উচ্ছিষ্ট গণপতি - ধর্ম্মতত্ত্ব

ধর্ম্মতত্ত্ব

ধর্ম বিষয়ে জ্ঞান, ধর্ম গ্রন্থ কি , হিন্দু মুসলমান সম্প্রদায়, ইসলাম খ্রীষ্ট মত বিষয়ে তত্ত্ব ও সনাতন ধর্ম নিয়ে আলোচনা

धर्म मानव मात्र का एक है, मानवों के धर्म अलग अलग नहीं होते-Theology

সাম্প্রতিক প্রবন্ধ

Post Top Ad

স্বাগতম

15 July, 2021

উচ্ছিষ্ট গণপতি

উচ্ছিষ্ট গণপতি

গণেশের অন্যান্য রূপের মতো উচ্ছিষ্টগণেশও গজানন। মন্ত্রমহার্ণব অনুসারে, তার গাত্রবর্ণ রক্তাভ। কিন্তু উত্তরকামিকাগম অনুসারে, তার গাত্রবর্ণ কৃষ্ণ। আরেকটি বর্ণনা অনুসারে, তার গাত্রবর্ণ নীল। বিভিন্ন বিবরণ অনুসারে, উচ্ছিষ্টগণেশ চতুর্ভূজ বা ষড়ভূজ। তিনি উপবিষ্ট অবস্থায় থাকেন। কোথাও কোথাও তার মূর্তি পদ্মের আসনে উপবিষ্ট অবস্থায় দেখা যায়। উত্তরকামিকাগম অনুসারে, তার মস্তকে থাকে একটি রত্নমুকুট এবং তার ললাটে থাকে একটি তৃতীয় নয়ন। https://www.ধর্ম্মতত্ত্ব.com ‘উচ্ছিষ্ট’ (আহারের পর খাদ্যের পরিত্যক্ত অবশিষ্টাংশ) শব্দটি থেকে ‘উচ্ছিষ্টগণেশ’ নামটি এসেছে। এই শব্দটি এখানে তান্ত্রিক পরিপ্রেক্ষিতে প্রযুক্ত হয়েছে। মুখে থেকে যাওয়া খাবারকে উচ্ছিষ্ট বলা হয়।

ক্রিয়াকর্মদ্যোতি গ্রন্থের বিবরণ অনুসারে, উচ্ছিষ্টগণেশের ছয় হাতে থাকে পদ্ম (কোনো কোনো বর্ণনা অনুসারে নীল পদ্ম),একটি দাড়িম্ব ফল, একটি বীণা, একটি অক্ষমালা ও একটি ধান্যশীর্ষ। মন্ত্রমহার্ণব গ্রন্থের বর্ণনা অনুসারে, তার হাতে থাকে একটি তির, একটি ধনুক, একটি পাশ ও একটি অঙ্কুশ। উত্তরকামিকাগম গ্রন্থে রয়েছে, উচ্ছিষ্টগণেশের চারটি হাত এবং তার মধ্যে তিনটি হাতে রয়েছে একটি পাশ, একটি অঙ্কুশ ও একটি ইক্ষুদণ্ড।

উচ্ছিষ্ট গণপতি
উচ্ছিষ্টগণেশ, নাগেশ্বরস্বামী মন্দির, কুম্বকোনাম। দেবতারা একে অপরের গোপন অঙ্গ স্পর্শ করে আছেন।

রাও উচ্ছিষ্টগণেশকে পাঁচটি শক্তি-গণেশ মূর্তির অন্যতম বলে বর্ণনা করেছেন। এই মূর্তিতে গণেশের একজন শক্তি বা স্ত্রী রয়েছেন।গণেশের বিরাট মূর্তির সঙ্গে একটি অপেক্ষাকৃত ক্ষুদ্রাকার স্ত্রীমূর্তি থাকে। একজন নগ্ন দেবী তার কোলে উপবিষ্ট অবস্থায় থাকেন। এই দেবীর দুটি হাত। তিনি নানাপ্রকার অলংকার পরিধান করে থাকেন। উত্তরকামিকাগম গ্রন্থে এই দেবীর নাম বিঘ্নেশ্বরী। এই গ্রন্থের বর্ণনা অনুসারে, এই দেবী সুন্দরী ও যুবতী। উচ্ছিষ্টগণেশের চতুর্থ হাতটি এই নগ্ন দেবীর গোপন অঙ্গ স্পর্শ করে থাকে। মন্ত্রমহার্ণব অনুসারে, উচ্ছিষ্টগণেশের মূর্তি এমন হওয়া উচিত, যা দেখে মনে হয় তিনি যৌনসংগমে উদ্যত হয়েছেন।

উচ্ছিষ্টগণেশ বা উচ্ছিষ্টগণপতি হলেন হিন্দুদের পুতুল দেবতা গণেশের (গণপতি) একটি তান্ত্রিক রূপ। গাণপত্য সম্প্রদায়ের ছয়টি প্রধান শাখার অন্যতম উচ্ছিষ্টগাণপত্য শাখায় ইনি প্রধান দেবতা। মূলত বামাচার প্রথায় তার পূজা প্রচলিত আছে। উচ্ছিষ্টগণেশের মূর্তিতত্ত্বটি আদিরসাত্মক। তার মূর্তিতে একটি নগ্ন দেবীর উপস্থিতি লক্ষিত হয়। ভক্তিশাস্ত্রে উল্লিখিত গণেশের ৩২টি রূপের অন্যতম হলেন উচ্ছিষ্টগণেশ। উচ্ছিষ্টগাণপত্য শাখার অন্যতম প্রবক্তা ছিলেন হেরম্বসূত।

উচ্ছিষ্টগণেশের শাস্ত্রসম্মত রূপটি সাধারণত ভাস্কর্যগুলিতে ফুটিয়ে তোলা হয়নি। তার মূর্তিতে তার বাঁ কোলে একজন নগ্ন স্ত্রী বসে থাকেন। সাধারণত উচ্ছিষ্টগণেশকে চতুর্ভূজ মূর্তিতেই দেখানো হয়েছে। তার তিনটি হাতে থাকে পাশ, অঙ্কুশ ও একটি লাড্ডু বা মোদক। চতুর্থ বাহুটি সেই নগ্ন দেবীর নিতম্ব আলিঙ্গণ করে থাকে। দেবী বাঁ হাতে একটি পদ্ম বা অন্য কোনো ফুল ধরে থাকেন।হাতের বদলে, গণেশের শুঁড়ের ডগাটি নগ্ন দেবীর যোনি স্পর্শ করে থাকে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে দেবীমূর্তিটিকে ডান হাতে উচ্ছিষ্টগণেশের লিঙ্গ স্পর্শ করে থাকতে দেখা যায়। এই ধরনের আদিরসাত্মক মূর্তি কেবল উচ্ছিষ্টগণেশের চতুর্ভূজ মূর্তিতেই সীমাবদ্ধ।

কোহেন বলেছেন যে, অনেক গণেশ মূর্তির সঙ্গেই একটি শক্তি মূর্তিকে তার বাঁ কোলে বসে থাকতে দেখা যায়। এই শক্তি কোলে একটি মোদকের থালা ধরে থাকেন এবং গণেশের শুঁড় সেই থালা স্পর্শ করে থাকে সেই মোদক ভক্ষণ করার জন্য। শুঁড়টি গণেশ ও সেই দেবীর মধ্যে ‘আদিরসাত্মক বন্ধনে’র প্রতীক। উচ্ছিষ্টগণেশ মূর্তিতে এই ধারণাটি আরও এক ধাপ উপরের। মোদকের বাটির পরিবর্তে তাঁর শুঁড় এখানে দেবীর যোনি স্পর্শ করে থাকে। এই ধরনের আদিরসাত্মক মূর্তিতত্ত্ব তান্ত্রিক গাণপত্য শাখাগুলির প্রভাবকে প্রতিফলিত করে। দাড়িম্ব ফলটিও প্রজননের প্রতীক। গাণপত্য সম্প্রদায়ের নানান মূর্তিতে এটি দেখা যায়।

বামাচারী প্রথা অনুসারে, উচ্ছিষ্টগণেশকে পূজার সময় পূজককে ‘উচ্ছিষ্ট’ অবস্থায় (অর্থাৎ নগ্ন বা মুখে খাদ্যদ্রব্য নিয়ে) পূজা করতে হয়।

উচ্ছিষ্টগণেশ ছয়টি অভিচার ক্রিয়ার (অশুভ উদ্দেশ্যে মন্ত্রের প্রয়োগ) সঙ্গে যুক্ত। মনে করা হয়, তার মন্ত্রের মাধ্যমে মন্ত্র-উচ্চারণকারী তার শত্রুকে মোহগ্রস্থ করতে পারে, আকর্ষিত করতে পারেন, ঈর্ষান্বিত করতে পারেন, বশ করতে পারেন, অসার করতে পারেন বা হত্যা করতে পারেন।

ভাদ্রমাসে আরাধনা করা হয় সিদ্ধিদাতা গণেশের। গণপতির বহু রূপ। তবে এই মাসে মূলত তাঁর পুজো করা হয় রজোবতী ভূমির জন্য। গণেশ সিদ্ধিদাতা। কিন্তু তার পাশাপাশি কামশাস্ত্রকেও করায়ত্ত করেছিলেন তিনি।

ভাদ্র মাস শস্য ঘরে তোলার উত্‍সবের সময়। এই সময় কৃষিজীবী সমাজে একাকার হয়ে যায় রজোবতী ভূমি আর নবজাতকের প্রত্যাশা। এই মাসে যে গণেশ পুজো হয় তা আসলে রজোবতী ভূমিকে পুজো। ভূমিকে যত্ন করে তার সন্তান অর্থাত্‍ নতুন ফসলের আগমনের আরাধনা করা। জানা যায় গণেশ চিরকাল চিরকুমার হিসেবে থাকতে চেয়েছিলেন।

আর ভারতের কোথাও কোথাও তাঁকে সেই রূপেই পাওয়া যায়। দক্ষিণ ভারতে শিব ও পার্বতীপুতের গণেশ ব্রহ্মচারী। কথিত আছে মহারাষ্ট্রে উত্তর দক্ষিণের সীমান্তে এসে গণেশ বিবাহ করেন। গণেশের নাকি বহু সঙ্গিনী ছিল। তাঁদের মধ্যে প্রথম পত্নী, দ্বিতীয় শক্তি ও তৃতীয় দাসী। প্রাচীন মূর্তিশাস্ত্রে এঁদের বলা হয়েছে 'বিনায়কী' এবং 'গণেশানী'। এঁদের মূলত হস্তিমুখ দেবী হিসেবে বর্ণনা করা হয়।

ষোড়শ শতাব্দীর গ্রন্থ 'শিল্পরত্ন'তে শ্রীকুমার এই দেবীদের বর্ণনাও দিয়েছেন। তাঁর মতে স্তনের ভারে এই দেবীদের শরীর কিছুটা নত। এঁদের নিতম্বদেশ কিছুটা ভারী। জানা যায় গণপতি প্রথমে ছিলেন বিঘ্নেশ্বর। কিন্তু অবলোকিতেশ্বরের সান্নিধ্যে এসে হয়ে নাকি তিনি কামের সঙ্গে পরিচিত হন। বলা হয়, অবলোকিতেশ্বর মহিলা বিনায়কের বেশে বিঘ্নকারী বিনায়ককে শুভ কর্মপথে আনার চেষ্টা করেন। তাঁরা শারীরিক মিলনে লিপ্ত হন। বৌদ্ধ ধর্মে একে বলা হয় 'ইয়ব ইয়ুম' বা অর্থাত্‍ পতিপত্নী দৈহিক সম্পর্ক।

গণেশের এই রতিলীলার কথা রয়েছে তান্ত্রিক গণপতি প্রতিমা পরিকল্পনায়। এমনকী বামাচারী তান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় এমন বহু মূর্তি রয়েছে যেখানে গণেশ ও গণেশানীর যৌন ক্রীড়া খদিত বা অঙ্কিত রয়েছে। এমনই একটি মূর্তির নাম 'উচ্ছিষ্ট গণপতি'। এই মূর্তিতে গণেশকে কামোন্মত্ত অবস্থায় দেখা গিয়েছে। তিনি শক্তিকে কোলে বসিয়ে শুঁড় দিয়ে যোনি আস্বাদন করছেন। অভিনব গুপ্তের 'তন্ত্রসার' গ্রন্থে রয়েছে গণপতি দেবীর যোনিতে হাত রেখেছেন। এমনকী কামোন্মত্ত দেবীও দেবতার ধ্বজাগ্রে স্পর্শ করেছেন। 'উত্তর কামিকাগম তন্ত্র' গ্রন্থে গণেশের রতিলীলার অনেক কথা বলা রয়েছে। বাত্‍সায়ণের কামশাস্ত্র অনুসারে গণেশ শাস্ত্রের ৬৪ কলাবিদ্যা রপ্ত করেছিলেন। উচ্ছিষ্ট গণপতি গণেশের একটি তন্ত্রবর্ণিত রূপকল্প। নগ্ন বা উচ্ছিষ্ট অবস্থায় এই রূপে আমরা তাঁকে সর্বদাই মৈথুনে মত্ত দেখি, তাই এই রূপটি পরিচিতি পেয়েছে উচ্ছিষ্ট গণপতি নামে।

তন্ত্র মতে, উচ্ছিষ্ট গণপতির গাত্রবর্ণ লাল বা কালো এবং তাঁর বাহুর সংখ্যা চার বা ছয়টি! রত্নখচিত মুকুট পরে তিনি ধারণ করে থাকেন নীল পদ্ম, ডালিম, বীণা, অক্ষমালা, ধানের ছড়া বা তীর-ধনুক-পাশ-অঙ্কুশ বা পাশ-অঙ্কুশ-আখ-বরাভয়।
উচ্ছিষ্ট গণপতি সর্বদাই অবস্থান করেন তাঁর শক্তি বিঘ্নেশানীর সঙ্গে। সালঙ্কারা দেবীকে গণেশের মতোই নগ্নাবস্থায় স্বামীর বাম কোলে বসে থাকতে দেখা যায়, তিনি ধারণ করে থাকেন একটি পদ্ম। রূপকল্পে দেখা যায়, উচ্ছিষ্ট গণপতি তাঁর সুদৃঢ় শুঁড়টি দিয়ে স্পর্শ করে থাকেন দেবীর স্ত্রী-অঙ্গ। বলা হয়, এই রূপে যেমন গণেশ ভক্তের সব কামনা পূর্ণ করেন, তেমনই দেশকেও রক্ষা করেন সব বিপদ থেকে! ইহা পৌরাণিক মত ও!

https://www.ধর্ম্মতত্ত্ব.com

No comments:

Post a Comment

ধন্যবাদ

বৈশিষ্ট্যযুক্ত পোস্ট

জাতিবাদ ও ভগবান মনু

  সম্পাদকীয় বর্তমান সময়ে দেশ অনেক গম্ভীর সমস্যায় গ্রস্ত আছে, তারমধ্যে একটা হল - জাতিবাদ। এই জাতিবাদের কারণে আমাদের দেশের অনেক বড় হানি হ...

Post Top Ad

ধন্যবাদ