জন্ম ১২ জানুয়ারি ১৮৬৩( মকর সংক্রান্তি )
১৮৮১ খ্রিষ্টাব্দে নরেন্দ্রনাথ প্রথম রামকৃষ্ণ দেবের সাক্ষাত পান।
১৮৮৪ খ্রিষ্টাব্দে নরেন্দ্রনাথ কালীর কাছে তার পরিবারের আর্থিক উন্নতির জন্য প্রার্থনা জানাতে তিনবার মন্দিরে যান।
১৮৮৫ খ্রিষ্টাব্দে নরেন্দ্রনাথের ধর্মশিক্ষা চলতে থাকে। ( Meditation and Its Methods According to Swami Vivekananda, Hollywood, California: Vedanta Press পৃ. 20)
১৮৮৫ খ্রিষ্টাব্দে কাশীপুরে নরেন্দ্রনাথ নির্বিকল্প সমাধি লাভ করেন।(Isherwood 1976, পৃ. 20।)
১৮৮৬ খ্রিষ্টাব্দের ডিসেম্বর মাসে সন্ন্যাস গ্রহণ (স্বামী বিবেকানন্দ*) [ Bhuyan 2003, Swami Vivekananda: Messiah of Resurgent India পৃ. 10]
১৮৮৬ খ্রিষ্টাব্দের ১৬ অগাস্ট শেষরাত্রে কাশীপুরে রামকৃষ্ণ পরমহংস দেব প্রয়াত হন।
১৮৮৮ খ্রিস্টাব্দে পরিব্রাজকরূপে মঠ ত্যাগ করেন বিবেকানন্দ।
পরিব্রাজক জীবনে স্বামী বিবেকানন্দের সঙ্গী ছিল একটি কমণ্ডলু, লাঠি এবং তার প্রিয় দুটি গ্রন্থ - ভাগবদ্গীতা ও ইশানুসরণ।(Dhar, Shailendra Nath (১৯৭৬), A Comprehensive Biography of Swami Vivekananda (2 সংস্করণ), Madras, India: Vivekananda Prakashan Kendra, ওসিএলসি 708330405)
১৮৯০ খ্রিস্টাব্দে জয়পুরে এক সংস্কৃত পণ্ডিতের কাছে অধ্যয়ন করেন পাণিনির অষ্টাধ্যায়ী।
বিঃদ্রঃ- ১৮৯৩ সালে দেখা যাচ্ছে তিনি পাণিনির অষ্টাধ্যায়ী অধ্যয়ন করেছিলেন 😒,"কয়েক বৎসর পূর্বে আমার একবার বৈদিক ব্যাকরণ শিখিবার ইচ্ছা হয় এবং আমি অতি আগ্রহের সহিত 'পাণিনি' এবং 'মহাভাষ্য' পড়িতে আরম্ভ করি।....... কেবল যাস্কের 'নিরুক্ত' থাকাতেই একটু রক্ষা। কিন্তু ইহাতে কতকগুলো সমার্থক শব্দের সন্নিবেশ আছে মাত্র। " - (ভারতে বিবেকানন্দ, পৃঃ ৩০৭)
১৮৯১ খ্রিস্টাব্দে মাউন্ট আবুতে তার সঙ্গে সাক্ষাত হয় খেতরির মহারাজা অজিত সিংহের। তিনি পাণিনির সূত্রের মহাভাষ্য অধ্যয়ন করেন।(Rolland, Romain (২০০৮), The Life of Vivekananda and the Universal Gospel (24 সংস্করণ), Advaita Ashrama, পৃষ্ঠা 328,)
১৮৯১ খ্রিস্টাব্দের অক্টোবরে আহমেদাবাদ (বর্তমান গান্ধিনগর) তিনি ইসলামি ও জৈন সংস্কৃতির পাঠ সমাপ্ত করেন।(Rolland, Romain (২০০৮), The Life of Vivekananda and the Universal Gospel (24 সংস্করণ), Advaita Ashrama, পৃষ্ঠা 328)
১৮৯১ খ্রিস্টাব্দে পোরবন্দরে সন্ন্যাসজীবনের নিয়ম ভেঙে তিনি নয় মাস অবস্থান করেন পণ্ডিতদের থেকে দর্শন ও সংস্কৃত গ্রন্থাবলি অধ্যয়নের জন্য। এই সময় সভাপণ্ডিতের সঙ্গে একযোগে বেদ অনুবাদের কাজও করেন।
১৮৯২ খ্রিস্টাব্দের জুন মাস নাগাদ তিনি খান্ডোয়া ও ইন্দোর ভ্রমণ করেন। কাথিয়াওয়াড়ে তিনি বিশ্বধর্ম মহাসভার কথা শোনেন।
১৮৯৩ খ্রিষ্টাব্দের ৩১ মে শিকাগোর উদ্দেশ্যে বোম্বাই ত্যাগ করেন। খেতরির মহারাজার পরামর্শকৃত নাম বিবেকানন্দ* ধারণ
১৮৯৩ খ্রিষ্টাব্দের জুলাই মাসে চিন, কানাডা হয়ে তিনি আমেরিকার শিকাগো পৌঁছান।
প্রথম বিশ্বধর্ম মহাসভা ১৮৯৩ খ্রিষ্টাব্দের ১১ সেপ্টেম্বর শিকাগোর আর্ট ইনস্টিটিউটে উদ্বোধন হয়। এদিন বিবেকানন্দ তার প্রথম সংক্ষিপ্ত ভাষণ দেন। তিনি ভারত এবং হিন্দু ধর্মের প্রতিনিধিত্ব করেন।(Banhatti, G.S. (১৯৯৫), Life and Philosophy of Swami Vivekananda, page-276) মূখ্যত হিন্দু কোন ধর্মের নাম না।
[সভার সভাপতি, ড. ব্যারোজ বলেন, "কমলা-সন্ন্যাসী স্বামী বিবেকানন্দ ধর্মসমূহের মাতা ভারতের প্রতিনিধিত্ব করেছেন এবং তাঁর শ্রোতাদের উপর সবচাইতে বিস্ময়কর প্রভাব বিস্তার করেছেন।"[P. R. Bhuyan, Swami Vivekananda, পৃষ্ঠা 17] প্রেসে তিনি প্রচুর মনোযোগ আকর্ষণ করেন যাতে তিনি "ভারতের সাইক্লোন সন্ন্যাসী" হিসেবে অভিহিত হন। নিউ ইয়র্ক ক্রিটিক লিখেছিল, "ঐশ্বরিক অধিকারবলে তিনি একজন বক্তা এবং হলুদ ও কমলার চিত্রবৎ আধানে তাঁর শক্তিশালী, বুদ্ধিদীপ্ত চেহারার চেয়ে কম আগ্রহোদ্দীপক ছিল না ওই সকল সমৃদ্ধ ও ছন্দোময়ভাবে উচ্চারিত শব্দসমূহ। নিউইয়র্ক হেরাল্ড লিখেছিল, "বিবেকানন্দ নিঃসন্দেহে ধর্মসভার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব। তাঁর বক্তৃতা শুনে আমরা অনুভব করি এ শিক্ষিত জাতির নিকট মিশনারি পাঠানো কি পরিমাণ বোকামি।"[P. R. Bhuyan, Swami Vivekananda, পৃষ্ঠা 18] আমেরিকার পত্রিকাসমূহ স্বামী বিবেকানন্দকে "ধর্মসভার সবচেয়ে মহান ব্যক্তিত্ব" এবং "সভার সবচেয়ে জনপ্রিয় ও প্রভাবশালী ব্যক্তি" হিসেবে প্রতিবেদন লেখে।[Sharma, Arvind, "Swami Vivekananda's Experiences", Neo-Hindu Views of Christianity, পৃষ্ঠা 87]
তিনি সভায় আরো কয়েকবার হিন্দুধর্ম ও বৌদ্ধধর্ম সম্পর্কিত বিষয়ে বলেন। সভা ১৮৯৩ খ্রিষ্টাব্দের ২৭ সেপ্টেম্বর সমাপ্ত হয়। সভায় তার সকল বক্তৃতার একটি সাধারণ বিষয়বস্ত্তু ছিল - সর্বজনীনতা - অধিক গুরুত্বপূর্ণ ধর্মীয় সহিষ্ণুতা।[P. R. Bhuyan, Swami Vivekananda, পৃষ্ঠা 18]
১৮৯৫ ও ১৮৯৬ খ্রিষ্টাব্দে তিনি দু-বার ইংল্যান্ড ভ্রমণ করেন এখানে তিনি সাক্ষাত পান এক আইরিশ মহিলা মিস মার্গারেট নোবলের; যিনি পরে ভগিনী নিবেদিতা নামে পরিচিত হন।
৮৯৬ খ্রিষ্টাব্দের মে মাসে তার দ্বিতীয় ইংল্যান্ড ভ্রমণের সময় পিমলিকোতে এক গৃহে অবস্থানকালে বিবেকানন্দ দেখা পান অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের এক বিখ্যাত ভারততত্ত্ববিদ ম্যাক্স মুলারের, যিনি পাশ্চাত্যে রামকৃষ্ণের প্রথম আত্মজীবনী লেখেন।[Prabhananda, Swami (জুন ২০০৩), "Profiles of famous educators: Swami Vivekananda" পৃঃ২৩৪]
১৮৯৬ খ্রিষ্টাব্দে তার বই রাজযোগ প্রকাশিত হয় , এই সময় তিনি পতঞ্জলির যোগ সূত্রের ব্যাখ্যার ওপর কাজ করেন[ Michelis 2004, পৃ. 123-126।]
তিনি আমেরিকা এবং ইউরোপের কতিপয় অকৃত্রিম শিষ্যকে আকৃষ্ট করেছেন, যার মধ্যে ছিলেন জোসেফিন ম্যাকলিওড, উইলিয়াম জেমস, জোসাই রয়েস, রবার্ট জি ইঙ্গারসোল, নিকোলা টেসলা, লর্ড কেলভিন, হ্যারিয়েট মনরো, এলা হুইলার উইলকক্স, সারাহ বার্নহার্ডট, এমা ক্যালভি, হারম্যান লুডউইক ফারডিন্যান্ড ভন হেলমহোলটজ।[Nikhilananda, Swami (এপ্রিল ১৯৬৪), "Swami Vivekananda Centenary", Philosophy East and West, University of Hawai'i Press, 14 (1): 73–75] তার বেশ কিছু দীক্ষাপ্রাপ্ত অনুগামী ছিলেন: মারি লুইস (একজন ফরাসি মহিলা) যিনি পরবর্তীতে স্বামী অভয়ানন্দ এবং লিওন ল্যান্ডসবার্গ, যিনি পরবর্তীতে স্বামী কৃপানন্দ হিসেবে পরিচিত হন;[Isherwood ও Adjemian 1987, পৃ. 121–122] যাতে তারা বেদান্ত সোসাইটি অব মিশন নিয়ে কাজ চালিয়ে যেতে পারেন। এমনকি এযাবৎকাল পর্যন্ত এখানে বিদেশি নাগরিকদের আনাগোনা রয়েছে যা লস অ্যাঞ্জেলেসে অবস্থিত।[Thomas, Wendell (১ আগস্ট ২০০৩)। Hinduism Invades America,page 47 ] আমেরিকা থাকাকালীন বিবেকানন্দকে ক্যালিফোর্নিয়ার সান হোসে রাজ্যের দক্ষিণ পর্বতে বেদান্ত ছাত্রদের জন্য একটি আশ্রম স্থাপনের উদ্দেশ্যে জমি দেওয়া হয়। তিনি এটিকে শান্তি আশ্রম নামে উল্লেখ করেন। বেদান্ত সমাজ হল হলিউডের দক্ষিণ ক্যালিফোর্নিয়ায় অবস্থিত আমেরিকার বৃহত্তম কেন্দ্র (বারোটি অন্যতম কেন্দ্রের মধ্যে)। ইংরেজিতে বেদান্ত সম্পর্কে বই এবং হিন্দু ধর্মগ্রন্থ অনুবাদ এবং গ্রন্থে প্রকাশের জন্য হলিউডে একটি বেদান্ত প্রকাশনাও রয়েছে। ডেট্রয়েটের ক্রিস্টিনা গ্রিনসটিডেল একটি মন্ত্রে মাধ্যমে বিবেকানন্দ কর্তৃক দীক্ষাপ্রাপ্ত হয়েছিলেন, যিনি পরবর্তীতে ভগিনী ক্রিস্টিন হিসেবে পরিচত হন, এবং তারা একটি ঘনিষ্ঠ বাবা-মেয়ের সম্পর্ক প্রতিষ্ঠিত করেন। স্বামী বিবেকানন্দের ধারণাসমূহ বেশ কয়েকজন পণ্ডিত ও বিখ্যাত চিন্তাবিদ কর্তৃক প্রশংসিত হয় - উইলিয়াম জেমস, জোসেফ রয়েস, সিসি এভারেট, হার্ভার্ড ধর্মশাস্ত্র বিদ্যালয়ের ডিন, রবার্ট জি ইনগারসোল, নিকোলা টেসলা, লর্ড কেলভিন এবং অধ্যাপক হারম্যান লুডউইক ফারডিন্যান্ড ভন হেলমহোলটজ। ১৮৯৫ খ্রিষ্টাব্দে তিনি স্বামী অক্ষরানন্দকে লিখেছিলেন, "খেতরি শহরের দরিদ্র ও নিচু শ্রেণির ঘরে ঘরে যাও এবং তাদের ধর্মশিক্ষা দাও। ভূ-বিজ্ঞান এবং অন্যান্য বিষয়েও তাদের মৌখিক শিক্ষা দিও। অলসভাবে বসে থেকে, রাজকীয় খাবার খেয়ে আর "রামকৃষ্ণ, ও প্রভু!" বলে ভালো কিছু হবে না-যদি না তুমি দরিদ্রদের জন্য ভালো কিছু করতে পারো।"[Burke 1985, পৃ. 417Swami Vivekananda in the West: New Discoveries (in six volumes) (3 সংস্করণ)]
বিবেকানন্দ ১৮৯৭ খ্রিষ্টাব্দের ১৫ জানুয়ারি কলম্বো পৌঁছান এবং এক পরমানন্দদায়ক অভ্যর্থনা গ্রহণ করেন। এখানে তিনি প্রাচ্যে তার প্রথম প্রকাশ্য বক্তৃতা (ভারত, পবিত্র ভূমি) করেন। সেখান থেকে কলকাতায় তার পৌঁছানো ছিল এক বিজয়ঘটিত প্রত্যাবর্তন। তিনি ভ্রমণ করেন কলম্বো থেকে পাম্বান, রামেস্বরম, রামনাদ, মাদুরাই, কুম্বাকোনাম এবং মাদ্রাজ। এই জায়গাগুলোতে তিনি বক্তৃতা দেন।
১৮৯৭ খ্রিষ্টাব্দের ১ মে কলকাতায় বিবেকানন্দ প্রতিষ্ঠা করেন ধর্ম প্রচারের জন্য সংগঠন "রামকৃষ্ণ মঠ" এবং সামাজিক কাজের জন্য সংগঠন "রামকৃষ্ণ মিশন"।{Life and Philosophy of Swami Vivekananda,পৃ. 34–35}
স্বামী বিবেকানন্দের দ্বারা দুটি মঠ প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল যার মধ্যে কলকাতার কাছে বেলুড়ের মঠটি রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশনের প্রধান কার্যালয় করা হয়েছিল এবং অন্যটি হিমালয়ের মায়াবতীতে আলমোড়ার নিকটে অদ্বৈত আশ্রম নামে পরিচিত এবং পরে তৃতীয় মঠটি মাদ্রাজে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল।
১৮৯৩ খ্রিষ্টাব্দে বিবেকানন্দ পুনঃসংস্কারকৃত হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের পক্ষের আর্য সমাজ ও গোঁড়া হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের পক্ষের সনাতনপন্থীদের মধ্যে ঐকতান প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যে পশ্চিম পাঞ্জাব ভ্রমণ করেন। রাওয়ালপিণ্ডিতে তিনি আর্য সমাজবাদী ও মুসলিমদের মধ্যেকার সক্রিয় বিরোধ নির্মূল করার পদ্ধতি সম্পর্কে পরামর্শ দেন।[Eastern and Western disciples 2006a, পৃ. 291] ১৮৯৩ সালে ওনার মনে হয়েছিলো আর্য সমাজবাদী ও মুসলিমদের মধ্যেকার সক্রিয় বিরোধ নির্মূল হওয়া উতিৎ কেন?
১৮৯৯ খ্রিষ্টাব্দের জুন মাসে পাশ্চাত্যের উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন। তার সঙ্গী ছিলেন ভগিনী নিবেদিতা এবং স্বামী তুরিয়ানন্দ। তিনি স্বল্প সময় ইংল্যান্ডে অবস্থান করার পর যুক্তরাষ্টে যান।
তিনি ১৯০০ খ্রিষ্টাব্দে প্যারিসে ধর্ম মহাসভায় যোগ দেন।[ Life and Philosophy of Swami Vivekananda,পৃ. xv] লিঙ্গ পূজা ও ভাগবদ্গীতার যথার্থতা সম্পর্কিত বিবেকানন্দের পাণ্ডিত্যপূর্ণ প্রকাশের জন্য প্যারিস বক্তৃতা স্মরণীয় ,{ Life and Philosophy of Swami Vivekananda পৃ. 41–42}। এখানে দেখিবার বিষয় এই যে ১৯০০ সালে তিনি লিঙ্গ পূজার ওপর ভাষন দিয়েছিলেন।
প্যারিস থেকে স্বল্প সময়ের জন্য তিনি ভ্রমণ করেন ব্রিটানি, ভিয়েনা, ইস্তানবুল, এথেন্স এবং মিশর। এই সময়ের বেশির ভাগ অংশে তিনি ছিলেন বিখ্যাত চিন্তাবিদ জুলস বয়েসের অতিথি, ১৯০০ খ্রিষ্টাব্দের ৯ ডিসেম্বর কলকাতায় ফিরে আসার পূর্ব পর্যন্ত।
বিঃদ্রঃ- 'ভারতে-বিবেকানন্দ' পুস্তক অনুযায়ী ১৯০১ খ্রীষ্টঃ৩১ মার্চ ঢাকায় স্বামী বিবেকানন্দ ইংরেজীতে বক্তৃতা দেন। বাংলা ভাষা যেখানের প্রধান ভাষা সেখানে তিনি ইংরেজীতে ভাষন দিয়েছিলেন।
জাপানের ধর্ম মহাসভায় যোগ দেওয়ার জন্য তিনি ১৯০১ খ্রিষ্টাব্দের ডিসেম্বরে আমন্ত্রণ পেয়েছিলেন, যদিও অধোগামী স্বাস্থ্যের কারণে বিবেকানন্দ তাতে যোগ দিতে ব্যর্থ হন। তার শেষ দিনগুলিতে তিনি বোধগয়া ও বারাণসী তীর্থ করেন।[ Life and Philosophy of Swami Vivekananda পৃ. 41–42] ভগ্ন স্বাস্থ্য (এজমা, ডায়াবেটিস এবং দীর্ঘস্থায়ী নিদ্রাহীনতা অন্তর্ভুক্ত) তার কার্যকলাপ সঙ্কুচিত করে তোলে।
স্বামী বিবেকানন্দ বিশ্বাস করতেন যে আদি শঙ্করের ভাষ্যের ভিত্তিতে বেদান্ত দর্শনে হিন্দু ধর্মের সারাংশ সবচেয়ে ভালোভাবে প্রকাশিত হয়েছে। তিনি নিম্নলিখিতভাবে বেদান্তের শিক্ষাসমূহের সারসংক্ষেপ করেন,[Jackson, Carl T (১৯৯৪), "The Founders", Vedanta for the West, Indiana University Press, পৃষ্ঠা 33–34]
মৃত্যু ৪ জুলাই ১৯০২ (বয়স ৩৯)
রচনাঃ
সঙ্গীতকল্পতরু (১৮৮৭, সহলেখক বৈষ্ণবচরণ বসাক)- [Swami Vivekananda in India: A Corrective Biography পৃ. 33]
কর্মযোগ হল স্বামী বিবেকানন্দের লেখা একটি বই। এটি ইংরেজি ভাষায় ১৮৯৬ সালে নিউ ইয়র্ক থেকে প্রকাশিত হয়।{ A History of Modern Yoga: Patanjali and Western Esotericism,page-126}রাজযোগ অথবা অন্তঃপ্রকৃতি-জয় (ইংরেজি ভাষায়: Raja Yoga) স্বামী বিবেকানন্দ রচিত হিন্দু যোগ দর্শন বিষয়ক একটি বই। এই বইতে যোগদর্শনের অন্যতম শাখা রাজযোগ সম্বন্ধে আলোচনা করা হয়েছে। মূল ইংরেজি বইটি ১৮৯৬ সালের জুলাই মাসে প্রকাশিত হয়েছিল।{Life and philosophy of Swami Vivekananda। New Delhi: Atlantic। পৃষ্ঠা 145}এই বইয়ের পরিশিষ্ট অংশে বিবেকানন্দ পতঞ্জলির যোগসূত্র-এর একটি ইংরেজি অনুবাদ ও তার নিজস্ব ব্যাখ্যা যুক্ত করে দেন। এখানে দেখা যাচ্ছে তিনি ১৮৯৬ সালে পতঞ্জলির যোগসূত্র পড়েছিলেন ।
নরেন্দ্র প্রাশ্চাত্য ধর্মবিশ্বাস[ A History of Modern Yoga: Patanjali and Western Esotericism পৃ. 31-35] এসোটিরিসিজমের সঙ্গে পরিচিত হয়ে ওঠেছিলেন। তার প্রারম্ভিক ধর্মবিশ্বাস ব্রাহ্ম ধারণার আদলে গড়ে উঠেছিল, তাঁর কারন বিশ্লেষনরে জন্য তাঁর প্রাথমিক শিক্ষা ও আধ্যাত্মিক জ্ঞানের ওপর নজর দিলে দেখা যায় ছেলেবেলা থেকেই আধ্যাত্মিকতার দিকে নরেন্দ্রনাথের আগ্রহ ফুটে ওঠে। এই সময় শিব, রাম, সীতা ও মহাবীর হনুমানের মূর্তির সামনে তিনি প্রায়শই ধ্যানে বসতেন।{ Swami Vivekananda: Messiah of Resurgent Indপৃ৫}১৮৭১ খ্রিষ্টাব্দে, নরেন্দ্রনাথ ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের মেট্রোপলিটন ইনস্টিটিউশনে ভর্তি হন। নরেন্দ্রনাথ প্রেসিডেন্সি কলেজের (অধুনা প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়, কলকাতা) প্রবেশিকা পরীক্ষায় প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ হন। তিনি প্রচুর বই পড়তেন দর্শন, ধর্ম, ইতিহাস, সমাজবিজ্ঞান, শিল্পকলা ও সাহিত্য বিষয়ে বই পড়ায় তার বিশেষ আগ্রহ ছিল।(Chakrabarti 2001, পৃ. 628631) বেদ, উপনিষদ্, ভাগবদগীতা, রামায়ণ, মহাভারত, পুরাণ প্রভৃতি হিন্দু ধর্মগ্রন্থ পাঠেও তার আগ্রহ ছিল। এছাড়া তিনি হিন্দুস্থানি শাস্ত্রীয় সঙ্গীতে তালিম নিতেন এবং নিয়মিত অনুশীলন, খেলাধুলো ও সমাজসেবামূলক কাজকর্মে অংশ নিতেন।
জেনেরাল অ্যাসেম্বলি’জ ইনস্টিটিউশনে (অধুনা স্কটিশ চার্চ কলেজ, কলকাতা) পড়ার সময় নরেন্দ্রনাথ পাশ্চাত্য যুক্তিবিদ্যা, পাশ্চাত্য দর্শন ও ইউরোপীয় ইতিহাস অধ্যয়ন করেছিলেন।১৮৮১ খ্রিষ্টাব্দে তিনি চারুকলা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। ১৮৮৪ খ্রিষ্টাব্দে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন। নরেন্দ্রনাথ ডেভিড হিউম, জর্জ ডব্লিউ. এফ. হেগেল, আর্থার সোফেনহায়ার, ওগুস্ত কোঁত, জন স্টুয়ার্ট মিল ও চার্লস ডারউইনের রচনাবলি পাঠ করেছিলেন। হারবার্ট স্পেনসারের বিবর্তনবাদের প্রতি তিনি বিশেষভাবে আকৃষ্ট হয়েছিলেন। সে সময়ে স্পেনসারের সঙ্গে তার চিঠিপত্র বিনিময়ও চলত। স্পেনসারের এডুকেশন (১৮৬১) বইটি তিনি বাংলায় অনুবাদ করেছিলেন। পাশ্চাত্য দার্শনিকদের রচনাবলি পড়ার সঙ্গে সঙ্গে তিনি সংস্কৃত ধর্মগ্রন্থ ও বাংলা সাহিত্য নিয়েও চর্চা করেন। জেনেরাল অ্যাসেম্বলি’জ ইনস্টিটিউশনের প্রিন্সিপাল উইলিয়াম হেস্টি লিখেছেন, “নরেন্দ্র সত্যিকারের মেধাবী। আমি বহু দেশ দেখেছি, কিন্তু তার মতো প্রতিভা ও সম্ভাবনাময় ছাত্র দেখিনি; এমনকি জার্মান বিশ্ববিদ্যালয়গুলির দর্শন ছাত্রদের মধ্যেও না।” কয়েকটি স্মৃতিকথায় নরেন্দ্রনাথকে ‘শ্রুতিধর’ (অদ্ভুত স্মৃতিশক্তিসম্পন্ন ব্যক্তি) হিসেবে উল্লেখ করতেও দেখা যায়।
শিকাগো মহাসভার পরের দিনগুলোতে পাশ্চাত্যের মহনীয় বিলাস ব্যসনে এতটাই আপ্লুত হয়ে যান যে, তিনি ভারতে ফিরতেও দ্বিধান্বিত ছিলেন। ১৮৯৩ সালে আলা-সিঙ্গাকে লেখেন –
‘ভারতে গিয়ে ফল কি? ভারত আমার আইডিয়া শক্তিশালী করতে পারবে না। আমার আইডিয়ার প্রতি এদেশের (আমেরিকার) মানুষ সহৃদয়।‘
তার বোনকে ১৮৯৬ সালে লেখেন –
‘আমার হৃদয় রয়েছে আমেরিকায়। আমি ভালবাসি ইয়াঙ্কি দেশকে’।
বিবেকানন্দের নিজস্ব স্বীকারোক্তি থেকেই –
👉‘যতোই বয়োবৃদ্ধি হইতেছে, ততই এই প্রাচীন প্রথাগুলি আমার ভালো বলিয়া মনে হইতেছে’। (স্বামী বিবেকানন্দের বাণী ও রচনা, ৫ম খণ্ড, পৃঃ ২২)
👉‘বই পড়িয়া আমরা তোতাপাখি হই, বই পড়িয়া কেহ পণ্ডিত হওয় না’(স্বামী বিবেকানন্দের বাণী ও রচনা, ৪র্থ খণ্ড, পৃঃ ৮৫)
👉ভারতবর্ষে কোণ নারী পতিতা হলে তাকে ও তার পুত্র কন্যা সন্তানদের সারা জীবনের জন্য একঘেয়ে করা হয়য়। এটা মর্মান্তিক । কিন্তু এর ফলে সমাজ বিশুদ্ধ থাকে ।[ ডেট্রয়েড ট্রিবিউন পত্রিকায় বিবেকানন্দের বক্তৃতার রিপোর্ট , মার্চ ১৭, ১৮৯৪]
ভারতীয় সমাজে পুরুষের চেয়ে নারীরা যে সংখ্যায় বেশি সেটা বিবেকানন্দ তুলে ধরেছেন এই বাক্যে –‘widow-marriage obtains in communities having a greater number of men than women’ আর বিধবাবিবাহ প্রবর্তিত হলে নাকি ‘কুমারী মেয়েদের স্বামী মিলবে না’ সেটার প্রমাণ পাওয়া যায় উপরে বর্ণিত উদ্ধৃতিটার ‘if it did, one maid would have to go without a husband’ -এই অংশেই । সহজ ভাষাতেই লেখা, না বোঝার কোন কারণ নেই।
ইংরেজি রচনাবলীর পঞ্চম খণ্ড থেকে –
Therefore has society put one party under disadvantage, i.e. it does not let her have a second husband, who has had one; if it did, one maid would have to go without a husband. On the other hand, widow-marriage obtains in communities having a greater number of men than women,…( vol 5, p 183)
‘বিধবাদের বিয়ে যে প্রত্যাশিত নয়’, সেটার প্রতিফলন আমরা ইংরেজি রচনাবলীর নবম খণ্ডের ৬৭৬ পৃষ্ঠাতেও দেখি-
A widow is not expected to ever marry again(vol 9, page 676)
‘নারীদের অধিকার সচেতন’ বিবেকানন্দ যেমন বিধবা বিবাহ প্রথার বিরুদ্ধে বলেছেন, একই ধারায় আবার বাল্যবিবাহ সমর্থন করে গেছেন অনেক সময়ই। যেমন, ইংরেজি রচনাবলীর দ্বিতীয় খণ্ডে আছে –
The Hindus, to keep up a high standard of chastity in the race, have sanctioned child-marriage, which in the long run has degraded the race. At the same time, I cannot deny that this child-marriage makes the race more chaste. (vol2, page 89)
উদ্ধৃতিটি নিয়ে কিছু মন্তব্য করা দরকার। to keep up a high standard of chastity in the race, have sanctioned child-marriage এর বাংলা হিসেবে আমি উদ্ধৃত করেছিলাম ‘বাল্যবিবাহ হিন্দু জাতিকে পবিত্রতায় ভূষিত করিয়াছে’।
এটা আমার কথা নয়, রামকৃষ্ণ জিবনীকার ক্রিস্টোফার ইশারউডও সেটা স্বীকার করে বলেছেন –
‘স্বামীজি আজ যা বলতেন, পরদিন তার কথার সাথে কোন মিল থাকতো না।‘ (খ্রিস্টোফার ইশারউড, রামকৃষ্ণ ও তার শিষ্যগণ, পৃঃ ২৭৮)
মনি শঙ্কর মুখার্জির লেখা খুব মুল্যবান পুস্তকের অংশ বিশেষ
দেশপ্রেমের নমূনাঃ
- ‘ভারতে গিয়ে ফল কি? ভারত আমার আইডিয়া শক্তিশালী করতে পারবে না। আমার আইডিয়ার প্রতি এদেশের (আমেরিকার) মানুষ সহৃদয়।‘
- ‘আমার হৃদয় রয়েছে আমেরিকায়। আমি ভালবাসি ইয়াঙ্কি দেশকে’।
বিবেকানন্দ অতীশয় ধুরন্ধর ছিলেন। সন্যাসী মার্কা ছবি এবং অতি সাধারণ ছড়া “জীবে প্রেম করে যেই জন, সেই জন সেবিছে ঈশ্বর” দ্বারাই বাংগালী হিন্দুদের মগজ ধোলাই করলেন। তিনি বাংগালীর ঘরে ঘরে এখনও পুজিত। উপরে উল্লেখিত অখাদ্য বাণী নিয়ে কারও মাথা ব্যথা নাই। মানুষের মগজ এমনি একটা জায়গা যেখানে দেবতা হিসেবে একবার স্থান দখল করতে পারলে সেটা চিরস্থায়ী হয়ে যায়। তথাকথিত একটা অশিক্ষিত গেঁয়ো ভূতও জানে লেখাপড়ার বিকল্প নেই। কিন্তু মস্তিষ্ক বিকৃত স্বামী বিবেকানন্দ হীরক রাজার মতই জ্ঞানার্জন বিরোধী ছিলেন। এতদসত্ত্বেও বাংগালী হিন্দু্র নিকট স্বামী বিবেকানন্দ একজন মহাপুরুষ।
না জানো বাংলা, না জানো সংস্কৃত। বোধবুদ্ধি বলৃও কিছু নেই। তোমার মতো লোকেরই বিবেকানন্দের সমালোচনা সাজে।
ReplyDeleteবাহ বাহ, মূত্রমনাদের কপিপেস্ট 👀
ReplyDeleteতবে স্বামী বিবেকানন্দই আসল হিন্দু বিবেকধারী 👀