ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণ pdf - ধর্ম্মতত্ত্ব

ধর্ম্মতত্ত্ব

ধর্ম বিষয়ে জ্ঞান, ধর্ম গ্রন্থ কি , হিন্দু মুসলমান সম্প্রদায়, ইসলাম খ্রীষ্ট মত বিষয়ে তত্ত্ব ও সনাতন ধর্ম নিয়ে আলোচনা

धर्म मानव मात्र का एक है, मानवों के धर्म अलग अलग नहीं होते-Theology

সাম্প্রতিক প্রবন্ধ

Post Top Ad

স্বাগতম

18 March, 2021

ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণ pdf

ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণ pdf
ভাগবত পুরাণ গ্রন্থের মতো ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণ গ্রন্থটির মূল উপজীব্য হলেন বিষ্ণু (বিশেষত কৃষ্ণ)। তবে এই পুরাণের কাহিনি ও কিংবদন্তিগুলি ভাগবত পুরাণ গ্রন্থের কাহিনিগুলির চেয়ে কম জনপ্রিয়। এই পুরাণের রচনাভঙ্গিমাকে “বিবর্ণ ও শিশুসুলভ” বলে উল্লেখ করা হয়। এই পুরাণের বিষয়বস্তু ও কাহিনি-বিন্যাস অন্যান্য পুরাণের তুলনায় এতটাই পৃথক যে উইলসন লিখেছেন, “ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণ গ্রন্থটির ‘পুরাণ’ আখ্যা পাওয়ার সামান্যতম যোগ্যতাও নেই।”

ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণ গ্রন্থের যে পাঠগুলি এখন পাওয়া যায়, সেটি বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, এই পুরাণে রাধার উল্লেখ পাওয়া যায়। অন্যান্য অধিকাংশ প্রধান পুরাণে রাধার কোনো উল্লেখ নেই।এই পুরাণে রাধা ও কৃষ্ণের জীবন-কেন্দ্রিক কিংবদন্তি, পূজাপদ্ধতি, পৌরাণিক উপাখ্যান ও নাটকীয় ঘটনাগুলি নথিভুক্ত করেছে। এছাড়া এই পুরাণে আলোচিত হয়েছে নীতিকথা, ধর্ম, চতুরাশ্রম বর্ণ ও মূল আখ্যায়িকার সঙ্গে যুক্ত উৎসবগুলির কথা। এই পুরাণে উল্লিখিত বিবরণগুলি থেকে বোঝা যায় যে, খ্রিস্টীয় ২য় সহস্রাব্দের মধ্যবর্তী সময়ের তান্ত্রিক ধারণাগুলির বিকাশ এবং চৈতন্য মহাপ্রভু প্রমুখ ভক্তিবাদী ধর্মগুরুদের সম্পর্কে পুরাণকার অবহিত ছিলেন বা এঁদের বা এগুলির দ্বারা প্রভাবিত হয়েছিলেন। অন্যান্য প্রধান পুরাণগুলি বিশ্বকোষতুল্য গ্রন্থ হলেও, এই পুরাণটি সেই রকম নয়। এই কারণে মনে করা হয় যে, এই পুরাণের মুখ্য অংশটি সম্ভবত ১৫শ বা ১৬শ শতাব্দীর রচনা।

যদিও তার আগেও এই পুরাণের অস্তিত্ব ছিল বলে মনে করা হয়। এই পুরাণের প্রাচীনতর পাঠটি সম্ভবত খ্রিস্টীয় ৮ম থেকে ১০শ শতাব্দীর মধ্যবর্তীকালে সম্পূর্ণ হয়েছিল। হাজরার মতে,৭০০ খ্রিষ্টাব্দ নাগাদ এই পুরাণের একটি পাঠের অস্তিত্ব ছিল। যদিও পরবর্তী কয়েক শতাব্দী ধরে এই পুরাণ কয়েকবার বড়সড় পরিমার্জনার মধ্যে দিয়ে যায়। সম্ভবত ভারতীয় উপমহাদেশের বাংলা অঞ্চলে এই পুরাণ পরিমার্জিত হয়। এই পুরাণের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত আরেকটি গ্রন্থ রয়েছে। সেটি হল ব্রহ্মকৈবর্ত পুরাণ। এটি অপেক্ষাকৃত আধুনিক কালে রচিত। তবে দক্ষিণ ভারতে এই পুরাণের অনেকগুলি পাঠ পাওয়া যায়। আদি ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণ নামে কয়েকটি পাণ্ডুলিপি পাওয়া যায়। এগুলির রচনাকাল সঠিক জানা যায় না। এটিকেই সম্ভবত প্রাচীনতর ও মূল পুরাণ মনে করা হয়। তবে ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণ নামে যে গ্রন্থটি ১৮টি মহাপুরাণের অন্তর্গত, তার থেকে এটির বিষয়বস্তু বিশেষ খুব আলাদা।

ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণ গ্রন্থের প্রাচীনতর পাঠটি অতীতে প্রভাবশালী ছিল। কারণ ১৫শ ও ১৬শ শতাব্দীর নিবন্ধ গ্রন্থকারেরা স্মৃতিচন্দ্রিকা প্রভৃতি গ্রন্থে এমন প্রায় ১,৫০০ শ্লোক উদ্ধৃত করেছিলেন, যা তারা এই পুরাণ থেকে গ্রহণ করেছেন বলে দাবি করেন। যদিও এর মধ্যে মাত্র ৩০টি শ্লোকই এই পুরাণের বর্তমান পাঠে পাওয়া যায়। তাই মনে করা হয়, ১৫শ বা ১৬শ শতাব্দীর পরে এই পুরাণের একটি বড়ো অংশ পুনর্লিখিত হয়েছিল।

হাজরার মতে, এই পুরাণের অন্তর্ভুক্ত স্মৃতিশাস্ত্র-মূলক অধ্যায়গুলি সম্ভবত ১৬শ শতাব্দীর পর সংযোজিত হয়। এই আধুনিক অংশে “বর্ণসংকর, নারীর কর্তব্য, বর্ণসমূহের কর্তব্য, আশ্রমধর্ম, পূজা ও ব্রাহ্মণ মাহাত্ম্য, নরক ও পরলোকতত্ত্ব এবং দান মাহাত্ম্য” বর্ণিত হয়েছে।প্রচলিত পাণ্ডুলিপির স্মৃতিশাস্ত্র-মূলক অধ্যায়গুলির মধ্যে মাত্র দুটি (৪। ৮ ও ৪। ২৬) প্রাচীনতর পাঠগুলিতে পাওয়া যায়। এগুলি ব্রত-সংক্রান্ত।

ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণের কৃষ্ণ কুব্জার সংবাদে কৃষ্ণ কুব্জার চরম অশ্লিল সঙ্গমের বর্ণনা পাওয়া ঠিক পর্ণওগ্রাফির মতো। ডাঃ শ্রী রাম আর্য কৃষ্ণ জী কে পুরাণে কিভাবে কলঙ্কিত করা হয়েছে তা দেখাতে "পুরাণের কৃষ্ণ" বই রচনা করেন। বইটির ১০ ম পৃষ্ঠায় তিনি  কৃষ্ণ কুব্জার রমণ  বিষয়ক নোংরা অশ্লিল বর্ণনা তুলে ধরেন।  কিন্তু পুরাণ প্রিয় পাখন্ডি সে অশ্লিলতা কে ঢাকতে মনগড়া কিছু গল্পের অবতারনা করেন ঠিক যেন শাক দিয়ে মাছ ঢাকার মতো। কৃষ্ণ কুব্জার সঙ্গম টা এ স্থল থেকে  পড়ে নিন সবাই।

এর প্রেক্ষিতে পাখন্ডি লিখেছে -///ব্রহ্মবৈবর্ত্তপুরাণের শ্রীকৃষ্ণজন্মখণ্ডের পূর্বের খণ্ড তথা প্রকৃতিখণ্ডের ৩৪শ অধ্যায় দেখা হয় তবে পাওয়া যাবে এখানে শ্রীকৃষ্ণ পরব্রহ্ম হিসাবে উল্লেখিত হয়েছে। শুধু এখানেই নয়, উনার অভিযোগ সম্পর্কিত অধ্যায় তথা ব্রহ্মবৈবর্ত্তপুরাণের শ্রীকৃষ্ণজন্মখণ্ডের ৭২য় অধ্যায়েও শ্রীকৃষ্ণকে পরব্রহ্ম হিসাবে উল্লেখ করা হয়েছে, কিন্তু এটাকেও উনি উপেক্ষা করলেন। ব্রহ্মবৈবর্ত্তপুরাণে উল্লেখিত এই কৃষ্ণটি কে?

→ সর্ব্বান্তরাত্মা, সর্ব্বকারণের কারণ, অনাদি, সর্ব্ববিদ, সর্ব্বরূপধারী, নিত্যরূপী, নিত্যদেহ যুক্ত, নিত্যানন্দময়, নিরাকার, নিরঙ্কূশ, নির্গুণ, নিরান্দ্রয়, নির্লিপ্ত, সর্ব্বাধার, পুরুষ-প্রকৃতি স্বরূপ, নিরঞ্জন.....ইত্যাদি শব্দগুলো ব্যবহৃত হয়েছে কৃষ্ণের বর্ণনার জন্য। যা স্পষ্টত প্রমাণ করে ব্রহ্মবৈবর্ত্তপুরাণে উল্লেখিত এই কৃষ্ণ শব্দটির দ্বারা পরব্রহ্মকেই বোঝানো হয়েছে।

তিনি (উল্লেখিত কৃষ্ণ) নিরাকার কিন্তু ভক্তজনের প্রতি অনুগ্রহার্থে মূর্তি ধারণ করেন এবং ভক্তগণ ভক্তিপূরিত চিত্তে তাকে যেরূপে ধ্যান করেন তিনি সেই রূপে প্রকাশিত হয়। এইভাবে তিনি তার স্বীয় মায়াকে আশ্রয় করে গোপাল বেশে মর্ত্ত্যলোকে অবতীর্ণ হয়েছেন।

Note :- এখানে কৃষ্ণ কোনো অবতার নয়! বরং পরব্রহ্মের একটি নাম। বাস্তবে এই কৃষ্ণ নিরাকার (আকার নির্ণয় করা দূঃসাধ্য) কিন্তু ভক্তগণ ভক্তিপূরিত চিত্তে তাকে যেরূপে ধ্যান করে তিনি ভক্তের কাছে সেই রূপে প্রকাশিত হন।///

জবাব : 

আচ্ছা পাখন্ডি মহাশয় কৃষ্ণকে পরব্রহ্ম বলা হয়েছে বেশ এতে কি প্রমাণ হল ? আপনি নিরাকারবাদ ঝাড়লেন অথচ আপনি এটা সম্পূর্ণ এড়িয়েই গেলেন // এইভাবে তিনি তার স্বীয় মায়াকে আশ্রয় করে গোপাল বেশে মর্ত্ত্যলোকে অবতীর্ণ হয়েছেন। // যা আপনি নিজেই লিখেছেন এতেই প্রমাণ হল ঐ কৃষ্ণ কোন নিরাকার নয় বরং দেহধারী।

 ঐ বিশেষণসমূহের পরেই তাঁর গোপ বেশের কথা বলাই আছে এমনকি তাঁর পরেই দৈহিক বর্ণনাও বিদ্যমান। এখানে পাখন্ডি মহাশয় নিরাকার নির্গুণ দেখিয়ে দেহধারীর বর্ণনাগুলো কে আড়াল করে ভন্ডামী করেছে মাত্র।

ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণ প্রকৃতি খণ্ড অধ্যায় ৩৪ শ্লোক ৩২-৩৬

ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণ pdf
ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণ pdf

ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণ শ্রীকৃষ্ণ জন্ম খণ্ড অধ্যায় ১ শ্লোক ৮-১৬ স্পষ্ট বলা আছে এই কৃষ্ণ যিনি এতশত উপাধি পেলেন তিনি কোথায় কার ঘরে অবতার নিয়েছেন অর্থাত সেই কৃষ্ণ যাকে ভণ্ড ব্যাখ্যাকার কেবল নিরাকার বলেছেন তাঁর দেহধারী প্রমাণ হল


ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণ শ্রীকৃষ্ণ জন্ম খণ্ড অধ্যায় ৩ শ্লোক নং ৬০-৬১ এতে কৃষ্ণের ভারতে অবতারের কথা রয়েছে অর্থাত, পুরাণকারের মতে এতেও দেবেশ্বর প্রভৃতি বর্ণনা করেই অবতার তথা দেহধারী বর্ণিত হয়েছে



পুরাণকার এই অভিশাপ দিতেও ছাড়েননি অবতার হওয়ার জন্য দেখুন তো এতে কোথাও নিরাকার নির্গুণ ঈশ্বর পাওয়া যায় নাকি দেহধারী কৃষ্ণ পাওয়া যায় ?


এর পর পাখন্ডিটা লিখেছে -/// যদি এই ব্রহ্মবৈবর্ত্তপুরাণের ৭২য় অধ্যায়টি প্রথম থেকে পড়েন তবে পাবেন এখানে অক্রূরের সাথে শ্রীকৃষ্ণের মথুরা গমনের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। এরপর যাত্রারত শ্রীকৃষ্ণ পথের ধারে অতি জরাতুরা বৃদ্ধা কুব্জাকে দেখতে পান। এই কুব্জা তখন ছিলো বিকৃতাকার এবং অতি নত হয়ে দণ্ডের সাহায্যে গমন করছিলেন। তিনি শ্রীকৃষ্ণের আগমনের জন্য হাতে সুগন্ধি দ্রব্য, মকরন্দ, কস্তুরী ও কুক্কুম একটি স্বর্ণ পাত্রে নিয়ে অপেক্ষা করছিলেন। শ্রীকৃষ্ণকে দেখে তিনি ভক্তিপূর্ণ হৃদয়ে তাকে প্রণাম করেন। শ্রীকৃষ্ণের দৃষ্টিমাত্রই সেই বৃদ্ধা কুব্জা নব-যৌবন সম্পন্না হয়ে উঠেন। তিনি ভক্তিপূর্ণ হৃদয়ে করজোড়ে শ্রীকৃষ্ণের পিছনে গমন করতে থাকেন, পরে শ্রীকৃষ্ণ তাকে আশ্বাস প্রদান করেন ও স্থানান্তরে গমন করেন এবং কুব্জাও নিজ ভবনে ফিরে গেলেন।

Note :- ব্রহ্মবৈবর্ত্তপুরাণ ৭২.২৮ এখানে বলা হচ্ছে শ্রীকৃষ্ণ কুব্জাকে আশ্বাস দিয়েই রথে করে ফিরে গেলেন এবং কুব্জাও নিজ ভবনে ফিরে গেলেন। অর্থ্যাৎ বাস্তবিক দিক দিয়ে শ্রীকৃষ্ণ ও কুব্জা আর একস্থানে নেই।

এরপর কুব্জা তার ভবনে গিয়ে দেখেন ভগবানের আর্শীবাদে তার ভবন রত্নসাজে সজ্জিত হয়েছে এবং তার সেবার জন্য বহু দাসী অপেক্ষারত। তিনি সেই ভবনের বিলাসিতা উপভোগ পূর্বক নিদ্রামগ্ন হলেন। এরপর নিদ্রেশ্বর হরি প্রীত মনে কুব্জার ভবনে গমন করলেন।

এই অংশটি সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ কারণ প্রথমত এখানে বলা হয়েছে কুব্জা নিদ্রামগ্ন, দ্বিতীয়ত শ্রীকৃষ্ণ এখানে উল্লেখিত হয়েছে "নিদ্রেশ্বর" (নিদ্রার ঈশ্বর) হিসাবে। অর্থ্যাৎ পুরাণের ভাষাই কুব্জা এখানে নিদ্রামগ্ন, তা বাস্তবে কৃষ্ণমগ্ন। সহজ ভাবে বলতে গেলে কুব্জার স্বপ্নে কৃষ্ণ আর্বিভূত হয়েছে, বাস্তবে নয়! কারণ বাস্তবে তখন অক্রূর শ্রীকৃষ্ণ ও বলরামকে মথুরাতে নিয়ে যাচ্ছিলো কংসের দরবারে পেশ করার জন্য, যার জন্য যাত্রা পথে শ্রীকৃষ্ণ কুব্জাকে আশ্বাস দিয়েই প্রস্থান করেছিলো।///


জবাবঃ


পাখন্ডি মহাশয় এখানে স্পষ্টতর স্বীকার করলেন কৃষ্ণ অক্রুরের সাথে রথে ফিরে গেলেন।  আচ্ছা পাখন্ডি মশাই যেখানে আপনার মতে কৃষ্ণ নিরাকার  ব্রহ্ম তিনি কোন অক্রুরের রথে চড়েছিলেন?  স্পস্টতই এখানে অবতার কৃষ্ণের বর্ণনা যিনি কংস বধ করতে অক্ররের রথে মথুরা গিয়েছিলেন। এর পর কুব্জা ও কৃষ্ণের সঙ্গম মিথ্যা প্রমাণ করতে পাখন্ডি বলেছে // কৃষ্ণ কুব্জাকে আশ্বাস দিয়েই রথে করে ফিরে গেলেন এবং কুব্জাও নিজ ভবনে ফিরে গেলেন। অর্থ্যাৎ বাস্তবিক দিক দিয়ে শ্রীকৃষ্ণ ও কুব্জা আর একস্থানে নেই।// - সম্পূর্ণ ভুল তথ্য।  কারন তখন  অক্রুর কৃষ্ণের অনুমতি নিয়ে স্বগৃহে গমন করেন পরে শ্রীকৃষ্ণও কুবিন্দ নামক কোন বৈষ্ণবের গৃহে সানন্দে নন্দ বলদেব ও গোপবৃন্দের সহিত উপস্থিত হলেন। দেখুন -  ( ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণ শ্রীকৃষ্ণ জন্ম খণ্ড অধ্যায় ৭২ শ্লোক ৫০-৫২)



অতপর সকলে উত্তম মিষ্টান্ন ভোজন পূর্বক শয়ন করিয়া নিদ্রিত হইলেন।  এদিকে কুব্জাও নিদ্রিতা হইলে, নিদ্রেশ্বর শ্রী কৃষ্ণ সানন্দে তাহার নিকট গমন পূর্বক দেখিলেন,  কমলার ন্যায় সুন্দরী কুব্জা দাসীগণে পরিবৃতা হইয়া রত্নশয্যায় নিদ্রিতা রহিয়াছেন।  তখন জগন্নাথ কৃষ্ণ, দাসীগণের নিদ্রা ভঙ্গা না করিয়া কেবল প্রিয়া কুব্জারই নিদ্রা ভঙ্গ করত বলিলেন,  মহাভাগে। নিদ্রা পরিত্যাগ পূর্বক শৃঙ্গার দান করো। দেখুন -  (ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণ শ্রীকৃষ্ণ জন্ম খণ্ড অধ্যায় ৭২ শ্লোক নং ৫২-৫৬)



পাঠকগণ লক্ষ্য করুন - পাখন্ডি বলেছে কুব্জার সাথে কৃষ্ণের সঙ্গম ঘটেছে স্বপ্নে বাস্তবে নয়, কিন্তু এখানে স্পষ্টতর ভাবে বলা আছে কৃষ্ণ কুব্জার নিকট গমন করেন এবং দাসীগণকে না জাগিয়ে শুধু কুব্জাকে জাগালেন এবং শৃঙ্গার প্রার্থনা করেন।  তাহলে কোন মূর্খ বলবে এটা স্বপ্নে ঘটেছে ?  এটা যে স্বপ্নের ঘটনা নয় তা ভাগবতের প্রমাণ দ্বারা আরো পরিষ্কার হবে। ভাগবতে এই ঘটনা সংক্ষিপ্ত আকারে এসেছে।  শুকদেব পরীক্ষিৎ কে ঘটনার বর্ণনা এভাবে করেন -

এরপর সর্বদর্শী ভগবান শ্রীকৃষ্ণ, সৈরিন্ধ্রী কু্ব্জা তার সঙ্গে মিলনের আকাক্ষায় একান্ত ব্যাকুল হয়ে রয়েছে জেনে তার প্রিয় সম্পাদন অর্থাৎ অভিলাষ পুরণের ইচ্ছায় তার গৃহে গমন করেন। তারপর কুব্জা শ্রীকৃষ্ণকে যথোচিত স্বাগত অভ্যর্থনা জানিয়ে সুন্দর আসনাদি নিবেদন করে তার পুজা করেন। দেখুন - ভাগবত ১০।৪৮।১-৩।


পাঠকগণ দেখুন এই ঘটনা কিন্তু কোন স্বপ্নের নয় বরং বাস্তব ঘটছে। এরপর কুব্জা স্নান, অঙ্গরাগ, বস্ত্র,  অলংকার, মালা তাম্বুল ইত্যাদি দ্বারা নিজ দেহের প্রসাধন সম্পাদন করে লীলাপূর্ণ সলল্জ হাসি এবং হাব ভাবের সঙ্গে ভগবানের প্রতি দৃষ্টিপাত করতে করতে তার কাছে এলো। তখনও অবশ্য নবসঙ্গমের লজ্জা এবং ভীরুতায় কুব্জা কিছুটা সংকুচিত হয়েছিলো। তাই ভগবান স্বহস্তে তার কঙ্কণশোভিত কর গ্রহন করে তাকে শয্যায় বসালেন এবং তার সাথে ক্রিড়া করলেন।  দেখুন ভাগবত ১০।৪৮। ৫-৬।




লক্ষ করুণ পাঠকগণ - এখানে কুব্জার নিজ দেহ কে বিভিন্ন প্রসাধনে সজ্জিত করা এবং লজ্জাবনত মুখ,  নবসঙ্গমের ভীতি এবং কৃষ্ণের ক্রিড়া সমস্তই প্রমাণ করছে বাস্তব ঘটনা এটা। ঠিক যেন নব পতির নিকট পত্নির গমনের চিত্রাঙ্কন।  কিন্তু পাখন্ডির প্রিয় পুরাণের বর্ণনাতে পাখন্ডি নিজেই লজ্জা পেয়ে দোষ ঢাকতে স্বপ্ন বলে চালিয়ে দিলেন।

ভাগবত 10.48.6-8 এ কুব্জা ও শ্রীকৃষ্ণ নিয়ে যা আছে তা গৌড়ীয় টীকা ভাষ্য মতে নিচে পড়ুন সাথে শ্রীধর স্বামী কৃত টীকা দেওয়া হল










এতে কি কোথাও আধ্যাত্মিকতা বা রূপক পেলেন ? ভাগবতের শ্রীধর টীকা সর্বমান্য চৈতন্য চরিতামৃত ৩.৭.১১৫ [ISKCON Edition] মতে শ্রীধর ব্যাখ্যা যে না মানে সে নাকি বেশ্যার সমতুল্য !!


ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণ pdf


আমরা শ্রীধর টীকাও দিয়েছি তিনিও কোথাও রূপক বা আধ্যাত্মিক বলেননি বরং সত্যিকার কাহিনী অনুযায়ী বলেই ব্যাখ্যা করেছেন


 শ্রীধর টীকা

এর পর পাখন্ডি টা লিখেছে - /// এরপর শ্রীকৃষ্ণ কুব্জাকে জাগান (বাস্তবে নয়,স্বপ্নে) এবং বলেন কুব্জা পূর্বজন্মে রাবণ ভগিনী শূর্পণখা ছিলেন। তখন শ্রীকৃষ্ণ রামাবতারে আর্বিভূত হয়ে হয়ে পিতৃসত্য পালনার্থে বনবাসী হয়েছিলেন। সেই সময়ে শূর্পণখা শ্রীরামের সহিত সম্ভোগ কামনায় তপস্যা করেছিলো, যা শূর্পণখার তখন পূর্ণ হয়নি। তাই শ্রীকৃষ্ণ এখন স্বয়ং এসেছেন তন্নিবন্ধন সুখ সম্ভোগ দান করে জরামৃত্যু বিবর্জ্জিত অতি দুর্লভ মদীয় গোলক ধামে নিয়ে যেতে। এরপর কুব্জার সাথে শ্রীকৃষ্ণ কামক্রিয়া করেন এবং ক্রিয়া শেষে কুব্জা গোলক ধামে গমন করেন।///


জবাব :


আচ্ছা পাখন্ডি মহাশয়  এই অপ্রাকৃত তথ্য আপনিও  কি স্বপ্নে পেয়েছেন ? কু্ব্জা কৃষ্ণের সঙ্গম টা যে সম্পূর্ণ জাগ্রত অবস্থায় হয়েছে তা আমরা আগেই প্রমাণ করেছি। সম্ভোগের পূর্বে কুব্জাকে কৃষ্ণ তার পূর্ব জন্মের ঘটনা স্মরণ করে দেয়। অর্থাৎ রামাবতার কালে কুব্জা সূর্পনখা ছিলেন তখন রাম কে প্রাপ্তের জন্য তিনি কঠোর তপস্য করেন।  তারই ফল স্বরূপ দ্বাপরে কৃষ্ণ তাহার কামনা পূরণ করতে কুব্জার সাথে সম্ভোগ করেন। এখানে একটা বিষয় লক্ষ্য করুন আপনারা কুব্জা(সূর্পনখা) কিন্তু রামকে চেয়েছিলেন বাস্তবে কোন স্বপ্নে নয়।  তাই কুব্জার প্রার্থনা বাস্তবেই পূরণ হওয়া উচিৎ এবং তাহাই ঘটেছে। দেখুন - (ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণ শ্রীকৃষ্ণ জন্ম খণ্ড অধ্যায় ৭২ শ্লোক নং ৫২-৫৬)



ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণ pdf



 কিন্তু মূর্খ পাখন্ডি সূর্পনখার কামনা কে পূরণ করিয়ে দিলেন স্বপ্নে। ব্যাপার টা এমন যে, ধরুণ আমি খুব ক্ষুধার্থ এবং  স্বপ্নে বহু খাবার খেলাম।  তাহলে আমার ক্ষুধা আদৌ কি নিবৃত্তি হলো?  এরকম ভাবে  কুব্জার বাস্তবে প্রার্থিত কামনা কে এই মুর্খ টা স্বপ্নে পূরণ করালেন।


এর পর পাখন্ডি টা লিখেছে ///দ্বিতীয় আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এখানে বলা হচ্ছে কৃষ্ণের সাথে স্বপ্নে কাম ক্রিয়া করেই কুব্জা গোলক ধামে গমন করেছিলো। এখানে উল্লেখিত গোলক ধাম বলতে শ্রীকৃষ্ণের শ্রীনিবাস কে বোঝানো হয়েছে, অর্থ্যাৎ যদি সহজভাবে বলি তবে শ্রীকৃষ্ণকে প্রাপ্তিই হল গোলক ধামে গমন। আর পূর্বেই আমি প্রমাণ দেখিয়েছি ব্রহ্মবৈবর্ত্তপুরাণে শ্রীকৃষ্ণ বলতে পরব্রহ্মকে বোঝানো হয়েছে। এই পরব্রহ্ম প্রাপ্তি কেই ভগবদ গীতার ভাষাই মোক্ষ বলে। সুতরাং ভগবদ গীতার ভাষাই "মোক্ষ" ও ব্রহ্মবৈবর্ত্তপুরাণের ভাষাই "গোলক ধামে গমনের" মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই। অর্থ্যাৎ কুব্জা এখানে প্রকৃতপক্ষে "মোক্ষ" লাভ করেছে, যেটাকে ব্রহ্মবৈবর্ত্ত পুরাণকার ব্যাখ্যা করেছে কামক্রীড়ার মাধ্যমে। স্বপ্নে কৃষ্ণের সাথে কামক্রিয়া করেই কেনো মোক্ষ প্রাপ্তি হচ্ছে? → এখানে উল্লেখিত কাম কোনো কামই নয়!! প্রথমত ঘটনাটি ঘটছে কুব্জার স্বপ্নে অর্থ্যাৎ ইহা বাস্তবিক নয়, কাল্পনিক।

দ্বিতীয়ত ভগবদ গীতা ১৬.২১ তে উল্লেখ আছে কাম হল নরকের দ্বার গুলির মধ্যে একটি। সুতরাং কামে প্রবৃত্তের ফলাফল মোক্ষ নয়, বরং কামে নিবৃত্তির ফলাফল হল মোক্ষ।///


জবাব :

বরাবরই পাখন্ডি কুব্জার সাথে ঘটিত কাম ক্রিড়াকে স্বপ্ন বলে চালিয়ে এসেছে। এই ঘটনা স্বপ্নে ঘটেছে এরকম কোন প্রমাণই পাখন্ডি দেন নি। শুধু মাত্র কৃষ্ণকে নিদ্রেশ্বর বলে ঘটনাটি স্বপ্নে transferকরেছে। এভাবে যদি দেখা হয় তাহলে গীতার ১।২৪ শ্লোকে অর্জুন কে গুড়াকেশ বলা হয়েছে যার অর্থ হচ্ছে - গুড়াকা = ( নিদ্রা,  আলস্য)  তাহার ঈশ অর্থাৎ নিদ্রাকে যিনি জয় করেছেন।  এখন কি আমরা বলবো যে, অর্জুন মূলত স্বপ্নে যুদ্ধ করেছে বাস্তবে নয়?   বরং আমরা ভাগবত আর পুরাণ থেকেই দেখিয়েছি জাগ্রত অবস্থায় উক্ত সম্ভোগ সংগঠিত হয়েছে। সম্ভোগের শেষ পর্যায়ে কুব্জা মুর্ছিত হয়ে পড়েন। তারপর প্রভাতকালে কৃষ্ণের এরূপ ব্যতিক্রম দর্শনে লজ্জায় মলিন হয়ে পড়েন। এবং গোলক হতে রথ নেমে আসে তাতে করে কুব্জা গোলকে গমন করেন।  দেখুন -  (ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণ শ্রীকৃষ্ণ জন্ম খণ্ড অধ্যায় ৭২ শ্লোক নং ৬৫-৬৯।


ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণ pdf


এখানে পাখন্ডি মহাশয় গোলক ধামকে মোক্ষ বলে চালাচ্ছেন যদিও বৈষ্ণব মতে মোক্ষ টা কৈতব প্রধান। এরপর  গীতার ১৬।২১ শ্লোক দেখিয়ে বলছে যে,  কাম ক্রোধ নরকের দ্বার এতে মোক্ষ হয় না সুতরাং কুব্জা কাম ক্রিড়া করেন নি। বেশ ভালো কথা, এখানে পূর্বতর কিছু বিষয়ের উপর আলোকপাত দরকার।  প্রথমত রামাবতার কালে সূর্পনখা (কুব্জা)  কি চেয়েছিলেন?  সূর্পনখা চেয়েছিলেন রামের সহিত সম্ভোগ যার জন্য তিনি কঠোর তপস্য করেন  তারই ফল স্বরূপ দ্বাপরে কুব্জার সহিত এই সম্ভোগ। দ্বিতীয়ত কুব্জার সাথে কৃষ্ণের যখন সাক্ষাতকার হয় তখন কুব্জা ছিলেন অতি বৃদ্ধা  কিন্তু কৃষ্ণের কৃপাতে তিনি নব যৌবনা হয়ে ওঠেন।  এখানে কুব্জার শেষ জীবনে পুণরায় তাকে নব যৌবনা বানানোর কি প্রয়োজন ছিলো?  বৃদ্ধাবস্থায় তিনি যোগ অবলম্বন করে গোলকে যেতে পারতেন না?? না কি সমস্ত মুনি ঋষিরা বৃদ্ধাকালে নব যৌবন লাভ করে গোলকে যান?  মূলত এখানে কুব্জাকে নব যৌবন প্রদান করার কারণ হচ্ছে যাতে তিনি সম্ভোগ সুখ পূর্ণভাবে লাভ করতে পারেন। নতুবা নব যৌবন প্রদানের উদ্যেশ্য কি?  আর কুব্জা কাম ক্রিড়ার ফলে গোলকে যান নি গিয়েছে তার তপস্যার প্রভাবে। এখানে সম্ভোগ টা তো ছিলো সেই কামনার ফল যেটা তিনি রামাবতার কালে চেয়েছিলেন। তাইতো সম্ভোগের সময় কৃষ্ণ কুব্জাকে বলেন -


অধুনা সুখসম্ভোৎ কৃত্বা গচ্ছ মমালয়ম্।

সুদর্লভঞ্চ গোলকং জরামৃত্যুহরম্ পরম্।। ৫৮


অর্থাৎ এক্ষণে আমার সহিত তুমি সুখ সম্ভোগ করিয়া জন্ম মৃত্যু জরা শূণ্য সুদূর্লভ মদীয় লোকে গমণ করো। 


 আর এভাবে জাগতিক ক্রিড়ার অন্তে কুব্জা গোলকে গমন করেন।




পাখন্ডি বলে - /// বৈষ্ণবদের গৌতমীয় তন্ত্রেই আছে :- অর্থ্যাৎ ষড়ঙ্গ যোগ সাধনই হল মৈথুন সাধন। ব্রহ্মবৈবর্ত্তপুরাণে কৃষ্ণই পরব্রহ্ম, তাই কুব্জা এখানে কৃষ্ণেকেই অবলম্বন করে যোগবলে ষড়ঙ্গ যোগ সাধন করেছে। যার বর্ণনা পুরাণকার কৃষ্ণের সাথে কামক্রীড়ার মাধ্যমে দিচ্ছে, কারণ পুরাকার ষড়ঙ্গ যোগ সম্বন্ধে পরিচিত এবং তিনি তার দৃষ্টিকোণ সাপেক্ষে ইহার বর্ণনা দিচ্ছেন। এই যোগ সাধনের ফলেই কুব্জা মোক্ষ বা গোলক ধামে যাত্রা করতে সক্ষম হয়েছিলো।///


জবাব : এখানে পাখন্ডির সর্বোচ্চ ভন্ডামীর ফাঁস করা হবে। পাখন্ডি গৌতমীয় তন্ত্রের নাম করে ষড়ঙ্গ যোগের কথা বলে যেটাকে মৈথুন সাধন বলে চালাচ্ছেন সেটা মূলত নিগমানন্দ রচিত " তান্ত্রিকগুরু" বই থেকে। ভন্ডটা ভেবেছে তার এই ভন্ডামী কেউ ধরতে পারবে না।  আপনাদের দেখানোর জন্য উক্ত পৃষ্ঠার ছবি তুলে ধরা হলো -


এখানে না আছে শ্লোকের রেফারেন্স আর না আছে কোন তন্ত্রের নাম।  আর  ষড়ঙ্গ যোগের কথা যেটা পাখন্ডি বলছে তা হচ্ছে  মূলত অষ্টাঙ্গ যোগেরই অঙ্গ।  পতঞ্জলি যোগদর্শনের ২।২৯ এ অষ্টাঙ্গ যোগের বর্ণনা করা হয়েছে।  যথাঃ


যমনিয়মাসনপ্রাণায়ামপ্রত্যাহারধারণাধ্যনসমাধয়োহষ্টাবঙ্গানি।। ২।২৯

অর্থাৎ যম, নিয়ম, আসন, প্রাণায়াম, প্রত্যাহার, ধারণা, ধ্যান ও সমাধি এই অষ্ট যোগাঙ্গ।






এই সূত্রের টীকাই হরিহরানন্দ বিদ্যারণ্যক বলেছেন -



"শাস্ত্রান্তরে যোগের ষড়ঙ্গ কথিত হইয়াছে বলিয়া বৃথা কেহ কেহ আপত্তি করেন। ভাঙ্গিয়া চুরিয়া যাহাই যোগাঙ্গ করা যাউক না,  এই অষ্টাঙ্গের অন্তর্গত সাধন কাহারও অতিক্রম করিবার সম্ভবনা নাই।  মহাভারতেও আছে "বেদেষু চাষ্টতুণিণা যোগমাঙ্গর্মনীষিণঃ অর্থাৎ বেদে যোগ অষ্টাঙ্গ বলিয়া মনীষিগনের দ্বারা কথিত হয়।"






কিন্তু এই মূর্খ পাখন্ডি নিগমনানন্দের তান্ত্রিক গুরু বই পড়ে বারংবার কল্পনা মিশ্রিত ষড়ঙ্গ যোগ কে হাইলাইট করছেন।  এবং পুরাণকারকে তালগাছে চড়িয়ে দিয়ে বলছেন পুরাণকার ষড়ঙ্গ যোগ সমন্ধ্যে পরিচিত তাই তার দৃষ্টি সাপেক্ষে বর্ণনা করছেন।  মানে পুরাণকারের সাথে গলায় গলায় ভাব দেবার চেষ্টা। পুরাণের এই কামক্রিড়ার বর্ণনাকে যোগ বলে চালাতে তন্ত্রিকগুরু বই থেকে যে শ্লোকটা পাখন্ডি মার্ক করেছেন তা হচ্ছে - "যোগক্রিয়ার তত্বাদিন্যাস নাম আলিঙ্গন, ধ্যানের নাম চুম্বন, নৈবেদ্যের নাম অনুলেপন, আবাহন শীৎকার ,জপের নাম রমণ, দক্ষিণান্তের নাম রেতঃপাতন এই ষড়ঙ্গ যোগসাধনই মৈথুন "




তন্ত্র রচিয়তা ধুতি বাঁচাতে কি রকম শ্লোক রচনা করেছে দেখলেন তো?


এখানে ষড়ঙ্গ যোগ গুলোর যে নাম গুলো দেওয়া হয়েছে তা হচ্ছে - তত্বাদিন্যাস,  ধ্যান, নৈবেদ্য, আবাহন, জপ, দক্ষিণান্ত।


 কিন্তু ষড়ঙ্গ যোগ আদৌ কি এসব?


এ বিষয়ে গোরন্ধ্র বলেন -


আসং প্রাণসংরোধঃ প্রত্যাহারশ্চ ধারণা।

ধ্যানং সমাধিরেতানি যোগাঙ্গানি স্মৃতানি ষট্।।


অর্থাৎ আসন, প্রাণ সংরোধ (প্রাণায়াম্) প্রত্যাহার, ধারণা, ধ্যান ও সমাধি এই ষড়ঙ্গ যোগ।



 


                                                 যোগতত্ত্ব বারিধি -সুরেন্দ্রমোহন ভট্টাচার্য


গৌতমীয় তন্ত্র নিজস্ব বৈষ্ণবীয় পথকেই সর্বোত্তম বলে অন্য পথকে নিচু করেছে-







  গৌতমীয় তন্ত্র 1.10-11




গৌতমীয় তন্ত্র কৃষ্ণকে ঐ নিরাকার নয় বরং অবতার ও সাকার বলে-







   গৌতমীয় তন্ত্র 33.123


গৌতমীয় তন্ত্রে ষড়ঙ্গ নয় বরং অষ্টাঙ্গ যোগই বর্ণিত-







                                                           

  গৌতমীয় তন্ত্র 34.11-14


তন্ত্র রচিয়তার সাথে কি ষড়ঙ্গ যোগের মিল খুজে পেলেন আপনারা? তন্ত্র রচিয়তা ধূর্তামির সাথে সম্ভোগের কাম ক্রিড়ার শব্দ গুলোকে যোগের অঙ্গের সাথে মিল করেছেন। যেমন ধরুন  তন্ত্রকার  চুম্বন কে ধ্যান বললেন,  কিন্তু চুম্বন শব্দের সাথে ধ্যান শব্দের কি কোন ধাতুগত অথবা অর্থগত কোন মিল রয়েছে?  যদি না থাকে তবে তন্ত্রকার কেন চুম্বন কে ধ্যান বললেন?  এর কারণ হচ্ছে কোন নোংরামী কে যেন সহজেই আড়াল করা যায়।  আর সেই সাথে পাখন্ডিও গলার সূর বাজিয়ে কৃষ্ণ কুব্জার সম্ভোগ কে যোগ বলে চালিয়ে দিলেন। কিন্তু পুরাণকার স্পষ্টই যে সম্ভোগ আদি শব্দ আলিঙ্গন, চুম্বন ইত্যাদি বলতে কোন ধ্যান বা যোগ কে বুঝান নি তার প্রমাণ দেখুন -


রাসলীলাকালীন - কৃষ্ণ গোপনীদের নববিধ আলিঙ্গন, অষ্ট প্রকার চুম্বন এবং ষোড়শ প্রকার শৃঙ্গার দান করেন। যাহা কামশাস্ত্রে নিরুপিত আছে তাহা থেকেও অধিকরূপে গোপীগণের সহিত বিহার করেন। দেখুন -শ্রীকৃষ্ণ জন্ম খণ্ড অধ্যায় 28  শ্লোক নং 110-114








                                                     

এখানে অষ্ট প্রকার চুম্বনের কথা স্পষ্ট ভাবে বলা হয়েছে।  কিন্তু পাখন্ডি এখন বলতে পারেন  তো কি হয়েছে আট প্রকার ধ্যান এগুলো।  কিন্তু ওহে পাখন্ডি মশাই এর পর পুরাণকার বলে দিলেন যাহা কামশাস্ত্রে নিরুপিত আছে ।  আপনি যোগশাস্ত্র এনে চুম্বন  কে ধ্যান বলে চালিয়ে দিলেন অথচ পুরাণকার বলে দিলেন এটা কামশাস্ত্রের বর্ণিত বিহার।  আমরা যদি কামশাস্ত্র দেখি সেখানে বহুবিধ চুম্বনের বর্ণনা পাবো।  যেমন - উদভ্রান্ত, অঘপীড়িতক,অবপীড়িতক, কর্ষন চুম্বন, উত্তর চুম্বন, সম্পুট চুম্বন ইত্যাদি। এগুলো sensitive বিষয় তাই বিস্তারিত বর্ণনা করা হলো না। নিচের ছবি থেকে আপনারা পড়ে নেবেন।






শ্রীকৃষ্ণ জন্ম খণ্ডের ১১৫ নং অধ্যায়  শ্লোক নং ৬১ [ কিছু এডিশনে ৬২]  এ বাণাসুর দাবি করেছিল কৃষ্ণ রমণ করে কুব্জাকে মেরে ফেলেন

  






এ অনিরুদ্ধ বাণাসুরকে জবাব দেন কুব্জা নাকি আগের জন্মে তপস্যা করে  শূর্রনখা রূপে ,এজন্মে নাকি সেই সাধ পুরো করে গোলকে গিয়েছে










                           শ্রীকৃষ্ণ জন্ম খণ্ডের ১১৫ নং অধ্যায়  শ্লোক নং 93-102


মোট কথা কামশাস্ত্রে বর্ণিত সম্ভোগ কে পাখন্ডি যোগ বলে চালানোর যে আপ্রাণ চেষ্টা করলেন তার সে গুড়ে বালি।


শেষে পাখন্ডি বলেছে  /// এছাড়া শ্রীচৈতন্যচরিতামৃতে উল্লেখ আছে :-

"আত্মেন্দ্রিয় প্রীতি ইচ্ছা তারে বলি কাম।

কৃষ্ণেন্দ্রিয় প্রীতি ইচ্ছা ধরে প্রেম নাম।।

কামের তাৎপর্য্য নিজ সম্ভোগ কেবল।

কৃষ্ণসুখ তাৎপর্য্য মাত্র প্রেমত প্রবল।।"

তাই এখানে কুব্জা কৃষ্ণ প্রেমের মাধ্যমে কৃষ্ণসুখ লাভ করতেই সক্ষম হয়েছে। সহজ ভাবে বলতে গেলে পরব্রহ্মের প্রতি ভক্তি, পরব্রহ্মের সাথে মিলন যার ফলাফল হল পরমানন্দ বা মোক্ষ। যোগদর্শন ও উপনিষদের ভাষাই জীবাত্মার সাথে পরমাত্মার মিলনই হলো মোক্ষ লাভ। কুব্জা হল এখানে সেই অপেক্ষারত জীবাত্মা এবং কৃষ্ণই হল পরমাত্মা। তাই যখন ষড়ঙ্গ যোগ সাধনে দ্বারা মিলন সম্পন্ন হয়, তখনই জীবাত্মার বা কুব্জার মোক্ষ প্রাপ্তি হয় বা গোলক ধামে যাত্রা করতে পারে।///


জবাব :

আচ্ছা বেশ আপনি তবে চৈচঃ দিয়ে কৃষ্ণ কুব্জার সম্ভোগ কে প্রেম বুঝাচ্ছেন। আচ্ছা আপনার চৈঃ চঃ এর প্রথম লাইনেই বলা হয়েছে " "আত্মেন্দ্রিয় প্রীতি ইচ্ছা তারে বলি কাম"  এখানে  সুর্পনখা (কুব্জা) তো রামের সহিত সম্ভোগের উদ্যেশ্যেই তপস্যা করেছিলেন। তবে এখানে স্পষ্টতর কুব্জার আত্মেন্দ্রিয় প্রীতির ইচ্ছাই প্রকাশ পাচ্ছে।  এর পরের লাইনে বলা হচ্ছে - "কৃষ্ণেন্দ্রিয় প্রীতি ইচ্ছা ধরে প্রেম নাম।।" আচ্ছা কৃষ্ণের ইন্দ্রীয়ের প্রীতি টা কি? কৃষ্ণ কি কখনো কুব্জার সাথে সম্ভোগ ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন?  যদি প্রকাশ করতেন তখন না হয় বোঝা যেত কুব্জা কৃষ্ণের ইন্দ্রীয়ের প্রীতির জন্য সম্ভোগ করেছেন।  কিন্তু ঘটনা তার উল্টো বরং কৃষ্ণ কুব্জার সম্ভোগ ইচ্ছা পূর্ণ করার জন্য কুব্জার সাথে সম্ভোগ করেন। এর পরের দুটি লাইন বলছে - কামের তাৎপর্য্য নিজ সম্ভোগ কেবল। কৃষ্ণসুখ তাৎপর্য্য মাত্র প্রেমত প্রবল।।" শেষ লাইনের অর্থ হচ্ছে  কৃষ্ণ সুখের জন্য যাহা করা  হয় তার নাম প্রেম। আচ্ছা কৃষ্ণের সুখ কি সম্ভোগে?  তিনি কি কখনো ভক্তের কাছে সম্ভোগ আশা করেন?  গীতার কৃষ্ণের তো আমরা এরকম বচন শুনি নি।   সম্ভোগের ইচ্ছা ছিলো তো স্বয়ং কুব্জার কৃষ্ণ যা কৃষ্ণ সম্পন্ন করেন। তো এবার কুব্জার ইন্দ্রীয় প্রীতি ইচ্ছাকে  কি বলবেন?


আর উক্ত উদ্ধৃতিতে তো স্পষ্টরূপে কুব্জাকে কামুকি বলা আছে।  যথা -  "নগ্নাং চকার শৃঙ্গারং চুম্বনঞ্চাপি কামুকীম্।। ৫৯।।" অর্থাৎ সেই কামুকী কুব্জাকে কুব্জা নগ্ন করে শৃঙ্গার ও চুম্বন করতে লাগলেন। শ্লোক থেকে স্পষ্ট যে কুব্জা কামুকী ছিলেন। কিন্তু   এসব রতিক্রিড়ার বর্ণনাকে মূর্খ পাখন্ডি যোগ বলে চালাচ্ছেন। পাখন্ডি বলছেন - এটা জীবাত্মা আর পরমাত্মার মিলন।  আচ্ছা পাখন্ডি মশাই এখানে দৈহিক মিলন ঘটছে না কি আত্মিক মিলন।  নগ্ন করা,  চুম্বন করা, স্তন ক্ষত বিক্ষত করা এগুলোে যোগের কোন ধাপের বর্ণনা বলবেন কি? আপনি যে ষড়ঙ্গ যোগের কথা বলছেন তাতে কি এসব ঘটনার বিবৃতি আছে?  এখন নিজ ধুতি রক্ষা করতে ছলনার আশ্রয় নিয়ে তন্ত্রের কথা বলে সাধারন স্তরের পাঠকদের ভুলাতে পারলেও বিচারশীল মানুষ কে পারবেন না।  কেননা তারা আপনার ভন্ডামী সহজেই ধরতে পারবে।


শেষে পাঠকদের উদ্যেশ্যে কিছু কথা বলতে চাই - আমাদের এ লেখায় আপনাদের অনেকেই মনে করতে পারেন আমরা কৃষ্ণকে সবার নিকট খারাপ ভাবে উপস্থিত করছি।  কিন্তু এ উপস্থাপন কিন্তু আমরা করিনি,  করেছে স্বয়ং পুরাণ।   আমরা শ্রীকৃষ্ণে অবশ্যই মান্য করি এবং  শ্রদ্ধা করি কিন্তু সেই কৃষ্ণকে যিনি মহাভারতে হস্তে ন্যায় দণ্ড ধারণ করেছেন দুষ্টের দমন করে ধর্ম প্রতিষ্ঠা করেছেন।  কিন্তু সেই কৃষ্ণ কে পুরাণে নোংরা ভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে। তার প্রেক্ষিতে এক ভন্ড পাখন্ডি আর্যদের গালিগালাজ করে নোট লিখে সর্বত্র প্রচার করছে।  তারই জবাব প্রদান করতে আমরা এসব তথ্য তুলে ধরতে বাধ্য হয়েছি।  পাঠক মনে আঘাত লাগলেও কথা গুলো সত্য তাই আপনারা নিজে থেকে উপরোক্ত তথ্য যাচাই করবেন।

pdf:-
FileDescriptionSizeFormat 
Title Page.pdfআখ্যাপত্র40.32 kBAdobe PDFView/Open
Content Page.pdfসূচীপত্র149.2 kBAdobe PDFView/Open
Chapter 1_430 - 519p.pdf৪৩০ - ৫১৯পৃ.3.99 MBAdobe PDFView/Open
Chapter 2_520 - 621p.pdf৫২০ - ৬২১পৃ.4.25 MBAdobe PDFView/Open
Chapter 3_622 - 778p.pdf৬২২ - ৭৭৮পৃ.6.66 MBAdobe PDFView/Open
Chapter 4_779 - 883p.pdf৭৭৯ - ৮৮৩পৃ.4.33 MBAdobe PDFView/Open
Chapter 5_884 - 1037p.pdf৮৮৪ - ১০৩৭পৃ.6.59 MBAdobe PDFView/Open
Chapter 6_1038 - 1164p.pdf১০৩৮ - ১১৬৪পৃ.5.18 MBAdobe PDFView/Open
Chapter 7_1165 - 1410p.pdf১১৬৫ - ১৪১০পৃ.10.07 MBAdobe PDF


1 comment:

  1. সত্য কথাগুলো যুক্তির সাথে তুলে ধরার জন্য ধন্যবাদ।

    ReplyDelete

ধন্যবাদ

বৈশিষ্ট্যযুক্ত পোস্ট

ব্রহ্মচর্যের সাধনা ভোজন

  নবম ভাগ ভোজন ভূমিকা - "ধর্মার্থকামমোক্ষাণামারোগ্যম্ মূলমুত্তমম্" . ধর্ম-অর্থ-কাম আর মোক্ষ এই পুরুষার্থচতুষ্টয় হল মানব জীবনের উ...

Post Top Ad

ধন্যবাদ