বৈদিক সন্ধ্যা উপাসনা বিধি - ধর্ম্মতত্ত্ব

ধর্ম্মতত্ত্ব

ধর্ম বিষয়ে জ্ঞান, ধর্ম গ্রন্থ কি , হিন্দু মুসলমান সম্প্রদায়, ইসলাম খ্রীষ্ট মত বিষয়ে তত্ত্ব ও সনাতন ধর্ম নিয়ে আলোচনা

धर्म मानव मात्र का एक है, मानवों के धर्म अलग अलग नहीं होते-Theology

সাম্প্রতিক প্রবন্ধ

Post Top Ad

স্বাগতম

30 October, 2020

বৈদিক সন্ধ্যা উপাসনা বিধি

 সন্ধ্যায়ন্তি সন্ধ্যায়তে বা পরব্রহ্ম যস্যাং সা সন্ধ্যা

অর্থাৎ :যা করার মাধ্যমে পরমেশ্বরের ধ্যান করা হয়,সেটিই মূলত সন্ধ্যা।
এজন্য রাত এবং দিনের সংযোগকালে দুই সন্ধ্যাবেলায়-( সূর্যোদয়ের পূর্বে-এবং
সূর্যাস্তের পর) প্রত্যেক মনুষ্যেরই, পরমেশ্বরের স্তুতি, প্রার্থনা এবং উপাসনা করা
উচিত।
পবিত্র বেদ এ বলা হয়েছে-
(ও৩ম্ সায়ং সায়ং গৃহপতির্নো অগ্নিঃ প্রাতঃ
প্রাতঃ সৌমনসস্য দাতা।বসোর্বসোর্বসুদান ত্রধিবয়ংত্বেন্ধানাস্তম্বং পুষেম।।
(অথর্ব্ববেদ ১৯/৫৫/৩)
অর্থাৎ :হে আমাদের গৃহের রক্ষক তেজস্বী পরমেশ্বর। সর্বদা আপনিই
আমাদেরকে ধন এবং উত্তম সুখ প্রধান করুন। সন্ধ্যা এবং প্রাতঃকালে
আপনাকে সেবা তথা প্রকাশিত করে আমরা নিজেদের শরীরকে পুষ্ট করি।।
(সন্ধ্যার প্রস্তুতি -)
প্রথমে বাহ্য জল দ্বারা শরীরের শুদ্ধি এবং রাগ -দ্বেষ ইত্যাদি
ত্যাগ পূর্বক অন্তরের শুদ্ধি করা প্রয়োজন। কেননা, মনুসংহিতায় বলা হয়েছে
(ও৩ম্ অদ্ভির্গাত্রাণি শুধস্তি মনঃ সত্যেন শুধ্যতি। বিদ্যাতপোভ্যাং ভূতাত্মা -
বুদ্ধির্জ্ঞানেন শুধ্যতি।। (মনুসৃতি ৫/১০৯)
অর্থাৎ : শরীর ও জল দ্বারা মনকে সত্য দ্বারা এবং জীবাত্মা -বিদ্যা,তপস্যা এবং
জ্ঞান বুদ্ধি দ্বারা শুদ্ধ,হয়ে থাকে।কিন্তু শরীর শুদ্ধির চেয়ে ও অন্তরের শুদ্ধি করা
অবশ্য কর্তব্য। কারণ সেটিই সর্বোত্তম এবং পরমেশ্বরের প্রাপ্তির একমাত্র উপায়।
উপাসনা শুরুর পূর্বে প্রথমে হাত দিয়ে মার্জন করবেন -অর্থাৎ পরমেশ্বরের ধ্যান
বা উপাসনার সময় যেন কোন প্রকার আলস্য না আসে,সেজন্যে মস্তক এবং
নেত্রাদির উপর জ্বলের ছিটা দেবেন।যদি আলস্য না আসে তাহলে এইসব এর
প্রয়োজন নেই। তারপর কমপক্ষে তিনবার প্রাণায়াম করবেন।অর্থাৎ ভেতরের
বায়ুকে বলপূর্বক বের করে যথাশক্তি বাইরেই আটকে দিন।এরপর ক্ষণে ক্ষণে
গ্রহণ করে কিছুক্ষণ ভেতরেই আটকে রেখে, পরে বাইরে বের করে দিন।আর
সেটিও কিছুক্ষণ আটকে রাখুন। এইভাবে কমপক্ষে তিনবার প্রাণায়াম করবেন
এবং মনে মনে ও৩ম্ জপ করবেন।এতে মনের চঞ্চলতা দূর হয়ে স্থিরতা আসে।
ফলে পরমেশ্বরের চিন্তন, মনন,ইত্যাদিতে সহজেই প্রবৃত্ত হওয়া যায়।।
শিখা বন্ধন- নিচের নিম্ন লিখিত গায়ন্ত্রী মহামন্ত্র উচ্চারণপূর্বক শিখা বেঁধে নিন।
এর প্রয়োজন হচ্ছে যেন কেশ এলোমেলো হয়ে না থাকে। আর যদি কেশ
এলোমেলো না থাকে, তবে বাঁধার দরকার নেই।কেশ রক্ষা প্রয়োজন হচ্ছে
পরমেশ্বর যেন আমাদের দ্বারা প্রার্থিত হয়ে সকল ভালোকর্মে ও সদা সমস্ত
জায়গায় আমাদের রক্ষা করেন।
ও৩ম্ ভূর্ভুবঃ স্বঃ তৎসবিত্যোর্বরেণ্যং ভর্গো দেবস্য ধীমহি।
ধিয়ো য়ো নঃ প্রচোদয়াৎ।।
(যজুর্ব্বেদ ৩৬/৩)
অর্থাৎ : পরমাত্মা প্রাণ স্বরূপ, দুঃখনাশক এবং সুখস্বরূপ। জগৎ উপাৎদক
দিব্যগুণযুক্ত পরমাত্মার সেই বরণীয় শুদ্ধ বিজ্ঞান স্বরূপকে আমরা সদা প্রেম
ভক্তিপূর্বক ধ্যান করে নিজেদের আত্মাতে ধারণ করি,যিনি আমাদের বুদ্ধিবৃত্তিকে
সকল মন্দকর্ম থেকে পৃথক করে, সদা উত্তমকর্মে প্রবৃত্ত করেন।।
(অথ আচমন মন্ত্রাঃ)
বাম হাতের তালুতে একটু জল নিয়ে নিম্নবর্ণিত মন্ত্র তিনবার আচমন করবেন।
(ও৩ম্ শং নো দেবীরভিষ্টয়হ আপো ভবন্তু পীতয়ে।শং য়োরভি-স্রবন্ত নঃ।।
(যজুর্ব্বেদ ৩৬/১২)
অর্থাৎ : হে সর্বব্যাপক পরমাত্মা আমাদের মনোবাঞ্চিত আনন্দ লাভের জন্য
এবং পূর্ণানন্দ প্রাপ্তির জন্যে কল্যাণকারী হোন,আমাদের উপর সুখকে সর্বদা
বর্ষন করুণ।।
(অথ ইন্দ্রিয় স্পর্শ মন্ত্রাঃ)
বাম হাতের তালুতে জল নিয়ে ডান হাতের মধ্যমা ও অনামিকা আঙুল দিয়ে জল
স্পর্শ করে প্রথমে ডান দিকে তারপর বাম দিকের অঙ্গ জল দ্বারা ঈশ্বরের
উদ্দেশ্যে প্রার্থনাপূর্বক স্পর্শ করবেন।
ও৩ম্ বাক্ বাক্।।
এই মন্ত্রে মখের ডান পার্শ্ব থেকে বাম পার্শ্বে জল দ্বারা স্পর্শ করবেন।
ও৩ম্ প্রাণঃ প্রাণঃ।।
এই মন্ত্রে নাকের ডান পার্শ্ব থেকে বাম পার্শ্বে জল দ্বারা স্পর্শ করবেন।
ও৩ম্ চক্ষুঃ চক্ষুঃ।।
এই মন্ত্রে চোখের ডান পার্শ্ব থেকে বাম পার্শ্বে জল দ্বারা স্পর্শ করবেন।
ও৩ম্ শ্রোত্রম্ শ্রোত্রম্।।
এই মন্ত্রে কানের ডান পার্শ্ব থেকে বাম পার্শ্বে জল দ্বারা স্পর্শ করবেন।
ও৩ম্ নাভিঃ।।
এই মন্ত্রে নাভিতে জল দ্বারা স্পর্শ করবেন।
ও৩ম্ হৃদয়ম্।।
এই মন্ত্রে বুকে নিচের মধ্যঅংশে জল দ্বারা স্পর্শ করবেন।
ও৩ম্ কন্ঠঃ।।
এই মন্ত্রে গলার স্বরে কণ্ঠে জল দ্বারা স্পর্শ করবেন।
ও৩ম্ শিরঃ।।
এই মন্ত্রে মস্তকে জল দ্বারা স্পর্শ করবেন।।
ও৩ম্ বাহুভ্যাং য়শোবলম্।।
এই মন্ত্রে দুই হাতের উভয় বাহুমূল ডান পার্শ্ব থেকে বাম পার্শ্বে
জল দ্বারা স্পর্শ করবেন।
ও৩ম্ করতল করপৃষ্ঠে।।
এই মন্ত্রে দুই হাতের তালুর উপর নিচে জল দ্বারা স্পর্শ করবেন।
অর্থাৎ : হে পরমাত্মা আমার বাকশক্তি রসনেন্দ্রিয় জিহ্বা সবল হোক।
আমার শ্বাস প্রশ্বাসের শক্তি ও ঘ্রানেন্দ্রিয় সবল হোক।
আমার,স্থুল চক্ষু ও জ্ঞানচক্ষু সবল হোক।
আমার স্থুল শ্রবণেন্দ্রিয় ও বিবেকবাণী শুনীবার জ্ঞানশ্রুতি সবল হোক।
আমার বাহুদ্ব্য় বলশালী ও যশস্বী হোক।আমার করতল ও করপৃষ্ঠে
সর্বদা ধর্মাকার্য করুক।।
(অথ মার্জন মন্ত্রাঃ)
পুনরায় বাম হাতের তালুতে জল নিয়ে ডান হাতের মধ্যমা এবং অনামিকা
আঙুল দ্বারা মন্ত্রানুসারে নিম্নলিখিত অঙ্গে জল ছিটিয়ে ঐ সব অঙ্গের পবিত্রতা
ও শুদ্ধিকরণের নিমিত্তে ঈশ্বরের নিকট প্রার্থনা করবেন।
উদ্দেশ্য: জল ছিটিয়ে দেবার সময় প্রার্থনা করবেন যে -হে পরমাত্মা আমাদের
পা থেকে মাথা পর্যন্ত সমস্ত অঙ্গকে আমরা যেন "সদা পুনাতু" অর্থাৎ সর্বদা
পবিত্র রাখতে পারি।এদের দ্বারা কোন রকম পাপকর্ম যেন না হয়।
তারপর নিম্নলিখিত মন্ত্রে বিভিন্ন অঙ্গে জলের ছিটা দিবেন।
ও৩ম্ ভূঃ পুনাতু শিরসি।।
এই মন্ত্রে মস্তকে জল দ্বারা ছিটা দিবেন ।।
ও৩ম্ ভুবঃ পুনাতু নেত্রয়োঃ।।
এই মন্ত্রে নেত্রদ্বয়ে জল দ্বারা ছিটা দিবেন।।
ও৩ম্ স্বঃ পুনাতু কণ্ঠে।।
এই মন্ত্রে কণ্ঠে জল দ্বারা ছিটা দিবেন।
ও৩ম্ মহঃ পুনাতু হৃদয়ে।।
এই মন্ত্রে বুকে নিচের মধ্য অংশে জল দ্বারা ছিটা দিবেন।।
ও৩ম্ জনঃ পুনাতু নাভ্যাম্।।
এই মন্ত্রে নাভিতে জল দ্বারা ছিটা দিবেন।।
ও৩ম্ তপঃ পুনাতু পাদয়োঃ।।
এই মন্ত্রে উভয় পায়ের উরুতে জল দ্বারা ছিটা দিবেন।।
ও৩ম্ সত্যং পুনাতু পুনঃ শিরসি।।
এই মন্ত্রে পুনরায় মস্তকে জল দ্বারা ছিটা দিবেন।।
ও৩ম্ খং ব্রহ্ম পুনাতু সর্বত্র।।
এই মন্ত্রে সর্বাঙ্গে জলের ছিটা দিবেন।।
অর্থাৎ ; হে প্রাণস্বরূপ পরমাত্মা আমার মস্তককে পবিত্র করুন।হে দুঃখনাশক
পরমাত্মা আমার নেত্রযুগলকে পবিত্র করুন।হে আনন্দস্বরূপ পরমাত্মা আমার
কণ্ঠকে পবিত্র করুণ। হে সর্বজন পুজ্য মহান পরমাত্মা আমার হৃদয়কে পবিত্র
করুণ। হে সর্ব্বোৎপাদক পরমাত্মা আমার নাভিকে পবিত্র করুণ। হে তেজস্বী
পরমাত্মা আমার পাদযুগলকে পবিত্র করুণ। হে অবিনশ্বর পরমাত্মা পুনরায়
আমার মস্তককে পবিত্র করুন। হে সর্বব্যপী পরমাত্মা আমার সর্বস্থান পবিত্র করুন।।
(অথ প্রাণায়াম মন্ত্রাঃ)
নিম্নলিখিত মন্ত্রে ঈশ্বরের বিভিন্ন মানসিক জপ করে নূন্য কল্পে তিনবার বা উর্ধ্বে
একুশবার প্রাণায়াম করুন। প্রাণায়াম এর অভ্যাসে হৃৎপিণ্ড শ্বাসযন্ত্র শিরা ও
ধমনীয় কার্য সুষ্ঠুরূপে চালিত হয় এবং শরীর নিরোগ হয়। ত্রতদ্ব্যতীত প্রাণায়াম
সাধন দ্বারা অজ্ঞানতার আবরণ নষ্ট হয়।প্রাণায়ামের অভ্যাসে ইন্দ্রিয়ের দোষ ও
বিনষ্ট হয়।
ও৩ম্ ভূঃ ও৩ম্ ভুবঃ ও৩ম্ স্বঃ ও৩ম্ মহঃ ও৩ম্ জনঃ ও৩ম্ তপঃ ও৩ম্ সত্যম্।।
অর্থাৎ : হে পরমাত্মা প্রাণস্বরূপ, পরমাত্মা দুঃখনাশক।
পরমাত্মা আনন্দস্বরূপ। পরমাত্মা সর্ব্বপূজ্য। পরমাত্মা সর্ব্বোৎপাদক।
পরমাত্মা তেজঃস্বরূপ। পরমাত্মা অবিনশ্বর।।
(অথ অঘমর্ষণ মন্ত্রাঃ)
নিম্নলিখিত তিনটি অঘমর্ষন মন্ত্র দ্বারা সৃষ্টির রচনা মনন করবেন।
অঘ" অর্থ কলুষতা ও মর্ষণ অর্থ অর্থ দূর করা।
ও৩ম্ ঋতং চ সত্যং চ ভীদ্ধাত্তপসোহধ্যজায়ত।
ততো রাত্র্যজায়ত ততঃ সমুদ্রো অর্ণবঃ
(ঋগ্বেদ ১০/১৯০/১)
অর্থাৎ : পরমাত্মার অনন্ত সামর্থ্য দ্বারা সকল বিদ্যার কোষ "বেদ " এবং
ত্রিগুণাত্মক প্রকৃতি কার্যরূপ হয়ে উৎপন্ন হয়েছে।তাঁর অনন্ত সামর্থ্য দ্বারাই
রাত্রি ও মেঘমণ্ডলে বিদ্যমান মহাসমুদ্র উৎপন্ন হয়েছে।।
ও৩ম্ সমুদ্রাদর্ণবাদধি সংবৎসরো অজায়ত।
অহোরাত্রাণি বিদ্ধদ্বিশ্বস্য মিষতো বশী।।
(ঋগ্বেদ ১০/১৯০/২)
অর্থাৎ : সর্বনিয়ন্ত্রক পরমেশ্বর জলপূর্ণ আকাশ উৎপত্তির পশ্চাৎ সংবৎসর
অর্থাৎ ক্ষণ, মুহুর্ত প্রহরাদি সময় সৃষ্টি করেছেন এবং তাঁর সহজস্বভাব দ্বারা
জগতের রাত্রি দিবস ঘটিকা মুহুর্ত ও ক্ষণ ইত্যাদি উৎপন্ন হয়েছে।।
ও৩ম্ সূর্যাচন্দ্রমসৌ ধাতা য়থা পূর্বমকল্পয়ৎ।
দিবং চ পৃথিবীং চান্তরিক্ষমথো স্বঃ।।
(ঋগ্বেদ ১০/১৯০/৩)
অর্থাৎ : পরমাত্মার যেভাবে পূর্ব কল্পে সূর্য চন্দ্রাদি প্রত্যক্ষ দৃশ্যমান পৃথিবী
অন্তরীক্ষ এবং আকাশের মাঝে লোক লোকান্তর (গ্রহ-নক্ষত্রাদি) রচনা
করেছিলেন, ঠিক সেভাবেই এই কল্পে ও রচনা করেছেন।।
এই তিনটি মন্ত্র পাঠ করে পুনরায় নিচে নিম্নলিখিত মন্ত্র দ্বারা
তিনবার আচমন করবেন।
ও৩ম্ শং নো দেবীরভিষ্টয়হ আপো ভবন্তু পীতয়ে। শং য়োরভি-স্রবন্ত নঃ।।
(অথ মনসা পরিক্রমা মন্ত্রাঃ)
নিম্নলিখিত মন্ত্রের দ্বারা সর্বব্যাপক পরমাত্মার স্তুতি ও প্রার্থনা করবেন।
ও৩ম্ প্রাচী দিগগ্নিরধিপতিরসিতো রক্ষিতাদিত্যা ইষবঃ।তেভ্যো নমোহ
ধিপতিভ্যো নমো রক্ষিতৃভ্যো নমঃ ইষুভ্যো নমঃ এভ্যো অস্তু।
যোস্মান্দ্বেষ্টি য়ং বয়ং দ্বিস্মস্তং বো জম্ভে দধমঃ।।
(অথর্ব্ববেদ ৩/২৭/১)
অর্থাৎ:অগ্নি অর্থাৎ জ্ঞানস্বরূপ পরমাত্মা পূর্ব দিকের অধিপতি। যিনি
সমগ্র জগতের স্বামী, বন্ধনরহিত, সর্বপ্রকারে রক্ষাকর্তা, আমাদের রক্ষার
নিমিত্তে সূর্য্যরশ্মিসমূহ যাঁর বাণের সমান, সেই সকল গুণের অধিপতি ঈশ্বরের
অনন্ত গুণ এবং তাঁর নির্মিত জগতের রক্ষাকারী পদার্থসমূহের জন্যে আমরা
তাঁকে বারংবার নমস্কার করি।যে সকল প্রাণী আমাদের দ্বেষ করে এবং আমরা
যাদের দ্বেষ করি,সেই সকল দ্বেষভাব কে আমরা পরমাত্মার ন্যায়াধীন করি।।
ও৩ম্ দক্ষিণা দিগিন্দ্রোহধিপতিস্তিরশ্চিরাজী রক্ষিতা ইষবঃ
তেভ্যো নমোহ-ধিপতিভ্যো নমো রক্ষিতৃভ্যো নমঃ ইষুভ্যো নমঃ এভ্যো অস্তু।
য়োস্মানদ্বেষ্টি-য়ং বয়ং দ্বিস্মস্তং বো জম্ভে দধমঃ।।
(অথর্ব্ববেদ ৩/২৭/২)
ও৩ম্ প্রতীচী দিগ্বরুণোহধিপতিঃ পৃদাকু রক্ষিতান্নমিষবঃ
তেভ্যো নমোহ-ধিপতিভ্যো নমো রক্ষিতৃভ্যো নমঃ ইষুভ্যো নমঃ এভ্যো অস্তু।
যোস্মানদ্বেষ্টি-য়ং বয়ং দ্বিস্মস্তং বো জম্ভে দধমঃ।।
(অথর্ব্ববেদ ৩/২৭/৩)
ও৩ম্ উদীচী দিক্ সোমোধিপতিঃ স্বজো রক্ষিতাশনিরিষবঃ তেভ্যো নমোহ-
ধিপতিভ্যো নমো রক্ষিতৃভ্যো নমঃ ইষুভ্যো নমঃ এভ্যো অস্তু।
য়োস্মানদ্বেষ্টি-য়ং বয়ং দ্বিস্মস্তং বো জম্ভে দধমঃ।।
(অথর্ব্ববেদ ৩/২৭/৪)
ও৩ম্ ধ্রুবা দিগ্বিষ্ণুরপতিঃ কল্মাষগ্রীবো রক্ষিতা বীরুধ ইষবঃ।
তেভ্যো নমোহ-ধিপতিভ্যো নমো রক্ষিতৃভ্যো নমঃ ইষুভ্যো নমঃ এভ্যো অস্তু।
য়োস্মানদ্বেষ্টি-য়ং বয়ং দ্বিস্মস্তং বো জম্ভে দধমঃ।।
(অথর্ব্ববেদ ৩/২৭/৫)
ও৩ম্ উর্ধ্বা দিগ্ বৃহস্পতিরধিপতিঃ শ্বিত্রো রক্ষিতা বর্ষমিষবঃ।
তেভ্যো নমোহ-ধিপতিভ্যো নমো রক্ষিতৃভ্যো নমঃ ইষুভ্যো নমঃ এভ্যো অস্তু।
য়োস্মানদ্বেষ্টি-য়ং বয়ং দ্বিস্মস্তং বো জম্ভে দধমঃ।।
(অথর্ব্ববেদ ৩/২৭/৬)
(অথ উপস্থান মন্ত্রাঃ)
নিম্নলিখিত মন্ত্রে পরমেশ্বরের স্তুতি ও প্রার্থনা করে তাঁর স্বরূপ ধ্যান করবেন।
"উপ" শব্দের অর্থ হলো নিকটে এবং স্থান শব্দের অর্থ হলো অবস্থান করা।
ও৩ম্ উদ্বয়ং তমস্পরি স্বঃ পশ্যন্ত উওরম্।
দেবং দেবত্রা সূর্যমগন্ম জ্যোতিরুত্তমম্।।
(যজুর্ব্বেদ ৩৫/১৪)
অর্থাৎ : সমস্ত অন্ধকার থেকে পৃথক জ্যোতি স্বরূপ প্রলয়ের পশ্চাতে সদা
বিদ্যমান দেবগনের ও পরম দেবতা অর্থাৎ প্রকাশ দাতাদের ও যিনি প্রকাশক,
সমগ্র চরাচর জগতের আত্মা,জ্ঞানস্বরূপ ও সর্ব্বোত্তম পরমাত্মা কে জানতে
পেরে আমরা সত্যকে প্রাপ্ত হয়েছি।।
ও৩ম্ উদু ত্যং জাতবেদসং দেবং বহন্তি কেতবঃ
দৃশে বিশ্বায় সূর্যম্।।
(যজুর্ব্বেদ ৩৩/৩১)
অর্থাৎ : ঋগ্বেদাদি চার বেদ প্রকাশক সকল দেবগনের ও পরম দেবতা এবং
সমগ্র জীবজগতের প্রকাশক, যাঁকে বেদমন্ত্র ও জগতের পৃথক পৃথক রচনাদি
নিয়ামক গুণ প্রকাশিত করে থাকে, সেই পরমাত্মাকে বিশ্ববিদ্যা প্রাপ্তির জন্যে
আমরা ভক্তিপূর্বক উপাসনা করি।।
ও৩ম্ চিত্রং দেবানামুদগাদনীকং চক্ষুর্মিত্রস্য বরুণস্যাগ্নেঃ
আ প্রা ন্যাবাপৃথিবী অন্তরীক্ষং সূর্য আত্মা জগতস্তস্থষশ্চ স্বাহা।।
(যজুর্ব্বেদ ৭/৪২)
ও৩ম্ তচ্চরক্ষুর্দেবহিতং পূরস্তাচ্ছুক্রমচ্চরৎ। পশ্যেম শরদঃ শতং জীবেম শরদঃ
শতং শৃণুয়াম শরদঃ শতং প্র-ব্রবাম শরদঃ শতমদীনাঃ স্যাম শরদঃ শতং ভূয়শ্চ
শরদঃ শতাৎ।।
(যজুর্ব্বেদ ৩৬/২৪)
(অথ গুরু মন্ত্রাঃ)
ও৩ম্ ভূর্ভুবঃ স্বঃ তৎ-সবিতুর্বরেণ্যং ভর্গো দেবস্য ধীমহি।
ধিয়ো য়ো নঃ প্রচোদয়াৎ।।
ঋগ্বেদ ৩/৬২/১০
যজুর্ব্বেদ ৩৬/৩
(অথ সমর্পণম্)
এভাবে সকল মন্ত্রের অর্থের হৃদয়ঙ্গমতা সহকারে
পরমেশ্বরের সম্যক উপাসনা করে।নিম্নলিখিত বাক্য দ্বারা উপাসক নিজের
অহংকার নিবৃত্তির জন্য সন্ধ্যোপাসনা রূপী কর্মকে পরমেশ্বরের কাছে
সমর্পণ করবেন।।
ও৩ম্ হে ঈশ্বর দয়ানিধে ভবৎ কৃপায়াহনেন জপোপাসনাদি কর্মণা ধর্মার্থকামমোক্ষাণাং
সদ্যঃ সিদ্ধির্ভবেন্নঃ।।
অর্থাৎ :হে ঈশ্বর দয়া নিধি।আপনার যেসব উত্তমকর্ম আমরা করে থাকি, যেসব কর্ম আপনাকে অর্পণ করছি। যার দ্বারা আমরা আপনাকে প্রাপ্ত হয়ে ধর্ম,
অর্থ,কাম,এবং মোক্ষ এই চার পদার্থের সিদ্ধি লাভ করে,আমরা যেম শীঘ্রই
সেগুলোকে প্রাপ্ত হই।।
(অথ নমস্কার মন্ত্রাঃ)
নিম্নলিখিত মন্ত্র দ্বারা পরমেশ্বরকে নমস্কার করে আত্মসমর্পণ করবেন-
ও৩ম্ নমঃ সম্ভরায় চ ময়োভরায় চ নমঃ শঙ্করায় চ ময়স্করায় চ নমঃ শিবায় চ
শিবতরায় চ।।
(যজুর্ব্বেদ ১৬/৪১)
অর্থাৎ :যিনি সুখস্বরূপ, জগতের সমস্ত উত্তম সুখসমূহের দাতা, কল্যাণকারী
মোক্ষস্বরূপ,ধর্মযুক্ত কার্যসমূহের কর্ত্তা, নিজ ভক্তদের সুখ সমৃদ্ধি প্রদানকারী
ও ধর্মকার্যে যুক্তকারী, যিনি অত্যন্ত মঙ্গলস্বরূপ এবং ধার্মিক মনুষ্যেদের মোক্ষ
সুখ প্রদানকারী, সেই মঙ্গলময় পরমাত্মাকে বারংবার নমস্কার করি।।
(শান্তিঃ মন্ত্রাঃ)
ও৩ম্ সর্বে ভবন্তু সুখিনঃ
সর্বে সন্তু নিরাময়াঃ
সর্বে ভদ্রানি পশ্যন্তু
মা কশ্চিৎ দুঃখ-ভাগ্-ভবেৎ।।
ও৩ম্ শান্তিঃ শান্তিঃ শান্তিঃ।।
অর্থাৎ :সবাই যেন সুখি হয়
সবাই যেন নিরাময় হয়
সকল মানুষ পরম শান্তি লাভ করুণ।
কশ্চিন-কালেও যেন কেহ দুঃখ বোধ না করেন।
সকলের শান্তি-লাভ করুণ।।

1 comment:

  1. শালা এটা তো দয়াভণ্ডী বালার্যদের ব্লগ। লেখার ধরণ দেখেই বোঝা যাচ্ছিল। যবন, ম্লেচ্ছদের দল। সামনে পেলে এদের সোজা নিরাকার মঙ্গলময়ের কাছে পাঠায় দিতাম।

    ReplyDelete

ধন্যবাদ

বৈশিষ্ট্যযুক্ত পোস্ট

যজুর্বেদ অধ্যায় ১২

  ॥ ও৩ম্ ॥ অথ দ্বাদশাऽধ্যায়ারম্ভঃ ও৩ম্ বিশ্বা॑নি দেব সবিতর্দুরি॒তানি॒ পরা॑ সুব । য়দ্ভ॒দ্রং তন্ন॒ऽআ সু॑ব ॥ য়জুঃ৩০.৩ ॥ তত্রাদৌ বিদ্বদ্গুণানাহ ...

Post Top Ad

ধন্যবাদ