মনুস্মৃতি ও নারী - ধর্ম্মতত্ত্ব

ধর্ম্মতত্ত্ব

ধর্ম বিষয়ে জ্ঞান, ধর্ম গ্রন্থ কি , হিন্দু মুসলমান সম্প্রদায়, ইসলাম খ্রীষ্ট মত বিষয়ে তত্ত্ব ও সনাতন ধর্ম নিয়ে আলোচনা

धर्म मानव मात्र का एक है, मानवों के धर्म अलग अलग नहीं होते-Theology

সাম্প্রতিক প্রবন্ধ

Post Top Ad

স্বাগতম

18 October, 2017

মনুস্মৃতি ও নারী

মনুসংহিতা পিডিফ

                                  অনেকে অভিযোগ করেন, মনুসংহিতা একটি নারীবিরোধী গ্রন্থ। এ প্রসঙ্গে আলোচনার আগে স্মরণ রাখা প্রয়োজন, পণ্ডিত ও বিদ্বান সমাজ একথা বহুবার স্বীকার করেছেন যে, সনাতন ধর্মশাস্ত্রের একটি গ্রন্থও তার সঠিক অবস্থানে নেই। মনুসংহিতাতেও বহু প্রক্ষিপ্ত অংশ রয়েছে। অনেক সময় স্বার্থান্বেষী পুরোহিতরা নিজেদের পক্ষে ধর্মকে টানার জন্য ঐশী গ্রন্থে বা ঐশী শিক্ষামূলক গ্রন্থে নিজেদের মনগড়া কথাকে ঈশ্বরের বাণী বলে ঢুকিয়ে দেয়। শ্লোক রচনার গঠন রীতির আধুনিকতা ও প্রাচীনতা বিবেচনা করে এই জাল শ্লোকগুলো আলাদা করা খুব কঠিন কিছু নয়। এই জাতীয় অপকর্মে কোনো ধর্মের পুরোহিতরাই পিছিয়ে নেই। ইসলাম ধর্মের পুরোহিতরা কোর’আনে কিছু পরিবর্তন করতে পারেননি, কারণ এই মহাগ্রন্থ শেষ ঐশীগ্রন্থ। তাই আল্লাহ নিজে এর সুরক্ষার দায়িত্ব নিয়েছেন (সুরা হিজর ৯)। কিন্তু হাদিস বা ইতিহাস, মাসলা মাসায়েল বা ফেকাহ শাস্ত্র সংরক্ষণের দায়িত্ব আল্লাহ নেননি। সেখানে এই পুরোহিত আলেম ওলামা, মাজহাবের এমাম সাহেবরা তাদের ক্ষুরধার মেধার স্বাক্ষর রেখেছেন এবং দীনের মধ্যে নিজের মনগড়া হাজারো মতবাদ, জাল হাদিস, ইজমা, কেয়াস, ফতোয়া প্রবেশ করিয়ে দিয়েছেন। প্রাচীন ধর্মগুলির সকল গ্রন্থই এভাবে বিকৃত হয়ে গেছে। তবুও সেগুলির মধ্যে যে শিক্ষা এখনো সঞ্চিত আছে তা বিচার করলে বুঝতে অসুবিধা হয় না যে প্রায় সকল ধর্মই ভিন্ন ভিন্ন ডালে উৎপন্ন একই গাছের ফল।

কেবল যে স্বার্থসিদ্ধির জন্যই ধর্মশাস্ত্রের মধ্যে শ্লোক প্রক্ষিপ্ত করা হয়েছে তা বলা ভুল হয়। অনেক মুনি ঋষি পণ্ডিত মানবতার কল্যাণেও অনেক নীতিবাক্য শাস্ত্রের অঙ্গীভূত করে দিয়েছেন। তারা নিজের নাম, যশ, খ্যাতি চাননি, বরং অন্যের লেখার মধ্যে নিজের শ্রমসাধ্য রচনাগুলিকে প্রবেশ করিয়ে অমরত্বের আনন্দ লাভ করতে চেয়েছেন। এভাবে মহাভারত রামায়ণ প্রভৃতি মহাকাব্য দিনে দিনে বৃহদায়তন হয়ে উঠেছে। আদি মনুসংহিতা শাস্ত্রটি অধ্যয়ন করলে যে কেউ বুঝতে সক্ষম হবেন যে, পৃথিবীতে নারীকে মর্যাদা দানে মহর্ষি মনুর প্রচারিত শিক্ষা এতো চমৎকার যে কেবলমাত্র সত্যধর্মেই এমন বিধান থাকা সম্ভব। এমনকি মনুসংহিতার ভাবধারার সাথে খাপ খাওয়াতে হলে অনেক ক্ষেত্রে আধুনিক নারীবাদীদের চিন্তাধারারও উন্নয়নের প্রয়োজন। আমরা এখন এমন একটি শ্লোক পড়ব যার অর্থ দ্ব্যর্থহীনভাবে ঘোষণা করে যে নারীরাই হচ্ছে কোন উন্নত সমাজের ভিত্তিস্বরূপ। এটি নারীদের প্রতি কোন চাটুকারিতা বা তোষামোদি নয়। এটি এমন একটি সত্য যা নারীবিদ্বেষীদের কাছে বিষের মতো, আর নারীশক্তির মহিমা কীর্তনীয়াদের কাছে অমৃতস্বরূপ। প্রকৃতির এই নিয়ম পরিবার, সমাজ, ধর্মগোষ্ঠী, জাতি বা সমগ্র মানবতার ক্ষেত্রে সমানভাবে প্রযোজ্য। যারা হিন্দুধর্মকে নারী-পীড়ক বলে দোষারোপ করেন, তারা কখনোই এই শ্লোকের উদ্ধৃতি দেন না। এই শ্লোকগুলি মনুসংহিতার তৃতীয় অধ্যায়ে (ধর্মসংস্কার প্রকরণ) উল্লেখিত হয়েছে। 

আমি কয়েকটি শ্লোকের উদাহরণ দিচ্ছি।

পিতৃভির্ভ্রাতৃভিশ্চৈতাঃ পতিভির্দেবরৈস্থা।
পূজ্যা ভূষয়িতব্যাশ্চ বহুকল্যাণকামীপ্সুভিঃ॥ (মনুস্মৃতি৩/৫৫)

অর্থাৎঃ বিবাহের সময় বরই কেবল কন্যাকে ধন দেবেন এমন নয়। বিবাহোত্তরকালেও বরের পিতা, ভাই, পতি বা দেবর সকলেই যদি অতুল কল্যাণরাশির অভিলাষী হয় তাহলে ঐ কন্যাদের মৃদুবাক্য, ভদ্র ব্যবহার, ভোজনাদি ও উপহারাদি দ্বারা সর্বদা খুশি ও সন্তুষ্ট রাখবেন এবং বস্ত্র-অলঙ্কারাদির দ্বারা ভূষিত করবেন।

যত্র নার্য্যস্ত পূজ্যন্তে রমন্তে তত্র দেবতাঃ।
যত্রৈতাস্তু ন পূজ্যন্তে সর্বাস্তত্রাফলাঃ ক্রিয়াঃ॥ (মনুস্মৃতি৩/৫৬)

অর্থাৎঃ যে বংশে স্ত্রীলোকেরা বস্ত্রালঙ্কারাদির দ্বারা সমাদৃত হন, সেখানে দেবতারা প্রসন্ন থাকেন। আর যে বংশে স্ত্রীলোকদের সমাদর নেই সেখানে সমস্ত ক্রিয়া (প্রার্থনা, উপাসনাদি) নিষ্ফল।

শোচন্তি জাময়ো যত্র বিনশ্যন্ত্যাশু তৎ কুলম্।
ন শোচন্তি তু যত্রৈতা বর্দ্ধতে তদ্ধি সর্বদা॥ (মনুস্মৃতি৩/৫৭)

অর্থাৎঃ যে বংশে ভগিনী ও গৃহস্থের স্ত্রী (নারীকূল) পুরুষদের কৃতকর্মের জন্য দুঃখিনী হয়, সেই বংশ অতি শীঘ্র ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়।

জাময়ো যানি গেহানি শপন্ত্যপ্রতিপূজিতাঃ।
তানি কৃত্যাহতানীব বিনশ্যন্তি সমন্ততঃ॥ (মনুস্মৃতি৩/৫৮)

অর্থাৎঃ আর যে বংশে স্ত্রীলোকেরা সন্তুষ্ট থাকে, সেই বংশ নিশ্চিতভাবেই শ্রীবৃদ্ধি লাভ করে। আর যে বংশকে উদ্দেশ্য করে ভগিনী, পত্নী, পুত্রবধূ প্রভৃতি স্ত্রীলোকেরা অনাদৃত, অপমানিত হয়ে অভিশাপ দেন, সেই বংশ বিষপান করা ব্যক্তির ন্যায় ধন-পশু প্রভৃতিসহ সর্বতোভাবে বিনাশপ্রাপ্ত হয়।

তস্মাদেতাঃ সদা পূজ্যা ভূষণাচ্ছদাশনৈঃ।
ভুতিকামৈর্নরৈর্নিত্যং সৎকারেষুৎসবেষু চ॥ (মনুস্মৃতি৩/৫৯)

অতএব যারা ভূতি অর্থাৎ ঐশ্বর্য কামনা করে, তারা (পতিসম্বন্ধীয় লোকেরা) বিভিন্ন সৎকার্যের অনুষ্ঠানে এবং নানা উৎসবে উত্তম অলঙ্কার, বস্ত্র ও ভোজনাদি দ্বারা স্ত্রীলোকদের সম্মান প্রদর্শন (পূজা) করে প্রীত রাখবে।

সুতরাং পরিবারের সুখ-শান্তি-সমৃদ্ধির জন্য নারীকে সর্বদা সুখী রাখতে হবে – এটাই মহর্ষি মনুর নির্দেশ। পাশাপাশি তিনি স্বামীর মনোরঞ্জন ও ভালোবাসা পাওয়ার জন্য স্ত্রীলোকদেরকে সুন্দর পোশাক ও অলঙ্কারে সুসজ্জিত ও দীপ্তিমতী হয়ে থাকার জন্য উপদেশ দিয়ে বলেছেন:

স্ত্রিয়ান্তু রোচমানায়াং সর্বং তদ্রোচতে কুলম্।
তস্যান্ত্বরাচমানায়াং সর্বমেব ন রোচতে। (মনুস্মৃতি৩/৬২)

অনুবাদ: ভূষণাদির দ্বারা স্ত্রী সুসজ্জিত থাকলে সমস্ত পরিবার (কুল) শোভামণ্ডিত থাকে। আর স্ত্রীর প্রতি স্বামীর যদি রুচি না থাকে তাহলে সমস্ত পরিবার শোভাহীন হয়ে পড়ে।

দুর্ভাগ্যজনকভাবে হিন্দু বুদ্ধিজীবীরা মহর্ষী মনুর লিপিবদ্ধ বাণী মনুস্মৃতিকে নারী বিদ্বেষী গ্রন্থ হিসাবে প্রতিষ্ঠা করে রেখেছেন। ‘মনু’ শব্দ থেকেই মানুষ, মনুষ্যত্ব, মানবতা শব্দের উৎপত্তি। তাই মহর্ষী মনুর বাণীগুলি কেবল নারী বা পুরুষ নয়, মানবতার জয় প্রচার করে। মানবসমাজের প্রাণ হচ্ছে নারী সমাজ। তাদের মাধ্যমেই মানব প্রজাতির বংশধারা, প্রজন্ম রক্ষিত হয়। এজন্য তাদের বিশেষ সম্মান প্রাপ্য। তিনি বলেন:
প্রজনার্থং মহাভাগাঃ পূজার্হা গৃহদীপ্তয়ঃ।
স্ত্রিয়ঃ শ্রিয়শ্চ গেহেষু ন বিশেষোহস্তি কশ্চন।। (মনুস্মৃতি৯/২৬)

অর্থাৎ, স্ত্রী লোকেরা সন্তানাদি প্রসব ও পালন করে বলে তারা অত্যন্ত সৌভাগ্যবতী। তারা গৃহের দীপ্তি বা প্রকাশস্বরূপ। এই কারণে স্ত্রীলোকদের সকল সময়ে সম্মান-সহকারে রাখা উচিত। বাড়ীতে স্ত্রী আর শ্রী এদের মধ্যে কোন পার্থক্য নেই।

আজও ভারতবর্ষে মহর্ষি মনুর এই শ্লোক থেকেই শিক্ষা নিয়ে মেয়েদের ভাগ্যশ্রী বা গৃহলক্ষ্মী বলা হয়। এর একটি কারণ হিসাবে টিকাকার মানবেন্দু বন্দ্যোপাধ্যায় লিখেছেন স্ত্রীলোক বাড়িতে না থাকলে কুটুম্ব বা আত্মীয়বর্গের আদর-আপ্যায়ন কিছুই হয় না। পুরুষের ধনৈশ্বর্য থাকলেও যদি ভার্যা না থাকে, তাহলে বাড়ীতে বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয়-স্বজনেরা উপস্থিত হলে গৃহস্বামী নিজে তাদের প্রত্যেককে পান-ভোজনাদির দ্বারা আপ্যায়িত করতে পারেন না। অন্যকথায়, মাতৃরূপে, কন্যারূপে, স্ত্রীরূপে, ভগ্নীরূপে কিংবা ধর্মকর্মে অংশীদাররূপে নারীরাই সকল কল্যাণের মূল উৎস বলে মহর্ষি মনু প্রতিপাদন করেছেন।

অন্যোন্যস্যাব্যভিচারো ভবেদামরণান্তিকঃ।
এষ ধর্মঃ সমাসেন জ্ঞেয়ঃ স্ত্রীপুংসয়োঃ পরঃ ॥ (মনুস্মৃতি৯/১০১)

অর্থাৎ স্ত্রী এবং পুরুষের শ্রেষ্ঠকর্তব্য সম্বন্ধে এই কথাই সংক্ষেপে বলা যায় যে, মরণকাল পর্যন্ত ভার্যা ও পতি পরস্পর পরস্পরের প্রতি ব্যভিচার অর্থাৎ অন্যায় আচরণ করবে না।

এখানে কোন বিশেষ অর্থ না দেখিয়ে সাধারণভাবে ‘অব্যভিচার’ বলা হয়েছে। সুতরাং এর দ্বারা সকল কাজে অব্যভিচার করতে বলা হয়েছে অর্থাৎ কোনো কাজই উভয়ের একজন আর একজনকে ছেড়ে করতে পারবে না। এইজন্য আপন্তম্ব বলেছেন, ‘ধর্ম, অর্থ এবং কাম কোনো কাজেই পত্নীকে লঙ্ঘন করা অর্থাৎ তাকে বাদ দেওয়া যাবে না।’ ধর্ম, অর্থ, কাম এগুলি শ্রেয়ঃ, এই তিনটিকে বলা হয় ত্রিবর্গ। নারী ও পুরুষ একে ভিন্ন অপরে অসম্পূর্ণ। এজন্য বেদে (শ্রুতি) বলা হয়েছে ধর্মকর্ম পত্নীর সাথে মিলিতভাবে কর্তব্য। (মনুস্মৃতি৯/৯৬)

বৈদিক ধর্মের এই শিক্ষা থেকেই নারীকে বলা হয় পুরুষের অর্ধাঙ্গিনী ও সহধর্মিনী। এই শ্লোকটির কথা একবার ভেবে দেখুন। নারী ছাড়া পুরুষ অসম্পূর্ণ একথা ইসলাম ধর্মেও বলা হয়েছে। তাই নারী ছাড়া পুরুষের ধর্ম সম্পূর্ণ হয় না। তাই আল্লাহর বিধান হচ্ছে ঘরে এবং মসজিদে নারী ও পুরুষ উভয়ে একই সঙ্গে নামাজ পড়বে, একই সঙ্গে হজ্ব করবে, সত্য প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে একই সঙ্গে অংশ নেবে। এবার নারীদের স্বাতন্ত্রের কথায় আসা যাক। মনে রাখতে হবে, স্বাধীনতা মানে উশৃঙ্খলা নয়, স্বাতন্ত্র্য মানেই ঔদ্ধত্য নয়।

অরক্ষিতা গৃহে রুদ্ধাঃ পুরুষৈরাপ্তকারিভিঃ।
আত্মনমাত্মনা যাস্তু রক্ষোয়ুস্তাঃ সুরক্ষিতাঃ।। (মনুস্মৃতি৯/১২)

অর্থাৎ যে স্ত্রী দুঃশীলতা হেতু নিজে আত্মরক্ষায় যত্নবতী না হয়, তাকে পুরুষগণ ঘরে আটকে রাখলেও সে অরক্ষিতা (অৎব হড়ঃ বিষষ মঁধৎফবফ) থাকে। কিন্তু যারা সর্বদা আপনা-আপনি আত্মরক্ষায় তৎপর, তাদের কেউ রক্ষা না করলেও তারা সুরক্ষিতা হয়ে থাকে।

সুতরাং স্ত্রীলোকদের গৃহবন্দী করে রাখা ধর্মের উদ্দেশ্য নয় এবং সতীত্ব রক্ষার্থে সেটা অকার্যকর উদ্যোগ। স্ত্রীজাতির নিরাপত্তা প্রধানত তাদের নিজস্ব মনোভাবের উপর নির্ভরশীল। কীভাবে নারীর চরিত্র দূষিত হয় এবং সে ক্ষতিগ্রস্ত হয় তা বলা হয়েছে পরবর্তী শ্লোকে।

পানং দুর্জনসংসর্গঃ পত্যা চ বিরহোহটনম্।
স্বপ্নোহন্যগেহবাসশ্চ নারীসংদূষণানি ষট্॥ (মনুস্মৃতি৯/১৩)

অর্থাৎ মদ্যপান, দুষ্ট লোকের সঙ্গে মেলামেশা করা, স্বামীর সঙ্গে বিচ্ছেদ, যেখানে সেখানে ঘুরে বেড়ানো, অসময়ে ঘুমানো এবং আত্মীয় কুটুম্বের বাড়িতে দীর্ঘদিন বাস করা এই ছয়টি বিষয় স্ত্রীলোককে দূষিত করে।

নারীদের প্রতি সামাজিক শিষ্টাচার ও সম্মান প্রদর্শনের যে রীতিও মনুসংহিতায় উল্লেখ করা হয়েছে। যেমন:
১. নববিবাহিতা বধূ, কন্যা এবং গর্ভবতী মহিলাদের অতিথি ভোজনের পূর্বেই ভোজন প্রদান করতে হবে। (৩/১১৪)

২. বাহনে বা যানে আরোহী ব্যক্তির পক্ষে বয়স্ক ব্যক্তি, ক্লান্ত ব্যক্তি, ভারবাহী ব্যক্তি, বর, রাজা, স্নাতক এবং স্ত্রীলোকদের পথ ছেড়ে দেওয়া কর্তব্য।” (মনুসংহিতা ২/১৩৮)

নারী নির্যাতনের দণ্ডবিধান:
১. নারী অপহরণকারীদের মৃত্যুদণ্ড দিতে হবে। (মনুস্মৃতি৮/৩২৩)

২. যারা নারী, শিশু ও গুণবান পণ্ডিতদের হত্যা করে, তাদের কঠিনতম শাস্তি দিতে হবে।” (মনুস্মৃতি ৯/২৩২)

৩. যারা অন্যের স্ত্রীকে ধর্ষণ করে বা করতে প্রবৃত্ত হয় বা তাদের ব্যভিচারে প্ররোচিত করে তাদের এমন শাস্তি দিতে হবে যাতে তা অন্যদের মধ্যে ভীতি সঞ্চার করে এবং কেউ তা করতে আর সাহস না পায়।” (মনুস্মৃতি ৮/৩৫২)

৪. যদি কেউ মা, স্ত্রী বা কন্যার নামে মিথ্যা দোষারোপ করে তবে তাকে শাস্তি দিতে হবে।” (মনুস্মৃতি ৮/২৭৫)

৩. যদি কেউ কোন ন্যায়সঙ্গত কারণ ছাড়া মা, বাবা, স্ত্রী বা সন্তান ত্যাগ করে, তাকে কঠিন দণ্ড দিতে হবে। (মনুস্মৃতি ৮/৩৮৯)।

৪. যদি কোন নারীকে সুরক্ষা দেবার জন্য পুত্র বা কোন পুরুষ পরিবারে না থাকে, অথবা যদি সে বিধবা হয়ে থাকে, যে অসুস্থ অথবা যার স্বামী বিদেশে গেছে, তাহলে রাজা (শাসক) তার নিরাপত্তা নিশ্চিত করবেন। যদি তার সম্পত্তি তার কোন বন্ধু বা আত্মীয় হরণ করে, তাহলে রাজা দোষীদের কঠোর শাস্তি দেবেন এবং সম্পত্তি ঐ নারীকে ফেরত দেবেন।” (মনুস্মৃতি ৮/২৮-২৯)

“যে সমাজে নারীদের যথাযথ শ্রদ্ধা ও সম্মান প্রদর্শন করা হয় সেই সমাজ উত্তরোত্তর উন্নতি লাভ করে। আর যারা নারীদের যোগ্য সম্মান করে না, তারা যতই মহৎ কর্ম করুক না কেন, দুর্দশা আর ব্যর্থতার গ্লানি তাদের বয়ে বেড়াতে হয়”।
এটি নারীদের প্রতি কোন চাটুকারিতা বা তোষামদি নয়। এটি এমন একটি সত্য যা নারীবিদ্বেষীদের কাছে বিষের মতো, আর নারীশক্তির মহিমা কীর্তনীয়াদের কাছে অমৃতস্বরূপ। প্রকৃতির এই নিয়ম পরিবার, সমাজ, ধর্মগোষ্ঠী, জাতি বা সমগ্র মানবতার ক্ষেত্রে সমানভাবে প্রযোজ্য। মহর্ষি মনুর এই উপদেশ অবহেলা করে আজ আমরা আমাদের সকল মহত্ত্ব সত্ত্বেও দাসে পরিণত হয়েছি।
সুখী নারীর গুরুত্বঃ
“একজন পিতা, ভাই, পতি বা দেবর তাদের কন্যা, বোন, স্ত্রী বা ভ্রতৃবধুকে মৃদুবাক্য, ভদ্র ব্যবহার ও উপহারাদি দ্বারা খুশি ও সন্তুষ্ট রাখবেন। যারা যথার্থ কল্যাণ ও উন্নতি চান, তারা নিশ্চিত করবেন যে, তাদের পরিবারের নারীরা যাতে সর্বদা খুশী থাকেন এবং কখনো দুর্দশা ভোগ না করেন”। (মনুসংহিতা ৩/৫৫)
মনুস্মৃতি ৩।৫৬
"যত্র নার্য্যস্তু পূজ্যন্তে রমন্তে তত্র দেবতাঃ। যত্রৈতাস্ত ন পূজ্যন্তে সর্ব্বাস্তত্রাফলাঃক্রিয়াঃ।। "-মনুস্মৃতি ৩।৫৬
-যে কুলে স্ত্রীলোকেরা আদৃতা হয়েন, সেখানে দেবতারা প্রসন্ন তাকেন, যে কুলে স্ত্রীদিগের অনাদর, সেখানে সকল সৎক্রিয়া নিষ্ফল হয়।
“যে বংশে ভগিনী ও গৃহস্থের স্ত্রী (নারীকূল) পুরুষদের কৃতকর্মের জন্য দুঃখিনী হয়, সেই বংশ অতি শীঘ্র ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়। আর যে বংশে স্ত্রীলোকেরা সন্তুষ্ট থাকে, সেই বংশ নিশ্চিতভাবেই শ্রীবৃদ্ধি লাভ করে”। (মনুসংহিতা ৩/৫৭)
“যে বংশকে উদ্দেশ্য করে স্ত্রীলোকেরা অপমানিত বা বৈষম্যের শিকার হয়ে অভিশাপ করেন, সেই বংশ বিষপান করা ব্যক্তি ন্যায় সর্বতোভাবে বিনাশপ্রাপ্ত হয়”। (মনুসংহিতা ৩/৫৮)
“যারা ঐশ্বর্য কামনা করে, তারা স্ত্রীলোকদের সম্মান প্রদর্শন দ্বারা খুশী রাখবে এবং উত্তম অলংকার, পোশাক ও খাদ্যদ্বারা প্রীত রাখবে। স্ত্রীজাতিকে সর্বদা পবিত্র হিসেবে গভীরভাবে শ্রদ্ধা করবে”। (মনুসংহিতা ৩/৫৯)
“যে স্বামী তার স্ত্রীকে সন্তুষ্ট রাখে না, সে তার সমগ্র পরিবারের জন্য দুর্দশা বয়ে আনে। আর যদি স্ত্রী পরিবারের প্রতি সুখী থাকেন, তবে সমগ্র পরিবার শোভাময় হয়ে থাকে”। (মনুসংহিতা ৩/৬২)
“স্ত্রী লোকেরা সন্তানাদি প্রসব ও পালন করে থাকে। তারা নতুন প্রজন্ম বা উত্তরসুরির জন্ম দেয়। তারা গৃহের দীপ্তি বা প্রকাশস্বরূপ হয়। তারা সৌভাগ্য ও আশীর্বাদ বয়ে আনে। তারাই গৃহের শ্রী”। (মনুসংহিতা ৯/২৬)
আজও ভারতবর্ষে মহর্ষি মনুর এই শ্লোক থেকেই শিক্ষা নিয়ে মেয়েদের ‘ঘরের লক্ষ্মী’ বা ‘গৃহলক্ষ্মী’ বলা হয়।“প্রজন্ম থেকে প্রজন্মোন্তরে স্ত্রীরাই সকল সুখের মূল। কারণ, সন্তান উত্পাদন, ধর্ম পালন, পরিবারের পরিচর্যা, দাম্পত্য শান্তি এসব কাজ নারীদের দ্বারাই নিষ্পন্ন হয়”। (মনুসংহিতা ৯/২৮)
অন্যকথায়, মাতৃরূপে, কন্যারূপে, স্ত্রীরূপে, ভগ্নীরূপে কিংবা ধর্মকর্মে অংশীদাররূপে নারীরাই সকল কল্যাণের মূল উত্স।“নারী ও পুরুষ একে ভিন্ন অপরে অসম্পূর্ণ। এজন্য বেদে বলা হয়েছে ধর্মকর্ম পত্নীর সাথে মিলিতভাবে কর্তব্য”। (মনুসংহিতা ৯/৯৬)
তাই যারা বেদ ও বৈদিক আচার অনুষ্ঠানে মহিলাদের অংশগ্রহণ অস্বীকার করেন তারা বৈদিক হিন্দু ধর্ম তথা মানবধর্ম বিরোধী।“জ্ঞানী ব্যক্তিগণ কখনো মাতা-পিতা, ভগিনী, পুত্রবধূ, পুত্র, স্ত্রী, কন্যা ও ভৃত্যবর্গ –এদের সাথে বিবাদ করবেন না। (মনুসংহিতা ৪/১৮০)“যে পিতা কন্যাকে বিবাহযোগ্য সময়ে কন্যাকে পাত্রস্থ না করেন, যে স্বামী স্ত্রীর ন্যায্য দাবী পূরণ না করেন এবং যে সন্তান তার বিধবা মাতার রক্ষণাবেক্ষণ করেন না, তারা সকলেই নিন্দার পাত্র হন”। (মনুসংহিতা ৯/৪)
বহুবিবাহ পাপঃ“পতি ও পত্নী মৃত্যু পর্যন্ত একসাথে থাকবেন। তারা অন্য কোন জীবনসঙ্গী গ্রহণ করবেন না বা ব্যাভিচার করবেন না। এই হলো নারী-পুরুষের পরম ধর্ম”। (৯/১০১)
তাই যে সব সমাজ বহুবিবাহ অথবা যৌন-দাসত্ব ও সাময়িক বিবাহের মতো জঘণ্য আচারকে অনুমোদন করে তারা ধর্মসূত্র লঙ্ঘনের দায়ে দুর্দশা ভোগ করতে বাধ্য।
স্ত্রীলোকের স্বাতন্ত্র্যঃ“নারীদের টাকা-পয়সা ঠিকমত হিসাব করে জমা রাখা এবং খরচ করা, গৃহ ও গৃহস্থালী শুদ্ধ রাখা, ধর্ম-কর্ম সমূহের আয়োজন করা, অন্ন প্রস্তুত করা ও শয্যাসনাদির তত্ত্বাবধান করা –এসব কাজে স্ত্রীলোকদের স্বাতন্ত্র্য ও নেতৃত্ব দানে স্বাধীনতা প্রদান করবে। (মনুসংহিতা ৯/১১)
এই শ্লোকে পরিষ্কারভাবে বলা হয়েছে যে, স্ত্রীলোকের ধর্মকার্যে অংশগ্রহণের অধিকার রয়েছে। স্ত্রীলোকেরা বরং তাতে নেতৃত্ব দেবেন। তাই যারা বলে স্ত্রীলোকদের বেদ অভ্যাস কোন প্রয়োজন নেই তারা অবশ্যই বেদ ও মনুস্মৃতির বিরোধী। এসব সংকীর্ণ মূর্খ ব্যক্তিরাই জাতির দূর্দশার কারণ। এরকম স্ত্রীজাতির মানহানিকর মনোভাব সম্পন্ন ব্যক্তিরা অসহনীয়।
“যে স্ত্রী দুঃশীলতা হেতু নিজে আত্মরক্ষায় যত্নবতী না হয়, তাকে পুরুষগণ ঘরে আটকে রাখলেও সে ‘অরক্ষিতা’ থাকে। কিন্তু যারা সর্বদা আপনা-আপনি আত্মরক্ষায় তত্পর, তাদের কেউ রক্ষা না করলেও তারা ‘সুরক্ষিতা’ হয়ে থাকে। তাই স্ত্রীলোকদের আটকে রাখা নিষ্ফল। স্ত্রীজাতির নিরাপত্তা প্রধানত তাদের নিজস্ব সামর্থ্য ও মনোভাবের উপর নির্ভরশীল”। (মনুসংহিতা ৯/১২)
এই শ্লোকে ব্যাখ্যা করা হয়েছে, নিরাপত্তার নামে নারীকে ঘরে আটকে রাখা নিষ্ফলতার সামিল। বিপরীতক্রমে তাকে নিরাপদ রাখতে হলে তাকে অধিকার দিতে হবে এবং সঠিক প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে, যাতে নিজেদের তারা সুরক্ষিত রাখতে পারে আর কুসঙ্গ যেন তাদের বিভ্রান্ত করতে না পারে। মেয়েদের চারদেয়ালে আবদ্ধ করে রাখা মনুর মতাদর্শের বিরোধী।
নারীর নিরাপত্তা বিধান:
“স্ত্রীলোককে রক্ষণরূপ ধর্ম সকল বর্ণের পক্ষে শ্রেষ্ঠ ধর্ম, অর্থাত্ শ্রেষ্ঠ কর্তব্য। তাই অন্ধ, পঙ্গু ও দুর্বল স্বামীরাও নিজ নিজ স্ত্রীকে যত্নপূর্বক রক্ষা করবে”। (মনুসংহিতা ৯/৬)
“স্ত্রী জাতি সবসময় নিজেদের অনাচার ও অধর্ম বা পাপ থেকে দূরে রাখবেন। কারণ স্ত্রীর চরিত্র নষ্ট হলে সমাজ নষ্ট হবার উপক্রম হয়”। (মনুসংহিতা ৯/৫)
“স্ত্রীলোক কখনো পিতা, স্বামী বা পুত্রের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন হবেন না। কারণ তা পিতৃকুল ও পতিকুল উভয়কুলকেই কলঙ্কিত করে তোলে”। (মনুসংহিতা ৫/১৪৯)
একথা দ্রষ্টব্য যে, ৯/১২ নং শ্লোক হতে বোঝা যায় এই সুরক্ষা কখনোই কোন সংকীর্ণতা বা বাধানিষেধ বোঝায় না। যে জাতি বিপথগামী ব্যক্তিদের আক্রমন হতে স্ত্রীলোকদের রক্ষা করে না, তারা তাদের সর্বনাশের ভাগ্য নিজেরাই লিখে থাকে।এই কারনেই যখন পশ্চিমা ও মধ্য এশিয়া থেকে বর্বর দস্যুরা ভারতবর্ষে হানা দিয়েছিল, আমাদের বীর যোদ্ধারা আমাদের নারীদের সম্মান রক্ষার্থে নিজেদের জীবন পর্যন্ত উত্সর্গ করে গেছেন ।
কন্যাদের বিবাহ:
“কন্যা বিবাহ উপযুক্ত কাল থেকে মৃত্যু পর্যন্ত পিতৃগৃহেই অবস্থান করবে সেও ভাল, তবুও গুণহীন বরের (অর্থাত্ বিদ্যা, শৌর্য, সুন্দর চেহারা, উপযুক্ত বয়স, মহত্ত্ব, লোক ও শাস্ত্রনিষিদ্ধ দ্রব্যাদি বর্জন এবং কন্যার প্রতি অনুরাগ –এইগুলি নেই যে পাত্রের) হাতে কন্যাকে দান করবে না”। (মনুসংহিতা ৯/৮৯)
“কুমারী কন্যা ঋতুমতী হলেও তিন বত্সর পর্যন্ত গুণবান বরের অপেক্ষা করবে; ঐ সময়ের পরও যদি পিতা তার বিবাহ না দেন তাহলে এ পরিমাণ কাল অপেক্ষার পর কন্যা নিজসদৃশ পতি নিজেই বেছে নেবেন”। (মনুসংহিতা ৯/৯০)
“ঋতুমতী হওয়ার তিন বত্সর পরেও যদি ঐ কন্যা পাত্রস্থ করা না হয়, তাহলে সে যদি নিজেই পতি বরণ করে নেয়, তার জন্য সে কোন পাপের ভাগী হবে না। কিংবা সেই পতিরও কোন পাপ হবে না”। (মনুসংহিতা ৯/৯১)
নারীদের সম্পত্তিতে অধিকার:
“কন্যা পুত্রের সমান। তার উপস্থিতিতে কেউ তার সম্পত্তিতে অধিকার ছিনিয়ে নিতে পারেন না”। (মনুসংহিতা ৯/১৩০)
“মাতার যা স্ত্রীধন থাকবে, তা কুমারী কন্যারই থাকবে”। (মনুসংহিতা ৯/১৩১)
তাই মনুর মতে, পিতার সম্পত্তিতে কন্যার পুত্রের সমান অধিকার থাকার কারণে, মায়ের সম্পত্তিতে তাদের একক অধিকার থাকবে। এটি করার কারণ মেয়েদের যাতে গলগ্রহ হয়ে থাকতে না হয়। কারণ, একজন মর্যাদাপূর্ণ নারীই সুখী পরিবার তথা সমাজ গঠনের মূল স্তম্ভ।
“যদি কোন ব্যক্তির রক্তসম্পর্কীয় আত্মীয় বা স্ত্রী না থাকে, তাহলে তার সম্পত্তি তার ভাই-বোনদের মধ্যে সমানভাগে বণ্টিত হবে। যদি জ্যেষ্ঠভ্রাতা ভগ্নিদের ধনদানে অস্বীকার করে তাহলে রাজা তাদের শাস্তি দেবেন”। (মনুসংহিতা ৯/২১২-২১৩)
“যদি কোন নারীকে সুরক্ষা দেবার জন্য পুত্র বা কোন পুরুষ পরিবারে না থাকে, অথবা যদি সে বিধবা হয়ে থাকে, যে অসুস্থ অথবা যার স্বামী বিদেশে গেছে, তাহলে রাজা তার নিরাপত্তা নিশ্চিত করবেন। যদি তার সম্পত্তি তার কোন বন্ধু বা আত্মীয় হরণ করে, তাহলে রাজা দোষীদের কঠোর শাস্তি দেবেন এবং সম্পত্তি ঐ নারীকে ফেরত দেবেন”। (মনুসংহিতা ৮/২৮-২৯)
যৌতুক দানে নিষেধ:
“কন্যার আত্মীয়রা যদি কন্যার স্ত্রীধন (সম্পত্তি, ধনাদি, স্ত্রীযান বা বস্ত্রাদি) অপহরন করে তবে তারা অধোগতি প্রাপ্ত হয়। (মনুসংহিতা ৩/৫২)
তাই মনুস্মৃতিতে যে কোন যৌতুক নিষিদ্ধ হয়েছে। তাই মেয়েদের সম্পত্তিতে কেউ হাত দিতে পারবে না।
পরবর্তী শ্লোকে এই বিষয়টিকে আরও ব্যাখ্যা করা হয়েছে। বলা হয়েছে যে, যে কোন স্পর্শযোগ্য (tangible) সম্পত্তির সামান্যতম আদান-প্রদান মহতী বিবাহের নীতির বিরোধী। প্রকৃতপক্ষে মনু বলেন যে, যৌতুকযুক্ত কোন বিবাহ হচ্ছে ‘আসুরী বিবাহ’।
নারীদের ক্ষতিকারীদের কঠোর শাস্তি:
“নারী অপহরণকারীদের মৃত্যুদণ্ড হবে”। (মনুসংহিতা ৮/৩২৩)
“যারা নারী, শিশু ও গুণবান পণ্ডিতদের হত্যা করে, তাদের কঠিনতম শাস্তি দিতে হবে”। (মনুসংহিতা ৯/২৩২)
“যারা নারীদের ধর্ষণ করে বা উত্যক্ত করে বা তাদের ব্যাভিচারে প্ররোচিত করে তাদের এমন শাস্তি দিতে হবে যাতে তা অন্যদের মধ্যে ভীতি সঞ্চার করে এবং কেউ তা করতে আর সাহস না পায়”। (মনুসংহিতা ৮/৩৫২)
মজার হলেও আজকাল অনেক বিচারক নপুংসকরণকেই ধর্ষণের উপযুক্ত শাস্তি বলে রায় দিচ্ছেন। তারা মনে করেন এতে করে ক্রমবর্ধমান হারে বেড়ে যাওয়া ধর্ষণের হার কমানো সম্ভব।
“যদি কেউ মা, স্ত্রী বা কন্যার নামে মিথ্যা দোষারোপ করে তবে তাকে শাস্তি দিতে হবে”। (মনুসংহিতা ৮/২৭৫)
“যদি কেউ কোন ন্যায়সঙ্গত কারণ ছাড়া মা, বাবা, স্ত্রী বা সন্তান ত্যাগ করে, তাকে কঠিন দণ্ড দিতে হবে”। (মনুসংহিতা ৮/৩৮৯)
নারীর অগ্রাধিকার:
নারীর অগ্রস্থান দেবার প্রবাদবাক্যটিও মনে হয় মনুস্মৃতি থেকে উদ্ভব হয়েছে।
“বাহনে বা যানে আরোহী ব্যক্তির পক্ষে বয়স্ক ব্যক্তি, ক্লান্ত ব্যক্তি, ভারবাহী ব্যক্তি, বর, রাজা, স্নাতক এবং স্ত্রীলোকদের পথ ছেড়ে দেয়া কর্তব্য”। (মনুসংহিতা ২/১৩৮)
“নববিবাহিতা বধূ, কন্যা এবং গর্ভবতী মহিলাদের অতিথি ভোজনের পূর্বেই ভোজন প্রদান করতে হবে”। (মনুসংহিতা ৩/১১৪)
আমরা কি এবার মাতৃশক্তির প্রতি সম্মান এবং শ্রদ্ধা প্রদর্শনপূর্বক এই সত্য মনুবাদ সমাজে প্রয়োগ করতে একসাথে কাজ করতে পারি না? এছাড়া আর কিভাবে সমাজ, জাতি ও বিশ্বে উন্নতি ধরে রাখা সম্ভব?

No comments:

Post a Comment

ধন্যবাদ

বৈশিষ্ট্যযুক্ত পোস্ট

যজুর্বেদ অধ্যায় ১২

  ॥ ও৩ম্ ॥ অথ দ্বাদশাऽধ্যায়ারম্ভঃ ও৩ম্ বিশ্বা॑নি দেব সবিতর্দুরি॒তানি॒ পরা॑ সুব । য়দ্ভ॒দ্রং তন্ন॒ऽআ সু॑ব ॥ য়জুঃ৩০.৩ ॥ তত্রাদৌ বিদ্বদ্গুণানাহ ...

Post Top Ad

ধন্যবাদ