तस्य अन्तरम् विदित्वा तु सहस्राक्षः शची पतिः |
मुनि वेष धरो भूत्वा अहल्याम् इदम् अब्रवीत् || १-४८-१७
सहस्राक्षः=সহস্রাক্ষ शची पतिः= শচী পতি।
ঋষি গৌতম বিদেশে গমন করেছিলেন জেনে শচী পতি ইন্দ্র মুনি বেশ ধারণ করে অহল্যাকে এই কথা বলেছিলেন (রামায়ণ আদিকাণ্ড (48/17)।
রামায়ণ আদিকাণ্ড 48 অধ্যায়ের 27 তম শ্লোকে পাই,
मम रूपम् समास्थाय कृतवान् असि दुर्मते |
अकर्तव्यम् इदम् यस्मात् विफलः त्वम् भविष्यति || १-४८-२७
विफलः=বিফলঃ (ফলবিহীন বা পুরুষত্বহীন)
त्वम्=ত্বম (তুমি) भविष्यति=ভবিষ্যান্তি( ভবিষ্যতে)
ঋষি গৌতম অহল্যাগমনের ফলে ইন্দ্রের অণ্ডকোষ ধ্বংস হবার অভিশাপ দেন।
রামায়ণে ইন্দ্রের সহস্রাক্ষ হবার ব্যাপারে ঋষি গৌতমের অভিশাপের কোনো ভূমিকা নেই।।
মহাভারতে বারংবার ইন্দ্র কর্তৃক অহল্যাকে ধর্ষণের বিভিন্ন রকম বৃত্তান্ত পাওয়া যায়।
মহাভারত শান্তিপর্ব 342/23 মতে গৌতমের অভিশাপে ইন্দ্রের শ্মশ্রু হরিদ্বর্ণ হয়েছিল।
আবার শান্তিপর্ব 165 অধ্যায় মতে, গৌতম তার পুত্র চিরকারীকে ধর্ষিত হবার অপরাধে অহল্যাকে হত্যা করে আদেশ করে তিনি বনে গমন করেন। কিন্তু চিরকারী মাতৃহত্যা অনুচিত বিধায় আদেশ পালনে বিলম্ব করেন।ততক্ষণে গৌতম বুঝতে পারেন অহল্যা নিরপরাধা।তাই তিনি দীর্ঘ বিলাপপূর্বক পাষাণবৎ অহল্যাকে ক্ষণা করেন।
পদ্মপুরাণ সৃষ্টিখণ্ডে সর্বপ্রথম ইন্দ্রের সহস্রাক্ষ হবার উল্লেখ পাওয়া যায়। ব্রহ্মবৈবর্তপুরাণ ও বাংলা মহাকাব্যে ও এই উপাখ্যান পাওয়া যায় যেখানে ইন্দ্রের সহস্রাক্ষের কারণ হিসেবে গৌতম মুনির অভিশাপ বর্ণিত।
নাট্যকার দ্বিজেন্দ্রলাল রায় এই কাহিনীকেই যুগোচিত পরিবর্তন সাধন করে পাষানী নাটকে স্থান দিয়েছেন। অহল্যা উপাখ্যান যে রুপক কাহিনী তাতে সন্দেহের অবকাশ নেই। অহল্যার প্রসঙ্গ বেদে পাওয়া যায়না। কিন্তু ইন্দ্র সহস্রাক্ষ বেদে পুরাণে সর্বত্র আছেন।
সাহিত্য সম্রাট বঙ্কিমচন্দ্র অহল্যা-উপাখ্যানের তাৎপর্য বিশ্লেষণ করতে গিয়ে লিখেছেন "অহল্যা অর্থাৎ যে ভূমি হলের দ্বারা কর্ষিত হয়না_কঠিন, অনুর্বর। ইন্দ্র বর্ষণ করিয়া সেই কঠিন ভূমিকে কোমল করেন, জীর্ণ করেন__ এই জন্যে ইন্দ্র অহল্যার জার। জ্ঞ ধাতু হইতে জার শব্দ নিস্পন্ন হয়। বৃষ্টির দ্বারা ইন্দ্র তাহাতে প্রবেশ করেন, এইভাবে তিনি অহল্যা অভিগমন করেন।" বঙ্কিমচন্দ্রের মতে আকাশই ইন্দ্র এবং আকাশের সহস্র তারকা ইন্দ্রের সহস্র চক্ষু।
"ইন্দ্র ধাতুবর্ষণে। তদুত্তর 'র ' প্রত্যয় করিয়া ইন্দ্র শব্দ হয়। অতএব যিনি বৃষ্টি করেন তিনিই ইন্দ্র। আকাশ বৃষ্টি করে, অতএব ইন্দ্র আকাশ "
"ইন্দ্র সহস্রাক্ষ,কিন্তু ইন্দ্র আকাশ। আকাশের সহস্র চক্ষু কে না দেখিতে পায়?.....
সহস্র তারকাযুক্ত আকাশ, সহস্রাক্ষ ইন্দ্র।"
বঙ্কিমচন্দ্র প্রমাণস্বরুপ গ্রীকপুরানের সহস্রাক্ষ আকাশের প্রসঙ্গ উল্লেখ করেছেন। ভারতীয় ইন্দ্রের মতো গ্রীকদেবতা
আর্গস সহস্রলোচন।
"Greeks had still present to their thought the meaning of Argos Pannoptes, Io's hundred eyed all seeing guard, who was slain by Hermes and obanged into a peacock for Maorobus writes as reoognizing in him the star-eyed heaven itself ; as the Aryan Indra--the Sky-- is the 'thousand eyed'."
ইন্দ্র দেবতার প্রকৃত স্বরুপ পূর্বেই বিস্তৃতভাবে আলোচিত হয়েছে। সূর্যের বা অগ্নির যে শক্তি বা মূর্তি বারিবর্ষণের উপযোগী অনুকূল পরিবেশের সৃষ্টি করেন, তিনিই ইন্দ্র।
শীতে ও গ্রীষ্মে শুষ্ক মৃত্তিকা থাকে, হলকার্যের অযোগ্য →(অহল্যা)।
এই সময়ে সূর্যের হরিদ্বর্ণ রশ্মি ভূভাগ থেকে রস আহরণ করে। বাষ্পীভূত রস আকাশে মেঘরুপে পুঞ্জীভূত হয়। ইন্দ্র বজ্রদ্বারা বারিবর্ষণের প্রতিকূল অবস্থা বৃত্রাদি অসুরকূলকে ধ্বংস করে বৃষ্টিরুপে অহল্যা মৃত্তিকার সঙ্গে মিলিত হন,→অহল্যা ভূমি হল্যা কর্ষণোপযোগী হয়ে ওঠে। কিন্তু বর্ষার আগমনে সূর্যাগ্নি-রুপী ইন্দ্র সহস্রকিরণে শোভিত হয়ে প্রকাশিত হন,→ইন্দ্রের সহস্র চক্ষু উন্মীলিত হয়। এই সর্বজনবিদিত প্রাকৃতিক ঘটনাই ইন্দ্র - অহল্যা সংবাদের রুপকে প্রকাশিত হয়েছে।
ঋগ্বেদের দুটি ঋকে সীতার স্তুতি করা হয়েছে। একটি ঋকে বলা হয়েছে→
"ইন্দ্র সীতাং নিগৃ্হ্লাতু, তাং পুষাণুযচ্ছতু।"
→ইন্দ্র সীতাকে গ্রহন করুন,পূষা তাকে বর্ধিত করুন।সায়নের মতে সীতা লাঙ্গল - পদ্ধতি অথবা 'সীতাধারকাষ্ঠা' লাঙ্গলের যে অংশে ফাল লাগানো থাকে সেই অংশ। আচার্য মহীধরের মতে সীতা শব্দের অর্থ মৃত্তিকায় লাঙ্গলের দ্বারা চিহ্নিত রেখা,; → ইন্দ্রকৃত বারিবর্ষনের ফলে সীতা অর্থা লাঙ্গল-পদ্ধতি বা হলচালনরেখা সুগম হবে এবং সূর্যরুপা পূষা সে হল কার্যকে সার্থক করে তুলবেন, এই বক্তব্য ঋষিকবির। ঋগ্বেদের উক্ত সুক্তটি চাষ আরম্ভ করার পূর্বে পঠিত হয় বলে গৃহসুত্রে উল্লেখিত আছে,ইন্দ্র-সীতা সংযোগই পরবর্তীকালে ইন্দ্র-অহল্যা-সংবাদে রুপান্তরিত হয়েছে বলে মনে করি।
সূর্যই বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের চক্ষুস্বরুপ। সহস্র সূর্যকিরনই ইন্দ্রের সহস্র চক্ষু। অথবা যে অগ্নি বর্ষার অপগমে স্বতেজে সহস্র লেলিহান শিখার প্রদীপ্ত হয়ে ওঠেন সেই অগ্নির সহস্র শিখাই ইন্দের সহস্র চক্ষু। বেদে সূর্য এবং অগ্নি উভয়েই সহস্রাক্ষ। সূর্য সহস্র শৃঙ্গও।
↑↓↑↓
"সহস্রশৃঙ্গো বৃষভো যঃ সমুদ্রা দুধাচরৎ।"→সহস্রশৃঙ্গ বৃষভ(বর্ষনকারী)সূর্য,
যিনি সমুদ্র হতে উদিত হন,,,
"ইমং মা হিংসীদ্বিপাদং পশুং সহস্রাক্ষো মেধাব চীয়মনঃ।"→ হে সহস্রাক্ষ অগ্নি, যজ্ঞে চীয়মান হয়ে তুমি দ্বিপাদ পশুদের
(মানুষ্যগনের) হিংসা করোনা।
অগ্নে সহস্রাক্ষ শতমূর্খস্থতং তে প্রানাঃ সহস্রং ব্যানাঃ
সুব্রহ্মাত্মা সুবর্চস্বঃ সহস্রাচিঁবিঁভাবসুঃ।।
→হে অগ্নি, তুমি তুমি সহস্র চক্ষুবিশিষ্ট, শত তোমার মস্তক, শত তোমার প্রান,সহস্র ব্যান,তুমি ব্রহ্মস্বরুপ,শ্রেষ্ঠ তেজসমন্বিত, সহস্র কিরনমন্ডিত বিভাবসু।
গৌতমের অভিশাপে অভিশাপে ইন্দ্রের দেহে সহস্র ভগক্ষত হয়েছিলো। আধুনিক কালে ভগ অর্থ যোনি বুঝায়। ভগ শব্দের প্রাচীন অর্থ ধন বা ঐশ্বর্য। নিরুক্তকার যাস্ক বলেছেন, "ভগো ভজতেঃ।" ভজ ধাতুর সঙ্গে ঘঞ প্রত্যয় ক'রে ভগ শব্দ নিস্পন্ন।
অতএব ভগ শব্দের অর্থ ধন বা সম্পদ।ভগ বা ঐশ্বর্য যার আছে তিনিই ভগবান্। এখানে ঐশ্বর্য বলতে পার্থিব ঐশ্বর্য না বুঝিয়ে ষড়ৈশ্বর্য বা বিভুতি বোঝায়। যার যোনি আছে, এই অর্থে ভগবান হওয়া সম্ভব নয়। গীতায় শ্রীভগবান্ তার ভগ্ বা বিভুতির বর্ননা দিয়েছেন দশম অধ্যায়ে। সূর্য যে বিশ্বের আত্মারুপে, মানবের পরিচিত জগতের মধ্যে সর্বাপেক্ষা ঐশ্বর্যবান, তাতে আর সন্দেহ কি? সুতরাং সূর্যাগ্নিরুপি ইন্দ্র সহস্র প্রকার ভগ্ বা ঐশ্বর্যের অধিকারী, →এত স্বতঃসিদ্ধ। ভগবান্ সূর্য সম্পর্কে গৌতমের অভিশাপ নিছক উপন্যাস।
পুরানাদিতে ভগ দ্বাদশ আদিত্যের অন্যতম। কর্মপুরানানুসারে ভগ ভাদ্র মাসের সূর্য, "স্কন্দপুরানে ভগ মাঘ মাসের সূর্য।" মৈত্রাষনী সংহিতা অনুসারে ভগ শব্দের অর্থ অনুদিত আদিত্য। ঋগ্বেদের একটি মন্ত্রে ভগ আদিত্যরুপেই বর্ণিত হয়েছেনঃ
"প্রাতর্জিতংভগমুগ্রং হুবেম্ বর্ষং পূত্রমদিতেঃ।
→আমরা প্রাতঃকালে তমোবিজয়ী অদিতির অর্থাৎ প্রাতঃসন্ধ্যার পুত্র উদ্গর্ণ অর্থাৎ উদষার্থ সমুদ্ভুত বা উদিত প্রায় ভগকেই আহ্বান করিতেছি।
নিরুক্তকার বলেছেন যে ভগ অন্ধ।
↓↓
"অন্ধ ভগ ইত্যাহুরমুৎসৃপ্তো ন দৃশ্যতে।"
→ভগ অন্ধ ইহা বলা হয়ে থাকে, সূর্য ভাবপ্রাপ্ত না হইলে দৃষ্টিগোচর হননা।
রাত্রিকালে জগৎ অন্ধকারাচ্ছন্ন সুতরাং ভগ অন্ধ। দিবাভাগে তিনি চক্ষুমান, সর্বজগৎ প্রাপ্ত হয়ে থাকেন।
"জনং ভগো গচ্ছতীতি বা বিজ্ঞায়তে,
জনং গচ্ছত্যাদিত্য উদ্বয়েন।"
ভগ মনুষ্যকে প্রাপ্ত হয়, ইহাও বিজ্ঞাত হইয়া থাকে, - আদিত্য উদিত হইয়াই ভগ প্রাপ্ত হয়।
যাস্কের মতানুযায়ী ভগ উদয়কাশীন সূর্য। যে মাসের বা যে সময়ের সুর্য হোন না কেন, ভগ যে সুর্য বা সূর্য রশ্মি, তাও কোন সন্দেহ নাই।
সূর্যাগ্নিরুপি ইন্দ্রের সহস্র কিরণ বা কিরণরুপী বিভূতিই যে সহস্র ভগ তা ত অত্যন্ত প্রাঞ্জল।
আচার্য কুমারিল ভট্র ইন্দ্রকে সুর্যরুপে গ্রহন করে অহল্যা উপখ্যানের একটি ব্যাখ্যা দিয়েছেন:- ↓↓
"সমস্ততেজাঃ পরমেশ্বর নিমিতেন্দ্র শব্দবাচ্যঃ সবিতৈবাহনি নীয়মানতয়া বাত্রেধহল্যাশব্দবাচ্যায়াঃ ক্ষয়াত্মক জবণহেতুত্বাজ্জীর্জত্যস্মাদনেন বোধিতেন অহল্যাজাব ইত্যুচ্যতে ন পরস্ত্রীব্যাভিচারাৎ।"
→সকল তেজের আধার সবিতা পরম ঐশ্বর্যময়ত্বহেতু ইন্দ্র পদবাচ্য। দিবাভাগকে লয় করে বলেই রাত্রির নাম অহল্যা। সেই রাত্রিকে ক্ষমাত্মক জবণকার্যের জন্যে অর্থাৎ জীর্ণ করার জন্যে ইন্দ্রকে অহল্যাজাব বলা হয়েছে, পরস্ত্রী ব্যাভিচারের জন্যে নয়।
অহল্যা কৃষিকার্যের অনুপযোগী ভূমিই হোক আর অন্ধকারাচ্ছন্ন রাত্রিই হোক ইন্দ্রের অহল্যাভিগমন মানববেশি দেবরাজের দৈববৃত্তিক ক্রিয়া একথা কোনমতেই স্বতঃসিদ্ধ নয়। বরং সূর্যরূপী ইন্দ্রের ক্রিয়াবিশেষ।
No comments:
Post a Comment
ধন্যবাদ