যদি কেউ নিজেকে রাক্ষস বলতে চায় আর মাংসাহারের ওকালতি করে, তবে তাকেও রাক্ষসরাজ মহাত্মা বিভীষণ হতে প্রেরণা নেওয়ার পরামর্শ দিবো, দুরাত্মা রাবণ হওয়ার পক্ষ দিবো না। হ্যাঁ, দুর্ভাগ্য যে মধ্যকালীন ক্ষত্রিয়ের মধ্যে এই দোষ অবশ্য এসেছিল আর তাদের ক্ষাত্রধর্মের জন্য প্রমাণ মানা যায় না। এই দোষগুলো, তথা মদিরা, বেশ্যাগমন আদি পাপগুলো ভারতের সেই রাজাদের নাশও করে দিয়েছে।
আপনি (ফারুক খান) লিখেছেন -
"মাংসাহার হিন্দু ধর্মের প্রতিকূল নয়।" এর জন্য আপনি মনুস্মৃতির কিছু শ্লোকের হিন্দি অর্থ উদ্ধৃত করেছেন, যারমধ্যে শ্রাদ্ধ, পশুবলি ও সামান্য মাংসাহারকে উচিত বলা হয়েছে।
সমীক্ষা - আমি এটা মানছি যে মনুস্মৃতিতে আপনার দ্বারা উদ্ধৃত সকল শ্লোক উপর্যুক্ত অর্থেই বিদ্যমান আছে, তবে আমাদের দৃঢ় মত হল যে, ধর্ম বিরোধী পাপীরা এই প্রক্ষেপ করেছে। মনুস্মৃতিতে সর্বমোট ২৬৮৫টি শ্লোকের মধ্যে ১৪৭১টি প্রক্ষিপ্ত তথা ১২১৪টি মূল রয়েছে। একে পূর্ণ স্পষ্ট বুঝার হেতু আর্ষ সাহিত্য প্রচার ট্রাস্ট, ৪২৭, মন্দিরের গলীখারী বাবলী, দিল্লি-৬ দ্বারা প্রকাশিত তথা ডা০ সুরেন্দ্রকুমার জী দ্বারা করা মনুস্মৃতি ভাষ্যকে নিষ্পক্ষতা ও পূর্বাগ্রহ মুক্ত হয়ে পড়ার কষ্ট করবেন। আমার পূর্ণ বিশ্বাস আছে যে, এক নতুন প্রকাশ পাবেন তথা ভগবান্ মনুর ধর্ম বিশুদ্ধ রূপে উজ্জ্বল লাগবে। দেখুন! মনু জী বলেছেন -
"বর্জয়েন্মধুমাম্সম্ চ" (মনু ৬|১৪)
অর্থাৎ - সব মদকারী মদ্য, ভাঙ্গ আদি পদার্থ তথা মাংস হল নিষেধ।
"না কৃত্বা প্রাণিনাম্ হিম্সা মাম্সমুত্পদ্যতে ক্বচিত্।
ন চ প্রাণিবধঃ স্বর্গ্যস্তস্মান্মাম্সম্ বিবর্জয়েত্।।"
(মনু ৫|৪৮)
"য়ো বন্ধন বধক্লেশান্ প্রাণিনাম্ ন চিকীর্ষতি।
স সর্বস্য হিতপ্রেপ্সুঃ সুখমত্যন্ত মশ্নুতে।।"-(মনু ৫|৪৬)
"সমুত্পত্তি চ মাম্সস্য বধবন্ধৌ চ দেহিনাম্।
প্রসমীক্ষ্য নিবর্তেত সর্বমাম্সস্য ভক্ষণাত্।।
(মনু ৫|৪৯)
অর্থাৎ - যে ব্যক্তি প্রাণীদের বন্ধনে রাখতে, হত্যা করতে, তাদের কোনো রূপ কষ্ট দিতে চায় না, সে সকল প্রাণীর হিতৈষী অত্যন্ত সুখকে প্রাপ্ত করে। প্রাণীদের হিংসা না করে মাংস কখনও প্রাপ্ত হয় না আর জীবের হত্যা করা সুখদায়ক নয়। এই কারণে মাংস খাওয়া উচিত নয়। মাংসের উৎপত্তি যেভাবে হয়, তাতে প্রাণীর হত্যা আর বন্ধনের কষ্টকে দেখে সব প্রকারের মাংস ভক্ষণ থেকে দূরে থাকবে। এরপর মাংস খাওয়াতে আট পাপীর কথা বলা হয়েছে, যাকে আমি পূর্বেই লিখেছি। এতেই নয়, এই অধ্যায়ে ১২৩ তম শ্লোকে রক্ত দ্বারা অপবিত্র পাত্রকে কোনো প্রকারেই শুদ্ধ না হওয়ার যোগ্য লেখা রয়েছে, এরকম মনুকে মাংসহারের সমর্থক কে বলতে পারবে? আপনি বা এমন মিথ্যা আক্ষেপকারী শান্তি ও নিষ্পক্ষতা দ্বারা বিচার করুন, তবে পাবেন যে এটা ধূর্তদের লীলা।
আপনার কথন হল -
"ঋগ্বেদে বলা হয়েছে - যখন আমি দেবতার প্রতি শত্রুদের উপর নিজের সাথীদের সঙ্গে আক্রমণ করবো। তোমার জন্য পুষ্ট গাভী রন্ধন করবো আর সোমরস পিষবো (ঋগ্বেদ ১০|২৯|২)। ঋগ্বেদ ১০|২৮|৩ এরমধ্যেও সোমরস পান আর রন্ধন করা মাংসকে খেয়ে ফেলার বর্ণন আছে। অথর্ববেদ ৭|৬৩৭ তে আছে - এটা যে গাভীর দুগ্ধ আর মাংস আছে, সেটা বেশি স্বাদেষ্ট হয়ে থাকে। তাকে (অতিথির পূর্বে) খাবে না। যারা মাংসের উপসেবন করে অতিথিদের প্রস্তুত করে, তারা যজ্ঞের ফল প্রাপ্ত করে (অথর্ববেদ ৭|৬|৪০-৪২)।
সমীক্ষা - আপনি প্রথম মন্ত্রের স্থানটা সঠিক দেননি। সম্ভবতঃ (ঋগ্বেদ ১০|২৮|২) দ্বারা নিজের বিচারের পুষ্টি করতে চাচ্ছেন। মন্ত্র না দিয়ে কেবল ভাবার্থ লিখে দেওয়াটা উচিত নয়, এছাড়া কয়েক বেদ ভাষ্যকারদের ভাষ্য সর্বসুলভ রয়েছে। মন্ত্রের দেবতা হল ইন্দ্র, যার এখানে অর্থ হবে রাজা অথবা আত্মা। মন্ত্রার্থ জানবার পূর্বে তার প্রতিপাদ্য বিষয় দেবতার জ্ঞান অনিবার্য রয়েছে। এখানে "বৃষভ" শব্দকে দেখে লোকেদের ষাঁড়ের ভ্রম হয়েগেছে। বস্তুতঃ এখানে "বৃষভ" অর্থ সুখের বর্ষণকারী, আত্মা ও রাজা হবে। এই বৃষভকে পৃথ্বীর অতি শ্রেষ্ঠ ও সুখপূর্বক আসনে বিরাজমান বলা হয়েছে, তাহলে এটা ষাঁড় তো হতেই পারে না। তারপর এই বৃষভের সঙ্গে সোমরস পেষি, এই বাক্য নেই বরং বৃষভের পশ্চাৎ "য়ঃ সুতসোমঃ পৃণাতি" রয়েছে। এখানে "য়ঃ সুতসোমঃ" এই শব্দ বৃষভের জন্য প্রযুক্ত অর্থাৎ যে বৃষভ সোমরস তৈরি করেছে, সে আমায় পূর্ণতা প্রদান করে। তাহলে "বৃষভ" এর অর্থ গাভী হতে পারে না কারণ গাভী তো সোমরস পিষতে পারে না। এই প্রকারে বৃষভ কোনো অন্য মনুষ্য অথবা আত্মা হবে। এখানে যখন সোমের অর্থ উপাসনা হবে, তখন "বৃষভ" এর অর্থ আত্মা হবে। আবার যখন "বৃষভ" এর অর্থ রাজা হবে, তখন সোমের অর্থ বদলে যাবে। পরের মন্ত্রে "বৃষভ" এর অর্থ সুখ বর্ষণকারী পদার্থ তথা কাকড়াসিঙ্গী নামক ঔষধি বিশেষের নাম হবে। এর পুষ্টি আয়ুর্বেদ গ্রন্থ ভাবপ্রকাশ তথা রাজ নিঘণ্ডু দ্বারা হয়েছে, যেখানে গাভী অর্থকারক অনেক নাম, এই ঔষধি বিশেষের জন্য এসেছে, তাহলে কে কিভাবে কাকড়াসিঙ্গীকে গাভী বলতে পারে?
সঃ রোরূবত্ বৃষভঃ তিগ্মশৃঙ্গঃ বর্ষ্মন্ তস্থৌ বরিমন্ আ
পৃথিব্যাঃ। বিশ্বেষু এনম্ বৃজনেষু পামি য়ঃ মে কুক্ষী
সুতসোমঃ পৃণাতি।। (ঋগ্বেদ ১০|২৮|২)
এর ঋষি হল বসুক্রঃ। [ব্রহ্ম বৈ বসুক্রঃ (ঐ০অ০১|১|২)]
এর তাৎপর্য হল এই যে, এর উৎপত্তি ব্রহ্মরূপ প্রাণ রশ্মি দ্বারা হয়ে থাকে।
দেবতা - ইন্দ্রঃ, ছন্দ - নিচৃত্ ত্রিষ্টুপ্
সেটা তীক্ষ্ণ ধ্বনি দ্বারা যুক্ত নানা রশ্মির বর্ষণকারী
[শৃঙ্গম্= শৃঙ্গাণি জ্বলতোনাম (নিঘন্টু ১|১৭)। তিগ্মম্= বজ্রনাম (নিঘন্টু ২|২০)] তীক্ষ্ণ জ্বালা দ্বারা যুক্ত, মহান্ বল দ্বারা যুক্ত সূর্য অন্তরীক্ষে শ্রেষ্ঠতাপূর্বক স্থিত রয়েছে। প্রাণতত্ব সকল প্রকার বলের দ্বারা এই সূর্যের পালন ও রক্ষণ করছে। সেই সূর্য প্রাণ রশ্মি দ্বারাই নিজের কুক্ষি অর্থাৎ উদরে সম্পীডিত সোম তত্বকে পরিপূর্ণতায় প্রাপ্ত করে। সূর্যের ভিতর বর্তমান বিজ্ঞান দ্বারা পরিভাষিত গুরুত্ব বল, নাভিকীয় প্রবল বল, বিদ্যুৎ চুম্বকীয় বল আদির অতিরিক্ত অনেক বৈদিক বিজ্ঞানে বর্ণিত অন্য বলেরও ভূমিকা হয়ে থাকে। সকল বলের পিছনে বিভিন্ন প্রাণ রশ্মিদেরই মুখ্য ভূমিকা হয়ে থাকে। সূর্যের কেন্দ্রীয় ভাগে বিভিন্ন নাভিকের সংলয়ন, এরকম নাভিকের সেই কেন্দ্রীয় ভাগ পর্যন্ত গমন আদি কর্মেও বিভিন্ন প্রাণাদি রশ্মির ভূমিকা হয়ে থাকে। এরজন্য আমার গ্রন্থ "বেদবিজ্ঞান-আলোক" পঠন করবেন।
এটা হল কেবল আধিদৈবিক (বৈজ্ঞানিক) অর্থ, তাও আবার সংক্ষেপে। এর এখন আধ্যাত্মিক আর আধিভৌতিক (লৌকিক ব্যবহারিক) অর্থ আরও হতে পারে, আমি বিস্তারভয়ের জন্য এই দুই প্রকারের অর্থকে এখানে ছেড়ে দিচ্ছি। বস্তুতঃ বেদার্থ করা প্রত্যেক বিদ্বানের কার্য নয়, তা সে সংস্কৃত ব্যাকরণের গম্ভীর বিদ্বান হওয়ার পরেও। আর প্রতিত হচ্ছে আপনি তো সংস্কৃত ভাষা হতে নিতান্ত অনভিজ্ঞ । এখান-ওখান থেকে নকল করে বেদ ও ব্রাহ্মণ গ্রন্থের উপর আক্ষেপ করছেন। আপনি যাদের অনুবাদ বা ভাষ্যকে উদ্ধৃত করেছেন, তারাও বেদার্থের বর্ণমালা জানে না, তাহলে আপনাকে বলবোই বা কি? এরজন্য আপনাকে আমার মহত্বপূর্ণ গ্রন্থ "বেদবিজ্ঞান-আলোক" পড়ার চেষ্টা করা উচিত কিন্তু তাকে বুঝতে আপনাকে সংস্কৃত ব্যাকরণের সঙ্গে-সঙ্গে সৈদ্ধান্তিক ভৌতিক বিজ্ঞানে ন্যূনতম M.Sc -র যোগ্যতা অর্জিত করার আবশ্যকতা রয়েছে।
দ্বিতীয় মন্ত্রেরও দেবতা হল ইন্দ্র, যার অর্থও রাজা ও আত্মা হবে। এরও বৈজ্ঞানিক অর্থ আমার শৈলী দ্বারা করা যেতে পারে। অথর্ববেদের রেফারেন্সের বিষয়ে প্রথম নিবেদন তো এটা যে, নকল করে লেখা লিখন উপহাসেরই পাত্র হয়। আপনি অথর্ববেদ চোখেই দেখেননি অন্যথা উপর্যুক্ত স্থানে এই প্রকারের অর্থের প্রতীতিকারক মন্ত্রই নেই। প্রথম মন্ত্রের স্থান (৭|৬|৩৭) হবে, যাকে আপনি (৭|৬৩৭) করে দিয়েছেন। একে যদি মুদ্রণ দোষও মানা হয়, কিন্তু অথর্ববেদ কাণ্ড ৭, সূক্ত ৬ তে মোট ৪ টাই মন্ত্র রয়েছে, তাহলে আপনার দ্বারা উদ্ধৃত ৩৭, ৪০-৪২ মন্ত্র কোথা থেকে এসে গেল? আপনার এই প্রকারের লিখন আপত্তিজনক ও মিথ্যা। প্রথমে কোনো গ্রন্থকে দেখা উচিত, তদুপরান্তই তার উপর লেখা চালানো উচিৎ। কোনোখান থেকে নকল করে লেখা চুরি করা হয় আর চুরি করা লিখন যদি মিথ্যা হয়, তাহলে কি বলবো? এমন দশা হয়েছে আপনার। বিশ্বে কেউই এই মন্ত্রকে দেখাতে পারবে না। আমার মনে হয় যে, আমার এই আক্ষেপকে পড়ে আপনি আরও নতুন কোনো চুরির চেষ্টা করবেন অথবা কোনোখান থেকে অথর্ববেদ নিয়ে এসে খোঁজার চেষ্টা করবেন। আমি আপনার পরিশ্রম বাঁচাচ্ছি আর এখানে বলে দিচ্ছি যে আপনার এরকম মিথ্যা অর্থের প্রতীতি কোথায় হতে পারে? এই প্রকারের ভ্রান্তি আপনাকে নিম্ন স্থলে হতে পারে -
"এতদ বা উ স্বাদীয়ো য়দাধিগবম্ ক্ষীরম্ বা মাম্সম্বা
তদেব নাশ্নীয়াত্।" (অথর্ববেদ ৯|৫|৯)
এই মন্ত্রের অর্থ শ্রী ক্ষেমকরণদাস জী ত্রিবেদী "অধিগবম্" এর অর্থ অধিকৃত জল তথা "মাম্স" এর অর্থ মননসাধক বুদ্ধিবর্ধক বস্তু করেছে। যদি আপনি বলেন যে এটা মন্ত্রের টানাহেঁচড়া হচ্ছে, তবে সোজা অর্থ গোমাংসই হয়। মহাশয়! যদি বৈদিক শব্দের সোজা অর্থ করতে থাকেন, তবে অনেক অসুবিধা হবে, যা থেকে বেরিয়ে আসা আপনার পক্ষে সম্ভব না। বেদে তো চার শিং, তিন পা, দুই মস্তক, সাত হাতওয়ালা বৃষভেরও বর্ণন রয়েছে। পারবেন এখানে বৃষভের সোজা অর্থ গাভী করতে? আমার মনে হয় যে আপনি এমনটা করে হাস্যাস্পদ স্থিতিতে ফেঁসে যেতে চাইবেন না। এইজন্য আমি নিবেদন করবো যে, সাবধান হয়ে অর্থের উপর বিচার করা উচিত। নকল করতেও বুদ্ধির আবশ্যকতা পরে। "গো" শব্দের কত অর্থ হয়, এটা বেদে না হলেও, মানুষের মধ্যেই দেখে নিন। আপ্তে শব্দকোষেও জল অর্থ দেওয়া হয়েছে, তাহলে শ্রী ত্রিবেদীর অর্থ বৈদিক কেন লৌকিক দৃষ্টি দ্বারাও অনুকূল হবে।
এখন আমি এর উপর আমার ভাষ্য প্রস্তুত করছি, যাকে বোঝার সামর্থ্যও ফারুক খান জী! আপনার মধ্যে হবে না আর কোনো মাংসাহারীও একে পুর্ণতঃ বুঝে যাবে, সেটাও সন্দিগ্ধ। দেখুন আমার ভাষ্য -
এর উপর আমার (আচার্য্য অগ্নিব্রত জীর) মত -
এটির ভাষ্যতে আর্য বিদ্বান প্রো০ বিশ্বনাথ বিদ্যালঙ্কার এখানে "মাম্স" এর অর্থ পনীর করেছে, তবে পণ্ডিত ক্ষেমকরণদাস ত্রিবেদী মননসাধক (বুদ্ধিবর্ধক) পদার্থকে মাংস বলেছে। সকলে এই মন্ত্র তথা সূক্তের অন্য মন্ত্রের বিষয় অতিথি সৎকার বলেছে। এই মন্ত্রের দেবতা পণ্ডিত ক্ষেমকরণদাস ত্রিবেদীর দৃষ্টিতে অতিথি ও অতিথিপতি, অন্যদিকে পণ্ডিত সাতবলেকর অতিথি বিদ্যা মেনেছে। পণ্ডিত সাতবলেকর এটির ঋষি ব্রহ্মা মেনেছে। ছন্দ পিপীলিকা হল মধ্যা গায়ত্রী।
{ব্রহ্মা=মনো বৈ য়জ্ঞস্য ব্রহ্মা (শ০ ১৪|৬|১|৭); প্রজাপতির্বৈ ব্রহ্মা (গো০ উ০ ৫|৮)। অতিথিঃ=য়ো বৈ ভবতি য়ঃ শ্রেষ্ঠতামশ্নুতে স বা অতিথির্ভবতি (ঐ০ আ০ ১|১|১)। অতিথিপতিঃ= অতিথিপতির্বাবাতিথেরীশে (ক০ ৪৬|৪-ব্রা০ উ০ কো০ থেকে উদ্ধৃত)। পিপীলিকা=পিপীলিকা পেলতের্গতিকর্মণঃ (দৈ০ ৩|৯)। স্বাদু=প্রজা স্বাদু (ঐ০আ০ ১|৩|৪); প্রজা বৈ স্বাদুঃ (জৈ০ ব্রা০ ২|১৪৪); মিথুনম্ বৈ স্বাদু (ঐ০ আ০ ১|৩|৪)। ক্ষীরম্=য়দত্যক্ষরত্ তত্ ক্ষীরস্য ক্ষীরত্বম্ (জৈ০ ব্রা০ ২|২২৮)। মাম্সম্=মাম্সম্ বৈ পুরীষম্ (শ০ ৮|৬|২১৪); মাম্সম্ বা মানসম্ বা মনোঽস্মিন্ সীদতীতি বা (নি০ ৪|৩); মাম্সম্ সাদনম্ (শ০ ৮|১|৪|৫)}।
আমার (আচার্য্য অগ্নিব্রত জীর) আধিদৈবিক ভাষ্য -
পদার্থঃ (এতত্ বা স্বাদীয়ঃ) যে অতিথি অর্থাৎ সতত গমনশীলা প্রাণ, ব্যান রশ্মির এবং অতিথিপতি অর্থাৎ প্রাণাপান রশ্মির নিয়ন্ত্রক সূত্রাত্মা বায়ু রশ্মির স্বাদুযুক্ত হয়ে অর্থাৎ বিভিন্ন ছন্দাদি রশ্মিকে মিথুন বানিয়ে নানা পদার্থের উৎপন্ন করাতে সহায়ক হয় । (য়ত্) যে প্রাণব্যান ও সূত্রাত্মা বায়ু রশ্মির (অধিগবম্ ক্ষীরম্ বা মাম্সম্ বা) গো অর্থাৎ ‘ওম্’ ছন্দ রশ্মি রূপী সূক্ষ্মতম বাক্ তত্বে আশ্রিত হয়, সাথেই নিজের পুরীষ=পূর্ণ সংযোজন বল {পুরীষম্=পূর্ণম্ বলম্ (ম০ দ০ য়০ ভা০ ১২|৪৬); ঐন্দ্রম্ হি পুরীষম্ (শ০ ৮|৭|৩|৭); অন্নম্ পুরীষম্ (শ০ ৮|১|৪|৫)} এর সাথে নিরন্তর নানা রশ্মি বা পরমাণু আদি পদার্থের উপর ঝড়তে থাকে। এই ‘ওম্’ রশ্মির ঝড়নাই ক্ষীরত্ব তথা পূর্ণ সংযোতাকেই মাম্সত্ব বলা হয় । এখানে ‘মাম্স’ শব্দ এই সংকেত দেয়, যে এই ‘ওম্’ রশ্মির মনস্তত্ব হতে সর্বাধিক রূপ হতে নিকটতা হতে সম্বন্ধ হয়ে থাকে কিংবা মনস্তত্ব এরমধ্যে সর্বাধিক মাত্রাতে বসে থাকে। এই ‘ওম্’ রশ্মির প্রাণব্যান এবং সূত্রাত্মা বায়ু রশ্মির উপর ঝড়ে অন্য স্থুল পদার্থের উপর পড়তে থাকে । (তত্ এব ন অশ্নুয়াত্) এই কারণে বিভিন্ন রশ্মি বা পরমাণু আদি পদার্থের মিথুন তৈরির প্রক্রিয়া নষ্ট হয় না। এই প্রক্রিয়া অতিথিরূপ প্রাণব্যানকে মিথুন বানানো কিংবা এর দ্বারা বিভিন্ন মরুদাদি রশ্মিদের আকৃষ্ট করার প্রক্রিয়া শান্ত হওয়ার পূর্বে নষ্ট হয় না, বরং তার পশ্চাৎ অর্থাৎ দুই কণের সংযুক্ত হওয়ার পশ্চাৎ আর মিথুন তৈরির প্রক্রিয়া নষ্ট বা বন্ধ হয়ে যায়, এটা জানা উচিত।
এই ঋচার সৃষ্টির উপর প্রভাব -
আর্ষ ও দৈবত প্রভাব- এটির ঋষি ব্রহ্মা হওয়াতে সংকেত পাওয়া যায় যে এটির উৎপত্তি মন এবং ‘ওম্’ রশ্মির মিথুন দ্বারাই হয়ে থাকে। এই মিথুন এই ছন্দ রশ্মিকে নিরন্তর ও নিকটতা থেকে প্রেরিত করতে থাকে। এর দৈবত প্রভাব দ্বারা প্রাণ, ব্যান তথা সূত্রাত্মা বায়ু রশ্মিগুলো বিশেষ সক্রিয় হয়ে নানা সংযোগ কর্মের সমৃদ্ধ করে।
• ছান্দস প্রভাব - এটির ছন্দ পিপীলিকা মধ্যা গায়ত্রী হওয়ায় এই ছন্দ রশ্মি বিভিন্ন পদার্থের সংযোগের সময় তাদের মধ্যে তীব্র তেজ ও বলের সাথে সতত সঞ্চারিত হয়। এটির থেকে ঐ পদার্থের মধ্যে বিভিন্ন পদার্থ তেজ এবং বলের প্রাপ্ত হতে থাকে।
• ঋচার প্রভাব - যখন দুই কণার সংযোগ হয়, তখন তারমধ্যে প্রাণ, ব্যান ও সূত্রাত্মা বায়ু রশ্মির বিশেষ যোগদান হতে থাকে। এই রশ্মির বিভিন্ন মরুদ্ রশ্মির দ্বারা আকুঞ্চিত আকাশ তত্বকে ব্যাপ্ত করে নেয়। এই সময় এই রশ্মির উপর সূক্ষ্ম ‘ওম্’ রশ্মিগুলো নিজের সেচন করে এতে অধিক বল দ্বারা যুক্ত করে। এর ফলে উভয় কণার মধ্যে ফীল্ড নিরন্তর প্রভাবী হয়ে ঐ দুই কণাকে পরস্পর সংযুক্ত করে দেয়।
আমার (আচার্য্য অগ্নিব্রতজীর)আধিভৌতিক ভাষ্য-
পদার্থঃ (এতত্ বা স্বাদীয়ঃ) এই যে স্বাদিষ্ট ভোজ্য পদার্থ আছে। (য়দধিগবম্ ক্ষীরম্ বা) যা গাভী হতে প্রাপ্তকারী দুধ, ঘৃত, মাখন, দই আদি পদার্থ আছে অথবা (মাম্সম্ বা) মনন, চিন্তন আদি কার্যে উপযোগী ফল, বাদাম আদি পদার্থ। *(তদেব ন অশ্নীয়াত্) সেই পদার্থকে অতিথিকে খাওয়ানোর পূর্বে খাবে না অর্থাৎ অতিথিকে খাওয়ানোর পশ্চাৎই খাওয়া উচিত। এখানে অতিথি থেকে পূর্বে না খাওয়ার প্রসঙ্গ এটির পূর্ব মন্ত্র থেকে সিদ্ধ হচ্ছে, যেখানে লেখা আছে - “অশিতাবত্যতিথাবশ্নীয়াত্”= অশিতাবতি অতিথৌ অশ্নীয়াত্। এই প্রকরণকে পূর্ব আধিদৈবিক ভাষ্যেতেও বুঝে নেবেন।
* ‘মাম্সম্’ পদের বিবেচনাঃ- এই বিষয়ে সর্বপ্রথম আর্য বিদ্বান পণ্ডিত রঘুনন্দন শর্মা কৃত “বৈদিক সম্পত্তি” নামক গ্রন্থতে আয়ুর্বেদের কিছু গ্রন্থকে উদ্ধৃত করে বলেন -
''সুশ্রুতে'' আমের ফলের বর্ণন করে লিখেছেন -
অপক্বে চূতফলে স্নায়্বস্থিমজ্জানঃ সূক্ষ্মত্বান্নোপলভ্যন্তে পক্বে ত্বাঽবির্ভূতা উপলভ্যন্তে।
অর্থাৎ - আমের কাচা ফলের স্নায়ু, হাড্ডি আর মজ্জা আদি প্রতীত হয় না, কিন্তু পাকার পরে সব আবির্ভূত হয়ে যায়।
এখানে আটির তন্তুকে কেশ, আটিকে হাড্ডি, আশকে স্নায়ু আর কোমল ভাগকে মজ্জা বলা হয়েছে। এই প্রকারে বর্ণন ভাবপ্রকাশেও এসেছে। সেখানে লেখা আছে যে -
আম্রাস্যানুফলে ভবন্তি য়ুগপন্মাম্সাস্থিমজ্জাদয়ো লক্ষ্যন্তে
ন পৃথক্ পৃথক্ তনুতয়া পুষ্টাস্ত এব স্ফুটাঃ।
এবম্ গর্ভসমুদ্ভবে ত্ববয়বাঃ সর্বে ভবন্ত্যেকদা লক্ষ্যাঃ
সূক্ষ্মতয়া ন তে প্রকটতামায়ান্তি বৃদ্ধিঙ্গতাঃ।
অর্থাৎ - যে প্রকার কাঁচা আমের ফলে মাংস, অস্থি আর মজ্জাদি পৃথক-পৃথক দেখা যায় না, কিন্তু পাকার পরেই জ্ঞাত হয় সেই প্রকার গর্ভের আরম্ভে মনুষ্যের অঙ্গও জ্ঞাত হয় না, কিন্তু যখন তার বৃদ্ধি হয়, তখন স্পষ্ট হয়ে যায়।
এই দুই প্রমাণের দ্বারা প্রকট হচ্ছে যে ফলের মধ্যেও মাংস, অস্থি, নাড়ী আর মজ্জা আদি সেই প্রকার বলা হয়েছে, যে প্রকার প্রাণীদের শরীরে বলা হয়।
বৈদ্যকের এক গ্রন্থে লেখা আছে যে -
প্রস্থম্ কুমারিকামাম্সম্।
অর্থাৎ- এক কিলো কুমারিকার মাংস। এখানে ঘীকুমারকে কুমারিকা আর তার গুদেকে মাংস বলা হয়েছে।
বলার তাৎপর্য এই যে, যেভাবে ঔষধির আর পশুদের নাম একই শব্দে রাখা হয়েছে সেইভাবে ঔষধির আর পশুদের শরীরাবয়বও একই শব্দে বলা হয়েছে। এই প্রকারের বর্ণনা আয়ুর্বেদের গ্রন্থে ভরে পরে রয়েছে। শ্রীবেঙ্কটেশ্বর প্রেস, মুম্বাইতে ছাপানো ‘ঔষধিকোষ’ এ নীচে লেখা সমস্ত পশুসংজ্ঞক নাম আর অবয়ব বনস্পতিগুলো জন্যও এসেছে দেখে নিন। আমি উদাহরণের জন্য কিছু শব্দ উদ্ধৃত করেছি -
বৃষভ - ঋষভকন্দ
সিংহী - কটেলী, বাসা
হস্তি - হস্তিকন্দ
শ্বান - কুত্তাঘাস, গ্রন্থিপর্ণ
খর - খরপর্ণিনী
বপা - ঝিল্লী=বক্কলের ভিতরের জালা
মার্জার - বল্লীঘাস, চিত্তা
কাক - কাকমাচী
অস্থি - গুঠলী
ময়ুর - ময়ুরশিখা
বারাহ - বারাহীকন্দ
মাংস - গুদা, জটান্মাসী
বীছূ - বীছূবূটী
মহিষ - মহিষাক্ষ, গুগ্গুল
চর্ম - বক্কল
সর্প - মর্পিণীবূটী
শ্যেন - শ্যেনঘন্টী (দন্তী)
স্নায়ু - রেশা
অশ্ব - অশ্বগন্ধা, অজমোদা
মেষ - জীবশাক
নখ - নখবূটী
নকুল - নাকুলীবূটী
কুক্কুট (টী) - শাল্মলীবৃক্ষ
মেদ - মেদা
হংস - হংসপদী
নর - সৌগন্ধিক তৃণ
লোম (শা) - জটামাসী
মৎস্য - মত্স্যাক্ষী
হৃদ - দারচীনী
মূষক - মূষাকর্ণী
মৃগ - সহদেবী, ইন্দ্রায়ণ, জটামসী, কপুর
পেশী - জটামসী
গো - গৌলোমী
পশু - অম্বাড়া, মোথা
রুধির - কেসর
মহাজ - বড়ী অজবায়ন
কুমারী - ঘীকুমার
আলম্ভন - স্পর্শ
এই সূচীতে সমস্ত পশু পক্ষীর আর তাদের অঙ্গের নাম তথা সমস্ত বনস্পতির আর তাদের অঙ্গের নাম একই শব্দ দ্বারা সূচিত করা হয়েছে। এরূপ অবস্থায় কিছু শব্দ দ্বারা পশু আর তারই অঙ্গকে গ্রহণ করা উচিত নয়।
বিজ্ঞ পাঠক এখানে বিচার করুন ঐরূপ স্থিতিতে যেখানে ‘মাম্সম্’ পদ হতে গৌ আদি পশুর বা পক্ষীর মাংস গ্রহণ করা কি মুর্খতা নয়? এখানে কোনো পাশ্চাত্য শিক্ষা দ্বারা অভিভূত তথা বৈদিক বা ভারতীয় সংস্কৃতি ও ইতিহাসের উপহাসকর্তা কথিত প্রবুদ্ধ কিংবা মাংসাহারের পোষক সংস্কৃত ভাষার এইরূপ নামের উপর ব্যঙ্গ্য যেন না করে, এই কারণে আমি তাদের ইংরেজি ভাষারও কিছু উদাহরণ দিচ্ছি -
১. Lady Finger ভেণ্ডীকে বলা হয়। যদি ভোজন বিষয়ে কেউ এর অর্থ কোনো মহিলার আঙ্গুল করে, তখন কি তার অপরাধ হবে না?
২. Vegetable কোনো শাক বা বনস্পতিকে বলা হয়। অন্যদিকে Chamber dictionary তে এর অর্থ Dull understanding person -ও দেওয়া রয়েছে। যদি Vegetable খেতে বসা কোনো ব্যক্তিকে দেখে কেউ তাকে মন্দবুদ্ধি মানুষের খাদ্য পদার্থ বলে, তখন কি এটা মূর্খতা হবে না?
৩. আয়ুর্বেদে একটি চারাগাছ আছে - গোবিষ, যাকে হিন্দীতে কাকমারী তথা ইংরেজিতে Fish Berry বলা হয়। যদি কেউ এর অর্থ মাছের রস লাগায়, তখন তাকে কি বলবেন?
৪. Potato আলুকে বলা হয়, অন্যদিকে এর অর্থ A mentally handicapped person -ও হয়, তখন কি আলু খাওয়া ব্যক্তিকে মানসিক রোগী মনুষ্য ভক্ষণকারী মানা হবে?
৫. Hag এটা এক প্রকারের ফল, অন্যদিকে An ugly old woman -কেও hag বলা হয়, তখন কি এখানেও কেউ hag ফলের অর্থ উল্টোই লাগানোর চেষ্টা করবে?
এখন আমরা এর উপর বিচার করি যে ফলের গূদাকে মাংস কেন বলে? যেমনটা আপনি আধিদৈবিক ভাষ্যে জেনেছেন যে, পূর্ণবলযুক্ত বা পূর্ণবলপ্রদ পদার্থকে মাংস বলা হয়। বিশ্বে সকল মনুষ্য ফলের গূদারই প্রয়োগ করে থাকে, অন্য ভাগকে নয়, কেননা ফলের সার ভাগ হল সেটাই। সেই ভাগ হল বল-বীর্যের ভাণ্ডার অর্থাৎ তার ভক্ষণ দ্বারা বল-বীর্য-বুদ্ধি আদির বৃদ্ধি হয়ে থাকে। এখন কেউ যদি প্রশ্ন করতে পারে যে, প্রাণিদের শরীরের মাংসকে মাংস কেন বলা হয়েছে? এর উত্তর হল এই যে, যেকোনো প্রাণীরই শরীরের বল তার মাংসপেশীর অন্তর্গতই নিহিত থাকে, এই কারণে একেও মাংস বলা হয়। যেরূপ শাকাহারী প্রাণী ফলের গূদাকেই বিশেষ ভক্ষণ করে, সেইরকম সিংহাদি মাংসাহারী প্রাণী, প্রাণীর মাংস ভাগকেই বিশেষ রূপে খেয়ে থাকে। এই উভয়ের মধ্যে সমানতা রয়েছে। যে স্থানটি ফলের মধ্যে গূদার হবে, সেই স্থানটি প্রাণীর শরীরের মধ্যে মাংস হবে। মনুষ্য হল প্রাকৃতিক রূপে কেবল শাকাহারী ও দুগ্ধাহারী প্রাণী, এই কারণে বেদাদি শাস্ত্রে প্রাণীর মাংস খাওয়ার চর্চা হল বেদাদি শাস্ত্রের ঐতিহ্য হতে সম্পূর্ণ অজ্ঞতার লক্ষণ। এরূপ চর্চাকারী কথিত বেদজ্ঞ, তা সে বিদেশী হোক বা স্বদেশী, আমাদের দৃষ্টিতে তারা বেদাদি শাস্ত্রের বর্ণমালাও জানে না, তা তিনি ব্যাকারণাদি শাস্ত্রের যত বড়ই অধ্যেতা- অধ্যাপক হোন না কেন।
• প্রশ্ন - বেদে ‘মাম্সম্’ পদের অর্থ প্রাণীদের মাংস কখনও হয় না, এটা আপনার পূর্বাগ্রহও তো ধরে নেওয়া যেতে পারে, যা শুধুমাত্র শাকাহারের আগ্রহবশেই করা হয়েছে?
• উত্তর - যে সংস্কারে সামান্য য়োগসাধকের জন্য অহিংসাকে প্রথম সোপান বলা হয়েছে, যেখানে মন, বচন, কর্ম দ্বারা কোথাও এবং কখনও কোনো প্রাণীর প্রতি ঘৃণা ত্যাগ অর্থাৎ প্রীতির সন্দেশ দেওয়া হয়েছে, সেখানে সিদ্ধ পুরুষ য়োগীদের এবং সেই ক্রমে নিজের য়োগসাধনা দ্বারা ঈশ্বর ও মন্ত্রের সাক্ষাৎকৃতধর্মা মহর্ষির, তাদের গ্রন্থের এবং বেদরূপ ঈশ্বরীয় গ্রন্থের দ্বারা হিংসার সন্দেশ দেওয়া মূর্খতা ও দুষ্টতা নয় তো কি? যে বিদ্বান বৈদিক অহিংসার স্বরূপ দেখতে চান, তিনি পতঞ্জল য়োগদর্শন ব্যাসভাষ্য স্বয়ং পড়ে দেখুক। এই ঐতরেয় ব্রাহ্মণে যেখানে প্রায়ঃ সকল ভাষ্যকারই পশুর নৃশংস বধ এবং তার অঙ্গকে ভক্ষণের বিধান করেছে, সেখানে আমি তার কেমন গূঢ় বিজ্ঞান প্রকাশিত করেছি, তা পাঠক এই বেদ-বিজ্ঞান আলোক গ্রন্থের সম্পূর্ণ অধ্যয়ন দ্বারা জেনে যাবে।
আমার (আচার্য্য অগ্নিব্রত জীর) আধ্যাত্মিক ভাষ্য -
{মাম্সম্= মন্যতে জ্ঞায়তেঽনেন তত্ মাম্সম্ (উ০ কো০ ৩|৬৪), মাম্সম্ পুরীষম্ (শ০ ৮|৭|৪|১৯), পুরীষম্= পুরীষম্ পৃণাতেঃ পূরয়তের্বা - নি০ ২|২২; সর্বত্রাঽভিব্যাপ্তম্ - ম০দ০য়০ভা০ ৩৮|২১; য়ত্ পুরীষম্ স ইন্দ্রঃ - শ০ ১০|৪|১|৭; স এষ প্রাণ এব য়ত্ পুরীষম্ - শ০ ৮|৭|৩|৬)}।
পদার্থঃ (এতত্ বা স্বাদীয়ঃ) য়োগী পুরুষের নিকট পরমাত্মার আস্বাদনকারক এই পদার্থ বিদ্যমান থাকে, যারজন্য জীব পরমাত্মার সঙ্গে সায়ুজ্য থাকে, (য়দধিগবম্ ক্ষীরম্ বা মাম্সম্ বা) সে পদার্থটি য়োগীর মন আদি ইন্দ্রিয়ের মধ্যে প্রতিষ্ঠিত হয়। সে পদার্থটি কি, এর উত্তর হয় এই যে, সর্বত্র অভিব্যাপ্ত পরমৈশ্বর্য় সম্পন্ন ইন্দ্ররূপে পরমাত্মা হতে ঝরতে থাকা "ওম্" বা গায়ত্রী আদি বেদের ঋচাগুলোই হল সেই পদার্থ, যা য়োগীর ইন্দ্রিয় ও অন্তঃকরণে নিরন্তর স্রবিত হতে থাকে। য়োগী সেই আনন্দময়ী ঋচাগুলোর রসাস্বাদন করতে থাকে, তখন সে পরমানন্দের অনুভব করতে থাকে। (তদেব ন অশ্নীয়াত্) য়োগী সেই ঋচার আনন্দকে ততক্ষন পর্যন্ত অনুভব করতে পারে না, যতক্ষণ পর্যন্ত অতিথিরূপ প্রাণ তত্ব, যা য়োগীর মস্তিষ্ক ও শরীরে সতত সঞ্চারিত হয়, সেই ঋচার সঙ্গে সঙ্গত না হয়। এখানে অতিথি হতে পূর্বের প্রকরণ পূর্ববত্ বুঝে নিবেন।
ভাবার্থ - যখন কোনো য়োগী য়োগসাধনা করে আর এতদর্থ প্রণব বা গায়ত্রী আদির নিরন্তর জপ করে, তখন সর্বত্র অভিব্যাপ্ত পরমৈশ্বর্য়বান্ ইন্দ্ররূপ ঈশ্বর হতে নিরন্তর প্রবাহিত "ওম্" রশ্মির সেই য়োগীর অন্তঃকরণ তথা প্রাণের ভিতর স্রবিত হতে থাকে। এরফলে সেই য়োগী ঐ রশ্মির রসস্বাদন করার সঙ্গে আনন্দে নিমগ্ন হয়ে যায়।
(বেদবিজ্ঞান - আলোকঃ পূর্ব পীঠিকা হতে উদ্ধৃত)
আমি এখানে বেদেরই দুই বচনকে উদ্ধৃত করছি -
আশ্বাঃ কণাঃ গাবস্তণ্ডুলাঃ।
(অথর্ববেদ ১১|৩|৫)
শ্যামময়োঽস্য মাম্সানি লোহিতমস্য লোহিতম্।।
(অথর্ববেদ ১১|৩|৭)
এর সোজা অনুবাদ হবে যে, কণাই হল অশ্ব আর গৌ হল চাল। চালের শ্যাম ভাগই হল মাংস, যেটা লাল অংশ আছে, সেটাই হল হল রক্ত। এখন ফারুক জী! বলুন, এরকম অশ্ব ও গৌয়ের ভক্ষণকে আমরা বিরোধ কোথায় করবো? বস্তুতঃ এটির অর্থ তা নয়, যা এখানে অনুবাদে দর্শানো হয়েছে, বরং এরও তিন প্রকারের গম্ভীর অর্থ করা যেতে পারে, যেমনটা আমি পূর্ব মন্ত্রে দর্শীয়েছি। বিস্তারভয়ের জন্য আমি এখানে তা করছি না।
এখন আপনি বোঝা উচিত যে বেদে রূঢ় অর্থ হয় না বরং শব্দের যথাপ্রসঙ্গ যৌগিক ও য়োগরূপ অর্থ হয়ে থাকে। দেখুন, যে অথর্ববেদে আপনি গোমাংস খাওয়া ও পরিবেশনের কথা বলেছেন, সেই অথর্ববেদ বলছে -
য়দি নো গাম্ হম্সি য়দ্যশ্বম্ য়দি পুরুষম্।
তম্ ত্বাম্ সীসেন বিধ্যামো।
(অথর্ববেদ ১|১৬|৪)
অর্থাৎ - তুমি যদি আমাদের গাভী, ঘোড়া বা মনুষ্যকে মারো, তবে আমি তোমাকে সীসে দিয়ে ছেদ করে দিবো।
মা নো হিম্সিষ্ট দ্বিপদো মা চতুষ্পদ দঃ।
(অথর্ববেদ ১১|২|১)
অর্থাৎ - আমাদের মনুষ্য আর পশুদের নষ্ট করো না।
এখন অন্যত্র বেদে দেখুন -
ইমম্ মা হিম্সীর্দ্বিপাদ পশুম্।
(যজুর্বেদ ১৩|৪৭)
অর্থাৎ - এই দুই খুরওয়ালা পশুর হিংসা করো না।
ইমম্ মা হিম্সীরেকশফম্ পশুম্।
(যজুর্বেদ ১৩|৪৮)
অর্থাৎ - এই এক খুরওয়ালা পশুর হিংসা করো না।
য়জমানস্য পশুন্ পাহি।
(যজুর্বেদ ১|১)
অর্থাৎ - য়জমান পশুদের রক্ষা করো।
এখন আপনি বলতে পারেন য়জমান বা কোনো মনুষ্য বিশেষের পালিত পশুর হবে না কি সকল প্রাণীদের। এই ভ্রমের নিবারণার্থ অন্য প্রমাণ -
মিত্রস্যাহম্ চক্ষুষা সর্বাণি ভূতানি সমীক্ষে।-(যজুর্বেদ ৩৬|১৮)
অর্থাৎ - আমি সকল প্রাণীদের মিত্রের দৃষ্টিতে দেখি।
মা হিম্সী স্তন্বা প্রজাঃ।-(যজুর্বেদ ১২|৩২)
অর্থাৎ - এই শরীর দ্বারা প্রাণীদের মেরো না।
মা স্ত্রেত-(ঋগ্বেদ ৭|৩২|৯)
অর্থাৎ - হিংসা করো না।
বন্ধুবর! আপনিও কি বেদে হিংসার প্রমাণ দিবেন? আপনি ছল করায় বড় নিপুণ, এটা স্থানে স্থানে প্রতিত হচ্ছে। আপনি "অঘ্ন্যা" শব্দের উপর চর্চা করে লিখেছেন যে এটা কোনো গাভী বিশেষের জন্য, না কি সমস্ত গৌ জাতীর জন্য। এরজন্য ঋগ্বেদের এক মন্ত্রার্থকে উদ্ধৃত করেন, ছলের মহারথের প্রমাণ। "অঘ্ন্যা" শব্দটি হল যজুর্বেদ (১|১) মন্ত্রে, একে জুড়ে দিলেন ঋগ্বেদের একটার সঙ্গে। হল না কোথাকার ইট, কোথাকার রোড়া - যে ঋক্ মন্ত্রার্থের ঠিকানা (১|১৪৬|২৭) দিয়েছেন। আমি চ্যালেঞ্জ করছি বিশ্বের যেকোনো গ্রন্থালয়ে এই স্থানের মন্ত্র দেখান। আপনার জানা উচিত যে (ঋগ্বেদ ১|১৪৬) তে মোট ৫টি মন্ত্রই আছে, তাহলে ২৭তম কথা থেকে এলো? তাহলে এই নকলের তীরও ব্যর্থ গেলো। আপনি (ঋগ্বেদ ১০|৮৫) এর ৯৩ তম মন্ত্রে বিয়েতে মাংস পরিবেশনের বিবরণ লিখেছেন। এখানেও নকলে অসফল। এই সূক্তে মোট ৪৮টাই মন্ত্র রয়েছে, তাহলে ৯৩ তম মন্ত্র কোথা থেকে আনলেন? এই ৪৮ টি মন্ত্রতেও কোথাও মাংস পরিবেশনের চর্চা নেই। তবে হ্যাঁ, গোভক্ষকদের তথা এমন অনর্থ কারীদের কড়া থাপ্পড় অবশ্য লাগিয়েছে। যেখানে "ঋক্" আর "সাম্" রূপী বেদের ঋচাদের গৌ বলেছে, তাহলে খান এই গৌদের, কল্যাণ হয়ে যাবে, জীবন ধন্য হয়ে যাবে। যখন ঋগ্বেদ ও সামবেদের পবিত্র ঋচার পান করবেন, তখন তো গোমাংস পরিবেশন করা সারা জীবনের জন্য ভুলে যাবেন। আপনি যে (ঋগ্বেদ ১০|৮৫|১৩) এর কথা বলছেন, এর দেবতা হল সূর্য বিবাহ অর্থাৎ অলঙ্কারিক রূপে ঊষার বিবাহ, যেখানে "গাবঃ" এর অর্থ সূর্যের কিরণ হবে, না কি গাভী। ঊষা কাল ও সূর্যের সঙ্গে গাভীর কি সম্বন্ধ? এই কিরণ মাঘ মাসে মরে যায় অর্থাৎ আবছা হয়ে যায়, এই হল তার তাৎপর্য। যদি একে বধূ অর্থ মানা হয়, তবে "হন্" ধাতুর অর্থ মানা নয় বরং প্রাপ্ত করা হবে। দুঃখের বিষয় এটা যে, মাংসভোগী ক্রুরতা পছন্দ লোকেরা "হন্" এর অর্থ মারা-কেই নেয়, কিন্তু অন্যদিকে এটা ধাতু "প্রাপ্ত করার" অর্থেই প্রযুক্ত হচ্ছে। যদি আপনি হন্ এর অর্থ মারাই সর্বত্র করেন, তবে -
য়থাঙ্গা বর্ধতা শেপস্তেন য়োষিতামিজ্জহি।
(অথর্ববেদ ৬|১০১|১)
এর অর্থ আপনি এটা করবেন যে হে পতি! তুমি বীর্য সম্পন্ন হয়ে নিজের পত্নীকে মেরে ফেল, তখন নিশ্চয়ই এটা মূর্খতার প্রমাণ হবে। তখন "জহি" -র অর্থ "জা" এমনটাই করতে হবে অর্থাৎ পত্নীর নিকট যাও। এই অর্থ সুসঙ্গত হবে। প্রায়ঃ বিদ্বান "গোঘ্ন" শব্দকে পাণিনি অষ্টকের প্রমাণের সঙ্গে সম্প্রদানে প্রয়োগ করে, যে অতিথির জন্য গাভী মারা যাবে, তাকে গোঘ্ন বলে দেয়। এখানেও তাদের হন্ এর অর্থ কেবল মারাই মাথায় আসে। কি করবে, বেচারা জিভ ও মজহব উভয়েরই দাস। আমি জিজ্ঞেস করছি যে, গোঘ্ন শব্দের সঙ্গে অনুরূপ শব্দ হস্তঘ্নও রয়েছে, যা হাতের দস্তানার (Gloves) জন্য প্রযুক্ত হয়, তাহলে হস্তঘ্ন এর অর্থ মিথ্যা হল, তখন এখানে হন্ এর অর্থ "প্রাপ্ত করা"ই নিতে হবে। এইজন্য বেদের অর্থ প্রকরণানুকূল তথা বেদের মূল ভাবনাকে ধ্যানে রেখেই নেওয়া যোগ্য হবে, না কি নিজের-নিজের রূচি ও মতির অনুসারে। বেদে "গোঘ্ন" শব্দ গোঘাতকের জন্যই এসেছে, সেখানে সেই গোঘ্ন হতে দূরে থাকারই উপদেশ রয়েছে, না কি তাকে অতিথি বলা হয়েছে।
আচার্য অগ্নিব্রত জী -
ঋগ্বেদ ১|১১৪|১০ বলছে -
আরে তে গোঘ্নমুত পুরূষঘ্নম্।
অর্থাৎ- গোঘাতক ও নরঘাতক তোমার থেকে দূরে থাকুক।
আমরা আর্যগণ বেদকেই স্বতঃ এবং পরম প্রমাণ মানি, অন্য গ্রন্থের মধ্যে ব্রাহ্মণগ্রন্থ, মনুস্মৃতি, দর্শনশাস্ত্র, উপনিষদ, রামায়ণ, মহাভারত, ঋগ্বেদাদিভাষ্যভূমিকা ও সত্যার্থ প্রকাশ আদিকে পরতঃ প্রমাণ মানি। বেদে হিংসার আপনার আক্ষেপের উত্তর আমি দিয়েছি, এখন অন্য প্রমাণ আমাদের মান্য নয়। আমাদের দৃঢ় মান্যতা হল যে, বেদ সংহিতাগুলোর ভাষ্যে অনেক ভাষ্যকার মিথ্যা অর্থ করেছে, অন্যদিকে অন্য পরতঃ প্রামাণিক গ্রন্থে কোথাও অনর্থ রয়েছে, আবার কোথাও প্রক্ষেপ। অনর্থকে শুদ্ধ করার পরেও কোথাও-কোথাও মাংসাহার সমর্থক প্রকরণ রয়ে যায়, যা বেদ বিরুদ্ধ হওয়ায় অমান্য, তাকে সরানোর জন্য সাহসিক কার্য মহর্ষি দয়ানন্দ সরস্বতী এবং তার অনুযায়ী আর্য বিদ্বানগণ করেছে ও করেও চলেছে। ১৮টি প্রচলিত পুরাণগুলোকে আমরা অপ্রমাণিত মানি, যার ওকালতি করা আমি না তো স্বীকার করি আর না আবশ্যক মনে করি। এই গ্রন্থগুলো হল মধ্যকালীন পণ্ডিতদের রচনা। এমনও স্পষ্ট আছে যে কোনো পুরাণ একই ব্যক্তির রচনা নয়। সময়ে-সময়ে জোড়-তোড় চলতে থাকে তথা চতুরাই পূর্বক সেটা ভগবান্ বেদব্যাস জী দ্বারা রচিত সিদ্ধ করার চেষ্টা করা হয়েছে ও করা হচ্ছে। এই কুগ্রন্থগুলো (যদিও এরমধ্যে অনেক কথাই অতি উপযোগী ও সত্যও রয়েছে) -কে প্রমাণ মেনে বুকে জড়িয়ে রাখা, হিন্দুদের দুর্ভাগ্য। এখন একটু ব্রাহ্মণ গ্রন্থে মাংসাদি স্বরূপের উপর দৃষ্টি দিন-
য়দা পিষ্টান্যথ লোমানি ভবন্তি।
য়দাপ আনয়তি অথ ত্বগ্ভবতি।
য়দা স য়ৌত্য থ মাম্সম্ ভবতি।
(বৈদিক সম্পত্তি হতে উদ্ধৃত পৃষ্ঠ ৫২৭)
অর্থাৎ - আটার সংজ্ঞা হল লোম, জল মেশানো আটার চর্ম তথা বেলে রাখা আটার সংজ্ঞাই হল মাংস।
এখন আপনিই ভাবুন যে আমরা এইরকম মাংস ভক্ষণের বিরোধও কোথায় করতে পারি? এই প্রকারের বিবরণ ঐত্রেয় ব্রাহ্মণেও পাওয়া যায় -
তস্য য়ানি কিম্শারূপি তানি রোমাণি,
য়ে তুষাঃ সা ত্বগ্যে ফলীকরণাস্তদসৃগ্যত্পিষ্টম্
কিক্নসাস্তন্মাম্সম্ য়ত্কিম্চিত্কম্ সারম্ তদস্থি।।
ইত্তি।
এটির ভাষ্য আচার্য সায়ণ এই প্রকার করেছেন -
তস্য ব্রীহিবীজস্য সম্বন্ধীনি য়ানি কিম্শারূণি
বুসপলালাদীনি তানি পশুরোমস্থানীয়ানি য়ে তুষাস্তণ্ডুলবেষ্টনরূপাঃ প্রথমাবঘাতেন পরিত্যাজ্যাঃ সা
তুষসমষ্টিঃ পশুত্বক্স্থানীয়া, য়ে
ফলীকরণাস্তণ্ডুলশ্বৈত্যার্থেনাবঘাতেন হেয়া
অম্শাস্তত্সর্বমসৃক্পশুরক্তস্থানীয়ম্।
য়ত্পিষ্টম্ তণ্ডুলপেষণেন নিষ্পন্নম্ পিণ্ডয়োগ্যম্ রূপম্
য়ে চ কিক্নসাঃ সূক্ষ্মাঃ পিষ্টাবয়বাস্তত্সর্বম্
পশুমাম্সস্থানীয়ম্। য়ত্কিম্চিকম্ সারম্ স্বার্থে
কপ্রত্যয়ঃ কিম্চিদন্যদ্ব্রীহিসম্বন্ধিকাঠিন্যরূপম্ সারম্
তদস্থি তত্পশোরস্থিস্থানীয়ম্। এবম্ পশুসাভ্যাত্
পুরোডাশস্য উস পশুত্বম্।।
ডা০ সুধাকর মালবীয়ার হিন্দি অনুবাদ -
সেই ব্রীহির যে (কিম্শারূ অর্থাৎ) ভূঁসী রয়েছে সেটা পশুর লোমের স্থানীয়। যে তুষ (প্রথম অবঘাত দ্বারা বের হওয়া চালের বেষ্টন রূপ ভূঁসী) রয়েছে তা পশুর ত্বচা স্থানীয়, যে ফলীকরণ (তণ্ডুলকে শ্বেত করার জন্য যে অবঘাত দ্বারা বের হওয়া হেয়াংশ) রয়েছে, সেটা পশুর রূধির স্থানীয়। যা পিসা অবয়ব আর কিনকী রয়েছে সেটায় পশুর মাংস স্থানীয় রয়েছে আর যা কিছু অবশিষ্ট ব্রীহির কঠিন ভাগ রয়েছে সেটা হল পশুর অস্তি রূপ।
যদিও তাঁর ভাষ্য প্রমাণিক নয় তবুও এখানে ইনিও মাংসপরক অর্থ করেননি।
এটির উপর আমার (আচার্য অগ্নিব্রত জীর) ভাষ্য -
{কিম্শারূঃ= কিম্ শৃণাত্যনেনেতি কিম্শারূঃ (উ০কো০ ১|৪)। রোমাণি= লোমাণি (ম০দ০ঋ০ভা০ ১|১৩৫|৬), (লোম= লূয়তে ছিদ্যতে তত্ লোম - উ০কো০ ৪|১৫|২; ছন্দাম্সি বৈ লোমানি - শ০ ৬|৪|১|৬)। কিক্নসাঃ= সূক্ষ্মাঃ (আচার্য সায়ণ ভাষ্য)। মাম্সম্= মনোঽস্মিন্ সীদতীতি বা (নি০ ৪|৩), মাম্সম্ বৈ পুরীষম্ (শ০ ৮|৬|২|১৪), মাম্সম্ সাদনম্ (শ০ ৮|১|৪|৫)। রোম= রৌতি শব্দয়তীতি রোম (উ০কো০ ৪|১৫২)}
সেই পদার্থে বিদ্যমান {কিম্শারূঃ= কিম্ কিম্চিত্ কুত্সিতম্ বা শৃণাতীতি (ইতি মে মতম্)} শক্তিমান আর তেজস্বী বিকিরণের মধ্য হতে যা তীব্র ভেদকক্ষমতাসম্পন্ন হয়ে থাকে, তাকেই কিম্শারূ বলা হয়। এইজন্য নিঘণ্টুকার বলেছে "কুত্সঃ বজ্রনাম" - নিঘ০ ২|২০। এরকম তীব্র বিকিরণ বিবিধ ধ্বনি উৎপন্ন করতে থাকে আর এই বিকিরণ ছন্দ রশ্মির রূপে হয়। এই রশ্মি বিভিন্ন পদার্থকে তীব্রতার সঙ্গে কাটতে থাকে আর যে অপ্রকাশিত বাধক পদার্থ আকাশ তত্ত্বে মিলে তীক্ষ্ণতারহিত হয়ে পরিতৃপ্তের মতো হয়ে যায়, সেটি সব প্রকারের কণার ত্বচার তুল্য হয়ে যায় অর্থাৎ সেটি সব কণাকে আচ্ছাদিত করে রাখে। হ্যাঁ, এটা অবশ্যই আছে যে, সেই আচ্ছাদিত কারক অপ্রকাশিত বাধক পদার্থ ওই কণাগুলোকে আচ্ছাদিত করেও কোনো প্রকার সংযোগ প্রক্রিয়ায় বাধক হয় না। এইসব প্রক্রিয়ায় যে তত্ব ছেদন-ভেদন ও সংযোজনের মূল প্রবর্তক রয়েছে, সেটা মন আর বাক্ -এর মিথুন এইসব তত্বের অপেক্ষায় অসৃজিতই বলা হয়। এই তত্বের মিথুন অন্য সৃজিত তত্বের অপেক্ষায় পূর্ণ হয়ে থাকে আর সেই পূর্ণ তত্ব এইসব তত্বের নির্মাণ আর বিনাশের প্রক্রিয়ায় সর্বশক্তিমতী চেতন সত্তার মূল প্রেরণা দ্বারা চলতে থাকে। এই তত্ত্বের মধ্যে যা যত সূক্ষ্ম হয়, তা ততই মন আর বাক্ -এর মিথুন হতে সংসিক্ত হয়ে থাকে, যার কারণে তা ততই বলশালী হয়ে থাকে। সে সূক্ষ্ম পদার্থই হল নিজের থেকে স্থূল পদার্থের আঁধার আর নিবাস স্থান রূপ। সকল স্থূল পদার্থের মধ্যে সেই সূক্ষ্ম পদার্থেরই বল কার্য করে আর সেই পদার্থের মধ্যে যে সারভূত তত্ব রয়েছে, সেটা হল অস্থি রূপ। এখানে "সারম্" শব্দ "সৃ গতৌ" ধাতু হতে নিষ্পন্ন। এর আশয় হল যে, সেই সূক্ষ্ম পদার্থ পূর্ব পদার্থ থেকেও অধিক শক্তিশালী হয়ে থাকে, যা সকল পদার্থকে নিজের বল দ্বারা ধারণ করে রাখে। এই পদার্থ বিভিন্ন পদার্থকে এদিক-ওদিক প্রক্ষিপ্ত করতেও সমর্থ। আমাদের মতে এই পদার্থ মন আর বাক্ তত্ব দ্বারাই নির্মিত।।
এখন দেখুন, বেদাদিশাস্ত্রে মাংসাহারের ভ্রান্তি কিভাবে হয়, যারা বেদাদিশাস্ত্রের বিজ্ঞানকে জানে না, তারা "মাংস" শব্দ আসলেই যেন মাংসাহারের প্রমাণপত্র পেয়ে গেছে এরকমটা ভাবে, যদিও এই স্থানগুলোতে রূঢ়ার্থ দ্বারাও মাংসাহারের সিদ্ধি হয় না।
এছাড়া ঐতরেয় ব্রাহ্মণের আমি যা বৈজ্ঞানিক ভাষ্য করেছি, এই ভাষ্য "বেদবিজ্ঞান-আলোকঃ" নামক চার ভাগে মোট ২৮০০ পৃষ্ঠার বিশাল গ্রন্থ রূপে আছে। এই গ্রন্থের বৈজ্ঞানিক ভাষ্য বিশ্বে প্রথমবার আমিই করেছি। এই গ্রন্থ বর্তমান বিশ্বের মহান্ বৌদ্ধিক সম্পদার রূপ মানা যেতে পারে। যা থেকে অপ্রত্যাশিত ও গম্ভীর বৈজ্ঞানিক তথ্য প্রকট হচ্ছে। যে স্থানগুলোতে এখন পর্যন্ত আর্য সমাজেত্তর ভাষ্যকারদের হিংসা, মাংসাহার দেখা যেত তথা আর্য বিদ্বানদেরও সামান্য স্তরের কথাই দেখেছে, সেখানে আমি সেই সব প্রকরণের মধ্যে এস্ট্রোফিজিক্স, কোস্মোলজি, পরমাণু, নাভিকীয় ও কণ ভৌতিকীর অনেক গূঢ় তথা বর্তমান বিজ্ঞান দ্বারাও অবিজ্ঞাত রহস্য খুঁজেছি। যেদিন আমার বেদবিজ্ঞান-আলোকঃ গ্রন্থের বিজ্ঞানের বিশ্বের মধ্যে ব্যাপক প্রচার হবে, সেইদিন সম্পূর্ণ বিশ্বে ভৌতিক বিজ্ঞানে এক নূতন ও অভূতপূর্ব ক্রান্তি এসে বেদের ও ঋষিদের সম্পূর্ণ ভূতলের উপর প্রতিষ্ঠা হবে, এমনটা আমার বিশ্বাস। শ্রী ফারুক সাহেবের মতো মোটা মাথাওয়ালা মাংসভোজী কি জানবে, সেই দিব্য বৈদিক ও বিজ্ঞানকে? তাকে তো বেদভক্ত হিন্দুই বুঝতে পারছে না।
আপনি মহাভারতের কিছু প্রমাণ দিয়েছেন। আমি পুনঃ নিবেদন করছি যে, বেদেতর প্রায় সকল গ্রন্থ প্রক্ষেপকর্থা ধূর্তদের ধূর্ততার শিকার হয়ে এসেছে। মহাশয় জী! মহাভারতে প্রায় ৯৫ শতাংশ প্রক্ষেপ রয়েছে, তাহলে যদি সেখানে হিংসা সমর্থক কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়, এতে আশ্চর্যের কি আছে? আমি মহাভারতের কিছু প্রমাণ দিচ্ছি, দেখুন -
য়ঃ স্যাদহিম্সাসম্পৃক্তঃ স ধর্ম ইতি নিশ্চয়।
(শান্তিপর্ব অ০ ১০০|১২)
অর্থাৎ - যেটা অহিংসায় যুক্ত হবে, সেটা নিশ্চয়ই ধর্ম হবে।
অহিম্সা সর্বভূতেস্যো ধর্মেভ্যো জ্যায়সীনতা।।
(শান্তিপর্ব অ০ ২৬৫|৬)
অর্থাৎ - সমস্ত প্রাণীদের জন্য অহিংসাই হল সবার বড়।
সুরা মত্স্যা মধু মাম্সমাসবম্ কৃষরৌদনম্।
ধূর্তঃ প্রবর্তিত হয়েতন্নৈতদ্ বেদেষু কল্পিতম্।
(শান্তিপর্ব অ০ ২৬৫|৯)
অহিংসা সকলো ধর্মঃ।
(শান্তিপর্ব অ০ ২৭২|২০)
অর্থাৎ - মদ্য, মাংস আদির যজ্ঞে আহুতি দেওয়াটা হল বেদ বিরুদ্ধ তথা এটা ধূর্তদের দ্বারা চালানো হয়েছে। অহিংসাই হল সম্পূর্ণ ধর্ম।
বীজৈর্য়জ্ঞেষু য়ষ্টব্যমিতি বৈ বৈদিকী শ্রুতিঃ।
অজ সম্জ্ঞানি বীজানি চ্ছাগ নো হন্ত্তমর্হথ।
নৈষ ধর্মঃ সতাম্ দেবা য়ত্র বধ্যেত বৈ পশুঃ।।
(শান্তিপর্ব অ০ ৩৩৭|৪,৫)
অর্থাৎ - যজ্ঞ বীজ (অন্ন আদি) দ্বারা করা উচিত, এটাই হল বৈদিক বিধান। এই বীজগুলোকে অজ বলা হয়। ছাগ (ছাগল) মারা উচিত নয়। যেখানে পশুবধ হবে, সেটা বিদ্বানদের ধর্ম নয়। মহাভারতে অনেকত্র অহিংসা পরমোধর্মের ঘোষণা রয়েছে। পিতামহ ভীষ্মের উপদেশের মধ্যে মাংসাহারের প্রচণ্ড নিন্দা বিস্তারে করা হয়েছে। এতেও যদি কেউ বিশ্বাস না করে, তবে মহাভারতের অনুশাসন পর্ব স্বয়ংই পড়ে নিবেন। তবুও যদি কেউ বেদ ও বৈদিক আর্যদের মধ্যে মাংসাহারের প্রমাণ খোঁজে, তাকে পাগলই বলা যেতে পারে।
হ্যাঁ, আমি মানছি যে, অনেক আর্ষ গ্রন্থে মাংসাহারী লোকেরা নিজের-নিজের দূষিত বিচার সময়ে-সময়ে এর মধ্যে প্রক্ষেপ করেছে, যাকে সাবধানী পূর্বক নিষ্পক্ষ দৃষ্টি দিয়ে বিচার করে বিদ্বানগণ দূর করতে পারে।
এখন আপনার কথন হল -
" স্বামী দয়ানন্দ বলেন যে, যেখানে গোমেধ আদি যজ্ঞ লেখা আছে, সেখানে পশুদের মধ্যে নর পশুদের মাংস লেখা আছে, কারণ হৃষ্টপুষ্ট ষাঁড় আদি হল নর পশু। এই প্রকারের যে গাভী হয় না, তাকেও গোমেধে মারা লেখা আছে।" (সত্যার্থ প্রকাশ পৃষ্ঠ ৩০৩ সন ১৮৭৫, দয়ানন্দ ভাব চিত্রাবলী পৃ০ ২৮)
সমীক্ষা - মনে হচ্ছে যে আপনি সত্যার্থ প্রকাশ পড়া তো দূর, দেখেন নি পর্যন্ত। আপনি দয়ানন্দ ভাব চিত্রাবলী দ্বারা উদাহরণ দেখেই লিখে দিয়েছেন। আজ সম্পূর্ণ আর্য জগতের মধ্যে যেখান থেকেই হোক সত্যার্থ প্রকাশ নিয়ে এসে পড়ে নিবেন, তারপর দোষারোপণ করবেন, তাহলেই উচিত হবে। হ্যাঁ,আমার এটা স্বীকার করতে কোনো সঙ্কোচ নেই যে, সত্যার্থ প্রকাশের প্রথম সংস্করণের মধ্যে মাংসাহার এবং শ্রাদ্ধ আদি অবৈদিক ও পাপপূর্ণ মান্যতা ধূর্ত লেখকরা লিখে দিয়ে ছিল। ঋষিবর স্বয়ং না লিখে, বলে লেখাতেন। অতি ব্যস্ততাবশ নিজের বিশ্বস্তোদের উপর কার্যভার ছেড়ে দেওয়ায় এরকম আপত্তিজনক কথা জুড়ে দেওয়া হয়েছিল, যাকে স্বয়ং ঋষি নিজের জীবনকালে বের করে দিয়ে দ্বিতীয় সংস্করণ তৈরি করেছিলেন। এই সংস্করণ ঋষির জীবনকালের পশ্চাৎই ছাপা হয়। প্রথম সংস্করণ রাজা জয়কৃষ্ণদাসের দেখাশোনাতেই হয়েছিল, যেখানে উপর্যুক্ত মিথ্যা কথা জুড়ে দেওয়া হয়েছিল। সঙ্গে ১৩ ও ১৪ সমুল্লাসও ছাপা হয়নি। এই সংস্করণের ভুলের বিষয়ে ঋষি বিক্রমী সম্বত্ ১৯৩৫ শে বিজ্ঞাপন ছাপিয়ে ছিলেন। একবার তাঁর ভক্ত ডা০ মুকন্দসিংহ, রইস, ছলেসর, অলীগড় নিবাসী এক পত্র দ্বারা নিবেদন করে -
"আমি পার্বণ শ্রাদ্ধ করতে চাই, এর জন্য পাঁঠাও তৈরি আছে। আপনিই এই শ্রাদ্ধটি করিয়ে দিন।"
এর উত্তরে মহর্ষি জী বনারস থেকে লিখেন -
"এই সংস্করণ রাজা জয়কৃষ্ণদাস দ্বারা মুদ্রিত হয়েছে। এখানে অনেকগুলো অশুদ্ধি রয়েগেছে। শাকে ১৭৯৬ তে আমি যে পঞ্চমহায়জ্ঞ বিধি প্রকাশিত করেছিলাম, যা রাজাজীর সত্যার্থ প্রকাশের এক বর্ষ পূর্বে ছাপা হয়েছিল, ওখানেই মৃতক শ্রাদ্ধ আদির খণ্ডন রয়েছে, তাহলে সত্যার্থ প্রকাশে মণ্ডন কিভাবে হতে পারে? অতএব শ্রাদ্ধ বিষয়ে, যে মৃতক শ্রাদ্ধ আর মাংস বিধানের বর্ণন রয়েছে, সেটা বেদ বিরুদ্ধ হওয়ায় ত্যাজ্য হবে।
যখন কোনো গ্রন্থের লেখক স্বয়ং নিজের গ্রন্থে থাকা ভুলের ও দুষ্টের তত্ব দ্বারা জেনেবুঝে করে থাকা মিশ্রণকে অমান্য ও আপত্তিজনক ঘোষণা করছেন, তারপরেও যদি কোনো ব্যক্তি সেই কথাগুলোকে ধরে এনে উদাহরণ দেয় ১২৫ বর্ষ পশ্চাৎও জারি রাখে, তখন তাকে কি বলা হবে, এটা আপনিই বিচার করে বলে দিবেন। বিজ্ঞ ও নিষ্পক্ষ পাঠক স্বয়ংই বিচার করে নিবে।
ফারুক জী! আপনি একবার নিজের মাংসাহার সমর্থক হঠকে ত্যাগ করে প্রাণীমাত্রের হিতৈষী মহান বৈদিক ধর্মের মহান সংশোধক ভগবান্ দয়ানন্দ জী মহারাজের হৃদয়ের ভাব তথা মহান মেধাবী মস্তিষ্ককে জানার চেষ্টা করুন। যে সত্যার্থ প্রকাশের উপর আপনি মিথ্যা আরোপ লাগিয়েছেন, সেই গ্রন্থ মাংসাহারের বিষয়ে কি বলে, একটু দেখুন -
১. “মদ্যমাংসাহারী ম্লেচ্ছ, যার শরীর মদ্যমাংসে পরমাণুর দ্বারাই পরিপূর্ণ, তার হাতে খাবে না।”
২. “এই পশুদের হত্যাকারীরা সব মানুষ্যের হত্যাকারী জানবে।”
৩. “যখন থেকে বিদেশী মাংসাহারী এই দেশে এসে গাভী আদি পশুদের হত্যাকারী মদ্যপায়ী রাজ্যাধিকারী হয়, তখন থেকে ক্রমশঃ আর্যদের দুঃখের সীমা বাড়তে থাকে।”
(সত্যার্থ প্রকাশ - দশম সমুল্লাস)
দেখুন দয়ার সাগর ঋষি দয়ানন্দ কি বলেছেন -
১. “পশুদের গলায় ছুরি দিয়ে কেটে, যারা নিজের পেট ভরে, তারা সারা বিশ্বের ক্ষতি করছে। বিশ্বের মধ্যে তাদের থেকেও অধিক কোনো বিশ্বাসঘাতক, অনুপকারী, দুঃখ দায়ী পাপীজন আর আছে কি?"
২. “হে মাংসাহারীরা ! যখন তোমরা কিছু সময় পশ্চাৎ পশু পাবে না, তখন মনুষ্যের মাংসকেও ছাড়বে কি?”
৩. “হে ধার্মিকগণ! আপনারা এই পশুদের রক্ষা তন, মন আর ধন দ্বারা কেন করেন না?”
(গোকরুণানিধি)
বন্ধুবর! বৈদিক ধর্ম কুরআনের মতো কেবল সম্প্রদায় বা ক্ষেত্র বিশেষেরই লাভের কথা বলে না, বরং প্রাণীমাত্রের কল্যাণেরই কামনা করে। দ্যুলোক, পৃথিবীলোক, মহাকাশ, জল, বায়ু, বনস্পতি, সকল প্রাণী আদির জন্য শান্তির প্রার্থনা করে। বিশ্বের কোনো মত মজহব এই ব্যাপকতা, সার্বকালিক্তার কথা বলে না, বরং কূয়োর ব্যাঙ হয়ে স্বার্থেরই কথা বলে। আমাদের এখানে বলিবৈশ্বদেব নামক এক মহাযজ্ঞ সনাতন থেকে প্রচলিত আছে, যেখানে কীট, পক্ষী, পশু, ক্ষুধার্ত রোগী, অসহায় মনুষ্য, কুকুর, কাক, গাভী আদির জন্য প্রতিদিন ভোজন দেওয়ার বিধান রয়েছে আর এমনটা কর্মের কর্তা আর্য জাতি কিভাবে নিজের স্বাদের রূচির জন্য কোনো প্রাণীর গলা কাটার পাপ করতে পারে? হ্যাঁ, এই সর্ব কল্যাণকারী ধর্মে ধূর্ত লোকেরা সময়ে-সময়ে দূষিত কথা মিশ্রণ করেছে, তাকে দূর করার চেষ্টা সর্বপ্রথম ঋষি দয়ানন্দ সরস্বতী জী করেছিলেন, তাঁরই কৃপায় আর্য সমাজ এই পুনীত কার্য করছে। বৈদিক ধর্ম বলে যে, সকল প্রাণীর মধ্যে আমাদের মতো জীবাত্মার নিবাস রয়েছে। সকলের আমাদের মতোই সুখ দুঃখ হয়। সব প্রাণী পরমাত্মার সন্তান হওয়ায় সকলে ভাই ভাই। যখন আমাদের গায়ে কোনো কাঁটাও হানে তখন লাফিয়ে উঠি, একটু ভাবুন! যখন আপনি কোনো পশুকে কাটছেন, তখন তার কতই না পীড়া হবে? বেচারা বিবশ হয়ে চটপট - চিৎকার করে প্রাণ ছেড়ে দেয় আর তাকে পাপী জন নিজের পেট ভরায়, যেমন - কুকুর, বিড়াল ও শেয়াল মৃত পশুকে চেটে ফেলে। একবার ভাবুন যে, কোন মাতা-পিতা হবে, যে নিজের বুদ্ধিমান সন্তানকে নির্দেশ দিবে যে তুমি নিজের মূর্খ ভাইদের মেরে খেয়ে ফেল আর এরকম কুকর্ম দেখে কোন মাতা-পিতা প্রসন্ন হবে? এরকম কখনও সম্ভব নয়, তাহলে যিনি সকলের মাতা-পিতা পরমেশ্বর হয়, তবে তিনি কিভাবে মাংসাহারীদের কুকর্ম দেখে প্রসন্ন হতে পারেন? হ্যাঁ, তিনি সেই পাপীদের পাপের শাস্তি অবশ্যই দিবেন। আশা করি আপনি ভাববেন যে, রহীম আল্লাহ সেই পশুদের জন্যও রহীম আছে, যাকে আপনি মেরে খাচ্ছেন। যদি বলেন যে, তারা তো একদিন এমনিতেই মরবে, তাহলে আমি বলবো, আপনি কি অমর? যদি না, তবে আপনি কি চাইবেন যে কেউ আপনাকে মেরে খাক, যদি না চান তবে পশুদের কেন মারবেন? রহীমের ভক্ত স্বয়ং রহীম হন, তবেই ইবাদত সফল হবে।
No comments:
Post a Comment
ধন্যবাদ