গীতা ১৮।৬৬ - ধর্ম্মতত্ত্ব

ধর্ম্মতত্ত্ব

ধর্ম বিষয়ে জ্ঞান, ধর্ম গ্রন্থ কি , হিন্দু মুসলমান সম্প্রদায়, ইসলাম খ্রীষ্ট মত বিষয়ে তত্ত্ব ও সনাতন ধর্ম নিয়ে আলোচনা

धर्म मानव मात्र का एक है, मानवों के धर्म अलग अलग नहीं होते-Theology

সাম্প্রতিক প্রবন্ধ

Post Top Ad

স্বাগতম

12 November, 2020

গীতা ১৮।৬৬

 

সর্বSধর্মান্ পরিত্যজ্য মাম্ একম্‌ শরণম্‌ ব্রজ।

অহম্‌ ত্বাম্ সর্বপাপেভ্যঃ মোক্ষয়িষ্যামি মা শুচঃ।।
গীতা-১৮।৬৬

পদার্থঃ হে অর্জুন! (সর্বাধর্মান্) বেদ বিরোধী সমস্ত ধর্মকে (পরিত্যজ্য) ত্যাগ করে (মাম্, একম্‌, শরণম্‌, ব্রজ) আমার এক বৈদিক ধর্মরূপী শরণকে প্রাপ্ত হও, তাহলে (অহম্‌) আমি (ত্বাম্) তোমাকে (সর্বপাপেভ্যঃ) সমস্ত পাপ হতে (মোক্ষয়িষ্যামি) মুক্ত করবো (মা, শুচঃ) শোক করোনা।।

ভাবার্থঃ হে অর্জুন! বেদ বিরোধী সমস্ত ধর্মকে ত্যাগ করে অর্থাৎ অধর্ম কে ত্যাগ করে, তুমি আমার বৈদিক ধর্মরূপী শরণকে প্রাপ্ত হও। তাহলে তোমাকে আমি সমস্ত পাপ হতে মুক্ত করবো, তুমি শোক করো না।।

ভাষ্যঃ উক্ত দুই শ্লোকের মধ্যে সম্পূর্ণ গীতার অর্থকে ব্যাসজী সংগ্রহ করে দিয়েছেন, যাহার তাৎপর্য হলো পরমাত্মার অনন্য ভক্তি, যেমন পূর্বে এক স্থানে বর্ণনা করা হয়েছে যে পরমাত্মা একমাত্র অনন্য ভক্তি দ্বারা প্রাপ্ত হয় এবং একমাত্র পরমাত্মার ভক্তিকেই অনন্য ভক্তি বলা হয় অর্থাৎ যে ভক্তিতে পরমাত্মা হতে ভিন্ন বস্তুর ধ্যান হয় না যেমন 'অথ য় এতদক্ষরং গার্গী বিদিত্বাহস্মাল্লোকাত্প্রৈতি স ব্রাহ্মণঃ' বৃহদারণ্যক উপনিষদ ৩/৮/১০ এখানে নিরূপণ করা হয়েছে যে যিনি ওই অক্ষর পরমাত্মাকে জেনে ইহ লোক হতে প্রয়াণ করেন তিনি ব্রাহ্মণ, ইত্যাদি বাক্যে একমাত্র পরমাত্মার ভক্তি কথন করা হয়েছে। এই অনন্য ভক্তিকে দৃঢ় করার জন্য কৃষ্ণজী সমস্ত ধর্মকে ত্যাগ করে একমাত্র বৈদিকধর্ম শরণের আশ্রয় নিতে বলেছে। এই শ্লোকে ধর্ম শব্দের অর্থ ধর্মাভাস অর্থাৎ যা উত্তম ধর্মের সমান প্রতিত হয় কিন্তু বাস্তবে মিথ্যা এমন ধর্মকে ত্যাগ করে তুমি একমাত্র বৈদিক ধর্মের আশ্রয় নাও। মায়াবাদীগণ এই শ্লোকের বৃহৎ ভাষ্য করেছে, প্রথম শ্লোকের এরূপ ভাষ্য করেছে যে 'তত্ত্বমসি' তথা 'অহং ব্রহ্মাস্মি' ইত্যাদি বাক্য দ্বারা যিনি জীব-ব্রহ্মের অভেদ কে বুঝে নেয় উহার জন্য কৃষ্ণজী প্রতিজ্ঞা করেন যে সে স্বয়ং ব্রহ্ম হয়ে যায় আর সে পরমেশ্বরের অত্যন্ত প্রিয় হয়, কিন্তু উক্ত ১৮/৬৫ শ্লোকের 'মদ্যাজী' আদি শব্দ মায়াবাদীদের সিদ্ধান্তের সর্বথা বিপরীত, কেননা ইহাদের মতানুসারে ব্রহ্মজ্ঞান দ্বারা মুক্তি হয় আর এই শ্লোকে যজ্ঞ আর নমস্কার দ্বারাও ভগবৎ প্রাপ্তি কথন করা হয়েছে। এইজন্য ইহাদের মতানুকূল জীব ব্রহ্মের একতার অর্থ এই শ্লোকে কদাপি নেই আর 'সর্বধমর্মান্ পরিত্যজ্য' এই শ্লোকের ভাষ্যতে মায়াবাদীগণ এরূপ অর্থ করে যে বর্ণাশ্রমের সমস্ত ধর্মকে ত্যাগ করে একমাত্র ভগবৎ শরণের উপদেশ এখানে করেছে এবং ইহারা ভগবৎ শরণের তিনটি অর্থ করেছে - ১) আমি ওই পরমেশ্বরের হই ২) পরমেশ্বর আমার হয় ৩) সেই পরমেশ্বর আমি হই, এই অর্থ গীতার তাৎপর্যের পুরোই বিপরীত, কেননা 'স্বকর্মণা তমভ্যর্চ্য সিদ্ধিং বিন্দতি মানবঃ' গীতা ১৮/৪৫,৪৬ শ্লোকে বলা হয়েছে যে চার বর্ণ নিজের-নিজের কর্ম দ্বারা পরমাত্মার পূজন করে সিদ্ধিকে প্রাপ্ত হয়। যখন এই শ্লোকে বর্ণের ধর্ম দ্বারা পরমাত্মার পূজনের হেতু কথন করা হয়েছে তাহলে এখানে এসে তা ত্যাগের কথন করার তাৎপর্য কি ? অতএব এখানে কৃষ্ণজীর তাৎপর্য বেদ বিরুদ্ধ ধর্মকে ত্যাগ করা।।-(আর্যমুনি গীতা ভাষ্য)

বিঃদ্রঃ 'শকন্ধবধিষুঃ পররূপ কথাম।' এই ব্যাকরণের নিয়ম অনুসারে, যে রূপটি 'সর্ব' আকারে আছে তা ছিল 'সর্বঅধর্মণ' এবং তাই 'সর্বধর্মণ' হয়েছে। এভাবে 'অধর্মান' শব্দটি 'ধর্ম' রূপ ধারণ করলেও বাস্তবে 'অধর্মান'ই থেকে যায় [মহর্ষি দয়ানন্দ সরস্বতী]। মহামহোপাধ্যায় পণ্ডিত আর্যমুনি এই শব্দটির অর্থ লিখেছেন - (সর্বধর্মান্) বেদ বিরোধি সকল ধর্ম।
দর্শন শাস্ত্রে বলা হয়েছে - চোদনালক্ষণোহর্থো ধর্মঃ -(মীমাংশাদর্শন-১/১/২)
অর্থাৎ যে কর্ম বেদ বিহিত তাহাই ধর্ম আর যা বেদ বিরোধী তাহাকে অধর্ম বলা হয়। নিষ্কর্ষ এটাই হয় যে, তিনিও "সর্বধর্মান্" শব্দ দ্বারা সকল অধর্মই বুঝিয়েছেন।

সর্ব্বপ্রকার ধর্ম্ম সম্পূর্ণ বিসর্জ্জন দিয়া একমাত্র আমারই শরণ লও । আমি তোমাকে সর্ব্বপ্রকার পাপ হইতে মুক্ত করিব, তুমি শোক করিও না ॥৬৬॥-বৈষ্ণব ভাষ্য

No comments:

Post a Comment

ধন্যবাদ

বৈশিষ্ট্যযুক্ত পোস্ট

যজুর্বেদ অধ্যায় ১২

  ॥ ও৩ম্ ॥ অথ দ্বাদশাऽধ্যায়ারম্ভঃ ও৩ম্ বিশ্বা॑নি দেব সবিতর্দুরি॒তানি॒ পরা॑ সুব । য়দ্ভ॒দ্রং তন্ন॒ऽআ সু॑ব ॥ য়জুঃ৩০.৩ ॥ তত্রাদৌ বিদ্বদ্গুণানাহ ...

Post Top Ad

ধন্যবাদ