ঈশ্বরকে জানার উপায় কি - ধর্ম্মতত্ত্ব

ধর্ম্মতত্ত্ব

ধর্ম বিষয়ে জ্ঞান, ধর্ম গ্রন্থ কি , হিন্দু মুসলমান সম্প্রদায়, ইসলাম খ্রীষ্ট মত বিষয়ে তত্ত্ব ও সনাতন ধর্ম নিয়ে আলোচনা

धर्म मानव मात्र का एक है, मानवों के धर्म अलग अलग नहीं होते-Theology

সাম্প্রতিক প্রবন্ধ

Post Top Ad

স্বাগতম

08 January, 2021

ঈশ্বরকে জানার উপায় কি

‘‘ঈশ্বরকে জানতে হলে সৃষ্টির বিজ্ঞান জানতে হবে’’ ইহা ঋষি দেব দয়ানন্দ জির ধারণা, প্রত্যেক মানুষের উচিত সৃষ্টি রচনাকে ভালোভাবে জেনে, ঈশ্বরকে জানা, অর্থাৎ কেউ যদি নিজেকেও জানতে চায় বা ঈশ্বরকে জানতে চায়, তাহলেও প্রথমে সৃষ্টির বিজ্ঞান জানা দরকার ।
সৃষ্টির স্রষ্টা কে, কি কারণে হয়েছে, কিভাবে তৈরি হয়, এটা কি দিয়ে তৈরি হয়, এসব মানুষের কাজ সব বিষয় জানার, মানুষ বলেই এসব জানা দরকার কারণ পৃথিবীতে মানুষই একমাত্র প্রাণী যে জানতে চায়, জানার ক্ষমতা রাখে, নিজের জ্ঞানকে সে বাড়াতে চায়, কখন, কি, কেন, এবং কিভাবে, এসব জানার ক্ষমতা আছে যার তাঁদের নাম মানব ।
তিনটি জিনিস প্রবাহ থেকে অনাদি, যা কখনো বিনষ্ট হয় না, চিরকাল ধরে আছে এবং চিরকাল থাকবে। ঈশ্বর - প্রকৃতি - জীব, এদের স্রষ্টা কেউ নেই, এদের অনাদি বলা হয় ।
ঈশ্বর কখনো বিনাশ হবে না, এমনকি আত্মাও শেষ হচ্ছে না, আর প্রকৃতিও শেষ হয় না বরং রূপ বদলায় । যেরকম ঈশ্বর অনাদি ঠিক তেমনি, জীবাত্মা, আর প্রকৃতিও অনাদি, অর্থাৎ যার কোনো প্রারম্ভের (আদি) সময় নেই, এটি চিরকাল ধরে আছে এবং চিরকাল থাকবে ।
द्वा सुपर्णा सयुजा सखाया समानं वृक्षं परिषस्वजाते |
तयोरन्यःपिप्पलं स्वाद्वत्त्यनश्न्न्यो अभि चाकशीति || ऋ० म० 1 सू 164 म० 20
অর্থাৎ- এখানে ঈশ্বর, প্রকৃতি ও জীব, তিনটি সমান-সমান ভাবে আছে।
একে অপরের সখা (বন্ধু), একটি বৃক্ষে দুইটি পক্ষী অবস্থান করেছে । বৃক্ষটি জগৎ এবং দুইটি পক্ষীর একটি জীব(জীবাত্মা), অন্যটি ব্রহ্ম(পরমাত্মা)। প্রকৃতি, জীব ও ব্রহ্ম এরা অনাদি । ঈশ্বরকে খাওয়া দাওয়া করতে হয় না, তিনি সর্বজ্ঞ, জীবাত্মা অল্পজ্ঞ, আর প্রকৃতি হচ্ছে জ্ঞান শূন্য ।
জীবাত্মা সংসারে পাপ পূণ্যের ফলভোগ করে এবং পরমাত্মা ফল ভোগ না করিয়া সাক্ষী রূপে বর্ত্তমান থাকেন ।
এই তিনটির গুণ কর্ম স্বভাব ও অনাদি, জীব এই সংসাররূপী বৃক্ষে পাপপুণ্যের ফল ভোগ করে। আর পরমাত্মা কোনো ফল ভোগ না করে, সব দিকে, ভেতরে বাহিরে সর্বত্র প্রকাশমান হয়ে থাকেন। ঈশ্বর, জীব, এবং প্রকৃতি, এরা তিনটি অনাদি ।
আর অনাদি সনাতন জীবরূপ প্রজার জন্য বেদের মাধ্যমে পরমাত্মা সমস্ত বিজ্ঞানের জ্ঞান দিয়েছেন ।
अजामेकां लोहितशुक्लकृष्णां, ब्रह्मिःप्रजाःसृजमानां स्वरुपः|
अजो ह्यको जुषमनो अनुशेते, जहा त्येना, भुक्त भोगामजोअन्य: ||
প্রকৃতি, জীব, এবং পরমাত্মা এরা তিনটিই ‘অজ’ মানে যারা কখনো জন্ম নেয় না, যাদের কখনো জন্ম হয় না । অর্থাৎ এই তিন সমস্ত জগতের কারণ, এদের কারণ কেউ নেই । এই অনাদি প্রকৃতিকে অনাদি জীব ভোগ করে আর ফেঁসে যায় । আর পরমাত্মা না তো সেটা ভোগ করেন আর না তিনি জড়িয়ে পড়েন । জীবাত্মা এবং পরমাত্মার কাজের মধ্যে পার্থক্য আছে। পরমাত্মা যে কাজ করে থাকে তা জীবাত্মা করতেই পারবে না। আর জীবাত্মা যে সব কাজ করে তা পরমাত্মা করেন না, মান মর্যাদার বিরুদ্ধ কাজ ঈশ্বর করেন না । আর প্রকৃতি জড় হওয়ায় সে নিজে থেকে কিছুই করতে পারে না, এটা জানা খুবই জরুরি ।
প্রকৃতি কি তা বুঝেনিন সত্য, রজ: এবং তম: - এই তিনের মিলনকে প্রকৃতি বলা হয় । এর থেকে মহত্তত্ব, বুদ্ধি:, এর থেকে অহংকার, অহংকার থেকে পাঁচ তন্মাত্রা, সূক্ষ্ম ভূত এবং দশ ইন্দ্রিয় তথা একাদশ মন, পাঁচ তন্মাত্রা দ্বারা পৃথ্বিয়াদি পাঁচ ভুত, এই হলো চব্বিশ আর পঁচিশতম হচ্ছে ‘পুরুষ’ অর্থাৎ জীব আর পরমেশ্বর । এর মধ্যে প্রকৃতি অবিকারিনী আর মহত্তত্ব, অহংকার তথা পাঁচ সূক্ষ্ম ভূত প্রকৃতির কার্য আর ইন্দ্রিয় মন তথা সূক্ষ্ম ভূতের কারণ । আর পুরুষ না কোনো প্রকৃতি উপাদান কারণ আর না কারো কার্য ।
আমি অবশ্যই বলবো এই জ্ঞান শুধু মাত্র বেদের । কোনো মত্পন্থ সম্প্রদায়ের বই যেমন বাইবেল, কুরআন ইত্যাদির মত কোন সম্প্রদায়ের বইয়ে এই জ্ঞান নেই । আর এই জিনিসটা তারা জানে না, জানতেও চায় না । কারণ এটা জানার একমাত্র উপায় হল বেদ, যাকে দুনিয়ার কোনো মত্-পন্থীরা জানেই না । কোরআন এবং বাইবেলের উৎপত্তি বিষয়ের প্রতি মনোযোগ দিলে স্পষ্ট বোঝা যায় । যেমন কোরআন বলে- আল্লাহ একবার ‘কুন’ শব্দ বলাতে ‘ফয়াকুন’ – হয়ে গেছে। অন্য দিকে ‘কুন’ শব্দ একটি আদেশাত্মক শব্দ । যখন সামনে কেউই নেই তখন আল্লাহ কাকে বলেছে – ‘হয়ে যা’?
এমনকি বাইবেলও বলে ঈশ্বর সৃষ্টি করেছেন –
এখানেও সব কিছু হয় শুধু বলার সাথে সাথে, কাকে বলেছে জানি না !
এইভাবে সকল মত্ পন্থীরা কেবল নিজেদের দোকানদারি করেছে, দুর্ভাগ্য এই আর্য বা হিন্দুদের যে সকল গুপ্তধন জ্ঞান বেদ তাদেরই সঙ্গে আছে, নিজেদের আচরণে তা ধারণ না করার কারণে আজ সব মত্ -পন্থ সম্প্রদায় এদের ওপর আধিপত্য স্থাপন করতে চলেছে ।
এই লোকেরা ঋষিদের অমান্য করেছে, ঋষিরা বেদে ফিরে আসতে বলেন, এরা বেদ থেকে দূরে চলে যায়, এরই পরিণাম সামনে এসেছে। 🅲- পণ্ডিত মহেন্দ্র পাল আর্য
ঈশ্বর

ঈশ্বর সচ্চিদানন্দস্বরূপ, নিরাকার, সর্বশক্তিমান, ন্যায়কারী, দয়ালু, অজন্মা, অনন্ত, নির্বিকার, অনাদি, অণুপম, সর্বাধার, সর্বেশ্বর সর্বব্যাপক, সর্বান্তর্যামী, অজর, অমর, অভয়, নিত্য, পবিত্র ও সৃষ্টিকর্তা ।
এই বিশ্ব-ব্রহ্মাণ্ড সৃষ্টির মূলে কে রয়েছেন ? প্রত্যেকের মনে কোন না কোন সময় এই একটি প্রশ্ন জাগ্রত হয় । সকল সৃষ্ট বস্ত্তর একজন চালক থাকে । কে এই জগতের চালক ? প্রাচীনকালের মুনি-ঋষিরা মানব-মনের এই সকল প্রশ্নের উত্তর দিয়ে গেছেন । যিনি সর্বকার্যের আদি কারণ, মুনি-ঋষিরা তাঁর নাম দিয়েছেন ঈশ্বর, ব্রহ্ম প্রভৃতি । প্রকৃতপক্ষে ঈশ্বর নাম-রূপহীন । ঈশ্বরকে চিন্তা করার জন্য তাঁর গুণ বা বৈশিষ্ট্য অনুসারে তাঁকে ভগবান, ব্রহ্ম, পরমাত্মা প্রভৃতি বিভিন্ন নামে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে । ঈশ্বর সর্ম্পকে প্রত্যক্ষ জ্ঞানলাভ অসম্ভব, কারণ তিনি অজ্ঞেয় । প্রাচীনকালের সেই তত্ত্বাদর্শী ঋষিগণ যোগবলে ঈশ্বর সম্পর্কে জ্ঞানলাভ করেছেন এবং তা শিষ্যদের বলে গেছেন । এভাবেই আমরা ঈশ্বর সম্পর্কে জানতে পারছি ।
এখন ‘‘ঈশ্বর’’ শব্দের শব্দের তাৎপর্য আলোচনা করা যাক । ‘‘ঈশ্’’ ধাতুর উত্তরে বরচ্ প্রত্যয় যোগে ‘‘ঈশ্বর’’ শব্দটি উৎপন্ন হয়েছে । ‘‘ঈশ্’’ ধাতুর অর্থ শ্রেষ্ঠ বা প্রভূ । যিনি এই জীব-জগতের সকলের চেয়ে শ্রেষ্ঠ বা যিনি সকলের প্রভূ, তিনিই ঈশ্বর । আবার যাঁর অষ্টবিধ ঐশ্বর্য আছে, তিনিই ঈশ্বর । অষ্টবিধ ঐশ্বর্য বলতে অণিমা, মহিমা, গরিমা, লঘিমা, প্রাপ্তি, প্রাকাম্য, ঈশিত্ব ও বশিত্ব বোঝায় । সূক্ষ্ম আকার ধারণ করার ক্ষমতাকে অণিমা, শরীরকে স্থুলাকার করার ক্ষমতাকে মহিমা, ইচ্ছা মত ভারী হওয়ার ক্ষমতাকে গরিমা, ইচ্ছা মত লঘু বা হালকা হওয়ার ক্ষমতাকে লঘিমা, সর্বত্র গমন করার ক্ষমতাকে প্রাপ্তি, নিজ ভোগের ইচ্ছা পূর্ণ করার ক্ষমতাকে প্রাকাম্য, প্রভূত্ব করার ক্ষমতাকে ঈশিত্ব এবং সকলকে বশ করার ক্ষমতাকে বশিত্ব বলে।
ভগবান কে ? যাঁর ভগ (গুণ) আছে তিনিই ভগবান । ভগ বলতে ঐশ্বর্য, বীর্য, যশ, শ্রী, বৈরাগ্য এবং জ্ঞান এই ছয়টি গুণকে বোঝায় । এবার ব্রহ্ম প্রসঙ্গে আসা যাক । ‘‘বৃনহ’’ ধাতু পূর্বক মন্ দ্বারা ব্রহ্ম শব্দটি নিষ্পন্ন হয়েছে । ‘‘বৃনহ’’ ধাতুর অর্থ বৃহৎ । যিনি বৃহৎ বা অসীম এবং সর্বব্যাপী আছেন, তিনিই ব্রহ্ম । ব্রহ্ম নিরাকার (যাঁর কোন আকার নেই), নিরঞ্জন (যাঁকে অঞ্জন বা চক্ষু দ্বারা দর্শন করা যায় না), নির্বেদ্য (যাঁকে জানা যায় না), অনন্ত (যাঁর আদি বা অমত্ম নেই), অসীম (যাঁর সীমা নেই), অজর (যাঁর জরতা নেই), অমর (যিনি মরেন না), অবিনশ্বর (যাঁর বিনাশ নেই), অখ- (যাঁকে খ- করা যায় না অর্থাৎ যিনি পূর্ণ), অপরিণামী (যার কোন পরিমান নেই), অবিকার (যাঁর বিকার নেই) এবং বিভু (যিনি শক্তিমান)। ব্রহ্মসূত্রে আছে, ‘‘জন্মাদ্যস্য যতঃ’’ অর্থাৎ যা হতে জগতের সৃষ্টি, স্থিতি ও প্রলয়, তিনি ব্রহ্ম । এখন প্রশ্ন হল, ব্রহ্ম নিরাকার ও নির্গুণ হলে কিভাবে তিনি জগৎকে নিয়ন্ত্রন করেন ? প্রকৃতপক্ষে ব্রহ্মের দেহ ও ইন্দ্রিয় না থাকলেও তিনি নিষ্প্রাণ বা জর নয়। ব্রহ্ম চৈতন্যময় কারণ চৈতন্যময় না হলে তিনি পাপ-পূণ্যের বিচার করতে পারতেন না ।
মুণ্ডক উপনিষদে বলা হয়েছে, ‘‘যাঁর জ্ঞান অপ্রতিহত, সমগ্র সৃষ্টি যাঁর জ্ঞাত, তপস্যা যার জ্ঞানময়, সেই ব্রহ্ম হতেই স্রষ্টা, নাম, রূপ ও অন্ন উৎপন্ন হয়’’। বেদে স্রষ্টাকে ঈশ্বর বা ভগবান বলে সম্বোধন করা হয়নি । বেদের ঋষিগণ প্রকৃতির বিভিন্ন শক্তির মধ্যে স্রষ্টাকে প্রত্যক্ষ করেছেন। তাঁরা উপলব্ধি করেছেন যে, এক স্রষ্টা প্রকৃতিতে বিভিন্ন রূপে বিদ্যমান । তাঁরা স্রষ্টার সে রূপকে কখনও অগ্নি, কখনও ইন্দ্র, কখনও সূর্য নামে অভিহিত করেছেন এবং তাঁরা উপলব্ধি করেছেন যে, অগ্নি, ইন্দ্র, সূর্য, বরুণ প্রভৃতি দেবতা পৃথক নয় । এক স্রষ্টাই অগ্নি, ইন্দ্র, সূর্য প্রভৃতি রূপে প্রকাশিত হয়েছেন ।
বেদে স্রষ্টাকে পুরুষ নামেও সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে । ঋগ্বেদের দশম মণ্ডলের পুরষ-সূক্তে বলা হয়েছে- ‘‘সে পুরুষের অনন্ত মস্তক, অনন্ত নয়ন, অনন্ত চরণ । তিনি সমগ্র ভুবনকে পরিব্যাপ্ত করেও নাভির দশাঙ্গুল ঊর্ধে অর্থাৎ হৃদয়ে বিরাজিত আছেন’’। শঙ্করাচার্য ঈশ্বরকে গোবিন্দ নামে আখ্যায়িত করেছেন । শঙ্করাচার্য তাঁর বিবেকচূড়ামণি গ্রন্থের শুরুতেই বলেছেন, ‘‘সমস্ত বেদান্তশাস্ত্রের সিদ্ধান্তে যাঁর কথা বলা হয়েছে, যিনি বাক্য ও মনের অতীত এবং পরমানন্দ স্বরূপ সদ্-গুরু সেই গোবিন্দ নামধারী পরমাত্মাকে আমি প্রণাম করি’’। সহজ কথায় বেদান্তবাক্য দ্বারা যাঁকে জানা যায়, তিনিই গোবিন্দ।
ঈশ্বরের অস্তিত্ব উপলব্ধি করার উপায় কি ? একটি পাত্রে জলের মধ্যে কিছু চিনি রেখে দিলে কিছুক্ষণ পর চিনি জলে দবীভূত হয়ে অদৃশ্য হয়ে যাবে । চিনি ও জলের দ্রবণে চিনিকে দেখা না গেলেও ঐ দ্রবণ পান করে বোঝা যায় যে, এতে চিনি আছে । এভাবে ঈশ্বরকে চক্ষু দ্বারা প্রত্যক্ষ না করা গেলেও তাঁর অস্তিত্ব অস্বীকার করা অসম্ভব । ন্যায়-দর্শনে ঈশ্বরের অস্তিত্বের পক্ষে যেসব যুক্তি দেওয়া হয়েছে, তা আলোচনা করা যাক । প্রথমত, সব পদার্থের মধ্যেই একটি কার্য-কারণ সম্বন্ধ থাকে । যা থেকে কার্য সৃষ্টি হয়, তাই কারণ । কুমার মাটি দিয়ে ঘট তৈরি করে, এখানে মাটি কারণ এবং ঘট কার্য । চন্দ্র, সূর্য, গ্রহ, নক্ষত্র, পাহাড়, পবর্ত, সমুদ্র, বন প্রভৃতি সবই যোগিক পদার্থ । যৌগিক পদার্থ অংশের সমষ্টি এবং এর আকার-আকৃতি রয়েছে । তাই যৌগিক পদার্থ মাত্রই কার্য। প্রত্যেক কার্যের একটি কারণ আছে । তাই চন্দ্র, সূর্য, নক্ষত্র প্রভৃতি কার্যেরও কারণ আছে । কারণ প্রধানত দুই প্রকার, যথা- উপাদান কারণ এবং নিমিত্ত কারণ । যেমন- ঘটের উপাদান কারণ মাটি এবং নিমিত্ত কারণ কুমার । চন্দ্র, সূর্য প্রভৃতির কার্যেরও উপাদান ও নিমিত্ত কারণ থাকবে । পঞ্চভূতই (পৃথ্বি, জল, আগুন, বায়ু ও আকাশ) এদের উপাদান কারণ । তবে এদের নিমিত্ত কারণ কে ? চন্দ্র, সূর্য, প্রভৃতি কার্যের নিমিত্ত কারণই ঈশ্বর । দ্বিতীয়ত এ জগতে কেউ ধনী, কেউ দরিদ্র, কেউ সুখী, কেউ দুঃখী, কেউ জ্ঞানী, কেউ মূর্খ - মানুষের মধ্যে এই বিভেদের একটা কারণ আছে। মানুষের কর্মফলই এই বিভেদের জন্য দায়ী । সুকর্ম করলে সুফল এবং কুকর্ম করলে কুফল পাওয়া যায় । মানুষের এই শুভাশুভ ফল যাতে সঞ্চিত থাকে তাকে অদৃষ্ট বলে । জীব নিজে তার অদৃষ্টকে জানে, তাই জীবের পক্ষে অদৃষ্টকে নিয়ন্ত্রন করা সম্ভব নয় । সুতরাং কোন চৈতন্যময় সত্ত্বাই এই অদৃষ্টকে নিয়ন্ত্রন করেন এবং সে চৈতন্যময় সত্ত্বাই ঈশ্বর ।
এখন প্রশ্ন হল ঈশ্বর সাকার না নিরাকার ? পাত্রভেদে ঈশ্বর সাকার বা নিরাকার । ব্রহ্মসূত্রের তৃতীয় অধ্যায়ের দ্বিতীয় পাদে আছে, ‘‘অরূপবদেব হি, তৎপ্রধানত্বাৎ’’ অর্থাৎ ব্রহ্ম নিশ্চিতভাবেই নিরাকার, কারণ তিনি বেদ ও বেদান্তের প্রধান প্রতিপাদ্য (বর্ণনীয়) বিষয় । পরে বলা হয়েছে- ‘‘তদব্যক্তমু আহ হি’’ অর্থাৎ শাস্ত্রে ব্রহ্মকে অব্যক্ত বা ইন্দ্রিয়াতীতও বলে উপদেশ দিয়েছেন । ‘কেন’ উপনিষদে আছে, ‘‘সেই ব্রহ্মে চক্ষু গমন করে না তর্থাৎ চক্ষু দ্বারা তাঁকে দেখা যায় না, বাক্য দ্বারা তাকে প্রকাশ করা যায় না এবং মন দ্বারাও তাকে মনন বা চিন্তা করা যায় না’’। সোজা কথায় ব্রহ্ম চক্ষু, কর্ণ আদি ইন্দ্রিয় ও মনের অগোচর অর্থাৎ ব্রহ্ম নিরাকার । ঈশ উপনিষদে আছে- ‘‘যিনি ব্রহ্ম হতে তৃণ পর্যন্ত সমস্ত ভূত বা বস্তুকে আত্মাতেই দর্শন করেন এবং সমস্ত ভূত বা বস্তুর মধ্যে নিজের আত্মাকেই দর্শন করেন, তিনি এ রকম দর্শনের পর কাউকে ঘৃণা করেন না’’। অর্থাৎ ব্রহ্ম সর্বভূতে বিরাজমান । একমাত্র নিরাকার বস্তুই সর্বভূতে বিরাজিত থাকতে পারে ।
বেদান্ত মতে ঈশ্বর স্বরূপত নির্গুণ, নিরাকার এবং অব্যক্ত হলে ঈশ্বরের সাকার রূপের কল্পনা কেন ? এ প্রশ্নের উত্তরে ব্রহ্মসূত্রে বলা হয়েছে, ‘‘বৃদ্ধ্যর্থঃ পাদবৎ’’ অর্থাৎ উপাসনার সুবিধার্থে ব্রহ্মের পাদ আদি রূপ কল্পনা করা হয়েছে । ছান্দোগ্য উপনিষদে বলা হয়েছে, ‘‘ব্রহ্ম চার পাদ ও ষোড়শ-কলা বিশিষ্ট । প্রকাশবান, অনন্তবান, জ্যোতিষ্মান ও আয়তনবান এই হল ব্রহ্মের চার পাদ। প্রতি পাদে চার কলা রয়েছে । প্রকাশবানে পূর্ব, পশ্চিম, উত্তর ও দক্ষিণ দিক নামক কলা, অনন্তবানে পৃথিবী, অন্তরীক্ষ, দ্যুলোক ও সমুদ্র নামক কলা, জ্যোতিষ্মানে অগ্নি, সূর্য, চন্দ্র ও বিদ্যুৎ নামক কলা এবং আয়তনবানে প্রাণ চক্ষু, কর্ণ ও মন নামক কলা রয়েছে । ব্রহ্মের এই সাকার রূপ কাল্পনিক ও রূপক কারণ কোন বস্তুর রূপ ঐ রকম থাকতে পারে না । মূলত ব্রহ্মকে সহজ উপায়ে চিন্তা করার জন্য তাঁর রূপের কল্পনা করা হয়েছে । ব্রহ্মসূত্রে আছে- ‘‘স্থানবিশেষাৎ, প্রকাশাদিবৎ’’ অর্থাৎ স্থান বিশেষের জন্য ব্রহ্মের সাকার রূপ কল্পনা করা হয়ে থাকে; যেমন- আকাশ, আলোক প্রভৃতির ক্ষেত্রে হয়ে থাকে । একটি ঘটের মধ্যস্থ আকাশ আর বাইরের আকাশের মধ্যে কোন পার্থক্য নেই, শুধু নাম বা উপাধির পার্থক্য থাকে । তদ্রূপ ঘরের ভেতরের আলো ও বাইরের আলো একই, শুধু পৃথক নাম ও উপাধি দেওয়া হয় মাত্র । যখন ঘটের বিনাশ হয় তখন ঘটের ভিতরের ও বাইরের আকাশ এক হয়ে যায়, তেমনি ঘরের বিনাশ হলে ঘরের ভেতরের ও বাইরের আলো এক হয়ে যায় । শুধু নাম বা উপাধির জন্যই নিরাকার ব্রহ্মকে সাকার বলে মনে হয় ।
জ্ঞানযোগীর নিকট ব্রহ্ম নিরাকার হলেও ভক্তের নিকট ব্রহ্ম সাকার ও সচ্চিদানন্দময় । ভক্তগণ সগুণ ব্রহ্ম বা ভগবানের সাথে প্রভূ, বন্ধু, মাতা, পিতা প্রভৃতি সম্বন্ধ পাতিয়ে তাঁর মূর্তিতে পূজা-অর্চনা করে আনন্দ পান । তারা অনমত্ম ও অসীম ঈশ্বরকে ভক্তিডোরে বেঁধে সীমার মাঝে আনতে চান । কিন্তু ভক্ত যখন সাধনার সর্বোচ্চ শিখরে পৌঁছে পরাভক্তি অর্জন করেন, তখন ঈশ্বরকে কোন বিশেষ মূর্তির মধ্যে না দেখে সর্বভূতেই দর্শন করেন । প্রকৃতপক্ষে ঈশ্বর বাইরে নয়, অন্তরেই অবস্থান করেন । সাধক মূলত অন্তরের ঈশ্বরের প্রতিবিম্বই বাইরে দর্শন করেন ।
ঈশ্বর যদি নিরাকারই হয়ে থাকেন তবে তিনি সাকার হন কিভাবে ? অনেক সাধক সাধনাবলে ঈশ্বরের সাকার রূপ দর্শন করতে পারেন; কিন্তু কিভাবে ? ঈশ্বরের সাকার রূপ আসলে কি ? মূলত পাত্রভেদে ঈশ্বর সাকার বা নিরাকার । মানুষ তার জ্ঞান-বুদ্ধি অনুসারে ঈশ্বরের বিভিন্ন আকার-আকৃতি চিন্তা করে । যে ভক্ত বুদ্ধি বা জ্ঞান-বিচার করে উপলব্ধি করেন যে, ঈশ্বর সাকার এবং সাধনাবলে তাঁকে দর্শন করা সম্ভব, সে ভক্তের মনে ঈশ্বরের একটি কাল্পনিক চিত্র অঙ্কিত হয়। ইন্দ্রিয়গণের অধিপতি মন এবং মনের অধিপতি বুদ্ধি বা জ্ঞান। ভক্তের জ্ঞান-বুদ্ধি বলে ঈশ্বর সাকার। যেহেতু বুদ্ধি মনের অধিপতি সেহেতু বুদ্ধির নির্দেশে ভক্তের মনে ঈশ্বরের একটি চিত্র অঙ্কিত হয় । ঈশ্বরের সে চিত্রকে প্রত্যক্ষ করার জন্য তাঁর মন পঞ্চ-জ্ঞানেন্দ্রিয়কে (চক্ষু, কর্ণ, নাসিকা, জিহবা, ও ত্বক) নির্দেশ দেন । তখন ভক্ত সাধনাবলে যে মায়াকে বশীভূত করতে পেরেছেন, সে মায়া তাঁর পঞ্চ-জ্ঞানেন্দ্রিয়ের উপর ক্রিয়া করে । পরিশেষে ভক্ত মনের কল্পিত ঈশ্বররের মায়াময় রূপ চক্ষুর সম্মুখে দর্শন করেন । মায়া দ্বারা বশীভূত ঐ চক্ষুই দিব্য-চক্ষু নামে খ্যাত । সুতরাং ঈশ্বর স্বরূপত নিরাকার এবং তাঁর সাকার রূপ মূলত মায়াময় । মায়া যেহেতু অস্থায়ী, সেহেতু ঈশ্বরের সাকার রূপও অস্থায়ী ।
ঈশ্বরের সাকার রূপ একেক জনের নিকট একক রকম । দর্পণের সম্মুখে কোন বস্তু রাখলে দর্পণে বস্তুটির যে প্রতিবিম্ব পড়ে, তা দেখে মনে হয় যে, ঐ দর্পণের মধ্যে বস্তুটির অস্তিত্ব আছে। তদ্রূপ অন্তকরণে থাকা ঈশ্বরের কাল্পনিক রূপের প্রতিবিম্ব দেখে মনে হয় সাকার ঈশ্বরের অস্তিত্ব আছে । কিন্তু যিনি জ্ঞানযোগী তিনি জ্ঞান-বিচার করে উপলব্ধি করেন-ঈশ্বর নিরাকার । ফলে তাঁর মনে ঈশ্বরের কোন কাল্পনিক চিত্র অঙ্কিত হয় না । তিনি মায়াকে বশীভূত করেছেন বলে তাঁর সম্মুখে ঈশ্বরের কোন মায়াময় সাকার রূপও উৎপন্ন হয় না । জ্ঞানযোগীরা ঈশ্বরকে বড় জোর কোন জ্যোতি বা আলোকরশ্মি রূপে কল্পনা করেন কিন্তু কখনই সাকার মূর্তির কল্পনা করেন না। জ্ঞানযোগীরা বলেন, ঈশ্বরের যদি দেহ থাকে তবে তাঁর ইন্দ্রিয়, মন, বুদ্ধি ও চৈতন্য থাকবে । যদি ঈশ্বরের মন থাকে তবে তাঁর ইচ্ছা, চিন্তা, সুখ, দুঃখ, রাগ, দ্বেষ প্রভৃতি থাকবে কারণ এগুলো মনের বৃত্তি । কিন্তু ঈশ্বর তো সুখ-দুঃখ, রাগ-দ্বেষ প্রভৃতির ঊর্ধে, কেননা ঐ সব গুণ থাকলে ঈশ্বর পক্ষপাত ও দুষ্ট হয়ে পড়বেন । আবার দেহ ও মন যেহেতু নশ্বর, সেহেতু ঈশ্বরও নশ্বর হবেন । সুতরাং যেহেতু ঈশ্বর অবিনশ্বর সেহেতু তিনি সাকার নন ।
অদ্বৈত বেদান্তবাদীদের মতে ঈশ্বর ও জীবে কোন ভেদ নেই অর্থাৎ জীবই ঈশ্বর কিন্তু মায়ার কারণে মনে হয় ঈশ্বর জীব থেকে পৃথক । ছান্দোগ্য উপনিষদে আছে- সর্বং খল্বিদং ব্রহ্ম অর্থাৎ সব কিছুই ব্রহ্ম । কঠ উপনিষদে আছে, ‘‘মনসৈবেদমাপ্তব্যং নেহ নানাসিত্ম কিঞ্চন । মৃত্যোঃ স মৃত্যুং গচ্ছতি য ইহ নানেব পশ্যতি।।’’ অর্থাৎ এই জগতে ব্রহ্ম হতে পৃথক কিছুই নেই, এই তত্ত্বটি সংস্কৃত মন দ্বারাই উপলব্ধি করতে হবে । যে ব্যক্তি এই জগৎকে ব্রহ্ম হতে পৃথক মনে করে, সে মৃত্যু হতে মুক্তি পায় না । মানুষ এভাবে প্রতিটি বস্ত্তকে ঈশ্বরজ্ঞান করলে তাঁর হিংসা দূরীভূত হয়ে যেত কারণ যাকে হিংসা করবে সেও তো ঈশ্বর । পরিশেষে একথাই বলা চলে যে, ব্রহ্ম অজ্ঞেয়, অচিন্ত্য এবং অসীম । তাই সীমাবদ্ধ চক্ষু, কর্ণ, প্রভৃতি ইন্দ্রিয় দ্বারা তাঁকে প্রত্যক্ষ করা সম্ভব নয় । ব্রহ্ম বা ঈশ্বর অব্যক্ত বলেই দুর্লভ । ঈশ্বর যদি সুলভ বস্তু হতেন, তবে তিনি সকলের পরম আরাধ্য হতেন না ।
ঈশ্বরকে প্রত্যক্ষ প্রমাণ দেওয়া তো সম্ভব নয়। তাহলে কিভাবে আপনি ঈশ্বরকে প্রতিষ্ঠা করবেন?
উত্তরঃ প্রমাণ অর্থ হচ্ছে স্বচ্ছ জ্ঞান যা ইন্দ্রিয় অঙ্গগুলো হতে প্রাপ্ত উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে নির্ধারিত হয় । কিন্তু লক্ষ করুন ইন্দ্রিয় অঙ্গ গুলো শুধ মাত্র গুণ সুমহকে ধারণ করতে পারে ঐ সকল গুণের কারণ বা হেতুকে নয় । উদারহন স্বরূপ, যখন আপনি এই লেখাটি পড়ছেন তখন কিন্তু আপনি আমার অস্তিত্বকে ধারণ করতে পারছেন না, কিন্তু কতগুলি সাংকেতিক চিহ্ন, বর্ন, বা ছবি যা কম্পিউটার স্ক্রিনে আসছে যা আপনি অর্থপূর্ন জ্ঞানে রূপান্তরিত করছেন । তারপরে আপনি এই সিদ্বান্তে উপনীত হয়েছেন যে এই লেখাটির কোন লেখক আছে এবং এই লেখকের অস্তিত্বের প্রমাণ আপনার কাছে আছে বলে আপনি দাবী করেন । সুতরাং এটা হচ্ছে একটি পরোক্ষ প্রমাণ যদি প্রত্যক্ষ ভাবেই প্রতীয়মান হয় । ঠিক একই ভাবে এই সমস্ত সৃষ্টি যা আমরা এর বৈশিষ্ট্য দ্বারা পর্যবেক্ষন করি আমাদের ইন্দ্রিয় অঙ্গসমূহ মধ্য দিয়ে তা ঈশ্বরের অস্তিত্বকে পরোক্ষভাবে প্রকাশ করে ।
যখন প্রত্যক্ষভাবে একটি সত্ত্বার সাথে একটি সংবেদনশীল তথ্যের যোগসূত্র ঘটাতে পারবেন তখন আপনি দাবী করতে পারবেন যে আপনার প্রত্যক্ষ প্রমাণ আছে । উদাহরণ স্বরূপ, যখন আপনি আম খাবেন তখন আপনি এর মিষ্ট গুণকে উপলব্ধি করতে পারেন এবং যে আমটি খেয়েছিলেন তার সাথে এই মিষ্ট গুণটিকে সংশ্লিষ্ট করতে পারছেন । এখানে গুরুত্বপূর্ণ দিকটি হচ্ছে আপনি "প্রত্যক্ষ প্রমাণ" কে শুধু মাত্র সংশ্লিষ্ট করতে পারছেন নির্ধারিত কোন ইন্দ্রিয় অঙ্গ দিয়ে যা আপনি ব্যবহার করেছিলেন ঐ গুণটিকে পর্যবেক্ষন করার জন্য । অর্থাৎ আমের এই প্রত্যক্ষ প্রমাণ আপনি কর্ণ ইন্দ্রিয়ের মধ্য দিয়ে পাবেন না । এটা কেবল জিহ্বা, নাসিকা ও চক্ষু দ্বারাই সম্ভব । ঠিক তেমনি বাস্তবে আমরা "পরোক্ষ প্রমাণ" গুলিও পাই যদিও আমরা এগুলোকে "প্রত্যক্ষ প্রমাণ" বলে থাকি ।
যেহেতু ঈশ্বর হচ্ছেন সবচেয়ে সুক্ষ অতীন্দ্রি়য় সত্ত্বা সেহেতু ঈশ্বরের "প্রত্যক্ষ প্রমাণ" আমাদের এই অসুক্ষ অশিষ্ট সীমিত শক্তির ইন্দ্রিয় অঙ্গ যেমন নাক, কান, চোখ, জিহ্বা, চর্ম দ্বারা সম্ভব নয় । যেমন আমরা অতি পারমানবিক কণাকে এমনকি অনেক শক্তিশালী অণুবীক্ষণ যন্ত্র দিয়ে দেখতে পারি না, আমরা শ্রবণাতীত শব্দ (Ultrasonic Sound ) শুনতে পারি না, আমরা স্বরন্ত্র একটি অণুর স্পর্শ অনুভব করতে পারি না । অর্থাৎ ঈশ্বরকে এই দুর্বল ও অসুক্ষ ইন্দ্রিয় অঙ্গ দ্বারা প্রমাণিত করা যাবে না ঠিক যেমন আমকে কর্ণ দ্বারা অথবা অতি পারমানবিক কণাকে কোন ইন্দ্রিয় অঙ্গ দিয়ে ইন্দ্রগ্রাহ্য করা যাবে না ।
একমাত্র ইন্দ্র যা ঈশ্বরকে ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য করতে পারে তা হলে মন । যখন মন সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রিত এবং সকল ধরনের বিঘ্ন সৃষ্টিকারী উপাদান (যেমন চিন্তা যা সর্বদা জাগ্রত থাকে) থেকে মুক্ত এবং ঈশ্বরের সকল গুণ সম্পর্কে পর্যাপ্ত জ্ঞান যা অধ্যায়ন ও চর্চার মাধ্যমে অর্জিত হয়েছে, তাহলেই বুদ্ধিবৃত্তির মধ্যে দিয়েই প্রত্যক্ষভাবে ঈশ্বরকে প্রমাণ করা যাবে যেমন করে ঐ আমকে এর স্বাদ দ্বারা প্রমাণ করা হয়েছিল । এটাই হচ্ছে জীবনের উদ্দেশ্য যা একজন যোগী করার চেষ্টা করেন মন নিয়ন্ত্রণের বিভিন্ন পদ্ধতি প্রয়োগ করেন । এই পদ্ধতি গুলোর মধ্যে রয়েছে অহিংসা, সত্য সন্ধান, পর দুঃখকাতরতা, সকলের জন্য পরমসুখ সন্ধান, উন্নত নৈতিক চরিত্র, অন্যায়ের বিরুদ্ধে লড়াই, মানুষের মাঝে একতা ইত্যাদি, ইত্যাদি ।
এভাবে আমাদের প্রাত্যাহিক জীবনে আমরা ঈশ্বরের প্রত্যক্ষ প্রমাণের ইঙ্গিত পাই । যখন আমরা চুরি, প্রতারণা, পাশবিকতার মতো কোন ভুল কাজ করি তখন আমরা ভয়,ভীতি, লজ্জা, সন্দেহ ইত্যাদি আকারের আমরা ভেতরকার ক্ষীন কণ্ঠস্বর শুনতে পাই । আর যখনই আমরা কোন মঙ্গল সূচক কাজ করি যেমন কাউকে সাহায্য করা, কোন শিশুকে আর্শীবাদ করা ইত্যাদি, তখনও আমরা ভেতরকার ক্ষীণ কণ্ঠস্বর শুনতে পাই ভয়শূন্য, আত্মতৃপ্তি, প্রত্যয়ী ও পরম সুখবোধ আকারে ।
এই ভেতরের কণ্ঠস্বরটি আসে ঈশ্বরের কাছ থেকে । আমরা প্রায়শই এর শ্রাব্যতাকে কমিয়ে চুপ করে রাখার চেষ্টা করি আমাদের চারপাশে উচ্চ শব্দের DJ Music এর মত নির্বোধ প্রবণতার মাধ্যমে । কিন্তু তখন আমরা সবাই কোন এক সময়ে ভেতরের কণ্ঠস্বরকে আরও উচ্চ শব্দে শুনতে পাই যখন এই সব কিছু তুলনামূলকভাবে নিঃশ্চুপ ।
যখন আত্মা নিজেকে সকল মানসিক বিশৃঙ্খলা থেকে নিজেকে শুদ্ধ করে এবং ঐ DJ ক্লাব থেকে বেরিয়ে আসে তখন আত্মা নিজেই নিজেকে ও ঈশ্বর প্রত্যক্ষভাবে প্রামানিক হয় । এভাবে আমরা প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ উভয় মাধ্যমে পরিষ্কার ভাবে ঈশ্বরকে জানতে পারি ।

No comments:

Post a Comment

ধন্যবাদ

বৈশিষ্ট্যযুক্ত পোস্ট

যজুর্বেদ অধ্যায় ১২

  ॥ ও৩ম্ ॥ অথ দ্বাদশাऽধ্যায়ারম্ভঃ ও৩ম্ বিশ্বা॑নি দেব সবিতর্দুরি॒তানি॒ পরা॑ সুব । য়দ্ভ॒দ্রং তন্ন॒ऽআ সু॑ব ॥ য়জুঃ৩০.৩ ॥ তত্রাদৌ বিদ্বদ্গুণানাহ ...

Post Top Ad

ধন্যবাদ