বৈষ্ণবদের ফাঁদে হিন্দু - ধর্ম্মতত্ত্ব

ধর্ম্মতত্ত্ব

ধর্ম বিষয়ে জ্ঞান, ধর্ম গ্রন্থ কি , হিন্দু মুসলমান সম্প্রদায়, ইসলাম খ্রীষ্ট মত বিষয়ে তত্ত্ব ও সনাতন ধর্ম নিয়ে আলোচনা

धर्म मानव मात्र का एक है, मानवों के धर्म अलग अलग नहीं होते-Theology

সাম্প্রতিক প্রবন্ধ

Post Top Ad

স্বাগতম

02 March, 2021

বৈষ্ণবদের ফাঁদে হিন্দু

বৈষ্ণবদের ফাঁদে হিন্দু

যাঁরা শ্রীকৃষ্ণের বন্দনা করছেন আর হিন্দুদের নপুংশক নাচিয়া বানাচ্ছেন, অর্থাৎ যাঁরা বৈষ্ণব, তাঁরা রাধাকৃষ্ণের যুগল মূর্তি তৈরি করে পূজা অর্চনা করছেন। কিন্তু যেই রাধার মূর্তি তাঁরা শ্রীকৃষ্ণের পাশে বসিয়েছেন, বাস্তবে সেই রাধার অস্তিত্বই ছিল না। শ্রীমদ্ভাগবদ পুরাণ যেখানে শ্রীকৃষ্ণের জীবনী আছে, সেই ভাগবদ্ পুরাণে রাধার উল্লেখ নেই। কিন্তু সেই কল্পিত রাধাকে নিয়ে চর্বিত চর্বণের শেষ নেই, কেন এসবের আয়োজন..? হিন্দুরাই বা মাতছে কেন..?

ভগবান শ্রীকৃষ্ণের পৌরুষত্ব বীরত্ব ভুলে গিয়ে, রাধার মানভঞ্জন, রাধার নৌকাবিলাস, ইত্যাদি কল্পিত রাধাকৃষ্ণের প্রেম লীলা নিয়ে পালা গানের শেষ নেই। জটিলা,কুটিলা,আয়ান ঘোষ ইত্যাদি কল্পিত চরিত্র সৃষ্টি করে কত রসের কাহিনী, কেন এত রচনা..?!! ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণে রাধাকৃষ্ণের যে রতিলীলার বর্ণনা কাহিনী আছে তা পর্নগ্রাফির পর্যায়ে পড়ে, এই সব প্রেম লীলার আবর্তে আসল শ্রীকৃষ্ণ কোথায় হারিয়ে গিয়েছে। আর্য সমাজ তার প্রতিবাদ করলে হিন্দুর এক বড় অংশ আর্য সমাজের ওপর চড়াও হয়ে ওঠে।দুষ্টের দমনকারী, কংস ও জরাসন্ধের মতো অত্যাচারীদের নিধনকারী, কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধে পাঞ্চজন্য নিনাদকারী শ্রীকৃষ্ণ পৌরাণিক হিন্দুদের থেকে হারিয়ে গিয়েছেন। জগতগুরু যোগেশ্বর শ্রীকৃষ্ণ বৈষ্ণবদের হাতে পড়ে বৃন্দাবনের বংশী বাদনকারী, কল্পিত রাধার সঙ্গে প্রণয়কারী এবং ষাট হাজার গোপিনীর মনোহরণকারী এক কল্পিত কামেশ্বর কৃষ্ণ, যাঁর হাতে সুদর্শন চক্রের বদলে শোভা পাচ্ছে বাঁশের বাঁশি। রাধার পাশে সেই মুরলীধারী কৃষ্ণকে ফুল-মালা দিয়ে পূজা হচ্ছে, চিনি ও কালা বাতাসা প্রসাদ দেওয়া হচ্ছে আর নেচে নেচে হরে কৃষ্ণ কীর্তন হচ্ছে, তাতেও তাঁদের মনভরে না রাধা রাধা করে বাইজি নাচ চলছে। আর এই পূজো অর্চনা যাঁরা করছেন, তাঁরা ভাবছেন যে, তাঁরা যা করছেন সেটাই কৃষ্ণের প্রকৃত সাধন ভজন এবং এতেই মহাপুণ্যের কাজ হচ্ছে। এই সাধনার দ্বারাই তাঁদের মোক্ষলাভ হবে। কৃষ্ণের এই সব ক্লীব ভক্তরা ভাবছেন যে তাঁরা ঈশ্বরের অবতাদের সাধনা করছেন আর ঈশ্বর সাধনার এটাই সঠিক প্রন্থা।

এই তামসিক ভক্তিবাদের মূল কথাই হল, পিতা মাতা ভ্রাতা আর বন্ধুগণ, সবই তোর পর, কেহ নয় আপন; পরপ্রেমে কেন হয়ে অচেতন ভুলিছ আপন জনে ? 

অর্থাৎ, একমাত্র ভগবান শ্রীকৃষ্ণই তোমার আপন, আর সবাই পর। শুধু তোমার নিজের মুক্তির কথা ভাবো আর নাচ গান কর রাধা নামে। বৃতা কেন সাংসারিক ঝামেলার মধ্যে জড়াতে যাবে..? ভগবান কে ডাক, তিনিই সব ঝামেলা থেকে মুক্ত করবেন- আর যদি দেখ যে, ভগবান তোমার সংকট দূর করছেন না, তবে সে দোষ ভগবানের নয়। দোষ হল তোমার। তুমি সম্পূর্ণ মনঃপ্রাণ দিয়ে ডাকোনি। এই সব বলে বৈষ্ণবদের মধুর বানী দ্বারা মানুষ কে গুমরাহ্ করবে, যেমনঃ তুমি মনঃপ্রাণ দিয়ে ডাকলে ভগবান অবশ্যই তোমাকে সঙ্কট থেকে মুক্ত করতেন। অর্থাৎ, তুমি সম্পূর্ণ ভাবে অদৃষ্টবাদী ও স্বার্থপর হও। তোমার প্রাণ রক্ষা করার জন্যও কোন প্রয়ত্ন করার দরকার নেই। ভগবান তোমাকে রক্ষা করবেন। তাসত্ত্বেও যদি তোমার প্রাণ যায়, তবে মরার পর মনে করবে তা ভগবানের ইচ্ছাতেই হয়েছে। ভগবানের ইচ্ছা ছাড়া কিছুই হতে পারে না। ভগবান যা করেন তা ভালোর জন্যেই করেন। মুসলমানরা তোমার ঘরে ঢুকে তোমার বাবাকে হ... ত্যা করেছে, তোমার মা ও বোনকে বলাৎকার করেছে..? তাতে কি হয়েছে। তোমার মা, বাবা, ভাই, বোন সবই তো পর। তুমি পরের জন্য শোক করবে কেন..? তারা নিশ্চয়ই প্রাণমন দিয়ে বগবানকে ডাকেননি, তাই ভগবান তাদের রক্ষা করেন নি। তার চেয়েও বড় কথা হল, ভগবান (শ্রীকৃষ্ণ) যা করেন, তা ভালোর জন্যই করেন। কাজেই এই রকম এক ভক্তিবাদকে চরম অদৃষ্টবাদী কাপুরুষতা ও নপুংসকতার ভক্তিবাদ ছাড়া কি বলা যেতে পারে..? গীতা এই ক্লীব ভক্তিবাদের কথা বলে না।

প্রথমে এটা বুঝতে হবে যে, গীতায় ভগবান শ্রীকৃষ্ণ যা বলেছেন তার উদ্দেশ্য ছিল ক্লৈব্যগ্রস্ত অর্জ্জুনকে যুদ্ধে প্রবৃত্ত করা, ঘরে বসে মালা জপতে (তাও আবার ঝোলায় হাত ঢুকিয়ে) বা খোল করতাল নিয়ে নাচানাচি করে হরিকৃষ্ণ কীর্তন করার জন্য নয়। 

বৈষ্ণবদের ফাঁদে হিন্দু

* এর বিপরীত অপ্রাসঙ্গিক কথা সবই গীতাতে প্রক্ষিপ্ত ধরে নিতে হবে যা কোন ধূর্ত ফন্ডিত ভগবান শ্রীকৃষ্ণকে ঈশ্বর বা তাঁর অবতার প্রমান করার জন্য যোগ করেছেন। ভগবান শ্রীকৃষ্ণ কিন্তু এ রকমের অদৃষ্টবাদী ও নপুংসক বক্তিবাদের কথা না বলে বলেছেন।

"পঞ্চৈতানি মহাবাহো কারণানি নিবোধ মে।

সাংখ্যে কৃতান্তে প্রোক্তানি সিদ্ধায়ে সর্বকর্মণাম্।।"(গীতা ১৮।১৩)

কোন কাজের সিদ্ধি ও অসিদ্ধির পিছনে পাঁচটি কারণের কতা সালখ্য ও অন্যান্য শাস্ত্রে বলা হয়ে থাকে।

" অধিষ্ঠানং তথা কর্তা করণঞ্চ পৃথগ্বিধম্।

বিবিধাশ্চ পৃথক চেষ্টা দৈবং চৈবাত্র পঞ্চমম্।।(গীতা ১৮।১৪)

(এই পাঁচটি কারণ হল) কাজটি কোথায় করা হচ্ছে, কাজটি কে করছেন, যিনি কাজটি করছেন তাঁর কত জন সাহায্যকারী আছেন, কাজটি সুসম্পন্ন করতে চেষ্টা করছেন এবং পঞ্চম ও শেষ কারনটি হল দৈব। কাজেই, গীতা অনুসারে, কোন কাজের সিদ্ধি বা অসিদ্ধির ব্যাপারে ৮০% নির্ভর করে মানবিক প্রচেষ্টা বা পুরুষকারের ওপর আর মাত্র ২০% নির্ভর করে দৈবের ওপর। কিন্তু উপরিউক্ত ক্লীব ভক্তিবাদের প্রভাবে আমরা ১০০ শতাংশই দৈবের ওপর ছেড়ে দিয়ে বসে আছি। গীতায় শ্রীকৃষ্ণ এ রকম ক্লীব ভক্তিবাদের কাথা বলেননি। তিনি বলেছেন, তস্মাৎ সর্বেষু কালেষু মামনুস্মর যুধ্য চ। (গীতা ৮।৭), অর্থাৎ সর্বদা আমাকে স্মরণ কর এবং যুদ্ধ করতে প্রস্তুত থাকো। কিন্তু এই সব ক্লীব বৈষ্ণবের দল কৃষ্ণের উপদেশের শুধু প্রথম অংশটাই পালন করছেন। সর্বদা কৃষ্ণের নাম স্মরণ করছেন। কিন্তু দ্বিতীয় অংশ, অর্থাৎ যুদ্ধ করার অংশটি উপেক্ষা করছেন। তাই এ ব্যাপারে কোন সন্দেহ নেই যে, আজ যদি ভগবান শ্রীকৃষ্ণ জন্ম নিয়ে পৃথিবীতে আসতেন, তবে তিনি এ সব ক্লীবত্বের পূজার্চনা বন্ধ করে দিতেন। এই প্রসঙ্গে বলে রাখি শ্রীশঙ্করদেব আসামে যে বৈষ্ণব সম্প্রদায় গড়ে তুলেছেন, তাতে রাধা অনুপস্থিত। সেখানকার বৈষ্ণবরা সুদর্শন চক্রধারী শ্রীকৃষ্ণের বিগ্রহকেই পূজার্চনা করেন। প্রকৃত বৈষ্ণব কেমন হবেন..? এ ব্যাপারে শ্রীচৈতন্যের মত হল, এক জন বৈষ্ণব হবেন-"তৃণাদপি সুনীচেন তরোরিবে সহিষ্ণুনা। অমানীনা মানদেন কীর্তনীয় সদা হরিঃ।।" অর্থাৎ, সেই বৈষ্ণব হবেন তৃণের থাকেও নিচু, তরুর অত সহিষ্ণু। তিনি অমানীকেও সন্মান দেখাবেন এবং সর্বদা কৃষ্ণ-কীর্তণ করবেন। হিন্দুদের জবাই দেওয়ার আগে তৈরী করা যাতে আনন্দে মুসলিমদের হাতে জবাই হয়। কোন মুসলমান যদি সেই বৈষ্ণবকে পা দিয়ে মাড়িয়ে যায় তবে তার উচিত হবে তৃণের মত নিচু হয়ে তা সহ্য করা। সেই মুসলমান যদি তাকে জবাই করে, তবে তার উচিৎ হবে তা গাছের মত সহ্য করা। কাজেই ক্লীবতা ও নপুংসতার এর থেকে বড় নিদর্শন আর কি হতে পারে.... একজন বৈষ্ণবের সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ কাজ হল ধেই ধেই করে বাহুতুলে হরি হরি বা রাধা রাধা বল বাঁদরের ন্যায় নৃত্য করা। মুসলমানরা যখন কাফেরদের (হিন্দুদের) মারার জন্য তরোয়ালে শান দিচ্ছে, বৈষ্ণব, ইসকন এদের পাল্লায় হিন্দুরা পড়ে খোল করতাল নিয়ে নাচানাচি করছে। গীতায় শ্রীকৃষ্ণ কথিত তেজবীর্যের ধর্মের কী মারাত্মক বিপথগামিতা !! হিন্দু জাতিকে একটি নপুংসক জাতিতে পরিণত করার কী জঘন্য প্রচেষ্টা !  















No comments:

Post a Comment

ধন্যবাদ

বৈশিষ্ট্যযুক্ত পোস্ট

ব্রহ্মচর্যের সাধনা ভোজন

  নবম ভাগ ভোজন ভূমিকা - "ধর্মার্থকামমোক্ষাণামারোগ্যম্ মূলমুত্তমম্" . ধর্ম-অর্থ-কাম আর মোক্ষ এই পুরুষার্থচতুষ্টয় হল মানব জীবনের উ...

Post Top Ad

ধন্যবাদ