রামনাথ তর্কসিদ্ধান্ত - ধর্ম্মতত্ত্ব

ধর্ম্মতত্ত্ব

ধর্ম বিষয়ে জ্ঞান, ধর্ম গ্রন্থ কি , হিন্দু মুসলমান সম্প্রদায়, ইসলাম খ্রীষ্ট মত বিষয়ে তত্ত্ব ও সনাতন ধর্ম নিয়ে আলোচনা

धर्म मानव मात्र का एक है, मानवों के धर्म अलग अलग नहीं होते-Theology

সাম্প্রতিক প্রবন্ধ

Post Top Ad

স্বাগতম

05 October, 2020

রামনাথ তর্কসিদ্ধান্ত

 বুনো রামনাথ হিসেবেই অধিক প্রসিদ্ধ, হলেন অষ্টাদশ শতাব্দীর নবদ্বীপের বিশিষ্ট নৈয়ায়িক, পণ্ডিত ও এবং শিক্ষক।
রামনাথ অষ্টাদশ শতকের মাঝামাঝি সময়ে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর জন্মস্থান সম্পর্কে ইতিহাসবিদদের মধ্যে মতভেদ দেখা যায়। ডঃ অলোক কুমার চক্রবর্তীর মতে তিনি ধাত্রিগ্রামের ভট্টাচার্যবংশীয় অভয়রাম তর্কভূষণের পুত্র ছিলেন।যজ্ঞেশ্বর চৌধুরী সমুদ্রগড়ে রামনাথের জন্মস্থান হিসেবে বলেছেন।জন্মেছিলেন নবদ্বীপে আজ থেকে ২৪৭ বছর আগে। নাম রামনাথ তর্কসিদ্ধান্ত। যাকে বলা হত, বুনো রামনাথ। এক সময় কাশী মিথিলার মতো ভাগীরথী জলঙ্গির সঙ্গমস্থলে অবস্থিত নবদ্বীপের জ্ঞান চর্চার কথাও সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছিল। এখানে স্মৃতি, জ্যোতিষ, তন্ত্রশাস্ত্র, বেদ, ব্যাকরণ, পুরাণবিদ্যা, ধর্ম, সংস্কৃতিচর্চার বিস্ময়কর প্রসার ঘটেছিল। এখানকারই একজন পণ্ডিত ছিলেন বুনো রামনাথ।
জন্ম ১৭৭০ সালে। তারিখ নিয়ে মতবিরোধ রয়েছে। গুরুকূল প্রথায় গুরুগৃহে শিক্ষা শেষ করে বিদ্যালয় খোলেন রামনাথ। ছাত্র অবস্থাতেই বাবা তাঁর বিয়ে দিয়েছিলেন। তখন নিয়ম ছিল, কোনও নবীন আচার্য বিদ্যালয় (চতুষ্পাঠী) খুললে, বাড়ি ইত্যাদি তৈরি, ছাত্রদের রাখার খরচের জন্য রাজদরবারের দরজা থাকত অবারিত। রাজকোষ থেকে নিয়মিত আর্থিক অনুদান পেতেন তাঁরা। রামনাথ মনে করতেন বিদ্যাই সব থেকে বড় ধন। তাই তিনি রাজ দরবারে না গিয়ে গ্রামের বাইরে গাছ গাছালির মধ্যে নিজের সীমিত অর্থে কুটির নির্মাণ করে চতুষ্পাঠী চালু করলেন। সেখানেই তিনি তপোবনের আদলে বসবাস এবং অধ্যাপনা করতেন। তখন থেকেই তাঁর নাম হয় বুনো রামনাথ। রামনাথের পাণ্ডিত্যের খবর ছড়িয়ে পড়ল। ফলে ছাত্র সংখ্যাও বাড়তে থাকল।গুরুকুল প্রথায় পাঠরত এই ছাত্রদের বলা হত অন্ত্যেবাসী। এই ছাত্রদের যাবতীয় ব্যয় আচার্যকেই বহন করতে হত। রাজা বা ধনাঢ্য ব্যক্তিরা ভূমি বা অর্থ সাহায্য করতেন। রামনাথ কোনও সাহায্য কারও থেকেই নিতেন না। ফলে এক সময় চতুষ্পাঠী পরিচালনা অসম্ভব হয়ে পড়ল। তিনি একদিন ছাত্রদের সে কথা জানালে ছাত্ররা বলল, ‘গুরুদেব আমরা বিদ্যার্থী হিসাবে আপনার এসেছি, আহারার্থী হিসাবে আসি নাই। তখন থেকে টোল চালানোর খরচ তারাই বহন করত।
রামনাথের পাণ্ডিত্যের ব্যাপারে প্রচলিত একটি কাহিনির উল্লেখ এখানে অপ্রাসঙ্গিক হবে না। কলকাতায় মহারাজ নবকৃষ্ণের সভায় এক দিগ্বিজয়ী পণ্ডিত এসেছেন। নবদ্বীপের প্রধান নৈয়ায়িক শিবনাথ বিদ্যাবাচস্পতি এবং বাঁশবেড়িয়ার ডাকসাইটে পণ্ডিত জগন্নাথ তর্কপঞ্চানন সেই পণ্ডিতের কাছে একে একে পরাজয় স্বীকার করলেন। বাংলার মান যায় যায়। অনন্যোপায় রাজসভা থেকে খবর গেল বুনো রামনাথের কাছে। রামনাথ সাধারণতঃ পাণ্ডিত্যের ঢক্কানিনাদ পছন্দ করতেন না। কিন্তু স্বভূমির পণ্ডিত সমাজের মান রক্ষায় তাঁকে যেতে হল। তাঁর পরাক্রমী পাণ্ডিত্যের কাছে হার মানলেন সেই দিগ্বিজয়ী পণ্ডিত। নবদ্বীপ এবং বাংলার মুখ রক্ষা হল। রাজা নবকৃষ্ণ খুব খুশি। আপ্লুত মহারাজ প্রচুর ধনরত্ন দিতে চাইলেন রামনাথকে। সেই পুরস্কারকে ‘কাকবিষ্ঠা’ বলে প্রত্যাখ্যান করলেন রামনাথ।
কৃষ্ণনগরের মহারাজার কানে গেল রামনাথের অর্থাভাবের কথা। লোক মারফত সাহায্যের প্রস্তাব পাঠিয়ে ব্যর্থ হওয়ায়, এক দিন রাজা নিজে এসে উপস্থিত হলেন রামনাথের পর্ণ কুটিরে। রাজা এই মহা পণ্ডিতকে সরাসরি অর্থাভাবের কথা বলতে সাহস পেলেন না। প্রারম্ভিক আলাপের পর বললেন, আপনার কি কোনও অনুপপত্তি আছে? অনুপপত্তি কথাটির অর্থ অভাব বা অসুবিধা। পণ্ডিত রামনাথ ভাবলেন, মহারাজ বুঝি জানতে চাইছেন, ন্যায়শাস্ত্রের কোনও জটিল প্রশ্নের সমাধানে তাঁর কোনও অসুবিধা হচ্ছে কি না? রামনাথ বললেন, মহারাজ, চার খণ্ড চিন্তামণি শাস্ত্রের উৎপত্তি করেছি। আমার তো কোনও অনুপপত্তি নেই। আসলে মিথিলার মহাপণ্ডিত গঙ্গেশ উপাধ্যায় এই চিন্তামণি শাস্ত্র রচনা করেছিলেন। এটি ন্যায়শাস্ত্রের একটি আকর বা প্রধান গ্রন্থ। এর যথচিত ব্যাখ্যা, টীকা-টিপ্পনী পণ্ডিত সমাজে ন্যায় শাস্ত্রের আলোচনায় পাণ্ডিত্যের মাপকাঠি হিসাবে গণ্য হত।
রামনাথ পত্নীকে নিয়ে একটি গল্প চালু আছে। কৃষ্ণনগরের মহারানি এসেছেন গঙ্গা স্নানে। ঘাটে তখন কাপড় কাচছিলেন রামনাথ পত্নী। সেই জলের ছিটে গায়ে লাগলে রানি মন্তব্য করেন, হাতের শাখাও তো জোটেনি, লাল সুতো পরা এই মহিলাটি কে? প্রত্যুত্তরে আচার্যানী রানিকে বললেন, শোন মা, এই লাল সুতো আছে বলে নবদ্বীপের মান আছে, যে দিন ছিঁড়ে যাবে, নবদ্বীপ অন্ধকার হয়ে যাবে।

 কলকাতার মহারাজ নবকৃষ্ণের সভায় এক নৈয়ায়িক দিগবিজয়ের উদ্দেশ্যে আসলে সেখানে একটি সভার আয়োজন করা হয়। সেই সভায় নবদ্বীপেরপণ্ডিতমণ্ডলী থেকে নৈয়ায়িক শিবনাথ বিদ্যাবাচস্পতি ও বংশবাটীর জগন্নাথ তর্কপঞ্চানন উপস্থিত ছিলেন। সেখানে আয়োজিত তর্কসভায় কেউই আগত নৈয়ায়িকের সঙ্গে যুক্তিতে পেরে না উঠলে বুনো রামনাথ সেখানে উপস্থিত হয়ে যুক্তিতর্কের মাধ্যমে তাঁকে পরাজিত করে নবদ্বীপের ন্যায়চর্চার মান বজায় রাখে। তখন রাজা নবকৃষ্ণ খুশি হয়ে তাঁকে প্রচুর ধনসম্পদ দিতে চাইলে রামনাথ কাক-বিষ্ঠা বলে সেগুলো স্পর্শ করেন না। রামনাথ মনে করতেন অর্থই অনর্থের মূল।

রামনাথের দারিদ্র্যের পরিচয় তাঁর স্ত্রীর সম্পর্কে প্রচলিত জনশ্রুতি থেকে বোঝা যায়। একবার নদিয়ার রাজমহিষী নবদ্বীপ ঘাটে এলে, রামনাথের স্ত্রী ঘাট থেকে ফেরার সময় তাঁর শাড়ির জল রাজমহিষীর গায়ে লাগলে সে না দাঁড়িয়েই চলে যেতে থাকে। তখন তিনি রেগে যান এবং বলেন- “ভারি তো দু’গাছা লাল সুতো। তার আবার এতো দেমাক। ওই সুতো ছিঁড়তে কতক্ষণ?” তাঁর প্রত্যুতরে সে বলে- “এই লাল সুতো যেদিন ছিঁড়ে যাবে, সে দিন নবদ্বীপ অন্ধকার হয়ে যাবে। ”

বুনো রামনাথের ভিটেতে ১৮৮৬ খ্রিস্টাব্দে অবিভক্ত বাংলার নবদ্বীপ তথা ভারতের সুপ্রাচীন শিক্ষাকেন্দ্র গড়ে ওঠে। পাইকপাড়ার রাজা ইন্দ্রচন্দ্র সিংহকে সভাপতিত্বে এবং অবসরপ্রাপ্ত ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট মহেন্দ্রনাথ ভট্টাচার্যের সম্পাদনায় দেশের পণ্ডিতমণ্ডলী এবং সংস্কৃতের অধ্যাপকদের নিয়ে সংস্কৃত চর্চাকে পুনঃজাগরণের উদ্দেশ্যে বঙ্গ বিবুধ জননী সভা স্থাপন করা হয়েছিল। বঙ্গ বিবুধ জননী সভার সম্পাদক অরুন কুমার চক্রবর্তী বলেন-

No comments:

Post a Comment

ধন্যবাদ

বৈশিষ্ট্যযুক্ত পোস্ট

অথর্ববেদ ২/১৩/৪

  ह्यश्मा॑न॒मा ति॒ष्ठाश्मा॑ भवतु ते त॒नूः। कृ॒ण्वन्तु॒ विश्वे॑ दे॒वा आयु॑ष्टे श॒रदः॑ श॒तम् ॥ ত্রহ্যশ্মানমা তিষ্ঠাশ্মা ভবতুতে তনূঃ। কৃণ্বন্তু...

Post Top Ad

ধন্যবাদ