বেদ ভাষ্য ও হিন্দুর পতন - ধর্ম্মতত্ত্ব

ধর্ম্মতত্ত্ব

ধর্ম বিষয়ে জ্ঞান, ধর্ম গ্রন্থ কি , হিন্দু মুসলমান সম্প্রদায়, ইসলাম খ্রীষ্ট মত বিষয়ে তত্ত্ব ও সনাতন ধর্ম নিয়ে আলোচনা

धर्म मानव मात्र का एक है, मानवों के धर्म अलग अलग नहीं होते-Theology

সাম্প্রতিক প্রবন্ধ

Post Top Ad

স্বাগতম

01 October, 2020

বেদ ভাষ্য ও হিন্দুর পতন

খ্রিষ্টানরা ভারতে হিন্দুধর্মকে নিশ্চিন্ন করার পরিকল্পনা করেন কেননা তারা জানতেন যেহেতু ভারতের সর্বোচ্চ এবং মূল অনুপ্রেরনা ই হল বেদ সেহেতু বেদ সম্পর্কে ভূল ধারনা ছড়াতে পারলেই তাদের উদ্দেশ্য সফল হবে।

বিশেষত ম্যক্স মূলার এর ১৮৬৭ সালের ৯ ই ডিসেম্বর এবং ১৮৬৮ সালের ১৬ ই ডিসেম্বর লেখা দুটি চিঠিতে স্পষ্ট দেখা যায় কিভাবে সায়ন,মহীধরদের(যারা বেদ অনুবাদের যোগ্যতাসম্পন্ন পদবী মহাঋষি খেতাব তো দুরে থাক,কোন গুরুকুল থেকে ঋষি বা আচার্য পদবীও পাননি) ভূল অনুবাদ ব্যবহার করে তারা আর্যবর্ত্তের ওপর আঘাত করে।

এবার দেখে নেই East Tradition Researc Institutie কর্তৃক প্রকাশিত বেদ এর বিভিন্ন অনুবাদ এর উপর প্রকাশিত আর্টিকেল এর কিছু অংশ।
এ পর্যন্ত প্রকাশিত বেদ এর অনুবাদসমূহ-
১.ঋগবেদ সংহিতা,H.H wilson,6 vol,London,
২.The hymns of Rigveda,Ralph T.H Gripphith,১৮৯৬-১৮৯৭.
৩.ঋগবেদ সংহিতা,স্বামী সত্যপ্রকাশ সরস্বতী,New Delhi,veda pratisthana,১৯৭৭
৪.ঋগবেদ সংহিতা,পন্ডিত সত্যকাম বিদ্যালংকার,১৯৮৭
৫.Pt. Dharmadev
৬.T.V Kapali shastry
এই আর্টিকেলটি পাব্লিশ হবার অনেক পড়ে সম্প্রতি পন্ডিত দেবীচাঁদ ও আচার্য ড. তুলসীরাম এর অনুবাদ গোবিন্দরম হাসানন্দ পাব্লিকেশন থেকে প্রকাশিত হয়েছে,এছাড়া পন্ডিত জয়দেব শর্মা এর অনুবাদ ও প্রকাশিত হয়েছে।
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ন ব্যপার হল প্রথম দুইজন ইংরেজ ব্যক্তির অনুবাদ কার ভাষ্য থেকে জানেন কি?হ্যঁ,সেই কালপ্রিট ম্যক্স মুলার এর ভাষ্য অনুযায়ী করা যার মূল উদ্দেশ্য ই ছিল বেদ এর ভূল অনুবাদ এর মাধ্যমে হিন্দুদের ধর্মান্তরিত করা।  কিন্তু  দুঃখের বিষয়,সত্য যে উদঘাটিত হবেই প্রকাশমান সূর্যের ন্যয়!
The life and letters of Friedrich Max Muller শীর্ষক বইটি প্রথম প্রকাশিত হয় লন্ডন এ ১৯০২ সালে যা পরবর্তীতে ১৯৭৬ সালে পুনঃপ্রকাশিত হয় আমেরিকায়। বইটিতে ১৮৬৭ সালের ৯ ই ডিসেম্বর তার স্ত্রীকে লেখা একটি চিঠি আছে যাতে তিনি লিখেছেন-
“…আমি যথেষ্ট নিশ্চিত যদিও তা হয়তো জীবদ্দশায় দেখে যেতে পারবনা যে আমার কর্তৃক অনুবাদিত বেদ ভারত এর ভাগ্যে একটা বিরাট প্রভাব ফেলবে।বেদ তাদের ধর্মগুলোর মূল এবং তাদেরকে আমার অনুবাদটি পৌঁছে দিতে পারলে  আমি  নিশ্চিত যে এটাই একমাত্র পথ তাদের দেশে গত তিনহাজার বছরের সব ধর্মচর্চাকে উত্‍খাত করার।”
এছাড়া তার মাকে লেখা ১৮৪৭ সালের ১৫ ই এপ্রিলের চিঠিতে তিনি প্রত্যেক পৃষ্ঠা অনুবাদের জন্য তাকে মিশনারীদের দেয়া উচ্চ বেতনের জন্য সন্তুষ্টি প্রকাশ করেন।পরবর্তীতে তিনি ১৮৫৬ সালে মিশনারী Chevalier Bunsen কে লেখা চিঠিতে তাকে আস্বস্ত করেন যে ভারতকে খ্রিষ্টান অধ্যুষিত করতে তার এই প্রচেষ্টা তিনি আজীবন অব্যাহত রাখবেন।যদিও তিনি তার জীবনের শেষভাগে এসে তার ভূল বুঝতে পারেন এবং তার লেখা Sacred books of east এর ষষ্ঠ খন্ডে তার অনুবাদিত বেদ এ যে ভূল আছে তা স্বীকার করে নেন এবং বেদ এর ভূয়সী প্রশংসা করেন।
আর এই ধূর্ত ম্যক্সমুলার তার এই ভাষ্যটি কার ভাষ্য থেকে প্রাপ্ত হন?মনোযোগী পাঠকগন এতক্ষনে হয়তো ঠিক ই ধরেছেন,ভূলে ভরা যজ্ঞভিত্তিক সায়ন এর ভাষ্য থেকে!আর একই গোত্রের আরেকটি ভাষ্য হল মহীধর এর ভাষ্য।
আবার ফিরে আসা যাক East Tradition Research Institute এর আর্টিকেল এ। প্রতিষ্ঠানটির প্রকাশিত লিস্ট এ আমরা দেখলাম মোট ছয়জন ভারতীয় হিন্দু আচার্য-পন্ডিতগন বেদ এর অনুবাদ এর কাজ করেছেন।এদের মধ্যে স্বামী সত্যপ্রকাশ সরস্বতী,পন্ডিত সত্যকাম বিদ্যালংকার,আচার্য ড. তুলসীরাম,আচার্য ধর্মদেব ও পন্ডিত দেবীচাঁদ অনুবাদ কার্য সম্পন্ন করেছেন মহাঋষি দয়ানন্দ সরস্বতীর বেদ ভাষ্যের মাধ্যমে যাকে আধুনিক যুগের শ্রেষ্ঠ বেদজ্ঞ ধরা হয় এবং যিনি শংকরাচার্যের পর একমাত্র মহর্ষি পদবী প্রাপ্ত।তাঁদের বেদ অনুবাদকে বিশেষজ্ঞগন সর্বাধিক যোগ্যতাসম্পন্ন বলে অভিহিত করেন কেননা একমাত্র তাঁরা ই বেদ অনুবাদ এর জন্য বিজয়নগর রাজ্যের কোটাল সায়নকে নয় বরং বেদদ্রষ্ট ঋষিদের কর্তৃক বেদ বোঝার সুবিধার্থে লিখিত শিক্ষা(Shikhsa,phonetics),ব্যকরন(Vyakarana) ,নিরুক্ত,ছন্দ, কল্প ও জ্যোতিষ গ্রন্থের সাহায্য নিয়েছেন যেখানে বৈদিক ঋষিদের কর্তৃক দেয়া বেদ এর বিভিন্ন শব্দের প্রেক্ষাপট ভেদে এদের অর্থ,উত্‍পত্তি দেয়া হয়েছে।
অপরদিকে T.V Kapali Shastry ঋষি অরবিন্দের ভাষ্য অনুযায়ী অনুবাদ করেন যাকে বর্তমান যুগে Vedic Exegesis এর অন্যতম Pioneer হিসেব গন্য করা হয়।
এদিকে ঋষি অরবিন্দ মহর্ষি দয়ানন্দ সরস্বতীর বেদ এর ভাষ্য সম্বন্ধে তাঁর বিখ্যাত বই The secret of the Vedas এ বলেন,
“বেদ এর অ যাবত্‍ সম্পাদিত অনুবাদকর্মের ব্যপারে আমি নিশ্চিত যে মহর্ষী দয়ানন্দ এর পথটিই সঠিক ও নিঁখুত মর্যাদা প্রাপ্তির যোগ্য।”
বৈদিক বিশেষজ্ঞ Mr. Roth তাঁর সংস্কৃত কোষগ্রন্থের প্রথম খন্ডে বলেছেন,”বেদের উদ্দেশ্য সায়নাদি কৃত অর্থ গ্রহন করা নয় বরং বৈদিক ঋষিরা যে গভীর অর্থ ব্যক্ত করে গেছেন তাই আবিস্কার করতে হবে।সায়নের সমসাময়িক কালে যে ভাবধারা(বলাই বাহুল্য মূর্তিপুজা,পশুবলি ইত্যাদি) তারই প্রতিবিম্ব তিনি বেদের মধ্যে দেখতে চেষ্টা করেছেন।এইভাবেই বেদের মর্ম সকল বিদ্বান ভূলতে বসেছিলেন।”
সায়ন ও মহীধরের অনুবাদকর্মের ব্যপারে তিনি বলেন,
“তাদের পদ্ধতির সবচেয়ে বড় ভূল হল সবসময় তা অত্যন্ত Ritualistic এবং ক্রমাগতভাবে সেগুলো বেদের বিশালত্বকে অত্যন্ত সাধারন পর্যায়ে নিয়ে গিয়েছে।”
দুঃখের বিষয় এই যে কতিপয় হিন্দু না জেনেই ওইসব ভূল অনুবাদের মাধ্যমে নিজেদের ভূল ধারনাকে সঠিক প্রমানের চেষ্টা চালাচ্ছে।তারা মহর্ষি,আচার্যদের অনুবাদ অনুসরন না করে ভূলে ভরা কিছু অনুবাদ পড়ে বিভ্রান্ত হচ্ছে।
আপনাদের বোঝার সুবিধার্থে উদাহরনস্বরুপ “যজ্ঞ” শব্দটা ব্যখ্যা করা যাক।অনেকের ই ধারনা আছে যজ্ঞে পশুবলি দেওয়া হত যেমনটি মুলার,গ্রিফিথদের অনুবাদে তথা সায়ন,মহীদরদের ভাষ্যে পাওয়া যায়।তাদের অনুবাদে ষাড়বলি,ঘোড়াবলি ইত্যাদি বেদ এ পাওয়া যায়।যে ধর্মের মূল ধারনা ই হল প্রানীহত্যা নিষেধ,নিরামিষ ভোজন কর সেই ধর্মের সর্বোচ্চ গ্রন্থেই কিনা এরা ধর্মীয় অনুষ্ঠানে পশুবলি খুঁজে পায়!দেখে নেয়া যাক বেদ এ পশুবলি নিয়ে কি বলা হয়েছে-
“অগ্নি যম যজ্ঞ অধ্যরাম”-ঋগবেদ ১.১.৪ অর্থাত্‍ যজ্ঞ হল অধ্যরাম।
নিরুক্ত ২.২৭ এ বলা হয়েছে যজ্ঞ অধ্যরাম অর্থ সম্পূর্ন অহিংস যাতে কোন হত্যা হয়না।
যজ্ঞকে শুধু যজুর্বেদ এর ই ৪৩টি মন্ত্রে অধ্যরাম বলে আখ্যা দেয়া হয়েছে।
এছাড়া যজুর্বেদ ১.১ এ বলা হয়েছে “অঘ্ন্যা যজমনস্য পশুনপাহি” অর্থাত্‍ কোন পশুকে হত্যার কথা চিন্তাও করিও না।
অথচ সায়ন মহীধররা সেই বেদেই যজ্ঞে পশুবলি,মাংস রান্না প্রভৃতি দেখে ফেলেছেন!আর পৌরানিক বিশ্বাসে অন্ধরা সেগুলো পড়েই নাচছেন!
এবার আসি কিছু অজ্ঞের বেদ এ দাবীকৃত ঈশ্বরের সাকার বর্ণনা নিয়ে।তারা বলছে বেদ এর পুরুষ সুক্তের প্রথম মন্ত্রটি ঈশ্বরের সাকার বর্ননা করছে।অথচ প্রকৃত সত্য তা নয়!আগে আমরা পবিত্র বেদ এর বিখ্যাত পুরুষ সুক্তটি দেখে নেই।
ওঁ সহস্রশীর্ষা পুরুষঃ সহস্রাক্ষ সহস্রপদ।
স্বভুমিং বিশ্বতো বৃত্তাঃ অত্যাতিষ্ঠদ দশাঙ্গুলম।।
এই মন্ত্রটি ঋগবেদ ১০.৯০.১,সামবেদ ৬.৪.১,যজুর্বেদ ৩১.১ ও অথর্ববেদ ১৯.৬.১ এ অবতীর্ন হয়েছে।
চক্ষু মানেই Physical চোখ,পদ মানেই Physical পা,শীর্ষ মানেই Physical মাথা,এরুপ বাংলা উদ্ভূত সংস্কৃত জ্ঞান যাদের তাদের বেদ নিয়ে মন্তব্য না করাই ভাল।বেদ এর অনুবাদ অবশ্যই প্রেক্ষাপট এবং পারিপার্শ্বিক তথ্য বিবেচনায় করতে হবে।
যজুর্বেদ ৪০.৮ এ ঈশ্বরকে “অকায়মব্রণমাস্নাবিরম” অর্থাত্‍ আকারবিহীন এবং স্থূল ও সুহ্ম যে কোন প্রকার দেহবিহীন বলা হয়েছে।
কেনোপনিষদ ১.৬ এ বলা হয়েছে যচ্চক্ষুষা ন পশ্যতি অর্থাত্‍ যাকে কেউ ই চোখে দেখতে পায়না কেননা তিনি নিরাকার।
শ্বেতাশ্বতর উপনিষদ ৪.২০ এ বলা হয়েছে “ন সন্দৃশে তিষ্ঠতি রুপমস্য” অর্থাত্‍ তার কোন রুপ বা আকার নেই।আর এই শ্বেতাশ্বতর উপনিষদ এর ৩.৩ এ বলা হয়েছে
“বিশ্বতশ্চক্ষুরুত বিশ্বতোমুখো বিশ্বতোবাহুরত বিশ্বতস্পাত্‍” অর্থাত্‍
সর্বত্র যেন তাঁর চোখ,সর্বত্র যেন মুখময়,সর্বত্র হস্তময় এবং সর্বত্র যেন চরণময়।
অর্থাত্‍ স্পষ্টতই এগুলো রুপক অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে।
তাই বৈদিক আচার্যগন পুরুষ সুক্তের প্রথম মন্ত্রটির সঠিক অর্থ করেছেন এভাবে,
“সহস্র(অগনিত,অশেষ) মস্তিস্কময়(সর্বজ্ঞানী),সহস্র অক্ষিময়(সর্বদ্রষ্টা),সহস্র পদযুক্ত(সর্বব্যপী) পরমেশ্বর সমস্ত জগত্‍ কে দশদিকে(Ten dimensionally)/চারদিকে ব্যপ্ত করে আছেন।
১৯৩৩ সালে বৈদিক সংশোধন মণ্ডল বা বৈদিক রিসার্চ ইন্সটিটিউট সায়ণের সম্পূর্ণ ভাষ্য প্রকাশিত করেছে। তার লিংক। 
 গ্রিফিথের ইংরেজি অনুবাদ লিংক

No comments:

Post a Comment

ধন্যবাদ

বৈশিষ্ট্যযুক্ত পোস্ট

অথর্ববেদ ২/১৩/৪

  ह्यश्मा॑न॒मा ति॒ष्ठाश्मा॑ भवतु ते त॒नूः। कृ॒ण्वन्तु॒ विश्वे॑ दे॒वा आयु॑ष्टे श॒रदः॑ श॒तम् ॥ ত্রহ্যশ্মানমা তিষ্ঠাশ্মা ভবতুতে তনূঃ। কৃণ্বন্তু...

Post Top Ad

ধন্যবাদ