সুতরাং শুদ্ধ উচ্চারণ হিসেবে ও৩ম্ নিয়ে কোন প্রশ্ন তোলা উচিত নয়। যে ব্যক্তি প্রশ্ন তুলবে, তার পাণিনি বা সংস্কৃত সম্বন্ধে জ্ঞান যে অতি ন্যূন এতে সন্দেহ নেই।
কিভাবে এই "ওঁ" উচ্চারণ করতে হবে? প্রথমে আমরা এই উচ্চারণ টাকে ভাঙবো। ভাঙ্গলে তিনটি ধ্বনি পাওয়া যাবে। সেগুলি যথাক্রমে অ, উ, ম।
"অ" উচ্চারণ টা হবে আমাদের শরীরের একেবারে গভীর থেকে। এর উৎপত্তিস্থল নাভিমূল বা উদরে। মানে, সরাসরি জিহ্বা তে আসবে।
"উ" জিহবার উপর ঘুরতে থাকবে।
"ম" উচ্চারিত হবে আমাদের ঠোঁটে। ঠোঁটেই শেষ হবে উচ্চারণ।
যখন আমরা "অ" উচ্চারণ করবো, আমাদের উদরে কম্পন সৃষ্টি হবে।
"উ" উচ্চারিত হওয়ার সময় বুক কম্পিত হতে থাকবে।
"ম" উচ্চারণের সময় আমাদের মস্তিষ্কের খুলি কম্পিত হতে থাকবে।
আমরা জানি বর্ণ দুই প্রকার, স্বরবর্ণ ও ব্যঞ্জনবর্ণ। স্বরবর্ণ আবার দুপ্রকার, হ্রস্বস্বর ও দীর্ঘস্বর। বাংলা বা আধুনিক সংস্কৃতে বর্ণের এমনটাই বিভাজন। তবে বৈদিক সংস্কৃতে হ্রস্বস্বর ও দীর্ঘস্বরের বাইরেও আরেক ধরনের স্বরবর্ণ উপস্থিত। তাকে বলা হয় প্লুতস্বর। বৈয়াকরণেরা বলেন-
“একমাত্রো ভবেদ্ হ্রস্বো দ্বিমাত্রো দীর্ঘ উচ্চতে।
ত্রিমাত্রস্তু প্লুতো জ্ঞেয়ো ব্যঞ্জনঞ্চার্দ্ধমাত্রকম্।।“
অর্থাৎ, হ্রস্বস্বর ১ মাত্রার হয়ে থাকে, ২ মাত্রাকে দীর্ঘস্বর বলা হয়। ৩ মাত্রাকে প্লুতস্বর ও ব্যঞ্জনকে অর্ধ মাত্রা বলে জানবে।
অর্থাৎ অ ১ মাত্রা, আ ২ মাত্রা ও ক্ ½ মাত্রা। এ নাহয় বোঝা গেল।
কিন্তু প্লুতের ৩ মাত্রা কীভাবে বোঝা যায়? হ্রস্বস্বর, দীর্ঘস্বর ও ব্যঞ্জনকে বোঝার জন্য মৌলিক প্রতীক বা বর্ণ থাকলেও, প্লুতস্বরের জন্য আলাদা প্রতীক বা বর্ণ নেই।তাই স্বরবর্ণের পর ‘৩’ লিখে প্লুতস্বর নির্দেশ করা হয়।
প্লুত স্বর আটটি, যথা – অ৩, ই৩, উ৩, ঋ৩, এ৩, ঐ৩, ও৩, ঔ৩। পাণিনীয় শিক্ষার চতুর্থ শ্লোক বলছে “স্বরবর্ণ একুশটি”
সেগুলো হচ্ছে লৌকিক সংস্কৃতের ১৩ টি বর্ণ ও ৮ টি প্লুত বর্ণ। অর্থাৎ সম্পূর্ণ স্বরবর্ণমালা হচ্ছে –
হ্রস্ব – অ, ই, উ, ঋ, ৯
দীর্ঘ – আ, ঈ, ঊ, ঋৃ, এ, ঐ, ও, ঔ
প্লুত – অ৩, ই৩, উ৩, ঋ৩, এ৩, ঐ৩, ও৩, ঔ৩
কেউ কেউ ৯ এরও প্লুতস্বর ধরে স্বরবর্ণ ২২টি গণনা করেন।
মহামুনি পাণিনি তাঁর অষ্টাধ্যায়ী ব্যাকরণের ৮।২।৮২ থেকে ৮।২।১০৮ – ২৭টি সূত্রে প্লুতস্বরের ব্যবহার উল্লেখ করেছেন। বর্তমানে হিন্দুদের শাস্ত্রচর্চার অভ্যাস নেই বিধায় তা অনেকেই অবগত না হয়েই অবমাননাকর মন্তব্য করেন।
মন্ত্রের শুরুতে ওম্ ব্যবহার করা হলে তা হবে প্লুত উদাত্ত অর্থাৎ ও৩ম্ – এই বিধান রয়েছে অষ্টাধ্যায়ীর ৮।২।৮৭ সূত্রে। অন্যদিকে যজ্ঞকর্মের জন্য মন্ত্রের সর্বশেষ স্বরবর্ণ ও৩ম্ দ্বারা প্রতিস্থাপিত হয়, যা কিনা প্লুত উদাত্ত – এই বিধান পাওয়া যায় অষ্টাধ্যায়ীর ৮। ২।৮৯ সূত্রে।
অনেকেই বলেন শুধু আর্য সমাজ ই কেন এই ও৩ম্ বা ओ३म् ব্যবহার করে? আসলে এটিও তাদের অজ্ঞতার ই একটি পরিচয় মাত্র।
আর্য সমাজের বাইরে, অন্যান্যদের কর্তৃক প্রকাশিত ও ভাষ্যকৃত বেদ থেকে দেখে নিই, বেদে ओ३म् বা ও৩ম্ আছে কি না।
১। পৌরাণিক পরম্পরার ভাষ্যকার সায়ণাচার্যের সামবেদ ভাষ্য যা ভববিভূতি ভট্টাচার্য কর্তৃক প্রকাশিত তা থেকে দেখতে পাই সামবেদের ৫৮৫ নং মন্ত্রে ओ३म् বা ও৩ম্ স্পষ্টভাবে উপস্থিত।
২। দুর্গাদাস লাহিড়ীর সামবেদ চতুর্থ খণ্ডের ৫৮৫ নং মন্ত্রে একদম বাংলা প্রতিলিপিতেই ও৩ম্ উপস্থিত।
৩। দামোদর সাত্বলেকরের সামবেদ সুবোধ ভাষ্যের ৫৮৫ নং মন্ত্রে ओ३म् বা ও৩ম্ উপস্থিত।
৪। চৌখম্বা থেকে প্রকাশিত শ্রী ভগবদাচার্যের সামবেদ ভাষ্যের একদম শুরুতে ओ३म् বা ও৩ম্ উপস্থিত। আর ৫৮৫ নং মন্ত্রে ও ভাষ্যের শেষে তো আছেই।
৫) সর্বপ্রথম মহর্ষি মহেশ যোগী প্রতিষ্ঠিত “Maharishi University of Management” কর্তৃক প্রকাশিত যজুর্বেদ মূলপাঠ থেকে দেখে নিই। সেখানে দেখতে পাবো যজুর্বেদ এর ২য় অধ্যায়ের ১৩ নং মন্ত্র এবং ৪০শ অধ্যায়ের ১৫ ও ১৭ নং মন্ত্রে ओ३म् বা ও৩ম্ উপস্থিত। ২য় অধ্যায়ের ১৩ নং মন্ত্রে ओ३म् বা ও৩ম্ যে রয়েছে তা এর পদপাঠ থেকেই স্পষ্টভাবে বুঝতে পারবেন।
৬) পৌরাণিক পরম্পরার উবট-মহিধর ভাষ্যের উপর্যুক্ত মন্ত্র তিনটিতে স্পষ্টভাবে ओ३म् বা ও৩ম্ বিদ্যমান। শুধু তাই না মহিধর তার যজুর্বেদ ভাষ্যের ৪০/১৭ মন্ত্রে স্পষ্টভাবে ओ३म् বা ও৩ম্ এর উল্লেখ করেছেন।
৭। গায়ত্রী পরিবারের রামশর্মার যজুর্বেদ ভাষ্যেও উপর্যুক্ত তিন মন্ত্রে ओ३म् বা ও৩ম্ উপস্থিত।
৮। ভগবতী শর্মা কর্তৃক প্রকাশিত যজুর্বেদ ভাষ্যের ২।১৩, ৪০।১৫ মন্ত্রে ओ३म् বা ও৩ম্ বিদ্যমান।
৯। যজুর্বেদ মিশ্রভাষ্যের ৪০।১৫ ও ৪০।১৭ মন্ত্রে ओ३म् বা ও৩ম্ স্পষ্টভাবে উপস্থিত।
১০। যজুর্বেদ কাণ্ব সংহিতা শুরুই হচ্ছে ओ३म् বা ও৩ম্ উল্লেখপূর্বক।
অর্থাৎ দেখতে পাচ্ছি আর্য সমাজের বাইরের সাতটি প্রখ্যাত ভাষ্য বা মূল পাঠেই ओ३म् বা ও৩ম্ বিদ্যমান। সামবেদ ও যজুর্বেদে স্পষ্টভাবে উল্লেখিত ओ३म् বা ও৩ম্ থেকে আপনারা বুঝতে পারছেন ओ३म् বা ও৩ম্ কোনো বিকৃতরূপ নয়, বরং এটি হচ্ছে বিশুদ্ধ বৈদিক ব্যবহার।
ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর প্রণীত ও কবিভূষণ হরলাল বন্দ্যোপাধ্যায় কর্তৃক প্রকাশিত ব্যাকরণ কৌমুদীর প্রথম ভাগেই প্লুত স্বরের ব্যবহার বলা হয়েছে। সেখানে বলা হচ্ছে –
“বৈয়াকরণেরা অ ই উ ঋ এ ঐ ও ঔ এই আটটির দূরাহ্বান, গান ও রোদনজনিত সুদীর্ঘ উচ্চারণে প্লুতসংজ্ঞা নির্দ্দেশ করিয়া ইহাদিগকে প্লুতস্বর নামে স্বতন্ত্র স্বর বলিয়া গণ্য করেন।”
শুধু তাই নয়, কোথায় কোথায় প্লুতস্বর ব্যবহৃত হবে সে সম্পর্কে স্পষ্টভাবে বলেছেন মহামুনি পাণিনি অষ্টাধ্যায়ীর ৮।২।৮২ থেকে ৮।২।১০৮ এই ২৭টি সূত্রে।
আপনারা অবগত আছেন ঋগবেদের দশটি মণ্ডল আছে। এর মধ্যে সবচেয়ে ছোট মণ্ডল হচ্ছে ২য় মণ্ডল। সেই ২য় মণ্ডলেই অন্তত ১০টি মন্ত্রে প্লুতস্বর যুক্ত শব্দ দেখা যাচ্ছে। যথা-
ঋগ্বেদ ২।৪।২
ঋগ্বেদ ২।১০।৫
ঋগ্বেদ ২।১৬।২
ঋগ্বেদ ২।১৭।৭
ঋগ্বেদ ২।২৩।১৩
ঋগ্বেদ ২।২৪।১৫
ঋগ্বেদ ২।২৬।৪
ঋগ্বেদ ২।৩১।৬
ঋগ্বেদ ২।৩৯।২
ঋগ্বেদ ২।৩৯।৫
এক ২য় মণ্ডলেই এতো ব্যবহার, তাহলে গোটা চারবেদে আরো কতো থাকবে সেটা আন্দাজ করে নিন! অর্থাৎ ओ३म् বা ও৩ম্ ছাড়াও অন্যত্র অসংখ্য জায়গায় প্লুতস্বর ব্যবহৃত হয়।
অর্থাৎ ॐ, ওঁ, ओ३म्, ও৩ম্, ओम्, ওম্ ইত্যাদি প্রত্যেক ব্যবহার ই শুদ্ধ। ও৩ম্, ओ३म् এগুলো হলো বৈদিক ব্যাকরণ অনুযায়ী প্লুতস্বরের বিশুদ্ধ প্রয়োগ। তাই দেখবেন আমাদের বিভিন্ন লেখায় আমরা সবকটিই ব্যবহার করি। ওঁ শব্দ অ,উ,ম এই তিন অক্ষর নিয়ে তৈরী.. কিন্তু উচ্চারণ লেখার সময় ও৩ম্ লেখা উচিৎ [অষ্টাধায়ী ৮।২।২৭] কিংবা ওম্।
ওঁকার কোন স্বরবর্ণ বা ব্যঞ্জনবর্ণ নয়। কণ্ঠ, তালু, ওষ্ঠ, নাসিকা দ্বারা ও উচচারণ করা যায় না। যদক্ষরং ন ক্ষয়তে কথঞ্চিৎ। কোনকালেই এর অনুমাত্রও ক্ষয় হয় না বলে একে অক্ষর বলা হয়। ওঁকার শব্দাতীত এবং আকাশ সদৃশ নির্মল ও অনন্ত। এই ওকারের সাধনাই বৈদিক ঋষিদের উদ্গীত উপাসনা, সাক্ষাৎ ব্রহ্মসাধনা। তাই ছান্দোগ্য উপনিষদের স্পষ্ট ঘোষণা এমিত্যেদক্ষরং ব্রাহ্মামুদ্গীধমুপাসীত।
মূর্যাস্থানেই এঁকারের সাধনা করতে হয়। সাধনা করতে করতেই ও শব্দ এসে ক্রমে নিঃশব্দে পরিণত হয়
নিঃশব্দ্য তৎপরং ব্রহ্ম পরমাণ্ডেমতি নীয়তে। আজ এই সন্ধিস্থলে এঁকারেশ্বরের পাদমূলে তোমাকে ঋষিদের গুহ্যতম ওকার সাধনা শিখিয়ে দেব। এই বলে তিনি 'ও, 'ওঁ' বলে সজোরে নিঃশ্বাস টেনে কুত্তক করে স্থির হলেন। সহসা তিনি এক দীর্ঘ প্রলম্বিত শ্বাস ফেললেন সোজা হোমকুণ্ডের মধ্যস্থলে, কিঞ্চিৎ ছাই উড়ে গিয়ে অগ্নি প্রজ্বলিত হয়ে উঠল। অগ্নিদেব প্রকট হলেন। আমার দিকে তাকিয়ে বললেন
সর্বদুচ্চারিতমাত্রং স এর উর্ধ্বমুংক্রাময়তি ইতি ওকারঃ।
প্রধান সর্বান পরমাত্মনি প্রণাময়তীতি তস্মাৎ প্ৰণবঃ ।। (অথর্বশির উপনিষদ)।
ওঁকার উচ্চারণের সাথে সাথে দেহস্থ স্বাভাবিক নিম্নণ ক্রিয়া সুষুম্নাপথে (উৎ) ঊর্ধ্বগামী হয় বলেই এর নাম হয়েছে ওঁকার। প্রাণাদি আভ্যন্তর বায়ু এই ওঁকারধ্বনিতে প্রলীন হয় বলেই এর দ্বিতীয় নাম____প্রলয় এই ওঁকারই । প্রাণাদিকে পরমাত্মার অভিমুখে নমিত করে বলে এর তৃতীয় নাম___প্রনব।
ওঁকারও প্লুতোন্ত্রিনাদ ইতি সংক্ষিত।
অকারস্ত অথ ভূলোক উকার ভুব উচাতে।।
স ব্যঞ্জন মকারস্ত স্বলোকন্তু বিধীয়তে। অক্ষরেস্ত্রিভিরেতেশ্চ ভবেদাত্মা ব্যবস্থিতঃ ।। অর্থাৎ দীর্ঘ প্রণব অর্থাৎ ওকারের অপর নাম ত্রিনাদ কারণ এই তিনটি শব্দবিশিষ্ট মকার। অকার ভূলোক, উকার ভুবলোক এবং মকার স্বলোক। এই ব্রি-অক্ষর-সমন্বিত ওঁকারেই পরমাঝা অবস্থিত। অকার, উকার এবং
অউম ব্রহ্মা, বিষ্ণু, মহেশ্বরের সমন্বয় মূর্তি ওঁকার। যিনি একাধারে প্রণব ও পরাবতত্ত্ব, যাঁর সেই অতলান্ত নিগুঢ় তত্ত্ব বা রহস্য বোঝা দুষ্কর। তিনি বলে চলেছেন। ও এর তলার দিকের শেষ বিন্দু যদি ও অর্থাৎ ব্রহ্মা হন মধ্যস্থলের মণ্ডলটা 'উ' অর্থাৎ বিষ্ণু এবং শিরোদেশের প্রথম কিছুটা 'ম' অর্থাৎ মহেশ্বর। এই তিন তত্ত্বই উদ্ভূত হয়েছে এঁকার বা প্রণব থেকে। তটস্থা পেরিয়ে চন্দ্রবিন্দুর কিছুটাই পরপ্রণবতত্ত্ব। নর্মদামারী বুকে করে ধরে রেখেছেন এই প্রণব ও পরপ্রণব তত্ত্বকে। তাই মায়ের জলধারাও সেই তত্ত্বকে সূচিত করবার জন্য ও এর আকারে বাঁক নিয়েছেন। তিনিই সর্বজীবের অন্তরশারী কারণস্বরূপ নারায়ণ, অন্তরশারী প্রত্যগায়া তাই নারাযণই শিব, শিবই নারায়ণ, নরগণের একমাত্র আশ্রয়স্থল। তিনি স্বয়ং কোন কারণসম্ভূত নন, তিনিই পরমরখা ওঁকার, ওঁকারই ব্রহ্মা।
শ্বেতাশ্বতর উপনিষদে আছে__________
স্বদেহমরণিং কৃত্বা প্রণবক্ষোত্তরারণিং
খাননির্মথনাভাসাদ দেবং পাশরিব ।।
অর্থাৎ যাঁরা স্বদেহকে অরণি অর্থাৎ অগ্নি উৎপাদক কাষ্ঠ ও প্রণবকে উত্তরারণি অর্থাৎ ঘর্ষণ কাঠ চিন্তা করে রাখা ধ্যানে নিমগ্ন হন তাঁর জ্ঞান নেত্রে নিগূঢ় রখা সাক্ষাৎকার ঘটে।
অমৃতবিন্দু উপনিষদে আছে
ওঁকারং রদনারুহ্য বিষ্ণু কুতু সারদিন। ব্রহ্মালোক পদার্থেষী করারাধন তৎপর।।
যাঁরা ব্রহ্মলোকের প্রকৃত পথ অন্বেষণ করেন, তাঁরা উকার রূপ রথে আরোহন করে বিষ্ণুকে সর্বব্যাপী তত্ত্বকে সারথি করে রুদ্রদেবের অর্থাৎ জ্যোতিস্বরূপের আরাধনায় তৎপর হন অর্থাৎ ওঁকারই বলেে গমনের প্রধান উপায়। সেই উপায় আশ্রয় করলেই ব্রহ্মলোক প্রাপ্তি হয়।
মাণ্ডুক্য উপনিষদে আছে________
ওমিত্যেতদক্ষরমিশর সর্বম
ও এই অক্ষরটির অর্থ হল সমস্ত জগৎ। এছারাত্মক জগৎ লগত, স্বপ্ন, সুপ্তি এর তৃতীয় - এই চারপাদযুক্ত সর্বাহোতরক্ষা, অামাত্মার স ব্রহ্মস্বরূপ আত্মা (জীব) জাগ্রহ, স্বপ্ন ও সুষুপ্তির কোন না কোন একটি ভূমিতে থাকে। কেবল উচ্চকোটির সাধকগণ একটি উন্নত চৈতন্যভূমিতে আবোহা করেন যাতে তুরীয় অবস্থা বা মাতার বলে। ওপারে পাদ হল
১) অকার, ২) উকার, ৩) মকার ৪) অর্ধমাত্রা বা নাদবিন্দু।
ওস্তার তার সমার্থকরূপে জানতে হলে বুঝতে হলে ওস্কারের অবৰ্ষৰ বহলা জানা আবশ্যক, মাণ্ডুক্য উপনিষদের গৌড়পাদ কারিকারও বলেছেন________
ওছারা পাদশো বিদ্যাৎ পান মাত্রা ন সংশয়ঃ।
ওস্কারং পাদশো জ্ঞাত্বা ন কিঞ্চিদপি চিত্তয়ে।।
অর্থাৎ ওছারকে জানতে হবে এক এক মাত্রা বা পান ধরে। ওভারে প্রত্যেক পানের দেবতা ও দেবতা
অথর্বশিখা উপনিষদে আছে____
ওনিতোতদক্ষরমাণৌপ্রেযুক্তং ধানং ধারিতব্যম।
ওমিত্যেতদক্ষরসা পাদাশ্চকারো দেবাশ্চত্বারো বেদাশ্চহারা।
চতুষ্পাদেতলরং পরং ব্রহ্ম।।
ওঁ এই অক্ষরকে সমস্ত মন্ত্রের আদিতে প্রয়োগ করে তবেই তার ধ্যান করবে।
১. অকার তত্ত্ব ওস্কারের প্রথম মাত্রা অকার জাগ্রত অবস্থার অধিষ্ঠাতা বিশ্ব আছা বা বৈশ্বানর। অকারো বৈ সর্বা বাক । অকার বিরাটের ন্যায় সকল থাকা জুড়ে বিরাজমান। অকার যেমন বর্ণ, বিশ্বস্রষ্টা ও বিরাট। তেমনি ব্ৰহ্মাণ্ড সৃষ্ট্যাদি অবস্থাতারের প্রথম দেবতা ।
জাগরিতস্থানো বৈশ্বানরোহকারা প্রথম মাত্রা, আস্তেগদিমনে বা, আরোতি হবে সর্বাণ কামান, আদিশ্চ ভবতি য এবং বেদ। (মাণ্ডুক্য উপনিষদ ১)
জাগরিত স্থান বৈশ্বানরই প্রথম মাত্রা অবার স্বরূপ। কেননা উজাই ব্যাপক ও আগা। যে সাতে এই কথা জানেন তিনি সমস্ত কাম্য বিষয় লাভ করেন এবং সকলের মধ্যে প্রথম হন।
অথবশিখা উপনিষদে আছে। পুনার্সা মাত্রা পৃথকাকারাস অতি খেলো রখা বলবো পাত্রী পাইপতার। অর্থাৎ ওভাবের প্রথম মাত্রা অকারের অধিষ্ঠানলোক, পৃথিবী, কয়েন হল এর কো, অধিষ্ঠাতা দেব হলেন। ব্রহ্মা, গণদেবতা অষ্টবসু, ছন্দ গায়ত্রী এবং অগ্নি শাহতা। অবগর অর্থাৎ পৃথিবী বর্ণ পীত।
২. উকার তত্ত্ব অস্কারের দ্বিতীয় মাত্রা উবার স্বপ্নাবস্থার অধিষ্ঠাতা তৈজস আত্মা। স্বপ্নাবস্থায় যেমন আগ্রহ অপেক্ষা উপাধির নুন্যতা হেতু স্বাধিষ্ঠাতা তৈজস আত্মা বৈশ্বানর অপেক্ষা উরুন্ত বা উৎকৃষ্ট, তেমনি অকার অপেক্ষা উকার তত্ত্বজ্ঞান অধিক শ্রেয়ঙ্কর। অকার তত্ত্বজ্ঞানে সর্ব কামনা সিদ্ধ হয়, উ-কার তত্ত্বজ্ঞানে আনের উৎকর্ষ সাধিত হয়, উকার অক্ষরটি যেন অকার ও মকারের মধ্যবর্তী সেরূপ তৈজস আম্মাও বৈশ্বানর এবং সুষুপ্তির অধিষ্ঠাতা প্রাজ্ঞের মধ্যস্থিত।
স্বপ্নস্থানস্তেজসঃ উকারো দ্বিতীয়া মাত্রা, উৎকর্যাদ উভয়স্তাদ বাং উৎকৰ্ষতি হ বৈ জ্ঞানসস্তুতিং সমানশ্চ ভবতি, নাস্যা ব্রহ্মবিদ কূলে ভবতি, য এবং বেদ
(মাতৃকা উপনিষদ, ১০) অর্থাৎ তৈজস আব্বাই ওভারের দ্বিতীয় মাত্রা উকার। কেননা উভয়েরই উৎকর্ষ এবং মধ্যবর্তিত্ব ধর্ম তুলা। যিনি এই দুয়ের একত্ব জানেন, তিনি স্বীয় জ্ঞানের উৎকর্ষ সাধন করেন এবং সাধুজনের সমান হন। এর বংশে ব্রহ্মজ্ঞানহীন কেউ জন্মগ্রহণ করে না।
অথবশিখা উপনিষদে আছে।
দ্বিতীয়রিকার বহুতি বহুবেশে বিষ্ণুকথা ই দক্ষ।
ওকারের দ্বিতীয়মাত্রা উকার, এর লোক অন্তরিক্ষা, বেদ যজুঃ এর অধিষ্ঠাতা দেব বিষ্ণু, গণদেবতা, একাদশ রুদ্র, ছন্দঃ ত্রিষ্টুপ এবং অগ্নি দক্ষিণাগ্নি। উকার অর্থাৎ আকাশ বিদ্যুৎবর্ণ। ৩. মকার তত্ত্ব ওকারের তৃতীয় মাত্রা মকারের স্বরূপ ও মকার তত্ত্ব বিজ্ঞানের ফল। মাণ্ডুক্য উপনিষদে আছে সুষুপ্তস্থানঃ প্রাজ্ঞো মকার দ্বতীয়া মাত্রা মিতের পীতের, মিনোহি হ বা ইদং সর্বমপীতিশ্চ ভভতি, য এবং বেদ।
সুষুপ্তি স্থানগত প্রায় আত্মা ওকারের তৃতীয় পাদ মকার স্বরূপ। কেননা প্রাজ্ঞ ও মকার উভয়ই যথাক্রমে
বৈশ্বানর ও তৈজসের এবং অকার ও উকারের পরিমাপক বা নির্গম স্থান এবং অপীতি বা বিলয়স্থান। যিনি
এটি জানেন তিনিই এই সমস্ত অবগত হন এবং সকলের আশ্রয়ভূত হন।
যেরূপ জাগ্রত ও স্বপ্ন প্রকৃতিবশে সুষুপ্তিতে লয় হয়, সেরূপ অ এবং উ মকারে লীন হয়, সৃষ্টি ও স্থিতি লয়ে পর্যাবসিত হয়। যেভাবে সুষুপ্তির শেষে জাগরণ পুনরায় আবির্ভূত হয়, সেরূপ ওকার পুনঃ উচ্চারিত হলে লয়স্থান ম হতে অ এবং উ মাত্রা পুনরায় বাহির হয়। এই কারণে ওঁকারের তৃতীয় মাত্রা মকারকে সুযুপ্তিরর অধিষ্ঠাতা প্রাত্রে আত্মা স্বরূপ বলা হয়ে থাকে।
অথবশিখা উপনিষদে আছে তৃতীয়া দ্যৌ মকারঃ স সামনি সামবেদো রুদ্র আদিত্যা জগত্যাহবনীয়ঃ।
ওকারের তৃতীয় মাত্রা মকারের অধিষ্ঠান লোক স্বর্গ, বেদ হল সাম, অধিষ্ঠাতা দেব রুদ্র (মহেশ্বর), গণদেবতা দ্বাদশ আদিত্য, ছন্দঃ জগতী এবং অগ্নি আহবনীয়। মকার অর্থাৎ স্বলোক হল গুরুবর্ণ। ৪. অর্ধমাত্রা (নাদবিন্দু) ওকারের মধ্যে অ. উ. ম এই তিনটি বর্ণ আছে। এছাড়া অর্ধমাত্রা আছে,
যা নাদ বিন্দু স্বরূপ এবং প্রণবের মস্তকে অবস্থিত। এই মাত্রাটির উচ্চারণ সম্পূর্ণ হয় না বলে একে অর্ধমাত্রা বলা হয়ে থাকে।
মাণ্ডুক্য উপনিষদে আছে:
অনাবশ্চতুর্থোহব্যবহার্য্যঃ প্রপঞ্চোপশমঃ শিবোহমেত এবমোক্ষার আত্মের। (১২) অর্থাৎ তৃতীয় ওঁকার আকারাদি মাত্রারয়রহিত, বাক্যমনের অগোচর বলে ব্যবহারের অযোগ্য, রাগৎ প্রপঞ্চের নিবৃত্তিস্থান, মঙ্গলময় এবং অদ্বৈত আত্মাস্বরূপই বটে।
প্রণবের অ, উ ম অর্থাৎ 'ওম' শব্দ দ্বারা রহ্মা, বিষ্ণু ও মহেশ্বরের সগুণ ব্রহ্মাকে বুঝায়। বিন্দু দ্বারা নির্গুণ রক্ষকে বুঝায় এবং অর্ধচন্দ্রাকৃতি 'নাম' দ্বারা শব্দ ব্রহ্মময়ী আদ্যাশক্তিকে বুঝায়, ব্রহ্মা, বিষ্ণু, মহেশ্বরের ত্রিবিভক্তবৎ শক্তির দ্বারা সমাদৃত হয়ে শব্দ ব্রহ্মময়ী আদ্যাশক্তি নাদ রূপে অর্ধচন্দ্রাকৃতি রেখার দ্বারা বুঝান হয়। আর তার মধ্যকেন্দ্রে অবস্থিত 'কিন্তু' বা পরব্রহ্মা। প্রণব সংযোগে যেমন সকল মন্ত্র নির্দোষ ও পূর্ণ হয়, সেরূপ অর্ধমাত্রা বা নামবিন্দুর সংযোগে ওঁকার মূলত্বতের সঙ্গে সংযুক্ত হয়ে পূর্ণতা প্রাপ্ত হয়।
No comments:
Post a Comment
ধন্যবাদ