লেখক পরিচিতি
আলি সিনার একজন ইরানি বংশোদ্ভুত কানাডিয়ান। আলি তার শান্তিময় ইসলামের শিক্ষা পান ইরানে , ইসলামি বিপ্লবের আগে যখন ইরান ছিলো ধর্মনিরপেক্ষ। যদিও ইসলামের পুনুরুত্থানের সম্ভাবনা ভিতরে ভিতরে পোক্ত হচ্ছিলো কিন্তু তখনো উঠে আসে নি। সেই সময় খুব অল্প লোকই ইসলামের আসল চেহারা চিনতো। ইরানের ইসলামি বিপ্লবের আগে নিজের মধ্য কৈশোরে আলি উচ্চশিক্ষার্থে ইউরোপে পাড়ি জমান। সেখানে শিক্ষা পান বাক-স্বাধীনতা এবং গণতান্ত্রিক দর্শণ সম্পর্কে। মুসলিম মানসে গণন্ত্র একটি অজ্ঞাত ধারণা, এতটাই অজ্ঞাত যে আরবী এবং মুসলিমদের ব্যবহৃত আরো অনেক ভাষাতেই Democracy শব্দটির কোন যুৎসই প্রতিশব্দ নেই। শব্দই যেহেতু নেই ধারণা করা যায় এটা সম্পর্কে তারা বুঝেও না ভালোভাবে। মুসলিম মানসে সকল ক্ষমতার মালিক আল্লাহ। জনগণকে ক্ষমতার উৎস বলা শিরকের শামিল।
পশ্চিমা দর্শণ পাঠে এবং এই দর্শণ কিভাবে ইউরোপের Enlightenment যুগের সূচনা করেছিলো তা বুঝার পরে আলি উপলব্ধি করেন মুসলিম সমাজের দুর্দশার মূলে রয়েছে তাদের চিন্তার পরাধীনতা। তবে শেষ পর্যন্ত কুরআনের আদ্যোপান্ত পাঠে তিনি বুঝতে পারেন মুসলিম দুর্দশার গভীরতর কারণ হচ্ছে ইসলাম নিজেই।
আলি বলেন, কুরআন পড়ে আমি পুরাই হতভম্ব হয়ে যাই। দেখি যে, কুরআন ভরা নৃশংসতা, ঘৃণা, ভুল, বৈজ্ঞানিক অসামঞ্জস্য, গাণিতিক ভুল, কুযুক্তি, ব্যাকরণগত অনিয়ম আর সন্দেহজনক নৈতিকতায়। অস্বীকার, পাপবোধ, স্বিদ্ধান্তহীনতা, ঘোর কেটে যাওয়া, রাগ এবং হতাশা এইসব পর্যায় পেরিয়ে আমি শেষপর্যন্ত নিজের পাওয়া স্বিদ্ধান্ত মেনে নিই যে কুরআন কোন ঐশ্বরিক বাণী নয়। এর অলৌকিকত্ব কেবল গুজবের বেশি কিছু নয় এবং কোন অসুস্থ মস্তিষ্কের কল্পণা এই বইটি। এ ছিলো গভীর ব্যঞ্জনার কোন অনুভূতি থেকে জেগে উঠে দেখা যে সবই ছিলো স্বপ্ন, এইরকম। আরো পড়াশোনার পরে তিনি স্থিরস্বিদ্ধান্তে পৌঁছান যে মুসলিম বিশ্বের খারাপির মূলে আছে ইসলাম এবং এই ধর্ম মানবতার জন্য একিটি বড় হুমকি। তখনি তিনি জিহাদের বিপরীতে তার পাল্টা-জিহাদ চালানোর স্বিদ্ধান্ত নেন। তার বিশ্বাস ইসলামে সংস্কার সম্ভব নয়, কাঁচের মত একে নোয়ানো সম্ভব নয় তবে ভেঙে ফেলা সম্ভব। তিনি বলেন, “ইসলাম হচ্ছে তাসের ঘরের মত, এই ঘর ভাঙার জন্য শুধু যেইসব মিথ্যার উপর ভিত্তি করে ঘরটা দাঁড়িয়ে আছে সেগুলোকে মোকাবেলা করলেই চলবে। চোরাবালির উপর দাঁড়ানো বিশাল বিল্ডিং এর মতই, ভিত প্রকাশ করে দিলে নিজের ভারেই এটা ধ্বংস হয়ে যাবে।” ইসলামের ভবিষ্যত কি ? এই প্রশ্নের জবাবে সিনা বলেন, এটা তার জায়গায় ফিরে যাবে, ইতিহাসের আস্তাকুঁড়।
আলি মনে করেন আর মাত্র কয়েক দশকের মধ্যেই ইসলাম একটা সামান্য দুঃস্বপ্নের মতই ফিকে হয়ে আসবে আমাদের স্মৃতিতে এবং আমাদের জীবদ্দশাতেই ঘটবে এই ঘটনা। আলি বলেন, “স্বীকার করতে আপত্তি নেই, এই ভবিষ্যতবাণী নিয়ে আমি অনেক দ্বিধায় ভুগেছি, কারণ ভালো করেই জানি অনেকেই এটাকে অবাস্তব এমনকি অতিকল্পণা বলে হেসে উড়িয়ে দেবে। কিন্তু যতি ভাবি ততই আমার মনে হচ্ছে এটাই ঠিক। আজকাল আরো অনেকেই ইসলামের অবশ্যাম্ভাবী মৃত্যু দেখতে পায় সামনে। ইসলামের যেসব সমালোচনা আগে লুকিয়ে চুরিয়ে করতে হতো তা এখন দুনিয়ার সবাই শুনতে পাচ্ছে। আর এইসব সমালোচনা কেবল অমুসলিমদের মধ্যে থেকেই নয় বরং জন্মসূত্রে মুসলিমদের ভিতর থেকেও আসছে। দিন দিন এটাও পরিষ্কার যে মুসলিমরা বা কে কিভাবে ইসলামের ব্যাখ্যা দিলো সেসব কোন সমস্যা নয়, বরং ইসলাম জিনিসটাই সমস্যার গোড়া। ”
আলির বিশ্বাস ইসলামের প্রথম ভুক্তভোগী মুসলিমরা নিজেরাই। “ আমার উদ্দেশ্য শুধু ইসলামের বিপদ সম্পর্কে সবাইকে জানানো নয় বরং মুসলিমদের এথেকে উদ্ধার করাও। আমি তাদের রক্ষা করতে নিজেকে ও দুনিয়াকে ধ্বংস করার পথ থেকে। উদ্ধার করতে চাই ইসলাম নামের মিথ্যার জাল থেকে। তাদের বুঝাতে চাই গোটা মানবজাতি একটা পরিবারের মত, চাই তারা বোধ-বুদ্ধির পথে , মানবতার পথে আসুক, শান্তি এবং উন্নতির জীবনে আসুক। আমি মানবজাতির একাত্ব চাই, নতুন কোন মতবাদ দিয়ে নয় , বরং মানুষের মাঝে ঘৃণার বিষ ছড়ানো প্রধান মতবাদটিকে নগ্ন করে দিয়ে, ধ্বংস করে দিয়ে।”
কোটি কোটি মানুষ ফেইথফ্রিডম ডট অর্গের লেখাগুলোর পাঠক। ইসলাম নিয়ে বিপদটা কি এবং কেন কিছু মুসলিম এত বেশি ঘৃণা এবং বর্বরতা পোষণ করে নিজেদের ভিতর এইসব নিয়ে যারা ভাবে তাদের মিলনস্থলে পরিণত হয়েছে এই ওয়েবসাইট। ফেইথ ফ্রিডম ইন্টারন্যাশনাল পরিণত হয়েছে প্রাক্তন-মুসলিমদের তৃণমূল আন্দোলনে। এর উদ্দেশ্য ইসলামের মুখোশ খুলে দিয়ে দেখানো যে নাযিবাদের মতই ইসলাম মূলত ধর্মের খোলসে লুকানো একটি সাম্রাজ্যবাদী মতবাদ এবং মুসলিমদের ইসলাম ত্যাগে সাহায্য করা যাতে তারা তাদের “আমরা” ও “অন্যরা” এই দুইয়ের মধ্যে বিভাজন আর ঘৃণার মূল্যবোধ ত্যাগ করে পুরো মানবজাতির সাথে সৌহার্দের সাথে যোগ দিতে পারে। এ এক নিরব বিশ্বব্যাপী বিপ্লব। প্রতিদিন অনেক নতুন ইসলাম-ত্যাগী বের হয়ে আসছে যারা আবার একই সাথে এই আন্দোলনের সহযোদ্ধাতে পরিণত হচ্ছে। এদের সংখ্যা জ্যামিতিক হারে বাড়ছে। সামান্য জলধারা এখন বিশাল স্রোতে পরিণত। আলির ভাষায়, “এ এক চমৎকার যুদ্ধ, যেখানে পরাজয়ের পর শত্রু হয়ে উঠে বন্ধু এবং প্রধান মিত্র।”
আলি সিনা একজন ধর্মনিরপেক্ষ মানবতাবাদী এবং একক ফেডারেল বিশ্ব ব্যবস্থার সমর্থক।
“আন্ডারস্ট্যান্ডিং মুহাম্মদ ” , আল্লাহর নবীর মানসিক জীবনবৃত্তান্ত। এই লোকের রহস্য ভেদ করার চেষ্টাই এই বইয়ের উদ্দেশ্য। ইতিহাস থেকে জানা যায় মুহাম্মদ দিনের পর দিন গুহার মধ্যে একাকি ধ্যানে ডুবে থাকতো। ঘন্টাধ্বনি শোনা এবং ভৌতিক স্বপ্ন দেখার কথাও শোনা যায়। তার ধারণা ছিলো তার উপর প্রেত ভর করেছে। খাদিজা তাকে আশ্বস্ত করে যে সে আসলে নব্যুয়ত পেয়েছে। নব্যুয়তের এই নিশ্চিত বিশ্বাস পেয়ে, সে অবিশ্বাসীদের উপর ভয়ংকর ক্রোধান্বিত হয়, সমালোচকদের হত্যা করে, আর লুটপাট এবং গণহত্যা চালায় অনেক গোত্রের উপর। হাজার হাজার লোকের দাসত্ব, ধর্ষণের জন্য দায়ী এই লোক, তার অনুসারীদের অনুমতি দেয় নারী যুদ্ধবন্দীদের ধর্ষণের। এই সমস্তই সে স্থিরচিত্তে এবং নিজের অধিকার মনে করেই করেছিলো।
যারা তাকে বিশ্বাস করতো তাদের প্রতি সে দয়ালু এবং উদার থাকলেও অবিশ্বাসীদের প্রতি ছিলো কঠোর এবং দ্বেষান্বিত। তার বিশ্বাস ছিলো সে সর্বকালের শ্রেষ্ঠ মানব এবং মহাবিশ্বের সৃষ্টির পিছনের একমাত্র কারণ। মুহাম্মদ কোন সাধারণ মানুষ ছিলো না। সে ছিলো অসুস্থ রকমের আত্নপ্রেমী।
“আন্ডারস্ট্যান্ডিং মুহাম্মদ” এইসব সাধারণ ঘটনার আরো গভীরে যাওয়ার একটি চেষ্টা। এই বইয়ের লক্ষ্য ‘কি ঘটেছিলো’ বর্ণনা করা নয়, বরং ‘কেন ঘটেছিলো’ তা বর্ণনা করা। এই উদ্দেশ্যে বইটি পৃথিবীর ইতিহাসের বিশাল এবং প্রভাবশালী এই ব্যক্তির রহস্য খুলার প্রচেষ্টা করবে।
মুহাম্মদ নিজের সত্যতার উপর প্রবল বিশ্বাসী ছিলো। তার হ্যালুসিনেশনগুলাতে সে এতটাই প্রবলভাবে বিশ্বাস করতো যে সে চাইতে অন্যরাও কোন প্রকার প্রশ্ন ছাড়াই সেগুলো বিশ্বাস করুক। প্রবলভাবে রুষ্ট আল্লাহর মুখ থেকে সে ওহী নিয়ে আসে, “ কি ? তোমরা কি তাহলে মুহাম্মদ কি দেখেছে এই নিয়ে সন্দেহ কর ?” এটা মনোরোগের ব্যাপার। সে কি দেখলো না দেখলো তাতে কার কি এসে যায় ? তারইতো দায়িত্ব সে কি দেখলো সেটা প্রমাণ করা। অসুস্থ রকমের আত্নপ্রেমীই কেবলমাত্র প্রমাণ ব্যাতিরেকে বিশ্বাস দাবী করতে পারে।
মুহাম্মদ ছিলো এতিম। শিশুকালেই মায়ের থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে এক বেদুঈন দম্পতির ঘরে বড় হয় সে, স্নেহবঞ্চিত শৈশব পার করে। পরে দাদা এবং তার পরে চাচার কাছে বড় হয়। দাদা চাচার দয়ার্দ্র আদরে নষ্ট হয়। যখন নির্বাধ ভালোবাসার দরকার ছিলো তখন সেটা না পেয়ে, যখন নিয়ম এবং দায়িত্ব শেখার কথা ছিলো তখন কোন শাসন না পেয়ে, সে আত্নপ্রেম নামের মনোরোগে আক্রান্ত হয়। এই রোগ তাকে পরিণত করে বিবেকহীন মেগালোম্যানিয়াকে (মেগালোম্যানিয়া =যুক্তিবুদ্ধিহীন বড় চিন্তা করা রোগ)। সীমাহীন ক্ষমতার দিবাস্বপ্নে, সে অন্যের কাছ থেকে ভালোবাসা এবং প্রশ্নহীন আনুগত্য চাইতো। বিশ্বাস করতো সে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কেউ এবং চাইতো অন্যরা তার কথামত চলুক। অন্যদের ব্যবহার করেও ঈর্ষা এবং সন্দেহে ভুগতো ক্রমাগত, ভাবতো অন্যরা বুঝি তার মাথায় কাঠাল ভেঙে খাচ্ছে, প্রত্যাখ্যাত হলে কষ্ট পেতো মারাত্নক এমনকি যারা ত্যাগ করে যেতো তাকে তাদের খুন পর্যন্ত করতেও দ্বিধা ছিলো না তার। নিজের অধিকার মনে করে প্রতারণা এবং মিথ্যা বলার উদাহরণও পাওয়া যাবে তার জীবনে। এই সবই আত্নপ্রেম নামক মনোরোগের লক্ষণ।
এর সাথে মুফতে যোগ হওয়া মৃগীরোগের কারণে দ্বীনের নবী দীর্ঘ, বিস্তারিত হ্যালুসিনেশনে ভুগতো। অবশ্য তার কাছে এগুলো ছিলো রহস্যময় স্বর্গীয় দর্শণ। তার স্বর্গীয় বাণী শোনা বা ফেরেশতা দেখার দাবী এক অর্থে মিথ্যা ছিলো না। সে মূলত বাস্তব এবং দিবাস্বপ্নের পার্থক্য করতে পারতো না।
মুহাম্মদের সম্ভবত আরেকটি মানসিক রোগ ছিলো বলে ধারণা করা যায়। মনোবিজ্ঞান এবং অপরাধবিজ্ঞানে একে বলা হয় Obsessive Compulsive Disorder. এর লক্ষণ হিসাবেই বিভিন্ন ম্যাজিক সংখ্যা নিয়ে অতিরিক্ত বাড়াবাড়ি (৩ কুলি, ৭ পাক, ২৭ রমজান), উদ্ভট সব প্রথা (বিভিন্ন কাজের শুরুর দোয়া), এবং কঠোর নিয়মনীতি এইসব দেখা যাবে তার জীবনে। তার কঠোর জীবনযাপন এবং ইসলামের শত শত হাবিজাবি নিয়মকানুনের ব্যাখ্যাও এভাবে দেয়া যায়।
জীবনের শেষ দিকে মুহাম্মদের সম্ভবত আরেকটি রোগ হয় যার নাম Acromegaly. দেহবর্ধক হরমোনের অস্বাভাবিক উৎপাদনে এই রোগ হয় যার ফলস্বরুপ হাড় বড় হয়ে যাওয়া, ঠান্ডা এবং মাংশল হাত পা, বড় নাক ঠোঁট এইসব লক্ষণ দেখা যায়। সাধারণত Acromegaly রোগ শুরু হয় চল্লিশোর্ধ বয়সে এবং প্রথম ষাটের দিকে আক্রান্ত ব্যক্তির মৃত্যুর কারণ হয় এই রোগ। এই রোগ একদিকে ইরেকটাইল ডিসফাংশন (সময় মত লিঙ্গ উত্থিত না হওয়া ) তৈরী করে অন্যদিকে Temporal lobe (মস্থিষ্কের একটি অংশ) এর অতিরিক্ত কার্যকারীতার ফলে যৌনতাড়না বাড়ে। বৃদ্ধ বয়সে মুহাম্মদের খেয়ালি যৌনজীবনের ব্যাখা দেয়া যায় এভাবে এবং ধারণা করা যায় কেন জীবনের শেষ দিনগুলোতে তার ব্যাপক যৌন ইচ্ছা ছিলো। ইতিহাসে পাওয়া যায় মুহাম্মদ একরাতেই তার নয় বিবির ঘরে যেত। ধারণা করা যায় তৃপ্তি ছাড়াই। শেষ জীবনের যৌন-অক্ষমতা দিয়ে ব্যাখ্যা করা যায়, কেন মুহাম্মদ তার যুবতি বিবিদের নিয়ে ঈর্ষা, ভয় এবং নিরাপত্তাহীনতায় ভুগতো। অন্যরা যাতে তার বিবিদের উপর কাম-নজর দিতে না পারে সেজন্য সে তাদের পর্দার ব্যাপারে কড়াকড়ি আরোপ করে। আজকের দুনিয়ার কোটি কোটি নারীর বোরকা পড়ার পিছনের রহস্য লুকানো আছে মুহাম্মদের শেষ বয়সের যৌন-অক্ষমতার মধ্যে। ইসলামের অনেক উদ্ভট আচরণের ব্যাখ্যা পাওয়া যাবে মুহাম্মদের অসুস্থতা বিশ্লেষণ করে।
উপরের এইসব মনোরোগ এবং অস্বাভাবিক বাহ্যিক চেহারা এই দুই মিলিয়ে মুহাম্মদ আর দশটা সাধারণ মানুষের চাইতে একেবারেই আলাদা। অবশ্য তার অশিক্ষিত মুরিদদের কাছে এই ভিন্নতা আসলে তার নবীত্বের প্রকাশ। আরসব পীরভক্ত মুরিদদের মতই তারা মুহাম্মদ এর অনুকরণে নিজেদের সর্বোচ্চ সাধনা করে। মৃত্যুকে পরোয়া না করে এবং প্রতিপক্ষকে কচুকাটা করে এখন তারা ইসলামকে পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম ধর্মে পরিণত করেছে। আর এটাই এখন পৃথিবীর সার্বিক শান্তি এবং মানব জাতির অস্ত্বিতের উপর সবচে বড় হুমকিতে পরিণত।
মুহাম্মদ কে জানা কেনো জরুরি ? কারণ এক বিলিয়নেরও বেশি লোক তার মত হতে চায় এবং সে যা করতো তা-ই করতে চায়। এক জনের পাগলামি এভাবে কোটি কোটি লোকের মধ্যে ছড়িয়ে পড়লো। সুতরাং মুহাম্মদ কে বুঝার মাধ্যমেই সম্ভব এই কোটি কোটি লোকের আচরণ সম্পর্কে অনুমান করা ; ভবিষ্যতে কি নিয়ে তারা আবার উত্তাল হয়ে উঠবে সেই সম্পর্কে ধারণা কার।
সময় আসলে খুবই খারাপ এখন। খারাপ এবং বিপদজনক। মানবজাতির ২০% লোক যদি একটা মনোরোগীর পূজা করে, আত্নঘাতী বোমা হামলাকে মনে করে প্রশংশনীয় আর খুনাখুনিকে মনে করে ধার্মিকতার চূড়ান্ত অবস্থা তাহলে দুনিয়া খারাপ এবং বিপদসংকুল হতে বাধ্য। এরা যদি কোনদিন আণবিক বোমা হাতে পায় এই গ্রহ পরিণত হবে একটি ধূলোর কুন্ডলীতে।
ইসলাম মূলত পির ব্যবসা (cult)। এখনি সবার বুঝা উচিৎ যে এই ব্যবসা মানবজাতির জন্য বিরাট হুমকি এবং এই মুরিদদের সাধে মানবতার সহাবস্থান কোনভাবেই সম্ভব নয়। মুসলিমরা যতদিন মুহাম্মদ কে প্রশ্নহীনভাবে বিশ্বাস করে যাবে ততদিন তারা অন্যদের জন্য এমনকি তাদের নিজেদের জন্যও হুমকি হয়েই থাকবে। মুসলিমদের হয় তাদের ঘৃণার সংস্কৃতি ত্যাগ করে অবশিষ্ট মানবের সাথে মিশে যেতে হবে অথবা অন্যদের উচিত হবে মুসলিমদের আলাদা করে দেয়া, যাতে তারা অন্তত অন্যের ক্ষতি করতে না পারে। অমুসলিম দেশগুলোর উচিৎ ইসলামকে নিষিদ্ধ করা, মুসলিম অভিবাসীদের জায়গা না দেয়া এবং যারা তাদের সংস্কৃতিতে একাত্ন হতে অস্বীকার করে বা গণতন্ত্র ও সার্বজনীন বাক-স্বাধীনতার মত বিষয়গুলোকে অস্বীকার করে তাদের ধরে ধরে নিজ দেশে পাঠিয়ে দেয়া।
গণতন্ত্র আর ইসলামের বণিবনা সম্ভব নয়। এটা একটা যুদ্ধবাজ আদর্শ, গণতান্ত্রিক সুবিধা ব্যবহার করে গণতন্ত্রকে ধ্বংস করার সিস্টেম , যার পরম উদ্দেশ্য হলো গোটা পৃথিবীতে ইসলামের একাধিপত্য কায়েম করা। এই বর্বর সিস্টেম এবং সভ্যতার সংঘর্য এড়িয়ে ধ্বংসের হাত থেকে পৃথিবীকে বাঁচানোর একমাত্র উপায় ইসলামের রহস্য মোচন করে এর কুরুপকথাগুলোকে প্রকাশ করে দেয়া। মানবজাতির শান্তিতে বসবাসের জন্য ইসলাম থেকে মুসলিমদের আলাদা হওয়াটা ভয়াবহভাবে জরুরী।
সে অর্থে মুহাম্মদকে বুঝা মুসলিম এবং অমুসলিম দুই পক্ষের জন্যই দরকারী। এই বইয়ের উদ্দেশ্য সেই বুঝাকে সহজ করে দেয়া।
সূচনা
৯/১১ আক্রমণের পর এক পাগলপ্রায় আমেরিকার মা আমাকে তার দুঃখের কাহিনী বলছিলেন, যে তার ২৩ বছর বয়সী ছেলে ১৪ বছর বয়সের সময় ইসলামে দীক্ষা নিয়েছে। বিয়ে করেছে এক অদেখা মুসলিম মেয়েকে , তার ঈমামের আয়োজনে। এখন এই এক বাচ্চার বাবা বলছে আফগানিস্থানে গিয়ে তালেবানদের পক্ষে যুদ্ধ করে শহিদ হতে চায়। বছর কয়েক আগে সে বলেছিলো ইসলামি হুকুমত কায়েম হয়ে গেলে যদি সব কাফেরদের হত্যার নির্দেশ আসে তাহলে সে নিজের মা’কে খুন করতেও বিন্দুমাত্র দ্বিধা করবে না
***
শিক্ষিত বুদ্ধিদীপ্ত ২৫ বছর বয়েসি, পাকিস্তানি বংশোদ্ভুত সাইমা নাযির ছুরিকাঘাতে খুন হন নিজ পরিবারের লোকদের দ্বারা। পিত্রালয়ে নিজের ৩০ বছর বয়েসি ভাই আর ১৭ বছর বয়েসি কাজিন তার গলায় ছুরি চালায়। অনেকের বিয়ের প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়ে নিজের পছন্দমত এক নিচু বংশের আফগানকে ভালোবেসে পরিবারের সম্মানে কালিমা দেয়া ছিলো তার অপরাধ(!)। ২০০৫ এর এপ্রিলে বাড়িতে(পাকিস্তানে) ডেকে নিয়ে পরিবারের সদস্যরা মিলেই এই কাজ ঘটায়। এক প্রতিবেশি তাকে পালানোর চেষ্টা করতে দেখেন, কিন্তু চুলের মুঠি ধরে ঘরে টেনে নিয়ে দরজা বন্ধ করে দেয় তার নিজ পিতা। “তুমি আর আমার মা নও” এই চিৎকার শুনে সেই প্রতিবেশি ধারণা করেন যে এই কুকর্মে মেয়েটির মা’ও জড়িত ছিলো। তার ২ এবং ৪ বছর বয়েসি ভাতিজিদেরও এই ঘটনা দেখতে বাধ্য করা হয়। বাচ্চাদের শরীরে রক্তের পরিমাণ দেখে ধারণা করা যায় তাদের মাত্র কয়েকফুট দূরত্বের মধেই ঘটে এই বর্বর হত্যাকান্ড। এই পরিবার ছিলো স্বচ্ছল এবং উচ্চশিক্ষিত।
***
মুহাম্মদ আলি আল আয়াদ নামে ২৩ বছর বয়স্ক এক ছৌদি কোটিপতির আমেরিকা নিবাসী ছেলে ২০০৩ এর অগাস্টের এক সন্ধ্যায় তার মরক্কান ইহুদি বন্ধু সেলুক কে দেখা করার জন্য ডেকে আনে। দুজনে বারে মদ খেয়ে মধ্যরাতে আলি আল আয়াদের এপার্টমেন্টে ফিরে আসে। সেখানে আলি আয়াদ ছুরি নিয়ে আক্রমণ করে তার ইহুদি বন্ধুকে এবং ধড় থেকে প্রায় বিচ্ছিন্ন করে ফেলে তার মাথা। পুলিশের কাছে জবানবন্দিতে আলি আয়াদের রুমমেট বর্ণনা করে হত্যার আগে দুজনের মধ্যে কোন তর্ক বিতর্ক হয়নি। আয়াদের আইনজীবি এই ঠান্ডা মাথার খুনের কারণ হিসাবে বলেন, “ধর্মীয় মতপার্থক্য”
***
ইউনিভার্সিটি অফ নর্থ ক্যারোলাইনা থেকে পাশ করা ২৫ বছর বয়েসি মুহাম্মদ তাহেরি আযার। ২০০৬ এর মার্চে এক দিনে সে একটি এস ইউ ভি ভাড়া করে ধীরে ধীরে ক্যাম্পাসে ঢুকে। তারপর আচমকা গতি বাড়িয়ে গাড়িটিকে নিয়ে যায় ছাত্র-ছাত্রীদের ভিড়ের মধ্যে। উদ্দেশ্য যত বেশি পারা যায় খুন করা। থামার আগে সে নয়জনকে আঘাত করে যার মধ্যে ছয়জন আহত হয়।
***
করাচি নিবাসী হিন্দু দম্পতি সানাও মেনঘোয়ার এবং তার স্ত্রী একদিন সন্ধ্যায় কাজ থেকে ফিরে দেখেন তার তিন মেয়ে বাড়িতে নেই। ২০০৫ এর নভেম্বরের ঘটনা। দুইদিন পাগলের মত খোঁজার পরে তারা জানতে পারেন তাদের তিন কন্যাকে অপহরণের পর জোরপূর্বক ইসলাম ধর্মে ধর্মান্তরিত করা হয়েছে। পুলিশ তিন মুসলিম তরুণকে অপরাধের সাথে যুক্ত থাকার সন্দেহে গ্রেপ্তার করে, কিন্তু অপ্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার কারণে তারা জামিনে ছাড়া পেয়ে যায়। মেনঘোয়ার দম্পতির মেয়েরা এখনো নিখোজ।
করাচির এক হিন্দু বাসিন্দা লালজি বলেন, “ হিন্দু মেয়েদের এই ধরণের অপহরণ এখন নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। অপহরণের পর তারা ইসলামে দীক্ষা নিয়েছে এই মর্মে স্ট্যাম্প কাগজে জোরপূর্বক সই নেয়া হয় তাদের কাছ থেকে। ” তিনি আরো বলেন হিন্দুরা এমনকি তাদের ক্ষোভ প্রকাশ করতেও ভয় পায়, নির্যাতনের ভয়।
পাকিস্তানের অনেক হিন্দু মেয়ের ভাগ্যেই এইসব জোটে। অপহরণের পর জোরপূর্বক ইসলামে ধর্মান্তর এবং তার পর কোন মুসলিম পুরুষের সাথে বিয়ে দেয়া হয় এদের। বাবা মায়ের সাথে দেখা করতে দেয়া হয় না আর। “ মুসলিম আওরাত কেন কাফিরদের সাথে থাকবে বা যোগাযোগ রাখবে ?” প্রশ্ন মৌলভি আযিযের। এই ধরণের আরেকটি ঘটনায় আদালতে অপহরণকারীর পক্ষে বলতে গিয়ে এই প্রশ্ন রাখেন মৌলভি।
কোন হিন্দু মেয়ের ধর্মান্তরের খবরে শত শত লোক ধর্মীয় শ্লোগান দিতে রাস্তায় নেমে আসে। কতৃপক্ষের বধির কানে বাবা মায়ের কান্নার শব্দ যায় না। এইসব অভাগীদের এরপর হুমকির উপর রাখা হয় যে ইসলাম ত্যাগ করলে তাদের মুরতাদের শাস্তি মৃত্যুদন্ড ভোগ করতে হবে। প্রায়ি আইনজীবিরা মৌলবাদীদের হামলার ভয়ে এই ধরণের মামলা লড়তে চান না।
***
২০০৫ এর অক্টোবরে তিন খ্রিস্টান মেয়ে কোকোয়া ক্ষেতের পাশ দিয়ে হেঁটে যাওয়ার সময় ইসলামি মৌলবাদীদের দ্বারা আক্রান্ত হয়। এরা ছিলো একটি খ্রিস্টান প্রাইভেট স্কুলের ছাত্রী। মুসলিমদের এক দল এদের আক্রমণ এবং শিরোচ্ছেদ করে। পুলিশ তাদের ধড় এবং মাথা বিচ্ছিন্ন অবস্থায় খুঁজে পায়। একটি মাথা রেখে আসা হয়েছিলো চার্চের আঙিনায়। মুসলিম মৌলবাদীদের লক্ষ্য সুলাওয়াসি প্রদেশ। তাদের ধারণা সেখান থেকে শুরু করেই তারা পুরো ইন্দোনেশিয়াব্যাপী ইসলামি হুকুমত কায়েম করতে পারবে। ২০০১ এবং ২০০২ সালে এ প্রদেশে মুসলিম মৌলবাদীরা একযোগে খ্রিস্টানদের উপর হামলা চালায়। গোটা ইন্দোনেশিয়া থেকে মুসলিমরা জড়ো হয় এই উদ্দেশ্য। দুবছরে তারা হত্যা করে প্রায় ১০০০ খ্রিস্টানকে।
***
Muriel Degauque ৩৮ বছর বয়েসি বেলজিয়ান নারী। ছোটকাল থেকে তাকে চিনতেন এমন এক প্রতিবেশির বর্ণনায় খুব সাধারণ মেয়ে। শীতে তুষার পড়া শুরু হলে স্লেজ চড়তে যেতো। এই নারী এক মুসলিমকে বিয়ে করে ইসলাম ধর্মে দীক্ষা নেয়। পরবর্তীতে সে তার স্বামীর সাথে সিরিয়া হয়ে ইরাকে চলে যায়। সেখানে গায়ে বোমা বেঁধে ইরাকি পুলিশের প্যাট্রোল বহরের উপর আত্নঘাতী হামলা চালায় সে। হামলায় ৫ জন পুলিশ তৎক্ষণাৎ নিহত হন। গুরুতর আহত হন আরো একজন পুলিশ অফিসার এবং চারজন সাধারণ পথচারী।
*****
এই হামলাগুলো সবই অস্বাভাবিক পাগলামি। কিন্তু যারা ঘটিয়েছে এইসব তাদের কেউই পাগল ছিলো না। এরা সবাই “পুরোপুরি স্বাভাবিক” মানুষই ছিলো। এইসব ঘৃনিত কাজে কিসে তাদের উদ্বুদ্ধ করেছিলো ? উত্তর হলো ইসলাম। ইসলামি বিশ্বে এইসব নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা। মুসলিমরা সর্বত্রই কে কি বিশ্বাস করলো এই নিয়ে খুন খারাবিতে ব্যস্ত।
কেন ? কেন সুস্থ্য স্বাভাবিক মানূষ এমন পৈশাচিক কাজ করে ? কেন জাতি হিসাবে মুসলিমরা অন্যদের উপর এতই চ্যাতা আর গোটা দুনিয়ার সাথে এতই শত্রুমনস্কতা পোষণ করে যে খুব সহজেই এরা সহিংসতার পথ বেছে নেয় ? মুহাম্মদ কে নিয়ে সামান্য কোন কথা বললেই দুনিয়ার মুসলিমরা সর্বত্র দাঙা হাঙামা আর সাধারণ মানুষের উপর হত্যাযজ্ঞে নেমে যায়। এইসব কোন সুস্থ্য স্বাভাবিক মানুষের কাজ হতে পারে না। কিন্তু এই কাজগুলো যারা করছে তারা সবাই সুস্থ্য স্বাভাবিক মানুষ। এই রহস্যের সমাধান কি ?
এ রহস্য বুঝতে হলে আমাদের আগে বুঝতে হবে যে মুসলিমরা মুহাম্মদের মত হতে এবং তার মত চিন্তা করতে চায়। যার ফলে তাদের অভিব্যক্তি, বিশ্বাস , চিন্তা এবং কার্যকলাপে মূলত মুহাম্মদের ব্যাক্তিত্ব এবং মানসিকতার প্রতিফলন ঘটে। ইসলামে যেহেতু মুহাম্মদ ই হচ্ছে ন্যায়নীতির মাপকাঠি, এটাই স্বাভাবিক যে তার অনুসারীরা ন্যায়নীতিবান হবার জন্য তাকে সরাসরি অনুকরণ করবে। ফলাফল, মুসলিম জাতি মুহাম্মদের খোলসে নিজেকে সাজাতে গিয়ে নিজেদের ভুলে যায়। মানবজাতির অন্যদের থেকে দূরে সরে যায় এবং নিজেদের স্বকীয়তার বিশাল অংশই হারিয়ে ফেলে। মুহাম্মদের আত্নপ্রেমী ফানুসের জগতে বাস করতে করতে , তার অনুকরণ করতে করতে একেকজন হয়ে উঠে মুহাম্মদেরই একেকটি বর্ধিতাংশ। ইসলাম নামের গাছের কুঁড়ি হলো মুসলিমরা যার মূল হলো মুহাম্মদ । তাদের চরিত্র, অভিব্যক্তি, চিন্তাধারা সবই মুহাম্মদের মত। বলতে গেলে সব মূসলিম আসলে মুহাম্মদের একটি ক্ষুদ্র রুপের মত। তাদের কাছে সে হচ্ছে সৃষ্টির সেরা, নিখুঁত মানব আর সর্বোচ্চ অনুকরণীয় আদর্শ। তাদের বিশ্বাস মুহাম্মদ যদি কিছু করে থাকে, সেটা যতই শোচনীয় হোক না কেন, তা-ই সঠিক। কোন প্রশ্ন নাই এবং কোনপ্রকার বাছবিচার চলবে না এইক্ষেত্রে।
আলোচনার বিষয় হিসাবে মুহাম্মদ কে এড়িয়ে চলতে চায় বেশিরভাগ মানুষ। নবীর সামান্য অসম্মানে মুসলিমরা ক্ষুব্দ হয়ে উঠে। যেকোন মন্তব্য সেটা যতই তুচ্ছ হোক না কেন ডেকে আনতে পারে ভয়াবহ বিক্ষোভ। যদিও মুহাম্মদের অনুসারীদের সমালোচনায় মুসলিমরা তেমন কিছু মনে করে না, কিন্তু মুহাম্মদের নিজের কোন সমালোচনা তারা সহ্য করে না। এমনকি আল্লাহর সমালোচনা করেও পার পেয়ে যাওয়া সম্ভব কিন্তু মুহাম্মদের সমালোচনা করে সম্ভব নয়।
মৃত্যুর শত শত বছর পরে কারো মানসিক অবস্থার পুরোপুরি বিস্তারিত বর্ণনা তৈরী করা অসম্ভব। তবে আমার উদ্দেশ্য এখানে প্রেসক্রিপশন দেয়া নয়, বরং দ্বীনের নবিকে গভীরভাবে বুঝা। মুহাম্মদের জীবন ও বাণী নিয়ে বিস্তারিতভাবে সংকলিত প্রচুর পরিমাণ তথ্য আছে। এইসব বর্ণনার বেশিরভাগই ফুলানো ফাঁপানো এবং অতিরঞ্জিত। বিশ্বাসীরা তাদের নবীকে নিয়ে অতিরঞ্জিত গালগল্প ছড়াবে, মোজেজার কাহিনী বানাবে, তাকে সাধু সন্তের পর্যায়ে নিয়ে যাবে এই-ই স্বাভাবিক। তবে, মুহাম্মদের জীবনে আমরা এমন কিছু বর্ণনা পাই যেগুলো থেকে তার পবিত্র ছবির বদলে বরং হিংস্র, বেপরোয়া, ধূর্ত এমনকি যৌনবিকৃত একজনের ছবিই ভেসে আসে। নিজেদের নবীর নামে মিথ্যা অপবাদ দেয়ার কোন কারণ নেই বিশ্বাসীদের। যারা তার সাথী ছিলো যারা তাকে পছন্দ করতো তাদের কাছ থেকেই যেহেতু এই ধরণের তথ্য আছে বিপুল পরিমাণে, অতএব এই ধরণের বর্ণনাগুলো সত্য হওয়ারই সম্ভাবনা বেশি।
যেসব হাদিস বিভিন্ন জনের জবানীতে বার বার এসেছে সেগুলোকে বলা হয় “মুতাওয়াত্তির”। এই হাদিসগুলো নানান জবানীতে অনেকগুলো সূত্র থেকে পরবর্তী প্রজন্মের কাছে এসেছে। বিভিন্ন সময়ে, বিভিন্ন অঞ্চল এবং মানসিকতার এতগুলো লোক একত্র হয়ে কিছু মিথ্যা বানিয়ে নবীর নামে ছড়াবে একথা অনেকটাই অসম্ভব।
এই গল্পগুলো যেগুলোকে হাদিস বলা হয় এবং মুসলিমদের বিশ্বাস অনুযায়ী আল্লাহর পরম বাণী কুরআনের সাহায্যে আমরা চেষ্টা করবো মুহাম্মদের মনের ভিতরে ঊঁকি দেয়ার জন্য আর বুঝার চেষ্টা করবে সে যা করেছিলো তা কেনো করেছিলো। বেশ কিছু মনোবিজ্ঞানী এবং মনোচিকিৎসকের মতামত ও তত্ব উপস্থাপন করে আমি সেগুলোর সাথে মুহাম্মদ যা যা করেছিলো তার যোগসূত্র মিলিয়ে দেখার চেষ্টা করবো। যেসব বিশেষজ্ঞের কথা আমি ব্যাবহার করতে যাচ্ছি এরা সবাই দক্ষ এবং পেশাদার মনোসমীক্ষক। তাদের বর্ণনার বেশিরভাগ অংশই এখন সাধারণ জ্ঞান বলে বিবেচিত এবং এই পেশার বেশীরভাগ বিশেষজ্ঞই এসব তত্ব ও মতামতের সাথে সম্মত।
এই বই যতটা না ১৪০০ বছর আগের একজন মানূষের মনোসমীক্ষণের চেষ্টা , তার চাইতে বেশি হলো তার রহস্য উম্মোচনের চেষ্টা। যারা মুহাম্মদের গালগল্পে বিশ্বাস করে সেগুলোকে যৌক্তিকভাবে যাচাই করতে চায় না তাদের কাছে মুহাম্মদ এক বিশাল হেঁয়ালির নাম। তার কাজকারবার খুবেকটা সুবিধার ছিলো না কিন্তু যতটুকু বুঝা যায় তা থেকে মনে হয় সে নিজে তার যৌক্তিকতায় সৎভাবেই বিশ্বাস করতো। এত বিদ্বেষপূর্ণ, বেপরোয়া আর এবং বিবেকবর্জিত একজন মানুষ কিভাবে শুধু তার সঙীসাথীরা নয় বরং শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে কোটি কোটি মানুষকে মন্ত্রমুগ্ধ করে রাখতে পারে।
মিখায়েল হার্ট তার “পৃথিবীর ইতিহাসে সবচে প্রভাবশালী ১০০ জন” বইয়ে মুহাম্মদ কে রেখেছেন সবার প্রথমে। তার পরে ছিলেন আইজাক নিউটন, জেসাস, গৌতম বুদ্ধ, কনফুসিয়াস, সেইন্ট পল প্রমুখ। হার্টের বইয়ে অবশ্য এই প্রভাবশালীদের প্রভাব কি সুপ্রভাব না কুপ্রভাব এই বিষয়ে কোন বাছবিছার নেই। কারণ তার তালিকায় অনেক অত্যাচারীর নাম ও আছে, যেমন, এডলফ হিটলার, জোসেফ স্তালিন, মাও সে তুং। এই তালিকায় এমনকি নিকোলো ম্যাকিয়াভ্যালির নামও আছে। কিভাবে মুহাম্মদের মত এমন মানবতা-বিবর্জিত একজন পৃথিবীর ইতিহাসের সবচে প্রভাবশালী ব্যক্তি হয় ? এই বইয়ে আমরা দেখবো কিভাবে এই প্রশ্নের উত্তর মূলত মুহাম্মদ কি ছিলো তার চাইতে মানব মনের কার্যপ্রণালী কেমন তার উপর বেশি নির্ভর করে।
ইসলামের মত আর কোন মতবাদ নিয়ে এত বেশি রক্তপাত হয় নি। কিছু কিছু ঐতিহাসিকের মতে ইসলামের তরবারী দিয়ে কেবল ভারতবর্ষেই গণহত্যার স্বীকার হন ৮ কোটি মানুষ। এছাড়াও পারস্য , মিশর এবং আরো যেসব দেশে লুটতরাজ মুসলিমরা হামলা চালিয়েছিলো সেখানেও হত্যার স্বীকার হন কোটি কোটি মানুষ। ইসলাম যখন ঐসব দেশে প্রথম প্রবেশ করে তখনও এবং তার শত শত বছর পরেও। এই রক্তপাত এখনো থামেনি।
মুসলিমরা মাঝে মাঝে গাল বড় করে বলে , “তোমরা জীবনকে যতটা ভালোবাসো, আমরা মৃত্যুকে ভালোবাসি তার চাইতেও বেশি।” সাম্প্রতিক বছরগুলোতে হাজার হাজার সন্ত্রাসী হামলা করে তারা এই কথা প্রমাণ করে চলেছে। একজন লোক কিভাবে এতগুলোর লোকের উপর এমন প্রভাব ফেলতে পারে যে তারা তার জন্য হাসতে হাসতে মৃত্যুবরণ করে এমনকি নিজেদের সন্তান সন্ততিকেও তার জন্য উৎসর্গ করতে দ্বীধা করে না। কেন বর্তমান দুনিয়ার নব্বই সংঘাতের সাথে কোন না কোনভাবে মুসলিমরা জড়িত , অথচ গোটা দুনিয়া জনসংখ্যার মাত্র শতকরা ২০ ভাগ মুসলিম। পরিসংখ্যানের হিসাব নিকাশ অনুযায়ী এর অর্থ দাঁড়ায় জাতি হিসেবে অন্য যেকোন ধর্মের লোকদের চাইতে দ্বন্দ নিরসনে সহিংসতায় জড়ানোর সম্ভাবনা ৩৬ গুন বেশি মুসলিমদের। এ এক বিশাল পার্থক্য যেখানে মুসলিমদের ধারে কাছেও কেউ নেই। কিভাবে সম্ভব এটা ?
এই রহস্য সমাধানে এই বইয়ে দুইটি তত্ত্ব পাওয়া যাবে। প্রথমটি হচ্ছে মুহাম্মদ অসুস্থ আত্নপ্রেম রোগে ভুগতো , আর দ্বিতীয়টি হচ্ছে টেমপোরাল লোবের ঝামেলার কারণে সৃষ্ট মৃগীরোগে ভুগতো সে। আরো অনেক ধরণের মানসিক অসুস্থতার কথা অনুমান করা যায় বিভিন্ন হাদিসের বর্ণনা থেকে। তবে এই দুটি রোগের মাধ্যমেই মুহাম্মদের পুরো জীবনির ব্যাখ্যা দেওয়া যায়। প্রচুর পরিমাণের তথ্যপ্রমাণ দিয়ে এই বইয়ে প্রমাণ করা হবে যে মুহাম্মদ ছিলো মানসিক রোগী। যদিও সে তার নিজের সত্যতায় বিশ্বাস করতো এবং নিজের দাবীর প্রতি নিজে সৎ ছিলো, কিন্তু সে মূলত সত্য ও কল্পণার মধ্যে পার্থক্য করতে পারতো না। তার সমসাময়িক অনেকে যারা তাকে ভালোভাবে চিনতো তারা তাকে বলতো ‘মজনুন’ , অর্থাৎ পাগল, অপ্রকৃতিস্থ বা জ্বীনে ধরা। দুর্ভাগ্যক্রমে মুহাম্মদের বিপুল দাপটের মুখে তারা হার মানতে বাধ্য হন এবং তাদের স্থিতধী কথাবার্তাকে থামিয়ে দেয়া হয়। মানব মস্তিষ্ক নিয়ে নতুন নতুন আবিষ্কার সেইসব লোকেদের কথাকে নবজীবন দিয়েছে। তবে আমাদের মনে রাখতে হবে অসুস্থ আত্নপ্রেমী রোগী খুব ভালোভাবেই জানে সে মিথ্যা বলছে, কিন্তু তবু সে নিজেই প্রথম তার নিজের মিথ্যা কথা বিশ্বাস করে।
বাজারে মুহাম্মদের সমালোচনা করা অনেক বই আছে যেগুলোতে তার হিংস্রতা এবং বিকৃত চরিত্রের বর্ণনা পাওয়া যাবে, কিন্তু খুব কম বই-ই আছে যেগুলোতে তার মনের ভিতর কি হচ্ছিলো সে কথা জানা যাবে। এই বই ঠিক সে জিনিসই বর্ণনা করতে চায়।
যদিও এই বইতে মুসলিমদের কোন আহ্বান করা হয়নি, তবুও আমি মূলত তাদের উদ্দেশ্যে বইটি লিখেছি। পারসিয়ান সেই প্রবাদের মত, দুয়ারকে বলে গেলাম যাতে দেয়াল শুনতে পায়। মুহাম্মদের লুটতরাজ, গণহত্যা, ডাকাতি, শিশুকাম, গুপ্তহত্যা, নারীখাদক লালসা এইসব নিয়ে যথেষ্ঠ বলা হয়ে গেছে। মুসলিমরা এর সবই শুনে কিন্তু কোনপ্রকার দ্বিধা ছাড়া মুহাম্মদের উপর বিশ্বাস অটল রাখে। উদ্ভটভাবে কেউ কেউ আবার দাবী করে ইন্টারনেটে আমার প্রবন্ধ পড়ে তাদের ইসলামে বিশ্বাস নাকি আরো মজবুত হয়েছে। তারা মুহাম্মদ কে অতিমানব হিসাবে মেনে নিয়েছে এবং বিশ্বাস করে মুহাম্মদ হচ্চে রাহমাতুল্লিল আলামিন, দুনিয়ার উপর আল্লাহর রহমত। মানুষের নৈতিকতার মানদন্ড ও বিবেক দিয়ে তারা মুহাম্মদ কে বিচার করে না, বরং বিশ্বাস করে সে নিজেই নৈতিকতা মানদন্ড। সত্য-মিথ্যা, ভালো-খারাপের বিচারে তারা গোল্ডেন রুল ব্যবহার করে না। আসলে গোল্ডেন রুলের ধারণাই তাদের চেতনার সাথে যায় না। তারা বরং হালাল-হারামের সংজ্ঞা দিয়ে ভালো-খারাপের পার্থক্য করতে চায়, যা মূলত কিছু উদ্ভট খামখেয়ালিপূর্ণ নিয়ম; নীতি নৈতিকতা, যুক্তির জগতের সাথে যার কোন সম্পর্ক নাই। মুসলিমরা সত্যিকারভাবেই ইসলাম নিয়ে প্রশ্ন করতে অক্ষম। যেকোন সন্দেহ তার কোনপ্রকার চিন্তা ছাড়াই উড়িয়ে দেয় আর যেসব জিনিস তাদের মানতে কষ্ট হয় সেগুলোকে ধরে আল্লাহর পক্ষ থেকে ঈমানের পরীক্ষা হিসাবে। এই পরীক্ষায় পাশ করতে হলে যত আজগুবি আর অর্থহীন জিনিস আছে সবকিছুকে প্রশ্নহীনভাবে মেনে নিতে হবে।
অধ্যায় -এক
কে ছিলো এই মুহাম্মদ
“তোমার প্রতিপালক তোমাকে পরিত্যাগ করেন নি , এবং তিনি তোমাকে ঘৃণাও করেন না। ভবিষ্যত তোমার জন্য অতীতের তুলনায় মঙ্গলময় হবে। আর শ্রীঘ্রি তোমার প্রতিপালক তোমাকে তার প্রতিদান দিবেন যাতে তুমি তুষ্ট হও। তিনি কি তোমাকে এতিম অবস্থায় পেয়ে তারপর তোমার আশ্রয়ের ব্যবস্থা করেন নি ? তিনি কি তোমাকে অভাবী অবস্থায় পেয়ে তারপর ধনী বানান নি ? (কুরআন, সুরা ৯৩, আয়াত ৩-৮)” (টীকা ৬)
মুহাম্মদের গল্প দিয়ে শুরু করা যাক। তার জীবনকে পরীক্ষা করে দেখি। কে ছিলো সে, কি চিন্তা করতো ? কোটি কোটি মানুষ যার পূজা করে তার জীবনের গুরুত্বপূর্ণ দিকগুলো নিয়ে সংক্ষেপে আলোচনা করা হবে এই অধ্যায়ে। সত্যি বলতে গেলে ইসলাম আসলে মুহাম্মদ িজম ছাড়া কিছু নয়। মুসলিমরা দাবী করে তারা এক আল্লাহ ব্যতীত আর কারো উপাসনা করে না। যেহেতু আল্লাহ ছিলো মুহাম্মদেরই অপর স্বত্তা, তার অপর নাম, এবং তার হাতের অদৃশ্য পুতুল, সুতরাং ব্যবহারিক অর্থে, মুহাম্মদেরই উপাসনা করে তারা।
ইসলাম হলো মুহাম্মদের ব্যক্তিত্ব নিয়ে পীর-মুরিদান ব্যবসা। আল্লাহর নাম দিয়ে চালিয়ে দেয়া কুরআনে মুহাম্মদের নিজের কথাগুলো আমরা বিবেচনা করে দেখবো। এবং চেষ্টা করবো তার সাহাবী এবং স্ত্রীদের অবস্থান থেকে তাকে দেখার। দেখার চেষ্টা করবো, কিভাবে সে একটা দুপয়সার ক্যানভাসার(ধর্মের) থেকে গোটা আরব উপদ্বীপের কার্যত শাসক বনে যায়, কিভাবে সে লোকদের মাঝে বিভেদ তৈরী করে তাদের নিয়ন্ত্রণ করেছিলো, কিভাবে সে মানুষের মাঝে ক্ষোভ আর ঘৃণা ছড়িয়ে এক পক্ষকে আরেক পক্ষের বিরুদ্ধে যুদ্ধে লেলিয়ে দিয়েছিলো এবং কিভাবে সে লুট, ধর্ষণ, নির্যাতন ব্যবহার করে তার শত্রুদের মনে ত্রাসের সৃষ্টি করে তাদের পরাজিত করেছিলো। তার করা গণহত্যাগুলো সম্পর্কে জানবো এবং প্রতারণার সাহায্য নেয়া নিয়ে তার আলাদা আসক্তি বুঝার চেষ্টা করবো যে প্রতারণ আজকের যুগের সন্ত্রাসীরাও হামেশাই ব্যবহার করে। মুহাম্মদ কে বুঝলে বুঝা যাবে আজকের ইসলামি সন্ত্রাসীরা আসলে মুহাম্মদ যা করেছিলো হুবহু তা-ই করছে।
মুহাম্মদের জন্ম ও শৈশব
৫৭০ খ্রীস্টাব্দে আরবের মক্কা নগরীতে আমিনা নামের এক তরুণী বিধবার ঘরে জন্ম মুহাম্মদের। যদিও আমিনার একমাত্র সন্তান ছিলো মুহাম্মদ তবু মাত্র ছয়মাস বয়সেই সে তাকে এক বেদুইন নারীর হাতে তুলে দেয় লালন পালনের জন্য।
ধনী আরব মহিলাদের মধ্যে শিশু পালনের জন্য সেবিকা ভাড়া করার চল ছিলো। এর মাধ্যমে শিশু পালনের ঝামেলা থেকে মুক্তি পেয়ে তারা সাথে সাথে পরবর্তী গর্ভধারণ করতে পারতো। বেশি সন্তান থাকা মানে সামাজিক মর্যাদা বেশি। কিন্তু আমিনার অবস্থা তা ছিলো না। সে ছিলো গরীব, বিধবা আর মুহাম্মদ ছিলো তার একমাত্র সন্তান। মুহাম্মদের পিতা আবদুল্লাহ তার জন্মের ছয় মাস আগেই মারা যায়। তাছাড়া এই সংস্কৃতি অতটা প্রচলিতও ছিলো না। মুহাম্মদের প্রথম স্ত্রী খাদিজার আগের ঘরে ছিলো তিন সন্তান, মুহাম্মদের সাথে ছয় সন্তান, এই নয়জনকেই সে নিজ হাতে লালন করে গেছে , যদিও সে ছিলো তৎকালীন মক্কার সবচে ধনী মহিলা। (টীকা ৮)
আমিনা কেন তার শিশুসন্তানকে লালনের জন্য অন্যের ঘরে পাঠিয়েছিলো ? মুহাম্মদের মা এবং তার এই স্বিদ্ধান্ত বুঝার মত যথেষ্ঠ পরিমাণ তথ্য ইতিহাসে লিপিবদ্ধ নেই।
তবে আমিনার মানসিকতা শিশুপুত্র মুহাম্মদের সাথে তার সম্পর্ক নিয়ে কিছুটা ধারণা করা যায় এমন একটি তথ্য আছে। সেটি হলো আমিনা মুহাম্মদ কে তার বুকের দুধ পান করায় নি। জন্মের পরই বুকের দুধ পান করানোর জন্য তাকে দেয়া হয় ছুয়াইবা নামের এক মহিলার কাছে। ছুয়াইবা ছিলো মুহাম্মদের চাচা আবু লাহাবের চাকরানী। (সে আবু লাহাব যাকে স্ত্রীসহ কুরআনে অভিসম্পাত করে মুহাম্মদ )। কেন আমিনা তার নিজ সন্তানকে লালন করে নিয়ে সে সম্পর্কে কোন তথ্য পাওয়া যায় না। এক্ষেত্রে অনুমানের বেশি কিছু করা সম্ভব নয়। অল্প বয়সে বিধবা হয়ে যাওয়াতে সে কি বিষণ্ণ হয়ে পড়েছিলো ? নাকি শিশুপুত্র থাকলে অন্য কোথাও বিয়ে হবে না ভেবে তাকে দূরে সরিয়ে দিয়েছিলো ?
পরিবারের কারো মৃত্যু মস্তিষ্কে এমন সব রাসায়নিক বিক্রিয়ার শুরু করতে পারে যা শেষ পর্যন্ত বিষণ্ণতা রোগ ডেকে আনে। গর্ভাবস্থার বিষণ্ণতা রোগের আরো কারণের মধ্যে আছে, একাকীত্ব, অনাগত সন্তান নিয়ে দুঃশ্চিন্তা, আর্থিক ও দাম্পত্য সমস্যা এমনকি অল্পবয়সে গর্ভধারণও। আমিনার তখনকার অবস্থায় এইসব অনুঘটকের মোটামুটি সবগুলোই উপস্থিত ছিলো। স্বামী মারা গেছে মাত্র কিছুদিন আগে, থাকে একা, দরিদ্র এবং অল্পবয়স্কা। তার সম্পর্কে যতটুকু জানা যায়, বিষণ্ণতায় ভুগার সম্ভাবণা তার প্রবল। মা ও শিশুর স্নেহের বন্ধন তৈরীতে সমস্যা করে থাকে বিষণ্ণতা। এছাড়া গর্ভাবস্থায় বিষণ্ণতায় ভোগা মা সন্তান জন্মের পরে আবার আরেকটি বিষণ্ণতার সময়কাল অতিক্রম করে থাকেন সাধারণত।(Postpartum Depression) (টীকা ৯)
কিছু কিছু গবেষণায় এসেছে, গর্ভাবস্থার বিষণ্ণতা শিশুর উপর সরাসরি প্রভাব ফেলতে পারে। এধরণের মায়েদের শিশুরা সাধারণত অলস এবং খিটখিটে হয়। এইসব শিশু আরেকটু বড় হয়ে বোকাটে, নিরাবেগ বাচ্চাতে পরিণত হতে পারে। সাথে থাকে আচরণগত সমস্যা, যেমন আগ্রাসী মনোভাব। (টীকা ১০)
মুহাম্মদ বড় হতে থাকে অচেনা লোকদের মাঝখানে। বড় হতে হতে সে বুঝতে শুরু করে, যে পরিবারের সাথে সে আছে তাদের সাথে তার কোন রক্তসম্পর্ক নেই। তার নিশ্চয়ই মনে হচ্ছিল কেন তার আসল মা যাকে সে বছরে দুইবার দেখতে যেত, তাকে নিয়ে যায় না।
মুহাম্মদের দুধ-মা হালিমা কয়েকযুগ পরে বর্ণনা করে যে সে আসলে মুহাম্মদ কে নিতে চায়নি প্রথমে, কারণ সে ছিলো গরীব ঘরের এতিম ছেলে। কিন্তু ধনী ঘরের কোন শিশু না পেয়ে সে শেষ পর্যন্ত মুহাম্মদ কেই নিতে বাধ্য হয়। অল্প স্বল্প যাই হোক এইটুক আয়ের খুব দরকার ছিলো তার পরিবারের জন্য। তার এই মনোভাব কি মুহাম্মদ কে লালনের ব্যাপারে তার মনোযোগীতায় প্রভাব ফেলেছিলো ? মুহাম্মদ কি তার পালক ঘরের লোকজনের কাছ থেকে অবহেলাতেই জীবনের গুরুত্বপূর্ণ বছরগুলো যখন মানুষের মৌলিক চরিত্র গড়ে উঠে, সে সময়গুলো পার করেছিলো ?
হালিমার বর্ণনা থেকে জানা যায় শিশু হিসেবে মুহাম্মদ ছিলো নিঃসঙ্গ। সে সাধারণত কল্পণার জগতে চলে যেত এবং অদৃশ্য বন্ধুবান্ধবের সাথে কথা বলতো। এটি কি বাস্তব জগতে ভালোবাসা না পেয়ে কল্পণার জগতে আশ্রয় এবং স্নেহ খুজতে চাওয়া শিশুর প্রতিক্রিয়া নয়?
মুহাম্মদের দুধ-মা হালিমা তার মানসিক সুস্থ্যতা নিয়ে ক্রমেই চিন্তিত হয়ে পড়ে। পাঁচ বছর বয়সে সে তাই তাকে তার মা আমিনার কাছে নিয়ে যায়। আমিনা ছিলো তখনো নিঃসঙ্গ এবং দরিদ্র। এজন্য সে প্রথমে মুহাম্মদ কে ফিরিয়ে নিতে চায়নি। কিন্তু তার অদ্ভুত আচরণ এবং কল্পণাবিলাসিতার কথা শোনার পর সে বাধ্য হয়। ইবনে ইসহাকের বর্ণনায় হালিমার জবানীতে ,
“ বাচ্চার(হালিমার নিজের বাচ্চা) বাপ বললো, এই ছেলে (মুহাম্মদ ) সম্ভবত স্ট্রোক করেছে একবার, ওকে ওর মার কাছে দিয়ে এস , খারাপ কিছু ঘটার আগেই। সে (মুহাম্মদের মা) আমার কাছে জানতে চাইলো আসলে কি ঘটেছে এবং পুরো কাহিনী শোনার আগ পর্যন্ত আমাকে শান্তি দিচ্ছিলো না। আমিনা যখন জিজ্ঞেস করলো মুহাম্মদ কে কি ভূতে ধরেছে, আমি বললাম, আমার তেমনই মনে হচ্ছে। ” (টীকা-১১)
বিছানার নিচে ভূত দেখা বা কাল্পণিক বন্ধুবান্ধব থাকা শিশুবয়সের স্বাভাবিক ব্যাপার। কিন্তু মুহাম্মদের ক্ষেত্রে সম্ভবত অবস্থা গুরুতর ছিলো। হালিমার স্বামী বলছিলো “আমার মনে হয় মুহাম্মদ একবার স্ট্রোকও করেছে।” এ তথ্যটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। অনেক বছর পরে মুহাম্মদের নিজের মুখ থেকে তার শিশুবয়সের এই অদ্ভুত অভিজ্ঞতা নিয়ে বয়ান পাওয়া যায়,
“ সাদা কাপড় পড়া দুইজন লোক সোনার পাত্রভরা ধবধবে সাদা তুষার নিয়ে আমার কাছে এসেছিলো। এরপর তারা আমার শরীর ফাঁক করে আমার হৃৎপিন্ড বের করে নিয়ে আসে, তারপর হৃৎপিন্ড ফাঁক করে সেখান থেকে এক দলা কালো রক্ত বের করে ফেলে দেয়। এরপর তারা সেই তুষার দিয়ে আমার হৃৎপিন্ড ও শরীর ধুয়ে দেয়” টীকা-১২
তুকতাক বাদ দিয়ে যতটুকু নিশ্চিতভাবে বলা যায়, হৃৎপিন্ডে কালো রক্তের দলা থাকার সাথে মনের ভিতরকার অপবিত্রতার কোন সম্পর্ক নাই। শিশুরা নিষ্পাপ হয় সেটা বাদ দিলেও, সার্জারি করে পাপ দূর করা যায় না, আর পরিষ্কার করার জন্য তুষার খুবেকটা ভালো কিছুও নয়। পুরো ঘটনাই কল্পণা অথবা দৃষ্টিবিভ্রম।
মুহাম্মদ শেষ পর্যন্ত তার মায়ের কাছে ফিরে আসে , কিন্তু এই সুখ তার স্থায়ী হয়নি। এক বছর পরেই আমিনা মারা যায়। আমিনাকে নিয়ে মুহাম্মদের খুব বেশি হাদিস নেই। তার মৃত্যুর পঞ্চান্ন বছর পর মক্কা বিজয়ের পর মুহাম্মদ তার মায়ের কবর জিয়ারত করতে যায় এবং কিছুক্ষণ সেইখানে কাঁদে। মক্কা মদিনার মাঝপথে আবওয়া নামক জায়গাতে ছিলো আমিনার কবর। এই সময়ে সে তার সাথীদের বলে,
“এই হচ্ছে আমার মায়ের কবর, আল্লাহ আমাকে এখানে আসার অনুমতি দিয়েছেন। আমি তার জন্য সুপারিশের আবেদন করছিলাম কিন্তু আল্লাহ কবুল করেন নি। কিন্তু মায়ের স্মৃতি মনে করে আমার কান্না চলে এসেছিলো।” (টীকা ১৩)
আল্লাহ কেন মুহাম্মদ কে তার মায়ের জন্য সুপারিশ করতে দেয় নি ? আমিনা কি এমন খারাপ কাজ করেছিলো যে সে মাফ পায় নি ? আল্লাহ যদি ন্যায়বান হয়, তাহলে এই আচরণের কোন অর্থ করা যায় না। আদতে এখানে আল্লাহর কোন ব্যাপার নেই। আসলে মুহাম্মদ নিজেই তার জন্মদাত্রী মাকে ক্ষমা করতে পারেনি, এমনকি তার মৃত্যুর অর্ধশতাব্দী পরেও। তার স্মৃতিতে আমিনা সম্ভবত স্নেহহীন শীতল মহিলা হিসাবে ছিলো, যাকে নিয়ে তার অভিযোগ ছিলো এবং অনেক মানবিক ক্ষত ছিলো যেগুলো দীর্ঘদিনেও মুছে যায় নি।
পরবর্তী দুই বছর মুহাম্মদ তার পিতামহ আব্দুল মুত্তালিবের বাড়িতে কাটায়। ছেলে আব্দুল্লাহর একমাত্র নিশাণ এই এতিম নাতিটিকে মুত্তালিব স্নেহে ভাসিয়ে দিয়েছিলেন। ইবন সা’দ লিখেছেন আব্দুল মুত্তালিব তার এই নাতির প্রতি যতোটা মনোযোগী ছিলেন, তার কোন সন্তানের প্রতিও ততোটা ছিলেন না। (টীকা-১৪)। মুহাম্মদের জীবনিতে Muir লিখেন; “এই বালকটির প্রতি তার ছিলো অপরিসীম ভালোবাসা। কাবার ছায়ায় মাদুর বিছিয়ে বসতেন আব্দুল মুত্তালিব, সম্মানসূচক বেশ কিছুটা জায়গা খালি রেখে বসতেন তার ছেলেরা। মুহাম্মদ সেখানে দৌড়ে চলে যেত, আর কোনরকম ভয় সম্মানের তোয়াক্কা না করেই দাদার কোলে চড়ে বসত। মুত্তালিবের ছেলেরা মুহাম্মদ কে সরিয়ে নিয়ে যেতে চাইলে তিনি তাদের ধমকে দিতেন; আমার বাচ্চার গায়ে হাত দিস না। এরপর তিনি মুহাম্মদের শিশুসূলভ বকবকানিতে মজা পেয়ে তার পিঠ চাপড়ে দিতেন। যদিও তখনো মুহাম্মদের দেখাশোনার ভার ছিলো আব্দুল মুত্তালিবের দাসী বারাকা’র উপর , কিন্তু মুহাম্মদ তার কাছে এক মুহূর্তও থাকতো না। সুযোগ পেলেই সে দৌড়ে চলে যেত দাদুর ঘরে, মুত্তালিব একা কিবং ঘুমন্ত থাকলেও। (টীকা-১৫)
দাদুর কাছ থেকে পাওয়া স্নেহের কথা মুহাম্মদ আজীবন মনে রেখেছিলো। নিজের কল্পণাজাত কিছু মসলা মিশিয়ে মুহাম্মদ পরে বলে যে তার দাদু বলতেন, “ ওকে ওর মত থাকতে দাও, কারণ ওর বিশাল সম্ভাবনাময় ভবিষ্যত আছে, আর সে হবে এক বিশাল রাজ্যের অধিপতি।” দাসী বারাকাকে বলতেন, “ ওকে সাবধানে রেখো ইহুদি খ্রিস্টানদের কাছ থেকে, ওরা ওকে হন্যে হয়ে খুঁজছে, পেলে ক্ষতি করতে চাইবে ” (টীকা-১৬)।
কিন্তু সে ছাড়া কারোরই এইসব কথা মনে ছিলো না, কারণ তার চাচাদের কেউ-ই তার নবীত্বের দাবী মেনে নেয়নি কেবল তার সমবয়সী হামজা ছাড়া। আব্বাস অবশ্য পরে তার দলে যোগ দেয়, কিন্তু একেবারে শেষে, যখন মুহাম্মদ মক্কা আক্রমণ করে।
মুহাম্মদের ভাগ্য এবারও তাকে প্রতারণা করে। দাদুর স্নেহে মাত্র দুই বছর থাকার পরেই ৮২ বছর বয়স্ক আব্দুল মুত্তালিব মারা যান। মুহাম্মদের দায়িত্ব নেন তার চাচা আবু তালিব।
স্নেহশীল দাদুর মৃত্যুতে জীবনে বিষণ্ণতা নেমে আসে মুহাম্মদের। হাজুন গোরস্তানে তাঁর লাশ নিয়ে যাওয়ার পথে মুহাম্মদ কে কাঁদতে দেখা যায়। আর জীবনভর সে বহন করে দাদুর মধূময় স্মৃতি।
আবু তালিব বিশ্বস্ততার সাথে মুহাম্মদের দেখভাল করা শুরু করেন। Muir এর লেখায় পাওয়া যায়, “বালকটির প্রতি তার স্নেহ, আব্দুল মুত্তালিবের মতই ছিলো। বাল্যকালের অসহায় অবস্থা কেটে উঠার আগ পর্যন্ত আবু তালিব মুহাম্মদ কে পাশে নিয়ে খেতেন, তাকে পাশে নিয়ে ঘুমাতেন, এবং দূরে কোথাও গেলে তাকে সঙ্গে নিয়ে যেতেন (টীকা-১৭)। ” ওয়াক্কাদির বর্ণনা থেকে ইবনে সাদ লিখেন, আবু তালিব যদিও ধনী ছিলেন না কিন্তু তিনি তার নিজের সন্তানদের চাইতেও বেশি যত্ন দিয়ে মুহাম্মদ কে লালন করেন।
বাল্যকালের এইসব দুঃসহ মানসিক অভিজ্ঞতার কারণে মুহাম্মদ হয়তো সবসময় এই ভয়ে থাকতো যে তাকে সবাই ছেড়ে চলে যাবে। তার মানসিক ক্ষতও নিশ্চয়ই ব্যাপক গভীর ছিলো। তার ১২ বছর বয়সের একটি ঘটনা থেকে একথা বুঝা যায় ভালোভাবে। আবু তালিব ব্যবসার জন্য সিরিয়া যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। মুহাম্মদ কে সাথে নেয়ার কোন পরিকল্পণা ছিলো না তার। “কিন্তু কাফেলা যখন রওনা হওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলো আর আবু তালিব উটের পিঠে চড়লেন, বালক মুহাম্মদ চাচার কাছ থেকে এতদিন দূরে থাকতে হবে এটা মেনে নিতে না পেরে চাচার কাছ থেকে সরতে চাইছিলো না। আবু তালিব বাধ্য হয়ে মুহাম্মদ কে সাথে নিলেন। (টীকা ১৮)। চাচার প্রতি এই নির্বাধ ভালোবাসা প্রমাণ করে যে মুহাম্মদ সবসময় কাছের মানুষদের হারানোর ভয়ে থাকতো।
এত ভালোবাসা স্বত্তেও, এবং যদিও আবু তালিব জীবনভর মুহাম্মদ কে রক্ষা করে গেছেন, নিজ সন্তানদের থেকেও বেশি ভালোবাসা দিয়ে বড় করেছিলেন মুহাম্মদ কে, শেষ পর্যন্ত মুহাম্মদ অকৃতজ্ঞ ভাতিজার মতই আচরণ করে। আবু তালিব যখন মৃত্যশয্যায়, মুহাম্মদ তাকে দেখতে যায়। আব্দুল মুত্তালিবের অন্য ছেলেরাও সেইখানে ছিলো। মুহাম্মদের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন আবু তালিব তার ভাইদের অনুরোধ করেন মুহাম্মদ কে রক্ষা করার জন্য। তারা রাজি হয় , এমনকি মুহাম্মদ যে আবু লাহাবকে অভিশাপ দিয়েছিলো, সে-ও। এর পরেই মুহাম্মদ আবু তালিবকে ইসলাম গ্রহণ করার অনুরোধ করে।
মুহাম্মদ খুব ভালোভাবেই জানতো যে তার অনুসারীরা সব ছিলো নীচু বংশের ভীরু মানুষ। স্ট্যাটাস পাওয়ার জন্য তার দরকার ছিলো উচ্চবংশীয় ক্ষমতাশীল কাউকে অনুসারী হিসেবে পাওয়া। ইবনে ইসহাকের বর্ণনায় এসেছে, “ যখনি কোন মেলায় লোকসমাগম হতো অথবা যখনি রাসুল শুনতেন যে গুরুত্বপূর্ণ কোন ব্যক্তি এসেছেন মক্কায়, তিনি তার বাণী নিয়ে তাদের কাছে যেতেন (টীকা-১৯) ”।
ঐতিহাসিকদের বর্ণনা থেকে আরো জানা যায়, মুহাম্মদ ব্যাপকভাবে আনন্দ করেছিলো যখন আবু বকর এবং ওমর তার দলে নাম লেখায়। আবু তালিব ইসলাম গ্রহণ করলে চাচাদের এবং কুরাইশ গোত্রের কাছে মুহাম্মদের সম্মান বাড়তো। কুরাইশরা ছিলো মক্কার পবিত্র কাবা গৃহের রক্ষাকর্তা, তাদের নিকট সম্মন এবং দাম পাওয়ার জন্য মুহাম্মদ বেপরোয়া ছিলো। কিন্তু আবু তালিব মুহাম্মদের অনুরোধে সাড়া না দিয়ে হেসে বললেন, আমি আমার পূর্বপুরুষদের ধর্মে থেকেই মরতে চাই। আশাহত হয়ে মুহাম্মদ ঘর থেকে বের হয়ে যায়, বিড়বিড় করতে করতে, “আমি তাঁর জন্য দোয়া করতে চাইছিলাম কিন্তু আল্লাহ আমাকে নিষেধ করলেন। ”
যে লোক নবীকে বড় করলেন, আজীবন প্রতিরক্ষা দিলেন, নবীর জন্য এত ত্যাগ স্বীকার করলেন তার জন্য দোয়া করতে খোদা বাধা দিবেন এটা ভাবা একটু কষ্টকর। এই ধরণের ঈশ্বর অনেকটা উপাসনা পাবার অযোগ্য ঈশ্বর। মুহাম্মদের জন্য আবু তালিব এবং তার পরিবারের স্বীকার করা ত্যাগের পরিমাণ বিশাল। এই মানুষটি, যদিও মুহাম্মদের নব্যুয়তের দাবীতে বিন্দুমাত্র বিশ্বাস করেন নি, তবু পাহাড়ের মত দাড়িয়ে ছিলেন তার শত্রুদের বিরুদ্ধে, প্রতিরোধ করে গেছেন তাদের যেকোন অনিষ্টকর প্রচেষ্টা, এবং ৩৮ বছর ধরে ছিলেন মুহাম্মদের সবচে বিশ্বস্ত সমর্থক। এত কিছু স্বত্তেও মৃত্যুশয্যার মুহাম্মদের আহবান প্রত্যাখ্যান করায় সে এতই ক্ষিপ্ত হয় যে, চাচার জন্য প্রার্থণা করাও বাদ দেয়। বুখারির বর্ণনায় এসেছে,
“আবু সাইদ আল খুদরি বর্ণনা করেন, কেউ একজন আবু তালিবের উল্লেখ করাতে মুহাম্মদ বলেন, ‘আমার অনুরোধে হয়তো শেষ বিচারের দিন তাঁকে দোযখের অগভীর আগুনের অংশে রাখা হবে যাতে তার গোড়ালি পর্যন্ত ডুবে থাকবে, কিন্তু তাঁর মাথার মগজ তাতে ফুটতে থাকবে’।(টীকা-২১)”
মুহাম্মদের যৌবন তুলনামূলক ভাবে ঘটনাহী ছিলো। তেমন উল্লেখযোগ্য কিছু ঘটেনি যা সে মনে রেখেছিল। ফলে তার জীবনিকারদের বর্ণনাতেও তেমন কিছু পাওয়া যায় না। সে ছিলো লাজুক, শান্ত এবং খুব বেশি সামাজিক নয় এমন ধরণের। যদিও তার চাচা তার ভালো যত্নই নিয়েছিলেন এবং এমনকি একটু বেশি লাই-ও দিয়েছিলেন, তবু মুহাম্মদ তার অনাথ অবস্থা নিয়ে ভাবিত ছিলো। ভালোবাসাহীন একাকি শিশুকালের স্মৃতি তাকে সারাজাবীন তাড়া করে ফিরেছিলো।
সময় বয়ে যায়। মুহাম্মদ তখনো ছিলো নির্জন, নিজের একার জগতে বন্দী, এমনকি সমসাময়িকদের কাছ থেকেও কিছুটা বিচ্ছিন্ন। বুখারি (টীকা -২২) বলেন,
“মুহাম্মদ ছিলো বোরখাপড়া যুবতীর চাইতেও লাজুক। (টীকা-২৩)।”
বোরকাপড়া যুবতীর চাইতেও লাজুক ছিলো সে জীবনভরই। ভীতু এবং আত্নবিশ্বাসহীন, যেই বোধকে সে চাপা দিতে চাইছিলো নিজেকে ফাঁপিয়ে, রাশভারীতা, আত্নম্ভরীতা দিয়ে।
মুহাম্মদ কখনো কোন গুরুত্বপূর্ণ পেশায় নিয়োযিত ছিলো না। মাঝে মাঝে সে ভেড়া চড়াতো, যা আরবদের মাঝে মূলত মেয়ে এবং মেয়েলি ছেলেদের জন্য বরাদ্দ ছিলো। তার উপার্জন ছিলো সীমিত আর তাই ভরণপোষনের জন্য তাকে দরিদ্র চাচা আবু তালেবের উপর নির্ভর করতে হতো।
হযরতের কুকুর ভীতি
খুব স্বাভাবিকভাবেই, মানব সমাজের কিছু মানুষ কুকুরকে ভালবাসবে, আবার কিছু মানুষ ভালবাসবে না। সবাইকে যে কুকুরকে ভালবাসতেই হবে, এমন কোন কথা নেই। কথাটি উলটো দিক থেকেও সত্য। সব কুকুর যে মানুষকে ভালবাসবে, তার নিশ্চয়তা নেই। তবে সাধারণভাবে সব কুকুরই প্রভুভক্তির অসাধারণ প্রমাণ আমাদের দিয়েছে যুগ যুগ ধরে। আমরা মোটেও এরকম দাবী করতে পারি না যে, আরবের নেতা হযরত মুহাম্মদকে কুকুর ভালবাসতেই হবে। এরকম দাবী যৌক্তিকও নয়। এটি যার যার ব্যক্তিগত পছন্দ অপছন্দের বিষয়। কিন্তু মানব সমাজের একটি বড় অংশ, যারা নিজেদেরকে মুসলিম বলেন, তাদের কাছে হযরত মুহাম্মদের করে যাওয়া প্রতিটি কাজ হচ্ছে নীতি নৈতিকতার অন্যতম ভিত্তি। ইনসাফ এবং আইনের অন্যতম ভিত্তি। এমনকি, নবী মুহাম্মদ কীভাবে পেশাব করতেন, কীভাবে স্ত্রী বা দাসী গমন করতেন, সেটিও মুসলিমদের কাছে অনুসরণীয় আদর্শ। তার প্রতিটি কথা, প্রতিটি কাজকে নিয়ে তাই একটু বাড়তি গুরুত্ব দিয়ে আলোচনা করা প্রয়োজন, এর একমাত্র কারণ হচ্ছে, বহু সংখ্যক মুসলিমের কাছে সেগুলো অবশ্য পালনীয় সুন্নাহ। হযরত মুহাম্মদ তার জীবনে কুকুর সম্পর্কে খুবই অমানবিক এবং বর্বর কিছু বক্তব্য রেখে গেছেন, যা আজও বিভিন্ন মুসলিম সমাজে বহুল প্রচলিত। এই আলোচনাটিতে আমরা হযরতের কুকুর ভীতি নিয়ে তাই আলোচনা করবো। এখানে নবী মুহাম্মদ যত না গুরুত্বপূর্ণ, তার চাইতে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে নবী মুহাম্মদের রেখে যাওয়া সুন্নাহ। যা এখনো মুসলিমগণ অবশ্য পালনীয় বলে মনে করেন। ব্যক্তিগতভাবে নবী মুহাম্মদ কুকুর অপছন্দ করতেই পারেন, কিন্তু তা যখন একটি বিশাল জনগোষ্ঠীর কাছে অনুসরনীয় অনুকরণীয় হয়ে ওঠে, তখন তা বিপদজনক হয়ে উঠতে পারে। কুকুর নামক একটি প্রাণীর জন্য অত্যন্ত বেদনাদায়ক হতে পারে। সেই সাথে, যারা কুকুর ভালবাসেন, তাদের জন্যেও বিষয়টি মর্মান্তিক হতে পারে।
হযরত মুহাম্মদ কুকুর নামক প্রাণীদের ভয় পেতেন। কেন উনি এত ভয় পেতেন, তার কারণ সঠিকভাবে ব্যাখ্যা করা ১৪০০ বছর পরে প্রায় অসম্ভব ব্যাপার। একেবারে আধুনিক মনোবিজ্ঞানের দৃষ্টিতে নবী মুহাম্মদের চরিত্র বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়ঃ
১। নবী মুহাম্মদ হ্যালুসিনেশন করতেন। মানে, ফেরেশতা, জ্বীন, শয়তান, এরকম অলৌকিক সত্ত্বা দেখতেন, বাস্তবে যেসবের কোন প্রমাণ পাওয়া যায় না। এমনকি, উনি নাকি সাত আসমান পাড়ি দিয়ে আল্লাহ নামক আরেকটি অলৌকিক সত্ত্বার সাথেও সাক্ষাত করে এসেছেন। মুসলিমগণ এসব বিশ্বাস করতেই পারেন, তবে বিজ্ঞানের দৃষ্টিতে এসবই হ্যালুসিনেশন।
২। মুহাম্মদ মাঝে মাঝেই বিনা কারণে অজ্ঞান হয়ে যেতেন।
গ্রন্থের নামঃ সহীহ বুখারী (তাওহীদ)
হাদিস নম্বরঃ [3829]
অধ্যায়ঃ ৬৩/ আনসারগণ [রাযিয়াল্লাহু ‘আনহুম]-এর মর্যাদা (كتاب مناقب الأنصار)
পাবলিশারঃ তাওহীদ পাবলিকেশন
পরিচ্ছদঃ ৬৩/২৫. কা‘বা নির্মাণ।
৩৮২৯. জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, যখন কা’বা গৃহ পুনর্নির্মাণ করা হচ্ছিল তখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও ‘আববাস (রাঃ) পাথর বয়ে আনছিলেন। ‘আববাস (রাঃ) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বললেন, তোমার লুঙ্গিটি কাঁধের উপর রাখ, পাথরের ঘর্ষণ হতে তোমাকে রক্ষা করবে। (লুঙ্গি খুলতেই) তিনি অজ্ঞান হয়ে মাটিতে পড়ে গেলেন। তাঁর চোখ দু’টি আকাশের দিকে নিবিষ্ট ছিল। তাঁর চেতনা ফিরে এল, তখন তিনি বলতে লাগলেন, আমার লুঙ্গি, আমার লুঙ্গি। তৎক্ষণাৎ তাঁর লুঙ্গি পরিয়ে দেয়া হল। (৩৬৪) (আধুনিক প্রকাশনীঃ ৩৫৪৪, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৩৫৪৯)
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
খাদিজার সাথে বিয়ে
শেষমেশ পঁচিশ বছর বয়সে আবু তালেব মুহাম্মদের জন্য একটা চাকুরির ব্যাবস্থা করেন। খাদিজা নামের এক ধণাঢ্য ব্যবসায়ী আত্নীয়র ব্যাবসার দেখভাল করার লোক হিসাবে। খাদিজা, চল্লিশ বছর বয়েসী সুশ্রী বিধবা, সফল ব্যাবসায়ী। খাদিজার কর্মচারী হিসাবে মুহাম্মদ সিরিয়াতে একবার বাণিজ্যে যায় , পণ্য বিক্রি করতে এবং খাদিজার নির্দেশমত প্রয়োজনীয় জিনিস কিনে আনতে। সিরিয়া থেকে ফেরার পর খাদিজা মুহাম্মদের প্রেমে পড়ে যান এবং কাজের বুয়ার মাধ্যমে মুহাম্মদের কাছে বিয়ের প্রস্তাব তোলেন।
মুহাম্মদের অভাব ছিলো, অর্থনৈতিক এবং মানসিক। খাদিজার সাথে বিয়ে তার জন্য আশীর্বাদের চাইতেও বেশি কিছু। তার মধ্যে সে পেয়েছিলো শৈশবের সেই না পাওয়া মাকে আর পেয়ছিলো অর্থনৈতিক স্থিরতা যাতে আর কোনদিন চাকুরি না করতে হয়।
কচি স্বামীর সমস্ত আবদার পূরণ করতে খাদিজার কোনই আপত্তি ছিলো না। যত্নে, দানে, আত্ন-ত্যাগে তিনি নিজের শান্তি খুঁজে পেয়েছিলেন।
মুহাম্মদ কাজ পছন্দ করতো না। দুনিয়াদারী থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে নিজের ভাবনায় ডুবে যাওয়াই তার কাছে পছন্দের ছিলো। এমনকি শৈশবেও সে অন্য বাচ্চাদের সাথে না খেলে নিজের মত থাকতো, একা। প্রায়ই সে একা একা দ্বিবাস্বপ্ন দেখে দিন কাটাতো। কিভাবে আনন্দ করতে হয় তা সে জানতো না। কখনো কখনো যদিওবা সে হাসতো, তাও মুখ ঢেকে। এই কারণে মুহাম্মদের ঐতিহ্য রক্ষা করতে গিয়ে মুসলিমরা প্রাণখোলা হাসিকে পছন্দ করে না।
তার নির্জনতার ভাবের দুনিয়ায় সে আর শৈশবের সেই অনাকাংখিত শিশুটি ছিলো না। বরং কাম্য, সম্মানিত, প্রশংশিত, এমনকি সমীহজাগানিয়া কেউ একজন ছিলো। দুনিয়ার তিক্ত সত্য এবং নিঃসংগতা যখন অসহ্য হয়ে উঠতো তখন সে ডুবে যেতে পারতো তার ভাবের দুনিয়ায়, যে দুনিয়ায় সে যা খুশি তা-ই হতে পারে। এই ভাবের দুনিয়া সম্ভবত সে জীবনের বেশ প্রাথমিক পর্যায়েই , যখন সে তার পালক পরিবারের সাথে নির্জন মরুতে থাকতো, তখনি আবিষ্কার করে থাকবে। এই ধীরস্থির মনোরম ভাবনার দুনিয়া জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত তার আশ্রয়স্থল ছিলো। এই দুনিয়া তার কাছে সত্যিকার দুনিয়ার চাইতেও সত্য কিন্তু আরো বেশী শান্তিময় ছিলো। বাড়িতে নয় নয়টা ছেলেমেয়েকে খাদিজার কাছে রেখে মুহাম্মদ মক্কার আশেপাশের গুহায় নিজের ভাবনার দুনিয়ায় ডুবে থাকতে চলে যেতো।
ভুতুড়ে অভিজ্ঞতা
চল্লিশ বছর বয়সে একদিন , দীর্ঘ কয়েকদিন যাবৎ গুহায় কাটিয়ে মুহাম্মদ এক অদ্ভুত অভিজ্ঞতা লাভ করে। তার মাংসের ভিতর ছন্দময় সংকোচন প্রসারণ চলতে থাকে , সাথে পেটের ব্যাথা। যেন কেউ থাকে প্রবলভাবে চিপে মারতে চাচ্ছে। এর সাথে যোগ হয় মাংসপেশীর নিয়ন্ত্রণবিহীন নড়াচড়া , মাথা এবং ঠোঁটের নড়াচড়া এবং হৃদস্পন্দনের গতি বেড়ে যাওয়া। এই অসহনীয় অবস্থার মধ্যে সে ভুতজাতীয় কিছু দেখতে পায় এবং কিছু একটা শুনতে পায়।
ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে কাঁপতে কাঁপতে এবং ঘর্মাক্ত হয়ে সে বাড়ি পৌঁছায় দৌরে। স্ত্রীকে অনুরোধ করে , “আমাকে ঢেকে দাও, ঢেকে দাও” বলে। ইয়া খাদিজা, আমার কি হলো। খাদিজাকে সে সবিস্তার তার অভিজ্ঞতার কথা বর্ণনা করে এবং বলে, “ভয় হয়, আমার কিছু না কিছু একটা হয়েছে “। সে ভেবেছিলো তাকে আবার ভুতে ধরেছে। খাদিজা তাকে আশ্বস্ত করেন , ভয় পেতে নিষেধ করেন এবং বলের তার কাছে আসলে ফেরেশতা এসেছিলো, এবং সে নবী হিসাবে মনোনীত হয়েছে।
এই ভুতের সাথে দেখা হবার পর, খাদিজা যাকে বলতে চান জিব্রাইল, মুহাম্মদ নিজের নবীত্ব নিয়ে নিজের ভিতর আস্থাবোধ করা শুরু করে। এই অভিজ্ঞতা তার জন্য দরকারী ছিলো কারণ এমনিতেই সে নিজেকে বিশাল কিছু ভাবতে পছন্দ করতো। সে তার বাণী প্রচার করা শুরু করে।
তার বাণী কি ? বাণী হচ্ছে যে সে আল্লাহর মনোনীত নবী এবং সবার উচিৎ তাকে বিশ্বাস করা। ফলস্বরুপ সবার উচিৎ তাকে সম্মান করা, ভালোবাসা, মান্য করা এবং এমনকি ভয় পাওয়া। তেইশটি দীর্ঘ বছরের প্রচারণার শেষেও মুহাম্মদের বাণীর মূল ভাষ্য একইরকম ছিলো। ইসলামে মূল বাণী হচ্ছে মুহাম্মদ আল্লাহর নবী এবং সবার উচিৎ তাকে মান্য করা। এর বাইরে ইসলামের আর তেমন কোন বাণী নেই। মুহাম্মদের প্রাপ্য সম্মান দিতে ব্যার্থ হলে এই দুনিয়া এবং পরকাল দুই জায়গাতেই আছে অবধারিত শাস্তি। একত্ববাদ, যা ইসলামের এখন মূল দাবী তা আসলে মুহাম্মদের আদি ও আসল বানীতে তেমন গুরুত্বপূর্ণ কিছু ছিলো না।
বছরের পর বছর ধরে মক্কার লোকজনকে পেইন দিয়ে, তাদের ধর্ম নিয়ে উপহাস করার পরে মক্কার লোকজন মুহাম্মদ এবং তার লোকজনকে একঘরে করে দেয়। মুহাম্মদের সাথীরা তখন তার নির্দেশে আবিসিনিয়ায় হিজরত করে। শেষতক, মক্কার লোকজনকে সন্তুষ্ট করতে মুহাম্মদ কিছুটা ছাড় দেয়ার চিন্তা করে। ইবনে সাদের বর্ণনায়,
” একদিন নবী কাবার পাশে লোকজনকে সুরা আন-নাজম (সুরা -৫৩ ) শোনাচ্ছিলেন। যখন তিনি আয়াত ১৯-২০ এ পৌঁছালেন , ‘ তোমরা কি লাত এবং উজ্জার কথা এবং মানাত তৃতীয় এবং সর্বশেষ জন ?’ শয়তান নবীর মুখ থেকে এই দুটি আয়াত বের করে আনে, ‘তারা সুন্দর , আর তাদের উপাসনাতে কল্যাণ আছে’ (টীকা-২৪) “
মক্কাবাসী এই আয়াতগুলোতে খুশি হয়ে মুহাম্মদের সাথে তাদের শত্রুতা এবং বয়কটে ইতি আনে। আবিসিনিয়াতে হিজরত করা মুহাম্মদের সাথীদের কাছে এ খবর পৌঁছার পর তার আনন্দের সাথে মক্কায় ফিরে আসে।
কিছুসময় পরে মুহাম্মদ বুঝতে পারে, আল্লাহর কণ্যাদের স্বীকার করার মাধ্যমে মুহাম্মদ মূলত আল্লাহ এবং মানুষের মাঝখানে মধ্যস্ততাকারী হিসাবে নিজের নিরংকুশ এবং একচ্ছত্র আধিপত্যের ক্ষতি করে ফেলেছে। ফলস্বরুপ তার নতুন ধর্ম আসলে নিজের চরিত্র হারিয়ে পৌত্তলিকদের ধর্মের সাথে একই রকম হয়ে গেছে। সে পিছুটান দেয় এবং বলে যে আল্লাহর কণ্যাদের নিয়ে নাযিল করা আয়াতগুলো আসলে শয়তানি আয়াত। সেগুলো আসল কুরআনের আয়াত না। সেই আয়াতগুলোর জায়গায় সে নতুন আয়াত নিয়ে আসে এইরকম যে, ” কি ! তোমাদের জন্য পূত্রসন্তান আর তার(আল্লাহ) জন্য কণ্যা ! এটা অতি অবশ্যই জুলুমপূর্ণ কথা ! ” এর অর্থ দাঁড়ায় এরকম যে কত সাহস তোমাদের তোমরা আল্লাহর জন্য কণ্যাসন্তানের কথা বলো আর নিজেদের বেলায় পুত্রসন্তান নিয়ে গর্ব কর। নারীরা কম বুদ্ধিমত্তার , তাই আল্লাহর পক্ষে কণ্যাসন্তান জন্ম দেয়া মানায় না। এই বিভাজন মানায় না।
এই ঘটনার প্রেক্ষিতে মুহাম্মদের কিছু সাথী তাকে ত্যাগ করে। এই উল্টাপাল্টা আচরণের ব্যাখ্যা দিতে এবং সাথীদের আস্থা অর্জনের জন্য মুহাম্মদ দাবী করে আর সব নবীরাও শয়তানের দ্বারা প্রতারিত হওয়ার নজির আছে।
” আমি আপনার পূর্বে যে সমস্ত রাসূল ও নবী প্রেরণ করেছি, তারা যখনই কিছু কল্পনা করেছে, তখনই শয়তান তাদের কল্পনায় কিছু মিশ্রণ করে দিয়েছে। অতঃপর আল্লাহ দূর করে দেন শয়তান যা মিশ্রণ করে। এরপর আল্লাহ তাঁর আয়াতসমূহকে সু-প্রতিষ্ঠিত করেন এবং আল্লাহ জ্ঞানময়, প্রজ্ঞাময়। এ কারণে যে, শয়তান যা মিশ্রণ করে, তিনি তা পরীক্ষাস্বরূপ করে দেন, তাদের জন্যে, যাদের অন্তরে রোগ আছে এবং যারা পাষাণহৃদয়। গোনাহগাররা দূরবর্তী বিরোধিতায় লিপ্ত আছে।” (কুরআন, সুরা ২২ , আয়াত ৫২-৫৩)
মুহাম্মদ এই আয়াতগুলো নিয়ে আসে এ কারণে যে , তার কিছু সাথী যখন বুঝতে পারে যে মুহাম্মদ মূলত যখন যে অবস্থায় পড়ে তার ভিত্তিতে, তখন তার তার সংগ ত্যাগ করে। সোজা কথায় বলতে গেলে এই আয়াতগুলোর মূল কথা এইযে, যখন তোমরা আমাকে ভুলের জন্য হাতেনাতে ধরে ফেলো, সেটাও আসলে আমার ভুলের জন্য না, বরং তোমার অন্তরের ভিতরেই কলুষতা আছে, সেজন্য।
তের বছর কেটে যাবার পরেও সাকূল্য সত্তর থেকে আশি জনের মত মুহাম্মদের দাবীতে বিশ্বাস আনে। তার স্ত্রী, যিনি শুধু তার জাগতিক প্রয়োজনই মিটান নি, বরং তাকে ভালোবাসা দিয়েছেন, নিজের সম্পর্কে বিশ্বাস দিয়েছেন এবং প্রায় পূজা করেছেন, তিনিই ছিলেন মুহাম্মদের প্রথম মুরিদ। তার সামাজিক অবস্থানের কারণে আরো কিছু গড়পড়তা লোক তার অনুসারী হয় , যেমন আবু বকর, ওসমান এবং ওমর। এই কয়জন ছাড়া মুহাম্মদের বাদ-বাকী অনুসারীরা ছিলো হয় ক্রীতদাস অথবা কিছু অল্পবয়স্ক টাউট।
নির্যাতনের মিথ
মক্কাতে মুহাম্মদের বাণী কোন পাত্তা পায় নি। বর্তমানের প্রায় অন্যসব অমুসলিমদের মতই মক্কার লোকজন সবার ধর্মবিশ্বাস নিয়ে সহনশীল ছিলো। ধর্মের কারণে নির্যাতন ঐ অঞ্চলে অপরিচিত ছিলো। বহুঈশ্বরবাদী সমাজগুলো সাধারণত ধর্মীয় বিষয়ে সহনশীল হয়। মুহাম্মদ যখন তাদের দেবতাদের অপমান করেছিলো , তারা আহত হয়েছে কিছু মুহাম্মদের তেমন কোন ক্ষতি করে নি।
পৌত্তলিক দেবদেবীদের নিয়ে মুহাম্মদের অপমান মাত্রাতীত হয়ে পড়লে মক্কাবাসীরা মুহাম্মদ এবং তার সহচরদের একঘরে করে দেয়। তারা মুহাম্মদের লোকজনের সাথে বেচা-কেনা বন্ধ করে দেয়। এই বয়কট সম্ভবত দুই বছর ধরে চলেছিলো। মুসলিমদের জন্য এটা কষ্টকর ছিলো ঠিক, কিন্তু একঘরে করে দেয়া আর মেরে ফেলা এক জিনিস না। তাই মূলত এই একঘরে করে দেয়াকে কঠিন অত্যাচার বলা চলে না। মুসলিমরা বাহাইদের সাথে যা করেছে তাকে বলা যায় অত্যাচার। ইরানে গত দুই শতাব্দীতে হাজার হাজার বাহাইদের উপর নির্যাতন চালানো হয়েছে , কসাইয়ের মত তাদের হত্যা করা হয়েছে। অথচ তারা কোনদিন ইসলাম, মুহাম্মদ বা কুরআনকে অপমান করেনি।
মুহাম্মদ তার অনুসারীদের মক্কা ত্যাগের জন্য উদ্বুদ্ধ করে। যেসব মক্কাবাসীর সন্তান অথবা দাসেরা ইসলামে দীক্ষা নিয়েছে, তারা এতে অসন্তুষ্ট হয়। কিছু দাস পালানোর সময় ধরা পড়ে এবং মালিকের হাতে শারিরীক নির্যাতনের শিকার হয়। এখানে উল্লেখযোগ্য এটাকে ধর্মীয় কারণে নির্যাতন বলা যায় না। মক্কার লোকজন দাসদের নিজেদের সম্পত্তি বলে মনে করতো, তাই স্বভাবতই তারা তাদের সম্পত্তি রক্ষার চেষ্টা বলেই মনে করেছিলো এ কাজকে। উদাহরণস্বরুপ , যখন বিল্লাল ধরা পড়ে, তার মালিক তাকে পিটিয়ে শিকলে বেঁধে রাখে। আবুবকর বিল্লালকে কিনে মুক্ত করে। বিল্লালকে ধরা হয়েছিলো পালানোর চেষ্টা করার কারণে, যেহেতু সে তার মালিকের সম্পত্তি, তার ধর্মীয় বিশ্বাসের জন্য না।
ইসলাম গ্রহণের অপরাধে নিজ পরিবারের সদস্যদের দ্বারা নির্যাতিত হওয়ার কাহিনীও আছে। একটা হাদিসে পাওয়া যায়, ইসলাম গ্রহণের আগে ওমর তার বোনকে বেঁধে রেখেছিলো, তাকে ইসলামে ত্যাগে বাধ্য করার জন্য। ওমর কঠোর এবং নৃশংস মানুষ ছিলো, ইসলাম গ্রহণের আগে এবং পরেও। এই গল্পগুলাকে ঠিক পুরোপুরি ধর্মের কারণে নির্যাতনের ঘটনা বলা চলে না। মধ্যপ্রাচ্য ব্যাক্তিস্বাতন্ত্র একটি অকল্পনীয় চিন্তা। তুমি কি বিশ্বাস করবা কি করবা সেটা অন্য সকলের মাথা ব্যাথার কারণ। বিশেষভাবে নারীরা তাদের ইচ্ছামত স্বিদ্ধান্ত নিতে পারতো না কোন কিছুতেই। এমনকি আজকের দুনিয়াতেও , পরিবারের অমতে নিজের পছন্দের পুরুষকে বিয়ে করার ‘অপরাধে’ অনেক মুসলিম নারী সম্মান-হত্যার (honor-killing) শিকার হন।
সুমাইয়া নামে এক নারীর একটি ঘটনা পাওয়া ধর্মীয় নির্যাতনের। আবু সা’দই একমাত্র ঐতিহাসিক যিনি বলেন সুমাইয়া আবু জাহেলের হাতে নিহত হন। ইবনে সাদের বর্ণনার ভিত্তিতে আল-বায়হাকি বলেন , “আবু জাহেল তাকে যৌনাঙ্গে ছুরি দিয়ে আঘাত করে ” (টীকা ২৭)। এই নির্যাতনের ঘটনা যদি সত্য সত্যই ঘটতো তাহলে সব ইসলামিক ঐতিহাসিকেরই এটাকে গুরুত্ব সহকারে বর্ণনা করার কথা। শুরু থেকেই মুসলিমরা সবকিছুতে অতিরঞ্জনের যে ধারাবাহিকতা তৈরী করেছে এই ঘটনাকি তার একটা ছোট উদাহরণ।
আদতে এই একই ঐতিহাসিক অন্য জায়গায় বলেছেন বিল্লাল হচ্ছে ইসলামের প্রথম শহীদ। বিল্লাল এইসব কথিত ধর্মীয় নির্যাতনের পরেও অনেক বছর বেঁচে ছিলো বলে জানা যায়। এমনকি মুহাম্মদের মক্কা বিজয়ের পরে মক্কায় ফিরে মক্কার মসজিদে সে আজান দিতো। তার স্বাভাবিক মৃত্যু হয় বলে জানা যায়।মুহাম্মদের জন্ম ও শৈশব
কিছু ইসলামিক সোর্সে পাওয়া যায় সুমাইয়া, তার স্বামী ইয়াসির এবং তাদের সন্তান আম্মার মক্কায় নির্যাতনের শিকার হয়েছিলেন। কিন্তু Muir নামক ঐতিহাসিক দেখিয়েছেন যে সুমাইয়ার স্বামী ইয়াসিরের স্বাভাবিক মৃত্যুর পরে তিনি গ্রিক দাস আযরাককে বিয়ে করেন এবং তাদের সালমা নামের এক সন্তানও ছিলো। সেক্ষেত্রে ধর্মীয় নির্যাতনে তার মৃত্যু হয়েছে বলে মনে করার কারণ নেই। আযরাক ছিলো তায়েফের লোক। মুহাম্মদের তায়েফ আক্রমণের সময় (পনের বছর পর) যেসব দাস পালিয়ে মুহাম্মদের শিবিরে চলে এসেছিলো সে তাদের মধ্যে ছিলো। সুমাইয়া তার স্বামী ইয়াসিরের মৃত্যুর পর আযরাককে বিয়ে করে তায়েফে বাস করছিলেন এটা ধরে নেয়াই স্বাভাবিক। এবং এর থেকে বুঝা যায়, তার নির্যাতন এবং মৃত্যুর ইতিহাস সম্ভবত মিথ্যা।
মুহাম্মদ দাস প্রথার বিরোধী ছিলো না। পরবর্তী জীবনে সে যখন ক্ষমতায় আসে তখন সে হাজার হাজার মানুষকে দাসত্বে বাধ্য করে। কিন্তু তার অনুসারী দাসদের মক্কা ত্যাগের নির্দেশে মক্কায় সামাজিক বিশৃংখলার তৈরী হয়। এই কারণে এবং মক্কার লোকজনের ধর্মকে নিরবচ্চিন্ন আক্রমণের কারণে তার নিজ গোত্রের লোকদের কাছেই সে অবাঞ্চিত ছিলো। কিন্তু কখনো তাকে অথবা তার অনুসারীদের ধর্মের কারণে নির্যাতন করা হয়নি। মুসলিমরা এরকম অনেক ভিত্তিহীন দাবী করে। পৌত্তলিক বহুঈশ্বরবাদীরা অন্যের ধর্ম বিশ্বাস নিয়ে বিন্দুমাত্র মাথা ঘামায় না। তার স্বভাবগতভাবেই ভিন্নধর্মের সাথে সহাবস্থান করে। কাবাতে ৩৬০ টা মূর্তি ছিলো। প্রত্যেকটা একেকটা গোত্রের নিজস্ব দেবতা। সেখানে ৩৬১ টা হওয়া নিয়ে তাদের কোন মাথাব্যাথা হওয়ার কথা না। আরবে ইহুদি, খ্রিস্টান, সাবেই (একটি বিলুপ্ত একেশ্বরবাদী ধর্ম ) এবং আরো হরেক রকমের ধর্মের লোকজন স্বাধীনভাবে নিজেদের ধর্মকর্ম করতো। অন্য নবীরা ছিলো যারা নিজেদের ধর্ম প্রচার করতো। আরবে ধর্মীয় অসহিষ্ণুতার সূত্রপাত হয় ইসলামের মাধ্যমে।
মুহাম্মদ এবং মুসলিমদের বিরুদ্ধে ধর্মীয় নির্যাতনের স্বপক্ষে তেমন কোন শক্ত প্রমাণ নেই। তারপরও মুসলিমরা এইসব দাবী করে কারণ মুহাম্মদ এই দাবী করে গিয়েছে। আশ্চর্যজনকভাবে, কিছু অমুসলিম ঐতিহাসিক যাদের ইসলাম নিয়ে কোন আলাদা ভালোবাসা নেই তারাও এই প্যাঁচে পড়ে এই অসত্য দাবীর প্রতিধ্বনি করে গেছেন। মুহাম্মদ নিজেকে নির্যাতিত দাবী করেছে, যেখানে আসলে সে নিজেই ছিলো নির্যাতনকারী। মুসলিমরাও তাই করে। দুনিয়ার সব জায়গাতেই হত্যা, নির্যাতন এবং অবিচার করে চলছে মুসলিমরা অথচ তারাই নির্যাতিত হচ্ছে বলে সবচে বেশি গলা বাড়িয়ে চিৎকার করে। এই ঘটনা বুঝার জন্য আমাদের মুহাম্মদ এবং তার অনুসারীদের মনস্তত্ত বুঝতে হবে। পরবর্তী অধ্যায়ে আমরা তা করবো।
আদতে মুহাম্মদ ই মূলত ধর্মীয় অসহিষ্ণুতা প্রচার করে, এমনকি যখন মক্কায় ছিলো তখনো। মুসলিমরা প্রায়ই কুরআনের সুরা ১০৯ দেখিয়ে দাবী করে যে মুহাম্মদ ধর্মীয় সহিষ্ণুতার প্রচার করছিলো। সুরাটি এইরকম
১- বলুন, হে কাফেরকূল,
২- আমি এবাদত করিনা, তোমরা যার এবাদত কর।
৩- এবং তোমরাও এবাদতকারী নও, যার এবাদত আমি করি
৪- এবং আমি এবাদতকারী নই, যার এবাদত তোমরা কর।
৫- তোমরা এবাদতকারী নও, যার এবাদত আমি করি।
৬- তোমাদের কর্ম ও কর্মফল তোমাদের জন্যে এবং আমার কর্ম ও কর্মফল আমার জন্যে।
মওদুদি , কুতুব এবং আরো অনেক ইসলামি চিন্তাবিদ এ সম্পর্কে ভালো জানেন। তারা এই সুরাকে ধর্মীয় সহিষ্ণুতার প্রচার হিসাবে দেখেন না। মওদুদি তার তাফসিরে এই সুরা নিয়ে লিখেন,
“এই সুরাকে যদি এর নাযিলের পটভূমির সাথে মিলিয়ে দেখা হয় তাহলে দেখা যাবে এটা কোনভাবেই ধর্মীয় সহনশীলতার শিক্ষা দিচ্ছে না , যেমনটি আজকের দুনিয়ার অনেকে মনে করে থাকে। এতে বরং পোত্তলিকদের ধর্ম, ধর্মীয় আচার, তাদের দেবতা থেকে মুসলিমদের অবস্থানকে পরিষ্কারভাবে আলাদা করে দেখানো হয়েছে। এবং পৌত্তলিকদের ধর্ম ও ধর্মীয় আচার নিয়ে মুসলিমদের ঘৃণা এবং সম্পূর্ণ অসম্পৃক্ততা বর্ণনা করা হয়েছে এবং পরিষ্কার ভাবে অবিশ্বাসীদের বলে দেয়া হয়েছে কাফির এবং মুসলিমরা কখনোই কোন অবস্থাতেই এক হতে পারে না। মক্কার পৌত্তলিকরা মুসলিমদের প্রস্তাব দিয়েছিলো মুহাম্মদ যদি তাদের দেব দেবীদের স্বীকার করে নেয় তাহলে তারাও মুহাম্মদের আল্লাহকে স্বীকার করে নেবে। তাদের এই প্রস্তাবের জবাবে সুরাটি নাযিল হলেও, যেহেতু এটা কুরআনের অংশ এবং সেহেতু এর মাধ্যমে কেয়ামত পর্যন্ত মুসলিমদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে অবিশ্বাসীদের সাথে কোনপ্রকার সমঝোতায় না আসার জন্য। এর মাধ্যমে আল্লাহ মুসলিমদের নির্দেশ দিচ্ছেন মুসলিমরা কখনোই কথা বা কাজে অবিশ্বাসীদের সাথে মিলতে পারবে না এবং বিশ্বাসের ব্যাপারে বিন্দুমাত্র ছাড় বা সমঝোতা করতে পারবে না অবিশ্বাসীদের সাথে। এই কারণেই মূল প্রস্তাবণাকারী পৌত্তলিক এবং যাদের উদ্দেশ্যে এই সুরা নাযিল হয়েছে তাদের মৃত্যুর পরেও এই সুরা পঠিত হয়ে আসছে এবং এই সুরা নাযিলের সময় যেসব লোক অমুসলিম ছিলো কিন্তু পরে মুসলিম হয়েছে তারাও এই সুরা পাঠা করে আসছে। শতাব্দীর পর শতাব্দী পার হয়ে যাবার পরেও মুসলিমরা এই সুরা পাঠ করে আসছে কাফেরদের বিশ্বাস নিয়ে তাদের ঘৃণা প্রকাশে, এবং কাফেরদের সাথে তাদের যে কোন সম্পর্ক হতে পারে না এটা ইসলামিক বিশ্বাসের একটি নিরন্তর দাবী। ”
মদীনায় হিজরত
অনেকগুলো সন্তান সন্ততির দেখাশোনাতে এবং নিজ ধ্যানে মগ্ন স্বামীর সেবা করতে গিয়ে খাদিজা তার ব্যাবসায় মনোযোগ দিতে ব্যার্থ হন। ফসস্বরুপ খাদিজার মৃত্যুর পর পরিবারটি দরিদ্র হয়ে পড়ে। খাদিজার মৃত্যুর কিছুদিন পরেই মুহাম্মদের অন্য ভরসাস্থল তার চাচা আবু তালিবও মারা যান। এই দুই শক্তিমান ভরসাস্থল হারিয়ে , এবং মক্কার মানুষের কাছ থেকে পাত্তা না পেয়ে এবং মদীনার কিছু লোকের কাছে সহায়তার আশ্বাস পেয়ে মুহাম্মদ মদীনা চলে যাবার স্বিদ্ধান্ত নেয়। সে তার অনুসারীদের আগে চলে যাবার নির্দেশ দেয়। অনুসারীদের কেউ কেউ অতটা আগ্রহ দেখাচ্ছিলো না। মুহাম্মদ তাদের বলে যে, তারা যদি না যায় তাহলে তারা, “জাহান্নামবাসী হবে”।
মুহাম্মদ নিজে রয়ে গিয়েছিলো। তারপর এক রাতে সে দাবী করে আল্লাহ তার কাছে প্রকাশ করেছেন যে মক্কাবাসীরা তাকে আক্রমণ করতে চাইছে। সে তখন তার ঘনিষ্ঠ সঙ্গী আবু বকরকে বলে তার সাথে গোপনে সওয়ারি হওয়ার জন্য। নিচের আয়াতটিতে সেই বর্ণনা আছে ,
“আর কাফেরেরা যখন প্রতারণা করত আপনাকে বন্দী অথবা হত্যা করার উদ্দেশ্যে কিংবা আপনাকে বের করে দেয়ার জন্য তখন তারা যেমন ছলনা করত তেমনি, আল্লাহও ছলনা করতেন। বস্তুতঃ আল্লাহর ছলনা সবচেয়ে উত্তম।” কুরআন (৮-৩০)
এই আয়াত পড়লে দেখা যাচ্ছে আল্লাহ অনুমান করছেন মক্কাবাসীরা কি করতে চাচ্ছে (বন্দী করা, হত্যা করা, বের করে দেয়া), তিনি নিশ্চিত নন। সর্বজ্ঞানী আল্লাহ নিশ্চিতভাবে জানেন না ?! এই আয়াত কি আসলে প্যারানয়েড কোন মানুষের মানসিক অবস্থার পরিচায়ক না ? মুহাম্মদ মক্কায় তের বছর কাটিয়েছে মক্কার লোকজনকে বিরক্ত করে, তাদের ধর্ম এবং দেব দেবী নিয়ে উপহাস করে , ঠিক যেভাবে এখনকার মুসলিমরা অন্য ধর্ম নিয়ে করে। তবু তারা মুহাম্মদ কে সহ্য করে গেছে। মুহাম্মদের নিজের দাবী ছাড়া অন্য কোন ঐতিহাসিক প্রমাণ নেই যে মক্কার লোকজন তার ক্ষতি করার চেষ্টা করেছে।
মুসলিমদের নিজেদের রচিত ইতিহাসেই মুহাম্মদের উপর নির্যাতনের কোন শক্ত প্রমাণ নেই। কুরাইশদের বর্ষীয়ানরা মুহাম্মদের অপমানে ত্যাক্ত বিরক্ত হয়ে তার চাচা আবু তালেবের কাছে গিয়ে বলে , “তোমার ভাতিজা আমাদের দেব দেবী এবং ধর্ম নিয়ে খারাপ কথা বলে, আমাদের অপমান করে, হাঁদা বলে , আরো বলে যে আমরা এবং আমাদের পূর্বপুরুষরা সবাই জাহান্নামি। হয় তুমি এর বিচার কর (যেহেতু তুমি আমাদের পক্ষেরই লোক), অথবা ওর বিচারের ভার আমাদের উপর ছেড়ে দাও। (টীকা-৩০)
এইধরণের ভাষা এবং ভঙী নির্যাতনকারীর হতে পারে না। এটা বরং অনেকটা অনুরোধের মত এবং মুহাম্মদ কে সতর্ক করে দেয়া যে সে যাতে আর তাদের দেব দেবীদের অপমান না করে। এর সাথে মুহাম্মদের কিছু কার্টুন নিয়ে বর্তমান যুগের মুসলমানদের প্রতিক্রিয়াকে মিলিয়ে দেখুন। মুসলিমরা নৈরাজ্য করে, এবং অনেক দূরের দেশ যেমন নাইজেরিয়া, তুরস্ক এসব জায়গায় শত শত মানুষকে হত্যা করে, যাদের সাথে এইসব কার্টুনের কোন সম্পর্ক নাই। সেখানে মক্কার লোকজন তের বছর ধরে তাদের দেব-দেবী নিয়ে মুহাম্মদের নিরন্তর অপমানকে সহ্য করে গেছে।
যেই রাতে মুহাম্মদ তার বিশ্বস্ত সংগী আবু বকরকে নিয়ে মদীনার উদ্দেশ্যে রওনা হয়, সেই রাত থেকে ইসলামিক ক্যালেন্ডারের শুরু। মদীনার আরবরা মক্কার লোকজনের চাইতে কম সম্ভ্রান্ত ছিলো। আর মুহাম্মদের জন্য আরো ভালো ছিলো যে, তারা মুহাম্মদের চরিত্র এবং ইতিহাস নিয়ে কিছু জানতো না যা মক্কার লোকজন শিরায় শিরায় জানতো। এইসমস্ত কারণে মদীনার লোকজন মুহাম্মদের বাণী বিষয়ে একটু বেশি আগ্রহী ছিলো।
তখনকার আরবে মুহাম্মদ ই একমাত্র নবী দাবীকারী ছিলো না। তার সমসাময়িক আরো আরবের বিভিন্ন অঞ্চলে আরো কয়েকজন নবী দাবীকারীর কথা জানা যায়। সবচে বিখ্যাত ছিলো মুসাইলামা, যে মুহাম্মদেরও কয়েক বছর আগে থেকে তার নবী জীবনের শুরু করে। কিন্তু ইসলামের নবীর তুলনায় নিজ গোত্রের এবং নিজ শহরের লোকজনের কাছে সে গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছিলো। কৌতুহল-উদ্রেককরভাবে একজন নারী নবী দাবীদারের কথাও জানা যায়। সিজাহ নামের এক নারী নবীদার ছিলো যার মোটামুটি ভালোসংখ্যক অনুসারী ছিলো নিজ শহরে এবং নিজ গোত্রে। এই দুই নবীই একেশ্বরবাদের প্রচারক ছিলো। ইসলামপূর্ব আরবে নারীরা অনেকখানি সম্মানিত ছিলেন এবং তাদের অধিকারও আরো বেশি ছিলো, যা ইসলামের আগমনের পরে তারা আর কখনো পাননি আজ পর্যন্ত। এইসব নবীদের কেউই নিজ বাণী প্রচারের জন্য অথবা ডাকাতি করার জন্য সহিংসতার আশ্রয় নেয়নি। এদের কেউই ভূমি দখল করে সাম্রাজ্য তৈরী করতে চায়নি বরং বাইবেলের নবীদের ঐতিহ্য অনুসারে তাদের আশেপাশের লোকজনকে ঈশ্বরের উপাসনার জন্য ডাকতো। মুহাম্মদ ছিলো আরবের একমাত্র যোদ্ধা-নবী। উপরে বর্ণীত নবীরা কেউই একজন আরেকজনের শত্রু ছিলো না। তারা আধিপত্য বিস্তার নিয়ে কলহে জড়াতো না।
মদীনার আরবরা খুব দ্রুত মুহাম্মদ কে গ্রহন করে নেয়। তার বাণীর গভীরতার জন্য নয় , যা মূলত উপরে যেমন বলে হয়েছে, এই ছিলো যে সবাই যেন তাকে আল্লাহর মনোনীত নবী হিসাবে স্বীকার করে নেয় এবং তার আদেশ নিষেধ মেনে চলে, বরং মদীনার ইহুদিদের সাথে তাদের শত্রুতার জন্য। মদীনা পারতপক্ষে একটা ইহুদি শহর ছিলো। ইহুদিরা তাদের ধর্মবিশ্বাস অনুযায়ী নিজেদের ঈশ্বরের বাছাই করা গোষ্ঠী বলে মনে করতো। তারা আরবদের তুলনায় শিক্ষিত এবং সম্পদশালী হবার কারণে হিংসার পাত্র ছিলো। মদীনার প্রায় পুরোটাই ছিলো ইহুদিদের মালিকানায়। কিতাব আল আগানি (টীকা-৩২) অনুযায়ী মদীনায় প্রথম ইহুদি বসতি গড়ে উঠে বাইবেলের মোসেসের সময়ে। কিন্তু দশম শতাব্দীর একটি বই ফাতাহ আল বুলদান (the conquest of the towns) এ আল বালাদুরি লিখেন যে , ইহুদিদের মতে, ৫৮৭ সালের দিকে ব্যাবিলনের রাজা নেবুকাদনেজার যখন জেরুজালেম ধ্বংস করে ইহুদিদের বিশ্বময় ছড়িয়ে দেয় তখন মদীনাতে ইহুদিদের একটি দ্বিতীয় স্রোত এসে জমায়েত হয়। মদীনার ইহুদিরা ছিলো ব্যাবসায়ী, স্বর্ণকার, কামার, ক্ষুদ্রশিল্পী এবং চাষা আর আরবরা ছিলো মূলত শ্রমিক যারা ইহুদিদের বিভিন্ন ব্যাবসায় চাকুরি করতো। আরবরা মদীনায় অর্থনৈতিক উদ্বাস্তু হিসাবে আসে চতুর্থ শতাব্দীতে। ইসলামে দীক্ষা নেয়ার পরে তারা তাদের পালনকারী ইহুদিদের হত্যা করে এবং তাদের অর্থসম্পদ লুটে নেয় নিজেদের জন্য।
ইয়াথরিব, যা পরে মদীনা নামে পরিচিত হয় , সেখানে শক্ত অবস্থান গড়ে তোলার পরে আরবরা ইহুদিদের বসতিগুলোতে ডাকাতি এবং লুটপাট চালানো শুরু করে। যেকোন নির্যাতিত জনগোষ্ঠীর মত ইহুদিরাও বলতো যে যখন তাদের মসীহ (উদ্ধারকর্তা) উদয় হবেন তিনি তখন এইসবের প্রতিশোধ নিবেন। এই আরবরা যখন জানতে পারে যে মুহাম্মদ নিজেকে মোসেসে ভবিষ্যতবাণীর সেই মসীহ বলে দাবী করছে , তারা ভেবেছিলো মুহাম্মদ কে মেনে নিয়ে এবং ইসলামে দীক্ষা নিয়ে তারা ইহুদিদের হারিয়ে দিতে পারবে।
ইবনে ইসহাক লিখেন,
“আল্লাহ তখন ইসলামের সামনের পথ পরিষ্কার করলেন এইভাবে যে এই লোকেরা ইহুদিদের সাথে পাশাপাশি বাস করতো যারা (ইহুদিরা) ছিলো কিতাবের অনুসরণকারী এবং জ্ঞানী , অন্য দিকে তারা নিজেরা (আরবরা) ছিলো মূর্তিপূজারী এবং বহুঈশ্বরবাদী। আরবরা প্রায়ই ইহুদি এলাকাগুলোতে লুটপাটের চেষ্টা করতো এবং যখনি দুই দলের মধ্যে ঝামেলার তৈরী হতো তখন ইহুদিরা বলতো যে শীঘ্রই তাদের উদ্ধারকর্তা দুনিয়াতে আবির্ভুত হবেন এবং আমরা তার অনুসরণ করে তোমাদের হত্যা করবো। ফলত যখন আরবরা মুহাম্মদের কথা জানতে পারে তখন তারা ভেবে নিয়েছিলো এই নবীই নিশ্চয়ই সেই নবী যাদের ভয় ইহুদিরা তাদের এতদিন দেখিয়ে আসছে। আরবরা তাই ইহুদিদের আগেই ই নবীর সাথে জোট বাঁধতে চাচ্ছিলো। ”
হাস্যকর হচ্ছে ইহুদি ধর্ম এবং তাদের ত্রাণকর্তার আবির্ভাব সংক্রান্ত বিশ্বাসের কারণেই ইসলাম আরবে শক্তি অর্জন করে। আরবের ইহুদিদের গণহত্যার সূত্রপাত হয় তাদের নিজেদের বিশ্বাস থেকেই। এই বিশ্বাস না থাকলে যেকোন ছোটখাট কাল্টের মতই ইসলাম হয়ত খুব দ্রুতই নিশ্চিহ্ন হয়ে যেতো।
আবারো, মক্কাবাসীরা মুসলিমদের উপর নির্যাতন চালিয়েছে , মুহাম্মদের এই দাবীর স্বপক্ষে খুব জোরালো কোন ঐতিহাসিক প্রমাণ নেই। প্রশ্নাতীতভাবে মুসলিম এবং অনেক অমুসলিম ঐতিহাসিকও এই দাবীর প্রতিধ্বনি করে গেছেন। মুসলিমদের উপর রাগ এবং শত্রুতার কারণ ছিলো তাদের দেব দেবী নিয়ে মুহাম্মদের অপমানমূলক কথাবার্তার প্রতিক্রিয়া। মুসলিমরা অন্য ধর্মের লোকদের উপর যে রকমের নির্যাতন চালায় তার তুলনায় মক্কাবাসীর এই প্রতিক্রিয়া তেমন কিছুই না। মুহাম্মদ ই মুসলিমদের মক্কা ত্যাগের নির্দেশ দেয়, মক্কাবাসীরা নয়। সে মুসলিমদের লোভ দেখায় এইভাবে
“যারা নির্যাতিত হওয়ার পর আল্লাহর জন্যে গৃহত্যাগ করেছে, আমি অবশ্যই তাদেরকে দুনিয়াতে উত্তম আবাস দেব এবং পরকালের পুরস্কার তো সর্বাধিক; হায়! যদি তারা জানত। ” (কুরআন-১৬:৪১)
মদীনায় হিজরতকারীদের কোন আয় উপার্জন ছিলো না। মুহাম্মদ কিভাবে তাদেরকে প্রতিশ্রুত উত্তম আবাস দিবে , যারা তার আদেশে নিজেদের ঘর ছেড়ে এসেছে ? জীবনধারণের জন্য তারা মদীনার লোকজনের দয়া দাক্ষিন্যের উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ে। মুহাম্মদের প্রতিশ্রুতি পূরণের কোন সম্ভাবণা দেখা না যাওয়ায় তার বিশ্বাসযোগ্যতা কমতে থাকে। অনুসারীরা এই নিয়ে নিজেদের মধ্যে কানা-ঘুষা শুরু করে। কেউ কেউ দলত্যাগও করে। এই সবের উত্তরে মুহাম্মদ আরেকটি হুমকিমূলক আয়াত নিয়ে আসে।
“তারা চায় যে, তারা যেমন কাফের, তোমরাও তেমনি কাফের হয়ে যাও, যাতে তোমরা এবং তারা সব সমান হয়ে যাও। অতএব, তাদের মধ্যে কাউকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করো না, যে পর্যন্ত না তারা আল্লাহর পথে হিজরত করে চলে আসে। অতঃপর যদি তারা বিমুখ হয়, তবে তাদেরকে পাকড়াও কর এবং যেখানে পাও হত্যা কর। তাদের মধ্যে কাউকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করো না এবং সাহায্যকারী বানিও না। ”(কুরআন – ৪: ৮৯)
এই আয়াতে যেমন দেখা যাচ্ছে পৌত্তলিকদের সাথে কোনপ্রকার বন্ধুত্ব করতে নিষেধ করা হচ্ছে মুসলিমদের , এবং হুমকি দেয়া হচ্ছে যারা হিজরত করবেনা তাদেরকে ; এর সাথে মুহাম্মদের যে দাবী যে মক্কাবাসীরা মুসলিমদের তাড়িয়ে দিয়েছে তার সমন্বয় কিভাবে করা যায় ? এই আয়াতে দেখা যাচ্ছে যেসব মুসলিম দলত্যাগ করে মক্কা ফিরে যেতে চায় তাদেরকে হত্যার নির্দেশ দিচ্ছে মুহাম্মদ । গায়ানার জোন্সটাউনে বদ্ধ উম্মাদা যাজক ‘জিম জোন্স’ তার অনুসারীদের নির্দেশ দিয়েছিলো যারাই পালানোর চেষ্টা করবে তাদের গুলি করে মারার। মুহাম্মদের উপরোক্ত আয়াতের সাথে এই ঘটনা হুবহু একইরকমভাবে মিলে যায়। এর সবই ছিলো তার অনুসারীদের মধ্যে বিভক্তি তৈরী করে তাদেরকে আরো ভালোভাবে নিয়ন্ত্রণ এবং মগজধোলাই এর জন্য। নিজ আত্নীয় বন্ধুবান্ধব থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে কোন কাল্টে যে যোগ দেয় যেখানে সবাই মগজধোলাইকৃত, তার পক্ষে নেতার কতৃত্বের বিরুদ্ধে প্রশ্ন তোলা অসম্ভব হয়ে দাঁড়ায়।
বিভক্তি ও শাসন (Divide and Rule)
দলত্যাগকারীদের জন্য পরকালে কঠিন শাস্তির হুমকি দিলেও , মুহাম্মদকে তার অনুসারীদের জীবিকার উপায় খুঁজতে হয়েছিলো। এই সমস্যার সমাধানের সে তার অনুসারীদের মক্কার বাণিজ্য কাফেলাগুলোকে লুটের আদেশ দেয়। সে দাবী করে মক্কাবাসীরা যেহেতু তাদেরকে নিজ বাসভূমি থেকে তাড়িয়ে দিয়েছে সেহেতু তাদের কাফেলা লুট করাতে দোষের কিছু নেই।
“যুদ্ধে অনুমতি দেয়া হল তাদেরকে যাদের সাথে কাফেররা যুদ্ধ করে; কারণ তাদের প্রতি অত্যাচার করা হয়েছে। আল্লাহ তাদেরকে সাহায্য করতে অবশ্যই সক্ষম। যাদেরকে তাদের ঘর-বাড়ী থেকে অন্যায়ভাবে বহিস্কার করা হয়েছে শুধু এই অপরাধে যে, তারা বলে আমাদের পালনকর্তা আল্লাহ।” (কুরআন ২২: ৩৯-৪০)
ইত্যবসরে সে তার অনুসারীদের কাফেরদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে উৎসাহিত করতে অনেক আয়াত নাযেল করে।
“হে নবী, আপনি মুসলমানগণকে উৎসাহিত করুন জেহাদের জন্য। তোমাদের মধ্যে যদি বিশ জন দৃঢ়পদ ব্যক্তি থাকে, তবে জয়ী হবে দু’শর মোকাবেলায়। আর যদি তোমাদের মধ্যে থাকে একশ লোক, তবে জয়ী হবে হাজার কাফেরের উপর থেকে তার কারণ ওরা জ্ঞানহীন।” (কুরআন ৮ : ৬৫)
মুহাম্মদ এসব আক্রমণকে আজকের দুনিয়ায় যাকে ভিক্টিম কার্ড বলা হয় , সে কৌশলে জায়েজ করার চেষ্টা করে। মুহাম্মদের অনুসারীরাও বর্তমানেও তাই করছে। সে দাবী করে কাফিররা যমুসলিমদের নির্যাতন করেছে এবং তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চাপিয়ে দিয়েছে। সত্য হচ্ছে যে, মুহাম্মদ নিজেই এইসব আক্রমণের শুরু করে , মক্কার বাণিজ্য কাফেলাগুলোকে আক্রমণ এবং হত্যার মাধ্যমে। তার কথা শুনার এবং তার আদেশ পালন করে আক্রমণ করার মত যথেষ্ঠ সংখ্যক অনুসারী পাওয়ামাত্রই সে এসব শুরু করে।
এখানে গোঁজামিল স্পষ্ট। একদিকে মুহাম্মদ তার অনুসারীদের নির্দেশ দিচ্ছে মক্কা ছেড়ে যাবার জন্য এবং যারা যেতে চায় না তাদেরকে ইহকালে হত্যা আর পরকালে কঠিন দোযখের হুমকি দিচ্ছে , আবার অন্যদিকে দাবী করছে কাফিররা তাদের মক্কা থেকে তাড়িয়েছে, এবং তার অনুসারীদের উপর যুদ্ধ ‘চাপিয়ে দেয়া হয়েছে’।
আজকের দুনিয়ার মুসলিমরাও ঠিক এই কাজ করে থাকে। তারা অমুসলিমদের নির্যাতন করছে, তাদের সবসময় সন্ত্রাসের মধ্যে রাখছে , সংখ্যালঘুদের উপর পরিকল্পিত অত্যাচার চালিয়ে যাচ্ছে আবার অন্যদিকে দাবী করছে তারা নিজেরাই আসলে নির্যাতিত গোষ্ঠী। এই মিথ্যা নির্যাতিত অবস্থার দাবী দিয়ে তারা তাদের নির্যাতনের শিকার গোষ্ঠীর উপর নিজেদের হামলাকে জায়েজ করার চেষ্টা করে।
আরবি একটি প্রবচন আছে এরকম, ‘Darabani, wa baka; Sabaqani, wa’shtaka’। বাংলা অর্থ মোটামুটি এরকম, ‘সে আমাকে আঘাত করলো তারপর নিজেই কান্না শুরু করলো, আর আগে আগে গিয়ে সবাইকে বলে বেড়াচ্ছে আমি নাকি তাকে মেরেছি’। মুহাম্মদের কার্যপদ্ধতি এই প্রবচনের সাথে হুবহু মিলে যায়। তার অনুসারীরা এই একই নোংরা খেলা এখনো চালিয়ে যাচ্ছে। এই কৌশল মুহাম্মদের জন্য অভাবনীয় সাফল্য নিয়ে আসে। সে ভাইয়ের বিরুদ্ধে ভাইকে, পিতার বিরুদ্ধে পুত্রকে লেলিয়ে দিয়ে, গোত্র-গোত্রে তৈরী করা সন্ধি ভেঙে সামাজিক শৃংখলাকে তছনছ করে দেয়। এই কৌশল দিয়ে সে শেষ পর্যন্ত পুরো আরব উপদ্বীপকে নিজের শাসনের অধীনে নিয়ে আসে।
এমন মনে করার কোন কারণ নেই যে আরবরা জন্মগতভাবেই নির্বোধ। ইসলামে দীক্ষা নেয়ার পর পাশ্চাত্যের লোকজনও এই একই আচরণ শুরু করে , যা চৌদ্দশ বছর আগের আরবরা করেছিলো। জন ওয়াকার লিন্ড (John Walker Lindh) ইসলামে ধর্মান্তরিত হয়ে আফগানিস্তানে চলে যায় আমেরিকার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্য। জোসেফ কোহেন (Joseph Cohen) ছিলো কট্টর অর্থোডক্স ইহুদি আর আজ সে বলে বেড়ায় ইসরায়েলিদের এমনকি তাদের শিশুদেরও হত্যা করা বৈধ। (টীকা-৩৫)। বিবিসির সাংবাদিক Yvonne Ridley যে ২০০১ সালে গোপনে আফগানিস্তানে প্রবেশ করে এবং পরে তালিবানদের হাতে ধরা পরে এবং বন্দী জীবনের এক পর্যায়ে ইসলামে ধর্মান্তরিত হয়, সে এখন তার নিজের দেশকে মনে করে পৃথিবীর তৃতীয় সর্বাধিক ঘৃণীত দেশ (আমেরিকা এবং ইসরায়েলের পরে)। সে এখন আত্নঘাতী বোমা হামলাকে সমর্থণ করে। কুখ্যাত সন্ত্রাসী Musab al-Zarqawi ,যে ইরাকে এক ধ্বংসাত্নক অভিযানে হাজার হাজার ইরাকিকে হত্যা করে এবং জর্ডানের এক বিয়েবাড়ীতে বোমা হামলা চালিয়ে ৬০ জনকে হত্যা এবং ১১৫ জনকে আহত করে , তার দৃষ্টিতে একজন হিরো। বেসলানের স্কুলে গণহত্যা এবং মস্কোর থিয়েটার জিম্মি সংকটের মূল পরিকল্পণাকারী চেচেন সন্ত্রাসী Shamil Basayev তার দৃষ্টিতে এক শহীদ যার জন্য জান্নাতে সুনির্দিষ্ট স্থান বরাদ্দ আছে। ইসলাম একটি কাল্ট। কাল্টগুলো সাধারণ মানুষকে জোম্বি এবং পশুতে পরিণত করে।
জান্নাতের পুরষ্কারের সুসংবাদ
কুরআনের বেশকিছু আয়াতে মুসলিমদের নির্দোষ জনগোষ্ঠীর উপর হামলা চালিয়ে লুট করতে উৎসাহ দেয়া হয়েছে দুনিয়া ও আখেরাতের কামিয়াবির জন্য। “আল্লাহ তোমাদেরকে বিপুল পরিমাণ যুদ্ধলব্ধ সম্পদের ওয়াদা দিয়েছেন, যা তোমরা লাভ করবে” (কুরআন ৪৮ : ২০)। যেসব অনুসারীরা এইসব কাজ করে নিজেদের ভিতর বিবেকের দংশণে ভুগতো, তাদের বিবেককে প্রশমনের জন্য মুহাম্মদ তার আল্লার মুখ থেকে আয়াত নিয়ে আসে, “গণিমতের মাল যা পাওয়া যায় তা ভোগ করো, এগুলো উত্তম এবং বৈধ” (কুরআন ৮ : ৬৯, আরো দেখা যেতে পারে কুরআন ৮ : ৭৪)
পৃথিবীর ইতিহাসে অনেক অনেক মুসলিম ধ্বংসযজ্ঞের উৎস এই আয়াত এবং আর কাছাকাছি অর্থের আয়াতসমূহ। তৈমুর লং (১৩৩৬-১৪০৫) ছিলো এক বর্বর এবং নৃশংস শাসক যে ডাকাতির মাধ্যমে নিজের এক সাম্রাজ্য গড়ে তুলেছিলো। তার আত্নজীবনিমূলক বই The History of My Expeditions anaginst India এ সে লিখে,
“আমার হিন্দুস্তানে আসা এবং এতসব কঠোর পরিশ্রম ও কষ্ট করার মূল উদ্দেশ্য ছিলো দুটি। প্রথমটি হচ্ছে ইসলামের শত্রু কাফেরদের বিরুদ্ধে জিহাদ করে পরকালের দুনিয়ার জন্য পাথেয় সংগ্রহ। দ্বিতীয় উদ্দেশ্যটি দুনিয়াবি, ইসলামের পথের সৈনিকরা যাতে কাফেরদের সম্পদ লুটপাট করে নিজেদের জীবিকার ব্যাবস্থা করতে পারে। আল্লাহর রাস্তায় যারা যুদ্ধ করে তাদের জন্য যুদ্ধলব্ধ লুটের মাল নিজের মায়ের দুধের মতই হালাল, এই সম্পদ ভোগ করা বৈধ এবং উত্তম কাজ।”
মুহাম্মদের যে সত্তর বা আশিজন অনুসারী তার সাথে হিজরত করে, যদি ধরেও নিই যে তাদেরকে মক্কাবাসী তাড়িয়ে দিয়েছে , তাতেও কি মক্কার বাণিজ্য কাফেলার উপর হামলা বৈধ হয়ে যায় ? বাণিজ্য কাফেলাতে কেবল যারা মুসলিমদের তাড়িয়ে দিয়েছিলো তাদের জিনিসপত্রই ছিলো এমন ভাবার কোন কারণ নাই। কেউ যদি কোন শহরে কি নির্যাতনের শিকার হয়, ঐ শহরের যেকোন লোকের উপর প্রতিশোধ নেয়া কি তাতে বৈধ হয়ে যায় ? মুসলিমরা যখন বোমা হামলা করে নিরপরাধ লোকজনকে হত্যা করে তখন তারা একই যুক্তি দেখায়। তারা যদি মনে করে কোন একটা দেশ আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে তাদের বিরুদ্ধে কাজ করছে তার প্রতিক্রিয়া তারা সেদেশের যেকোন লোকের উপর আক্রমণ করাকে বৈধ বলে মনে করে। মুসলিমদের যেসব আচরণ আজকের দুনিয়ায় উদ্ভট মনে হয় তার সবকিছুরই উত্তর পাওয়া যাবে মুহাম্মদ যা করেছিলো তা বিবেচনা করলে।
কুরআনের সূরা ২২ এর আয়াত ৩৯ এ আল্লাহ মুসলিমদের যুদ্ধের অনুমতি দেন। ওসামা বিন লাদেন আমেরিকার উদ্দেশ্য লেখা এক চিঠি শুরু করেছিলো ঠিক এই আয়াতটি দিয়েই। এতসব দেখেও কি বলা যায় যে ইসলামিক সন্ত্রাসের সাথে ইসলামের কোন সম্পর্ক নাই ?
সহিংসতার উস্কানি
মদীনাতে মক্কা থেকে হিজরত করে আসা লোকের সংখ্যা ছিলো খুবই নগণ্য। সফলতার সাথে লুটপাট এবং ডাকাতির জন্য মদীনার নতুন ধর্মান্তরিত আনসারদের (সাহায্যকারী) সাহায্য মুহাম্মদের জন্য দরকারী ছিলো। কিন্তু মদীনার লোকজন বাণিজ্য কাফেলা লুট করা বা যুদ্ধ করার জন্য ইসলামে যোগ দেয়নি। আল্লাহতে বিশ্বাস এক কথা আর ডাকাতি, লুটপাট , মানুষ খুন করা এগুলো সম্পূর্ণ ভিন্ন ব্যাপার। মুহাম্মদের আগে আরবদের মধ্যে ধর্মীয় যুদ্ধের ধারণা ছিলো না। এমনকি আজকের দুনিয়াতেও অনেক অনেক মুসলিম আছে যারা আল্লাহতে ঠিকই বিশ্বাস করে কিন্তু ধর্মের জন্য যুদ্ধ এবং খুনাখুনিতে জড়াতে চায় না। এইধরণের লোকজনকে যুদ্ধে উদ্বুদ্ধ করার জন্য মুহাম্মদ আল্লাহর মুখ থেকে আয়াত নিয়ে আসে যে,
“তোমাদের উপর যুদ্ধ ফরয করা হয়েছে, অথচ তা তোমাদের কাছে অপছন্দনীয়। পক্ষান্তরে তোমাদের কাছে হয়তো কোন একটা বিষয় পছন্দসই নয়, অথচ তা তোমাদের জন্য কল্যাণকর। আর হয়তোবা কোন একটি বিষয় তোমাদের কাছে পছন্দনীয় অথচ তোমাদের জন্যে অকল্যাণকর। বস্তুতঃ আল্লাহই জানেন, তোমরা জান না। ” (কুরআন ২: ২১৬)
মুহাম্মদের চেষ্টাতে খুব শীঘ্রই সফলতা আসে। গণিমতের মাল এবং পরকালের পুরষ্কারের লোভে মদীনার মুসলিমরা দ্রুতই ডাকাতি এবং লুটপাটে যোগ দেয়। মুহাম্মদের সৈন্যদল বড় হতে শুরু করলে আর তার উচ্চাকাংখা জাগতে শুরু করলে এই ডাকাতরা নিজেদের প্রাতিষ্ঠানীক পর্যায়ে উন্নীত করার কথা ভাবা শুরু করে। মুহাম্মদ তার অনুসারীদের কেবল আল্লাহর রাস্তায় যুদ্ধ ঘোষণা করার উৎসাহ নয় বরং এসব যুদ্ধের খরচের ভার বহন করার জন্যও চাপ দিতে থাকে।
“আর ব্যয় কর আল্লাহর পথে, তবে নিজের জীবনকে ধ্বংসের সম্মুখীন করো না। আর মানুষের প্রতি অনুগ্রহ কর। আল্লাহ অনুগ্রহকারীদেরকে ভালবাসেন। ” (কুরআন ২ : ১৯৫)
এখানে খেয়াল করে দেখা যাক মুহাম্মদ কিভাবে ‘অনুগ্রহ’ করাকে লুটপাট, সন্ত্রাস এবং খুনের সাথে সম্পৃক্ত করেছে। এই বিকৃত নৈতিকতা দিয়েই মুসলিমরা নিজেদের বিবেকের বিচারের বিরুদ্ধে গিয়ে অন্যান্য জনগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে ‘অবস্থা বুঝে ব্যাবস্থা’ ধরণের সমাজবিরোধী নীতির আশ্রয় নেই। যেই নীতিই তার আবিষ্কার করুক না কেন সেটা সবসময়ই তাদের নিজেদের পক্ষে রায় দেয়। যেই অবস্থাতে মুসলিমদের উপকার হয় সেটাকে ধরা হচ্ছে ভালো। মুহাম্মদের যুদ্ধে সাহায্য করা এবং ইসলামের জন্য সন্ত্রাস ও লুটপাট করাকে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের উপায় বলে মুহাম্মদ ে তার অনুসারীদের বিশ্বাস করাতে সক্ষম হয়।
আজকের দুনিয়ায় যেসব মুসলিম সরাসরি জিহাদে যেতে পারে না , তারা নিজেদের সম্পদ ‘দান’ করে। এই ‘দানের’ টাকায় হাসপাতাল, এতিমখানা, স্কুল, বৃদ্ধাশ্রম এসব গড়ে উঠে না। বরং এই টাকা ব্যাবহার হয় ইসলামের প্রসারে, মাদ্রাসা তৈরীতে, সন্ত্রাসীদের প্রশিক্ষণে ও জিহাদের অর্থায়নে। ইসলামী দানের টাকা কেবলমাত্র ঐসবক্ষেত্রেই গরীবদের সাহায্যে ব্যায় হয় যখন সেই গরীবদের রাজনৈতিক কাজে লাগানো যায়। এর একটা ভালো উদাহরণ হচ্ছে ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানে যে বিপুল পরিমাণ টাকা লেবাননের হিজবুল্লাহর পিছনে ব্যায় করে। ইরানের সাধারণ জনগন তীব্র দারিদ্রের মধ্যে বাস করে। অল্পকিছু সৌভাগ্যবান যাদের চাকুরি আছে তাদের গড়পড়তা মাসিক আয় মাত্র ১০০ আমেরিকান ডলারের মত। খাদ্য, বাসস্থান, চাকুরির প্রয়োজন তাদের অনেক বেশী। তাহলে কেন তাদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে লেবানিজদের দান করা ? কারণ হচ্ছে লেবানিজদের কাছে ইসলামকে লোভনীয় করে তাদের ইসরায়েলের বিরুদ্ধে যুদ্ধে ব্যাবহার করা। যুদ্ধের জন্য যখন যথেষ্ঠ পরিমাণ অর্থের যোগান হত না তখন মুহাম্মদ তার অনুসারীদের হুমকি দিতো,
“তোমাদেরকে আল্লাহর পথে ব্যয় করতে কিসে বাধা দেয়, যখন আল্লাহই নভোমন্ডল ও ভূমন্ডলের উত্তরাধিকারী? তোমাদের মধ্যে যে মক্কা বিজয়ের পূর্বে ব্যয় করেছে ও জেহাদ করেছে, সে সমান নয়। এরূপ লোকদের মর্যদা বড় তাদের অপেক্ষা, যার পরে ব্যয় করেছে ও জেহাদ করেছে। তবে আল্লাহ উভয়কে কল্যাণের ওয়াদা দিয়েছেন। তোমরা যা কর, আল্লাহ সে সম্পর্কে সম্যক জ্ঞাত। ”(কুরআন ৫৭:১০)
সে ধূর্ততার সাথে যুদ্ধের জন্য মুসলিমদের দানকে, আল্লাহকে দেয়া “ধার” এর সাথে তুলনা করে , এবং তাদেরকে ‘সম্মানিত পুরষ্কারের’ প্রতিশ্রুতি দেয়।
“কে সেই ব্যক্তি, যে আল্লাহকে উত্তম ধার দিবে, এরপর তিনি তার জন্যে তা বহুগুণে বৃদ্ধি করবেন এবং তার জন্যে রয়েছে সম্মানিত পুরস্কার।” (কুরআন ৫৭ : ১১)
একদিকে মুহাম্মদ তার আল্লাহকে দিয়ে বলাচ্ছে যারা তার যুদ্ধের খরচ যোগাচ্ছে তারা কত মহান এবং তাদের কত বিশাল প্রতিদান হবে আল্লাহর কাছে, অন্যদিকে সে চাইতো না তার অনুসারীরা নিজেদের দান এবং ত্যাগ নিয়ে গর্ব করুক। তার কথা ছিলো ইসলামের জন্য আত্নত্যাগকে নিজের মহানুভবতা হিসাবে নয় বরং দিতে পারাকে নিজের সৌভাগ্য বলে মনে করতে হবে। অনুসারীদের বরং মুহাম্মদের খেদমত করার সুযোগ পেয়ে কৃতজ্ঞ থাকতে হবে, মুহাম্মদ কে নয়।
“যারা স্বীয় ধন সম্পদ আল্লাহর রাস্তায় ব্যয় করে, এরপর ব্যয় করার পর সে অনুগ্রহের কথা প্রকাশ করে না এবং কষ্টও দেয় না, তাদেরই জন্যে তাদের পালনকর্তার কাছে রয়েছে পুরস্কার এবং তাদের কোন আশংকা নেই, তারা চিন্তিতও হবে না।” (কুরআন ২ : ২৬২)
অনুসারীদের যুদ্ধে প্ররোচিত করার পর ও কাফেরদের গর্দান ফেলে দেয়ার নির্দেশ দেয়ার পর সে তাদের পুরষ্কারের কথা বর্ণনা করে
“অতঃপর যখন তোমরা কাফেরদের সাথে যুদ্ধে অবতীর্ণ হও, তখন তাদের গর্দার মার, অবশেষে যখন তাদেরকে পূর্ণরূপে পরাভূত কর তখন তাদেরকে শক্ত করে বেধে ফেল। অতঃপর হয় তাদের প্রতি অনুগ্রহ কর, না হয় তাদের নিকট হতে মুক্তিপণ লও। তোমরা যুদ্ধ চালিয়ে যাবে যে পর্যন্ত না শত্রুপক্ষ অস্ত্র সমর্পণ করবে! একথা শুনলে। আল্লাহ ইচ্ছা করলে তাদের কাছ থেকে প্রতিশোধ নিতে পারতেন। কিন্তু তিনি তোমাদের কতককে কতকের দ্বারা পরীক্ষা করতে চান। যারা আল্লাহর পথে শহীদ হয়, আল্লাহ কখনই তাদের কর্ম বিনষ্ট করবেন না। ” (কুরআন ৪৭ : ৪)
অন্য কথায় বলতে গেলে আল্লাহ চাইলে নিজেই হত্যা করতে পারেন কাফেরদের, কিন্তু মুসলিমদের দিয়ে হত্যা করাচ্ছেন কেবল তাদের ঈমানের পরীক্ষা নেয়ার জন্য। এই আচরণ থেকে আল্লাহকে মনে হয় এক্টা মাফিয়া গডফাদার , গুন্ডা দলের নেতার মত , যে অধীনস্তদের বাধ্যতার পরীক্ষা নেয় তাদের দিয়ে অন্য কাউকে খুন করানোর মাধ্যমে। ইসলামে মুমিনের ঈমানের পরীক্ষা নেয়া হয় তাদের রক্তপিপাসা ও খুন করার ইচ্ছার মাধ্যমে। এরপর আল্লাহ বা আল্লাহর নাম দিয়ে মুহাম্মদ বলে,
“আর প্রস্তুত কর তাদের সাথে যুদ্ধের জন্য যাই কিছু সংগ্রহ করতে পার নিজের শক্তি সামর্থ্যের মধ্যে থেকে এবং পালিত ঘোড়া থেকে, যেন প্রভাব পড়ে আল্লাহর শুত্রুদের উপর এবং তোমাদের শত্রুদের উপর আর তাদেরকে ছাড়া অন্যান্যদের উপর ও যাদেরকে তোমরা জান না; আল্লাহ তাদেরকে চেনেন। বস্তুতঃ যা কিছু তোমরা ব্যয় করবে আল্লাহর রাহে, তা তোমরা পরিপূর্ণভাবে ফিরে পাবে এবং তোমাদের কোন হক অপূর্ণ থাকবে না।” (কুরআন ৮ : ৬০)
যারা অবিশ্বাসীদের সাথে যুদ্ধে নিজের শরীর দিয়ে অথবা সম্পদ দিয়ে সাহায্য করবে এবং মুহাম্মদ কে আল্লাহর রাসুল হিসাবে মেনে নিবে তারা পরকালে বিপুল পরিমাণ পুরষ্কার পাবে বলে মুহাম্মদ তার অনুসারীদের ফাঁকা প্রতিশ্রুতি দেয়। এইসব পরকালের পুরষ্কার বলে এগুলোর বর্ণনা দিতে গিয়ে সে উদারতায় অতিরঞ্জনে কোনরকম কার্পণ্য করেনি। সে মুমিনদের পরকালে সবরকমের ইচ্ছার পূরণ হবে এবং তারা অনন্ত সুখের রতিক্রিয়ায় লিপ্ত থাকতে বলে সে দাবী করে। যারা যুদ্ধের খরচ যোগাতে কার্পণ্য করেছে তাদেরকে সে পরকালের কঠিন শাস্তির হুমকি দেখায়।
“মুমিনগণ, আমি কি তোমাদেরকে এমন এক বানিজ্যের সন্ধান দিব, যা তোমাদেরকে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি থেকে মুক্তি দেবে? তা এই যে, তোমরা আল্লাহ ও তাঁর রসূলের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করবে এবং আল্লাহর পথে নিজেদের ধন-সম্পদ ও জীবনপণ করে জেহাদ করবে। এটাই তোমাদের জন্যে উত্তম; যদি তোমরা বোঝ। তিনি তোমাদের পাপরাশি ক্ষমা করবেন এবং এমন জান্নাতে দাখিল করবেন, যার পাদদেশে নদী প্রবাহিত এবং বসবাসের জান্নাতে উত্তম বাসগৃহে। এটা মহাসাফল্য। ” (কুরআন ৬১ : ১০-১২)
“তারা তথায় রেশমের আস্তরবিশিষ্ট বিছানায় হেলান দিয়ে বসবে। উভয় উদ্যানের ফল তাদের নিকট ঝুলবে। অতএব, তোমরা উভয়ে তোমাদের পালনকর্তার কোন কোন অবদানকে অস্বীকার করবে? তথায় থাকবে আনতনয়ন রমনীগন, কোন জিন ও মানব পূর্বে যাদের ব্যবহার করেনি। অতএব, তোমরা উভয়ে তোমাদের পালনকর্তার কোন কোন অবদানকে অস্বীকার করবে?প্রবাল ও পদ্মরাগ সদৃশ রমণীগণ। ”(কুরআন ৫৫ : ৫৪-৫৮)
“পরহেযগারদের জন্যে রয়েছে সাফল্য। উদ্যান, আঙ্গুর, সমবয়স্কা, পূর্ণযৌবনা তরুণী। এবং পূর্ণ পানপাত্র। ”(কুরআন ৭৮ : ৩১-৩৪)
“তোমরা আল্লাহ ও তাঁর রসূলের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন কর এবং তিনি তোমাদেরকে যার উত্তরাধিকারী করেছেন, তা থেকে ব্যয় কর। অতএব, তোমাদের মধ্যে যারা বিশ্বাস স্থাপন করে ও ব্যয় করে, তাদের জন্যে রয়েছে মহাপুরস্কার। ” (কুরআন ৫৭ : ৭)
এই আয়াতগুলো এবং এগুলোর কাছাকাছি আরো কুরআনের আয়াতগুলো দেখলে সহজেই বুঝা যাবে ইসলামিক দান কেন প্রায়ই সন্ত্রাসী সংঘটনগুলোর পিছনে ব্যায় হয় (টীকা-৪১)। আপনার আমার মনে হতেই পারে দয়া দাক্ষিণ্যের দান এবং সন্ত্রাস দুইটা খুবই বিপরীত ধরণের ধারণা কিন্তু এইধরণের পার্থক্য মুসলিমের চোখে ধরা পড়ে না। ইসলামিক দানের উদ্দেশ্য হচ্ছে ইসলাম এবং জিহাদের প্রসার। আমাদের কাছে একাজ সন্ত্রাস, কিন্তু মুসলিমের কাছে এটা পবিত্র যুদ্ধ, আল্লহর হক এবং আল্লাহর চোখে সবচে প্রিয় কাজ।
এভাবে ইসলামের জন্য যুদ্ধ করা সকল মুসলিমের জন্য অবশ্যপালনীয় কর্তব্য হয়ে দাঁড়ায়। মুহাম্মদ মুহাজিরদের তাদের ফেলে আসা স্বজনদের বিরুদ্ধে লেলিয়ে দেয়, যারা তাদের উপর নির্যাতন চালিয়েছে বলে মুহাম্মদ দাবী করে, তাদের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নেয়ার জন্য।
“আর তাদের সাথে যুদ্ধ করতে থাক যতক্ষণ না ভ্রান্তি শেষ হয়ে যায়; এবং আল্লাহর সমস্ত হুকুম প্রতিষ্ঠিত হয়ে যায়। তারপর যদি তারা বিরত হয়ে যায়, তবে আল্লাহ তাদের কার্যকলাপ লক্ষ্য করেন। ” (কুরআন ৮ : ৩৯)
যখন তার কিছু অনুসারী যুদ্ধ করতে ইতস্তত বোধ করে তখনি সে সুযোগমত আল্লাহর কাছ থেকে নতুন নতুন হুমকি নিয়ে আসে। আল্লাহ তাদের অবাধ্যতার বিরুদ্ধে বিভিন্নরকমের হুশিয়ারীর আয়াত পাঠাতে থাকেন।
“যারা মুমিন, তারা বলেঃ একটি সূরা নাযিল হয় না কেন? অতঃপর যখন কোন দ্ব্যর্থহীন সূরা নাযিল হয় এবং তাতে জেহাদের উল্লেখ করা হয়, তখন যাদের অন্তরে রোগ আছে, আপনি তাদেরকে মৃত্যুভয়ে মূর্ছাপ্রাপ্ত মানুষের মত আপনার দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখবেন। সুতরাং ধ্বংস তাদের জন্যে।” (কুরআন ৪৭ : ২০ )
এই আয়াতগুলো থেকে আমরা স্পষ্টভাবে বুঝতে পারি ইসলাম একটি যুদ্ধবাজ ধর্ম। যতদিন পর্যন্ত মানুষ ইসলামে বিশ্বাস করবে এবং কুরআনকে আল্লাহর বাণী বলে মনে করবে , ততদিন পর্যন্ত ইসলামি সন্ত্রাস চলতে থাকবে। ইসলামের ভিতরে থেকে যারা সংস্কার, সহনশীলতা এবং সভ্য আলোচনার কথা বলে তাদেরকে খুব সহজেই কুরআন দিয়ে চুপ করিয়ে দেয়া যায় কারণ এই কুরআনেরই অনেক অনেক আয়াত আছে যেগুলো বিশ্বাসীদের নির্দেশ দেয় অবিশ্বাসীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণার জন্য।
“আল্লাহর রাহে যুদ্ধ করতে থাকুন, আপনি নিজের সত্তা ব্যতীত অন্য কোন বিষয়ের যিম্মাদার নন! আর আপনি মুসলমানদেরকে উৎসাহিত করতে থাকুন। শীঘ্রই আল্লাহ কাফেরদের শক্তি-সামর্থ খর্ব করে দেবেন। আর আল্লাহ শক্তি-সামর্থের দিক দিয়ে অত্যন্ত কঠোর এবং কঠিন শাস্তিদাতা। ” (কুরআন ৪ : ৮৪)
এবং এই যুদ্ধে তাদের সফলতার নিশ্চয়তা দেয় :
“কিছুতেই আল্লাহ কাফেরদেরকে মুসলমানদের উপর বিজয় দান করবেন না। ” (কুরআন ৪ : ১৪১ শেষাংশ )
আর বেহেশতি পুরষ্কারের প্রতিশ্রুতি দেয় :
“যারা ঈমান এনেছে, দেশ ত্যাগ করেছে এবং আল্লাহর রাহে নিজেদের জান ও মাল দিয়ে জেহাদ করেছে, তাদের বড় মর্যাদা রয়েছে আল্লাহর কাছে আর তারাই সফলকাম। ” (কুরআন ৯ : ২০) (টীকা – ৪২ )
সব জায়গার তথাকথিত ইসলামি চিন্তাবিদরা সন্ত্রাসের দিকে ধাবিত করার এই কথার প্রতিধ্বনি করে। সৌদি আরবের সর্বোচ্চ ধর্মীয় গুরু , গ্রান্ড মুফতি , জিহাদের স্পৃহাকে বলে খোদার দেয়া অধিকার বলে। সৌদির রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা SPA তে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে শেখ আবদুল আজিজ আল শেখ বলে, “ ইসলামের প্রচার অনেকগুলো ধাপের মধ্য দিয়ে গেছে, প্রথমে গোপনে পরে প্রকাশ্যে , মক্কায় ও মদীনাতে, ইসলামের সবচে পবিত্র স্থানদ্বয়ে”। আল্লাহ এর পরে বিশ্বাসীদের অনুমতি দেন যুদ্ধ করার জন্য, যারা তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে, এটা খোদাপ্রদত্ত অধিকার। এটা খুবই যৌক্তিক এবং আল্লাহর কাছে এটা অপছন্দনীয় নয়” (টীকা -৪৩)
সৌদি আরবের সবচে বয়োজেষ্ঠ্য ধর্মীয় গুরু ব্যাখ্যা দেয় এইভাবে , “যুদ্ধ মুহাম্মদের একমাত্র পথ ছিলো না, সে অবিশ্বাসীদের তিনটি অপশন দিয়েছিলো : হয় ইসলাম গ্রহণ কর, না হয় আত্নসমর্পণ করে জিযিয়া কর দাও। এই কর দিলে তারা তাদের নিজের জায়গাতে মুসলিমদের অধীনে থেকে নিজেদের ধর্মপালন করার সুযোগ পেত(টীকা-৪৪)। তৃতীয় অপশন ছিলো যুদ্ধ”।
গ্রান্ড মুফতির কথা ঠিকই আছে। অমুসলিমদের উপর সহিংসতা আসলেই শেষ অপশন ছিলো, যদি তারা ইসলাম গ্রহণ করতে অথবা ইসলামের সৈনিকদের চাঁদা দিতে অস্বীকার করতো। এটা মুহাম্মদের এমন কোন মহানুভবতা না। লোকজন যদি শান্তিপূর্ণভাবে নিজেদের সম্পদ দিয়ে দেয় তাহলে খুব কম সংখ্যক ডাকাত লুটেরাই রক্তপাত পর্যন্ত যায়। অপরাধী সাধারণত বাধা পেলেই সহিংসতার অপশন বেছে নেয়। পাকিস্তানের সবচে খ্যাতিমান ইসলামি চিন্তাবিদ জাভেদ আহমেদ গামদির সাথে এক ইন্টারনেট বিতর্কে সে তার ছাত্র খালিদ জহিরের মাধ্যমে বলে, “ কুরআনে যাদের হত্যার কথা বলা হয়েছে তাদের যারা খুনের দায়ে দোষী অথবা সমাজে হানাহানি রাহাজানি করার দোষে দোষী অথবা যাদের এ পৃথিবীতে বেঁচে থাকার কোন অধিকার নাই কারণ তারা আল্লাহর কাছ থেকে পরিষ্কার বাণী পেয়েও ইসলামে দীক্ষিত হয়নি।” গামদি একজন মডারেট মুসলিম। কিন্তু সে তার ধর্ম সম্পর্কে খুব ভালো করেই জানে। সে জানে যে যারা ইসলামকে অস্বীকার করে তাদের “পৃথিবীতে বেঁচে থাকার কোন অধিকার নাই” , তাই তাদের অবশ্যই খুন করতে হবে। (টীকা -৪৫ )
ডাকাতি অভিযানসমূহ
মুসলিমরা সাধারণত মুহাম্মদের যুদ্ধগুলো নিয়ে গর্ব অনুভব করে। আদতে এই গৌরব ভুলের উপর দাঁড়ানো। মুহাম্মদ পারতপক্ষে সরাসরি যুদ্ধ এড়িয়ে চলতো। তার পছন্দ ছিলো ওঁৎ পেতে থেকে আক্রমণ অথবা ডাকাতি ধরণের অভিযান। এসব ক্ষেত্রে প্রতিপক্ষতে আচমকা অপ্রস্তুত অবস্থায় পেয়ে কচুকাটা করতে সুবিধা হত তার জন্য।
মদীনা পলায়নের পর মোটামুটি শক্তিশালী একটা অনুসারীদের দল পেয়ে মুহাম্মদ জীবনে শেষ দশ বছরে ৭৪ টি অভিযান পরিচালনা করে। (টীকা-৪৬)। এর মধ্যে কিছু ছিলো গুপ্তহত্যা বা এধরনের ছোটখাট ঘটনা আর কয়েকটি ছিলো হাজার হাজার সৈন্য-সামন্ত সহ যুদ্ধ। মুহাম্মদ নিজের এগুলোর মধ্যে ২৭ টিতে অংশগ্রহণ করেছিলো বলে জানা যায়। এই ২৭ টিকে বলা হয় ghazwa আর যেগুলোতে মুহাম্মদ নিজে অংশগ্রহণ করেনি সেগুলোকে বলা হয় sariyyah। দুইটি শব্দের অর্থই অভিযান, এমবুশ, অতর্কিত আক্রমণ।
বুখারির হাদিসে আবদুল্লাহ বিন কা’ব এর বর্ণনায় পাওয়া যায়, “আল্লাহর রাসূল যখনি কোন অভিযানের পরিকল্পণা করতেন তখন তিনি অন্য কোন অভিযানের পরিকল্পণার কথা বলে নিজের আসল ইচ্ছাকে লুকানোর চেষ্টা করতেন”। (টীকা-৪৭)
মুহাম্মদ যখন যুদ্ধে যেত তখনো সে সবসময় পিছনে থাকতো, নিজের দেহরক্ষী পরিবেষ্টিত হয়ে। তার অথেনটিক জীবনিগুলার কোথাও মুহাম্মদ সরাসরি যুদ্ধ করেছিলো এমন বর্ণনা পাওয়া যায় না।
নবুয়তের দাবীর আগে মুহাম্মদের বিশ বছর বয়সে হারব-উল-ফিজার বা অধর্মের যুদ্ধ নামে পরিচিত যুদ্ধে মুহাম্মদ তার চাচাদের সহযোগীতা করেছিলো বলে জানা যায়। অবশ্য তার সহযোগীতা বলতে যুদ্ধ যখন থেমে থাকতো তখন পড়ে থাকা তীর কুড়িয়ে তার চাচাদের কাছে নিয়ে আসা পর্যন্তই সীমিত ছিলো। Muir লিখেন , “শারীরিক সাহস ও যুদ্ধক্ষেত্রে সাহস জাতীয় গুনগুলার তেমন কোন উল্লেখযোগ্য উপস্থিতি নবীর জীবনের কোন পর্যায়েই ছিলো না” (টীকা-৪৮)
মুহাম্মদ ও তার দলবল বিনা হুঁশিয়ারিতে ও বিনা আশেপাশের শহর ও গ্রামে আক্রমণ করে নিরস্ত্র জনগনের উপর ঝাঁপিয়ে পড়তো। হত্যা এবং খুনাখুনি শেষে নিশ্চিহ্ন হয়ে যাওয়া জনগোষ্ঠীর ফেলে যাওয়া সম্পদ ও গবাদিপশু, অস্ত্রশস্ত্র এমনকি তাদের নারী ও শিশুদেরকে পর্যন্ত লুটের মাল হিসাবে নিয়ে নিতো। মাঝেমাঝে নারী ও শিশুদের মুক্তিপণের বিনিময়ে ছেড়ে দিতো মাঝে মাঝে দাস হিসাবে বিক্রি করে দিতো। এরকম একটি অভিযানের বর্ণনা এরকম।
“নবী কোনপ্রকার হুঁশিয়ারি ছাড়াই আচমকে বানু মুসতালিকে আক্রমণ করেন। তারা অসতর্ক অবস্থায় ছিলো , তাদের গৃহপালিত পশুগুলা পানির ঝরনার কাছে পানি খাচ্ছিলো। যারা বাধা দিয়েছে তাদের সবাইকে হত্যা করা হয় এবং নারী ও শিশুদের বন্দী করা হয়। নবী এদিন জুবাইরাকে পান গনিমতের মাল হিসাবে। নাফি বলেন, ইবনে ওমর তাকে এই যুদ্ধের ঘটনা বলেছে এবং ইবনে ওমন নিজে ঐ অভিযানে অংশ নিয়েছিলো”। (টীকা-৪৯)
উপরের ঘটনার বর্ণকারী মুসলিম ইতিহাসবিদ বলেন, “এই যুদ্ধে মুসলিমরা ৬০০ জনকে বন্দী করে। গনিমতের মালের মধ্যে ছিলো ২০০০ উট এবং ৫০০০ ছাগল”।
মুসলিম সন্ত্রাসীরা যখন কোন আক্রমণে শিশুহত্যা করে তখন পুরো বিশ্ব চমকে উঠে, আর মডারেট মুসলিমরা সাথে সাথে বলে উঠে ইসলামে শিশুহত্যা নিষেধ। সত্য হচ্ছে মুহাম্মদ রাত্রিকালিন অভিযানে শিশুহত্যাকে বৈধ বলে ঘোষণা করেছিলো।
“সাব বিন জাথামা হতে বর্ণিত আছে যে আল্লাহর নবীকে যখন রাতের অভিযানে নিহত পৌত্তলিক নারী ও শিশুদের ব্যাপারে জিজ্ঞেস করা হয় তখন তিনি বলেন : ওরাও পৌত্তলিকদেরই উত্তরসুরী (অতএব কোন সমস্যা নাই ওদের হত্যায়)”। (টীকা -৫১)
মুহাম্মদের অভিযানগুলোর প্রাথমিক ও প্রধান উদ্দেশ্য ছিলো লুট করা। প্রায় সমস্ত মুসলিম যেসব তথ্যসূত্রকে সঠিক বলে মেনে নেয় এমনসব বেশ কিছু তথ্যসূত্র থেকে পাওয়া যাওয়া অভিযানে জিতার জন্য মুহাম্মদ প্রায়ই আচমকা আক্রমণের পদ্ধতি বেছে নিতো।
“ইবনে আউন বর্ণনা করেন : আমি নাফির কাছে চিঠিতে জিজ্ঞেস করেছিলাম কাফিরদের আক্রমণ করার আগে কি তাদেরকে ইসলাম গ্রহণের আহবান জানানো প্রয়োজনীয় কিনা। সে উত্তরে লিখে পাঠিয়েছিলো, ইসলামের প্রথম যুগে এটা প্রয়োজনীয় ছিলো (এখন আর প্রয়োজন নাই)। নবী কোনপ্রকার হুঁশিয়ারি ছাড়াই আচমকা বানু মুসতালিকে আক্রমণ করেন। তারা অসতর্ক অবস্থায় ছিলো , তাদের গৃহপালিত পশুগুলা পানির ঝরনার কাছে পানি খাচ্ছিলো। যারা বাধা দিয়েছে তাদের সবাইকে হত্যা করা হয় এবং নারী ও শিশুদের বন্দী করা হয়। নবী এদিন জুবাইরাকে পান গনিমতের মাল হিসাবে। নাফি বলেন, ইবনে ওমর তাকে এই যুদ্ধের ঘটনা বলেছে এবং ইবনে ওমন নিজে ঐ অভিযানে অংশ নিয়েছিলো”।
নিরস্ত্র জনগণের উপর এধরণের ঘৃণ্য হামলাকে জায়েজ করতে মুসলিম ইতিহাসবিদরা প্রায়ই এসব লোকেরা ইসলামের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত ছিলো বলে দাবী করেন। কিন্তু তখন মুসলিমরা এতখানি শক্তিশালী ছিলো যে কোন গোত্রের পক্ষেই মুসলিমদের বিরুদ্ধে গিয়ে সফল হতে পারার কোন সুযোগ ছিলো না। উল্টো সত্যি হচ্ছে অনেক গোত্রই নিজেদের নিরাপত্তার জন্য মুসলিমতোষণ নীতি গ্রহণ করে ও মুসলিমদের সাথে বিভিন্ন রকম সন্ধিতে আবদ্ধ হয়। মুহাম্মদ যখন আরো শক্তিশালী হয়ে উঠে তখন সে হেলায় এইসব চুক্তি ভংগ করা শুরু করে।
লুট এবং অভিযান থেকে মুহাম্মদের বাহিনীর জন্য কেবল সম্পদই আসতো তা নয়, সাথে আসতো যৌনদাসী। জুবাইরা ছিলো সুন্দরী এক তরুনী যার স্বামী মুসলিমদের হাতে খুন হয়। মুহাম্মদের সর্বকনিষ্ঠ স্ত্রী আয়েশা (মুহাম্মদ যাকে ছয় বছর বয়সের সময় বিয়ে করে ও নয় বছর বয়সের সময় যৌনমিলন করে) এই অভিযানে মুহাম্মদের সাথে ছিলো। সে পরে বর্ণনা করে,
“নবী যখন বানু আল মুসতালিখের অভিযান থেকে পাওয়া লুটের মাল ভাগ বাটোয়ারা করছিলেন , সে (জুবাইয়ারা) পড়ে যায় ছাবিত ইবনে কায়েসের ভাগে। জুবাইয়ার স্বামী ও কাজিন সে যুদ্ধে মারা পড়ে। সে ছাবিতকে কথা দেয় তার মুক্তির বিনিময়ে সে নয় স্বর্ণমোহর দিবে। সে ছিলো খুবই সুন্দরী। যারাই তাকে দেখেছিলো তারাই মুগ্ধ হয়ে যেতো। সে নবীর কাছে আসলো তার মুক্তির বিষয়ে ফায়সালার জন্য। আমার ঘরের দরজায় ওকে দেখামাত্র ওর উপর আমার ঘৃণা তৈরী হলো। কারণ আমি জানতাম তার যে রুপ আমি দেখেছি সেটা নবীও দেখবনে। সে নবীর কাছে গিয়ে নিজের পরিচয় দিলো। সে ছিলো গোত্রপ্রধান আল-হারিছ ইবনে ধিরার এর মেয়ের। স বললো, “আমার অবস্থাটা বুঝুন। আমি ছাবিতের ভাগে পড়েছি। আমি তাকে ওয়াদা দিয়েছি মুক্তিপণের জন্য। আপনি কি আমাকে এ ব্যাপারে একটু সাহায্য করতে পারবেন ? ” নবী বললেন, “আমি এর চাইতেও ভালো একটা প্রস্তাব দিলে কি মানবে ? আমি যদি তোমার মুক্তিপণ শোধ করে দিই আমাকে বিয়ে করবে ?” সে বললো , “হ্যাঁ।” আচ্ছা তাহলে তাই হোক , বললেন নবী।” (টীকা-৫৩)
এই ঘটনা মুহাম্মদের বহুবিবাহের পিছনে যেসব মডারেট যুক্তি দেয়া হয় তার সবগুলোকে খন্ডন করে। সে এবং তার দলবল মিলে বিনা উসকানির যুদ্ধে জুবাইয়ারার স্বামীকে হত্যা করে। সে ছিলো বানু মুসতালিকের গোত্র-প্রধানের মেয়ে ও রাজকন্যা। তাকে দাসীবৃত্তিতে বাধ্য করানো হয়। সে মুহাম্মদের লুটেরা দলের একজনের ভাগে পড়ে। কিন্তু তার সৌন্দর্য্যে মোহিত হয়ে মুহাম্মদ তাকে “মুক্ত করে” এই শর্তে যে সে তাকে বিয়ে করবে। এটা কি আসলেই মুক্ত করা ? তার কি অন্য কোন উপায় ছিলো ? এছাড়া যদিও মুহাম্মদ তাকে সত্যি সত্যিই মুক্ত করতো তাহলেই বা তার যাওয়ার কি কোন জায়গা ছিলো ?
মুসলিম এপোলোজিস্টরা দাবী করে মুহাম্মদের বেশিরভাগ স্ত্রীই ছিলো বিধবা মহিলারা। ফলে অনেকেই মনে করতে পারে মুহাম্মদ দয়াপরবশ হয়ে তাদের বিয়ে করেছিলো। এপোলোজিস্টরা যেটা লুকিয়ে যায় তা হচ্ছে, এইসব ‘বিধবারা’ ছিলো যুবতী ও সুন্দরী। আর মুহাম্মদ তাদের স্বামীদের হত্যা করার কারণেই তারা বিধবা হয়েছিলো। মুহাম্মদের বয়স যখন ৫৮ বছর তখন জুবাইরার তখন ২০ বছর। ইসলামের ইতিহাসবিদরা স্বীকার করে নিয়েছে যে মুহাম্মদ সুন্দরী, যুবতী ও নিঃসন্তান মহিলা ছাড়া বিয়ে করতো না। একমাত্র ব্যাতিক্রম ছিলো সাওদা (অবশ্যই খাদিজাকে বাদ দিয়ে), যাকে মুহাম্মদ বিয়ে করেছিলো তার ছেলেমেয়েদের দেখাশোনা করার জন্য। একটা হাদিসে পাওয়া যায় যখন থেকে সে সুন্দরী অল্পবয়স্কা মেয়েদের বিয়ে করা শুরু করে তখন থেকে সে আর সাওদার সাথে থাকতো না। (টীকা ৫৪)। তার সব স্ত্রীরা ছিলো টিন বয়সের অথবা প্রথম বিশের, যখন তার নিজের বয়স ছিলো পঞ্চাশ, ষাটের ঘরে। ঐতিহাসিক তাবারি (টীকা-৫৫) বর্ণনা করেন মুহাম্মদ তার চাচাতো বোন হিন্দ বিনতে আবু-তালিবকে বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছিলো, কিন্তু যখন জানতে পারে তার আগের ঘরের এক সন্তান আছে তখন সে প্রস্তাব ফিরিয়ে নেয়। আরেকজন ছিলো জিয়া বিনতে আমির। মুহাম্মদ কারো একজনের মাধ্যমে তাকে বিয়ের প্রস্তাব পাঠায়। সে গ্রহণও করে কিন্তু যখন মুহাম্মদ কে তার বয়সের কথা বলা হয় তখন সে তার মত পাল্টে ফেলে। (টীকা -৫৬)
জারির ইবনে আবদুল্লাহ থেকে বর্ণীত আছে, মুহাম্মদ একবার তাকে জিজ্ঞেস করে, “বিয়ে করেছ?”
সে হ্যাঁ সূচক জবাব দেয়ার পরে মুহাম্মদ প্রশ্ন করে, “কুমারী নাকি পূর্ববিবাহিত?” সে উত্তর দেয়, “পূর্বে বিবাহিত।” তখন মুহাম্মদ বলে, “একটা কুমারী বিয়ে করলেই পারতে, তাহলে সে আর তুমি একে অপরের সাথে খেলা করতে পারতে।” (টীকা-৫৭)
আল্লাহর নবী দাবীকারী এই ব্যাক্তির কাছে নারী ছিলো কেবলি খেলার সামগ্রী। গবাদিপশুর চাইতে খুব বেশি অধিকার তাদের জন্য বরাদ্দ ছিলো না। তাদের কাজ ছিলো স্বামীদের আনন্দ দেয়া আর তাদের জন্য সন্তান জন্ম দেয়া।
ধর্ষণ
ডাকাতির সময় বন্দীকরা নারীদের ধর্ষণের অনুমতি দিয়েছিলো মুহাম্মদ তার অনুসারীদের। কিন্তু , এক্ষেত্রে তারা দ্বন্দে পড়ে যায়। তারা বন্দিনীদের সাথে যৌনমিলন ও করতে চায় আবার মুক্তিপণের টাকাও চায়। কিন্তু যৌনমিলনে বন্দিনীরা গর্ভবতী হয়ে পড়লে দাসী বাজারে তাদের দাম কমে যাবে। আবার কিছু কিছু বন্দিনীর স্বামী মুহাম্মদের আক্রমণ থেকে পালাতে সক্ষম হয়েছিলো, তারা যদি পরে মুক্তিপণ দিয়ে তাদের মুক্ত করতে আসে তখন গর্ভবতী অবস্থা হলে তার হয়তো মুক্তিপণ দিতে চাইবে না এই ভয়ও ছিলো। ডাকাতের দল তখন বীর্যপাতপূর্বউত্তোলন কথা ভাবছিলো। পরামর্শের জন্য তারা মুহাম্মদের কাছে যায়। বুখারির বর্ণনায় পাওয়া যায়
“ আবু সাইদ বর্ণনা করে, ‘আল্লার রাসূলের সাথে আমরা বানু মুসতালিখ এর যুদ্ধে যাই। যুদ্ধে অনেক আরব নারী আমাদের হাতে বন্দী হয়। আমরা চাচ্ছিলাম তাদের সাথে যৌনমিলন করতে। ধৈর্য্য ধরে রাখা বেশ কষ্টকর হয়ে পড়ছিলো। আমরা বীর্যপাতপূর্বউত্তোলনের কথাও ভাবছিলাম। একাজ করার আগে আমরা ভাবলাম , একবার রাসূলকে জিজ্ঞাসা করা দরকার। তার কাছে গেলে তিনি বললেন, ‘এটা না করাই ভালো হবে তোমাদের জন্য, কারণ যাদের জন্ম নেয়া ভাগ্যে আছে তারা জন্ম নিবেই’।” (টীকা-৫৮)
এখানে লক্ষনীয় যে মুহাম্মদ যুদ্ধবন্দিনীদের ধর্ষণে কোন বাধা দেয়নি। সে বরং বলে যে আল্লাহ যখন কোন মানুষ সৃষ্টি করতে চান তখন সেটা ঠেকানোর ক্ষমতা কারো নাই। অন্য কথায় বীর্য ছাড়াও সেটা সম্ভব। তাই মুহাম্মদ তার অনুসারীদের বলে যে বীর্যপাতপূর্বউত্তোলন করে গর্ভধারণ ঠেকানোর চেষ্টা করা হবে আল্লাহর পরিকল্পণাতে বাধা দেয়ার বৃথা চেষ্টার শামিল। যুদ্ধবন্দিনীদের সাথে জোরপূর্বক সংগমের বিরুদ্ধে মুহাম্মদ একটা শব্দও উচ্চারণ করেনি। আদতে বীর্যপাতপূর্বউত্তোলনের সমালোচনার মাধ্যমে সে বরং যুদ্ধবন্দিনীদের জোরপূর্বক গর্ভধারণে বাধ্য করার অনুমতি দিলো ঘুরিয়ে।
কুরআনে মুহাম্মদের খোদা দাসীর সাথে সঙ্গমকে বৈধতা দিয়েছে, তথাকথিত , “তোমাদের ডান হাত যাদের ধরে রেখেছে” বলে। এমনকি দাস হওয়ার আগে তারা যদি বিবাহিত থাকে তার পরও। (টীকা-৫৯)
শারীরিক নির্যাতন
ইবনে ইসহাক ইহুদি নগরী খাইবারে মুহাম্মদের হামলার বিবরনে লিখেন মুহাম্মদ এই দূর্গ নগরীতে আচমকা হামলা করে পলায়নরত নিরস্ত্র অধিবাসীদের হত্যা করে। বন্দীদের মধ্যে কিনানা নামে এক লোক ছিলো।
“ কিনানা আল রাবী নামে এক ছিলো বানু নাদিরের কোষাগার রক্ষক। রাসূলের কাছে তাকে আনা হলে তিনি তাকে তাদের লুকানো সম্পদের ব্যাপারে জিজ্ঞেস করেন। সে বলে যে সে জানেনা। এক ইহুদি এসে বললো সে প্রতিদিন খুব ভোরে কিনানাকে একটা পোড়োবাড়ীতে যেতে দেখতো। রাসূল যখন কিনানাকে বললেন , আমরা যদি ঐখানে সম্পদ পাই তাহলে কিন্তু তোকে খুন করবো, বুঝছিস ? সে বললো হ্যাঁ , বুঝেছি। রাসূল তখন ঐ পোড়োবাড়ীতে খননের নির্দেশ দিলেন। সেখান থেকে কিছু পরিমাণ সম্পদ পাওয়া যায়। কিনানাকে বাকী সম্পদের ব্যাপারে জিজ্ঞেস করা হলে সে বলতে অস্বীকার করে। রাসূল তখন আল জুবাইর আল আওয়াম কে নির্দেশ করেন তাকে টর্চার করার জন্য, যতক্ষণ না তার কাছ থেকে সম্পদের লুকানো জায়গা বের করা যায় ততক্ষন পর্যন্ত। জুবাইর তখন চকমকি পাথর আর ইস্পাত দিয়ে কিনানার বুকের উপর আগুন ধরিয়ে দিয়ে। সে প্রায় মরে যাচ্ছিলো। রাসূল তাকে নিয়ে মুহাম্মদ বিন মাসালামার হাতে তুলে দেন, যে তার ঘাড় থেকে মাথা ফেলে দেয়। তার ভাই মাহমুদের মৃত্যুর প্রতিশোধ হিসাবে। (টীকা-৬০)
যেদিন মুহাম্মদ কিনানা নামের তরুনকে নির্যাতন করে হত্যা করে সেদিন সে তার সতের বছর বয়েসী স্ত্রী সাফিয়াকে তার তাঁবুতে নিয়ে যায় সংগমের জন্য। দুই বছর আগে সে সাফিয়ার বাবা এবং তার গোত্র বানু কুরাইযার সব প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষকে হত্যা করেছেলো। ইবনে ইসহাক লিখেন
“রাসূল একের পর এক ইহুদি দূর্গে হামলা চালান। চলতে চলতে প্রচুর লোককে বন্দী করেন। এদের মধ্যে ছিলো সাফিয়া, কিনানার স্ত্রী, খাইবারের গোত্রপ্রধান, এবং দুই চাচাতো বোন। রাসূল তার নিজের জন্য সাফিয়াকে রাখে। অন্য বন্দীদেরকে মুসলিমদের মধ্যে ভাগ করে দেয়া হয়। বিলাল কয়েকজন ইহুদির লাশ মাড়িয়ে সাফিয়াকে রাসূলের কাছে নিয়ে আসে। সাফিয়ার সংগিনীরা বিলাপ করছিলো ও নিজেদের মাথায় ধূলা মাখছিলো। আল্লাহর রাসূল এই দৃশ্য দেখে বলেন, এইসব ডাইনীদের এখান থেকে নিয়ে যাও , কিন্তু তিনি সাফিয়াকে থাকতে বলেন এবং তার জুব্বা সাফিয়ার শরীরে ছুড়ে মারেন। এতে করে মুসলিমরা বুঝতে পারে ওকে রাসূল নিজের জন্য রেখেছেন। রাসূল বিল্লালকে মৃদু ভর্ৎসনা করেন এই বলে যে, ‘তোমার দিলে কি দয়ামায়া নাই, যে নারীদের তার স্বামীদের লাশ মাড়িয়ে নিয়ে আসছো’? ”
বুখারিতেও মুহাম্মদের খাইবার আক্রমণ ও সাফিয়া ধর্ষণ বিষয়ে কিছু হাদিস আছে।
“আনাস হতে বর্ণীত, ‘আল্লাহর রাসূল যেদিন খাইবার আক্রমণ করেন সেদিন আমরা অন্ধকার থাকতে থাকতেই ফযর নামায আদায় করি। নবী এবং আবু তালহা ঘোড়ায় সওয়ারী হন। আমি ছিলাম আবু তালহার পিছনে। নবী শহরের গলিগুলো খুব দ্রুতি অতিক্রম করার ফলে আমার হাঁটু তার উরুতে গিয়ে লাগছিলো। তিনি তার উরু উম্মুক্ত করলে আমি তার উরুর সাদা চামড়া দেখতে পাই। শহরে ঢুকে তিনি বলেন, ‘আল্লাহু আকবার, খায়বার ধ্বংসপ্রাপ্ত , যখনি আমরা কোন একটা জাতির দিকে অগ্রসর হই ভোর সে জাতির জন্য দুর্ভাগ্য নিয়ে আসে যাদের সাবধান করা হয়েছিলো তাদের জন্য’। নবী এই কথা তিনবার বলেন। শহরের লোকেরা কাজে যাবার জন্য বের হয়ে আসছিলো। তাদের মধ্যে কেউ কেউ বলাবলি করছিলো মুহাম্মদ তার দলবল নিয়ে হাজির হয়েছে। আমরা খায়বার জয় করি, দাস-দাসী সংগ্রহ করি ও গনিমতের মাল নিজেদের মধ্যে ভাগ করে নিই।
দিয়া নামের এক লোক নবীর কাছে বললো, হে রাসূল বন্দীদের মধ্যে থেকে আমাকে একজন দাসী দিন। নবী বললেন, যাকে পছন্দ হয় নিয়ে যাও। সে সাফিয়া বিনতে হুয়াই কে নিয়ে যায়। এক লোক নবীর কাছে এসে বললো , আপনি সাফিয়া বিনতে হুয়াইকে দিয়াকে দিয়েছেন অথচ সে ছিলো বানু নাদীর এবং কুরাইযার প্রধান বেগম। তার জন্য আপনি ছাড়া কাউকে মানায় না। নবী বললেন ওদের আমার কাছে নিয়ে আসো। দিয়া ও সাফিয়া আসলে নবী সাফিয়াকে দেখে দিয়াকে বললেন ওকে ছাড়া অন্য যেকোন একজনকে পছন্দ করে নিয়ে যাও। নবী তখন সাফিয়াকে মুক্ত করে তাকে বিয়ে করেন।
ছাবিত আনাসকে জিজ্ঞেস করেছিলো, ‘ওহে আবু হামজা নবী দেনমোহর কি দিয়েছিলেন এই বিয়েতে ? সে বলে, তার নিজের দামই ছিলো দেনমোহর , কারণ নবী তাকে মুক্ত করে তারপর বিয়ে করেন। আনাস আরো যোগ করেন, পথে উম্ম সুলাইম সাফিয়াকে বিয়ের সাজে সাজান ও রাতে নবীর ঘরে বধূ করে পাঠিয়ে দেন। ” (টীকা -৬১ )
আনাস থেকে বর্ণীত আরো একটা হাদিস আছে, এক আরব গোত্রের আটজন মানুষ মুহাম্মদের কাছে এসেছিলো কিন্তু মদীনার আবহাওয়াতে তারা মানিয়ে নিতে পারছিলো না। মুহাম্মদ তাদের উটের মূত্র পান করার নির্দেশ দিয়ে মদীনার শহরের বাইরে তার উটের রাখালের কাছে পাঠিয়ে দেয়। ঐ লোকেরা রাখালকে খুন করে উট নিয়ে পালিয়ে যায়। মুহাম্মদ এই খবর শুনে কিছু লোককে পাঠায় ওদের তাড়া করার জন্য। তাদের ধরে আনা হলে মুহাম্মদের নির্দেশে তাদের হাত পা কেটে দেয়া হয়, লোহার শিক গরম করে তাদের চোখে ঢুকিয়ে দেয়া হয় ও পাথুরে মরুভূমিতে মরার জন্য ফেলে রাখা হয়। আনাস আরো বলেন, তারা পানি চাইলেও মরার আগ পর্যন্ত তাদের কেউ পানি দেয়নি। (টীকা-৬২)
এই লোকেরা খুন এবং চুরি অপরাধে দোষী। তাদের শাস্তি দেয়া অবশ্যই দোষের কিছু না। কিন্তু এই পরিমাণ নির্যাতন কেন করা ? মুহাম্মদ ও কি সেই একই কাজই করছিলো না ? মুহাম্মদ উট পেলো কোথা থেকে ? সেগুলোওতো চুরি করা জিনিসই ছিলো। সে কি ডাকাতি করে মালিকদের খুন করেই সেই উটগুলো আনেনি ?
এই দ্বিমুখী নীতিই শুরু থেকে আজ পর্যন্ত মুসলিম সমাজের প্রধান বৈশিষ্ট্য। গোল্ডেন রুল (অন্যরা তোমার সাথে যেমন ব্যাবহার করলে তোমার পছন্দ, তুমিও অন্যদের সাথে তেমন ব্যাবহার করো ) ও ন্যায্যতার কোন ধারণা নেই মুসলিম মনস্তত্তে। তারা অমুসলিম দেশে গিয়ে সব রকমের সুযোগ-সুবিধা চায় কিন্তু যেসব দেশে তারা নিজেরা সংখ্যা গরিষ্ট সেখানে অমুসলিমদের মৌলিক, নূন্যতম মানুষ হিসাবে অধিকারটুকুও দিতে চায় না। তারা সত্যিকার অর্থেই বিশ্বাস করে , এটাই ঠিক।
গুপ্তহত্যা
এখন পর্যন্ত মুসলিমরা বিশ্বাস করে ইসলামের সমালোচনাকারীদের একমাত্র জবাব হচ্ছে তাদের খুন করা। ১৯৮৯ সালে খোমেনি লেখক সালমান রুশদিকে হত্যা করার ফতোয়া জারী করে। কারণ ছিলো রুশদি স্যাটানিক ভার্সেস নামে একটি বই লিখেছিলেন যেটা কারো কারো মতে ইসলামকে অপমান করেছে। কেউ কেউ খোমেনির সমালোচনা করে তাকে মৌলবাদী বলে আখ্যায়িত করেন। আশ্চর্যজনকভাবে অনেকেই উল্টো রুশদিকে মুসলিমদের অনুভুতির প্রতি অশ্রদ্ধার দোষ দেয়। ২০০৬ সালের ১৪ ই ফেব্রুয়ারি ইরানের সরকারি সংবাদমাধ্যম জানায় এই ফতোয়া রুশদীর মৃত্যু পর্যন্ত জারী থাকবে।
ইরানের ইসলামি শাসনযন্ত্র শুরু থেকেই কাঠামোগত পদ্ধতিতে খুন করার মাধ্যমে সমালোচকদের নির্মূল করে আসছে , তারা ইরানে থাকুক বা ইরানের বাইরে থাকুক না কেন। শতশত বিরুদ্ধবাদীদের এভাবে খুন করা হয়েছে। এদের মধ্যে ছিলেন ডক্টর শাপুর বখতিয়ার। একজন্য সত্যিকারের গণতান্ত্রিক। শাহের নিয়োগ করা সর্বশেষ প্রধানমন্ত্রী।
বেশিরভাগ লোকজনই জানে না যে এই গুপ্তহত্যা ছিলো প্রতিপক্ষককে দমন করার মুহাম্মদ ী পন্থা। আজকের মুসলিম আততায়ীরা মুহাম্মদের দেখানো পথই অনুসরণ করছে মাত্র।
মুহাম্মদের এমন এক শিকারের নাম ছিলো কাব বিন আশরাফ। মুসলিম ঐতিহাসিকগণের বর্ণনামতে কাব ছিলো সুদর্শন, তরুন প্রতিভাবান কবি ও মদীনার এক ইহুদি গোত্র বানু নাদেরের একজন ছোটখাট নেতা। মুহাম্মদের হাতে মদীনার আরেক ইহুদি গোত্র বানু কাইনুকার বিতাড়নের ঘটনার পরে কাব মুসলিমদের কাছ থেকে নিজের স্বধর্মের লোকজনের নিরাপত্তা নিয়ে শংকিত হয়ে পড়ে নিরাপত্তার জন্য মক্কা চলে যায়। মক্কায় সে কবিতা লিখে মক্কাবাসীর শৌর্য্যবীর্যের প্রশংসা করে। এই খবর শুনে মুহাম্মদ মসজিদে নামাযের পর সবার উদ্দেশ্যে বলে,
“আল্লাহ ও তার রাসূলের অপমানকারী কাব বিন আশরাফকে আমার নামে খুন করতে কে রাজী আছো ? মুহাম্মদ বিন মাসালামা দাঁড়িয়ে বলে, আমি যদি এই কাজ করি তবে কি আপনি খুশি হবেন ? নবী বললেন, হ্যাঁ। মুহাম্মদ বিন মাসালামা তখন বলে, তাহলে আমাকে মিথ্যা বলার (কাবকে ধোঁকা দেয়ার জন্য) অনুমতি দিন। নবী বললেন, সমস্যা নেই, তুমি মিথ্যা বলতে পার। অতঃপর মুহাম্মদ বিন মাসালামা কাব বিন আশরাফের কাছে গিয়ে বললো, ‘এই লোকটা (মুহাম্মদ ) জাকাত চেয়ে আমাদের সমস্যার মধ্যে ফেলে দিলো। তাই তোমার কাছে এসেছি কিছু টাকা ধার যদি দাও’। একথা শুনে কাব বললো আল্লাহর কসম, এই লোক তোমাদের হয়রান করে দিবে। মুহাম্মদ বিন মাসালামা বললো ‘এতদিন ওকে অনুসরণ করে এলাম, শেষ না দেখে কিভাবে ছাড়ি’। মুহাম্মদ বিন মাসালামা ও তার সংগী বললো, ‘এখন আমাদের দুই-এক উটবোঝাই খাবার ধার দাও। শীঘ্রই শোধ করে দেবো’। সে রাতে কাবের পালিত-ভাই আবু নায়লাকে সাথে নিয়ে তার সাথে দেখা করতে গেলো। কাব তাদেরকে তার দূর্গে আসতে বললো ও তাদের সাথে দেখা করার জন্য নীচে নেমে আসলো। তার স্ত্রী তাকে জিজ্ঞেস করলো, ‘এত রাতে কোথায় যাচ্ছো ?’। কাব জবাব দিলো, ‘আরে কেউ না, মুহাম্মদ বিন মাসালাম আর আমার পালিত-ভাই আবু নায়লা এসেছে, ওদের সাথে দেখা করতে যাচ্ছি’। তার স্ত্রী বললো , ‘আমি কেমন একটা রক্ত গড়িয়ে পড়ার শব্দ শুনতে পাচ্ছি’ (মনের ভিতর খারাপ কিছুর আশংকা হচ্ছে )। কাব আবার বললো, ‘আরে তেমন কেউ না, মুহাম্মদ বিন মাসালামা আর আমার পালিত-ভাই আবু নায়লা। রাতে কেউ ডাকলে যেকোন ভালো মানুষেরই উচিৎ সাড়া দেয়া, মরার সম্ভাবণা থাকলেও’। মুহাম্মদ বিন মাসালামা আগে থেকেই দুইজন লোক সংগে করে নিয়ে গিয়েছিলো। সে তাদের বলে দিয়েছিলো, কাব আসলে আমি তার চুলের গন্ধ নেয়ার ভান করবো। যখন দেখবে যে আমি শক্ত করে ধরেছি , তখনি ওর মুন্ডু ফেলে দিবে। ওর মাথার গন্ধ নিতে দেবো তোমাদের। কাব পোষাক পরে নেমে এলে, তার গা থেকে সুগন্ধ বের হচ্ছিলো। মুহাম্মদ বিন মাসালামা বললো, ‘ এত চমৎকার আতরের ঘ্রাণ আমি কখনো পাইনি’। কাব উত্তরে বললো, ‘ আমার আছে আরবের সবচে ভালো নারী, যে উঁচুজাতের সুগন্ধীর ব্যাবহার ভালোমত জানে’। মুহাম্মদ বিন মাসালাম কাবকে অনুরোধ করলো, ‘আমি কি তোমার মাথা একটু শুঁকে দেখতে পারি’ ? কাব বললো, ‘হ্যাঁ’। মুহাম্মদ বিন মাসালামা নিজে কাবের মাথা শুঁকে দেখলো আর তার সংগীদেরও বললো শুঁকে দেখতে। তারপর সে আবার কাবকে বললো, ‘তোমার মাথা একটু শুঁকে দেখি’ ? কাব বললো, আচ্ছা দেখো। এবার মুহাম্মদ বিন মাসালামা কাবের মাথা শক্ত করে ধরলো ও তার সাথীদের উদ্দেশ্য বললো, মার শালারে। এভাবে তারা কাবকে খুন করে পরে নবীর কাছে গিয়ে তাকে জানিয়ে আসে। কাব বিন আশরাফের পর খুন করা হয় আবু রাফিকে। ” (টীকা-৬৩)
আল্লার নবী কেবল খুনের উৎসাহই দেয় নাই, সে এমনকি ছলনা ও প্রতারণার আশ্রয় নেয়াকেও বৈধ করে দিয়েছে। মুহাম্মদের এমন আরেকটি খুনের শিকার হচ্ছে আবু আফাক নামে একজন ১২০. বছর বয়স্ক বৃদ্ধ। সে কবিতা লিখতো, যার কিছু কিছুতে সবাই মুহাম্মদের অনুসারী হয়ে যাচ্ছে বলে আফসোস থাকতো। তার কবিতায় ছিলো, মুহাম্মদ একটা পাগল, যে আন্দাজে এই জিনিস হারাম এই জিনিস হালাল বলে ঘোষণা করছে ; ওর কারণেই লোকজন নিজেদের বিচার বুদ্ধি বিসর্জন দিয়ে একে অপরের বিরুদ্ধে সংঘাতে জড়িয়ে পড়ছে- এ ধরণের বিষয়বস্তু। ইবনে সাদের বর্ণনায় আবু আফাকের হত্যার ঘটনা উঠে এসেছে এভাবে।
“এরপর ঘটলো ইহুদি আবু আফাকের বিরুদ্ধে সালিম ইবনে উমাইর আল-আমরির অভিযান। ঘটনা আল্লার রাসূলের মদীনায় হিজরতের পর বিশতম মাসের শুরুতে, শাওয়াল মাসে। আবু আফাক ছিলো বানু আমর ইবনে আউফ গোত্রের, ১২০ বছর বয়েসি বৃদ্ধ। সে ছিলো ইহুদি আর সে আল্লাহর রাসূলের বিরুদ্ধে লোকজনের কাছে সমালোচনা করতো ও মুহাম্মদ কে নিয়ে ব্যাঙাত্নক কবিতা লিখতো। সালিম ইবনে উমাইর ছিলো বিখ্যাত পেশাদার বিলাপকারী ও বদর যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী সৈনিক। সে বলেছিলো, ‘আমি কসম কাটছি হয় আমি আবু আফাককে খুন করবো নয়তো তার আগে মারা যাবো’। সে সুযোগের অপেক্ষায় ছিলো। একরাতে ভয়ানক গরম পড়েছিলো, আবু আফাক সেজন্য সেরাতে বাইরেই খোলা আকাশের নীচে ঘুমিয়েছিলো। ইবনে উমাইর ঠিক এই সুযোগের অপেক্ষাতেই ছিলো। সালিম ইবনে উমাইর সেরাতে আবু আফাকের পেটের ভিতর তলোয়ার ঢুকিয়ে দেয় যতক্ষণ না সেটা তার পেট ভেদ করে বিছানাতে গিয়ে ঠেকে। আল্লাহর শত্রু আর্তনাদ করে উঠলে তার অনুসারীরা দৌড়ে এসে তাকে বাড়িতে নিয়ে যায় ও পরে কবর দেয়। ” (টীকা-৬৪)
এই বৃদ্ধ লোকের একমাত্র ‘অপরাধ’ ছিলো সে মুহাম্মদকে নিয়ে ব্যাঙাত্নক কবিতা লিখেছিলো।
পাঁচ সন্তানের জননী এক ইহুদি নারী , আসমা বিনতে মারওয়ান, এই খবর শুনে মারাত্নক রাগান্বিত হয়ে পড়ে একটা কবিতা লেখে যাতে সে মদীনার লোকজনদের অভিশাপ দেয় যারা এক বহিরাগতের প্ররোচণায় পড়ে নিজেদের মধ্য হানাহানিতে জড়িয়ে পড়েছে ও একজন বয়োবৃদ্ধ লোককে খুন করেছে। আগের মতই মুহাম্মদ মসজিদের মিম্বরে দাঁড়িয়ে ঘোষণা দেয় ,
“ মারোয়ানের মেয়ের হাত থেকে কে আমাকে নিস্তার দেবে ? উমাইর বিন আদি আল-খাতমি তখন সেখানে ছিলো। সেই রাতেই সে আসমার ঘরে গিয়ে তাকে খুন করে। সকালে সে রাসূলের কাছে গিয়ে রাতে কি করে এসেছে তা বর্ণনা করে। মুহাম্মদ বলেন, ‘তুমি আল্লাহ ও তার রাসূলকে সাহায্য করেছে হে উমাইর’। যখন সে জিজ্ঞেস করলো এর ফলে কি তার ভাগ্যে খারাপ কিছু ঘটবে কিনা , তখন রাসূল বললেন, ‘দুইটা ছাগলেও তারে নিয়ে বিচলিত হবে না’। (টীকা-৬৫)
আসমার খুন নিয়ে মুহাম্মদের কাছ থেকে প্রশংসা পেয়ে এই খুনি নিহত আসমার সন্তানদের কাছে গিয়ে নিজের কাজ নিয়ে বাগাড়ম্বর করছিলো , অসহায় শিশু ও নিহতের জ্ঞাতিগোষ্ঠীর সামনেই , তাদের মানসিক যন্ত্রণা দিতে।
“মারওয়ানের মেয়ের ঘটনার দিনে বানু খাতমা গোত্রের মধ্যে হুলস্থূল লেগে গিয়েছিলো। তার ছিলো পাঁচ ছেলে। মুহাম্মদের কাছে ঘটনার বর্ণনা করে উমাইর সেই ছেলেদের কাছে গিয়ে বলে, ‘ওহে খাতমার ছেলেরা মারওয়ানের মেয়েকে আমি খুন করেছি। পারলে কেউ কিছু কর’। সেদিন থেকে বানু খাতমার ভিতরে ইসলাম শক্তিমান হয়ে উঠে ; এর আগে যারা মুসলমান হতো তারা ব্যাপারটা লুকিয়ে রাখতো অন্য সবার কাছ থেকে। বানু খাতমার প্রথম ইসলাম গ্রহনকারী ছিলো ‘পাঠক’ নামে পরিচিত উমাইর বিন আদি, আবদুল্লাহ বিন আউস ও খুযাইমা বিন ছাবিত। মারওয়ানের মেয়ের মৃত্যুর দিন থেকে বানু খাতামার লোকেরা মুসলিম হতে শুরু করে, কারণ ইসলামের শক্তি তারা সেদিনই চাক্ষুষ দেখেছিলো”।
(টীকা-৬৬)
এইসব হত্যার মাধ্যমে মদিনার মুসলিমরা বাগাড়ম্বরী, অহংকারী ও অস্থির হয়ে উঠে , আর এভাবে তাদের বিরোধীদের অন্তরে ত্রাস ঢুকিয়ে দেয়। মুহাম্মদ সবাইকে বুঝাতে চাচ্ছিলো তার কোনপ্রকার বিরোধীতা ও সমালোচনা করার ফল একটাই, মৃত্যু (টীকা-৬৭)। আজকের দিনের মুসলিমদের কাজের ধরণও এরকম। এমনকি সরাসরি হুমকি দিতে হয় না , কেবল আকার-ইঙ্গিতেই তারা বুঝিয়ে দেয় , ইসলামের বা মুহাম্মদের সমালোচনার কি পরিণতী। তারা মুহাম্মদের দেখানো পদ্ধতি ও উদাহরণ অনুসরন করে। মুহাম্মদের জীবনই তাদের জন্য সবচে অনুসরনীয়। তারা চায় মানুষের চিন্তার মধ্যে একটা ভীতির সীমানা তৈরী করতে যাতে সন্ত্রাসের মাধ্যমে তারা নিজেদের আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করতে পারে।
মুসলিম সন্ত্রাসীরা নিশ্চিতভাবে জানে এই তরিকায় কাজ হয়। তাদের কাছে কুরআনের উপদেশ, “অমুসলিমদের অন্তরে সন্ত্রাসের সৃষ্টি করা” হচ্ছে বিজয়ের নিশ্চিত পদ্ধতি। (টীকা-৬৮)। মুহাম্মদ ও এই পদ্ধতিতে সফল। সে বুক ফুলিয়ে বলে, “আমি সন্ত্রাসের মাধ্যমে জয়ী হয়েছি”।(টীকা-৬৯)। স্পেনেও এই পদ্ধতি কাজ করেছে যখন মুসলিম সন্ত্রাসীরা ১১ই মার্চ ২০০৪ সালে ট্রেনে বোমা হামলা করে ২০০ জনকে খুন করে আর তার পরিপ্রেক্ষিতে স্পেনিশরা ভোট দিয়ে সমাজবাদী পার্টিকে ক্ষমতায় বসায় যারা মুসলিমদের সাথে জ্বি হুজুর জ্বি হুজুর নীতিতে চলাকে প্রাতিষ্ঠানিক রুপ দেয়।
মুহাম্মদ ও তার আদর্শিক অনুসারীদের রেখে যাওয়া সফলতার উদাহরণ থেকে সন্ত্রাসীরা মনে করে এই পদ্ধতি যেকোন সময় যেকোন জায়গায় কাজ করতে বাধ্য। পুরা দুনিয়া তাদের পায়ের তলে আসা অথবা আরো বড় কোন শক্তির কাছে বিধ্বস্ত হওয়া ছাড়া তারা এই পদ্ধতির সফলতা নিয়ে কোনদিন সন্দেহ করবে না।
ইসলামিক বিশ্ব একটি অসুস্থ জায়গা। এই অসুস্থতার সাথে ইসলামের কোন সম্পর্ক নাই এটা বলাটা হবে অদূরদর্শী ও বোকামি। মুসলিমদের দ্বারা ঘটানো প্রায় সমস্ত অমানবিক বর্বর অপরাধের উদ্দীপণা এবং সমর্থণ পাওয়া যাবে মুহাম্মদের কথা ও কাজের মধ্যে। এই তিক্ত সত্যটা, দুঃখজনকভাবে, অনেকেই দেখেও না দেখার ভান করে থাকতে চায়।
গণহত্যা
ইয়াথরিব (মদীনার পূর্বতন নাম) ও তার আশেপাশের অঞ্চলে তিনটি ইহুদি গোত্রের বাস ছিলো। বানু কাইনুকা, বানু নাদির ও বানু কুরাইযা। আগেও যেমন বলা হয়েছিলো , তারা ছিলো মদীনার আসল আদিবাসী। মুহাম্মদ প্রথমে ভেবেছিলো সে যেহেতু মূর্তিপূ্জা ও বহুঈশ্বরবাদের বিপক্ষে ও বাইবেলের নবীদের সে নিজেও নবী বলে স্বীকৃতি দিয়েছে সেহেতু ইহুদিরা হয়তো নিজেরা আগ্রহ করে মুহাম্মদের দলে আসবে। যেহেতু ইহুদিরাও একেশ্বরবাদী এবং মূর্তিপূজাবিরোধী। কুরআনের প্রথমদিকের সূরাগুলো মুসা ও ইহুদিদের গল্পে ভরপুর। মুহাম্মদ প্রথমে নামাযের কেবলাও ঠিক করেছিলো জেরুজালেমের দিকে, ইহুদিদের নিজ দলে টানার জন্য। মুসলিম পন্ডিন ডব্লিউ এন আরাফাত লিখেন, ‘সাধারণভাবে স্বীকৃত আছে যে, নবী মুহাম্মদ প্রথমে আশা করেছিলেন, ঐশী ধর্মের অনুসারী ইয়াথরিবের ইহুদিরা , এই নতুন একেশ্বরবাদী ধর্ম ইসলামকে মেনে নেবে’। (টীকা-৭০)। কিন্তু তার আশার গুঁড়ে বালি দিয়ে ইহুদিরাও মক্কার কুরাইশদের মত মুহাম্মদের কথাকে তেমন পাত্তা দেয়নি। আশাহত ও বিব্রত হয়ে সে ইহুদিদের প্রতি আক্রমণাত্নক হয়ে উঠে। নিজেদের বাপ-দাদার ধর্ম ছেড়ে মুহাম্মদের ধর্মে দীক্ষা নেয়ার কোন তাড়া ছিলোনা ইহুদিদের। তাদের এই প্রত্যাখানে মুহাম্মদ রাগান্বিত হয়ে প্রতিশোধের আগুনে জ্বলতে থাকে। আবু আফাক ও আসমা বিনতে মারওয়ানের খুন ছিলো ইহুদিদের সাথে তার শত্রুতার শুর মাত্র। বাণিজ্য কাফেলাতে লুট করে আত্নবিশ্বাস বাড়ানো মুহাম্মদ মদীনার ইহুদিদের ধন-সম্পদের উপর চোখ দেয়। সে কেবল অজুহাত খুঁজছিলো কিভাবে ইহুদিদের কচুকাটা করে তাদের সম্পদ কুক্ষিগত করা যায়। কুরআনের আয়াতে ইহুদিদের উপর তার এই রাগ প্রতিফলিত হতে থাকে , যখন দেখা যায় যে বলা হচ্ছে তারা আল্লাহর প্রতি অকৃতজ্ঞ, নিজেদের ধর্মীয় আইন নিজেরা মেনে চলেনা ও নবীদের হত্যাকারী। মুহাম্মদ এমনকি এতদূর পর্যন্তও বলে যে , সাবাথের আইন ভঙ্গ করার কারণে আল্লাহ ইহুদিদের বানর ও শুয়োরে পরিণত করেছেন। আজ পর্যন্ত অনেক মুসলিম বিশ্বাস করে বানর ও শুয়োর হচ্ছে ইহুদিদের বংশধর।
বানু কায়নুকা আক্রমণ
মুহাম্মদের প্রতিহিংসার শিকার প্রথম ইহুদি গোত্র হচ্ছে বানু কাইনুকা। তারা মদীনার ভিতরে নিজেদের নামে পরিচিত পাড়ায় বাস করতো। তারা ক্ষুদ্রশিল্পী, কামার, স্বর্ণকার হিসাবে যুদ্ধাস্ত্র ও নিত্য-প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি তৈরী করে জীবিকা নির্বাহ করতো। তারা যুদ্ধের ব্যাপার-স্যাপার তেমন ভালো বুঝতো না। এজন্য প্রতিরক্ষার ভার তারা আরবদের কাছে দিয়েছিলো , যে ভুলের কারণে তাদের নিজেদের অস্তিত্বই শেষ পর্যন্ত বিলীন হয়ে যায়। বানু কাইনুকা আরব গোত্র খাযরাযের সাথে স্বন্ধিতে আবদ্ধ ছিলো। খাযরাযের প্রতিদ্বন্দী আউস গোত্রের সাথে যুদ্ধে তারা খাযরাযকে সহায়তা দিতো।
কয়েকজন ইহুদি ও মুসলিমের মধ্যে একটা খন্ডযুদ্ধ বেঁধে গেলে, কাইনুকাকে আক্রমণ করার সুযোগ এসে যায় মুহাম্মদের সামনে। এক মুসলিম মেয়ে বানু কাইনুকার কোন একটা স্বর্ণকারের দোকানে গেলে সেখানকার এক শ্রমিক তাকে বোকা বানায়। মুসলিম মেয়েটি দোকানের মেঝেতে বসা অবস্থায় ঐ শ্রমিক মেয়েটির জামাকে আস্তে করে পেরেক দিয়ে মেঝের সাথে আটকে। মেঝে থেকে উঠতে গেলে পেরেকে আটকে থাকার কারণে মেয়েটির জামা ছিঁড়ে যায়। পাশে দিয়ে যাওয়া এক মুসলিম এই ঘটনা দেখে তেড়ে এসে ইহুদি শ্রমিককে হত্যা করে। শ্রমিকের আত্নীয়স্বজনরা এসে প্রতিশোধস্বরুপ ঐ মুসলিমকে হত্যা করে।
মুহাম্মদ ঠিক এমন কোন সুযোগের অপেক্ষাতেই ছিলো। পরিস্থিতি শান্ত করার কোন চেষ্টা না করে সে এই ঘটনার দোষ চাপায়, গোত্রের সবার উপর , আর হুমকি দেয় তারা যদি ইসলাম গ্রহণ না করে তাহলে তাদের যুদ্ধ করতে হবে মুসলিমদের সাথে। ইহুদিরা এই হুমকিকে নতিস্বীকার না করে বরং নিজেদের দূর্গে ঢুকে পড়ে। মুহাম্মদ তাদের এলাকা অবরোধ করে , তাদের পানি সরবরাহ বন্ধ করে দেয় ও সবাইকে হত্যা করা হবে বলে হুমকি দিতে থাকে।
কুরানের আয়াত ৩-১২ তে বদর যুদ্ধে সে কিভাবে কুরাইশদের হারিয়েছিলো সেই বর্ণনার সাথে সাথে মুহাম্মদ তার এই হুমকি পূনঃবর্ণনা করে , “তোমরা পরাজিত হবে ও দোযখের জন্য তোমাদের একত্র করা হবে। কতই না নিকৃষ্ট সে বাসস্থান”।
এক পক্ষকাল পরে বানু কাইনুকা আত্নসমর্পণের জন্য পথ খুঁজছিলো, কিন্তু মুহাম্মদ তাতে রাজী ছিলো না। সে চাচ্ছিলো সবাইকে হত্যা করতে। খাযরায গোত্রের সর্বজন-সম্মানিত প্রধান আবদুল্লাহ ইবনে উবাই মুহাম্মদের কলার চেপে ধরে বলে, তার চোখের সামনে তার বন্ধু ও মিত্রদের এভাবে বিনা কারণে খুন হতে দিবে না সে। মুহাম্মদ জানতো খাযরায গোত্রের মধ্যে তাদের প্রধানের জনপ্রিয়তা ও সম্মান কিরকম। সে জানতো এখান উল্টাপাল্টা করলে খাযরাযের সবাই তাদের প্রধানের পাশে দাঁড়ালে শেষে মুহাম্মদের দলকেই হার স্বীকার করতে হবে। মুখ কালো করে সে আবদুল্লাহ ইবনে উবাইকে ঠেলে সরিয়ে দিয়ে ইহুদিদের সবাইকে হত্যা করার ইচ্ছা বাদ দেয়। এই শর্তে যে তাদেরকে মদীনা ছেড়ে যেতে হবে। এই কাহিনী ইবনে ইসহাকে এসেছে এভাবে।
“বদর এবং উহুদের মাঝের সময়ে রাসূলের সাথে চুক্তি ভঙ্গকারী প্রথম গোত্র ছিলো বানু কাইনুকা। রাসূল তাদের অবরোধ করে রাখেন তারা নিঃশর্ত আত্নসমর্পণ করা পর্যন্ত। আবদুল্লাহ বিন উবাই বিন সালুল রাসূলের কাছে গিয়ে বললো, মুহাম্মদ , আমার বন্ধুদের সাথে সদয় ব্যাবহার কর। কিন্তু রাসূল তার কথায় গুরুত্ব দিলেন না। সে একই কথা আবার বললো, কিন্তু রাসূল তার মুখ সরিয়ে নিলে সে রাসূলের জামার কলার চেপে ধরে। রাগে রাসূলের চেহারা কালো হয়ে যায়। তিনি বললেন, ‘ছাড় আমাকে উজবুক’। জবাবে সে বললো, “ আল্লাহর কসম, আমার বন্ধুদের সাথে সদয় ব্যাবহারের ফায়সালা ছাড়া তোমাকে ছাড়ছিনা”। চারশ পদাতিক আর তিনশ ঘোড়সওয়ার আমার শত্রুদের কাছ থেকে আমাকে প্রতিরক্ষা দিয়ে এসেছে আর তুমি চাচ্ছো তাদের সবাইকে এক সকালেই জবাই করতে ? খোদার কসম, পরিস্থিতি কিন্ত খারাপ হয়ে যাবে বলে দিচ্ছি। রাসূল বললেন, ‘ঠিক আছে, ওদের নিয়ে যাও’। (টীকা-৭২)
মুহাম্মদের জীবনিকাররা আরো যোগ করেন, মুহাম্মদ রাগান্বিত কণ্ঠে বলে, “ওদের যেতে দাও, ওদের উপর আল্লাহর লানত, আর ওর(আবদুল্লাহ ইবনে উবাই) উপরও আল্লাহর লানত”। বানু কাইনুকা নির্বাসিত হবে এই শর্তে মুহাম্মদ তাদের জানে ছেড়ে দেয়। (টীকা-৭৩)
মুহাম্মদ বানু কাইনুকাকে শর্ত দিয়ে দেয় তাদের সব মালপত্র ও যুদ্ধ-সরঞ্জাম ফেলে যেতে হবে। সেসব থেকে সে তার নিজের জন্য পাঁচ ভাগের এক ভাগ রেখে বাকিটা তার দলের মধ্যে ভাগ করে দেয়। গোত্রটিকে এভাবে তাড়িয়ে দেয়া হয়। মুসলিম ইতিহাসবিদরা তৃপ্তির সাথে বর্ণনা করে যে বানু কাইনুকার শরণার্থীরা সিরিয়া আযরুয়াতে আশ্রয় নেয় এবং কিছুদিনের মধ্যে বিলুপ্ত হয়ে যায়। (টীকা-৭৪)
বানু নাদের
পরবর্তী দুর্ভাগ্য ছিলো বানু নাদেরের, মদীনার আরেকটি ইহুদি গোত্র। বানু কাইনুকার সাথে মুহাম্মদ যা করেছে তা দেখে গোত্র-নেতা কাব বিন আশরাফ মক্কার কুরাইশদের কাছে আশ্রয় প্রার্থণা করে। উপরে যেভাবে বর্ণনা করা আছে , সেভাবে তাকে হত্যা করা হয়।
মক্কার লোকজন বদরের হারের প্রতিশোধস্বরুপ ওহুদ যুদ্ধে মুসলিমরা পরাজিত হয়। এই ক্ষতি পুষিয়ে নিয়ে আল্লাহ যে তাদের ত্যাগ করেন নি মুসলিমদের মধ্যে এই বিশ্বাসকে অটুট রাখার দরকার ছিলো মুহাম্মদের। বানু নাদের ছিলো সহজ টার্গেট।
পাকিস্তানি মুসলিম ইতিহাসবিদ, বর্তমান মুসলিম নবজাগরণের দার্শণিক, মওদূদী এই ঘটনার বর্ণনা দেয় এইভাবে, “ এইসব শাস্তিমূলক ব্যাবস্থার (বানু কাইনুকার নির্বাসন ও ইহুদি কবিদের হত্যা) পর কিছুদিন পর্যন্ত ইহুদিরা এতই ত্রাসগ্রস্থ ছিলো যে তারা কোনপ্রকার কূটচালের কথা ভাবারও সাহস করছিলো না। কিন্তু পরবর্তীতে, হিজরি ৩ সালের শাওয়াল মাসে, কুরাইশরা বদরের হারের প্রতিশোধ নিতে বিপূল প্রস্তুতিসব মদীনার দিকে আসছিলো। ইহুদিরা যখন দেখলো যে কুরাইশদের তিন হাজার সৈন্যের বিপরীতে মুহাম্মদের সাথে বের হয়েছে মাত্র এক হাজার, তার মধ্যে আবার তিনশ মুনাফিক (খাযরাযের গোত্রপ্রধান আবদুল্লাহ ইবনে উবাইয়ের অনুসারীরা) যুদ্ধ ত্যাগ করে মদীনায় চলে এসেছে, তখন তারা নবীর সাথে যুদ্ধে যোগ দিতে অস্বীকার করে ও শহরের প্রতিরক্ষায় অংশ নিতে অস্বীকার করে প্রথমবারের মত খোলাখুলিভাবে নবীর সাথে তাদের চুক্তির খেলাফ করে। (টীকা-৭৫)
হাস্যকর ব্যাপার হচ্ছে, ইহুদিদের একটা গোত্রকে নির্বাসনে পাঠানো ও অন্য গোত্রের প্রধান এবং দুইজন ইহুদি কবিকে হত্যা করার পরেও, মুসলিমরা মনে করে কুরাইশদের সাথে মুহাম্মদের ধর্মযুদ্ধে ইহুদিদের উচিৎ ছিলো তাকে সাহায্য করা। মুহাম্মদের ও কুরাইশদের যুদ্ধের সাথে ইহুদিদের কোন সম্পর্ক ছিলো না। আর তাছাড়া তাদের এক গোত্রকে দেশছাড়া করে ও অন্য এক গোত্রের প্রধান এবং অন্য দুজন ইহুদি কবিকে হত্যার মধ্যে দিয়ে মুহাম্মদ নিজেই , কোন-প্রকার সন্ধিচুক্তি থাকলে তা ভংগ করেছে। তারপরও , মুহাম্মদের সব বর্বর কাজকে জায়েজ করার জন্য মুসলিম চিন্তাবিদরা বারবার ইহুদিদের দোষ দেয় তারা চুক্তি ভংগ করেছে বলে।
মুহাম্মদ এখন পথ খুঁজছিলো কিভাবে বানু নাদিরকে তাড়ানো যায় তার। ইয়াথরিবের সবচে উর্বর কৃষিজমি ও খেজুর বাগানের মালিক ছিলো এরা, যেখানে প্রচুর আরব কাজ করতো। ঠিক সময়মতই মুহাম্মদের শিক্ষায় শিক্ষিত মুসলিম ডাকাতদল বানু কালব গোত্রের দুইজন মানুষকে খুন করে। ঘটনাচক্রে দেখা গেলো বানু কালব গোত্র মুহাম্মদের সাথে এই মর্মে চুক্তিবদ্ধ ছিলো যে, তারা মুহাম্মদ কে সমর্থণ দিবে যার বিনিময়ে মুহাম্মদ তাদের উপর আক্রমণ করবে না। মুহাম্মদের খুনীরা অন্য গোত্রের মনে করে বানু কালবের এই দুইজনকে হত্যা করে। অতএব প্রথামোতাবেক এই রক্তপাতের জন্য ক্ষতিপূরণ দিতে বাধ্য ছিলো মুহাম্মদ । বানু কাইনুকার কাছ থেকে লুটে নেয়া প্রচুর পরিমাণ সম্পদ হাতে থাকা সত্বেও মুহাম্মদ বানু নাদেরের কাছে যায় এই ক্ষতিপূরণের টাকার একটা অংশ চাইতে। কারণ মূল মদীনা চুক্তি অনুযায়ী এই ধরণের ক্ষেত্রে ক্ষতিপূরণের একটা অংশ করে সব গোত্রকেই বহন করতে হবে বলা ছিলো। মুহাম্মদের দুই অনুসারীর অনর্থক রক্তপাতের জন্য ক্ষতিপূরণের একাংশ বানু নাদেরকে বহন করতে বলা ছিলো খুবই অবিবেচক ও উদ্ভট দাবী। মুহাম্মদ সেটা ভালো করেই জানতো। মুহাম্মদ ভেবেছিলো বানু নাদির এই দাবীতে রাজী হবে না , ফলে এই অজুহাতে সে বানু কাইনুকার সাথে যা করেছিলো তা এদের সাথেও করতে পারবে। কিন্তু দেখা গেলো বানু নাদির আসলে খুবই ভীত হয়ে পড়েছিলো যে মুহাম্মদের অন্যাযায় দাবীর বিপরীতে কিছু করতে চাচ্ছিলো না। তারা ক্ষতিপূরণের দাবীতে সম্মত হয়ে নিজেদের লোকনের কাছ থেকে টাকা সংগ্রহে চলে গেলো। মুহাম্মদ ও তার সাথীরা একটা দেয়ালের পাশে অপেক্ষা করছিলো। ঘটনাপ্রবাহ ঠিক মুহাম্মদ যেভাবে ভেবেছিলো সেভাবে যাচ্ছিলো না। সে খুবই অন্যায় এক দাবী নিয়ে এসেছিলো এ আশায় যে বানু নাদির তাতে অসম্মত হবে, এবং এই উছিলায় সে তাদের উপর যুদ্ধ চাপিয়ে দিবে। কিন্তু এখন তাকে নতুন দূরভসন্ধি আঁটতে হবে।
হঠাৎ সে নতুন ‘ওহী’ পায়। সে দাঁড়িয়ে পড়ে, সাথীদের কিছু না বলেই সোজা নিজের ঘরে চলে যায়। পরে তার সাথীরা তার কাছে গিয়ে কারণ জিজ্ঞেস করলে সে বলে ফেরেশতা জিব্রাঈল তার কাছে খবর দিয়ে গেছে যে বানু নাদীরের লোকেরা যে দেয়ালের পাশে মুহাম্মদ ও তার সাথীরা অপেক্ষা করেছিলো তার উপর থেকে পাথর ফেলে মুহাম্মদ কে হত্যার ষড়যন্ত্র করছিলো। এ অজুহাতে যে বানু নাদিরের উপর আক্রমণের প্রস্তুতি নিতে শুরু করে।
মুহাম্মদের সাথীদের কেউই দেয়াল বেয়ে কাউকে উঠতেও দেখেনি বা তাদের হত্যার ষড়যন্ত্র হচ্ছে বলে কিছু টেরও পায় নি। কিন্তু এই লোকগুলো মুহাম্মদ কে অনুসরণের মাধ্যমে ও তার কথা বিশ্বাস করে অর্থনৈতিকভাবে লাভবান (লুটের মাধ্যমে) হচ্ছিলো। ফলে মুহাম্মদের অজুহাত বিশ্বাস না করার কোন কারণ বা ইচ্ছা তাদের ছিলো না।
যেকোন যুক্তিবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষেরই মুহাম্মদের এই দাবীর অসারতা বুঝার কথা। বানু নাদির যদি মুহাম্মদ কে হত্যা করতে চাইতো তার জন্য তাদের দেয়ালের উপর উঠে সেখান থেকে পাথর ফেলার কোন দরকার ছিলো না। এই অভিযোগ পরিষ্কারভাবেই মিথ্যা। মুহাম্মদের সাথে সামান্য কিছু লোক ছিলো। আবু বকর, ওমর, আলি, এবং সম্ভবত অন্য দু’একজন। বানু নাদিরের ইচ্ছা যদি খুন করাই হতো তার খুব সহজেই এই অল্প কয়েকজনকে খুন করতে পারতো।
যে নবী বিশ্বাস করতো আল্লাহ হচ্ছে , “khairul maakereen” (সর্বোত্তম পরিকল্পণাকারী, অনুবাদান্তরে সর্বোত্তম ষড়যন্ত্রকারী ) সে নবী নিজেও ছিলো খুবই ধূর্ত মানুষ। জিব্রাঈল মারফত হত্যার ষড়যন্ত্রের খবর পাওয়ার দাবী আর মিরাজে গিয়ে বেহেশত দোযখ দেখে আসার দাবী দুইটারই বিশ্বাসযোগ্যতা একই পরিমাণ। তারপরও তার ভেড়ার পালের মত অনুসারীরা এই উদ্ভট দাবীতে বিশ্বাস করে ও এতটাই উম্মাদ হয়ে যায় যে নিরপরাধ লোকজনের রক্তে নিজেদের হাত রাঙানোর জন্য উদগ্রীব হয়ে উঠে।
মওদূদী এই গল্প শেষ করে এইভাবে, “ তাদের উপর অনুগ্রহ দেখানোর কোন কারণ আর অবশিষ্ট থাকলো না। আল্লাহর পবিত্র রাসূল তাদের এই মর্মে আল্টিমেটাম পাঠান যে নবীর জীবন নাশের ষড়যন্ত্রের কথা তিনি জেনে গেছেন ; অতএব দশ দিনের মধ্যে তাদের মদীনা ছেড়ে যেতে হবে ; এরপর যদি কাউকে পাওয়া যায় তাকে কতল করা হবে”। মুসলিম “যুক্তি”র এক মোক্ষম উদাহরণ হচ্ছে মওদূদীর এই বর্ণনা। মুহাম্মদের ধূর্ততার গল্প বর্ণনা করে এমন ভাব নেয়া যেনো এটাই হচ্ছে খুবই স্বাভাবিক ও সাধারণ আচরণ।
বানু নাদিরকে সাহায্য করার জন্য আবদুল্লাহ ইবনে উবাই যথেষ্ঠ চেষ্টা করেছিলো। কিন্তু এর মধ্যে মুহাম্মদের অনুসারীদের ভিতর তার প্রভাব প্রতিপত্তি যথেষ্ঠ ক্ষয়ে এসেছিলো আর মুহাম্মদের সহচরেরাও লুটের মালের লোভে দিনকে দিনকে অন্ধ হয়ে উঠেছিলো। তারা আবদুল্লাহ ইবনে উবাইকে মুহাম্মদের তাবুতে ঢুকতে না দিয়ে বরং তাকে আঘাত করেও তার চেহারাতে তলোয়ার দিয়ে পোঁচ দেয়।
কিছুদিন পর বানু নাদির তাদের সব সহায়-সম্পত্তি পিছনে ফেলে জান নিয়ে চলে যাবার স্বিদ্ধান্ত নেয়। তাদের কেউ কেউ সিরিয়া চলে যায়। কেউ কেউ যায় খায়বার যেখানে মাত্র কয়েক বছর পরই তারা জবাই হয় , যখন মুহাম্মদ এই উন্নত ও শ্যামল এই ইহুদি দূর্গের উপর তার লোলুপ দৃষ্টিপাত করে।
যদিও মুহাম্মদ বানু নাদিরের লোকজনকে জীবন নিয়ে চলে যেতে দেয়, কিন্তু তার প্রাথমিক ইচ্ছা ছিলো তাদের হত্যা করার। সিরাতের নীচের অংশ থেকে ব্যাপারটি পরিষ্কার হয়।
“ বানু নাদির বিষয়ে নির্বাসনের সূরাটি (সূরা হাশর, কুরআনের ৫৯ নং সূরা) নাযিল হয়। এই সূরাতে বর্ণীত আছে আল্লাহ কিভাবে তাদের উপর তার প্রতিহিংসা চরিতার্থ করেন ও কিভাবে রাসূলকে তাদের উপর শক্তিশালী করেন ও তাদের সাথে তিনি কি আচরণ করেন।
আল্লাহ বলেন, “তিনিই কিতাবধারীদের মধ্যে যারা কাফের, তাদেরকে প্রথমবার একত্রিত করে তাদের বাড়ী-ঘর থেকে বহিস্কার করেছেন। তোমরা ধারণাও করতে পারনি যে, তারা বের হবে এবং তারা মনে করেছিল যে, তাদের দূর্গগুলো তাদেরকে আল্লাহর কবল থেকে রক্ষা করবে। অতঃপর আল্লাহর শাস্তি তাদের উপর এমনদিক থেকে আসল, যার কল্পনাও তারা করেনি। আল্লাহ তাদের অন্তরে ত্রাস সঞ্চার করে দিলেন। তারা তাদের বাড়ী-ঘর নিজেদের হাতে এবং মুসলমানদের হাতে ধ্বংস করছিল। অতএব, হে চক্ষুষ্মান ব্যক্তিগণ, তোমরা শিক্ষা গ্রহণ কর। আল্লাহ যদি তাদের জন্যে নির্বাসন অবধারিত না করতেন, তবে তাদেরকে দুনিয়াতে শাস্তি দিতেন। আর পরকালে তাদের জন্যে রয়েছে জাহান্নামের আযাব।” (কুরআন ৫৯-২,৩) (টীকা-৭৬)
এই অবরোধের সময় মুহাম্মদ বানু নাদিরের মালিকানার বাগানগুলো কেটে পুড়িয়ে দেয়ার নির্দেশ দেয়। প্রাচীন আরবদের মধ্যেও এই ধরণের বর্বরতা ছিলো বিরল, অভূতপূর্ব। এই অপরাধ জায়েজ করার জন্য মুহাম্মদের কেবল আল্লাহর অনুমোদনের দরকার ছিলো যা সে খুব সহজেই পেয়ে যায় কারণ আল্লাহ ছিলো মুহাম্মদেরই খেলার পুতুল।
“তোমরা যে কিছু কিছু খর্জুর বৃক্ষ কেটে দিয়েছ এবং কতক না কেটে ছেড়ে দিয়েছ, তা তো আল্লাহরই আদেশ এবং যাতে তিনি অবাধ্যদেরকে লাঞ্ছিত করেন। ” (কুরআন ৫৯-৫)
গাছ কেটে দেয়া ও পানির কুয়োতে বিষ মিশিয়ে দেয়াকে কেন রুক্ষ মরুর লোকজন বিশাল বড় অপরাধ মনে করতো তা সহজেই অনুমান করা যায়। এধরণের বর্বরতা আরব নীতি নৈতিকতার খেলাফ ছিলো। স্বাভাবিকতার প্রতি মুহাম্মদের কোন বাঁধন ছিলো না। উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য সে যেকোন কিছু করতে প্রস্তুত ছিলো। তার পথের বাধা যেকোন মানুষ বা যেকোন বস্তুকে সে সরিয়ে দিতে দ্বিধা করতো না। তার অনুসারীরা তার এই দুর্দমনীয়তাকে ভাবতো আল্লাহর হুকুম প্রতিষ্ঠায় তার দৃঢ়তা হিসাবে।
আল-মুবারকপুরি নামের এক মুসলিম পন্ডিত বলেন, “ আল্লাহর রাসূল তাদের অস্ত্রশস্ত্র, জমি, ঘরবাড়ী এবং সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করেন। গণিমতের মালের মধ্যে ছিলো ৫০ টি বর্ম, ৫০ টি শিরস্ত্রাণ ও ৩৪০ টি তলোয়ার। এই মালসমূহর উপর পরিপূর্ণ অধিকার ছিলো কেবল রাসূলের , যেহেতু এগুলোর অধিকার পেতে কোন যুদ্ধের প্রয়োজন পড়েনি। নিজস্ব মহানুভবতায় তিনি এগুলো প্রথম যুগের মোহাজির ও আবু দুজানা এবং সুহাইল বিন হানিফ নামক দুইজন দরিদ্র সাহায্যকারীর মধ্যে বিতরণ করেন। আল্লাহর রাসূল এই আয়ের একটা অংশ তার পরিবারের পুরো বছরের ভরণপোষণে ব্যায় করে। বাকি সম্পদ মুসলিম বাহিনীর জিহাদের প্রস্তুতির জন্য ব্যায় করা হয়। সূরা হাশরের প্রায় পুরোটাই ইহুদিদের বিতাড়ন ও মোনাফেকদের নষ্টামির বর্ণনায় ব্যায় হয়। এই সূরায় সর্বশক্তিমান আল্লাহ আনসার ও মোহাজিরদের প্রশংসা করেন। এই সূরাতে যুদ্ধের প্রয়োজনে শত্রুপক্ষের গাছ কাটা ও বাগান এবং শস্যক্ষেত্র পুড়িয়ে ধ্বংস করার বৈধতা দেয়া হয়। যেহেতু এগুলো আল্লাহর নির্দেশেই হয়েছে সেহেতু এসব কাজকে খারাপ বলার কোন উপায় নেই ” (টীকা-৭৭)
মওদূদীর মতই মুবারকপুরির কথাতেও বিবেক এবং নৈতিকতার ভয়ংকর অনুপস্থিতি দেখা যায় , যা আজকের মুসলিম উম্মাহর চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য। অমুসলিমদের সম্পদ জ্বালিয়ে দেয়া ও লুট করাকে তারা যুদ্ধের বৈধ কৌশল বলে মনে করে কারণ মুহাম্মদ নিজেও এসব কাজ করেছে ও করার নির্দেশ দিয়েছে। মুহাম্মদের কাজ-কারবার থেকে দেখলে যৌক্তিকভাবেই বুঝা যায় যে, ইসলামিক সহিংসতা , দুর্ভাগ্যজনকভাবে সহি ইসলাম থেকে বিন্দুমাত্র দূরে নয়। খুন, লুটপাট, ধর্ষণ এবং আততায়ীবৃত্তি , এর সবগুলোই ইসলামিক কাজ। আল্লাহর ধর্মের জন্য করলে কোন কাজেই নৈতিক সীমারেখা নেই।
হাস্যকরভাবে , সূরা হাশর মুসলিমদের ‘ধার্মিক’ হওয়ার নির্দেশ দিয়ে শেষ হয়। এ থেকে বুঝা যায় ধার্মিকতার অর্থ মুসলিমদের কাছে সম্পূর্ণ আলাদা। মুসলিম এপোলজিস্টরা দাবী করে ১৪০০ বছর আগের মুহাম্মদ কে এখনকার নৈতিকতার মানদন্ডে বিচার করা ঠিক নয়। কিন্তু হাস্যকর হচ্ছে তারা আবার ধরে নেয় মুহাম্মদের সেই নৈতিকতাই সর্বযুগের মানুষের জন্য অনুকরণীয় আদর্শ।
এক মুসলিম আমাকে লিখেছিলো, “ মুহাম্মদের জীবনের এই বর্ণনার পুরোটাই অনেকের জন্য সমস্যার কারণ কোন কাজ নৈতিক আর কোনটা অনৈতিক এ বিষয়ে তাদের মৌলিক ধারণাই ভুল। এই ভুলের উৎস খ্রিস্টানদের এক গালে চড় খেলে অন্য গাল এগিয়ে দেয়ার নীতি ও সবার পাপের জন্য ক্রাইস্টের যন্ত্রণাভোগের দর্শণ। এই দুই অসুস্থ চিন্তা শতাব্দীর পর শতাব্দী জুড়ে ইউরোপিয়ানদের মননে বদ্ধমূল হয়ে আছে।”
নীতি ও নৈতিকতাকে অসুস্থ্যতা বলতে আমি রাজী নই। এগুলোর উৎস মানবিক চেতনা ও প্রয়োগ করা যায় গোল্ডেন রুলের মাধ্যমে। কোন কাজ সঠিক আর কোনটা বেঠিক এটা খুব সহজেই আমরা বুঝি যখন যার উপর এ কাজ করা হবে তার জায়গা থেকে আমরা ব্যাপারটা ভেবে দেখি।
বানু কুরাইযা আক্রমণ
মুহাম্মদের প্রতিহিংসার শিকার ইয়াথরিবের সর্বশেষ ইহুদি গোত্র ছিলো বানু কুরাইযা। খন্দকের যুদ্ধে শেষ হওয়ার পরপরই মুহাম্মদ তার দৃষ্টি দেয় বানু কুরাইযার দিকে। (টিকা-৭৮)। সে দাবী করে ফেরেশতা জিব্রাইল তার কাছে নির্দেশ নিয়ে এসেছে “সে যেনো তার তলোয়ার উম্মুক্ত করে কুচক্রী বানু কুরাইযার উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। জিব্রাঈল আরো বলে যে সে নিজে ফেরেশতা-বাহিনী নিয়ে আগে আগে গিয়ে বানু কুরাইযার দুর্গগুলোকে কাঁপিয়ে তুলবে ও তাদের মনে ত্রাসের সৃষ্টি করবে।” (টীকা-৭৯)। আল মুবারকপুরী বর্ণনা করে, “ আল্লাহর রাসূল সাথে সাথে মুয়াজ্জিনকে খবর দেন ও বানু কুরাইযা আক্রমণের ঘোষণা দিতে বলেন”। (টীকা-৮০)
ইসলাম সম্পর্কে পড়াশোনা করতে গেলে মনে রাখা গুরুত্বপূর্ণ যে নামাযের জন্য ডাক আর যুদ্ধের জন্য ডাক মূলত একই। মুসলমাদের দাঙা আর গুন্ডামি সবসময়ই মসজিদে নামায পড়ার পর থেকে শুর হয়। পবিত্র রমজান আর শুক্রবারের জুমার নামায শেষে সবচে ভয়ংকরগুলো সাধারণত শুরু হয়। ১৯৮১ সালে মুহাম্মদের জন্মদিন উপলক্ষে এক ভাষণে আয়াতুল্লাহ খোমেনি বলে,
“ মসজিদ হচ্ছে যুদ্ধের জায়গা, লড়াইয়ের জায়গা। মসজিদ থেকেই যুদ্ধ শুরু হবে। ইসলামের সব জিহাদ যেমনভাবে মসজিদ থেকে শুরু হয়েছিলো তেমনভাবে। মানুষ করার জন্য নবীর কাছে তলোয়ার ছিলো। আমাদের পবিত্র ইমামরাও যুদ্ধবাজ ছিলেন। তারা সবাই যোদ্ধা ছিলেন। তারা তলোয়ার এগিয়ে যুদ্ধ করেছেন। তারা মানুষ মেরেছেন। আমাদের এমন একজন খলিফা প্রয়োজন যিনি হাতের কব্জি কাটবেন, গলা জবাই করবেন ও পাথর ছুঁড়ে মানুষ হত্যা করবেন। আল্লাহর রাসূল যেভাবে কব্জি কাটতেন, জবাই করতেন ও পাথর ছুঁড়ে মানুষ মারতেন, ঠিক সেভাবে। ” (টীকা-৮১)
তিন হাজার পদাতিক ও ত্রিশ ঘোড়সওয়ার আনসার ও মুহাজির নিয়ে মুহাম্মদ বানু কুরাইযার দিকে অগ্রসর হয়। তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হয় যে তারা মক্কাবাসীদের সাথে মিলে মুসলিমদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করেছে। বাস্তবে এই একই মুসলিম ঐতিহাসিকরা আবার স্বীকার করে খন্দকের যুদ্ধে বানু কুরাইযার সাহায্য না পেয়ে মক্কাবাসীরা ফেরত যায়।
মুহাম্মদ তার উদ্দেশ্য ব্যাক্ত করার পর তার চাচাতো ভাই ও বিশ্বস্ত অনুসারী আলি শপথ করে যে, বানু কুরাইযার ধ্বংস অথবা তার মৃত্যু পর্যন্ত সে তার তরবারি থামাবে না। এই অবরোধ ২৫ দিন স্থায়ী হয়েছিলো। শেষতক বানু কুরাইযা নিঃশর্তভাবে আত্নসমর্পণ করে। মুহাম্মদ পুরুষদের বন্দী করার এবং নারী ও শিশুদের আলাদা জায়গায় নিয়ে যাবার নির্দেশ দেয়। তখন বানু কুরাইযার মিত্র আউস গোত্রের লোকজন মধ্যস্ততা করে মুহাম্মদের কাছে অনুরোধ করে সদয় হওয়ার জন্য। মুহাম্মদ তখন তীর বিদ্ধ হয়ে আহত , বদমেজাজী সাদ বিন মুয়াদকে ইহুদিদের বিচারের দায়িত্ব দেয়। সাদ ছিলো বানু কুরাইযার প্রাক্তন মিত্র, কিন্তু ইসলামে দীক্ষা নেয়ার পর থেকে সে তাদের শত্রুর দৃষ্টিতে দেখতো। খন্দকের যুদ্ধে মক্কার বাহিনী থেকে আসা তীরের জন্যও সে বানু কুরাইযাকে দোষ দিয়েছিলো। সে ছিলো মোহামদ্দের দেহরক্ষীদের মধ্যে একজন , তাই মুহাম্মদ ভালো করেই জানতো বানু কুরাইযা সম্পর্কে তার মনোভাব কেমন।
সাদের রায় ছিলো, “ সব প্রাপ্তবয়ষ্ক পুরুষের মৃত্যুদন্ড, নারী ও শিশুদের দাস হিসাবে বন্দী করা ও গোত্রের লোকজনের যাকিছু সহায় সম্পদ ছিলো তার মুসলিমদের মধ্যে ভাগ বাটোয়ারা করে দেয়া হবে ”
মুহাম্মদ এই নির্মম রায়ে খুশি হয়ে বলে, সাদ আল্লাহর আদেশমতই রায় দিয়েছে (টীকা-৮২)। সে প্রায়ই নিজের কাজের সাফাই দিতো আল্লাহর আদেশ বলে। এবার সে সা’দকে বেছে নেয় নিয়ে খেয়াল চরিতার্থ করার জন্য।
আল-মুবারাকপুরি আরো বলেন, “ ইহুদিরা মুসলিমদের বিরুদ্ধে যে ষড়যন্ত্র করেছিলো ও যে পরিমাণ অস্ত্রশস্ত্র মজুদ করেছিলো, তার ফলে কার্যত তাদের উপর এই নির্মম বিচার যুক্তিযুক্ত। তাদের জমা করা অস্ত্রের মধ্যে ছিলো ১৫০০ তরবারী, ২০০০ বর্শা, ৩০০ বর্ম ও ৫০০ ঢাল। এর সবকিছুই মুসলিমদের অধিকারে চলে আসে।”
মুবারাকপুরি যা ভুলে যাচ্ছে তা হলো বানু কুরাইযা তাদের অস্ত্রশস্ত্র ও কোদাল, বেলচা ধার দিয়েছিল খন্দকের যুদ্ধের খাল খননের জন্য। কৃতজ্ঞতাবোধ জিনিসটা মুসলিমদের মধ্যে কখনো ছিলো না, নাই। এরা আপনার সাহায্য নিয়ে, ঠিক যেই মুহূর্তে প্রয়োজন ফুরিয়ে যাবে সেই মুহুর্তেই আপনার পিছনে ছুরি বসিয়ে দিতে দ্বিধা করবে না। পরবর্তী অধ্যায়ে এই অসুস্থ মানসিকতার মনস্তাত্তিক বিশ্লেষন করা হবে।
মুসলিম ইতিহাসবিদরা এই গণহত্যার ন্যায্যতা দিতে তাদের নিত্যকার উদ্ভট ও মিথ্যা ষড়যন্ত্রের অভিযোগ তোলে বানু কুরাইযার বিরুদ্ধে। তারা বানু কুরাইযার বিরুদ্ধে কূটচক্র, প্রতারণা ও ইসলামের বিরুদ্ধে যড়যন্ত্রের অভিযোগ করে। কিন্তু এইসব অভিযোগের সুনির্দিষ্ট কোন উদাহরণের বর্ণনা আবার কোথাও পাওয়া যায় না যার জন্য তাদের উপর এই নির্মম শাস্তি ও গণহত্যা চালানো হয়েছিলো। মদীনার বাজারে গণকবর তৈরী করে তাতে একদিনে ৬০০ থেকে ৯০০ জনের শিরচ্ছেদ করে মাটিচাপা দেয়া হয়েছিলো।
বন্দীদের মধ্যে ছিলো বানু নাদিরের এক নেতা, হুয়াই ইবন আখতাব, যার মেয়ে সাফিয়াকে মুহাম্মদ খায়বার আক্রমণের সময় গণিমতের মাল হিসাবে নিজের জন্য নেয়। তাকে হাত বেঁধে বিজয়ী মুহাম্মদের সামনে আনা হয়। স্পর্ধার সাথে সে মুহাম্মদের সামনে নত হতে অস্বীকার করে। সেখানেই তার শিরচ্ছেদ করা হয়।
কাদেরকে হত্যা করা হবে সেটা ঠিক করার জন্য তরুণদের পরীক্ষা করা হয়। যাদের গুপ্তকেশ গজিয়েছে তাদেরকে প্রাপ্তবয়স্ক হিসাবে ধরে নিয়ে শিরচ্ছেদ করা হয়। আতিয়া আল কুরাইয নামে একজন যে এই গণহত্যা থেকে বেঁচে যায়, পরবর্তীতে বলে, “ বানু কুরাইযার বন্দীদের মধ্যে আমিও ছিলাম। তারা (মুসলিমরা) আমাদের পরীক্ষা করে দেখে ও যাদের গুপ্তকেশ গজানো শুরু করেছিলো তাদের হত্যা করে , যাদের তখনো গজায় নি তাদের বাঁচিয়ে রাখে। আমি দ্বিতীয় দলে ছিলাম।” (টীকা-৮৩)
মুহাম্মদ বেশকিছু ইহুদি গোত্রকে হত্যা করে ও বিতাড়িত করে। এর মধ্যে ছিলো বানু কুরাইযা, বানু নাদের, বানু কাইনুকা, বানু মুসতালিক, বানু জনু ও খায়বারের ইহুদিরা। মৃত্যুশয্যায় মুহাম্মদ আরব উপদ্বীপ থেকে সব বিধর্মীদের বিতাড়িত করার নির্দেশ দিয়ে যায় (টীকা-৮৪)। ইসলামের দ্বিতীয় খলিফা মুহাম্মদ সেই নির্দেশ বাস্তবায়ন করে। সে ইহুদি, খ্রিস্টান ও পৌত্তলিকদের নির্মূল করে, ধর্মান্তর , হত্যা ও বিতাড়নের মাধ্যমে।
লুটের সম্পত্তি পেয়ে মুহাম্মদ তার অনুসারীদের উদারভাবে দান করা শুরু করে। আনাসের বর্ণনায় পাওয়া যায়, “ লোকজন নবীকে তাদের খেজুর দান করতো, উপহার হিসাবে। বানু কুরাইযা ও বানু নাদেরের যুদ্ধের পরে নবী তাদের দানের বিনিময় দেয়া শুরু করেন।” (টিকা-৮৫)
বানু কুরাইযার পুরুষদের গণহত্যা এবং নারী ও শিশুদের দাস বানানোর এই কাজকে ন্যায্য বলে কুরআনের এক আয়াতে ঘোষণা দেয়া হয়।
“কিতাবীদের মধ্যে যারা কাফেরদের পৃষ্টপোষকতা করেছিল, তাদেরকে তিনি তাদের দূর্গ থেকে নামিয়ে দিলেন এবং তাদের অন্তরে ভীতি নিক্ষেপ করলেন। ফলে তোমরা একদলকে হত্যা করছ এবং একদলকে বন্দী করছ।” (কুরআন ৩৩-২৬)
তাকিয়াহ বা পবিত্র প্রতারণা
উপরে আমরা দেখেছি মুহাম্মদ তার অনুসারীদের মিথ্যা বলার এমনকি তার নিজের নামেও খারাপ কথা বলে হত্যার উদ্দেশ্যে শিকারের আস্থা অর্জন করার অনুমতি দেয়া। আরো অনেক ইতিহাস পাওয়া যাবে যেখানে মুসলিমরা অমুসলিমদের সাথে বন্ধুত্তের ছল করে আস্থা অর্জন করে পরে তাদের হত্যা করেছে।
হুদাবিয়া তে মুহাম্মদ মক্কাবাসীদের সাথে চুক্তি করেছিলো যে তাদের কোন দাস বা তরুণ মক্কা ত্যাগ করে তার কাছে চলে আসলে সে তাদের ফিরিয়ে দিবে। ইবনে ইসহাক আবু বাসির নামে মক্কার একজনের গল্প বর্ণনা করেন, যে এই চুক্তির পরে মুহাম্মদের কাছে গিয়েছিলো। মক্কাবাসীরা একটি চিঠিসহ দুইজন লোককে পাঠায় চুক্তির কথা মনে করিয়ে দিতে। মুহাম্মদ বাধ্যগতভাবে বললো, “চলে যাও, কারণ আল্লাহ তোমার এবং তোমার সাথে যারা অসহায় আছে তাদের জন্য মুক্তির কোন একটা উপায় বের করে দিবেন।” আবু বাসির মুহাম্মদের ইংগিত বুঝতে পারে। সে মক্কার দুই লোকের সাথে ফিরতি পথ ধরে। মদীনা থেকে ছয় মাইলের মত যাওয়ার পর তারা বিশ্রামের জন্য থামে। আবু বাসির বলে, “ তোমার তরবারীতে ধার কেমন, ভাই? ” যখন সে বললো ভালোই ধার আছে, তখন আবু বাসির সেটা নিজে থেকে পরীক্ষা করে দেখতে চাইলো। তরবারীর মালিক তখন বললো, “দেখতে চাইলে দেখো”। আবু বাসির খাপ থেকে তরবারী খুলে এক কোপে তাকে মেরে ফেললো। এরপর সে মুহাম্মদের কাছে গিয়ে বললো, “আপনার দায়িত্ব আপনি পালন করেছেন। আপনি কথামত আমাকে ফেরত দিয়েছেন আর আমি নিজ ধর্মরক্ষার্থে ঐ লোকদের খুন করে পালিয়ে এসেছি , কারণ ওদের সাথে থাকলে আমি হয়তো তাদের ধর্মে প্ররোচিত হয়ে যেতে পারতাম”। মুহাম্মদ এই খুনীকে কোন শাস্তি না দিয়ে তাকে বরং সমুদ্রের পাশে আল-আস নামক এক জায়গায় পাঠিয়ে দেয় কুরাইশদের সিরিয়াগামী বাণিজ্য কাফেলাগুলোকে লুট করার জন্য। চুক্তিতে মুহাম্মদ স্বীকার করে নিয়েছিলো যে সে আর কুরাইশদের বাণিজ্য কাফেলা আক্রমণ করবে না। কিন্তু এর বিপরীতে সে অন্য প্যাঁচানো বুদ্ধি বের করে। ইবনে ইসহাকের জবানীতে পাওয়া যায়, “ মক্কায় আটকে পড়া মুসলিমরা আবু বাসিরের ঘটনা শুনে তারাও আল-আসে গিয়ে তার সাথে যোগ দেয়। এই দলে ছিলো প্রায় সত্তর জনের মত মুসলিম। এরা যাকে ধরতে পারা তাকেই খুন করা, বাণিজ্য কাফেলাগুলোকে লুটপাট রক্তারক্তি করে ছিন্নভিন্ন করে দেয়া থেকে শুরু করে কুরাইশদের উপর এমন ধ্বংসযজ্ঞ শুরু করে দেয় যে কুরাইশরা মুহাম্মদ কে রক্তের সম্পর্কের দোহাই দিয়ে চিঠি লিখতে বাধ্য হয় এই লোকগুলোকে তার নিজের কাছে নিয়ে নেয়ার জন্য। রাসুল তখন তাদেরকে মদীনায় নিয়ে যান”। (টীকা-৮৬)
ইসলামের ইতিহাস এরকম প্রতারণা ও ষড়যন্ত্রে পরিপূর্ণ। এই লোকেরা মুহাম্মদের জিম্মাদারীতে ছিলো। সে তাদের দায় দায়িত্ব না নিয়ে বরং তাদেরকে পাঠিয়ে দেয় মক্কার লোকজনের মালামাল লুট করার জন্য। সে তাদের ডাকাতিতে সম্মতি এমনকি নির্দেশ দেয় বলেও ধরা যায়। তারপরও মুসলিমরা বলে মক্কাবাসীরাই নাকি আগে চুক্তি ভংগ করেছিলো। আরেকটা উদাহরণ দেখা যাক /
মক্কার কুরাইশ ও আশেপাশের অন্যান্যগোত্রগুলো মুহাম্মদের ডাকাতি ও খুনে অতিষ্ঠ হয়ে তাকে শাস্তি দেয়ার জন্য অভিযানে বের হয়। মুহাম্মদের মত রাতে অন্ধকারে অতর্কিত হামলা না করে তারা বরং ঘোষনা দিয়েই আসে। ফলে মুহাম্মদ মদীনার চারপাশে খাল খেটে প্রতিরক্ষা ব্যাবস্থা নেয়ার মত যথেষ্ট সময় হাতে পায়। মক্কার সম্মিলিত বাহিনী খালের পাশে অবস্থান নিয়ে খাল পার হওয়ার উপায় খুঁজতে থাকে। তারা বানু কুরাইযা গোত্রের সাহায্য চায়। মক্কার বাহিনীর সাথে বানু কুরাইযার জোট হলে মুহাম্মদ সমস্যায় পড়ে যাবে দেখে সে তাদের মধ্যে বিভেদ তৈরী করার উপায় খুঁজতে থাকে। নুইয়াম নামে এক লোক গোপনে ইসলাম গ্রহণ করে ছিলো। মুহাম্মদ তাকে ডেকে বলে, “ তুমিই আমাদের মধ্যে একমাত্র ব্যাক্তি যার ইসলাম গ্রহণের খবর কেউ জানে না। অতএব তুমি গিয়ে ওদের মধ্যে বিভেদ তৈরী করে দাও। কারণ, যুদ্ধ মানেই প্রতারণা”। ইবনে ইসহাকের বর্ণনায় এই গল্পের বাকি অংশ পাওয়া যায়।
“নুইয়াম মুহাম্মদের কথামত কাজ শুরু করে। বানু কুরাইযার সাথে তার বেশ গভীর বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক ছিলো। সে গিয়ে তাদের কাছে তাদের মধ্যকার বন্ধুত্তের কথা মনে করিয়ে দেয়। বানু কুরাইযার লোকেরা তার উপর সন্দেহ না করে তাদের আলোচনায় নুইয়ামকে অংশ নিতে দেয়। নুইয়াম তাদের বলে, কুরাইশ আর গাতাফানদের অবস্থা আর তোমাদের অবস্থা এক না এই যুদ্ধে। এই জায়গা তোমাদের, এখানে তোমাদের স্ত্রী পুত্র পরিবার আছে তোমাদের সাথে। কুরাইশরা এসেছে মুহাম্মদের সাথে যুদ্ধ করার জন্য মক্কা থেকে। তাদের স্ত্রী পুত্র পরিবার জমিজমা সবকিছুই মক্কায়। তোমরা যদি এখন কুরাইশদের সাহায্য করতে চাও, তাহলে যুদ্ধে যদি ভালোয় ভালোয় তার জিতে যায় তাহলে সমস্যা নাই, কিন্তু যদি তার যুদ্ধে হেরে যায় তখন কিন্তু তারা মক্কায় চলে যাবে তোমাদের রেখে। তখন কিন্তু মুহাম্মদ তোমাদের দেখে নেবে। অতএব কুরাইশদের সাহায্য করার আগে, তাদের নেতৃস্থানীয় লোকদের তোমাদের কাছে জিম্মি হিসাবে রেখে দাও। যাতে খারাপ কিছু ঘটলে তারা যেন তোমাদের যাহায্য না করে পালিয়ে যেতে না পারে। বানু কুরাইযার ইহুদিরা তার উপদেশকে চমৎকার বলে মেনে নেয়।
নুইয়াম এরপর কুরাইশদের কাছে গিয়ে আবু সুফিয়ানকে বলে, তোমরা জানো যে আমি তোমাদের পছন্দ করি ও মুহাম্মদের সংগ ত্যাগ করেছি। আমি একটা কথা শুনলাম যা তোমাদের জানানো আমার দায়িত্ব। তবে কথাটা যেন গোপন রাখা হয়। গোপনীয়তার আশ্বাস পেয়ে সে তখন তাদের বলে, যে ইহুদিদের সাথে তোমরা সন্ধি করার চেষ্টা করছো তারা কিন্তু তোমাদের সাহায্য করার স্বিদ্ধান্ত থেকে সরে এসেছে। আমি শুনেছি তারা মুহাম্মদের কাছে প্রস্তাব পাঠিয়েছে যে কুরাইশদের কিছু নেতাকে তারা জিম্মি করে তার কাছে পাঠিয়ে দিবে , যাতে সে তাদের কচুকাটা করতে পারে। তারপর একসাথে তারা মক্কাবাসীদের উপর আক্রমণ করবে। মুহাম্মদ ও তাদের প্রস্তাবে রাজী হয়েছে। অতএব আর যাই করো, বানু কুরাইযা যদি তোমাদের ভিতর থেকে জিম্মি হিসাবে কাউকে পাঠাতে বলে, একজনকেও পাঠিয়ো না।
এরপর সে গাতাফান গোত্রের লোকজনের কাছে গিয়ে মধুর বন্ধুত্তের দোহাই দিয়ে কুরাইশদের কাছে বলা ঘটনা একইভাবে বর্ণনা করে। (টীকা-৮৭)
এই কূটচালে কাজ হয়। মক্কার সম্মিলীত বাহিনী বানু কুরাইযার কাছে সাহায্য চাইলে তারা নুইয়ামের পরামর্শ মোতাবেক বলে যে তাদের হাতে মক্কাবাহিনীর নেতাদের জিম্মি রাখতে হবে। কুরাইশ ও গাতাফান গোত্রের লোকজন এতে নুইয়ামের কথার সত্যতা দেখতে পায়। ফলে তারা যুদ্ধ ছাড়াই ব্যার্থ মনে ফেরত যায়।
এই কূটচালের ফলে মুহাম্মদ ও তার লোকজন যুদ্ধ এবং রক্তক্ষয় থেকে বেঁচে যায়। এই ঘটনা থেকে মুসলিমরা জিহাদে প্রতারণা এবং কূটচালের ব্যাবহার সম্পর্কে শিক্ষা নেয়। একটা হাদিসে পাওয়া যায়।
“হাজাজ ইবনে আলাত একবার রাসুলের কাছে এসে বলে, ‘হে আল্লাহর নবী , মক্কাতে আমার বেশ কিছু ধন সম্পদ ও আত্নীয় আছে। আমি সেসব ফেরত চাই। আমি কি সেসব ফেরত নেয়ার জন্য, কাফিরদের বোকা বানাতে আপনার নামে কুকথা বলতে পারি ? নবী তাকে অনুমতি দিয়ে বললেন, ‘তোমার যা বলতে হয় বলতে পারো’। (টীকা- ৮৮)
আপাদমস্তক মুসলিমরা পশ্চিমের দেশগুলোতে এসে মুখে বলে যে তারা মডারেট। পশ্চিমের লোকজন যা শুনতে চায়, তারা তা-ই বলে চলে, কিন্তু গোপনে তাদের ধ্বংসের ফন্দি আঁটে। তারা বন্ধুবৎসল, অমায়িক এমনকি দেশপ্রেমিকেরও ভাব ধরে। কিন্তু তাদের একমাত্র উদ্দেশ্য হলো, ইসলাম প্রতিষ্ঠিত করা। মুখে মুখে তারা অনেক সহনশীলতা, ধর্মীয় বৈচিত্রের কথা বলে , কিন্তু কাজের বেলায় ঠনঠন।
ইসলামের কল্যাণের উদ্দেশ্যে মিথ্যা বলাকে বলা হয় ‘তাকিয়া’ বা পবিত্র প্রতারণা। তাকিয়ার নিয়ম অনুযায়ী অমুসলিমদের চোখে ধূলা দেয়ার উদ্দেশ্যে একজন মুসলিম যেকোন কিছু বলতে পারে, সত্য মিত্যার অপেক্ষা না করে।
তাকিয়া বা পবিত্র প্রতারণার ঝানু খেলোয়াড়দের একটি বহুল ব্যাবহৃত চাল হচ্ছে ইসলামের হুমকিকে ছোট করে উপস্থাপণ করা। উদ্দেশ্য হচ্ছে জিহাদের ভবিষ্যত ভুক্তভোগীদের বুঝানো যে জিহাদ তাদের বিরুদ্ধে নয়। Reza Aslan তার ‘No God but God’ বইয়ে ইসলামের এই ছলাকলার পরিপূর্ণ ব্যাবহার করেছেন। এই বইয়ে তিনি যুক্তি দেখান, ‘ইসলামিক দুনিয়াতে এখন যা ঘটছে তা আসলে ইসলামের ভিতর নিজস্ব বোঝাপড়া, পশ্চিমের বিরুদ্ধে ইসলামের যুদ্ধ নয়’। তিনি আরো লিখেন, “এই সংঘাতে পাশ্চাত্য দুনিয়া কেবল দর্শক- ইসলামের ইতিহাসের পরবর্তী অধ্যায় কে লিখতে এই যুদ্ধের অসতর্ক কিন্তু অংশগ্রহনেচ্ছু ভুক্তভোগী। ” টীকা-৮৯। নিউ ইয়র্ক, পেন্টাগন, লন্ডন , মাদ্রিদ আর বেসলান আসলে মুসলিমদের নিজেদের যুদ্ধে ক্রসফায়ারে পড়ে গেছে শুধু। ইসলামিক প্রতারণার এই নির্লজ্জ ও নির্জলা প্রদর্শণীর পরেও সিএনএন তাকে ডেকেছিলো পোপের তুর্কি সফর সম্পর্কে মতামত দেয়ার জন্য। যেন যে একজন নিরপেক্ষ দর্শক।
পশ্চিমা নারীকে পটানোর জন্য মুসলিম পুরুষ প্রায়ই একটি মিথ্যা বলে থাকে যে, ‘ইসলামের নারীদের রাণীর মর্যাদা দেয়া হয়’। আমি আজ পর্যন্ত এমন কোন দেশ দেখি নাই যেখানকার রাণীকে বুদ্ধিমত্তায় খাটো বলা হয় , পিটানো হয়, পাথর নিক্ষেপে খুন করা হয় বা বংশের সম্মান রক্ষার্থে খুন করা হয়।
আপাদমস্তক মুসলিম কেউ যদি আপনার দিকে তাকিয়ে হাসে ও বলে যে সে আপনার দেশকে ভালোবাসে ও আপনার বন্ধু হতে চায়, এই হাদিসটার কথা মনে করবেন,
“ কিছু মানুষের দিকে আমরা হাসিমুখ দেখাই বটে, কিন্তু আমাদের অন্তর তাদের অভিসম্পাত দেয়” টীকা-৯০।
অধ্যায়-২
মুহাম্মদের চারিত্রিক প্রোফাইল
মুহাম্মদের জীবনি নিয়ে হাজার হাজার গল্প প্রচলিত আছে। এর মধ্যে অনেকগুলো পুরোপুরি বানোয়াট, কিছু আছে দুর্বল ও সন্দেহজনক আর কিছু আছে যেগুলোকে বলা হয় সহিহ বা সত্য হাদিস। এসব সহিহ হাদিস থেকে মুহাম্মদের মোটামুটি পূর্ণ একটি ইমেজ দাঁড় করানো, ও তার চরিত্র এবং মানসিক গঠন সম্পর্কে ভালো ধারণা পাওয়া সম্ভব।
এ সমস্ত বর্ণনা থেকে যে ছবিটি উঠে আসে তা একজন নার্সিসিস্ট বা আত্নপ্রেমীর। এই অধ্যায়ে আমি নার্সিসিজমের উপরে প্রতিষ্ঠিত গবেষকদের লেখা উদৃত করে দেখানোর চেষ্টা করবো যে মুহাম্মদের চরিত্রের সাথে তা খাপে খাপে মিলে যায়।
মুহাম্মদের নার্সিসিজম সংক্রান্ত বিষয়ে পান্ডিত্য ও গবেষণার খুবই অভাব , কারণ মুসলিমরা কখনো মুহাম্মদ ও কুরআন নিয়ে নির্মোহ গবেষণা করার অনুমতি দেয়নি। কিন্তু তার মুহাম্মদ সম্পর্কে যেসব বর্ণনা পাওয়া যায় তা কেবল তার নার্সিসিজমের দিকেই যে ইংগিত করে তা নয়, বরং আজকের দুনিয়ার মুসলিমদের নানান উদ্ভট কাজকারবার ও আচার আচরণের ব্যাখ্যাও পাওয়া যায় এর মধ্যে। এভাবে একজনের পার্সোনালিটি ডিজঅর্ডার উত্তরাধিকারের মত তার অনুসারীদের ভিতর চলে এসেছে। একজনের মানসিক বিকৃতি, সুগভীর আত্নমোহ তার কোটি কোটি অনুসারীদের ভিতর ছড়িয়ে পড়েছে ও তাদেরকেও একইভাবে আত্নমোহে নিমগ্ন, অযৌক্তি ও বিপদজনক করে তুলেছে।
মুহাম্মদের মনস্তত্ত, তার নির্মমতা ও অবস্থা অনুযায়ী ভোল-পাল্টানো নৈতিকতার ব্যাবহার , এসব বুঝতে পারলেই আজকের দুনিয়ায় মুসলিমরা কেনো এত অসহিষ্ণু, ধ্বংসাত্নক ও প্যারানয়েড তা বুঝা যাবে। বুঝা যাবে তারা কেনো নিজেদের ভুক্তভোগী বলে দাবী করে যেখানে আদতে তারা নিজেরাই আক্রমণকারী।
নার্সিসিজম কি ?
The Diagnostic and Statistical Manual of Mental Disorders (DSM) অনুযায়ী নার্সিসিজম হচ্ছে একধরণের চারিত্রিক দোষ (Personality Disorder) , যার বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, নিজেকে বিশাল কিছু মনে করা, লোকজনের কাছ থেকে ভালোবাসা ও পছন্দ পাওয়াকে নিজের দাবী ও অধিকার বলে মনে করা। এতে আক্রান্ত ব্যাক্তি প্রায়শই নিজেকে মাত্রাতিরিক্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করে ও নিজের অর্জনকে ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে বড় করে দেখতে চায়। ক্ষুদ্র অর্জন স্বত্তেও প্রশংসা ও স্তুতি গ্রহণ এমনকি দাবী করে।
১৯৮০ এবং ১৯৯৪ এ DSM এর চতুর্থ ও পঞ্চম সংস্করণ এবং ইউরোপের ICD-10 (টীকা ৯২) এ একই রকমের ভাষায় নার্সিসিস্টিক পার্সোনালিটি ডিজঅর্ডারের সংজ্ঞা দেয়া হয়েছে,
“সর্বময় আত্নগরিমা ও হামবড়া ভাব(কল্পনায় এবং আচরণে ) , পরিপার্শের আনুগত্য ও পছন্দলাভের ইচ্ছা, অন্যের প্রতি সহানুভুতির ঘাটতি যা সাধারণত বয়প্রাপ্তির সাথে সাথে শুরু হয় ও বিভিন্ন ধরণের অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে বর্তমান থাকে। নিচের বর্ণনাগুলোর মধ্যে ৫ বা তার বেশি সংখ্যক বর্ণনা অবশ্যই মিলতে হবে।
১। নিজেকে বিশাল কিছু ও আত্ন-গুরুত্বপূর্ণ মনে করে ( নিজের প্রতিভা ও অর্জন নিয়ে অতিরঞ্জন করে, যথোপযুক্ত অর্জন ছাড়াই অন্যদের চাইতে নিজেকে উচ্চ বলে স্বীকার করে নেয়ার দাবী করে)
২। অসীম সাফল্য, খ্যাতি, ক্ষমতা, সর্বময় ক্ষমতা, অনন্যসাধারণ মেধা, শারীরিক সৌন্দর্য ও যৌনক্ষমতা অথবা আদর্শ, চিরস্থায়ী, সর্বোময় ভালোবাসা ও আনুগত্যে অলীক কল্পণায় মগ্ন থাকে।
৩। শক্তভাবে বিশ্বাস করে যে সে একক, অনন্যসাধার। কেবল তার সমমানের কারো দ্বারাই কেবলমাত্র সঠিকভাবে তাকে বুঝা ও তার সাথে চলাফেরা সম্ভব বলে মনে করে।
৪। মাত্রাতিরিক্ত ভালোবাসা, পছন্দ, আনুগত্য, মনোযোগ ও সম্মতি দাবী করে। এগুলো দিতে ব্যার্থ হলে চরম শাস্তির ভয় দেখায়।
৫। সমস্তু কিছু নিজের অধিকার বলে মনে করে। অযৌক্তিক, অসাধারণ ও নিজের পছন্দ অনুযায়ী ব্যাবহার পাওয়ার আবদার করে। তার চাওয়া বিনা প্রশ্নে পরিপূর্ণভাবে পূরণ করতে হবে বলে দাবী করে।
৬। নিজের উদ্দেশ্য পূরণের জন্য অন্যদের ব্যাবহার করে।
৭। সহানুভুতিহীন। অন্যের প্রয়োজন ও অনুভুতির কথা বুঝতে চায় না বা তোয়াক্কা করে না।
৮। অন্যদের নিয়ে সবসময় ঈর্ষা ও সন্দেহে ভোগে এবং মনে করে অন্যরাও তার বিরুদ্ধে এরকম ভাবছে।
৯। অহংকারী ও দাম্ভিক আচরণ করে, হতাশা হলে বা কেউ ভুল ধরিয়ে দিলে তার উপর ক্রোধান্বিত হয়। (টীকা-৯৩)
উপরের সমস্ত বৈশিষ্ট্যগুলোই মুহাম্মদের মধ্যে দেখা যায়। নিজেকে আল্লাহর মনোনীত রাসুল এবং সর্বশেষ নবী(কুরান ৩৩:৪০) ভাবা ছাড়াও মুহাম্মদ নিজেকে খায়রুল খালাক(সর্বশ্রেষ্ঠ সৃষ্টি) বলে মনে করতো, সর্বোত্তম আদর্শ (কুরান ৩৩:২১) বলে মনে করতো এবং প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ দুইভাবেই ,’অন্যসব নবীদের তুলনায় গুরুত্পূর্ণ’ (কুরান ২:২৫৩) বলে দাবী করতো। তার দাবী, সে হচ্ছে, ‘আল্লাহর নিকট পছন্দনীয় একজন’ (কুরান ১৭:৫৫), ‘সমস্ত দুনিয়ার জন্য রহমতস্বরুপ প্রেরিত’, (কুরান ২১:১০৭), ‘সর্বোচ্চ প্রশংসিত অবস্থানে অধিষ্ঠিত'(কুরান ১৭:৭৯)। এমন অবস্থান যা কেবলমাত্র তার নিজের জন্যই নির্ধারিত, তা হচ্ছে, হাশরের ময়দানে আল্লাহর আরশের পাশে দাঁড়িয়ে উম্মতকূলের জন্য শাফায়ত করার অধিকারসম্পন্ন। অর্থাৎ সেই হবে একমাত্র ব্যাক্তি যার আবেদন অনুযায়ী আল্লাহ ঠিক করবেন কে বেহেস্তে যাবে আর কে দোযখে। মুহাম্মদের বড় বড় দাবীর মধ্যে কুরআনে উল্লেখিত এগুলো সামান্য কয়েকটি মাত্র।
নিচের দুইটা আয়াতে মুহাম্মদের আত্নম্ভরীতা এবং নিজেকে নিজে সর্বোচ্চ গুরুত্বপূর্ণ ভাবার মানসিকতা খুব ভালোভাবে ফুটে উঠেছে।
“আল্লাহ ও তাঁর ফেরেশতাগণ নবীর প্রতি রহমত প্রেরণ করেন। হে মুমিনগণ! তোমরা নবীর জন্যে রহমতের তরে দোয়া কর এবং তাঁর প্রতি সালাম প্রেরণ কর।” (কুরান ৩৩:৫৬)
“যাতে তোমরা আল্লাহ ও রসূলের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন কর এবং তাঁকে সাহায্য ও সম্মান কর এবং সকাল-সন্ধ্যায় আল্লাহর পবিত্রতা ঘোষণা কর।” (কুরান ৪৮:৯)
মুহাম্মদ এতই আত্নমুগ্ধ ছিলো যে সে আকাশের উপরের আল্লাহর মুখ দিয়ে নিজের কথা বলিয়ে নেয় এভাবে,
“আপনি অবশ্যই মহান চরিত্রের অধিকারী। ” (কুরান ৬৮:৪)
“এবং আল্লাহর আদেশক্রমে তাঁর দিকে আহবায়করূপে এবং উজ্জ্বল প্রদীপরূপে।” (কুরান ৩৩:৪৬)
ইবনে সা’দের বর্ণনায় এসেছে মুহাম্মদ নিজের সম্পর্কে বলে
“বিশ্বের সমস্ত জাতির মধ্যে থেকে আল্লাহ পছন্দ করেছেন আরবদের। সমস্ত আরবদের ভিতর থেকে কিনানাদের। কিনানাদের ভিতর থেকে তিনি পছন্দ করেছেন কুরাইশ গোত্রকে। কুরাইশ গোত্রের মধ্যে তিনি পছন্দ করেছেন বানু হাশিমকে। আর বানু হাশিমের মধ্যে থেকে তিনি পছন্দ করেছেন আমাকে। ” (টীকা-৯৪)
বিভিন্ন হাদিসে মুহাম্মদ নিজের সম্পর্কে যেসব দাবী করেছে সেগুলো এরকম,
১- আল্লাহ সর্বপ্রথম যে জিনিস সৃষ্টি করেছেন তা হচ্ছে আমার রুহ।
২- সমস্ত জিনিসের আগে আল্লাহ আমার আত্না তৈরী করেন।
৩- আমি এসেছি আল্লাহর কাছ থেকে আর মুমিনরা আমার কাছ থেকে।(টীকা-৯৫)
৪- আল্লাহ যেমন আমাকে উচ্চ মর্যাদা দিয়ে তৈরী করেছেন তেমনি আমাকে দিয়েছেন সর্বোত্তম চরিত্র।
৫- তোমাকে তৈরী না করলে (হে মুহাম্মদ ) তাহলে এই মহাবিশ্ব আমি তৈরী করতাম না। (টীকা-৯৬)
উপরের কথাগুলোর সাথে জিসাসের বলা কথার তুলনা করে দেখা যাক। কেউ একজন তাকে “শ্রীযুক্ত প্রভু” বলে ডাকলে জিসাস সাথে সাথে বলেন, “কেনো আমাকে শ্রীযুক্ত বলে ডাকছো ? ঈশ্বর ছাড়া কেউ শ্রীযুক্ত নয়” (টীকা-৯৭)। প্যাথলজিক্যালি আত্নপ্রেমী ছাড়া আর কারো পক্ষে এমন বাস্তবতাবিবর্জিত দাবী করা সম্ভব না যে, পুরো মহাবিশ্ব কেবল তার জন্যই সৃষ্ট হয়েছে।
নার্সিসিস্ট বা আত্নপ্রেমীরা মাঝে মাঝে নিজেদের সম্পর্কে বড় বড় কথা বলার মধ্যে কপটতার সাথে সামান্য বিনয় মিশিয়ে নেয়। আবু সাইদ আল খুদরির বর্ণনায় এসেছে, নবী বলেন, “আমি সমস্ত মানবজাতির নেতা, কোনরকম অহংকার ছাড়াই বলছি এ কথা”।
তিরমিযি বর্ণনা করেন,
“নবী বলেন, আমি তোমার কথা শুনেছি আর তুমি যা বলছো তার সবই সত্য, আমিই হাবিবুল্লাহ, আর একথা আমি বলছি কোন অহংকার ছাড়া, হাশরের ময়দানে সম্মানের পতাকা বহন করবো আমি, আমিই প্রথম শাফায়াতকারী এবং আমার আবেদনই প্রথম কবুল করবেন আল্লাহ, আমিই প্রথম বেহেশতের দরজায় কড়া নাড়বো আর আল্লাহ তা খুলে দিবেন আমার জন্য যাতে আমি আমার দলবল নিয়ে আমার উম্মতদের মধ্যে থেকে দরিদ্রদের নিয়ে প্রবেশ করবো , আর আমি এসবই বলছি কোন অহংকার ছাড়াই। প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত যত মানব আসবে তার মধ্যে আমিই সর্বশ্রেষ্ঠ। আর এসবই বলছি আমি কোন অহংকার ছাড়া “। টীকা-৯৮
নার্সিসিস্টকে দেখতে আত্নবিশ্বাসী এবং এমনকি সফল মানুষ মনে হতে পারে। কিন্তু বাস্তবে তার (পুরুষদের মধ্যেই এই রোগের প্রকোপ বেশি) ভিতরে গভীর হীনমন্যতা বোধ থাকে, এজন্যই সে ক্রমাগত বাইরে থেকে প্রশংসা ও পছন্দ পেতে চায়। Malignant Self-Love (টীকা-৯৯)নামক বইয়ের লেখক ডক্টস স্যাম বিক্রম (Sam Vaknin) এই বিষয়ে বেশ সম্মানিত একজন বিশেষজ্ঞ। তার মত করে এই রোগকে বুঝেছে এমন লোক খুবই কমই আছেন। Vaknin এর লেখায় এসেছে :
প্রত্যেকেই বিভিন্ন মাত্রায় নার্সিসিস্ট। নার্সিসিসজম মূলত স্বাস্থ্যকর চর্চা। টিকে থাকার জন্য এই জিনিস গুরুত্বপূর্ণ। স্বাস্থ্যকর এবং অসুস্থ্য নার্সিসিজমের মধ্যে পার্থক্যটা মাত্রায়। অস্বাস্থ্যকর পর্যায়ের নার্সিসিজমের বৈশিষ্ট্য হচ্ছে অন্যের প্রতি সহানুভুতির ভয়ানক স্বল্পতা। নার্সিসিস্ট অন্য মানুষকে দেখে মানুষ হিসাবে বিবেচনা করে না। সে তাদের দেখে তার উদ্দেশ্য সাধনের জন্য প্রয়োজনীয় বস্তু হিসাবে। নিজের নার্সিসিজমের যোগানদার হিসাবে। তার বিশ্বাস যে সে অন্যদের তুলনায় আলাদা হিসাবে বিবেচিত হবার অধিকার রাখে, কারণ নিজের সম্পর্কে কাল্পনিক উচ্চ ধারণা আছে তার মধ্যে। দুনিয়ায় নিজের আসল অবস্থান সম্পর্কে কোন ধারণাই নাই নার্সিসিস্টের। তার চেতনা ও আবেগে বিকৃত। নার্সিসিস্ট নিজের কাছে নিজে মিথ্যা বলে , অন্যদের কাছেও। দেখাতে চায় তার ‘ধরাছোঁয়ার বাইরের অবস্থা’ , আবেগহীনতা এবং এনকি তাকে জয় করা অসম্ভব এমন একটা অবস্থা। নার্সিসিস্টের কাছে তার সমস্ত কিছুই জীবনের চাইতে বড়। সে এমনকি যখন ভদ্রতা দেখায় সেটাও অনেকটা আক্রমণাত্নক ভদ্রতা। তার প্রতিজ্ঞাগুলো উদ্ভট, তার করা সমালোচনা হিংস্র এবং ভীতিকর , তার দেখানো উদারতা ফাঁপা। নার্সিসিস্ট হচ্ছে ধূর্ততার ও মুখোশবাজির দক্ষ খেলোয়াড়। সে দেখানো সুন্দর আচরণে দক্ষ, দক্ষ অভিনেতা, যাদুকরী ব্যাক্তিত্তের অধিকারী এবং তার ও তার মুরিদকূলের পরিচালক। প্রথম দেখায় তার এই রহস্য বুঝতে পারা বেশ কঠিন।(টীকা-১০০)
নার্সিসিস্টের মুরিদান
নার্সিসিস্টের প্রচুর মুরিদ দরকার। সে নিজেকে কেন্দ্র করে আলাদা এক সমাজ, এক দুনিয়া তৈরী করে। সেই দুনিয়ায় সে তার ভক্ত ও অনুসারীদের জড়ো করে আর তাদের মোসাহেবী, চাটুকারী আচরণকে উৎসাহিত ও পুরষ্কৃত করে। এই চক্রের বাইরে যারা তার হয়ে পরে তার ঘোরতর শত্রু। Vaknin আরো বলেন,
“ মুরিদানের মধ্যমণি ও গুরু হচ্ছে নার্সিসিস্ট নিজে। অন্যান্য গুরুর মত সেও তার স্ত্রী, সন্তান, পরিবার পরিজন , বন্ধু ও সহকর্মীদের কাছ থেকে প্রশ্নহীন আনুগত্য দাবী করে। মুরিদদের কাছ থেকে বিশেষ শ্রদ্ধা ও আলাদা ব্যাবহার পাবার যোগ্য মনে করে সে নিজেকে। ভিন্নমত ভিন্নচিন্তার কেউ থাকলে সে তাদের শাস্তি দেয়। সে তার মুরিদদের মধ্য নিয়মানুবর্তীতার চর্চা, তার শিক্ষা ও দেখানো পথের প্রতি আনুগত্য এবং দলের সম্মিলিত স্বার্থের ব্যাপারে সজাগ থাকার জন্য জোর দেয়। বাস্তবের দুনিয়ায় তার যোগ্যতা যত কম এই মুরিদের দলের ভিতরে তার কড়াকড়ি তত বেশি এবং মুরিদদের মগজধোলাইয়ের চেষ্টাও তত বেশি থাকে।
নার্সিসিস্টের নিয়ন্ত্রণ নির্ভর করে অস্পষ্টতা, হঠকারীতা, ধোঁয়াশা সূক্ষ্ণ নির্যাতনের (টীকা-১০১) উপর। তার নিয়ত পরিবর্তনশীল ঝোঁকের উপরেই নির্ভর করে সঠিক ও ভুল, পছন্দনীয় ও অপছন্দনীয় কাজ এবং কোন কাজ করতে হবে কোনটা এড়িয়ে যেতে হবে এসব। সে একচ্ছত্রভাবে ঠিক করে দেয় তার মুরিদদের অধিকার ও কর্তব্য অথচ আবার মুহূর্তের ঝোঁকেই পাল্টে ফেলে সেসব।
নার্সিসিস্ট খুঁতখুঁতে স্বভাবের হয়। মুরিদদের আচরণের ক্ষুদ্র থেকে তুচ্ছতর বিষয়ের উপর সে তার নিজের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করে। তার ইচ্ছা ও স্বার্থের বিরুদ্ধে যে যায় অথবা তার কাছে বিন্দুমাত্র যে গোপন করতে চায় তাকে সে চরমতম শাস্তি দেয়।
নার্সিসিস্টের কাছে মুরিদদের সীমা ও ব্যাক্তগত গোপনীয়তার কোন মূল্য নেই। তাদের ব্যাক্তিগত ইচ্ছাকে সে বিন্দুমাত্র গ্রাহ্য না করে তাদের নিজের উদ্দেশ্য পূরণের বস্তু হিসাবে ব্যাবহার করে। যেকোন পরিস্থিতি এবং যে কাউকে সে সম্পূর্ণরুপে নিজের নিয়ন্ত্রণের আওতায় রাখতে পছন্দ করে।
অন্যদের ব্যাক্তিগত চিন্তা ও স্বাধীনতার ঘোর বিরোধীতা করে সে। কোন বন্ধুর সাথে দেখা করা বা নিজের পরিবারের সাথে দেখা করতে যাওয়ার মত তুচ্ছতম বিষয়েও তার অনুমতি নিতে হয় মুরিদদের। তার চারপাশের সবাইকে সে আস্তে আস্তে সম্পূর্ণভাবে একজনকে অন্যজনের কাছ থেকে আলাদা করে ফেলে যাতে তারা সবাই মানসিক, অর্থনৈতিক, যৌন ও সামাজিকভাবে সম্পূর্ণরুপে তার উপর নির্ভরশীল হয়ে যায়।
তার আচরণ আত্নগরিমায় ভরপুর। অন্যদের সাথে তার ব্যাবহার তাচ্ছিল্যের এবং প্রায়ই সমালোচনায় ভরপুর। মুরিদকূলের ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র ভুলের জন্য সমালোচনা করা , আবার অন্যদিকে তাদের প্রতিভা ও দক্ষতাকে অতিরিক্ত রকমে ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে বলা এই দুই মেরুতে আর আচরণ। মুরিদদের কাছে তার প্রত্যাশার পরিমাণ মারাত্নকরকমভাবে বাস্তবতাবিবর্জিত এজন্য সে তাদের সাথে আচরণও করে সীমাহীন খারাপভাবে। কারন কোন বাস্তব মানুষের পক্ষে পুরোপুরি তার প্রত্যাশা পূরণ করা সম্ভব না। (টীকা-১০২)
মুহাম্মদ একটা বিশাল মিথ্যার জন্ম দেয় যেটা তার ভক্তরা পরম সত্য বলে মেনে নেয়। ভয়ের ব্যাপার হচ্ছে তারা হিটলারের ভক্তদের মতই স্বেচ্ছায় অংশগ্রহন করা লোক।
আগের অধ্যায়ে আমরা দেখেছি মুহাম্মদ কিভাবে তার ভক্তদের তাদের পরিবার-পরিজনদের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলে ও কিভাবে তাদের জীবনের ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র বিষয়ের উপর নিজের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করে। দুঃখজনকভাবে ১৪০০ বছরেও এই অবস্থার পরিবর্তন হয়নি। অনেক বাবামার হৃদয়বিদারক চিঠি আমি পড়েছি যারা জানাচ্ছেন তাদের ছেলে বা মেয়ে মুসলমান হয়ে যাবার পর সবসময় অন্য মুসলিমদের সাথে উঠাবসা করে যাদের ইচ্ছায় তারা তাদের বাবামার সাথে সম্পর্কচ্ছেদ করেছে।
নার্সিসিস্টের সংগ্রাম
নার্সিসিস্ট জানে যে সরাসরি নিজের নিজের মহিমা প্রচার করতে গেলে লোকে সেটা খারাপ চোখে দেখবে। তাই সে নিজেকে দেখায় বিনয়ী, প্রায় আত্নপ্রচারবিমুখ, বৃহত্তর স্বার্থে স্রষ্টা, মানবতা বা দেশের সেবক হিসাবে। এই মুখোশের আড়ালে লুকিয়ে থাকে তার আসল উদ্দেশ্য। নার্সিসিস্ট তার মুরিদদের এক বিশাল সর্বময় সংগ্রামের ডাক দেয়। এই সংগ্রাম এতই বিশাল এতই মহৎ যে এর সফলতা ছাড়া তাদের জীবন অর্থহীন। সে দিন বদলের ডাক দেয়া ও আশার আলো দেখানো বিপ্লবী নেতা। অতিরঞ্জিত হুজুগ ও মানসিকতা নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে এই সংগ্রামের মূল্য তার অনুসারীদের জীবনের চাইতে বেশি হয়ে দেখা দেয়। তারা এতটাই মগজধোলাই হয়ে যায় যে এই সংগ্রামের জন্য নিজেদের জীবন বিলিয়ে দিতে এবং অন্যের জীবন কেড়ে নিতেও দ্বিধাবোধ করে না। নার্সিসিস্ট আত্নত্যাগকে উৎসাহিত করে। যত বেশি, তত ভালো। এরপর সে নিজেকে প্রস্তাব করে এই সংগ্রামের এই সাধারণ উদ্দেশ্যের মধ্যমণি হিসাবে। তাকে কেন্দ্র করেই সংগ্রামের কাজকারবার চলে। একমাত্র তার দ্বারাই সম্ভব এই সংগ্রামকে সফলতার পথে নিয়ে যাওয়া ও তার অনুসারীদের স্বপ্নের দুনিয়ায় নিয়ে যাওয়া। এই বিশাল সংগ্রাম তাকে ছাড়া কোনভাবেই চলতে পারে না। এর মধ্য দিয়ে সে হয়ে যায় দুনিয়ার সবচে গুরুত্বপূর্ণ ব্যাক্তি। একমাত্র ব্যাক্তি যে তার অনুসারীদের মুক্তি, উন্নতি ও খ্যাতির চাবিকাঠি।
এভাবেই নার্সিসিস্ট গুরু তার অনুসারীদের ব্যাবহার করে। তাদের সংগ্রাম মূলত তাদের ব্যাক্তিগত স্বার্থ উদ্ধারের উপায় মাত্র। এই সংগ্রাম যেকোন কিছুর জন্য হতে পারে। নিজের ৯০০ অনুসারীকে গণ-আত্নহত্যার নির্দেশ দিয়েছিলো যেই জিম জোন্স (Jim Jones), তার সংগ্রাম ছিলো “সামাজিক ন্যায়বিচার” এর জন্য। সে ছিলো এই সংগ্রামের ত্রাণকর্তা।
হিটলার তার সংগ্রামের জন্য বেছে নিয়েছিলো আর্যদের শ্রেষ্ঠত্বের ধারণা। সে সরাসরি তার নিজের মহিমা কীর্তন করেনি বরং জার্মানিকে উচ্চাসনে নিয়ে যাবার জন্য সংগ্রাম করেছে বলে দাবী করেছে। অবশ্য সে নিজেই ছিলো সেই সংগ্রামের অবিচ্ছেদ্য মধ্যমণি ও রাজা।
স্টালিনের সংগ্রাম ছিলো সমাজতন্ত্রের জন্য। তার বিরুদ্ধে যে-ই কথা বলতো সে-ই ছিলো নির্যাতিত শ্রমিক শ্রেণীর বিরোধী এবং হত্যাযোগ্য।
মুহাম্মদ তার অনুসারীদের তার নিজের পূজা করার জন্য বলেনি। সে নিজেকে দাবী করেছিলো “সামান্য বার্তাবাহক” হিসাবে। নিপুন ধড়িবাজের মত, “আল্লাহ ও তার রাসূলকে” অনুসরণ করতে বলে সে মূলত তার নিজের আজ্ঞাবহ হিসাবে তৈরী করেছিলো তার অনুসারীদের। আল্লাহর বেনামিতে কুরআনের এক আয়াতে সে বলে,
“তারা আপনার কাছে জিজ্ঞেস করে, গনীমতের হুকুম সম্পর্কে। বলে দিন, গণীমতের মাল হল আল্লাহর এবং রসূলের। অতএব, তোমরা আল্লাহকে ভয় কর এবং নিজেদের অবস্থা সংশোধন করে নাও। আর আল্লাহ এবং তাঁর রসূলের হুকুম মান্য কর, যদি ঈমানদার হয়ে থাক।”(কুরান ৮-১)
আল্লাহর যেহেতু বেদুঈনদের কাছ থেকে চুরি করা মালের কোন দরকার নাই, সেহেতু এইসব মাল আসলে চলে যাচ্ছে তার প্রক্সি মুহাম্মদের কাছেই। কেউই যেহেতু আল্লাহকে দেখে নাই বা তার কথা শুনে নাই সেহেতু আনুগত্য আসলে মুহাম্মদের কাছেই। লোকে ভয় পেত মুহাম্মদ কেই কারণ পরাক্রমশালী আল্লাহর সাথে মধ্যস্ততা করতে পারতো কেবল সে-ই। অনুসারীদের উপর নিয়ন্ত্রণ রাখার জন্য আল্লাহর জুজুর দরকার ছিলো মুহাম্মদের। আল্লাহতে বিশ্বাস না থাকলে কি তার অনুসারীরা নিজেদের জীবন বিলিয়ে দিতো ? মানুষ খুন করতো , যাদের মধ্যে তাদের নিজের রক্তের আত্নীয়রাও ছিলো ? অন্যদের মালামাল লুট করে মুহাম্মদের হাতে সঁপে দিতো ? এই কাল্পণিক আল্লাহই ছিলো তার দাপট ও নিয়ন্ত্রণের হাতিয়ার। আল্লাহ মূলত মুহাম্মদেরই আরেক রুপ। হাস্যকর হচ্ছে মুহাম্মদ কড়াভাবে নিষেধ করতে আল্লাহর সাথে কোন শরীক দাঁড় করানোকে, কিন্তু যৌক্তিকভাবে বাস্তবতার বিচারে মুহাম্মদ আর আল্লাহর মধ্যে কোন পার্থক্য নেই। মুহাম্মদই আল্লাহর ক্ষমতার শরীক হিসাবে নিজেকে দেখিয়েছে।
নার্সিসিস্টে একটা বিশাল উদ্দেশ্য দরকার হয় তার অনুসারীদের কাজে লাগানোর জন্য। জার্মানরা হিটলারের জন্য যুদ্ধ বাঁধায় নি। তারা যুদ্ধ করেছিলো হিটলার যে বিশাল উদ্দেশ্য ও সংগ্রামের কথা তাদের ভিতরে ঢুকিয়ে দিয়েছিলো তার জন্য।
Sam Vaknin লিখেছেন,
“নার্সিসিস্ট তার আত্নপ্রেমের লিপ্সা চরিতার্থ করার জন্য হাতের নাগালে যা পায় তা-ই ব্যাবহার করে। যদি ঈশ্বর, মাজহাব, মসজিদ, বিশ্বাস ও প্রাথিষ্ঠানিক ধর্ম তার তার উদ্দেশ্য পূরণে সহায়ক হয় তাহলে সে ধার্মিকের ভাব ধরে। যদি এগুলো তার উদ্দেশ্য চরিতার্থ করতে না পারে তাহলে সে ধর্মত্যাগী হয়” (টীকা-১০৩)
ইসলাম ছিলো অন্যদের নিয়ন্ত্রণের হাতিয়ার। মুহাম্মদের পরে অন্যরাও এই হাতিয়ার ব্যাবহার করেছে একই উদ্দেশ্য সাধনের জন্য। যেসব নেতারা তাদের অনুসারীদের নিয়ন্ত্রণের জন্য ইসলামকে ব্যাবহার করে মুসলিমরা তাদের হাতের পুতুল হয়ে যায়।
মির্জা মালকাম খান নামে এক ধর্মান্তরিত আমেরিকান মুসলিম যিনি জামালুদ্দিন আফগানীর সাথে মিলে ইসলামি পূনঃজাগরণের ডাক দিয়েছিলেন, তার একটা ধূর্ত স্লোগান ছিলো এরকম, “ মুসলিমদের বললেই হয় যে অমুক জিনিস কুরআনে আছে, তাহলেই তারা সেই জিনিসের জন্য নিজেদের জান কুরবানী করে দেবে”। (টীকা-১০৪)
নার্সিসিস্টের সিলসিলা
মৃত্যুশয্যায় মুহাম্মদ তার অনুসারীদের তার অসমাপ্ত জিহাদ চালিয়ে যাবার আদেশ দিয়ে গিয়েছিলো। চেঙ্গিস খান তার মৃত্যুশয্যায় এরকমই এক নির্দেশ দিয়ে গিয়েছিলো তার সন্তানদের উদ্দেশ্যে। সে বলেছিলো তার ইচ্ছা ছিলো পুরো দুনিয়া জয় করা, কিন্তু তার পক্ষে যেহেতু আর সম্ভব হচ্ছে না, সন্তানরা যেনো এই অসমাপ্ত কাজ শেষ করে। মঙ্গলরাও ছিলো প্রাথমিক মুসলিমদের মতই সন্ত্রাসী। নার্সিসস্টের কাছে জয়ই শেষ কথা। তার কোন বিবেক নাই। তার কাছে অন্যদের জীবনের দাম নেই।
৫১ বছর বয়সে হিটলার তার বাম হাতে কাঁপুনি ধরা রোগ আছ বলে বুঝতে পারে। সে এটা সবার কাছ থেকে গোপন করে রাখে ও অবস্থার অবনতি ঘটলে জনসম্মূখে বের হওয়া বন্ধ করে দেয়। সে বুঝতে পারে মৃত্যু ঘনিয়ে আসছে। তার উদ্দেস্য সাধণে সে আরো দৃঢ়কল্প হয়ে উঠে। দ্রুততার সাথে নতুন নতুন আক্রমণ করতে থাকে, কারণ সে বুঝতে পারে তার লড়াই এখন সময়ের বিরুদ্ধে। নার্সিসিস্ট তার কাজের সিলসিলা রেখে যেতে চায়।
ইসলামকে ধর্ম হিসাবে দেখাটা আসলে বড় ভুল। ইসলামের আধ্যাত্নবাদী ব্যাখ্যাগুলো মূলত পরের যুগের মুসলিম দার্শণিকদের তৈরী করা। মুহাম্মদের ছাগলামি কথাবার্তাকে তারা স্বর্গীয় মাহাত্ন্য দেয়। তার পরের যুগের অনুসারীরা নিজেদের ব্যাক্তিত্ব দিয়ে ইসলামকে অন্যরুপে তৈরী করে। সময়ের সাথে সাথে এসব নতুন রুপও পুরাতন হয়ে যায় এবং কালের ছাপ পড়ার কারণে অনেকের কাছে ধর্মের আদি রুপ বলে মনে হতে থাকে।
ইসলামকে যদি ধর্ম হিসাবে ধরা হয় তাহলে সে একই বিচারে নাৎসিবাদ, কমুনিজম, স্যাটানিজম, Heaven’s Gate, People’s Temple, Branch Davidian এসবকেও ধর্ম হিসাবে ধরতে হবে। মানুষকে শিক্ষিত করার, মানুষের সুপ্ত ক্ষমতাকে বের করে আনার, আত্নাকে উন্নত চেতনার স্তরে উন্নীত করার, মানুষে মানুষে মেলবন্ধন তৈরী করার ও মানুষকে আলোকিত করার কোন দর্শণ হিসাবে যদি ধর্মকে বিবেচনা করি সেই বিচারে ইসলাম কোনভাবেই ধর্ম হতে পারে না।
নার্সিসিস্ট নিজেই খোদা হতে চায়
নার্সিসিস্টের কাছে শেষতক যা গুরুত্বপূর্ণ তা হচ্ছে ক্ষমতা। সে চায় তাকে যাতে কেউ অবহেলা করতে না পারে। সবার মনোযোগ ও শ্রদ্ধার লক্ষ্যবস্তু হতে। ভিতরে ভিতরে নার্সিসিস্ট মূলত একা, হীনমন্যতায় ভোগা মানুষ। তারা জানে নিজেদের বিশাল সংগ্রামের কান্ডারি, আশার আলো হিসাবে বিপ্লবী নেতার মত করে উপস্থাপণ করতে পারলে তারা অনেক অনুসারী পাবে যেভাবে চিনির চারপাশের পিঁপড়া জমা হয় তেমন করে। সংগ্রামের লক্ষ্য বা উদ্দেশ্য আসলে তেমন গুরুত্বপূর্ণ কিছু না তার জন্য। কেবলই একটা অজুহাত। নার্সিসিস্ট নিজের খেয়ালে কাল্পণিক খোদা আর বিশাল সংগ্রামের লক্ষ্য ঠিক করে। নিজেদের বানানো খোদাকে যত বেশি মহিমান্বিত করা যায় আর নিজের তৈরী করা সংগ্রামকে যত ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে বড় ও গুরুত্বপূর্ণ করা যায় , ততই তাদের নিজের ক্ষমতা ও প্রতিপত্তি বাড়ে।
মুহাম্মদের খুব দরকারী হাতিয়ার ছিলো আল্লাহ। তার মাধ্যমে সে তার অনুসারীদের উপর সীমাহীন প্রভাব বিস্তার করতে পেরেছিলো। তাদের জীবনের একচ্ছত্র মালিক হয়ে দাঁড়িয়েছিলো সে নিজেই। তার বর্ণনায় খোদা কেবল একজনই, পরাক্রমশালী আবার দয়াময়। আর মুহাম্মদ ছিলো তার একমাত্র দালাল। কার্যত তাতে মুহাম্মদই হয়ে উঠে একমাত্র খোদা। যদিও দেখানো হচ্ছে আল্লাহর নির্দেশ মেনে চলছে মুহাম্মদ ও অন্যরা , কিন্তু বাস্তবে দেখা যাচ্ছে মুহাম্মদের সব ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র ইচ্ছা ও ঝোঁকের আদেশকে মেনে চলতে বাধ্য হচ্ছে তার অনুসারীরা। Vaknin এই উদ্ভট প্রক্রিয়া ব্যাখ্যা করেছেন তার “For Love of God – Narcissist and Religion” লেখায় (টীকা-১০৫)
“ নার্সিসিস্ট নিজেই হতে চায় খোদা – সর্বশক্তিমান, সর্বজ্ঞানী, সর্বত্র বিরাজমান, পছন্দনীয়, সকলে আলোচনার বিষয় ও সমীহ-জাগানীয়া। খোদা হচ্ছে নার্সিসিস্টের স্বপ্নদোষ, তার বিশাল কল্পণা। কিন্তু অনেকভাবেই খোদাকে ব্যাবহার করা যায়। নার্সিসিস্ট নানান উপায়ে ক্ষমতাধরের কতৃত্বকে সম্মানিত আবার অসম্মান করে।
সম্মানের সময়ে সে ক্ষমতাধরদের উচ্চাসনে বসায়, তাদের পছন্দ করে, অনুকরণ করতে চায় (অনেকসময় হাস্যকরভাবে), তাদের কর্তৃত্বকে রক্ষা করতে চায় আক্রমণ থেকে। ক্ষমতাধররা কখনো ভুল করতে পারে না, তাদের ভুল হয় না। নার্সিসিস্ট তাদের মনে করে জীবনের চেয়ে বড়, নির্ভুল, নিখুঁত, অসীম ও অসাধারণ। কিন্তু যখনই দেখা যায় ক্ষমতাধররা অবশ্যাম্ভাবীভাবে তার অতিরিক্ত ও অবাস্তব উচ্চাশা পূর্ণ করতে ব্যার্থ হয় , তখনই সে এসব প্রাক্তন সম্মানিত ক্ষমতাধরদের অপমান করা শুরু করে।
এবার তারা কেবলি “মানুষ” (নার্সিসিস্টের কাছে এটা অস্তিত্বের একটা নীচু স্তর)। এরা এখন ক্ষুদ্র, ভংগুর, ভুলে ভরা, ভীতু, কুচক্রী, নির্বোধ ও মোটামুটি মানের। সর্বোচ্চ ক্ষমতাধর খোদার সাথে তার সম্পর্কেও নার্সিসিস্ট এই একই সম্মান-অপমান চক্রের ভিতর দিয়ে যায়।
কিন্তু প্রায়ই, যখন ভিতরে ভিতরে যখন তার মোহভংগ ঘটে ও বিপ্লবী চেতনায় হতাশা ভর করে, তখনও সে খোদাকে ভালোবাসার ও তার নির্দেশ মেনে চলার ভান করে যেতে থাকে। নার্সিসিস্ট এই ভান ধরে যেতে থাকে কারণ, খোদার নৈকট্যই তার কর্তৃত্বের উৎস। বিভিন্ন তরীকার নেতা, পুরোহিত, ইমাম, ধর্মপ্রচারক, রাজনীতিবিদ এমনকি বুদ্ধিজীবি – সবাই তাদের কর্তৃত্ব দেখায় খোদার সাথে তাদের সম্পর্ক অন্যদের চাইতে উচ্চ পর্যায়ের এই দাবীর ভিত্তিতে।
ধর্মীয় কর্তৃত্ব থাকার কারণে নার্সিসিস্ট তার ধর্ষকামী ইচ্ছা ও নারীবিদ্বেষের চর্চা করে যেতে পারে বাধাহীন ও খোলামেলাভাবে। যে নার্সিসিস্টের ক্ষমতা ও কর্তৃত্বের উৎস ধর্ম, সে চায় একপাল বাধ্য ও অনুগত দাস যাদের উপর সে তার খামখেয়ালি প্রভুত্ব খাটাতে পারে। সবচে নিষ্পাপ ও বিশুদ্ধ ধর্মীয় আবেগকেও নার্সিসিস্ট ধর্মীয় আচার এবং শক্ত কর্তৃত্বের কাঠামোর ভিতরে নিয়ে আসতে পারে। সরলপ্রাণ মানুষের আবেগকে পূঁজি করে তার ব্যাবসা চলে। তার অনুসারীরা তার হাতের জিম্মি হয়ে পড়ে।
ধর্মীয় কর্তৃত্ব নার্সিসিস্টের আত্নরতি চর্চারও সুযোগ করে দেয়। তার সহধার্মিকরা, তার অনুসারীরা, তার জামাতের লোকজন , তার দর্শক শ্রোতারা হয়ে পড়ে তার আত্নরতি চরিতার্থ করার উপায়। তারা তার আদেশ নিষেধ মেনে চলে, তার দেখানো পথে চলে, তার ব্যাক্তিত্বের প্রশংসা করে, তার তুচ্ছ ব্যাক্তিগত বিষয়ের প্রশংসা করে , তার প্রয়োজন (অনেকসময় যৌনাকাংখাও) পূরণ করে , তাকে সম্মান ও পূজা করে।
এমনিতেও “প্রবল পরাক্রমশালী” কোন স্বত্তার অংশ হতে পারা নার্সিসিস্টের জন্য সন্তুষ্টির উৎস। খোদার একটা অংশ হতে পারে, তার বিশালত্বের ভিতরে নিজেকে খুঁজে পাওয়া, তার ক্ষমতা ও সন্তুষ্টি সরাসরি উপভোগ করতে পারা, তার সাথে সরাসরি যোগাযোগ করতে পারা, এসবই নার্সিসিস্টের অসীম আত্নরিত চরিতার্থ করার উপায়ে পরিণত হয়। খোদার নির্দেশ পালন করে, তাকে ভালোবেসে, তার প্রতি আত্নসমর্পণ করে, তার সাথে যোগাযোগ করে, তার সাথে একাত্ন হয়ে গিয়ে এবং এমনকি তার বিরোধীতা করে নার্সিসিস্ট নিজেই হয়ে উঠে খোদা। (নার্সিসিস্টের শত্রু যতো বিশাল হয় সে নিজেকে তত বেশি গুরুত্বপূর্ণ ও বিশাল মনে করে )
নার্সিসিস্টের জীবনের অন্যান্য বিষয়ের মতই , সে খোদাকেও এক ধরণের বিপরীত-নার্সিসিস্টে পরিণত করে ফেলে। খোদাই হয়ে উঠে তার আত্নরতি চরিতার্থ করার বৃহত্তম উৎস। এই অসীম ক্ষমতাধর ও অকল্পণীয় স্বত্তার সাথে সে ব্যাক্তিগত এক সম্পর্ক তৈরী করে যাদের অন্যদের উপর সে অসীম ক্ষমতার চর্চা করতে পারে। সে নিজেই খোদার প্রক্সি হয়ে উঠে, খোদার সাথে তার একচ্ছত্র সম্পর্কের দাবী দিয়ে। সে খোদাকে পরমপূজ্য দাবী করে , এবং একই সাথে তার অবমূল্যায়ন ও অপব্যাবহারও করে। নার্সিসস্টের মনস্তত্তের এই প্যাটার্ণ থেকে স্বয়ং খোদাও রেহাই পায় না।” (টীকা-১০৬)
নার্সিসিস্টরা সরাসরি নিজেদের গুনগান গায় না। তারা বিনয়ের পর্দার আড়ালে লুকিয়ে তাদের প্রস্তাবিত খোদা, আদর্শ, বিপ্লব ও ধর্মের গুনগান গায় যেগুলো মূলত তাদের নিজের স্বত্তারই অন্যরুপ। তারা হয়তো নিজেদের কেবলমাত্র বার্তাবাহক, সরল, বিনয়ী আত্নত্যাগী হিসাবে কোন এক খোদার সেবক অথবা কোন মহৎ সর্বময় সংগ্রামের একজন সৈনিক হিসাবে দেখাতে পারে। কিন্তু বাস্তবে দেখা যায় যে সেই সর্বশক্তিমান খোদা বা মহৎ সংগ্রামের সাথে তাদের নিজেদের সম্পর্ক অবিচ্ছেদ্য, কারণ একমাত্র তারাই সেই খোদার সাথে যোগাযোগ করতে পারে সেই মহৎ সংগ্রামের উদ্দেশ্য ও আদর্শ সম্পর্কে একমাত্র তার মাধ্যমেই জানা সম্ভব। তাদের প্রস্তাবিত খোদা বা সংগ্রামের বিরোধীতাকারীদের প্রতি তারা চরম মাত্রায় অসহিষ্ণু হয়।
নার্সিসিস্টরা নির্মম ও দুর্দমনীয় কিন্তু বোকা না। তারা অন্যদের যে ক্ষতি করে সে সম্পর্কে পুরোপুরিই আত্নসচেতন থাকে। অন্যদের আঘাত করে যে ক্ষমতার স্বাদ পাওয়া যে তারা তা উপভোগ করে। তারা খোদার মত ক্ষমতা উপভোগ করে। নিজের এক ইশারায় কাকে পুরষ্কৃত করা হবে, কাকে শাস্তি দেয়া হবে, কাকে মেরে ফেলা হবে , কাকে বাঁচতে দেয়া হবে এসব ঠিক করে দেয়ার ক্ষমতা তারা ভালোভাবেই উপভোগ করে। মুহাম্মদের সমস্ত কিছু – তার নির্মমতা, উদ্ভট আত্নগরিমা, যারা তার আনুগত্য স্বীকার করে নিয়েছে তাদের প্রতি উদারতা, তার আত্নবিশ্বাস ও বর্ণময় ব্যাক্তিত্ব – সবই ব্যাখায় করা যায় তার নার্সিসিজম রোগের ভিত্তিতে।
নার্সিসিজম রোগের কারণ
সমাজের কাছ থেকে তাচ্ছিল্য পেয়ে (বাস্তবে অথবা নিজের ভিতরে মনে করে) যে শিশু বড় হয় সে তার এই হীনমন্যতাবোধকে অবচেতনে এক ধরণের মানসিক প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে পুষিয়ে নিতে চায়। Alfred Adler নামের একজন প্রখ্যাত মনোবিজ্ঞানী এই প্রক্রিয়ার নাম দিয়েছেন “Superiority Complex” বা বাংলায় আত্নগরিমাবোধ। এ প্রক্রিয়ার একটা অংশ হচ্ছে নিজের যেকোন অর্জনকে বিশাল করে দেখা ও যাদেরকে সে শত্রু হিসাবে দেখে তাদের যেকোন কিছুকে খাটো করে দেখা।
পিতামাতের লালন-পালন পদ্ধতির ভুল হচ্ছে নার্সিসিস্টিক পার্সোনালিটি ডিজঅর্ডারের প্রধাণ কারণ। উদাহরণস্বরুপ বলা যায় যেসব বাবা মা সন্তানকে অতিরিক্ত প্রশংসা, বিলাস দিয়ে ও নূন্যতম ন্যায়নীতি না শিখিয়ে স্বেচ্ছাচারী করে তোলে তারা আর অন্যদিকে যারা সন্তানকে শারিরীক নির্যাতন ও অবহেলা দিয়ে মানসিকভাবে পঙ্গু করে দেয় ; সন্তানের ব্যাক্তিত্বগঠনে ব্যার্থতার পরিমাণ এই দুই দলেরই একই পরিমাণ। ফলস্বরুপ দেখা যায় এ ধরণের পরিবেশে বড় হওয়া নার্সিসিস্ট প্রাপ্তবয়ষ্কদের দুনিয়ার জন্য নিজেকে পুরোপরি প্রস্তুত করতে পারে না। জীবন সম্পর্কে একটা অবাস্তব ধারণা নিয়ে সে বড় হয়। উল্টোদিকে যে বাচ্চা যথেষ্ঠ পরিমাণ সাহায্য ও উৎসাহ পায় না তার মধ্যেও নার্সিসিস্টিক পার্সোনালিটি ডিজঅর্ডার দেখা দিতে পারে।
হাদিস ও সিরাত থেকে আমরা জানি যে মুহাম্মদ কে একেবারে শিশু অবস্থাতেই অন্যীক মহিলার কাছে দিয়ে দেয়া হয়। এমনকি হতে পারে তার নিজের মা আমিনা তার ব্যাপারে মোটেই উৎসাহী ছিলো না ? মুহাম্মদ যখন ষাট বছরের বৃদ্ধ তখনো সে আমিনার কবরে গিয়ে প্রার্থণা করেনি। কেনো ? সেই বয়সেও কি তার মায়ের প্রতি ক্ষোভ যায় নি ?
হালিমা শিশু মুহাম্মদ কে নিতে চায়নি। কারণ সে ছিলো গরীব ঘরের এতিম বাচ্চা। তার বিধবা মা যে খুব বেশি টাকা পয়সা দিতে পারবে না এটা হালিমা জানতো। হালিমা ও তার পরিবারের অন্যরা মুহাম্মদের সাথে কি ধরণের আচরণ করেছিলো তার উপর এই বিষয়ের একটা প্রভাব থাকার কথা না ? এমনকি শিশুরাও নিষ্ঠুর হতে পারে। সেইসব দিনে এতিম হওয়াটা এক ধরণের কলংকের মত ছিলো। এখনও বিভিন্ন দেশে এতিমদের প্রতি এ ধরণের মনোভাব বিদ্যমান। মুহাম্মদের বাল্যকালের অবস্থা সুস্থ্য আত্নসম্মান তৈরীর জন্য উপযুক্ত ছিলো না।
Stress Response Syndromes নামক বইয়ের লেখক Jon Mardi Horowitz বলেন,
“ সবার পছন্দের পাত্র হওয়া, সবার কাছ থেকে আলাদা ব্যাবহার পাওয়া, নিজের অবস্থানে সন্তুষ্ঠ থাকার মত এসব আত্নরতিমূলক ইচ্ছা যখন অপূর্ণ থেকে যায় নার্সিসিস্ট তখন বিষণ্ণতা, উৎকণ্ঠা, অস্থিরচিত্ত , লজ্জা , স্ববিধ্বংসী কার্যকলাপ ও অজানা আক্রোশে আক্রান্ত হয়। এই আক্রোশের লক্ষ্যবস্তু হয় এমন যেকোন কেউ যার দিকে সে তার নিজের দুরাবস্থার জন্য আংগুল তুলতে পারে। এইসব কষ্টদায়ক অনুভুতি থেকে বাঁচতে সে শিশু তখন বাইরের দুনিয়াকে দেখার জন্য এক ধরণের আত্নরতিমূলক কাল্পণিক রংগিন চশমা পরে নেয় চোখে।” (টীকা-১০৭)
মুহাম্মদের বাল্যকাল ছিলো কষ্টকর। কুরানের সুরা ৯৩ এর আয়াত ৩-৮ এ দেখা যায় সে নরম হৃদয়ে তার একাকী এতিম বাল্যকালের কথা স্মরণ করে ও নিজেকে নিশ্চিন্ত করে যে আল্লাহ তার প্রতি দয়ালু হবেন ও তাকে ছেড়ে যাবেন না। এ থেকে বুঝা যায় বাল্যকালের একাকীত্বের স্মৃতি তার জন্য কতটা যন্ত্রণাদায়ক ছিলো। কর্কশ বাস্তবতা থেকে বাঁচতে সে নিজের ভিতর এক কল্পণার জগত তৈরী করেছিলো যার বর্ণনা এত বিস্তৃত ও বর্ণীল ছিলো যে তার পালক বাবা মা এসব শুনে ভয় পেয়ে গিয়েছিলো। এ থেকে বুঝা যায় মুহাম্মদের শিশুকাল কোনভাবেই মসৃণ ছিলো না। জীবনের প্রথম বছরগুলোতে ঘটে যাওয়া ঘটনা নিয়ে হয়তো মুহাম্মদের স্পষ্ট স্মৃতি ছিলো না কিন্তু সেসব সময়ের মানসিক ক্ষত সে সারা জীবন বয়ে বেড়িয়েছিলো। তার কাছে তার কল্পণার তৈরী করা জগত ছিলো সত্য। এটা ছিলো তার নিরাপদ আশ্রয়, সুখময় এক জায়গা যেখানে গিয়ে কর্কশ বাস্তবতার হাত থেকে রেহাই পাওয়া যায়। কল্পণার এ জগতে তার জন্য ভালোবাসা ছিলো , শ্রদ্ধা ছিলো। সে ছিলো সকলের পছন্দনীয় , ক্ষমতাবান, গুরুত্বপূর্ণ এমনকি ভয়ংকরও। বাইরের দুনিয়া থেকে পাওয়া অবহেলা পুষিয়ে নিতে এই কল্পণার দুনিয়াতে সে যা ইচ্ছে তা-ই হতে পারতো।
Vaknin এর মতে, “নার্সিসিজমের সত্যিকারের কারণ এখনো পুরোপুরি বুঝা যায়নি, তবে এতটুকু মোটামুটি নিশ্চিতভাবে বলা যায় যে সবকিছু শুরু হয় শিশুকালে (পাঁচ বছর বয়সের মধ্যে)। ধারণা করা হয় এই রোগের কারণ শিশুর প্রাথমিক অভিভাবকের (পিতামাতা অথবা লালনকারী) ব্যার্থতা। প্রাপ্তবয়স্ক নার্সিসিস্টের অনেকের ক্ষেত্রেই দেখা যায় শিশুকালে বাবা অথবা মা কোন একজনের কাছ থেকে ক্রমাগত অবহেলা অথবা নির্যাতনের স্বীকার ছিলো সে। সব শিশুই (সুস্থ্য ও অসুস্থ্য) যখন বাবামার কাছ থেকে কোন কাজে বাঁধা পায় তখন মাঝে মাঝে তারা এক ধরনের নার্সিসিস্টিক অবস্থায় ঢুকে যায় যেখানে তারা নিজেদের ক্ষমতাবান হিসাবে ভাবতে পারে। এটা সাধারণত স্বাভাবিক ও সুস্থ্য আচরণ কারণ এর মাধ্যমে শিশু বাবামার বাধার বিপরীতে নিজের ভিতরে আত্নবিশ্বাস গড়ে তুলতে পারে। (টীকা-১০৮)
অবহেলিত হওয়া শিশুরা নিজেদের ভিতরে এক ধরণের অক্ষমতা, অপূর্ণতার বোধ নিয়ে বড় হয়। বোধের গভীরে ধরে নেয় ভালোবাসা ও মনোযোগ পাওয়ার যোগ্য নয় তারা। এর প্রতিক্রিয়ায় নিজেদের ইগো ধরে রাখার জন্য তারা নিজেদের ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে বড় দেখাতে চায়। নিজেদের দুর্বলতা ধরতে পারার কারণে তারা বুঝতে পারে অন্যরাও যদি এই সত্য জেনে যায় তাহলে কেউ তাদের ভালোবাসবে না, পছন্দ করবে না, সম্মান করবে না। এজন্য তারা নিজেদের নিয়ে মিথ্যা কাল্পণিক আত্নগরিমাপূর্ণ গল্প বানায় ও ছড়ায়। তাদের এই কাল্পণিক ক্ষমতা সাধারণত বাইরের কারো উপর ভিত্তি করে গাঁথা হয়। বাবা মা অথবা কোন শক্তিশালী বন্ধু এরকম কারো সাথে মিলিয়ে। এটুকু পর্যন্ত ঠিক আছে , কিন্তু এই ধরণের নার্সিসিজম যদি প্রাপ্তবয়স্ক হওয়া পর্যন্ত চলতে থাকে তাহলে সেটা নার্সিসিস্টিক পার্সোনালিটি ডিজঅর্ডার রোগের পরিণত হয়। মুহাম্মদের কাল্পণিক বন্ধু ছিলো আল্লাহ। সর্বশক্তিমান, মহা পরাক্রমশালী। এই আল্লাহর নিজেকে যোগ করে ও তার একমাত্র দালাল হিসাবে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করার মাধ্যমে আল্লাহর সমস্ত শক্তির দুনিয়াবী অংশীদার হিসাবে সে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করে।
ছয় বছর বয়সে মায়ের মৃত্যুর পরে মুহাম্মদ তার বৃদ্ধ দাদা আব্দুল মুত্তালিবের আশ্রয়ে আসে। মুত্তালিব তাকে অতিরিক্ত আদরে নষ্ট করে ফেলেন। বিভিন্ন হাদিস হতে দেখা যায় মুত্তালিব ছিলেন মুহাম্মদের প্রতি অতিরিক্ত রকমের নরম। মুত্তালিবের নিজেরা ছেলেরা যখন তার চারপাশে বসে থাকতো তখন তিনি মুহাম্মদ কে বসতে দিতেন তার নিজের মাদুরের উপর।
আব্দুল মুত্তালিব যে মুহাম্মদের আসল মূল্য আগেই বুঝতে পেরেছিলেন মুহাম্মদের এই দাবী তার অবশ্যই তার নিজের কল্পণাপ্রসূত। এটা তার নিজের কাছে নিজের বলা মিথ্যা। তবু এটা নিশ্চিত যে আব্দুল মুত্তালিব মুহাম্মদকে বুঝিয়েছিলেন যে সে আলাদা কিছু, গুরুত্বপূর্ণ কিছু। তিনি তার এতিম নাতিকে ভালোবাসা ও যত্ন দিয়ে লালন করেছিলেন। করুণা ও দয়াবশত। কিন্তু মুহাম্মদ তার এই আলাদা যত্নের অর্থ করেছিলো তার নিজের বিশালত্ব ও গুরুত্ব ভেবে। শিশুকালে তার নিজের মধ্যে নিজেকে বিশাল ভাবার যে প্রবণতা শুরু হয়েছিলো তা আব্দুল মুত্তালিবের আচরণের কারণে আরও শক্তপোক্ত হয়। সে নিজেকে অদ্বিতীয়, আলাদা ও গুরুত্বপূর্ণ কেউ হিসাবে আবার আবিষ্কার করে।
আব্দুল মুত্তালিবের মৃত্যুর পরে চাচা আবু তালিব তার লালনপালনের ভার নেন। এতিম অবস্থায় দ্বারে দ্বারে ঘুরে পালিত হওয়ার কারনে আবু তালিবের সন্তানদের মাঝে মুহাম্মদের প্রতি দয়া ছিলো। দাদা ও চাচা দুইজনেই মুহাম্মদকে যথেষ্ঠ পরিমাণ শাসন করতে ব্যার্থ হন। এই সমস্তু কিছু মিলিয়েই তার মধ্যে নার্সিসিস্টিক পার্সোনালিটি ডিজঅর্ডার দেখা দেয়। মনোবিজ্ঞানী J.D. Levine ও Rona H. Weiss লিখেন:
“শারীরবিদ্যার দৃষ্টিকোণ থেকে আমরা যেমন দেখি যে, একটা শিশুকে সুস্থ্য সবলভাবে বড় করে তুলতে হলে তাকে পুষ্টিকর খাবার দিতে হবে, তীব্র গরম ও শীত থেকে বাঁচাতে হবে ও যথেষ্ঠ পরিমাণ অক্সিজেন আছে এমন বাতাস দিতে হবে শ্বাস-প্রশ্বাসের জন্য , ঠিক তেমনি মনোবিজ্ঞানের দৃষ্টিকোণ থেকে আমরা জানি শক্ত সবল ও সুস্থ্য মানসিকতাসম্পন্ন হিসাবে বড় হতে হলে শিশুকে ভালো সহানুভুতিশীল পরিবেশ দিতে হবে যেখানে, ১) তার মনোযোগ প্রাপ্তির ইচ্ছা পূর্ণ হবে পিতামাতার ভালোবাসা পেয়ে ও ২) শক্তিশালী প্রাপ্তবয়স্কের অধীনে চারপাশের সাথে খাপ খাইয়ে নিতে পারার মতো স্থিতিশীলতা থাকবে।” (টীকা-১০৯)
জীবনের একেবারে প্রথম কয়েক বছরে মুহাম্মদ পেয়েছিলো অবহেলা ও একাকীত্ব, তার পরে আবার অতিরিক্ত আদর। তার পরিস্থিতি নার্সিসিস্টে পরিণত হবার জন্য একেবারে যথোপযুক্ত ছিলো।
মুহাম্মদ তার মায়ের সম্পর্কে কিছু বলেছিলো এমন কিছু পাওয়া যায় না। মক্কা বিজয়ের পরে একবার তার মায়ের কবরে গিয়েছিলো কিন্তু কোন প্রার্থণা করেনি। তাহলে কেন যাওয়া ? হতে পারে এটা দেখানো যে তাকে ছাড়াই সে অনেক দূর আসতে পেরেছে, অনেক বড় কিছু করতে পেরেছে। অন্যদিকে তার বর্ণনায় দাদা আব্দুল মুত্তালিব এর কথা অনেকবার এসেছে যিনি তাকে ভালোভাসা দিয়েছিলেন ও তার নার্সিসিস্টে পরিণত হবার জন্য কাঁচামাল যুগিয়েছিলেন।
মনোবিজ্ঞানীদের মতে শিশুর জীবনের প্রথম পাঁচ বছর সবচে গুরুত্বপূর্ণ সময়। এ সময়েই ঠিক হয়ে শিশু কতদূর আগাবে। এই পাঁচ বছরে মুহাম্মদের মানসিক প্রয়োজনগুলো মিটেনি। প্রথম কয়েক বছরের অবহেলা ও নিদারুণ একাকীত্বের স্মৃতির ভার সে প্রাপ্তবয়স্ক হবার পরও বয়ে বেড়াচ্ছিলো। নিজের প্রতি এক ধরণের হীনমন্যতাবোধ ও নিজের মূল্য সম্পর্কে ভিতরে ভিতরে অনিশ্চয়তা নিয়ে সে বেড়ে উঠেছিলো। এই দুর্বলতাকে সে লুকাতে চাইতো মাত্রাতিরিক্ত আত্নঅহংকার দিয়ে। নিজেকে দেখাতো চাইতো সমস্ত কিছুর অধিপতি, বিশাল কিছু হিসাবে।
সে নিজেকে খোদার একমাত্র অংশীদার হিসাবে দাবী করে , আর অন্য কেউ যাতে তাকে উৎখাত করতে না পারে সেজন্য নিজেকে শেষ নবী বলে দাবী করে যায়। তার ক্ষমতা একেবারে পরিপূর্ণ এবং চিরদিনের জন্য।
মুহাম্মদের উপর খাদিজার প্রভাব
ইসলামে খাদিজার ভূমিকা এখনো পুরোপুরিভাবে বুঝা ও স্বীকার করে নেয়া হয়নি। মুহাম্মদের উপর তার প্রভাব ছিলো বিশাল। ইসলামের জন্মে মুহাম্মদের সাথে সাথে খাদিজার ভূমিকাও সমান সমান বলে স্বীকার করা উচিৎ। তাকে ছাড়া ইসলাম সম্ভবত টিকতে পারতো না।
খাদিজা তার তরুণ স্বামীকে পছন্দ করতো একটু বেশিই। খাদিজার সাথে বিয়ের পর মুহাম্মদ কোন কাজ করেছিলো বলে কোথাও পাওয়া যায় না। বিয়ের পরে খাদিজার ব্যাবসায় ক্রমাবনতি হতে থাকে এবং তার মৃত্যুর পরে পুরো পরিবার আবার দারিদ্রে পতিত হয়।
মুহাম্মদ তার সন্তানদের দেখাশোনাও করতো না। দুনিয়ার প্রতি বীতশ্রদ্ধ হয়ে মুহাম্মদ তার প্রায় পুরোটা সময় কাটাতো একাকী, তার কাল্পণিক চিন্তার আকাশ-কুসুম জগতে।
Vaknin এর ভাষায়,
“এ ধরণের অসহ ব্যাথা থেকে বাঁচতে নার্সিসিস্টিক পার্সোনালিটি ডিজঅর্ডারে ভোগা কিছু কিছু রোগী সমাজ থেকে নিজেকে গুটিয়ে নেয় ও মিথ্যা বিনয় ও নম্রতা দিয়ে নিজেদের বিশাল অন্তর্গত আত্নগরিমাকে ঢাকতে চায়। একাকীত্ব, লজ্জা ও অপূর্ণতার বোধ থেকে সাধারণভাবে বিষণ্ণতা ও জন-বিচ্ছিন্নতার উৎপত্তি হয়।” (টীকা-১১০)
মাঝে মাঝে মুহাম্মদ কয়েকদিনের খাবার একসাথে নিয়ে তার নির্জন গুহায় ধ্যানে চলে যেতো। ফিরতো কেবল নতুন করে খাবার ও অন্যান্য জিনিস নিয়ে যাবার জন্য।
খাদিজাকে ঘরেই থাকতে হতো। দুইজনের মধ্যে জন্ম নেয়া নয়জন বাচ্চার দায়িত্ব না কেবল, তার স্বামীর দায়-দায়িত্বও তাকেই নিতে হতো। কারণ তার আচরণও ছিলো দায়িত্বজ্ঞানহীন একটা বাচ্চার মতই। তাকে কখনো অভিযোগ করতে শুনা যায় নি। আত্নত্যাগেই সে সুখী ছিলো। কেনো ?
এটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটা প্রশ্ন। এ থেকে ইংগিত পাওয়া যায় খাদিজার সম্ভবত নিজস্ব আলাদা মানসিক সমস্যা ছিলো। আধুনিক মনোবিজ্ঞানে যাকে বলা হয় সহ-নির্ভরশীল (codependent) অথবা বিপ্রতীপ-নার্সিসিস্ট (Reversed Narcissist)। মুহাম্মদ যখন তার হ্যালুসিনেশনের গল্প বলে খাদিজাকে তখন সে কেনো কোন ওঝা না ডেকে বরং সেসব কথা বিশ্বাস করে নেয় ও মুহাম্মদের নবীত্বের ক্যারিয়ার শুরু করতে সাহায্য করে তা বুঝতে হলে খাদিজার এই মানসিক অবস্থাকে আমলে নিতে হবে।
National Mental Health Association এর সংজ্ঞানুযায়ী সহ-নির্ভরতা হচ্ছে “এটা শিখে নেয়া আচরণের এক ধরণের প্যাটার্ণ যা প্রজন্মান্তরে চলতে পারে। এটি মানসিক ও আচরণগত এক ধরণের সমস্যাজনক অবস্থা। এ ধরনের রোগীর সুস্থ্য ও পারষ্পরিক সন্তুষ্টিপূর্ণ সম্পর্ক তৈরী ও চালিয়ে যাওয়ার ক্ষমতা কমে যায়। এটাকে অন্যভাবে “সম্পর্কের আসক্তি” (Relationship Addiction) ও বলা হয়, কারণ সহ-নির্ভরশীলতার রোগীরা প্রায়ই একপাক্ষিক, মানসিকভাবে ধ্বংসাত্নক বা নিপীড়নমূলক সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে ও চালিয়ে যায়। এই রোগ প্রথম আবিষ্কার করা হয় প্রায় দশ বছর আগে মাদকাসক্তদের পরিবারের ব্যাক্তিদের মাঝে সম্পর্ক নিয়ে দীর্ঘদিনের গবেষণার ফলাফল থেকে। সহ-নির্ভরশীলতায় আক্রান্ত পরিবারের অন্য সদস্যদের দেখে ও তাদের কাছ থেকে শিখে অন্যরাও ধীরে ধীরে এ রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়তে পারে।” (টীকা-১১১)
খাদিজা ছিলো সফল ও সুন্দরী নারী। তার পিতা খুয়াইলিদের সবচে প্রিয় কন্যা। খুয়াইলিদ তার নিজ পুত্রদের চাইতে বেশি আস্থা রাখতেন খাদিজার উপর। মক্কার ক্ষমতাধরদের বিয়ের প্রস্থাব ফিরিয়ে দিয়েছিলো খাদিজা। কিন্তু টগবগে তরুন, অভাবগ্রস্থ মুহাম্মদকে দেখে খাদিজা প্রথম দেখাতেই প্রেমে পড়ে যায় ও নিজের চাকরানীর মধ্যস্ততায় বিয়ের প্রস্তাব পাঠায়।
উপর থেকে ভাসাভাসাবে দেখলে হয়তো মনে হবে মুহাম্মদের যাদুকরী ব্যাক্তিত্ব দেখে এই ক্ষমতাবান মহিলা বুঝি মোহগ্রস্ত হয়ে গিয়েছিলো। আদতে বিষয়টি আরো জটিল।
তাবারির বর্ণনায় এসেছে,
“খাদিজা মুহাম্মদের কাছে বিয়ের পয়গাম পাঠায়। এই ফাঁকে সে তার বাবাকে বাড়ীতে ডেকে এনে তাকে প্রচুর পরিমাণ মদ পান করিয়ে মাতাল করে ফেলে ও সুগন্ধী মাখিয়ে কেতাদুরুস্ত পোশাক পরিয়ে প্রস্তুত করে। অন্যদিকে গরু জবাই করে খাবার দাবারের ব্যাবস্থা করে। এর পরে মুহাম্মদ ও তার চাচাদের আসতে বলে। সবাই জড়ো হলে তার মাতাল বাবা মুহাম্মদের সাথে তার বিয়ে পড়ান। মাতাল অবস্থা কাটলে তিনি বলে উঠেন এই আতর, পোশাক , খাবার-দাবার এগুলোর উদ্দেশ্য কি ? তখন খাদিজা বলে তুমি আমাকে মুহাম্মদ বিন আবদুল্লাহর সাথে বিয়ে দিয়েছো। তিনি বলেন, অসম্ভব। আমি একাজ করি নাই। মক্কার বিখ্যাত সব লোকেরা তোমাকে বিয়ে করতে চেয়েছে , আমি রাজি হইনি, আর এই ফকিরের সাথে আমি কেনো তোমার বিয়ে দিতে যাবো ? ” টীকা-১১২
মুহাম্মদের পক্ষ উষ্মার সাথে দাবী করে সমস্তু কিছু তার মেয়েই আয়োজন করেছে। বৃদ্ধ তার তলোয়ার বের করলে মুহাম্মদের আত্নীয়রাও তাদের তলোয়ার বের করে। রক্তারক্তি যখন আসন্ন তখন খাদিজা সবার সামনে মুহাম্মদের প্রতি তার ভালোবাসার কথা ও বিয়ের সমস্তু কিছু আয়োজন করার কথা স্বীকার করে নেয়। খুয়াইলিদ তখন শান্ত হন ও যা ঘটে গেছে তা আর যেহেতু উল্টানো যাবে না সেহেতু মুহাম্মদের পক্ষের সাথে বিবাদ মিটিয়ে ফেলেন।
একটা ধীরস্থীর বুদ্ধিমতি মহিলা কিভাবে হঠাৎ তার চাইতে ১৫ বছরের ছোট একটা চালচূলোহীন তরুণের প্রেমে পড়ে যেতে পারে ? এই হঠকারি আচরণের মূলে রয়েছে খাদিজার নিজস্ব অন্য এক ধরনের মানসিক সমস্যা।
খাদিজার পিতা মদ্যপ ছিলো বলে প্রমাণ পাওয়া যায় বিভিন্ন বর্ণনায়। খাদিজা নিশ্চয়ই জানতো তার বাবার মদের প্রতি দুর্বলতার কথা। এ কারণেই সে বিয়ের পুরো প্রক্রিয়ায় ধোঁকা দেয়ার জন্য মদের আশ্রয় নেয়। সাধারণত যারা মাদকে আসক্ত না তারাও মাঝেমধ্যে টুকটাক মদ পান করে ও জানে কতটুকু হলে থামতে হবে। খুয়াইলিদ কিন্তু অতিথিরা আসার আগেই মাতাল হয়ে গিয়েছিলেন। এ থেকে ধারণা করা যায় তিনি কেবল সামাজিকতার খাতিরে মদ পান করতেন না বরং পুরোদস্তুর মাদকাসক্তই ছিলেন। কিন্তু এর গুরুত্ব কি ? খাদিজা যে সহ-নির্ভরশীলতা রোগে আক্রান্ত ছিলো সেটা প্রতিষ্ঠা করার জন্য এটা একটা গুরুত্বপূর্ণ তথ্য। মাদকাসক্ত ব্যাক্তির পরিবারের সন্তানদের মধ্যে সহ-নির্ভরশীলতায় আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবণা বেশি থাকে।
খাদিজার পিতা তাকে অতিমাত্রায় আগলে রাখতেন ও তাকে নিয়ে অতিরিক্ত উচ্চাশা রাখতেন নিজের মধ্যে। গরীব ঘরের মুহাম্মদের সাথে তার চল্লিশোর্ধ কণ্যার বিয়ের প্রতিক্রিয়ায় তিনি বলেন, ‘মক্কার সবচে বিখ্যাতরা তোমাকে বিয়ে করতে চেয়েছে কিন্তু আমি রাজি হই নাই’। এখান থেকে পরিষ্কার যে খাদিজা ছিলো তার চোখের মণি। খুয়াইলিদের অন্য সন্তান ছিলো, পুত্র ছিলো, কিন্তু খাদিজা ছিলো তার গর্ব ও আনন্দের স্থল। খাদিজা ছিলো তার একমাত্র সফল সন্তান।
যেসব শিশুকে অতিরিক্ত আদর ও উচ্চাশা দিয়ে বড় করা হয় তারা প্রায়ই বাবামার ছায়াতলে বেড়ে উঠে। এরা প্রায়শই সহ-নির্ভরশীলতায় আক্রান্ত হয়। এরা সাধারণত বাবা অথবা মায়ের প্রতি অতিরিক্ত পরিমাণে আচ্ছন্ন থাকে ও বাইরের দুনিয়ার কাছে বাবা মাকে গর্বিত করাকেই নিজেদের অস্তিত্তের উদ্দেশ্য হিসাবে ধরে নেয়। এরা ‘বিষ্ময়-শিশু’ হিসাবে বিখ্যাত হওয়ার প্রত্যাশা নিয়ে বড় হয় ও নিজেদের সাফল্য দিয়ে যাতে তাদের উপর করা প্রত্যাশার জবাব দিতে পারে সে বিষয়ে সচেতন থাকে।
ক্রমাগত আরো ভালো করার চাপে থাকার কারণে এ শিশু তার স্বাধীন ব্যাক্তিত্ব গড়ে তুলতে পারে না। নার্সিসিস্টিক ও পারফেকশনিস্ট পিতামাতার প্রত্যাশা পূরণ করাকেই সে তার জীবনের চূড়ান্ত উদ্দেশ্য মনে করে। সে বুঝতে পারে তার ভালোবাসা প্রাপ্তি নির্ভর করছে সে কেমন অর্জন দেখাতে পারলো তার উপর, অন্যকিছুর উপর নয়। সন্তান হিসাবে পিতামাতার নিঃশর্ত ভালোবাসা আরো দূরের ব্যাপার। মাদকাসক্ত বাবা তার নিজের মানসিক অতৃপ্তি ঝাড়তে চায় সন্তানদের উপর, বিশেষ করে যে সন্তানের ভিতর সম্ভাবণা বেশি তার উপর। সে চায় এই সন্তান যেনো জগতের সমস্ত কিছুতে সবার উপরে থাকে ও তার নিজের ব্যার্থতার বোঝা প্রশমিত করে।
সহ-নির্ভরশীলতার রোগী সমতার ভিত্তিতে গড়ে উঠা সুস্থ্য স্বাভাবিক সম্পর্কের মধ্যে সুখ ও পূর্ণতা খুঁজে পায় না। সম্পর্কের অন্য মানুষটির নিরবচ্ছিন্ন সেবক ও তুষ্টিকারক হিসাবেই সে কেবলমাত্র সুখ খুঁজে পায়। এই ধরণের সহ-নির্ভরশীলতার রোগীর জন্য তাই খাপে খাপ সংগী হচ্ছে অপরিসীম চাওয়ার অধিকারী নার্সিসিস্ট।
খাদিজা তার জন্য আসা সফল ও প্রাপ্তবয়স্ক পাণিপ্রার্থীদের ফিরিয়ে দিয়ে প্রেমে পড়ে তরুণ এবং অর্থনৈতিক মানসিক দুই দিক থেকেই অভাবী মুহাম্মদের। সহ-নির্ভরশীলতার রোগী ভালোবাসা ও করুণাবোধের মধ্যে পার্থক্য করতে পারেনা। যাদের করুণা করা উচিৎ ও দুরাবস্থা থেকে উদ্ধার করা যায় সর্বোচ্চ, এ ধরণের লোকের প্রেমে পড়ার ঝোঁক থাকে এদের মধ্যে।
Vaknin তার লেখায় সহ-নির্ভরশীল এর বদলে ব্যাবহার করেন বিপ্রতীপ-নার্সিসিস্ট শব্দবন্ধ। সহ-নির্ভরশীল ও নার্সিসিস্টের মধ্যকার সম্পর্ক নিয়ে তিনি বলেন,
“বিপ্রতীপ-নার্সিসিস্ট শুধুমাত্র কোন নার্সিসিস্টের সাথে সম্পর্কে জড়ালেই সত্যিকারের কোন আবেগ অনুভব করতে পারে। বিপ্রতীপ-নার্সিসিস্ট শুরু থেকে এমন পরিবেশ পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যায় যা তাকে নার্সিসিস্টের জন্য যথোপযুক্ত সংগীতে পরিণত করে। নার্সিসিটের ইগোকে মজবুত করা, তার বিশালত্বের অংশ হওয়া, প্রশংসা ও ভালোবাসার দাবী করা তখনই যখন সেটা নার্সিসিস্টের জন্য আরো বেশি পরিমাণ প্রশংসা ও ভালোবাসা বয়ে আনে তখন।”(টীকা-১১৩)
সফল ও সুন্দরী খাদিজা কেনো মুহাম্মদের মত অভাবীর প্রতি উৎসাহিত হয় তার ব্যাখ্যা পাওয়া যায় এখানে। বিপ্রতীপ-নার্সিসিস্টরা নিজেদের ক্ষেত্রে সফল হলেও তাদের সম্পর্কগুলো সাধারণত অসুস্থ্য হয়। Vaknin আরো বলেন,
“বিপ্রতীপ-নার্সিসিস্ট নার্সিসিস্টের সাথে মা-শিশু সম্পর্কের মত এক ধরণের সম্পর্ক তৈরী করে। নার্সিসিস্টের আত্নম্ভরীতাকে সমর্থণ দিয়ে বিপ্রতীপ-নার্সিসিস্ট তার নিজস্ব দাসত্বের ক্ষুধা মিটায়। (নার্সিসিস্ট তার নিজের আত্নগরীমার সমর্থণ পায় বিপ্রতীপ-নার্সিসিস্টের কাছ থেকে)। বিপ্রতীপ-নার্সিসিস্টের নিজস্ব পূর্ণতাবোধের জন্য তাকে সম্পর্ক করতে হয় কোন না কোন এক নার্সিসিস্টের সাথে। নার্সিসিস্টকে সুখী করার জন্য, তার উপযুক্ত যত্ন করার জন্য, ভালোবাসা ও আদর দেয়ার জন্য যা যা কিছু করা দরকার তার সবই করতে প্রস্তুত থাকে বিপ্রতীপ-নার্সিসিস্ট। কারণ সে মনে করে এগুলো পাওয়া নার্সিসিস্টের অধিকার। বিপ্রতীপ-নার্সিসিস্ট নার্সিসিস্টকে মহিমান্বিত করে, তার শক্ত আশ্রয় হিসাবে কাজ করে, তার কাছ থেকে পাওয়া সমস্ত অন্যায় ও অবহেলাকে ধীরস্থীরভাবে মেনে নেয়, তার কাছ থেকে পাওয়া অসম্মানকে গায়ে মাখে না। ” (টীকা-১১৪)
মুহাম্মদ ও খাদিজার বিয়ে দেখে মনে হয় একেবারে নিয়তির অমোঘ লিখনের মত। মুহাম্মদ ছিলো ক্রমাগত প্রশংসা, মনোযোগ ও আদরের জন্য বুভুক্ষ এক নার্সিসিস্ট। গরীব এবং মানসিকভাবে কাংগাল। প্রাপ্তবয়স্ক হলেও তার ভিতরের শিশুটি তখনো শিশুকালে না পাওয়া আদর ও মনোযোগের জন্য ক্ষুধার্ত। তার প্রয়োজন ছিলো এমন কেউ যে তার দেখাশোনা করবে, যার উপর অত্যাচার করা যাবে , নিজের প্রয়োজনে যাকে ব্যাবহার করা যাবে। দুগ্ধপোষ্য শিশু যেভাবে তার মায়ের উপর অত্যাচার করে সেভাবে।
দুগ্ধপোষ্য শিশুর সাথে মায়ের সম্পর্কও নার্সিসিস্ট ও বিপ্রতীপ-নার্সিসিস্টের সম্পর্কের মত। শিশুর মা শিশুর সাথে সহ-নির্ভরশীলতার সম্পর্কে জড়ানো থাকে। শিশুর সমস্ত অত্যাচার সে আনন্দের সাথে সহ্য করে। এটা সুস্থ্য স্বাভাবিক। কিন্তু দুইজন প্রাপ্তবয়ষ্ক মানুষের মধ্যে এ ধরণের সম্পর্ক কোনভাবেই সুস্থ্য ও স্বাভাবিক নয়।
নার্সিসিস্টের মানসিক পরিপক্কতা শিশু অবস্থাতেই থেকে যায়। তার শিশুসূলভ চাওয়াগুলো শিশুকালে পূরণ হয়নি। প্রতিনিয়ত সে শৈশবের সেসব অপূর্ণ চাওয়া পূরণ করে চায়। সমস্ত শিশুই নার্সিসিস্ট। এটা তাদের বেড়ে উঠার একটা দরকারী পর্যায়। কিন্তু শৈশবের এসব নার্সিসিস্টিক চাওয়াগুলো পূরণ না হলে তাদের মানসিক পরিপক্কতা থেমে যায় ওখানেই। শৈশবে না পাওয়া মনোযোগ তারা তাদের প্রাপ্তবয়সের সংগী ও চারপাশের লোকজনের কাছ থেকে আদায় করতে চায়। এমনকি নিজের সন্তানদের কাছ থেকেও।
ভালোবাসার জন্য মুহাম্মদের কাংগালপনা বিভিন্ন সময় তার নিজের কাছ থেকেই প্রকাশিত হতে দেখা যায়। ইবনে সা’দের বর্ণনায় পাওয়া যায়, মুহাম্মদ বলে,
“কুরাইশ বংশের সবার উচিৎ আমাকে ভালোবাসা। আমি আল্লাহর কাছ থেকে যে বাণী নিয়ে এসেছি সেটা তাদের পছন্দ না হলেও নিজেদের আত্নীয় হিসাবে তাদের উচিৎ আমাকে ভালোবাসা।” (টীকা-১১৫)
কুরানে মুহাম্মদ বলে,
“তোমাদের কাছ থেকে আমি আত্নীয়সূলভ ভালোবাসা ছাড়া আর কিছুই চাইনি”। (টীকা-১১৬)
ভালোবাসা ও মনোযোগের কাংগাল কারো মরিয়া কান্নার শব্দ এইগুলো।
অন্যদিকে খাদিজা ছিলো বিপ্রতীপ-নার্সিসিস্ট যার প্রয়োজন ছিলো এমন কাউকে যার সেবায় সে তার জীবন উৎসর্গ করতে পারবে। সহ-নির্ভরশীলতার রোগী অন্যের দ্বারা ব্যাবহৃত হওয়াতে কোন কিছু মনে তো করেই না, বরং তা উপভোগ করে।
Vaknin বলেন,
“বিপ্রতীপ-নার্সিসিস্ট তার নিজস্ব ক্ষুধা-নিবারণের উৎস খুঁজে পায় নার্সিসিস্টের মধ্যে। এ দুই ধরণের মানুষ নিজেদের মধ্যে কার্যত এক ধরণের স্বাধীন স্বতন্ত্র মিথোজীবিতা তৈরী করে। বাস্তবে অবশ্য, দীর্ঘমেয়াদে নিজেদের সম্পর্ক টিকিয়ে রাখতে চাইলে দুই পক্ষকেই নিজেদের মানসিক অবস্থা সম্পর্কে ভালোভাবে অবহিত হওয়া দরকার। ” (টীকা-১১৭)
মনোবিজ্ঞানী Dr. Florence W. Kaslow এ ধরণের মিথোজীবিতা সম্পর্কে বলেন, দুই পক্ষেরই এক্ষেত্রে পার্সোনালিটি ডিজঅর্ডার আছে, তবে বিপরীত মেরুতে।
“এদের দেখে মনে হয় একজনের প্রতি আরেকজনে বিধ্বংসী ও দুর্বার আকর্ষণ আছে। একজন আরেকজনের পরিপূরক। হয়তো এ কারণেই এ ধরণের যুগল যদি আলাদা হয়ে যায় তারপরও দেখা যায় ঘুরেফিরে একই ধরণের নতুন কারো সাথে আবার একই ধরনের সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে”। (টীকা-১১৮)
নার্সিসিস্ট মুহাম্মদ ও বিপ্রতীপ-নার্সিসিস্ট খাদিজার মধ্যকার সম্পর্ক ছিলো দুইজনের জন্যই নিখুঁত। মুহাম্মদকে জীবিকার জন্য চিন্তিত থাকতে হয়নি। গুহায় বসে নিজের উর্বর কল্পণার জগতে ডুবে থাকতে পারতো সে সারাদিনমান। কল্পনার যে জগতে সে সকলের মধ্যমণি, সকলে শ্রদ্ধা, ভয় ও ভালোবাসার পাত্র। এই আত্নমগ্ন নার্সিসিস্টের সেবায় খাদিজা এতই আচ্ছন্ন হয়ে পড়ে যে সে নিজের ব্যাবসায় অবহেলা দেখানো শুরু করে। তার এক সময়ের রমরমা ব্যাবসা ধীরে ধীরে সংকুচিত হয়ে পড়ে ও সম্পদ কমতে থাকে। সর্বশেষ সন্তানের জন্মের সময় তার বয়স ছিলো প্রায় পঞ্চাশ বছর। মানসিক ও শারিরীকভাবে মুহাম্মদ যখন পাহাড়ের গুহায় একাকী কাটাচ্ছিলো , খাদিজা তখন ব্যাস্ত ছিলো ঘরে সন্তান লালন-পালনে।
Vaknin এর মতে,
“বিপ্রতীপ নার্সিসস্ট তার মানবিক সম্পর্কগুলোতে একেবারেই স্বার্থহীন, ত্যাগী এমনকি তোষামোদপূর্ণ ও কোনভাবেই অন্যদের কাছ থেকে সাহায্য নিতে অস্বীকার করে। শুধুমাত্র অন্যেকে দিতে পারলে, তাদের প্রয়োজন মিটাতে পারলে, তাদের সহায়তা করতে পারলেই সে কেবলমাত্র অন্যদের সাথে কোনরকম সম্পর্কে জড়াতে পারে”। (টীকা-১১৯)
সহ-নির্ভরশীলতার রোগী সম্পর্কে Vaknin আরো বলেন,
“ এরা সে ধরণের লোক যারা নিজেদের মানসিক সন্তুষ্টির জন্য অন্যের উপর পুরোপুরি নির্ভরশীল। নিজেদের ইগো ধরে রাখা এমনকি দৈনন্দিনের বেঁচে থাকার জন্যও। এরা কাংগাল, নিজেকে সমর্পণকারী। সম্পর্কের অপর প্রান্তের মানুষটি তাদের ছেড়ে যাবে এই ভয়ে এরা এতই ভীত থাকে যে কথিত ‘সম্পর্ক’ টিকিয়ে রাখার জন্য তারা নানা অপরিপক্ক আচরণ করে”। (টীকা-১২০)
Copendent No More বইয়ের লেখক Meloy Beattie বলেন, সহ-নির্ভরশীলতার রোগী নিজের অজান্তেই সমস্যাওয়ালা সংগী পছন্দ করে যাতে তারা নিজেদের অস্তিত্বের একটা উদ্দেশ্য খুঁজে পায়; প্রয়োজনীয় ও পরিপূর্ণ বলে অনুভব করতে পারে নিজেকে।
যেকোন যৌক্তিক মানুষই মুহাম্মদের উদ্ভট হ্যালুসিনেশনকে মানসিক রোগ অথবা তখনকার দিনের ভাষায়, ‘শয়তানের আছর’ বলে সাব্যস্ত করতো। এমনকি মুহাম্মদ নিজেই ভেবেছিলো তার উপর শয়তানের আছর পড়েছে। কুরানে আমরা দেখি মক্কার কান্ডজ্ঞানসম্পন্ন লোকেরা ভেবেছিলো মুহাম্মদের উপর জ্বিনের আছর করেছে যার অর্থ সে পাগল হয়ে গেছে। খাদিজার জন্য এ ধরণের চিন্তা করা বেদনাদায়ক ছিলো। কারণ তার সুখ ও মানসিক তৃপ্তি নির্ভর ছিলো মুহাম্মদের প্রয়োজন মিটানো তাকে তৃপ্ত করার ভিতর। তার নিজস্ব নার্সিসিস্টকে যেকোন মূল্যে ধরে রাখা ছিলো তার উদ্দেশ্য। সহ-নির্ভরশীলতার রোগী খাদিজা বুঝেছিলো তার নিজস্ব মানসিক শান্তির উৎস মুহাম্মদকে বাঁচানোর তাকে এখন নামতে হবে, দিক-নির্দেশনা ও সাহায্য দিতে হবে।
নার্সিসিস্ট প্রায়শঃই তার কাছের লোকজনের কাছ থেকে আত্নত্যাগ আশা করে। চায় তারা তার সাথে সহ-নির্ভরশীলতার সম্পর্কে জড়াক। নীতি নৈতিকতার ধার তারা ধারে না। তারা মনে করে নৈতিকতা বা আইনের চাইতে তারা নিজেরা আরো বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
কানাডার আলবার্টা প্রদেশের John de Ruiter একজন স্ব-ঘোষিত ত্রাতা (Messiah)। তার অনুসারীরা তাকে খোদার মতই মানে। এক সাক্ষাৎকারে জন দে রুটারের প্রাক্তন স্ত্রী Joyce যিনি জনের সাথে ১৮ বছরের বিবাহিত জীবন কাটিয়েছেন, বলেন, “একদিন সবাই সিগারেট ফুঁকছিলাম রান্নাঘরে। এর মধ্যে সে (জন) আমার ‘মৃত্যু’ নিয়ে কথা উঠায়। সে স্বীকার করে যে, আমি এরই মধ্যে একটু একটু করে মরে যাচ্ছিলাম। তার মতে এটা ভালো জিনিস। আমার নিজের জীবনে পচানব্বই শতাংশই আমি ছেড়ে দিয়েছি। কিন্তু তার কথানুযায়ী আমি এখনো নিজেকে পুরোপুরি ছেড়ে দিতে পারিনি। সে যদি আরো দুইটি স্ত্রী গ্রহণ করে তবেই নাকি আমার আত্নত্যাগ পরিপূর্ণ হবে”।
Joyce বলেন, “প্রথমে ভেবেছিলাম সে বুঝি এমনিতেই মজা করছে। আসলে সে মজা করছিলো না। জন দ্বিতীয়বার একই কথা উঠায়। সে জানতে চায় তার অন্য দুই স্ত্রী সব তারা তিনজন একই বাড়িতে থাকলে কোন সমস্যা আছে কিনা”। (টীকা-১২১)
সৌভাগ্যক্রমে Joyce নিজে সহ-নির্ভরশীলতার রোগে অতদূর পর্যন্ত আক্রান্ত ছিলেন না যে এতখানি অপমান অপমান সহ্য করেও সেখানে পড়ে থাকবেন। তিনি এই উম্মাদ নার্সিসিস্টের সাথে সম্পর্কচ্ছেদ করে পালিয়ে যান। সত্যিকারের সহ-নির্ভরশীলতার রোগী তার নিজস্ব নার্সিসিস্টের তুষ্টির জন্য যেকোন কিছু করতে পারে। নার্সিসিস্ট ও সহ-নির্ভরশীলতার রোগীর সম্পর্কটি মর্ষকামের।
মানুষের জন্য দুর্ভাগ্য যে খাদিজা ছিলো সত্যিকারের সহ-নির্ভরশীলতার রোগী, যে তার পছন্দের নার্সিসিস্টের জন্য সর্বস্ব ত্যাগেও প্রস্তুত ছিলো। সেই মুহাম্মদের নবীত্বের ক্যারিয়ার শুরু করার পিছনে উৎসাহ দিয়েছিলো ও তাকে সেই পথে নিয়ে গিয়েছিলো। মুহাম্মদের মৃগীরোগের কারণে ফিট হওয়া ও ফেরেশতা দেখা বন্ধ হয়ে গেলে খাদিজা আশাহত হয়। ইবনে ইসহাকে পাওয়া যায়,
“এর পর জিব্রাঈল বেশ কিছুদিন তার কাছে আসেন নি। এতে খাদিজা বলেন, “আমারতো মনে হয় তোমার প্রভু তোমাকে অপছন্দ করেন”।” (টীকা-১২২)
এ থেকে বুঝা যায় তার নিজস্ব নার্সিসিস্ট মুহাম্মদকে নবী বানানোর জন্য খাদিজা কতটা উদগ্রীব ছিলো।
খাদিজা বেঁচে থাকতে মুহাম্মদ কেনো আর বিয়ে করেনি ? কারণ সে খাদিজার টাকায় চলতো, তার বাড়িতে থাকতো। তার উপর মক্কার অধিকাংশ লোকই তাকে তাচ্ছিল্যের দৃষ্টিতে দেখতো। সবাই তাকে পাগল বলতো। নিজের টাকা থাকলে , খাদিজা কোন বাঁধা না দিলেও কেউ তাকে বিয়ে করতো না। মক্কায় তার অনুসারী ছিলো কিছু অল্পবয়স্ক ছেলেপিলে আর কয়েকজন ক্রীতদাস যার মধ্যে স্ত্রীলোকের সংখ্যা ছিলো আরো কম। বিয়ে করার মত উপযুক্ত কেউ ছিলো না। মুহাম্মদের ক্ষমতারোহন পর্যন্ত যদি খাদিজা বেঁচে থাকতো তাহলে হয়তো তাকেও স্বামীর খাম-খেয়ালিপণা ও অল্পবয়স্ক সুন্দরী নারীদের সাথে স্বামীকে ভাগ করে নেয়ার যন্ত্রণা সহ্য করতে হতো।
টিকাসমূহ
- টীকা ৬ : কুরআন সুরা ৯৩, আয়াত ৩-৮ : এই বইয়ে ব্যবহার করা অনুবাদ গুলো ইউসুফ আলি এবং শাকিরের। ইসলামের দলিলগুলো নিয়ে আমার কাজ নয়, বরং দলিলগুলার উপর ভিত্তি করে। আমি যেসব অনুচ্ছেদ কোট করবো সেগুলো কুরআন এবং হাদিস থেকে নেয়া। কুরআনের দাবী এটি কোন মানুষের বাণী নয়, বরং শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পুরোই আল্লাহর বাণী। হাদিসগুলো হচ্ছে মুহাম্মদের জীবনের ছোট ছোট ঘটনা এবং বাণীর সংকলন। ইসলামকে পুরো বুঝার জন্য মুসলিমরা হাদিসগুলোও ব্যবহার করে। কুরআন হাদিস নিয়ে শুরু থেকেই হাজার প্রশ্ন আছে, অনুবাদ নিয়ে আছে এবং ছোটখাট বর্ণনা নিয়েও অনেক রকমের মতভেদ আছে , সেইসব নিয়ে এই বইয়ে আলোচনার কোন প্রয়োজন দেখি না। এই বইয়ের বিষয় নিয়ে যেসব অনুচ্ছেদ উদৃত করবো সেগুলোর বেশিরভাই ব্যাখা ছাড়াই বুঝা সম্ভব। সাধারণভাবে স্বীকৃত উৎস থেকে এগুলো সংগৃহীত।
- টীকা ৮ : মুহাম্মদের সর্বমোট চার কন্যা এবং দুই পুত্রসন্তান ছিলো। তার পুত্ররা কাশেম এবং আব্দুল মেনাফ (মেনাফ দেবীর নাম অনুযায়ী রাখা নাম) শিশুকালেই মারা যায়। তার মেয়েরা বড় হয় এবং বিয়েও করে কিন্তু সবাই বেশ অল্পবয়সেই মারা যায়। সর্বকনিষ্ঠা ফাতেমার দুই সন্তান ছিলো , সেও মুহাম্মদের মৃত্যুর ছয় মাসের মাথায় মারা যায়।
- টীকা ৯ :
গবেষণা থেকে জানা যায়, প্রসবপূর্ব এবং প্রসব-পরবর্তী বিষণ্ণতায় ভোগা মায়েদের সন্তানদের রক্তে cortisol এবং norepinephrine মাত্রা বেশি থাকে এবং Dopamine এর মাত্রা কম থাকে , এবং মস্তিষ্কের সামনের ডানদিকের EEG তে তুলনামূলকভাবে অসামঞ্জস্যের মাত্রা বেশি থাকে। আবার প্রসবপূর্ব এবং প্রসব পরবর্তী বিষণ্ণতায় ভোগা মায়েদের সন্তানদের মধ্যে তুলনা করলে দেখা যায়, প্রসবপূর্ব বিষণ্ণতায় ভোগা মায়েদের শিশুদের রক্তে nonrepineprhine এর মাত্রা এবং মস্তিষ্কের সামনের ডানদিকের EEG তে অসামঞ্জস্যের মাত্রা , প্রসব পরবর্তী বিষণ্ণতায় ভোগা মায়েদের শিশুদের চাইতেও বেশি থাকে। এইসব উপাত্ত থেকে ধারণা করা যায় শিশুর শারীরবৃত্তীয় গঠনে প্রভাব ফেলার ক্ষেত্রে প্রসবপূর্ব বিষণ্ণতা বেশি বিপদজনক, এবং বিষণ্নতার সময়ের দৈর্ঘ্যের প্রভাবও লক্ষণীয়। ncbi.nlm.nih.gov - টীকা১০:
http://www.health.harvard.edu/…/Depression_during_pregnancy… - টীকা-১১:
ইবনে ইসহাকের সীরাত রাসুলুল্লাহ , পৃষ্ঠা -৭২। ইবনে ইসহাক হলেন বিখ্যাত মুসলিম ইতিহাসবিদ। জন্ম মদীনায় আনুমানিক হিজরি ৮৫ সনে (জন্ম ৭০৪ সাল মৃত্যু ৭৬৮ সাল, মুহাম্মদের মৃত্যুর ৭৫ বছর পর জন্ম)। তিনি ছিলেন মুহাম্মদের প্রথম জীবনিকার , এবং তার যুদ্ধসমূহের কাহিনী লিপিকার। তার সংগৃহীত গল্পগুলার সংকলনের নাম ছিলো “সিরাত-আল-নবী”। এই বইটি এখন বিলুপ্ত। তার সংকলনের উদ্ধারকৃত অংশগুলোর সাথে নিজের কিছু মতামত জুড়ে দিয়ে এবং নিয়মতান্ত্রিকভাবে লিপিবদ্ধ করেন ইবনে ইসহাকের ছাত্র হিবনে হিশাম (মৃত্যু ৮৩৪)। ইবনে হিশামের এই সংকলণের ইংরেজি অনুবাদ এখন বাজারে পাওয়া যায়। (অনুবাদক এ. গুলিয়োম)। ইবনে হিশাম স্বীকার করে গেছেন যে তিনি ইবনে ইসহাকের সংগ্রহ থেকে ইচ্ছাকৃতভাবে কিছু অংশ বাদ দিয়েছেন যেগুলো মুসলিমদের জন্য অস্বস্তিকর। এইসব অস্বস্তিকর গল্পের কিছু অংশ পরবর্তীতে তাবারি (৮৩৮-৯২৩) উদ্ধার করেন। তাবারি হলেন অন্যতম বিখ্যাত পারসিয়ান ইতিহাসবিদ এবং কুরআনের তাফসিরকারী। - টীকা-১২:
W. Montgomery Watt: Translation of Ibn Ishaq’s biography of Muhmmad (পৃষ্টা-৩৬) - টীকা-১৩:
Tabaqat Ibn Sad, পৃষ্টা ৭। ইবনে সাদ (৭৮৪-৮৪৫) ইতিহাসবিদ, আল ওয়াক্কিদির ছাত্র। তিনি তার সংকলনকে আটটি শ্রেণীতে বা তাবাকাতে ভাগ করেছিলেন, সেই থেকেই বইয়ের নাম তাবাকাতসমূহ। প্রথম ভাগে মুহাম্মদের জীবনি , দ্বিতীয়ভাগে মুহাম্মদের যুদ্ধসমূহ, তৃতীয়ভাগে মক্কার সাহাবীরা, চতুর্থভাবে মদীনার সাহাবীরা, পঞ্চমভাগে তার নাতি হাসান হুসেইন এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ মুসলিমগণ, ষষ্ঠভাগে সাহাবীদের অনুসারীরা (তাবেঈ), সপ্তভাগে পরবর্তীযুগের গুরুত্বপূর্ণ অনুসারীগণ, অস্টমভাগে প্রাথমিক যুগের কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ মুসলিম মহিলাদের নিয়ে বর্ণনা এসেছে। এই বইয়ে ইবনে সাদের তাবাকাত থেকে যেসব উদৃতি দেয়া হয়েছে সেগুলো নেয়া হয়েছে তাবাকাতের পার্সিয়ান অনুবাদ থেকে। অনুবাদক, Mahmood Mahdavi Damghani, প্রকাশক, Entesharat-e Farhang va Andisheh, Tehran (2003) - টীকা -১৪ Tabaqat Ibn Sa’d , Volume 1 , page 107
- টীকা-১৫
The life of Muhammad , Sir William Muir [Smith, Elder & Co. , London, 1861] Volume 2, Chapter 1, page -28 - টীকা-১৬
kitab al waqidi , page -22 - টীকা -১৭
Tabaqat, Vol. 1 page 108 - টীকা -১৮
The life of Muhammad , Sir William Muir , Vol. 2, Chapter 1, page 33 - টীকা-১৯ Ibn Ishaq, page 195
- টীকা -২০
The life of Muhammad , Sir William Muir, Vol. 2, page 195 - টীকা-২১
Bukhari , Vol. 5, Book 58, Number 224 - টীকা -২২
আবু আব্দুল্লাহ মুহাম্মদ বুখারি(৮১০-৮৭০), হাদিস সংগ্রাহক। বুখারি ১৬ বছর ব্যায় মোট ২৬০২ টি হাদিস সংগ্রহ করেন। হাদিস সংগ্রগে বিশ্বাসযোগ্যতা রক্ষার অত্যন্ত কঠিন পদ্ধতি অনুসরণের কারণে তার সংগৃহীত হাদিসগুলে বিশেষভাবে সুন্নি মুসলমানদের মধ্যে ব্যাপকভাবে গ্রহণযোগ্যতা পেয়ে আসছে। - টীকা-২৩
বুখারি, Vol. 4, Book 56, Number 762 - টীকা -২৪
Tabaqat Volume1, page 191 - টীকা – ৩২ – ইস্পাহানের Abu al-FarajAli কতৃক সংকলিত কয়েক খন্ডের কিছু কবিতার সমষ্টি। প্রাচীনযুগের আরব থেকে শুরু করে নবম শতাব্দী পর্যন্ত রচিত অনেক কবিতা আছে এতে। মধ্যযুগের ইসলামিক ইতিহাস সম্পর্কে অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য আছে এই কবিতাগুলোতে।
- টীকা -৩৩ – সিরাত ইবনে ইসহাক পৃষ্টা ১৯৭
- টীকা-৩৫ – youtube video
- টীকা-৪১
যুক্তরাষ্ট্রের ভার্জিনিয়া অংগরাজ্যে অগাস্ট ১৯, ২০০৩ সালে দায়ের করা এক অভিযোগে দেখা যায় কয়েকটি মুসলিম চ্যারিটি বিএমআই ইনকরপোরেটেড নামের এক সংস্থাকে ৩৭ লাখ আমেরিকান ডলার দান করে। নিউজার্সির এই ইসলামি প্রাইভেট বিনিয়োগ করপোরেশনটি পরবর্তীতে এই টাকা সন্ত্রাসী গোষ্ঠীদের বিলিয়ে দেয় বলে ধারণা করা হয়। সৌদি আরবের জিদ্দাহ থেকে কোন এক অজানা দাতার দান করা এক কোটি ডলারের একাংশ এই ৩৭ লাখ ডলার। ওয়াশিংটন পোস্ট, পিউ রিসার্চ ফোরামের মত আরো অনেক অথেনটিক সোর্সে এইধরণের অনেক অভিযোগের কথা জানা যাবে। - টীকা -৪২ – এবিষয়ে আরো দেখা যেতে পারে কুরআন (৮ ৭২), (৮-৭৪)
- টীকা ৪৩,৪৪ – ইন্টারনেট সংবাদমাধ্য metimes ডট কম
- টীকা ৪৫ – ফেইথফ্রিডম ডট অর্গ
- টীকা -৪৬ > Tabaqat Vol.2 p. 1-2
- টীকা -৪৭ > Sahih Bukhari Volume 5, Book 59, Number 702
- টীকা -৪৮ > Willium Muir, The Life of Muhammad Volume II Chapter 2 Page 6
- টীকা ৪৯ > Sahih Bukhari Vol.3 Book 46, Number 717
- টীকা ৫০ > টীকা ৪৯
- টীকা ৫১ > Sahih Muslim Book 019, Number 4321, 4322, 4323টীকা-৫৩ > ফেইথফ্রিডম ডট অর্গে মুহাম্মদের স্ত্রীদের বিষয়ে লেখাতে বিস্তারিত পাওয়া যাবে।
- টীকা -৫৪ > বুখারি , ভলিউম ৩ , বুক ৪৭, হাদিস নং ৭৬৬
- টীকা-৫৫ > তারিখ আল তাবারি এবং তাফসির আল তাবারির লেখক। প্রাথমিক যুগের বিখ্যাত পারসিয়ান বংশোদ্ভুত ইসলামি ঐতিহাসিক।
- টীকা -৫৬ > পার্সিয়ান তাবারি , ভলিউম ৪, পৃষ্টা ১২৯৮
- টীকা -৫৭ > বুখারি , ভলিউম ৩, বুক ৩৪, হাদিস নং ৩১০
- টীকা -৫৮ > বুখারি , ভলিউম ৫, বুক ৫৯, হাদিস নং ৪৫৯ যুদ্ধবন্দী ও দাসীদের সাথে সংগমের অনুমতি দেয়া নিয়ে আরো অনেক সহিহ হাদিস আছে। যেমন বুখারি ৩-৩৪-৪৩২। আরো আছে সহিহ মুসলিম এবং সুনান আবু দাউদ এ।
বুখারি ৩-৪৬-৭১৮, ৫-৫৯-৫৪৯, ৭-৬২-১৩৫ আরো আরো। - টীকা -৫৯ > কুরআন ৪-২৪, ৩৩-৫০, ৪-৩
- টীকা -৬০ > সিরাত রাসুল আল্লাহ , ইবনে ইসহাক পৃষ্টা ৫১৫
- টীকা ৬১ > সহিহ বুখারি ১-৮-৩৬৭
- টীকা ৬২ > বুখারি ৪-৫২-২৬১
- টীকা -৬৩ > বুখারি ৫-৫৯-৩৬৯
- টীকা-৬৪ > The Kitab al Tabaqat al Kabir , Vol 2 , page -31
- টীকা -৬৫ > ইবনে ইসহাকের সিরাত রাসূলুল্লাহ p 675-676 (A. Guilaume’s Translation)
- (টীকা-৬৬) > টীকা-৬৫
- (টীকা-৬৭) > ইবনে সাদের বর্ণনায় এই ঘটনা একটু অন্যরকমভাবে এসেছে। Kitab al-Tabaqat al-Kabir , translated by S. Mominul Haq Vol.2, page-24
- (টীকা-৬৮) > কুরআন ৩-১৫১
- (টীকা-৬৯) > বুখারি ৪-৫২-২২০
- (টীকা-৭০) > Journal of the Royal Asiatic Society of Great Britain and Ireland, Page 100-107 by W.N. Arafat
- (টীকা-৭১) > কুরআন ২-৬৫, ৫-৬০, ৭-১৬৬
- (টীকা-৭২) > ইবন ইসহাক, p-363
- (টীকা-৭৩) > (টীকা-৭২)
- (টীকা-৭৪) > Ar-Raheeq Al-Makhtum by Saifur Rahman al-Mubarakpuri
- (টীকা-৭৫) > মওদূদীর কুরআন তাফসির
- (টীকা-৭৬) > ইবনে ইসহাক p-438
- টীকা ৭৮ > বাণিজ্য কাফেলার উপর ক্রমাগত আক্রমণে ক্ষিপ্ত হয়ে মক্কাবাসীরা মুহাম্মদ কে শাস্তি দেয়ার জন্য সৈন্য-সামন্ত নিয়ে মদীনা আক্রমণ করে। তারা মুহাম্মদের মত ডাকাতের মত রাতের অন্ধকারে অতর্কিত হামলা করেনি, তাই প্রস্তুতির জন্য মুহাম্মদ যথেষ্ঠ সময় পায়। সালমান-ফার্সি নামের এক ইরানি বংশোদ্ভুত লোকের পরামর্শে মুহাম্মদ মদীনার চারপাশে খাল (খন্দক) কেটে মক্কাবাসীদের প্রতিহত করে। এই যুদ্ধকে খন্দকের যুদ্ধ বলা হয়।
- টীকা ৭৯ > www . al-sunnah . com / nectar / 12.htm (ফেইসবুকের অটো-লোড ঠেকাতে স্পেসগুলো ইচ্ছাকৃত)
- টীকা ৮০ > টীকা ৭৯
- টীকা৮১ > Ayatollah Khomeni : A speech delivered on the commemoration of the Birth of Muhammad in 1981
- (টীকা-৮২) > বুখারি ৪-৫২-২৮০
- (টীকা-৮৩) > আবু দাউদ বুক ৩৮, হাদিস নং ৪৩৯০
- (টীকা-৮৪) > বুখারি ৪-৫২-২৮৮
- (টীকা-৮৫) > বুখারি ৪-৫২-১৭৬
- টীকা-৮৬ > Tabari Vol.3 Page 1126
- টীকা-৮৭ > Ibn Ishaq’s sirat, Battle of Trench
- টীকা-৮৬ > Sirah al-Halabiyyah v3,p61
- টীকা-৮৯ > Reza Aslan , No God but God
- টীকা-৯০ > Sahih Bukhari v.7, p102
- টীকা-৯১ > internet ( কেবল ইন্টারনেট লেখা হয়েছে ফেইসবুকের অটোমেটিক ওয়েবপেজ ডাউনলোড ঠেকানোর জন্য। কিওয়ার্ডগুলো দিয়ে গুগল সার্চ দিলে পাওয়ার কথা। Narcissistic Personality Disorder)
- টীকা-৯২ > International Statistical Classification of Diseases and Related Health Problems 10th edition, World Health Organization (1992)
- টীকা-৯৩ > American Psychiatric Assosiation এর DSM ম্যানুয়াল থেকে সংক্ষেপিত।
- টীকা-৯৪ > Tabaqat V.1,P2
- টীকা-৯৫ > wwwডটmuhammadanrealityডটকম/creationofmuhammadanrealityডটhtm
- টীকা-৯৬ > Tabaqat V.1,P364
- টীকা-৯৭> Mark 10:18
- টীকা-৯৮ > wwwডটmuhammadanrealityডটকম/aboutডটhtm
- টীকা-৯৯ > Malingnant Self Love –Narcissism revisited (Sam Vaknin and Lidija Rangelovska)
- টীকা-১০০ > healthyplace-dot-com
- টীকা-১০১ > Malingnant Self Love –Narcissism revisited (Sam Vaknin and Lidija Rangelovska)
- টীকা-১০২> Ibid
- টীকা-১০৩ > টীকা-১০০
- টীকা-১০৪ > Amir Taheri Neo-Islam
- টীকা-১০৫,১০৬ > For Love of God – Narcissist and Religion (Dr. Sam Vaknin
- টীকা-১০৭ > Jon Mardi Horowitz – Stress Response Syndromes: PTSD, Grief and Adjustment Disorder
- টীকা-১০৮> www dot faqfarm dot com /Q/Can_you_be_responsible_for_your_spouse’s_narcissism
- টীকা-১০৯ > J.D. Levine and Rona H. Weiss. The Dynamics and Treatment of Alcoholism.
- টীকা-১১০> Dr. Sam Vaknin
- টীকা-১১১ > www dot nmha dot org /infoctr/factsheets/43.cfm
- টীকা-১১২> Persian Tabari v.3 p.832
- টীকা-১১৩ > http:// samvak dot tripod dot com/faq66 dot html
- টীকা-১১৪> http:// www dot toddlertime dot com/sam/66 dot htm
- টীকা-১১৫> Tabaqat vol.1 page.3
- টীকা-১১৬> quran sura-42 verse-23
- টীকা-১১৭> http:// samvak dot tripod dot com/faq66 dot html
- টীকা-১১৮ > Mixing Oil and Water by Bridget Murray, APA online Monitor On Psychology, Vol 35, No.3, March 2004
- টীকা-১১৯> http:// www dot toddlertime dot com/sam/66 dot htm
- টীকা-১২০> The Inverted Narcissist by Sam Vaknin
- টীকা-১২১> The Gospel According to John, by Brian Hutchison, Satureday Night Magazine, May 5 , 2001
- টীকা-১২২> Sira Ibn Ishaq p.108
ভাষান্তর – মাওলানা দূরের পাখি
No comments:
Post a Comment
ধন্যবাদ