পুরুষসূক্ত - ধর্ম্মতত্ত্ব

ধর্ম্মতত্ত্ব

ধর্ম বিষয়ে জ্ঞান, ধর্ম গ্রন্থ কি , হিন্দু মুসলমান সম্প্রদায়, ইসলাম খ্রীষ্ট মত বিষয়ে তত্ত্ব ও সনাতন ধর্ম নিয়ে আলোচনা

धर्म मानव मात्र का एक है, मानवों के धर्म अलग अलग नहीं होते-Theology

সাম্প্রতিক প্রবন্ধ

Post Top Ad

স্বাগতম

24 September, 2020

পুরুষসূক্ত

ঋগ্বেদ ১০/৯১/১

ঋগ্বেদের দশম মণ্ডল ৯০ সূক্ত
সহস্রশীর্ষা পুরুষঃ সহস্রাক্ষঃ সহস্রপাৎ।
স ভূমিং বিশ্বতো বৃত্বা অত্যতিষ্ঠ দশাঙ্গুলম্।।১।।

শব্দার্থঃ (সহস্রশীর্ষা) সকল প্রাণীর অসংখ্য মস্তক যাঁর মধ্যে স্থিত [অথবা যিনি সর্বজ্ঞ] (সহস্রাক্ষঃ) সকল প্রাণীর অসংখ্য চক্ষু যাঁর মধ্যে স্থিত [অথবা যিনি সর্বদ্রষ্টা] (সহস্রপাৎ) সকল প্রাণীর অসংখ্য চরণ যাঁর মধ্যে স্থিত [অথবা যিনি সর্বগত অর্থাৎ সর্বত্র উপস্থিত] (সঃ) তিনি (পুরুষঃ) পূর্ণ পরমাত্মা (ভূমিম্) সম্পূর্ণ জগতের (বিশ্বতঃ) সর্বদিকে (বৃত্বা) ব্যাপ্ত হয়ে (দশাঙ্গুলম্) দশাঙ্গুল [অর্থাৎ পঞ্চস্থুলভূত এবং পঞ্চসূক্ষ্মভূত সম্পন্ন জগৎকে] (অত্যতিষ্ঠৎ) উল্লঙ্ঘন করে [অনন্ত অসীমে] স্থিত। [এই সমগ্র জগতের ভিতর এবং বাহিরেও পূর্ণরূপে ব্যাপ্ত হয়ে রয়েছেন] ।।

ভাবার্থঃ এই মন্ত্রে "পুরুষ" শব্দে বিশেষ্য এবং অপর সমস্ত পদ তাঁরই বিশেষণরূপে বর্ণিত হয়েছে। "পুর অগ্রগমনে, পৄ পালনপূরণয়োঃ ইতি বা ধাতোঃ ‘পুরঃ কুষন্’। উণাদিসূত্র০ ৪।৭৪ ইতি কুষন্ প্রত্যয়ঃ।।" যিনি সমগ্র জগতে পূর্ণভাবে বিদ্যমান আছেন তাঁকেই "পুরুষ" বলা হয়। "পুর" শব্দটি ব্রহ্মাণ্ড এবং শরীর এই উভয়ার্থ বাচক। অতএব যিনি সমগ্র ব্রহ্মাণ্ডে ব্যাপকরূপে এবং প্রাণীগণের শরীরস্থ জীবাত্মার অন্তরে অন্তর্যামীরূপে বিরাজমান আছেন, তাঁকে "পুরুষ" বলা হয়। "সহস্রম্ ইতি বহুনাম্" (নিঘণ্টু ৩।১) অর্থাৎ "সহস্র" শব্দ দ্বারা অসংখ্য বা বহুসংখ্যক বুঝায়। এজন্য যাঁর মধ্যে জগতের সমস্ত প্রাণীর অসংখ্য শির, নেত্র, পদাদি স্থিত রয়েছে অথবা যিনি সর্বজ্ঞ, সর্বদ্রষ্টা এবং সর্বগত, তাঁকে সহস্রশীর্ষা, সহস্রাক্ষ ও সহস্রপাৎ বলা হয়। যেরূপ আকাশের মধ্যে (ব্যাপকতায়) সমস্ত পদার্থ রয়েছে অথচ সেই আকাশ সমস্ত পদার্থ থেকে পৃথক, পরমাত্মাকেও সেইরূপ জানবে। এই মন্ত্রে "দশাঙ্গুল" শব্দ ব্রহ্মাণ্ড এবং হৃদয়বাচী। এক্ষেত্রে অঙ্গুলি শব্দ অঙ্গের অবয়ববাচী। পঞ্চস্থুলভূত (মৃত্তিকা, জল, অগ্নি, বায়ু ও আকাশ) এবং পঞ্চসূক্ষ্মভূত (শব্দ, স্পর্শ, রূপ, রস ও গন্ধ)— এই দুই প্রকার ভূতসমূহ মিলিত হয়ে ব্রহ্মাণ্ডের অবয়ব নির্মিত হয়, সেজন্য ব্রহ্মাণ্ডকে "দশাঙ্গুল" বলা হয়েছে। অপরপক্ষে পঞ্চপ্রাণ, মন, বুদ্ধি, চিত্ত ও অহংকার এই নয় প্রকার পদার্থ এবং দশম হৃদয়স্থ জীবাত্মা— এগুলোকেও "দশাঙ্গুল" শব্দের অর্থরূপে গ্রহণ করা যায়। পরমেশ্বর উপরোক্ত দশাঙ্গুল স্থানকে অর্থাৎ সম্পূর্ণ চরাচর জগৎকে উল্লঙ্ঘন করে সর্বত্র স্থিরভাবে বিরাজিত। 

'পুরুষ' শব্দটির ব্যাকরণগত বিশ্লেষণে দেখা যায় এটি 'পৃ' ধাতু দ্বারা গঠিত৷ পাণিনিয় ধাতুপাঠেদের 'চুরাদি' গণে এই ধাতুটির অর্থ লেখা 'পৃ পুরণে'। অর্থাৎ 'পৃ' ধাতুর অর্থ হলো 'পূর্ণ'। এর সাথে উণাদি (৪।৭৪) 'পুরঃ কুষন্' সূত্র অনুসারে 'কুষন্' প্রত্যয়যোগে 'পুরুষ' শব্দটি গঠিত হয়। অর্থাৎ পুরুষ শব্দটির ধাত্বার্থক অর্থই হলো 'পূর্ণ'। 

নিরুক্তে (২।৩) পুরুষ শব্দের ব্যাখ্যায় যাস্কাচার্য এভাবে বলেছেন, "পুরুষঃ পুরিষাদঃ পুরিশয়ঃ পূরতর্তর্বা। পূরয়ত্যন্তরিত্যন্তঃ পুরুষমভিপ্রেত্য। 'যস্মাৎ পরং নাপরমস্তি কিঞ্চিদ্ যস্মান্নাণীয়ো ন জ্যায়োহস্তি কিঞ্চিদ্। বৃক্ষ ইব স্তব্ধো দিবি তিষ্ঠত্যেকস্তেনেদং পুর্ণং পুরুষেণ সর্বম্' ইতি নিগমো ভবতি।" অর্থাৎ পুরিতে (ব্রহ্মাণ্ডে) বসার কারণে অথবা পুরিতে (ব্রহ্মাণ্ডে) শয়ন করার কারণে পুরুষ বলা হয়। অথবা এটি বৃদ্ধয়র্থক পুরী ধাতু থেকে নিষ্পন্ন হয়। অন্তঃপুরুষ পরমাত্মাকে পুরুষ এজন্য বলা হয় যে, তিনি সম্পূর্ণ ব্রহ্মাণ্ডকে নিজের সত্তা দ্বারা পূর্ণ করে আছেন। এই বিষয়ে বলা হয়েছে 'যস্মাৎ পরং....পুরুষেণ সর্বম্'। 

এখানে নিরুক্তে পুরুষ শব্দের ব্যাখ্যা দিয়ে উদাহরণ স্বরূপ যাস্কাচার্য তৈত্তিরীয় আরণ্যক ১০।১০।২৩ তথা শ্বেতাশ্বতর উপনিষদের ৩।৭ মন্ত্রটি উল্লেখ করে প্রমাণ দেখিয়েছেন যে 'পুরুষ হলেন সর্বব্যাপী পরমেশ্বর'।

সরলার্থঃ সেই সর্ব ব্যাপক পরমেশ্বরের সহস্র শির, সহস্র নেত্র, সহস্র পা। তিনি জগৎকে সর্ব দিক হতে ব্যপ্ত করিয়া পাঁচ স্থুল ভূত ও পাঁচ সুক্ষভুত জগতকে অতিক্রম করিয়া অবস্থান করিতেছে।।১।।

পুরুষ এবেদং সর্ব্বং যদ ভূতং যচ্চ ভাব্যম।
উতামৃত্ত্বস্যেশানো যদন্নেনাতিরোহতি।।২।। 
সরলার্থঃ যাহা উৎপন্ন হয়েছে যাহা উৎপন্ন হবে এই সবকিছুই পুরুষই [পুরুষাধিষ্ঠিত]। এবং অমৃতস্বরূপ মোক্ষের স্বামী যাহা অন্ন দ্বারা বৃদ্ধি পায় [তাহারও স্বামী]।।২।।
এতাবানস্য মহিমাতো জ্যায়াংশ্চ পুরুষঃ।
পাদোস্য বিশ্বা ভূতানি ত্রিপাদস্যামৃতং দিবি।।৩।।
সরলার্থঃ এই জগতের মহান সামর্থ এতই যে, এবং এই পরমেশ্বর তাহা থেকেও অধিক বড় সমস্ত উৎপন্ন পদার্থ ইহার এক পাদ [একাংশে স্থিত] ইহার তিন পাদ জ্ঞান প্রকাশস্বরূপ অবিনাশী।। ৩।।
ত্রিপাদূর্ধ্বং উদৈৎ পুরুষঃ পাদোস্যেহাভবৎ পুনঃ।
ততো বিষ্বঙ্ ব্যক্রামৎ সাশনানশনে অভি।।৪।।
সরলার্থঃ তিন পাদ বিশিষ্ট অবিনাশী এই পুরুষ সবার উপরে বিরাজমান ইহার এক পাদরূপ জগত পুনরায় এখানে প্রকট হয়েছে এই প্রভূ সর্বত্র ব্যাপক তিনি ভোজনশীল ও ভোজনরহিত অর্থাৎ চেতন ও অচেতন কে অভিব্যপ্ত করে।
ততো বিরাডজায়ত বিরাজো অধি পূরুষঃ।
স জাতো অত্যরিচ্যত পশ্চাদ্ ভুমিমথো পুরঃ।। ৫।।
সরলার্থঃ সেই পরমেশ্বর হতে প্রকাশময় সমষ্টিরূপ ব্রহ্মান্ড উৎপন্ন হয় বিরাটের উপর অধ্যক্ষরূপে পুরুষই এই পুরুষ উৎপন্ন হয়ে অতিরিক্ত [পৃথক] হয়ে বিরাটের পশ্চাত ভূমি ইহার অনন্তর অনেক শরীর উৎপন্ন করে।
যৎ পুরুষেণ হবিষা দেবা যজ্ঞমতন্বত।
বসন্তোস্যাসীদাজ্যং গ্রীষ্মইধ্বমঃ শরদ্ধবিঃ।।৬।।
সরলার্থঃ যখন বিদ্বান লোক পরমেশ্বর দ্বারা প্রদত্ত জগৎরচনারূপ সামগ্রী দ্বারা সৃষ্টি রচনারূপ যজ্ঞকে বিস্তারিত করে তখন ইহার বসন্ত ঋতু ঘৃত হয় গ্রীষ্ম ঋতু সমিধা এবং শরৎ ঋতু হবি হয়।
তং যজ্ঞং বর্হিষি প্রৌক্ষন পুরুষং জাতমগ্রতঃ।
তেন দেবা অযজন্ত সাধ্যা ঋষয়শ্চ যে।।৭।।
সরলার্থঃ সেই যজ্ঞরূপ পূজনীয় প্রকাশিত পূর্ণ পরমেশ্বরকে সবার পূর্বে হৃদয়ন্তরিক্ষের মধ্যে অভিষিক্ত করে। সেই পুরুষ দ্বারা [প্রেরিত] বিদ্বান লোক সাধনকারী এবং যে ঋষিগন তাহারা সেই পরমেশ্বরকে উপাসনা করে।
তস্মাদ্যযজ্ঞাৎ সর্বহুতঃ সংভৃতং পৃষদাজ্যম।
পশুঁস্তাঁশ্চক্রে বায়ব্যানারণ্যা গ্রামশ্চ যে।।৮।।
সরলার্থঃ সেই সর্বপূজ্য পরমেশ্বর হতে দধি, ঘৃত আদি ভোগ্য পদার্থ উৎপন্ন হয়েছে বায়ু দ্বারা জীবিত পশু এবং যে জঙ্গলের সিংহ আদি এবং গ্রামের গো, অশ্ব আদি উৎপন্ন হয়েছে।
তস্মাদ্যজ্ঞাৎ সর্বহুতঃ ঋচ সামানি জজ্ঞিরে।
ছন্দাংসি জজ্ঞিরে তস্মাদ্যজুস্তস্মাদজায়থ।।৯।।
সরলার্থঃ সেই পূজনীয় পরমেশ্বর হতে সর্ব পূজিত ঋগবেদ সামবেদ উৎপন্ন হয়েছে। অথর্ববেদ উৎপন্ন হয়েছে তাহা হইতে যজুর্বেদ উৎপন্ন হয়েছে।
তস্মাদশ্বা অজায়ন্ত যে কে চোভয়াদতঃ।
গাবো হ জজ্ঞিরে তস্মাৎ তস্মাজ্জাতা অজাবয়ঃ।।১০।।
সরলার্থঃ সেই পরমেশ্বর হতে ঘোড়া এবং যে কোন গাধা আদি দুই চোয়ালে দন্ত বিশিষ্ট জীব উৎপন্ন হয়েছে গাভী তাহা হইতেই উৎপন্ন হয়েছে সেই পুরুষ হতে ছাগল ভেড়া আদি উৎপন্ন হয়েছে।
যৎ পুরুষং ব্যদধুঃ কতিধা ব্যকল্পয়ন্।
মুখং কিমস্য কৌ বাহু কা উরু পাদা উচ্যেতে।।১১।।
সরলার্থঃ যখন সেই পুরুষকে [ঋষিগন] বিশেষরূপে বর্ণনা করেন তখন কি প্রকারে বিশেষরূপে কল্পনা করেন? এই পুরুষের মুখ কোন টি? বাহু কোনটি? উরু কোনটি? এবং পা কোনটি বলিয়া উক্ত হয়?।। ১১।।
ব্রাহ্মণোস্য মুখমাসীদ্ বাহূ রাজন্যঃ কৃতঃ।
ঊরু তদস্য যদ্বৈশ্যঃ পদ্ভাংশূদ্রো অজায়ত।।১২।।
সরলার্থঃ ব্রাহ্মণ [জ্ঞানী পুরুষ] এই পুরুষের মুখ হয়, ক্ষত্রিয় [পরাক্রমীব্যক্তি] এই পুরুষের বাহু। যাহা এই পুরুষের উরু তাহা বৈশ্য [পোষনশক্তিসম্পন্ন ব্যক্তি] এবং পা শূদ্ররূপে [সেবাধর্মী ব্যক্তিরূপে] প্রকট হয়।।।১২
চন্দ্রমা মনসো জাতশ্চক্ষোঃ সূর্য্যো অজায়ত।
মুখাদিন্দ্রশ্চাগ্নিশ্চ প্রাণাদ্বায়ুরজায়ত।। ১৩।।
সরলার্থঃ চন্দ্র মন থেকে [মননকারী সামর্থ দ্বারা] উৎপন্ন হয়েছে, নেত্র থেকে [রূপ দর্শনকারী সামর্থ দ্বারা] সূর্য উৎপন্ন হয়েছে। মুখ থেকে [মুখ্য স্বরূপ সামর্থ দ্বারা] ইন্দ্র ও অগ্নি ও প্রাণ থেকে [বায়ুরূপ সামর্থ দ্বারা] বায়ু উৎপন্ন হয়েছে।
নাভ্যা আসীদন্তরিক্ষংশীর্ষ্ণো দৌঃ সমবর্ত্তত।
পদ্ভাং ভূমির্দিশঃ শোত্রাৎ তথা লোকাঁঅকল্পয়ন।।১৪।।
সরলার্থঃ নাভি থেকে [সুক্ষ সামর্থ দ্বারা] অন্তরিক্ষ হয়, শির থেকে [সর্বোত্তম সামর্থ দ্বারা] দুল্যোক (সমবর্ত্তত) হয়। পা থেকে [পরমানু কারনরূপ সামর্থ দ্বারা] পৃথিবী, শোত্র থেকে [অবকাশরূপ সামর্থ দ্বারা] দিশা এবং এই প্রকার অন্য লোক কল্পিত হয়।
সপ্তাস্যান্ পরিধিয়স্ত্রিঃ সপ্ত সমিধঃ কৃতাঃ।
দেবা যদ্যজ্ঞং তন্বানাঅবধ্নন পুরুষং পশুম্।।১৫।।
সরলার্থঃ বিদ্বান জন যেই যজ্ঞকে বিস্তারিত করে পূর্ণ পরমেশ্বরকে সর্বদ্রষ্টারূপে ধ্যান সূত্র দ্বারা বাধে। এই যজ্ঞের সাত পরিধি [সমুদ্র, ত্রসরেণু, মেঘমন্ডল,বৃষ্টিজল, বায়ু, ধনন্জয় এবং সুত্রাত্মা] এবং একুশ সমিধা হয় [ মন সহিত একাদশ ইন্দ্রিয়, পঞ্চ তন্মাত্রা এবং পঞ্চভূত]
যজ্ঞেন যজ্ঞমযজন্ত দেবাস্তানি ধর্ম্মাণি প্রথমান্যাসন্।
তে হ নাকং মহিমানঃ সচন্ত যত্র পূর্বে সাধ্যাঃ সন্তি দেবাঃ।।১৬।।
সরলার্থঃ যজ্ঞ দ্বারা বিদ্বান জন সেই পুরুষ কে উপসনা করে ঐ সব ধর্মের সামর্থ প্রথমেই বিদ্যমান থাকে। ঐ মহান সামর্থবান সেই আনন্দময় পরমেশ্বরকে প্রাপ্ত হয় যাহার মধ্যে পূর্বে,জ্ঞান দ্বারা পূর্ণ সাধনাশীল বিদ্বান জন নিত্য বিরাজ করে।
"স॒হস্র॑শীর্ষা॒ পুরু॑ষঃ সহস্রা॒ক্ষঃ স॒হস্র॑পাৎ ।
স ভূমিং॑ বি॒শ্বতো॑ বৃ॒ত্বাত্য॑তিষ্ঠদ্দশাঙ্গু॒লম্ ॥"
অপব্যাখ্যাকারীদের দাবীঃ এই মন্ত্রে 'ইহা স্বয়ং পুরুষেরই রূপ, কাল্পনিক বা রূপক জাতীয় কিছু না।'
দাবী খণ্ডনঃ আপনাদের এই দাবী যথেষ্ট হাস্যকর এবং অজ্ঞানতামূলক। এই মন্ত্রে 'পুরুষ' শব্দটি দেখে আপনারা খুশিতে ঈশ্বরকে একজন পুরুষ (পুং) হিসেবে দাবী করছেন৷ এতে আপনাদের ব্যাকরণগত, নিরুক্তগত এবং বৈদিক গ্রন্থগত জ্ঞানহীনতা স্পষ্ট হয়। কারণ–
1️⃣'পুরুষ' শব্দটির ব্যাকরণগত বিশ্লেষণে দেখা যায় এটি 'পৃ' ধাতু দ্বারা গঠিত৷ পাণিনিয় ধাতুপাঠেদের 'চুরাদি' গণে এই ধাতুটির অর্থ লেখা 'পৃ পুরণে'। অর্থাৎ 'পৃ' ধাতুর অর্থ হলো 'পূর্ণ'। এর সাথে উণাদি (৪।৭৪) 'পুরঃ কুষন্' সূত্র অনুসারে 'কুষন্' প্রত্যয়যোগে 'পুরুষ' শব্দটি গঠিত হয়। অর্থাৎ পুরুষ শব্দটির ধাত্বার্থক অর্থই হলো 'পূর্ণ'।
2️⃣ নিরুক্তে (২।৩) পুরুষ শব্দের ব্যাখ্যায় যাস্কাচার্য এভাবে বলেছেন, "পুরুষঃ পুরিষাদঃ পুরিশয়ঃ পূরতর্তর্বা। পূরয়ত্যন্তরিত্যন্তঃ পুরুষমভিপ্রেত্য। 'যস্মাৎ পরং নাপরমস্তি কিঞ্চিদ্ যস্মান্নাণীয়ো ন জ্যায়োহস্তি কিঞ্চিদ্। বৃক্ষ ইব স্তব্ধো দিবি তিষ্ঠত্যেকস্তেনেদং পুর্ণং পুরুষেণ সর্বম্' ইতি নিগমো ভবতি।" অর্থাৎ পুরিতে (ব্রহ্মাণ্ডে) বসার কারণে অথবা পুরিতে (ব্রহ্মাণ্ডে) শয়ন করার কারণে পুরুষ বলা হয়। অথবা এটি বৃদ্ধয়র্থক পুরী ধাতু থেকে নিষ্পন্ন হয়। অন্তঃপুরুষ পরমাত্মাকে পুরুষ এজন্য বলা হয় যে, তিনি সম্পূর্ণ ব্রহ্মাণ্ডকে নিজের সত্তা দ্বারা পূর্ণ করে আছেন। এই বিষয়ে বলা হয়েছে 'যস্মাৎ পরং....পুরুষেণ সর্বম্'।
এখানে নিরুক্তে পুরুষ শব্দের ব্যাখ্যা দিয়ে উদাহরণ স্বরূপ যাস্কাচার্য তৈত্তিরীয় আরণ্যক ১০।১০।২৩ তথা শ্বেতাশ্বতর উপনিষদের ৩।৭ মন্ত্রটি উল্লেখ করে প্রমাণ দেখিয়েছেন যে 'পুরুষ হলেন সর্বব্যাপী পরমেশ্বর'।
3️⃣ বেদের ব্যাখ্যানরূপ যে ব্রাহ্মণগ্রন্থ লিখিত হয়েছে সেখানেও পুরুষ শব্দের ব্যাখ্যা এরূপে করা হয়েছে– "ইমে বৈ লোকাঃ পূরয়মেব পুরুষো যোহয়ং পবতে সোহস্যাং পুরি শেতে তস্মাৎপুরুষঃ" (শতপথ ব্রাহ্মণ ১৩।৬।২।১) অর্থাৎ এই লোক (বিশ্বব্রহ্মাণ্ড) হলো পুর। এবং পুরুষ হচ্ছেন তিনি, যিনি বাহিত হন। তিনি এই পুরে ব্যাপকরূপে শয়ন করেন জন্য তিনি পুরুষ।
উপর্যুক্ত শাস্ত্রীয় প্রমাণের সাহায্যে বোঝা যাচ্ছে, এখানে পুরুষ কোনো পুং ব্যক্তি বিশেষ নয়৷ বরং সর্বব্যাপী পরমাত্মাকেই এখানে পুরুষ বলা হচ্ছে৷ তাই এই মন্ত্রে উল্লেখিত পুরুষের বর্ণনা যে রূপক তা এখানে স্পষ্ট৷
অপব্যাখ্যাকারীদের দাবীঃ তাহলে যে এই মন্ত্রে 'সহস্র শীর্ষ, সহস্র চক্ষু, সহস্র পাদ' এসবের উল্লেখ আছে তার কী হবে? এগুলো তো সরাসরি ঈশ্বরের হাজার মাথা, চোখ, পা এসব নির্দেশ করছে।
দাবী খণ্ডনঃ প্রথমত আমরা পূর্বেই প্রমাণ করে এসেছি যে এখানে পুরুষ শব্দ দ্বারা সর্বব্যাপী, বিশ্বব্রহ্মাণ্ডে পূর্ণ পরমাত্মাকে বোঝাচ্ছে, কোনো পুং পুরুষকে বোঝাচ্ছে না৷ আবার এটিও দেখানো হয়েছে যে এই পুরুষের মাথা, পায়ের বর্ণনা বাস্তব নয়, কল্পনা করে নেওয়া৷ তাই এই স্থানে যে শীর্ষ, চক্ষু, পাদ শব্দগুলো রয়েছে এগুলো উপলক্ষণ মাত্র। কিসের উপলক্ষণ ? এখানে 'সহস্র' শব্দের অর্থ হলো 'বহু'। নিঘণ্টু ৩।১ এ উল্লেখ আছে 'সহস্র ইতি বহুনাম'। এখানে 'শীর্ষ' দ্বারা সেই পরমাত্মার মাথা বোঝাচ্ছে না। বরং পরমাত্মা সর্বব্যাপী হওয়ায় পরমাত্মার মধ্যেই সকল প্রাণীর মস্তিষ্ক তথা দেহ অবস্থিত৷ তাই এখানে সেই পরমাত্মাকে সহস্রশীর্ষ বলা হয়। আবার এখানে চক্ষু শব্দ জ্ঞানেন্দ্রিয়ের উপলক্ষণ৷ অর্থাৎ পরমাত্মা সর্বপ্রকারের জ্ঞানযুক্ত। আর পাদ শব্দটি একই ভাবে কর্মেন্দ্রিয়ের উপলক্ষণ৷
অপব্যাখ্যাকারীদের দাবীঃ এসব অনুবাদ ভুল। এসব আর্যসমাজীদের ভুল ভাষ্য। এরকম ব্যাখ্যা আর্যসমাজ ছাড়া কেউ স্বীকার করে না। তাই আমরা এসব মানব না। আপনারা অপপ্রচারকারী....ব্লা ব্লা ব্লা।
দাবী খণ্ডনঃ হে হে। জানতাম আপনারা এটাই বলবেন। তাই আমি উপরে যে ব্যাখ্যাগুলো দিলাম সেগুলো কোনো আর্যসমাজী বেদভাষ্যকারের ব্যাখ্যা থেকে দেইনি৷ বরং আপনারা শুতে ও বসতে যাদের নাম জপ করেন, যাদেরকে নিজেদের ভাব পিতা হিসেবে স্বীকার করেন সেই সায়ণের ঋগ্বেদ ১০।৯০।১ এর ভাষ্য ও মহীধরের যজুর্বেদ ভাষ্যের ৩১।১ থেকে দিয়েছি৷ বিশ্বাস না হলে নিজেই দেখে নিন।
সায়ণ বলেছেন–
"সর্বপ্রাণিসমষ্টিরূপো
ব্রহ্মাণ্ডদেহো বিরাডাখ্যো যঃ পুরুষঃ সোঽয়ং সহস্রশীর্ষা। সহস্রশব্দস্যোপলক্ষণৎবদনন্তৈঃ শিরোভির্যুক্ত ইত্যর্থঃ। যানি সর্বপ্রাণিনাং শিরাংসি তানি সর্বাণি তদ্দেহান্তঃপাতিত্বাত্তদীয়ান্যেবেতি সহস্রশীর্ষত্বম্ । এবং সহস্রাক্ষিত্বং সহস্রপাদত্বং চ। 'সঃ' পুরুষঃ 'ভূমিং' ব্রহ্মাণ্ডগোলকরূপাং 'বিশ্বতঃ' সর্বতঃ 'বৃত্বা' পরিবেষ্ট্য 'দশাঙ্গুলং' দশাঙ্গুলপরিমিতং দেশম্ 'অত্যতিষ্ঠৎ' অতিক্রম্য ব্যবস্থিতঃ। দশাঙ্গুলমিত্যুপলক্ষণম্। ব্রহ্মাণ্ডাদ্বহিরপি সর্বতো ব্যাপ্যাবস্থিত ইত্যর্থঃ॥"
মহীধর বলেছেন–
"অব্যক্তমহদাদিবিলক্ষণশ্চেতনো যঃ পুরুষঃ 'পুরুষান পরং কিংচি'দিত্যাদিশ্রুতিষু প্রসিদ্ধঃ সর্বপ্রাণিসমষ্টিরূপো ব্রহ্মাণ্ডদেহো বিরাজাখ্যোঽস্তি। কীদৃশঃ। সহস্রশীর্ষা সহস্রশব্দো বহুলবাচী। সংখ্যাবাচকবে সহস্রাক্ষ ইতি বিরোধঃ স্যাৎ নেত্রসহস্রদ্বয়েন চ ভাব্যম্। ততঃ সহস্রমসংখ্যানি শীর্ষাণি শিরাংসি যস্য সঃ 'শীর্ষশ্ছন্দসি' (পা০ ৬।১।৬০) ইতি শিরঃশব্দস্য শীর্ষন্নাদেশঃ। শিরোগ্রহণং সর্বাবয়বোপলক্ষণম্। যানি সর্বপ্রাণিনাং শিরাংসি তানি সর্বাণি তদেহান্তঃপাতিবাৎ তস্যৈবেতি সহস্রশীর্ষবম্। এবমগ্রেঽপি। সহস্রাক্ষঃ সহস্রমক্ষীণি যস্য সঃ। অক্ষিগ্রহণং সর্বজ্ঞানেন্দ্রিয়োপলক্ষকম্। সহস্রপাৎ সহস্রং পাদা যস্য 'সংখ্যাসুপূর্বস্য' (পা০ ৫।৪।১৪০) ইতি পাদস্যান্ত্যলোপঃ। পাদগ্রহণং কর্মেন্দ্রিয়োপলক্ষণম্। সঃ পুরুষো ভূমি ব্রহ্মাণ্ডলোকরূপাং সর্বতঃ তির্যক্ ঊর্ধ্বমধশ্চ স্পৃৎবা ব্যাপ্য। স্পৃণোতির্ব্যাপ্তিকর্মা। যদ্বা ভূমিশব্দো ভূতোপলক্ষকঃ। পঞ্চ ভূতানি ব্যাপ্য দশাঙ্গুলপরিমিতং দেশমধ্যতিষ্ঠৎ অতিক্রম্যাবস্থিতঃ। দশাঙ্গুলমিত্যুপলক্ষণম্। ব্রহ্মাণ্ডাদ্বহিরপি সর্বতো ব্যাপ্যাবস্থিত ইত্যর্থঃ। যদ্বা নাভেঃ সকাশাদ্দশাঙ্গু। লমতিক্রম্য হৃদি স্থিতঃ।।"
অপব্যাখ্যাকারীদের দাবীঃ যাই হোক না কেন। আমরা আমাদের বাপের কথাও মানবো না৷ কারণ 'সর্বপ্রাণীর শির তাঁর মধ্যে অবস্থিত হওয়ায় তিনি সহস্রশীর্ষ' এটির বিষয়ে কোনো প্রমাণ নাই। যারা এটি দাবী করে তারা "শঠ, বাটপার"।
দাবী খণ্ডনঃ একটি প্রবাদ আছে 'মূর্খের অশেষ দোষ'। আপনাদের হয়েছে সেই অবস্থা৷ আপনারা নিজে শাস্ত্র না পড়ে এসেছেন নিজেদের শাস্ত্রজ্ঞ পণ্ডিত দাবী করতে! শ্বেতাশ্বতর উপনিষদের তৃতীয় অধ্যায়টি একটু দেখে আসুন। সেখানে এই 'সহস্রাশীর্ষ পুরুষঃ' মন্ত্রের ব্যাখ্যায় আমাদের উপরের ব্যাখ্যাকেই সমর্থন করছে৷ নিজেই দেখে নিন। এখন নিশ্চয় উপনিষদকার ঋষিদের গালাগাল করে নিজেদের অভ্রতার পরিচয় দিবেন না।
★অপব্যাখ্যাকারীদের দাবীঃ আমাদের আক্ষরিক অনুবাদই ঠিক৷ এরকম ব্যাখ্যা যৌক্তিক নয়। আপনারা 'ঈশ্বরকে নিরাকার বলার মাধ্যমে মূলত ঈশ্বরকে প্রতিবন্ধী বানিয়ে ফেলছেন। ঈশ্বরকে অসম্পূর্ণ হিসেবে প্রচার করছেন।'
দাবী খণ্ডনঃ নিরাকারের মাধ্যমে কখনো ঈশ্বরকে প্রতিবন্ধী (পাঠক মণ্ডলী এদের শব্দচয়ন কতটা জঘন্য সেটা লক্ষ করুন৷ ঈশ্বরকে 'প্রতিবন্ধী' বলার মতো ধৃষ্টতা এরা দেখাচ্ছে) হিসেবে তুলে ধরা হয় না। কারণ আমরা তাঁকে পূর্ণ হিসেবে মানি। আর যিনি পূর্ণ তিনি কখন হীন হন না৷ বরং আপনাদের অক্ষর টু অক্ষর অনুবাদ যথেষ্ট সমস্যা যুক্ত। কারণ এই অনুবাদের কারণেই ঈশ্বরকে আপনারা অঙ্গপ্রত্যঙ্গের সঠিক হিসেবে তুলে ধরতে পারছেন না (আমরা কখনই ঈশ্বরের জন্য 'প্রতিবন্ধী' জাতীয় অপশব্দ ব্যবহার করতে চাই না)। কেননা আপনাদের অক্ষর টু অক্ষর অনুবাদ অনুসারে ''পুরুষ নামক ঈশ্বর হলেন হাজার মাথা বিশিষ্ট, হাজার চোখ বিশিষ্ট, হাজার পা বিশিষ্ট।" এখন এখানে সকলে মনোযোগ দিন। যদি এটিই ঈশ্বরের প্রকৃত রূপ হতো তবে হাজার মাথা বিশিষ্ট পুরুষের চোখ হওয়া উচিত দুই হাজার আবার পাদও হওয়া উচিত দুই হাজার। সেই হিসেবে মন্ত্রটা হওয়া উচিত ছিলো 'সহস্রাশীর্ষা পুরুষঃ দ্বিসহস্রাক্ষঃ দ্বিসহস্রাপাৎ'। আবার এই মন্ত্রে পুরুষের হাতের উল্লেখ নাই। তার মানে কি ঈশ্বর হস্তহীন ? আবার এই সূক্তের ৩য় মন্ত্রেই বলা হচ্ছে সেই পুরুষ চতুষ্পাদ৷ তাঁর একপাদে এই বিশ্বজগত প্রতিষ্ঠিত আর বাকি তিনপাদ প্রকাশময় অমৃতে অবস্থিত। দেখুন– "পাদো॑ঽস্য॒ বিশ্বা॑ ভূ॒তানি॑ ত্রি॒পাদ॑স্যা॒মৃতং॑ দি॒বি॥" তাই পূর্বোক্ত মন্ত্রের সহস্রপাদ রূপক না হয়ে বাস্তব হলে আবার এই মন্ত্রে সহস্র পাদকে বাদ দিয়ে চতুষ্পাদের উল্লেখ থাকতো না৷ ফলে আপনাদের আক্ষরিক অনুবাদই অযৌক্তিক ও ভুল। এখানে মূলত ঈশ্বরের সর্বব্যাপিতা ও মহিমা বোঝায়।

অপাণিপাদো জবনো প্রহীতা পশ্যত্যচক্ষুঃ
স শৃণোত্যকর্ণঃ। স বেত্তি বেদ্যং ন চ তস্যাস্তি বেত্তা
তমাহুরগ্র্যং পুরুষং মহান্তম্।।
(শ্বেতাশ্বতরোপনিষৎ ৩/১৯)
সরলার্থঃ পরমেশ্বরের হাত নেই
পরন্তু নিজ শক্তিরূপ হাত দ্বারা
সবকিছু রচনা ও ধারণ করেন, পা নেই তবুও
সর্বব্যাপী হওয়াই সবার চেয়ে
অধিক বেগবান, গতিশীল, কোন চক্ষু গোলক নাই
পরন্তু সবাইকে যথাযথ দেখেন, কান নেই কিন্তু শুনতে পারেন। তিনি সমস্ত জগৎ কে যথাযথভাবে জানেন কিন্তু তাকে কেউ জানে না। তাহাকে
সবথেকে শ্রেষ্ঠ সব থেকে মহান পুরুষ বলা হয়। ]
ত্রিপাদূর্ধ্ব উদৈৎপুরুষঃ পাদোঽস্যেহাভবৎপুনঃ।
ততো বিষ্বঙ্ ব্যক্রামৎসাশনানশনে অভি।।
(যজু ৩১।৪)
পদার্থঃ পূর্ব উক্ত (ত্রিপাৎ পুরুষঃ) তিন পাদ বিশিষ্ট পুরুষ (ঊর্ধ্বঃ) সম্পূর্ণ সংসার থেকে পৃথক হয়ে সদা মুক্ত স্বরূপে (উৎ ঐৎ) বিরাজমান, (অস্য) এই পুরুষের (পাদঃ) এক পাদ (ইহ) এই জগতে (পুনঃ) বারংবার উৎপত্তি প্রলয়ের চক্রে (অভবৎ ) আসে । (ততঃ) এর অনন্তর (সাশনান শনে অভি) ভোজনশীল চেতন এবং ভোজনরহিত জড় এই উভয় প্রকারের চরাচর লোককে (বিষ্বঙ্) সকল দিক হতে ব্যপ্ত হয়ে (বি অক্রামত) বিশেষরূপে তাদের উৎপন্ন করেন।
ভাবার্থঃ পরমাত্মা কার্য জগৎ থেকে পৃথক তিন অংশে প্রকাশিত হয়ে এক অংশ সামর্থ্য দ্বারা সকল জগৎকে বারংবার উৎপন্ন করেন। তৎপশ্চাৎ সেই চরাচর জগতে ব্যাপ্ত হয়ে স্থিত থাকেন। এই মন্ত্রে পরমাত্মার যে চার পাদ বর্ণনা করা হয়েছে তা উপদেশ করার এক ভঙ্গিমা, বাস্তবে সেই পরমেশ্বরের কোন হস্ত পদ নেই। সেই পরমপুরুষ এক অংশ দ্বারা জগৎকে উৎপন্ন করে এবং তিন অংশে পৃথক থাকেন, এটা বলার তাৎপর্য এই যে, সমস্ত জগৎ হতে পরমাত্মাই মহান, জগৎ ক্ষুদ্র।।
वि॒श्वत॑श्चक्षुरु॒त वि॒श्वतो॑मुखो वि॒श्वतो॑बाहुरु॒त वि॒श्वत॑स्पात्। सं बा॒हुभ्यां॒ धम॑ति॒ सं पत॑त्रै॒र्द्यावा॒भूमी॑ ज॒नय॑न् दे॒वऽएकः॑॥
বিশ্বতশ্চক্ষুরুত বিশ্বতোমুখো বিশ্বতোবাহুরুত বিশ্বতস্পাত। সং বাহুভ্যাং ধমতি সং পতত্রৈর্দ্যাবাভূমী জনয়ত্ দেবএকঃ।।
--(যজুর্বেদ ১৭/১৯)

পদার্থ- (বিশ্বতস্চক্ষু) সর্বত্র যার চক্ষু (উত) ও (বিশ্বতোমুখঃ) সর্বত্র যার মুখ (বিশ্বতোবাহু) সর্বত্র যার বাহু (উত) ও (বিশ্বতস্পাত) সর্বত্র যার চরণ (দেব) সেই সমগ্র জগতকে প্রকাশকারী, সত্যপদেশ ও সমস্ত সুখের দাতা [নিরুক্ত৭/১৫] (এক) এক ও অদ্বিতীয় পরমাত্মা (পতত্রৈ) প্রকৃতির গমনশীল পরমাণু হতে (দ্যাবা-ভূমি) অাকাশ ও পৃথিবীকে (সম্ জনয়ন্)উৎপন্ন করেছেন। (বাহুভ্যাম্) তিনি তার বাহুরূপ অনন্ত বল দ্বারা (সম্ ধমতি) সমগ্র জগতকে চালিত করেন। 

No comments:

Post a Comment

ধন্যবাদ

বৈশিষ্ট্যযুক্ত পোস্ট

যজুর্বেদ অধ্যায় ১২

  ॥ ও৩ম্ ॥ অথ দ্বাদশাऽধ্যায়ারম্ভঃ ও৩ম্ বিশ্বা॑নি দেব সবিতর্দুরি॒তানি॒ পরা॑ সুব । য়দ্ভ॒দ্রং তন্ন॒ऽআ সু॑ব ॥ য়জুঃ৩০.৩ ॥ তত্রাদৌ বিদ্বদ্গুণানাহ ...

Post Top Ad

ধন্যবাদ