কাফের করা - ধর্ম্মতত্ত্ব

ধর্ম্মতত্ত্ব

ধর্ম বিষয়ে জ্ঞান, ধর্ম গ্রন্থ কি , হিন্দু মুসলমান সম্প্রদায়, ইসলাম খ্রীষ্ট মত বিষয়ে তত্ত্ব ও সনাতন ধর্ম নিয়ে আলোচনা

धर्म मानव मात्र का एक है, मानवों के धर्म अलग अलग नहीं होते-Theology

সাম্প্রতিক প্রবন্ধ

Post Top Ad

স্বাগতম

14 February, 2022

কাফের করা

কাফির একটি আরবি শব্দ, যা আরবি কুফর ‎ ধাতু থেকে আগত, যার শাব্দিক অর্থ হল ঢেকে রাখা, লুকিয়ে রাখা এবং এর ব্যবহারিক অর্থ হল অবাধ্যতা, অস্বীকার করা, অকৃতজ্ঞতা। ইসলামী শরীয়তের পরিভাষায় কুফর ঈমানের বিপরীত। আর তা হল আল্লাহ এবং তার রাসূলের প্রতি ঈমান না রাখা। যে ব্যক্তি আল্লাহর নাযিলকৃত দ্বীন ইসলাম বা ইসলামের কোন অংশকে, ক্বুরানুল কারীম বা এর কোন আয়াত, মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম অথবা কোন একজন নবী অথবা রাসূলকে অস্বীকার করে, ইসলামি আকিদাহ বা এর মৌলিক কোন ধর্মীয় বিশ্বাস বা অকাট্য দলিল দিয়ে প্রমানিত ইসলামের কোন বিধি-বিধানকে অস্বীকার করে, অবিশ্বাস করে, প্রত্যাখ্যান অথবা এইগুলো নিয়ে হাসি-ঠাট্টা বা অবজ্ঞা করে, নিঃসন্দেহে সে ব্যক্তি একজন কাফের। কাফের চির জাহান্নামী, সে কোনদিন জাহান্নাম থেকে বের হতে পারবেনা। অনন্তকাল সে জাহান্নামে কঠিন শাস্তি পেতে থাকবে।

কুরআন ২।৯৮ অনুযায়ী কাফের কারা দেখুনঃ
مَنۡ کَانَ عَدُوًّا  لِّلّٰہِ وَ مَلٰٓئِکَتِہٖ وَ رُسُلِہٖ وَ جِبۡرِیۡلَ وَ مِیۡکٰىلَ فَاِنَّ اللّٰہَ عَدُوٌّ  لِّلۡکٰفِرِیۡنَ ﴿۹۸﴾
মান কা-না ‘আদুওওয়াল লিল্লা-হি ওয়ামালাইকাতিহী ওয়া রুছুলিহী ওয়াজিবরীলা ওয়ামীকা-লা ফাইন্নাল্লা-হা ‘আদুওউলিললকা-ফিরীন।

যে ব্যক্তি আল্লাহর, তাঁর মালাইকা/ফেরেশতাগণের, তাঁর রাসূলগণের, জিবরাঈলের এবং মিকাঈলের শত্রু, নিশ্চয়ই আল্লাহ এরূপ কাফিরদের শত্রু।

এ বিষয়ে তাফসীর ইবনে কাসির
[যে ব্যক্তি মহান আল্লাহ্‌র, তাঁর ফিরিশতাদের ও তাঁর রাসূলগণের এবং জিবরাঈল ও মীকাইলের শত্রু সাজবে। নিশ্চয়ই মহান আল্লাহও এসব কাফিরদের শত্রু। ফিরিশতাগণের সাথে শত্রুতা পোষণের পরিণতি ইমাম আবূ জাফর তাবারী (রহঃ) বলেনঃ ‘মুফাসসিরগণ এতে একমত যে, যখন ইয়াহুদীরা জিবরাঈল (আঃ)-কে তাদের শত্রু এবং মীকাঈল (আঃ) কে তাদের বন্ধু বলেছিলো তখন তাদের এ কথার উত্তরে এ আয়াতটি অবতীর্ণ হয়। (তাফসীর তাবারী ২/৩৭৭) কিন্তু কেউ কেউ বলেন যে, নবুওয়াতের ব্যাপারে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সঙ্গে তাদের যে কথোপকথন হয়েছিলো তার মধ্যে তারা এ কথা বলেছিলো। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নবুওয়াতের ওপর কতোগুলো প্রমাণ ইবনে ‘আব্বাস (রহঃ) বলেন যে ইয়াহুদীদের একটি দল রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকট এসে বলে, আমরা আপনাকে কয়েকটি প্রশ্ন করছি যার সঠিক উত্তর নবী ছাড়া অন্য কেউ দিতে পারেনা। আপনি সত্য নবী হলে এর উত্তর দিন। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, আচ্ছা ঠিক আছে যা ইচ্ছা তাই প্রশ্ন করো। কিন্তু অঙ্গিকার করো যদি আমি ঠিক ঠিক উত্তর দেই তবে তোমরা আমার নাবুওয়াতকে স্বীকার করে আমার অনুসারী হবে তো? তারা অঙ্গিকার করে। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তখন ইয়া‘কূব (আঃ) এর মতো মহান আল্লাহকে সাক্ষী রেখে তাদের নিকট হতে সু-দৃঢ় প্রতিশ্রুতি গ্রহণ করে তাদেরকে প্রশ্ন করার অনুমতি প্রদান করেন। তারা বলে, প্রথমে এটা বলুন তো ইয়া‘কূব (আঃ) নিজের ওপরে কোন জিনিসটি হারাম করে নিয়েছিলেন? উত্তরে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তখন বললেন, শোন! যখন ইয়া‘কূব (আঃ) ভীষণভাবে ‘আরকুনসিনা’ রোগে আক্রান্ত হোন, তখন তিনি প্রতিজ্ঞা করেন যে মহান আল্লাহ যদি তাকে এ রোগ হতে আরোগ্য দান করেন তবে তিনি উটের গোস্ত খাওয়া ও উষ্ট্রীর দুধ পান করা পরিত্যাগ করবেন। আরএ দু’টি ছিলো তার খুবই লোভনীয় ও প্রিয় বস্তু। অতঃপর তিনি সুস্থ হয়ে গেলে এ দুটো জিনিস নিজের ওপর হারাম করে নেন। তোমাদের ওপর সেই মহান আল্লাহ্‌র শপথ দিয়ে বলছি, যিনি মূসা (আঃ) এর ওপর তাওরাত অবতীর্ণ করেছিলেন, সত্য করে বলতো এটা সঠিক নয় কি? তারা শপথ করে বললো, হ্যাঁ, নিশ্চিয়ই তা সত্য। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মহান আল্লাহকে সাক্ষী রেখে বললেন, হে মহান আল্লাহ! আপনি সাক্ষী থাকুন। অতঃপর তারা বলে, আচ্ছা বলুন তো তাওরাতের মধ্যে যে নিরক্ষর নবীর সংবাদ রয়েছে তার বিশেষ একটি নিদর্শন কি আর তার কাছে কোন্ ফিরিশতা ওয়াহী নিয়ে আসেন? তিনি বললেন তার বিশেষ নিদর্শন এই যে "تنام عيناه ولا ينام قلبه" যখন তার চক্ষু ঘুমিয়ে থাকে তখন তার অন্তর জাগ্রত থাকে। তোমাদেরকে সেই প্রভুর শপথ যিনি মূসা (আঃ) এর ওপর তাওরাত অবতীর্ণ করেছিলেন, বলতো এটা সঠিক উত্তর নয় কি? তারা সবাই শপথ করে বললো, আপনি সম্পূর্ণ সঠিক উত্তর দিয়েছেন তিনি বলেন, হে মহান আল্লাহ! আপনি সাক্ষী থাকুন। তারা বলে এবার আমাদেরকে দ্বিতীয় অংশের উত্তর দিন।এটাই আলোচনার সমাপ্তি টানবো। তিনি বলেন আমার বন্ধু জিবরাঈল (আঃ) আমার নিকট ওয়াহী নিয়ে আসেন এবং তিনি সমস্ত নবীর ওপরও ওয়াহী নিয়ে আসতেন। সত্য করে বলো এবং শপথ করে বলো আমার এ উত্তরটিও সঠিক নয় কি? তারা শপথ করে বললো, হ্যাঁ, উত্তর সঠিকই বটে, কিন্তু তিনি আমাদের শত্রু। কেননা তিনিই কঠোরতা ও হত্যাকাণ্ডের কারণসূমহ ইত্যাদি নিয়ে আসেন। এজন্য আমরা তাকে মানি না এবং আপনাকে ও মানবো না। তবে হ্যাঁ, যদি আপনার নিকট আমাদের বন্ধু মীকাইল (আঃ) ওয়াহী নিয়ে আসতেন তবে আমরা আপনার সত্যতা স্বীকার করতাম আপনার অনুসারী হতাম। তাদের একথার উত্তরে এ আয়াতটি অবতীর্ণ হয়। কোন কোন বর্ণনায় এও আছে যে তারা এটাও প্রশ্ন করেছিলো যে, বজ্র কি জিনিস? রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) উত্তরে বললেন তিনি একজন ফিরিশতা। তিনি মেঘের ওপর নিযুক্ত রয়েছেন এবং মহান আল্লাহ্‌র আদেশেই মেঘকে এদিক ওদিক হাকিয়ে নিয়ে যান। তারা বলে এ গর্জনের শব্দ কি? তিনি বলেন, এটা ঐ ফিরিশতারই শব্দ। (মুসনাদ আহমাদ ইত্যাদি) সহীহুল বুখারীর একটি বর্ণনায় আছে যে, যখন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মাদীনায় আগমন করেন সেই সময় ‘আবদুল্লাহ ইবনে সালাম (রাঃ) স্বীয় বাগানে অবস্থান করছিলেন এবং তিনি ইয়াহুদী ধর্মের ওপর প্রতিষ্ঠিত ছিলেন। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর আগমন সংবাদ শুনেই তিনি তাঁর নিকট উপস্থিত হোন এবং বলেনঃ ‘জনাব, আমি আপনাকে তিনটি প্রশ্ন করছি যার উত্তর নবী ছাড়া কেউই জানে না। বলুন, কিয়ামতের প্রথম লক্ষণ কি? জান্নাতবাসীদের প্রথম খাবার কি? এবং কোন জিনিস সন্তানকে কখনো মায়ের দিকে আকৃষ্ট করে এবং কখনো বাপের দিকে?’ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ ‘এ তিনটি প্রশ্নের উত্তর এখনই জিবরাঈল (আঃ) আমাকে বলে গেলেন।’ ‘আবদুল্লাহ ইবনে সালাম বলেনঃ ‘জিবরাঈল তো আমাদের শত্রু।’ তখন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এ আয়াতটি পাঠ করেন। অতঃপর তিনি বলেনঃ "أما أول أشراط الساعة فنار تحشر الناس من المشرق إلى المغرب، وأما أول طعام يأكله أهل الجنة فزيادة كبد الحوت، وإذا سبق ماء الرجل ماء المرأة نزع الولد، وإذا سبق ماء المرأة [ماء الرجل] (2) نزعت". ‘কিয়ামতের প্রথম লক্ষণ এই যে, এক আগুন বের হবে যা জনগণকে পূর্ব দিক হতে পশ্চিম দিকে নিয়ে একত্রিত করবে। জান্নাতবাসীদের প্রথম খাবার হবে মাছের কলিজা। আর যখন স্বামীর বীর্য স্ত্রীর বীর্যের ওপর প্রাধান্য লাভ করে তখন পুত্র সন্তান জন্ম গ্রহণ করে, আর যখন স্ত্রীর বীর্য স্বামীর বীর্যের ওপর প্রাধান্য লাভ করে তখন কন্যা সন্তানের জন্ম হয়।’ এ উত্তর শুনেই ‘আবদুল্লাহ ইবনে সালাম (রাঃ) মুসলিম হয়ে যান এবং পাঠ করেনঃ لَا إِلٰهَ إِلَّا اللهُ وَأَنَّ مُحَمَّدًا رَسُوْلُ الله ‘আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মহান আল্লাহ ছাড়া কেউ উপাস্য নেই এবং আরো সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আপনি মহান আল্লাহ্‌র রাসূল।’ অতঃপর তিনি বলেনঃ ‘হে মহান আল্লাহ্‌র রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! ইয়াহুদীরা খুবই নির্বোধ ও অস্থির প্রকৃতির লোক। আপনি তাদেরকে আমার সম্বন্ধে জিজ্ঞাসাবাদ করার পূর্বেই যদি তারা আমার ইসলাম গ্রহণের সংবাদ জেনে নেয় তাহলে তারা আমার সম্বন্ধে খারাপ মন্তব্য করবে। সুতরাং আপনি তাদেরকে প্রথমে জিজ্ঞাসাবাদ করুন।’ অতঃপর ইয়াহূদীরা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকট আগমন করলে তিনি তাদেরকে জিজ্ঞেস করেনঃ ‘তোমাদের মধ্যে ‘আবদুল্লাহ ইবনে সালাম কেমন লোক? তারা বলেঃ তিনি আমাদের মধ্যে উত্তম লোক ও উত্তম লোকের ছেলে, তিনি আমাদের নেতা ও নেতার ছেলে।’ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ ‘তিনি যদি ইসলাম গ্রহণ করেন তাহলে তোমাদের মত কি?’ তারা বলেঃ ‘মহান আল্লাহ তাঁকে এটা হতে রক্ষা করুন।’ অতঃপর ‘আবদুল্লাহ ইবনু সালাম বের হয়ে আসেন তিনি এতোক্ষণ আড়ালে ছিলেন এবং পাঠ করেনঃ ‘আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মহান আল্লাহ ছাড়া কেউ উপাস্য নেই এবং আরো সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর রাসূল।’ তখনই তারা বলে উঠেঃ ‘সে আমাদের মধ্যে খারাপ লোক এবং খারাপ লোকের ছেলে, সে অত্যন্ত নিম্ন স্তরের লোক।’ ‘আবদুল্লাহ ইবনে সালাম (রাঃ) তখন বলেনঃ ‘হে মহান আল্লাহ্‌র রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! আমি এই ভয়ই করছিলাম।’ (সহীহুল বুখারী ৮/৪৪৮০, ফাতহুল বারী ৭/৩১৯, ৮/১৫) একমাত্র ইমাম বুখারী (রহঃ) এ হাদীসটি বর্ণনাকারীদের ক্রমধারাসহ বর্ণনা করেছেন। ইমাম বুখারী (রহঃ) ও মুসলিম (রহঃ) আনাস (রাঃ) থেকে আরো একটি সূত্রে বর্ণনা করেছেন। (সহীহুল বুখারী ৩৩২৯, ৩৯১১, ৩৯৩৮; সহীহ মুসলিম ৩১৫) জিবরাঈল এর অর্থ ইমাম বুখারী (রহঃ) ‘ইকরামাহ থেকে বর্ণনা করে বলেন যে, إيل শব্দের অর্থ হলো ‘আল্লাহ’ আর إسرا শব্দের অর্থ হলো বান্দা। অতএব জিবরাঈল শব্দের অর্থ হলো عبد الله তথা মহান আল্লাহ্‌র বান্দা। আর মীকাঈলের নাম عبيد الله। ইমাম আহমাদ (রহঃ) ও ‘আলী ইবনে হুসাইন (রহঃ)-এর সূত্রে এমনটি বর্ণনা করেছেন। কেউ কেউ বলেন, إِيْل শব্দের অর্থ ‘দাস’ এবং এর পূর্বের শব্দগুলো মহান আল্লাহ্‌র নাম। যেমন ‘আরবী ভাষায় عَبْدُ اللهِ، عَبْدُ الرَّحْمٰن، عَبْدُ الْمَلِكِ، عَبْدُ الْقُدُّوْسِ، عَبْدُ السَّلَامِ، عَبْدُ الْكَافِى، عَبْدُ الْجَلِيْلِ ইত্যাদি। عَبْد শব্দটি সব জায়গায় একই থাকছে এবং মহান আল্লাহ্‌র নাম পরিবর্তিত হচ্ছে। এরকমই إِيْل প্রত্যেক স্থলে ঠিক আছে, আর মহান আল্লাহ্‌র উত্তম নামগুলো পরিবর্তিত হচ্ছে। ‘আরবী ভাষা ছাড়া অন্যান্য ভাষায় مُضَاف إِلَيْهِ পূর্বে এবং مُضًاف পরে এসে থাকে। এ নিয়ম এখানেও রয়েছে। যেমনঃ جِبْرَائِيْل، مِيْكَائِيْل، إِسْرَافِيْل، عَزْرَائِيْل ইত্যাদি। উক্ত ঘটনাবলী প্রসঙ্গে দ্বিতীয় উক্তি এখন মুফাসসিরগণের দ্বিতীয় দলের দালীল দেয়া হচ্ছে, যারা বলেন যে এ আলোচনা ‘উমার ইবনুল খাত্তাব (রাঃ)-এর সাথে হয়েছিলো। শা‘বী (রহঃ) বলেন, ‘উমার (রাঃ) ‘রাওহা’ নামক স্থানে এসে দেখেন যে জনগণ দৌড়াদৌড়ি করে একটি পাথরের ঢিবির পার্শে গিয়ে সালাত আদায় করছে। তিনি জিজ্ঞেস করেনঃ ব্যাপার কি? উত্তর আসে যে, এখানে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সালাত আদায় করেছিলেন। এতে তিনি অসন্তুষ্ট হোন এই জন্য যে, যেখানেই সময় হতো সেখানেই রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সালাত পড়ে নিতেন, আর তারপর সেখান হতে চলে যেতেন। এখন ঐ স্থানগুলোকে বরকতময় মনে করে অযথা সেখানে গিয়ে সালাত পড়তে কে বলেছে? অতঃপর তিনি অন্য প্রসঙ্গ উত্থাপ করেন তিনি বলেন, আমি মাঝে মাঝে ইয়াহুদীদের সভায় যোগদান করতাম এবং দেখতাম যে কিভাবে কুর’আন তাওরাতের এবং তাওরাত কুরআনের সত্যতা স্বীকার করে থাকে। ইয়াহুদীরাও আমার প্রতি ভালোবাসা প্রকাশ করতে থাকে এবং প্রায়ই তাদের সাথে আমার আলোচনা হতো। একদিন আমি তাদের সাথে কথা বলছি এমন সময় দেখি যে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ঐ পথ দিয়ে চলে যাচ্ছেন। তারা আমাকে বললো ঐ যে তোমাদের নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) চলে যাচ্ছেন। আমি বললাম, আচ্ছা আমিও যাই। কিন্তু তোমাদের এক আল্লাহ্‌র শপথ দিয়ে বলছি তোমরা মহান আল্লাহ্‌র সত্যতাকে স্মরণ করে, তাঁর নি‘য়াতরাযীর প্রতি লক্ষ্য রেখে এবং তোমাদের নিকট মহান আল্লাহ্‌র যে কিতাব বিদ্যমান রয়েছে এর প্রতি খেয়াল করে সেই মহান প্রতিপালকের নামে শপথ করে বলতো তোমরা কি মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে আল্লাহ্‌র রাসূল বলে স্বীকার করো না? তারা সবাই নীরব হয়ে যায়। তাদের বড় ‘আলেম যে তাদের মধ্যে পূর্ণ জ্ঞানের অধিকারী ছিলো এবং তাদের নেতাও ছিলো, তাদেরকে সে বলে, তোমাদের এই রূপ কঠিন কসম দেয়ার পরও তোমরা স্পষ্ট ও সঠিক উত্তর দিচ্ছো না কেন? তারা তাদের জ্ঞানী লোকটিকে উদ্দেশ্য করে বললো, জনাব! আপনি আমাদের প্রধান, সুতরাং আপনিই এর উত্তর দিন। পাদরী তখন বললো, তাহলে শুনুন জনাব ! আপনি খুব বড় শপথ দিয়েছেন। এটা তো সত্যিই যে মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যে মহান আল্লাহ্‌র রাসূল তা আমরা অন্তর থেকেই জানি। আমি বললাম, আফসোস ! জানো তবে মানো না কেন? সে বলে, এর একমাত্র কারণ এই যে, তার নিকট যে বার্তাবাহক আসেন, তিনি হচ্ছেন জিবরাঈল (আঃ)। আর তিনি অত্যন্ত কঠোর, সংকীর্ণমনা, কঠিন শাস্তি ও কষ্টের ফিরিশতা। তিনি আমাদের শত্রু আর আমরা তার শত্রু। মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট যদি মীকাঈল (আঃ) আসতেন, যিনি দয়া, নম্রতা ও শান্তির ফেরেশতা তবে আমরা তাকে স্বীকার করতে কোন দ্বিধা বোধ করতাম না। তখন আমি বললাম, আচ্ছা বলতো মহান আল্লাহ্‌র নিকট এই দু’জনের কোন সম্মান ও মর্যাদা আছে কি? সে বলে, একজন মহান আল্লাহ্‌র ডান দিকে আছেন এবং অন্য জন তাঁর বাম দিকে আছেন। আমি বললাম, সেই মহান আল্লাহ্‌র শপথ! যিনি ছাড়া সত্য কোন মা‘বূদ নেই। যে তাদের কোন একজনের শত্রু সে আল্লাহ পাকের শত্রু এবং অপর ফেরেশতারও শত্রু। জিবরাঈল (আঃ) এর শত্রু কখনো মীকাঈল (আঃ) এর বন্ধু হতে পারে না আবার মীকাইল (আঃ) এর শত্রুও জিবরাঈল (আঃ) এর বন্ধু হতে পারে না। তাদের দু’জনের কেউই মহান আল্লাহ্‌র অনুমতি ছাড়া পৃথিবীতে আসতে পারেন না বা কোন কাজ করতে পারেন না। মহান আল্লাহ্‌র শপথ ! তোমাদের প্রতি আমার কোনো লোভ এবং ভয়ও নেই। জেনে রেখো, যে মহান আল্লাহ্‌র শত্রু, তাঁর রাসূলগণের শত্রু, ফিরিশতাগণের শত্রু, জিবরাঈল (আঃ) ও মীকাঈল (আঃ)-এর শত্রু,স্বয়ং মহান আল্লাহও এরূপ কাফিরদের শুত্র“। এ বলে আমি চলে আসি। এরপর আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট পৌঁছলে তিনি আমাকে দেখেই বললেন, হে খাত্তাব এর পুত্র! আমার ওপর নতুন ওয়াহী অবতীর্ণ হয়েছে। আমি বললাম, হে মহান আল্লাহ্‌র রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! তা আমাকে শুনিয়ে দিন। তিনি তখন উপরোক্ত আয়াতটি পাঠ করে শুনিয়ে দেন। আমি তখন বলি হে মহান আল্লাহ্‌র রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! আমার বাপ মা আপনার প্রতি কুরবান হোক! এখনই ইয়াহুদীদের সাথে আমার এ কথাগুলো নিয়েই আলোচনা চলছিলো। আপনাকে এ সংবাদ দেয়ার জন্যই আমি হাজির হয়েছি। কিন্তু আমার আগমনের পূর্বেই সেই সূক্ষ্ম দর্শী ও সর্ব বিদিত মহান আল্লাহ আপনার নিকট সংবাদ পৌঁছিয়ে দিয়েছেন। (হাদীসটি য‘ঈফ। তাফসীরে ত্বাবারী-১/১৬১১, মুসনাদে ইবনে আবি হাতিম) কিন্তু এ বর্ণনাটি মুনকাতা‘ এবং মুত্তাসিল নয়। কেননা শা‘বী (রহঃ) ‘উমার (রাঃ) এর যুগ পাননি। কোন ফিরিশতাকে অন্য ফিরিশতার ওপর অগ্রাধিকার দেয়া, কোন নবীকে অন্য নবীগণের ওপর অগ্রাধিকার দেয়ার মতই, যা ঈমান না আনার পর্যায়ভুক্ত আয়াতটির ভাবার্থ এই যে, জিবরাঈল (আঃ) মহান আল্লাহ্‌র একজন বিশ্বস্ত ফেরেশতা। মহান আল্লাহ্‌র নির্দেশক্রমে তিনি তাঁর বাণী নবীগণের নিকট পৌঁছানোর কাজে নিযুক্ত ছিলেন। ফেরেশতার মধ্যে তিনি মহান আল্লাহ্‌র বার্তাবাহক। কোন একজন রাসূলের প্রতি শত্রুতা পোষণকারী সমস্ত রাসূলের প্রতি শত্রুতা পোষণকারীর অনুরূপ। যেমন একজন রাসূলের ওপর ঈমান আনলেই সব রাসূলের ওপর ঈমান আনা হয়, অনুরূপভাবে একজন রাসূলকে অস্বীকার করা মানেই সব রাসূলকেই অস্বীকার করা। যারা কোন কোন রাসূলকে অস্বীকার করে থাকে, স্বয়ং মহান আল্লাহই তাদেরকে কাফের বলেছেন। যেমন তিনি বলেনঃ ﴿اِنَّ الَّذِیْنَ یَكْفُرُوْنَ بِاللّٰهِ وَ رُسُلِه وَ یُرِیْدُوْنَ اَنْ یُّفَرِّقُوْا بَیْنَ اللّٰهِ وَ رُسُلِه وَ یَقُوْلُوْنَ نُؤْمِنُ بِبَعْضٍ وَّ نَكْفُرُ بِبَعْضٍ﴾ ‘নিশ্চয়ই যারা মহান আল্লাহ ও তাঁর রাসূলগণের প্রতি অবিশ্বাস করে এবং মহান আল্লাহ ও তাঁর রাসূলগণের মধ্যে পার্থক্য করতে ইচ্ছা করে এবং বলে, আমরা কতিপয়কে বিশ্বাস করি ও কতিপয়কে অবিশ্বাস করি। (৪ নং সূরা নিসা, আয়াত নং ১৫০) অতএব এমন আরো অনেক আয়াতে ঐ ব্যক্তিকে স্পষ্টভাবে কাফির বলা হয়েছে, যে ব্যক্তি কোন একজন নবীকে অমান্য করে থাকে। এরকমই যে ব্যক্তি জিবরাঈল (আঃ) এর শত্রু সে মহান আল্লাহ্‌রও শত্রু। কেননা তিনি স্বেচ্ছায় আসেন না। কুর’আনুল কারীমে ঘোষিত হচ্ছেঃ ﴿وَ مَا نَتَنَزَّلُ اِلَّا بِاَمْرِ رَبِّكَ﴾ ‘আমরা আপনার রবের আদেশ ব্যতীত অবতরণ করি না।’ (১৯ নং সূরা মারইয়াম, আয়াত নং ৬৪) অন্যত্র মহান আল্লাহ বলেনঃ ﴿وَ اِنَّه لَتَنْزِیْلُ رَبِّ الْعٰلَمِیْنَؕ۝۱۹۲ نَزَلَ بِهِ الرُّوْحُ الْاَمِیْنُۙ۝۱۹۳ عَلٰى قَلْبِكَ لِتَكُوْنَ مِنَ الْمُنْذِرِیْنَ﴾ ‘নিশ্চয়ই এই আল কুর’আন জগতসমূহের রাব্ব হতে অবতারিত। জিবরাঈল এটা নিয়ে অবতরণ করেছে, যাতে তুমি সতর্ককারী হতে পারো।’ (২৬ নং সূরা শু ‘আরা, আয়াত নং ১৯২-১৯৪) সহীহুল বুখারীর ‘হাদীসে কুদুসীতে আছে, মহান আল্লাহ বলেনঃ "من عادى لي وليا فقد بارزني بالحرب" ‘আমার বন্ধুদের প্রতি শত্রুতা পোষণকারী আমার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণাকারী।’ (ফাতহুল বারী ১১/৩৪৮) কুর’আনুল কারীমের এটিও একটি বিশেষত্ব যে, এটি পূর্ববর্তী সমস্ত আসমানী কিতাবের সত্যতা স্বীকার করে এবং ঈমানদারগণের জন্য এটি হিদায়াত স্বরূপ, আর তাদের জন্য জান্নাতের সুসংবাদ দিয়ে থাকে। মহান আল্লাহ বলেনঃ ﴿وَ نُنَزِّلُ مِنَ الْقُرْاٰنِ مَا هُوَ شِفَآءٌ وَّ رَحْمَةٌ لِّلْمُؤْمِنِیْنَ﴾ ‘আমি অবতীর্ণ করি কুর’আন, যা বিশ্বাসীদের জন্য সুচিকিৎসা ও দয়া।’ (১৭ নং সূরা ইসরাহ, আয়াত নং ৮২) রাসূলগণের মধ্যে মানুষ রাসূল ও ফিরিশতা রাসূল সবাই জড়িত রয়েছেন। যেমন মহান আল্লাহ বলেনঃ ﴿اَللّٰهُ یَصْطَفِیْ مِنَ الْمَلٰٓىِٕكَةِ رُسُلًا وَّ مِنَ النَّاسِ﴾ ‘মহান আল্লাহ ফিরিশতাদের মধ্যে হতে মনোনীত করেন বাণীবাহক এবং মানুষের মধ্যে হতেও।’ (২২ নং সূরা হাজ্জ, আয়াত নং ৭৫) জিবরাঈল (আঃ) ও মীকাঈল (আঃ) ফেরেশতারই অন্তর্ভুক্ত। তথাপি বিশেষভাবে তাঁদের নাম নেয়ার কারণ হচ্ছে যেন এটা পরিস্কার হয়ে যায় যে, যে জিবরাঈল (আঃ) এর শত্রু সে মীকাঈল (আঃ)-এরও শত্রু, এমনকি মহান আল্লাহ্‌রও শত্রু। মাঝে মাঝে মীকাঈল (আঃ) ও নবীগণের কাছে এসেছেন। যেমন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কাছে প্রথম প্রথম এসেছিলেন। কিন্তু ঐ কাজে নিযুক্ত রয়েছেন জিবরাঈল (আঃ)। যেমন মীকাঈল (আঃ) নিযুক্ত রয়েছেন গাছপালা উৎপাদন ও বৃষ্টি বর্ষণ ইত্যাদি কাজে। আর ইসরাফীল (আঃ) নিযুক্ত রয়েছেন শিঙ্গায় ফুঁৎকার দেয়ার কাজে। একটি বিশুদ্ধ হাদীসে আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ঘুম থেকে জেগে নিম্নের দু‘আটি পাঠ করতেনঃ اَللّٰهُمَّ رَبَّ جَبْرَائِيلَ، وَمِيكَائِيلَ، وَإِسْرَافِيلَ، فَاطِرَ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ، عَالِمَ الْغَيْبِ وَالشَّهَادَةِ، أَنْتَ تَحْكُمُ بَيْنَ عِبَادِكَ فِيمَا كَانُوا فِيهِ يَخْتَلِفُونَ، اهْدِنِي لِمَا اخْتُلِفَ فِيهِ مِنَ الْحَقِّ بِإِذْنِكَ، إِنَّكَ تَهْدِي مَنْ تَشَاءُ إِلَى صِرَاطٍ مُسْتَقِيمٍ. ‘হে মহান আল্লাহ, হে জিবরাঈল, মীকাঈল ও ইসরাফীলের রাব্ব! হে আকাশ ও ভূমণ্ডলের সৃষ্টিকর্তা এবং প্রকাশ্য ও গোপনীয় বিষয়সমূহের জ্ঞাতা! আপনার বান্দাদের মতভেদের ফয়সালা আপনিই করে থাকেন। হে মহান আল্লাহ! মতভেদপূর্ণ বিষয়ে আপনার হুকুমে আমাকে সঠিক পথে পরিচালিত করুন। আপনি যাকে চান তাকে সরল-সঠিক পথ দেখিয়ে থাকেন।’ (সহীহ মুসলিম ১/৫৩৪) এরূপ বলা হচ্ছেঃ ‘যে মহান আল্লাহ্‌র বন্ধুর সাথে শত্রুতা করলো সে মহান আল্লাহ্‌র সাথে শত্রুতা করলো এবং যে মহান আল্লাহ্‌র শত্রু, মহান আল্লাহও তার শত্রু। আর স্বয়ং মহান আল্লাহ যার শত্রু তার কুফরী ও ধ্বংসের মধ্যে কোন সন্দেহ থাকতে পারে কি? সহীহুল বুখারীতে বর্ণিত হয়েছে, যা পূর্বেও উল্লেখ করা হয়েছে, যেমন আল্লাহ বলেনঃ "من عادى لي وليًّا فقد بارزني بالحرب". ‘আমার বন্ধুর সাথে শত্রুতাকারীর বিরুদ্ধে আমি যুদ্ধ ঘোষণা করছি। (ফাতহুল বারী ১১/৩৪৮) অন্য একটি হাদীসে আছেঃ "إني لأثأر لأوليائي كما يثأر الليث الحرب". আমি আমার বন্ধুদের প্রতিশোধ গ্রহণ করে থাকি। (হাদীসটি য‘ঈফ। আবূ না‘ঈম ফিল হিলইয়াহ- ১/১০) আর একটি হাদীসে আছেঃ "وَمَن كنتُ خَصْمَه خَصَمْتُه". ‘যার শত্রু স্বয়ং আমি হই তার ধংস অনিবার্য।’ (হাদীসটি সহীহ। সহীহুল বুখারী-৪/২২৭, সুনান ইবনু মাজাহ-২/৪২৪২)]

কুফর দু'প্রকার : বড় কুফর ও ছোট কুফর

ইসলামে বড় কুফর হল যা চিরস্থায়ীভাবে জাহান্নামে অবস্থানকে অপরিহার্য করে। আর ছোট কুফর হল যা শাস্তি পাওয়াকে অপরিহার্য করে, চিরস্থায়ীভাবে জাহান্নামে অবস্থানকে নয়।

কোরানে কাফের শব্দটি শত শত বার ব্যবহার হয়েছে, কাফেরদের নির্বিচারে হত্যা করতে বলা হয়েছে, তাদের গর্দানে আঘাত করতে বলা হয়েছে। সুরা-৪৭, আয়াত-৪।
তাদের ডান হাত ও বাম পা কিংবা বাম হাত ও ডান পা কেটে ফেলতে বলা হয়েছে।
 সুরা-৫, আয়াত-৩৩।
প্রশ্ন হল কারা এই কাফের ? তাদের জন্য হাজার রকম নিশংস শাস্তির ব্যবস্থাইবা কেন? আজকালকার দূর্বুধিজীবিরা বোঝাতে চান কাফের মানে পাপী, অন্যায়কারী বা অবিশ্বাশী। সুতরাং পাপীকে শাস্তী দিলে আর কি খারাপ ? কিন্তু কাফের শব্দের আসল মানে হল যে কোরান মানে না অর্থাৎ সমস্ত অমুসলমান।  কাফের শব্দের এই অর্থ কোরানেই পরিষ্কার করে বলা আছে।(সুরা-৫, আয়াত-৪৪) সুতরাং হিন্দু, খ্রীষ্ঠান, ইহুদী, বৌদ্ধ, শিখ, জৈন, পার্সী সবাই কাফের এবং মুসলমানের কাছে বধযোগ্য। কাফের আবার দুই রকম, খ্রীষ্ঠান-ইহুদি প্রভৃতি যারা মূর্তি পূজা করে না তারা অপেক্ষাকৃত ভাল কাফের। এরা জিজিয়া কর দিয়ে বাচলেও বাচতে পারে। কিন্তু হিন্দুরা যারা মূর্তিপূজা করে তারা নিকৃষ্টতম, ইসলামের চোখে তাদের বাচবার কোন অধিকারই নেই। সুরা-৪ আয়াত ১১৬ তে আছে। কোরান পড়লে তা পরিষ্কার হয়ে যাবে।

কোরানের বাংলা অনুবাদেও অনেক আরবী শব্দ ব্যবহার করা হয়। সুরা-৯ তওবা, আয়াত-৫।
"অতপর নিষিদ্ধ মাস অতিবাহিত হলে অংশীবাধীদের যেখানে পাবে বধ করবে, তাদের বন্ধী করবে, অবরোধ করবে এবং প্রত্যেক ঘাটিতে তাদের জন্য ওত পেতে থাকবে। কিন্তু যদি তারা তওবা বা অনুসূচনা করে, যথাযথ নামাজ পড়ে যাকাত অথবা দান দেয় তবে তাদের পথ চেড়ে দেবে। নিশ্চয় আল্লাহ ক্ষমাশীল ও পরম দয়ালু।' কোরানের এই আয়াতটি খুব তার্তপর্যপূর্ণ, কোরানের প্রতিটি বানী আল্লার চিরন্তন আদেশ কেবল একটা উক্তি মাত্র নয়। মুসলমানরা বেশিরভাগ ক্ষত্রেই আরবী কোরান পড়ে কিংবা আরবি পড়তে না পারলেও আরবী কোরানের মূল ভাব ও বক্তব্য তারা মাদ্রাসায় বা বাবা ঠাকুরদার কাছে মুখে শুনে শুনে শুনে রপ্ত করে নেয়। সেই জন্য যখনি কোন কোরান বাংলায় ইংরেজী প্রভৃতি ভাষায় তারা অনুবাদ করে তখন অনুবাদটি এমন ভাবে করে যাতে অমুসল্মানরা তা পড়লেও তার প্রকৃত মানে ঠিকমত বুঝতে না পারে। এর জন্য আরা কোরানের কয়েকটা দরকারি শব্দের মানে ঘোলাটে করে দেয়। যেমন কাফের শব্দের মানে কিভাবে বিকৃত করা হয়েছে তা আগেই বলেছি। এই আয়াতটির মধ্যে মারতে কাটতে বন্ধী করতে বলা হচ্ছে অংশীবাধীদের।
এই অংশীবাদী কারা ? অংশীবাধী কথাটা মূল আরবি মুশরিক শব্দের অনুবাদ। মুশরিক শব্দের সোজা মানে হল পৌত্তলিক অর্থাৎ যারা মূর্তি পূজা করে। যেমন হিন্দুরা। যারা ভিবিন্ন মূর্তিকে ভগবানের অংশ হিসাবে পূজা করে । তারাই হল অংশীবাদী।
যাতে সরল অবোধ হিন্দুরা বুঝতে না পারে কোরানে তাদেরকেই বধ করতে বন্ধী করতে বলা হচ্ছে তাই সুচতুর কোরান অনুবাদক পোত্তলিক কথাটি না বলে ঘুরিয়ে অংশীবাদী বলে হিন্দুদের বোকা বানাবার চেষ্টা করছে।

আচ্ছা এবার দেখা যাক কি করলে পৌত্তলিকদের চেড়ে দেওয়া হবে? তওবা করলে, জাকাত দিলে এবং নামাজ পড়লে। এখানে বাংলা অনুবাদেও সুচুতুরভাবে আরবী শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে যাতে বাঙ্গালী হিন্দুরা এর কোন মানে বুঝতে না পারে। তোওবা কথাটির আক্ষরিক অর্থ হল অনুশোচনা করা। কিন্তু এর প্রকৃত ইসলামী তার্তপর্য হল অনুশোচনা করা মানে পৌত্তলিক ব্যক্তির মুসলমান না হবার জন্য অনুশোচনা করা অর্থাৎ সোজা কথায় মুসলমান হওয়া। কিন্তু কেউ যদি কেবল মুখে বলে হ্যা আমি মুসলমান হলাম। তাহলেই কিন্তু তাকে ছেড়ে দেওয়া হবেনা। তাকে মুসলমানদের মত যথাযতভাবে নামাজ পড়তে হবে এবং জাকাত অর্থাৎ অর্থ দান করতে হবে। এর ও তার্থপর্য গভীর। যাকাত কথার আক্ষরিক অর্থ দান হলেও এর একটা বিশেষ ইসলামী মানে আছে, এটা কিন্তু সেচ্ছাকৃত দান নয়। প্রত্যেক মুসলমানের ধর্মের জন্য প্রদেয় বাধ্যতামূলক অনুদান যা মুহাম্মদ নিজে বা তার পরবর্তী স্থলাবিসিক্ত খলিফা পাবেন। এই অর্থ ব্যয় করা হবে অমুসলমানকে ইসলামে ধর্মান্তরিত করার জন্য এবং অমুসলমানদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্য। সুরা-৯, আয়াত-৬০ এ আছে।
বর্তমানে যাবতীয় সন্ত্রাসবাদী কাজের অর্থই আসছে ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের দেওয়া যাকাতের টাকা থেকে। বড় বড় শেখ যেহাদের জন্য শত শত কোটি টাকা-দাউদ ইব্রাহিম, লাদেন প্রভৃত যেহাদিকে দান করছে। অর্থাৎ যে অমুসলমানরা মুসলমান হয়েছে বলে দাবী করবে যে যে সত্যিই ইসলামের অনুরাগী হয়েছে তা বোঝাতেই তাকে এই দান দিতে হবে। অর্থাত আন্তরিকভাবে মুসলমান না হলে পৌত্তলিকদের বধ করা হবে। অর্থাৎ বোঝা যায় হয় মুসলমান হও নয় মরো।


এটাই অমুসলমানদের প্রতি ইসলামের বানী।

বড় কুফর

বড় কুফর পাঁচ প্রকার :

  • মিথ্যা প্রতিপন্ন করার সাথে সম্পৃক্ত কুফর : আর তা হল রাসূলগণের মিথ্যাবাদী হওয়ার বিশ্বাস পোষণ করা, অতএব তারা যা কিছু নিয়ে এসেছেন তাতে যে ব্যক্তি প্রকাশ্যে কিংবা অপ্রকাশ্যে মিথ্যা সাব্যস্ত করল, সে কুফরী করল। কুরআনে বলা হয়েছে,

    "আর সে ব্যক্তির চেয়ে যালিম আর কে, যে আল্লাহর উপর মিথ্যা আরোপ করে অথবা তার নিকট সত্য আসার পর তা অস্বীকার করে? জাহান্নামের মধ্যেই কি কাফিরদের আবাস নয়?"[কুরআন 29:68]

  • অস্বীকার ও অহংকারের মাধ্যমে কুফর : এটা এভাবে হয় যে, রাসূলের সত্যতা এবং তিনি যে আল্লাহর পক্ষ থেকে সত্য নিয়ে এসেছেন সে সম্পর্কে জ্ঞাত থাকা, কিন্তু অহংকার ও হিংসাবশতঃ তার হুকুম না মানা এবং তার নির্দেশ না শোনা। কুরআনে বলা হয়েছে,

    "আর যখন আমি ফেরেশতাদেরকে বললাম, ‘তোমরা আদমকে সিজদা কর’। তখন তারা সিজদা করল, ইবলীস ছাড়া। সে অস্বীকার করল এবং অহঙ্কার করল। আর সে কাফিরদের অন্তর্ভুক্ত হল।"[কুরআন 2:34]

  • সংশয়-সন্দেহের কুফর : আর তা হল রাসূলগণের সত্যতা সম্পর্কে ইতস্তত করা এবং দৃঢ় বিশ্বাস না রাখা। একে ধারণা সম্পর্কিত কুফরও বলা হয়। আর ধারণা হল একীন ও দৃঢ় বিশ্বাসের বিপরীত। কুরআনে বলা হয়েছে,

    "আর সে তার বাগানে প্রবেশ করল, নিজের প্রতি যুলমরত অবস্থায়। সে বলল, ‘আমি মনে করি না যে, এটি কখনো ধ্বংস হবে’। আর আমি মনে করি না যে, কিয়ামত সংঘটিত হবে। আর আমাকে যদি ফিরিয়ে নেয়া হয় আমার রবের কাছে, তবে নিশ্চয় আমি এর চেয়ে উত্তম প্রত্যাবর্তনস্থল পাব’। তদুত্তরে তার সঙ্গী বলল, ‘তুমি কি তাকে অস্বীকার করছ, যিনি তোমাকে সৃষ্টি করেছেন মাটি থেকে, অতঃপর ‘বীর্য’ থেকে, তারপর তোমাকে অবয়ব দিয়েছেন পুরুষের’? ‘কিন্তু তিনিই আল্লাহ, আমার রব। আর আমি আমার রবের সাথে কাউকে শরীক করি না’।"[কুরআন 18:35–38]

  • বিমুখ থাকার মাধ্যমে কুফর : এদ্বারা উদ্দেশ্য হল দ্বীন থেকে পরিপূর্ণভাবে বিমুখ থাকা এমনভাবে যে স্বীয় কর্ণ, হৃদয় ও জ্ঞান দ্বারা ঐ আদর্শ থেকে দূরে থাকা যা রাসূল (সা.) নিয়ে এসেছেন। কুরআনে আল্লাহ বলেছেন,

    "আমি আসমানসমূহ, যমীন ও এতদোভয়ের মধ্যে যা কিছু আছে, তা যথাযথভাবে ও একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য সৃষ্টি করেছি। আর যারা কুফরী করে, তাদেরকে যে বিষয়ে সতর্ক করা হয়েছে তা থেকে তারা বিমুখ।"[কুরআন 46:3]

  • নিফাকের মাধ্যমে কুফর : এদ্বারা বিশ্বাসগত নিফাক বুঝানো উদ্দেশ্য, যেমন ঈমানকে প্রকাশ করে গোপনে কুফর লালন করা। কুরআনে বলা হয়েছে,

    "তা এ জন্য যে, তারা ঈমান এনেছিল তারপর কুফরী করেছিল। ফলে তাদের অন্তরসমূহে মোহর লাগিয়ে দেয়া হয়েছে। তাই তারা বুঝতে পারছে না।"[কুরআন 63:3]

ছোট কুফর

কুরআন ও সুন্নার মধ্যে বড় কুফর পর্যন্ত পৌছে না এ রকম যত কুফরের উল্লেখ এসেছে, তার সবই এ প্রকারের অন্তর্গত। এর উদাহরণের মধ্যে রয়েছে :

আল্লাহ তাআলার বাণীতে যা এসেছে :

"আর আল্লাহ উপমা পেশ করছেন, একটি জনপদ, যা ছিল নিরাপদ ও শান্ত। সবদিক থেকে তার রিয্ক তাতে বিপুলভাবে আসত। অতঃপর সে (জনপদ) আল্লাহর নিআমত অস্বীকার করল। তখন তারা যা করত তার কারণে আল্লাহ তাকে ক্ষুধা ও ভয়ের পোশাক পরালেন।"[কুরআন 16:112]

এবং রাসূলের (সা.) বাণীতে যা এসেছে :

"দু’টো স্বভাব মানুষের মাঝে রয়েছে, যা কু্ফর বলে গণ্য : বংশের প্রতি কটাক্ষ করা এবং মৃত ব্যক্তির জন্য উচ্চস্বরে কান্নাকাটি করা।"

রাসূলের (সা.) বাণীতে আরো এসেছে :

"আমার পরে তোমরা পরস্পর হত্যাকান্ডে লিপ্ত হয়ে কাফিরে পরিণত হয়ো না।"

এটা এবং এর মত আমলগুলো হল ছোট কুফর। এ ধরনের কুফরে লিপ্ত ব্যক্তি মুসলিম মিল্লাত থেকে বের হয়ে যাবে না। কেননা কুরআনে বলা হয়েছে,

"আর যদি মুমিনদের দু’দল যুদ্ধে লিপ্ত হয়, তাহলে তোমরা তাদের মধ্যে মীমাংসা করে দাও। অতঃপর যদি তাদের একদল অপর দলের উপর বাড়াবাড়ি করে, তাহলে যে দলটি বাড়াবাড়ি করবে, তার বিরুদ্ধে তোমরা যুদ্ধ কর, যতক্ষণ না সে দলটি আল্লাহর নির্দেশের দিকে ফিরে আসে। তারপর যদি দলটি ফিরে আসে তাহলে তাদের মধ্যে ইনসাফের সাথে মীমাংসা কর এবং ন্যায়বিচার কর। নিশ্চয় আল্লাহ ন্যায়বিচারকারীদের ভালবাসেন। নিশ্চয় মুমিনরা পরস্পর ভাই ভাই। কাজেই তোমরা তোমাদের ভাইদের মধ্যে আপোষ- মীমাংসা করে দাও। আর তোমরা আল্লাহকে ভয় কর, আশা করা যায় তোমরা অনুগ্রহপ্রাপ্ত হবে।"[কুরআন 49:9–10]

"সুরাতুল তওবায়' স্পষ্টাক্ষরে লেখা আছে, 'যাদের প্রতি কিতাব অবতীর্ণ হয়েছে তাদের মধ্যে যারা আল্লাহতে বিশ্বাস করে না ও পরকালেও না এবং সত্য ধর্ম অনুসরণ করে না তাদের সাথে যুদ্ধ করবে, যে পর্যন্ত না তারা নত হয়ে অনুগত্যের নির্দশন স্বরূপ স্বহস্তে জিজিয়া কর দেয়। (কোরান-৯/২৯)

পৌত্তলিকদের সাথে মুসলমানদের সম্পর্ক কেমন হবে সে কথাও কোরানে আছে। মহান হজের দিন আল্লাহ ও তার রসুলের পক্ষ হতে মানুষের প্রতি এ এক ঘোষণা যে, আল্লাহর সাথে পৌত্তলিকদের কোন সম্পর্ক নেই এবং রাসুলের সঙ্গেও নয়।(কো-৯/১,২,৩)
 সেই সুত্রে  পৌত্তালিকদের নির্বিচারে হত্যার আয়াতটিও নাজিল হয়।
সুরাতুল তওবার (সুরা-৯) ৫নং আয়াতে লেখা আছে "নিষিদ্ধ মাস অতীত হলে পৌত্তলিকদের যেখানে পাবে বধ করবে, বন্ধী করবে এবং ঘাটি গেড়ে ওত পেতে থাকবে। কিন্তু তারা যদি তওবা করে এবং যথাযথ নামাজ পড়ে ও জাকাত দেয় তবে তাদের পথ ছেড়ে দেবে। (কো-৯/৫)
"আল্লাহ বণি-আরব-বহুত্ত্ববাদীদের ইসলাম গ্রহন বা হত্যা ছাড়া অন্য কোন বিকল্প দেননি। যদি তারা ইসলাম গ্রহণে অসম্মতি জানায় তাহলে তাদের মুসলমানদের সাথে চুক্তি করার ও তাদের জিম্মি হওয়ার সুযোগ দেওয়া হবে না। মুসলমানরা যদি তাদের আক্রমণ করে তাদের মহিলা ও শিশুদের বন্দী ও পুরুষদের যদ্ধবন্দী করে তাহলে মেয়েরা ও শিশুরা অমুসলিমদের কাছ থেকে বিনা যুদ্ধে অর্জিত সম্পত্তির মত বিবেচিত হবে এবং তাদেরকে যুদ্ধলব্ধ মাল হিসাবে ভাগাভাগি করে নেওয়া যাবে। পুরুষদের মধ্যে যারা ইসলাম গ্রহণ করবে তারা হবে মুক্ত, কিন্তু যারা ইসলাম গ্রহণে অস্বীকৃতি জানাবে তাদের হত্যা করতে হবে। (মজিদ খদ্দুরী, মুসলিম আন্তর্জাতিক আইন, পৃ-২৩৮)

আল্লাহর নবী অমুসলিমদের দুটি শ্রেণীতে ভাগ করেছেন--
১। কিতাবধারী অর্থাৎ ইহুদি ও খ্ৃষ্টান এবং
২। যাদের নিকট কিতাব অবতীর্ণ হয়নি অর্থাৎ পৌত্তালিক।
ভারত উপ মহাদেশের হিন্দু, বৌদ্ধ এবং অন্যান্য সম্প্রদায় এই দ্বিতীয় শ্রেণীতে পড়ে। হযরত মুহাম্মদ প্রথম শ্রেনী অর্থ কীতাবধারীদের প্রতি কিছুটা নমনীয় ছিলেন। কারন এই ধর্ম গুলো সেমেটিক। এ কারনে এদেরকে জিজিয়া কর প্রদান করে ইসলামী রাষ্ট্রে বসবাসের অনুমতি দেন। যদিও জিজিয়ার উদ্দেশ্যই হলো চুড়ান্ত ধর্মীয় লক্ষ্য অর্জন, শ্ত্রুদের সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস সাধন নয়। নিয়ম অনুসারে ভারতীয় সুলতানগন ভারতবর্ষের অধিবাসীদের ইসলাম গ্রহণ বা হত্যা ছাড়া আর কোন পন্থা নির্ধারণের হেতু নেই। যদিও ইসলামের উপর এ ধরনের সিদ্ধান্তের ভার দেওয়া হয়েছে যে, অবস্থা বুঝে ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন সেইটিই ইসলাম মতে সঠিক বলে গণ্য হবে। তবে তাকে অবশ্যই চুড়ান্ত লক্ষ্যকে সামনে রেখে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। সেই হাদিসটি হল- "আবু ইউসুফের মতে যুদ্ধবন্দীদের ভাগ্য নির্ধারণ তথা মুসলমানদের স্বার্থে তাদের হত্যা করা অথবা মুক্তিপণের বিনিময়ে ছেড়ে দিতে হবে বা নির্ধারণ করার ভার ইমামের উপর ছেড়ে দেওয়া উচিত।' (আবু ইউসুফ, কিতাব আল রাদ, পৃ-৮৮-৮৯)
ভারতীয় সুলতানগণ কোরান ও হাদিসের নিয়মগুলো প্রয়োগ করতেন আলেম ও মাওলানাদের ব্যখ্যার উপর নির্ভর করে।  সুলতান আলাউদ্দিন জ্ঞানীদের নিকট এমন একটি পন্থা বা নিয়ম জানতে চাইলেন যা দ্বারা হিন্দুদেরকে শায়েস্তা করা যায়। জ্ঞানীগণ পরামর্শ দিলেন, শুধু হিন্দুদের নিকট যেন এই পরিমাণ মাল দৌলত না থাকে যা দিয়ে তারা ভাল অস্ত্র কিনে ভাল পোষাক পরে ও মনোমত ভোগ সম্ভোগ করে দিন কাটাতে পারে। ক্ষত্রিয়দের নিকট খেরাজের কোন অংশই মাফ করা হবে না।
এই হিসাব মতে ঘোড়ায় চড়া, তলোয়ার হাতে নেওয়া, ভাল কাপড় পরা, পান খাওয়া প্রভ্ৃতি কাজ বন্ধ হয়ে গেল। বস্তুত হিন্দুদের ঘরে এমন কোন সোন, চান্দি ও তস্কা অবশিষ্ট ছিল না যার বলে তারা মাথা তুলে দাড়াতে পারে। এই প্রকার অসহায় অবস্থার ফলে হিন্দুর বাচ্ছারা মুসলমানদের ঘরে চাকুরী ক্রএ দিন যাপন করতে বাধ্য হয়েছিল। (জিয়াউদ্দিন বারাউনী, তারিখ-ই-ফিরোজ শাহী; পৃষ্ঠা-২৩৭) এখানে আমরা দেখছি যে, কোরানের বাণী "হয় ইসলাম গ্রহণ নতুবা হত্যা' এই ব্বিধান মানা হয়নি। কারন, আলেম ও শাষনকর্তাগণ বুঝেছিলেন, এই ব্যবস্থা নিলে ভারতীয়রা বিদ্রোহ করতে পারে এবং তাহলে তাদের এদেশ ছেড়ে চলে যেতে হবে। তাই মূল লক্ষকে সামনে রেখে একটু কৌশলগতভাবে এগিয়েছিলেন। আমরা দেখছি, এই কৌশলগত এগোনোরও হাদিস আছে, আছে ঐতিহাসিক পটভূমি। ৬২৪ খৃষ্টাব্দে বদরের যুদ্ধে অনেক পৌত্তালিক কোরেশ বন্দী হলে মুহাম্মদের নিকট দুটি প্রস্তাব আসে। আবু বকর প্রস্তাব করেছিলেন, এদের সকলকেই মুক্তিপণ দিয়ে ছেড়ে দিতে হবে। অন্য একটি প্রস্তাব আসে হযরত ওমরের কাছ থেকে। তিনি সব পৌত্তালিকে সংহার করার প্রস্তাব দেন। মুহাম্মদ মধ্যাবস্থা অবলম্বন করেন। তিনি কিছু বন্ধীকে হত্যা করেন ও বাকিদের মুক্তিপনের বিনিময়ে ছেড়ে দেন। এখানে হযরত মুহাম্মদের উদ্দেশ্য ছিল বাকিদের ইসলামে টেনে আনা এবং তাতে তিনি সফলও হয়েছিলেন।
তাই এই আয়াত টি মুহাম্মদের জীবনের আলোকে মিলিয়ে নিলে এর অর্থ দাড়ঁড়ায় এই রূপ-
১। ইসলমা গ্রহনের সম্ভাবনা না থাকলে বন্দীদের ব্যপকবাভে নিপাত করতে হবে।

২। অল্পাংশের কাছ থেকে নিতে হবে মুক্তিপণ। অবশ্য আবু বকর বাইজেনটাইন যুদ্ধের সময় মত পরিবর্তন করেন যা আমরা পূর্বেই উল্ল্যেখ করেছি--"হয় মুসলমান হওয়া, না হয় হত্যা' 



2 comments:

  1. নিজের ব্যক্তিগত মতামত ইসলামের উপর চাপিয়ে দেয়া হলো সুকৌশলে। কুরআনের প্রতিটি আয়াত নাজিল হয়েছে প্রেক্ষাপট অনুযায়ী, কাফের দের হত্যার ব্যাপারে যে আয়াতগুলো দেখালেন সেগুলো তখন নাজিল হয়েছিলো যখন মুসলিমদের সাথে কাফিরদের যুদ্ধ হয়েছিলো। মূর্খের মতো নিজের মতো করে বলে গেলেন। যুদ্ধের সময় বিজয় করা অঞ্চলে কর্তৃত্ব সবাই প্রতিষ্ঠা করে, মুসলিমরা বাদ যাবে কেন?
    শান্তি প্রতিষ্ঠাতেই যুদ্ধগুলো হয়েছে।
    আপনার কি নিম্নোক্ত আয়াতগুলো চোখে পড়েনি?
    مِنۡ اَجۡلِ ذٰلِکَ ۚۛؔ کَتَبۡنَا عَلٰی بَنِیۡۤ اِسۡرَآءِیۡلَ اَنَّہٗ مَنۡ قَتَلَ نَفۡسًۢا بِغَیۡرِ نَفۡسٍ اَوۡ فَسَادٍ فِی الۡاَرۡضِ فَکَاَنَّمَا قَتَلَ النَّاسَ جَمِیۡعًا ؕ وَ مَنۡ اَحۡیَاہَا فَکَاَنَّمَاۤ اَحۡیَا النَّاسَ جَمِیۡعًا ؕ وَ لَقَدۡ جَآءَتۡہُمۡ رُسُلُنَا بِالۡبَیِّنٰتِ ۫ ثُمَّ اِنَّ کَثِیۡرًا مِّنۡہُمۡ بَعۡدَ ذٰلِکَ فِی الۡاَرۡضِ لَمُسۡرِفُوۡنَ ﴿۳۲﴾
    মিন আজলি যা-লিকা কাতাবনা-‘আলা-বানীইসরাঈলা আন্নাহূ মান কাতালা নাফছান বিগাইরি নাফছিন আও ফাছা-দিন ফিল আরদিফাকআন্নামা-কাতালান্না-ছা জামী‘আওঁ ওয়া মান আহইয়া-হা-ফাকাআন্নামা-আহইয়ান্না-ছা জামী‘আন ওয়া লাকাদ জাআতহুম রুছুলুনা-বিলবাইয়িনা-তি ছুম্মা ইন্না কাছীরাম মিনহুম বা‘দা যা-লিকা ফিল আরদিলামুছরিফূন।
    এ কারণেই আমি বানী ইসরাঈলের প্রতি এই নির্দেশ দিয়েছি যে, যে ব্যক্তি কোন ব্যক্তিকে হত্যা করে অন্য প্রাণের বিনিময় ব্যতীত, কিংবা তার দ্বারা ভূ-পৃষ্ঠে কোন ফিতনা-ফাসাদ বিস্তার ব্যতীত, তাহলে সে যেন সমস্ত মানুষকে হত্যা করে ফেলল; আর যে ব্যক্তি কোন ব্যক্তিকে রক্ষা করল, তাহলে সে যেন সমস্ত মানুষকে রক্ষা করল; আর তাদের (বানী ইসরাঈলের) কাছে আমার বহু রাসূলও স্পষ্ট প্রমাণসমূহ নিয়ে আগমন করেছিল, তবু এর পরেও তন্মধ্য হতে অনেকেই ভূ-পৃষ্ঠে সীমা লংঘনকারী হয়ে গেছে।
    Because of that We ordained for the Children of Israel that if anyone killed a person not in retaliation of murder, or (and) to spread mischief in the land - it would be as if he killed all mankind, and if anyone saved a life, it would be as if he saved the life of all mankind. And indeed, there came to them Our Messengers with clear proofs, evidences, and signs, even then after that many of them continued to exceed the limits (e.g. by doing oppression unjustly and exceeding beyond the limits set by Allah by committing the major sins) in the land!.(সূরা আল মায়িদাহ- ৩২)
    .
    لَا یَنۡہٰىکُمُ اللّٰہُ عَنِ الَّذِیۡنَ لَمۡ یُقَاتِلُوۡکُمۡ فِی الدِّیۡنِ وَ لَمۡ یُخۡرِجُوۡکُمۡ مِّنۡ دِیَارِکُمۡ اَنۡ تَبَرُّوۡہُمۡ وَ تُقۡسِطُوۡۤا اِلَیۡہِمۡ ؕ اِنَّ اللّٰہَ یُحِبُّ الۡمُقۡسِطِیۡنَ ﴿۸﴾
    লা-ইয়ানহা-কুমুল্লা-হু ‘আনিল্লাযীনা লাম ইউকা-তিলূকুম ফিদ্দীনি ওয়ালাম ইউখরিজুকুম মিন দিয়া-রিকুম আন তাবাররূহুম ওয়া তুকছিতূইলাইহিম ইন্নাল্লা-হা ইউহিব্বুল মুকছিতীন।
    দীনের ব্যাপারে যারা তোমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেনি এবং তোমাদের স্বদেশ হতে বহিস্কৃত করেনি তাদের প্রতি মহানুভবতা প্রদর্শন ও ন্যায়বিচার করতে আল্লাহ তোমাদেরকে নিষেধ করেন না। আল্লাহতো ন্যায়পরায়ণদেরকে ভালবাসেন।
    Allah does not forbid you to deal justly and kindly with those who fought not against you on account of religion and did not drive you out of your homes. Verily, Allah loves those who deal with equity.
    (সূরা মুমতাহিনা আয়াত ৮)..
    মিথ্যাচার করবেন না ইসলাম সম্পর্কে....

    ReplyDelete
    Replies
    1. মিথ্যাচার কোথায় পেলেন ? আপনার কথা অনুযায়ী ইসলাম সর্ব্বকালীন হচ্ছে না !!

      Delete

ধন্যবাদ

বৈশিষ্ট্যযুক্ত পোস্ট

অথর্ববেদ ২/১৩/৪

  ह्यश्मा॑न॒मा ति॒ष्ठाश्मा॑ भवतु ते त॒नूः। कृ॒ण्वन्तु॒ विश्वे॑ दे॒वा आयु॑ष्टे श॒रदः॑ श॒तम् ॥ ত্রহ্যশ্মানমা তিষ্ঠাশ্মা ভবতুতে তনূঃ। কৃণ্বন্তু...

Post Top Ad

ধন্যবাদ