তন্মাদ্যজ্ঞাৎ সর্বহুত ঋচঃ সামানিজজ্ঞিরে।
ছন্দাংসি জজ্ঞিরে তস্মাদ্যজু স্তস্মাদজায়ত।।
[যর্জুবেদ ৩১/৭]
পদার্থঃ- (তন্মাৎ) সেই (যজ্ঞাৎ) ঈশ্বর হইতে, [যজ্ঞো বৈ বিষ্ণুঃ শত ব্রা० ১/১/২/১৩ যজ্ঞা বিষ্ণু, ব্যাপক ঈশ্বর হইতে (সর্বহুতঃ) সর্ব পূজিত (ঋচঃ) ঋগ্বেদ (সামানি) সামবেদ (জঞ্জিরে) উৎপন্ন হয় (ছন্দাংসি) অথর্ববেদ (জজ্ঞিরে) উৎপন্ন হয় (তস্মাৎ) তাহা হইতে (যজ্ঞঃ) যজুর্বেদ (তস্মাৎ) তাহা হইতে (অজায়ত) উৎপন্ন হয়।
বঙ্গানুবাদঃ- সেই সর্বপূজ্য পরমাত্মা হইতে ঋগ্বেদ, সামবেদ, অথর্ববেদ ও যজুর্বেদ উৎপন্ন হইয়াছে। সমগ্র বেদ মধ্যে মহান ঈশ্বরের মহিমার পরম প্রকাশ।
ভাবার্থঃ- যাহা হইতে চারি বেদ উৎপন্ন হইয়াছে তিনিই উপাস্য। প্রতি সৃষ্টির প্রারম্ভে মানব জাতির শৈশবাবস্থায় পরমাত্মা উপদেষ্টা ও রক্ষকরূপে পূর্ব জন্মের সুকৃতি সম্পন্ন ঋষিদের স্বচ্ছ হৃদয়ে বেদ বাণী প্রেরণা দান করেন। ইহাই নৈমিত্তিক জ্ঞান। ইহার গবেষণাতেই মানবের শিক্ষা সভ্যতার জন্ম হয়। শুধু সহজাত জ্ঞান দ্বারা মানবের সভ্যতার বিকাশ হইতে পারে না। তাই অপৌরুষেয় জ্ঞান বা ভগবৎ প্রদত্ত বেদ বাণীর প্রয়োজন হয়।
টীকাঃ
ছন্দ = গোপথ ব্রাহ্মণের পূর্বভাগ ১/২৯ এ বলা হয়েছে- "অথর্বণাং চন্দ্রমা দৈবতং তদেব জ্যোতিঃ সর্বাণি ছন্দাংসি আপস্থানম্” অর্থাৎ অথর্ববেদের চন্দ্রমা দেবতা, তিনি জ্যোতি, সমস্ত প্রকারের ছন্দ এবং জলের স্থান। এখানে সমস্ত প্রকারের ছন্দ স্পষ্ট করে দেয় যে, অথর্ববেদ ছন্দময়। বলেছেন- অথর্ববেদের আরেক নাম "ছন্দ"- এর অর্থ আনন্দদায়ক, অর্থাৎ তাহার মধ্যে আনন্দদায়ক পদার্থের বর্ণনা রয়েছে। চান্দেরাদে ছঃ (উঃ ৪/২১৯)। ইতি চদু আহ্লাদে- অসুন, চস্য ছঃ। আহ্লাদয়তীতি ছন্দঃ)। পাণিনীর অষ্টাধ্যায়ীর অনেক সূত্রেও "ছন্দ" কে বেদের অর্থে গ্রহণ করা হয়েছে, যথাঃ "ছন্দসি চন্দ্ৰয়তি " (পা০৩/৪/৬) অর্থাৎ বেদে ধাতুসম্বধীয় অর্থে ধাতুর সাথে লুঙ্, লঙ্, লিট প্রত্যয় হয়। অনেকে বলে যে, পাণিনি মুনির অথর্ববেদের জ্ঞান ছিলো না এজন্য অথর্ববেদ অর্বাচীন। এটাও তাদের ভ্রম, কেননা যেই প্রকার শাকলাদি শাখার নামে ঋগ্বেদ প্রসিদ্ধ সেই প্রকার শৌকনাদি সংহিতার নামে অথর্ববেদ প্রসিদ্ধ। পাণিনি মুনি "শাকলাব্ধ" (পা০ ৪/৩/১২৮) এবং "শৌনকাদিভ্যচ্ছন্দসি" (পা০ ৪/৩/১০৬) এই দুই সূত্রে ঋগ্বেদ এবং অথর্ববেদের দুটি শাখার উল্লেখ করেছেন। এ থেকে স্পষ্ট যে পাণিনি মুনির অথর্ববেদের জ্ঞান ছিলো।
No comments:
Post a Comment
ধন্যবাদ