বেদে রাধা - ধর্ম্মতত্ত্ব

ধর্ম্মতত্ত্ব

ধর্ম বিষয়ে জ্ঞান, ধর্ম গ্রন্থ কি , হিন্দু মুসলমান সম্প্রদায়, ইসলাম খ্রীষ্ট মত বিষয়ে তত্ত্ব ও সনাতন ধর্ম নিয়ে আলোচনা

धर्म मानव मात्र का एक है, मानवों के धर्म अलग अलग नहीं होते-Theology

সাম্প্রতিক প্রবন্ধ

Post Top Ad

স্বাগতম

20 January, 2018

বেদে রাধা

বেদে রাধা
বেদে রাধা

" ইন্দ্র বয়ুমনিরাধং হবামহে"

                                                             - অথর্ব কা০১৯ ব০১৫ ম০২

আমরা আরাধনা করিবার যোগ্য সেই ঐশ্বর্যশালী পরমেশ্বরের স্ততি করি।

বেদের এই মন্ত্র দেখে অনেক বৈষ্ণব পন্ডিতের মন পুলকিত হয় বেদে রাধা পেয়েছে ভেবে।যতদূর জানা যায় আজ থেকে আনুমাণিক ৫০০ বৎসর পূর্বে নিত্যানন্দের স্ত্রী জাহ্নবী দেবী নয়ন ভাস্কর কে দিয়ে রাধার মূর্তি তৈরী করিয়ে বৃন্দাবনে গিয়ে জীব গোস্বামীর অজ্ঞাতে শ্রী কৃষ্ণের পাশে রাধারমূর্তি প্রথম বসিয়ে রেখে আসেন। তার পূর্বে কৃষ্ণের পাশে রাধার মূর্তি কোনদিনই ছিল না।

য়দিন্দ্র চিত্রম ইহ নাস্তি ত্বাদাতমন্দ্রিবঃ।
রাধস্তন্নো বিদপূস উভয়া হস্ত্য আভব।।-সামবেদ- ১১৭২
পদার্থঃ হে (আদ্রিবঃ) সব অন্ধকারকে দুর কারী ইন্দ্র! (মে) আমার (ইহ) এই সংসারে (যদ্) যে (ত্বাদার্ত) তোমার দ্বারা দানরূপে প্রাপ্ত করার যোগ্য (নাস্তি) হয় নি (তদ্ রাধঃ) সেই ধন বা সিদ্ধি (চিত্র) পূজনীয়! হে (বিদদুসো) বিদ্বানের একমাত্র প্রাণস্বরূপ! (ন) আমাদের (উভয় হস্ত্যা ভর) উভয় হস্তে প্রদান করুন।
(অনুবাদঃ জয়দেব শর্মা)

এ মন্ত্রে যে শব্দটি রয়েছে তা হচ্ছে " রাধস্তন্নো" এখানে (রাধ) শব্দের অর্থ কোন ব্যক্তি বিশেষের নাম নয়। পূর্বের মন্ত্রগুলোতে এর অর্থ বরাবরই বলা হয়েছে। এ মন্ত্রে ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করা হচ্ছে যে, তিনি যেন দানরূপে প্রাপ্ত যোগ্য ধন আমাদের উভয় হস্তে দান করেন।
সখায় আ নিষীদত সবিতা স্তোম্যো নু নঃ।
দাতা রাধাংসি শুম্ভাতি।।-ঋগবেদ ১।২২।৮
পদার্থঃ (সখায়) মিত্র! (আনিষীদত্) সবপ্রকারে এসে নম্রতার সহিত বসো (সবিতা) সব ব্রহ্মান্ডের উৎপাদক সর্বপ্রেরক প্রভূ (ন) অবশ্যই (ন) আমাদের সবার (স্তোম্য) স্তুতি করার যোগ্য, সেই প্রভূ (রাধাংসি দাতা) সব ধনের দাতা, এবং তিনি (শুম্ভতি) আমাদের জীবনকে সুশোভিত করে।
(অনুবাদঃ হরিশরণ সিদ্ধান্তলংকার)

এ মন্ত্রে "রাধাংসি দাতা " শব্দের উল্লেখ পাওয়া যায়। যার অর্থ হচ্ছে সর্ব ধনের দাতা। যা উপরিউক্ত মন্ত্রে স্পষ্ট হয়েছে। অনুরূপ ভাবে যদি মন্ত্রটিতে রাধিকা নামক কো নাম্নি কে মেনে নেওয়া হয় তবে কি ঈশ্বর আমাদের রাধা নামক কোন নারীকে দান করেন?

বিভক্তারং হবামহে বসোশিচত্রস্য রাধস।
সবিতারম নৃচক্ষসম।।-ঋগবেদ - ১।২২।৭
পদার্থঃ (বিভক্তারম) ধনের উচিত বিভাগ কর্তা প্রভূ কে (হবামহে) আমরা আহ্বান করি, যে প্রভূ ( বসোঃ) নিবাসের জন্য আবশ্যক ধনের দাতা (চিত্রস্য) যে ধন আমাদের জ্ঞান দানকারী, তথা (রাধসঃ) যে ধন আমাদের কর্মের সিদ্ধি দানকারী (সবিতারম) সেই প্রভূ কে, তথা (নৃচক্ষ্যসম) সব লোকের পালনকারী প্রভূকে আমরা আহ্বান করি।
(অনুবাদঃ হরিশরণ সিদ্ধান্তলংকার)

এ মন্ত্রে "রাধস" শব্দের উল্লেখ হয়েছে। যার অর্থ হচ্ছে ধন বা সম্পদ। মন্ত্রটিতে উত্তম ধনের দাতা প্রভূর স্তুতি করা হয়েছে । যে, প্রভূ আমাদের ধনের বিভাগ কর্তা।
অর্থাৎ তিনি আমাদের কর্মানুযায়ী ধনকে ভাগ করে দেন। যদি মন্ত্রটিতে রাধা নাম্নি কে স্বীকার হয় তবে ঈশ্বর কি আমাদের সবাইকে উচিতভাবে রাধাকে ভাগ বা বন্টন করে দেন??

বিঃদ্রঃ

নিরুক্তাকার যাস্ক রাধা শব্দের অর্থ ধন করেছেন (রাধ ইতি ধননাম ; নিরুক্ত ৪।৪)

কৃষ্ণা:- কৃষ্ শব্দের অর্থ মোক্ষ (মুক্তি), এর সাথের ণ-এর অর্থ উৎকৃষ্ট। এর সাথে দানবোধক আ ধ্বনি যুক্ত হয়ে কৃষ্ণা শব্দের সৃষ্টি। সব মিলিয়ে কৃষ্ণা শব্দের অর্থ দাঁড়ায়, যিনি উৎকৃষ্টতর মুক্তি প্রদান করেন।

বৈদিক কোষে রাধঃ শব্দ ধন এবং আরাধনার্থে ব্যবহৃত হয়েছে -

রাধঃ - রাধ্ (সংসিদ্ধি, রাংধনা) + অসুন = রাধস্। অর্থ - ধন (ধন দ্বারাই সব কার্য সিদ্ধ হয়। বা ধনের সহায়তা দ্বারা আমরা ভোজন রান্না করি অতঃ রাধস্ অর্থ ধন) অথবা, রাধ্ (আরাধনা করা) + অসুন= রাধস্। ধনের আরাধনা করা হয়ে থাকে। অতঃ ইহাকে "রাধস্" বলা হয়।
সামবেদ- ৬৮৪
সবচেয়ে বিনোদন রয়েছে এই মন্ত্রে। তাদের বেদজ্ঞান দেখলে সত্যিই মন্ত্রদ্রষ্টা ঋষিগন না হেসে থাকতে পারতেন না। এখানে যে শব্দটি রয়েছে তা হচ্ছে " সখীনাম" । তাদের দাবী হচ্ছে - রাধা কৃষ্ণের সবচেয়ে বড় সখী ছিলেন। তাই এই মন্ত্রে রাধার কথা বলা হচ্ছে। কিন্তু সখীনাম শব্দের অর্থ রাধা নয়। এর অর্থ হচ্ছে পরম মিত্র। ঋগবেদে জীব এবং পরমাত্মাকে পরস্পর মিত্র বলা হয়েছে (দ্বা সূপর্ণা সয়ুজা সখায়া ; ঋ ১.১৬৪।২০)
দ্বা সুপর্না সযুজা সখায়া সমানং বৃক্ষং পরিষস্বজাতে।
তয়োরন্যঃ পিপ্পলং স্বাদ্বত্ত্যনশ্নন্নন্যো অভিচাকশীতি।।
ঋগবেদ ১/১৬৪/২০
অথর্ববেদ ৯/১৪/২০
সুপর্ণাঃ বয়ঃ ষ) সুন্দর পাখাযুক্ত পক্ষীর ন্যায় সুন্দর উড্ডয়নকারী সূর্য-কিরণ যেন (ইন্দ্রম্) সূর্যের (উপসেদুঃ) সমীপে পৌঁছে যায়। (প্রিয়মেধাঃ) বুদ্ধি বৃদ্ধি করা অথবা প্রকাশপ্রদানরূপ যজ্ঞ করা যার প্রিয়, [প্রিয়মেধঃ প্রিয়া অস্য মেধা। নিরু০ ৩।১৭। মেধ ইতি যজ্ঞনাম। নিঘ০ ৩।১৭] তেমন (ঋষয়ঃ) দর্শনে সহায়তাকারী কিরণ [ঋষির্দর্শনাৎ ইতি নিরুক্তম্ ২।১১।] (নাধমানাঃ) যেন যাচঞা করে যে, হে সূর্য! (নিধয়া ইব) জাল দ্বারা যেন [পাশ্যা পাশসমূহঃ, পাশঃ পাশয়তেঃ বিপাশনাৎ। নিরু০ ৪।২।] (বদ্ধান্) আবদ্ধ (অস্মান্) আমাদের (মুমুগ্ধি) তুমি ছেড়ে দাও, [‘বহুলং ছন্দসি। অষ্টা০ ২।৪।৭৬’] আমাদের দ্বারা (ধ্বান্তম্) অন্ধকারের আবরণকে (অপ-ঊর্ণুহি) দূর করে দাও , এবং (চক্ষুঃ) প্রাণিদের চোখকে (পূর্ধি) প্রকাশ দিয়ে পূর্ণ করে দাও।
সযুজা-একসাথে অবস্থানকারী,পরস্পর সখ্যভাব পোষনকারী,দ্বা-দুটি,সুপর্না-পক্ষী(জীবাত্মা ও পরমাত্মা),সমানম বৃক্ষম পরিষস্বজাতে-একই বৃক্ষের আশ্রয় নিয়ে থাকেন,তয়োঃ-দুজনের মধ্যে,অন্যঃ-একজন,পিপ্পলম-ওই বৃক্ষের সুখ দুঃখরুপ ফল,স্বাদু-স্বাদ নিয়ে,অত্তি-উপভোগ করে,অন্য-অন্যজন,অনশ্নন্-না খেয়ে,অভিচাকশীতি-কেবল দেখেন।
অর্থাত্ মনুষ্যশরীর রুপক বৃক্ষে দুই পক্ষীরুপক জীবাত্মা ও পরমাত্মা একসাথে সখ্যভাবে থাকে।এদের একজন(জীবাত্মা) সুখ দুঃখরুপক সকল বৃক্ষফল ভোগ করে আর অপরজন(পরমাত্মা) সম্বন্ধযুক্ত না হয়ে কেবল অবলোকন করেন।
মন্ত্রটির মূল অর্থ নিম্নরূপ
অভীষুণঃ সখীনামবিতা জরিতৃণাম। শতং ভবাস্যুতয়ে।।
(ঋগবেদ ৪।৩১।৩)
পদার্থঃ হে রাজন! প্রভো! তুমি (ঊতিভিঃ) রক্ষা এবং জ্ঞান দ্বারা এবং তৃপ্তিকারক, সুখজনক ক্রিয়া দ্বারা (সখীনাম্) মিত্র এবং (জরি-তৃণাম্) স্তুতি কারী (নঃ) আমাদের লোক কে তুমি (শতং) শত প্রকার এবং শত বর্ষ পর্যন্ত (অবিতা) রক্ষক (অভি ভাবসি) হও।
(অনু্বাদঃ জয়দেব শর্মা)

इ॒ह त्वा॒ गोप॑रीणसा म॒हे म॑न्दन्तु॒ राध॑से । सरो॑ गौ॒रो यथा॑ पिब ॥-ঋগ্বেদ ৮।৪৫।২৪
पदार्थान्वयभाषाः -हे मनुष्यों ! उस (इन्द्राय) परमात्मा के लिये (स्तोत्रम्+गायत) अच्छे-२ स्तोत्र गाओ (यम्) जिस इन्द्र को (युधि) युद्ध में (नकिः) कोई नहीं (वृण्वते) निवारण कर सकते, यद्वा जिसको युद्ध के लिये कोई स्वीकार नहीं करता है। पुनः वह इन्द्र कैसा है, (पुरुनृम्णाय) सर्वधनसम्पन्न और (सत्वने) परमबलस्वरूप ॥-शिव शंकर शर्मा
भावार्थभाषाः -समर में भी परमात्मा का ही गान करे, क्योंकि उसी की कृपा से वहाँ भी विजय होती है ॥

এ মন্ত্রে না কি রাধার সাথে গোপী শব্দের উল্লেখ আছে। মন্ত্রটিতে "রাধস"
শব্দ রয়েছে যারা অর্থ ধন যা আগেই ব্যাখ্যা করা হয়েছে। কিন্তু "গোপী" শব্দের উল্লেখ নেই। রয়েছে "গোপরীণসা = গো- পরিণসা। অর্থাৎ গো শব্দটি এখানে পাওয়া যায়। যার অনেক প্রকার অর্থ হয় যা পূর্বেই বলা হয়েছে। এখানে গো শব্দটি গাভী অর্থে ব্যবহার করা হয়েছে।
মন্ত্রটির মূল অর্থ নিম্নরূপ
ইহ ত্বা গোপরীণসা মহে মন্দন্তু রাধসে। সরো গৌরো যথা পিব।।
পদার্থঃ হে ইন্দ্র পরমঐশ্বর্যযুক্ত! আপনি কৃপা দ্বারা (ইহ) এই সংসার মধ্যে (ত্বা) তোমার উপদেশ দ্বারা (মহে রাধস) বহুত ধন প্রাপ্তির উৎসবের জন্য (গোপরীণসা) গাভীর দুধ,দই আদি পদার্থ দ্বারা (মন্দন্ত) গৃহস্থ জন পরস্পর আনন্দিত হয় এবং করো। হে মহেন্দ্র! যেভাবে (গৌর) তৃষিত মৃগ (সর) সরোবরের জল পান করে। তদ্রুপ আপনি (পিব) আমাদের সমস্ত পদার্থ অবলোকন করুন।
(অনুবাদঃ আর্য মুনি)

বৈদিক শব্দকোষ নির্ঘন্টুতে রাধা শব্দের প্রমান আছে 
[ রাধ ইতি ধননামসু পঠিতম্।। ( নির্ঘন্টু ২/১০)।।
অত্র হলাশ্চ। ( অষ্টা ০ ৩/৩/১২১) ইতি ঘঞ] এ সকল স্থানে রাধা শব্দের অর্থ হল (ধননাম) অর্থাৎ ঐশ্বর্যাদি।। পৌরানিক বৈষ্ণবগন বেদে যখন রাধা শব্দ দেখতে পায় তখন তাহার কৃষ্ণের প্রেমিকা রাধা ধরে নেয় এ কারনে বেদ শাস্ত্রের প্রকৃত অর্থ লুপ্ত হয়ে রূঢ় অর্থ হয়ে যায়। বৈষ্ণবগন বেদের (ঋক ১/৩০/৫) মন্ত্রে রাধা শব্দের মাঝে তাদের পুরানাদির রাধাকে দর্শন করেছেন। আমি মনে করি তাদের এ ভূল ধারনা দূর করা দরকার তাই আমি এই মন্ত্রের বাংলা অর্থ দিচ্ছি।।
 স্তোত্রং রাধানং পতে গির্বাহো বীর যস্য তে।
 বিভুতিরস্তু সুনৃতা।। ঋক ( ১/৩০/৫)
পদার্থঃ হে ( গির্বাহঃ) জানিবারযোগ্য পদার্থকে জানিয়া এবং সুখ দুঃখকে নাশ কারী তথা ( রাধ আনাম্) যিনি পৃথিবী আদি পদার্থে সুখ সিদ্ধ হয়ে থাকে, তাহাকে ( পতে) পালন কারী সভা বা সেনাদের স্বামী বিদ্বান ( যস্য) যিনি ( তে) আপনাকে ( সুনৃতা) শ্রেষ্ঠতা দ্বারা সব গুনকে প্রকাশ কারী ( বিভূতি) অনেক প্রকার ঐশ্বর্য স্বরূপ। সে নিজের আশ্রয় দ্বারা আমাদের জন্য ( স্তোত্রম্) স্তুতি ( নঃ) আমাদের পূর্বোক্তো ( মদায়) আনন্দ এবং ( শুষ্মিনো) বল প্রাপ্তির জন্য ( অস্তু) হউক।।
অর্থঃ আমাদের সকলের স্বামী যিনি বেদে পরিপূর্ন বিজ্ঞান তর ঐ শ্বর্যযুক্ত এবং যথাযোগ্য ন্যায়কারী সভ্যাধ্যাক্ষ বা সেনাপতি বিদ্বান তাহাকে ন্যায়ধীশ বলে মান্যতা প্রদান করা উচিত।
এ মন্ত্রের পৌরানিক রাধা কোথাও নাই।। এখানে রাধ ইতি ধননামসু পঠিতম্ বলে জানিবে।। 

ঋগ্বেদ ৩।৫৩।১৩ নম্বর মন্ত্রে "সুরাধসঃ" শব্দ রয়েছে, এর অর্থ উত্তম ধন (ঐশ্বর্য)

ওতম্ শম্

No comments:

Post a Comment

ধন্যবাদ

বৈশিষ্ট্যযুক্ত পোস্ট

অথর্ববেদ ২/১৩/৪

  ह्यश्मा॑न॒मा ति॒ष्ठाश्मा॑ भवतु ते त॒नूः। कृ॒ण्वन्तु॒ विश्वे॑ दे॒वा आयु॑ष्टे श॒रदः॑ श॒तम् ॥ ত্রহ্যশ্মানমা তিষ্ঠাশ্মা ভবতুতে তনূঃ। কৃণ্বন্তু...

Post Top Ad

ধন্যবাদ