বিয়ের সময় ভগবান রাম ও মাতা সীতার বয়স - ধর্ম্মতত্ত্ব

ধর্ম্মতত্ত্ব

ধর্ম বিষয়ে জ্ঞান, ধর্ম গ্রন্থ কি , হিন্দু মুসলমান সম্প্রদায়, ইসলাম খ্রীষ্ট মত বিষয়ে তত্ত্ব ও সনাতন ধর্ম নিয়ে আলোচনা

धर्म मानव मात्र का एक है, मानवों के धर्म अलग अलग नहीं होते-Theology

সাম্প্রতিক প্রবন্ধ

Post Top Ad

স্বাগতম

21 December, 2018

বিয়ের সময় ভগবান রাম ও মাতা সীতার বয়স

শঙ্কাঃ 

বিবাহের সময় না কি শ্রীরাম এবং মাতা সীতার বয়স যথাক্রমে ১৩ এবং ৬ বছর ছিলো।  

এই শঙ্কার মূল উৎপত্তি হলো রামায়নের অরণ্যকান্ড ৪৭।৪-১০ মধ্যে

এই শ্লোক কে বিচার করার পূর্বে আমরা রামায়নের মধ্যে থেকে বেশ কিছু শ্লোক সমীক্ষা করে দেখবো -

কুৎসাকারীরা বাল্মিকি রামায়নের অরণ্য খন্ড, ৪৭ অধ্যায়ের ৪ নং শ্লোক দেখিয়ে এক মূর্খামো অঙ্ক কষে মাতা সীতার বয়স ওদের নবীর স্ত্রী আয়েশার বিবাহের বয়সের সমান দেখাতে চাই। বাস্তবে এই ১২ বছর টি "ইশ্বাকূণাম" ইশ্বাকু রাজবংশের অর্থ্যাৎ শ্রী রামের পিতার উদ্দেশ্যে বলা হয়েছে।
মুলত অনলাইনের হিন্দুদের শাস্ত্র সম্পর্কে কোন জ্ঞান না থাকার কারনে এবং জীবনেও এরা ধর্মগ্রন্থকে চোখের সামনে না দেখার কারনে এই বাটপার মিথ্যাচার করার সুযোগ পেল। ও বলল, এখানে নাকি রামের বাবার কথা বলা হয়েছে। নীচে স্ক্রীনশট দিলাম, নিজেরাই দেখুন এখানে কার সম্পর্কে বলা হয়েছে, রাম ও সীতার সম্পর্কে, রামের বাবার সম্পর্কে নয়।

অর্থাৎ ১২ বছর পর্যন্ত সে ঈশ্বকুশ(রামের বাবা) এর প্রাসাদে অর্থাৎ শশুরবাড়িতে রয়েছে।
আর সে রামের সাথে বনবাসে গিয়েছে তখন তার বয়স ছিল ১৮,
এবার নিজেই হিসেব করুন ১৮-১২= ৬ বছর। অর্থাৎ সীতার বিয়ের সময় বয়স ছিল ৬ বছর।
আর এই স্পষ্ট রেফারেন্সই দেখি আমরা স্কন্দ পুরানে, যেটার রেফারেন্স মেইন নোটটিতে দিয়েছিলাম। যেহেতু এটা হুবহু রামায়নে উল্লখিত সীতার বয়সের হিসাবকেই সাপোর্ট করে তাই, এটা ভুল হবার কোন কারন দেখি না।

বিয়ের সময় ভগবান রামের ছিলো ২৫ বৎসর এবং মা সীতার ছিলো ১৬ বৎসর।
মাতা সীতার স্বয়ংম্বরে বিশ্বামিত্র রাম ও লক্ষণকে নিয়ে জনকপুরীতে উপস্থিত হলে রাজা জনক তাদের দেখে একথা বলেন-
" হে মুনিবর! হস্তি এবং সিংহের সমান চলনশীল, দেবতার সমান পরাক্রমি তথা অশ্বিনী কুমারের মতো সমান সুন্দর এবং যৌবন কে প্রাপ্ত এই দুই কুমার কে?

গজসিংহগতী বীরৌ মার্ভূল বৃষভৌপমৌ।
যদমপত্রবিশালাক্ষী খঙ্গাতুণীর্ধনুর্ধারী।।
অশ্বিনাবিব রূপেন সমুপস্থিতযৌবনৌ।
যদৃচ্ছেবর্ণা প্রাপ্তৌ দেবলোকদিবামরৌ।।
(বাল্মিকী রামায়নঃ বাল কান্ড ৫০।১৮-১৯)

এখানে "সমুপস্থিতযৌবনৌ" শব্দটি বিশেষ রূপে দ্রষ্টব্য। কারন ইহাতে স্পষ্ট হয় যে, সেই সময় রাম ও লক্ষণ দুজনেই যুবাবস্থায় প্রবেশ করেছিলো। এবং জনক পুরী প্রবেশের পূর্বে অনেক রাক্ষস সংহার করেছিলো। তারপর সয়ম্বরে অনেক শূরবীর শিব ধনুক কে উত্তোলন করতে অসমর্থ হলে রামচন্দ্র সেটা সহজেই উত্তোলন করেন। ইহাতে রামচন্দ্রের অতুল বলশালী হবার সাথে সাথে যৌবন প্রাপ্ত হবার প্রমাণ মেলে।
যখন বিশ্বামিত্র রাজকুমারীর ধনুক দেখতে ইচ্ছা ব্যক্ত করলেন। তখন রাজা জনক সীতার বিবাহের সন্দর্ভে ধনুক ভঙ্গের চর্চা করে বললেন -
ভূতত্ত্নাদুত্থিতাং তাং তু বর্দ্বমানাং মমাত্মজাম্।
বরয়া মসুরাগত্য রাজানো সুনিপুঙ্গতা।।
(বাল কান্ড ৬৬।১৫)

যখন আমার কন্যা সীতা বর্দ্ধমানা = প্রাপ্তযৌবনা হয় তখন বহু রাজা তাহার পাণিগ্রহনের জন্য আসে। পরে (ধনুক উঠানোর অসমর্থতার কারনে) সবাই অসফল হন।
মূল শ্লোকে বর্দ্ধমানা শব্দ এসেছে । টীকাকার এর অর্থ যৌবন সম্পন্ন করেছে। আবার অনেকে প্রাপ্তযৌবনা করেছে। ইহাতে স্পষ্ট জানা যায় যে, "শ্রী রাম চন্দ্রের সাথে মাতা সীতার বিবাহের পূর্বে তাদের শরীরে যৌবনের সূত্রপাত হয়েছিলো। আর একটি শ্লোক দ্বারা ইহা আরো স্পষ্ট হয় -
পতিসংযোগসুলভা বয়োবেক্ষ্য পিতা মম।
চিন্তামজ্যগমদ্দীনো বিত্তনাশদি বা ধন।।
(অযোধ্যাকান্ড ১১৮।৩৪)
সীতা অনুসূয়াকে বলছেন - পিতা যখন আমাকে পতি সংযোগ সূলভ দেখন তো বড় চিন্তিত হতেন। আমার পিতার ঐরূপ দুঃখ হতো যেমন কোন দরিদ্রের ধন নাশ হয়েছে।
.
শ্লোকটিতে সীতাকে পতিসংযোগ সূলভ বয়স বলা হয়েছে। এর সহজ অর্থ বিবাহ যোগ্য বয়স অর্থাৎ পতির সাথে সংযোগ বা গর্ভাধানে সমর্থ হওয়ার বয়স। এই বিষয়ে শুশ্রুত সংহিতাই লেখা আছে -
"পঞ্চবিংশো ততো বর্ষ পুমাণ নারী তো ষোড়শে"
অর্থাৎ পুরুষের জন্য এই অবস্থা ২৫ বর্ষ হবার পর এবং স্ত্রীর জন্য ১৬ বর্ষ হবার পর আসে।
অর্থাৎ ইহাতে স্পষ্ট হয় যে মাতা সীতা তখন যৌবন সম্পন্না ছিলেন।
.
এবার আসি আরোপকৃত শ্লোকটির সত্যতা নিয়ে যেখানে রামচন্দ্র ও মাতা সীতার বয়স বিবাহের সময যথাক্রমে ১৩ ও ৬ বলা হয়েছিলো। রামায়নের কোন কোন সংস্করনে পঞ্চবিংশক স্থলে সপ্তবিংশক পাঠও দেখতে পাওয়া যায়।

শ্রীরামচন্দ্রের বনগমনের সময় কৌশল্যা রাম কে বলেন - "দশসপ্ত চ বর্ষাণি তব জাতস্য রাঘব ; অযোধ্যাঃ ২০।৪৫"। অর্থাৎ তোমার জন্ম (দ্বিজের মাধ্যমে দ্বিতীয় জন্ম) হয়ে ১০+৭ = ১৭ হয়েছে। একাদ্দশোরাজন্যম (রঘুকুলের মান্য পরম্পরা অনুসারে) ক্ষত্রিযের উপনয়ন সংস্কার ১১ বছরে হয়। এই প্রকার রামায়ন অনুসারে রামের বনগমনের সময় ১১+১৭= ২৮ বর্ষ ছিলো।

অপরদিকে মাতা সীতার বিবাহের সময় বয়স ৬ বছর ছিলো তা উপরোক্ত বিবরন থেকে অশুদ্ধ প্রমাণিত হয়। কারন ৬ বছরের কোন বালিকাকে "পতি সংযোগ সুলভ বয়স" হিসেবে ধরা হয় না।

এটা ঠিক ১৬ বছর বয়সকেই ধরা হয়ে থাকে। আরো একটা বিষয় লক্ষ্যণীয় যে, মাতা সীতারা চার বোন ছিলো এবং সীতা সবার জ্যেষ্ঠ এবং শ্রূতকীর্তি সবার কনিষ্ঠ ছিলো। এবং চার বোনের বিবাহ একসাথে সম্পন্ন হয়।

একটা সাধারন হিসেব মতে যদি বিবাহের সময় সীতার বয়স ৬ বছর ধরা হয় তবে শ্রুতকীর্তির বিবাহের বয়স আনুমানিক ছিলো ৩-৪ বছর। একটি ৩-৪ বছরের বালিকার বিবাহ কি আদৌ সম্ভবপর হতে পারে?

এবার বাল্যবিবাহ নিয়ে বেদ কী সিদ্ধান্ত দিচ্ছে তা আমরা জানব। “ব্রহ্মচর্যেণ কন্যা যুবানং বিন্দতে পতিম।
অনডৃবান্ ব্রহ্মচর্যেনাশ্বো ঘাসং জিগীর্ষতি॥”
(অথর্ববেদ: কাণ্ড-১১/ বর্গ-৫/ মন্ত্র-১৮)
অনুবাদ: ব্রহ্মচর্য অবলম্বন করার পর কুমারী কন্যা যুবা পতিকে লাভ করবে। বলবান্ ও বুদ্ধিমান্ ব্যক্তিই ভোগ্য পদার্থকে সম্যক ভোগ করতে পারে। (http://www.onlineved.com/atharva-ved/?language=2...)
“য়ুবা সুবাসাঃ পরিবীত আগাৎ স উ শ্রেয়ান ভবতি জায়মানঃ ।
তং ধীরাসঃ কবয় উন্নয়ন্তি স্বাধ্যো মনসা দেবয়ন্তঃ ॥”
(ঋগ্বেদ: মণ্ডল-৩/ সূক্ত-৮/ মন্ত্র-৪)
অনুবাদ: যে পুরুষ সর্বতােভাবে যজ্ঞােপবীত ধারণ ও ব্রহ্মচর্য সেবন দ্বারা বিদ্বান্ এবং সুশিক্ষিত হয়ে, সুন্দর বস্ত্র পরিধানপূর্বক, ব্রহ্মচর্যযুক্ত পূর্ণ যৌবন প্রাপ্ত হয়ে, বিদ্যাগ্রহণ করে গৃহাশ্রমে প্রবেশ করেন, তিনিই দ্বিতীয় বিদ্যাজন্মে প্রসিদ্ধি লাভ করে অতিশয় শােভাযুক্ত ও মঙ্গলকারী হন। উত্তম ধ্যানযুক্ত বিজ্ঞান দ্বারা বিদ্বানেরা সেই পুরুষকে উন্নতিশীল করে প্রতিষ্ঠিত করেন। আর যে স্ত্রী পুরুষ ব্রহ্মচর্য ধারণ, বিদ্যা এবং সুশিক্ষা গ্রহণ না করে বাল্যাবস্থায় বিবাহ করে তারা নষ্ট ও ভ্রষ্ট হয়ে বিদ্বান্ ব্যাক্তিদের মধ্যে সম্মান লাভ করে না। (http://www.onlineved.com/rig-ved/?language=2...)
অর্থাৎ আমরা বেদে পেলাম বিদ্যা গ্রহণ এবং ব্রহ্মচর্য পালনপূর্বক পূর্ণ যৌবন প্রাপ্ত হলে তবেই পুরুষ এবং স্ত্রী বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হবে। এখানে বাল্যবিবাহের কোনো উপদেশ নেই। এবার আমরা উত্থাপিত প্রশ্ন মীমাংসা করব।
শঙ্কা: রামচন্দ্র যখন সীতাকে বিয়ে করে তখন সীতার বয়স ছিল ৬ বছর (রেফারেন্স: বাল্মিকীর রামায়ণ: অরন্য খণ্ড: ৩.৪৭.৩-১০; স্কন্দ পুরাণ, ৩.২.৩০.৮-৯)।

সমাধানঃ
সঠিক রেফারেনন্স অরণ্যকাণ্ড: ৪৭/১০। এই রেফারেন্স অনুসারে রামায়ণে আমরা পাই, রাবণ মাতা সীতাকে হরণ করার পূর্বে উনার পরিচয় জিজ্ঞাসা করেন। মাতা সীতা নিজেই আত্মপরিচয় দিতে শুরু করেন। কারণ মাতা সীতার ধারণা ছিল, রাবণ ব্রাহ্মণ। ব্রাহ্মণকে আত্মপরিচয় না দিলে অভিশাপ দিতে পারেন। তাই রাবণকে নিজের পরিচয় দিচ্ছেন এভাবে... “আমি মহাত্মা জনকের কন্যা এবং শ্রীরামের প্রিয়া, আমার নাম সীতা। ইক্ষ্বাকুবংশীয় (রামচন্দ্রের) রাজভবনে ১২ বছর ভোগ্য বিষয়সমূহ ভোগ করার পর যখন শ্রীরামচন্দ্রকে রাজ্যে অভিষিক্ত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, তখন কৈকেয়ী রাজা দশরথের কাছে শ্রীরামের বনবাস চাইলেন এবং আমাদের বনবাস হয়। বনবাসের সময় আমার পতির বয়স ২৫ এবং আমার বয়স ছিল ১৮।”
অর্থাৎ বর্তমান বয়স থেকে রাজ্যভোগের ১২ বছর বাদ দিলে বিবাহের সময় সীতার বয়স: ১৮-১২=৬ এবং শ্রীরামচন্দ্রের বয়স ২৫-১২=১৩ বছর।
এবার এই শ্লোকের (অরণ্যকাণ্ড: ৪৭/১০) বিচার করার পূর্বে রামায়ণ থেকে আরো কিছু তথ্য জানা প্রয়োজন।
মাতা সীতার স্বয়ংম্বরে বিশ্বামিত্র রাম ও লক্ষণকে নিয়ে জনকপুরীতে উপস্থিত হলে রাজা জনক তাদের দেখে জিজ্ঞাসা করেন... “হে মুনিবর! দেবতুল্য পরাক্রমশালী, হস্তির ন্যায় দৃঢ় অথচ ধীর গতিসম্পন্ন, শ্রেষ্ঠ অস্ত্রসকল, ধনুর্ধারী বীর, যৌবনপ্রাপ্ত এবং পদ্মপত্রের ন্যায় নয়নযুক্ত, এদের দেখে মনেহচ্ছে দেবতা মর্ত্যে অবতীর্ণ হয়েছেন। এরা কারা?” এই প্রশ্নের জবাবে বিশ্বামিত্র রাম-লক্ষনের সিদ্ধাশ্রমে বাস, রাক্ষস নিধন, অহল্যাকে দর্শন ইত্যাদি বর্ণনা করলেন।
সুতরাং এখানে শ্রীরামচন্দ্র বীর যুবক। এবার সীতা মায়ের বিষয়ে জানা যাক। বিশ্বামিত্র রাজকুমারী সীতার ধনুক দেখতে চাইলেন। তখন রাজা জনক ধনুক ভঙ্গের বিষয়ে বললেন... “যখন আমার কন্যা প্রাপ্তযৌবনা হয়, তখন বিভিন্ন রাজাগণ এসে সীতাকে বিবাহ করতে চাইলেন। কিন্তু কাউকে আমি আমার কন্যা দান করিনি। তখন বিভিন্ন রাজাগণ একত্রিত হয়ে বীরত্ব প্রদর্শনের উপায় জিজ্ঞাসা করলেন। তারপর এই ধনুক নিয়ে আসা হলো। কিন্তু সকলেই ধনুক উত্তোলনে অসমর্থতার কারণে অসফল হন (বালকাণ্ড: ৬৬/১৫)।” সুতরাং এখানে মাতা সীতা যুবতী নারী।
আরো একটি শ্লোকে স্পষ্ট প্রমান রয়েছে, মাতা সীতা অনসূয়ার কাছে নিজের স্বয়ংবর বর্ণনা করে বলছেন... “পিতা যখন আমাকে পতিসংযোগসুলভ লক্ষ্য করলেন, তখন উনি চিন্তিত হলেন (অযোধ্যাকাণ্ড: ১১৮/৩৪)।” এখানে পতিসংযোগসুলভ বয়সের বিষয়ে উল্লেখ করলেন, অর্থাৎ সয়ংবরের পূর্বে মাতা সীতা গর্ভাধান সমর্থ বয়সী ছিলেন।
তাহলে অরণ্যকাণ্ড ৪৭/১০ অনুসারে মাতা সীতার বয়স ৬-এর মীমাংসা কী?
- কালোক্রমে ইতিহাস গ্রন্থগুলোতে প্রচুর প্রক্ষিপ্ততা মিশেছে, তা আমরা সবাই অবগত। বাল্মীকি রামায়ণের প্রাচীন পাণ্ডুলিপি শুদ্ধরূপে পাওয়া সম্ভব না হলেও বর্তমানে প্রাপ্ত পাণ্ডুলিপিসমূহের সাহায্যে যতটা সম্ভব শুদ্ধরূপে প্রকাশ করা সম্ভব ততটা করার লক্ষ্যেই বিগত শতকের ৬০ এর দশকে ভারতশ্রেষ্ঠ সকল গবেষকগণ প্রাচ্যবিদ্যা গবেষণা সংস্থা Oriental Research Institute, Baroda (BOI) থেকে প্রকাশ করে বাল্মিকী রামায়ণের এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বিশুদ্ধ পাণ্ডুলিপি Critical Edition Of Ramayana. ১৯৬৫ সালে প্রকাশিত হয় অরণ্যকাণ্ড সংবলিত ৩য় খণ্ড। সেই অরণ্যকাণ্ডের ৪২টি প্রাচীন পাণ্ডুলিপি সারাদেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে গবেষকরা সংগ্রহ করতে থাকেন এক যুগ ধরে। সেগুলোর পর্যাপ্ত বিশ্লেষণ শেষে দেখা যায় তুলনামূলক বিশুদ্ধ পাণ্ডুলিপিগুলো যেমন নেপালি লিপি, সারদা লিপি, মৈথিলী ও দেবনগরী লিপিতে পূর্বে উল্লেখিত ৪৭ নং সর্গের ৪নং শ্লোক উষিত্বা দ্বাদশ সমা ইক্ষ্বাকুণাং নিবেশনে বা আমি এখানে আসার আগে ১২ বছর ইক্ষাকু কূলে (শ্বশুরালয়ে) কাটিয়ে এসেছি অংশটি নেই, নেই প্রাচ্যবিদ গ্যাস্পার গোরেসিও এর অষ্টাদশ শতকের রামায়ণ পাণ্ডুলিপিতেও। বরং সেই শ্লোকের স্থানে বিশুদ্ধ পাণ্ডুলিপিসমূহ অনুযায়ী BOI এর প্রকাশিত বাল্মীকি রামায়ণ (৩য় খণ্ড) ৩.৪৫.৪ নং শ্লোকে রয়েছে-
संवत्सरं चाध्युषिता राघवस्य निवेशने |
সংবৎসরং চাধ্যুপিতা রাঘবস্য নিবেশনে।
অর্থাৎ রাঘবালয়ে (শ্বশুরবাড়িতে) সীতা ১ বছর ছিলেন, তারপর বনবাসে এলেন। এখান থেকে দেখে নিতে পারেন >> https://archive.org/.../RmyaaCriticalE.../page/n311/mode/2up
অর্থাৎ ১২ বছর শ্বশুরালয়ে ছিলেন-এই শ্লোকটি বিশুদ্ধ পাণ্ডুলিপিতে নেই, আছে ১ বছর শ্বশুরালয়ে ছিলেন, তারপরই বনবাস হয়। বিশুদ্ধ পাণ্ডুলিপিতে নেই ইক্ষাকুণাং শব্দটিও, আছে রাঘবস্য। তাহলে বনবাসকালে রাবণকে মা সীতার বলা উক্ত শ্লোকটি দিয়ে আমরা হিসাব করলে পাই, বিয়ের সময় শ্রীরাম ও মাতা সীতার বয়স ছিল যথাক্রমে- ২৫-১ = ২৪ বছর ও ১৮-১= ১৭ বছর।
তবে চমকপ্রদ বিষয় হলো ১০ নং শ্লোকটির দুইটি অংশ-
১) মম ভর্তামহাতেজা বযসা পঞ্চবিংশকঃ৷৷ (অর্থাৎ শ্রীরামের বয়স তখন ২৫) এবং
২) অষ্টাদশ হি বর্ষাণি মম জন্মনি গণ্যতে৷ (মাতা সীতার বয়স ১৮)।
এর মধ্যে অষ্টাদশ হি বর্ষাণি মম জন্মনি গণ্যতে অংশটিও Baroda প্রকাশিত বিশুদ্ধ পাণ্ডুলিপিতে নেই! অর্থাৎ বনবাসের সময় শ্রীরামের বয়স এই শ্লোক অনুযায়ী ২৫ হলেও মাতা সীতার বয়স যে ১৮ ছিল তার প্রমাণ নেই। আর এরপরেও শ্লোকাংশটিকে গণনা করা হলে বিয়ের সময় মাতা সীতার বয়স দাঁড়ায় ১৭।
তাহলে স্কন্ধ পুরাণের রেফারেন্স দিয়ে যে সীতার বয়স ৬ বছর উল্লেখ হয়েছে তার মীমাংসা কী?
- যেহেতু শ্রীরাম এবং সীতার প্রামাণ্য জীবনী গ্রন্থ রামায়ণ থেকে এটি প্রমাণিত যে সীতার বয়স ৬ বছর ছিল না, সেহেতু পুরাণে দৃষ্টি দেওয়ার কোনো কারণ নেই। কেননা পুরাণসমূহ প্রচুর পরিমানে এডিট হয়েছে এবং এগুলোর অধিকাংশই প্রামাণ্য নয়। যেমন উক্ত রেফারেন্সর টীকায় অনুবাদক নিজেই বলেছেন “এই পুরাণ লেখার সময়কালে বাল্যবিবাহের প্রথা এখানে প্রতিফলিত হয়েছে।” অর্থাৎ এটি পরবর্তী সংযোজন। এখানে মূল শ্লোকের অনুবাদ এবং টীকা পাবেন >> https://www.wisdomlib.org/.../the-skanda.../d/doc423651.html
সুতরাং উক্ত আলোচনা থেকে আমরা পেলাম মাতা সীতা বিবাহের সময় কখনোই ৬ বছরের বালিকা ছিলেন না, তিনি যুবতী কন্যা ছিলেন।

No comments:

Post a Comment

ধন্যবাদ

বৈশিষ্ট্যযুক্ত পোস্ট

অথর্ববেদ ২/১৩/৪

  ह्यश्मा॑न॒मा ति॒ष्ठाश्मा॑ भवतु ते त॒नूः। कृ॒ण्वन्तु॒ विश्वे॑ दे॒वा आयु॑ष्टे श॒रदः॑ श॒तम् ॥ ত্রহ্যশ্মানমা তিষ্ঠাশ্মা ভবতুতে তনূঃ। কৃণ্বন্তু...

Post Top Ad

ধন্যবাদ