক্ষুরা দিয়ে নিরাপদ ভাবে চিকিৎসা করা যায়।
শরীরে এলডিএল বা খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা হ্রাস করে গোক্ষুরা কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে সহায়তা করতে পারে। এ'ছাড়াও লিপিডের পার-অক্সিডেশান প্রতিরোধ করে ফলে প্লাক তৈরি এবং এথেরোস্ক্লেরোসিস হতে পারে না।
উদ্বেগ ও অবসাদে গোক্ষুরা -
উদ্বেগ ও অবসাদ বর্তমান কালে খুবই প্রচলিত সমস্যা। লিঙ্গ নির্বিশেষ সব বয়সের মানুষই এই দুইয়ের প্রভাবে আসতে পারে। প্রি-ক্লিনিক্যাল পরীক্ষায় ইঙ্গিত দিচ্ছে যে গোক্ষুরা একটি কার্যকরী উদ্বেগ ও অবসাদ বিরোধী ওষুধ হতে পারে, যার কোন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই। উদ্বেগ ও অবসাদের চিকিৎসায় একে ব্যবহার করে যেতে পারে।
আরও পরীক্ষা দেখাচ্ছে গোক্ষুরার এই অবসাদ বিরোধী চরিত্রের কারণ হল এতে স্যাপোনিনস আছে, যা সিরাম কর্টিসল'এর পরিমাণ হ্রাস করে।
শরীরচর্চার জন্য গোক্ষুরা -
ব্যায়ামবিদদের মধ্যে সাম্প্রতিক সময়ে গোক্ষুরা খুবই জনপ্রিয় হয়েছে। এর কারণ হল এই ঔষধি পেশির শক্তি উন্নতি এবং শরীরের গঠন ভাল করে। দীর্ঘ সময় ধরে গোক্ষুরা খেলে শক্তি এবং পেশি বৃদ্ধি হয়। ট্রিবিউলাস টেরেস্ট্রিস নাইট্রিক অক্সাইড মুক্ত করে চর্বিহীন পেশি এবং টেস্টোস্টেরণ'এর পরিমাণ বৃদ্ধি করে। নাইট্রিক অক্সাইড রক্ত নালীকে প্রসারিত করে, ফলে পেশিতে অক্সিজেনের সরবরাহ ভাল হয়। পুরুষরা আজকের দিনে স্বাস্থ্য ভাল রাখার জন্য স্টেরয়েড ইঞ্জেকশান নিচ্ছেন, যা দীর্ঘ সময় নিতে থাকলে ক্ষতিকারক হবে বলে প্রমাণিত হয়েছে। গোক্ষুরা একটি প্রাকৃতিক ভেষজ এবং এটি স্টেরয়েডগুলির স্বাস্থ্যসম্মত বিকল্প। যাইহোক, স্বাস্থ্য সম্পর্কিত উদ্বেগ যদি কিছু থাকে, তাহলে সেগুলি বাতিল করতে এবং দীর্ঘদিন ধরে এই ঔষধি নিলে তার নিরাপত্তার বিষয়টি নিশ্চিত করতে আরও গবেষণায় প্রয়োজন আছে।
গোক্ষুরার অন্যান্য সম্ভাব্য স্বাস্থ্য-সংক্রান্ত সুবিধা -
এটি বিশ্বাস করা হয় যে গোক্ষুরা ব্রণের সমস্যা মোকাবেলায় সহায়তা করে, যা বেশিরভাগ অল্পবয়সীদের মধ্যে দেখা যায়। এটি ত্বকের বিভিন্ন সমস্যা যেমন চুলকানি, ত্বকে জ্বালা, ত্বকে ফুসকুড়ি, একজিমা ইত্যাদির চিকিৎসায়ও উপকারী।
এই ঔষধি নিয়মিত খেলে অকাল বার্ধক্যের প্রতিরোধ হয়, ফলে আপনাকে অনেক অল্প বয়সী মনে হবে। এটি বলিরেখা প্রতিরোধ করে, শরীরের চর্বির পরিমাণ বৃদ্ধি করে এবং পেশী নষ্ট হয়ে যাওয়া প্রতিরোধে সাহায্য করে।
এছাড়াও, গোক্ষুরার বীজ দিয়ে লেই তৈরি করে তা প্রয়োগ করলে চুল পড়া নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ করে।
এই আয়ুর্বেদীয় ঔষধি এছাড়াও মাথাব্যথা এবং আধ কপালে ব্যথার উপশম করে।
প্রদাহ বিরোধী গুণের কারণে, এটি ফিস্টুলা এবং অর্শ রোগের চিকিৎসার জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে।
দীর্ঘদিন ধরে, চোখের সমস্যা এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য গোক্ষুরা ব্যবহার হচ্ছে।
গোক্ষুরার অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট গুণের জন্য মধুমেহর লক্ষণগুলির ব্যবস্থাপনায় সহায়ক এবং মধুমেহ সম্পর্কিত জটিলতাগুলি এড়াতে সহায়ক বলে মনে করা হয়।
গর্ভবতী এবং স্তন্যদাত্রী মহিলা: গর্ভবতী এবং স্তন্যদাত্রী মহিলাদের সুপারিশ করা হচ্ছে তারা যেন গোক্ষুরা না খান, কারণ এটি ভ্রূণের বিকাশ প্রতিরোধ করে।
এলার্জির প্রতিক্রিয়া: কোন কোন ব্যক্তির পেটের গোলমাল বা ফুসকুড়ির মত এলার্জির প্রতিক্রিয়া হতে পারে।
গুরুতর শল্য চিকিৎসার ইতিহাস: যদি শল্য চিকিৎসা হয়ে থাকে তাহলে নির্ধারিত মাত্রায় গোক্ষুরা সেবন করা যায়।
বর্তমান অসুস্থতা: যদি আপনি বর্তমানে ওষুধ নিতে থাকেন বা আপনার কোন গুরুতর অসুস্থতা থাকে তাহলে গোক্ষুরা সেবনে সাবধানতা অবলম্বন করবেন। যে সব মহিলাদের জরায়ু বা স্তনের কর্কট রোগ হয়েছে, তারা গোক্ষুরা সেবন করবেন না। পুরুষদের ক্ষেত্রে যাদের প্রোস্টেটে কর্কট রোগ হয়েছে, তারাও গোক্ষুরা এড়িয়ে যাবেন।
মধুমেহ: রক্তের গ্লুকোজের পরিমাণ কমিয়ে গোক্ষুরা একে নিয়ন্ত্রণ করে। আপনি যদি মধুমেহর রোগী হন এবং ওষুধ নিতে থাকেন, তাহলে আপনার চিকিৎসকের কাছে গোক্ষুরার সঠিক মাত্রা জেনে নিন।
উচ্চ রক্তচাপের রোগী: যাদের উচ্চ রক্তচাপ রয়েছে তারা চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে গোক্ষুরা নেবেন, কারণ এটি একটি প্রমাণিত রক্তচাপ হ্রাস করার ঔষধি।
শিশু: শিশুরা সংবেদনশীল হতে পারে। তাই চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া কোন রকমের ওষুধ দেওয়া উচিৎ নয়।
উপসংহার -
গোক্ষুরা বা ট্রিবিউলাস টেরেস্ট্রিস পাতাযুক্ত একটি ছোট উদ্ভিদ, যা যুগ যুগ ধরে থেকে আয়ুর্বেদ এবং ঐতিহ্যগত ঔষধে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া খুবই কম কিন্তু স্বাস্থ্যের উপকারের তালিকাটি দীর্ঘ। মধুমেহ, উচ্চ কোলেস্টেরল এবং উচ্চ রক্তচাপের রোগীদের উপকারে আসে। এটি কামশক্তির উন্নতিও করে। কোন রুমের সম্পূরক নেওয়ার আগে, সেটি স্বাস্থ্যের কতটা উপকারে আসে এবং এর ঝুঁকি কতটা সেই তথ্যগুলি জেনে নেওয়া ভাল, এবং এটি ট্রিবিউলাস টেরেস্ট্রিস’এর ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য।
References
চরক, ভারতীয় চিকিৎসাবিদ্যার জনক, জানিয়েছিলেন যে এই উদ্ভিদটি কামোদ্দীপক, অর্থাৎ যৌন কামনা বৃদ্ধিকারী, মূত্রবর্ধক এবং দেহ থেকে মূত্রের মাধ্যমে টক্সিন বার করে দেয়।
ট্রিবিউলাস টেরেস্ট্রিস, সাধারণত গোক্ষুরা নামে পরিচিত, একটি বার্ষিক ঔষধি যা সারা বিশ্বে পাওয়া যায়। গোক্ষুরা একটি সংস্কৃত শব্দ, যার অর্থ “গরুর ক্ষুর”। মাঠে চরবার সময় গরুর ক্ষুরে এই ছোট কাঁটাযুক্ত ফল আটকে যায়, তাই বোধহয় এর এই নামকরণ হয়েছে। গোক্ষুর গাছ অত্যন্ত চরম অবস্থার মধ্যেও বেঁচে থাকতে পারে, এবং শুষ্ক জলবায়ুতেও চাষ হতে পারে যেখানে অন্যান্য উদ্ভিদ বেঁচে থাকতে পারে না।
গোক্ষুরা সম্পর্কে কিছু প্রাথমিক তথ্য:
বৈজ্ঞানিক নাম: ট্রিবিউলাস টেরেস্ট্রিস
পরিবার: জাইগোফিলিয়েসি
সাধারণ নাম: গোখরু, গোকশুর, চটগোখরু
ব্যবহৃত অংশ: মূল এবং ফল ঔষধ ব্যবহৃত হয়।
আদি উৎপত্তি এবং ভৌগলিক বিতরণ: এই ঔষধি উদ্ভিদ ভারতে উদ্ভূত। এটি ব্যাপকভাবে ভারত ও আফ্রিকা জুড়ে পাওয়া গেলেও এশিয়ার কিছু অংশ, মধ্য প্রাচ্য এবং ইউরোপেও পাওয়া যায়।
গোক্ষুরার পুষ্টি সংক্রান্ত তথ্য -
সমগ্র ট্রিবিউলাস প্ল্যান্টের বিভিন্ন অংশে অনেকগুলি রাসায়নিক উপাদান রয়েছে যা নিরাময়কারী এবং পুষ্টিকর হিসাবে মূল্যবান।
এর পাতায় রয়েছে ক্যালসিয়াম কার্বোনেট, লোহা, প্রোটিন, ইত্যাদি যা হারকে শক্ত করে। গোক্ষুরার বীজ চর্বি এবং প্রোটিন সমৃদ্ধ, এবং গোক্ষুরার ফল হল ওলিক অ্যাসিড, স্টিয়ারিক অ্যাসিড এবং গ্লুকোজ সমৃদ্ধ।
ইন্টারন্যাশনাল জার্নাল অফ হোম সায়েন্স অনুযায়ী গোক্ষুরা চূর্ণতে এই পুষ্টিগুলি বর্তমান:
পুষ্টি মান/100 গ্রাম
শক্তি 73.48 কিলো ক্যালোরি
কার্বোহাইড্রেট 15.9 গ্রাম
প্রোটিন 1.3 গ্রাম
ফ্যাট 0.25 গ্রাম
ফ্ল্যাভোনয়েডস 19.92
ভিটামিন
ভিটামিন সি 14.2 মিলিগ্রাম
খনিজ পদার্থ
ক্যালসিয়াম 59 মিলিগ্রাম
স্বাস্থ্যের উপকারে গোক্ষুরা -
উচ্চ ঔষধিগুণের জন্য এই উদ্ভিদগুলি প্রচলিত চিকিৎসা পদ্ধতিতে বিভিন্ন রোগের প্রতিকারে ব্যবহৃত হয়েছে। গোক্ষুরার সম্ভাব্য স্বাস্থ্য সংক্রান্ত উপকারগুলি হল:
শরীরচর্চার জন্য: পেশির শক্তি বৃদ্ধি এবং দেহের গঠনের জন্য গোক্ষুরা ব্যবহার করা হয় এবং এটি স্টেরয়েডের একটি প্রাকৃতিক বিকল্প হতে পারে।
মানসিক স্বাস্থ্যের বিশৃঙ্খলায়: গোক্ষুরা তে স্যাপিওনিনস থাকায় এর অবসাদ বিরোধী এবং উদ্বেগ নাশক গুণ আছে। কাজেই অবসাদ এবং উদ্বেগের ব্যবস্থাপনাতে একে ব্যবহার করা যেতে পারে।
হৃদযন্ত্রের জন্য: গোক্ষুরা তে প্রচুর অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট থাকায় এর কার্ডিয়ো-প্রোটেকটিভ গুণ আছে। গোক্ষুরা রক্তচাপ এবং কোলেস্টেরল হ্রাস করতে সহায়তা করে, তাই এথেরোস্ক্লেরোসিস এবং হৃদযন্ত্রের অন্যান্য সমস্যা প্রতিরোধ করতে পারে।
বৃক্ক (কিডনি) 'র জন্য: গোক্ষুরা একটি মূত্রবর্ধক। কাজেই শরীর থেকে অতিরিক্ত খনিজ পদার্থ বার করে দিয়ে বৃক্কে পাথর (কিডনি স্টোন) জমা হওয়া প্রতিরোধ করতে পারে। বৃক্কের কর্মক্ষমতাও উন্নত হয়।
মহিলাদের জন্য: মহিলাদের স্বাস্থ্যের উন্নতিতে গোক্ষুরার বহুবিধ প্রভাব আছে। নিয়মিত সেবন করলে কামজ এবং যৌন ইচ্ছা বৃদ্ধি পায়। এছাড়া পিসিওএস (পলিসিস্টিক ওভারিয়ান সিন্ড্রোম) এবং ইউটিআই (ইউরিনারি ট্র্যাক্ট ইনফেকশান) 'এর বিরুদ্ধেও কাজ করে।
অন্যান্য উপকার: ত্বকের বিভিন্ন সমস্যা যেমন ব্রণ, একজিমা, চুলকানি এবং ত্বকের অস্বস্তি দূর করে। চুল এবং ত্বকের বয়োবৃদ্ধির চিহ্নগুলি আসতে দেরি করায়। আধকপালে, অর্শ এবং ফিস্টুলা রোগেও উপকার দেয়।
মূত্রনালির সংক্রমণ ও গোক্ষুরা -
গবেষণা অনুযায়ী মূত্রনালির সংক্রমণের চিকিৎস্যয় গোক্ষুরা সফল ভাবে ব্যবহার করে যেতে পারে এবং এর কোন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই। এর মূত্রবর্ধক গুণ থাকায় গোক্ষুরা প্রস্রাবের পরিমাণ বৃদ্ধি করে। ক্ষতিকারক ব্যাকটেরিয়াগুলিকে প্রস্রাবের সাথে বার করে দিয়ে মূত্রনালির সংক্রমণ কমাতে পারে।
বিশ্বাস করা হয় যে গোক্ষুরার পুনর্জন্ম দেওয়ার মত বৈশিষ্ট্য আছে। গোক্ষুরা খেলে দেহের টক্সিন হ্রাস পায় এবং মূত্রনালির এবং ব্লাডারের সংক্রমণ হ্রাস করে। যেহেতু গোক্ষুরাকে নিরাপদ মনে করা হয়, এটি অ্যান্টি-বায়োটিকের ভাল বিকল্প হতে পারে।
পিসিওএস'এর জন্য গোক্ষুরা -
বর্তমান বছরগুলিতে সব বয়সী মহিলাদের পিসিওএস হচ্ছে, বিশেষত বয়স্কদের এবং টিন এজারদের। স্বাস্থ্যের এই সমস্যার ফলে ব্রণ, অনিয়মিত মাসিক, ওজন বৃদ্ধি, মেজাজের ঘন ঘন পরিবর্তন, চুল পড়া, ইত্যাদি হতে পারে। এ'ছাড়াও গর্ভধারণে হস্তক্ষেপ করে মহিলাদের উর্বরতাকে নেতিবাচক ভাবে প্রভাবিত করতে পারে, এবং গর্ভাবস্থায় জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে।
গবেষণা দেখাচ্ছে যে সমস্ত মহিলারা পিসিওএস'এর সমস্যায় ভুগছেন, তারা গোক্ষুরা সেবন করলে সিস্ট'এর সংখ্যা এবং আকার হ্রাস পাবে।
আরেকটি গবেষণা দেখাচ্ছে যে গোক্ষুরা নিয়মিত খেলে শরীরে ফলিকেল স্টিমুলেটিং হরমোন'এর পরিমাণ বৃদ্ধি পায়, যা ডিম্বাশয়ের বীজকোষের বিকাশে অত্যাবশ্যক। ইউনানি চিকিৎসায় অশ্বগন্ধা এবং গোক্ষুরার মিশ্রণ পিসিওএস'এর উপসর্গগুলি কম করার জন্য ব্যবহার করা হয়।
পিসিওএস প্রভাবিত মহিলাদের অবাঞ্ছিত ওজন বৃদ্ধি প্রতিরোধ করতে গোক্ষুরা সহায়তা করে।
বৃক্কের পাথর ও গোক্ষুরা -
বিভিন্ন দেশে বৃক্কের পাথর নানা কারণে একটি জ্বলন্ত সমস্যা হয়ে উঠেছে। একটি গবেষণা দেখাচ্ছে যে বিশ্বের জনসংখ্যার 12% মানুষ বৃক্কের পাথরের সমস্যায় ভুগছেন, এবং একবার নিরাময় হয়ে যাওয়ার পর আবার এই সমস্যা ফিরে আসার হার হল 50% থেকে 80%। দেখা গিয়েছে যে গোক্ষুরা বিভিন্ন উপায়ে বৃকের পাথর হওয়া হ্রাস করতে পারে।
গোক্ষুরা রক্তের ক্যালসিয়াম'এর মাত্রা হ্রাস করাতে পারে, ফলে বৃক্কে পাথর জমার সম্ভাবনা হ্রাস পাবে।
গোক্ষুরা একটি মূত্রবর্ধক। মূত্রের পরিমাণ বৃদ্ধি করে দেহের অতিরিক্ত খনিজ পদার্থগুলিকে বাইরে নিক্ষেপ করে। ফলে বৃক্কে পাথর জমার সম্ভাবনা হ্রাস পায়।
আবার গোক্ষুরার অ্যান্ট-অক্সিডেন্ট গুণ বৃক্কের পাথর তৈরি বন্ধ করতে পারে এবং সাথে সাথে বৃক্কের কর্মক্ষমতারও বৃদ্ধি হয়।
মহিলাদের কামোত্তেজনার জন্য গোক্ষুরা -
ঐতিহ্যগত ভাবে গোক্ষুরা কামোত্তেজ ঔষধি। মহিলাদের কামোত্তেজনা বৃদ্ধি করতে গোক্ষুরার প্রভাব নিয়ে অনেক গবেষণা হয়েছে। ক্লিনিক্যাল পরীক্ষা দেখাচ্ছে, যে মহিলাদের কামোত্তেজনা কম তাদের যদি চার সপ্তাহ ধরে দৈনিক 7.5 মিলিগ্রাম গোক্ষুরার নির্যাস খেতে দেওয়া হয় তাহলে তাদের কামোত্তেজনা বৃদ্ধি পায়।
রজোবন্ধের আগে এবং পরের অবস্থার মহিলাদের নিয়ে একটি সাম্প্রতিক গবেষণা দেখাচ্ছে নিয়মিত ভাবে গোক্ষুরা সেবন করলে তাদের উত্তেজনা এবং যৌনতৃপ্তি বৃদ্ধি পায়। এর কারণ হল তাদের রক্তে টেস্টোস্টেরণ'এর মাত্রা বৃদ্ধি পায়।
হৃদপিণ্ডের স্বাস্থ্যের জন্য গোক্ষুরা -
গবেষণা অনুসারে, ট্রিবুলাস টেরেস্ট্রিস অথবা গোক্ষুরাতে আন্টি-অক্সিডেন্ট থাকার কারণে এর কার্ডিয়ো-প্রোটেকটিভ ধর্ম আছে। ইংরাজি 'ইনফারাক্ট' শব্দটির অর্থ হল 'রক্তের যোগান বন্ধ হয়ে যাওয়ার ফলে মৃত টিস্যুদের অঞ্চল'। গোক্ষুরা এই ইনফারাক্ট'এর অঞ্চলকে আকারে ছোট করে দিতে পারে। দেহে এটিপি'র মাত্রা বৃদ্ধি করে গোক্ষুরা হৃদপিণ্ডে রক্তের সঞ্চালন বৃদ্ধি করে এবং হৃদযন্ত্রের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
একটি ক্লিনিক্যাল পরীক্ষা দেখিয়েছে যে নিয়মিত ভাবে গোক্ষুরা সেবন করলে উল্লেখযোগ্য অ্যান্টি-হাইপারটেন্সিভ প্রভাব পড়ে এবং এর কোন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই। গবেষণাগুলি দেখিয়েছে যে অল্প থেকে মাঝারি মাত্রার রক্তচাপের রোগীদের দীর্ঘদিন ধরে গোক্ষুরা দিয়ে নিরাপদ ভাবে চিকিৎসা করা যায়।
শরীরে এলডিএল বা খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা হ্রাস করে গোক্ষুরা কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে সহায়তা করতে পারে। এ'ছাড়াও লিপিডের পার-অক্সিডেশান প্রতিরোধ করে ফলে প্লাক তৈরি এবং এথেরোস্ক্লেরোসিস হতে পারে না।
উদ্বেগ ও অবসাদে গোক্ষুরা -
উদ্বেগ ও অবসাদ বর্তমান কালে খুবই প্রচলিত সমস্যা। লিঙ্গ নির্বিশেষ সব বয়সের মানুষই এই দুইয়ের প্রভাবে আসতে পারে। প্রি-ক্লিনিক্যাল পরীক্ষায় ইঙ্গিত দিচ্ছে যে গোক্ষুরা একটি কার্যকরী উদ্বেগ ও অবসাদ বিরোধী ওষুধ হতে পারে, যার কোন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই। উদ্বেগ ও অবসাদের চিকিৎসায় একে ব্যবহার করে যেতে পারে।
আরও পরীক্ষা দেখাচ্ছে গোক্ষুরার এই অবসাদ বিরোধী চরিত্রের কারণ হল এতে স্যাপোনিনস আছে, যা সিরাম কর্টিসল'এর পরিমাণ হ্রাস করে।
শরীরচর্চার জন্য গোক্ষুরা -
ব্যায়ামবিদদের মধ্যে সাম্প্রতিক সময়ে গোক্ষুরা খুবই জনপ্রিয় হয়েছে। এর কারণ হল এই ঔষধি পেশির শক্তি উন্নতি এবং শরীরের গঠন ভাল করে। দীর্ঘ সময় ধরে গোক্ষুরা খেলে শক্তি এবং পেশি বৃদ্ধি হয়। ট্রিবিউলাস টেরেস্ট্রিস নাইট্রিক অক্সাইড মুক্ত করে চর্বিহীন পেশি এবং টেস্টোস্টেরণ'এর পরিমাণ বৃদ্ধি করে। নাইট্রিক অক্সাইড রক্ত নালীকে প্রসারিত করে, ফলে পেশিতে অক্সিজেনের সরবরাহ ভাল হয়। পুরুষরা আজকের দিনে স্বাস্থ্য ভাল রাখার জন্য স্টেরয়েড ইঞ্জেকশান নিচ্ছেন, যা দীর্ঘ সময় নিতে থাকলে ক্ষতিকারক হবে বলে প্রমাণিত হয়েছে। গোক্ষুরা একটি প্রাকৃতিক ভেষজ এবং এটি স্টেরয়েডগুলির স্বাস্থ্যসম্মত বিকল্প। যাইহোক, স্বাস্থ্য সম্পর্কিত উদ্বেগ যদি কিছু থাকে, তাহলে সেগুলি বাতিল করতে এবং দীর্ঘদিন ধরে এই ঔষধি নিলে তার নিরাপত্তার বিষয়টি নিশ্চিত করতে আরও গবেষণায় প্রয়োজন আছে।
গোক্ষুরার অন্যান্য সম্ভাব্য স্বাস্থ্য-সংক্রান্ত সুবিধা -
এটি বিশ্বাস করা হয় যে গোক্ষুরা ব্রণের সমস্যা মোকাবেলায় সহায়তা করে, যা বেশিরভাগ অল্পবয়সীদের মধ্যে দেখা যায়। এটি ত্বকের বিভিন্ন সমস্যা যেমন চুলকানি, ত্বকে জ্বালা, ত্বকে ফুসকুড়ি, একজিমা ইত্যাদির চিকিৎসায়ও উপকারী।
এই ঔষধি নিয়মিত খেলে অকাল বার্ধক্যের প্রতিরোধ হয়, ফলে আপনাকে অনেক অল্প বয়সী মনে হবে। এটি বলিরেখা প্রতিরোধ করে, শরীরের চর্বির পরিমাণ বৃদ্ধি করে এবং পেশী নষ্ট হয়ে যাওয়া প্রতিরোধে সাহায্য করে।
এছাড়াও, গোক্ষুরার বীজ দিয়ে লেই তৈরি করে তা প্রয়োগ করলে চুল পড়া নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ করে।
এই আয়ুর্বেদীয় ঔষধি এছাড়াও মাথাব্যথা এবং আধ কপালে ব্যথার উপশম করে।
প্রদাহ বিরোধী গুণের কারণে, এটি ফিস্টুলা এবং অর্শ রোগের চিকিৎসার জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে।
দীর্ঘদিন ধরে, চোখের সমস্যা এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য গোক্ষুরা ব্যবহার হচ্ছে।
গোক্ষুরার অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট গুণের জন্য মধুমেহর লক্ষণগুলির ব্যবস্থাপনায় সহায়ক এবং মধুমেহ সম্পর্কিত জটিলতাগুলি এড়াতে সহায়ক বলে মনে করা হয়।
গোক্ষুরার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া -
বেশির ভাগ গবেষণাই দেখিয়েছে যে গোক্ষুরা খাওয়া নিরাপদ এবং এর কোন গুরুতর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই। গোক্ষুরা খেলে পেটের সমস্যা হতে পারে এবং পুরুষদের প্রস্টেট'এর আকার বৃদ্ধি পেতে পারে। আপনার দৈনন্দিন খাদ্যে গোক্ষুরাকে যোগ করার আগে আপনার চিকিৎসকের সাথে পরামর্শ করে নিন। নিম্ন লিখিত ক্ষেত্রগুলিতে সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে।গর্ভবতী এবং স্তন্যদাত্রী মহিলা: গর্ভবতী এবং স্তন্যদাত্রী মহিলাদের সুপারিশ করা হচ্ছে তারা যেন গোক্ষুরা না খান, কারণ এটি ভ্রূণের বিকাশ প্রতিরোধ করে।
এলার্জির প্রতিক্রিয়া: কোন কোন ব্যক্তির পেটের গোলমাল বা ফুসকুড়ির মত এলার্জির প্রতিক্রিয়া হতে পারে।
গুরুতর শল্য চিকিৎসার ইতিহাস: যদি শল্য চিকিৎসা হয়ে থাকে তাহলে নির্ধারিত মাত্রায় গোক্ষুরা সেবন করা যায়।
বর্তমান অসুস্থতা: যদি আপনি বর্তমানে ওষুধ নিতে থাকেন বা আপনার কোন গুরুতর অসুস্থতা থাকে তাহলে গোক্ষুরা সেবনে সাবধানতা অবলম্বন করবেন। যে সব মহিলাদের জরায়ু বা স্তনের কর্কট রোগ হয়েছে, তারা গোক্ষুরা সেবন করবেন না। পুরুষদের ক্ষেত্রে যাদের প্রোস্টেটে কর্কট রোগ হয়েছে, তারাও গোক্ষুরা এড়িয়ে যাবেন।
মধুমেহ: রক্তের গ্লুকোজের পরিমাণ কমিয়ে গোক্ষুরা একে নিয়ন্ত্রণ করে। আপনি যদি মধুমেহর রোগী হন এবং ওষুধ নিতে থাকেন, তাহলে আপনার চিকিৎসকের কাছে গোক্ষুরার সঠিক মাত্রা জেনে নিন।
উচ্চ রক্তচাপের রোগী: যাদের উচ্চ রক্তচাপ রয়েছে তারা চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে গোক্ষুরা নেবেন, কারণ এটি একটি প্রমাণিত রক্তচাপ হ্রাস করার ঔষধি।
শিশু: শিশুরা সংবেদনশীল হতে পারে। তাই চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া কোন রকমের ওষুধ দেওয়া উচিৎ নয়।
উপসংহার -
গোক্ষুরা বা ট্রিবিউলাস টেরেস্ট্রিস পাতাযুক্ত একটি ছোট উদ্ভিদ, যা যুগ যুগ ধরে থেকে আয়ুর্বেদ এবং ঐতিহ্যগত ঔষধে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া খুবই কম কিন্তু স্বাস্থ্যের উপকারের তালিকাটি দীর্ঘ। মধুমেহ, উচ্চ কোলেস্টেরল এবং উচ্চ রক্তচাপের রোগীদের উপকারে আসে। এটি কামশক্তির উন্নতিও করে। কোন রুমের সম্পূরক নেওয়ার আগে, সেটি স্বাস্থ্যের কতটা উপকারে আসে এবং এর ঝুঁকি কতটা সেই তথ্যগুলি জেনে নেওয়া ভাল, এবং এটি ট্রিবিউলাস টেরেস্ট্রিস’এর ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য।
যৌন ক্ষমতা বৃদ্ধির উপায়
১। কামশাস্ত্র অধ্যাপকরা বলেন, ধুতুরা, কালো মরিচ ও পিপুল সমপরিমাণ একত্রে গুঁড়া করবে। তাপর সমপরিমাণ মুধুর সঙ্গে একত্রে মিশিয়ে মলম করবে। এই মলম লিঙ্গ মুণ্ডে লাগিয়ে পরে তাহা পরিষ্কার করে ফেলতে হয়। এখন এই পুরুষ যে নারীর সঙ্গে সঙ্গমে ব্রতী হবে, সে নারী, এ পুরুষ ব্যতীয় অন্য কোন পুরুষকে পছন্দ করবে না। সঙ্গমও দীর্ঘস্থায়ী হয়।
২। ঝড়ে ফেলে যাওয়া গাছের তেজ পাতা, শবের মাথার পুড়ে যাওয়া অবশিষ্টাংশ ও ময়ূরের অসি’ এক সঙ্গে বেঁটে গুঁড়া করবে। এই গুঁড়া যদি নারী পুরুষের পায়ে, কিংবা পুরুষ নারীর মাথায় মেখে দিতে পারে, তা হলে ঐ পুরুষ বা নারী অবশ্যই বশীভূত হবে। ৩। যদি কোন স্ত্রী লোক শকুনের স্বাভাবিক মৃতদেহ সংগ্রহ করে শুকিয়ে গুড়ো করে নেয়। তারপর সেই গুঁড়ো মধুর সহিত মিশিয়ে ্লানের পূর্বে আপন অঙ্গে মর্দন করবে। কয়েক দিন এর রকম করলে বাঞ্ছিত পুরুষ অবশ্য তার বশীভূত হবে। ইহাতে প্রেম ভালবাসা সুদৃঢ় হয়। ৪। যদি কোন লোক সুনুহ (Cuphortra Nellifolia) গাছের শিকড় ও গন্ড (acacic catechu) গাছের পল্লব মিশিয়ে বিশুদ্ধ গন্ধক সহ Red Arsenic -এ সাত বার ডোবাবে ও সাত বার শুকোবে। তারপর ঐ গুড়ো মধুর সহিত মিশিয়ে প্রলেপ দেবে। ইহার পর সে যে নারীর সহিত সুরত কার্যে রত হবে সে নারী চিরদিন এই পুরুষের দাসী হ’য়ে থাকবে।
৫। কোনও শিংশপা (শিশু) গাছে একটি ফুটো করবে (যেখান থেকে পাতা গজিয়েছে এমন জায়গা)। শেষে ঐ ফুটাতে আম্রফলের আঁটির তেল কতকগুলি বচার (বচের) (Acorus calamus) খণ্ড দিয়ে ফুটো বন্ধ করে দিতে হবে। ছয় মাস পরে, ঐ দ্রব্যগুলি ফুটা খুলে বের করতে হবে। তারপর এ দিয়ে একটি মলম তৈরী করতে হবে। ঐ মলম যদি কোনও পুরুষ তাহার সমস্ত অঙ্গে প্রলেপ লাগায়, তাহা হলে সে দেবতার মত দেখতে সুন্দর হয় এবং সমস্ত নারীর মনাকর্ষণ করতে পারে। ৬। উদর্ কিডল (Phascolus Radiatus) তার ভূষি না বাদ দিয়ে, পরিষ্কার করে, ভেজে নেবে ও গো দুগ্ধে ইহা স্দ্িধ করতে হয়। তারপর ইহা অর্ধেক ঝোলে (soup) পরিণত করে তাহা মধু ও ঘৃতে মিশ্রিত করতে হয়। কামসূত্ররূপী অধ্যাপকগণ বলেন, ইহা ভোজন করলে পুরুষকে বহু নারীর সঙ্গে সুরতে ক্ষমতাশালী করে তোলে।
৭। ভিদারি এবং স্বায়ংগুপ্তর শিকড় এক সঙ্গে গুঁড়া করে ময়দার সহিত মিশিয়ে চিনি, মধু ও ঘৃতের সহিত মিশিয়ে লেচি তৈরি করতে হয়। ইহা হতে পিষ্টক তৈরী করে খেতে হবে। ইহা খেলে একসঙ্গে বহু নারীর সহিত সুরত কার্য করতে সক্ষমতা লাভ করে। ৮। চাউল, চটক (চড়ুই পাখীর) ডিম্বের সহিত চটকে তারপর শুষ্ক করতে হবে। পরে দুগ্ধে সিদ্ধ করে পায়েসে পরিণত করতে হবে। এই পায়স মধু এবং ঘৃতের সহিত মিশিয়ে খেলে সুরতে যথেষ্ট শক্তি দান করে। ৯। সিসেমাম্ (sesamum) বীজের খোসা ছাড়িয়ে, চাতক পাখির ডিমের সহিত মিশ্রিত করতে হবে। পরে শুষ্ক করে নিতে হবে। তারপর শৃঙ্গাটক, কেসুর ও স্বয়ংগুপ্ত বীচির সহিত মিশ্রিত ক’রে ময়দা বা আটায় মিশিয়ে দুগ্ধ এবং ঘৃতে সিদ্ধ করতে হবে। এই সুপ (soup) তৈরী করতে হবে। ইহা সেব করলে বীর্য কামশক্তি ও দীর্ঘ জীবন লাভ করে। ১১। শতভরি, (asparagus saaramantosus) এবং গোক্ষুর গাছের ছালের রস গুড়ের সহিত মিশ্রিত করে, পিপুল ও দারুচিনি গুঁড়া করে মেশাবে। গোদুগ্ধ ও ভেড়ার ঘৃত দিয়ে সিদ্ধ করে চাটনী তৈরী করতে হবে। পুষ্যা নক্ষত্রের সঙ্গে যে দিন চন্দ্রের মিলন হয়, সেই দিন থেকেই ইহা খেতে আরম্ভ করতে হয়। ইহাও খুবই শক্তি বর্ধক বীর্য প্রসবক। ১২। সমান ভাগ শতভরি, গোক্ষুর এবং শ্রীপর্নি ফল নিতে হবে। তাহা জলে সিদ্ধ করতে হবে। যখন মাত্র সিকি ভাগ থাকবে, তখন আগুন থেকে নামাবে। ইহা পুষ্যা নক্ষত্র যুক্ত চন্দ্রের দিনে খেতে হয়। ইহা খেলে শরীরে বীর্য ও গুণ বাড়তে দেখা যায়। ১৩। গোক্ষর এবং বার্লি সমান বাগে মিশাবে। প্রত্যেক দিন সকালে ঐ মিশ্রিত দ্রব্যের ক্কথ এক পলা করে খেলে ইহাতে বুদ্ধি, আয়ু এবং রতি শক্তি বৃদ্ধি পায়। এ সকল ব্যবস্থা আয়ুর্বেদ, অর্থববেদ এবং তর্কশাস্ত্র হ’তে গৃহীত হয়েছে। তবে এ সকল উপাদান খেতে হলে, শরীরে যাহাতে কোনও ক্ষতি না হয়, এমনভাবে খেতে হবে। আধুনিক যুগে উপরোক্ত উপাদান, পর্বত অরণ্য ইত্যাদি স্থান থেকে সংগ্রহ করা খুবই দুষ্কর। শুধু-যে সকল বস্তু মহর্ষি বাৎস্যায়ন সকল বেদ ও তন্ত্রশাস্ত্র হ’তে উল্লেখ করেছেন, তাই আমরা লিখলাম।
References
- Saurabh Chhatre et al. Phytopharmacological overview of Tribulus terrestris. Pharmacogn Rev. 2014 Jan-Jun; 8(15): 45–51. PMID: 24600195
- R Jain, S Kosta, A Tiwari. Ayurveda and Urinary Tract Infections. J Young Pharm. 2010 Jul-Sep; 2(3): 337. PMID: 21042497
- Susan Arentz, Jason Anthony Abbott, Caroline Anne Smith, Alan Bensoussan. Herbal medicine for the management of polycystic ovary syndrome (PCOS) and associated oligo/amenorrhoea and hyperandrogenism; a review of the laboratory evidence for effects with corroborative clinical findings. BMC Complement Altern Med. 2014; 14: 511. PMID: 25524718
- Amol L. Shirfule, Venkatesh Racharla, S. S. Y. H. Qadri, Arjun L. Khandare. Exploring Antiurolithic Effects of Gokshuradi Polyherbal Ayurvedic Formulation in Ethylene-Glycol-Induced Urolithic Rats. Evid Based Complement Alternat Med. 2013; 2013: 763720. PMID: 23554833
- Elham Akhtari et al. Tribulus terrestris for treatment of sexual dysfunction in women: randomized double-blind placebo - controlled study. Daru. 2014; 22(1): 40. PMID: 24773615
- Shashi Alok, Sanjay Kumar Jain, Amita Verma, Mayank Kumar, Monika Sabharwal. Pathophysiology of kidney, gallbladder and urinary stones treatment with herbal and allopathic medicine: A review. Asian Pac J Trop Dis. 2013 Dec; 3(6): 496–504. PMC4027340
- MURTHY A.R et al. Anti-hypertensive effect of Gokshura (Tribulus terrestris Linn.) A clinical study . Ancient Science of Life Vol. No XIX (3&4) January, February, March, April 2000
- Amin A, Lotfy M, Shafiullah M, Adeghate E. The protective effect of Tribulus terrestris in diabetes Ann N Y Acad Sci. 2006 Nov;1084:391-401. PMID: 17151317
- Seok Yong Kang et al. Effects of the Fruit Extract of Tribulus terrestris on Skin Inflammation in Mice with Oxazolone-Induced Atopic Dermatitis through Regulation of Calcium Channels, Orai-1 and TRPV3, and Mast Cell Activation. Evid Based Complement Alternat Med. 2017; 2017: 8312946. PMID: 29348776
- Mitra Tadayon et al.The effect of hydro-alcohol extract of Tribulus terrestris on sexual satisfaction in postmenopause women: A double-blind randomized placebo-controlled trial. J Family Med Prim Care. 2018 Sep-Oct; 7(5): 888–892. PMID: 30598928
- Wang Z, Zhang D, Hui S, Zhang Y, Hu S. Effect of tribulus terrestris saponins on behavior and neuroendocrine in chronic mild stress depression rats J Tradit Chin Med. 2013 Apr;33(2):228-32. PMID: 23789222
No comments:
Post a Comment
ধন্যবাদ