দুর্গাপূজা - ধর্ম্মতত্ত্ব

ধর্ম্মতত্ত্ব

ধর্ম বিষয়ে জ্ঞান, ধর্ম গ্রন্থ কি , হিন্দু মুসলমান সম্প্রদায়, ইসলাম খ্রীষ্ট মত বিষয়ে তত্ত্ব ও সনাতন ধর্ম নিয়ে আলোচনা

धर्म मानव मात्र का एक है, मानवों के धर्म अलग अलग नहीं होते-Theology

সাম্প্রতিক প্রবন্ধ

Post Top Ad

স্বাগতম

15 July, 2021

দুর্গাপূজা

দুর্গাপূজা

“দুর্গা”- ঈশ্বরের গুণবাচক নাম

‘দুর্গা’ নামটির ব্যাখ্যা নিম্নোক্তরূপ

দৈত্যনাশার্থবচনো দকারঃ পরিকীর্তিতঃ।

 উকারো বিঘ্ননাশস্য বাচকো বেদসম্মত।।

রেফো রোগঘ্নবচনো গশ্চ পাপঘ্নবাচকঃ।

  ভয়শত্রুঘ্নবচনশ্চাকারঃ পরিকীর্তিত।।

(পূজা-বিজ্ঞান, স্বামী প্রমেয়ানন্দ, উদ্বোধন কার্যালয়, কলকাতা, ১৯৯৯, পৃষ্ঠা ৪৪ থেকে উদ্ধৃত)

- ‘দ’ অক্ষর দৈত্যনাশক, উ-কার বিঘ্ননাশক, ‘রেফ’ রোগনাশক, ‘গ’ অক্ষর পাপনাশক ও অ-কার ভয়-শত্রুনাশক। অর্থাৎ, দৈত্য, বিঘ্ন, রোগ, পাপ ও ভয়-শত্রুর হাত থেকে যিনি রক্ষা করেন, তিনিই দুর্গা। অন্যদিকে শব্দকল্পদ্রুম অনুসারে, “দুর্গং নাশয়তি যা নিত্যং সা দুর্গা বা প্রকীর্তিতা” – অর্থাৎ, দুর্গ নামক অসুরকে যিনি বধ করেন তিনিই নিত্য দুর্গা নামে অভিহিতা। আবার শ্রীশ্রীচণ্ডী অনুসারে এই দেবীই ‘নিঃশেষদেবগণশক্তিসমূহমূর্ত্যাঃ’ বা সকল দেবতার সম্মিলিত শক্তির প্রতিমূর্তি।(শ্রীশ্রীচণ্ডী ৪।৩)
ইতিহাস অনুযায়ী খৃষ্টীয় পঞ্চদশ শতাব্দীর মধ্যভাগে রাজশাহীর তাহের পুরের উদয় নারায়ণের পুত্র রাজা কংশনারায়ণ খাঁ (বঙ্গভাষা সাহিত্য ডঃদীনেশ সেন) যখন তাঁর প্রধান পুরোহিত ও সভা পন্ডিত নাটোরস্থ বাসুদেবপুরে গ্রামের শাক্ত মতালম্বী রমেশ চন্দ্র শাস্ত্রীর কাছে জানলেন চার প্রকার যজ্ঞ আছে, কিন্তু রাজসূয়,বাজপেয়ি ও বিশ্বজিৎ এই তিনপ্রাকার যজ্ঞ স্বাধীন সার্বভৌম রাজচক্রবর্ত্তী দ্বিগজয়ী বীরের এবং অশ্বমেধ কলিতে অচল তাই তিনি মহা আড়ম্বরে যজ্ঞের অনুরূপ মহাপূজার ব্যবস্থা করেন যা বর্তমান বাঙালীরা মহা ঘটা করে দূর্গাপূজা করে। ঐ সময় প্রায় আট লক্ষ টাকা খরচ করে পূজা করেন এবং এই পূজার নিয়ম কানুন শ্লোক(যাকে মন্ত্র বলা ঠিক নয়) সব কিছু ওই শাক্ত মতাবলম্বী রমেশচন্দ্র শাস্ত্রীর তৈরী। মার্কন্ডেয় মুনির নামে লেখা চন্ডিপুরাণ, মার্কেন্ডয় পুরাণের ৮১ থেকে ৯৩ টি অর্থাৎ ১৩ টি অধ্যায় মোট ৭০০ টি শ্লোক নিয়ে চন্ডিপুরাণ রচিত ইহাকে 'সপ্তশতী'ও বলা হয়। এ শবনৈ ও পাঠে আবেগ ও ভক্তি উৎপত্তি হয় বটে, কিন্তু এটা ঈশ্বরীয় ব্যাপার কিছু নেই।
এর পুরো  ব্যাখ্যা গোয়ালিওর রাজ্যের ভিন্ড নামক স্থানে গবেশক দ্বারা প্রাপ্ত রাজা ভোজ দ্বারা রচিত ইতিহাস সঞ্জিবনী গ্রন্থে প্রামাণ পাওয়া যায়। পরে নদীয়ার রাজা কৃষ্ণচন্দ্র ১৭৪১ খৃষ্টাব্দে মতান্তরে ১৭৫৭ খৃষ্টাব্দে কৃত্তিবাস রামায়ণ অনুসারে প্রথম বর্তমানের(জগদ্ধাত্রী) মত দূর্গা পূজা চালু করেন। 

বেদ এর মধ্যে দুর্গা শব্দ সরাসরি দেবী অর্থে নেই। তবে নিম্নরূপ 'দূর্গাণি' আছে, যার অর্থ নিরুক্ত অনুসারে "দুর্গতি ও দুর্গম স্থান"! এই মন্ত্রে মূলত অগ্নি তথা বিজ্ঞান স্বরূপ জগদীশ্বরকেই তথা পরমাত্মাকেই 'দূর্গানি' বলা হয়েছে। কারণ অগ্নিই আমাদের দুর্গতি ও দূর্গম স্থান এবং সকল দুঃখদানকারী পাপচার থেকে পার করেন।

"জাতবেদসে সুনবাম সোমমরাতীযতো নি দহাতি বেদঃ।
স নঃ পর্ষদতি দুর্গাণি বিশ্বা নাবেব সিন্ধুংতাত্যগ্নিঃ।।"
ঋগবেদ ১।৯৯।১  তৈত্তিরীয় অরণ্যক প্রপাঠক ১০, অনুবাক ১-৬ যাহা পৌরাণিক দুর্গা সূক্ত
পদার্থঃ (জাতবেদসে) উৎপন্ন চরাচর কে জ্ঞাত জগদীশ্বরের জন্য আমরা (সোমম্) সমস্ত ঐশ্বর্যযুক্ত সাংসারিক পদার্থের (সুনবাম) নিষ্কর্ষন করি, তিনি (অরাতীয়তঃ) অধর্মী দুষ্টজনের (বেদঃ) ধন কে [ বেদ ইতি ধননামানি; নিঘন্টু ২/১০] (নি দহাতি) নিরন্তন নষ্ট করেন (সঃ) তিনি (অগ্নিঃ) বিজ্ঞানস্বরূপ জগদীশ্বর! যেমন মাঝি (নাবেব) নৌকা দ্বারা (সিন্ধুম) নদী বা সমুদ্রের পার করেন, সেরূপ (নঃ) আমাদের (অতিঃ) অত্যন্ত (দূর্গাণি) দুর্গতি, দূর্গম স্থান ও [দূর্গণি দূর্গমনানি স্থানানি; নিরুক্ত ১৪।৩৩]  (অতিদুরিতা) অতি দুঃখদানকারী (বিশ্বা) সমস্ত পাপাচরন থেকে (পর্ষত) পার করেন।।

-এই মন্ত্র উপমালঙ্কার যুক্ত। হে "জাতবেদ" পরব্রহ্মন্ ! আপনি জাতবেদ। সৃষ্টি-মুহূর্তেই বিশ্বজগৎকে আপনি জানেন এবং সর্বত্র ব্যাপক হইয়া বিদ্যমান আছেন। যে পরমেশ্বর বিদ্বান্ ব্যক্তিদের দ্বারা জ্ঞাত ও সর্বত্র বিদ্যমান, (জাত অর্থাৎ প্রাদুর্ভূত) অনন্ত ঐশ্বর্যবান এবং অনন্ত জ্ঞানবান বলিয়া সেই পরমেশ্বর "জাতবেদ" "বযং সোমং সুনবাম" যে সমস্ত সমগুণ বিশিষ্ট প্রিয় পদার্থ আমাদের আছে, সে সমস্তই আপনাকে সমর্পণ করিতেছি।
হে কৃপাময় ! "অরাতীযত", দুষ্ট শত্রু, যাহারা আমাদের ন্যায় ধর্মাত্মাদের বিরোধী আপনি তাহাদের "বেদঃ" ধন, ঐশ্বর্য প্রভৃতি "নিদহাতি" নিত্য দহন করিয়া থাকেন। তাহারা যেন দুষ্ট কর্ম পরিত্যাগ করিয়া শ্রেষ্ঠ কর্মে প্রবৃত্ত হয় "নঃ" আমাদের "দুর্গাণি বিশ্বা" সম্পূর্ণ দুঃসহ দুঃখের হাত হইতে "পর্ষদতি" রক্ষা করিয়া আপনি নিত্য সুখ প্রদান করুন।
"নাবেব সিন্ধুম" অতি কঠিন দুস্তর নদী বা সমুদ্র অতিক্রম করিতে হইলে যেমন নৌকা প্রয়োজন, সেইরূপ "দুরিতাত্যগ্নিঃ" আমাদের সর্বপ্রকার পাপজনিত দুঃখ এবং পীড়া হইতে পৃথক করিয়া ইহলোকে এবং মুক্তিতে অবিলম্বে সুখ প্রদান করুন।।

সরলার্থঃ উৎপন্ন চরাচর কে জ্ঞাত জগদীশ্বরের জন্য আমরা সমস্ত ঐশ্বর্যযুক্ত সাংসারিক পদার্থের নিষ্কর্ষন করি, তিনি অধর্মী দুষ্টজনের ধন কে নিরন্তন নষ্ট করেন, তিনি বিজ্ঞানস্বরূপ জগদীশ্বর! যেমন মাঝি নৌকা দ্বারা নদী বা সমুদ্রের পার করেন, সেরূপ আমাদের অত্যন্ত দুর্গতি, দূর্গম স্থান ও অতি দুঃখদানকারী সমস্ত পাপাচরন থেকে পার করেন।।

তামগ্নিবর্ণা তপসা জলন্তী বৈরোচনী কর্মফলেষু জুষ্টাম্। 
দুর্গা দেবীং শরণমহং প্রপদ্যে সুতরসি তরসে নমঃ।।২।। 
 
পদার্থঃ (তামগ্নিবর্ণা) অগ্নির ন্যায় প্রকাশস্বরূপ (তপসা) স্বকীয় সন্তাপ দ্বারা (জলন্তী) দুষ্টের দহনকারী (বৈরোচনীম্) স্বপ্রকাশ (কর্মফলেষু) কর্মফলের নিমিত্তে (জুষ্টাম্) সেবিত (দূর্গা দেবীম্) দুর্গতি নাশকারী পরমাত্মার (শরণমহম্) আমি শরণ (প্রপদ্যে) প্রাপ্ত করি (সুতরসি তরসে নমঃ ) হে সংসার ত্রাণকারী পরমাত্মা তোমাকে নমস্কার।। 
 
অগ্নে⁠ ত্বং পা⁠রয়া⁠ নব্যো⁠ অ⁠স্মান্থ্স্ব⁠স্তিভি­⁠রতি⁠ দু⁠র্গাণি⁠ বিশ্বা⁠ । 
পূশ্চ⁠ পৃ⁠থ্বী ব⁠হু⁠লা ন⁠ উ⁠র্বী ভবা⁠ তো⁠কায়⁠ তন⁠য়ায়⁠ শংয়োঃ ॥ ৩॥ 
 
পদার্থঃ হে (নব্যঃ অগ্নে) স্তুতির যোগ্য জ্ঞানস্বরূপ জগদীশ্বর (ত্বম্) তুমি (অস্মান্) আমাদের (স্বস্তিভিরতিঃ) সুখের রীতি দ্বারা (বিশ্বা দুর্গা) সমস্ত আপদ থেকে (অতি) অতিশয় (পারয়ঃ) পার করো। (ন) আমাদের (পূশ্চ) নিবাসযোগ্য (পৃথ্বী) বিস্তীর্ণ ভূমি এবং (উর্বী) সর্ব নিষ্পাদনযোগ্য ভূমি (বহুলা) প্রশস্ত হোক, (তোকায়) আমাদের সন্তান তথা (তনয়ায়) তাদের সন্তানকে (শংয়োর্ভবা) সুখযুক্ত করো।। 
 
বিশ্বা⁠নি নো দু⁠র্গহা⁠ জাতবেদঃ⁠ সিন্ধু⁠ন্ন না⁠বা দু⁠রি⁠তাঽতি⁠পর্ষি । 
অগ্নে⁠ অত্রি⁠বন্মন গৃণা⁠নো⁠ঽস্মাকং⁠ বোধ্যবি⁠তা ত⁠নূনা⁠ম্ ॥ ৪॥ 
 
পদার্থঃ হে ( দুর্গহা জাতবেদঃ) আপদহন্তা সর্বজ্ঞ পরমেশ্বর তুমি (নঃ) আমাদের (বিশ্বানি দুরিতা) সমস্ত পাপ থেকে (নাবা সিন্ধুম্) সমুদ্রে নৌকার মতো (অতিপর্ষি) অতিশয় পার করো। হে (অগ্নে) জ্ঞানস্বরূপ পরমেশ্বর (অত্রিবত্) জীবন্মুক্ত পুরুষের সমান (মনসা) মন দ্বারা (গৃণানঃ) আমাদের স্তুতিকৃত তুমি (অস্মাকম্) আমাদের (তনুনাম্) শরীরের (অবিতা) রক্ষক (বোধি) হও।। 
 
পৃ⁠ত⁠না⁠জিতং⁠⁠ সহ⁠মানমু⁠গ্রম⁠গ্নি⁠ হু⁠বেম পর⁠মাত্সধস্থা⁠ত্ ।
 স নঃ⁠ পর্ষ⁠দতি⁠ দু⁠র্গাণি⁠ বিশ্বা⁠ ক্ষাম⁠দ্দে⁠বো অতি⁠ দুরি⁠তাত্য⁠গ্নিঃ ॥ ৫॥ 
 
পদার্থঃ (পরমাত্ সধস্থাত্) উৎকৃষ্ট স্থানে অধিষ্ঠিত (পৃতনাজিতম্) শত্রু বিজেতা (সহমানম্) শত্রুনাশক (উগ্রম্) উগ্র (অগ্নি) জ্ঞানস্বরূপ পরমেশ্বর কে (হুবেম্) আহ্বান করি (স) সেই (অগ্নি দেব) জ্ঞানস্বরূপ পরমাত্মদেব (বিশ্বা) সমস্ত (দুর্গাণি) আপদ (অতি)অতিশয় (ক্ষামত) নাশশীল বস্তু (দুরিতা) পাপ থেকে (অতি) অতিশয় (নঃ) আমাদের (পর্ষত্) রক্ষা করেন।।৫।।
 
 প্র⁠ত্নোষি⁠ ক⁠মীড্যো⁠ অধ্ব⁠রেষু⁠ স⁠নাচ্চ⁠ হোতা⁠ নব্য⁠শ্চ⁠ সথ্সি⁠ । 
স্বাঞ্চা⁠গ্নে ত⁠নুবং⁠ পি⁠প্রয়⁠স্বা⁠স্মভ্যং­⁠ চ⁠ সৌভ⁠গ⁠মায়⁠জস্ব ॥ ৬॥ 
 
পদার্থঃ (অগ্নে) হে পরমাত্মন্! (প্রত্নঃ) তুমি পুরাতন (হি) এই কারণে (ইড্য) সবার স্তুতিযোগ্য (সনাত্, চ, হোতা) শাশ্বতিক হবনপ্রযোজক (নব্যঃ চ) নিত্যনূতন এবং (অধ্বরেষু, সৎসি) হিংসারহিত যজ্ঞে বিরাজমান (স্বাম্ তন্বম্ চ) আপন ব্রহ্মণ্ডরূপী শরীর কে (পিপ্রয়ত্ব) প্রীণিত করে (অস্মভ্যম্, চ) এবং আমাদের অর্থ (সৌভগম্, আয়জস্ব) সৌভাগ্য প্রাপ্ত করাও।।৬।।

দুর্গাপূজোর কাহিনী পদ্মপুরাণের পাতালখন্ড,বৃহৎ নন্দিকেশ্বর পুরাণ, কালিকা পুরাণ, বৃহদ্ধর্ম পুরাণ, দেবী ভাগবত ইত্যাদি অর্ব্বাচীন গ্রন্থের ফসল। এসবের ওপর ভিত্তিকরে কৃর্ত্তিবাস তাঁর রামায়ণে  দূর্গাপূজোর উল্লেখ করে গেছেন। মূল বাল্মীকির রামায়ণে রামের দুর্গাপূজার কোনো বিবরণ নেই। কিন্তু রামায়ণের পদ্যানুবাদ করার সময় কৃত্তিবাস ওঝা কালিকাপুরাণ ও বৃহদ্ধর্মপুরাণ-এর কাহিনি কিঞ্চিৎ পরিবর্তন করে সংযোজিত করেছেন। কৃত্তিবাসি রামায়ণ অনুসারে, রাবণ ছিলেন শিবভক্ত। মা পার্বতী তাকে রক্ষা করতেন। তাই ব্রহ্মা রামকে পরামর্শ দেন, শিবের স্ত্রী পার্বতী কে পূজা করে তাকে তুষ্ট করতে। তাতে রাবণ বধ রামের পক্ষে সহজসাধ্য হবে। ব্রহ্মার পরামর্শে রাম শরৎকালে পার্বতীর দুর্গতিনাশিনী রূপের বোধন, চণ্ডীপাঠ ও মহাপূজার আয়োজন করেন। আশ্বিন মাসের শুক্লা ষষ্ঠীর দিন রাম কল্পারম্ভ করেন। তারপর সন্ধ্যায় বোধন, আমন্ত্রণ ও অধিবাস করেন। মহাসপ্তমী, মহাষ্টমী ও সন্ধিপূজার পরেও দুর্গার আবির্ভাব না ঘটায়, রাম ১০৮টি নীল পদ্ম দিয়ে মহানবমী পূজার পরিকল্পনা করেন। হনুমান তাকে ১০৮টি পদ্ম জোগাড় করে দেন। মহামায়া রামকে পরীক্ষা করার জন্য একটি পদ্ম লুকিয়ে রাখেন। একটি পদ্ম না পেয়ে রাম পদ্মের বদলে নিজের একটি চোখ উপড়ে দুর্গাকে নিবেদন করতে গেলে, দেবী পার্বতী আবির্ভূত হয়ে রামকে কাঙ্ক্ষিত বর দেন। তবে সম্প্রতি একটি জরিপে দেখা গেছে কৃত্তিবাস ওঝা যে কাহিনী সংকলন করেছেন, তা রামচন্দ্রের প্রকৃত জীবনী বাল্মিকী রামায়ণে বা রামায়ণের অন্যান্য অনুবাদসমূহ যেমন, তুলসীদাস রচিত হিন্দি রামচরিতমানসতামিলভাষায় কাম্ব রামায়ণকন্নড় ভাষায় কুমুদেন্দু রামায়ণঅসমিয়া ভাষায় কথা রামায়ণওড়িয়া ভাষায় জগমোহন রামায়ণমারাঠি ভাষায় ভাবার্থ রামায়ণউর্দু ভাষায় পুথি রামায়ণ প্রভৃতিতে উল্লেখিত হয় নি। এছাড়াও যোগবাশিষ্ট রামায়ণে উক্ত হয়নি।


                                      ( মানভূমে পাওয়া দেবী দুর্গার প্রস্তর মূর্তি, ভারতীয় জাদুঘরে (কলকাতা) রক্ষিত)

দুর্গাপূজা সমগ্র হিন্দুসমাজেই প্রচলিত। তবে বাঙালি হিন্দু সমাজে এটি অন্যতম বিশেষ ধর্মীয় ও সামাজিক উৎসব। আশ্বিন বা চৈত্র মাসের শুক্লপক্ষে দুর্গাপূজা করা হয়। আশ্বিন মাসের দুর্গাপূজা শারদীয়া দুর্গাপূজা এবং চৈত্র মাসের দুর্গাপূজা বাসন্তী দুর্গাপূজা নামে পরিচিত। শারদীয়া দুর্গাপূজার জনপ্রিয়তা বেশি। বাসন্তী দুর্গাপূজা মূলত কয়েকটি পরিবারের মধ্যে সীমাবদ্ধ। রঘুনন্দনের (১৫শ-১৬শ শতক) তিথিতত্ত্ব ইত্যাদি গ্রন্থে দুর্গাপূজার বিস্তৃত বর্ণনা থাকায় অনুমান করা হয় যে, বাংলায় দুর্গাপূজা দশম অথবা একাদশ শতকেই প্রচলিত ছিল। হয়তো কংসনারায়ণ কিংবা কৃষ্ণচন্দ্রের সময় থেকে তা জাঁকজমকের সঙ্গে অনুষ্ঠিত হতে থাকে। উনিশ শতকে কলকাতায় মহাসমারোহে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হতো। 

দুর্গাপূজা ভারত, বাংলাদেশ ও নেপাল সহ ভারতীয় উপমহাদেশ ও বিশ্বের একাধিক রাষ্ট্রে পালিত হয়ে থাকে। তবে বাঙালি হিন্দু সমাজের প্রধান ধর্মীয় উৎসব হওয়ার দরুন ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, ত্রিপুরা ও ঝাড়খণ্ড রাজ্যে ও বাংলাদেশে দুর্গাপূজা বিশেষ জাঁকজমকের সঙ্গে পালিত হয়। 

এমনকি ভারতের অসম,বিহার, ঝাড়খণ্ড,মণিপুর এবংওড়িশা রাজ্যেও দুর্গাপূজা মহাসমারোহে পালিত হয়ে থাকে। ভারতের অন্যান্য রাজ্যে প্রবাসী বাঙালি ও স্থানীয় জনসাধারণ নিজ নিজ প্রথামাফিক শারদীয়া দুর্গাপূজা ও নবরাত্রি উৎসব পালন করে। এমনকি পাশ্চাত্য দেশগুলিতে কর্মসূত্রে বসবাসরত বাঙালিরাও দুর্গাপূজা পালন করে থাকেন। ২০০৬ সালে গ্রেট ব্রিটেনের রাজধানী লন্ডনের ব্রিটিশ মিউজিয়ামের গ্রেট হলে "ভয়েসেস অফ বেঙ্গল" মরসুম নামে একটি সাংস্কৃতিক প্রদর্শনীর অঙ্গ হিসেবে স্থানীয় বাঙালি অভিবাসীরা ও জাদুঘর কর্তৃপক্ষ এক বিরাট দুর্গাপূজার আয়োজন করেছিলেন।

সাধারণত আশ্বিন মাসের শুক্ল পক্ষের ষষ্ঠ থেকে দশম দিন পর্যন্ত শারদীয়া দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হয়। এই পাঁচটি দিন যথাক্রমে "দুর্গাষষ্ঠী", "মহাসপ্তমী", "মহাষ্টমী", "মহানবমী" ও "বিজয়াদশমী" নামে পরিচিত। আশ্বিন মাসের শুক্ল পক্ষটিকে বলা হয় "দেবীপক্ষ"। দেবীপক্ষের সূচনার অমাবস্যাটির নাম মহালয়া; এই দিন হিন্দুরা তর্পণ করে তাদের পূর্বপুরুষদের প্রতি শ্রদ্ধানিবেদন করে। দেবীপক্ষের শেষ দিনটি হল কোজাগরী পূর্ণিমা।

এই দিন হিন্দু দেবী লক্ষ্মীর পূজা করা হয়। কোথাও কোথাও পনেরো দিন ধরে দুর্গাপূজা পালিত হয়। সেক্ষেত্রে মহালয়ার আগের নবমী তিথিতে পূজা শুরু হয়। পশ্চিমবঙ্গের বিষ্ণুপুর শহরের মৃন্ময়ী মন্দির এবং অনেক পরিবারে এই রীতি প্রচলিত আছে। পশ্চিমবঙ্গ ও ত্রিপুরাতে মহাসপ্তমী থেকে বিজয়াদশমী পর্যন্ত (শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে মহাসপ্তমী থেকে কোজাগরী লক্ষ্মীপূজা পর্যন্ত) চার দিন সরকারি ছুটি থাকে। বাংলাদেশে বিজয়াদশমীতে সর্বসাধারণের জন্য এক দিন এবং হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের জন্য ৩ দিন সরকারি ছুটি থাকে।

দুর্গাপূজা তিন প্রকার: সাত্ত্বিক (জপ, যজ্ঞ ও নিরামিষ ভোগ দ্বারা পূজা), তামসিক (কিরাতদের জন্য বিহিত; এতে জপ, যজ্ঞ ও মন্ত্র নেই; মদ্য, মাংস প্রভৃতি দ্বারা পূজা করা হয়) ও রাজসিক (পশুবলি ও আমিষ ভোগ দ্বারা পূজা করা হয়)। অতীতে দুর্গাপূজার সময় ছাগ, মেষ, মহিষ, হরিণ, শূকর, গন্ডার, ব্যাঘ্র, গোসাপ, কচ্ছপ বা পাখি বলি দেওয়া হতো; কোনো কোনো গ্রন্থে নরবলির বিধানও আছে। বর্তমানে অবশ্য বলির প্রচলন নেই বললেই চলে।

দেবী সাধারণত দশভুজা, তবে শাস্ত্রানুসারে তাঁর বাহুর সংখ্যা হতে পারে চার, আট, দশ, ষোলো, আঠারো বা কুড়ি।

দুর্গাপূজা যে সমস্ত গ্রন্থে পাওয়া যায়:-জীমূতবাহনের (আনু. ১০৫০-১১৫০) দুর্গোৎসবনির্ণয়, বিদ্যাপতির (১৩৭৪-১৪৬০) দুর্গাভক্তিতরঙ্গিণী, শূলপাণির (১৩৭৫-১৪৬০) দুর্গোৎসববিবেক, কৃত্তিবাস ওঝার (আনু. ১৩৮১-১৪৬১)  রামায়ণ, বাচস্পতি মিশ্রের (১৪২৫-১৪৮০) ক্রিয়াচিন্তামণি, রঘুনন্দনের (১৫শ-১৬শ শতক) তিথিতত্ত্ব ইত্যাদি গ্রন্থে

দূর্গাপূজার ইতিহাস

দুর্গাপূজা বাঙ্গালীর সৃষ্টি, ভারতের সর্ব্বত্র আমরা এই পূজাকে জনপ্রিয় করে তুলেছি। মধ্যযুগে ১৫০৮ সালে রাজশাহীর তাহিরপুরের রাজা কংসনারায়ণ খাঁ ঐতিহাসিকভাবে বঙ্গদেশে সর্বপ্রথম মহাআড়ম্বরে শারদীয়া দুর্গাপূজা উদযাপন শুরু করেছিলেন। খৃষ্টীয় পঞ্চদশ শতাব্দীর মধ্যভাগে রাজসাহীতে তাহেরপুরের ভুঞ্যা রাজা ছিলেন কংসনারায়ণ খাঁ  ( সূত্র : "বঙ্গভাষা ও সাহিত্য" -ডঃ দীনেশ সেন তিনি যজ্ঞ করতে মনস্থ করায় তাঁর পুরোহিত এবং শ্রেষ্ঠ সভাপন্ডিত, (নাটোরস্থ বাসুদেবপুর গ্রামের) পন্ডিত রমেশ চন্দ্র শাস্ত্রী তাঁকে জানালেন "চার রকম যজ্ঞ আছে ১) রাজসূয় ২) রাজপেয় ৩) বিশ্বজিৎ এবং ৪) অশ্বমেধ। প্রথম তিনপ্রকার যজ্ঞ, স্বাধীন সার্ব্ববৌম রাজচক্রবর্তী দিগ্বিজয়ী বীরের অনুষ্ঠেয়, আর অশ্বমেধ বা গোমেধ যজ্ঞ কলিতে অচল। তবে আপনার ইচ্ছা পূরণের জন্য ঐ সব যজ্ঞেরই অনুরূপ এক মহা আড়ম্বর মহাপূজা ব্যবস্থা আমি করে দিব"-এই বলে, তিনি বর্ত্তমানে যে মহাঘটা করে দূর্গাপুজা হয়, তার সমস্ত মন্ত্র (শ্লোক) পদ্ধতি নিয়মাদি রচনা করে ছিলেন।
রাজা কংসনারায়ণ খাঁ এই দুর্গাপূজার তখনকার দিনে প্রায় আট লক্ষ টাকা ব্যয় করেছিলেন। [রাজা কংসনারায়ণ খাঁর বংশধর, কাশী ধর্ম্মমহামন্ডলের অন্যতম পৃষ্ঠপোষক রাজা শশিশেখরেশ্বর রায়ও প্রাচীন দলিল ও কাগজপত্র দৃষ্টে এই কতা সমর্থন করে গেছেন]। পরে পরে সারা বাংলায় এই মহাপূজার সংবাদ কুসুমিত পল্লমিত আকারে ছড়িয়ে পড়লো; অন্যান্য রাজারাও আপন আপন ঐশ্বর্য্য, আড়ম্বর এবং পৌরুষ দেখাবার জন্য এই ব্যয়বহুল পূজার অনুষ্ঠান করতে লাগলো। মহাকবি কৃত্তিবাস ছিলেন এই ভূঞ্যারাজা কংসনারায়ণেরই সভাকবি। তিনি তাঁর রচিত রামায়ণৈ তাঁর অদ্বূত কল্পনা এবং কবিত্বের বর্ণঢ্য আলোক সম্পাতে রামচন্দ্রকে দিয়ে অকাল বোধনাদির কাহিনী ভক্তিস্নিগ্ধ ভাষায় প্রকাশ করলেন।

একজন মরমী সাধকের ভাষায় দূর্গাপূজার আধ্যাত্মিক মর্ম্ম
"আজি ষষ্ঠীর বোধনে জাগ কুল কুন্ডলিনী।
মূলাধারে শিবরূপ বিল্বতলে
সার্দ্ধ ত্রিবেষ্টন করি কুতুহলে
কি করাণে বল নিদ্রা যাও ছলে
ছলিয়া ছাওয়ালে ছলনারূপিনী।
উঠ ধীরে ধীরে ঘুমে ঢলে ঢলে
চল ভেদ করি ছটিশতদলে
ব্রহ্ম রন্ধ্র পারে উঠ সহস্রারে ওঁঙ্কার মাঝারে ঝঙ্কার কারিণী।"
হিন্দুর এক বিশাল অংশ জড়ের পূজা করে জড়বুদ্ধি সম্পন্ন হয়ে পড়েছে। তাই দুর্গাপূজার ঐতিহাসিক সত্য গ্রহণ করে না, বৈপ্লবিক শক্তিতত্ত্বের বীজ গ্রহণ করে দানবনাশী সুপ্ত দেবশক্তিকে নিজের মধ্যে বিকশিত করেও তোলে না, এর আধ্যাত্বিক তত্ত্বও Realise করে আনন্দলাভের চেষ্টা করে না। এই হ'ল কালচক্র। বাঙ্গালী হিন্দুরা পন্ডিত রমেশ শাস্ত্রী আর কৃত্তিবাসের কৃত্তিকে "বেদবাক্য" মনে করে। 
শাক্ত ছিলেন বিভিন্ন সম্প্রদায় যে যার ইস্টের প্রাধান্যের জন্য পৃথক পৃথক পুরাণ, পুঁথি রচনা করে সেই সেই দেবতা সর্বশ্রেষ্ঠত্ব, অনাদিত্ব, অদ্ভুত অদ্ভুত মহিমা কাল্পনিক গল্পচ্ছলে, খুবই মনোরম রোচক ভাষায়, ব্যাস বাল্মীকি ঋষএদের নাম দিয়ে রচনা করেছিলেন।
বেদ বা উপনিষদে যেখানে যেখানে সেই একই পরমাত্মার এক একটা attribute অনুযায়ী বিষ্ণু রুদ্র শিব ইন্দ্র অগ্নি বায়ু ইত্যাদি নাম ঋষিরা দিয়ে গেছেন, ঐ সমস্ত সম্প্রদায়ীরা ঐ এক একটা নাম অনুযায়ী এক একজন দেবতা স্থির করে, মনোমত রুচিমত গুন মহিমা আরোপ করে কল্পনা প্রভাবে শাস্ত্র রচনা করে সেই সেই দেবতার পূজা পদ্ধতি মূর্ত্তি পূজার প্রচলন করে গেছেন। এবং সবাই বলে গেছেন-তাদের ইস্টদেবের নাম বেদে আছে, প্রাচীনতম এবং অনাদি !
বেদে পরমাত্মা সকলের মঙ্গল করেন বলে তিনি শিব "শিবং সুখং তদস্যাস্তি। অর্শাদ্যচ্। শিবয়তীতি বা তৎ করোতীতিণ্যন্তাৎ পচাদ্যচ্"-অর্থাৎ যিনি সুখস্বরূপ, মঙ্গল নিধান, সেই পরমাত্মার আর এক নাম শিব; যঃ শং কল্যাণং সুখং করোতি স শঙ্করঃ- কল্যাণ এবং সুখের কর্ত্তা বলে পরমাত্মাকে শঙ্কর বলা হয়।
কিন্তু শৈব সম্প্রদয়ের হাতে পড়ে পাষাণ প্রিয় ভন্ডদের কৃত্তিত্বে শিব হলেন একটা স্বতন্ত্র দেবতা, শ্মশানচারী, গাঁজা ধুতরা সেবী, স্ত্রীপুত্র সমন্বিত ভৈরব মুর্ত্তি !
শাক্তরাও ঠিক ঐ ভাবে শক্তি পূজা দেবী পূজার অনাদিত্ব প্রমাণ করবার জন্য বেদ----উপনিষদ হাতড়িয়েছে। খৃঃপৃঃ দ্বিতীয় শতাব্দীর শেষ পর্য্যন্তও ভারতে বেদিক আর্য্যদের মধ্যে এই দেবী পূজা ছিলো না। ছান্দগ্য এবং কেনোপনিষদে রুদ্রানী, ভবানী, উমা প্রভৃতি যে নাম আছে, ঋগ্বেদরে [বেদিক সংশোধক মন্ডল সংস্করণ] ৪র্থ খন্ডে ৯৫৭।৯৫৮ পৃষ্ঠাতে ভদ্রা "শিবা" "দূর্গা" প্রভৃতির যে উল্লেখ আছে
["সহস্র সম্মিতাং দুর্গাং জাত বেদসে সুনবাম্ সোমম্"], মুন্ডকোপনিষদে জাত বেদস্ অগ্নির, [কালী-করালী চ মনোজবাচ, সুলোহিতা যা চ সুধুম্রবর্ণা, স্ফুলিঙ্গিনী বিশ্বরুচী চ দেবী লোলায়মানাইতি সপ্তজিহ্বাঃ"]-ইত্যাদি আহুতি গ্রহণে সমর্থা দ্যুতিমতী সপ্তজিহ্বার যে বর্ণনা আছে-তাই থেকে শাক্তরা উপাদান সংগ্রহ করে কালী তারা দূর্গা যোড়শী বগলামুখী ইত্যাদি এক একটা স্বতন্ত্র দেবী বানিয়ে স্বতন্ত্র স্বতন্ত্র মূর্ত্তিপূজার প্রচলন করে গেছেন।
বেদে উপনিষদে কিন্তু ভদ্রা দূর্গা উমা শক্তি প্রভৃতি নামগুলি একই পরমাত্মা বাচক অর্থে ব্রহ্ম বিদ্যাপ্রকাশিকা হিসাবে ব্যবহার করা হয়েছে। "দেবী" বলতে পৃথক কোন ঠাকুর নয়, পরমেশ্বরের নামই দেবী। পরমেশ্বরের  নাম তিনলিঙ্গেই আছে, যথা-"ব্রহ্মচিতিরীশ্বরশ্চেতি"; যখন ঈশ্বরের বিশেষণ তখন "দেব" আর যখন চিতির বিশেষণ হ'বে তখন "দেবী"।

 অষ্টাদশ শতাব্দীতে নদিয়ার রাজা কৃষ্ণচন্দ্র নতুন রীতি প্রচলন করে মহালয়ার দিন থেকে শুরু করলেন সকলের মঙ্গলকামনায় যজ্ঞ, টানা নবমী পর্যন্ত চলত সেই যজ্ঞ৷ কথিত আছে, মহালয়ার পর থেকে নাকি কখনও আগুন নিভত না যজ্ঞের৷ দেবী এখানে রাজরাজশ্বরী, শক্তির প্রতীক৷ তাই যোদ্ধাবেশী৷ দেবীর বাহন এখানে সিংহরূপী৷ এখনও সেই প্রথা মেনেই রাজবাড়িতে পুজো হয় একচালার যোদ্ধা দেবীর৷ প্রতিমার মাটি মাখতে ব্যবহার করা হয় শুধুমাত্র গঙ্গাজল৷ নবদ্বীপ থেকে নিয়ে আসা হয় সেই জল৷ আগে পুজোতে বাড়ির মহিলারা উপস্থিত থাকলেও প্রতিমা নিরঞ্জনের সময় দেবীর সঙ্গে যাওয়ার নিয়ম ছিল না৷ তখন নীলকণ্ঠ পাখি দেবীপ্রতিমার সঙ্গে ভাসানে যেত৷ ভাসান হয়ে গেলেই সে ফিরে আসত রাজবাড়ির বারান্দায়; এরপর অন্দরমহলে শুরু হয়ে যেত বিজয়ার প্রস্তুতি৷ এখন আর রাজবাড়ির পুজোতে সেই জৌলুস না থাকলেও রয়ে গিয়েছে আচার রীতি৷ এখনও দেবীর পুজোয় ব্যবহার করা হয় ১০৮ টি ফোটা পদ্ম৷ জল আনা হয় নবদ্বীপের গঙ্গা থেকে৷ আগে পুজোর পরে তৈরি হত মাটির অসুর মূর্তি৷ রাজা তিরধনুক নিয়ে বধ করতেন তাকে৷ সে রীতিও এখন আর নেই৷ তবে এখনও দেশ বিদেশের লোক পুজোর সময় সকলে আমন্ত্রিত হন রাজ দালানে৷ নোয়াখালীর চৌমুহনী কলেজ রোডের রামেন্দ্রসাহার বাড়ির সামনে বিশাল আকারের ৭১ ফুট দেবী দুর্গার প্রতিমা। এটি বাংলাদেশের প্রথম সেরা প্রতিমা।

বাংলায় দেবী দুর্গার যে মূর্তিটি সচরাচর দেখা যায় সেটি পরিবারসমন্বিতা দুর্গার মূর্তি। এই মূর্তির মধ্যস্থলে দেবী দুর্গা সিংহবাহিনী ও মহিষাসুরমর্দিনী; তার মুকুটের উপরে শিবের ছোট মুখ ,দেবীর ডানপাশে উপরে দেবী লক্ষ্মী ও নিচে গণেশ; বামপাশে উপরে দেবী সরস্বতী ও নিচে কার্তিকেয়।কলকাতায় সাবর্ণ রায়চৌধুরী পরিবার ১৬১০ সালে এই সপরিবার দুর্গার প্রচলন করেন । তারা কার্তিকেয়র রূপ দেন জমিদারপুত্রের, যা তৎপূর্ব ছিল সম্রাট সমুদ্রগুপ্তের আদলে যুদ্ধের দেবতা রূপে । এছাড়াও বাঁকুড়া জেলার বিষ্ণুপুর-সংলগ্ন অঞ্চলে দেবী দুর্গা এক বিশেষ মূর্তি দেখা যায়। সেখানে দেবীর ডানপাশে উপরে গণেশ ও নিচে লক্ষ্মী, বামে উপরে কার্তিকেয় ও নিচে সরস্বতী এবং কাঠামোর উপরে নন্দী-ভৃঙ্গীসহ বৃষভবাহন শিব ও দুইপাশে দেবীর দুই সখী জয়া ও বিজয়া অবস্থান করেন। কলকাতার কোনও কোনও বাড়িতে দুর্গোৎসবে লক্ষ্মী ও গণেশকে সরস্বতী ও কার্তিকেয়ের সঙ্গে স্থান বিনিময় করতে দেখা যায়। আবার কোথাও কোথায় দুর্গাকে শিবের কোলে বসে থাকতেও দেখা যায়। এগুলি ছাড়াও বাংলার বিভিন্ন অঞ্চলে দেবী দুর্গার বিভিন্ন রকমের স্বতন্ত্র মূর্তিও চোখে পড়ে। তবে দুর্গার রূপকল্পনা বা কাঠামোবিন্যাসে যতই বৈচিত্র থাকুক, বাংলায় দুর্গোৎসবে প্রায় সর্বত্রই দেবী দুর্গা সপরিবারে পূজিতা হন। এই প্রসঙ্গে স্বামী প্রমেয়ানন্দের উক্তিটি স্মরণীয়ঃ

দুর্গার বাহন সিংহ। শ্রীশ্রীচণ্ডী-তে সিংহকে "মহাসিংহ", "বাহনকেশরী", "ধূতসট" ইত্যাদি বিশেষণে ভূষিত করা হয়েছে। (শ্রীশ্রী চন্ডী ২/৫১)

দুর্গাপূজার সময় সিংহকেও বিশেষভাবে পূজা করা হয়। দেবীপুরাণ-এ উল্লিখিত সিংহের ধ্যানে তার শরীরের বিভিন্ন স্থানে বিষ্ণু, শিব, দুর্গা প্রমুখ দেবদেবীরা অবস্থান করেন বলে উল্লেখ করা হয়েছে। অপর একটি ধ্যান মন্ত্রে সিংহকে বিষ্ণুর একটি রূপ বলা হয়েছে। কালীবিলাস তন্ত্র-এ দুর্গার বাহনকে বলা হয়েছে বিষ্ণুরূপী সিংহ(কালীবিলাস তন্ত্র ১৮/৩০)কালিকাপুরাণ অনুসারে, দুর্গার বাহন হওয়ার জন্য শিব শবদেহ, ব্রহ্মা রক্তপদ্ম ও বিষ্ণ সিংহের মূর্তি ধারণ করেছিলেন।

মার্কণ্ডেয় পুরাণ অনুসারে, হিমালয় দুর্গাকে সিংহ দেন। শিবপুরাণ অনুসারে, শুম্ভ-নিশুম্ভকে বধ করার জন্য ব্রহ্মা দুর্গাকে সিংহ দেন। পদ্মপুরাণ (সৃষ্টি খন্ড ৪৪ I৭৮)-এ আছে, দুর্গার ক্রোধ থেকে সিংহের জন্ম হয়। দেবীপুরাণ (৭/৪৫/৫০)অনুযায়ী, বিষ্ণু দুর্গার বাহন সিংহকে নির্মাণ করেছিলেন এবং সেই সিংহে সকল দেবতার অধিষ্ঠান হয়েছিল।

সিংহ রজোগুণের এক প্রচণ্ড শক্তির উচ্ছ্বাসের প্রতীক। স্বামী নির্মলানন্দ বলেছেন,

এছাড়াও সিংহ মানুষের পশুত্ববিজয়েরও প্রতীক। স্বামী প্রমেয়ানন্দ লিখেছেন,

মহিষাসুর অসুর, অর্থাৎ দেবদ্রোহী। তাই দেবীপ্রতিমায় দেবীর পদতলে দলিত এই অসুর ‘সু’ এবং ‘কু’-এর মধ্যকার চিরকালীন দ্বন্দে অশুভ শক্তির উপর শুভশক্তির বিজয়ের প্রতীক। স্বামী প্রমেয়ানন্দের ভাষায়,

তবে অসুর হলেও দুর্গোৎসবে মহিষাসুরেরও পূজার চল আছে। কালিকা পুরাণ অনুসারে, মৃত্যুর কিছুকাল পূর্বে নিজের মৃত্যুদৃশ্য স্বপ্নে দেখে ভীত মহিষাসুর ভদ্রকালীকে তুষ্ট করেছিলেন। ভদ্রকালী তাকে রক্ষার প্রতিশ্রুতি না দিলেও তার ভক্তিতে তুষ্ট হয়ে বরদান করতে ইচ্ছুক হন। মহিষাসুর দেবতাদের যজ্ঞভাগ বর চাইলে দেবী সেই বর দিতে অস্বীকৃত হন; কিন্তু মহিষাসুরকে এই বর দেন যে যেখানেই দেবী পূজিতা হবেন, সেখানেই তার চরণতলে মহিষাসুরেরও স্থান হবে।

গণেশ কার্যসিদ্ধির দেবতা। হিন্দু পুরাণের নিয়ম অনুসারে, অন্যান্য দেবতার আগে গণেশের পূজা করতে হয়। গণেশের পূজা আগে না করে অন্য কোনো দেবতার পূজা করা শাস্ত্রে নিষিদ্ধ। স্বামী প্রমেয়ানন্দ লিখেছেন,

লক্ষ্মী শ্রী, সমৃদ্ধি, বিকাশ ও অভ্যুদয়ের প্রতীক। শুধু ধনৈশ্বর্যই নয়, লক্ষ্মী চরিত্রধনেরও প্রতীক। স্বামী নির্মলানন্দের ভাষায়,

মহানামব্রত ব্রহ্মচারী অন্যদিকে সমুদ্রমন্থনে সমুদ্ভূতা দেবী লক্ষ্মীর মূর্তিতত্ত্বের অপর এক ব্যাখ্যাও দিয়েছেন,

গণেশের বাহন মূষিক বা ইঁদুর। ইঁদুর মায়া ও অষ্টপাশ ছেদনের প্রতীক। ব্রহ্মর্ষি শ্রীসত্যদেবের ভাষায়,

লক্ষ্মীর বাহন পেচক বা প্যাঁচা। রূপে ও গুণে অতুলনীয় এই দেবীর এমন কিম্ভূত বাহন কেন, সে নিয়ে বেশ কয়েকটি মত প্রচলিত। প্রথমেই স্মরণে রাখা কর্তব্য, হিন্দু শাস্ত্রে কোথাও পেচককে লক্ষ্মীর বাহনের মর্যাদা দান করা হয়নি। এই বিশ্বাস একান্তই বাঙালি লোকবিশ্বাস।

প্যাঁচা দিবান্ধ। মনে করা হয়, যাঁরা দিবান্ধ অর্থাৎ তত্ত্ববিষয়ে অজ্ঞ, তারাই পেচকধর্মী। মানুষ যতকাল পেচকধর্মী থাকে ততদিনই ঐশ্বর্যের দেবী লক্ষ্মীর আরাধনা করে সে।মহানামব্রত ব্রহ্মচারীর মতে,

(মা দুর্গার কাঠামো, মহানামব্রত ব্রহ্মচারী, মহাউদ্ধারণ মঠ, কলকাতা, পৃষ্ঠা ৭)

সরস্বতী বাণীরূপিণী বাগদেবী; তিনি জ্ঞানশক্তির প্রতীক।

(মা দুর্গার কাঠামো, মহানামব্রত ব্রহ্মচারী, মহাউদ্ধারণ মঠ, কলকাতা, পৃষ্ঠা ১১)

হংস

সরস্বতীর বাহন হংস। হংস হিন্দুদের নিকট একটি পবিত্র প্রতীক।

 (সাধন-সমর, ব্রহ্মর্ষি শ্রীসত্যদেব, সাধন-সমর কার্যালয়, কলকাতা, পৃষ্ঠা ১৭৬)

দেবসেনাপতি কার্তিকেয় বা কার্তিক সৌন্দর্য ও শৌর্যবীর্যের প্রতীক।

(পূজা-বিজ্ঞান, স্বামী প্রমেয়ানন্দ, উদ্বোধন কার্যালয়, কলকাতা, ১৯৯৯, পৃষ্ঠা ৪৯)

ময়ূর

কার্তিকেয়ের বাহন ময়ূর। সৌন্দর্য ও শৌর্য – কার্তিকেয়ের এই দুই বৈশিষ্ট্যই তার বাহন ময়ূরের মধ্যে বিদ্যমান।

বিভিন্ন পুরাণে দুর্গাপূজাঃ

যা শ্রীঃ স্বয়ং সুকৃতিনাং ভবনেষ্বলক্ষ্মীঃ
পাপাত্মানাং কৃতধিয়াং হৃদয়েষু বুদ্ধিঃ।
শ্রদ্ধা সতাং কুলজনপ্রভবস্য লজ্জা
তাং ত্বাং নতাঃ স্ম পরিপালয় দেবি! বিশ্বম্।।(শ্রী চন্ডী:-4/5)
অর্থ:- যিনি সুকৃতিশালিগণের গৃহে স্বয়ং লক্ষী,এবং যিনি পাপাত্মাগণের গৃহে অলক্ষী,যিনি নির্ম্মলচেতা ব্যক্তির হৃদয়ে বুদ্ধি, সাধুগণের শ্রদ্ধা ও সৎকুলসমূৎপন্ন ব্যক্তির লজ্জাস্বরূপিণী সেই তোমাকে আমরা প্রণাম করি।দেবি! তুমি এই‌ বিশ্ব পালন কর।
রৌদ্রায়ৈ নমো নিত্যায়ৈ গৌর্য্যৈ ধাত্র্যৈ নমো নমঃ।
জ্যোৎস্নায়ৈ চেন্দুরূপিণ্যৈ সুখায়ৈ সততং নমঃ।।(শ্রী চন্ডী:-5/10)
অর্থ:-তুমি ভীষণরূপ, তুমি নিত্যা ,তুমি গৌরীরূপে অবতীর্ণা, তুমি জগতের বিধাত্রী,তোমাকে নমস্কার,তুমি জ্যোৎস্নারূপিণী,তুমি পরমানন্দময়ী,তোমাকে সর্ব্বদা নমস্কার।
দূর্গায়ৈ দুর্গপরায়ৈ সারায়ৈ সর্ব্বকারিণ্যৈ। খ্যাত্যৈ তথৈব কৃষ্ণায়ৈ ধূম্রায়ৈ সততং নমঃ।।(শ্রী চন্ডী :-5/12)
অর্থ:-তুমি অতীব দুরধিগম্য,আবার তুমিই সঙ্কটে শরণাগতের ত্রাণকর্ত্রী,তুমি সর্ব্ব-জননী,সুতারাং তুমি সর্বশ্রেষ্ঠা,তুমি প্রতিষ্ঠারূপা,তুমি কৃষ্ণবর্ণা, আবার কখনো ধূম্রবর্ণা, তোমাকে সতত নমস্কার।
‌যা দেবী সর্ব্বভূতেষু শক্তিরূপেণ সংস্থিতা। নমস্তস্যৈ।। নমস্তস্যৈ।।নমস্তস্যৈ নমো নমঃ।।(শ্রী চন্ডী:- 5/32-33-34)

অর্থ:- যে দেবী সমস্ত জীবে শক্তিরূপে বিরাজমানা, সেই দেবীকে পুনঃ পুনঃ নমস্কার।

ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণ-এ কৃষ্ণকে দুর্গাপূজার প্রবর্তক বলা হয়েছে। বিভিন্ন দেবদেবীরা কিভাবে দুর্গাপূজা করেছিলেন, তার একটি তালিকা এই পুরাণে পাওয়া যায়। তবে এই প্রসঙ্গে কোনো পৌরাণিক গল্পের বিস্তারিত বর্ণনা এই পুরাণে দেওয়া হয়নি। বলা হয়েছে:


প্রথমে পূজিতা সা চ কৃষ্ণেন পরমাত্মনা।
বৃন্দাবনে চ সৃষ্ট্যাদ্যৌ গোলকে রাগমণ্ডলে।
মধুকৈটভভীতেন ব্রহ্মণা সা দ্বিতীয়তঃ।
ত্রিপুরপ্রেষিতেনৈব তৃতীয়ে ত্রিপুরারিণা।।
ভ্রষ্টশ্রিয়া মহেন্দ্রেন শাপাদ্দুর্বাসসঃ পুরা। চ
তুর্থে পূজিতা দেবী ভক্ত্যা ভগবতী সতী।।
তদা মুনীন্দ্রৈঃ সিদ্ধেন্দ্রৈর্দেবৈশ্চ মুনিমানবৈঃ।
পূজিতা সর্ববিশ্বেষু বভূব সর্ব্বতঃ সদা।।

অর্থাৎ, সৃষ্টির প্রথম যুগে পরমাত্মা কৃষ্ণ বৈকুণ্ঠের আদি-বৃন্দাবনের মহারাসমণ্ডলে প্রথম দুর্গাপূজা করেন। এরপর মধু ও কৈটভ নামে দুই অসুরের ভয়ে ব্রহ্মা দ্বিতীয় দুর্গাপূজা করেছিলেন। ত্রিপুর নামে এক অসুরের সঙ্গে যুদ্ধ করতে করতে শিব বিপদে পড়ে তৃতীয় দুর্গাপূজার আয়োজন করেন। দুর্বাসা মুনির অভিশাপে লক্ষ্মীকে হারিয়ে ইন্দ্র যে পূজার আয়োজন করেছিলেন, সেটি ছিল চতুর্থ দুর্গাপূজা। এরপর থেকেই পৃথিবীতে মুনিঋষি, সিদ্ধপুরুষ, দেবতা ও মানুষেরা নানা দেশে নানা সময়ে দুর্গাপূজা করে আসছে।

শাক্তধর্মের অন্যতম প্রধান ধর্মগ্রন্থ দেবীভাগবত পুরাণ অনুসারে, ব্রহ্মার মানসপুত্র মনু পৃথিবীর শাসক হয়ে ক্ষীরোদসাগরের তীরে দুর্গার মাটির মূর্তি তৈরি করে পূজা করেন। এই সময় তিনি "বাগ্‌ভব" বীজ জপ করতেন এবং আহার ও শ্বাস গ্রহণ ত্যাগ করে এক পায়ে দাঁড়িয়ে একশো বছর ধরে ঘোর তপস্যা করেন। এর ফলে তিনি শীর্ণ হয়ে পড়লেও, কাম ও ক্রোধ জয় করতে সক্ষম হন এবং দুর্গানাম চিন্তা করতে করতে সমাধির প্রভাবে স্থাবরে পরিণত হন। তখন দুর্গা প্রীত হয়ে তাকে বর দিতে আসেন। মনু তখন দেবতাদেরও দুর্লভ একটি বর চাইলেন। দুর্গা সেই প্রার্থনা রক্ষা করেন। সেই সঙ্গে দুর্গা তার রাজ্যশাসনের পথ নিষ্কণ্টক করেন এবং মনুকে পুত্রলাভের বরও দেন।

দুর্গা ও দুর্গাপূজাকে কেন্দ্র করে যতগুলি পৌরাণিক গল্প প্রচলিত আছে, তার মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় গল্পটি পাওয়া যায় শ্রীশ্রীচণ্ডী বা দেবীমাহাত্ম্যম্-এ। এই গল্পটি হিন্দুরা এতটাই মান্য করে যে শ্রীশ্রীচণ্ডীর পাঠ দুর্গাপূজার একটি অপরিহার্য অঙ্গ হয়ে গিয়েছে। দেবীমাহাত্ম্যম্ আসলে মার্কণ্ডেয় পুরাণ-এর একটি নির্বাচিত অংশ। এতে তেরোটি অধ্যায়ে মোট সাতশোটি শ্লোক আছে। এই বইতে দুর্গাকে নিয়ে প্রচলিত তিনটি গল্প ও দুর্গাপূজা প্রচলনের একটি গল্প রয়েছে। প্রতিটি গল্পে দুর্গাই কেন্দ্রীয় চরিত্র।

শ্রীশ্রীচণ্ডী গ্রন্থে বর্ণিত দেবী দুর্গার কাহিনিগুলির মধ্যে সর্বাধিক জনপ্রিয় আবার গ্রন্থের মধ্যম চরিত্র বা দ্বিতীয় খণ্ডে উল্লিখিত মহিষাসুর বধের কাহিনিটি। এই কাহিনি অনুসারে : পুরাকালে মহিষাসুর দেবগণকে একশতবর্ষব্যাপী এক যুদ্ধে পরাস্ত করে স্বর্গের অধিকার কেড়ে নিলে, বিতাড়িত দেবগণ প্রথমে প্রজাপতি ব্রহ্মা এবং পরে তাকে মুখপাত্র করে শিব ও নারায়ণের সমীপে উপস্থিত হলেন। মহিষাসুরের অত্যাচার কাহিনি শ্রবণ করে তারা উভয়েই অত্যন্ত ক্রোধান্বিত হলেন। সেই ক্রোধে তাদের মুখমণ্ডল ভীষণাকার ধারণ করল। প্রথমে বিষ্ণু ও পরে শিব ও ব্রহ্মার মুখমণ্ডল হতে এক মহাতেজ নির্গত হল। সেই সঙ্গে ইন্দ্রাদি অন্যান্য দেবতাদের দেহ থেকেও সুবিপুল তেজ নির্গত হয়ে সেই মহাতেজের সঙ্গে মিলিত হল। সু-উচ্চ হিমালয়ে স্থিত ঋষি কাত্যায়নের আশ্রমে সেই বিরাট তেজঃপুঞ্জ একত্রিত হয়ে এক নারীমূর্তি ধারণ করল। কাত্যায়নের আশ্রমে আবির্ভূত হওয়ায় এই দেবী কাত্যায়নী নামে অভিহিতা হলেন। এই দেবী ছিলেন দেবী পার্বতীর অবতার। আশ্বিন মাসের কৃষ্ণা চতুর্দশী তিথিতে দেবী কাত্যায়নী আবির্ভূতা হয়েছিলেন; শুক্লা সপ্তমী, অষ্টমী ও নবমী তিথিতে কাত্যায়ন দেবীকে পূজা করেন এবং দশমীতে দেবী মহিষাসুর বধ করেন।[১১]

যাই হোক, এক এক দেবের প্রভাবে দেবীর এক এক অঙ্গ উৎপন্ন হল। প্রত্যেক দেবতা তাদের আয়ূধ বা অস্ত্র দেবীকে দান করলেন। হিমালয় দেবীকে তার বাহন সিংহ দান করলেন। এই দেবীই অষ্টাদশভূজা মহালক্ষ্মী রূপে মহিষাসুর বধের উদ্দেশ্যে যাত্রা করলেন (শ্রীশ্রীচণ্ডী অনুসারে, মহালক্ষ্মী দেবী মহিষাসুর বধ করেন। ইনিই দুর্গা। তবে বাঙালিরা এঁকে দশভূজারূপে পূজা করে থাকেন)। দেবী ও তার বাহনের সিংহনাদে ত্রিভুবন কম্পিত হতে লাগল।

মহিষাসুর সেই প্রকম্পনে ভীত হয়ে প্রথমে তার সেনাদলের বীরযোদ্ধাদের পাঠাতে শুরু করলেন। দেবী ও তার বাহন সিংহ প্রবল পরাক্রমে যুদ্ধ করে একে একে সকল যোদ্ধা ও অসুরসেনাকে বিনষ্ট করলেন। তখন মহিষাসুর স্বয়ং দেবীর সঙ্গে যুদ্ধ শুরু করলেন। যুদ্ধকালে ঐন্দ্রজালিক মহিষাসুর নানা রূপ ধারণ করে দেবীকে ভীত বা বিমোহিত করার প্রচেষ্টায় রত হলেন; কিন্তু দেবী সেই সকল প্রচেষ্টা ব্যর্থ করে দিলেন। তখন অসুর অহঙ্কারে মত্ত হয়ে প্রবল গর্জন করল। দেবী বললেন,

- রে মূঢ়, যতক্ষণ আমি মধুপান করি, ততক্ষণ তুই গর্জন করে নে। আমি তোকে বধ করলেই দেবতারা এখানে শীঘ্রই গর্জন করবেন।।

এই বলে দেবী লম্ফ দিয়ে মহিষাসুরের উপর চড়ে তার কণ্ঠে পা দিয়ে শূলদ্বারা বক্ষ বিদীর্ণ করে তাকে বধ করলেন। অসুরসেনা হাহাকার করতে করতে পলায়ন করল এবং দেবতারা স্বর্গের অধিকার ফিরে পেয়ে আনন্দধ্বনি করতে লাগলেন।

দেবীমাহাত্ম্যম্-এ বর্ণিত দেবী পার্বতী সংক্রান্ত তৃতীয় ও সর্বশেষ কাহিনিটি হল শুম্ভ-নিশুম্ভ বধের কাহিনি। গ্রন্থের উত্তর চরিত্র বা তৃতীয় খণ্ডে বিধৃত পঞ্চম থেকে একাদশ অধ্যায়ে এই কাহিনি বর্ণিত হয়েছে : শুম্ভ ও নিশুম্ভ নামে দুই অসুরভ্রাতা স্বর্গ ও দেবতাদের যজ্ঞভাগ অধিকার করে নিলে দেবগণ হিমালয়ে গিয়ে আদিদেবী মহাদেবীকে স্তব করতে লাগলেন (পঞ্চম অধ্যায়ে উল্লিখিত এই স্তবটি অপরাজিতস্তব নামে পরিচিত; এটি হিন্দুদের নিকট অতিপবিত্র ও নিত্যপাঠ্য একটি স্তবমন্ত্র; “যা দেবী সর্বভূতেষু মাতৃরূপেণ সংস্থিতা” ও সমরূপ মন্ত্রগুলি এই স্তবের অন্তর্গত)। এমন সময় সেই স্থানে পার্বতী গঙ্গাস্নানে উপস্থিত হলে,দেবতাদের কষ্ট দেখে আদ্যাদেবী ইন্দ্রাদি দেবতার স্তবে প্রবুদ্ধা হয়ে তার দেহকোষ থেকে সৃষ্টি করেন এই দেবী কে আর পার্বতী এই দেবীর সাথে বীন্ধ পর্বতে যান ও বিন্ধ্ বাসিনী নামে অভিহিত হন। এই দেবী কৌশিকী নামে আখ্যাত হলেন ও শুম্ভ-নিশুম্ভ বধের দায়িত্ব গ্রহণ করলেন। শুম্ভ-নিশুম্ভের চর চণ্ড ও মুণ্ড তাকে দেখতে পেয়ে নিজ প্রভুদ্বয়কে বললেন যে এমন স্ত্রীলোক আপনাদেরই ভোগ্যা হবার যোগ্য। চণ্ড-মুণ্ডের কথায় শুম্ভ-নিশুম্ভ মহাসুর সুগ্রীবকে দৌত্যকর্মে নিযুক্ত করে দেবীর নিকট প্রেরণ করলেন। সুগ্রীব দেবীর কাছে শুম্ভ-নিশুম্ভের কুপ্রস্তাব মধুরভাবে ব্যক্ত করল। দেবী মৃদু হেসে বিনীত স্বরে বললেন, “তুমি সঠিকই বলেছ। এই বিশ্বে শুম্ভ-নিশুম্ভের মতো বীর কে আছে? তবে আমি পূর্বে অল্পবুদ্ধিবশত প্রতিজ্ঞা করেছিলাম, যে আমাকে যুদ্ধে পরাভূত করতে পারবে, কেবলমাত্র তাকেই আমি বিবাহ করব। এখন আমি প্রতিজ্ঞা লঙ্ঘন করি কি করে! তুমি বরং মহাসুর শুম্ভ বা নিশুম্ভকে বল, তাঁরা যেন এখানে এসে আমাকে পরাস্ত করে শীঘ্র আমার পাণিগ্রহণ করেন। আর বিলম্বে কি প্রয়োজন?” সুগ্রীব ক্রোধান্বিত হয়ে দেবীকে নিরস্ত হতে পরামর্শ দিল। কিন্তু দেবী নিজবাক্যে স্থির থেকে তাকে শুম্ভ-নিশুম্ভের কাছে প্রেরণ করলেন।

দেবীর কথায় কুপিত হয়ে অসুররাজ শুম্ভ তাকে উচিত শিক্ষা দেওয়ার উদ্দেশ্যে দৈত্যসেনাপতি ধূম্রলোচনকে প্রেরণ করলেন। ধূম্রলোচনের সঙ্গে দেবীর ভয়ানক যুদ্ধ হল ও সেই যুদ্ধে ধূম্রলোচন পরাজিত ও নিহত হল। এই সংবাদ পেয়ে শুম্ভ চণ্ড-মুণ্ড ও অন্যান্য অসুরসৈন্যদের প্রেরণ করল। তাদের সঙ্গে যুদ্ধ করার জন্য দেবী নিজ দেহ থেকে দেবী কালীর সৃষ্টি করলেন। চামুণ্ডা ভীষণ যুদ্ধের পর চণ্ড-মুণ্ডকে বধ করলেন। তখন দেবী কৌশিকী তাকে চামুণ্ডা আখ্যায় ভূষিত করলেন।

চণ্ড-মুণ্ডের মৃত্যুসংবাদ পেয়ে সকল দৈত্যসেনাকে সুসজ্জিত করে প্রেরণ করলেন দেবীর বিরুদ্ধে। তখন তাকে সহায়তার প্রত্যেক দেবতার শক্তি রূপে দেবী পার্বতী তার এক এক অঙ্গ থেকে এক এক দেবীকে সৃষ্টি করেন । এই দেবীরা হলেন ব্রহ্মাণী, মাহেশ্বরী, কৌমারী, বৈষ্ণবী, বারাহী, নারসিংহী, ঐন্দ্রী প্রমুখ। এঁরা প্রচণ্ড যুদ্ধে দৈত্যসেনাদের পরাভূত ও নিহত করতে লাগলেন। এই সময় রক্তবীজ দৈত্য সংগ্রামস্থলে উপস্থিত হল। তার রক্ত একফোঁটা মাটিতে পড়লে তা থেকে লক্ষ লক্ষ রক্তবীজ দৈত্য সৃষ্টি হয়। এই কারণে কৌশিকী কালীর সহায়তায় রক্তবীজকে বধ করলেন। কালী রক্তবীজের রক্ত মাটিতে পড়তে না দিয়ে নিজে পান করে নেন।

এরপর শুম্ভ আপন ভ্রাতা নিশুম্ভকে যুদ্ধে প্রেরণ করেন। প্রচণ্ড যুদ্ধের পর দেবী দুর্গা নিশুম্ভকে বধ করলেন। প্রাণপ্রতিম ভাইয়ের মৃত্যুর শোকে আকুল হয়ে শুম্ভ দেবীকে বলল, “তুমি গর্ব করো না, কারণ তুমি অন্যের সাহায্যে এই যুদ্ধে জয়লাভ করেছ।” তখন দেবী বললেন,

-একা আমিই এ জগতে বিরাজিত। আমি ছাড়া দ্বিতীয় কে আছে? রে দুষ্ট, এই সকল দেবী আমারই বিভূতি। দ্যাখ্, এরা আমার দেহে বিলীন হচ্ছে।

তখন অন্যান্য সকল দেবী কৌশিকী দেহে মিলিত হয়ে গেলেন। দেবীর সঙ্গে শুম্ভের ঘোর যুদ্ধ আরম্ভ হল। যুদ্ধান্তে দেবী শুম্ভকে শূলে গ্রথিত করে বধ করলেন। দেবতারা পুনরায় স্বর্গের অধিকার ফিরে পেলেন।যুদ্ধ পরে কৌশিকী পার্বতীর দেহে বিলীন হয়ে যান। পরে দেবী পার্বতী মালভূমের রাজার মাধ্যমে নিজের এই রূপের পুজো শুরু করেন।

দুর্গা পূজার মন্ত্র গুলি সাধারণত শ্রী শ্রী চণ্ডি থেকে পাঠ করা হয়।

দুর্গা পুষ্পাঞ্জলি দেয়ার মন্ত্র:

দুর্গা প্রণাম মন্ত্র:

অর্থ: হে দেবী সর্বমঙ্গলা, শিবা(শিবের স্ত্রী), সকল কার্য সাধিকা, শরণযোগ্য, গৌরি(পার্বতী গৌর বর্ণা) ত্রিনয়ণী, নারায়নী(পার্বতী বিষ্ণুর বোন) তোমাকে নমস্কার।

মহালয়া বা পিতৃপক্ষের দিন থেকে মূলত দুর্গা পূজার আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। তবে এ দিনটির তাৎপর্য মূলত ভিন্ন। এ তিথিকে পিতৃপক্ষও বলা হয়ে থাকে। এ দিনে পিতৃপক্ষের শেষ এবং দেবী পক্ষের শুরু হয়। এই মহালয়া তিথিতে যারা পিতৃ-মাতৃহীন তারা তাদের পূর্বপুরুষের স্মরণ করে, পূর্বপুরুষের আত্মার শান্তি কামনা করে অঞ্জলি প্রদান করেন । সনাতন ধর্ম অনুসারে এই দিনে প্রয়াত আত্মাদের মত্যে পাঠিয়ে দেয়া হয়, প্রয়াত আত্মা যে সমাবেশ হয় তাহাকে মহালয় বলা হয় । মহালয় থেকে মহালয়া। পিতৃপক্ষের ও শেষদিন এটি । মহালয়াতে যারা গঙ্গায় অঞ্জলি প্রদান করেন পূর্বদের আত্মার শান্তির জন্য , তাহারা শুধু পূর্বদের নয় , পৃথিবীর সমগ্র কিছুর জন্য প্রার্থনা ও অঞ্জলি প্রদান করেন । যাদের পুত্র নেই , যাদের কেউ নেই আজ স্মরণ করার তাদের জন্য ও অঞ্জলি প্রদান করতে হয় ।

এ সম্পর্কে মহাভারতে একটি কাহিনী বর্ণীত আছে যে: প্রসিদ্ধ দাতা কর্ণের মৃত্যু হলে তার আত্মা স্বর্গে গমন করলে, তাকে স্বর্ণ ও রত্ন খাদ্য হিসেবে প্রদান করা হয়। কর্ণ ইন্দ্রকে এর কারণ জিজ্ঞাসা করলে ইন্দ্র বলেন, কর্ণ সারা জীবন স্বর্ণই দান করেছেন, তিনি পিতৃগণের উদ্দেশ্যে কোনোদিন খাদ্য প্রদান করেননি। তাই স্বর্গে তাকে স্বর্ণই খাদ্য হিসেবে প্রদান করা হয়েছে। কর্ণ বলেন, তিনি যেহেতু তার পিতৃগণের সম্পর্কে অবহিত ছিলেন না, তাই তিনি ইচ্ছাকৃতভাবে পিতৃগণকে স্বর্ণ প্রদান করেননি। এই কারণে কর্ণকে ষোলো দিনের জন্য মর্ত্যে গিয়ে পিতৃলোকের উদ্দেশ্যে অন্ন ও জল প্রদান করার অনুমতি দেওয়া হয়। এই পক্ষই পিতৃপক্ষ নামে পরিচিত হয়।এই কাহিনির কোনো কোনো পাঠান্তরে, ইন্দ্রের বদলে যমকে দেখা যায়।

নবপত্রিকা বাংলার দুর্গাপূজার একটি বিশিষ্ট অঙ্গ। নবপত্রিকা শব্দটির আক্ষরিক অর্থ নটি গাছের পাতা। তবে বাস্তবে নবপত্রিকা নটি পাতা নয়, নটি উদ্ভিদ। এগুলি হল -

  1. কদলী বা রম্ভা (কলা),
  2. অপরাজিতা,
  3. হরিদ্রা (হলুদ),
  4. জয়ন্তী,
  5. বিল্ব (বেল),
  6. দাড়িম্ব (দাড়িম),
  7. অশোক,
  8. মানকচু,
  9. ধান
গণে্শের ডান পাশে স্থাপিত নবপত্রিকা

একটি সপত্র কলাগাছের সঙ্গে অপর আটটি সমূল সপত্র উদ্ভিদ একত্র করে একজোড়া বেল সহ শ্বেত অপরাজিতা লতা দিয়ে বেঁধে লালপাড় সাদা শাড়ি জড়িয়ে ঘোমটা দেওয়া বধূর আকার দেওয়া হয়। তারপর তাতে সিঁদুর দিয়ে সপরিবার দেবীপ্রতিমার ডান দিকে দাঁড় করিয়ে পূজা করা হয়। প্রচলিত ভাষায় নবপত্রিকার নাম কলাবউ।

নবপত্রিকার নয়টি উদ্ভিদ আসলে দেবী দুর্গার নয়টি বিশেষ রূপের প্রতীকরূপে কল্পিত হয়। এই নয় দেবী হলেন রম্ভাধিষ্ঠাত্রী ব্রহ্মাণী, কচ্বাধিষ্ঠাত্রী কালিকা, হরিদ্রাধিষ্ঠাত্রী উমা, জয়ন্ত্যাধিষ্ঠাত্রী কার্তিকী, বিল্বাধিষ্ঠাত্রী শিবা, দাড়িম্বাধিষ্ঠাত্রী রক্তদন্তিকা, অশোকাধিষ্ঠাত্রী শোকরহিতা, মানাধিষ্ঠাত্রী চামুণ্ডা ও ধান্যাধিষ্ঠাত্রী লক্ষ্মী। এই নয় দেবী একত্রে "নবপত্রিকাবাসিনী নবদুর্গা" নামে নবপত্রিকাবাসিন্যৈ নবদুর্গায়ৈ নমঃ মন্ত্রে পূজিতা হন।

মহাসপ্তমীর দিন সকালে নিকটস্থ নদী বা কোনো জলাশয়ে (নদী বা জলাশয়ে না থাকলে কোনো মন্দিরে) নিয়ে যাওয়া হয়। পুরোহিত নিজেই কাঁধে করে নবপত্রিকা নিয়ে যান। তার পিছন পিছন ঢাকীরা ঢাক বাজাতে বাজাতে এবং মহিলারা শঙ্খ ও উলুধ্বনি করতে করতে যান। শাস্ত্রবিধি অনুযায়ী স্নান করানোর পর নবপত্রিকাকে নতুন শাড়ি পরানো হয়। তারপর পূজামণ্ডপে নিয়ে এসে নবপত্রিকাকে দেবীর ডান দিকে একটি কাষ্ঠসিংহাসনে স্থাপন করা হয়। পূজামণ্ডপে নবপত্রিকা প্রবেশের মাধ্যমে দুর্গাপূজার মূল অনুষ্ঠানটির প্রথাগত সূচনা হয়। নবপত্রিকা প্রবেশের পর দর্পণে দেবীকে মহাস্নান করানো হয়। এরপর বাকি দিনগুলিতে নবপত্রিকা প্রতিমাস্থ দেবদেবীদের সঙ্গেই পূজিত হতে থাকে। বিশেষভাবে লক্ষণীয় হল, নবপত্রিকা প্রবেশের পূর্বে পত্রিকার সম্মুখে দেবী চামুণ্ডার আবাহন ও পূজা করা হয়। পত্রিকাস্থ অপর কোনো দেবীকে পৃথকভাবে পূজা করা হয় না।

দুর্গাপূজার একটি বিশেষ অনুষ্ঠান হল মহাস্নান। মহাসপ্তমীর দিন নবপত্রিকা স্নানের পর মহাস্নান অনুষ্ঠিত হয়। মহাষ্টমী ও মহানবমীর দিনও পূজার মূল অনুষ্ঠান শুরুর আগে মহাস্নান অনুষ্ঠিত হয়।দুর্গাপ্রতিমার সামনে একটি দর্পণ বা আয়না রেখে সেই দর্পণে প্রতিফলিত প্রতিমার প্রতিবিম্বে বিভিন্ন জিনিস দিয়ে স্নান করানো হয়। মহাস্নানের সময় শুদ্ধজল, নদীর জল, শঙ্খজল, গঙ্গাজল, উষ্ণ জল, সুগন্ধি জল, পঞ্চগব্য, কুশ ঘাসের দ্বারা ছেটানো জল, ফুলে দ্বারা ছেটানো জল, ফলের জল, মধু, দুধ, নারকেলের জল, আখের রস, তিল তেল, বিষ্ণু তেল, শিশিরের জল, রাজদ্বারের মাটি, চৌমাথার মাটি, বৃষশৃঙ্গমৃত্তিকা, গজদন্তমৃত্তিকা, বেশ্যাদ্বারমৃত্তিকা, নদীর দুই তীরের মাটি, গঙ্গামাটি, সব তীর্থের মাটি, সাগরের জল, ঔষধি মেশানো জল, বৃষ্টিজল, সরস্বতী নদীর জল, পদ্মের রেণু মেশানো জল, ঝরনার জল ইত্যাদি দিয়ে দুর্গাকে স্নান করানো হয়।মহাস্নানের প্রতীকী তাৎপর্য সম্পর্কে স্বামী ত্যাগিবরানন্দ লিখেছেন,

এই সকল ক্রিয়ানুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে সমাজের কৃষিসম্পদ, খনিজসম্পদ, বনজসম্পদ, জলজসম্পদ, প্রাণীজসম্পদ, ভূমিসম্পদ প্রভৃতি রক্ষা করার জন্য সাধারণ মানসে বিশেষভাবে আলোকপাত করা হয়। নৈতিকতা স্থাপনে সর্বভূতে দেবীরই অধিষ্ঠানস্বরূপ পতিতোধ্বারের ভাবটিও ফুটে ওঠে এই মহাস্নানে। এমনকী চাষা-ভূষা, মুচি-মেথর থেকে শুরু করে ব্রাহ্মণ, মালি, কুম্ভকার, তন্তুবায়, নরসুন্দর, ঋষি, দাস প্রভৃতি সমাজের সর্বস্তরের মানুষের অংশগ্রহণ বিশ্ব সংহতি ও বিশ্বের কাছে এক অসাম্প্রদায়িক সম্প্রদায়ের সমন্বয়বার্তা প্রেরণ করে। এককথায় সার্বিক সমাজলক্যাণ চিন্তা ফুটে ওঠে এই মহাস্নানে।

অষ্টমী পূজা হলো দুর্গা পূজার একটি গুরুত্ব পূর্ণ অংশ|এই অষ্টমীর দিনে অনেক মানুষ পুষ্পাঞ্জলি দিয়ে দেবী দুর্গা কে নিজের মনের ইচ্ছা জানাই| এই দিন চামুন্ডা রূপে দেবী দুর্গা কে পুজো করা হয়|এই দিন বিভিন্ন মন্দিরে চালকুমড়ো,চিনি প্রভৃতি বলি দেবার রীতি প্রচলিত আছে|এই দিন অষ্টমীর সন্ধি পুজোর সময় ৬৪ ডাকিনী যোগিনীর পুজো করা হয়|এই দিন বেশিরভাগ মন্দিরে দেবী দুর্গা কে লুচি সুজির ভোগ দেওয়া হয়|এই মহা অষ্টমী হল দুর্গা পূজার মধ্যে একটি অন্যতম সেরা দিন |

কুমারী পূজা হলো তন্ত্রশাস্ত্রমতে অনধিক ষোলো বছরের অরজঃস্বলা কুমারী মেযে়র পূজা। বিশেষত দুর্গাপূজার অঙ্গরূপে এই পূজা অনুষ্ঠিত হয় এছাড়াও কালীপূজা, জগদ্ধাত্রীপূজা এবং অন্নপূর্ণা পূজা উপলক্ষে এবং কামাখ্যাদি শক্তিক্ষেত্রেও কুমারী পূজার প্রচলন রয়েছে।

সপ্তমী,অষ্টমী ও নবমী তিথিতে ষোলো বছরের কম রয়স্কা কোন কুমারী বালিকাকে দেবীজ্ঞানে পূজা করার রীতি আছে। বৃহদ্ধর্মপুরাণে আছে দেবী অম্বিকা কুমারী কন্যারূপে দেবতাদের সামনে আবির্ভূতা হয়ে বেলগাছে দেবীর বোধন করতে নির্দেশ দেন।

তৈত্তিরীয় আরণ্যকে দেবীকে কুমারী নামে অভিহিত করা হয়েছে।দক্ষিণ ভারতে কন্যকুমারীর মন্দিরে কুমারী প্রতিমার পূজা দেবীর নামের ঐতিহ্য বহন করছে, যেহেতু কুমারী পূজা তান্ত্রিক মতবাদের প্রতিফলন তাই ভারতের সব শক্তিপীঠেই কুমারী পূজা হয়।

১৯০১ খ্রিষ্টাব্দের ১৮ই অক্টোবর স্বামী বিবেকানন্দ বেলুড় মঠে প্রথম দুর্গাপূজার অষ্টমী তিথিতে কুমারী পূজার প্রবর্তন করেন।রঘুনন্দন প্রণীত তত্ত্ব অনুসারেই পূজা নিষ্পন্ন হয়। সারদা দেবীর নামে সংকল্প হয়। পশুবলির ব্যবস্থা করা হলেও তা হয়নি।

কুমারী পূজায় বিভিন্ন বয়সের কন্যাকে বিভিন্ন নামে পূজা করা হয়। এক বছরের কন্যা সন্ধ্যা, দুইবছরে সরস্বতী,তিন বছরে ত্রিধামূর্তি, চার বছরে কালিকা, পাঁচ বছরে সুভগা, ছ'বছরে উমা, সাত বছরে মালিনী, আট বছরে কুঞ্জিকা, ন'বছরে কালসন্দর্ভা, দশ বছরে অপরাজিতা, এগারো বছরে রুদ্রাণী, বারো বছরে ভৈরবী, তেরো বছরে মহালক্ষ্মী, চোদ্দ বছরে পঠিনায়িকা, পনেরো বছরে ক্ষেত্রজ্ঞা ও ষোলো বছরে অম্বিকা নামে অভিহিতা হয়।

তন্ত্রে উক্ত আছে, কন্যা ঋতুমতী না হওয়া পর্যন্ত তারা এইসব নামে পূজিত হবে। আরও বলা হয়েছে যে একটি কুমারী কন্যাকে খাওয়ালে বিশ্বভুবনকে খাওয়ানো হয়।

সন্ধিপূজা

দুর্গাপূজার একটি বিশেষ অধ্যায় হল সন্ধিপূজা । দুর্গাপূজার অষ্টমীর দিন হয় এই বিশেষ পূজা , এই পূজার সময়কাল ৪৮ মিনিট। অষ্টমী তিথির শেষ ২৪ মিনিট ও নবমী তিথির প্রথম ২৪ মিনিট মোট ৪৮ মিনিটের মধ্যে অনুষ্ঠিত হয় এই পূজা। যেহেতু অষ্টমী ও নবমী তিথির সংযোগ স্থলে এই পূজা হয় তাই এই পূজার নাম সন্ধিপূজা অর্থ্যাৎ সন্ধি-কালিন পূজা। এই পূজা দুর্গাপূজার একটি বিশেষ অঙ্গ, এইসময় দেবী দুর্গাকে চামুন্ডা রূপে পূজা করা হয়ে থাকে। এই পূজা সম্পন্ন হয় তান্ত্রিক মতে। এই পূজায় দেবীকে ষোলটি উপাচার নিবেদন করা হয়, হয় পশুবলি সেই বলিকৃত পশুর স্মাংস-রুধি (মাংস ও রক্ত) এবং কারণ (মদ) প্রদান করা হয় দেবীর উদ্দেশ্যে। 

অপরাজিতা পূজা দুর্গাপূজার একটি অঙ্গ। দুর্গার অপর নাম অপরাজিতা। তবে এই দেবীর মূর্তি অন্যরকম। ইনি চতুর্ভূজা; হাতে শঙ্খ, চক্র, বর ও অভয়মুদ্রা; গায়ের রং নীল; ত্রিনয়না ও মাথায় চন্দ্রকলা। বিজয়াদশমীর দিন বিসর্জনের পর পূজামণ্ডপের ঈশানকোণে অষ্টদল পদ্ম এঁকে অপরাজিতার লতা রেখে এই দেবীর পূজা করা হয়। হংসনারায়ণ ভট্টাচার্যের মতে, ইনি "...বৈষ্ণবী শক্তি বিষ্ণুমায়া লক্ষ্মী ও শিবশিক্তি শিবানীর মিশ্রণে কল্পিতা।"

কলকাতার কালীঘাট মন্দিরে শারদীয়া দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হয়। এই পূজা কবে শুরু হয়েছিল, তা জানা যায় না। এই পূজার বিশেষত্ব হল, এখানে দুর্গাপ্রতিমা আনা হয় না। মন্দিরের গর্ভগৃহে স্থাপিত দেবী কালীর মূর্তিকেই দুর্গার মন্ত্রে চামুণ্ডা দুর্গা রূপে পূজা করা হয়। পূজা হয় কালিকা পুরাণ মতে। দুর্গাষষ্ঠীর দিন সন্ধ্যায় মন্দির চত্বরের মনসাতলায় বেল গাছ পুঁতে সেখানে বোধন হয়। মহাসপ্তমীর সকালে নবপত্রিকা স্নানের মাধ্যমে পূজা শুরু হয়। কালীঘাট মন্দিরে কালী মূর্তির দুই পাশে দুটি নবপত্রিকা রাখা হয়।

 মূর্তির ডানদিকের নবপত্রিকাটি সেবায়েতদের পক্ষ থেকে এবং বাঁদিকেরটি সেবায়েতদের গুরুদের পক্ষ থেকে বসানো হয়। মহাষ্টমী ও মহানবমী তিথিতে কুমারী পূজা করা হয়। মহানবমীতে বলিদান হয়। এই দিনে বলিদান মন্দিরের পুরোহিত ছাড়া কাউকে দেখতে দেওয়া হয় না। মন্দিরের সব দরজা বন্ধ করে বলি দেওয়া হয়। দুর্গাপূজার সময় কালীঘাট মন্দিরে বিশেষ ভোগের ব্যবস্থা করা হয়। মহানবমীর রাতে পান্তা ভাত দিয়ে ভোগ দেওয়ার রীতি আছে। বিজয়াদশমীর দিন সিঁদুরখেলা হয়। এই সময় মন্দিরে পুরুষদের ঢুকতে দেওয়া হয় না। এই দিনই নবপত্রিকা বিসর্জনের মাধ্যমে মন্দিরের দুর্গাপূজার সমাপ্তি ঘটে। দুর্গাপূজা উপলক্ষে বহু মানুষ কালীঘাট মন্দিরে আসেন ও পূজা দেন। কলকাতা পুলিশের পক্ষ থেকে এই সময় মন্দিরের নিরাপত্তার জন্য বিশেষ পুলিশ বাহিনী নিয়োগ করা হয়।( কালীক্ষেত্র কালীঘাট, সুমন গুপ্ত, দীপ প্রকাশন, কলকাতা, ২০০৬, পৃ. ৬২-৬৪)

#দূর্গা শব্দের অর্থ 

 শব্দকোষশব্দকল্পদ্রুম এবং মন্ত্রার্থবোধিনী তত্ত্ব অনুসারে দূর্গা শব্দের নিচের শ্লোকটিতে বর্ণনা করা আছে

“দৈত্যনাশার্থবচনো দকারঃ পরিকীর্তিতঃ।
উকারো বিঘ্ননাশস্য বাচকো বেদসম্মত।।
রেফো রোগঘ্নবচনো গশ্চ পাপঘ্নবাচকঃ।
ভয়শত্রুঘ্নবচনশ্চাকারঃ পরিকীর্তিত” 

অর্থাৎ, “দ” অক্ষরটি দৈত্য বিনাশ করে, উ-কার বিঘ্ন নাশ করে, রেফ রোগ নাশ করে, “গ” অক্ষরটি পাপ নাশ করে এবং অ-কার শত্রু নাশ করে। এর অর্থ, দৈত্য, বিঘ্ন, রোগ, পাপ ও শত্রুর হাত থেকে যিনি রক্ষা করেন, তিনিই দুর্গা । 


বিঃদ্রঃ

1.দেবীমাহাত্ম্যম্ বা দেবীমাহাত্ম্য  এই গ্রন্থে মহিষাসুরকে পরাজিত করে দেবী দুর্গার বিজয়কাহিনি বর্ণিত হয়েছে। দেবীমাহাত্ম্যম্ প্রকৃতপক্ষে 'দেবী ভাগবত পুরাণ-এর একটি অংশ। খ্রিষ্টীয় ৪০০-৫০০ অব্দের মধ্যবর্তী সময়ে এই গ্রন্থ রচিত হয়। কথিত আছে, এই গ্রন্থের রচয়িতা ঋষি মার্কণ্ডেয়।

2.দেবীমাহাত্ম্যম্ গ্রন্থটি দুর্গা সপ্তশতী  বা কেবলমাত্র সপ্তশতী চণ্ডী  বা চণ্ডীপাঠ  নামেও পরিচিত। শেষোক্ত নামটি গ্রন্থপাঠের অনুষঙ্গে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। অন্যদিকে দেবীমাহাত্ম্যম্ তেরোটি অধ্যায়ে মোট ৭০০ শ্লোক বর্তমান। এই কারণে এই গ্রন্থের অপর নাম দুর্গা সপ্তশতী বা সপ্তশতী। দেবীমাহাত্ম্যম্ শাক্তধর্মের সর্বোচ্চ ধর্মগ্রন্থ।

3.দেবীমাহাত্ম্যম্ শাক্ত দর্শনের বাইবেল নামে পরিচিত(Manna, Sibendu, p 92)। শাক্ত মতবাদের উৎস তথা মূলভিত্তি এই গ্রন্থটিই। শাক্ত সংস্কৃতি এই গ্রন্থটিকে কেন্দ্র করেই গড়ে উঠেছে।

4.দেবীভাগবত পুরাণ  বা শ্রীমদ্‌দেবীভাগবতম্‌ হল সংস্কৃত ভাষায় রচিত একটি হিন্দু পুরাণ ভারতে এই পুরাণটিকে মহাপুরাণ (প্রধান পুরাণ) মনে করা হয়।সকল সম্প্রদায়ের কাছেই দেবীভাগবত পুরাণ একটি গুরুত্বপূর্ণ পুরাণগ্রন্থ।(Dalal 2014, পৃ. 117)


পরিব্রাজক, বৌদ্ধ পন্ডিত হিউয়েন সাংকে নিয়ে দুর্গাপূজার একটি কাহিনী প্রচলিত আছে। চীনা ভাষায় রচিত বৌদ্ধ ধর্মের ব্যাখায় বিভ্রান্ত হয়ে তিনি বৌদ্ধ ধর্মের মূল পাণ্ডুলিপি সংগ্রহে ৬৩০ সালে ভারত সফরে আসেন। ভারত বর্ষের নানা বিহারে বিদ্যা অর্জন করেন। ৬৩৫-৬৪৩ পর্যন্ত দীর্ঘ আট বছর তিনি হর্ষবর্ধনের রাজসভায় ছিলেন। তবে তার কাহিনী দূর্গা, কালী, কালীর আরেক রূপ চণ্ডি নাকি বনদেবীকে নিয়ে- তা বিষয়ে মতভেদ আছে। তবে তার রচনায় উল্লেখ করেছেন, হর্ষবর্ধনের সময়ে দস্যূ তস্করের উপদ্রব খুব বেশি ছিল এবং তিনি নিজেও একাধিক বার দস্যূর হাতে নিগৃহীত হয়েছিলেন।

মধ্য যুগে বাংলা সাহিত্যে দুর্গাপূজার অস্তিত্ব পাওয়া যায়। ঢাকেশ্বরী মন্দির চত্বরে আছে দুই ধরনের স্থাপত্যরীতি মন্দির। ১১শ বা ১২শ শতক থেকে এখানে কালীপূজার সাথে দুর্গাপূজাও হত। ঢাকেশ্বরী মন্দিরের ইতিহাস সম্পর্কে নানা কাহিনী প্রচলিত আছে।

যতটুকু জানা যায়, কারও মতে ১৫০০ খ্রিষ্টাব্দের শেষের দিকে দিনাজপুরের জমিদার প্রথম দুর্গাপূজা করেন। আবার কারও মতে, ষোড়শ শতকে রাজশাহী তাহেরপুর এলাকার রাজা কংশ নারায়ণ প্রথম দুর্গাপূজা করেন। ১৫১০ সালে কুচ বংশের রাজা বিশ্ব সিংহ কুচবিহারে দুর্গাপূজার আয়োজন করেছিলেন। অনেকে মনে করেন, ১৬০৬ সালে নদীয়ার ভবনানন্দ মজুমদার দুর্গাপূজার প্রবর্তক। ১৬১০ সালে কলকাতার সুবর্ণ রায় চৌধুরী সপরিবারে দুর্গাপূজা চালু করেন। ১৭১১ সালে অহম রাজ্যের রাজধানী রংপুরের শারদীয় পূজার নিমন্ত্রণ পেয়েছিলেন ত্রিপুরা রাজ্যের দূত রামেশ্বর নয়ালঙ্কার। নবাব সিরাজ-উদ-দ্দৌল্লার আক্রমণে কলকাতার একমাত্র চার্চ ধ্বংস হবার পর সেখানে কোনো উৎসব আয়োজনের অবস্থা ছিল না। পলাশীর যুদ্ধে বিজয় লাভের জন্য ১৭৫৭ সালে কলকাতার শোভাবাজার রাজবাড়িতে রাজা নব কৃঞ্চদেব লর্ড ক্লাইভের সম্মানে দুর্গাপূজার মাধ্যমে বিজয় উৎসবের আয়োজন করেছিলেন।

আধুনিক দুর্গাপূজার প্রাথমিক ধাপ ১৮ শতকে নানা বাদ্যযন্ত্র প্রয়োগে ব্যক্তিগত, বিশেষ করে জমিদার, বড় ব্যবসাযী, রাজদরবারের রাজ কর্মচারী পর্যায়ে প্রচলন ছিল। বাংলাদেশের সাতক্ষীরার কলারোয়ার ১৮ শতকের মঠবাড়িয়ার নবরত্ন মন্দিরে দুর্গাপূজা হতো। পাটনাতে ১৮০৯ সালের দুর্গাপূজার ওয়াটার কালার ছবির ডকুমেন্ট পাওয়া গেছে। ওরিষ্যার রামেশ্বরপুরে একই স্থানে ৪০০ শত বছর ধরে সম্রাট আকবরের আমল থেকে দুর্গাপূজা হয়ে আসছে। বর্তমানে দুর্গাপূজা দুইভাবে হয়ে থাকে- ব্যক্তিভাবে, পারিবারিক স্তরে ও সমষ্টিগতভাবে; পাড়াস্তরে বারোয়ারি বা সর্বজনীন পূজা নামে পরিচিত।

তথ্যসূত্র

  1.  Bansil, P. C (২০১১)। Bihar Agriculture: A Perspective। আইএসবিএন 9788180697432
  2.  Security cover in place for Durga puja celebrations in Odisha, India Today; Noida's Assamese community celebrates Durga Puja, The Times of India
  3. ↑ ঝাঁপ দাও:  "Durga Puja Tithi and Timing"। ১৪ সেপ্টেম্বর ২০১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৭ জুলাই ২০১২
  4.  [১]২৪ আওয়ার মিউজিয়াম ডট অর্গ ডট ইউকে থেকে
  5. ↑ ঝাঁপ দাও:  "Akaal Bodhan Article"
  6.  "Akaal Bodhan Article"। সংগ্রহের তারিখ ২ অক্টোবর ২০১১
  7.  হিন্দুদের দেবদেবী, তৃতীয় খণ্ড, হংসনারায়ণ ভট্টাচার্য, ফার্মা কেএলএম প্রাঃ লিঃ, পৃ. ২২৭
  8.  প্রবন্ধ শব্দাঞ্জলিতে দুর্গাপূজা, হরিপদ ভৌমিক, নতুন বাংলার মুখ পত্রিকা, আশ্বিন ১৪১৪, অক্টোবর ২০০৭, পৃ. ১৬৩ দ্রঃ
  9.  প্রবন্ধ শব্দাঞ্জলিতে দুর্গাপূজা, হরিপদ ভৌমিক, নতুন বাংলার মুখ পত্রিকা, আশ্বিন ১৪১৪, অক্টোবর ২০০৭, পৃ. ১৬৩-৬৪ দ্রঃ
  10. ↑ ঝাঁপ দাও:  শ্রীশ্রীচণ্ডী, প্রথম অধ্যায়
  11.  শ্রীশ্রীচণ্ডী, অনুবাদ ও সম্পাদনাঃ স্বামী জগদীশ্বরানন্দ, উদ্বোধন কার্যালয়, কলকাতা, ১৯৬২ সংস্করণের ১০৭ পৃষ্ঠার পাদটীকাটি দ্রষ্টব্য
  12.  শ্রীশ্রীচণ্ডী, দ্বিতীয় ও তৃতীয় অধ্যায়
  13.  রামায়ণ কৃত্তিবাস বিরচিত, হরেকৃষ্ণ মুখোপাধ্যায় সম্পাদিত ও ডক্টর সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায় লিখিত ভূমিকা সম্বলিত, সাহিত্য সংসদ, কলকাতা, ১৯৫৭ সংস্করণ
  14.  জগজ্জননী দেবী দুর্গা শ্রী পতিত উদ্ধরণ গৌর দাস ব্রহ্মচারী সংকলিত, ভক্তিবেদান্ত গীতা একাডেমি, ইস্কন বাংলাদেশ প্রকাশিত
  15.  পূজা-বিজ্ঞান, স্বামী প্রমেয়ানন্দ, উদ্বোধন কার্যালয়, কলকাতা, ১৯৯৯, পৃষ্ঠা ৪৩-৪৪
  16.  পূজা-বিজ্ঞান, স্বামী প্রমেয়ানন্দ, উদ্বোধন কার্যালয়, কলকাতা, ১৯৯৯, পৃষ্ঠা ৪৪ থেকে উদ্ধৃত
  17.  শব্দকল্পদ্রুম ৩।১৬৬৬; পূজা-বিজ্ঞান, স্বামী প্রমেয়ানন্দ, উদ্বোধন কার্যালয়, কলকাতা, ১৯৯৯, পৃষ্ঠা ৪৪ থেকে উদ্ধৃত
  18.  শ্রীশ্রীচণ্ডী ৪।৩
  19.  শ্রীশ্রীচণ্ডী, ২।৫১
  20.  "দেবীবাহন সিংহের ধ্যান", শ্রীশ্রীচণ্ডী, স্বামী জগদীশ্বরানন্দ অনূদিত ও সম্পাদিত, উদ্বোধন কার্যালয়, কলকাতা, পৃ. ৪৯
  21.  কালিকাপুরাণোক্ত শ্রীশ্রীদুর্গাপূজা পদ্ধতি, প্রবীরকুমার চট্টোপাধ্যায় কাব্যতীর্থ, পারুল প্রকাশনী, কলকাতা, পৃ. ১০০
  22.  কালীবিলাস তন্ত্র, ১৮।৩০
  23.  কালিকাপুরাণ, ৫৮।৬৫-৬৭
  24.  শিবপুরাণ, বায়বীয় সংহিতা, ২১।১০
  25.  পদ্মপুরাণ, সৃষ্টিখণ্ড, ৪৪।৭৮
  26.  দেবীপুরাণ, ৭।৪৫।৫০
  27.  দেবদেবী ও তাঁদের বাহন, স্বামী নির্মলানন্দ, প্রণব মঠ, কলকাতা, পৃষ্ঠা ২৪
  28.  পূজা-বিজ্ঞান, স্বামী প্রমেয়ানন্দ, উদ্বোধন কার্যালয়, কলকাতা, ১৯৯৯, পৃষ্ঠা ৪৪-৪৫
  29.  পূজা-বিজ্ঞান, স্বামী প্রমেয়ানন্দ, উদ্বোধন কার্যালয়, কলকাতা, ১৯৯৯, পৃষ্ঠা ৪৫
  30.  মহিষাসুর, সঞ্জয় ভুঁইয়া, বর্তমান পত্রিকা (বর্তমান রবিবার), ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০০৮ দ্রঃ
  31.  পূজা-বিজ্ঞান, স্বামী প্রমেয়ানন্দ, উদ্বোধন কার্যালয়, কলকাতা, ১৯৯৯, পৃষ্ঠা ৪৭
  32.  সাধন-সমর, ব্রহ্মর্ষি শ্রীসত্যদেব, সাধন-সমর কার্যালয়, কলকাতা, পৃষ্ঠা ১৭৫-৭৬
  33.  দেবদেবী ও তাঁদের বাহন, স্বামী নির্মলানন্দ, প্রণব মঠ, কলকাতা, পৃষ্ঠা ১৫৫
  34.  মা দুর্গার কাঠামো, মহানামব্রত ব্রহ্মচারী, মহাউদ্ধারণ মঠ, কলকাতা, পৃষ্ঠা ৬
  35.  পূজা-বিজ্ঞান, স্বামী প্রমেয়ানন্দ, উদ্বোধন কার্যালয়, কলকাতা, ১৯৯৯, পৃষ্ঠা ৪৬
  36.  মা দুর্গার কাঠামো, মহানামব্রত ব্রহ্মচারী, মহাউদ্ধারণ মঠ, কলকাতা, পৃষ্ঠা ৭
  37.  মা দুর্গার কাঠামো, মহানামব্রত ব্রহ্মচারী, মহাউদ্ধারণ মঠ, কলকাতা, পৃষ্ঠা ১১
  38.  সাধন-সমর, ব্রহ্মর্ষি শ্রীসত্যদেব, সাধন-সমর কার্যালয়, কলকাতা, পৃষ্ঠা ১৭৬
  39.  পূজা-বিজ্ঞান, স্বামী প্রমেয়ানন্দ, উদ্বোধন কার্যালয়, কলকাতা, ১৯৯৯, পৃষ্ঠা ৪৯
  40. ↑ ঝাঁপ দাও:  কালিকাপুরাণোক্তk শ্রীশ্রীদুর্গাপূজা পদ্ধতি, প্রবীরকুমার চট্টোপাধ্যায় কাব্যতীর্থ, পারুল প্রকাশনী, কলকাতা, পৃষ্ঠা ৭২, ১০৮, ১২৭
  41. ↑ ঝাঁপ দাও:  "দুর্গাপূজা কোন পদ্ধতিতে হয়", স্বামী ত্যাগিবরানন্দ, সাপ্তাহিক বর্তমান, ১২ অক্টোবর, ২০১৩ সংখ্যা, পৃ. ১৫
  42.  কালিকাপুরাণোক্ত শ্রীশ্রীদুর্গাপূজা পদ্ধতি, প্রবীরকুমার চট্টোপাধ্যায় কাব্যতীর্থ, পারুল প্রকাশনী, কলকাতা, পৃ. ২০২
  43.  হিন্দুদের দেবদেবী, তৃতীয় খণ্ড, হংসনারায়ণ ভট্টাচার্য, ফার্মা কেএলএম প্রাঃ লিঃ, কলকাতা, পৃ. ২৪১
  44.  "Durga-puja.org"। Durga-puja.org। ২০১২-১০-০৬। সংগ্রহের তারিখ ২০১৩-০৬-২৫
  45.  "Durga The Divine Mother"। সংগ্রহের তারিখ ২ অক্টোবর ২০১১
  46.  "BDNews24.com: Durga Puja 13–17 Oct (2010)"। ১০ অক্টোবর ২০১০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১২ অক্টোবর ২০১৩
  47.  কালীক্ষেত্র কালীঘাট, সুমন গুপ্ত, দীপ প্রকাশন, কলকাতা, ২০০৬, পৃ. ৬২-৬৪
  48.  বেলুড় মঠে স্বামীজীর দুর্গাপূজা, স্বামী দেবেন্দ্রানন্দ, উদ্বোধন কার্যালয়, কলকাতা, ২০১০, পৃ. ৬-৭
  49.  বেলুড় মঠে স্বামীজীর দুর্গাপূজা, স্বামী দেবেন্দ্রানন্দ, উদ্বোধন কার্যালয়, কলকাতা, ২০১০, পৃ. ২৫
  50. ↑ ঝাঁপ দাও:  বেলুড় মঠে স্বামীজীর দুর্গাপূজা, স্বামী দেবেন্দ্রানন্দ, উদ্বোধন কার্যালয়, কলকাতা, ২০১০, পৃ. ১৫
  51.  বেলুড় মঠে স্বামীজীর দুর্গাপূজা, স্বামী দেবেন্দ্রানন্দ, উদ্বোধন কার্যালয়, কলকাতা, ২০১০, পৃ. ২৮-৩০
  52.  মল্লভূম বিষ্ণুপুর, মনোরঞ্জন চন্দ্র, দে'জ পাবলিশিং, কলকাতা, ২০০৪, পৃ. ১০৪
  53.  মল্লভূম বিষ্ণুপুর, মনোরঞ্জন চন্দ্র, দে'জ পাবলিশিং, কলকাতা, ২০০৪, পৃ. ১০৮-১১০
  54.  "Kali Bari website to help old bond with the new"। Hindustan Times। ফেব্রুয়ারি ২১, ২০১১।
  55.  "Delhi's old timers remember as another Durga Puja dawns"। Monsters and Critics। অক্টো ১৬, ২০০৭।
  56.  "Tradition fuses with modernity"। The Times of India। অক্টো ৩, ২০১১।
  57.  "Festive spirit pervades the Capital"। The Hindu। অক্টো ১৫, ২০০৭।
  58.  "How community pujas came about"। India Today। সেপ্টেম্বর ২৫, ২০০৯।
  59. ↑ ঝাঁপ দাও:  Chaliha, Jaya, and Gupta, Bunny, Durga Puja in Calcutta, p.336, Calcutta, the Living City, Vol II, edited by Sukanta Chaudhuri, 1990/2005, p.2, Oxford University Press, আইএসবিএন ০-১৯-৫৬৩৬৯৭-X.
  60.  Home Chowdhury, Amlan। "Kumartuli, Potters Town"। littleindia.com। ২০০৭-০৯-৩০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০০৭-০৭-১৫
  61.  Sahoo, Srilat Saha। "Durga Puja – the festival of peace and harmony"। Press Release। Press Information Bureau, Government of India। সংগ্রহের তারিখ ২০০৭-০৭-১৫
  62.  "The voice carries on"। http://www.business-standard.com। সংগ্রহের তারিখ ২০১২-০৯-২১ |প্রকাশক= এ বহিঃসংযোগ দেয়া (সাহায্য)
  63.  "durga_puja : Mahalaya"। www.netglimse.com। ২০০৯-০৬-২৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০০৯-০৬-১৩
  64.  "Mahalaya: Invoking the Mother Goddess"। hinduism.about.com। সংগ্রহের তারিখ ২০০৯-০৬-১৩
  65. ↑ ঝাঁপ দাও:  "Biography of Pankaj Kumar Mullick - the versatile musical genius"। www.pankajmullick.org। ২০০৯-০৪-১৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০০৯-০৬-১৩
  66.  Mahalaya ushers in the Puja spirit The Times of India, TNN 19 September 2009.
  67.  Morning Raga ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ৩০ সেপ্টেম্বর ২০১২ তারিখে Indian Express, PiyasreeDasgupta, Sep 18, 2009.
  68.  "Mahisasura Mardini by Birendra Krishna Bhadra (AIR Recording) – Details of tracks and artists"। QuiQinQ। ২০১২-১০-২৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১২-১০-২১
  69.  Timeless Tunes Indian Express, Sep 29, 2008.
  70.  "Mahalaya : Durga Puja mahalaya : Durga Puja"। www.bangalinet.com। সংগ্রহের তারিখ ২০০৯-০৬-১৩
  71. ১. বাংলাদেশ ও পাক ভারতের ইতিহাস, জে.এম. বেলাল হোসেন সরকার, আনোয়ারুল হক মজুমদার, আবদুল আউয়াল
  72.  ঢাকা স্মৃতি বিস্মৃতির নগরী, মুনতাসীর মামুন
  73.  রামায়ণ কৃত্তিবাস বিরচিত, হরেকৃষ্ণ মুখোপাধ্যায় সম্পাদিত ও ডক্টর সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায় লিখিত ভূমিকা সম্বলিত, সাহিত্য সংসদ, কলকাতা, ১৯৫৭ সংস্কর
  74.  ঢাকেশ্বরী মন্দির, উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ
  75.  উইকিপিডিয়া

মহর্ষি বাল্মীকি রচিত মূল সংস্কৃত রামায়ণে, কোথাও দুর্গা পূজা নেই

শরৎকালে,রাম যুদ্ধ যাত্রাই করেননি।
সবচেয়ে হাস্যকর ব্যাপার হল যে,আশ্বিন মাসে,রাম রাবণের বিরুদ্ধে কোন যুদ্ধ যাত্রাই করেননি।
রাম যুদ্ধযাত্রা করেছিলেন, কার্তিক মাসে।
বাল্মীকি রচিত মূল রামায়ণ থেকেই প্রমাণ দেখুন---
পূর্বোহয়ং বার্ষিকো মাসঃ শ্রাবণঃ সলিলাগমঃ।
প্রবৃত্তাঃ সৌম্য চত্বারো,মাসা বার্ষিকসংজ্ঞিতাঃ।১৪
নায়মুদযোগসময়ঃ,প্রবিশ ত্বং পুরীং শুভাম্।।
অস্মিন্ বৎস্যাম্যহং সৌম্য পর্বতে সহলক্ষ্মণঃ।।১৫
ইয়ং গিরিগুহা রম্যা বিশালা যুক্তমারুতা।
প্রভূতসলিলা সৌম্য প্রভূতকমলোৎপলা।।১৬
কার্তিকে সমনুপ্রাপ্তে ত্বং রাবণবধে যতঃ
এষ ন সময়ঃ সৌম্য!প্রবিশ ত্বং স্বমালয়ম্।
অভিষিচ্যস্ব রাজ্যে চ সুহৃদঃ সম্প্রহর্ষয়।।১৭
বাল্মীকি রামায়ণম্_কিষ্কিন্ধ্যাকান্ড_ ষড়্ বিংশঃ সর্গঃ_শ্লোক_১৪-১৫-১৬-১৭
•••অর্থ-(বালী বধের পর,রাম সুগ্ৰীবকে বলছেন)---------
জল বর্ষণের,চারমাস'কে বর্ষাকাল বলা হয়।এখন বর্ষার প্রথম মাস শ্রাবণ মাস চলছে।(১৪)
সৌম্য!!এখন আমাদের সীতা উদ্ধারের জন্য উদ্যোগের সময় নয়। সুতরাং,তুমি এখন পুরীতে প্রবেশ কর, আমিও লক্ষ্মণের সঙ্গে এই পর্বতে বাস করি।এই পর্বত-গুহা প্রশস্ত ও সুন্দর,এখানে বায়ুর চলাচল হয়।এই স্থানের কাছাকাছি প্রচুর জল বিশিষ্ট অনেক পদ্মফুল শোভিত জলাশয় আছে।(১৫-১৬)
সৌম্য! বর্ষা শেষ হলে কার্তিক মাসে রাবণ বধের জন্য তুমি উদ্যোগী হবে,এখন তার সময় নয়। সুতরাং,এখন তুমি নিজের গৃহে যাও ও রাজ্যে অভিষিক্ত হয়ে,সুহৃদদেরকে আনন্দিত কর। (১৭)
অর্থাৎ ,যখন রাম যুদ্ধের উদ্যোগ আরম্ভ করবেন, তখন,কার্তিক মাস, শরৎকাল শেষ হয়ে গেছে!!!
তাহলে,শরৎকালে রাম যখন যুদ্ধযাত্রাই করেননি, তখন শরৎকালে, অকালবোধন হল কিভাবে?!!
••বি.দ্র.- কিছু ধূর্ত ধর্ম ব্যবসায়ী নিজেদের উদরপূর্তি করার জন্য ধর্মের নামে যে,মিথ্যাচার,প্রতারণা চালু করেছেন, প্রজন্মের পর প্রজন্ম আমরা তা বহন করেই চলেছি!

রামায়নে দূর্গা পূজা

বঙ্কিম চন্দ্রের রচনাবলীতে উনি দূর্গা বিষয়ে বলেছেন "ঋগ্বেদ সংহিতার দশম মণ্ডলের অষ্টমাষ্টকে “রাত্রি পরিশিষ্টে” একটি দুর্গা-স্তব আছে মাত্র। কিন্তু তাহাতে যদিও দুর্গা নাম ব্যবহৃত হইয়াছে, তথাপি তাঁহাকে আমাদের পূজিতা দুর্গা বলা যাইতে পারে না। উহা রাত্রি-স্তোত্র মাত্র।"
ঋগ্বেদের ১০'ম মন্ডলের ১২৭ সূক্ত "রাত্রি সুক্ত"
দুর্গা

শ্রীকৃষ্ণ এবং দুর্গা এই বঙ্গদেশের প্রধান আরাধ্য দেবতা। ইঁহাদিগের পূজা না করে এমত হিন্দু প্রায় বঙ্গদেশে নাই। কেবল পূজা নহে, কৃষ্ণভক্তি ও দুর্গাভক্তি এ দেশের লোকের সর্বকর্মব্যাপী হইয়াছে। প্রভাতে উঠিয়া শিশুরাও “দুর্গা দুর্গা” বলিয়া গাত্রোত্থান করে। যে কিছু লেখা পড়া আরম্ভ করিতে হইলে, আগে দুর্গা নাম লিখিতে হয়। “দুর্গে” “দুর্গে” “দুর্গতিনাশিনি” ইত্যাদি শব্দ অনেকের প্রতিনিঃশ্বাসেই নির্গত হয়। আমাদের প্রধান পর্বাহ দুর্গোৎসব। সেই উৎসব অনেকের জীবনমধ্যে প্রধান কর্ম বা প্রধান আনন্দ। সম্বৎসর তাহারই উদ্যোগে যায়। পথে পথে কালীর মঠ। অমাবস্যায় অমাবস্যায় কালীপূজা। কোন গ্রামে পীড়া আরম্ভ হইলে রক্ষাকালীপূজা। কাহারও কিছু অশুভ সম্ভাবনা হইলেই চণ্ডীপাঠ —অর্থাৎ কালীর মহিমা কীর্তন। ইঁহার প্রীত্যর্থে পূর্ববঙ্গে অনেক প্রাচীন বিজ্ঞ ব্যক্তিও মদ্যপান ও অন্যান্য কুৎসিত কর্মে রত। ফলে এই দেবী বঙ্গদেশ শাসন করিতেছেন। ডাকাইতেরা ইঁহার পূজা না দিয়া ডাকাইতি করে না।

এই দেবী কোথা হইতে আসিলেন? ইনি কে? আমাদিগের হিন্দু ধর্মকে সনাতন ধর্ম বলিবার কারণ এই যে, এই ধর্ম বেদমূলক। যাহা বেদে নাই, তাহা হিন্দু ধর্মের অন্তর্গত কি না সন্দেহ। যদি হিন্দু ধর্ম সম্বন্ধে কোন গুরুতর কথা বেদে না থাকে, তবে হয় বেদ অসম্পূর্ণ, না হয় সেই কথা হিন্দুধর্মান্তর্গত নহে। বেদ অসম্পূর্ণ ইহা আমরা বলিতে পারি না, কেন না তাহা হইলে হিন্দু ধর্মের মূলোচ্ছেদ করিতে হয়। তবে দ্বিতীয় পক্ষই এমন স্থলে অবলম্বনীয় কি না, তাহা হিন্দুদিগের বিচার্য।

দুর্গার কথা বেদে আছে কি? সকল হিন্দুরই কর্তব্য যে এ কথার অনুসন্ধান করেন। আমরা অদ্য তাঁহাদের এ বিষয়ে কিছু সাহায্য করিব।

অনেকেই জানেন যে বেদ একখানি গ্রন্থ নয়। অথবা চারি বেদ চারিখানি গ্রন্থ মাত্র নহে। কতকগুলিন মন্ত্র, কতকগুলিন “ব্রাহ্মণ” নামক গ্রন্থ, এবং কতকগুলিন উপনিষদ্ লইয়া এক একটি বেদ সম্পূর্ণ। তন্মধ্যে মন্ত্রই বেদের শ্রেষ্ঠাংশ বলা যাইতে পারে।

ইহা একপ্রকার নিশ্চিত যে কোন বৈদিক সংহিতায় এই দেবীর বিশেষ কোন উল্লেখ নাই। ইন্দ্র, মিত্র, বরুণ, বায়ু, সোম, অগ্নি, বিষ্ণু, রুদ্র, অশ্বিনীকুমার প্রভৃতি দেবতার ভূরি ভূরি উল্লেখ ও স্তুতিবাদ আছে; পুষণ, অর্যমন প্রভৃতি এক্ষণে অপরিচিত অনেক দেবতার উল্লেখ আছে, কিন্তু দুর্গা বা কালী বা তাঁহার অন্য কোন নামের বিশেষ উল্লেখ নাই।

ঋগ্বেদ সংহিতার দশম মণ্ডলের অষ্টমাষ্টকে “রাত্রি পরিশিষ্টে” একটি দুর্গা-স্তব আছে মাত্র। কিন্তু তাহাতে যদিও দুর্গা নাম ব্যবহৃত হইয়াছে, তথাপি তাঁহাকে আমাদের পূজিতা দুর্গা বলা যাইতে পারে না। উহা রাত্রি-স্তোত্র মাত্র। “ সহস্রসংমিতাং দুর্গাং জাতবেদসে সুনবাম সোমম্‌”। যজুর্ব্বেদের বাজসনেয় সংহিতায় অম্বিকার নাম আছে-“ এষ তে রুদ্র ভাগঃ স্বস্রা অম্বিকয়া ত্বং জূষস্ব স্বাহা”। তৈত্তিরীয় আরণ্যকের যাজ্ঞিকা উপনিষদে দুর্গা গায়ত্রী আছে- “ কাত্যয়নায় বিদ্মহে কন্যাকুমারী ধীমহি। তন্নো দুর্গীঃ প্রচোদয়াৎ”। আশ্চর্য, এখানে “দুর্গী” হোলো পুংলিঙ্গ বাচক শব্দ। তৈত্তিরীয় আরণ্যকের নারায়ণ উপনিষদে আছে “ দুর্গাং দেবীং শরণমহং প্রপদ্যে”। শব্দকল্পদ্রুম দুর্গা শব্দের ব্যাখ্যায় বলেছে যে, দুর্গ হোলো এক দৈত্য, আর “আ” হোলো হন্তৃবাচক। মানে যিনি দৈত্য হনন করেন, তিনি দুর্গা। সন্দিহান পাঠকের সন্দেহ ভঞ্জনার্থ, আমরা উহা উদ্ধৃত করিলাম।


আরাত্রি পার্থিবং রজঃ পিতুরপ্রায়ি ধামভিঃ।

দিবঃ সদাংসি বৃহতী বিতিষ্ঠসে ত্বেষাং বর্ততে তমঃ || ১ ||

যে তে রাত্রি নৃচাক্ষসো যুক্তাসো নবতির্নব।

অশীতিঃ সন্ত্বষ্টা উতো তে সপ্ত সপ্ততীঃ || ২ ||

রাত্রিং প্রপদ্যে জননীং সর্বভূতনিবেশনীং।

ভদ্রাং ভগবতীং কৃষ্ণাং বিশ্বস্য জগতো নিশাং || ৩ ||

সম্বেশনীং সংযমনীং গ্রহনক্ষত্রমালিনীম্।

প্রপন্নোহং শিবাং রাত্রিং

ভদ্রে পারং অশীমহি ভদ্রে পারং অশীমহি ওঁ নমঃ || ৪ ||

স্তোষ্যামি প্রযতো দেবীং শরণ্যাং বহ্বৃচপ্রিয়াং।

সহস্রসংমিতাং দুর্গাং জাতবেদসে সুনবাম সোমম্ || ৫ ||

শান্ত্যর্থং তদ্বিজাতীনামৃষিভিঃ সোমপাশ্রিতাঃ (সমুপাশ্রিতাঃ?)

ঋগ্বেদে ত্বং সমুৎপন্নারাতীয়তো নিদহাতি বেদঃ || ৬ ||

যে ত্বাং দেবি প্রপদ্যন্তে ব্রাহ্মণাঃ হব্যবাহিনাং।

অবিদ্যা বহুবিদ্যা বা স নঃ পর্ষদতিদুর্গানি বিশ্বাঃ || ৭ ||

অগ্নিবর্ণাং শুভাং সৌম্যাং কীর্তয়িষ্যন্তি যে দ্বিজাঃ।

তান তারয়তি দুর্গানি নাবেব সিন্ধুং দুরিতাত্যগ্নিঃ || ৮ ||

দুর্গেষু বিষমে ঘোরে সংগ্রামে রিপুসঙ্কটে।

অগ্নিচোরনিপাতেষু দুষ্টগ্রহনিবারণে || ৯ ||

দুর্গেষু বিষমেষু ত্বাং সংগ্রামেষু বনেষু চ।

মোহয়িত্বা প্রপদ্যন্তে তেষাং মে অভয়ং কুরু তেষাং মে অভয়ং

কুরু ওঁ নমঃ || ১০ ||

কেশিনীং সর্বভূতানাং পঞ্চমীতি চ নাম চ।

সা মাং সমা নিশা দেবী সর্বতঃ পরিরক্ষতু সর্বতঃ

পরিরক্ষতু ওঁ নমঃ || ১১ ||

তামগ্নিবর্ণান্তপসা জ্বলন্তীং বৈরোচনীং কর্মফলেষু জুষ্টাম্।

দুর্গাং দেবীং শরণমহং প্রপদ্যে সুতরসি তরসে নমঃ || ১২ ||

দুর্গা দুর্গেষু স্থানেষু সন্নোদেবীরভীষ্টয়ে।

য ইমং দুর্গাস্তবং পুণ্যং রাত্রৌ রাত্রৌ সদা পঠেৎ।

রাত্রি কুশিকঃ সৌভরো রাত্রিস্তবো গায়ত্রী রাত্রিসূক্তং জপেন্নিত্যং

তৎকালমুপপদ্যতে || ১৩ ||

এই সংস্কৃত এক এক স্থানে অত্যন্ত দুরূহ, এজন্য আমরা ইহার অনুবাদে সাহসী হইলাম না। ডাক্তার জন মিয়োর কৃত ইংরেজি অনুবাদের অনুবাদ নিম্নে লিখিলাম। তাঁহার অনুবাদও সন্তোষজনক নহে।

“হে রাত্রি! পার্থিব রজঃ তোমার পিতার কিরণে পরিপূর্ণ হইয়াছিল। হে বৃহতি! তুমি দিব্যালয়ে থাক, অতএব তমঃ বর্তে। যে নরদর্শকেরা তোমাতে যুক্ত তাহারা নবনবতি বা অষ্টাশীতি বা সপ্তসপ্ততি হউক (অর্থ কি?) সর্বভূতনিবেশনী, জননী, ভদ্রা, ভগবতী, কৃষ্ণা, এবং বিশ্বজগতের নিশাস্বরূপ রাত্রিকে প্রাপ্ত হই। সকলের প্রবেশকারিণী শাসনকত্রী (?) গ্রহনক্ষত্রমালিনী, মঙ্গলযুক্তা রাত্রিকে আমি প্রাপ্ত হইয়াছি; হে ভদ্রে! আমরা যেন পারে যাই, আমরা যেন পারে যাই, ওঁ নমঃ। দেবী, শরণ্যা বহ্বৃচপ্রিয়া, সহস্রাতুল্যা দুর্গাকে আমি যত্নে তুষ্ট করি। আমরা জাতবেদাকে (অগ্নি) সোমদান করি। দ্বিজাতিগণের শান্ত্যর্থ তুমি ঋষিদিগের আশ্রয় (?) ঋগ্বেদে তুমি সমুৎপন্না অগ্নি অরাতিদিগের দহন করেন (?) দেবি! যে ব্রাহ্মণেরা, অবিদ্যা হউন, বা বহুবিদ্যা হউন, তোমার কাছে আসেন, তিনি (?) আমাদের সকল বিপদে ত্রাণ করিবেন। যে ব্রাহ্মণেরা অগ্নিবর্ণা, শুভা, সৌম্যাকে কীর্তিত করিবে, সমুদ্রে নৌকার ন্যায় অগ্নি তাহাদিগকে বিপদ হইতে পার করিবেন। বিপদে ঘোর বিষম সংগ্রামে, সঙ্কটে বিষয় বিপদে সংগ্রামে, বনে অগ্নিনিপাতে, চোরনিপাতে, দুষ্টগ্রহ নিবারণে, তোমার কাছে আসে, এ সকল হইতে আমাকে অভয় কর! এ সকল হইতে আমাকে অভয় কর! ওঁ নমঃ। যিনি সর্বভূতের কেশিনী, পঞ্চমী নাম যাঁর, সেই দেবী প্রতিরাত্রে সকল হইতে পরিরক্ষণ করুন‌! সকল হইতে আমাকে পরিরক্ষণ করুন! ওঁ নমঃ। অগ্নিবর্ণা তপের দ্বারা জ্বালাবিশিষ্টা, বৈরোচনী কর্মফলে জুষ্টা, দুর্গাদেবীর শরণাগত হই, হে সুবেগবতি! তোমার বেগকে নমস্কার। দুর্গাদেবী বিপদস্থলে আমাদের মঙ্গলার্থ হউন। এই পবিত্র দুর্গা স্তব যে রাত্রে সদা পাঠ করিবে—রাত্রি, কুশিক, সৌভর, রাত্রিস্তব, গায়ত্রী, যে রাত্রিসূক্ত নিত্য জপ করে যে তৎকাল প্রাপ্ত হয়।”

ইহার সকল স্থলে অনুবাদ হইয়া উঠে নাই, এবং যাহা অনুবাদ হইয়াছে তাহার সকল স্থলের কেহ অর্থ করিতে পারে না। কিন্তু এত দূর বুঝা যাইতেছে যে, যদি এই দেবী আমাদের পূজিতা দুর্গা হয়েন, তবে দুর্গা রাত্রির অন্যেতর নাম মাত্র।

বঙ্কিম চন্দ্রের রচনাবলীতে উনি দূর্গা বিষয়ে বলেছেন "ঋগ্বেদ সংহিতার দশম মণ্ডলের অষ্টমাষ্টকে “রাত্রি পরিশিষ্টে” একটি দুর্গা-স্তব আছে মাত্র। কিন্তু তাহাতে যদিও দুর্গা নাম ব্যবহৃত হইয়াছে, তথাপি তাঁহাকে আমাদের পূজিতা দুর্গা বলা যাইতে পারে না। উহা রাত্রি-স্তোত্র মাত্র।" ঋগ্বেদের ১০'ম মন্ডলের ১২৭ সূক্ত "রাত্রি সুক্ত" ওখানের মন্ত্র ও শব্দার্থ সম্পূর্ণ ভিন্ন। “রাত্রি ( দদাতি ) অভীষ্টম্ ইতি রাত্রিঃ।” বুৎপত্তিগত অর্থে যিনি অভীষ্ট দান করেন তিনিই রাত্রি ।

সহায়ক গ্রন্থঃ~ 
১) সাধন সমর বা দেবী মাহাত্ম্য – ব্রহ্মর্ষি শ্রীশ্রীসত্যদেব, গীতা প্রেস, গোরক্ষপুর
২) ভারতের শক্তি-সাধনা ও শাক্ত সাহিত্য --- শশিভূষণ দাশগুপ্ত
৩) হিন্দুদের দেবদেবী – হংসনারায়ণ ভট্টাচার্য্য
৪) New Larousse Encyclopedia of Mythology- Guirand, Felix
৫) The Palace of Minos, 4 vols. (1921-36)-- Sir Arthur Evans
৬) Dictionary of Hindu Lore and Legend --- Anna L. Dallapiccola

দেবীসূক্তঃ
ঋগ্বেদের দশম মণ্ডলের  ১২৫তম সূক্তকে বৈদিক দেবীসূক্ত বা আত্মাসূক্ত বলে


অহং রুদ্রেভির্বসুভিশ্চরাম্যহমাদিত্যৈরুত বিশ্বদেবৈঃ।
অহং মিত্রাবরুণোভা বিভর্ম্যহমিন্দ্রাগ্নী অহমশ্বিনোমা।।১।। 
अ॒हं रु॒द्रेभि॒र्वसु॑भिश्चराम्य॒हमा॑दि॒त्यैरु॒त वि॒श्वदे॑वैः ।
अ॒हं मि॒त्रावरु॑णो॒भा बि॑भर्म्य॒हमि॑न्द्रा॒ग्नी अ॒हम॒श्विनो॒भा ॥
ऋग्वेद १०.१२५.१
पदार्थान्वयभाषाः -(अहम्) मैं महान् परमेश्वर की वाक्-ज्ञानशक्ति (वसुभिः) पृथिवी आदि आठ वसुओं से (रुद्रेभिः) ग्यारह प्राणों से (आदित्यैः) बारह मासों के साथ (उत) और (विश्वदेवैः) ऋतुओं के साथ (चरामि) प्राप्त होती हूँ (अहम्) मैं (उभा-मित्रा वरुणा) दोनों दिन रात को (इन्द्राग्नी) अग्नि विद्युत् को (उभा-अश्विना) दोनों द्युलोक पृथिवीलोक को (बिभर्मि) धारण करती हूँ ॥
भावार्थभाषाः -परमेश्वर की प्रतिनिधि मैं पारमेश्वरी ज्ञानशक्ति पृथिवी आदि आठ वस्तुओं, प्राणरूप ग्यारह रुद्रों, बारह मासों, अग्नि, विद्युत्, दिन रातों और द्युलोक पृथिवीलोक को धारण करती हूँ ॥
-ब्रह्ममुनि
সরলার্থঃ আমি  দুষ্টের দমকারী এবং পৃথিবী আদি সমস্ত লোকের সাথে  বাপ্য। আমি  ১২ মাস এবং সমস্ত তেজোময় পদার্থের সাথে ব্যাপ্য। দিন এবং রাত্রী উভয় কে  আমিই ধারণ করি।  সূর্য ও অগ্নি,  দ্যুলোক ও পৃথিবীলোক  উভয় কেও আমিই ধারণ করি।।১।।


অহম সোমাহনসং বিভর্ম্যহং ত্বষ্টারমুত পুষণং ভগম্।
অহং দধামি দ্রবণং হবিষ্মতে সুপ্রাব্যে যজমানায় সুন্বতে।।২।। 
अ॒हं सोम॑माह॒नसं॑ बिभर्म्य॒हं त्वष्टा॑रमु॒त पू॒षणं॒ भग॑म् ।
अ॒हं द॑धामि॒ द्रवि॑णं ह॒विष्म॑ते सुप्रा॒व्ये॒३॒॑ यज॑मानाय सुन्व॒ते ॥
                                                     -ऋग्वेद १०.१२५.२
पदार्थान्वयभाषाः -(अहम्) मैं (आहनम्) दृष्टिदोष को नष्ट करनेवाले या अशान्तिनाशक (सोमं बिभर्मि) चन्द्रमा को धारण करती हूँ (अहं त्वष्टारम्) मैं सूर्य को (उत) और (पूषणं भगम्) वायु तथा भजनीय यज्ञ को धारण करती हूँ (अहम्) मैं (हविष्मते) हवि देनेवाले के लिये (सुप्राव्ये) विद्वानों को भोजनादि से अच्छी प्रकार प्रकृष्टता से तृप्त करनेवाले के लिये (सुन्वते) विद्वानों के पानार्थ सोमरस निकालनेवाले के लिये (यजमानाय) यजमान आत्मा-के लिये (द्रविणं दधामि) धन को धारण करती हूँ दान के लिये ॥२॥
भावार्थभाषाः -पारमेश्वरी ज्ञानशक्ति चन्द्रमा सूर्य वायु और यज्ञ को धारण करती है तथा होम करनेवाले विद्वानों को तृप्त करनेवाले और उनके लिये सोमरस निकालनेवाले के लिये यजमान आत्मा के लिये धन को धारण करती है ॥-ब्रह्ममुनि
সরলার্থঃ আমি সব দুষ্ট কে নাশকারী  শাসক কে ধারণ করি। আমি কান্তিমান সূর্য কে এবং সর্বপোষক ভূমি কে এবং সমস্ত ঐশ্বর্য্য কে ধারণ করি।  আমি  অন্নাদি হবিষ্য পদার্থ সম্পন্ন দানশীল যজ্ঞকর্তা এবং  সুখ পূর্বক উত্তম রীতি দ্বারা সবাইকে রক্ষাকারী উপসনাশীল,  ঐশ্বর্য্যযুক্ত শাসক কে ধন প্রদান করি।। ২।।


অহং রাষ্ট্রী সঙ্গমনী বসুনাং চিকিতুষী প্রথমা যজ্ঞিয়ানাম্।
তাং মা দেবা ব্যদধুঃ পুরুত্রা ভূরিস্থাত্রাং ভূর্যবেশ্যন্তীম্।।৩।। 
अ॒हं राष्ट्री॑ सं॒गम॑नी॒ वसू॑नां चिकि॒तुषी॑ प्रथ॒मा य॒ज्ञिया॑नाम् ।
 तां मा॑ दे॒वा व्य॑दधुः पुरु॒त्रा भूरि॑स्थात्रां॒ भूर्या॑वे॒शय॑न्तीम् ॥
-ऋग्वेद १०.१२५.३
पदार्थान्वयभाषाः -(अहं राष्ट्री) मैं जगद्रूप राष्ट्र की स्वामिनी हूँ (वसूनां सङ्गमनी) समस्त धनों की सङ्गति करानेवाली-प्राप्त करानेवाली (यज्ञियानाम्) श्रेष्ठ कर्मों की (प्रथमा) प्रथम-प्रमुख (चिकितुषी) चेतानेवाली हूँ (भूरिस्थात्राम्) बहुरूप स्थितिवाली (भूरि-आवेशयन्तीम्) जड़ जङ्गम पदार्थों में बहुरूप से आवेश करती हुई (तं मा) उस ऐसी मुझको (देवाः) विद्वान् जन (पुरुत्रा) बहुत रूपों में (व्यदधुः) वर्णन करते हैं॥
भावार्थभाषाः -पारमेश्वरी ज्ञानशक्ति जगद्रूप राष्ट्रस्वामिनी है, धनों की प्राप्ति भी वह कराती है, यज्ञसम्बन्धी कर्मों का विधान बतानेवाली है। बहुत विद्यास्थानवाली सब पदार्थों में प्रविष्ट को विद्वान् जन बहुत रूपों में वर्णन करें जानें ॥

সরলার্থঃ আমি রাষ্ট্রের স্বামিনী। আমি নানা ঐশ্বর্য্য কে প্রাপ্ত করানোকারী,  যজ্ঞ দ্বারা উপাস্য,  সব থেকে শ্রেষ্ঠ জ্ঞানবতী।  সেই আমাকেই বহু প্রকার দ্বারা বিদ্যমান এবং  বহু তত্ব বা শক্তির প্রদানকারী আমাকেই বিদ্বান জন  বিবিধ প্রকার দ্বারা প্রতিপাদন করেন। 


ময়া সো অন্নমত্তি যো বিপশ্যতি যঃ প্রাণিতি য ই শৃণোত্যুক্তম্।
অমন্তবো মাং ত উপ ক্ষিয়ন্তি শ্রুধি শ্রুত শ্রুদ্ধিবং তে বদামি।। ৪।। 
मया॒ सो अन्न॑मत्ति॒ यो वि॒पश्य॑ति॒ यः प्राणि॑ति॒ य ईं॑ शृ॒णोत्यु॒क्तम् ।
अ॒म॒न्तवो॒ मां त उप॑ क्षियन्ति श्रु॒धि श्रु॑त श्रद्धि॒वं ते॑ वदामि ॥
-ऋग्वेद १०.१२५.४
पदार्थान्वयभाषाः -(मम) मेरे द्वारा अनुमोदित (सः-अन्नम्-अत्ति) वह भोजन खाता है (यः-विपश्यति) जो विशेष देखता है (यः प्राणिति) जो प्राण लेता है (यः-ईम्-उक्तं शृणोति) जो ही कहे हुए को सुनता है (माम्) मुझे (अमन्तवः) न माननेवाले हैं (ते) वे (उप क्षियन्ति) उपक्षय-नाश को प्राप्त होते हैं (ते) तुझे (श्रद्धिवम्) श्रद्धायुक्त सत्यवचन (वदामि) कहती हूँ (श्रुत-श्रुधि) हे विश्रुत-प्रसिद्ध सुन ॥
भावार्थभाषाः -जो खानेवाली-देखनेवाली, सुननेवाली पारमेश्वरी ज्ञानशक्ति को नहीं मानते, तदनुसार आचरण नहीं करते, वे क्षीण हो जाते हैं, यह सत्य है ॥
সরলার্থঃ আমার দ্বারা অনুমোদিত  তিনি ভোজন করেন,  যিনি বিশিষ্টরূপে দেখেন, যিনি প্রাণ ধারণ করেন,   যিনি উক্ত শ্রবন করেন।  আমাকে  অমান্যকারী তিনি নাশ প্রাপ্ত হয়, তোমাকে  শ্রদ্ধাযুক্ত সত্যবচন  বলছি - হে বিশ্রুদ্ধ শ্রবন করো ৪।

অহমেব স্বয়মিদং বদামি জুষ্টং দেবেভিরুত মানুষেভিঃ।
যং কাময়ে তংমুগ্রং কৃণোমি তং ব্রহ্মাণং তমৃষি তং সুমেধাম্।।৫।। 
अ॒हमे॒व स्व॒यमि॒दं व॑दामि॒ जुष्टं॑ दे॒वेभि॑रु॒त मानु॑षेभिः ।
 यं का॒मये॒ तंत॑मु॒ग्रं कृ॑णोमि॒ तं ब्र॒ह्माणं॒ तमृषिं॒ तं सु॑मे॒धाम् ॥
-ऋग्वेद १०.१२५.५
पदार्थान्वयभाषाः -(अहम्-एव स्वयम्) मैं ही स्वयं (इदं वदामि) यह कहती हूँ (देवेभिः) ऋषियों द्वारा (उत) और (मानुषेभिः) मनुष्यों द्वारा (जुष्टम्) सेवन करने योग्य को (यं कामये) जिसको चाहती हूँ, पात्र मानती हूँ, (तं तम्) उस-उस को (उग्रम्) उत्कृष्ट (तं ब्रह्माणम्) उसे ब्रह्मा (तम्-ऋषिम्) उसे ऋषि (तं सुमेधाम्) उसे अच्छी मेधावाला (कृणोमि) करती हूँ, बनाती हूँ ॥
भावार्थभाषाः -पारमेश्वरी ज्ञान शक्ति ही देवों और साधारण मनुष्यों के द्वारा सत्सङ्ग में आये मनुष्य को तेजस्वी बनाती है, ब्रह्मा बनाती है, ऋषि बनाती है, अच्छी मेधावाला बनाती है ॥
সরলার্থঃ আমিই ইহা  স্বয়ম উপদেশ করি  যাকে বিদ্বান এবং মননশীল জন প্রেমপূর্বক শ্রবন এবং মনন করে। আমি যাকে ইচ্ছা করি তাকে তাকে বলবান করি তাকে চতুর্বেদবিত্ করি তাকে ঋষি এবং  তাকে উত্তম মেধাযুক্ত করি।। ৫।। 

অহং রুদ্রায় ধনুরাতনোমি ব্রহ্মদ্বিষে শরবে হন্তবা উ।
অহং জনায় সমদং কৃণম্যহং দ্যাবাপৃথিবী আ বিবেশ।।৬।। 
अ॒हं रु॒द्राय॒ धनु॒रा त॑नोमि ब्रह्म॒द्विषे॒ शर॑वे॒ हन्त॒वा उ॑ ।
अ॒हं जना॑य स॒मदं॑ कृणोम्य॒हं द्यावा॑पृथि॒वी आ वि॑वेश ॥-१०.१२५.६
पदार्थान्वयभाषाः -(ब्रह्मद्विषे) ब्राह्मणों के प्रति द्वेष करनेवाले (रुद्राय) क्रूर (शरवे) हिंसक को (हन्तवै-उ) हनन करने के हेतु (अहं धनुः-आ तनोमि) मैं धनुषशस्त्र को साधती हूँ (अहं जनाय) जनहितार्थ (समदं कृणोमि) मैं अहङ्कारी के साथ संग्राम करती हूँ (अहं द्यावापृथिवी) मैं द्यावापृथिवी में भलीभाँति (आ विवेश) प्रविष्ट होकर रहती हूँ ॥
भावार्थभाषाः -पारमेश्वरी ज्ञानशक्ति ब्राह्मण के प्रति द्वेष करनेवाले क्रूर हिंसक जन को हनन करने के लिये धनुषशस्त्र को सिद्ध करना चाहिये और संग्राम में चलाना चाहिये। वह द्यावापृथिवीमय सब जगत् में आविष्ट होकर वर्त्तमान है ॥
সরলার্থঃ  আমি  ব্রাহ্মণ, বেদের হিংসক শত্রুবর্গকে  নাশের জন্য  দুষ্টের রোদনকারী ধনু কে  বিস্তার করি।  আমি  মনুষ্যের উপকারের জন্য  সংগ্রাম করি,  আমি  আকাশ এবং ভূমি উভয়ের মধ্যে ব্যাপ্য।।৬।।

অহং সুবে পিতরমস্য মূর্ধন্মম যোনিরপ্স্বন্তঃ সমুদ্রে।
ততো বি তিষ্ঠে ভূবনানু বিশ্বোতামূ দ্যাং বর্ষ্মণোপ স্পৃশামি।। ৭।। 
अ॒हं सु॑वे पि॒तर॑मस्य मू॒र्धन्मम॒ योनि॑र॒प्स्व१॒॑न्तः स॑मु॒द्रे ।
ततो॒ वि ति॑ष्ठे॒ भुव॒नानु॒ विश्वो॒तामूं द्यां व॒र्ष्मणोप॑ स्पृशामि ॥-१०.१२५.७

पदार्थान्वयभाषाः -(अस्य) इस जगत् के (मूर्धन्) मूर्धारूप उत्कृष्ट भाग में स्थित (पितरम्) पालक सूर्य को (अहं सुवे) मैं उत्पन्न करती हूँ (मम योनिः) मेरा घर (अप्सु-समुद्रे-अन्तः) व्यापनशील परमाणुओं में तथा अन्तरिक्ष महान् आकाश में (ततः-विश्वा भुवना) तत एव सारे लोकलोकान्तरों को (अनु वि तिष्ठे) व्याप्त होकर रहती हूँ (इत उ द्याम्) इसी कारण द्युलोक के प्रति (वर्ष्मणा) वर्षणधर्म से (उप स्पृशामि) सङ्गत होती हूँ ॥
भावार्थभाषाः -पारमेश्वरी ज्ञानशक्ति जगत् के ऊपर वर्त्तमान पालक सूर्य को उत्पन्न करती है और वह परमाणुओं तथा महान् आकाश के अन्दर व्याप्त है, सब लोक-लोकान्तरों में निविष्ट है, द्युलोक से मेघमण्डल से वर्षा कराती है ॥-ब्रह्ममुनि
সরলার্থঃ আমি এই সংসারের সবার উপরে এই জগতের পালক সূর্যকে  উৎপন্ন করি।  জলের মধ্যে তথা সমুদ্রের প্রতিটি পরমাণুতে আমার নিবাস ।সেই আমিই  সমস্ত লোক কে  বিশেষ রুপ দ্বারা ব্যাপিয়া আছি। এবং আমি সুখপ্রদ রূপ দ্বারা  এই মহান আকাশ বা সূর্য্য কে প্রাপ্ত হই। 

অহমেব বাত ইব প্র বাম্যারভমাণা ভূবনানি বিশ্বা।
পরো দিবা পর এনা পৃথিব্যৈতাবতী মহিনা সম্বভূব।।৮।। 
अ॒हमे॒व वात॑ इव॒ प्र वा॑म्या॒रभ॑माणा॒ भुव॑नानि॒ विश्वा॑ ।
प॒रो दि॒वा प॒र ए॒ना पृ॑थि॒व्यैताव॑ती महि॒ना सं ब॑भूव ॥-१०.१२५.८

पदार्थान्वयभाषाः -(अहम्) मैं (विश्वा भुवनानि) सब लोक-लोकान्तरों को (आरभमाणा) निर्माण करती हुई या निर्माण के हेतु (वातः-इव) वेगवाली वायु के समान (प्र वामि) प्रगति करती हूँ (दिवा परः) द्युलोक से परे (एना पृथिव्या परः) इस पृथ्वी से परे (महिना) अपने महत्त्व से (एतावती) इतने गुण सम्पन्नवाली (सं बभूव) आम्भृणी वाणी हूँ, सम्यक् सिद्ध हूँ ॥
भावार्थभाषाः -पारमेश्वरी ज्ञानशक्ति लोक-लोकान्तरों को उत्पन्न करने के हेतु वायुवेग के समान वेग से गति करती है, द्युलोक से परे और पृथिवीलोक से परे अपनी महिमा से विराजमान है ॥-ब्रह्ममुनि
সরলার্থঃ আমিই বায়ুর ন্যায় প্রগতি করি। আমি  সমস্ত ভূবন কে  নির্মাণ করি, দ্যুলোক থেকে পরেও  এই পৃথিবী থেকে পরেও আমার মহানত্ব এতটাই  হয়।।৮।। 

সাধারণভাবে চণ্ডীপাঠের পূর্বে ঋগ্বেদের রাত্রিসূক্ত এবং পাঠান্তে দেবীসূক্ত পাঠ করা হয়। 


রাত্রি সূক্তঃ


ঋগ্বেদ ১০'ম মন্ডল ১২৭ সূক্তঃ রাত্রিসূক্ত

এই সূক্তে রাত্রিকে বর্ণনা করা হয়েছেঃ

देवता: रात्रिस्तवः ऋषि: कुशिकः सौभरो, रात्रिर्वा भारद्वाजी छन्द: विराड्गायत्री स्वर: षड्जः



रात्री॒ व्य॑ख्यदाय॒ती पु॑रु॒त्रा दे॒व्य१॒॑क्षभि॑: ।

विश्वा॒ अधि॒ श्रियो॑ऽधित ॥-ऋग्वेद १०.१२७.१

पदार्थान्वयभाषाः -(आयती रात्रिः-देवी) आती हुई रात्रि देवी (अक्षभिः) नेत्र जैसे नक्षत्रों के साथ (व्यख्यत्) अपने को विशेषरूप से दर्शाती है (विश्वाः श्रियः) सारी शोभाओं को (अधि-अधित) अपने में धारण करती है ॥

भावार्थभाषाः -रात्रि जब आती है, तो आकाश के नक्षत्रों के द्वारा अपने को दर्शाती है, समस्त शोभाओं को अपने अन्दर धारण करती है अर्थात् समस्त शोभाओं को रात्रि पुष्ट करती है, आकाश की शोभा नक्षत्रों द्वारा रात्रि को ही दिखाई देती है, मनुष्यों की दिन में थकान की ग्लानि स्वस्थता के रूप में भासित होती है, वृक्षों के फूल भी रात्रि में ही विकसित होते हैं ॥-ब्रह्ममुनि


ओर्व॑प्रा॒ अम॑र्त्या नि॒वतो॑ दे॒व्यु१॒॑द्वत॑: ।

 ज्योति॑षा बाधते॒ तम॑: ॥-ऋग्वेद १०.१२७.२

पदार्थान्वयभाषाः -(अमर्त्या) स्वरूप से नित्य (देवी) रात्रि देवी (अद्वतः) ऊँचे प्रदेशों को (निवतः) नीचे प्रदेशों को (उरु-आ-अप्राः) बहुत व्याप जाती है अर्थात् ऊँचे नीचे को समान कर देती है (ज्योतिषा) गगन ज्योति से (तमः) अन्धकार को (बाधते) निवृत्त करती है, अपितु प्राणियों को सुलाकर मन के अन्दर वर्त्तमान अन्धकार जड़ता को निवृत्त करती है पूर्ण विश्राम प्रदान करके ॥

भावार्थभाषाः -रात्रि शाश्वत है, आरम्भ सृष्टि से चली आती है, ऊँचे स्थानों और नीचे स्थानों को व्यापती है, उन्हें एकरूप में दिखाती है, नक्षत्रसमूह की ज्योति से अन्धकार को हटाती है तथा सुलाकर-निद्रा लाकर मन में विद्यमान अन्धकार व जड़ता को विश्राम देकर हटाती है, रात्रि को शयन ही करना चाहिये ॥


निरु॒ स्वसा॑रमस्कृतो॒षसं॑ दे॒व्या॑य॒ती ।

 अपेदु॑ हासते॒ तम॑: ॥-ऋग्वेद १०.१२७.३

पदार्थान्वयभाषाः -(देवी-आयती) रात्रि देवी आती हुई (उषसं स्वसारम्) रात्रि के पीछे आनेवाली उसकी सहयोगिनी उषा प्रभातवेला को (निर् अकृत) संस्कृत करती है-सुशोभित करती है (तमः-इत्-उ-अप हासते) अन्धकार भी हट जाता है उषाकाल में ॥

भावार्थभाषाः -रात्रि आती है तो उसके पीछे चलती हुई भगिनी जैसी उषा के आने पर रात्रि का अन्धकार भाग जाता है, उषा की शोभा रात्रि के आश्रय पर है ॥


सा नो॑ अ॒द्य यस्या॑ व॒यं नि ते॒ याम॒न्नवि॑क्ष्महि ।

 वृ॒क्षे न व॑स॒तिं वय॑: ॥-ऋग्वेद १०.१२७.४

पदार्थान्वयभाषाः -(सा) वह रात्रि (नः) हमारे लिए (अद्य) आज-प्रतिदिन कल्याणकारी हो (यस्याः-ते) जिस तेरे (यामन्) प्राप्त करने में (वयम्) हम (नि-अविक्ष्महि) सुखपूर्वक रहें (वृक्षे न) जैसे वृक्ष पर (वसतिं वयः) वास घौंसले पर निवेश करता है-रहता है, वैसे ही रात्रि सुख से सुलानेवाली हो ॥४॥

भावार्थभाषाः -रात्रि मनुष्यों के लिए कल्याणकारी आती है, जिसके आने पर मनुष्य निविष्ट हो जाते हैं, जैसे पक्षी अपने घौंसले में निविष्ट हो जाता है ॥


नि ग्रामा॑सो अविक्षत॒ नि प॒द्वन्तो॒ नि प॒क्षिण॑: ।

 नि श्ये॒नास॑श्चिद॒र्थिन॑: ॥-ऋग्वेद १०.१२७.५

पदार्थान्वयभाषाः -(ग्रामासः) जनसमूह रात्रि में (नि-अविक्षत) शयन करते हैं-करें (पद्वन्तः-नि) पैरवाले पशु शयन करें (पक्षिणः-नि) पक्षी भी शयन करें (श्येनासः-अर्थिनः) तीव्र गतिमान् भी शयन करें (चित्-नि) थकावट दूर करने के लिए भी शयन करें।

भावार्थभाषाः -रात्रि में मनुष्य पशु पक्षी शान्तिप्रयोजन साधने के लिए शयन करें ॥


या॒वया॑ वृ॒क्यं१॒॑ वृकं॑ य॒वय॑ स्ते॒नमू॑र्म्ये ।

 अथा॑ नः सु॒तरा॑ भव ॥-ऋग्वेद १०.१२७.६

पदार्थान्वयभाषाः -(ऊर्म्ये) हे रात्रि ! (वृक्यं वृकं यवय) भेड़ियन भेड़िये घातक पशु को हमारे से पृथक् कर सुला दे (स्तेनं यवय) चोर को हमसे पृथक् कर सुला दे (अथ न सुतरा भव) हमारे लिए सुख से बीतनेवाली हो ॥

भावार्थभाषाः -रात्रि में मनुष्य सो जाते हैं। सो जाने पर भेड़िये आदि जङ्गली पशु एवं चोरों के आक्रमण की सम्भावना रहती है। मानव की भावना है कि वे हमारे ऊपर आक्रमण न करें और सो जावें, या हम ऐसे गहरे न सोएँ, जिससे वे सता सकें ॥


उप॑ मा॒ पेपि॑श॒त्तम॑: कृ॒ष्णं व्य॑क्तमस्थित । 

उष॑ ऋ॒णेव॑ यातय ॥-ऋग्वेद १०.१२७.७

पदार्थान्वयभाषाः -(उषः) हे उषो वेले ! (कृष्णं तमः) घने अन्धकार को अपना रूप देती हुई (पेपिशत्) अत्यन्त चूर्ण कर दे (व्यक्तं मा-उप अस्थित) मुझे पूर्णरूप से उपस्थित होती है (ऋणा-इव यातय) ऋणों की भाँति दूर कर-उतार, रात्रि के अनन्तर उषा आया करती है, जो रात्रि के अन्धकार को मिटाती है ॥

भावार्थभाषाः -प्रभातवेला उषा जब आती है, रात्रि के अन्धकार को चूर्ण करती हुई आती है तथा हमारे मानस अन्धकार से ऋण की भाँति विमुक्त कराती है, ज्ञान जागृति देती है ॥


उप॑ ते॒ गा इ॒वाक॑रं वृणी॒ष्व दु॑हितर्दिवः ।

 रात्रि॒ स्तोमं॒ न जि॒ग्युषे॑ ॥-ऋग्वेद १०.१२७.८

पदार्थान्वयभाषाः -(रात्रि) हे रात्रि ! (ते) तेरे लिये (गाः इव) दूध देनेवाली गौ की भाँति-जैसे घास आदि दिया जाता है, वैसे (उप आ अकरम्) होम से उपचार करता हूँ (वृणीष्व) तू इसे अनुकूल बना, हमारे लिये उससे सुखकरी हो (दिवः-दुहितः) सूर्य की कन्या (जिग्युषे) विरोधी को जीतने के इच्छुक के लिये (स्तोमम्-इव) स्तुतिसमूह के समान हव्य देता हूँ, जैसे इष्टदेव को स्तुतिसमूह को अर्पित किया जाता है, वैसे तुझे हव्य पदार्थ देता हूँ, उससे सुवासित हो ॥

भावार्थभाषाः -रात्रि सूर्य की पुत्री के समान है उसका स्वागत करना चाहिए, होम द्वारा सायं होम करके, रोगादि विरोध पर विजय पाने के लिये ॥


ইতি ঋগ্বেদোক্তং রাত্রিসুক্তং সমাপ্তং .


No comments:

Post a Comment

ধন্যবাদ

বৈশিষ্ট্যযুক্ত পোস্ট

জাতিবাদ ও ভগবান মনু

  সম্পাদকীয় বর্তমান সময়ে দেশ অনেক গম্ভীর সমস্যায় গ্রস্ত আছে, তারমধ্যে একটা হল - জাতিবাদ। এই জাতিবাদের কারণে আমাদের দেশের অনেক বড় হানি হ...

Post Top Ad

ধন্যবাদ