কোরাণের বেশ অনেকটা জুড়েই রয়েছে অনর্থক উত্তেজক নির্দেশাবলীর ছড়াছড়ি, যেগুলো 'মৌলবাদের সুতিকাগার' হিসেবে আজ কারো মনে হতেই পারে। যেমন :
কোরান মুমিন ভক্তদের শেখাচ্ছে যেখানেই অবিশ্বাসীদের পাওয়া যাক তাদের হত্যা করতে (২:১৯১, ৯:৫), তাদের সাথে সংঘাতে লিপ্ত হতে, কঠোর ব্যবহার করতে (৯:১২৩), আর যুদ্ধ করে যেতে (৮:৬৫)। কোরাণ শেখাচ্ছে বিধর্মীদের অপদস্ত করতে আর তাদের উপর জিজিয়া কর আরোপ করতে (৯:২৯)। কোরাণ অন্য সকল ধর্মের অনুসারীদের কাছ থেকে ধর্মীয় স্বাধীনতার নির্যাসটুকু কেড়ে নিয়ে সোচ্চারে ঘোষণা করছে যে ইসলামই হচ্ছে একমাত্র মনোনীত ধর্ম (৩:৮৫)। এটি অবিশ্বাসীদের দোজখে নির্বাসিত করে (৫:১০), এবং ‘অপবিত্র’ বলে সম্বোধন করে (৯:২৮); মুসলিমদের ততক্ষণ পর্যন্ত যুদ্ধ চালিয়ে যেতে আদেশ করে যত ক্ষণ পর্যন্ত না অন্য সকল ধর্মকে সরিয়ে ইসলামী রাজত্ব কায়েম হয় (২:১৯৩)। কোরাণ বলছে যে শুধু ইসলামে অবিশ্বাসের কারণেই একটি মানুষ দোজখের আগুনে পুড়বে আর তাকে সেখানে পান করতে হবে পুঁতি দুর্গন্ধ ময় পূঁজ (১৪:১৭)। এই 'পবিত্র' গ্রন্থটি অবিশ্বাসীদের হত্যা করতে অথবা তাদের হাত পা কেটে ফেলতে প্ররোচিত করছে, দেশ থেকে আপমান করে নির্বাসিত করতে বলছে আর ভয় দেখাচ্ছে এই বলে যে- 'তাদের জন্য পরকালে অপেক্ষা করছে ভয়ানক শাস্তি' (৫:৩৪)। আরও বলছে, 'যারা অবিশ্বাস করে তাদের জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে আগুনের পোশাক, তাদের মাথার উপর ফুটন্ত পানি ঢেলে দেওয়া হবে যাতে ওদের চামড়া আর পেটে যা আছে তা গলে যায়, আর ওদের পেটানোর জন্য থাকবে লোহার মুগুর' (২২:১৯)। কোরাণ ইহুদী এবং নাসারাদের সাথে বন্ধুত্বটুকু করতে পর্যন্ত নিষেধ করছে (৫:৫১), এমনকি নিজের পিতা বা ভাই যদি আবিশ্বাসী হয় তাদের সাথে সম্পর্ক না রাখতে উদ্বুদ্ধ করছে (৯:২৩, ৩:২৮)। আল্লাহ তার কোরাণে পরিস্কার করেই বলছে - আল্লা-রসুলে যাদের বিশ্বাস নেই, তাদের জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে জ্বলন্ত অগ্নিকুন্ড (৪৮:১৩)। ইসলামে অবিশ্বাস করে কেউ মারা গেলে কঠোর ভাবে উচ্চারিত হবে - 'ধর ওকে, গলায় বেড়ি পড়াও এবং নিক্ষেপ কর জাহান্নামে আর তাকে শৃংখলিত কর সত্তুর হাত দীর্ঘ এক শৃংখলে' (৬৯:৩০-৩৩)। মহানবী সবসময়ই আল্লাহর নামে যুদ্ধ করতে সবাইকে উৎসাহিত করেছেন সাফাই গেয়েছেন এই বলে - 'এটা আমাদের জন্য ভালই, এমনকি যদি আমাদের অপছন্দ হয় তবুও' (২:২১৬), তারপর উপদেশ দিয়েছেন - 'কাফেরদের গর্দানে আঘাত কর' আর তারপর তাদের উপর রক্তগঙ্গা বইয়ে দেবার নির্দেশের পর বলেছেন অবশিষ্টদের ভালভাবে বেঁধে ফেলতে (৪৭:৪)। পরমকরুনাময় আল্লাহতালা এই বলে প্রতিজ্ঞা করেছেন - 'কাফেরদের হৃদয়ে আমি গভীর ভীতির সঞ্চার করব' এবং বিশ্বাসীদের আদেশ করেছেন কাফেরদের কাঁধে আঘাত করতে আর হাতের সমস্ত আংগুলের ডগা ভেঙ্গে দিতে (৮:১২)
আল্লাহ জ্বিহাদকে মুমিনদের জন্য 'আবশ্যিক' (mandatory) করেছেন আর সতর্ক করেছেন এই বলে -'তোমরা যদি সামনে না এগিয়ে আস (জ্বিহাদের জন্য) তবে তোমাদের জন্য অপেক্ষা করছে মর্মন্তুদ শাস্তি'(৯:৩৯)। আল্লাহ তার পেয়ারা নবীকে বলছেন, 'হে নবী, অবিশ্বাসীদের বিরুদ্ধে সংগ্রাম কর আর কঠোর হও- কেননা, জাহান্নামের মত নিকৃষ্ট আবাস স্থলই হল তাদের পরিনাম' (৯:৭৩)।
এই হচ্ছে কোরাণ (হাদিস এবং অন্যান্য গ্রন্থগুলোর কথা না হয় বাদই থাকুক আপাততঃ)। অনেকেই দেখেছি নিজস্ব বিশ্বাসে আপ্লুত হয়ে কোরানকে নির্দ্বিধায় "The book of guidence' বলে মেনে নেন, আর ইসলামকে মনে করেন 'শান্তির ধর্ম'। যারা এমনটি ভাবেন, তারা কি কখনও ভেবে দেখেছেন যে উপরের আয়াতগুলো কেউ যদি নির্দ্বিধায় বিশ্বাস করে আর সমাজে তার বাস্তব প্রয়োগ চায় তবে তারা কি ধরনের শান্তিএ পৃথিবীতে বয়ে আনবে? জ্বিহাদীদের কল্যাণে আজকের বিশ্বে 'ইসলামী সন্ত্রাসবাদ' (Islamic Terroism) একটি প্রতিষ্ঠিত শব্দ। প্রতিদিন কাগজের পাতা খুললেই দেখা যায় এই জ্বিহাদী জোশে উদ্বুদ্ধ কিছু লোক বোমা মারছে মানুষ-জন, বাড়ী-ঘর, কারখানা, রাস্তাঘাট, যানবাহন, সিনেমা হল, সাংস্কৃতিক অঙ্গন বা সমুদ্র-সৈকতে। হাজার খানেক জ্বিহাদী সংগঠন যেমন - আল্ কায়দা, ইসলামিক জ্বিহাদ, হামাস, হরকত-উল-জিহাদ, হরকত-উল-মুজাহিদিন, জেইস-মুহম্মদ, জ্বিহাদ-এ-মুহম্মদ, তাহ-রিখ-এ-নিফাজ-সারিয়াত-এ-মুহম্মদ, আল-হিকমা, আল-বদর-মুজাহিদিন, জামায়ে ইসলামিয়া, হিজাব-এ-ইসলামিয়া আজ সারা পৃথিবী জুড়ে কায়েম করছে এক ত্রাসের রাজত্ব । ২০০৫ সালের ১৭ ই অগাস্ট সারা বাংলাদেশে একনাগারে ৬৩টি জেলায় একনাগারে বোমার মহড়া হয়ে গেল। মহড়ার প্রকোপ এমনই ব্যাপক ছিল যে অনেকেই ১৭ ই আগাষ্ট দিনটিকে এখন 'বাংলাদেশের ৯/১১' বলে অভিহিত করতে শুরু করেছেন। জঙ্গিবাদের সাথে বিশুদ্ধ ইসলামের সম্পর্ক কতটুকু তা বোঝা হয়ে গেছে বোমা মহড়ার স্থানগুলোতে পাওয়া তাদের ছাপানো লিফলেটগুলো থেকেই। সারা লিফলেট জুড়েই কোরাণ হাদিস থেকে নানা উদ্ধৃতি আর কাফের নাফরমানদের বিরুদ্ধে জ্বিহাদের ডাক। ফরহাদ মজহার আর বদরুদ্দিন উমরেরা পালের হাওয়া যতই অন্য দিকে ঘোরানোর চেষ্টা করুক না কেন, বিশুদ্ধ ইসলামের সাথে জঙ্গিবাদের যে একটা সম্পর্ক রয়েছে, তা আর অস্বীকার করার জো নেই । সচেতন শান্তিকামী ধার্মিক মানুষদের আজ আত্মোপলব্ধির সময় এসেছে, সময় এসেছে সংশয়বাদী দৃষ্টিকোন থেকে প্রশ্ন করার - কেন এই জঙ্গি দলগুলো এত ইসলামিক? কেন তারা সন্ত্রাসী? কারা ধীরে ধীরে গড়ে তুলছে মোল্লা ওমর, বিন-লাদেন, মৌলানা মান্নান, গোলাম আজম, শাইখ আবদুর রহমান, মুফতি হান্নান আর বাংলাভাইদের? কে ইন্ধন যোগাচ্ছে তাদের সন্ত্রাসী কর্মকান্ডে? আজ অত্যন্ত পরিস্কারভাবে তাই বলার সময় এসেছে - এই 'পবিত্র' ধর্মগ্রন্থগুলো অনেকাংশেই মুসলিমদের ধর্মীয় সন্ত্রাসবাদের মূল উৎস। তবে সেই সাথে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং পশ্চিমা দেশগুলোর সাম্রাজ্যবাদী দৃষ্টিভঙ্গী এবং মধ্যপ্রাচ্যের প্রতি দীর্ঘদিনের বিদ্বেষমূলক পররাষ্ট্রনীতির কথাও আমাদের ভুলে গেলে চলবে না । জনবিধ্বংসী যুদ্ধাস্ত্র না পাওয়া কিংবা সাদ্দামের সাথে আল-কায়েদার কোন সম্পর্ক না খুঁজে পাওয়া কিংবা জৈব-যুদ্ধাস্ত্র না পাওয়া সত্ত্বেও নির্লজ্জ ভাবে ইরাকের উপর যে আগ্রাসন চালিয়েছে তা শুধু যে আমেরিকার চিরচেনা সাম্রাজ্যবাদী চেহারাটাকেই স্পষ্ট করে তুলেছে তা নয়, ইসলামী বিশ্ব এই আগ্রাসনকে যে কোন কারণেই হোক 'ইসলামের উপর আঘাত' হিসেবে নিয়েছে। সেজন্য রাজনৈতিক বিশ্লেষণে দেখা যায়, সে সমস্ত দেশেই ইসলামী আত্মঘাতী বোমা হামলার মাত্রাটা বেশী যে দেশের সরকার ইরাক যুদ্ধে বুশ-ব্লেয়ারকে নগ্নভাবে সমর্থন করেছে। এই রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া আর প্রতিহিংসার ব্যাপারগুলো ভুলে গেলে কোন আলোচনাই কখনও সম্পূর্ণ হতে পারে না। আরেকটি ব্যাপার উল্লেখ করাও বোধ হয় এক্ষেত্রে অপ্রাসঙ্গিক হবে না। রাষ্ট্রযন্ত্র কিভাবে ধর্ম ও মৌলবাদকে লালন করে, পালন করে আর সময় বিশেষে উস্কে দেয় তার একটি বাস্তব প্রমাণ হচ্ছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। বিজ্ঞানীরা স্টেম সেল নিয়ে গবেষণা করবে কি করবে না, কৃত্রিমভাবে সংযুক্ত জীবন রক্ষাকারী যন্ত্র তুলে ফেলা হবে কি হবে না, স্কুলে বিবর্তনবাদ পড়ানো হবে কিনা, আর হলে কিভাবেই বা পড়াতে হবে, সব কিছুই সূক্ষভাবে নিয়ন্ত্রন করছে সরকার। বিজ্ঞানীদের গবেষণা আর কাজকর্ম নৈতিক না অনৈতিক - এ নিয়েও উপযাজক হয়ে জ্ঞানগর্ভ মত দিতে এগিয়ে আসছে সরকারী পৃষ্ঠপোষকতায় পরিচালিত অর্ধশিক্ষিত পাদ্রী আর যাজকেরা। যুদ্ধের আগে নবী-রসুলদের মতই 'ঈশ্বরের কন্ঠস্বর' শুনতে পাচ্ছে সে দেশের প্রেসিডেন্ট; মিডিয়া, বৃহৎ পত্রিকা গোষ্ঠি আর প্রকাশক নির্ধারণ করে দিচ্ছে কোন্ খবরে আমরা বিশ্বাস করব, আর কোন খবর চেপে যাওয়া হবে। আসলে 'মুক্ত বিশ্বের' কথা মুখে বলে এভাবেই নাগরিক রুচি, চাহিদা, চেতনা আর পুরো জীবনধারাকেই নিয়ন্ত্রন করতে চাইছে ধর্মান্ধ শাসককুল আর ধনকুবের গোষ্ঠি; সে অন্য এক ইতিহাস।
, মৌলবাদ এবং সন্ত্রাসবাদ নিয়ে আলোচনার একটা বড় সমস্যা হল অযাচিত 'স্টেরিওটাইপিং' এর ভয়। এ ধরণের আলোচনা শুরু হলেই আমি দেখেছি বিশ্বাসীদের অনেকেই ক্ষিপ্ত হয়ে বলতে থাকেন - শুধু গুটি কয়েক সন্ত্রাসীদের কারণে সামগ্রিক ভাবে ইসলামকে বা মুসলীমদের দায়ী করা কি ঠিক হচ্ছে ? একজন বিন লাদেন বা একজন মুফতি হান্নান কি ইসলামের প্রতিনিধিত্ব করে নাকি? না, সত্যই করে না। কাজেই আমিও বলি যে, পৃথিবীর সমস্ত মুসলিম জনগোষ্ঠিকে কখনওই সন্ত্রাসী বলা উচিৎ নয়, যারা এ ধরনের 'স্টেরিওটাইপিং' করতে চান তাবা ভুল করেন। এটি একধরনের Racism । কেউ বা বলেন এটি এক ধরনের রোগ - 'ইসলামোফোবিয়া'! রোগ ই বলুন আর পশ্চিমা জাত্যাভিমানই বলুন (যাকে প্রয়াত এডোয়ার্ড সাইদ অভিহিত করেন 'ওরিয়ান্টালিজম' নামে), ৯/১১ এর পর পশ্চিমা বিশ্বে বসবাসরত মুসলিমরা এ ধরনের শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের স্বীকার হয়েছে বহু ক্ষেত্রেই - এ তো অস্বীকার করবার জো নেই। মুসলিম মানেই যে 'সন্ত্রাসী' নয় এটি বোঝার জন্য তো কোন দর্শন কপচানোর দরকার নেই, আমার-আপনার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতাই তো যথেষ্ট হবার কথা। আমার নিজেরই অনেক মুসলিম বন্ধু-বান্ধব রয়েছে। তাদের কেউই তো সন্ত্রাসী নন। কেউই বিন লাদেন নন, কেউই নন মুফতি হান্নান। তারা আমার বিপদে আপদে খোঁজ-খবর নেন, বাসায় এসে গল্প-গুজব করেন, খাওয়া-দাওয়া করেন, এমন কি নামাজের সময় হলে এই কাফিরের বাসায় 'পশ্চিম দিক কোনটা' জানতে চেয়ে নামাজও পড়েন। এরা নিপাট ভাল মানুষ। তারা কোরানের কোন আয়াতে ভায়োলেন্সের কথা আছে তা সম্বন্ধে মোটেও ওয়াকিবহাল নন, সেটা নিয়ে আগ্রহীও নন- তারা আসলে 'Spiritual Islam' এর চর্চা করেন। বিপদটা কখনই এদের নিয়ে নয়। এরা সবাই শান্তি, ভালবাসা আর সহিষ্ণুতায় বিশ্বাস করেন। কিন্তু এই মূল্যবোধগুলো তারা যতটা না ইসলাম থেকে পেয়েছেন, তার চেয়ে অনেক বেশী ছোট বেলা থেকেই সামাজিক শিক্ষা হিসেবে গ্রহণ করেছেন। কারণ কোনদিন কোরাণের বা ইসলামের চর্চা না করেও তো বহু মানুষ এই গুনাবলীগুলো বর্জিত নয়, এমন প্রমাণ ভুরি ভুরি হাজির করা যায়। কিন্তু এই 'Spiritual Islam' এর চর্চাকারী দলের বাইরেও একটা অংশ রয়েছে যারা রীতিমত কোরাণের চর্চা করেন, চোখ-কান বন্ধ করে কোরানের সকল আদেশ-নির্দেশ মেনে চলেন আর কোরাণের আলোকে দেশ ও পৃথিবী গড়তে চান। বিপদটা এদের নিয়েই। কারণ কেউ যদি সামাজিক শিক্ষার বদলে কোরানের সকল আদেশ-নির্দেশ চোখ-কান বন্ধ করে মেনে নেন তাহলে কি হবে ? নীচের আয়াতটায় চোখ বুলানো যাক -
Let not the believers Take for friends or helpers Unbelievers rather than believers: if any do that, in nothing will there be help from Allah (Q. 3:28)
যারা কোরানের মধ্যে কখনও ভায়োলেন্সের টিকিটিও খুঁজে পান না, বরং পবিত্র কোরানের আলোকে জীবন সাজাতে চান, তারা নিজেরাই কি তাদের কোন হিন্দু, খ্রীস্টান বা অধার্মিক প্রতিবেশীদের প্রতি কোরাণে বর্ণিত উপরের নির্দেশ অনুযায়ী ব্যবহার করেন? তারা কি সত্যই শুধুমাত্র অমুসলিম বলেই কারো বন্ধুত্ব প্রত্যাখান করেন? যদি তা না হয়, তবে বলতেই হয় যে তারা আসলে কোরাণের নির্দেশ অনুযায়ী চলছেন না। কিন্তু কোরাণ তো 'আল্লাহর কিতাব'। যদি কেউ যদি ভাসা ভাসা উদ্দেশ্যমূলকভাবে কোরানের চর্চা না করে কোরাণের সকল নির্দেশ আক্ষরিক ভাবেই মেনে চলার সিদ্ধান্ত নেন আর অবশেষে সাম্প্রদায়িক 'তালিবান' হিসেবে বেড়ে উঠেন, তবে দোষটা কার হবে?
আরেকটি আয়াত দেখি -
Fighting is prescribed for you, and ye dislike it. But it is possible that ye dislike a thing which is good for you (Q. 2:216) )
অথবা,
Then fight in Allah's cause - Thou art held responsible only for thyself - and rouse the believers. It may be that Allah will restrain the fury of the Unbelievers; for Allah is the strongest in might and in punishment (Q. 4:84).
কোরাণের বর্ণিত নির্দেশ মত জ্বিহাদী জোশে উদ্বুদ্ধ হয়ে তালিবানদের সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে ইহুদী-নাসারাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবার জন্য আফগানিস্তান চলে গিয়েছিলেন অনেকেই; কারণ ইহুদি-নাসারাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করাকে তারা আল্লাহর নির্দেশ বলেই মেনে নিয়েছিলেন। তাদের যে খুব একটা দোষ দেওয়া যায় তাও নয়। এমনি একজন ব্যক্তির উদাহরণ হচ্ছে John Phillip Walker Lindh (transformed as Abdul Hamid- বিখ্যাত 'আমেরিকান তালিবান'। দৈনিক প্রথম আলোর ১৮ ই অক্টোবর রিপোর্টে প্রকাশিত হয়েছে সম্প্রতি নিষিদ্ধ ঘোষিত হরকাতুল জিহাদের তত্ত্বাবধানে আশির দশকে বাংলাদেশ থেকে প্রায় তিন হাজার মাদ্রাসার ছাত্র-শিক্ষক জিহাদী জোশে উদ্বুদ্ধ হয়ে সোভিয়েত বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে আফগানিস্তানে চলে গিয়েছিল । কোরাণের অমানবিক শিক্ষাই যে শেষ পর্যন্ত মাদ্রাসা পড়ুয়া ছাত্রদের মধ্যে 'কাফিরদের' বিরুদ্ধে অযথা হিংসা-বিদ্বেষ ছড়ানোতে বহুলাংশে দায়ী, এটি অস্বীকার করার চেষ্টা স্রেফ আত্মপ্রবঞ্চনা ছাড়া আর কিছু নয়। এ স্পর্শকাতর বিষয়টি আলোচনা করতে গেলে সবসময়ই ঘুরে ফিরে ৯/১১'র ঘটনাটি সামনে চলে আসে। ৯/১১ এর ঘটনায় সারা পৃথিবী স্তম্ভিত হয়ে দেখেছিলো কি করে কিছু ধর্মোন্মাদ জ্বিহাদী সৈনিক উড়োজাহাজকে অস্ত্র বানিয়ে হাজার হাজার নিরপরাধ লোকের প্রাণহানি ঘটাতে পারে। যারা ইসলামের মধ্যে প্রতিনিয়ত শান্তি খোঁজেন, তারা বলবেন, এগুলো কতিপয় পথভ্রষ্ট দুষ্কৃতকারীদের কাজ - যার সাথে প্রকৃত ইসলামের সাথে কোনই সম্পর্ক নাই। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে এই 'কতিপয় পথভ্রষ্ট দুষ্কৃতকারী'রা তো আর নিজেদের দুষ্কৃতকারী ভাবেনি। বরং ভেবেছে তারাই সাচ্চা মুসলিম, যারা কিনা আল্লাহর দেওয়া অর্পিত দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করছে। ৯/১১ ঘটার অনেক আগেই - ১১ই জানুয়ারী ১৯৯৯ এর নিউজ উইকের একটি সংখ্যায় ওসামা বিন লাদেনের একটা সাক্ষাতকার ছাপা হয়েছিল। সেই সাক্ষাতকারে লাদেন সাহেব পরিস্কারভাবে ব্যাখ্যা করেছিলেন কেন তিনি সকল আমেরিকানদের মেরে ফেলাকে 'জায়েজ' মনে করেন। পাঠকদের উদ্দেশ্য কিছুঅংশ তুলে দেওয়া হল -
QUESTION: "Why have you asked Muslims to target civilian Americans all over the world? Islam prohibits its followers from killing civilians in war?"
BIN LADEN: "If the Israelis are killing small children in Palestine and the Americans are killing the innocent people in Iraq, and if the majority of the American people support their dissolute president, this means the American people are fighting us and we have the right to target them.
QUESTION: "All Americans?"
BIN LADEN "Muslim scholars have issued a fatwa [a religious order] against any American who pays taxes to his government. He is our target, because he is helping the American war machine against the Muslim nation.
দুর্ভাগ্যবশতঃ ভারতবর্ষে রামায়ন ও মহাভারতকে প্রাচীন ভারতীয় সভ্যতা ও সংস্কৃতির মহাকাব্যিক প্রতিফলন হিশেবে অথবা ভারতীয় তথা বিশ্বসাহিত্যের অমুল্য ধ্রুপদী সম্পদ হিশেবে গন্য না করে মৌলবাদী এবং সাম্প্রদায়িক রাজনীতির উপাদান হিশেবে ব্যবহার করার প্রবণতাই বেশী লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এখানেই আমাদের গভীর লজ্জা। প্রথমে ১৯৮৮-৯০ সালে এবং আরও কয়েকবার সরকারী দুরদর্শনে রামায়ন ও মহাভারত যে অবয়ব ও প্রকাশভঙ্গিমায় সম্প্রচারিত হয়েছে, তা এই মৌলবাদী রাজনীতিতে ইন্ধন জুগিয়েছে বলেই মনে হয়। দুরদর্শনে সম্প্রচারিত রামায়নের কাহিনী প্রধানত তুলসীদাস রচিত রামচরিত মানস গ্রন্থকে ভিত্তি করেই রচিত হয়েছে, বাল্মীকি রামায়নকে ভিত্তি করে নয়। তুলসী রামায়নের কাহিনী মধ্যযুগীয় ভক্তি আন্দোলনের ফলশ্রুতি এবং বৈষনব ভক্তি আন্দোলনের ফলশ্রুতি এবং বৈষনব ভক্তি সাহিত্যের অন্তর্গত। আদি বাল্মীকি রামায়নে বালকান্ড ও উত্তর কান্ড ছিল না। আর পরবর্তী কালে সংযোজিত এই দুই কান্ড এবং সনশ্লিষ্ট অন্যান্য প্রক্ষিপ্ত কথা বাদ দিলে আদি বাল্মীকি রামায়নে রামের অবতারত্বের বিশেষ চিহ¡ পাওয়া যায় না। মহাকাব্য হিশেবেও রামায়নের সাহিত্যগুন বৃদ্ধি পায়। কিন্তু তুলসী রামায়নে বিষ্ণুকে শ্রেষ্ট দেবতা রামকে বিষ্ণুর অবতার হিসেবে প্রতিষ্ঠা করাই ছিল প্রধান লক্ষ্য। যা এমনকি বালকান্ড ও উত্তরকান্ড সহ পল্লবিত বাল্মীকি রামায়নেরও প্রধান বিষয়বস্তু নয়। দূরদর্শনে এভাবে রামায়নকে মহাকাব্য হিশেবে উপস্থিত না করে বিকৃতরূপে অবতারকাহিনী ও ধর্মগ্রন্থররূপেই জনসাধারণের সামনে তুলে ধরা হয়েছে। সরকারী প্রচারমাধ্যমে এভাবে অন্ধবিশ্বাসকে উৎসাহ দেওয়ার ফলে মৌলবাদী ও সাম্প্রদায়িক রাজনীতি সঞ্জীবিত হয়েছে, এ ধারণা যুক্তিসঙ্গত। দূরদর্শনের পর্দায় প্রথমবার রামায়ন চলাকালে রামজন্মভূমি নিয়ে মৌলবাদী আন্দোলনের জোয়ার এবং পরবর্তীকালে তার ব্যাপক রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়াই এর অকাট্য প্রমাণ।
একটি হিসেবে দেখা যায়, মুসার নির্দেশে প্রায় ১০০,০০০ জন তরুন এবং প্রায় ৬৮,০০০ অসহায় নারীকে হত্যা করা হয়েছিল । এছাড়াও নিষ্ঠুর, আক্রামনাত্মক এবং অরাজক বিভিন্ন ভার্সসমূহের বিবরণ পাওয়া যায় যিশাইয় (২১: ৯), ১ বংশাবলী (২০:৩), গণনা পুস্তক (২৫: ৩-৪), বিচারকর্তৃগন (৮: ৭), গণনা পুস্তক (১৬: ৩২-৩৫), দ্বিতীয় বিবরণ (১২: ২৯-৩০), ২ বংশাবলী (১৪:৯, ১৪:১২), দ্বিতীয় বিবরণ (১১: ৪-৫), ১ শমূয়েল (৬:১৯), ডয়টারনোমি (১৩:৫-৬, ১৩:৮-৯, ১৩:১৫), ১ শমূয়েল (১৫:২-৩), ২ শমূয়েল (১২:৩১), যিশাইয় (১৩: ১৫-১৬), আদিপুস্তক (৯: ৫-৬) প্রভৃতি নানা জায়গায়।
বিশ্বাসী খ্রীষ্টানরা সাধারণতঃ বাইবেলে বর্ণিত এই ধরনের নিষ্ঠুরতা এবং অরাজগতাকে প্রত্যাখান করে বলার চেষ্টা করেন, এগুলো সব বাইবেলের পুরাতন নিয়মের (ইহুদীদের ধর্মগ্রন্থ) অধীন, যীশু খ্রীষ্টের আগমনের সাথে সাথেই আগের সমস্ত অরাজগতা নির্মূল হয়ে শান্িত প্রতিষ্ঠিত হয়ে গেছে। এটি সত্য নয়। বাইবেলের নতুন নিয়মে যীশু খুব পরিস্কার করেই বলেছেন যে তিনি পূর্বতন ধর্মপ্রবর্তকদের নিয়মানুযায়ীই চালিত হবেন :
এ কথা মনে কোর না, আমি মোশির আইন-কানুন আর নবীদের লেখা বাতিল করতে এসেছি। আমি সেগুলো বাতিল করতে আসি নি বরং পূর্ণ করতে এসেছি' (মথি, ৫: ১৭)।
No comments:
Post a Comment
ধন্যবাদ