তথাকথিত অলৌকিকতা আর অন্ধবিশ্বাসের বিরুদ্ধে প্রবীর ঘোষের লেখা গবেষণাধর্মী প্রবন্ধগ্রন্থ ‘অলৌকিক নয়, লৌকিক’আমাদের পূর্বপুরুষেরা যেসব অজ্ঞতা, অন্ধবিশ্বাস, কুসংস্কার ও অলীক কল্পনা লালন করেছে; আজও অপরিণত ও অবিকশিত এক বিপুল অংশ মানুষ তার উত্তরাধিকার বহন করে চলেছে। আর একদল অসৎ মানুষ ধর্মের ছায়াতলে সেই উত্তরাধিকারকে পুঁজি করে সৃষ্টি করে জ্যোতিষ, তুকতাক, আর হাজারো কুসংস্কারের জঙ্গল, চোরাকারবারির ফাঁদ। সমাজের এই দীর্ঘ ক্ষতের বিরুদ্ধে সর্বদা প্রতিবাদমুখর প্রগতিবাদী লেখক প্রবীর ঘোষের লেখা প্রবন্ধগ্রন্থ।
সৎ বিজ্ঞানী মাত্রেই বলবেন,—না জানি না, পারি না। কিন্তু মাত্র কয়েক হাজার বছরের চেষ্টায় আমরা কি প্রকৃতির অনেক রহস্য জানতে পারিনি? প্রকৃতির অনেক ক্রিয়াকলাপের অনুকরণে বা অনুসরণে প্রকৃতিকে কিছুটা বশীভূত করে মানবসমাজের কল্যাণে নিয়ােগ করিনি? বিজ্ঞান সৃষ্টির ও মানবধর্মের আদি ও অনন্ত সম্পর্কে এখনও অনেকখানি অজ্ঞ থাকা সত্ত্বেও মানুষের জীবনকে অনেক উন্নত করেনি কি? মানুষের ভবিষ্যৎ বিজ্ঞানকে গড়ে তুলতে সময় দিন।
বিজ্ঞান অনেক কিছু করেছে ও আরও কিছু করতে পারে, এ নিয়ে কেউ কোমর বেঁধে তর্কে নামবেন না জানি; কিন্তু বিজ্ঞানকে মানুষের ভবিষ্যৎ গড়ে তােলার স্বাধীনতা কোনাে দেশের রাষ্ট্রীয় সম্মানে ভূষিত শাসকশ্রেণি, পূজিত নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিরা—(বিজ্ঞানীরা ও নামি-দামী বিজ্ঞানীরাও এর মধ্যে আছেন) দেবেন না। সেই পুরনাে কথাই তুলবেন। বিজ্ঞান বস্তুবাদী দৃষ্টিকোণ থেকে মানুষ ও সমাজকে দেখতে চায় ও তাদের সম্পর্ক নিরূপণ করতে চায় এবং সৎ বিজ্ঞানীরা বিজ্ঞানসম্মত শােষণহীন সমাজ সংগঠিত করতে চায়। অধিকাংশ দেশের শাসকশ্রেণি তাদের স্বার্থরক্ষক সমাজ সংগঠনের পরিবর্তন চায় না। কাজেই আমরা সব পণ্ডিতদের মুখ ও কলম থেকেই এই একই প্রচার শুনছি গত তিন চার দশক ধরে। বিজ্ঞান মানুষের জৈবিক সমস্যা হয়তাে নিরসন করতে পারে, কিন্তু আত্মিক ঐশ্বর্য থেকে বঞ্চিত করে মানুষকে অমানুষ করে তুলছে। যে বিজ্ঞানের মধ্যে নীতিবােধ, সৌন্দর্যবােধ ও দর্শনচিন্তা নেই—সেই বিজ্ঞান চাঁদে পাড়ি দিতে পারলেও মূল্যবােধ বাড়াতে পারে না, মনুষ্যত্ব উন্মেষে অক্ষম। ভারতের দেশে উন্নয়ন পরিকল্পনায় বিজ্ঞান-বিশারদরা বিজ্ঞানের প্রযুক্তিবিদ্যা ও প্রাচীন ব্রহ্মবিদ্যার কুশলী মিশ্রণের ফর্মুলা আবিষ্কারের জন্য আলােচনা ও চর্চায় রত। এদেশের শাসক মনে করে শুধু ভাত রুটির জোগান দিলে মানুষ গড়া যাবে না! মনুষ্যত্বের উন্মেষে প্রয়ােজন বিজ্ঞানের সঙ্গে ধর্মের নির্যাসের সঠিক পরিমাণে সংযােজন।
যুক্তিহীন অন্ধ-বিশ্বাসগুলােকে হুজুরের দল ও তার উচ্ছিষ্টভােগীরা প্রতিনিয়ত বাঁচিয়ে রাখতে ও পুষ্ট করতে সচেষ্ট। তারই ফলশ্রুতিতে মানুষের মনের স্বাভাবিক যুক্তিকে গুলিয়ে দিতে গড়ে উঠেছে ভাববাদী দর্শন অর্থাৎ অধ্যাত্মবাদী চিন্তাধারা, বিশ্বাসবাদ, গুরুবাদ, ঈশ্বরবাদ ও ধর্মের নানা আচার-অনুষ্ঠান। যুক্তিবাদী চিন্তা ও চেতনাকে ঠেকিয়ে রাখতে সবচেয়ে কার্যকর হাতিয়ার হিসেবে ধর্ম-উন্মাদনা সৃষ্টি করা হচ্ছে। আজ তাই বােঝার সময় এসেছে, শােষিত মানুষের হাতিয়ার যুক্তিবাদী চিন্তার প্রবলতম শত্রু তথাকথিত ধর্ম, অধ্যাত্মবাদ, ভাববাদী দর্শন, বিশ্বাসবাদ ইত্যাদি। তথাকথিত ধর্মের এই যুক্তি-বিরােধী চরিত্রের স্বরূপকে সঠিকভাবে সাধারণ-মানুষের কাছে তুলে ধরতে না পারলে কুসংস্কার মুক্তির, হুজুর-মজুর সম্পর্ক অবসানের কল্পনা শুধুমাত্র কল্পনাই থেকে যাবে।
অধ্যায় : চোদ্দ
অধ্যায় : পনের
অধ্যায় : ষোলো
অধ্যায়: সতেরাে
অধ্যায়: আঠারাে
অধ্যায় : উনিশ
ভূমিকা
বিজ্ঞানকে এবং বিজ্ঞানের দৌলতে পাওয়া কৃতকৌশল প্রযুক্তিবিদ্যাকে জীবনের সর্বস্তরে ব্যবহার করেও আমরা অনেকেই বিজ্ঞান-বিরােধী। বিজ্ঞান বিরােধিতার স্কুল ও সূক্ষ্ম চেষ্টা অনেকদিন ধরেই চলছে। কোপারনিকাস, ডারউইন, ফ্রেজার, মার্কস, এঙ্গেলস, ফ্রয়েড, পাভলভের বই লক্ষ লক্ষ বিক্রি হয়েছে। সব দেশেই ম্যাক্রো-ওয়ার্ল্ড, মাইক্রো-ওয়ার্ল্ড, মহাকাশবিদ্যা সম্পর্কিত জ্ঞান ও গবেষণা বৃদ্ধির ব্যাপক চেষ্টা চলছে। বিশ্বব্রহ্মাণ্ড সম্পর্কে ধারণা আমাদের ক্রমশ স্পষ্ট হয়ে আসছে। বেঁচে থাকার তাগিদে মানুষ মন্ত্রতন্ত্র ছেড়ে যন্ত্র ও প্রযুক্তিবিদ্যার আরাধনায় রত হয়েছে। তবু কেন মানুষের বিজ্ঞানমনস্কতা বাড়ছে না? কেন এখনও বেশির ভাগ দেশের সংস্কৃতির ও ধর্মের মধ্যে অতিপ্রাকৃত, অস্বাভাবিক, অলৌকিক ঘটনার সমাবেশ? এবং প্রাচীন ঐতিহ্যের দোহাই দিয়ে সেইসব ঘটনায় গুরুত্ব আরােপ এবং অলৌকিক ঐশীমহিমা প্রচারে ধর্মীয় সংস্থার ও সাধুসন্তদের পরিকল্পিত প্রচার ও প্রচেষ্টা? অলৌকিক অবৈজ্ঞানিক রহস্যময়তার প্রতি মানুষের দুর্বলতা না থাকলে প্রচার সংস্থাগুলি এসব নিয়ে সক্রিয় থাকত না। অতিপ্রাকৃত ঘটনার প্রতি এই দুর্বলতা অনেকের মানসিকতার বৈশিষ্ট্য হলেও আমরা একে স্বভাবগত বলতে পারি না। অনেককিছু প্রাকৃতিক ঘটনার ব্যাখ্যা না জানার জন্যে আদিম যুগের মানুষের ভয়ই যে কাল্পনিক ভূত ও ভগবানে রূপান্তরিত হয়েছে, একথা অনেকে লিখছেন, কাজেই অনেকেই পড়েছেন। কিন্তু পুরনাে শর্তাধীনতা (conditioning) থেকে মুক্ত হয়েছেন ক’জন? না হবার কারণ বুঝতে না পারলে অলৌকিক ঘটনার জাদু জানলেও মানুষের আদিম সংস্কার দূর হবে না। বৈজ্ঞানিক কি সব ব্যাখ্যা করতে পারে? বৈজ্ঞানিক কি বন্যা, অনাবৃষ্টি, জলােচ্ছ্বাস, ঝঞ্ঝা, ভূমিকম্পকে প্রতিরােধ করতে পারে? বৈজ্ঞানিক কি মৃতকে জীবন্ত করতে পারে? ঠিক কি ভাবে ব্রহ্মাণ্ড তৈরি হল, প্রাণের উদ্ভব হল—এর উত্তর কি দিতে পারে আধুনিক বিজ্ঞান?
বিজ্ঞান বিরােধিতায় তাই স্থূল চেষ্টা এখন আর আগের মতাে নজরে পড়ে না। অলৌকিকতার ও রহস্যময়তার ধাঁধার সৃষ্টি করে কিছু বিজ্ঞানী সাধুসন্তদের বিজ্ঞান বিরােধিতায় মদত জোগাচ্ছেন। আজ যােগবলে অলৌকিক শক্তির অধিকারী হয়েছেন কোনও স্বামীজি বা বাবাজি—এই প্রচার বা এই ধরনের প্রদর্শনী আগের মতাে বিস্ময় উৎপাদন করে না। আজকের রকেট—কম্পিউটার যুগের মানুষ আর আগের মতাে প্রয়াত আত্মার বাক্যালাপ শুনে শিহরিত হয় না। আজ বিজ্ঞানের মর্যাদা পাবার জন্য উৎসুক পরাসনােবিদ্যা, জ্যোতিষ ইত্যাদি বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ্যসূচির মধ্যে আসতে চায়। ভারতীয় যােগী থেকে ইউরি গেলারেরা মাঝে মাঝে মিডিয়া মারফত নিজেদের জাহির করার চেষ্টা করলেও অলৌকিককে বিজ্ঞানীদের রবার স্ট্যাম্পে লৌকিক করে তুলতে পারেননি। যদি কোনােদিন ল্যাবরেটরিতে পদার্থকণার বিশেষ কোনও শক্তি আবিষ্কৃত হয় যা টেলিপ্যাথি বা ক্লেয়ারােভয়েনসের রহস্যভেদে সক্ষম, তাহলেও ESP-র মর্যাদা বৃদ্ধি হবে না। আধুনিক বিজ্ঞানের মতে বস্তুকণা ও শক্তির অভিব্যক্তি অজস্রভাবে ঘটতে পারে—সপক্ষে আর একটি তথ্য সংযােজিত হবে। সঙ্গে সঙ্গে এও প্রমাণিত হবে যে, এই বস্তুকণা তথাকথিত অলৌকিক শক্তি বিজ্ঞানীর পঞ্চেন্দ্রিয়ের কোন একটির কাছেই অভিব্যক্ত হয়েছে প্রকৃতিবিজ্ঞানের মেথডােলজির মাধ্যমেই।
ঐশীশক্তি, অলৌকিক শক্তি, অতিপ্রাকৃত শক্তি—প্রভৃতি কথাগুলাে পরিহার করলেও প্রেতলােকের অস্তিত্ব, জন্মান্তরের রহস্য, পীরের সমাধির (মাজার) অলৌকিকত্ব, ব্যক্তিবিশেষের সমাধি-মাধ্যমে ভগবদ্দর্শন—ইত্যাদিকে বিজ্ঞানগ্রাহ্য করার চেষ্টা সফল হবার কোনও সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না।
প্রবীর ঘােষ দীর্ঘকালের পরিশ্রমলব্ধ গবেষণায় ও অসাধারণ মননশীলতায় পৃথিবীর বিভিন্ন রহস্যাবৃত অলৌকিক ঘটনার চুলচেরা বিশ্লেষণের কাজে হাত দিয়েছেন। বইটি একাধিক খণ্ডে প্রকাশিত হবে। এটি প্রথম খণ্ড। এই খণ্ডে পবিদ্যার উপর গুরুত্ব আরােপ করে বইটির গুরুত্ব বাড়িয়েছেন, বেশি উপভােগ্য করেছেন; আমাদের ধন্যভাজন হয়েছেন। কারণ, ভারতীয় কোনও ভাষায় অথবা ভারত থেকে প্রকাশিত কোনও গ্রন্থে পরাবিদ্যার ওপর এত বিস্তৃত আলােচনা ইতিপূর্বে হয়েছে বলে আমার জানা নেই। বিষয়টা অ্যাকাডেমিক হলেও লেখার সহজবােধ্যতা ও সাবলীলতার দরুণ সাধারণের পক্ষে সহজবােধ্য হয়েছে।
প্রবীর সাধুসন্তদের ঘটানাে অনেক ঘটনাই আমাদের লৌকিক কৌশলে ঘটিয়ে দেখিয়েছেন। প্রবীর পৃথিবীর সমস্ত অলৌকিক ক্ষমতাধর এবং জ্যোতিষীদের বুজরুকির বিরুদ্ধে এক অসাধারণ চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়েছেন। ঘােষণা করেছেন—বিশ্বের যে কেউ অলৌকিক ক্ষমতার প্রমাণ রাখলে বা কোনও জ্যোতিষী অভ্রান্ত গণনার পরিচয় দিলে দেবেন ৫০ হাজার ভারতীয় টাকা। লেখক চান, এই চ্যালেঞ্জের মধ্যে দিয়ে আরও কিছু মানুষ বুঝতে শিখুন, বাস্তবে অলৌকিক বলে কিছু নেই, অলৌকিকের অস্তিত্ব আছে শুধু পত্র-পত্রিকা, ধর্মগ্রন্থ, বইয়ের পাতায় এবং অতিরঞ্জিত গল্প বলিয়েদের গল্পে।
ধর্মান্ধতা ও কুসংস্কারের বিরুদ্ধে প্রবীর ঘােষের নির্ভিক যুক্তিবাদী সংগ্রাম নিশ্চয়ই সমাজ ও ব্যক্তির কল্যাণ করবে। প্রথম খণ্ডের আলােচ্য বিষয়গুলাের ওপর বিস্তৃত আলােচনা আমাকে মুগ্ধ করেছে। পরবর্তী খণ্ডের জন্য তীব্র আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষায় রইলাম।
কিছু কথা
আজ বিংশ শতাব্দীর অন্তিম লগ্নে মানুষের বিজ্ঞান দুর্বার। অভাবিতপূর্ব তার উন্নতি। তবু আজ জনমনে অন্ধ-বিশ্বাস এবং অলৌকিকের প্রতি প্রশ্নহীন আনুগত্য প্রবল থেকে প্রবলতর হয়ে উঠতে চাইছে। এমনতর হওয়ার কারণটি আমাদেরই সমাজব্যবস্থার মধ্যে নিহিত। সমাজের হুজুরের দল চান না মজুরের দল জানুক তাদের প্রতিটি বঞ্চনার কারণ তাদের সমাজ ব্যবস্থার মধ্যেই সীমাবদ্ধ। স্বর্গের দেবতা, আকাশের নক্ষত্র, পূর্বজন্মের কর্মফল ইত্যাদিকে বঞ্চনার কারণ হিসেবে চিহ্নিত করতে পারলে, বিশ্বাস উৎপাদন করতে পারলে, প্রতিবাদের কণ্ঠকে স্তব্ধ করে দিয়ে হুজুর-মজুরের সম্পর্কটা বজায় রাখা যায়।
ইতিহাসের অনিবার্য গতি বিশ্বাসের বিপরীতে যুক্তির অভিমুখে। তাই আমরা যুক্তিবাদীরা বাড়ছি। প্রতিটি দিন প্রতিটি মুহূর্তে বেড়েই চলেছি। যুক্তিবাদ আজ আন্দোলনের রূপ নিতে চলেছে। আমরা সমাজবিজ্ঞান সম্পর্কে সচেতন। জানি, যে সমাজব্যবস্থায় পদে পদে অনিশ্চয়তা, সে সমাজের মানুষগুলাের সাধুবাবা, গুরুজি, অলৌকিকতা ও গ্রহরত্নের প্রতি নির্ভরশীলতাও বেশি।
যুক্তিহীন অন্ধ-বিশ্বাসগুলােকে হুজুরের দল ও তার উচ্ছিষ্টভােগীরা প্রতিনিয়ত বাঁচিয়ে রাখতে ও পুষ্ট করতে সচেষ্ট। তারই ফলশ্রুতিতে মানুষের মনের স্বাভাবিক যুক্তিকে গুলিয়ে দিতে গড়ে উঠেছে ভাববাদী দর্শন অর্থাৎ অধ্যাত্মবাদী চিন্তাধারা, বিশ্বাসবাদ, গুরুবাদ, ঈশ্বরবাদ ও ধর্মের নানা আচার-অনুষ্ঠান। যুক্তিবাদী চিন্তা ও চেতনাকে ঠেকিয়ে রাখতে সবচেয়ে কার্যকর হাতিয়ার হিসেবে ধর্ম-উন্মাদনা সৃষ্টি করা হচ্ছে। আজ তাই বােঝার সময় এসেছে, শােষিত মানুষের হাতিয়ার যুক্তিবাদী চিন্তার প্রবলতম শত্রু তথাকথিত ধর্ম, অধ্যাত্মবাদ, ভাববাদী দর্শন, বিশ্বাসবাদ ইত্যাদি। তথাকথিত ধর্মের এই যুক্তি-বিরােধী চরিত্রের স্বরূপকে সঠিকভাবে সাধারণ-মানুষের কাছে তুলে ধরতে না পারলে কুসংস্কার মুক্তির, হুজুর-মজুর সম্পর্ক অবসানের কল্পনা শুধুমাত্র কল্পনাই থেকে যাবে।
ডান-বাম নির্বিশেষে ভারতের প্রায় প্রতিটি রাজনৈতিক দলকেই সংসদীয় নির্বাচনের কথা মাথায় রাখতে হয়। সংসদীয় গণতন্ত্রে নির্বাচনই ক্ষমতা দখলের একমাত্র পথ।
—
হুজুর-মজুর সম্পর্কের অবসানের কথা বলা রাজনৈতিক দলগুলােও
সংসদীয় নির্বাচনে অংশ নিতে গিয়ে ভােট সংগ্রহকে অত্যধিক
গুরুত্ব দিয়ে ফেলেছে। ফলে মানুষের অন্ধবিশ্বাস, ভ্রান্ত
ধারণা দূর করতে গিয়ে মানুষের বিশ্বাসকে আঘাত
করার চেয়ে ভােটার-তােষণনীতিকেই অভ্রান্ত
অস্ত্র হিসেবে মনে করতে শুরু করেছে।
সংসদীয় নির্বাচনে অংশ নিতে গিয়ে ভােট সংগ্রহকে অত্যধিক
গুরুত্ব দিয়ে ফেলেছে। ফলে মানুষের অন্ধবিশ্বাস, ভ্রান্ত
ধারণা দূর করতে গিয়ে মানুষের বিশ্বাসকে আঘাত
করার চেয়ে ভােটার-তােষণনীতিকেই অভ্রান্ত
অস্ত্র হিসেবে মনে করতে শুরু করেছে।
তাই তথাকথিত ধর্ম-বিশ্বাসকে আঘাত হানার সময় এলে কৌশল হিসেবে কে কখন কতটুকু মুখ খুলবে—এটাই তাদের কাছে বড় প্রশ্ন হয়ে দেখা দিচ্ছে। কেন সংসদীয় গণতন্ত্রে ঢােকা, তা বিস্মৃত হলে উপলক্ষই লক্ষ্যকে ছাপিয়ে যাবে—এটাই স্বাভাবিক।
এটা মনে রাখা একান্তই প্রয়ােজন সমস্যার মূল উৎপাটনের চেষ্টা না করে বিচ্ছিন্নভাবে সতী মন্দির বা রাম-শিলা পুজোর বিরােধিতা করে কুসংস্কারের নােংরা আবর্জনা দূর করা যাবে না, মানুষের আবেগকে কাজে লাগিয়ে দলে ভারী করা যেতে পারে মাত্র। সতী পুজো বা রাম-শিলার পুজো যেমন বিশ্বাস-নির্ভর, একইভাবে সমস্ত দেবতা ও অবতারের পুজোই একান্ত বিশ্বাস-নির্ভর। যতদিন মানুষের মনে “আত্মা অবিনশ্বর” এই যুক্তিহীন বিশ্বাস থাকবে ততদিন সতী মন্দির সহ নানা মৃত বাবাজি-মাতাজিদের মন্দির থাকবে, ওইসব মৃত বাবাজি-মাতাজিদের কৃপা লাভের আশায়। যতদিন ঈশ্বর নামক কল্পনা মানুষের চেতনায় বিশ্বাস হয়ে বিরাজ করবে, ততদিন রাম-রহিমসহ অন্যান্য ঈশ্বরের পুজোও চলতেই থাকবে। সতী ও রামের পুজো বন্ধ করলে তার পরিবর্তে স্বভাবতই সৃষ্টি করা হবে ‘কৃষ্ণ-চক্র’, ‘বজরঙ-ধ্বজা’ ইত্যাদি নিয়ে ধর্ম উন্মাদনা। কোটি কোটি দেবতা আর লক্ষ লক্ষ অবতার থাকতে উন্মাদনা সৃষ্টিতে অসুবিধে কোথায়? রাম গেলে, রামকৃষ্ণ আসবে—এমনটাই তাে অবধারিত।
প্রায় সব রাজনৈতিক দলই মৌলবাদের বিরুদ্ধে মৌখিকভাবে সােচ্চার। কিন্তু তারা কেউই সমস্যার মূলে যেতে নারাজ। তবে কি এরা প্রত্যেকেই জনসাধারণের চেতনাকে বেশি দূর পর্যন্ত এগিয়ে নিয়ে যেতে ভীত? ভাত, কাপড় ও বাস-সমস্যার সমাধানের পাশাপাশি সাধারণ মানুষের চিন্তার ভ্রান্তি, দীনতা দূর করতে সচেষ্ট না হলে, উন্নততর চিন্তার খােরাক দিতে না পারলে তার পরিণাম কী, পৃথিবী জুড়ে প্রগতির কাঁটাকে উলটো দিকে ঘােরাবার চেষ্টাতেই প্রকট।
‘ভারতীয় বিজ্ঞান ও যুক্তিবাদী সমিতি’ (‘যুক্তিবাদী সমিতি’ নামেই বেশি পরিচিত) সমাজ সচেতন যুক্তিবাদী আন্দোলন গড়ায় ব্রতী একটি স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠান। আমাদের কাছে বিজ্ঞান আন্দোলনের অর্থ এই নয়—“বিজ্ঞানের সবচেয়ে বেশি সুযােগ-সুবিধে সবচেয়ে বেশি মানুষের কাছে পৌছে দেওয়া।” সে দায়িত্ব সরকারের, প্রশাসনের। আমাদের কাছে বিজ্ঞান আন্দোলনের অর্থ—“বিজ্ঞানমনস্ক মানুষ গড়ার আন্দোলন, যুক্তিবাদী মানুষ গড়ার আন্দোলন, কুসংস্কার মুক্তির আন্দোলন।” | আমাদের যুদ্ধ অলৌকিকের বিরুদ্ধে, যারা মানুষের দুর্বলতাকে, অজ্ঞানতাকে কুসংস্কারকে ভাঙিয়ে খ্যাতি ও প্রতিপত্তি লাভ করে চলেছে, তাদের বিরুদ্ধে। যারা কুসংস্কারের আবর্জনা সাফ করার নাম করলে মানুষের ধর্মীয় বিশ্বাসে আঘাত নয়” বলে সােচ্চার হয়, তাদের বিরুদ্ধে। যারা জনসাধারণের চেতনাকে বেশি দুর পর্যন্ত এগিয়ে নিয়ে যেতে ভয় পায়, তাদের বিরুদ্ধে। যারা জাতের নামে বজ্জাতি” করে চলেছে, তাদের বিরুদ্ধে। যারা ধর্মের নামে মানুষের মানবিকতার চুড়ান্ত বিকাশ-গতিকে রুদ্ধ রাখতে চায়, তাদের বিরুদ্ধে। আমরা সিদ্ধান্তেই পেীছেছি, প্রতিটি বিজ্ঞানমনস্ক, যুক্তিবাদী মানুষই খাটি ধার্মিক। একটা তলােয়ারের ধর্ম যেমন তীক্ষ্ণতা, আগুনের ধর্ম যেমন দহন, তেমনই মানুষের ধর্ম মনুষত্বের চরমতম বিকাশ। সেই বিচারে আমরাই ধার্মিক কারণ আমরা শােষিত মানুষদের মনুষ্যত্ববােধকে বিকশিত করতে চাইছি। মানুষের চিন্তায়, মানুষের চেতনায় বপন করতে চাইছি সাংস্কৃতিক বিপ্লবের বীজ।। যারা কুসংস্কার দূরীকরণের কথা উঠলেই বলে, “আগে চাই শিক্ষারবিস্তার, শিক্ষাই কুসংস্কার দূর করবে তাদের স্মরণ করিয়ে দেওয়া প্রয়ােজন, শিক্ষা বিস্তারের অর্থ শুধু বইয়ের পড়া মুখস্থ করা নয়, কুসংস্কার দূর করাও শিক্ষা প্রসারের অঙ্গ। অশিক্ষা বিতাড়নের চেয়ে বড় শিক্ষা | আর কী হতে পারে? | জনশিক্ষা ও যথার্থ বিজ্ঞানচেতনা আজও এ দেশে দুর্লভ। আমরা সেই দুর্লভ কাজই সম্পূর্ণ করতে চাই। আমরা ঘটাতে চাই চিন্তার বিপ্লব, সাংস্কৃতিক বিপ্লব। | আমরা জানি, যে দিন বাস্তবিকই কুসংস্কার বিরােধী বৃহত্তর আন্দোলন দুর্বার গতি পাবে, সে-দিন দুটি জিনিস ঘটবে। এক : এই আন্দোলন যে শ্রেণিস্বার্থকে আঘাত হানবে সেই শ্রেণি তাদের স্বার্থরক্ষার তাগিদে, অস্তিত্ব রক্ষার তাগিদে তীব্র প্রত্যাঘাত হানবে। এই প্রত্যাঘাতের মুখে কেউ সংগ্রামকে এগিয়ে নিয়ে যাবে, কেউ পিছু হটবে। দুই : যুক্তিবাদী চিন্তা জনসাধারণের চেতনার জগতে যে সাংস্কৃতিক বিপ্লব ঘটাবে তারই পরিণতিতে গড়ে উঠবে নতুন-নেতৃত্ব, যে নেতৃত্ব থাকবে সমাজ পরিবর্তনের, হুজুর-মজুর সম্পর্ক অবসানের সার্বিক বিপ্লবের অঙ্গীকার। আমরা সুনিশ্চিত লক্ষ্যে পৌঁছতে চাই, সাধারণ মানুষের কাছে পৌছতে চাই, তাদেরকে আমাদের চিন্তার শরিক করতে চাই। আমরা যুক্তির বলে প্রতিটি অলৌকিক ঘটনার ব্যাখ্যা দিতে, প্রতিটি অলৌকিকবাবা ও জ্যোতিষীদের মুখােশ খুলে দিতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। তাই প্রতিটি অলৌকিক ক্রিয়াকলাপের রহস্য উন্মােচনের সঙ্গে সঙ্গে সেই জ্ঞানের সন্ধান সর্বসাধারণকে জানাতে নানা উদ্যোগ ও পরিকল্পনা নিয়েছি। মানুষের আহ্বানে হাজির হতে চাই জ্যোতিষ, অলৌকিক, ধর্মসহ কুসংস্কার-বিরােধী আলােচনাচক্রে, শিক্ষণ-শিবির পরিচালনায়, পদযাত্রায়। মানুষের দরবারে হাজির হতে চাই আমাদের নাটক, প্রতিবেদন ও বই-পত্তর নিয়ে। রেখেছি একটি ঘােষণা—কোনও অবতার বা জ্যোতিষী তার ক্ষমতার প্রমাণ দিতে পারলে দেব পঞ্চাশ হাজার টাকা। ভেঙে দেব ভারতীয় বিজ্ঞান ও যুক্তিবাদী সমিতি। চাই, এই ঘােষণার মধ্যে দিয়ে মানুষ বুঝতে শিখুক, অলৌকিক ও জ্যোতিষশাস্ত্রের অস্তিত্ব শুধু কল্পনায় ও বইয়ের পাতায়। চ্যালেঞ্জ গ্রহণের বা চ্যালেঞ্জ জানাবার। ধৃষ্টতা যারা দেখিয়েছে, প্রতিটি ক্ষেত্রে তাদের নতজানু হতে হয়েছে।
ভারতীয় বিজ্ঞান ও যুক্তিবাদী সমিতি সহযােগী সংস্থার সমন্বয়কারী হিসেবে এবং নিজের শাখা সংগঠনগুলােকে নিয়ে বিজ্ঞান ও যুক্তিবাদী আন্দোলনের মূল স্রোতে কাজ করছে। এই আন্দোলনেরই এক উল্লেখযােগ্য পর্যায় হল—‘চ্যালেঞ্জ। প্রচার ও বিজ্ঞাপনের দৌলতে যে গরুগুলাে গাছে চড়ে বসেছে, তাদের মাটিতে নামিয়ে এনে আবার ঘাস খাওয়ানাের জন্যেই এই চ্যালেঞ্জ'। দোদুলামান, সুবিধাভােগী ও ইর্ষাকাতরদের কাছে চ্যালেঞ্জ’ ‘অশােভন মনে হতেই পারে, কেন চ্যালেঞ্জ বাস্তব সত্যকে বড় বেশি রকম স্পষ্ট করে তােলে। কিন্তু, সাধারণ মানুষের কাছে জনপ্রিয় প্রশ্ন এটাই—যেখানে চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করলেই দাবি প্রমাণ করা যায়, বাস্তব সত্যকে জানা যায়, সেখানে চ্যালেঞ্জ গ্রহণে দ্বিধা থাকবে কেন? আমরা চাই আমাদের বিস্তার। আমাদের শাখা বিস্তার করতে চাই সেখানেই, যেখানে রয়েছে মানুষ। বিভিন্ন সংস্থাকে, মানুষকে পেতে চাই সংগ্রামের সহযােগী হিসেবে। এবার আমি সেইসব মানুষদের কাছে কৃতজ্ঞতা জানাতে চাই, যাঁদের প্রতিটি চিঠি, প্রতিটি যােগাযােগ, প্রতিটি আর্থিক সাহায্য, প্রতিটি উপদেশ, প্রতিটি সহযােগিতা আমাকে এবং আমাদের সমিতিকে প্রেরণা দিয়েছে, উৎসাহ দিয়েছে গভীর বিশ্বাস সৃষ্টি করেছে—আমি পারছি, কুসংস্কারের বিরুদ্ধে জনমত গড়ে তুলতে পারছি। আন্দোলন দানা বাঁধতে শুরু করেছে। এত দ্রুত আমরা যে সংখ্যায় এত বিশালভাবে বৃদ্ধি পাব, তা আমার সুখ কল্পনাতেও ছিল না। অবাক বিস্ময়ে দেখেছি, যখনই আক্রান্ত হয়েছি, দুর্বার জনরােষ আক্রমণকারীদের ভাসিয়ে নিয়ে গেছে। যুক্তিবাদী আন্দোলনের একমাত্র শক্তি মানুষের ঘুম ভাঙার গানে দিশা হারিয়ে আক্রমণকারীরা কখনও হয়েছে ফেরার কখনও সচেষ্ট হয়েছে আত্মহননে। অলৌকিক নয়, লৌকিক’-এর প্রথম খণ্ডের প্রথম সংস্করণ প্রকাশিত হওয়ার পর সিদ্ধান্তে পৌঁছােলাম—মানুষ যুক্তি ভালবাসেন। সু-যুক্তির সঙ্গে পরিচিত হওয়ার সুযােগ পেলে কু-যুক্তিকে বর্জন ও সু-যুক্তিকে গ্রহণ করেন। বইটির পাঠক-পাঠিকাদের কাছ থেকে যে বিপুল সাড়া পেয়েছি তাতে আমি প্লাবিত, প্রাণিত, আপ্লুত। প্রতিনিয়ত আছড়ে পড়া বিশাল চিঠির ঢেউ আমার প্রাণশক্তি, আমার প্রেরণা, এ-কথা কৃতজ্ঞ চিত্তে স্বীকার করছি। যাঁদের চিঠির উত্তর দিতে পারিনি, যে সব প্রশ্নের উত্তর দিতে বিস্তৃত আলােচনার প্রয়ােজন ছিল, যা চিঠির স্বল্প পরিসরে সম্ভব ছিল না। বইটির এই খণ্ডে এবং পরবর্তী খণ্ডগুলােতে তাদের সকলের জিজ্ঞাসা নিয়েই আলােচনা করেছি এবং করব। আমার প্রেরণার উৎস আমার সংগ্রামের সাথী প্রত্যেককে জানাই সংগ্রামী অভিনন্দন।
৭২৮ দেবীনিবাস বােড় প্রবীর ঘােষ কলকাতা ৭০০ ০৭৪ ৬ অক্টোবর, ১৯৮৯
অধ্যায় : এক
প্রস্তাবনা
আকস্মিকতার চেয়ে ধারাবাহিকতাই বেশি
মে, ২০০৬ জিনতত্ত্বের সবচেয়ে বড় আবিষ্কারের মধ্য দিয়ে সামগ্রিক জেনেটিক কোড জানা সম্পূর্ণ করলেন বিজ্ঞানীরা। ক্রোমােজম ১-এর সিকুয়েন্সিং বাকি ছিল। এবার সেটির কাজ শেষ হলাে। এর ফলে ক্যানসার, অলজাইমারস ও পারকিনসনসের মতাে অন্তত ৩৫০টি রােগের গােপন রহস্য জানা সম্ভব হবে। এইসব রােগের আরােগ্য এখন শুধু সময়ের অপেক্ষা। বিশ্বখ্যাত জিনতত্ত্বের বিজ্ঞানীরা মানব সভ্যতাকে এক লাফে এগিয়ে দিলেন অনেকটা।
একই বছরে বিভিন্ন ভারতীয় পত্রিকায় প্রকাশিত একটি খবর।
বিহার বিধানসভার অধ্যক্ষের পত্নীর মৃত্যু,
আবার ফাঁসলেন রামদেব
হিন্দি ভাষার জনপ্রিয় ম্যাগাজিন 'সরস সলিল’-এর জুন ২০০৬ সংখ্যায় একটি খবর প্রচণ্ড হৈ-চৈ ফেলে দিয়েছে।
খবরে বলা হয়েছে, রামদেব মার্চ ২০০৬-এ তার পাটনায় শিবির বসান। শিবিরে বিহার বিধানসভার অধ্যক্ষ উদয় নারায়ণ চৌধুরীর ক্যানসার রােগে আক্রান্ত পত্নীর চিকিৎসা শুরু করেন। কিছু জড়িবুটি’-র সঙ্গে প্রাণায়াম এবং মন্ত্র ছিল রামদেবের ‘অব্যর্থ চিকিৎসার অঙ্গ।
২৫ মার্চ ২০০৬ পাটনা-শিবির শেষ হয়। তার দশ দিন পর (অর্থাৎ ৪ এপ্রিল ২০০৬) অধ্যক্ষ-পত্নী ভরােনিকা চৌধুরীর মৃত্যু হয়।
এই ঘটনা আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল গ্যারান্টি দিয়ে ১০ হাজার ক্যানসার রােগী সারিয়ে তােলার রামদেবের দাবি কী বিশাল ভন্ডামী।
৭ জানুয়ারি ২০০৬ বাবা রামদেবকে জিজ্ঞেস করেছিলাম {NDTV' ইন্ডিয়ার মুকাবিলা অনুষ্ঠানে), আপনি ‘যােগ সাধনা’ বইতে লিখেছেন ‘প্রাণ মুদ্রায় যে কোনও চোখের রােগ সারে। আপনার বাঁ চোখ পিটপিট করা রােগটা সারাচ্ছেন না কেন? আমার প্রশ্নের উত্তরে গালাগাল দিয়েছেন। রামদেব জানালেন, খেচরী মুদ্রা’ জানেন। যােগের আকর-গ্রন্থ ‘হঠযােগ প্রদীপিকা তুলে ধরে বললাম, এতে লেখা আছে, খেচরী মুদ্রা’ জানলে ক্ষুধা, তৃষ্ণা, মৃত্যু নেই। আপনি কি অমর থাকবেন? উত্তরে জানালেন, অবশ্যই অমর থাকবেন। আপনি সত্যি বলছেন, না কি মিথ্যে? খেচরী মুদ্রা জানার পর আপনাকে খাদ্য-পানীয় কেন গ্রহণ করতে হয়? উত্তর দিলেন না বাবা রামদেব। প্রশ্ন করেছিলাম, হাতের নখে নখ ঘষলে টেকো মাথায় চুল গজায় বলে আপনি দাবি করেছেন। এ দাবি কি সত্যি? রামদেবের কথা—হাজার হাজার টাকে এভাবে চুল গজিয়েছে। চ্যালেঞ্জ করতেই রামদেব তােতলাতে তােতলাতে পিছু হটলেন।
विधानसभा अध्यक्ष की पत्नी की मौतः
फिर फंसे रामदेव
असपने पठना शिविर के दौरान बाबा रामदेव ने बिहार विधानसभा अध्यक्ष उदय नारायण चौधरी की कैंसर से पीड़ित पत्नी वरोनिका चौधरी को कुछ जड़ीबूटियों के साथ प्राणायाम का 'अचूक' मंत्र दिया, फिर भी 25 मार्च को शिविर खत्म होने के 10 दिनों के अंदर ही उन की मौत हो गई।
वरोनिका चौधरी की मौत 4 अप्रैल, 2006
Babaramdev.jpg
________________
প্রস্তাবনা আবার ফসলেন’ কথার অর্থ—তার আগেও ফেঁসেছিলেন, NDTV ইন্ডিয়া’র মুকাবিলা’ অনুষ্ঠানে আমারই কাছে। তারিখটা ছিল ৭ জানুয়ারি, সাল ২০০৬। রাত ১০টা থেকে ১১-৩০ পর্যন্ত পাক্কা দেড় ঘণ্টার অনুষ্ঠানে রামদেবের ভণ্ডামী, অজ্ঞতা, মিথ্যাচারিতা সবই কিমা-কিমা করেছি। গােটা বিষয়টা বিস্তৃত জানতে পড়তে পারেন, মনের নিয়ন্ত্রণ-যােগ-মেডিটেশন’ গ্রন্থটি)। 1
0]
en hat wsha aggarwal, kathals the question of trust NBry 24x7 অন্য মুফ ম ম ল ক খ গ यंदस पैकग में उपEFi नम्बर 4.1 একবিংশ শতাব্দিতে, সেলফোন, মাইক্রোচিপস, স্যাটেলাইট, ইন্টারনেটের যুগে আগস্ট ২০০৬ দেবমূর্তির ‘দুধপান’ নিয়ে হুজুগে মাতলাে শিক্ষিত’ ভারতবাসী। এগার বছর আগে একই ঘটনা ঘটেছিল। তখন শুধু গনেশমূর্তি দুধ খেয়েছিল। সেবার সারাদিন ঘুরে ঘুরে গনেশের দুধ পান দেখে বিকেলে ‘দ্য টেলিগ্রাফ পত্রিকার দপ্তরে বসে লেখটা শেষ করেই দৌড়েছিলাম ‘বিড়লা মিউজিয়ম’-এ। সেখানে দূরদর্শনের Live অনুষ্ঠানে গনেশের দুধ খাওয়ার পিছনে হাতে-কলমে বােঝাতে আমি ছাড়াও ছিলেন একাধিক বিজ্ঞানী। ২২ সেপ্টেম্বর, ১৯৯৫-এ ‘দা টেলিগ্রাফ পত্রিকায় আমার তাতে দুধ পান রহস্য উন্মােচন করা লেখাটি বিশাল গুরুত্ব দিয়ে প্রকাশিত হয়েছিল। কিন্তু তার এগারাে বছর পর আবার একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি! একে কী বলবাে-আকস্মিকতা? নাকি ধারবাহিকতা? বর্তমান ভারতে একই সঙ্গে ধর্মের রমরমা ও যুক্তিবাদের দ্রুত অগ্রগতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এদেশে বিশ্বায়ন এসে পড়েছে। তারই সঙ্গে তাল রেখে যখন এদেশেরই একটা অংশ তাল মেলাচ্ছে, তখন আর একটা অংশ আকণ্ঠ ডুবে রয়েছে অন্ধবিশ্বাস ও কুসংস্কারে। ২০ আগস্ট ২০০৬ সন্ধে থেকে ও ২১ আগস্ট সন্ধে পর্যন্ত দেবমূর্তিরা ‘দুধপান’ করেছেন। ১১ বছর আগে ‘দুধ পান’ গুজবের উৎস ছিল দিল্লি। এবার গাজিয়াবাদ। গাজিয়াবাদ থেকে দ্রুত গুজব ছড়িয়ে পড়ে দিল্লি, চণ্ডীগড়, লুধিয়ানা, জয়পুর, এলাহাবাদ, কাশী, পাটনা, কলকাতা সহ আরও বিভিন্ন শহরে। হাজারে হাজারে মানুষ মন্দিরে হাজির হন দুধ-চামচে নিয়ে। এদের মধ্যে প্রথাগত ভাবে শিক্ষিতের সংখ্যা বিপুল।
২০ আগস্ট রাত ১০টা নাগাদ প্রথম ফোন করে আমার প্রতিক্রিয়া জানতে চান ‘স্টার নিউজ’-এর প্রতিনিধি। ১০টা ১৫-তে আমাকে ফোনে ধরলেন স্টার-আনন্দ’-এর প্রতিনিধি। তার সঙ্গে আমার ফোনের কথােপকথন প্রচারিত হলাে। বললাম, ১১ বছর আগের অভিজ্ঞতার কথা। জানালাম, গনেশ বা অন্য দেবমূর্তির দুধপানের মধ্যে অলৌকিক কিছু নেই। আপনাদের তােলা যে ছবি দেখাচ্ছেন, তাতে দেখা যাচ্ছে সমস্ত দুধই শ্বেতপাথরের দেবমুর্তির গা বেয়ে নেমে যাচ্ছে। মুর্তির তলা বেয়ে সিঁড়ি পর্যন্ত ভেসে যাচ্ছে দুধে। ভক্তরা দুধভরা চামচ ধরছেন মূর্তির ভেজা গুঁড়ে বা ঠোটে। শুড়ের বা ঠোটের একটি জলবিন্দু চামচের দুধকে আকর্ষণ করছে। এটা তরল পদার্থের ধর্ম। তারপর মাধ্যাকর্ষণের পৃষ্ঠটানে আকর্ষিত হয়ে দুধের কিছুটা ভেঁজা শরীর বেয়ে নেমে যাচ্ছে তলায়। ওমনি ভক্তরা চামচাকে বেশি করে হেলিয়ে ধরছেন। চামচের দুধ যতই কমতে থাকে, ততই চামচ আরও বেশি করে হেলিয়ে ধরেন ভক্তরা। ভক্তি থেকে অবচেতন মন চামচে হেলাতে শুরু করতেই পারে। এটা খুবই স্বাভাবিক মানসিক প্রতিক্রিয়া। আবার কেউ নিজেকে জাহির করতে ইচ্ছে করেও হেলাতে পারে।
সেদিন রাতেই আনন্দবাজারের প্রতিনিধি এ বিষয়ে আমার সাক্ষাৎকার নিলেন। পরদিন ভােরে আমাকে ঘুম থেকে তুললেন ‘স্টার আনন্দ। ফোনে সাক্ষাৎকার। বললাম, যে পদার্থ যত বেশি, তরল অর্থাৎ সান্দ্রতা বেশি, সে-পদার্থকে তত বেশি তাড়াতাড়ি আকর্ষণ করবে দেবমূর্তির শরীরে লেগে থাকা তরলবিন্দু। কেরসিন থেকে হুইস্কি, ফলিড়ল থেকে সাবানজল দেবতারা সব পান করবে। শুধু খেতে পারবে না লাড়ু, পেঁড়া, আপেল এইসব না-তরল পদার্থ। | ২১ আগস্ট দুপুরে স্টার আনন্দ’-এর ঋতব্রত এলেন। সঙ্গে ফটোগ্রাফার। ওদের কাজ শেষ করেই তারা’-র ওবি ভ্যানের সঙ্গে মন্দির পরিক্রমা শুরু করলাম। ‘তারা’র প্রতিনিধি অয়নদেবের এক প্রশ্নের উত্তর জানালাম, যেসব পদার্থ বিজ্ঞানী বলেছেন, কঁচ, চিনেমাটি, ধাতুর তৈরি মূর্তি দুধপান করবে না; তারা যদি হাতে কলমে পরীক্ষা করতেন তাে দেখতেন ওইসব ধাতুমূর্তিও দুধ খায়। ওঁদের বক্তব্য ছিল, যে-সব মূর্তির গায়ে খালি চোখে দেখা যায় না, এমন ছােট ছােট ছিদ্র থাকে, তারাই শুধু দুধপান করে। এটা দুধপানের অন্যতম শর্ত। ছিদ্রগুলােতে দুধ ঢুকে যায়, তাইতেই চামচের দুধ কমে। ছিদ্রগুলাে দুধে ভর্তি হয়ে গেলে মূর্তি খাওয়া বন্ধ করে। আমি দেখালাম চিনেমাটির মূর্তি থেকে ধাতুর মূর্তিও দুধপান করছে হৈ-হৈ করে। | রাতে এখন বাংলা এবং তারপর তারা’র স্টুডিওতে হাজির হলাম। সেখানে সঞ্চালক ও দর্শকদের প্রশ্নের উত্তরের ফাকে ফাকে দেখাতে হলাে, ঘােড়া থেকে সাপ সব্বাই দুধ, ঠাণ্ডা পানীয়, কেরসিন—সব পান করছে। খাচ্ছে না শুধু আপেল-আঙুর।
দেবমূর্তিরা যখন ‘দুধপান’-এ বাস্ত, তখনই আরব সাগরের জল মিষ্টি হয়ে গেছে—গুজবে সারা মুম্বাই নাচলাে। সুফি সন্ত মকদুম শাহের কৃপায় নাকি এমনটা ঘটেছে। সর্বরােগহর এই মিষ্টি জল বােতলবন্দি করতে হুড়ােহুড়ি পড়ে গেল। লবণাক্ত সমুদ্রের জলে লবণের পরিমাণ কমে সাদা জল (plain water) হয়ে যায় জলে ফ্লোরাইড ও ক্লোরাইডের যৌগ বৃদ্ধি হলে। এই প্রাকৃতিক ঘটনার মধ্যে অপ্রাকৃতিক ঘটনাকে আবিষ্কার করার মতাে অপ্রকৃতিস্থ শিক্ষিত মানুষের আজও অভাব ঘটেনি ভারতে।
মােবাইল ভূত থেকে লাইট ভূতের আঁচড়ে দেওয়ার মত ঘটনায় পশ্চিমবঙ্গ তােলপাড় হয়। ভূতের ভয়ে বর্ধমানের ‘বেনাগ্রাম’-এর সব মানুষ গ্রাম ছেড়ে পালায়। |
এতসব তােলপাড় করা ঘটনা দেখে মনে হয় ভারতের শিক্ষিতরা কি মধ্যযুগের দিকে ফিরছেন? এতসব অলৌকিক কাণ্ডকারখানাগুলাে সবই কি আকস্মিক? নাকি এটাই মুখ’-ভারতের ধারাবাহিকতা?
মানুষ ও দেবতা।
এককালে অসহায় মানুষ প্রকৃতির শক্তিকে ভয় ও শ্রদ্ধা করেছে। জল, ঝড়, বৃষ্টি, নদী, সমুদ্র, বন্যা, আগুন, পাহাড়-পর্বত, মাটি সমস্ত কিছুরই প্রাণ আছে বলে বিশ্বাস করেছে, বসিয়েছে দেবত্বের আসনে। সুর্য, চন্দ্র, পৃথিবী, বৃহস্পতি, শনি প্রভৃতি জড় নক্ষত্র ও গ্রহগুলাের পুজো করেছে জীবন্ত দেবতা হিসেবে। মানুষের জীবনে সম্পদ হিসেবে প্রবেশ করেছে বৃক্ষ, অরণ্য, গরু, ছাগল, শুয়াের আরও নানা ধরনের গৃহপালিত জন্তু। এরাও দেবতা হিসেবে পুজো পেয়েছে। শিক্ষা ও বিজ্ঞানের অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গে অনেক মানুষের কাছেই এইসব দেবতারা দেবত্ব হারালেও সবার কাছে হারায়নি। | প্রাচীন মানুষ জীবাণুর অস্তিত্ব সম্বন্ধে জ্ঞাত না থাকার দরুন অসুখকে কখনও বলেছে পাপের ভােগ, কখনও বা বলেছে অশুভ শক্তির ফল। তন্ত্র-মন্ত্র, মাদুলি, যাগ-যজ্ঞ, জলপড়া, তেলপড়া, ঝাড়ফুঁক, স্বপ্নদিষ্ট ওষুধ রােগের চিকিৎসা হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে। আজও এই ধরনের চিকিৎসা পদ্ধতি অনুন্নত দেশে এবং কিছু কিছু পিছিয়ে থাকা সম্প্রদায়ের মধ্যে প্রচলিত রয়েছে। রােগ না সারলে কারণ হিসেবে কাউকে ডাইনি ঘােষণা করে হত্যা করার ইতিহাস ক্ষীণতর হলেও স্তব্ধ হয়নি। | মানুষ গােষ্ঠীবদ্ধ হয়েছে। গােষ্ঠীর শক্তিমান ও বুদ্ধিমানকে বরণ করেছে নেতার পদে। শক্তিমান হয়েছে শাক, বুদ্ধিমান হয়েছে ধর্মীয় নেতা। ধর্মীয় নেতারা বুদ্ধির জোরে শাসকদের ওপরও প্রভুত্ব করতে চেয়েছে। নিজেদের ঘােষণা করেছে ঈশ্বরের প্রেরিত দূত হিসেবে, ঈশ্বরের সন্তান হিসেবে, নবরূপে ঈশ্বর হিসেবে। বিভিন্ন কৌশল সৃষ্টি করে সেইসব কৌশলকে সাধারণের সামনে হাজির করেছে অলৌকিক ক্ষমতা হিসেবে। নিজেদের এইসব অলৌকিক কীর্তিকথা প্রচারের জন্য কখনও সাহায্য নিয়েছে কিছু সুবিধাভােগী সম্প্রদায়ের, কখনও বা কিছু অন্ধ বিশ্বাসীদের। পরবর্তীকালে সেইসব অলৌকিক কীর্তিকথার কিছু কিছু পল্লবিত হয়ে কিংবদন্তিতে পরিণত হয়েছে। এই সব ধর্মগুরুরা নিজস্ব ধারণাগুলােকে ঈশ্বরের মত বলে প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছে এবং অনেক ক্ষেত্রে সফলও হয়েছে, যদিও পরবর্তীকালে বিজ্ঞানের অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গে এইসব অভ্রান্ত ঈশ্বরের মতগুলাে একে একে ভ্রান্ত বলে প্রমাণিত হয়েছে।
ধর্মীয় শাসকেরা যে-সব ধর্মগ্রন্থ রচনা করে গেছে, সেগুলাে বিভিন্ন ধর্মে বিশ্বাসী মানুষেরা অভ্রান্ত সত্য হিসেবেই গ্রহণ করেছে। যুক্তি দিয়ে বিচার না করেই সংখ্যাগুরু মানুষ যুগ যুগ ধরে মেনে চলেছে ধর্মীয় ধারণাগুলােকে। শাসক সম্প্রদায় ও পুরােহিত সম্প্রদায় পরস্পরের সহযােগী ও পরিপূরক হয়ে শােষণ করেছে অন্ধ-বিশ্বাসী সাধারণ মানুষদের।
বিশ্বের বহু দেশেই বর্তমান শিক্ষা ব্যবস্থায় শিশুমনেই রােপিত হচ্ছে অবাস্তব অলৌকিক ধ্যান-ধারণার বীজ। দেব-দেবী ও সাধক-সাধিকাদের মনগড়া অলৌকিক কাহিনি পড়ে ও শুনে যে বিশ্বাস শিশু মনে অঙ্কুরিত হচ্ছে, তাই পরিণত বয়সে বিস্তার লাভ করছে বৃক্ষরূপে।
যুক্তিবাদী, মুক্তচিন্তার সেইসব মানুষ খ্রিস্টজন্মের ৫০০ বছর আগে পিথাগােরাস, এনাকু, সিমেণ্ডের মতাে গ্রীক অনুসন্ধিৎসু পণ্ডিতেরা জানিয়েছিলেন, পৃথিবী সূর্যের একটি গ্রহ, সূর্যকে ঘিরে পৃথিবী ও অন্য গ্রহগুলাে ঘুরছে। বিনিময়ে ধর্ম-বিরােধী, ঈশ্বর-বিরােধী, নাস্তিক মতবাদ প্রকাশের অপরাধে এঁদের বরণ করতে হয়েছিল অচিন্তনীয় নির্যাতন, সত্যের ওপর অসত্যের নির্যাতন, ধর্মের নির্যাতন। |
এই মতকে ২০০০ বছর পরে পুস্তকাকারে তুলে ধরলেন পােল্যাণ্ডের নিকোলাস কোপারনিকাস। তারই উত্তরসুরি হিসেবে এলেন ইতালীর জিয়াের্দাননা ব্রুনাে, গ্যালিলিও গ্যালিলেই। প্রতিষ্ঠা করতে চাইলেন বৈজ্ঞানিক সত্যকে—সূর্যকে ঘিরে আবর্তিত হচ্ছে পৃথিবীসহ গ্রহগুলাে।
ব্রুনাে
সে-যুগের শিক্ষাক্ষেত্রেও ছিল প্রচণ্ড ধর্মীয় প্রভাব। ধর্মীয় বিশ্বাসকেই অভ্রান্ত বলে মেনে নিয়ে শিক্ষা দেওয়া হতাে। সাধারণের মধ্যেও ধর্মান্ধতা ছিল গভীর ও ব্যাপ্ত। বাইবেল-বিরােধী মত প্রকাশের জন্য মহামান্য পােপ ক্ষিপ্ত হলেন, ক্ষিপ্ত হলাে ধর্মর্যাজক ও ধর্মান্ধ মানুষগুলাে। ব্রুনাে বন্দি হলেন। ধর্ম-বিরােধী মত পােষণের অপরাধে ব্রুনােকে আটকে রাখা হয়েছিল এমন এক ঘরে, যার ছাদ ছিল সীসেতে মােড়া। গ্রীষ্মে ঘর হতাে চুল্লি, শীতে বরফ। এমনি করে দীর্ঘ আট বছর ধরে তার উপর চলেছে ধর্মীয় নির্যাতন।
গ্যালিলিও গ্যালিলেই
১৬০০ খ্রিস্টাব্দে পবিত্র ঈশ্বর-প্রেমীরা তথাকথিত সত্যের পূজারিরা ব্রুনােকে শেষবারের মতাে তাঁর মতবাদকে ভ্রান্ত বলে স্বীকার করতে বলল। অসীম সাহসী। ব্রুনাে সেই প্রস্তাব প্রচণ্ড ঘৃণার সঙ্গে প্রত্যাখ্যান করলেন। বাইবেল বিরােধী অসত্য ভাষণের জন্য ব্রুনােকে প্রকাশ্য স্থানে জীবন্ত পুড়িয়ে মারা হলাে। অনুমান করে নিতে অসুবিধে হয় না, সেদিনের দর্শক হিসেবে উপস্থিত মূখ জনতা লেলিহান আগুনে এক সত্যের পূজারিকে ধ্বংস হতে দেখে যথেষ্ট উল্লসিত হয়েছিল। গ্যালিলিও গ্যালিলেইকেও ধর্মান্ধদের বিচারে অধার্মিক ও অসত্য মতবাদ প্রচারের অপরাধে জীবনের শেষ আট বছর বন্দি জীবন কাটাতে হয়েছে।
কিন্তু এত করেও সর্বশক্তিমান ঈশ্বর ও ঈশ্বরের পুত্রেরা সূর্যের চারপাশে পৃথিবীর ঘােরা বন্ধ করতে পারেনি। খ্রিস্টজন্মের প্রায় ৪৫০ বছর আগে আনাক্সাগােরাস বলেছিলেন, চন্দ্রের গ্যালিলিও গ্যালিলেই নিজস্ব কোনও আলাে নেই। সেইসঙ্গে আরও বলেছিলেন, চন্দ্রের হ্রাস-বৃদ্ধির কারণ। চন্দ্রগ্রহণের কারণও তিনি ব্যাখ্যা করতে সমর্থ হয়েছিলেন। আনাক্সাগােরাসের আবিষ্কারের প্রতিটি সত্যই ছিল সেদিনের ধর্ম-বিশ্বাসীদের চেখে জঘন্য রকমের অসত্য। ঈশ্বর বিরােধিতা, ধর্ম বিরােধিতা ও অসত্য প্রচারের অপরাধে দীর্ঘ ও নিষ্ঠুর নির্যাতনের পর তাঁকে দেশ থেকে নির্বাসিত করা হয়। | এত করেও কিন্তু সেদিনের ঈশ্বরের পুত্রেরা সত্যকে নির্বাসনে পাঠাতে পারেনি। তাদের ঈশ্বরের অভ্রান্ত বাণীই আজ শিক্ষিত সমাজে নির্বাসিত।
ঘােড়শ শতকে সুইজারল্যান্ডের বেসেল বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়নশাস্ত্র ও ভেষজবিদ্যার অধ্যাপক ডাক্তার ফিলিস অ্যাউরেওলাস প্যারাসেলসাস ঘােষণা করলেন—মানুষের অসুস্থতার কারণ কোনও পাপের ফল বা অশুভ শক্তি নয়, রােগের কারণ জীবাণু। পরজীবী এই জীবাণুদের শেষ করতে পারলেই নিরাময় লাভ করা যাবে।
প্যারাসেলসাস-এর এমন উদ্ভট ও নতুন তত্ত্ব শুনে তাবৎ ধর্মের ধারক-বাহকেরা ‘রে-রে’ করে উঠলেন। এ কী কথা! রােগের কারণ হিসেবে ধর্ম আমাদের যুগ যুগ ধরে যা বলে এসেছে, তা সবই ওই একজন উন্মাদ অধ্যাপকের কথায় মিথ্যে হয়ে যাবে? শতাব্দীর পর শতাব্দী পবিত্র ধর্মনায়কেরা যা বলে গেছেন, ধর্মগ্রন্থগুলােতে যা লেখা রয়েছে লক্ষ-কোটি মানুষ যা বিশ্বাস করে আসছে, সবই মিথ্যে? সত্যি শুধু প্যারাসেলসাস-এর কথা?
সমাজের পক্ষে ক্ষতিকারক ধর্ম-বিরােধী মতবাদ প্রচারের জন্য প্যারাসেলসাসকে হাজির করা হলাে ‘বিচার’ নামের এক প্রহসনের মুখােমুখি। ধর্মান্ধ বিচারকরা প্যারাসেলসাসকে ঈশ্বর প্রণীত অভ্রান্ত সত্যকে অসত্য বলার অপরাধে মৃত্যুদণ্ড দিল। প্যারাসেলসাস সেদিন নিজের জীবন বাঁচাতে প্রিয় জন্মভূমি ছেড়ে পালাতে বাধ্য হয়েছিলেন।
সেদিনের ধর্মীয় সত্য আজ বিজ্ঞানের সত্যের কাছে পিছু হটতে বাধ্য হয়েছে। মিথ্যে হয়ে গেছে ধর্মের ধারণা, ঈশ্বরের বাণী। হিন্দু ধর্মের ধারণায় ব্রহ্মা তাঁর শরীরের এক একটি অঙ্গ থেকে এক এক শ্রেণির জীব সৃষ্টি করেছেন। এমনি করেই একদিন সৃষ্টি হয়েছিল মানব, মানবীর। বিশ্ব-ব্রহ্মাণ্ডের তাবত জীব ব্রহ্মারই সৃষ্টি বলে হিন্দু ধর্ম বিশ্বাসীরা মনে করেন। খ্রিস্টীয় মতে কিন্তু বিশ্ব-ব্রহ্মাণ্ডের তাবৎ জীবের স্রষ্টা পরমপিতা জিহােবা। পরমপিতা এক জোড়া করে বিভিন্ন প্রাণী সৃষ্টি করে ছেড়ে দিয়েছিলেন পৃথিবীর বুকে। এমনি করেই একদিন জিহােবা সৃষ্টি করেছিলেন এক জোড়া মানুষ—আদম ও ঈভ।
বিভিন্ন প্রাণী বা মানুষের উৎপত্তির কোনও ধর্মীয় ধারণাই আজ আর বিজ্ঞান শিক্ষিত মানুষের কাছে গ্রহণযােগ্য নয়, আজ আমরা জানতে পেরেছি, কোনও প্রাণীই ঈশ্বরের দ্বারা সৃষ্ট হয়ে হঠাৎ করে পৃথিবীর বুকে আবির্ভূত হয়নি। হাজির হয়েছে কোটি কোটি বছরের দীর্ঘ বিবর্তনের মধ্য দিয়ে। | আধুনিক জীবাশ্ম বিজ্ঞানীদের মতে পৃথিবীতে জীবনের প্রথম বিকাশ ঘটে আজ থেকে প্রায় সাড়ে তিনশ’ কোটি বছর আগে অর্থাৎ, পৃথিবীর জন্মের একশ' কোটি বছর পরে। জীব-বিজ্ঞানের ভাষায় তাদের বলা হয় প্রােকারিয়টস' (prokaryotes)জীবাণুবিশেষ প্রাণী। তাদের ধরনধারণটা ছিল কতকটা আধুনিক ব্যাকটিরিয়ার মতাে। এক একটি জীবকোষ এক একটি প্রাণী। এই জীবকোষে নিউক্লিয়াসের মতাে সুস্পষ্ট কোনও অঙ্গ ছিল না। এই এককোষী প্রাণীই বিবর্তনের মধ্য দিয়ে ধীরে ধীরে বিকশিত হয়ে উঠল বহুকোষী প্রাণীতে। দীর্ঘ পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে সৃষ্টি হয়েছে বর্তমানের প্রতিটি শ্রেণীর প্রাণী এবং মানুষও তার বাইরে নয়।
প্রাণের উৎস চারটে জিনিস। এক: এক ধরনের কিছু প্রােটিন, যাকে বিজ্ঞানের পরিভাষায় বলা হয় নিউক্লিয়ােটাইড’ (Nucleotide)! দুই: কিছু অ্যাসিড, বিজ্ঞান যার নাম দিয়েছে ‘নিউক্লিক অ্যাসিড’ (Nucleic acid)। তিন: বিশেষ তাপমাত্রা, চার: বিশেষ পরিবেশগত চাপ। এই চারটি জিনিসের মিলনে সৃষ্টি হয়েছিল প্রাণ।
ডারউইন
পৃথিবীর জন্ম থেকেই নিউক্লিয়ােটাইড ও নিউক্লিক অ্যাসিডের অস্তিত্ব পৃথিবীতে ছিল। বিভিন্ন সময় এরা মিলিতও হয়েছে, কিন্তু পরিবেশগত চাপ ও তাপের অভাবে প্রাণ সৃষ্টি হয়নি। পৃথিবী সৃষ্টির প্রায় একশাে কোটি বছর পরে পৃথিবী একটা চরম অবস্থার মধ্যে ছিল। প্রতিনিয়ত প্রচণ্ড ঝড়, বৃষ্টি, বজ্রপাত, আগ্নেয়গিরির অগ্নৎপাত, ভুমিকম্পের ফলে অশান্ত পৃথিবীতে যে পরিবেশগত তাপ ও চাপ সৃষ্টি হয়েছিল, তারই মধ্যে হঠাৎ একসময় নিউক্লিয়ােটাইড ও নিউক্লিক অ্যাসিড মিলিত হয়ে সৃষ্টি করেছিল প্রাণ।
প্রাণীদের ক্রমবিবর্তনের ইতিহাস প্রথম তুলে ধরেছিলেন চার্লস ডারউইন। দীর্ঘ বছরগুলাের অক্লান্ত পরিশ্রমে ডারউইন সৃষ্টি করলেন তার সনাতন ধর্ম-বিরােধী সৃষ্টি ও বিবর্তন তত্ত্ব।
বিভিন্ন জীবাশ্মের আবিষ্কার ও তাদের প্রাচীনত্ব নির্ণয় করে বিজ্ঞান ডারউইনের বিবর্তন তত্ত্বের হারানাে সুত্র বা ‘মিসিং লিংক’কে জোড়া লাগিয়ে সম্পূর্ণ রূপ দিল।
ডারউইন যদিও ডারউইন ছিলেন গত শতকের মানুষ, তবু তাকে ধর্মান্ধদের হাতে অত্যাচারিত হতে হয়েছে প্রায় মধ্যযুগীয় প্রথায়। প্রাচীন অতীতে মানুষ দরিয়ায় নৌযান ভাসাতে শিখল। দিক নির্ণয়ের জন্য অনুভব করলাে নক্ষত্র চেনার প্রয়ােজনীয়তা। কেবলমাত্র অনুন্নত গণিত শাস্ত্রের উপর নির্ভর করে সীমিত জ্ঞান নিয়ে মানুষ গ্রহ, নক্ষত্রের বিষয়ে যা জেনেছিল তাতে অনেক ক্ষেত্রেই ছিল অসম্পূর্ণতা ও ভ্রান্ত ধারণা আর্যভট্ট, ভাস্কর, হিপার্কস-এর জ্যোতিষচর্চায় গণিত থাকলেও টেলিস্কোপের অভাবে পুরােপুরি বিজ্ঞান ছিল না। অর্থাৎ সেই সময়কার জ্যোতির্বিদ্যা বিজ্ঞানের পর্যায়ে উন্নত হতে পারেনি। বরাহমিহির থেকে টলেমির মত আকাশ পর্যবেক্ষকদের জন্যে তখন জ্যোতির্বিদ্যা (Astronomy) ও ফলিত জ্যোতিষ-এর (Astrology) মধ্যে স্পষ্ট পার্থক্য ছিল না। বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখার উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে আবিষ্কৃত হলাে দূরবীক্ষণ, উন্নত হলাে গণিত শাস্ত্র। বহু পরীক্ষা-নিরীক্ষার মধ্য দিয়ে বিজ্ঞানরূপে প্রতিষ্ঠিত হলাে বর্তমান জ্যোতির্বিদ্যা। পরিত্যক্ত হলাে ফলিত জ্যোতিষ বা জ্যোতিষশাস্ত্ররূপে অ-বিজ্ঞান। উন্নত দেশগুলাের সংখ্যাগুরু মানুষ আজ বুঝতে শিখেছেন, মানুষের সুখ-দুঃখের হেতু আকাশের গ্রহগুলাের মধ্যে নিহিত নেই, রয়েছে আমাদের সৃষ্ট সমাজ ব্যবস্থার মধ্যে। বিশ্বের খ্যাতিমান ১৮৬ জন যুক্তিবাদী বিজ্ঞানী (এঁদের মধ্যে ১৮ জন নােবেল বিজয়ী) ১৯৭৫-এর সেপ্টেম্বরে নিউ ইয়র্কের ‘দি হিউম্যানিস্ট পত্রিকায় এক ইস্তাহারে বলেছিলেন, “আমরা অত্যন্ত বিচলিত, কারণ বিভিন্ন প্রচারমাধ্যম, নামী সংবাদপত্র, বিভিন্ন পত্র-পত্রিকা ও পুস্তক প্রকাশক পর্যন্ত ঠিকুজী-কোষ্ঠী, রাশিবিচার, ভবিষ্যদ্বাণীর পক্ষে ক্রমাগত প্রচার চালিয়ে যাচ্ছেন। যেখানে যুক্তি-বিচারের কোনও স্থান নেই। এতে মানুষের মধ্যে অযৌক্তিক ধ্যান-ধারণা অন্ধ বিশ্বাস বেড়েই যায়। আমরা বিশ্বাস করি, জ্যোতিষীদের ভণ্ডামির বিরুদ্ধে সরাসরি দৃঢ়ভাবে চ্যালেঞ্জ জানানাে সময় এসেছে।” মজার কথা, বিজ্ঞানীরা যখন চ্যালেঞ্জ জানানােকে স্বাগত জানাচ্ছেন, একান্ত প্রয়ােজনীয় সামাজিক কর্তব্য বলে মনে করছেন এবং তাদের আহ্বানের সঙ্গে সহমত হয়ে ভারতীয় বিজ্ঞান ও যুক্তিবাদী সমিতি সরাসরি চ্যালেঞ্জ জানিয়ে প্রথম সারির নামী-দামী বহু সংখ্যক জ্যোতিষীদের পরাজিত, পর্যদস্ত করেই চলেছে তখন পরাজিত পর্যুদস্ত জ্যোতিষীসহ অনেক জ্যোতিষীই বিজ্ঞান-সম্মত উপায়ে ভাগ্য গণনার বিজ্ঞাপন দিয়ে চলেছে। ফলিত জ্যোতিষের মতাে অ-বিজ্ঞানকে হাতিয়ার করে জেনে বুঝে লােক ঠকিয়ে চলেছে। আমরা কোথায় আছি
আমাদের মতাে সামাজিক ও অর্থনৈতিক দিক দিয়ে পিছিয়ে পড়া সংস্কারবদ্ধ দেশে পদে পদে যেখানে অনিশ্চয়তা সেখানে বেশির ভাগ সাধারণ মানুষ দুঃখ-কষ্টের হাত থেকে পরিত্রাণ পেতে প্রতিকারের একমাত্র ধ্বজাধারী জ্যোতিষী বা অবতারদের দ্বারস্থ হবেন, এটাই স্বাভাবিক।
মেঘনাদ সাহা
বিজ্ঞানের উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে ধর্মীয় ভ্রান্ত ধারণাগুলাে একে একে পচা-গলা অঙ্গের মতােই খসে খসে পড়ছে। শিক্ষা ও বিজ্ঞানের সঙ্গে সঙ্গে বিজ্ঞানমনস্ক মানসিকতাও একটু একটু করে গড়ে উঠছে। তবুও এ-কথা অস্বীকার করার উপায় নেই যে, অনুন্নত দেশের তুলনায় অনেক কম হলেও উন্নততর। দেশেও অবৈজ্ঞানিক, যুক্তিহীন, ভ্রান্ত ধর্মীয় ধারণাগুলাে এখনও বর্তমান।
শ্রদ্ধেয় বিজ্ঞানী মেঘনাদ সাহার বক্তব্য মেঘনাদ সাহা থেকে আমরা জানতে পারি তার সংগৃহীত তথ্য অনুসারে সে সময়ে আমাদের দেশের শতকরা ৯৯ ভাগ পুরুষ ও শতকরা ১০০ ভাগ মহিলা ফলিত জ্যোতিষে বিশ্বাসী। ইউরােপে ফলিত জ্যোতিষে পুর্ণ আস্থাবান পুরুষের সংখ্যা শতকরা ৫ এবং মহিলার সংখ্যা শতকরা ৩৩ জন।
এই পরিসংখ্যান থেকে অনুমান করতে অসুবিধে হয় না, যুক্তিহীন কুসংস্কার ভারতীয় সমাজে কেমনভাবে জগদ্দল পাথরের মতাে চেপে বসে রয়েছে। অতি দুঃখের কথা এই যে, প্রতিটি দেশ যখন বিভিন্ন বিষয়ে উন্নতিকে দ্রুততর করতে চাইছে, তখন আমরা অতীত সংস্কৃতির দোহাই দিয়ে সনাতন সংস্কারের আবর্তে থাকতে চাইছি।
এ-যুগের অনেকেই বিজ্ঞান নিয়ে পড়াশুনাে করলেও বা
বিজ্ঞানের কোনও বিভাগকে পেশা হিসেবে গ্রহণ
করলেও মনে-প্রাণে বিজ্ঞানী হতে পারেননি,
পারেননি বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গিকে
গ্রহণ করতে।
এঁরা প্রায়শই একদিকে যুক্তিহীন ধর্মীয় ধ্যান-ধারণাগুলােকে আঁকড়ে ধরে রেখেছেন, আর এক দিকে লেখাপড়ায় সুপুত্র হয়ে ডাক্তারি বা ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ করে ছাত্র-জীবনে ছেদ টেনেছেন, অথবা বিজ্ঞানের অন্য কোনও বিভাগে সাফল্যের সঙ্গে উত্তীর্ণ হয়ে কর্মজীবনে আর্থিক সফলতা পেয়েছেন। আমার এক পরিচিত এক ডাক্তারকে দেখেছি, একটা স্ট্রোক হওয়ার পর তার হাতে ও গলায় একাধিক মাদুলী শশাভা পাচ্ছে। | আমার এক পরিচিত বিজ্ঞান পেশার প্রতিবেশীকে জানি, যাঁর পালিয়ে যাওয়া কিশােরী কন্যাটিকে ফেরত পাওয়ার জন্য ঈশ্বরের কাছে মানত করেছিলেন। এক কেমিস্ট্রির অধ্যাপককে জানি, যিনি বিশ্বাস করেন, তার গুরুদেব মাধ্যাকর্ষণ শক্তিকে উপেক্ষা করে ধ্যানে শুনাে ভেসে থাকতে পারেন। | বর্তমানের নামী-দামি অবতারদের জীবনী পড়লে বিজ্ঞান শিক্ষায় শিক্ষিত অনেকেরই নাম পাবেন, যাঁরা এই সব অবতারদের অলীক অলৌকিক ক্ষমতার পক্ষে মত প্রকাশ করেছেন। তাঁরা এই সব মত প্রকাশ করেছেন কখনও অন্ধবিশ্বাসে, কখনও বা অলৌকিক (?) ঘটনাটির পিছনে লুকোনাে বাস্তব কারণ বুঝতে না পারার দরুন। অহংবােধের ফলে এইসব শিক্ষিত মানুষ একবারও ভাবতে পারেন না, তাদের বােধশক্তির বাইরেও যুক্তিগ্রাহ্য কারণ থাকতে পারে। বিশ শতকের শেষ মাথায় এসেও ভারতবর্ষের শিক্ষিত, বিজ্ঞান-শিক্ষিত, মাকর্সবাদে-দীক্ষিত অনেকেই যুক্তিহীন, অবৈজ্ঞানিক চিন্তাধারা বহন করে চলেছেন। | সমাজে প্রতিষ্ঠিত শিক্ষিত অথচ যুক্তিহীন মানুষের তালিকা দিতে গেলে একটা ছােট-খাটো বই হয়ে যাবে। কিছু কিছু বিজ্ঞান-পেশার ব্যক্তি আছেন, যাঁরা তাঁদের আজন্ম লালিত ধর্মীয় ধারণাগুলােকে বিজ্ঞানের কাছে নতজানু হতে দেখে ধর্মতত্ত্ব প্রতিষ্ঠিত এবং অতীন্দ্রিয়তার অস্তিত্ব প্রমাণের জন্য মিথ্যা ও শঠতার আশ্রয় নিতে পিছ-পা নন। ধর্মতত্ত্ব ও অতীন্দ্রিয়তাকে বিজ্ঞানসম্মত বলে প্রচার করার অক্লান্ত চেষ্টা করে চলেছেন পরামনােবিজ্ঞানী (Para-psychologist) নামের অ-মনােবিজ্ঞানীরা। আজ পর্যন্ত তাদের এই চেষ্টা শুধুমাত্র প্রচারের স্তরেই রয়ে গেছে, পরামনােবিদ্যা প্রকৃতিবিজ্ঞানের মর্যাদা পায়নি। পরামনােবিজ্ঞানীরা প্রকৃতিবিজ্ঞানের (মেথডলজি) অনুসরণ করে বিজ্ঞানের দরবারে অতীন্দ্রিয় ক্ষমতা, প্ল্যানচেট, জাতিস্মর মানুষের অস্তিত্ব প্রমাণের জন্য নানাধরনের কূট কৌশলের আশ্রয় নিয়েছেন। যদিও সেইসব কৌশলের একটিও বিজ্ঞানের দরবারে প্রতিষ্ঠিত হয়নি। গ্রহণযােগ্য হয়নি কোনও যুক্তিবাদী মানুষের কাছে। কারণ, পরামনােবিজ্ঞানীদের দেওয়া প্রতিটি পরীক্ষার ক্ষেত্রেই ছিল কৌশল গ্রহণের সুযােগ। ভারতীয় সমাজকে কুসংস্কারের অন্ধকার থেকে বিজ্ঞানের আলােতে আনার জন্য যখন বুদ্ধিজীবী ও যুক্তিবাদীদের প্রয়ােজন সবচেয়ে বেশি, তখন এক শ্রেণির কুসংস্কারাচ্ছন্ন বুদ্ধিজীবী মানুষই অতীন্দ্রিয়তাকে, অবতারবাদকে, জন্মান্তরকে, জ্যোতিষশাস্ত্রকে প্রতিষ্ঠিত করে প্রগতির চাকাকে উলটো দিকে ঘােরাতে চাইছেন। শিক্ষার ডিগ্রিধারী সংস্কারবদ্ধ মানুষ, অবতারদের কৌশলকে ব্যাখ্যা করতে না পারা সমাজে প্রতিষ্ঠা পাওয়া আত্মগর্বী মানুষ, কৌশলে অতীন্দ্রিয়তাকে প্রতিষ্ঠা করতে চাওয়া বিজ্ঞান শাখার মিথ্যাচারী মানুষগুলােই আজকের সমাজে যুক্তিবাদী ও বিজ্ঞানমনস্ক মানুষগড়ার কাজে সবচেয়ে বড় বাধা।
আমাদের দেশে স্বল্প শিক্ষিত, ডিগ্রিহীন, সংস্কারমুক্ত, যুক্তিবাদী, স্বচ্ছ বৈজ্ঞানিক মানসিকতার মানুষ আমি দেখেছি। আবার একই সঙ্গে দেখেছি যুক্তিবাদী’, বিজ্ঞানমনস্ক এবং সংগ্রামী বলে স্ব-বিজ্ঞপিত কিছু সমাজশীর্ষ মানুষের ঈর্ষার নানা রূপ। ঈর্ষা তাঁদের কখনও নিয়ােজিত করছে যুক্তিবাদী মানুষের সংস্কারমুক্তির সংগ্রামের বিরুদ্ধে, কখনও বাধ্য করছে। যুক্তিহীনতাকে আশ্রয় করতে।
জানি, প্রতিটি ক্ষেত্রেই শেষ পর্যন্ত অনিবার্যরূপে যুক্তিবাদী মানসিকতা যুক্তিহীনতার বিরুদ্ধে জয়ী হবেই। বিরােধীরা এই জয়কে বিলম্বিত করতে পারে মাত্র, আজ পর্যন্ত স্তব্ধ করতে পারেনি এবং পারবেও না। ইতিহাস অন্তত এই শিক্ষাই দিয়েছে।
অধ্যায় : দুই
অধ্যায় : তেরোঅধ্যায় : চোদ্দ
অধ্যায় : পনের
অধ্যায় : ষোলো
অধ্যায়: সতেরাে
অধ্যায়: আঠারাে
অধ্যায় : উনিশ
‘অলৌকিক' শক্তিধরদের প্রতি চ্যালেঞ্জ
২৫ লক্ষ টাকার চ্যালেঞ্জ
আজ এই বইটি প্রকাশের দিন থেকে আমি প্রবীর ঘােষ, পিতা- মৃত প্রভাতচন্দ্র ঘােষ, নিবাস- ৭২৮ দেবীনিবাস রােড, কলকাতা- ৭০০ ০৭৪ এই বইটির লেখক নিম্নলিখিত ঘােষণা রাখছি- বিশ্বের যে কোনও ব্যক্তি কোনও কৌশলের সাহায্য ছাড়া শুধুমাত্র অলৌকিক ক্ষমতার দ্বারা আমার নির্দেশিত স্থানে ও পরিবেশে নিম্নলিখিত যে কোনও একটি ঘটনা ঘটিয়ে দেখাতে পারেন, তবে তাকে ২৫ লক্ষ ভারতীয় টাকা দিতে বাধ্য থাকব।
আমার এই চ্যালেঞ্জ আমার মৃত্যু পর্যন্ত অথবা প্রথম অলৌকিক ক্ষমতাবানকে খুঁজে না পাওয়া পর্যন্ত বলবত থাকবে।
এই ঘটনাগুলাের যে কোনও একটি অলৌকিক ক্ষমতায় দেখাতে হবে:
১। যােগের সাহায্যে যে কোনও রােগীকে রােগমুক্ত করার কোনও দাবিদার যদি আমার দেওয়া রােগীকে ১ বছরের মধ্যে রােগমুক্ত করতে পারেন।
২। যােগ পদ্ধতির সাহায্যে টাকে চুল গজিয়ে দিতে হবে।
৩। যােগের সাহায্যে পাখির মত শূন্যে উড়ে দেখাতে হবে।
৪। যােগের সাহায্যে সুক্ষ্ম শরীর ধারণ করতে হবে।
৫। যােগের সাহায্যে জরাকে আটকে রাখতে হবে।
৬। যােগের সাহায্যে মৃত্যুকে প্রতিরােধ করে দেখাতে হবে। (ট্রেনে কাটা পড়েও বেঁচে থাকলে বেশ দেখার মতাে ব্যাপার হবে।)৭। রেইকি ক্ষমতায় অথবা অলৌকিক ক্ষমতায় আমার তরফ থেকে হাজির করা রােগীকে ১৮০ দিনের মধ্যে রােগমুক্ত করতে হবে। মৃত্যুর দায় পুরােপুরি বহন করতে হবে রেইকি মাস্টার বা অলৌকিক ক্ষমতার দাবিদারকে।
৮| অচল টেপ রেকর্ডারকে, রেডিওকে রেইকি ক্ষমতার দ্বারা বা অলৌকিক উপায়ে সচল করতে হবে যেমনটা দাবি করে থাকেন কিছু রেইকি গ্র্যান্ডমাস্টার। ৯। ফেংশুই'-এর অভ্রান্ততা প্রমাণ করতে হবে।
১০| বাস্তুশাস্ত্র’-এর সাহায্যে লকআউট কারখানা খুলে লাভের মুখ দেখাতে হবে।
১১। জ্যোতিষশাস্ত্রের সাহায্যে বা অলৌকিক ক্ষমতাবলে আমার দেওয়া দশটি ছক বা হাতের ছাপ দেখে প্রত্যেক ছক বা হাতের অধিকারীর অতীত সম্বন্ধে পাঁচটি করে প্রশ্নের মধ্যে অন্তত চারটি করে সঠিক উত্তর দিতে হবে।
১২। আমার তরফ থেকে হাজির করা ছবির মেয়েটিকে ১৮০ দিনের মধ্যে বশীকরণ করে প্রমাণ করতে হবে ফটো সম্মােহন’-এর অস্তিত্ব।
১৩। আমার দেওয়া কোনও ছেলে বা মেয়েকে সরস্বতী কবচ’ দিয়ে বা অলৌকিক উপায়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম করাতে হবে।
১৪। প্রজাপতি কবচে বা অলৌকিক ক্ষমতায় আমার দেওয়া ছেলে বা মেয়েকে ১৮০ দিনের মধ্যে বিয়ে দিতে হবে।
১৫। আমার তরফ থেকে হাজির করা মামলা জেতাতে হবে।
১৬। তন্ত্রের দ্বারা বা অলৌকিক উপায়ে সন্তানহীনাকে জননী করতে হবে। সন্তানহীনাকে হাজির করব আমি।
১৭। তন্ত্রের দ্বারা বা অলৌকিক উপায়ে যৌন-অক্ষমকে যৌনক্ষমতা দিতে হবে।
১৮| আমার দেওয়া চারজন ভারতবিখ্যাত মানুষের মৃত্যু সময় আগাম ঘােষণা করতে হবে।
১৯। প্ল্যানচেটে আত্মা আনতে হবে।
২০। সাপের বিষ কোনও কুকুর বা ছাগলের শরীরে ঢুকিয়ে দেবার পর তাকে অলৌকিক উপায়ে সুস্থ করতে হবে।
২১। বিষপাথরের বিষশােষণ ক্ষমতা প্রমাণ করতে হবে।
২২। কঞ্চি চালান, বাটি চালানের সাহায্যে চোর ধরে দিতে হবে।
২৩। থালা পড়ার সাহায্যে বিষ নামাতে হবে।
২৪। নখদর্পণ প্রমাণ করে চোর ধরে দিতে হবে।
২৫। চালপড়া খাইয়ে চোর ধরে দিতে হবে।
২৬। যােগবলে শূন্যে ভাসতে হবে।
২৭। যােগবলে ১০ মিনিট হৃদস্পন্দন বন্ধ রাখতে হবে।
২৮। একই সঙ্গে একাধিক জায়গায় আবির্ভূত হতে হবে।
২৯। টেলিপ্যাথির সাহায্যে অন্যের মনের খবর জানতে হবে।
৩০। জলের ওপর হাঁটা।
৩১। এমন একটি বিদেহী আত্মাকে হাজির করতে হবে, যার ছবি তােলা যায়।
৩২। যা চাইব, শূন্য থেকে তা সৃষ্টি করতে হবে।
৩৩। মন্ত্রে দু'ঘণ্টার মধ্যে বৃষ্টি নামাতে হবে।
৩৪। মানসিক শক্তির সাহায্যে কঠিন কোনও বস্তুকে বাঁকাতে হবে বা সরাতে হবে।
৩৫ | অতীন্দ্রিয় ক্ষমতায় আমার বা আমার মনােনীত কোনও ব্যক্তির চালানাে গাড়ি থামাতে হবে।
৩৬। অতীন্দ্রিয় দৃষ্টির সাহায্যে একটি খামে বা বাক্সে রাখা জিনিসের সঠিক বর্ণনা দিতে হবে।
২। যােগ পদ্ধতির সাহায্যে টাকে চুল গজিয়ে দিতে হবে।
৩। যােগের সাহায্যে পাখির মত শূন্যে উড়ে দেখাতে হবে।
৪। যােগের সাহায্যে সুক্ষ্ম শরীর ধারণ করতে হবে।
৫। যােগের সাহায্যে জরাকে আটকে রাখতে হবে।
৬। যােগের সাহায্যে মৃত্যুকে প্রতিরােধ করে দেখাতে হবে। (ট্রেনে কাটা পড়েও বেঁচে থাকলে বেশ দেখার মতাে ব্যাপার হবে।)৭। রেইকি ক্ষমতায় অথবা অলৌকিক ক্ষমতায় আমার তরফ থেকে হাজির করা রােগীকে ১৮০ দিনের মধ্যে রােগমুক্ত করতে হবে। মৃত্যুর দায় পুরােপুরি বহন করতে হবে রেইকি মাস্টার বা অলৌকিক ক্ষমতার দাবিদারকে।
৮| অচল টেপ রেকর্ডারকে, রেডিওকে রেইকি ক্ষমতার দ্বারা বা অলৌকিক উপায়ে সচল করতে হবে যেমনটা দাবি করে থাকেন কিছু রেইকি গ্র্যান্ডমাস্টার। ৯। ফেংশুই'-এর অভ্রান্ততা প্রমাণ করতে হবে।
১০| বাস্তুশাস্ত্র’-এর সাহায্যে লকআউট কারখানা খুলে লাভের মুখ দেখাতে হবে।
১১। জ্যোতিষশাস্ত্রের সাহায্যে বা অলৌকিক ক্ষমতাবলে আমার দেওয়া দশটি ছক বা হাতের ছাপ দেখে প্রত্যেক ছক বা হাতের অধিকারীর অতীত সম্বন্ধে পাঁচটি করে প্রশ্নের মধ্যে অন্তত চারটি করে সঠিক উত্তর দিতে হবে।
১২। আমার তরফ থেকে হাজির করা ছবির মেয়েটিকে ১৮০ দিনের মধ্যে বশীকরণ করে প্রমাণ করতে হবে ফটো সম্মােহন’-এর অস্তিত্ব।
১৩। আমার দেওয়া কোনও ছেলে বা মেয়েকে সরস্বতী কবচ’ দিয়ে বা অলৌকিক উপায়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম করাতে হবে।
১৪। প্রজাপতি কবচে বা অলৌকিক ক্ষমতায় আমার দেওয়া ছেলে বা মেয়েকে ১৮০ দিনের মধ্যে বিয়ে দিতে হবে।
১৫। আমার তরফ থেকে হাজির করা মামলা জেতাতে হবে।
১৬। তন্ত্রের দ্বারা বা অলৌকিক উপায়ে সন্তানহীনাকে জননী করতে হবে। সন্তানহীনাকে হাজির করব আমি।
১৭। তন্ত্রের দ্বারা বা অলৌকিক উপায়ে যৌন-অক্ষমকে যৌনক্ষমতা দিতে হবে।
১৮| আমার দেওয়া চারজন ভারতবিখ্যাত মানুষের মৃত্যু সময় আগাম ঘােষণা করতে হবে।
১৯। প্ল্যানচেটে আত্মা আনতে হবে।
২০। সাপের বিষ কোনও কুকুর বা ছাগলের শরীরে ঢুকিয়ে দেবার পর তাকে অলৌকিক উপায়ে সুস্থ করতে হবে।
২১। বিষপাথরের বিষশােষণ ক্ষমতা প্রমাণ করতে হবে।
২২। কঞ্চি চালান, বাটি চালানের সাহায্যে চোর ধরে দিতে হবে।
২৩। থালা পড়ার সাহায্যে বিষ নামাতে হবে।
২৪। নখদর্পণ প্রমাণ করে চোর ধরে দিতে হবে।
২৫। চালপড়া খাইয়ে চোর ধরে দিতে হবে।
২৬। যােগবলে শূন্যে ভাসতে হবে।
২৭। যােগবলে ১০ মিনিট হৃদস্পন্দন বন্ধ রাখতে হবে।
২৮। একই সঙ্গে একাধিক জায়গায় আবির্ভূত হতে হবে।
২৯। টেলিপ্যাথির সাহায্যে অন্যের মনের খবর জানতে হবে।
৩০। জলের ওপর হাঁটা।
৩১। এমন একটি বিদেহী আত্মাকে হাজির করতে হবে, যার ছবি তােলা যায়।
৩২। যা চাইব, শূন্য থেকে তা সৃষ্টি করতে হবে।
৩৩। মন্ত্রে দু'ঘণ্টার মধ্যে বৃষ্টি নামাতে হবে।
৩৪। মানসিক শক্তির সাহায্যে কঠিন কোনও বস্তুকে বাঁকাতে হবে বা সরাতে হবে।
৩৫ | অতীন্দ্রিয় ক্ষমতায় আমার বা আমার মনােনীত কোনও ব্যক্তির চালানাে গাড়ি থামাতে হবে।
৩৬। অতীন্দ্রিয় দৃষ্টির সাহায্যে একটি খামে বা বাক্সে রাখা জিনিসের সঠিক বর্ণনা দিতে হবে।
চ্যালেঞ্জ গ্রহণকারীদের নিম্নলিখিত শর্তগুলাে মানতে হবে:
১| আমার চ্যালেঞ্জের অর্থ গ্রহণ করুন, বা না করুন, আমার চ্যালেঞ্জ যিনি গ্রহণ করতে ইচ্ছুক, তাকে আমার কাছে, আমার মনােনীত ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের কাছে আমানত হিসেবে কুড়ি হাজার টাকা জমা দিতে হবে। তিনি জিতলে আমার চ্যালেঞ্জের টাকাসহ তার জামানতের টাকাও ফিরিয়ে দেওয়া হবে।
জামানতের ব্যবস্থা রাখার একমাত্র উদ্দেশ্য আমার সময় ও অকারণ শ্রম বাঁচানাে, সেইসঙ্গে যারা শুধুমাত্র সস্তা প্রচারের মােহে অথবা আমাকে অস্বস্তিকর অবস্থার মধ্যে ফেলার জন্য এগােতে চান, তাদের প্রতিহত করা।
২। যাঁর নামে জামানতের অর্থ জমা হবে, একমাত্র তিনিই চ্যালেঞ্জ গ্রহণকারী হিসেবে গণ্য হবেন।
৩। চ্যালেঞ্জ গ্রহণকারী ছাড়া আর কারও সঙ্গে চ্যালেঞ্জ বিষয়ে কোনও রকম আলােচনা চালানাে আমার পক্ষে সম্ভব নয়।
৪। কেবলমাত্র চ্যালেঞ্জ গ্রহণকারী চ্যালেঞ্জ বিষয়ে পরবর্তী আলােচনায় আমার সঙ্গে অথবা আমার মনােনীত ব্যক্তির সঙ্গে বসতে পারবেন বা যােগাযােগ করতে পারবেন।
৫। চ্যালেঞ্জ গ্রহণকারীকে আমার মনােনীত ব্যক্তিদের সামনে দাবির প্রাথমিক পরীক্ষা দিতে হবে।
৬ | চ্যালেঞ্জ গ্রহণকারীদের প্রাথমিক পরীক্ষায় কোনও কারণে হাজির না হলে, অথবা দাবি প্রমাণ করতে না পারলে, তার জামানতের অর্থ বাজেয়াপ্ত করা হবে।
৭। চ্যালেঞ্জ গ্রহণকারী দাবির প্রাথমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলে আমি সর্বসমক্ষে চুড়ান্ত এবং শেষ পরীক্ষা গ্রহণ করব।
৮| পরীক্ষায় চ্যালেঞ্জ গ্রহণকারী তার অলৌকিক ক্ষমতার প্রমাণ রাখলে, আমি পরাজয় স্বীকার করে নেব।
আপনারা নিশ্চয়ই লক্ষ্য করেছেন, আমি সেই অলৌকিক ক্ষমতাগুলােই দেখাতে বলেছি, যেগুলােকে নিয়ে বিভিন্ন যােগী, রেইকি-গ্র্যান্ডমাস্টার, ফেং শুই বিশেষজ্ঞ, বাস্তুবিশেষজ্ঞ, জ্যোতিষী, তান্ত্রিক, ওঝা, গুণীন ও উপাসনা-ধর্মের গুরুরা
দাবি করেন। পত্র-পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিয়ে হেঁকে-ডেকে দাবি করেন।
গ্রন্থটির সাহায্যকারী সূত্র :
১। যাদু কাহিনি : অজিতকৃষ্ণ বসু
২LIllustrated History of Magic : Mailbourne Christopher,
৩। The Great Book of Magic : George Gilbert
৪। D. H. Rawcliffe : Illusions and Delusions of the
Supernatural and the Occult : Dover 1959.
৫। Gods, Demons and Spirits : Dr, A. T. Uayur.
৬। Begore Godmen : Dr A. T. Kayur.
৭। পাভলভ পরিচিতি : ডাঃ ধীরেন্দ্রনাথ গঙ্গোপাধ্যায়।
৮। The Lancit : R. L. Moody.
৯। The World as a Physiological & Therapentic Factor :
Platanoy.
১০। কৌটিলীয় অর্থশাস্ত্র : অনুবাদ—ডঃ রাধাগােবিন্দ বসাক।
১১। ভারতবর্ষের ইতিহাস : রােমিলা থাপার; অনুবাদ—কৃষ্ণা গুপ্তা।
১২। Physics for Entertainment : ya Perelman. Mir Publishers,
Moscow
১৩। Handbook of Parapsychology-Edited by wolman.
১৪। Truth about E. S. P; Hans Holzer.
১৫। New Scientist
১৬। Nature
১৭। Science Digest
১৮। আনন্দবাজার
১৯। যুগান্তর।
২০। আজকাল
২১। পরিবর্তন
২২। Statesman
২৩। নবভারত
২৪। মানব মন
২৫। উৎস মানুষ
১। যাদু কাহিনি : অজিতকৃষ্ণ বসু
২LIllustrated History of Magic : Mailbourne Christopher,
৩। The Great Book of Magic : George Gilbert
৪। D. H. Rawcliffe : Illusions and Delusions of the
Supernatural and the Occult : Dover 1959.
৫। Gods, Demons and Spirits : Dr, A. T. Uayur.
৬। Begore Godmen : Dr A. T. Kayur.
৭। পাভলভ পরিচিতি : ডাঃ ধীরেন্দ্রনাথ গঙ্গোপাধ্যায়।
৮। The Lancit : R. L. Moody.
৯। The World as a Physiological & Therapentic Factor :
Platanoy.
১০। কৌটিলীয় অর্থশাস্ত্র : অনুবাদ—ডঃ রাধাগােবিন্দ বসাক।
১১। ভারতবর্ষের ইতিহাস : রােমিলা থাপার; অনুবাদ—কৃষ্ণা গুপ্তা।
১২। Physics for Entertainment : ya Perelman. Mir Publishers,
Moscow
১৩। Handbook of Parapsychology-Edited by wolman.
১৪। Truth about E. S. P; Hans Holzer.
১৫। New Scientist
১৬। Nature
১৭। Science Digest
১৮। আনন্দবাজার
১৯। যুগান্তর।
২০। আজকাল
২১। পরিবর্তন
২২। Statesman
২৩। নবভারত
২৪। মানব মন
২৫। উৎস মানুষ
101 Bermuda Triangle Mystery Solved; Lawrence D. Kusche.
২৭। মরণের পারে : স্বামী অভেদানন্দ
২৮। রবীন্দ্রনাথের পরলােকচর্চা : অমিতাভ চৌধুরী
২৯। My Story; Uri Geller
৩০ | সত্যযুগ
৩১। প্রসাদ।
৩২। মংপুতে রবীন্দ্রনাথ : মৈত্রেয়ী দেবী
৩৩। ভারতে বস্তুবাদ প্রসঙ্গে : দেবীপ্রসাদ চট্টোপাধ্যায়
৩৪। বিবেকানন্দ রচনা সমগ্র
৩৫। মন ও তার নিয়ন্ত্রণ : স্বামী বুধানন্দ
৩৬। সত্য দর্শন : পরমহংস পরিব্রাজকাচার্য শ্রীমৎ কালিকানন্দ স্বামী
২৭। মরণের পারে : স্বামী অভেদানন্দ
২৮। রবীন্দ্রনাথের পরলােকচর্চা : অমিতাভ চৌধুরী
২৯। My Story; Uri Geller
৩০ | সত্যযুগ
৩১। প্রসাদ।
৩২। মংপুতে রবীন্দ্রনাথ : মৈত্রেয়ী দেবী
৩৩। ভারতে বস্তুবাদ প্রসঙ্গে : দেবীপ্রসাদ চট্টোপাধ্যায়
৩৪। বিবেকানন্দ রচনা সমগ্র
৩৫। মন ও তার নিয়ন্ত্রণ : স্বামী বুধানন্দ
৩৬। সত্য দর্শন : পরমহংস পরিব্রাজকাচার্য শ্রীমৎ কালিকানন্দ স্বামী
No comments:
Post a Comment
ধন্যবাদ