"সৃ গতৌ ধাতু হতে 'সরস্" এবং উত্তর "মতুপ" এবং "ঙীপ্" প্রত্যয় করে সরস্বতী শব্দ সিদ্ধ হয়। "সরো বিবিধং জ্ঞানং বিদ্যতে যস্যাং চিতৌ সা সরস্বতী"___
যাঁর বিবিধ বিজ্ঞান অর্থাৎ শব্দার্থ প্রয়োগের যথাবৎ জ্ঞান হয়ে থাকে, সেই পরমেশ্বরের নাম "সরস্বতী"।
पा॒व॒का नः॒ सर॑स्वती॒ वाजे॑भिर्वा॒जिनी॑वती।
य॒ज्ञं व॑ष्टु धि॒याव॑सुः॥ऋग्वेद मण्डल:1 सूक्त:3 मन्त्र:10
‘পাবকা নঃ সরস্বতী বাজেভির্বাজিনীবতী।
যজ্ঞং বষ্টূ ধিয়াবসূঃ॥’
अंग्रेज़ी लिप्यंतरण
পদার্থ-যে ( বার্জেভিঃ) ১ সমস্ত বিদ্যার প্রাপ্তির নিমিত্ত অন্ন আদি পদার্থ এবং যে তাহার সহিত ( বাজিনীবতী) ২ বিদ্যা দ্বারা সিদ্ধকৃত কার্যে যুক্ত ( ধিয়াবসুঃ)৩ শুদ্ধ কর্মের সহিত বাস, দান এবং ( পাবকা) ৪ পবিত্রকারী, ব্যবহারের সম্পাদনকারী ( সরস্বতী ) ৫ যাহা হইতে প্রশংসার যোগ্য জ্ঞান আদি গুণ,জন্ম এরূপ উত্তম সমস্ত বিদ্যার প্রদানকারী বাণী আছে, তাহা আমাদের ( য়জ্ঞম্) ৬ শিল্পবিদ্যার মহিমা এবং কর্মরূপ যজ্ঞের ( বষ্টু) প্রকাশকারী হউন।
#টীপ্পণী -
#১-বাজ ইত্যন্ননামসু পঠিতম্ নিরু০ ২/৭।
#২-বাজিন ইতি পদনামসু পঠিতম্ নিঘ০ ৫/৬।
#৩-তত্যুরুষে কৃতি বহুলম্। অ০ ৬/৩/১৪। পাবকা নঃ যজ্ঞং বষ্টু ধিয়াবসুঃ কর্মবসুঃ। নিরু০ ১১/১৬।
#৪-আতোহনুপসর্গে কঃ অ০ ৩/২/৩। উপপদমতিড্। অ০ ২/২/১৯।
#৫-সর্বধাতুভ্যোহসুন। উ০ ৪/১৪৯। সরস্বতি বাঙ্নামসু পঠিতম্। নিরু০ ১/১১।
#৬-যজ্ঞো বৈ মহিমা। শ০ ব্রা০ ৬/২/৩/১৮। যজ্ঞো বৈ কর্ম। শ০ ব্রা০ ১/১/২/১।
#ভাবার্থ-সমস্ত মনুষ্যের উচিত যে,ঈশ্বরের প্রার্থনা এবং নিজের পুরুষার্থ দ্বারা সত্যবিদ্যা এবং সত্য বচনযুক্ত কর্মে কুশল এবং সকলের উপকারকারী বাণী প্রাপ্ত হইবে ইহা ঈশ্বরের উপদেশ।।
[ #বিষয়-ঈশ্বরের সেই বাণী কি প্রকার হয়,ইহার উপদেশ মন্ত্রে বলিয়াছে]
ঋষিঃ-মধুচ্ছন্দাঃ। দেবতা-সরস্বতী। ছন্দঃ-গায়ত্রী। স্বরঃ-ষড়জঃ।।
ও৩ম্ চোদয়িত্রী সূনৃতানাং চেতস্তী সুমতীনাম্। য়জ্ঞং দধে সরস্বতী।। ঋগ্বেদ-১/৩/১১
#পদার্থ-যে ( সূনৃতানাম্) মিথ্যা বচনকে নাশ করেন,সত্য বচন এবং সত্য কর্মকে সর্বদা সেবন করেন। ( সুমতিনাম্) অত্যন্ত উত্তম বুদ্ধি এবং বিদ্যাধারী বিদ্বানকে ( চেতস্তী) বুঝিতে তথা (চোদয়ত্রী) শুভ গুণের গ্রহণ যোগ্য ( সরস্বতী) বাণী আছে,তাহা ( য়জ্ঞম্) সমস্ত মনুষ্যের শুভ গুণের প্রকাশ প্রদানকারী এবং যজ্ঞ আদি কর্মের (দধে)১ ধারণকারী হইয়া থাকে।।
#টিপ্পণী
#১-ছন্দসি লুডলডলিট্ঃ। অ০ ৩/৪/৬।
#ভাবার্থ-যে আপ্ত পদার্থ পূর্ণ বিদ্যাযুক্ত এবং ছল আদি দোষরহিত বিদ্বান মনুষ্যের সত্য উপদেশ প্রদানকারী যথার্থ বাণী আছে, সে সমস্ত মনুষ্য সত্য জ্ঞান প্রাপ্তির জন্য যোগ্য হইয়া থাকে, অবিদ্বানের জন্য নহে।।
পাবকা নঃ সরস্বতী বাজোভির্বাজিনীবতী।
যজ্ঞৎ বষ্টু ধিযা বসুঃ। ঋগ্বেদ০মন্ডল ১ সূক্ত ৩ মন্ত্র ১০
ভাবার্থঃ হে বাক্পতে, সর্ববিদ্যাময়! আপনার কৃপায় আমরা যেন 'সরস্বতী' সর্বশাস্ত্রবিজ্ঞানময়ী বানী লাভ করি, 'বাজেভিঃ' এবং আপনার অনুগ্রহে আমরা যেন উৎকৃষ্ট অন্নাদির সহিত 'বাজিনীবতী' সর্বোত্তম কর্ম্ম, বিজ্ঞান সন্মত 'পাবকা' পবিত্রস্বরূপ এবং পবিত্রকারী সত্যভাষণ-পূর্ণ মঙ্গলকারক বাণী লাভ করিতে পারি। সর্বোত্তম বুদ্ধিযুক্ত 'বসু' নিধিস্বরূপ বাণী এবং 'যজ্ঞ বষ্টু' সর্বশাস্ত্রবোধক পূজনীয়তম আপনার বিজ্ঞান আমরা কামনা করি। আমাদের সর্বপ্রকার মূরখতা বিনষ্ট হউক, আমাদের হৃদয় যেন মহা পান্ডিত্যে পূর্ণ হয়।
সরস্বতী দেবয়ন্তো হবন্তো সরস্বতীমধ্বরে তায় মানে
সরস্বতী সুক্তো হবন্তো সরস্বতী দাশুষে বায় দাৎ।।
অর্থববেদ১৮/৪/৪৫
অনুবাদঃ বিদ্বান বিদ্যা, বিশেষ করে ব্রহ্মবিদ্যাকে কামনা করেন,এবং যজ্ঞাদি উত্তম কর্মেও ঐ সর্ব শ্রেষ্ঠ বেদবিদ্যার আবশ্যক প্রয়োগ করেন। সংসারের সব ধর্মাত্মা বেদবিদ্যা রূপী জ্ঞানসম্পদকে কামনা করেন এবং বেদ জ্ঞান দ্বারাই মোক্ষ পযর্ন্ত সব সুখ লাভ করেন।
মার্কেন্ডেয় পুরাণে চন্ডীর উত্তরলীলায় শুম্ভ নিশুম্ভ নামক অসুরদ্বয়কে বধ করার সময় দেবীর যে মূর্তির কল্পনা করা হয়েছিল তা মহাসরস্বতী।
- চোদয়িত্রী সূনৃতানাং চেতন্তী সুমতীনাং।
যজ্ঞং দধে সরস্বতী॥
(ঋগ্বেদ, মন্ডল ১ সূক্ত ৩ মন্ত্র ১১)
অনুবাদঃ- সত্য ও প্রিয়বাণীর (মঙ্গলজনক বা মানব হিতকর কথা) প্রেরণাদাত্রী এবং সৎ বুদ্ধির চেতনাদাত্রী মাতা সরস্বতী শুভ কর্মকে ধারণ করিয়া আছেন।
चो॒द॒यि॒त्री सू॒नृता॑नां॒ चेत॑न्ती सुमती॒नाम्।
य॒ज्ञं द॑धे॒ सर॑स्वती॥
ऋग्वेद मण्डल:1 सूक्त:3 मन्त्र:11
अंग्रेज़ी लिप्यंतरण
codayitrī sūnṛtānāṁ cetantī sumatīnām |
yajñaṁ dadhe sarasvatī ||
पदार्थान्वयभाषाः -(सूनृतानाम्) जो मिथ्या वचन के नाश करने, सत्य वचन और सत्य कर्म को सदा सेवन करने (सुमतीनाम्) अत्यन्त उत्तम बुद्धि और विद्यावाले विद्वानों की (चेतन्ती) समझने तथा (चोदयित्री) शुभगुणों को ग्रहण करानेहारी (सरस्वती) वाणी है, वही (यज्ञम्) सब मनुष्यों के शुभ गुणों के प्रकाश करानेवाले यज्ञ आदि कर्म (दधे) धारण करनेवाली होती है॥
[(soonrtaanaam) jo mithya vachan ke naash karane, saty vachan aur saty karm ko sada sevan karane (sumateenaam) atyant uttam buddhi aur vidyaavaale vidvaanon kee (chetantee) samajhane tatha (chodayitree) shubhagunon ko grahan karaanehaaree (sarasvatee) vaanee hai, vahee (yagyam) sab manushyon ke shubh gunon ke prakaash karaanevaale yagy aadi karm (dadhe) dhaaran karanevaalee hotee hai.]
भावार्थभाषाः -जो आप्त अर्थात् पूर्ण विद्यायुक्त और छल आदि दोषरहित विद्वान् मनुष्यों की सत्य उपदेश करानेवाली यथार्थ वाणी है, वही सब मनुष्यों के सत्य ज्ञान होने के लिये योग्य होती है, अविद्वानों की नहीं॥
{jo aapt arthaat poorn vidyaayukt aur chhal aadi dosharahit vidvaan manushyon kee saty upadesh karaanevaalee yathaarth vaanee hai, vahee sab manushyon ke saty gyaan hone ke liye yogy hotee hai, avidvaanon kee nahin॥}
- মহো অর্ণঃ সরস্বতী প্রচেতয়তি কেতুনা।
ধিয়ো বিশ্বা বিরাজতি॥
**(ঋগ্বেদ, মন্ডল ১ সূক্ত ৩মন্ত্র ১২)**
অনুবাদঃ- জ্ঞানদাত্রী সরস্বতী প্রজ্ঞাশক্তি দ্বারা মহান জ্ঞান সমুদ্রকে প্রকাশ করেন এবং ধারণাবতী বুদ্ধি সমূহকে দীপ্তি দান করেন।
ও৩ম্ মহো অর্ণঃ সরস্বতী প্র চেতয়তি কেতুনা। ধিয়ো বিশ্বা বি রাজতি।। ঋগ্বেদ-১/৩/১২
#পদার্থ-যে ( সরস্বতী) বাণী,( কেতুনা)১ শুভকর্ম অথবা শ্রেষ্ঠ বুদ্ধি হইতে ( মহঃ) অগাধ ( অর্ণঃ)২ শব্দরূপী সমুদ্রের ( প্রচেতয়তি) জ্ঞাতকারী,সেই মনুষ্যের ( বিশ্বা) সমস্ত বুদ্ধিকে ( বিরাজিত)৩ বিশেষ করিয়া প্রকাশ করেন।।
#টিপ্পণী-
#১-কেতুরিতি প্রজ্ঞানামসু পঠিতম্। নিঘ০ ৩/৯।
#২-উদকে নুট্ চ। উ০ ৪/১৯৭। অর্ণঃ ইত্যুকনামসু পঠিতম্। নিঘ০ ১/১২।
#৩-এহদর্ণঃ সরস্বতী প্রচয়েতি...মন্যস্তে বাগ্বাথ্যাতা। নিরু০ ১১/২৭।
#ভাবার্থ-এই মন্ত্রে লুপ্তোপলঙ্কার আছে। যেরূপ বায়ু দ্বারা তরঙ্গযুক্ত এবং সূর্য দ্বারা প্রকাশিত সমুদ্র নিজের রত্ন এবং তরঙ্গে যুক্ত হইবার কারণ অধিক উত্তম ব্যবহার এবং রত্নাদি প্রাপ্তির জন্য অধিক ভারী মান্য করা হয়,ঐরূপই যে আকাশ এবং বেদের অনেক বিদ্যাদি গুণযুক্ত শব্দরূপী সাগরের প্রকাশকারী বেদবাণীর উপদেশ,ইহা সাধারণ মনুষ্যের যথার্থ বুদ্ধি এবং বুদ্ধিকারী হইয়া থাকে।
#এই সূক্তের অর্থ ( সায়ণাচার্য) আদি নবীন পণ্ডিতেরা অশ্লীল বর্ণন করিয়াছে। উনাদের ব্যাখ্যাতে প্রথমে সায়ণাচার্যের ভ্রম দেখা যায়। উনিই সরস্বতী শব্দের দুই অর্থ মানিয়াছে। এক অর্থ দেহধারী দেবতারূপ এবং দ্বিতীয় নদীরূপ সরস্বতী মানিয়াছে।তথা উনি ইহাও বলিয়াছে যে এই সূক্তে প্রথম দুই মন্ত্র হইতে শরীরধারী দেবরূপ সরস্বতীর প্রতিপাদন করিয়াছে এবং আবার মন্ত্র হইতে নদীরূপ সরস্বতী বর্ণন করিয়াছে। যেরূপ ইহা উনার নিজের কপলকল্পনা হইতে বিপরীত লিখিয়াছে।।
( ভাষ্যম্-মহর্ষি দয়ানন্দ সরস্বতী)
- শংনো দেবা বিশ্বদেবা ভবন্তু শং সরস্বতী সহ ধীভিরস্তু।
শমভিষাচঃ শমু রাতিষাচঃ শং নো দিব্যাঃ পার্থিবাঃ শন্নো অপ্যাঃ।।
**(ঋগ্বেদ, মন্ডল৭ সূক্ত ৩৫ মন্ত্র ১১)**
পদার্থঃ- (বিশ্বদেবাঃ) জ্ঞান জ্যোতির রক্ষক (দেবাঃ) বিদ্বানেরা (নঃ) আমাদের জন্য (শম) কল্যাণকারী (সরস্বতী) বাণী (ভবস্তু) হউক (সরস্বতী) বাণী (ধীভিঃ) উত্তম বুদ্ধিও (সহ) সাথে (শম্ অন্তু) আমাদের জন্য কল্যাণকর হউক (অভিসাচঃ) বাহুবলে বলীয়ান (উ) এবং (রাতি-সাচঃ) দানের সাহায্যে বলীয়ান (দিব্যাঃ) দিব্য (পার্থিবাঃ) পার্থিব (অপ্যাঃ) জলস্থ (নঃ) আমাদের (শম্) কল্যাণ বিধান করুক।
বঙ্গানুবাদঃ- জ্ঞানজ্যোতির রক্ষক বিদ্বানেরা আমাদের কল্যাণ বিধান করুন। জ্ঞানপ্রদানকারী পরমেশ্বর নানা প্রকার বুদ্ধির সঙ্গে আমাদের জন্য কল্যাণদায়িনী হউক, বাহুবলে বলীয়ান এবং অন্যের আশ্রয়ে বলীয়ান দিব্য, পার্থিব এবং জলচর প্রাণীরা আমাদের কল্যাণ সাধন করুক।
টীকাঃ-
১| সরস্বতী = বাণী বা জ্ঞান প্রদানকারী পরমেশ্বর।
২| সরস্বতী ইতি বাঙ্মামানি। নিঘন্টু ১/১১
৩| বাক্ সরস্বতী। শতপথ ব্রাহ্মণ ৭/৫/১/৩১; ১১/২/৪/৬; ১২/৯/১/১৩
৪| বাশ্বৈ সরস্বতী। কৌষীতকি ব্রাহ্মণ ৫/২; ১২/৮; ১৪/৪; তাণ্ড্য ব্রাহ্মণ ৬/৭/৭; ১৬/৫/১৬; শতপথ ব্রাহ্মণ ২/৫/৪/৬; ৩/৯/১৭; তৈত্তিরীয় ব্রাহ্মণ ১/৩/৪/৫; গোপথ ব্রাহ্মণ উত্তখন্ড ১/২০;
৫| বাগেব সরস্বতী। ঐতেরীয় ব্রাহ্মণ ২/২৪; ৬/৭;
৬| বাক তু সরস্বতী। ঐতেরীয় ব্রাহ্মণ ৩/১
৭| বাগ্ঘি সরস্বতী। ঐতেরীয় ব্রাহ্মণ ৩/২
"পঞ্চ নদ্যঃ সরস্বতীমপি যন্তি সস্রোতসঃ।
সরস্বতী তু পঞ্চধা সো দেশেহ ভবৎ সরিৎ।।"-যজুর্বেদ ৩৪/১১ মন্ত্র
ভাবার্থ : চক্ষু , কর্ণ , নাসিকা , জিহ্বা , ত্বক এই পঞ্চ জ্ঞানেন্দ্রিয় স্রোতস্বতী নদীর ন্যায় মনোরূপী সরস্বতীতে লীন হয় । পুনরায় যথাক্রমে রূপ , শব্দ ,গন্ধ , রস স্পর্শ এই পঞ্চ বিষয়ে ধাবিত হয় ।
সরস্বতী তু পঞ্চধা সো দেশেহ ভবৎ সরিৎ।।"-যজুর্বেদ ৩৪/১১ মন্ত্র
ভাবার্থ : চক্ষু , কর্ণ , নাসিকা , জিহ্বা , ত্বক এই পঞ্চ জ্ঞানেন্দ্রিয় স্রোতস্বতী নদীর ন্যায় মনোরূপী সরস্বতীতে লীন হয় । পুনরায় যথাক্রমে রূপ , শব্দ ,গন্ধ , রস স্পর্শ এই পঞ্চ বিষয়ে ধাবিত হয় ।
জিহ্বা সরস্বতী। শ০ ব্রা০ ১২/৯/১/১৪। [জিহ্বাই সরস্বতী। বাক্ রশ্মিই সরস্বতী]। সরস্বতী হি গৌ (শত ২।৫।১।১০)
গৌ সরস্বতী অর্থাৎ বাণী, রশ্মি,পৃথিবী,ইন্দ্রীয় আদি।
'বাগ্বৈ সরস্বতী'-ব্রাহ্মন গ্রন্থ- pdf
সরস্বতীসূক্তমের বিভিন্ন ব্যাখ্যা- pdf
- বিবিধ বিজ্ঞান অর্থাৎ শব্দ-অর্থ সম্বন্ধ প্রয়োগের যথাবৎ জ্ঞান ঈশ্বরদ্বারা প্রাপ্ত হয় বলে পরমেশ্বরের নাম সর.. স্বতী হয়েছে
- অনন্ত জ্ঞানময় ঈশ্বরের নাম এ সরস্বতী, তাই তিনি বাগদেবী। যখন ঈশ্বরের বিশেষণ হবে তখন দেব আর যখন চিতির বিশেষণ হয় তখন দেবী হয়, তাই বহুস্থানে ঈশ্বরের নাম দেবী হয়
আচার্য যোগেশচন্দ্র রায়ের মতে, 'দ্বিভুজা বীণাপাণি সরস্বতীর প্রতিমা গত দেড়শত বছরের মধ্যে কল্পিতা হয়েছে।'সরস্বতীর বাহন হলো হাঁস। বেদে এবং উপনিষদে হংস শব্দের অর্থ সূর্য।সরস্বতী সম্মিলিতভাবে জ্ঞানের দেবীরূপে পুরাণতন্ত্র ও সাহিত্যে বিপুল শ্রদ্ধা ও ভক্তির অধিকারিণী হয়েছেন। তিনি হিন্দু সংস্কৃতির বেড়া ডিঙ্গিয়ে জৈন ও বৌদ্ধধর্মের পূজার আসনে অধিষ্ঠিত হয়েছেন। সরস্বতীর আরাধনার ক্রমবিস্তৃতির সঙ্গে সঙ্গে তার রূপকল্পনাও বহুবৈচিত্র্য লাভ করেছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে দেবীর বাহুর সংখ্যা অধিকতর হলেও সাধারণত তিনি চতুর্ভুজা, পদ্মাসনা, শুক্লবর্ণা, শুভ্রবর্ণা, বীণা-পুস্তক, জপমালা, সুধাকলসধারিণী, চন্দ্রশেখরা, ত্রিলোচনা। কখনো দেবী দ্বিভুজা। তন্ত্রে সরস্বতী বাগীশ্বরী-বর্ণেশ্বরী সারদা।ঋগ্বেদে বাগদেবী ত্রয়ীমূর্তি। জ্ঞানময়ী রূপে সব জায়গায়ই তিনি আছেন। বিশ্বভুবনের প্রকাশ তারই জ্যোতিতে।- ** ছবিতে সরস্বতীর রুপ পুরাণকারের অবদানঃ**-
শ্বেতপদ্মাসনা দেবী শ্বেতপুষ্পোপশোভিতা।
শ্বেতাম্বরধরা নিত্যা শ্বেতগন্ধানুলেপনা।।
শ্বেতাক্ষসূত্রহস্তা চ শ্বেতচন্দনচর্চিতা।
শ্বেতবীণাধরা শুভ্রা শ্বেতালঙ্কারভূষিতা।।
ইত্যাদি(*পদ্মপুরাণ *)
শ্বেতাম্বরধরা নিত্যা শ্বেতগন্ধানুলেপনা।।
শ্বেতাক্ষসূত্রহস্তা চ শ্বেতচন্দনচর্চিতা।
শ্বেতবীণাধরা শুভ্রা শ্বেতালঙ্কারভূষিতা।।
ইত্যাদি(*পদ্মপুরাণ *)
অর্থাৎ, “দেবী সরস্বতী আদ্যন্তবিহীনা, শ্বেতপদ্মে আসীনা, শ্বেতপুষ্পে শোভিতা, শ্বেতবস্ত্র-পরিহিতা এবং শ্বেতগন্ধে অনুলিপ্তা।অধিকন্তু তাঁহার হস্তে শ্বেত রুদ্রাক্ষের মালা; তিনি শ্বেতচন্দনে চর্চিতা, শ্বেতবীণাধারিণী, শুভ্রবর্ণা এবং শ্বেত অলঙ্কারে ভূষিতা।
বঙ্গভূমে শ্রী শ্রী সরস্বতী পুষ্পাঞ্জলী মন্ত্রঃ
- ওঁ জয় জয় দেবী চরাচর সারে, কুচযুগশোভিত মুক্তাহারে। বীনারঞ্জিত পুস্তক হস্তে, ভগবতী ভারতী দেবী নমহস্তুতে।। নমঃভদ্রকাল্যৈ নমো নিত্যং সরস্বত্যৈ নমো নমঃ। বেদ-বেদাঙ্গ-বেদান্ত-বিদ্যা-স্থানেভ্য এব চ।। এস স-চন্দন পুষ্পবিল্ব পত্রাঞ্জলি সরস্বতৈ নমঃ।।
বঙ্গভূমে প্রনাম মন্ত্রঃ
- নমো সরস্বতী মহাভাগে বিদ্যে কমললোচনে। বিশ্বরূপে বিশালাক্ষ্মী বিদ্যাংদেহি নমোহস্তুতে।। জয় জয় দেবী চরাচর সারে, কুচযুগশোভিত মুক্তাহারে। বীনারঞ্জিত পুস্তক হস্তে, ভগবতী ভারতী দেবী নমহস্তুতে।।
বঙ্গভূমে সরস্বতীর স্তবঃ
- শ্বেতপদ্মাসনা দেবী শ্বেত পুষ্পোপশোভিতা। শ্বেতাম্ভরধরা নিত্যা শ্বেতাগন্ধানুলেপনা।। শ্বেতাক্ষসূত্রহস্তা চ শ্বেতচন্দনচর্চ্চিতা। শ্বেতবীণাধরা শুভ্রা শ্বেতালঙ্কারবভূষিতা বন্দিতা সিদ্ধগন্ধর্ব্বৈর্চ্চিতা দেবদানবৈঃ। পূঝিতা মুনিভি: সর্ব্বৈঋষিভিঃ স্তূয়তে সদা।। স্তোত্রেণানেন তাং দেবীং জগদ্ধাত্রীং সরস্বতীম্। যে স্মরতি ত্রিসন্ধ্যায়ং সর্ব্বাং বিদ্যাং লভন্তি তে।।
शुचि॑र्दे॒वेष्वर्पि॑ता॒ होत्रा॑ म॒रुत्सु॒ भार॑ती।
इळा॒ सर॑स्वती म॒ही ब॒र्हिः सी॑दन्तु य॒ज्ञिया॑: ॥
ऋग्वेद 0मण्डल:1 सूक्त:142 मन्त्र:9
अंग्रेज़ी लिप्यंतरण
śucir deveṣv arpitā hotrā marutsu bhāratī | iḻā sarasvatī mahī barhiḥ sīdantu yajñiyāḥ ||
पद पाठ
शुचिः॑। दे॒वेषु॑। अर्पि॑ता। होत्रा॑। म॒रुत्ऽसु॑। भार॑ती। इळा॑। सर॑स्वती। म॒ही ब॒र्हिः। सी॒द॒न्तु॒। य॒ज्ञियाः॑ ॥ १.१४२.९
पदार्थान्वयभाषाः -जो (देवेषु) विद्वानों में (अर्पिता) समर्पण की हुई (होत्रा) देने-लेने योग्य क्रिया वा (मरुत्सु) स्तुति करनेवालों में (भारती) धारण-पोषण करनेवाली (शुचिः) पवित्र (इळा) प्रशंसा के योग्य (सरस्वती) प्रशंसित विज्ञान का सम्बन्ध रखनेवाली (मही) और बड़ी (यज्ञियाः) यज्ञ सिद्ध कराने के योग्य क्रिया (बर्हिः) समीप प्राप्त बढ़े हुए व्यवहार को (सीदन्तु) प्राप्त होवे उनको समस्त विद्यार्थी प्राप्त होवें ॥
{jo (deveshu) vidvaanon mein (arpita) samarpan kee huee (hotra) dene-lene yogy kriya va (marutsu) stuti karanevaalon mein (bhaaratee) dhaaran-poshan karanevaalee (shuchih) pavitr (ila) prashansa ke yogy (sarasvatee) prashansit vigyaan ka sambandh rakhanevaalee (mahee) aur badee (yagyiyaah) yagy siddh karaane ke yogy kriya (barhih) sameep praapt badhe hue vyavahaar ko (seedantu) praapt hove unako samast vidyaarthee praapt hoven .}
भावार्थभाषाः -इस मन्त्र में वाचकलुप्तोपमालङ्कार है। विद्यार्थियों को ऐसी इच्छा करनी चाहिये कि जो विद्वानों में विद्या वा वाणी वर्त्तमान है, वह हमको प्राप्त होवे ॥
{is mantr mein vaachakaluptopamaalankaar hai. vidyaarthiyon ko aisee ichchha karanee chaahiye ki jo vidvaanon mein vidya va vaanee varttamaan hai, vah hamako praapt hove}
इ॒मं मे॑ गङ्गे यमुने सरस्वति॒ शुतु॑द्रि॒ स्तोमं॑ सचता॒ परु॒ष्ण्या ।
अ॒सि॒क्न्या म॑रुद्वृधे वि॒तस्त॒यार्जी॑कीये शृणु॒ह्या सु॒षोम॑या ॥
ऋग्वेद 0 मण्डल:10 सूक्त:75 मन्त्र:5
अंग्रेज़ी लिप्यंतरण
imam me gaṅge yamune sarasvati śutudri stomaṁ sacatā paruṣṇy ā | asiknyā marudvṛdhe vitastayārjīkīye śṛṇuhy ā suṣomayā ||
पद पाठ
इ॒मम् । मे॒ । ग॒ङ्गे॒ । य॒मु॒ने॒ । स॒र॒स्व॒ति॒ । शुतु॑द्रि । स्तोम॑म् । स॒च॒त॒ । परु॑ष्णि । आ । अ॒सि॒क्न्या । म॒रु॒त्ऽवृ॒धे॒ । वि॒तस्त॑या । आज्र्जी॑कीये । शृ॒णु॒हि । आ । सु॒ऽसोम॑या ॥
पदार्थान्वयभाषाः -(गङ्गे) हे गमनशील समुद्र तक जानेवाली नदी ! (यमुने) हे अन्य नदी में मिलनेवाली नदी ! (सरस्वति) हे प्रचुर जलवाली नदी ! (शुतुद्रि) हे शीघ्र गमन करनेवाली या बिखर-बिखर कर चलनेवाली नदी ! (परुष्णि) हे परुष्णि-परवाली भासवाली-दीप्तिवाली इरावती कुटिलगामिनी (असिक्न्या) कृष्णरङ्गवाली नदी के स्थल (मरुद्धृधे) हे मरुतों वायुओं के द्वारा बढ़नेवाली फैलनेवाली नदी (वितस्तया) अविदग्धा अर्थात् अत्यन्त ग्रीष्म काल में भी दग्ध शुष्क न होनेवाली नदी के साथ (आर्जीकीये) हे विपाट्-किनारों को तोड़-फोड़नेवाली नदी (सुषोमया) पार्थिव समुद्र के साथ (मे स्तोमं सचत-आ-शृणुहि) मेरे अभिप्राय को या मेरे लिये अपने-अपने स्तर को सेवन कराओ तथा मेरे लिये जलदान करो ॥
{(gange) he gamanasheel samudr tak jaanevaalee nadee ! (yamune) he any nadee mein milanevaalee nadee ! (sarasvati) he prachur jalavaalee nadee ! (shutudri) he sheeghr gaman karanevaalee ya bikhar-bikhar kar chalanevaalee nadee ! (parushni) he parushni-paravaalee bhaasavaalee-deeptivaalee iraavatee kutilagaaminee (asiknya) krshnarangavaalee nadee ke sthal (maruddhrdhe) he maruton vaayuon ke dvaara badhanevaalee phailanevaalee nadee (vitastaya) avidagdha arthaat atyant greeshm kaal mein bhee dagdh shushk na honevaalee nadee ke saath (aarjeekeeye) he vipaat-kinaaron ko tod-phodanevaalee nadee (sushomaya) paarthiv samudr ke saath (me stoman sachat-aa-shrnuhi) mere abhipraay ko ya mere liye apane-apane star ko sevan karao tatha mere liye jaladaan karo .}
भावार्थभाषाः -पृथिवीपृष्ठ पर भिन्न-भिन्न रूप और गति से बहनेवाली नदियाँ मानव को लाभ पहुँचानेवाली हैं, उनसे लाभ होना चाहिए ॥-ब्रह्ममुनि
(prthiveeprshth par bhinn-bhinn roop aur gati se bahanevaalee nadiyaan maanav ko laabh pahunchaanevaalee hain, unase laabh hona chaahie)
প্রসঙ্গঃ
সরস্বতীধ্যানম্: স্তবকুসুমাঞ্জলি, স্বামী গম্ভীরানন্দ সম্পাদিত, উদ্বোধন কার্যালয়, কলকাতা, ১৯৬১, পৃষ্ঠা ৩৫৪
- ↑ সরস্বতীস্তোত্রম্: স্তবকুসুমাঞ্জলি, স্বামী গম্ভীরানন্দ সম্পাদিত, উদ্বোধন কার্যালয়, কলকাতা, ১৯৬১, পৃষ্ঠা ৩৫৬-৫৭
- ↑ স্কন্দপুরাণ, নাগখণ্ড, ৪০
- ↑ দেবীভাগবত পুরাণ, নবম স্কন্ধ, অধ্যায় ১, ২ ও ৪
- ↑ দেবীভাগবত পুরাণ, নবম স্কন্ধ, অধ্যায় ৭
- ↑ দেবীভাগবত পুরাণ, নবম স্কন্ধ, অধ্যায় ৮
বিভিন্ন গ্রন্থে সরস্বতীর উল্লেখ.. পিডিফ
শং নো দেবা বিশ্বেদেবা ভবন্ত্ত শং সরস্বতী সহ ধীভিরস্ত্ত ৷
শমভিষাচঃ শমুরাতিষাচঃ শং নো দিব্যাঃ পার্থিবাঃ শং নো অপ্যাঃ ৷৷
[ঋগ্বেদ ৭/৩৫/১১]
পদার্থ : (বিশ্বদেবাঃ) জ্ঞান জ্যোতির রক্ষক (দেবাঃ) বিদ্বানেরা (নঃ) আমাদের জন্য (শম্) কল্যাণকারী (সরস্বতী) বাণী (ভবন্ত্ত) হউক (সরস্বতী) বাণী (ধীভিঃ) উত্তম বুদ্ধিও ( সহ) সাথে ( শম্ অস্ত্ত) আমাদের জন্য কল্যাণকর হউক (অভিসাচঃ) বাহুবলে বলীয়ান (উ) এবং (রাতি-সাচঃ) দানের সাহায্যে বলীয়ান (দিব্যাঃ) দিব্য (পার্থিবাঃ) পার্থিব (অপ্যাঃ) জলস্হ (নঃ) আমাদের (শম্) কল্যাণ বিধান করুক ৷
বঙ্গানুবাদ : জ্ঞানজ্যোতির রক্ষক বিদ্বানেরা আমাদের কল্যাণ বিধান করুন ৷ জ্ঞান প্রদানকারী পরমেশ্বর নানা প্রকার বুদ্ধির সঙ্গে আমাদের জন্য কল্যাণদায়িনী হউক, বাহুবলে বলীয়ান এবং অন্যের আশ্রয়ে বলীয়ান দিব্য, পার্থিব এবংজলচর প্রাণীরা আমাদের কল্যাণ সাধন করুক ৷
টীকা:
* সরস্বতী = বাণী বা জ্ঞান প্রদানকারী পরমেশ্বর,
* সরস্বতী ইতি বাঙ্মামানি, ((নিঘ০ ১/১১))
* বাক্ সরস্বতী, (শ০ব্রা০ ৭/৫/১/৩১; ১১/২/৪/৬; ১২/৯/১/১৩
* বাগ্বৈ সরস্বতী কৌ০ব্রা০ ৫/২; ১২/৮; ১৪/৪; তা০ ব্রা০ ৬/৭/৭; ১৬/৫/১৬; শ০ ব্রা০ ২/৫/৪/৬; ৩/৯/১৭; তৈ০ ব্রা০ ১/৩/৪/৫; গো০ উ০ ১/২০;
* বাগেব সরস্বতী, (ঐ০ ব্রা০ ২/২৪; ৬/৭;
স্বরস্বতী দেবয়ন্তো হবন্তো স্বরস্বতীমধ্বরে তায় মানে
স্বরস্বতী সুক্তো হবন্তো স্বরস্বতী দাশুষে বায় দাৎ।।
অর্থববেদ১৮/৪/৪৫
অনুবাদঃ বিদ্বান বিদ্যা, বিশেষ করে ব্রহ্মবিদ্যাকে কামনা করেন,এবং যজ্ঞাদি উত্তম কর্মেও ঐ সর্ব শ্রেষ্ঠ বেদবিদ্যার আবশ্যক প্রয়োগ করেন। সংসারের সব ধর্মাত্মা বেদবিদ্যা রূপী জ্ঞানসম্পদকে কামনা করেন এবং বেদ জ্ঞান দ্বারাই মোক্ষ পযর্ন্ত সব সুখ লাভ করেন।
পুরাণে ব্রহ্মা ও সরস্বতী
শিবপুরাণের জ্ঞানসংহিতার ৪৯ তম অধ্যায়ে ব্রহ্মাকে তার কন্যা সরস্বতীর প্রতি কামাতুর হয়ে পড়তে দেখা যায়।
শিবপুরাণ মতে, বর্তমানে ব্রহ্মা চতুর্মুখ হলেও পূর্বে তিনি পঞ্চ মুখবিশিষ্ট ছিলেন। একবার শিব ও পার্বতীর সামনে স্রষ্টা ব্রহ্মা অপভ্রংশ শব্দ ব্যবহার করেন, এর ফলে শিব তার একটি মুখ কেটে ফেলেন।
পুরাণ বর্ণনাকার সূতের মুখে ব্রহ্মার মাথা হারানোর কাহিনী শুনে মুনিরা জিজ্ঞেস করেন, “ব্রহ্মার মুখ কেন এমন বিরুদ্ধভাষী হল?” উত্তরে সূত বলেন, “ হে ঋষিগণ! পূর্বকালে ব্রহ্মা নিজ কন্যা সরস্বতীর রূপে মুগ্ধ হয়ে তাকে অনুসরণ করে কাম বিহ্বল চিত্তে তাকে ‘অয়ি সুন্দরী! গননে নিবৃত্ত হও’ এই কথা বলেছিলেন। তা শুনে সরস্বতী রেগে গিয়ে অভিশাপ দেন , “পিতা হয়ে তুমি যে মুখে ধর্ম বিরুদ্ধ অশুভ কথা বললে, সেই মুখে তুমি বিরুদ্ধভাষী হবে।“
(শিবপুরাণ/জ্ঞানসংহিতা/৪৯ অধ্যায়/৭৭-৭৯| অনুবাদক-শ্রী পঞ্চানন তর্করত্ন )
সরস্বতীর এই অভিশাপের পর থেকে ব্রহ্মা তার মুখ দিয়ে ‘অতি কঠোর দুষ্ট শব্দ’ উচ্চারণ করতেন। আর শিব ও পার্বতীর সামনে এমন দুষ্ট শব্দ ব্যবহারের ফলেই পিতামহ ব্রহ্মা তার পঞ্চম মুখ হারান।
স্কন্দ পুরাণে ব্রহ্মার অজাচার
নানান পুরাণে যদিও সরস্বতী ব্রহ্মার কন্যা এবং সরস্বতীর সাথে ব্রহ্মা অজাচারে লিপ্ত হয়েছিলেন কিন্তু স্কন্দ পুরাণের ব্রহ্মখণ্ডে ব্রহ্মাকে গায়ত্রী ও সরস্বতীর পতিরূপে দেখা যায়। তবে স্কন্দ পুরাণেও ব্রহ্মাকে তার ‘বাক’ নামক কন্যার সাথে অজাচারে লিপ্ত হতে দেখা যায়।
পুরাণ বর্ণনাকার সূত বলেন, “ বিপ্রগণ! পূর্বে প্রজাপতি কামুক হয়ে মোহক্রমে বাক নামের নিজকন্যার প্রতি আসক্ত হন। কন্যা বাক প্রজাপতির কামুক মনোভাব বুঝতে পেরে লজ্জায় মৃগীরূপ ধারণ করেন। তখন ব্রহ্মাও হরিণ হয়ে তার সাথে রমণ করতে অভিলাষী হন। বাগদেবী হরিণীরূপে গমন করলে, মৃগরূপী ব্রহ্মাও তার অনুগমন করেন।“
[স্কন্দ পুরাণ/ব্রহ্মখণ্ড/সেতুমাহাত্ম্য পর্ব/ অধ্যায় ৪০]
দেবতারা সৃষ্টিকর্তা ব্রহ্মাকে কন্যা সঙ্গমে উদ্যত দেখে তার নিন্দা করতে থাকেন। দেবতারা বলেন, “ এই ব্রহ্মা কন্যাগমনে উদ্যত হয়ে বড়োই অকার্য করছেন।“
ব্রহ্মাকে এই ধরণের অবৈধ কাজে লিপ্ত দেখে শিব ব্যাধের রূপ ধারণ করে মৃগরূপী ব্রহ্মাকে হত্যা করেন।
ব্রহ্মা নিহত হলে , ব্রহ্মার স্ত্রী গায়ত্রী এবং সরস্বতী কঠোর তপস্যা করে শিবকে সন্তুষ্ট করেন। শিব সন্তুষ্ট হলে ব্রহ্মাও আবার জীবিত হয়ে ওঠেন।
ব্রহ্মা জীবিত হয়ে মহেশ্বরকে বলেন, “ হে দেব দেবেশ! হে করুণাকর, শঙ্কর! তোমায় নমস্কার করি। হে প্রভু, করুণা সিন্ধু ! পাপাচরণ হতে আমায় পরিত্রাণ কর। হে শম্ভু, তোমার কৃপায় আমার যাতে কখনো নিষিদ্ধাচরণে পুনরায় আর প্রবৃত্তি না হয়, তুমি আমায় সেভাবে সবসময় রক্ষা কর।“
শিব ব্রহ্মাকে বলেন, “ তথাস্তু! হে বিধি! অতঃপর তুমি আর প্রমাদে পতিত হয়ো না। কুপথে চলা সমস্ত পুরুষদের আমিই সর্বদা শাসন করি। "
কালিকা পুরাণে ব্রহ্মার অজাচার
বিধাতা ব্রহ্মা, দক্ষ প্রভৃতি প্রজাপতিগণকে সৃষ্টি করে যখন ক্রতু,পুলহ,পুলস্ত,বসিষ্ট,নারদ প্রভৃতি দশ মানস পুত্রকে সৃষ্টি করেন, তখন তার মন থেকে এক পরম রূপবতী উত্তম রমণী আবির্ভূত হন। তিনি সন্ধ্যা নামে বিখ্যাত হন। এই সন্ধ্যাকে সন্ধ্যাবেলায় পূজা করা হয়ে থাকে। ১/২৪-২৫
তার মত সম্পূর্ণ গুণশালীনি রমণী তখন স্বর্গ, মর্ত্য, পাতলে আর ছিল না, তার আগে অথবা পরে হয়নি, আর হবেও না। ১/২৬
পুরাণকারের বর্ণনা অনুযায়ী,
সন্ধ্যা ‘স্বভাব সুন্দর সুনীল কুন্তল(কেশ) ভারে বর্ষাকালীন ময়ূরীর ন্যায়’ ১/২৭
তার ‘আকর্ণবিলম্বী অলকগুচ্ছ শোভিত আপাটল ললাটদেশ ইন্দ্রধনু বা নবীন শশধরের ন্যায়।‘ ২৮
তার চোখ ছিল হরিণীর মত। ১/ ২৯
“যার সৌন্দর্য ও লাবণ্যগুণে বদন মণ্ডলের পরিপূর্ণতা- চিবুকের কাছে আসার জন্যই যেন তার স্তনযুগলের উদ্যম, হে বিপ্রগণ তার সেই কমলকলিকাকৃতি , উত্তঙ্গ পীবর পরস্পর সংযুক্ত শ্যামাগ্র স্তনযুগল দেখলে মুনিরাও মোহিত হতেন।” ১/৩৩
“তার ত্রিবলি শোচিত ক্ষীণ কটিদেশ, বসনের ন্যায় মুষ্টিগ্রাহ্য। তার কটিদেশকে সকলেই কামদেবের শক্তি বলে মনে করেছিল।” ১/৩৪
এই পরম সুন্দরী যিনি কিনা ব্রহ্মার নিজের কন্যা তাকে দেখে ব্রহ্মা ভাবতে লাগলেন। তাকে দেখে দক্ষ প্রভৃতি প্রজাপতিগণ ও ব্রহ্মার মরিচী প্রভৃতি মানসপুত্রগণ অত্যন্ত উৎসুক হয়ে ভাবতে থাকেন। এই রূপবতী কার হবেন, এই নিয়ে সবাই ভাবছিলেন।
ব্রহ্মা এমন চিন্তা করতে করতে এক মনোহর পুরুষ তার থেকে উৎপন্ন হন। সেই পুরুষই কামদেব নামে পরিচিত। ব্রহ্মা তাকে বর দিয়ে বলেন , “তুমি তোমার এই মনোহর মূর্তি ও পুষ্পময় পঞ্চশরে স্ত্রী পুরুষদের মোহিত করে চিরস্থায়ী সৃষ্টির প্রবর্তক হও।”(১/৫৩) ব্রহ্মা বলেন, দেব, দানব,কিন্নর,গন্ধর্ব, মানুষ,পশুপাখি,সাপ,জলজ প্রাণী সকলেই কামদেবের দ্বারা মোহিত হবে। ব্রহ্মা আরো বলেন, “অন্য প্রাণীর কথা দূরে থাক, আমি, বিষ্ণু , এবং মহেশ্বর আমরাও তোমার বশবর্তী হব” ১/৫৭
ব্রহ্মার কাছ থেকে বর পাওয়ার পর, কামদেব ব্রহ্মার উপরেই প্রথমে তা পরীক্ষা করে দেখতে চাইলেন। কামদেব ভাবলেন,
“ব্রহ্মা আমার যে নিত্যকর্ম স্থির করে দিয়েছেন, তার পরীক্ষা এখানে মুনিদের সামনেই,এই ব্রহ্মার উপরেই করে দেখি। (২/১৭) এখানে মুনিরা আছেন, দক্ষ প্রজাপতি আছেন, স্বয়ং ব্রহ্মাও আছেন, আর সন্ধ্যাও এখানে আছেন। (২/১৮) এই সকল পুরুষ এবং ব্রহ্মাও আমার শরব্য হবেন।(২/১৯)”
এর পরেই কামদেব কামবাণে সকলকে মোহিত করলেন। “এরপর শরপীড়িত হয়ে সেইসমস্ত মুনি এবং ব্রহ্মা মোহিত হয়ে মনে মনে কিছুটা বিকার প্রাপ্ত হলেন।” (২/২৪-২৫) “তারা সকলে বিকার প্রাপ্ত হয়ে বারবার সন্ধ্যার দিকে দৃষ্টিপাত করতে লাগলেন, দেখতে দেখতে তাদের কাম বৃদ্ধি পেল। কেননা রমণী হতেই কাম বৃদ্ধি পেয়ে থাকে। ” (২/২৬)
তখন সেই দুষ্ট মদন তাদের বারবার মোহিত করে,যাতে তাদের বহিরিন্দ্রিয়ের বিকার হয়,তা করলেন। ২/২৭
এরপর যখন ব্রহ্মা ইন্দ্রিয়ের নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে , সন্ধ্যাকে দেখতে লাগলেন তখন তার শরীর হতে ৪৯ সাত্ত্বিক ভাবের উদয় হল। ২/২৮
তারা সকলে দৃষ্টিপাত করতে থাকলে সন্ধ্যাও বারবার কটাক্ষপাত ও কটাক্ষসঙ্কোচ প্রভৃতি কামদেবের বাণ সম্ভূত বিবিধ ভাব প্রকাশ করতে লাগলেন। ২/৩০ ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র তরঙ্গ উঠলে মন্দাকিনীর যেমন শোভা হয়, সেইরকম স্বভাব সুন্দরী সন্ধ্যাদেবীও মদন বিকার জনিত সেই ভাবপ্রকাশ করে অত্যন্ত শোভা পেয়েছিলেন।
এরপর সেই সন্ধ্যাকে দেখতে দেখতে বিধাতার শরীরে স্বেদজলধারা বইতে লাগল।তিনি সন্ধ্যার প্রতি অভিলাষী হলেন। ২/৩২ এরপর মরীচি , অত্রি সেই সমস্ত মুনি এবং দক্ষ প্রমুখ মুনিবরেরাও ইন্দিয়বিকার প্রাপ্ত হলেন। ২/৩৩
তখন, ব্রহ্মা ও মুনিদের অবস্থা দেখে কামদেব তার ক্ষমতার উপর বিশ্বাস আনলেন।
সেই সময়ে আকাশচারী মহাদেব ব্রহ্মা এবং দক্ষ সদৃশ পুত্রগণকে ওইরকম বিকারপ্রাপ্ত দেখে উপহাস করতে লাগলেন। ২/৩৬ শিব ধিক্কার জানিয়ে হাসতে হাসতে তাদের লজ্জায় ফেলে দিয়ে বলতে লাগলেন,
“ ওহে ব্রহ্মা! নিজের তনয়াকে দেখে, তোমার কিনা কামভাব উপস্থিত হল। যারা বেদানুসারে চলে, এ কাজ তাদের যোগ্য নয়।“ ২/৩৭-৩৮
শিব বলেন, “ পুত্রবধূ ও কন্যা মাতৃতুল্য; এটা বেদের সিদ্ধান্ত। তুমি সামান্য কামের প্রভাবে এটা বিস্মৃত হলে কিভাবে?” ২/৩৯
“ধৈর্য তোমার মনকে সর্বদা সতর্ক করে রাখে। বিধি তারপরেও ক্ষুদ্র কাম কিনা তোমার সেই মন বিগড়ে দিল?” ২/৪০
শিবের কথা শুনে ব্রহ্মার ঘাম ঝরতে থাকে। “ব্রহ্মা সেই কামরূপিনী সন্ধ্যাকে গ্রহণ করতে ইচ্ছুক হলেও ইন্দ্রিয় বিকার নিয়ন্ত্রণ করলেন, তাকে আর গ্রহণ করলেন না।“ ২/৪৫
মৎস্য পুরাণে ব্রহ্মার অজাচার
মৎস্য পুরাণে সৃষ্টিকর্তা ব্রহ্মা তার মেয়ে শতরূপাকে বিয়ে করেছিলেন-
“তিনি (ব্রহ্মা) জপে নিরত আছেন, এমন সময় তার পবিত্র দেহ ভেদ করে অর্ধস্ত্রীরূপ ও অর্ধপুরুষরূপ প্রাদুর্ভূত হল। স্ত্রীরূপার্ধ শতরূপা নামে বিখ্যাত হলেন। হে পরন্তপ!এই শতরূপাই সাবিত্রী,গায়ত্রী,সরস্বতী ও ব্রহ্মাণী নামে প্রসিদ্ধ। ব্রহ্মা তাকে- স্বদেহ-সম্ভূত নারীকে ‘আত্মজা’ রূপে কল্পনা করলেন। এরপর বিভু প্রজাপতি তাকে দেখে পীড়িত ও কামশরে জর্জরিত হয়ে বললেন, অহো ‘কি রূপ!’ কি অপূর্ব রূপ।‘ তখন বশিষ্ঠ প্রমুখ মহর্ষিরা তাকে বোন বলে সম্বোধন করতে লাগলেন। কিন্তু ব্রহ্মা তার মুখপঙ্কজ ছাড়া আর কিছুই দেখতে পেলেন না। তিনি বারবার ‘অহো কি রূপ! অহো রূপ!’ এই কথাই বলতে লাগলেন। এরপর ব্রহ্মা সেই প্রণাম-নম্রা কন্যকে পুনরায় দেখলেন। সেই বরবর্ণিনী তাকে প্রণাম করে প্রদক্ষিণ করল। তার রূপ দেখবার জন্য ব্রহ্মার একান্তই ইচ্ছা; কিন্তু তাতে তিনি পুত্রদের কাছে বিশেষরূপে লজ্জিত; কাজেই তার দক্ষিণদিকে এক পাণ্ডুবর্ণ মুখ বিকাশ পেল,এরপর বিস্ময়ে তার পশ্চিমদিকে অন্য এক মুখ বের হল।এরপরে তার কামাতুর চতুর্থ মুখ প্রকটিত হয়ে পড়ল।তার কামাতুরতার কারণে আরও এক মুখ প্রকাশিত হল। এই মুখ সেই উপরের দিকে ওঠা নারীকে দেখার কৌতুহল বশতই নির্গত হল। ব্রহ্মা সৃষ্টিকার্য সম্পন্ন করবার জন্য ভীষণ তপস্যা করেছিলেন; কিন্তু নিজের কন্যা সঙ্গমেচ্ছায় তার তা নষ্ট হয়ে গেল। তার উর্ধদিকে যে পঞ্চম মুখ বিকাশ পেয়েছিল, তা জটাজালে আবৃত হল।এরপর ব্রহ্মা তার পুত্রদের বললেন তোমরা সুর,অসুর ও মানুষী প্রজা সৃজন কর। পিতার এই কথায় তারা সকলেই বিবিধ প্রজা সৃষ্টি করতে লাগলেন। তারা সৃষ্টি কার্যের জন্য প্রস্থান করলে বিশ্বাত্মা ব্রহ্মা সেই প্রণামাবনতা অনিন্দিতা শতরূপার পাণিগ্রহণ করলেন। এবং তার সাথে তিনি অত্যন্ত কামাতুর হয়ে কাল কাটাতে লাগলেন। তিনি প্রাকৃত জনের ন্যায় সেই লজ্জিতা ললনার সাথে শতবর্ষ অবধি কমল গর্ভে থেকে রমণ করলেন। এরপর দীর্ঘকাল অতীত হলে তার এক পুত্র জন্মাল। এই পুত্র স্বায়ম্ভুব মনু নামে অভিহিত।আমরা শুনেছি ওই মনুই বিরাট পুরুষ, তার অনুরূপ গুণসমূহযোগে ইনি অধিপুরুষ নামেও নির্দিষ্ট।…”
[মৎস্য পুরাণ/৩য় অধ্যায়| শ্রী পঞ্চানন তর্করত্ন কর্তৃক সম্পাদিত]
মহাভাগবত পুরাণে ব্রহ্মার অজাচার
মহাভাগত পুরাণে স্রষ্টা ব্রহ্মার তার কন্য সন্ধ্যার সাথে অজাচারের মনোভাব দেখা যায়-
“ ইতোমধ্যে একদা পর্বত নন্দিনী নিভ্রিত সময়ে মেনকার পার্শ্বস্থিত হইয়া পিতামাতা উভয়কে বলিতে লাগিলেন, জনকজননি! আপনারা উভয়েই মনোযোগ করুন, মহাদেব যে স্থানে আছেন, আমি সেই স্থানে তপস্যা করিতে গমন করিব। পূর্বকালে ব্রহ্মা একদা কামমোহিত হইয়া নিজ তনয়া সন্ধ্যার প্রতি ধাবমান হইলে পর আকশ পথে অবস্থিত মহাদেব তাহা দর্শন করিয়া কটূক্তি ও উপহাস পূর্বক বারংবার ব্রহ্মাকে নিন্দা করেন, সেই নিন্দা বাক্যে চতুর্বদন অত্যন্তই ম্লান বদন হইলে, ধৈর্যাবলম্বন করিয়া ইন্দ্রিয় বিকারের শাম্য করিলেন; কিন্তু ঐ লজ্জাজনিত ক্লেশে ক্লিষ্ট হইয়া এক নির্জন গিরিকাননে একাগ্রমনে বিধাতা আমার আরাহনা করিতে থাকিলেন। বহুকাল উগ্রতর তপস্যা দ্বারা আমাকে প্রশান্ত করিয়া বর প্রার্থনা করিলেন যে, মাতঃ! আপনি যদি প্রসন্না হইলেন তবে আম্র নিকটে এই স্বীকার করুন যে, সংসার বিমুখ হইয়া সমুদায় বিষয় সুখ পরিত্যাগ করিয়া নিরন্তর ব্রহ্মচর্যতে ব্রহ্মধ্যানে পরায়ণ যে মহাদেব তাহাকে আপনি বিমোহিত করিবেন। হে জননি! আপনি ব্যাতিরেকে মহেশমনোরমা আর কেহই হইতে পারিবেন না। অতএব আপনি জন্মগ্রহণ করিয়া হরমোহিনী হউন। দুর্দৈববশতঃ ক্ষণকালের নিমিত্ত আমার ইন্দ্রিয় বিকার হইয়াছিল, তাহাতে উপদেশ প্রদান না করিয়া মহেশ্বর উপহাসপুরঃসর আমাকে নিন্দা করিয়াছেন; সেই জন্য যৎপরোনাস্তি দুঃখিত হইয়া আপনার শরণাগত হইয়াছি। আপনি সেই মহেশানকে মোহিত করিয়া আমার মনোবাঞ্ছা পূর্ণ করুন…” [ মহাভাগবত পুরাণ/ ১ম খণ্ড/ ২১ অধ্যায় ; অনুবাদক- শ্যামাপদ ন্যায়ভূষণ]
ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণে ব্রহ্মার অজাচার
কৃষ্ণ রাধাকে বলছেন, ” কান্তে! পূর্বে মহাত্মাদিগের গোপনীয় অকথ্য ও নিন্দনীয় যে সমস্ত বিষয় আছে তাহা তোমার নিকটে বলিতেছি শ্রবণ কর!” এরপর কৃষ্ণ সেই গোপনীয়, অকথ্য ও নিন্দনীয় কাহিনীর বর্ণনা দেওয়া শুরু করেন।
কৃষ্ণ বলেন, “… তাহার পর পরমাত্মা স্বরূপ সৌম্যমূর্তি যোগিশ্রেষ্ঠ ব্রহ্মা যোগবলে আমাকে ধ্যান করত বশিষ্ঠ, পুলহ, ক্রতু, অঙ্গীরা, ভৃগু, অত্রি, পুলস্ত, দক্ষ, কর্দম, মরীচি প্রভৃতি পুত্রগণকে সৃজন করিয়া সৃষ্টির নিমিত্ত আদেশ পূর্বক প্রহৃষ্টমনে আর একটি পুত্র ওকন্যা সৃজন করিলেন। ঐ পুত্র কামদেব নামে বিখ্যাত হইলেন; কন্যাও রত্নময়ভূষণে বিভূষিতা ষোড়শ বর্ষীয়া হইয়া মনোহর শোভা শালিনী হইলেন। তৎপরে বিধাতা মৎকুলাংশসম্ভূত স্বাত্মারাম দুর্নিবার্য মনোহর সুদীপ্ত সমীপস্থিত সুন্দর পুত্রকে বলিলেন বৎস! আমি তোমাকে স্ত্রী পুরুষের ক্রীড়ার নিমিত্ত সানন্দে সৃজন করিয়াছি। তুমি যোগবলে সকলের হৃদয়ে অধিষ্ঠান করিবে। আমি তোমাকে সম্মোহন, স্তম্ভনকারণ,উন্মত্তবীজ, জ্বরদ, নিরন্তর চেতনহারক এই বাণ সকল প্রদান করিলাম; তুমি এই সমস্ত গ্রহণ করিয়া সকলকে সম্মোহিত কর। বৎস! তুমি আমার বরে দুর্নিবার্য হও; এইরূপ বর প্রদান করিয়া জগৎবিধাতা আনন্দিত হইলেন। তৎপরে সম্মুখে দুহিতাকে দেখিয়া বর প্রদান করিতে উদ্যত হইলেন। এই সময়ে কাম মনে মনে যুক্তি স্থির করিয়া অস্ত্রপরীক্ষার নিমিত্ত ব্রহ্মাতেই সে সমস্ত অস্ত্র নিক্ষেপ করিলেন। তখন সিদ্ধ মহাযোগী ব্রহ্মা স্মরনিক্ষিপ্ত মন্ত্রপূত দুর্নিবার্য বাণপ্রভাবে হতচেতন হইয়া মূর্ছিতপ্রায় হইলেন। ক্ষণকাল পরে চৈতন্য লাভ করিয়া সম্মুখে কন্যাকে দেখিতে পাইলেন। তখন হতজ্ঞান ব্রমা তাহাকে সম্ভোগ করিবার নিমিত্ত অভিলাষ করত তাহার পশ্চাৎ পশ্চাৎ ধাবমান হইলে, সেই সতী ভয়ে পলায়ণ করিল। সেই কন্যা হতচেতন পিতাকে পশ্চাতে ধাবিত দেখিয়া , শীঘ্র তপস্বী ভ্রাতৃগণের শরণাপন্ন হইলেন। তখন সেই মুনিগণ, ভগিনীকে নিকটে রাখিয়া ক্রোধে পিতাকে হিতকর বেদসার নীতিপূর্ণ সত্য বাক্য বলিতে লাগিলেন, অহো পিতঃ! আপনার এ কি গর্হিত কার্য! নীচ ব্যক্তিগণের আচরিত কার্যে প্রবৃত্ত হইয়াছে? সাধু ব্যক্তিগণ পরস্ত্রীকে সর্বদা জননীর ন্যায় দর্শন করেন, এই জন্যই সেই জিতেন্দ্রিয় সাধুগণ ইহকাল ও পরকালে সকল স্থানেই পূজনীয় হইয়া থাকেন। কন্যা মাতৃবর্গের মধ্যে পরিগণিতা, এইটি বেদে উক্ত আছে; আপনি স্বয়ং সেই বেদকর্তা হইয়া কন্যাকে সম্ভোগ করিতে উদ্যত হইয়াছেন? তাত! গুরুপত্নী, রাজপত্নী, বিপ্রপত্নী, সাধ্বী নারী, ভ্রাতৃবধূ, পুত্রবধূ, মিত্রজননী, মিত্রপত্নী, পিতামহী, পিতামাতার ভ্রাতৃপত্নী, স্বীয় কন্যা, জননী, বিমাতা, ভগিনী, সুরভী, অভীষ্ঠ, গুরুপত্নী, কাল্প্রদায়িকা ধাত্রী, গর্ভধারিণীনাম্নী রমণী, ভয়ত্রাতার কামিনী, এই সকল রমনীগণ সকলের মাতৃবর্গ বলিয়া নির্দিষ্ট আছেন। ইহাদের সকলের মধ্যে কাহারও অপেক্ষা কাহার ন্যূনতানাই, এবং বেদে কন্যাদাতা, অন্নদাতা, জ্ঞানদাতা, অভয়দাতা, জন্মদাতা, মন্ত্রদাতা, জ্যেষ্ঠভ্রাতা, মাতামহ, ইহারা সকল পিতৃবর্গ বলিয়া উক্ত আছেন; যশস্বীদের অযশ প্রাণত্যাগ অপেক্ষাও দুঃখকর। যে মূঢ়গণ এই যশের হানি করে এবং যাহারা এই জনকদিগকে পীড়ন করিতে চেষ্টা করে,তাহারা ব্রহ্মার বয়ঃকালপর্যন্ত নিরয়যাতনা ভোগ করে এবং দুরন্ত যমকিঙ্করগণ তাহাদিগকে অন্ধকূপ নরকে রাখিয়া ভীষণ তাড়না করে ও নিরন্তর অভক্ষ্য বিষ্ঠা প্রভৃতি ভোজন করায়। আপনি স্বয়ং বিশ্বকর্তা এবং শমনের শাসনকর্তা ও জগদ্বিধাতা হইয়াও স্বীয় কন্যাকে গ্রহণ করিতে অভিলাষ করিয়াছেন? কামুক! তুমি আমাদের সম্মুখ হইতে দূর হও, তোমার মন কাম পীড়ায় নিতান্ত কলুষিত হইয়াছে; আমরা ওমাকে ভস্মসাৎ করিতে সমর্থ হইয়াও পিতা বলিয়া ক্ষমা করিলাম। গুরুর সহস্র দোষ হইলেও পণ্ডিতগণ তাহা ক্ষমা করিবে। নীতিজ্ঞ ব্যক্তিগণ গুরু ব্যতিত পীড়নকারীকে বিনাশ করিয়া থাকেন। গুরু যদ্যপি নিষ্ঠুরভাবে আগমন করত সর্বস্ব গ্রহণ কিংবা শাপ প্রদান করিতে সমুদ্যত হন, তাহা হইলে জ্ঞানী ব্যক্তিগণ সেই সমীপস্থ গুরুকে নিন্দা না করিয়া বরং ভক্তিপূর্বক প্রণাম করিয়া থাকেন। যে ব্যক্তিগণ পরাৎপর গুরুকে নিন্দা কি দ্বেষ করে , তাহারা চন্দ্র সূর্যের অবস্থিতিকাল পর্যন্ত অন্ধকূপ নরক যাতনা ভোগ করে এবং তাহারা যম তাড়নার ক্ষুধিত হইয়া বিষ্ঠা ভক্ষণ করে , ও তাহাদিগকে শাল প্রমাণ কীটসমূহে দিবানিশি নিয়ত দংশন করে। মুনিগণ এই কথা বলিয়া তাহার পাদপদ্মে প্রণাম করত স্বীয় কার্যে নিমগ্ন হইলেন। তখন ব্রহ্মা দৈব সংঘটনায় এইরূপ সমস্তই হইয়া থাকে, ইহাই বিবেচনা করত লজ্জায় শরীর পরিত্যাগ করিতে উদ্যত হইয়া যোগবলে ষটচক্র ভেদপূর্বক প্রাণ সকলকে নিরোঢ করিলেন এবং ঐ প্রাণসকলকে ব্রহ্মরন্ধ্রে আনয়ন করিয়া স্বীয় কর্মফলে পরিত্যাগ করিলেন। সেই প্রাণত্যাগকালে তিনি মনে মনে শ্রীহরিকে স্মরণ করত এই কামনা করিলেন,হে ঈশ্বর! আমার মন যেন পরদ্রব্যে চঞ্চল না হয়। এই বিষয় মনে চিন্তা করিতে করিতে ব্রহ্মা পরম ব্রহ্মে লীন হইলেন। সেই কন্যাও পিতার মৃত্যুঅবস্থা দর্শনে পুনঃপুন বিলাপ করিয়া যোগবলে দেহ ত্যাগ করত পরব্রহ্মে লীনা হইলেন। তৎপরে মহর্ষিগণ পিতা ও ভগিনী মৃত হইয়াছেন দেখিয়া বিলাপ করত কোপবশে স্বাত্মারাম শ্রীহরিকে স্মরণ করিলেন। তখন আমার অংশজাত নারায়ণ কৃপা করিয়া সত্বর তথায় আগমন করত ব্রহ্মা ও সেই কন্যাকে পুনর্জীবিত করিলেন। … ”
[ ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণ/ শ্রীকৃষ্ণজন্মখণ্ড/ ৩৫ অধ্যায় ; পণ্ডিতবর শ্রীযুক্ত পঞ্চানন তর্করত্ন কর্তৃক অনুবাদিত ও সম্পাদিত; শ্রী শ্রীজীব ন্যায়তীর্থ কর্তৃক পরিশোধিত; নবভারত পাবলিশার্স ]
No comments:
Post a Comment
ধন্যবাদ