গীতায় উল্লেখ পুরুষ বিশ্লেষন - ধর্ম্মতত্ত্ব

ধর্ম্মতত্ত্ব

ধর্ম বিষয়ে জ্ঞান, ধর্ম গ্রন্থ কি , হিন্দু মুসলমান সম্প্রদায়, ইসলাম খ্রীষ্ট মত বিষয়ে তত্ত্ব ও সনাতন ধর্ম নিয়ে আলোচনা

धर्म मानव मात्र का एक है, मानवों के धर्म अलग अलग नहीं होते-Theology

সাম্প্রতিক প্রবন্ধ

Post Top Ad

স্বাগতম

13 September, 2020

গীতায় উল্লেখ পুরুষ বিশ্লেষন

                                             গীতায় অর্জুন পরমেশ্বরকে পুরুষ বলে ডেকেছেন। জীবাত্মা ও পরমাত্মা উভয়কেই পুরুষ বলা যায়। পুরুষ আবার তিন প্রকার নিচে গীতা থেকে তা দেখানো হল-

"দ্বাবিমৌ পুরুষৌ লোকে ক্ষরশ্চাক্ষর এব চ।"
অর্থ- ক্ষর ও অক্ষর এই দুটি পুরুষই লোকে কথিত আছে।
"যে তিন লোকের মধ্যে প্রবেশ করে এই সংসারকে ধারন করে তিনি অব্যয়, ঈশ্বর তথা উত্তম পুরুষ এবং তিনি প্রকৃতি তথা জীব থেকে ভিন্ন পরমাত্মা নামে কথিত হয়।"
"যেজন্য আমি ক্ষর= প্রকৃতি থেকে পর এবং অক্ষররূপ জীব থেকে শ্রেষ্ঠ এইজন্য লোকে বেদ মধ্যে উত্তম পুরুষ বা পুরুষোত্তম নামে প্রসিদ্ধ।"
গীতা ১৫/১৬,১৭,১৮.
গীতাতে দেখা যায় শ্রী কৃষ্ণজীই অর্জুনকে পুরুষ শ্রেষ্ঠ বলেছেন এবং সকলের জীবাত্মাকেই পুরুষ বলেছেন-
"হে পুরুষ শ্রেষ্ঠ! এইগুলি সুখদুঃখে সমভাবাপন্ন ধীর পরুষকে ব্যাথা দেয় না এবং তিনি অমৃতত্বের যোগ্য হন।"
(গীতা ২/১৫)
"হে পার্থ! যে ইহাকে নিত্য, অজ, অব্যয়,অবিনাশী জানে, সেই পুরুষ কিভাবে অপরকে বদ করে বা করাতে পারেন?"
(গীতা ২/২১)
আবার বিশ্বরূপ দর্শন করে অর্জুন বলেছেন-
"ত্বমব্যয়ঃ শাশ্বতধর্মগোপ্তা সনাতনস্ত্বং পুরুষো মতো মে।"
(গীতা ১১/১৮)
অর্থাৎ তুমি অব্যয়, সনাতন ধর্মের রক্ষক এবং সনাতন পরম পুরুষ। এই আমার অভিমত। অর্থাৎ উপরের আলোচনা থেকে বুঝাযায় যে জীবের ক্ষেত্রে ও পরমেশ্বরের ক্ষেত্রে পুরুষ শব্দের মধ্যে পার্থক্য আছে।
পবিত্র বেদে 'পুরুষ' সম্পর্কে একটা সুক্তই আছে, সেই সুক্তের প্রথম মন্ত্রটা দেখুন। যেটা দেখিয়ে অনেক পৌরাণিক শাস্ত্র বিশারদরা পুরুষকে শরীরধারী বানিয়ে ফেলে বা ফেলতে চায়! দেখুন-
"ওম্ সহস্রশীর্ষা পুরুষঃ সহস্রাক্ষ সহস্রপদ।
স্বভুমিং বিশ্বতো বৃত্তাঃ অত্যাতিষ্ঠদ দশাঙ্গুলম।।"
(ঋগবেদ১০ .৯০.১, সামবেদ৬.৪.১, যজুর্বেদ৩১.১ ওঅথর্ববেদ১৯.৬.১।)
এখানে চক্ষু মানেই Physical চোখ, পদ মানেই Physical পা, শীর্ষ মানেই Physical মাথা, এরুপ বাংলা উদ্ভূত সংস্কৃত জ্ঞান যাদের, সেই সকল পৌরাণিক শাস্ত্র বিশারদদের বেদ নিয়ে মন্তব্য না করাই ভাল। বেদ এর অনুবাদ অবশ্যই বৈদিক ব্যায়াকরণ এবং বৈদিক ঋষিদের পারিপার্শ্বিক ব্যাখ্যামূলক গ্রন্থের তথ্য বিবেচনায় নিয়ে করতে হবে।
যজুর্বেদ৪০ ।৮ এ ঈশ্বরকে
"অকায়মব্রণমাস্ নাবিরম" অর্থাৎ আকারবিহীন
এবং স্থূল ও সুহ্ম যে কোন প্রকার দেহবিহীন বলা
হয়েছে।
কেনোপনিষদ১ .৬ এ বলা হয়েছে

"যচ্চক্ষুষা ন পশ্যতি" অর্থাৎ যাকে কেউই চোখে
দেখতে পায় না। কেননা তিনি শরীর তথা ইন্দ্রিয়হীন।
শ্বেতাশ্বতরোপনিষদ ৪.২০ এ বলা হয়েছে-
"ন সন্দৃশে তিষ্ঠতি রুপমস্য ন চক্ষুষা পশ্যতি
কশ্চনৈনম্।
হৃদা হৃদিস্থং মনসা য এন মেবাং বিদুরমৃতাস্তে ভবন্তি"
অর্থাৎ পরমেশ্বর ইন্দ্রিয়গণের গোচর হয় না, কেহই চক্ষুরাদি ইন্দ্রিয়ের দ্বারা দর্শণ করে না। শুভ বুদ্ধি সহায়ে
এবং বিচারসাধ্য একত্বজ্ঞানের দ্বারা হৃদয়গুহায়
অবস্থিত এই ব্রহ্মকে (ঈশ্বরকে) যাঁরা এই
প্রকারে জানেন, তারাই অমর হন।
আর এই  শ্বেতাশ্বতর উপনিষদ এর ৩.৩ এ বলা হয়েছে-
"বিশ্বতশ্চক্ষুরুত বিশ্বতোমুখো বিশ্বতোবাহুরত
বিশ্বতস্পাত্" অর্থাৎ সর্বত্র যেন তাঁর
চোখ, সর্বত্র যেন মুখময়, সর্বত্র হস্তময় এবং
সর্বত্র যেন চরণময়।
অর্থাৎ উপরের মন্ত্র ও শ্লোক গুলো দ্বারা সেই পুরুষের সর্বত্রতাই প্রকাশ করছে। এখানে তাই বৈদিক আচার্যগন পুরুষ সুক্তের প্রথম মন্ত্রটির সঠিক অর্থ করেছেন এভাবে-
"সহস্র (অগনিত,অশেষ) মস্তিস্কময় (সর্বজ্ঞানী), সহস্র অক্ষিময় (সর্বদ্রষ্টা), সহস্র পদযুক্ত (সর্বব্যাপী) পরমেশ্বর সমস্ত জগৎ কে দশদিকে(Ten dimensionally) অর্থাৎ চারদিকে ব্যপ্ত করে আছেন।
               
"সর্বতঃ পাণিপাদং তত্ সর্বতোহক্ষিশিরো মুখম্।
সর্বতঃ শ্রুতিমল্লোকে সর্বমাবৃত্য তিষ্ঠতি।।"
(শ্বেতাশ্বতর উপনিষদ ৩।১৬ ও ভগবদগীতা ১৩।১৪।)
অর্থৎ- "পরমাত্মা সর্বত্র হস্তপদ বিশিষ্ট, সর্বত্র চক্ষুষ্মান, সর্বত্র শীর্ষযুক্ত ও সর্বত্র মুখবিশিষ্ট এবং সর্বত্র শ্রুতিযুক্ত। এই ব্রহ্মান্ডের সমস্ত কিছু ব্যপ্ত করে তিনি অবস্থান করছেন।"
ঋগ্বেদের "সহস্রশীর্ষ পুরুষঃ সহস্রাক্ষ সহস্রপদ" বা গীতার "অনেকবাহুদরবক্র নেত্রং" গীতা ১১।১৬ ধরনের অনুচ্ছেদ দেখিয়ে যারা সেই পুরুষের হাত পা দেখাতে চান। তারা গীতা উপনিষদ এর আগে পরের শ্লোকগুলো দেখান না। অথচ শ্বেতাশ্বতর উপনিষদে এর পরের কয়েকটা শ্লোকই ঋষি সেই পুরুষ কেমন তা ব্যখ্যা করেছেন-
             
"অপাণিপাদোজবনো গ্রহীতা পশ্যতাচক্ষুঃ স শৃণোত্যকর্ণঃ।
সবেত্তি বেদ্যং ন চ তস্যাস্তি বেত্তা তমাহুরগ্র্যং
পুরুষং মহান্তম্।।"
( শ্বেতাশ্বতরোপনিষদ্ ৩।১৯)
অর্থাৎ, পরমাত্মা হস্তপদাদী শুন্য হয়েও সব
কিছুর গ্রহীতা, চক্ষুহীন তথাপি সর্বদ্রষ্টা, কর্ণহীন তথাপি সর্ব শ্রবনকারী। তিনি সনাতন,
সর্বশ্রেষ্ঠ আদিতম পুরুষ, তাঁর কোন জ্ঞাতা নেই। 'সর্বেন্দ্রিয়গুণাভাসং সর্বেন্দ্রিয়বিবজিতম্...।'
(গীতা ১৩।১৫)
শ্বেতশ্বাতরোপনিষদ্ ৩।১৭
অর্থাৎ তিনি সকল ইন্দ্রিয়ের গুণের প্রকাশক ,তবুও তিনি সমুদয় ইন্দ্রিয় বিহীন।
অর্থাৎ বিভিন্ন মন্ত্র বা শ্লোকে(যেমন গীতা)
যখন তার অসংখ্য মাথার কথা বলা হয় তখন তা দিয়ে তিনি যে সর্বজ্ঞ তা বোঝানো
হয়, যখন তাঁর অজস্র চোখের কথা বলা হয় তখন তার মাধ্যমে তিনি যে সর্বদ্রষ্টা তা বোঝানো
হয়, যখন অজস্র বাহুর কথা বলা হয় তখন তিনি যে সর্বশক্তিমান তা বোঝানো হয়। এগুলো কখনোই কোন আকারযুক্ত কোন কিছুর বর্ণনা নয়, অর্থাৎ ঈশ্বর শরীরধারী নয় তথা ইন্দ্রিয় যুক্ত নয়।

No comments:

Post a Comment

ধন্যবাদ

বৈশিষ্ট্যযুক্ত পোস্ট

অথর্ববেদ ২/১৩/৪

  ह्यश्मा॑न॒मा ति॒ष्ठाश्मा॑ भवतु ते त॒नूः। कृ॒ण्वन्तु॒ विश्वे॑ दे॒वा आयु॑ष्टे श॒रदः॑ श॒तम् ॥ ত্রহ্যশ্মানমা তিষ্ঠাশ্মা ভবতুতে তনূঃ। কৃণ্বন্তু...

Post Top Ad

ধন্যবাদ