বোপদেব ও জয়দেব - ধর্ম্মতত্ত্ব

ধর্ম্মতত্ত্ব

ধর্ম বিষয়ে জ্ঞান, ধর্ম গ্রন্থ কি , হিন্দু মুসলমান সম্প্রদায়, ইসলাম খ্রীষ্ট মত বিষয়ে তত্ত্ব ও সনাতন ধর্ম নিয়ে আলোচনা

धर्म मानव मात्र का एक है, मानवों के धर्म अलग अलग नहीं होते-Theology

সাম্প্রতিক প্রবন্ধ

Post Top Ad

স্বাগতম

16 October, 2020

বোপদেব ও জয়দেব

                                            দেবী ভাগবতের টীকাকার গীত গোবিন্দের রচয়িতা জয়দেব গোস্বামীর ভ্রাতা "মুগ্ধবোধ"- লৌকিক ব্যাকরণ প্রণেতা বোপদেব গোস্বামীর দ্বারা রচিত। দাদা জয়দেব গোস্বামীকে গীতগোবিন্দ রচনা করতে দেখে, নিজে ব্যাকরণ বিদ্ হয়ে ও ব্যাকরণ হীনঅযোক্তিক অবৈজ্ঞানিক কল্পনা প্রসূত ভাগবত রচনা করেন।                                            

ধর্ম্মশাস্ত্র বিষয়ক গ্রন্থকার হেমাদ্রি যাদব বংশীয় মহাদেব ও রামচন্দ্র রাওয়ের সময়কার ব্যাক্তি। ১৭৭১ খৃষ্টাব্দে দেবগিরি রাজা (বর্তমান নাম দৌলতাবাদ) রামচন্দ্রনের তিনি চিফ্ সেক্রেটারী ছিলেন। অনেকে তাকে মন্ত্রী ও বলেছে।

তিনি ব্রহ্মখন্ড নামক গ্রন্থের রচয়িতা। হেমাদ্রী বৎসগোত্রীয় দ্বিজ ছিলেন, পিতার নাম কামদেব,পিতামহের নাম বাসুদেব ও প্রপিতামহের নাম বামন। বোপদেব ১১৮২ শকে জন্মগ্রহণ করেন।

বোপদেব গোস্বামী কেশব কবিরাজের পুত্র এবং ধনেশ নামক পন্ডিতের শিষ্য। তাঁহার পিতা ও গুরু বিদর্ভদেশের অন্তর্গত বরদা নদীর তটে সার্থ নামক গ্রামে বাস করিতেন। অনেকে বোপদেব কে বঙ্গীয়

বৈদ্যবংশজাত বলিয়া অনুমান করিয়া থাকেন। আবার ওনাকে মহারাষ্টীয় ব্রাহ্মণ ও বলে। {শ্রী শ্রী বৈষ্ণব ইতিহাস - হরিলাল চট্টোপাধ্যায়-ষষ্ঠষ অধ্যায়}

বোপদেব 'মুক্তাফল' নামক বৈষ্ণবমত প্রতিপাদক গ্রন্থের রচনা করেছিলেন, উক্ত গ্রন্থে হেমাদ্রি এক খানি টীকা রচনা করেছিলেন। হেমাদ্রীর অধীনতায় যে বহু সংখ্যক পন্ডিত ছিলেন,

বোপদেব তাঁহাদের মধ্যে অন্যতম। বোপ দেব 'মুগ্ধবোধ' নামে আরো এক খানি হরিলীলা নামক গ্রন্থ রচনা করিয়াছিলেন। আয়র্ব্বেদ সম্বন্ধেও তাঁহার কয়েকখানি গ্রন্থ এদেশে প্রচলিত আছে।

'মুক্তাফল' নামক পুস্তকের টীকায় হেমাদ্রী ভাগবতের তিনটী প্রবন্ধের উল্লেখ করেছিলেন..." যাঁহার ব্যাকরনে কীর্ত্তি অদ্ভত,ব্যাকরণ বিষয়ে যাঁহার দশটী প্রবন্ধ, বেদ গ্রন্থের উপর নয়টী প্রবন্ধ,

কর্ম্মশাস্ত্র-বিষয়ে 'তিথি নির্নয়' নামক একখানি গ্রন্থ,সাহিত্য সম্বন্ধে তিনখানি গ্রন্থ,ভাগবতের তিনটী প্রবন্ধ আছে,সেই অন্তর্কাশী "কোবিদ-গর্ব্ব-পর্ব্বতঃ" মহামহোপাধ্যায় বোপদেবের কোন্ কোন্ গুণ না অলৌকিক..?"

(বিশ্বকোষ, চতুর্দশ খন্ড, পৃঃ ৪১৬) 

সেই সময় বোপদেব,হিমাদ্রির কথামত সংক্ষেপে ভাগবত রচনা করে তাঁকে শোনায়। নগের সরকার দ্বারা রচিত বাংলা বিশ্বকোষ ও সুবল মিত্রের বাংলা অভিধানে ও এই ঘটনার প্রমাণ দেওয়া আছে। সুতরাং প্রমাণ হয় ভাগবত ব্যাসদেব কৃত নয় বরং ইহা বোপদেব গোস্বামী দ্বারাই রচিত,এবং বয়সেও নবীন। ভাগবতে যে কৃষ্ণলীলার কথা আছে, সে কথা মহাভারতে কোথাও নেই। বরং ভাগবতে কৃষ্ণের যে লীলাখেলা লেখা আছে সেটা, কৃষ্ণের অবমাননা ছাড়া আর কিছু নয় এবং ভাগবতে রাধা নামের কোন কথাই নেই। অথচ বৈষ্ণবরা শ্রীকৃষ্ণের পাশে রাধাকে বসিয়ে পূজা কীর্তন করে চলছে,যা অসত্য, কোন ভারতীয়ের পক্ষে যা করা অকল্পনীয়। বাস্তবে রাধা হল রায়াণের স্ত্রী, (অনেকে আয়ান ও বলেন) সম্পর্কে কৃষ্ণের মামীমা হয়। আমরা জানি "মা" ডাকতে একটি শব্দ ব্যবহার হয়। কিন্তু মামীমা ডাকতে দুটি 'মা' ব্যবহার হয়। মামীর সহিত মা যুক্ত করলে মামী ও মা হয়। অর্থাৎ মায়ের সমান বা তারও অধিক। অথচ লজ্জার ও দুক্ষের বিষয় এই যে, বৈষ্ণব ভক্ত রা সেই মায়ের অধিক মামীমা কে কৃষ্ণের প্রেমিকা দাঁড় করিয়ে রসাল গল্প তৈরী করে, সনাতনের শেষ করে ছাড়ছে।

জয়দেব গোস্বামী  ছিলেন লক্ষ্মণ সেনের (১১৭৮-১২০৬) রাজসভার পঞ্চরত্নের অন্যতম; অন্য চারজন হলেন- গোবর্ধন আচার্য, শরণ, ধোয়ী ও উমাপতি ধর।

জয়দেবের বিখ্যাত রচনা গীতগোবিন্দম্। এটি একটি  সংস্কৃত গীতিকাব্য। রাধাকৃষ্ণের প্রেমলীলা এর মুখ্য বিষয়। ২৮৬টি শ্লোক এবং ২৪টি গীতের সমন্বয়ে ১২ সর্গে এটি রচিত।

 বর্ণিত বিষয়ের তত্ত্বনির্দেশক বারোটি ভিন্ন ভিন্ন নামে সর্গগুলির নামকরণ করা হয়েছে, যথা, সামোদ-দামোদর, অক্লেশ-কেশব, মুগ্ধ-মধুসূদন, স্নিগ্ধ-মধুসূদন, সাকাঙ্ক্ষ-পুণ্ডরীকাক্ষ, ধৃষ্ট-বৈকুণ্ঠ, নাগর-নারায়ণ, বিলক্ষ-লক্ষ্মীপতি, মুগ্ধ-মুকুন্দ, মুগ্ধ-মাধব, সানন্দ-গোবিন্দ এবং সুপ্রীত-পীতাম্বর। কাব্যের নায়ক ও নায়িকা রাধা ও কৃষ্ণ হলেও তাঁদের প্রতীকে জীবাত্মা ও পরমাত্মার সম্পর্ক এবং নরনারীর চিরন্তন প্রেমই এর মূল বক্তব্য। রাগমূলক গীতসমূহ এ কাব্যের শ্রেষ্ঠ সম্পদ। পরবর্তীকালের বাংলা পদাবলি সাহিত্যে এর গভীর প্রভাব পড়েছে। বৈষ্ণব সম্প্রদায় ও সাহিত্যরসিকদের কাছে গীতগোবিন্দম এক সময় পরম শ্রদ্ধার বিষয় ছিল। পুরীর  জগন্নাথ মন্দিরে এটি এখনও নিত্য পঠিত হয়। ভারত ও ভারতের বাইরেও গ্রন্থটি বেশ জনপ্রিয় এবং ইংরেজি সহ ইউরোপের বিভিন্ন ভাষায় এটি অনুদিত হয়েছে। গীতগোবিন্দম-এর ওপর প্রায় অর্ধশত টীকাগ্রন্থ রচিত হয়েছে। গীতগোবিন্দম-এর একটি প্রধান বৈশিষ্ট্য হল, এতে চরনশেষে অন্তমিল অনুসৃত হয়েছে, যা সংস্কৃত সাহিত্যের ক্ষেত্রে প্রায়শই দুর্লভ। এর ভাষা সহজ সরল এবং প্রায় বাংলার কাছাকাছি।

১২ শতকে জয়দেবের রচিত গীতগোবিন্দম্‌ কাব্যে বৃন্দাবনে শ্রীকৃষ্ণের গোপিনীদের সঙ্গে রাসলীলা, রাধার বিষাদ বর্ণনা, কৃষ্ণের জন্য ব্যাকুলতা, উপালম্ভ বচন, কৃষ্ণের রাধার জন্য উৎকণ্ঠা, রাধার সখীদের দ্বারা রাধার বিরহ-সন্তাপের বর্ণনা গ্রন্থিত হয়েছে। এ কাব্যের মনোরম রচনাশৈলী, ভাবপ্রবণতা, সুমধুর রাগরাগিণী, ধর্মীয় তাৎপর্য তথা সুললিত কোমল-কান্ত-পদাবলী সাহিত্যিক রসপিপাসুদের অপার আনন্দ প্রদান করে। ১৭৮৪ খ্রিষ্টাব্দে উইলিয়াম জোন্স দ্বারা লিখিত 'অন দ্য মিউজিক্যাল মোডস্‌ অব হিন্দুস্‌' বইয়ে গীতগোবিন্দকে 'গোপনাট্য' (চধংঃড়ৎধষ উৎধসধ) বলে অভিহিত করা হয়েছে। অন্য সমালোচকরা একে 'গীতিনাটক', 'পরিশুদ্ধ যাত্রা', 'সংগীত রূপক' বলে আখ্যায়িত করেছেন। এনসাইক্লোপেডিয়া ব্রিটানিকায় এই কাব্যকে 'ধর্মনাট্য' বলা হয়েছে। এই কাব্যের অনুবাদ সংস্করণ পাঠ করে কাব্যটির ভূয়সী প্রশংসা করেছিলেন জার্মান কবি গ্যেটে।

গীতগোবিন্দম্‌ ২৪টি প্রবন্ধ ও ৭২ শ্লোকযুক্ত অষ্টপদী পঙ্‌ক্তির এমন এক সর্বাঙ্গসুন্দর গ্রন্থ যেখানে রাধা-কৃষ্ণের মিলন-বিরহ, অভিলাষ, প্রত্যাশা, নিরাশা, মান, ঈর্ষা, হর্ষোলল্গাস তথা পুনর্মিলনের কাহিনি মধুর লালিত্যমি ত পদ দ্বারা সংবন্ধিত হয়েছে। এই কাব্যের দশাবতার-স্তোত্রেই প্রথম গৌতম বুদ্ধকে 'যজ্ঞনিন্দাকারী' বিষুষ্ণর অবতাররূপে উলেল্গখ করা হয়েছে। 'নবরসিক' জয়দেব এই কাব্যে শৃঙ্গার রসের মাধুর্যব্যঞ্জক বর্ণযুক্ত বৈদর্ভী রীতির অনুপম শৈলীর প্রয়োগ ঘটিয়েছেন। কাব্যটি দ্বাদশ সর্গে বিভক্ত। যথা : ১. সমোদদামোদর, ২. সক্লেশকেশব, ৩. মুগ্ধ মধুসূদন, ৪. স্নিগ্ধ মধুসূদন, ৫. সাকাংক্ষ পু রীকাক্ষ, ৬. কুণ্ঠবৈকুণ্ঠ, ৭. নাগরনারায়ণ, ৮. বিলক্ষলক্ষ্মীপতি, ৯, মন্দমুকুন্দ, ১০. চতুর চতুর্ভুজ, ১১. সানন্দ দামোদর ১২. সুপ্রীতিপীতাম্বর।

(শ্রী শ্রী বৈষ্ণব ইতিহাস - হরিলাল চট্টোপাধ্যায়)

বোপদেব ও শ্রীমদ্ভাগবত-বৈষ্ণব মত পিডিফ

No comments:

Post a Comment

ধন্যবাদ

বৈশিষ্ট্যযুক্ত পোস্ট

যজুর্বেদ অধ্যায় ১২

  ॥ ও৩ম্ ॥ অথ দ্বাদশাऽধ্যায়ারম্ভঃ ও৩ম্ বিশ্বা॑নি দেব সবিতর্দুরি॒তানি॒ পরা॑ সুব । য়দ্ভ॒দ্রং তন্ন॒ऽআ সু॑ব ॥ য়জুঃ৩০.৩ ॥ তত্রাদৌ বিদ্বদ্গুণানাহ ...

Post Top Ad

ধন্যবাদ