শ্রীমদ্ভাগবত বেদব্যাসের লেখা নয় - ধর্ম্মতত্ত্ব

ধর্ম্মতত্ত্ব

ধর্ম বিষয়ে জ্ঞান, ধর্ম গ্রন্থ কি , হিন্দু মুসলমান সম্প্রদায়, ইসলাম খ্রীষ্ট মত বিষয়ে তত্ত্ব ও সনাতন ধর্ম নিয়ে আলোচনা

धर्म मानव मात्र का एक है, मानवों के धर्म अलग अलग नहीं होते-Theology

সাম্প্রতিক প্রবন্ধ

Post Top Ad

স্বাগতম

16 October, 2020

শ্রীমদ্ভাগবত বেদব্যাসের লেখা নয়

সর্ব্বপ্রথম শ্রীমদ্ভাগবত পুরাণকারদের ব্যাসদেব কে ছিলেন ও তাঁদের ভাগবতের কিছুটা বর্ননা দেখি ... ব্যাসদেব,অন্যান্য নাম : কৃষ্ণ-দ্বৈপায়ন, দ্বৈপায়ন,বাদরায়ণ,বেদব্যাস। ইনি পৌরাণিক মহাকাব্য মহাভারত, অষ্টাদশ মহাপুরাণ ও উপপুরাণ, বেদান্তদর্শন, ভাগবত প্রভৃতির রচয়িতা এবং বেদের বিভাগকর্তা ঋষি। যমুনার দ্বীপে জন্মগ্রহণ করেন বলে এর নাম হয় দ্বৈপায়ন। এঁর গায়ের রঙ কালো ছিল বলে, পুরো নাম দাঁড়ায় কৃষ্ণ-দ্বৈপায়ন। এঁর মাথায় কপিল বর্ণের জটা ছিল। তাঁর চোখ ছিল উজ্জ্বল ও মুখে পিঙ্গল বর্ণের দাড়ি ছিল। ইনি তপস্যাবলে মহর্ষিত্ব প্রাপ্ত হয়ে বেদকে চার ভাগে ভাগ করেছিলেন। এই কারণে ইনি বেদব্যাস বা ব্যাস নামে পরিচিত হন। জন্মের পরপরই ইনি তাঁর মায়ের অনুমতি নিয়ে তপস্যার জন্য যাত্রা করেন। এঁর তপস্যার স্থান ছিল বদরিকাশ্রম। এই কারণে ইনি বাদরায়ণ নামেও পরিচিত ছিলেন। ইনি মহাভারত লিপিবদ্ধ করার জন্য ব্রহ্মার কাছে একজন লিপিকার নিয়োগের পরামর্শ গ্রহণ করতে গেলে- ব্রহ্মা গণেশকে নিয়োগ করতে বলেন। গণেশ এই শর্তে লিপিকার হতে সম্মত হলেন যে, লিপিবদ্ধ করার সময় ইনি ক্ষণমাত্রও থামবেন না। ব্যাস তাতে রাজী হয়ে অপর একটি শর্ত জুড়ে দিয়ে বললেন যে, গণেশ কোন বাক্যের অর্থ সম্পূর্ণ না বুঝে লিপিবদ্ধ করতে পারবেন না। এরপর গণেশ এই শর্তে রাজী হলে– মহাভারত লিখা শুরু হয়।ব্যাসদেব তাঁর শ্লোক রচনার মাঝে মাঝে কিছু জটিল শ্লোক রচনা করেতন- গণেশ এই শ্লোকগুলির অর্থ বুঝে লিখতে যে সময় ব্যয় করতেন, সেই সময়ের মধ্যে ব্যাসদেব আরও অনেক শ্লোক বানিয়ে ফেলতেন।

ব্যাসদেব একটি পুত্র লাভের আশায় সুমেরু পর্বতে মহাদেবের তপস্যা করতে থাকেন। শতবর্ষ আরাধনার পর মহাদেব তাঁকে পুত্রলাভের বর দেন। ব্যাসদেব পুত্র সন্তানের নাম রাখেন শূক। কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধের সময় ব্যাসদেবের বরেই সঞ্জয় দিব্যচক্ষু লাভ করেন। এই দৃষ্টির বলে তিনি অন্ধ ধৃতরাষ্ট্রকে যুদ্ধের যথাযথ বিবরণ দিতে সমর্থ হয়েছিলেন। কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধের পর কুরু-পাণ্ডব রমণীদের ইনি জাহ্নবী থেকে উত্থিত মৃত আত্মীয়-স্বজনদের প্রত্যক্ষ করান। জ্ঞাতিবধের পাপস্খলনের জন্য ইনি যুধিষ্ঠিরকে অশ্বমেধ-যজ্ঞ করতে উপদেশ দেন।
গৌতমের রচিত ন্যায়শাস্ত্রের ত্রুটি ধরার কারণে, গৌতম ক্রুদ্ধ হয়ে বলেছিলেন যে, চোখ দিয়ে ব্যাসদেবের মুখ দেখবেন না। পরে ব্যাস অনুনয়-বিনয় দ্বারা গৌতমকে প্রসন্ন করলে, তিনি ব্যাসদেবের মুখদর্শনের ইচ্ছা পোষণ করেন। কিন্তু প্রতিজ্ঞা ভঙ্গ হবে,- এই বিবেচনায় গৌতম তাঁর পায়ে চোখ স্থাপন করে ব্যাসদেবের মুখ দেখেছিলেন। সেই থেকে গৌতমের অপর নাম অক্ষপাদ।
ইনি বেদকে শতশাখাযুক্ত চার ভাগে বিভক্ত করে বেদব্যাস নামে অভিহিত হয়েছেন।
ব্যাসদেব অষ্টাদশ মহাপুরাণ ও উপপুরাণ রচনা করে খ্যাতি অর্জন করেন। বেদান্তদর্শন রচনাও ব্যাসদেব অন্যতম কৃতিত্ব।
বিষ্ণু অবতার ও কৃষ্ণ জীবনকথা নিয়ে রচিত ব্যাসদেবের এই অনবদ্য রচনায় মোট বারোটি স্কন্দ (সর্গ) ও প্রায় ১৮,০০০ শ্লোকে রয়েছে। হিন্দু সমাজে সুপরিচিত বহু উপকথার উৎসভাগবত পুরাণ।
তিনি বেদকে চার ভাগে ভাগ করেছিলেন এবং তার চার শিষ্যকে এক একটি বেদের সংরক্ষণ ও প্রচারের দায়িত্ব অর্পণ করেছিলেন । এই কারণে ইনি বেদব্যাস নামে খ্যাত হন। তাঁর এই পরিকল্পনার ফলেই দেশের ও জাতির বিপর্যয় এবং বিধর্মীদের হাতে কোটি কোটি হিন্দু হত্যা, হাজার হাজার মন্দির ও শাস্ত্র ধংসের পরেও হিন্দু ধর্মের ও সমাজের ভিত্তি —বেদ হারিয়ে যায় নি।
ভগবান ব্যাস পৃথিবীর বৃহত্তম ও মহত্তম মহাকাব্য মহাভারত, অষ্টাদশ মহাপুরাণ ও অষ্টাদশ উপপুরাণ, ব্রহ্মসূত্র প্রভৃতির রচয়িতা এবং বেদের বিভাগকর্তা ঋষি। কলিযুগে সনাতন হিন্দু ধর্মের বর্তমান কাঠামো অনেকটাই ব্যাসদেবের নির্মিত । শৈব -শাক্ত- বৈষ্ণব -দ্বৈতবাদী -অদ্বৈতবাদী নির্বিশেষে সনাতন হিন্দু ধর্মের সব সম্প্রদায়-ই কোন না কোন সূত্রে ব্যাসের জ্ঞান , ভক্তি, তপস্যা , জীবকল্যানের আদর্শের সাথে যুক্ত আছেন। সেকারনে তিনি সনাতন হিন্দু সমাজের সার্বজনীন গুরু।

রাজা পরীক্ষিতের ভাগবত শ্রবণঃ

মহামুনি কৃষ্ণদ্বৈপায়ন বেদব্যাস বা ব্যাসদেব বেদ রচনার পূর্বে এগুলি মুনি-ঋষিদের স্মৃতিতে ছিল এবং এ বৈদিক মন্ত্রগুলি পয়ার আকারে লিপিবদ্ধ ছিল। ব্যাসদেবই সর্বপ্রথম পঠনের উপযোগী করে এগুলি সংকলন করেন এবং বেদকে চারভাগে ভাগ করেন। বেদ অর্থ জ্ঞান....

শ্রীমদ্ভাগবত রচনার ইতিহাস ও রাজা পরীক্ষিতের ভাগবত শ্রবণঃ(পৌরাণিক)

মহামুনি কৃষ্ণদ্বৈপায়ন বেদব্যাস বা ব্যাসদেব বেদ রচনার পূর্বে এগুলি মুনি-ঋষিদের স্মৃতিতে ছিল এবং এ বৈদিক মন্ত্রগুলি পয়ার আকারে লিপিবদ্ধ ছিল। ব্যাসদেবই সর্বপ্রথম পঠনের উপযোগী করে এগুলি সংকলন করেন এবং বেদকে চারভাগে ভাগ করেন। বেদ অর্থ জ্ঞান। পারমার্থিক জ্ঞান। এ জ্ঞান ধারণ করতে পারলে পার্থিব বিষয় তুচ্ছ মনে হবে। ভগবানের কাছে যাওয়ার জন্য সবকিছুই বেদে আছে। অভাব শুধু আমাদের জ্ঞানের। অজ্ঞানকে নাশ করে বেদের দূরূহ অর্থ হৃদয়ঙ্গম করে আত্মাতে জ্ঞানের বর্তিকা জ্বালাতে পারলে আমাদের মানব জনম সফল হবে। ব্যাসদেব বেদ রচনা করা ছাড়াও মহাভারত নামে মহাকাব্য রচনা করেন। মহাভারতের কাহিনী এত বিচিত্র ও হৃদগ্রাহী যে ইহার ছন্দে ছন্দে আছে রাজনীতি, আছে ষঢ়যন্ত্র, আছে মুক্তির পথ, আছে দেহান্তর, আছে আত্মোপলদ্ধি, আছে দু:খ-বেদনা, হাসি-কান্না যা শ্রবণ করলে আমাদেরকে মোক্ষলাভের পথের দিকেই ধাবিত করে। সনাতন ধর্মকে জানা ও এর ব্যাপকতা কত বিশাল তা পরিমাপ করা আমাদের এক জনমে অত্যন্ত দূরূহ  ব্যাপার। জনমে জনমে আমাদের তা জানতে হবে। বৈদিক গ্রন্থাদি পাঠ করলে জানা যায় যারাই মোক্ষলাভ করেছেন তারা কখনই এক জনমে পারেনি। জনমে জনমে পূণ্য সঞ্চয় করে তারা ভগবত ধামে প্রবেশ করেছেন  অথবা নিত্যদেহ  লাভ করে ভগবান শ্রীকৃষ্ণের পার্ষদরূপে গণ্য হয়েছেন।

ব্যাসদেব আঠারটি পুরাণও রচনা করেছেন। পুরাণগুলিতে সনাতন ধর্মের জানা অজানা অনেক পৌরানিক কাহিনী ব্যাপৃত হয়েছে। পুরাণগুলিতে যেমন আছে ভগবান শ্রীকৃষ্ণের জন্ম কথন, লীলার কথা তেমনি আছে দেবদেবীদের শক্তির বহি:প্রকাশ। 

ব্যাসদেবে জন্মকাহিনী:

বশিষ্ঠ মুনির পৌত্র পরাশর। পরাশরের মাতার নাম অদৃশ্যন্তী। পিতার নাম শক্তি। একদিন পরাশর মুনি নদী পার হওয়ার জন্য অপেক্ষা করছেন। নৌকা চালনা করছেন এক নারী। তার নাম মৎস্যগন্ধা। তাকে দেখে পরাশর মুনির কামভাব হয় এবং তার সাথে মিলিত হওয়ার জন্য বলেন। ঐ কন্যা জানান তিনি কুমারী। কিন্তু পরাশর মুনির বরে তার কুমারীত্ব নষ্ট হয়নি। তার গায়ের গন্ধও দূর হয়ে যায়। তাদের এক সন্তান হয় দ্বীপে। দ্বীপে জন্ম হয় বলে তার নাম ‘দ্বৈপায়ন’। তিনিই জগতে কৃষ্ণদ্বৈপায়ন ব্যাসদেব নামে পরিচিতি পান। আর ঐ মৎস্যগন্ধাই সত্যবতী নামে পরিচিতি পান এবং হস্তিনাপুরের রাজা শান্তুনু তাকে বিবাহ করেন। 

ব্যাসদেব যেভাবে ভাগবত রচনা করলেন:

ব্যাসদেব বেদ, অষ্টাদশ পুরাণ, মহাভারত রচনা করে প্রসিদ্ধি লাভ করেছেন। কিন্তু তারপরও তার মনে এক অতৃপ্ত বাসনা বিরাজ করছে। কিন্তু কি সে বাসনা তা তিনি হৃদঙ্গম করতে পারছেন না। একদিন তিনি তার আশ্রমে মৌন হয়ে বসে আছেন। এমন সময় মহর্ষি নারদ সেখানে উপস্থিত হলেন। তিনি ব্যাসদেবকে এভাবে মৌন হয়ে বসে থাকতে দেখে তার কারণ জিজ্ঞাসা করেন। ব্যাসদেব জানান তিনি বেদ, অষ্টাদশ পুরাণ ও মহাভারত রচনা করেছেন। কিন্তু তারপরও তার মনে অতৃপ্ত বাসনা বিরাজ করছে। ব্যাসদেবের অতৃপ্ত বাসনার কথা শ্রবণ করে নারদ তাকে ভগবান শ্রীকৃষ্ণের কর্ম, গুণ ও লীলা রচনা  করার জন্য উপদেশ দিলেন। তারপর ব্যাসদেব মহাভারতসহ পুরাণের সমস্ত সার সংকলিত করে শ্রীমদ্ভাগবত রচনা করেন। ব্যাসদেব তার পুত্র শোকদেবকে প্রথম শ্রীমদ্ভাগবত পাঠ করে শোনান। কিন্তু ব্যাসদেব ভাগবত প্রচারের কোন ব্যবস্থা করেননি। 

ভাগবত বেদ শ্রুতি বিরুদ্ধ- 👈আরো পড়ুন

হস্তিনাপুরের রাজা পরীক্ষিত একদিন শিকারে বের হলেন। তিনি তৃষ্ণার্ত হয়ে জলের খুঁজে শমীক মুনির আশ্রমে প্রবেশ করলেন। মুনি তখন বাহ্যজ্ঞান হারিয়ে ধ্যানে মগ্ন। রাজা মুনিকে জল দেয়ার জন্য অনুরোধ করেন। কিন্তু মুনি কোন উত্তর দিলেন না। রাজা ক্রুদ্ধ হলেন। তিনি একটি মৃত সাপ ধনকে করে   মুনির গলায় জড়িয়ে দিলেন। অদূরেই মুনি পুত্র শৃঙ্গী অন্য ঋষি পুত্রদের সাথে খেলা করছিল। পিতার এরম অবস্থা দেখে শৃঙ্গী ক্রুদ্ধ হলেন এবং তাৎক্ষণিক ব্রহ্মশাপ দিলেন। সে ব্রহ্মশাপে রাজা পরীক্ষিতের সাত দিনের মধ্যে তক্ষক সর্প দংশনে মৃত্যু হবে। অভিশাপ শুনে শমীক মুনির ধ্যান ভঙ্গ হল। তিনি বিচলিত হলেন। তিনি জানেন রাজা পরীক্ষিত মৃত্যুবরণ করলে রাজ্যে বিশৃংখলা দেখা দিবে। তিনি এও জানেন মাতৃগর্ভে থাকা অবস্থায়ই তিনি ভগবান শ্রীকৃষ্ণের দর্শন লাভ করেছিলেন। রাজার মৃত্যুকে তিনি কিছুতেই মেনে নিতে পারছেন না। পুত্রকে অনেক বুঝালেন তার ব্রহ্মশাপ ফিরিয়ে নেয়ার জন্য কিন্তু তিনি বুঝতে পারলেন পুত্র পিতার অপমানের কারণে শাপ ফিরিয়ে নিবে না। উপায়ন্তর না দেখে রাজা পরীক্ষিতের মৃত্যু আসন্ন মনে করে তার নিকট সংবাদ পাঠালেন এবং তিনি যেন নিজেকে আত্মরাক্ষার জন্য তৈরী হন। সংবাদ শ্রবণ করে রাজা পরীক্ষিত ধীর শান্ত মনে সর্প দংশনে মৃত্যুকে বরণ করে নিলেন। রাজা পরীক্ষিত পুত্র জন্মেজয়ের হাতে রাজ্য অর্পণ করে রাজকীয় ভোগ বাসনা ত্যাগ করে গঙ্গানদী তীরে অবস্থান করতে থাকেন। সেখানে তিনি সাত দিন ব্যাপী প্রায়োপবেশন করে ব্রহ্মশাপে দেহত্যাগ করার ইচ্ছা পোষণ করলেন। রাজা পরীক্ষিতের প্রায়োপবেশনে দেহ ত্যাগের সংবাদ রাজ্যময় ছড়িয়ে পড়ে। তার এ মৃত্যুর দৃশ্য দেখার জন্য রাজা-প্রজা, ঋষি, ব্রাহ্মণ সবাই গঙ্গানদীর তীরে সমবেত হলে লাগলেন। আসলেন মহর্ষি নারদ, আসলেন মহর্ষি ব্যাসদেবও। পরীক্ষিত জানতেন এ ব্রহ্মশাপ ব্যর্থ হবার নয়। তাই তিনি এ মৃত্যুকে রোধ করার কোন ব্যবস্থাও করলেন না। তার শুধু ভাবনা একটিই জীবনের সাতটি দিন এমনভাবে কাটাতে চান যেন ধীর শান্তভাবে মৃত্যুকে বরণ করে নিতে পারেন। কিন্তু কিভাবে তা সম্ভব হবে তিনি তা বুঝতে পারছেন না। কিন্তু ভগবানের ইচ্ছায় সবই সম্ভব। হঠাৎ করে সেখানে উপস্থিত হলেন ব্যাসদেব তনয় জ্ঞানতাপস শুকদেব। সমবেত হাজার হাজার মুনি-ঋষি, ব্রাহ্মণগণ নড়েচড়ে বসলেন। রাজা পরীক্ষিত ষোড়শবর্ষীয় ব্যাসদেব তনয়ের চরণ ম্পর্শ করলেন। তিনি নিজে উপলব্দি করলেন হয়তো বা তার মনের আশা পূরণ হবে। নিশ্চিয় এখন তার মৃত্যুর পথ সুগম হবে। 

ভাগবতকারদের প্রলাপ দেখুনঃ

শোকদেব সংসার ত্যাগী। তার নিকট স্ত্রী-পুরুষ ভেদজ্ঞান নেই। তিনি কোন জায়গায় ক্ষণমাত্র অবস্থান করেন। কিন্তু গঙ্গা তীরে হাজার হাজার মুনি-ঋষি, ব্রহ্মাণ, রাজ-প্রজাকে অবলোকন করে তিনি অভিভূত হলেন। রাজা পরীক্ষিতের প্রার্থনায় সেখানে তিনি সাত দিন ধরে অবস্থান করতে সম্মত হলেন। রাজা পরীক্ষিত শোকদেবকে প্রশ্ন করে জানতে চাইলেন- শ্রীকৃষ্ণের চরণে নিজের মন-প্রাণকে উৎসর্গ করে কিভাবে দেহত্যাগ করা যায়? এ প্রশ্নের উত্তর শ্রবণ করার জন্য উপস্থিত রাজা-প্রজা, মুনি-ঋষি, ব্রাহ্মণ সকলেই সকলেই অধীর হয়ে উঠলেন। ভগবান শ্রীকৃষ্ণ অর্জুনকে যুদ্ধে নিয়োজিত করার জন্য যে গীতার অবতারণা করেছিলেন তেমনি পরীক্ষিতের প্রশ্নই শ্রীমদ্ভাগবত সংহিতার জন্ম দিয়েছে। ব্যাসদেব ভাগবত রচণা করেছিল কিন্তু শোকদেবই সর্বপ্রথম তা সাধুজনের সম্মুখে আনয়ন করেন। 

দ্বাপরের শেষে কলিযুগের প্রারম্ভে পবিত্র গঙ্গানদীর তীরে শুক্লানবমী তিথি হতে পূর্ণিমা পর্যন্ত একাধারে সাতদিন মহর্ষি শুকদেব রাজা পরীক্ষিতসহ অন্যান্য মুনি-ঋষিগণকে ভাগবতপুরাণ শুনিয়েছিলেন। ভাগবতের মূল উপজীব্য বিষয় ছিল ভগবান শ্রীকৃষ্ণের গুণ, কর্ম ও লীলা। ভাগবতের সে অমৃতধারা শ্রবণ করে উপস্থিত সাধুজন পূণ্য লাভ করছেন, আনন্দ পাচ্ছেন, কিন্তু সাথেই সাথেই তা স্মৃতিতে স্মরণ রাখতে পারছেন না। শোকদেবও তা অনুধাবন করতে পারলেন। তিনি এমন একজনকে খুঁজছিলেন যিনি তার স্মৃতিতে ধরে রাখতে পারবে। অবশেষে তিনি সেই মুনিকে পেলেন। তিনি হচ্ছেন রোমহর্ষণ মুনির পুত্র সূত উগ্রশ্রবা। নৈমিষারণ্যে অনুষ্ঠিতব্য যজ্ঞে তিনি শৌনকাদি ঋষির নিকট ভাগবত পাঠ করতে সক্ষম হবেন। পববর্তী সময়ে শৌনকাদি ঋষিগণ নৈমিষারণ্যে এক যজ্ঞানুষ্ঠান করছিলেন। সে যজ্ঞানুষ্ঠানে রোমহর্ষণ পুত্র সূত উগ্রশ্রবা উপস্থিত ছিলেন। তিনিই শৌনকাদি ঋষিগণনের নিকট শ্রীমদ্ভাগবতপুরাণ বর্ণনা করেছিলেন। এভাবেই শ্রীমদ্ভাগবত সাধারণের মধ্যে প্রবিষ্ঠ হল।

সমীক্ষাঃ
প্রায় সকলেই অবগত আছেন যে,আজ থেকে পাঁচ হাজার বৎসর পূর্বে ধৃতরাষ্টর ও যুধিষ্ঠিরের সময় ব্যাসদেব স্বয়ং উপস্থিত ছিলেন। হিসাব অনুযায়ী বুদ্ধদেব কলিতে জন্ম নিয়েছিলেন, দ্বাপরে ব্যাসদেবের প্রায় চব্বিশ শত বৎসর পরে। অতএব ব্যাসদেব যে, পুরাণ রচয়িতা নন ইহাতে কোন সন্দেহ নেই। শুধু তাই নয়, ব্য়াসদেবকৃত মহাভারতে কোথাও পুরাণের নাম নেই। বরং পুরাণের বহুজায়গায় মহাভারতের নাম পাওয়া যায়। সেই কারণে প্রমাণ হয় যে,ভাগবত পুরাণ রচয়িতা ব্যাসদেব নন। মহাভারতের শান্তিপর্বে মোক্ষধর্ম্ম পর্বাধ্যায়ের ৩৩২ এবং ৩৩৩ অধ্যায়ে লেখা আছে ব্যাস পুত্র শুকদেব যুধিষ্ঠিরের জন্মের পূর্বেই ইহলোক ত্যাগ করেছিলেন।

মহাভারতের যুদ্ধ শেষ হওয়ার পর যধিষ্ঠির রাজত্ব করেন ৩৬ বৎসর ৮ মাস ২৫ দিন। ইহার পর পরীক্ষিৎ রাজত্ব করেন ৬০ বৎসর, সর্বমোট ৯৬ বৎসর ৮ মাস ২৫ দিন। সুতরাং এতদিন তাঁর জীবিত থাকার কথা নয়।কারণ মহাভারতে বৈশম্পায়ন কৃত ভীষ্ম বাক্য বর্ণনায় জানা যায় যে কুরুক্ষেত্র যুদ্ধ হওয়ার পূর্বেই শুকদেবের দেহান্ত হয়েছিল-

ভীষ্ম উবাচঃ

' নারদেনা-ভ্যনুজ্ঞাতঃ শুকো দ্বৈপায়নাত্মজঃ।

অভিবাদ্য পুনর্য়োগমাস্থায়াকাশমাবিশৎ।।'-৯

নারদের অনুজ্ঞা নিয়ে শুকদেব যোগাবল্বন করতঃ আকাশে আবেশ করলেন। অনন্তর তিনি প্রজ্বলিত বিধূম পাবকের ন্যায় নিত্য নির্গুণ লিঙ্গঁ বর্জিত আদিত্যান্তর্য্যামী পরব্রহ্মে প্রতিষ্ঠি হলেন। কুরুক্ষেত্র যুদ্ধের বহু পূর্বেই যাঁর দেহপাত হয়েগেল তাঁর পক্ষে পুনরায় যুদ্ধ শেষের পরে দ্বাপরের শেষ প্রান্তে সুরধণীর তীরে, প্রয়োগবেশনে উপবিষ্ট রাজা পরীক্ষিতকে, তাঁর মৃত্যুর কয়েক দিন পূর্বে মাত্র ১৬ বৎসর বয়সে দিগম্বর শুকদেব, তাঁকে ভাগবত শোনান কি সম্ভব...?

শুধু তাই নয়, ব্যাসদেব কৃত মহাভারতের বর্ণনানুযায়ী পরীক্ষিত নিজেকে রক্ষা করার জন্য মন্ত্রীদের সাথে পরামর্শ করে এমন এক স্তম্ভ প্রাসাদ তৈরী করালেন যেটি অত্যন্ত সুরক্ষিত এবং সেখানে বসেই

তিনি উপযুক্ত পাহারায় রাজকার্য পরিচালনা করতে লাগলেন। এখানে প্রশ্ন হল ভাগবতের কথা অনুযায়ী রাজা পরীক্ষিত শ্রীকৃষ্ণের পদ সেরা শ্রেষ্ঠমনে করে প্রাণত্যাগের সংকল্প নিয়ে (সুরধণী) গঙ্গার তীরে উপবেশন করলেন। অথচ ব্যাসকৃত মহাভারতের বর্ণনায় তিনি নিজেকে রক্ষার চেষ্টায় একটি সুরক্ষিত দুর্গ বা প্রাসাদ তৈরী করেছিলেন। তাহলে কনটি সত্য..? নিশ্চয় কল্পিত ভাগবত নয়। করাণ একই লেখক ব্যাসদেব দুই বইয়ে একই ঘটনা নিয়ে দুই জায়গায় দুরকম লিখতে পারেন কি..? সুতরাং ভাগবত যে ব্যাসদেবের লেখা নয় এটাই সত্য।

এসব অসত্য ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রসিদ্ধ গোড়ীয় বৈষ্ণবাচার্য্য রাধাবিনোদ গোস্বামীকে ও "বৈষ্ণবাচার পদ্ধতি" নামে গ্রন্থ লিখতে হয়েছিল। তিনি ওই গ্রন্থের ১৭৯ পৃষ্ঠায় লিখেছেন বর্তমান সময়ে ভোগী ব্যাবসাদার গুরুরা নিজেদের প্রভাব প্রতিপত্তি বাড়াতে, নিজেরাই স্বয়ং কৃষ্ণ সেজে শিষ্যশিষ্যাদের দ্বারা পূজিত হন। কোন কোন প্রেমদাতা গুরু রমনী মহলে দীক্ষাদান কালে স্বয়ং কৃষ্ণ হয়ে শিষ্যাদিগের গোপীভাব আস্বাদন করান। অতএব ভগবত যে কত অশ্লীল মিথ্যাচারে ভর্তি একটি গ্রন্থ তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।

আবার মহাভারতে আছে মহাপ্রস্থানের সময় পঞ্চ পান্ডবদের সাথে দ্রৌপদী মেরুপর্তের শিখর দেশে এসে "যাজ্ঞসেনী ভ্রষ্টযোগা নিপপাত মহীতলে" অর্থাৎ দ্রৌপদী ওখানে প্রাণ ত্যাগ করেন। আবার ভাগবতে

আছে কৃষ্ণের তিরোভাবের সংবাদ পেয়ে যুধিষ্ঠির সহ পঞ্চভ্রাতা দ্রৌপদীর জন্য অপেক্ষা না করে উত্তরাভিমুখে প্রস্থান করলেন। তখন দ্রৌপদী বাসুদেব উপাগত হয়ে দেহত্যাগ করেন।

"দ্রৌপদী চ তদাজ্ঞায় পতীনামন পেক্ষতাম্।

বাসুদেবে ভগবতিহ্যেকান্ত মতিরাপতম্।।" ভাগবত ১,১৫,৫০।।

এখানেও একই লেখক ব্যাসদেব একই ঘটনা দুই জায়গায় দুইরকম লিখতে পারেন কি..?

ভাগবতে আছে ,হিরণাক্ষ পৃথিবীকে মাদুরের মত মুড়ে মাথার বালিশ বানিয়ে শয়ন করেছিল। এবং বিষ্ণু তখন বরাহ রূপ ধারণ করে দাঁতে করে পৃথিবীকে তুলে ধরেছিলেন। যদি পৃথিবীই না থাকে তাহলে বরাহ রূপী বিষ্ণু তখন কোথায় দাঁড়িয়ে ছিলেন এবং হিরণাক্ষই বা কোথায় শয়ন করে ছিল..? ভাগবতকারের সমান্য ভূগোলের জ্ঞানটুকুও ছিল না যে, পৃথিবী কখনই মাদুরের মত মুড়ে বালিশ করা যায় না। তাহলে এটা সন্দেহ হয় যে ভাগবতকারের মাথায় ইসলামের তালা লাগানো ছিল। ভাগবতে আরো আছে অজামিল নামে এক পাপী তার পুত্রের নাম নারায়ণ রেখেছিলেন,যাতে মৃত্যুকালে নারায়ণ নামে ডাকলে  নারায়ণ এসে তাকে উদ্ধার করে। এখানে অন্তর্যামী নারায়ণের এই জ্ঞান টুকু কি নেই য, সে তার পুত্রকেই ডাকছে,তাঁকে নয়! তাহলে এই নারায়ণ, জীবকে সুখ দুঃখ পাপ পুণ্যের ফল কি ভাবে দেবেন..? 

শুধু তাই নয়, ভাগবতের কথা অনুযায়ী পাপিরা উদ্ধারের জন্য তাদের পুত্রদের নাম যদি নারায়ণ রাখৈ বা নিজেরা হরে হরে রাম রাম কৃষ্ণ করে উদ্ধার হয়ে যায়, তাহলে তো সবাই নির্ভয়ে পাপ কর্ম করে যাবে।

তখনতো ঈশ্বরের ন্যায় ব্যবস্থাই থাকবে না,তখন ঈশ্বরকে কেউ মানবে কি..? 

 শ্রীমদ্ভাগবত বেদব্যাসের লেখা প্রমান করতে গিয়ে রাধা ভক্তরা ব্যাস সুকদেবের নাম দিয়ে স্বকপোলকল্পিত রচনা করেছে। এই কথা প্রকাশ করিলেই অনেকেই বলে

আপনার কথার মাথামুন্ড কিছুই বোঝা যাচ্ছে না! ভাগবত বেদব্যাসের লেখা নয়, কি বলছেন আপনি..? আপনার মাথা ঠিক আছেত..?

আবার অনেকে বলেন তাদের পাশের বাড়ীতে ভাগবত পাঠ হয়, হাজারো লোকের সমাগম হয় তাহারা ভাগবত শুনতে শুনতে চোখের জল মুছতে থাকে দেখি ! সবাই কি পাগল হ'ন নাকি

ভাগবত গ্রন্থে কোথায় অসামঞ্জস্য আছে বলুন ....



প্রহ্লাদের উর্দ্ধতন পুরুষের তালিকানুযায়ী প্রহ্লাদ পঞ্চম পুরুষ মাত্র !
আবার অনেকে বলে

ভাগবতই কৃষ্ণচরিত্রকে দূষিতরূপে বর্ণনা করেছে

" বেদবেদাঙ্গ বিজ্ঞানং বলঞ্চাপ্যধিকং তথা,
নৃনাং লোকে হি কোহন্যোহস্তি বিশিষ্টঃ কেশবাদৃতে ? ১৯।

দানং দাক্ষ্যং শ্রুতং শৌর্য্যং হ্রীঃ কীর্ত্তিবুদ্ধিরুত্তমা
সন্ততিঃ শ্রীর্ধৃতিস্তষ্টিঃ পুষ্টিশ্চ নিয়তাচ্যুতে।২০।

তমিমং লোকসম্পন্নমাচার্যং পিতরং গুরুং
অর্ঘমচ্চিতমর্চ্চার্হং সর্ব্বে সংক্ষন্তমর্হথ - মহাভারত,সভাপর্ব
কৃষ্ণ যে রাসলীলাদি করেন নি তাহার প্রমাণ
ভাগবতের বর্ণনানুযায়ী রাসলীলাকে যৌনলীলাই বলতে হবে
ভাগবতে যে গোপীভাব প্রধান গোপিকাবল্লভ শ্রীকৃষ্ণের লীলা কথা দেখতে পাই তা কত প্রাচীন..?
অনান্য বৈষ্ণব সম্প্রদায় কি মহাপ্রভুর মত বা ধারা মানেন..?
মহাভারতে যদি রাসলীলাদি ঘটানা নাই থাকে তাহলে রাধা এবং গোপিনীদের কল্পনা কোথা থেকে এল..?
প্রাক্চৈতন্য যুগে বাংলাদেশে শ্রীকৃষ?ণচরিত্রকে উপজীব্য করেছিলেন কিনা বৈষ্ণবরা...?
তার 
এখানে উল্লখ্যঃ অনেকের মত মহাপর্ভু প্রবর্ত্তিত মধুরভাবের সাধনার ধারা তো আমরা গীতগোবিন্দ রচয়িতা জয়দেব এবং বিদ্যাপতির মধ্যেও দেখতে পাই। 
প্রাক্চৈতন্য যুগে বৈষ্ণবধর্ম্মের রূপ
শ্রীমদ্ভাগবত-মহাপুরাণের সমীক্ষাঃ
ভাগবত ১.৪.২৫ : স্ত্রী শূদ্র আর নিন্দিত দ্বিজের বেদাধিকার নেই | ব্যাসদেব তাই তাঁদের প্রতি কৃপাপরবশ হয়ে মহাভারত রচনা করেন |
অথচ এই কৃষ্ণ দ্বৈপায়ন বেদব্যাসই বেদ সমূহ সংকলন ও অধ্যয়ন করে ব্রহ্মসূত্র রচনা করেন | সেই বেদে স্ত্রী শূদ্রের বেদাধিকার নিয়ে বেদ বলে ......
যজুর্বেদ ২৬.২ : "আমি মানবকল্যাণে যে বাণী তোমাদের দিয়েছি তা প্রচার কর ব্রাহ্মণক্ষত্রিয় বৈশ্য শুদ্র নারী পুরুষ পাপী পুণ্যাত্মা নির্বিশেষে সকলকে "
                      
সনাতন বৈদিক ধর্ম এমন একটি গোত্র যার প্রধান ধর্মগ্রন্থের প্রাপক ও প্রচারকদের মহামনিষীদের মধ্যে নারী ঋষিকাগণ ছিলেন যা পৃথিবীর অন্য কোন রিলিজিয়ন(ধর্ম একটিই,বৈদিক ধর্ম,বাকীগুলো মার্গ) এর পক্ষে চিন্তা করাও অসম্ভব।চলুন দেখে নেই পবিত্র বেদের মন্ত্রদ্রষ্টা ঋষিদের মধ্যে কিছু শ্রদ্ধেয় নারী ঋষিকার নাম-
১)ঘোষা(ঋগ্বেদ দশম মন্ডলের ৩৯-৪১ নং সুক্তের দ্রষ্টা,ঋষি কক্ষিবান এর কন্যা) ২)লোপামুদ্রা
৩)মৈত্রেয়ী
৪)গার্গেয়ী
৫)পৌলমি
৬)রোমশা
৬)অপালা
৭)বাক(ঋগ্বেদের বিখ্যাত দেবীসুক্তের দ্রষ্টা), ৮)অপত
৯)কত্রু
১০)বিশ্ববর
১১)জুহু ১২)ভগম্ভ্রীনি(মহর্ষি­ অম্ভ্রন এর কন্যা,ঋগ্বেদের অষ্টম মন্ডলের ১২৫ নং সুক্তের দ্রষ্টা)
১৩)যরিতা
১৪)শ্রদ্ধা
১৫)উর্বশী
১৬)স্বর্ণগা
১৭)ইন্দ্রানী
১৮)সাবিত্রী
১৯)দেবায়নী
২০)নোধা
২১)আকৃষ্ভাষা ২২)শীকাতনবাবরি ২৩)গণ্পায়নী
২৪)মন্ধত্রী
২৫)গোধ
২৬)কক্ষিবতী
২৭)দক্ষিনা
২৮)অদিতি
২৯)রাত্রি(মহর্ষি ভরদ্বাজের কন্যা) ৩০)শ্রীলক্ষ
বেদে স্ত্রীর অধিকার না থাকলে তিনি যজ্ঞে তাঁর পতির সাথে যজ্ঞ করবেন কি করে  ❓ কারণ যজ্ঞে দম্পতির মন্ত্র পাঠ করে আহুতি প্রদানের কথা ঋগ্বেদ ৮.৩১.৫ -৯ এ আছে |

 "ব্রহ্মচর্যেন কন্যা যুবানাং বিন্দতে পতিম্।" (অথর্ববেদ ১১.৫.১৮)
             
অর্থাত্ ঠিক যেমন যুবক ব্রহ্মচর্য শেষ করে বিদুষী কন্যাকে বিয়ে করবে ঠিক তেমনি একজন যুবতীও ব্রহ্মচর্য শেষ করে পছন্দমত বিদ্বান যুবককে স্বামী হিসেবে গ্রহন করবে।
পাণিনি তার সংস্কৃত ব্যাকরণ শাস্ত্রে ছাত্রীদের ব্রহ্মচর্যের প্রতিষ্ঠান ছাত্রীশালা ও এর মহিলা অধ্যাপক আচার্যনি এর উল্লেখ করেছেন- 
"মাতুলাচার্যাণামানুক্ত" -পাণিনি ৪.১.৪৬ এবং "ছাস্যাদযঃ ছাত্রীশালাযাম্" -পাণিনি ৬.২.৭৬
অথচ ভন্ড পৌরানিক পুরোহিতগন পুরুষতন্ত্র কায়েম করতে একসময় নারীদের শাস্ত্রপাঠ বন্ধ করে দিয়েছিল,সতীদাহের মত জঘন্য প্রথা চালু করেছিল।আসুন,বেদের শুভ্র,অনন্য পথ অনুসরন করে বৈষম্যহীন সমাজ গঠন করি। এখন সম্মানিত পাঠকবৃন্দের কাছে প্রশ্ন অদ্বিতীয় বেদবিদ্ মহর্ষি কৃষ্ণ দ্বৈপায়ন বেদব্যাসের কি শর্ট টাইম মেমরি লস হয়েছিল যে তিনি এই বেদবিরুদ্ধ ভয়ানক কথা লিখেছেন ❓ ....অন্ততঃ বেদব্যাস এর রচয়িতা নয় |

দেবী ভাগবত পুরাণ : ১.২.১৭ তে বলা হচ্ছে ব্যাসদেব পুরাণ রচনা করার পর মহাভারত রচনা করেন | After compiling the eighteen Purânas, Veda Vyâsa, the son of Satyavati composed Mahabharata, that has no rival, out of these Purânas.

          
আর ভাগবত পুরাণ 1.5.3 : এতে বলা মহাভারত এর পর ব্যাসদেবের ভাগবত রচনার পুর্বকথা |

 SB 1.5.3 — Your inquiries were full and your studies were also well fulfilled, and there is no doubt that you have prepared a great and wonderful work, the Mahābhārata, which is full of all kinds of Vedic sequences elaborately explained 


দুটিতেই বিরোধীতা বিদ্যমান এবং দুটোই ব্যাসদেবের নামে প্রচলিত | যার ফলে এ দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে বিরোধীতা বিদ্যমান | এভাবে পুরাণসমূহ সনাতনীদের ঐক্য বিনষ্ট করে আসছে |


যজুর্বেদ ৪০-৮
সপর্য্যগচ্ছুক্রমকায়ম­­ব্রণমস্নাবিরং শুদ্ধমপাপবিদ্ধম্।
কবির্মনীষী পরিভূঃ স্বয়ম্ভূর্যাথাতথ্যতো­­র্থান ব্যদধাচ্ছাশ্বতীভ্যঃ সমাভ্য।।
পদার্থঃ (সঃ) পরমেশ্বর (পরি) সব দিক থেকে (অগাৎ) ব্যপ্ত আছেন (শুক্রম) সর্বশক্তিমান (অকায়ম) শরীররহিত (অব্রণম্) ছিদ্র রহিত (অস্নাবিরম্) স্নায়ু আদির বন্ধন রহিত (শুদ্ধম্) দোষ রহিত (অপাপবিদ্ধম্) পাপরহিত (কবিঃ) সর্বজ্ঞ (মনীষী) অন্তর্যামী (পরিভূঃ) দুষ্টের দমন কর্তা (স্বয়ম্ভূঃ) স্বয়ম্ভূ (যাথাতথ্যত) যথাভাবে (অর্থান্) সব পদার্থের (বি) বিশেষরূপে (দধাত্) উপদেশ করেছেন (শাশ্বতীভ্য) শাশ্বত, অনাদিস্বরূপ (সমাভ্যঃ) প্রজাদের জন্য।। ৮।।
সরলার্থঃ পরমেশ্বর সব দিক থেকে ব্যপ্ত আছেন, তিনি সর্বশক্তিমান, শরীররহিত (দেহ ধারন করেন না), ছিদ্র রহিত, স্নায়ু আদির বন্ধন রহিত (ইন্দ্রীয়াদি থাকে না), দোষ রহিত, পাপরহিত, সর্বজ্ঞ, অন্তর্যামী, দুষ্টের দমন কর্তা, স্বয়ম্ভূ (যাকে কেউ জন্ম দেয় না) তিনি যথাভাবে সব পদার্থের বিশেষরূপে উপদেশ করেছেন শাশ্বত, অনাদিস্বরূপ প্রজাদের জন্য।।৮।।             

উক্ত মন্ত্রটি বেদ হতে নেওয়া যা আমাদের প্রধান ধর্মগ্রন্থ।
উক্ত মন্ত্রটি একটু ভাল করে পড়ুন, অনেক কিছুই। জানার আছে ঈশ্বর সম্পর্কে,যা প্রচলিত ধারাকে/বিশ্বাসকে প্রশ্নবিদ্ধ করে ও সঠিক ভাবনার উদয় করে।
তাইতো অনেক সময় ভাবি,-প্রচলিত ধর্মপ্রচারকারীরা কেন বেদকে আমাদের থেকে দূরে রেখেছে? বিভিন্নজনকে পূর্ণব্রহ্ম /ঈশ্বর বানিয়েছে, অনেকজনকে পৃথিবীতে ঈশ্বর হিসেবে নামিয়েছে (এমন মনে হয়- ঈশ্বর পৃথিবীতে নেই), নিজের সুবিধায় যা ইচ্ছা তাই করেছে।
সাথে বলেছে-> বেদ কলিযুগে বুঝা যাবে না তাই নিষিদ্ধ।
বেদে অবতারবাদ নেই | অজ, সর্বব্যাপক ঈশ্বর অবতার নেন না |
কিন্তু পৌরাণিক অবতারবাদ নিজেরাই পরস্পর সাংঘর্ষিক | যেমন

ভাগবত ১.৩.৭ : বিষ্ণুর দ্বিতীয় অবতার বরাহ |এ অবতারে তিনি রসাতলে নিমগ্ন পৃথিবীকে দন্তে নিয়ে ঊদ্ধার করেন |

SB 1.3.7 — The supreme enjoyer of all sacrifices accepted the incarnation of a boar [the second incarnation], and for the welfare of the earth He lifted the earth from the nether regions of the universe.
            
গরুড়_পুরাণ পুর্ব খণ্ড ৪.১৪ : ব্রহ্মা বরাহ অবতার নেন |
               

ভাগবত পুরাণ ৫.১.৩১ : প্রিয়ব্রত রাজার রথের ঘর্ষণে যে গর্ত হয় তার থেকেই সপ্ত সমুদ্রের সৃষ্টি |

 SB 5.1.31 — When Priyavrata drove his chariot behind the sun, the rims of his chariot wheels created impressions that later became seven oceans, dividing the planetary system known as Bhū-maṇḍala into seven islands
  
ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণ প্রকৃতি খণ্ডম্ ১১.৫০ : শ্রীরাধিকা বলছেন, শ্রী কৃষ্ণ বিরজাকে দৃঢ়রূপে আলিঙ্গন করে তাহার গর্ভে বীর্য্যাধান করেন | তাতেই সপ্তসমুদ্রের সৃষ্টি |

বেদ সম্পর্কে ভাগবতের অভিমত
                  রাজা নিমিকে কর্মোযোগ সমন্ধে উপদেশকালে শ্রীআবির্হোত্র স্বীকার করেছেন যে, বেদ অপৌরষেয় অর্থাৎ ঈশ্বরস্বরূপ এবং এর অর্থ বোঝা সুকঠিন -
.
★ ভাগবত ১১।৩।৪৩
কর্ম (শাস্ত্র বিহিত) অকর্ম (নিষিদ্ধ) এবং বিকর্ম (বিহিতের উলক্ষন) এর বিচার বেদ দ্বারাই সম্ভব। লৌকিক রীতিতে এর ব্যবস্থা হয় না। বেদ অপৌরষেয় অর্থাৎ ঈশ্বরস্বরূপ। তাই বেদের তাৎপর্য অবশ্যই সুকঠিন কার্য। অতি বিদ্বান ব্যক্তিগন বেদের অভিপ্রায় নির্ণয় করতে ভূল করে থাকেন।
.
এসব নামধারী বৈষ্ণবরা এবার একটু বেশী বুঝে বলবে যে, বেদে স্বর্গাদি প্রাপ্তির জন্য বিভিন্ন পুষ্পিত বাক্যে প্রলোভন দেখানো হয়েছে। যেসবে আমরা মোহিত হই না। এর উত্তর স্বয়ং ভাগবত নিজেই দিয়েছেন -
.
★ ভাগবত ১১।৩।৪৪
এই বেদ পরোক্ষবাদাত্মক অর্থাৎ শব্দার্থ অনেক স্থলে তাৎপর্যের মার্গ দর্শন করে না। বেদ কর্ম নিবৃত করণহেতু কর্মের বিধান দেয়। বালককে মিষ্টির লোভ দেখিয়ে যেমন ঔষধি সেবন করানো বিধেয়। তেমনই বেদ অনভিজ্ঞদের স্বর্গাদির প্রলোভনে তাদের শ্রেষ্ঠ কর্মে প্রবৃত্ত করে।
.
★ ভাগবত ১১।৩।৪৬
অতএব ফলের অভিপ্রায় ত্যাগ করে এবং বিশ্বাত্মা ভগবানকে কর্মফল নিবেদন করে যে বেদোক্ত কর্মানুষ্ঠান করে তার কর্ম নিবৃতিতে অপ্রাপ্ত জ্ঞানরূপ সিদ্ধি লাভ হয়। বেদে স্বর্গাদি ফল লাভের বর্ণনা শব্দাদির সত্যতার মধ্যে সীমিত নয়। তার কর্মে রূচি উৎপন্ন করবার জন্যই।
.
এখানে স্পষ্ট যে, বেদে স্বর্গাদির বর্ণনা তাদেরই জন্য যারা বেদে অনভিজ্ঞ। তাদের বেদের পথে আনার জন্যই এরূপ বর্ণনা।
এখন বেদের বিভক্তি এবং মূখ্য বিষয় কি তা নিয়ে একটু আলোচনা করা যাক। এ বিষয়ে শ্রীকৃষ্ণ স্পষ্ট বলছেন-
.
★ ভাগবত ১১।২।৩৫
হে উদ্বব! বেদ সকল কর্ম, উপাসনা ও জ্ঞান এই তিন কান্ডে বিভক্ত। তিন কান্ডে প্রতিপাদিত মূখ্য বিষয় হলো ব্রহ্ম ও আত্মার একাত্ম। মন্ত্রসকল ও মন্ত্রদ্রষ্টা ঋষিগন এই বিষয় কে মূক্ত কন্ঠে ঘোষনা না করে গুপ্তভাবে বলেছেন। আমারো তাই অভিষ্ট।
.
★ ভাগবদ ১১।২।৩৬
বেদসকল বস্তত শব্দব্রহ্ম। তারা আমার প্রতিমূর্তি। তাই তার রহস্য বোঝা অত্যন্ত কঠিন কর্ম। সেই শব্দব্রহ্ম পরা, পশ্যন্তি ও মধ্যমা বাণীরূপে প্রাণ, মন এবং ইন্দ্রীয়ময়। তা সমুদ্রবৎ সুবিশাল এবং গভীর। তার নাগাল পাওয়া কঠিন।
.
অথচ এসব নামধারী বৈষ্ণবরা অতি সহজেই বেদ বুঝে ফেলে। আর সেই সাথে অশ্লিলতার ঢোল বাজিয়ে দিবা সূর্যের অস্ত ঘটায়।
এখন বেদ কিভাবে এবং কার কাছ থেকে অভিব্যক্ত হয়েছে সে বিষয়ে শ্রীকৃষ্ণ আলোকপাত করছেন-
.
★ভাগবত ১১।২১।৩৮,৩৯
ভগবান হিরণ্যগর্ভ স্বয়ং বেদমূর্তি এবং অমৃতময়। প্রাণ তার উপাধি এবং স্বয়ং অনাহত শব্দ দ্বারাই তার অভিব্যক্তি হয়েছে। যেমন উর্ণনাভ নিজ মুখ দ্বারা জাল বিস্তার করে আবার তা গিলে ফেলে। তেমনভাবেই তিনি স্পর্শাদি বর্ণসকল সংকল্পকারী মনরূপ নিমিত্ত করণ দ্বারা হৃদয়াকাশ থেকে অপার অনন্ত বহু মার্গ সম্পন্ন বৈখরীরূপ বেদ বাণীকে স্বয়ং অভিব্যক্ত করেন।
.
স্পষ্ট হলো যে বেদ স্বয়ং ঈশ্বর থেকেই ব্যক্ত হয়েছে। যা সম্পূর্ণ ঈশ্বরীয় জ্ঞান। আর এরা ঈশ্বরীয় জ্ঞানে অশ্লিলতা খোজে। এর থেকে বড় মূর্খামী আর কিছু হতে পারে না।
এখন দেখার বিষয় এই যে, কেউ যদি বেদের নির্দেশিত পথ না মানে। এবং খেয়াল খুশিমত ধর্মের আচরন করে তার গতি কি হবে-
.
★ ভাগবত ১১।৩।৪৫
যার অজ্ঞান নিবৃত্ত হয় নি, ইন্দ্রীয়সকল বশীভূত নয় সে যদি খেয়াল খুশি মতো বেদোক্ত কর্মের আচরন পরিত্যাগ করে তাহলে সে বেদ বিহিত কর্ম না করার জন্য বিকর্মরূপ অধর্ম করেই করে। তাই সে পুনঃমৃত্যু অর্থাৎ পুনঃ পুনঃ জন্ম চক্রে আবর্তিত হতে থাকে।
.
অর্থাৎ এ শ্লোকে এটা স্পষ্ট হয়েছে যে, বেদ বিহিত কর্ম যদি কেউ না করে তবে তা নিশ্চিত রূপে অধর্ম।
এ কথা অজামিলের উপাখ্যানে যমদূতরা ও স্বীকার করে বলেছেন, "যা বেদ বিহিত তাই ধর্ম, আর যা বেদ নিষিদ্ধ তাই অধর্ম।। ভাগবত ৬।১।৪০" এবং সে পুনর্জন্মের চক্রের বার বার আবর্তিত হবে। শুধু তাই নয় সে যদি বেদ পথ হতে বিচ্যুত হয় তাকে অসিপত্রবন নরকে শাস্তি পেতে হবে-
.
★ ভাগবত ৫।২৬।১৬
যে ব্যক্তি এই জীবনে প্রকৃতপক্ষে আপদ ধর্ম উপস্থিত না হলেও বেদ পথ হতে বিচ্যুত হয় পাষন্ড তাকে নিক্ষেপ করে অসিপত্রবন নামক নরকে। প্রবেশ করিয়ে কশাঘাত দ্বারা প্রহার করে।
.
অতএব দেখা যাচ্ছে যে, ভাগবতের কোন জায়গায় বেদের নিন্দা করা নেই। বরং ভাগবতও বেদ কে দিয়েছে সর্বোচ্চ সম্মান। এবং বেদ অমান্যকারীর কি গতি হবে তা স্পষ্টই দেখলাম। আর এসব পাষন্ড নাম ধারি বৈষ্ণবরা সনাতন ধর্মের স্টিকার লাগিয়ে বেদ নিন্দা করে বেড়াচ্ছে।
যার জন্য আজ সমাজের এই অবস্থা।

এখন সম্মানিত পাঠকবৃন্দের কাছে প্রশ্ন বেদব্যাস এর রচয়িতা ??? 


No comments:

Post a Comment

ধন্যবাদ

বৈশিষ্ট্যযুক্ত পোস্ট

অথর্ববেদ ২/১৩/৪

  ह्यश्मा॑न॒मा ति॒ष्ठाश्मा॑ भवतु ते त॒नूः। कृ॒ण्वन्तु॒ विश्वे॑ दे॒वा आयु॑ष्टे श॒रदः॑ श॒तम् ॥ ত্রহ্যশ্মানমা তিষ্ঠাশ্মা ভবতুতে তনূঃ। কৃণ্বন্তু...

Post Top Ad

ধন্যবাদ