নাস্তিকতা খন্ডন ও মন্ডন - ধর্ম্মতত্ত্ব

ধর্ম্মতত্ত্ব

ধর্ম বিষয়ে জ্ঞান, ধর্ম গ্রন্থ কি , হিন্দু মুসলমান সম্প্রদায়, ইসলাম খ্রীষ্ট মত বিষয়ে তত্ত্ব ও সনাতন ধর্ম নিয়ে আলোচনা

धर्म मानव मात्र का एक है, मानवों के धर्म अलग अलग नहीं होते-Theology

সাম্প্রতিক প্রবন্ধ

Post Top Ad

স্বাগতম

30 December, 2020

নাস্তিকতা খন্ডন ও মন্ডন

নাস্তিকতা একটি মানসিক ব্যাধি

                                                       নাস্তিকতা একটি মানসিক ব্যাধি 
ইতিহাস তালাশ করলে দেখা যায় যে নাস্তিকতা পৃথিবীর প্রতিটি সমাজ ও দেশে এবং সব সময়ই একটি অজনপ্রিয় মতবাদ হিসেবে গণ্য ছিল; যদিও  ইদানীং সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্বকে অস্বীকার করা এক ধরণের ফ্যাশনে পরিণত হয়ে গেছে। 

বর্তমানে নাস্তিকতার জন্য মৃত্যুদণ্ডের বিধান রয়েছে বিশ্বের ১৩টি দেশে। সেগুলোর মধ্যে রয়েছে— আফগানিস্তান, ইরান, মালয়েশিয়া, মালদ্বীপ, মৌরিতানিয়া, নাইজেরিয়া, পাকিস্তান, কাতার, সৌদি আরব, সোমালিয়া, সুদান, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও ইয়েমেন।

নাস্তিক্যবাদ (ইংরেজি ভাষায়: Atheism; অন্যান্য নাম: নিরীশ্বরবাদ, নাস্তিকতাবাদ) একটি দর্শনের নাম যাতে ঈশ্বর বা স্রষ্টার অস্তিত্বকে স্বীকার করা হয়না এবং সম্পূর্ণ ভৌত এবং প্রাকৃতিক উপায়ে প্রকৃতির ব্যাখ্যা দেয়া হয়। আস্তিক্যবাদ এর বর্জনকেই নাস্তিক্যবাদ বলা যায়। নাস্তিক্যবাদ বিশ্বাস নয় বরং অবিশ্বাস এবং যুক্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত। বিশ্বাস নয় বরং বিশ্বাসের অনুপস্থিতিই এখানে মুখ্য। ইংরেজি ‘এইথিজম’(Atheism) শব্দের অর্থ হল নাস্তিক্য বা নিরীশ্বরবাদ। এইথিজম শব্দটির উৎপত্তি হয়েছে গ্রিক ‘এথোস’ (ἄθεος) শব্দটি থেকে। শব্দটি সেই সকল মানুষকে নির্দেশ করে যারা ঈশ্বরের অস্তিত্ব নেই বলে মনে করে এবং প্রচলিত ধর্মগুলোর প্রতি অন্ধবিশ্বাস কে যুক্তি দ্বারা ভ্রান্ত বলে প্রমাণ করে। দিনদিন মুক্ত চিন্তা, সংশয়বাদী চিন্তাধারা এবং ধর্মসমূহের সমালোচনা বৃদ্ধির সাথে সাথে নাস্তিক্যবাদেরও প্রসার ঘটছে। অষ্টাদশ শতাব্দীতে সর্বপ্রথম কিছু মানুষ নিজেদের নাস্তিক বলে স্বীকৃতি দেয়। বর্তমান বিশ্বের জনসংখ্যার ২.৩% মানুষ নিজেদের নাস্তিক বলে পরিচয় দেয় এবং ১১.৯% মানুষ কোন ধর্মেই বিশ্বাস করে না। জাপানের ৬৪% থেকে ৬৫% নাস্তিক অথবা ধর্মে অবিশ্বাসী। রাশিয়াতে এই সংখ্যা প্রায় ৪৮% এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন এ ৬% (ইতালী) থেকে শুরু করে ৮৫% (সুইডেন) পর্যন্ত। পশ্চিমের দেশগুলোতে নাস্তিকদের সাধারণ ভাবে ধর্মহীন বা পরলৌকিক বিষয় সমূহে অবিশ্বাসী হিসেবে গণ্য করা হয়। কিন্তু বৌদ্ধ ধর্মের মত যেসব ধর্মে ঈশ্বরের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করতে হয় না, সেসব ধর্মালম্বীদেরকেও নাস্তিক হিসেবে বিবেচনা করা হয়। কিছু নাস্তিক ব্যক্তিগত ভাবে ধর্মনিরপেক্ষতা, হিন্দু ধর্মের দর্শন, যুক্তিবাদ, মানবতাবাদ এবং প্রকৃতিবাদে বিশ্বাস করে। নাস্তিকরা কোন বিশেষ মতাদর্শের অনুসারী নয় এবং তারা সকলে বিশেষ কোন আচার অনুষ্ঠানও পালন করে না। অর্থাৎ ব্যক্তিগত ভাবে যে কেউ, যে কোন মতাদর্শে সমর্থক হতে পারে,নাস্তিকদের মিল শুধুমাত্র এক জায়গাতেই, আর তা হল ঈশ্বরের অস্তিত্ব কে অবিশ্বাস করা।

নাস্তিকতা ও ধর্ম্ম

নিরীশ্বরবাদ আক্ষরিক অর্থে “ঈশ্বরের অনস্তিত্ব সংক্রান্ত ধারণা”, “ঈশ্বরহীনতা সংক্রান্ত মতবাদ”) বা ঈশ্বর বা দেবতার অস্তিত্বে অবিশ্বাস হিন্দু দর্শনের একাধিক মূলধারার ও ব্যতিক্রমী ধারার শাখায় সুপ্রাচীন কাল থেকে স্বীকৃত হয়েছে। ভারতীয় দর্শনের তিনটি শাখা বেদের কর্তৃত্বকে অস্বীকার করেছে। এই তিনটি শাখা হল জৈনধর্ম, বৌদ্ধধর্ম ও চার্বাক। এগুলিকেই ‘নাস্তিক’ দর্শন বলা হয়। নাস্তিক বা ব্যতিক্রমী ধারার দর্শনে যদিও ঈশ্বরে অবিশ্বাসের থেকে বেশি গুরুত্ব পেয়েছে, বেদের কর্তৃত্ব অস্বীকার। তবে এই শাখাগুলি সৃষ্টিকর্তা দেবতার ধারণাটিকেও প্রত্যাখ্যান করেছে।

রিচার্ড ডকিন্স ঈশ্বরে বিশ্বাস সংক্রান্ত বিভিন্ন অবস্থান ব্যাখ্যা করার জন্য Spectrum of theistic probability বা আস্তিকীয় সম্ভাবনার বর্ণালীর ধারণা দেন যেখানে মোট ৭টি অবস্থান দেখানো হয়েছে:

১। সবল আস্তিক্যবাদ (Strong theism): ব্যক্তি সন্দেহমুক্ত হয়ে জানেন যে ঈশ্বরের অস্তিত্ব আছে। সি. জি. ইয়াং এর ভাষায়, “আমি বিশ্বাস করি না, আমি জানি”।
২। কার্যত আস্তিক্যবাদ (De facto theism): ব্যক্তি একশভাগ নিশ্চিন্ত নন যে ঈশ্বর আছেন, কিন্তু মনে করেন তার অস্তিত্বের সম্ভাবনা অনেক বেশি এবং ঈশ্বরের অস্তিত্ব আছে ভেবেই তিনি জীবন অতিবাহিত করেন।
৩। দুর্বল আস্তিক্যবাদ (Weak theism): ঈশ্বরের অস্তিত্বের সম্ভাবনা ৫০% এর বেশি, কিন্তু খুব একটা বেশি নয়। ব্যক্তি সম্পূর্ণ নিশ্চিন্ত নন কিন্তু ঈশ্বরে বিশ্বাসের দিকে ঝুঁকে থাকেন।
৪। পরিপূর্ণ অজ্ঞেয়বাদ (Pure agnosticism) অথবা সম্পূর্ণ নিরপেক্ষতা (Compleat impartiality): ঈশ্বর থাকার সম্ভাবনা ৫০%। ঈশ্বরের অস্তিত্বের সম্ভাবনা, তার সত্য হবার সম্ভাবনা ও মিথ্যা হবার সম্ভাবনা ব্যক্তির কাছে সমান।
৫। দুর্বল নাস্তিক্যবাদ (Weak atheism): ঈশ্বরের অস্তিত্বের সম্ভাবনা ৫০% এর কম, কিন্তু খুব একটা কম নয়। ব্যক্তি ঈশ্বরের অস্তিত্বের ব্যাপারে নিশ্চিন্ত নন কিন্তু সন্দেহবাদের (Skepticism) দিকে তিনি ঝুঁকে থাকেন।
৬। কার্যত নাস্তিক্যবাদ (De facto atheism): ঈশ্বরের অস্তিত্বের সম্ভাবনা খুবই কম, কিন্তু ০% এর উপরে। ঈশ্বরের অস্তিত্ব নেই এব্যাপারে ব্যক্তি সম্পূর্ণভাবে ইতিবাচক নন কিন্তু তিনি ঈশ্বরের অস্তিত্বের সম্ভাবনা অনেক কম বলে মনে করেন এবং ঈশ্বর বলে কিছু নেই ভেবেই জীবন অতিবাহিত করেন।
৭। সবল নাস্তিক্যবাদ (Strong atheism): ঈশ্বরের অস্তিত্বের সম্ভাবনা শূন্য। ব্যক্তি শতভাগ নিশ্চিন্ত যে ঈশ্বরের অস্তিত্ব নেই।

কিছু লোক ঈশ্বরের উপর তাদের বিশ্বাসের অভাবকে ব্যাখ্যা করার সময় তুলনামূলক ‘নিরাপদ’ অবস্থানে থাকার জন্য বলতে পছন্দ করেন, “আমি নাস্তিক্যবাদী (atheist) নই, আমি একজন অজ্ঞেয়বাদী (Agnostic)”। অনেকেই অজ্ঞেয়বাদীদেরকে নিরপেক্ষ অবস্থানে থাকা ব্যক্তি বা এখনও সিদ্ধান্ত নিয়ে উঠতে পারেননি এমন ব্যক্তি বলে ভেবে থাকেন। কিন্তু অজ্ঞেয়বাদ কোন স্বাধীন চিন্তাধারা নয় যা আস্তিক্যবাদ ও নাস্তিক্যবাদ এর ভেতরে বা বাইরে অবস্থান করে। আর এটা নাস্তিক্যবাদ এর সাথে মিউচুয়ালি এক্সক্লুসিভ নয় (অর্থাৎ নাস্তিক্যবাদ ও অজ্ঞেয়বাদ সম্পূর্ণ ভিন্ন নয়, এদের একে অপরের উপর অংশত উপরিপাতন বা ওভারল্যাপ আছে)। অজ্ঞেয়বাদ নাস্তিক্যবাদ এর থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেয়। নাস্তিক্যবাদ হল “আপনি কি ঈশ্বরে বিশ্বাস করেন?” এই প্রশ্নের উত্তর। অন্যদিকে অজ্ঞেয়বাদ হল, “আপনি কি কোন ঈশ্বরের অস্তিত্ব আছে কিনা এটা জানেন?” এই প্রশ্নের উত্তর। আর তাই, একজন ব্যক্তির পক্ষে একই সাথে নাস্তিক্যবাদী এবং অজ্ঞেয়বাদী হওয়া সম্ভব। আপনি যদি একই সাথে নাস্তিক্যবাদী এবং অজ্ঞেয়বাদী হন তাহলে আপনি দাবি করেন না যে, এরকম কোন চূড়ান্ত সাক্ষ্যপ্রমাণ নেই যার দ্বারা নির্দিষ্টভাবে ঈশ্বরের প্রতিটি সংজ্ঞাকে অপ্রমাণ করা যায়, আবার আপনি এটাও বিশ্বাস করেন না যে, কোন ঈশ্বরের অস্তিত্ব আছে। (লেখক এই অবস্থানের ব্যক্তিদেরকে এগনস্টিক এথিয়েস্ট বলেন যারা একই সাথে এথিয়েস্ট এবং এগনস্টিক হন। তাদের অবস্থানটির নাম হল এগনস্টিক এথিয়েজম।)

অজ্ঞেয়বাদের ব্যাখ্যা

অজ্ঞেয়বাদ শব্দটি ইংরেজি যে শব্দটির পারিভাষিক শব্দ, অর্থাৎ “Agnostic” শব্দটিকে ভাংলে আসে গ্রিক “a” এবং “gnostos”। gnostos অর্থ জ্ঞানী, আর তার আগে উপসর্গ “a” মিলে agnostic শব্দের আক্ষরিক অর্থ হয়েছে জ্ঞানহীন। সেই অর্থে একজন ব্যক্তি অনেক বিষয়ে agnostic হতে পারেন। কিন্তু এটার সবচেয়ে জনপ্রিয় ব্যবহার দেখা যায় ধর্মীয় বিশ্বাসের বেলায়। যখন ঈশ্বরে বিশ্বাসের প্রশ্ন আসে, তখন দুটি মৌলিক অবস্থানের সূচনা ঘটে যাদের মধ্যে যেকোন একটিকে গ্রহণ করতে হয়। এটা অনুসারে, হয় আপনি ঈশ্বরে বিশ্বাস করতে পারেন, অথবা অবিশ্বাস করতে পারেন। কিন্তু যদি অপশনগুলোকে আরও একটু নীরিক্ষণ করেন তাহলে আপনি জ্ঞানের উপর ভিত্তি করে মোট চারটি অবস্থান দেখতে পারবেন:

১। জ্ঞেয়বাদী আস্তিক (Gnostic theist): আপনি ঈশ্বরে বিশ্বাস করেন এবং এটা যে সত্য এই বিষয়ে আপনার জ্ঞান আছে (বা এটা যে সত্য তা আপনি জানেন)।
২। অজ্ঞেয়বাদী আস্তিক (Agnostic theist): আপনি ঈশ্বরে বিশ্বাস করেন কিন্তু জানেননা যে এটা সত্যি কিনা (অর্থাৎ ঈশ্বরের অস্তিত্ব সম্পর্কে আপনার জ্ঞান না থাকা সত্ত্বেও আপনি ঈশ্বরকে বিশ্বাস করেন)।
৩। জ্ঞেয়বাদী নাস্তিক (Gnostic atheist): ঈশ্বরের অস্তিত্ব নেই এটা জেনে আপনি ঈশ্বরে অবিশ্বাস করেন (অর্থাৎ আপনি জানেন যে ঈশ্বর নেই এবং তাই আপনি ঈশ্বরে বিশ্বাস করেন না)।
৪। অজ্ঞেয়বাদী নাস্তিক (Agnostic atheist): ঈশ্বরের অস্তিত্ব আছে কি নেই এটা না জেনেই আপনি ঈশ্বরে অবিশ্বাস করেন (অর্থাৎ আপনি জানেননা যে ঈশ্বরের অস্তিত্ব আছে কি নেই কিন্তু আপনি ঈশ্বরে বিশ্বাস করেন না।)

তৃতীয় অবস্থানটিকে, অর্থাৎ জ্ঞেয়বাদী নাস্তিক্যবাদ বা Gnostic atheism অবস্থানটিকে এভাবে ব্যাখ্যা করা যায়, “আমি বিশ্বাস করি এবং “জানি” যে ঈশ্বরের অস্তিত্ব নেই”। অন্যদিকে চতুর্থ অবস্থানটিকে, অর্থাৎ অজ্ঞেয়বাদী নাস্তিক্যবাদ বা Agnostic atheism বলা হয় যা বলে, “ঈশ্বরের অস্তিত্ব আছে, এতে আমি বিশ্বাস করি না। কিন্তু আমি এটা জানিনা যে ঈশ্বরের অনস্তিত্ব সত্য কিনা”। এই দুই দাবীর পার্থক্য সূক্ষ্ম কিন্তু এটাকে বোঝা খুব গুরুত্বপূর্ণ।

অবিশ্বাস করা আর অন্য কিছুতে বিশ্বাস করা এক নয়

একজন নাস্তিক্যবাদীকে ঈশ্বর নেই এটা প্রমাণ করতে বলা হলে এটা ধরেই নেয়া হয় যে সেই নাস্তিক্যবাদী লোকটি “ঈশ্বর নেই” এই কথাটিতে বিশ্বাস করেন। জ্ঞেয়বাদীই নাস্তিক্যবাদীগণ দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করেন যে ঈশ্বরের অস্তিত্ব নেই। কিন্তু নাস্তিক্যবাদীদের মধ্যে অনেক অজ্ঞেয়বাদী নাস্তিকও আছেন যারা ঈশ্বরের অস্তিত্ব নেই এটাও নিশ্চিতভাবে দাবী করেন না। দুটোই বৈধভাবে নাস্তিক্যবাদ বা atheism। এটা মনে রাখা গুরুত্বপূর্ণ যে atheism বা নাস্তিক্যবাদ এবং agnosticism বা অজ্ঞেয়বাদ সম্পূর্ণভাবে দুটি আলাদা বিষয় নয়।

ঈশ্বরে বিশ্বাস নেই এটাই কাউকে নাস্তিক শ্রেণীভুক্ত করার জন্য যথেষ্ট। কোন কিছুতে বিশ্বাসহীনতা মানেই এই নয় যে এটাকে মিথ্যা বলে বিশ্বাস করা হচ্ছে। এটার কেবল এই অর্থই থাকতে পারে যে এটা যে সত্য সে বিষয়ে আপনি নিশ্চিত নন। উদাহরণস্বরূপ আপনার একজন বন্ধু বিশ্বাস করতে পারে যে ফোর্ড বিশ্বের সবচেয়ে ভাল গাড়ির কোম্পানি। আপনার এই বিষয়ে কোন বিশেষ মতামত বা ভাবনা নেই। আপনি বিশ্বাস করেন না যে ফোর্ড অন্য কোন ব্র্যান্ডের গাড়ির চেয়ে ভাল, কিন্তু এটা যে বিশ্বের সবচেয়ে ভাল কার ব্র্যান্ড না আপনি এটাও জানেন না। এই পরিস্থিতিতে আপনি আপনার বন্ধুটির দাবীর বিষয়ে agnostic বা অজ্ঞেয়বাদী।

দ্য বার্ডেন অব প্রুফ বা প্রমাণের দায়

ধরুন, আমি আপনার কাছে একটি অসম্ভব দাবি নিয়ে এলাম। সেটা হল, “আমার কাছে একটি দুই ফুট লম্বা লেপ্রিকন (Leprechaun – রূপকথায় বর্ণিত একধরণের অবাস্তব জীব) আছে। এটা আমার সিন্দুকে থাকে। কেবলমাত্র আমিই এই লেপ্রিকনকে দেখতে পারি আর এই লেপ্রিকনের অস্তিত্বের কোন ফিজিকাল এভিডেন্স নেই।” কারও পক্ষেই বলা সম্ভব নয় যে এই লেপ্রিকনটির কোন অস্তিত্ব নেই, কিন্তু আমি এটারও কোন সাক্ষ্যপ্রমাণ দিতে পারছি না যে এই লেপ্রিকনের কোন অস্তিত্ব আছে। আর এই ধরণের দাবিকেই আনফলসিফায়াবল ক্লেইম (Unfalsifiable claim) বা প্রমাণ-অযোগ্য দাবি বলা হয়।

যখন একটি প্রমাণ-অযোগ্য দাবিকে সামনে নিয়ে আসা হয়, তখন বার্ডেন অব প্রুফ বা প্রমাণের দায় তার উপরের বর্তায় যে ব্যক্তি দাবিটি নিয়ে এসেছেন। অন্যথায় এবসার্ডিটি বা বিমূর্ততার সূচনা ঘটে। উদাহরণস্বরূপ প্রমাণ-অযোগ্য দাবি সংক্রান্ত চিন্তন পরীক্ষণগুলো বা থট এক্সপেরিমেন্টগুলোর (Thought Experiment) কথাই চিন্তা করুন, যেমন “ফ্লাইং স্প্যাগেটি মনস্টার”, “ইনভিজিবল পিংক ইউনিকর্ন”, স্যাগানের “দ্য ড্রাগন ইন মাই গ্যারেজ” এবং “রাসেলস টিপট” এর অস্তিত্ব। এই প্রত্যেকটি থট এক্সপেরিমেন্টেই পূর্ববর্তী উদাহরণের লেপ্রিকনের মত কোন না কোন আশ্চর্যজনক এবং অসম্ভব প্রাণীর কথা বলা হয়েছে যাদের অস্তিত্ব সম্পূর্ণভাবে অপ্রমাণ করা যায় না।

আর এখানেই অজ্ঞেয়বাদ একটি গুরুত্বপূর্ণ অবস্থান হয়ে দাঁড়ায়। অজ্ঞেয়বাদী নাস্তিকগণ স্বীকার করেন যে, তারা ঈশ্বরকে নির্দিষ্টভাবে অপ্রমাণ করতে পারবেন না। কিন্তু তারা ঈশ্বরের অস্তিত্বের উপর সাক্ষ্যপ্রমাণের অভাবকে চোখে আঙ্গুলে দেখিয়ে দিতে পারেন এবং ঈশ্বরে বিশ্বাস না করার সিদ্ধান্ত নিতে পারেন।

কিছু দাবীকে অপ্রমাণ করা যায়

উপরের যুক্তিগুলো কেবল প্রমাণ-অযোগ্য দাবি বা যে দাবিগুলোকে সত্য বা মিথ্যা বলে প্রমাণ করা যায় না তারদের উপরেই প্রয়োগ করা যায়। যখন এই যুক্তিগুলো বিভিন্ন ধর্মবিশ্বাসে প্রযুক্ত হয় তখন অনেক ধর্মীয় দাবিগুলোই তুলনামূলক নিশ্চয়তার সাথে অপ্রমাণ করা সম্ভব। কারণ সেই দাবিগুলো নিজে থেকেই অসামঞ্জস্যপূর্ণ এবং এগুলো যুক্তির মুখে এমনিতেই ভেঙ্গে যায়।

উদাহরণস্বরূপ, আব্রাহামীয় ঈশ্বর ইহুদি, খ্রিস্টান এবং মুসলিমদের দ্বারা উপাসিত হন। ধরুন আব্রাহামীয় ঈশ্বর একই সাথে সর্বজ্ঞানী, সর্বশক্তিমান এবং সর্বমঙ্গলময়। এই তিনটি বৈশিষ্ট্য আমরা যে জগৎকে দেখছি সেখানে একই সাথে থাকতে পারে না বা কোএক্সিস্ট করতে পারে না। যখন বড় বড় দূর্যোগ ঘটে এবং হাজার হাজার মানুষ মারা যায় তখন ঈশ্বরের পক্ষে একই সাথে সর্বমঙ্গলময় এবং সর্বশক্তিমান হওয়াটা অসম্ভব হয়ে যায়।

হয় সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের এরকম দূর্যোগ আটকানোর কোন ক্ষমতা নেই অথবা এই সর্বমঙ্গলময় ঈশ্বর পৃথিবীতে মানুষের দুঃখ দুর্দশা সম্পর্কে একেবারেই ভাবনাচিন্তা করেন না। সুতরাং ঈশ্বরের প্রতিটি সংজ্ঞাকে অপ্রমাণ করা সম্ভব নাও হতে পারে তবে ঈশ্বরের কিছু কিছু স্ববিরোধী সংজ্ঞাকে অপ্রমাণ করা সম্ভব।

স্পেক্ট্রাম অব থিস্টিক প্রোবাবিলিটি অথবা আস্তিকীয় সম্ভাবনার বর্ণালী

আমাদের জীবনের অনেক বিষয়ের মতই আস্তিক্যবাদ এবং নাস্তিক্যবাদকে সাদা বা কালো এর মত দৃঢ় চরম-দ্বিমুখিতায় না ফেলে একটি স্পেক্ট্রাম বা বর্ণালীতে ফেলতে হয় (অর্থাৎ কোন ব্যক্তিকে হয় আস্তিক নয় নাস্তিক এভাবে শ্রেণীবিভক্ত না করে তাকে আস্তিক্যবাস থেকে নাস্তিক্যবাদ পর্যন্ত বর্ণালীর কোন একটি অবস্থানে রাখার কথা বলা হচ্ছে)। রিচার্ড ডকিন্স তার বিখ্যাত বই “দ্য গড ডিল্যুশন”-এ এই স্পেক্ট্রাম অব থিস্টিক প্রোবাবিলিটি বা আস্তিকীয় সম্ভাবনার বর্ণালী এর ধারণাটি দেন। এখানে আস্থিক্যবাদ থেকে নাস্তিক্যবাদ পর্যন্ত মোট সাতটি অবস্থানের কথা বলা হয়েছে। এমন নয় যে এই সাতটি অবস্থান নিয়েই বর্ণালীটি, বরং বর্ণালীর ধারণায় এই সাতটি অবস্থানের দুটো পাশাপাশি অবস্থানের মধ্যেও কোন অবস্থান থাকতে পারে। কিন্তু এই সাতটি অবস্থান হচ্ছে বর্ণালীটির মদ্যে থাকা সাতটি মাইলফলক যা দিয়ে বর্ণালীর ভিতরের বিভিন্ন অবস্থানকে সরলভাবে প্রকাশ করা যায়। নিচে এগুলোর সারমর্ম দেয়া হল:

১। সবল আস্তিক্যবাদ (Strong theism): ব্যক্তি সন্দেহমুক্ত হয়ে জানেন যে ঈশ্বরের অস্তিত্ব আছে। সি. জি. ইয়াং এর ভাষায়, “আমি বিশ্বাস করি না, আমি জানি”।
২। কার্যত আস্তিক্যবাদ (De facto theism): ব্যক্তি একশভাগ নিশ্চিন্ত নন যে ঈশ্বর আছেন, কিন্তু মনে করেন তার অস্তিত্বের সম্ভাবনা অনেক বেশি এবং ঈশ্বরের অস্তিত্ব আছে ভেবেই তিনি জীবন অতিবাহিত করেন।
৩। দুর্বল আস্তিক্যবাদ (Weak theism): ঈশ্বরের অস্তিত্বের সম্ভাবনা ৫০% এর বেশি, কিন্তু খুব একটা বেশি নয়। ব্যক্তি সম্পূর্ণ নিশ্চিন্ত নন কিন্তু ঈশ্বরে বিশ্বাসের দিকে ঝুঁকে থাকেন।
৪। পরিপূর্ণ অজ্ঞেয়বাদ (Pure agnosticism) অথবা সম্পূর্ণ নিরপেক্ষতা (Compleat impartiality): ঈশ্বর থাকার সম্ভাবনা ৫০%। ঈশ্বরের অস্তিত্বের সম্ভাবনা, তার সত্য হবার সম্ভাবনা ও মিথ্যা হবার সম্ভাবনা ব্যক্তির কাছে সমান।
৫। দুর্বল নাস্তিক্যবাদ (Weak atheism): ঈশ্বরের অস্তিত্বের সম্ভাবনা ৫০% এর কম, কিন্তু খুব একটা কম নয়। ব্যক্তি ঈশ্বরের অস্তিত্বের ব্যাপারে নিশ্চিন্ত নন কিন্তু সন্দেহবাদের (Skepticism) দিকে তিনি ঝুঁকে থাকেন।
৬। কার্যত নাস্তিক্যবাদ (De facto atheism): ঈশ্বরের অস্তিত্বের সম্ভাবনা খুবই কম, কিন্তু ০% এর উপরে। ঈশ্বরের অস্তিত্ব নেই এব্যাপারে ব্যক্তি সম্পূর্ণভাবে ইতিবাচক নন কিন্তু তিনি ঈশ্বরের অস্তিত্বের সম্ভাবনা অনেক কম বলে মনে করেন এবং ঈশ্বর বলে কিছু নেই ভেবেই জীবন অতিবাহিত করেন।
৭। সবল নাস্তিক্যবাদ (Strong atheism): ঈশ্বরের অস্তিত্বের সম্ভাবনা শূন্য। ব্যক্তি শতভাগ নিশ্চিন্ত যে ঈশ্বরের অস্তিত্ব নেই।

ডকিন্স বলেন, বেশিরভাগ আস্তিক মানুষ তাদের সন্দেহের বিরুদ্ধে গিয়ে ধর্মীয় বিশ্বাসকে শক্তভাবে আকড়ে থাকেন, এবং তাই নিজেদেরকে ১ নং অবস্থানেই ফেলেন। এদিকে বেশিরভাগ নাস্তিক নিজেদেরকে ৭ নং অবস্থানে ফেলেন না, কারণ প্রমাণের অভাবে নাস্তিক্যবাদের উদ্ভব হয় এবং প্রমাণের উপস্থিতি সবসময়ই চিন্তাশীল মানুষের চিন্তাকে পরিবর্তন করে ফেলতে পারে। বিল মার এর নেয়া এক সাক্ষাতকারে ডকিন্স নিজেকে ৬ নং অবস্থানে ফেলেন বলে স্বীকার করেছিলেন। তবে পরবর্তিতে এনথোনি কেনি এর নেয়া এক সাক্ষাতকারে ডকিন্স প্রস্তাব করেন “৬.৯” নং অবস্থানই বেশি শুদ্ধ হবে।
যদি আপনাকে নিজের বিশ্বাসকে ডকিন্সের স্কেলে রেট করতে বলা হয় তাহলে আপনি নিজেকে কোন অবস্থানে ফেলবেন?

(অজ্ঞেয়বাদের লেখাটি আরমিন নবাবি এর লেখা প্রবন্ধ “Atheism vs Agnosticism: What is the difference?”, তার লেখা গ্রন্থ “Why There Is No God: Simple Responses to 20 Common Arguments for the Existence of God” এবং রিচার্ড ডকিন্স এর লেখা গ্রন্থ “The God Delusion” – এ উল্লিখিত আস্তিক্যবাদ, নাস্তিক্যবাদ ও অজ্ঞেয়বাদ সম্পর্কিত আলোচনার উপর ভিত্তি করে লেখা হয়েছে। লেখাটি পোস্টদাতার ব্যক্তিগত মতামতের প্রতিফলন নয়।)

সাধারনার্থে নাস্তিকরা কোন বিশেষ মতাদর্শের অনুসারী নয় এবং তারা সকলে বিশেষ কোন আচার অনুষ্ঠানও পালন করে না নাস্তিকরা কোন ধর্ম্ম মানে না। অর্থাৎ ব্যক্তিগত ভাবে যে কেউ, যে কোন মতাদর্শে সমর্থক হতে পারে,নাস্তিকদের মিল শুধুমাত্র এক জায়গাতেই, আর তা হল ঈশ্বরের অস্তিত্ব কে অবিশ্বাস করা।

নাস্তিকতা খন্ডন ও মন্ডনঃ
আর্যবর্ত্তের ইতিহাসে দেখাযায় বৃহস্পতি’ নামক কোন এক ব্যক্তি ছিলেন, তিনি বেদ, ঈশ্বর এবং যজ্ঞাদি উত্তম কৰ্মসমূহও স্বীকার করিতেন না। শুনুন তাঁহার মতঃ—
যাবজ্জীবং সুখং জীবেন্নাস্তি মৃত্যোরগোচরঃ।
ভস্মীভূতস্য দেহস্য পুনরাগমনং কুতঃ।।
মনুষ্যাদি কোন প্রাণী মৃত্যুর অগোচর নহে অর্থাৎ সকলকেই মরিতে হইবে। অতএব যতদিন শরীরে জীব থাকে, ততদিন সুখে থাকিবে। যদি কেহ বলে যে, ধর্মাচরণে কষ্ট হয় বটে, কিন্তু ধর্ম পরিত্যাগ করিলে পরজন্মে বহু দুঃখ ভোগ করিতে হইবে, তাহার প্রতি চারাবাকের ’উত্তর, “ওহে ভাই! তুমি নির্বোধ;
মৃত্যুর পরে শরীর ভস্ম হইয়া যায়। যে ব্যক্তি পান ভোজন করিয়াছিল; সে পুনরায় সংসারে আসিবে না। যে কোনরূপ হউক আনন্দে থাক; সংসারে নীতি অনুসারে চল; ঐশ্বৰ্য্য বৃদ্ধি কর এবং তদ্বারা যথেচ্ছ ভোগ কর। মনে রাখিও, এই লোকই আছে,পরলোক বলিয়া কিছু নাই।
দেখ ! পৃথিবী, জল, অগ্নি এবং বায়ু – এই চারি ভূতের পরিণাম হইতে এই শরীর নির্মিত হইয়াছে। তাহাতে এ সকলের সংযোগ বশতঃ চৈতন্য উৎপন্ন হয়। মাদক দ্রব্য সেবন করিলে মাদকতা (নেশা) উৎপন্ন হয়, সেইরূপ জীব শরীরের সহিত উৎপন্ন হইয়া শরীরের নাশের সহিত স্বয়ং নষ্ট হইয়া যায়।
তাহা হইলে পাপ-পূণ্যের ফল কাহার হইবে?
তচ্চৈতন্যবিশিষ্ট দেহ এব আত্মা
দেবাতিরিক্ত আত্মনি প্রমাণাভাবাৎ ॥
চারি ভূতের সংযোগ বশতঃ এই শরীরে জীবাত্মা উৎপন্ন হয় এবং এ সকলের বিয়োগের সহিতই বিনাশ প্রাপ্ত হয়। কারণ, মৃত্যুর পর কোন জীব প্রত্যক্ষ হয় না। আমরা এক প্রত্যক্ষই মানি, কারণ প্রত্যক্ষ ব্যতীত অনুমানাদি হইতে পারে না। অতএব মুখ্য প্রত্যক্ষের সম্মুখে অনুমানাদি গৌণ বলিয়া তাহা গ্রহণীয় নহে। সুন্দরী স্ত্রীর আলিঙ্গনে আনন্দ সম্ভোগ করা পুরুষার্থের ফল।
**উত্তর - **এই পৃথিব্যাদি ভূত জড়। জড় হইতে কখনও চেতনের উৎপত্তি হইতে পারে না। যেরূপ বর্তমানে পিতৃ-মাতৃ সংযোগে দেহের উৎপত্তি; সেইরূপ সৃষ্টির প্রারম্ভে মনুষ্যাদির শরীরের নির্মাণকৰ্ত্তা পরমেশ্বর ব্যতীত অপর কেহ হইতে পারে না। মত্ততার তূল্য চেতনতার উৎপত্তি ও বিনাশ হয় না।
কারণ, মত্ততা চেতনের হয়, জড়ে নহে। পদার্থ সমূহ নষ্ট অর্থাৎ অদৃশ্য হয়, কিন্ত কাহারও অভাব হয় না। এইরূপে অদৃশ্য হইলে জীবেরও অভাব হয়, এইরূপ মনে করা উচিত নহে। দেহের সহিত সংযোগ ঘটিলেই জীবাত্মা প্রকট হয় অর্থাৎ জীবাত্মা সদেহ হইলেই ঐহার প্রকটতা হয়।
যখন (সে) শরীর পরিত্যাগ করে, তখন এই শরীর যে মৃত, পূর্বের ন্যায় মৃত শরীর চেতনাযুক্ত থাকিতে পারে না।
বৃহদারণ্যকে উক্ত হইয়াছেঃ
“নাহং মাহংব্রবীমি, অনুচ্ছিত্তিধর্মায়মাত্মেতি”
যাজ্ঞবল্ক্য বলিতেছেন, – “হে মৈত্রেয়ি! আমি মোহবশতঃ বলিতেছিনা কিন্তু আত্মা অবিনাশী। আত্মার সংযোগবশতঃ শরীর চেষ্টা করে। জীবের শরীর হইতে বিচ্ছিন্ন হইবার পর, শরীরে কোন জ্ঞানই থাকে না।” যদি দেহ ব্যতীত পৃথক্‌ আত্মা না থাকিত তাহা হইলে মৃত্যুর পর শরীরে জ্ঞানের অভাব হইত না। অতএব যাহার সংযোগ হইলে চেতনতা এবং বিয়োগ হইলে জড়তা উৎপন্ন হয়, সে দেহ হইতে পৃথক্‌।| চক্ষু সকলকে দেখে কিন্তু চক্ষু নিজেকে দেখিতে পায় না। সেইরূপ যে প্রত্যক্ষ করে, সে নিজেকে ইন্দ্রিয় দ্বারা প্রত্যক্ষ করিতে পারে না। যেমন কেহ চক্ষু দ্বারা ঘট-পটাদি পদার্থ দেখে, সেইরূপ জ্ঞান দ্বারা চক্ষুকে দেখে। যে দ্রষ্টা সে দ্রষ্টাই থাকে, কখনও দৃশ্যও হয় না। যথা, আধার ব্যতীত আধেয়, কারণ ব্যতীত কাৰ্য্য, অবয়বী ব্যতীত অবয়ব এবং কৰ্ত্তা ব্যতীত কর্ম থাকিতে পারে না সেইরূপ কৰ্ত্তা ব্যতীত প্রত্যক্ষ কীরূপে হইতে পারে ?
সুন্দরী স্ত্রীসংসর্গ পুরুষার্থ ফল হইলে, তজ্জনিত ক্ষণিক সুখ-দুখও পুরুষার্থের ফল হইবে। এইরূপ স্বর্গসুখের(স্বর্গ কোন স্থান বিশেষ নয়;সুখ বিশেষের নাম) হানি হওয়ায় দুঃখ ভোগ করিতে হইবে। যদি বলেন যে, দুঃখ মোচন এবং সুখবৃদ্ধির জন্য যত্নবান্ হওয়া উচিত, তাহা হইলে মুক্তিসুখের হানি হইবে। সুতরাং উহা পুরুষার্থ ফল নহে।
নাস্তিকতা খন্ডন ও মন্ডন
চার্ব্বাক —যাহারা দুঃখমিশ্রিত সুখ পরিত্যাগ করে, তাহারা মুর্খ। যেমন কৃষক ধান্য হইতে তণ্ডুল গ্রহণ করিয়া তুষ পরিত্যাগ করে, সেইরূপ এই সংসারে বুদ্ধিমান ব্যক্তি সুখ গ্রহণ এবং দুঃখ বর্জন করিবেন। কেননা যাহারা ইহলোকের উপস্থিত সুখ পরিত্যাগ করিয়া, অনুপস্থিত(অনিশ্চিত) স্বর্গ সুখের ইচ্ছায় ধূৰ্ত্তকথিত বেদোক্ত অগ্নিহোত্রাদিকৰ্ম্ম, উপাসনা এবং জ্ঞানকাণ্ডের অনুষ্ঠান পরলোকের লাভের আশায় করে, তাহার অজ্ঞানী। যদি পরলোকই নাই, তাহার আকাঙ্ক্ষা করা মূখতার কাজ; কেননা
“অগ্নিহাত্রোং ত্রয়া বেদাস্তইদন্ডং ভস্মগুণ্ঠনম্।। বুদ্ধিপৌরুষহীনানং জীবিকেতি বৃহস্পতিঃ” ॥ চার্বাক দর্শন। চার্ব্বাক মতপ্রচারক “বৃহস্পতি“ বলিতেছেন যে, নির্বোধ এবং পুরুষার্থহীন লোকেরা অগ্নিহোত্রে তিন বেদ, তিন দণ্ড এবং ভস্মলেপন করা তাহাদের জীবিকা করিয়া লইয়াছে।
কিন্তু কন্টকবিদ্ধ হওয়া ইত্যাদি কারণে যে দুঃখ উৎপন্ন হয়, তাহারই নাম ‘নরক’, লোকে প্রসিদ্ধ রাজা পরমেশ্বর’ এবং দেহের নাশ হওয়াকে‘মোক্ষ’বলে, মোক্ষ অন্য কিছুই নহে।
**উত্তর - **বিষয়সুখমাত্রই পুরুষকারের ফল এবং বিষয় দুঃখের নিবৃত্তি মাত্রই কৃতকৃত্যতা ও স্বর্গ মনে করা মূর্খতা। অগ্নিহোত্রে প্রভৃতি যজ্ঞের দ্বারা বায়ু এবং জল পবিত্র হয়; তাহাতে আরোগ্য এবং ধর্ম, অর্থ, কাম ও মোক্ষ সিদ্ধি হয়। ইহা না জানিয়া বেদ, ঈশ্বর এবং বেদোক্ত ধর্মের নিন্দা করা ধূর্তের কার্য্য। ত্রিদণ্ড এবং ভস্মধারণের যে খণ্ডন হইয়াছে তাহা যুক্তিসঙ্গত।
কন্টকাদি হইতে উৎপন্ন দুঃখের নাম যদি নরক হয়, তদপেক্ষা অধিক কষ্টকর মহারোগাদি নরক নহে কেন? ঐশ্বৰ্য্যশালী এবং প্রজাপালনে সমর্থ রাজাকে শ্রেষ্ঠ মনে করা সঙ্গত, কিন্তু যে রাজা পাপী এবং অন্যায়কারী, তাহাকেও পরমেশ্বরের ন্যায় সম্মান করার মত মূখর্তা আর কী আছে? যদি শরীর বিয়োগমাত্রকেই মোক্ষ বলা হয়, তাহা হইলে গর্দভ, কুকুর প্রভৃতি এবং তোমাদের মধ্যে কী প্রভেদ রহিল? কেবল আকৃতিমাত্রই প্রভেদ রহিল।
চার্ব্বাকঃ-
অগ্নিরুষ্ণো জলংশীতংসমস্পর্শস্তথানিলঃ।
কেনেদং চিত্রিতং তস্মাৎস্বভাবাত্তদব্যবস্থিতিঃ ॥১॥
নস্বর্গো নাপাবর্গো বা নৈবাত্মা পারলৌকিকঃ।
নৈববর্ণাশ্রমাদীনাং ক্রিয়াশ্চ ফলদায়িকাঃ ॥২॥
পশুশ্চেন্নিহতঃ স্বর্গ জ্যোতিষ্টোমে গমিষ্যতি।
স্বপিতা য়জমানেন তত্র কম্যান্ন হিংস্যতে ॥৩ ৷৷
মৃতানামপি জনাং শ্রাদ্ধং চেপ্তিকারণম্।
গচ্ছতামিহ জনাং ব্যর্থং প্যাথেয়কল্পন॥৪॥
স্বর্গস্থিতা য়দা তৃপ্তিং গচ্ছেয়ুস্তত্র দানতঃ।
প্রাসাদস্যোপরিস্থানামত্র কম্মান্নদীয়তে।৫॥
যাবজ্জীবেৎ সখং জীবেণং কৃত্বা ঘৃতং পিবেৎ।
ভস্মীভূতস্য দেহস্য পুনরাগমনং কুতঃ ||৬ ৷৷
য়দি গচ্ছেৎ পরং লোকং দেহাদেষ বিনির্গতঃ।
কম্মাদভূয়ো ন চায়াতি বন্ধুস্নেহসমাকুলঃ |৭||
ততশ্চ জীবনোপায়ো ব্রাহ্মাণের্বিহিতস্ত্বিহ।
মৃতানাং প্রেতকার্যাণিন ত্বন্যদবিদ্যতে ক্বচিৎ |৮||
ত্রয়ো বেদস্য কর্ত্তারো ভণ্ডধূৰ্ত্তনিশাচরাঃ।
জফরীতুফরীত্যাদি পণ্ডিতানাং বচঃ স্মৃতম ॥৯॥
অশ্বস্যা হি শিশ্নন্তু পত্নীগ্রাহ্যং প্রকীৰ্ত্তিম।
ভণ্ডস্তদ্বৎ পরং চৈব গ্রাহ্যজাতং প্রকীৰ্ত্তিত ১০ |
মাংসানাং খাদনং তদ্বন্নিশাচরসমীরিতম্ ॥১১। -(চার্বাক দর্শন)
‘চার্ব্বাক’,‘আভাণক’,‘বৌদ্ধ’ এবং জৈন সকলই স্বভাব হইতে উৎপত্তি বিশ্বাস করে। স্বাভাবিক গুণের সহিত দ্রব্য সংযোগে সকল পদার্থ উৎপন্ন হয়। জগতের কৰ্ত্তা কেহই নাই৷১৷৷ |
কিন্তু ইহাদের মধ্যে চার্ব্বাক'ই এইরূপ স্বীকার করেন বৌদ্ধ ও জৈনগণ পরলোক এবং জীবাত্মা স্বীকার করেন, কিন্তু চার্ব্বাক তাহা স্বীকার করেন না।অবশিষ্ট বিষয়ে উক্ত তিন সম্প্রদায়ের মত কোন কোন বিষয় ব্যতীত, প্রায় একরূপ। তাহাদের মতে স্বর্গ, নরক এবং পরলোকগামী কোন আত্মা নেই এবং বর্ণাশ্রমের কার্য্য সকলের ফলদায়িকতা স্বীকার করে না ।৷২।।
যজ্ঞে পশু বধ করিয়া হোম(যজ্ঞ) করিলে যদি সেই পশু স্বর্গে যায়, তাহা হইলে যজমান আপন পিতাকে বধ করিবার পর তাহাকে হোম(যজ্ঞ) করিয়া স্বর্গে প্রেরণ করে না কেন? ||৩||
যদি শ্রাদ্ধ-তর্পণ মৃত জীবদের পক্ষে তৃপ্তিকর হয়, তাহা হইলে বিদেশযাত্রী পাথেয় স্বরূপ অন্ন-বস্ত্র এবং টাকা কড়ি লইয়া যায় কেন? যদি মৃতের নামে অর্পিত পদার্থ স্বর্গে যায়, তাহা হইলে যাহারা বিদেশে গিয়াছে, তাহাদের আত্মীয়েরাও আপন গৃহে তাহাদের নামে বস্তু অর্পণ করিয়া বিদেশে প্রেরণ করিতে পারিবে। যদি উহা না পৌছায় তাহা হইলে সে সমস্ত বস্তু কীরূপে স্বর্গে পৌছাইবে? |৪||
যদি মর্ত্যলোকে দান করিলে স্বর্গবাসী তৃপ্ত হয় তাহা হইলে ঘরের নীচের তলায় দান করিলে ঘরের উপরতলার ব্যক্তিগণ তৃপ্ত হয় না কেন? ||৫||
অতএব যতকাল জীবিত থাকিবে, ততকাল সুখেই জীবন ব্যতীত করিবে। গৃহে কোন বস্তু না থাকিলে ঋণ করিয়া আনন্দ ভোগ করিবে, ঋণ পরিশোধ করিতে হইবে না। কেননা, যে শরীরে জীব পান-ভোজন করিয়াছে, তাহাদের উভয়েরই পুনরাগমন হইবে না। এমতাবস্থায় কে কাহার নিকট চাহিবে, আর কেই বা পরিশোধ করিবে? |৬||
যাহারা বলে যে, মৃত্যুর পর জীব শরীর হইতে বহির্গত হইয়া পরলোকে গমন করে এসব কথা মিথ্যা। কেননা, উহা সত্য হইলে পরলোকগত গত জীব কুটুম্বদিগের মোহে আসক্ত হইয়া পুনরায় গৃহে ফিরিয়া আসে না কেন? ||৭||
সুতরাং ব্রাহ্মণগণ এ সমস্ত তাহাদের আপন জীবিকার্জনের উপায় করিয়াছে। মৃতকের জন্য দশগাত্রাদি মৃতক ক্রিয়া করিয়া থাকেন এ সমস্ত তাহাদের জীবিকার ফন্দি ৷৷৮ ||
বেদ রচয়িতা ভণ্ড, ধূৰ্ত্ত এবং নিশাচর অর্থাৎ রাক্ষস এই তিন জন। “জরী”, “তুফরী”ইত্যদি পণ্ডিতদের ধূর্ততাপূর্ণ বচন।৯ ||
| ধূৰ্ত্তদের রচনা দেখুন! যজমানদের স্ত্রী অশ্বলিঙ্গ গ্রহণ করিবে। অশ্বের সহিত তাহার সমাগম করাইবে, যজমানের কন্যার সহিত ঠাট্টা পরিহাসের কথা ধূর্ত ভিন্ন অপর কেহ কি লিখিতে পারে? ॥১০ ||
যে স্থলে মাংস ভক্ষণের কথা লেখা হইয়াছে, সেই বেদ ভাগ রাক্ষসের রচনা ॥১১।
উত্তর – চেতন পরমেশ্বর কর্তৃক নির্মিত না হইলে, জড় পদার্থসমূহ স্বাভাবিকভাবে নিয়মপূর্বক মিলিত হইয়া উৎপন্ন হইতে পারে না। যদি স্বভাব হইতেই হইত, তবে দ্বিতীয় সূৰ্য্য, চন্দ্র, পৃথিবী। এবং নক্ষত্রাদি লোক স্বয়ং নির্মিত হয় না কেন? ॥১॥
সুখভোগের নাম‘স্বর্গ এবং দুঃখভোগেরর নাম নরক'। জীবাত্মা না থাকিলে সুখ-দুঃখ কে ভোগ করিবে? বর্তমানের ন্যায় পরজন্মেও জীবসুখ-দুঃখের ভোক্তা। বর্ণাশ্রমীদের সত্যভাষণ এবং পরোপকার প্রভৃতি ক্রিয়াও কি নিষ্ফল হইবে? কখনই না ॥২॥
বেদাদি সত্যশাস্ত্রে কোথাও পশু বধ করিয়া হোম(যজ্ঞ) করিবার কথা লিখিত হয় নাই। মৃতকের শ্রাদ্ধ-তর্পণও কপোল-কল্পিত। কারণ, এসকল বেদাদি সত্যশাস্ত্রবিরুদ্ধ এবং ভাগবতাদি পুরাণ মতাবলম্বীদের অনুকূল অভিমত, অতএব ইহার খণ্ডন অখণ্ডনীয় ॥৩ ||৪ |৫||
বিদ্যমান বস্তুর অভাব কখনও হয় না; বিদ্যমান জীবেরও অভাব হইতে পারে না। দেহ ভস্ম হয়, জীব ভস্ম হয় না। জীব অন্য শরীরে গমন করে অতএব ইহাতে কোন সন্দেহ নাই যে, যাহারা ঋণ করিয়া পরের দ্রব্য ভোগ করে; এবং ঋণ শোধ করে না, তাহারা নিশ্চয় পাপী এবং পরজন্মে দুঃখস্বরূপ নরক ভোগ করে ॥৬ ||
দেহ হইতে বাহির হইয়া জীব স্থানান্তরে গমন করে এবং দেহান্তর প্রাপ্ত হয়। তাহার পূর্বজন্ম ও কুটুম্ব প্রভৃতির কোন জ্ঞান থাকে না। এইজন্য কুটুম্বদের মধ্যে ফিরিয়া আসিতে পারে না।||৭||
হ্যা, ব্রাহ্মণগণ তাহাদের জীবিকার জন্য প্রেত-কর্ম রচনা করিয়াছে। ইহা বেদোক্ত নহে বলিয়া খণ্ডনীয়৷৮ || | 
কী বা বলিব,বিচার করা উচিত এই যে, স্ত্রীলােকের দ্বারা অশ্বলিঙ্গ গ্রহণ করান, অশ্বের সহিত তাহার সমাগম করান, যজমানের কন্যার সহিত হাস্য পরিহাস করা – বামমার্গী ব্যতীত কে এরূপ ভ্রষ্ট, অশুদ্ধ, বেদার্থ বিরুদ্ধে বেদ ব্যাখ্যা করিবে?
চারবাক প্রভৃতির জন্য দুঃখ হয় যে, তাহারা নির্বিচারে বেদের নিন্দায় তৎপর হইয়াছিলেন এবং স্বীয় বুদ্ধির কোন সদ্ব্যবহারই করেন নাই। তাহারা কিই বা করিবেন? সত্যাসত্যের বিচার পূর্বক সত্যের মণ্ডন এবং অসত্যের খণ্ডন করিবার মত বিদ্যাও তাহাদের ছিল না ॥১০ ||
মাংসভােজনের কথাও বামমার্গী টীকাকারদের লীলা। এই নিমিত্ত তাহাদিগকে ‘রাক্ষস’ বলা উচিত। বেদের কোনও স্থলেও মাংস ভক্ষণের উল্লেখ নাই। সুতরাং যে সকল টীকাকার বেদনা জানিয়া, না শুনিয়া মনগড়া বেদের নিন্দা করিয়াছেন,ঐ সকল মিথ্যা বলিবার দায়ে তাহাদের নিশ্চয়ই পাপের ভাগী হইতে হইবে। ইহা সত্য যে, অন্ধকারে যাঁহারা বেদবিরােধী হইয়াছিলেন, হইয়াছেন এবং হইবেন, তাঁহারা অবশ্যই অবিদ্যারূপী অন্ধকারে ডুবিয়া সুখের পরিবর্তে যতই দারুণ দুঃখ ভােগ করুন না কেন, তাহা তাঁহাদের পক্ষে ততই অল্প হইবে। অতএব মনুষ্য মাত্রেই বেদানুকূল আচরণ করা কর্তব্য।১১। |
বামমার্গীগণ মিথ্যা কপােল কল্পনা করিয়া বেদের নামে নিজেদের প্রয়ােজন সিদ্ধ করিয়াছে। অর্থাৎ যথেচ্ছ মদ্যপান, মাংসভােজন, পরস্ত্রীগমনাদি দুষ্ট কর্মের প্রবর্তনকল্পে বেদের উপর কলঙ্ক আরােপ করিয়াছে। ইহাদের দেখাদেখি চারবাক, বৌদ্ধ ও জৈনগণও বেদের নিন্দা করিতে আরম্ভ করে। নিজেরা পৃথক এক বেদ বিরুদ্ধ, অনীশ্বরবাদী অর্থাৎ নাস্তিক মত প্রচলন করে। চারবাকাদি যদি বেদের মূল অর্থ বিচার করিতেন, তাহা হইলে মিথ্যা টীকা সমূহ দেখিয়া তাহারা সত্য বেদোক্ত মত পরিত্যাগ করিতেন কি? তাহাদের করারই বা কী আছে? ‘বিনাশকালে বিপরীত বুদ্ধিঃ। যখন নষ্ট ভ্রষ্ট হইবার সময় আসে তখনই মানুষের বুদ্ধি বিপরীত হয়।
এখন দেখুন! যদি চারবাক প্রভৃতি বেদাদি সত্যশাস্ত্র দর্শন, শ্রবণ অথবা পাঠ করিতেন তাহা হইলে কখনও বেদের নিন্দা করিতেন না এবং বলিতেন না যে, বেদ ভণ্ড, ধূৰ্ত্ত এবং নিশাচর সদৃশ ব্যক্তিদের রচিত। অবশ্য মহীধরের ন্যায় টীকাকারগণই ভণ্ড, ধূৰ্ত্ত এবং নিশাচর সদৃশ; এই ধূর্তা তাহাদের বেদের নহে।
বাস্তবিক বেদ ও ঈশ্বরের সহিত বিরােধ করিয়া তাহারা এই ফল লাভ করিয়াছেন যে, প্রথমতঃ সমস্ত সংসারকে দুঃখস্বরূপ ভাবনা করিয়া পরে মধ্যস্থলে পৌছিয়া দ্বাদশায়তন পূজা আরম্ভ করিয়া দিয়াছেন। এই দ্বাদশায়তন পূজা কি পার্থিব বস্তুর পূজা ব্যতীত অন্য কিছু? যদি তদ্বারা মুক্তিলাভ হইতে পারে, তবে কি কেহ চক্ষু বন্ধ করিয়া অন্বেষণ করিলেও রত্নলাভ করিতে পারিবে? বেদ এবং ঈশ্বরে বিশ্বাস না থাকায় ইহাদের এমনই লীলা-খেলা হইয়াছে।
নাস্তিকতা খন্ডন ও মন্ডন
যোহ বমন্যেত তে মূলে হেতুশাস্ত্রশ্রয়াদ্ দ্বিজঃ।
স সাধুভির্বহিষ্কার্য্যো নাস্তিকো বেদনিন্দকঃ।।-মনুস্মৃতি ২।১১
✍️যিনি বেদ এবং বেদানুকুল আপ্ত পরুষ রচিত শাস্ত্রের অপমান করেন সেই বেদ নিন্দুক নাস্তিককের জাতি,পঙ্ ক্তি এবং দেশ হইতে বহিষ্কৃত করিয়া দেওয়া কর্ত্তব্য
 চারবাকদের সহিত বৌদ্ধ ও জৈনগণ ইহারা অনেক বিষয়ে একমত। চারবাক, দেহের উৎপত্তির সহিত জীবের উৎপত্তি এবং দেহ নাশের সহিত জীবের নাশ স্বীকার করেন, কিন্তু পুনর্জন্ম এবং পরলােক মানেন না। তাঁহারা এক প্রত্যক্ষ ব্যতীত অনুমানাদি প্রমাণ স্বীকার করেন না। চারবাক শব্দের অর্থ- যে ব্যক্তি প্রমাণ বাক্য প্রয়ােগে প্রগলভ এবং বিশেষার্থে ‘বৈতণ্ডিক’। বৌদ্ধ এবং জৈনগণ প্রত্যক্ষাদি চারি প্রমাণ, অনাদি জীব, পুনর্জন্ম, পরলােক এবং মুক্তিও স্বীকার করেন। চারবাকের সহিত বৌদ্ধ এবং জৈনদের এইটুকুই মতভেদ আছে। নাস্তিকতা, বেদ ও ঈশ্বর নিন্দা, পরমতদ্বেষ, অতঃপর আলােচ্য ছয় যত্ন (ছয় কর্ম) এবং জগতের অ-কর্তৃত্ব ইত্যাদি বিষয়ে সকলেই একমত। এই পর্যন্ত চারবাক মত সংক্ষেপে প্রদর্শিত হইল।
(এবার) বৌদ্ধমত সম্বন্ধে সংক্ষেপে লিখিত হইতেছে
“কাৰ্যকারণভাবাদ্বা স্বভাবাদ্বা নিয়ামকাৎ। অবিনাভাব নিয়মাে দর্শনান্তরদর্শনাৎ”। বৌদ্ধদর্শন।। ‘কার্য-কারণভাব’ অর্থাৎ কাৰ্য্যদর্শনে কারণের এবং কারণ দর্শনে কাৰ্য্যাদির সাক্ষাৎকার হয় অর্থাৎ প্রত্যক্ষ দ্বারা শেষে অনুমান হইয়া থাকে। এতদ্ব্যতীত প্রাণীদের সম্পূর্ণ ব্যবহার পূর্ণ হইতে পারে না। এই সব লক্ষণ দ্বারা অনুমানকে অধিক স্বীকার করিয়া চারবাক হইতে বৌদ্ধ একটি পৃথক শাখা হইয়াছে।
আকাশ, কাল, জীব এবং পরমাণু ইহারা কখনও নূতন বা পুরাতন হয় না;
কারণ ইহারা অনাদি এবং কারণ রূপে অবিনাশী। অতএব এ সকলের মধ্যে নূতনত্ব কিংবা পুরাতনত্ব কীরূপে সম্ভব হইতে পারে ?
ধর্ম্ম এবং অধর্ম্ম ইহারা দ্রব্য নহে, কিন্তু গুণ। এই দুইটি জীবাস্তিকায়ের অন্তর্গত। অতএব আকাশ, পরমাণু, জীব এবং কাল মানাই সঙ্গত। বস্তুতঃ বৈশেষিকে যে নয় দ্রব্য স্বীকৃত হইয়াছে, তাহাই সঙ্গত। কারণ পৃথিব্যাদি পাঁচ তত্ত্ব, কাল,দিক ,আত্মা এবং মন এই নয়টি পৃথক পৃথক পদার্থ ইহা নিশ্চিত। একমাত্র জীবকেই চেতন মনে করা এবং ঈশ্বরকে না মানা, ইহা মিথ্যা ও পক্ষপাতের কথা।

এখানে একটা বিষয় আলোচ্য তাহলে ধর্ম্ম কি 
মনুষ্যত্ব বুঝিলে ধর্ম্ম সহজে বুঝিতে পারিবে। তাই আগে মনুষ্যত্ব বুঝাইতেছি। মনুষ্যত্ব বুঝিবার আগে বৃক্ষত্ব বুঝ।একটি ঘাস, আর এই বটগাছ দুইটি কি এক জাতীয়? হাঁ, এক হিসাবে এক জাতীয়। উভয়েই উদ্ভিদ্।দুইটিকেই কি বৃক্ষ বলিবে? নিশ্চয় না, বটকেই বৃক্ষ বলিবে-ওটি তৃণ মাত্র। তাহলে এ প্রভেদ কেন?
সাধারন দৃষ্টিতে দেখলে কাণ্ড, শাখা, পল্লব, ফুল, ফল, এই লইয়া বৃক্ষ। বটের এ সব আছে, ঘাসের এ সব নাই মনে হবে কিন্তু ঘাসেরও সব আছে-তবে ক্ষুদ্র, অপরিণত।যদি ঘাসকে বৃক্ষ না বল, তবে যে মনুষ্যের সকল বৃত্তিগুলি পরিণত হয় নাই, তাহাকেও মনুষ্য বলিতে পারা যায় না। ঘাসের যেমন উদ্ভিদত্ত্ব আছে, একজন হটেন্টট্ বা চিপেবারও সেরুপ মনুষ্যত্ব আছে। কিন্তু যে উদ্ভিদত্ত্বকে বৃক্ষত্ব বলি, সে যেমন ঘাসের নাই, তেমনি যে মনুষ্যত্ব মনুষ্যধর্ম্ম, হটেণ্টট্ বা চিপেবার সেই মনুষ্যত্ব নাই।
বৃক্ষত্বের উদাহরণ ছাড়িও না, তাহা হইলেই বুঝিবে। বাঁশঝাড়-উহাকে বৃক্ষ বলিবে?বলিবে না উহার কাণ্ড, শাখা ও পল্লব আছে; কিন্তু কৈ, উহার ফুল ফল হয় না; উহার সর্ব্বাঙ্গীণ পরিণতি নাই; উহাকে বৃক্ষ বলিবে না তাই তো.. কিন্তু ভালোভাবে বিচার করে দেখ পঞ্চাশ ষাট বৎসর পরে এক একবার উহার ফুল হয়। ফুল হইয়া ফল হয়, তাহা চালের মত। চালের মত, তাহাতে ভাতও হয়।
অথচ বাঁশ তৃণ মাত্র। একটি ঘাস উপড়াইয়া লইয়া গিয়া বাঁশের সহিত তুলনা করিয়া দেখ-মিলবে। উদ্ভিত্তত্ত্ববিৎ পণ্ডিতেরাও বাঁশকে তৃণশ্রেণীর মধ্যে গণ্য করিয়া গিয়াছেন। অতএব দেখ, স্ফূর্ত্তিগুণে তৃণে তৃণে কত তফাৎ। অথচ বাঁশের সর্ব্বাঙ্গীণ স্ফূর্ত্তি নাই। যে অবস্থায় মনুষ্যের সর্ব্বাঙ্গীণ পরিণতি সম্পূর্ণ হয়, সেই অবস্থাকেই মনুষ্যত্ব বলিতেছি।
উদ্ভিদের এইরূপ উৎকর্ষে পরিণতি, কতকগুলি চেষ্টার ফল; লৌকিক কথায় তাহাকে কর্ষণ বা পাট বলে। এই কর্ষণ কোথাও মনুষ্য কর্ত্তৃক হইতেছে, কোথাও প্রকৃতির দ্বারা হইতেছে। একটা সামান্য উদাহরণে বুঝাইব। তোমাকে যদি কোন দেবতা আসিয়া বলেন যে, বৃক্ষ আর ঘাস, এই দুইই একত্র পৃথিবীতে রাখিব না। হয় সব বৃক্ষ নষ্ট করিব, নয় সব তৃণ নষ্ট করিব। তাহা হইলে তুমি কি চাহিবে? বৃক্ষ রাখিতে চাহিবে, না ঘাস রাখিতে চাহিবে?
যদি বলো বৃক্ষ রাখিবে, ঘাস না থাকিলে ছাগল গোরুর কিছু কষ্ট হইবে, কিন্তু বৃক্ষ না থাকিলে, আম, কাঁঠাল প্রভৃতি উপাদেয় ফলে বঞ্চিত হইবে তবে তা তোমার মূর্খতা ! কারন তৃণ জাতি পৃথিবী হইতে অন্তর্হিত হইলে অন্নাভাবে মারা যাইবে যে? জান না যে, ধানও তৃণজাতীয়? যে ভাঁটুই দেখিতেছ, উহা ভাল করিয়া দেখিয়া আইস। ধানের পাট হইবার পূর্ব্বে ধানও ঐরূপ ছিল। কেবল কর্ষণ জন্য জীবনদায়িনী লক্ষ্মীর তুল্য হইয়াছে। গমও ঐরূপ। যে ফুলকপি দিয়া অন্নের রাশি সংহার কর, তাহাও আদিম অবস্থায় সমুদ্রতীরবাসী তিক্তস্বাদ কদর্য্য উদ্ভিদ্ ছিল- কর্ষণে এই অবস্থান্তর প্রাপ্ত হইয়াছে। উদ্ভিদের পক্ষে কর্ষণ যাহা, মনুষ্যের পক্ষে স্বীয় বৃত্তিগুলির অনুশীলন তাই; এজন্য ইংরেজিতে উভয়ের নাম, CULTURE! এই জন্য কথিত হইয়াছে, যে, “The Substance of Religion is Culture.” “মানববৃত্তির উৎকর্ষণেই ধর্ম্ম।”
মনুষ্যের সর্ব্বাঙ্গীণ পরিণতি কাহাকে বলে দেখ অঙ্কুরের পরিণাম, মহামহীরুহ। মাটি খোঁজ, হয়ত একটি অতি ক্ষুদ্র, প্রায় অদৃশ্য, অঙ্কুর দেখিতে পাইবে। পরিণামে সেই অঙ্কুর সেই প্রকাণ্ড বটবৃক্ষের মত বৃক্ষ হইবে। কিন্তু তজ্জন্য ইহার কর্ষণ-কৃষকেরা যাহাকে গাছের পাট বলে, তাহা চাই। সরস মাটি চাই-জল না পাইলে হইবে না। রৌদ্র চাই, আওতায় থাকিলে হইবে না। যে সামগ্রী বৃক্ষশরীরের পোষণজন্য প্রয়োজনীয়, তাহা মৃত্তিকায় থাকা চাই-বৃক্ষের জাতিবিশেষে মাটিতে সার দেওয়া চাই। ঘেরা চাই। ইত্যাদি। তাহা হইলে অঙ্কুর সুবৃক্ষত্ব প্রাপ্ত হইবে। মনুষ্যেরও এইরূপ যে শিশু দেখিতেছ, ইহা মনুষ্যের অঙ্কুর। বিহিত কর্ষণে অর্থাৎ অনুশীলনে উহা প্রকৃত মনুষ্যত্ব প্রাপ্ত হইবে। পরিণামে সর্ব্বগুণযুক্ত, সর্ব্ব-সুখ-সম্পন্ন মনুষ্য হইতে পারিবে। ইহাই মনুষ্যের পরিণতি।
শারীরিক প্রত্যঙ্গ মাত্রেরই সর্ব্বাঙ্গীণ পরিণতি না হইলে শারীরিক সর্ব্বাঙ্গীণ পরিণতি হইয়াছে বলা যায় না; কেন না, ভগ্নাংশগুলির পূর্ণতাই ষোল আনার পূর্ণতা। এক আনায় আধ পয়সা কম হইলে, পূরা টাকাতেই কম্‌তি হয়।অর্থাৎ জ্ঞানে পান্ডিত্য, বিচার দক্ষতা, কার্য্যে তৎপরতা,চিত্তে ধর্ম্মাত্মা এবং সুরসে রসিকতা, এই সকল হইলে, তবে মানসিক সর্ব্বাঙ্গীণ পরিণতি হইবে। আবার তাহার উপর শারীরিক সর্ব্বাঙ্গীণ পরিণতি আছে অর্থাৎ শারীর বলিষ্ঠ সুস্থ, এবং সর্ব্ববিধ শারীরীক ক্রিয়ায় সুদক্ষ হওয়া চাই। যেমন শরীর সম্বন্ধে বুঝাইলাম, এমনই মন সম্বন্ধে জানিবে। মনেরও অনেকগুলি প্রত্যঙ্গ আছে, সেগুলিকে বৃত্তি বলা গিয়াছে। কতকগুলির কাজ জ্ঞানার্জ্জন ও বিচার। কতকগুলির কাজ কার্য্যে প্রবৃত্তি দেওয়া-যথা ভক্তি, প্রীতি, দয়াদি। আর কতকগুলির কাজ আনন্দের উপভোগ, সৌন্দর্য্য, হৃদয়ে গ্রহণ, রসগ্রহণ, চিত্তবিনোদন। এই ত্রিবিধ মানসিক বৃত্তিগুলির সকলের পুষ্টি ও সম্পূর্ণ বিকাশই সর্ব্বাঙ্গীন পরিণতি।
যাহারা মনুষ্যজাতির মধ্যে উৎকৃষ্ট, তাহারা চেষ্টা করিলে যে সম্পূর্ণরূপে মনুষ্যত্ব লাভ করিতে পারিবে না, এমত কথা স্বীকার করা যায় না। আমার এমনও ভরসা আছে, যুগান্তরে যখন মনুষ্যজাতি প্রকৃত উন্নতি প্রাপ্ত হইবে, তখন অনেক মনুষ্যই এই আদর্শানুযায়ী হইবে। সংস্কৃত গ্রন্থে প্রাচীন ভারতবর্ষের ক্ষত্রিয় রাজগণের যে বর্ণনা পাওয়া যায়, তাহাতে দেখা যায়, সেই রাজগণ সম্পূর্ণরূপে এই মনুষ্যত্ব প্রাপ্ত হইয়াছিলেন। তোমরা বলিবে এরূপ আদর্শ কোথায় পাইব? এরূপ মানুষ ত দেখি না। যদিও শ্রীকৃষ্ণ ও ভগবান শ্রীরাম মনুয্যের উদাহরণ তাও বর্ত্তমানে যদি মনুষ্য না দেখ, ঈশ্বর আছেন। ঈশ্বরই সর্ব্বগুণের সর্ব্বাঙ্গীণ স্ফূর্ত্তির ও চরম পরিণতির একমাত্র উদাহরণ।
এখন আমরা পাইয়াছি কেবল দুইটা কথা। (১) মানুষের সুখ, মনুষ্যত্বে; (২) এই মনুষ্যত্ব, সকল বৃত্তিগুলির উপযুক্ত স্ফূর্ত্তি, পরিণত ও সামঞ্জস্যের সাপেক্ষ। এক্ষণে, এই বৃত্তিগুলি কি প্রকার, তাহার কিছু পর্য্যালোচনার প্রয়োজন।
বৃত্তিগুলিকে সাধারণতঃ দুই ভাগে বিভক্ত করা যাইতে পারে। (১) শারীরিক ও (২) মানসিক। মানসিক বৃত্তিগুলির মধ্যে কতকগুলি জ্ঞান উপার্জ্জন করে, কতকগুলি কাজ করে, বা কার্য্যে প্রবৃত্তি দেয়, আর কতকগুলি জ্ঞান উপার্জ্জন করে না, কোন বিশেষ কার্য্যের প্রবর্ত্তকও নয়, কেবল আনন্দ অনুভূত করে।
যেগুলির উদ্দেশ্য জ্ঞান, সেগুলিকে জ্ঞানার্জ্জনী বলিব।যেগুলির প্রবর্ত্তনায় আমরা কার্য্যে প্রবৃত্ত হই, বা হইতে পারি, সেগুলিকে কার্য্যকারিণী বৃত্তি বলিব। কেবল আনন্দ অনুভূত করায়, সেগুলিকে আহ্লাদিনী বা চিত্তরঞ্জিনী বৃত্তি বলা যাউক। জ্ঞান, কর্ম্ম, আনন্দ, এ ত্রিবিধবৃত্তির ত্রিবিধ ফল। সচ্চিদানন্দ এই ত্রিবিধ বৃত্তির প্রাপ্য।কিছুই ধর্ম্ম ছাড়া নহে। ধর্ম্ম যদি যথার্থ সুখের উপায় হয়, তবে মনুষ্যজীবনের সর্ব্বাংশই ধর্ম্ম কর্ত্তৃক শাসিত হওয়া উচিত। ইহাই হিন্দু(সনাতন) ধর্ম্মের প্রকৃত মর্ম্ম। অন্য ধর্মে(রিলিজিয়ন) তাহা হয় না, এজন্য এছাড়া অন্য ধর্ম অসম্পূর্ণ; কেবল সনাতন ধর্ম্ম সম্পূর্ণ ধর্ম্ম। অন্য জাতির বিশ্বাস যে, কেবল ঈশ্বর ও পরকাল লইয়া ধর্ম্ম। হিন্দুর কাছে, ইহকাল, ঈশ্বর, মনুষ্য, সমস্ত জীব, সমস্ত জগৎ-সকল লইয়া ধর্ম্ম। এমন সর্ব্বব্যাপী সর্ব্বসুখময়,পবিত্র ধর্ম্ম কি আর আছে?
নাস্তিকতা খন্ডন ও মন্ডন
ধর্ম্মেন হীনাঃ পশুভিঃ সমানাঃ । আহার, নিদ্রা, ভয় ও মৈথুন-এই চতুর্ব্বিধ কার্যে পশুজাতির সহিত মানবজাতির প্রভেদ নাই। ঐ কার্য্য-চতুষ্টয় উভয় জাতীয় জীবের সাধারণ ধর্ম্ম। কেবল ধর্ম্ম কার্য্য বিষয়েই মানব জাতির বিশেষ প্রভেদ আছে। ধর্ম্ম সৃষ্টিকে বিশেষভাবে ধারণ করে রয়েছে ।
"ধারণাদ্ ধর্ম ইত্যাহুধর্মেণ বিধৃতাঃ প্রজাঃ।
যঃ স্যাদ্ ধারণসংযুক্তঃ স ধর্ম ইতি নেতরঃ ॥"
ধর্ম্ম এমন এক সদাচার যা ধারণ করলে আত্মার উন্নতির সাথে সাথে মোক্ষ প্রাপ্তি হয়, সমাজ ব্যবস্থা সঠিক থাকে। মহর্ষি মনু ধর্ম্মের দশটি প্রধান লক্ষণের কথা বলেছেন "ধৃতিঃ ক্ষমা দমোস্তেয় শৌচমিন্দ্রিয়নিগ্রহঃ । ধীর্বিদ্যা সত্যমক্রোধঃ দশকং ধর্ম্ম লক্ষণম্ ।।"(মনুস্মৃতি ৬।৯২)

ধর্ম্মের নানান লক্ষনের মধ্যে প্রধান ১০ লক্ষন মনুস্মৃতি ৬।৯২ তে মহর্ষি মনু উল্লেখ করেছেন
১.ধৃতিঃ-ধারণা করা স্মরণ রাখিবার শক্তি।
২.ক্ষমাঃ-কেহ অপকার করিলে যে তাহার প্রত্যপকারে প্রবৃত্তি হয়, সেই প্রবৃত্তিকে যে শক্তি দ্বারা নিরোধ করা যায়।
৩.দমঃ-শোক,তাপাদি দ্বারা কোন প্রকার চিত্তবিকৃতি উপস্থিতি হইলে, যে শক্তি দ্বারা ঐ প্রবৃত্তির নিরোধ করা যায়।
৪.অস্তেয়ঃ-অবিধি পূর্ব্বক পরস্ব গ্রহণের পবৃত্তিকে যে শক্তি দ্বারা নিরূদ্ধ করা যায়।
৫.শৌচঃ-শরীর ও চিত্তের নির্ম্মলভাব।
৬.ইন্দ্রিয়নিগ্রহঃ-যে শক্তি দ্বারা ইন্দ্রিয়গণকে বিষয় হইতে নিরুদ্ধ করা যায়।
৭.ধীঃ-শাস্ত্রাদি দ্বারা বস্তুর তত্ত্ব নিশ্চয় শক্তি-ধীশক্তি
৮.বিদ্যাঃ- যে শক্তি দ্বারা অন্তরস্থ চৈতন্য স্বরূপ পরমাত্মার আন্তরিক প্রত্যক্ষ করা যায়,শরীরাদি হইতে আপনাকে পৃথকরূপে জানা যায়,যে শক্তি দ্বারা ইন্দ্রিয়,মন,বুদ্ধি অভিমান প্রভৃতি অন্তরস্থ পদার্থ সকল আম্র ও কাঁঠালের রসাস্বাদের ন্যায় পৃথক পৃথক রূপে জাজ্জল্যমান মানসিক প্রত্যক্ষ করিতে পারে।
৯.সত্যঃ- কায় মন ও বাক্য দ্বারা সম্পূর্ণ যথার্থ আচরণ করা।
১০. অক্রোধঃ- যে শক্তি দ্বারা ক্রোধকে নিরুদ্ধ করা যায়।
এই দশটি এবং বৈরাগ্য,উদাসীন্য,ভক্তি,শ্রদ্ধা,প্রেম,সন্তোষ প্রভৃতি কতগুলি সৎগুণ। এতৎ সমস্তের মধ্যে আত্মবোধের ক্ষমতাটি'ই সর্ব্বোচ্চ পরম ধর্ম্ম।
বিঃদ্রঃ- কেহ কেহ ধৈর্য্যকেই ধৃতি বলিতে চাহেন,কিন্তু তাহা নিতান্ত ভ্রম। যে ধৈর্য্যকে তাঁহারা ধৃতিবলিতে চাহেন,সেই ধৈর্য্য পরোক্ত দম শক্তি ও ইন্দ্রিয় নিগ্রহাদি শক্তির মধ্যে অন্তর্নিহিত সুতরাং এখানে আবার ধৈর্য্য অর্থ করিলে মনুর পুনরুক্তি দোষ ঘটে।
"তদ্বচনাদান্মায়স্য প্রামাণ্যম্"
✍️ বেদ সর্ব্বজ্ঞ ঈশ্বর উপদিষ্ট;অতএব বেদই ধর্ম্মসম্বন্ধে মুখ্য প্রমাণ ("তৎ"- শব্দ শ্রুতিতে সচরাচর ব্রহ্ম অর্থে ব্যবহৃত হইয়াছে)-বৈষয়িক দর্শন ১ম অঃ,১ম আঃ ৩ সূত্র
নাস্তিকরা অনেক সময় নিজেরা মাংস ভোক্ষনের জন্য বেদের নানা পৌরানিক বা সায়নকৃত ভাষ্যের রেফারেন্স দিয়ে তারাও বেদে মাংসারহার দেখায় কিন্তু
নাস্তিকতা খন্ডন ও মন্ডন

বেদ মন্ত্রে একটা শব্দ এসেছে "পশুঁস্ত্রাযেথা"-যজুর্বেদ ৬।১১
বেদে সকল পশুদের'ই হত্যা না করতে বলা হয়েছে,পশু বিনাশ করিয়া হোম করা বেদাদি সত্যশাস্ত্র মধ্যে কোথাও নাই। তাছাড়া মৃতকের জন্য শ্রাদ্ধ ও তর্পণাদি করাও কপোলকল্পিত। করাণ ইহা বেদাদি সত্য শাস্ত্রবিরূদ্ধ এবং কেবল ভাগবতাদি পুরাণ মতাবল্বীদিগের মত। 
ঈশ্বরকে কিভাবে জানা যায়
উত্তর : আমাদের মনে তিন প্রকারের দোষ আছে । যথা - "মল" , "বিক্ষেপ" এবং "আবরণ" দোষ । যখন মনের এই ত্রিদোষ ঘুচে যায় , তখন আত্মায় ঈশ্বরের অনুভূতি হয় ।

"মল" দোষ কি এবং কিভাবে তা দূর করা যায় ?
উত্তর : মনের মধ্যে অপরের অনিষ্ট চিন্তা করা তথা আত্মায় পাপের সংস্কার পড়াকে মল বলে ।
জ্ঞানের দ্বারা জানতে হবে যে , জগতের সমস্ত প্রাণী এবং সমস্ত পদার্থ নাশবান , এই জন্য অপরের অধিকার ছিনিয়ে নেবার ভাবনা মনে না রাখলেই 'মল' দোষ দূর হয় ।

"বিক্ষেপ" দোষ কি এবং কিভাবে তা দূর করা যায় ?
উত্তর : সদাসর্বদা বিষয় চিন্তন অথবা মনকে সদা চঞ্চল রাখাকে বিক্ষেপ বলে । অর্থাৎ যখন মানুষ সাংসারিক পদার্থ সমূহকে জীবনের উদ্দেশ্য মনে করে উপভোগ আরম্ভ করে , তখন তার চিত্ত চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয় , সেই চাঞ্চল্যকে বিক্ষেপ বলে ।
বাস্তবিক পক্ষে সাংসারিক পদার্থ সমূহ যে সাধন মাত্র , তাতে কোন সন্দেহ নেই । কিন্তু সাংসারিক পদার্থ সমূহ লাভ করা জীবনের উদ্দেশ্য নয় । এ সত্যকে জেনে যে কর্ম করা যায় , সেই কর্ম মানুষকে জলে পদ্ম পত্রের ন্যায় সাংসারিক মমতায় লিপ্ত হতে দেয় না । নিষ্কামকর্মের অনুষ্ঠানদ্বারা বিক্ষেপ দূর হয় ।

"আবরণ" দোষ কি এবং কিভাবে তা দূর করা যায় ?
উত্তর : জগতের যাবতীয় নাশবান পদার্থের অভিমান মনের উপর পর্দার মত পড়ে থাকাকে আবরণ বলে ।
মানুষের মনের উপর অহংকার বা অভিমানের আবরণ পড়লে , সে পরমেশ্বর প্রদত্ত বস্তু সমূহকে আপন মনে করতে থাকে । আমার ধন , আমার স্ত্রী , আমার জন , আমার রাজ্য , আমার শাসন ইত্যাদি ইত্যাদি । অভিমানে বশিভূত হয়ে সে অপরকে পীড়ন করা আরম্ভ করে ।
সে মনে করতে থাকে , তার মতো বড় এ সংসারে আর কেউ নেই । কিন্তু যখন সে জ্ঞানপূর্বক কর্ম করে , মন এবং ইন্দ্রিয় সমূহকে বাহ্য বিষয় সমূহ হতে দূরে সরিয়ে শক্তিকে হৃদয়ে একাগ্র করে এবং মনে করে যে ,পরমাত্মা তার সমীপে বর্তমান এবং সে পরমাত্মার সমীপে , এইরূপ উপাসনা দ্বারা অহংকার অর্থাৎ আবরণ দোষ দূর হয়ে যায় ।
এইভাবে ত্রিদোষ দূরীকরণ সাধন দ্বারা ত্রিদোষ নাশ করার নিরন্তর অভ্যাসই পরমাত্মার অনুভূতি করিয়ে দেয় । এই ত্রিদোষ দূর করার মূল সাধনা হল তিনটি ।
যথা - "জ্ঞান" "কর্ম" ও "উপাসনা"।

"জ্ঞান" কাকে বলে ?
উত্তর : যে পদার্থ যে রূপ তাকে সেই রূপ মনে করা অর্থাৎ জড় বস্তুকে জড় , চেতনকে চেতন , নিত্যকে নিত্য এবং অনিত্যকে অনিত্য জানাই জ্ঞান ।

"কর্ম" কাকে বলে ?
উত্তর : শরীর , সমাজ তথা আত্মার উন্নতি করা , অভিপ্রেত পদার্থ সমূহ লাভ করার জন্য পুরুষার্থ করাকে কর্ম বলে ।

"উপাসনা" কাকে বলে ?
উত্তর : পদার্থের সমীপে গিয়ে , তার গুণ নিজের মধ্যে ধারণ করা এবারের আপন দোষ সংশোধন করার নাম উপাসনা ।
উদাহরণ - কল্পনা করা যাক একজন ব্যক্তি শীতে কাতর বা শীতার্ত । সে যদি শীত হতে পরিত্রাণ পাওয়ার জন্য জলের কাছে যায় , তাহলে তাকে জ্ঞানী বলা চলে নাকি অজ্ঞানী বলা চলে ? অবশ্যই অজ্ঞানী বলা হবে । তার কারণ এই যে , সে শীত নিবারন করার জন্য জলের সমীপস্থ হচ্ছে , তাই একে জ্ঞানী বলা চলে না , অজ্ঞানী বলে ।
শীত তখনই দূর হতে পারে । যদি তার মধ্যে প্রথম থেকেই অগ্নির বিষয়ে জ্ঞান থাকে । তারপরে তাকে অগ্নির সমীপস্থ হয়ে শীতরূপী দোষকে অগ্নির যে গুন তা দিয়ে দূর করতে হবে ।
অর্থাৎ "জ্ঞান" দ্বারা "মল"দোষকে দূর করতে হবে , "কর্ম" দ্বারা "বিক্ষেপ" দোষকে দূর করতে হবে এবং "উপাসনা" দ্বারা "আবরণ" দোষ দূর হলে , তারপর আত্মায় পরমাত্মার অনুভূতি হবে ।
কিন্তু দুঃখের বিষয় এই যে,চার্ব্বাক, আভাণক, বৌদ্ধ এবং জৈনগণ মূল চারিবেদের সংহিতাগুলি দর্শন,শ্রবণ ও পাঠ করেন নাই এবং কোন বিদ্বানব্যক্তির নিকট অধ্যয়ন করেন নাই। এই নিমিত্ত তাঁহারা নষ্ট ভ্রষ্ট বুদ্ধি হইয়া,নিরর্থক বেদের নিন্দা এবং দুষ্টবুদ্ধি বাম মার্গীদিগের প্রমাণশূন্য কপোল-কল্পিত জঘন্য টীকাসমূহ পাঠ করিয়া বেদবিরোধী হইয়াছেন। ফলে তাঁহারা অবিদ্যারূপী অতল সমুদ্রে নিপতিত হইয়াছেন।
"তন্তুম তন্বন রজসো ভানুমন্বিহি জ্যোতিষ্মতঃ পথো রক্ষ ধিয়া কৃতান্।
অনুল্বণং বয়ত জোগুবামপো মনুর্ভব জনয়া দৈবং জনম্"।।
-ঋগ্বেদ১০।৫৩।৬

-উক্ত মন্ত্রে প্রকৃত মানুষ হওয়ার নির্দেশ আছে, প্রকৃত মানুষ হতে হলে বেদানুরূপ ধর্ম্মাচারণ করা কর্তব্য অন্যথা চার্বাক দর্শন (নাস্তিকতা) দ্বারা প্রকৃত মানুষ হওয়া সম্ভব নয়। 

ন বি জানামি যদিবেদমস্মি নিণ্যঃ সংনদ্ধো মনসা চরামি।
যদা মাগন্ প্রথমজা ঋতস্যাদিদ্ বাচো অশ্নুবে ভাগমস্যাঃ।।
(ঋগ্বেদ ১/১৬৪/৩৭)
পদার্থঃ (যদি বা ইদম্ অস্মি) আমি কে আমি বা কি বা আমার স্বরূপ (ন বি জানামি) তা আমি জানি না। (মনসা) সীমিত ইন্দ্রিয় তথা মন দ্বারা (নিণ্যঃ) আমি আবদ্ধ হওয়ায় (সন্নদ্ধঃ) মূঢ় চিত্ত ও স্বল্পজ্ঞান নিয়ে (চরামি) এখানে সেখানে বিচরণ করি। কিন্তু (যদা) যখন (মা) আমার সামনে (ঋতস্য) সকল সত্য জ্ঞানের উন্মেষকারী (প্রথমজা) সৃষ্টির আদিতে উৎপন্ন বেদবাণী (আগন্) এসে প্রকাশিত হয়, (আৎ ইৎ) এরপরেই (অস্যাঃ বাচঃ) এই বেদবাণীর দ্বারা আমি (ভাগম্) ভজনীয়, সেবনীয় আত্মস্বরূপকে (অশ্নুবে) জানতে পারি।
ভাবার্থঃ মানুষ এই পার্থিব জগতের মোহ মায়ায় আবদ্ধ হয়ে চারদিকে লক্ষ্যহীনভাবে বিচরণ করে। এজন্য মানুষ তাদের আত্মস্বরূপকে বুঝতে পারে না। নিজের স্বরূপকে বোঝার ও জানার উপায় হচ্ছে, সৃষ্টির আদিতে উৎপন্ন সত্য জ্ঞানের ভাণ্ডার, বেদ। এই বেদ বাণীকে আত্মস্থ করার মাধ্যমেই মানুষ তার নিজেকে জানতে পারে। ফলে মানব প্রকৃত সত্য উপলব্ধি করে সেই পরম সত্যের নিকট পৌঁছাতে পারে।
মানুষকে যাহা ধরিয়া রাখে মনুষ্যত্ব হইতে ভ্রষ্ট হইতে দেয় না,- মানুষই করে তাহাই ধর্ম্ম।(মহাভারত কর্ণপর্ব্ব ৬৯।৫৯)
উক্ত মন্ত্রে প্রকৃত মানুষ হওয়ার নির্দেশ আছে, প্রকৃত ধর্ম্মাচারনের দ্বারায় প্রকৃত মানুষ হওয়া যায়। চার্বাক দর্শন (নাস্তিকতা) দ্বারা প্রকৃত মানুষ হওয়া সম্ভব নয়..

ঈশ্বর বিষয়কঃ

"স পর্যগাচ্ছুক্রমকাযমব্রণ মস্নাবির শুদ্ধমপাপবিদ্ধম্‌। কবির্মনীষী পরিভুঃ স্বযম্ভূর্যাথাতথ্যতো হর্থান্ ব্যদধাচ্ছাশ্বতীভ্যঃ সমাভ্যঃ।।"-যজুর্বেদo ৪০।৮ "ন তস্য কার্যং করণং চ [বিদ্যতে ন তৎসমশ্চাভ্যধিকশ্চ দৃশ্যতে।] পরাস্য শক্তির্বিবিধৈব শ্রূযতে শ্বাভাবিকী জ্ঞানবলক্রিযা চ।।"-শ্বেতা.উপ.৬।৮ মূর্ত্ত দেবতাদের(মন্দি সমূহে দেবতাদের নামে স্থাপিতমূর্ত্তি সমূহ) মধ্যে এই সমস্ত গুণ প্রযুক্ত হইতে পারেনা। এই কারণ মূর্ত্তি পূজা নিষিদ্ধ। এ বিষয়ে কেহ হয়ত প্রশ্ন করিবেন যে, রাবণ আদির ন্যায় দুষ্টদের পরাস্ত করিবার জন্য এবং ভক্তদের পরিত্রাণের জন্য [ঈশ্বরকে] অবতার হইতে হয়। কিন্তু ঈশ্বর সর্বশক্তিমান্ হওয়ায় তাঁহার অবতার হইবার প্রয়োজন হয়না। কারণ, ঈশ্বর ইচ্ছা মাত্রই রাবণ (সদৃশদের) বিনাশকরিতে পারে। এই ভাবে ঈশ্বরের উপাসনার্থে ভক্তদের পক্ষে তাঁহার কোনও না কোনও প্রকারের আকার (অবতার/আকার)হওয়া উচিত। এরূপ কথা অনেকের মুখে শুনিতে পাওয়া যায়,কিন্তু এরূপ বলাও যথার্থ নয়। কারন এই য, শরীরে যে জীব রহিয়াছে উহাও আকার রহিত এইরূপ সকলে স্বীকার করেন। আকার না তাকিলেও আমরা একে অপরকে চিনিতে পারি, এবং মনুষ্য প্রত্যক্ষ রূপে কখনও কাহাকে না দেখিলেও কেবল গুণানুবদা দ্বারাই সদ্ভাবনা ও পূজ্যবুদ্ধি (অদৃষ্ট) ব্যক্তির সম্বন্ধে পোষণ করে। এই ভাবের কথা ঈশ্বর সম্বন্ধে খাটেনা একথা বলাও ঠিক্ নয়। এতদ্ব্যতীত মনের কোনও আকার নাই। মন দ্বারাই পরমেশ্বর গ্রাহ্য-গ্রহণীয়। উহাকে জড়েন্দ্রিয়-গ্রাহ্যতার(ঘটানা)অন্তর্ভুক্ত করা অপ্রয়োজন। শ্রীকৃষ্ণ মহারাজ এক ভদ্র পুরুষ ছিলেন। মহাভারতে তাঁহার উত্তম বর্ণনা করা আছে পরন্তু ভাগবত(পুরাণ)গ্রন্থে তাঁহার প্রতি সর্বপ্রকারের দোষারোপ করিয়া দুর্গুণের বাজার উত্তপ্ত করিয়া রাখা হইয়াছে। ঈশ্বর সর্বশক্তিমান। শক্তির(শক্তিমান,সর্বশক্তিমান) অভিপ্রায় কি ? "কর্তুমকর্তুমন্যথা কর্তুম্" এইরূপ ভাব তাঁহাতে নাই। কিন্তু সর্ব শক্তিমান্ অর্থাৎ ন্যায়কে উল্লঙ্ঘন না করিয়া কর্ম করিবার শক্তির অধিকারীহওয়া, ইহা সর্ব শক্তিমানের অর্থ। কেহ কেহ বলিয়া থাকেন যে, ঈশ্বর তাঁহার পুত্র(যীশু খৃষ্ট) কে পাপক্ষালনের জন্য (সংসারে) পাঠাইয়াছেন। কেহ বলেন- উপদেশ প্রদানের জন্য পয়গম্বরকে(মোহম্মদ)প্রেরণ করা হইয়া ছিল। এ সমস্ত কার্য্য সাধিবার জন্য পরমেশ্বরের এতাদৃশ কোনও প্রকার সাধনের প্রয়োজন ছিলনা, কারণ তিনি সর্ব শক্তিমান্। বল, জ্ঞান ও ক্রিয়া এগুলি শক্তির প্রকার ভেদ মাত্র। বল, জ্ঞান ও ক্রিয়া অনন্ত হইয়াও স্বাভাবিক। ঈশ্বরের আদি কারণ নাই। আদি কারণ স্বীকার করিলে অনবস্থা-প্রসঙ্গ উপস্থিত হইবে(ঈশ্বরের আদি কারণ আছে, ইহা স্বীকার করিলে সেই আদি কারণেরও আদি কারণ স্বীকার করিতে হইবে,আবার তাহারও আদি কারণ। এই ভাবে এই আদি কারণের পরম্পরা কোথাও কখনও শেষহইবেনা। ইহাকেই অনবস্থা-প্রসংগ দ্বারা সূচিত করা হইয়াছে )। নিরীশ্বরবাদের সৃষ্টি সাংখ্যশাস্ত্র হইতে হইয়াছে প্রতীত হয়; কিন্তু সাংখ্য শাস্ত্রকার কপিল মুনি নিরীশ্বরবাদী ছিলেন না। তাঁহার সূত্র সমূহকে অবলম্বন করিয়া এইরূপ কেহ কেহ বলিয়া থাকেন, কিন্তু তাঁহার সূত্র সমূহের অর্থ যেরূপ হওয়া উচিত সেরূপ করা হয় নাই। সূত্রগুলি এইরূপ-
ঈশ্বরাসিদ্ধেঃ। মুক্তবদ্ধযোরন্যতরাভাবান্ন তৎসিদ্ধিঃ। উভযাথাপ্যসৎকরত্বম্। মুক্তাত্মনঃ প্রশংসা উপাসাসিদ্ধস্য বা।
-সাংখ্য ১।৯২, ৯৩, ৯৪, ৯৫ ইত্যাদি কিন্তু সূত্রসাহচর্য্য দ্বারা বিচার করিলে ঈশ্বর এক, দ্বিতীয় ঈশ্বর নাই। এইরূপ কল্পিত মানিতেন। কারণ, "পুরুষ" আছেন তাঁহার সিদ্ধান্ত এইরূপ। সেই পুরুষ সহস্র-শীর্ষাদি সূক্তে (সহস্রশীর্ষা সূক্ত ঋo ১০।৯০ এবং যজুর্বেদ ৩১) বর্ণিত রহিয়াছে। তাহারই সম্বন্ধে বেদাহমেতং পুরুষং মহান্তম্ (যজুর্বেদঃ ৩১।১৮) ইত্যাদি বলা হইয়াছে। প্রমাণ বহুবিধ-প্রত্যক্ষ, অনুমান, উপমান, ও শব্দ-ইত্যাদি। ভিন্ন ভিন্ন শাস্ত্রকারগণ প্রমাণের ভিন্ন ভিন্ন সংখ্যা স্বীকার করেন। মীমাংসা-শাস্ত্রকার জৈমিনি দুইটি প্রমাণ স্বীকার করেন।গৌতম ন্যায় শাস্ত্রকার আটটি প্রমাণ স্বীকার করেন। কেহ অর্থাৎ অন্য ন্যায়-শাস্ত্রকার চারটি স্বীকার করেন। পতঞ্জলি যোগ শাস্ত্রকার তিনটি স্বীকারকরেন। বেদান্তে ছয়টি প্রমাণ স্বীকার করা হইয়াছে। কিন্তু, ভিন্ন ভিন্ন সংখ্যা স্বীকারকরাইহা সেই সমস্ত শাস্ত্রকারদের বিষয়ানুরূপে করা হইয়াছে। সমস্ত প্রমান সমূহের (একটি অপরটিতে) অন্তর্ভাব করিয়া তিনটি প্রমাণ অবশিষ্ট থাকিয়া যাইতেছে-প্রত্যক্ষ,অনুমান ও শব্দ। এই তিনটি প্রমাণের লাপিকা(লাপিকা শব্দ আ-লাপিকা'র অংশ। যথা সত্যভামা-ভামা / অথবা আলাপ=বিচার-বিবেচনা) করিয়া ঈশ্বর সিদ্ধি-বিষয়ক প্রযত্ন করিবার সময় প্রত্যক্ষের লাপিকা করিয়া পূর্ব অনুমানের লাপিকা করা উচিত। কারণ, প্রত্যক্ষের জ্ঞান অতীব সংকুচিত এবং ক্ষুদ্র(অল্প)। একক ব্যক্তির পক্ষে ইন্দ্রিয় দ্বারা কতটুকু জ্ঞান সম্ভব..? এ কারণ প্রত্যক্ষকে একদিকে রাখিয়া শাস্ত্রীয়বিষয়ে অনুমানকেই বিশেষ রূপে গণ্য করা হইয়াছে। ব্যবহারিক দৃষ্টিতে [ও] অনুমান আবশ্যক অনুমান ব্যতীত ভবিষ্যতের ব্যবহারিক বিষয়ে আমাদের যে স্থির নিশ্চয়, উহা নিরর্থক হইবে। আগামী কাল সূর্ষ উদয় হইবে, ইহা প্রত্যক্ষ নহে, তথাপি এ বিষয়ে কাহারও মনে তিল মাত্রও সন্দেহ হয়না। এবার এই অনুমানের তিনটি প্রকার ভেদ দেখা যায়।- শেষবৎ,পূর্ববৎ ও সামান্যতো দৃষ্ট। পূর্ববৎ-অর্থাৎ কারণ দ্বারা কার্য্যের অনুমান। শেষবৎ-অর্থাৎ কার্য দ্বারা কারণের অনুমান। সামান্যতো দৃষ্ট- অর্থাৎ সংসারে যেরূপ ব্যবস্থা দৃষ্ট হয় উহা দ্বারা যে অনুমান হইয়া তাকে, উহা।
এই তিন পর্কার অনুমানের বিচার বিবেচনা (লাপিকা) করিলে ঈশ্বর পরমপুরুষ- সনাতন ব্রহ্ম সর্ব পদার্থের বীজ, ইহা সিদ্ধ হইয়া যায়। রচনারূপী কার্য দৃষ্ট হয়। ইহার কেহ রচয়িতা আছে()। পঞ্চভুত সমূহের দ্বারা রচিত সৃষ্টি নিজে নিজেই হয় নাই। কারণ, ব্যবহারিক রূপে গৃহ [নির্মাণের] উপকরণ থাকিলেও গৃহ নির্মাণ হয় না, ইহা আমরা দেখিতে থাকি। এবং এই অনুভবই সর্বত্র দৃষ্টহয় যে, ইহার সহিতই [পঞ্চ ভূতের] নিয়মিত প্রমাণ দ্বারা মিশ্রণ এবং বিশিষ্ট কাব্য উৎপন্ন হইবার সুগমতার জন্য কদাপি ও নিজে নিজে সংঘটিত হয়না। ইহা দ্বারা স্পষ্ট হয় যে, আমরা সৃষ্টির যে ব্যবস্থা দেখিতে পাই, উহার উৎপাদক ও নিয়ন্তা এরূপ কোনও শ্রেষ্ঠ পুরুষ অবশ্যই থাকা উচিত।এমতাবস্থায় ঈশ্বর সিদ্ধিতে প্রত্যক্ষ প্রমাণ, প্রযুক্ত হয় কি..? যদি এইরূপ কাহারও অপেক্ষা হইয়াই থাকে তাহা হইলে তৎসম্বন্ধে বিচার এইভাবেকরা যাইতে পারে যে, প্রত্যক্ষ রীতি অনুসারে গুণের জ্ঞান হইয়া থাকে। গুণের অধিকরণ যাহা গুনী দ্রব্য উহার জ্ঞান প্রত্যক্ষ রীতি আনুসারে হয় না (কতিপয় নৈয়ায়িক পদার্থকে প্রত্যক্ষরূপে স্বীকার করে না। গুণেরই প্রত্যক্ষরূপে জ্ঞান হইয়া থাকে, এ কথা তাহারা স্বীকার করে। অপর নৈয়ায়িক গুণ সহিত গুণীর প্রত্যক্ষ স্বীকার করে)। এইরূপে ঈশ্বর সম্বন্ধীয় গুণের জ্ঞান চেতন এবং অচেতন সৃষ্টি দ্বারা প্রত্যক্ষ হইয়া থাকে। ইহার দ্বারা এই সমস্ত গুণের যিনি অধিকরণ ঈশ্বর, উহার জ্ঞান হইয়া তাকে। (সত্যার্থ প্রকাশ ৭মসমুল্লাস) এরূপ জানা উচিত
" হিরণ্যগর্ভঃ সমবর্ত্ততাগ্রে ভূতস্যজাতঃ পতিরেক আসীৎ।
স দাধার পৃথিবীং দ্যমুতেমাং কস্মৈ দেবাষ হবিষা বিধেম।।(ঋগ্বেদ১০।১২১।১)
হিরন্য গর্ভের অর্থ শালি গ্রামের বটিকা নয়, কিন্তু হিরণ্য অর্থাৎ যাহার উদরে "(জ্যোতি) বিদ্যমান। সেই জ্যোতিরূপ পরমাত্মা" এইরূপ অর্থ হইবে। জনসাধারণের মধ্যে মূর্ত্তি পূজার পাগলামি ছড়াইয়া পড়িয়াছে। ইহাদেরকি করা উচিত..? ইহা একপ্রকার গায়ের জোর। মূর্ত্তি পূজার আড়ম্বর হিন্দুরা জৈনদের নিকট হইতে গ্রহণ করিয়াছে।

কার্য্য ও কারণ কোনও কোনও স্থলে অভিন্ন, আবার কোন কোনও স্থলে ভিন্নও।
উদাহরণ স্বরূপ- মৃত্তিকা নির্মিত ঘটে মৃত্তিকাই থাকে। আর নখ,রক্ত মাংস হইতে উৎপন্ন হয় কিন্তু নখ রক্ত মাংস নয়। এই ভাবে মাকড়সার পেট হইতে জাল উৎপন্ন হয়, তাই বলিয়া পেট মাকড়সার জাল হইয়া যায় না।
গোময় হইতে বৃশ্চিক উৎপন্নহয়;তাইবলেকি গোময় ও বৃশ্চিকএক হইতে পারে..? সর্ব্বশক্তিমান্ [এবং] চৈতন্য (চেতন) ইহার মধ্যে চৈতন্যে রহিয়াছে সর্বশক্তিত্ব, অর্থাৎ সামর্থ্যের যোগে চৈতন্য নিমিত্ত কারণ হইয়া থাকে। এস্থলে বিশ্বের উপাদান কারণযে জড় পদার্থ, উহা এবং নিমিত্ত কারণ যে চৈতন্য উহা এক নয়। 
"একমেবাদ্বিতীযম্"-(ছাঃউঃ ৬।২।১) উহার অর্থ করিতে হইলেউপযুক্ত ব্যবস্থায় কোনও বাধা সৃষ্টি হয় না। কারণ [ইহার অর্থ] 'অদ্বিতীয় অর্থাৎ ঈশ্বরই উপাদান [কারণ] হইল কিন্তু উহা এরূপ নহে। কারণ ভেদ তিন প্রকারের- কখনও কখনও স্বজাতীয় ভেদ,কখনও
বিজাতীয় এবং ককনও বা স্বগত ভেদ হয়। "অদ্বিতীয়"-অর্থাৎ সমস্ত, এক কথায় যাহা কিছু বিদ্যমান আছে উহা ঈশ্বর। এরূপ অর্থ আধুনিক বেদান্তে গৃহীত হয়। কিন্তু এরূপ অর্থ উপযুক্ত হয়, কিন্তু (অদ্বিতীয়ের) দ্বিতীয় ঈশ্বরের অস্তিত্ব নাই। ঈশ্বর সে এক এবং সে 
সংযুক্ত নহে, ইহাই অর্থ হয়। অতঃপর- "ঈশ্বরঃ সর্বসৃষ্টিংপ্রাবিশৎ"-(তৈ-উঃ ২।৬) শ্রুতির অর্থ এইরূপঃ ইহার অর্থ কিরূপ করা উচিত। অথবা- "সর্বং খল্বিদং ব্রহ্ম"-(ছাঃউঃ ৩।১৪।১) এই বাক্যের অর্থ কিভাবে করা হইবে..? আধুনিক বেদান্তীরা,'ইদং বিশ্বম্' এইরূপ স্বীকার করিয়া,
সেই শব্দের অন্বয় 'সর্বম্' কে ইহার পক্ষে করে, কিন্তু সাহচার্য্য অর্থাৎ গ্রন্থের অগ্র পশ্চাৎ অভিপ্রায়ের প্রতি বিবেচনা করিলে 'ইদম্' শব্দের অন্বয় "ব্রহ্ম" শব্দের পক্ষে করিতে হইবে। [যথা] 'ইদং সর্বং ঘৃতম্' অর্থাৎ ইহা সবই ঘৃত, তৈলমিশ্রিত নয়।

অনাদি ঈশ্বর না থাকিলে, “অর্হন্ দেবের” মাতা-পিতা প্রভৃতির শরীর কে নির্মাণ করিল ? সংযোগকৰ্ত্তা ব্যতীত যথাযোগ্য সর্বাবয়ংসম্পন্ন ও যথোচিত কার্য্যক্ষম শরীর নির্ম্মিত হইতে পারে না। শরীরের উপাদান জড় হওয়ায় উহা স্বয়ং এমন হুগঠিত হইয়া রচিত হইতে পারে না। কারণ জড়পদার্থের মধ্যে যথাযোগ্য নির্ম্মিত হইবার জ্ঞানই নাই। আবার যিনি প্রথমে রাগাদি দোষক্ত হইয়া, পরে দোষরচিত হন তিনি কখনও ঈশ্বর হইতে পারেন না। কারণ, যে নির্মিত্তবশতঃ তিনি রাগাদি হইতে মুক্ত হন, সেই নিমিত্ত নষ্ট হইলে, তাহার কার্যমুক্তিও অনিত্য হইবে। যিনি অল্প এবং অল্পজ্ঞ তিনি কখনও সর্ববজ্ঞ এবং সর্ববব্যাপক হইতে পারেন না। জীবের স্বরূপ একদেশী এবং পরিমিত গুণকৰ্ম্ম-স্বভাববিশিষ্ট। জী। সর্বতোভাবে সর্বববিদ্যার যথার্থ বক্তা হইতে পারে না। অতএব তোমাদের তীর্থঙ্কর কখনও পরমেশ্বর হইতে পারেন না ॥ তোমরা কি কেবল প্রত্যক্ষ পদার্থই স্বীকার কর ? অপ্রত্যক্ষ পদার্থ কি স্বীকার কর না? যেমন রূপগ্রহণের সাধন চক্ষু, শব্দগ্রহণের সাধন কর্ণ, সেইরূপ অনাদি পরমাত্মাকে দর্শন করিবার সাধন শুদ্ধ অন্তঃকরণ। পৰিত্ৰাত্মারা বিদ্যা এবং যোগাভ্যাস দ্বারা পরমেশ্বরকে প্রতক্ষ দর্শন করেন। যেমন অধ্যয়ন ব্যতীত বিদ্যালাভ হয় না, সেইরূপ যোগাভ্যাস এবং জ্ঞান বিজ্ঞান ব্যতীত পরমাত্মাকেও দর্শন করা যায় না। যেমন পৃথিবীর রূপাদি গুণ দেখিয়া এবং জানিয়া, গুণ হইতে অব্যবহিত সম্বন্ধবিশিষ্ট পৃথিবী প্রত্যক্ষ করা যায় সেইরূপ সৃষ্টিতে পরমাত্মার চিহ্নস্বরূপ রচনা বিশেষ দেখিয়া পরমাত্মাকে প্রত্যক্ষ করা যায় । পাপাচরণের ইচ্ছার সঙ্গে সঙ্গেই মনে যে ভয়, সংশয় এবং লজ্জা উৎপন্ন হয়, তাহা পরমাত্মা হইতেই হয় তদ্দ্বারাও পরমাত্মা প্রত্যক্ষ হইয়া থাকে সুতরাং অনুমান সম্বন্ধে কোন সন্দেহ থাকিতে পারে কি ॥

প্রত্যক্ষ ও অনুমান প্রমাণ সিদ্ধ হওয়ায় আগম প্রমাণও নিত্য, অনাদি এবং সর্ববজ্ঞ ঈশ্বরের বোধক। অতএব ঈশ্বর বিষয়ে শব্দ প্রমাণও আছে। যখন জীব ত্রিবিধ প্রমাণ দ্বারা ঈশ্বরকে জানিতে পারে, তখন সে যথার্থরূপে অর্থবাদ অর্থাৎ পরমেশ্বরের গুণাবলীর প্রশংসা করিতে সমর্থ হয়। কারণ, যে পদার্থ নিত্য, তাহার গুণ-কৰ্ম্ম-স্বভাবও নিত্য। তাহার প্রশংসায় কোন প্রতিবন্ধ নাই ॥ ৩ ॥ যেমন মনুষ্যদিগের মধ্যে কর্রা ব্যতীত কোন কাৰ্য্য হয় না, সেইরূপ কৰ্ত্তা ব্যতীত মহৎ কাৰ্য্যও সর্ববথা অসম্ভব। ইহা যদি সত্য হয়, তাহা হইলে মূঢ়েরও ঈশ্বরের অস্তিত্ব বিষয়ে সন্দেহ হইতে পারে না। উপদেষ্টাদিগের নিকট পরমাত্মা সম্বন্ধে উপদেশ শ্রবণ করিবার পর তাহার পুনরুক্তিও সহজসাধ্য ॥

আমাদের মতে পরমেশ্বর এবং তাঁহার গুণ কৰ্ম্ম-স্বভাব অনাদি। অনাদি এবং নিত্য পদার্থের মধ্যে অন্যোহন্যাশ্রয় ঘোষ ঘটিতে পারে না। যেমন কাৰ্য্যদ্বারা কারণের এবং কারণদ্বারা কার্য্যের জ্ঞান হয়; কার্য্যে কারণের এবং কারণে কার্য্যের স্বভাব নিত্য, সেইরূপ পরমেশ্বর এবং তাঁহার অনন্ত_বিভাদি গুণ সমূহও নিত্য, সুতরাং ঈশ্বরকৃত বেঙ্গে অনবস্থা দোষ ঘটে না ॥

চলবে...

No comments:

Post a Comment

ধন্যবাদ

বৈশিষ্ট্যযুক্ত পোস্ট

যজুর্বেদ অধ্যায় ১২

  ॥ ও৩ম্ ॥ অথ দ্বাদশাऽধ্যায়ারম্ভঃ ও৩ম্ বিশ্বা॑নি দেব সবিতর্দুরি॒তানি॒ পরা॑ সুব । য়দ্ভ॒দ্রং তন্ন॒ऽআ সু॑ব ॥ য়জুঃ৩০.৩ ॥ তত্রাদৌ বিদ্বদ্গুণানাহ ...

Post Top Ad

ধন্যবাদ