সহস্রশীর্ষা পুরুষঃ সহস্রাক্ষঃ সহস্রপাৎ।স ভূমিং বিশ্বতো বৃত্বা অত্যতিষ্ঠ দশাঙ্গুলম্।।১।।
শব্দার্থঃ (সহস্রশীর্ষা) সকল প্রাণীর অসংখ্য মস্তক যাঁর মধ্যে স্থিত [অথবা যিনি সর্বজ্ঞ] (সহস্রাক্ষঃ) সকল প্রাণীর অসংখ্য চক্ষু যাঁর মধ্যে স্থিত [অথবা যিনি সর্বদ্রষ্টা] (সহস্রপাৎ) সকল প্রাণীর অসংখ্য চরণ যাঁর মধ্যে স্থিত [অথবা যিনি সর্বগত অর্থাৎ সর্বত্র উপস্থিত] (সঃ) তিনি (পুরুষঃ) পূর্ণ পরমাত্মা (ভূমিম্) সম্পূর্ণ জগতের (বিশ্বতঃ) সর্বদিকে (বৃত্বা) ব্যাপ্ত হয়ে (দশাঙ্গুলম্) দশাঙ্গুল [অর্থাৎ পঞ্চস্থুলভূত এবং পঞ্চসূক্ষ্মভূত সম্পন্ন জগৎকে] (অত্যতিষ্ঠৎ) উল্লঙ্ঘন করে [অনন্ত অসীমে] স্থিত। [এই সমগ্র জগতের ভিতর এবং বাহিরেও পূর্ণরূপে ব্যাপ্ত হয়ে রয়েছেন] ।।
ভাবার্থঃ এই মন্ত্রে "পুরুষ" শব্দে বিশেষ্য এবং অপর সমস্ত পদ তাঁরই বিশেষণরূপে বর্ণিত হয়েছে। "পুর অগ্রগমনে, পৄ পালনপূরণয়োঃ ইতি বা ধাতোঃ ‘পুরঃ কুষন্’। উণাদিসূত্র০ ৪।৭৪ ইতি কুষন্ প্রত্যয়ঃ।।" যিনি সমগ্র জগতে পূর্ণভাবে বিদ্যমান আছেন তাঁকেই "পুরুষ" বলা হয়। "পুর" শব্দটি ব্রহ্মাণ্ড এবং শরীর এই উভয়ার্থ বাচক। অতএব যিনি সমগ্র ব্রহ্মাণ্ডে ব্যাপকরূপে এবং প্রাণীগণের শরীরস্থ জীবাত্মার অন্তরে অন্তর্যামীরূপে বিরাজমান আছেন, তাঁকে "পুরুষ" বলা হয়। "সহস্রম্ ইতি বহুনাম্" (নিঘণ্টু ৩।১) অর্থাৎ "সহস্র" শব্দ দ্বারা অসংখ্য বা বহুসংখ্যক বুঝায়। এজন্য যাঁর মধ্যে জগতের সমস্ত প্রাণীর অসংখ্য শির, নেত্র, পদাদি স্থিত রয়েছে অথবা যিনি সর্বজ্ঞ, সর্বদ্রষ্টা এবং সর্বগত, তাঁকে সহস্রশীর্ষা, সহস্রাক্ষ ও সহস্রপাৎ বলা হয়। যেরূপ আকাশের মধ্যে (ব্যাপকতায়) সমস্ত পদার্থ রয়েছে অথচ সেই আকাশ সমস্ত পদার্থ থেকে পৃথক, পরমাত্মাকেও সেইরূপ জানবে। এই মন্ত্রে "দশাঙ্গুল" শব্দ ব্রহ্মাণ্ড এবং হৃদয়বাচী। এক্ষেত্রে অঙ্গুলি শব্দ অঙ্গের অবয়ববাচী। পঞ্চস্থুলভূত (মৃত্তিকা, জল, অগ্নি, বায়ু ও আকাশ) এবং পঞ্চসূক্ষ্মভূত (শব্দ, স্পর্শ, রূপ, রস ও গন্ধ)— এই দুই প্রকার ভূতসমূহ মিলিত হয়ে ব্রহ্মাণ্ডের অবয়ব নির্মিত হয়, সেজন্য ব্রহ্মাণ্ডকে "দশাঙ্গুল" বলা হয়েছে। অপরপক্ষে পঞ্চপ্রাণ, মন, বুদ্ধি, চিত্ত ও অহংকার এই নয় প্রকার পদার্থ এবং দশম হৃদয়স্থ জীবাত্মা— এগুলোকেও "দশাঙ্গুল" শব্দের অর্থরূপে গ্রহণ করা যায়। পরমেশ্বর উপরোক্ত দশাঙ্গুল স্থানকে অর্থাৎ সম্পূর্ণ চরাচর জগৎকে উল্লঙ্ঘন করে সর্বত্র স্থিরভাবে বিরাজিত।
'পুরুষ' শব্দটির ব্যাকরণগত বিশ্লেষণে দেখা যায় এটি 'পৃ' ধাতু দ্বারা গঠিত৷ পাণিনিয় ধাতুপাঠেদের 'চুরাদি' গণে এই ধাতুটির অর্থ লেখা 'পৃ পুরণে'। অর্থাৎ 'পৃ' ধাতুর অর্থ হলো 'পূর্ণ'। এর সাথে উণাদি (৪।৭৪) 'পুরঃ কুষন্' সূত্র অনুসারে 'কুষন্' প্রত্যয়যোগে 'পুরুষ' শব্দটি গঠিত হয়। অর্থাৎ পুরুষ শব্দটির ধাত্বার্থক অর্থই হলো 'পূর্ণ'।
নিরুক্তে (২।৩) পুরুষ শব্দের ব্যাখ্যায় যাস্কাচার্য এভাবে বলেছেন, "পুরুষঃ পুরিষাদঃ পুরিশয়ঃ পূরতর্তর্বা। পূরয়ত্যন্তরিত্যন্তঃ পুরুষমভিপ্রেত্য। 'যস্মাৎ পরং নাপরমস্তি কিঞ্চিদ্ যস্মান্নাণীয়ো ন জ্যায়োহস্তি কিঞ্চিদ্। বৃক্ষ ইব স্তব্ধো দিবি তিষ্ঠত্যেকস্তেনেদং পুর্ণং পুরুষেণ সর্বম্' ইতি নিগমো ভবতি।" অর্থাৎ পুরিতে (ব্রহ্মাণ্ডে) বসার কারণে অথবা পুরিতে (ব্রহ্মাণ্ডে) শয়ন করার কারণে পুরুষ বলা হয়। অথবা এটি বৃদ্ধয়র্থক পুরী ধাতু থেকে নিষ্পন্ন হয়। অন্তঃপুরুষ পরমাত্মাকে পুরুষ এজন্য বলা হয় যে, তিনি সম্পূর্ণ ব্রহ্মাণ্ডকে নিজের সত্তা দ্বারা পূর্ণ করে আছেন। এই বিষয়ে বলা হয়েছে 'যস্মাৎ পরং....পুরুষেণ সর্বম্'।
এখানে নিরুক্তে পুরুষ শব্দের ব্যাখ্যা দিয়ে উদাহরণ স্বরূপ যাস্কাচার্য তৈত্তিরীয় আরণ্যক ১০।১০।২৩ তথা শ্বেতাশ্বতর উপনিষদের ৩।৭ মন্ত্রটি উল্লেখ করে প্রমাণ দেখিয়েছেন যে 'পুরুষ হলেন সর্বব্যাপী পরমেশ্বর'।
সরলার্থঃ সেই সর্ব ব্যাপক পরমেশ্বরের সহস্র শির, সহস্র নেত্র, সহস্র পা। তিনি জগৎকে সর্ব দিক হতে ব্যপ্ত করিয়া পাঁচ স্থুল ভূত ও পাঁচ সুক্ষভুত জগতকে অতিক্রম করিয়া অবস্থান করিতেছে।।১।।
পুরুষ এবেদং সর্ব্বং যদ ভূতং যচ্চ ভাব্যম।উতামৃত্ত্বস্যেশানো যদন্নেনাতিরোহতি।।২।।
সরলার্থঃ যাহা উৎপন্ন হয়েছে যাহা উৎপন্ন হবে এই সবকিছুই পুরুষই [পুরুষাধিষ্ঠিত]। এবং অমৃতস্বরূপ মোক্ষের স্বামী যাহা অন্ন দ্বারা বৃদ্ধি পায় [তাহারও স্বামী]।।২।।এতাবানস্য মহিমাতো জ্যায়াংশ্চ পুরুষঃ।পাদোস্য বিশ্বা ভূতানি ত্রিপাদস্যামৃতং দিবি।।৩।।সরলার্থঃ এই জগতের মহান সামর্থ এতই যে, এবং এই পরমেশ্বর তাহা থেকেও অধিক বড় সমস্ত উৎপন্ন পদার্থ ইহার এক পাদ [একাংশে স্থিত] ইহার তিন পাদ জ্ঞান প্রকাশস্বরূপ অবিনাশী।। ৩।।ত্রিপাদূর্ধ্বং উদৈৎ পুরুষঃ পাদোস্যেহাভবৎ পুনঃ।ততো বিষ্বঙ্ ব্যক্রামৎ সাশনানশনে অভি।।৪।।সরলার্থঃ তিন পাদ বিশিষ্ট অবিনাশী এই পুরুষ সবার উপরে বিরাজমান ইহার এক পাদরূপ জগত পুনরায় এখানে প্রকট হয়েছে এই প্রভূ সর্বত্র ব্যাপক তিনি ভোজনশীল ও ভোজনরহিত অর্থাৎ চেতন ও অচেতন কে অভিব্যপ্ত করে।ততো বিরাডজায়ত বিরাজো অধি পূরুষঃ।স জাতো অত্যরিচ্যত পশ্চাদ্ ভুমিমথো পুরঃ।। ৫।।সরলার্থঃ সেই পরমেশ্বর হতে প্রকাশময় সমষ্টিরূপ ব্রহ্মান্ড উৎপন্ন হয় বিরাটের উপর অধ্যক্ষরূপে পুরুষই এই পুরুষ উৎপন্ন হয়ে অতিরিক্ত [পৃথক] হয়ে বিরাটের পশ্চাত ভূমি ইহার অনন্তর অনেক শরীর উৎপন্ন করে।যৎ পুরুষেণ হবিষা দেবা যজ্ঞমতন্বত।বসন্তোস্যাসীদাজ্যং গ্রীষ্মইধ্বমঃ শরদ্ধবিঃ।।৬।।সরলার্থঃ যখন বিদ্বান লোক পরমেশ্বর দ্বারা প্রদত্ত জগৎরচনারূপ সামগ্রী দ্বারা সৃষ্টি রচনারূপ যজ্ঞকে বিস্তারিত করে তখন ইহার বসন্ত ঋতু ঘৃত হয় গ্রীষ্ম ঋতু সমিধা এবং শরৎ ঋতু হবি হয়।তং যজ্ঞং বর্হিষি প্রৌক্ষন পুরুষং জাতমগ্রতঃ।তেন দেবা অযজন্ত সাধ্যা ঋষয়শ্চ যে।।৭।।সরলার্থঃ সেই যজ্ঞরূপ পূজনীয় প্রকাশিত পূর্ণ পরমেশ্বরকে সবার পূর্বে হৃদয়ন্তরিক্ষের মধ্যে অভিষিক্ত করে। সেই পুরুষ দ্বারা [প্রেরিত] বিদ্বান লোক সাধনকারী এবং যে ঋষিগন তাহারা সেই পরমেশ্বরকে উপাসনা করে।তস্মাদ্যযজ্ঞাৎ সর্বহুতঃ সংভৃতং পৃষদাজ্যম।পশুঁস্তাঁশ্চক্রে বায়ব্যানারণ্যা গ্রামশ্চ যে।।৮।।সরলার্থঃ সেই সর্বপূজ্য পরমেশ্বর হতে দধি, ঘৃত আদি ভোগ্য পদার্থ উৎপন্ন হয়েছে বায়ু দ্বারা জীবিত পশু এবং যে জঙ্গলের সিংহ আদি এবং গ্রামের গো, অশ্ব আদি উৎপন্ন হয়েছে।তস্মাদ্যজ্ঞাৎ সর্বহুতঃ ঋচ সামানি জজ্ঞিরে।ছন্দাংসি জজ্ঞিরে তস্মাদ্যজুস্তস্মাদজায়থ।।৯।।সরলার্থঃ সেই পূজনীয় পরমেশ্বর হতে সর্ব পূজিত ঋগবেদ সামবেদ উৎপন্ন হয়েছে। অথর্ববেদ উৎপন্ন হয়েছে তাহা হইতে যজুর্বেদ উৎপন্ন হয়েছে।তস্মাদশ্বা অজায়ন্ত যে কে চোভয়াদতঃ।গাবো হ জজ্ঞিরে তস্মাৎ তস্মাজ্জাতা অজাবয়ঃ।।১০।।সরলার্থঃ সেই পরমেশ্বর হতে ঘোড়া এবং যে কোন গাধা আদি দুই চোয়ালে দন্ত বিশিষ্ট জীব উৎপন্ন হয়েছে গাভী তাহা হইতেই উৎপন্ন হয়েছে সেই পুরুষ হতে ছাগল ভেড়া আদি উৎপন্ন হয়েছে।যৎ পুরুষং ব্যদধুঃ কতিধা ব্যকল্পয়ন্।মুখং কিমস্য কৌ বাহু কা উরু পাদা উচ্যেতে।।১১।।সরলার্থঃ যখন সেই পুরুষকে [ঋষিগন] বিশেষরূপে বর্ণনা করেন তখন কি প্রকারে বিশেষরূপে কল্পনা করেন? এই পুরুষের মুখ কোন টি? বাহু কোনটি? উরু কোনটি? এবং পা কোনটি বলিয়া উক্ত হয়?।। ১১।।ব্রাহ্মণোস্য মুখমাসীদ্ বাহূ রাজন্যঃ কৃতঃ।ঊরু তদস্য যদ্বৈশ্যঃ পদ্ভাংশূদ্রো অজায়ত।।১২।।সরলার্থঃ ব্রাহ্মণ [জ্ঞানী পুরুষ] এই পুরুষের মুখ হয়, ক্ষত্রিয় [পরাক্রমীব্যক্তি] এই পুরুষের বাহু। যাহা এই পুরুষের উরু তাহা বৈশ্য [পোষনশক্তিসম্পন্ন ব্যক্তি] এবং পা শূদ্ররূপে [সেবাধর্মী ব্যক্তিরূপে] প্রকট হয়।।।১২চন্দ্রমা মনসো জাতশ্চক্ষোঃ সূর্য্যো অজায়ত।মুখাদিন্দ্রশ্চাগ্নিশ্চ প্রাণাদ্বায়ুরজায়ত।। ১৩।।সরলার্থঃ চন্দ্র মন থেকে [মননকারী সামর্থ দ্বারা] উৎপন্ন হয়েছে, নেত্র থেকে [রূপ দর্শনকারী সামর্থ দ্বারা] সূর্য উৎপন্ন হয়েছে। মুখ থেকে [মুখ্য স্বরূপ সামর্থ দ্বারা] ইন্দ্র ও অগ্নি ও প্রাণ থেকে [বায়ুরূপ সামর্থ দ্বারা] বায়ু উৎপন্ন হয়েছে।নাভ্যা আসীদন্তরিক্ষংশীর্ষ্ণো দৌঃ সমবর্ত্তত।পদ্ভাং ভূমির্দিশঃ শোত্রাৎ তথা লোকাঁঅকল্পয়ন।।১৪।।সরলার্থঃ নাভি থেকে [সুক্ষ সামর্থ দ্বারা] অন্তরিক্ষ হয়, শির থেকে [সর্বোত্তম সামর্থ দ্বারা] দুল্যোক (সমবর্ত্তত) হয়। পা থেকে [পরমানু কারনরূপ সামর্থ দ্বারা] পৃথিবী, শোত্র থেকে [অবকাশরূপ সামর্থ দ্বারা] দিশা এবং এই প্রকার অন্য লোক কল্পিত হয়।সপ্তাস্যান্ পরিধিয়স্ত্রিঃ সপ্ত সমিধঃ কৃতাঃ।দেবা যদ্যজ্ঞং তন্বানাঅবধ্নন পুরুষং পশুম্।।১৫।।সরলার্থঃ বিদ্বান জন যেই যজ্ঞকে বিস্তারিত করে পূর্ণ পরমেশ্বরকে সর্বদ্রষ্টারূপে ধ্যান সূত্র দ্বারা বাধে। এই যজ্ঞের সাত পরিধি [সমুদ্র, ত্রসরেণু, মেঘমন্ডল,বৃষ্টিজল, বায়ু, ধনন্জয় এবং সুত্রাত্মা] এবং একুশ সমিধা হয় [ মন সহিত একাদশ ইন্দ্রিয়, পঞ্চ তন্মাত্রা এবং পঞ্চভূত]যজ্ঞেন যজ্ঞমযজন্ত দেবাস্তানি ধর্ম্মাণি প্রথমান্যাসন্।তে হ নাকং মহিমানঃ সচন্ত যত্র পূর্বে সাধ্যাঃ সন্তি দেবাঃ।।১৬।।সরলার্থঃ যজ্ঞ দ্বারা বিদ্বান জন সেই পুরুষ কে উপসনা করে ঐ সব ধর্মের সামর্থ প্রথমেই বিদ্যমান থাকে। ঐ মহান সামর্থবান সেই আনন্দময় পরমেশ্বরকে প্রাপ্ত হয় যাহার মধ্যে পূর্বে,জ্ঞান দ্বারা পূর্ণ সাধনাশীল বিদ্বান জন নিত্য বিরাজ করে।
পদার্থ- (বিশ্বতস্চক্ষু) সর্বত্র যার চক্ষু (উত) ও (বিশ্বতোমুখঃ) সর্বত্র যার মুখ (বিশ্বতোবাহু) সর্বত্র যার বাহু (উত) ও (বিশ্বতস্পাত) সর্বত্র যার চরণ (দেব) সেই সমগ্র জগতকে প্রকাশকারী, সত্যপদেশ ও সমস্ত সুখের দাতা [নিরুক্ত৭/১৫] (এক) এক ও অদ্বিতীয় পরমাত্মা (পতত্রৈ) প্রকৃতির গমনশীল পরমাণু হতে (দ্যাবা-ভূমি) অাকাশ ও পৃথিবীকে (সম্ জনয়ন্)উৎপন্ন করেছেন। (বাহুভ্যাম্) তিনি তার বাহুরূপ অনন্ত বল দ্বারা (সম্ ধমতি) সমগ্র জগতকে চালিত করেন।
No comments:
Post a Comment
ধন্যবাদ