"মাতা শত্রুঃ পিতা বৈরী যেন বালো ন পাঠিতঃ।
ন শোভতে সভামধ্যে হংসমধ্যে বকো যথা।।"
(চাণক্যনীতি ২অধ্যায় ১১ নং শ্লোক)
অর্থাৎ, যে মাতা পিতা সন্তানের বিদ্যালাভের জন্য যত্নবান না হন তাঁহারা, নিজ সন্তানের সম্পূর্ণ শত্রু। উক্ত (বিদ্যাহীন) সন্তান বিদ্বানের সভায় উপবেশন করলে, যেরূপ হংসমধ্যে বক কুৎসিত দেখায় তদ্রুপ সেঔ তিরস্কৃত হয় এবং কুৎসিত দেখায়।
খৃষ্টের আবির্বাবের পূর্বে গ্রীস, রোম, সিরিয়া, বাবিলন ও মিসর প্রভৃতি দেশে নানারূপে দেবোপাসনা প্রচলিত ছিল। অনেক স্থলে হরকিউলিস্(অনেকের মতে শ্রীকৃষ্ণ) প্রভৃতি বীরগণ পূজিত হতেন। অধিক কি, রোম নগরও দেবতার আসন পরিগ্রহ করিয়াছিল। সূর্য-চন্দ্রাদির পূজাত প্রচিলত ছিলই। প্রেত-পিশাচ প্রভৃতি বায়ু-বিহারী অদৃশ্য পদার্ত সমূহও ঈশ্বরজ্ঞানে আরাধিত হইত। তাহার পর ক্ষমা,দয়া,যশ,নিদ্রা,স্মৃতি প্রভৃতির উদ্দেশেও বেদী সকল নির্ম্মিত হইয়াছিল, এবং সমুদ্র, আকাশ, রাত্রি, অন্ধকার, বিদ্যা, বুদ্ধি বাগ্মিতা ইত্যাদিরও এক একটি অধিষ্ঠাত্রী দেবতা কল্পিত হয়ে পূজিত হয়েছে। মিশরের দেবমন্দির সমূহে বিড়াল,কুকুর,ছাগল প্রভৃতি ইতর প্রাণীর পূজার জন্য আসনও নির্দ্দিষ্ট ছিল।(Cudworth's Intellectual System of the universe,Vol I.P 361-364, 522)। পরে পরে সবাই জানেন মহাপুরুষের সাথে রাধা নামক কাল্পনীক প্রানীর গল্প রচনা করে এক সমপ্রদায় ঈশ্বর আরাধনার উপায় ইত্য়াদি তৈরী করেছিলেন। অজ্ঞনতার তমিস্রা মধ্যে মানুষ প্রকৃত ধর্ম্ম-নিকেতনের সন্ধান দিতে স্বামী দয়ানন্দ সরস্বতী অমর গ্রন্থ সত্যার্থ প্রকাশ রচনা করেন।
সত্যার্থ প্রকাশ পুস্তকের বেশীর ভাগ কথা মহর্ষি দয়ানন্দ সরস্বতীর নিজস্ব মত নয়, তিনি মনুস্মৃতি, চাণক্যনীতি, বেদ, যোগ সূত্র, উপনিষদ, ব্রাহ্মনগ্রন্থ ইত্যাদির কথা উপস্থাপন করেছেন। উনি ব্রহ্মা হতে জৈমিনি মুনি পর্য্যন্ত যাহা বিশ্বাস করিয়া আসিয়াছেন তিনিও তা বিশ্বাস করতেন ও তাই তাঁর অমর গ্রন্থ সত্যার্থ প্রকাশে প্রকাশ করেছেন। বীর সাভারকর বলেছেন সত্যার্থ প্রকাশ এমন এক পুস্তক যা হিন্দুর ঠান্ডা রক্তকে গরম করার জন্য যদি কোন পুস্তক থাকে তা এই পুস্তক।
বিভিন্ন ফন্ডিত ব্যক্তি নানা সময় তাঁদের সার্থের জন্য নানা পত্রিকার মাধ্যমে "সত্যার্থ প্রকাশ"পুস্তক নিয়ে নানা মন্তব্য প্রকাশ করেছেন, পুস্তক সম্পূর্ন না পড়ে কেবল কিছু কিছু পৃষ্ঠাতে নজর করেই এমন কি তাঁরা স্বামীজীর অন্য কোন পুস্তক পড়েও দেখনেনি অথচ ওনার উপর নানা ভুল ভাল আরোপ করে চলেছেন। উদাহরন আকারে সত্যার্থ প্রকাশের দ্বিতীয় সমুল্লাসে ২১- পৃষ্ঠাতে বালশিক্ষা বিষয়ে কথা বলতে গিয়ে তিনি শতপথ ব্রাহ্মণের এক লাইন উল্লেখ করেন " মাতৃমান্ পিতৃমানাচার্য্যবান্ পুরুষো বেদ"।
সেখানে তিনি বলেন প্রথম মাতা, দ্বিতীয় পিতা ও তৃতীয় আচার্য এই তিন উত্তম শিক্ষক লাভ করিলেই মনুষ্য জ্ঞানবান হইয়া থাকেন। সেখানে তিনি সংক্ষেপে বলেন পঞ্চম বর্ষ পর্য্যন্ত মাতা এবং ষষ্ঠ বর্ষ হইতে অষ্টম বর্ষ পর্য্যন্ত পিতা বালককে শিক্ষাদান করিবেন। নবমবর্ষের প্রারম্ভে দ্বিজ নিজের পুত্রের উপনয়ন দিয়া আচার্য্যকুলে অর্থাৎ যেখানে পূর্ণ বিদ্বান্গণ এবং পূর্ন বিদূষী স্ত্রী, শিক্ষা এবং বিদ্যা দান করেন, সেই স্থানে পুত্র ও কন্যাকে প্রেরণ করিবেন। শূদ্রাদি বর্ণ উপনয়ন না দিয়াই (সন্তানগণকে) বিদ্যাভ্যাসের জন্য গুরুকূলে পাঠাবেন।
|
প্রকাশকঃ বৈদিক অনুসন্ধান ট্রাস্ট, ষষ্ঠ সংস্করণ |
এই লাইনে অনেক পন্ডিতগণ / যুক্তিবাদী প্রশ্ন তুলেন উপনয়ন দেওয়া হচ্ছে গুরুগৃহে শিক্ষা শুরু হবার পূর্বে গুরুগৃহে প্রবেশের সময়। বাকি বর্ণদের উপনয়ন দেওয়া হল, কেবল শূদ্রসন্তানকে দেওয়া হল না! স্কুলে ভর্তি হবার শুরুতে কি তোমরা শূদ্রের সন্তানের পিএইচডি ডিগ্রি দাবী কর, যা নেই বলে শূদ্রসন্তানকে মূর্খ বলছো? বাকি বর্ণের সন্তানদের কিভাবে উপনয়ন হল, তারা কি স্কুলে ঢোকার আগেই পিএইচডি করে ফেলেছে?
এক্ষনে বিচার্য যে ফন্ডিতগণ এর পরের অংশ এমন কি তৃতীয় সমুল্লাসে যেকানে অধ্যয়ন এবং অধ্যাপনের রীতি লিখিত হয়েছে তা পড়ে দেখেননি। এমন কি নিজের কোন বিচার বিবেচনা করার ক্ষমতাও নেই ও আর্যবর্ত্তের বর্ণ ব্যবস্থা সম্পর্কেও কোন ধারনা নেই।মহর্ষি তৃতীয় সমুল্লাসে শুশ্রুত গ্রন্থের দ্বিতীয় অধ্যায়ের বচন উল্লেখ করে বলেন
ব্রাহ্মণস্ত্রয়াণাং বর্ণনামুপনয়নং কর্ত্তুমর্হতি |
রাজন্যো দ্বয়স্য | বৈশ্যো বৈশ্যস্যৈবেতি |
শূদ্রমপিকুলগুণসম্পন্নং মন্ত্রবর্জ্জমনুপনীতমধ্যাপয়েদিত্যেকে ||
অর্থাৎ ব্রাহ্মণ তিন বর্ণের অর্থাৎ - ব্রাহ্মণ , ক্ষত্রিয় ও বৈশ্য ; ক্ষত্রিয় , ক্ষত্রিয় ও বৈশ্য এবং বৈশ্য কেবল মাত্র বৈশ্য-এর যজ্ঞপবীত দিয়া অধ্যাপনা করিতে পারে । শূদ্র কুলীন ও শুভ লক্ষণযুক্ত হইলে তাহাকে মন্ত্র সংহিতা ব্যতীত সকল শাস্ত্র পড়াইবে । অনেক আচার্য্যর মত এই যে শূদ্র বিদ্যা শিক্ষা করিবে কিন্তু তাঁহার উপনয়ন হইবে না ।
|
"সত্যার্থ প্রকাশ"-৩য় সংস্করণ,প্রকাশক আর্য্যসমাজ,১৯নং কর্ণওয়ালিস ষ্ট্রীট্, কলকাতা |
"উপনয়ন" সংস্কার বলতে যে সংস্কার দ্বারা শিষ্যকে আচার্য্যর নিকট লইয়া যাওয়া হয় বা আচার্য্য যে সংস্কার দ্বারা শিষ্যকে ব্রহ্ম-এর সান্নিধ্যে লইয়া যান তা। কেউ কেউ উপনয়নকে যজ্ঞপবীতও বলে থাকেন । "যজ্ঞপবীত" শব্দটি আবার "য়জ্ঞ" ও "উপবীত" এই দুই শব্দ দ্বারা গঠিত । যার অর্থ "যজ্ঞ প্রদানকারী" ।মহর্ষি মনু মহারাজের ২/৭১ শ্লোকের কথা অনুসারে উপনয়ন সংস্কার ছাড়া কোনো ব্যক্তির বৈদিক কর্মকাণ্ড ও হবন যজ্ঞ করার কোনো অধিকার নেই ।
এক কথায় উপনয়ন সংস্কার হল একটি অধিকার পত্র । যেমন - কোনো বিদ্যার্থী গাউন না পড়িলে তাঁহাকে ডিগ্রি দেওয়া হয় না । কোনো উকিল গাউন ধারণ না করলে তাঁকে ওকালতি করার অধিকার দেওয়া হয়না । তদ্রুপ যতক্ষণ পর্যন্ত যজ্ঞপবীত ধারণ করা হয় না ততক্ষন কোনো ব্যক্তির সন্ধ্যা-উপাসনা , অগ্নিহোত্র , মাতা-পিতা , আচার্য্যদিগের সেবা শুশ্রুষা , অতিথি সৎকার , বলিবৈশ্যদেব যজ্ঞ এবং দান আদি করিবার অধিকার প্রাপ্ত হয় না । অতএব যজ্ঞপবীত ধারণ না করার অর্থ নিজেকে সেই সকল কর্মের অধিকার থেকে বঞ্চিত রাখা । তাই নারী এবং পুরুষ উভয়েরই উপনয়ন নেওয়া অবশ্যই কর্তব্য ।
উপনয়নের বয়স নির্ধারন বিষয়ে পারস্কর গৃঃ ২|২|১-৩'এ বলা হয়েছে "অষ্টবর্ষ ব্রাহ্মণমুপনয়েৎ গর্ভাষ্টমং বা
একাদশ বর্ষ রাজন্যঃ , দ্বাদশ বর্ষ বৈশ্যম্ "
অর্থাৎ , ব্রাহ্মণ বালকের উপনয়ন গর্ভ হতে অষ্টম বর্ষে , ক্ষত্রিয়ের একাদশ বর্ষে এবং বৈশ্যের দ্বাদশ বর্ষে হওয়া উচিৎ । যদি কোনো বিশেষ কারণবসত উক্ত সময়ে এই কাজ সম্পাদিত না হলে , তাহলে ইহার দ্বিগুন বয়স অর্থাৎ ব্রাহ্মণ বালকের ষোড়শ , ক্ষত্রিয়ের দ্বাবিংশ এবং বৈশ্যের চতুরবিংশ বর্ষের আয়ু পর্যন্ত হইতে পারে ।
মনুস্মৃতিতে বলা আছে -
আষোড়শাদ্ ব্রাহ্মণস্য সাবিত্রী নাতি বর্ততে ।
আদ্বাবিংশৎক্ষত্র বন্ধোরা চতুর্বিংশতের্বিশঃ ।।(মনুস্মৃতি ২|৩ শ্লোক)
ব্রাহ্মণের ষোড়শ বর্ষ হইতে অধিক ক্ষত্রিয়ের দ্বাবিংশ বর্ষ হইতে অধিক এবং বৈশ্যের ছাতুরবিংশ বর্ষ হইতে অধিক আয়ুতে যজ্ঞপবীত সংস্কার হওয়া উচিৎ নয় । ইহার পরে যদি তাদের সংস্কার না হয় , তবে তাঁরা পতিত হয়ে যায় , এবং "ব্রাত্য" সংজ্ঞা প্রাপ্ত হয় । নারী-পুরুষ উভয়েরই যজ্ঞোপবীত ধারনের অধিকার আছে ।
তৃতীয় সমুল্লাসে মহর্ষি মনুস্মৃতির ৭।১৫২ শ্লোক "কন্যানাং সম্প্রদানং চ কুমারাণাং চ রক্ষণম্" এর অভিপ্রায় বলতে গিয়ে লিখেছেন যে পঞ্চম অথবা অষ্টম বর্ষের পর কেহই নিজের বালক ও বালিকাকে গৃহে রাখিতে না পারেন এবং পাঠশালায় অবশ্য প্রেরন
করিবেন আর না পাঠাইলে দন্ডনীয়। যজ্ঞোপবীত প্রথমে গৃতে ও তারপরে দ্বিতীয় বার পাঠশালায় আচার্য্যকুলে হবে লিখেন। শূদ্রাদি বর্ণের পিতা মাতার যজ্ঞোপবীত বিষয়ে জ্ঞান না থাকায় তাঁদের পুত্র ও কন্যাদের উপনয়ন না করিয়া পাঠশালায় পাঠানোর কথা বেলেছেন অভিপ্রায় এই যে গুরুকুলে আচার্যগণ ঐ সন্তানদিগকে উপনয়ন করাইবেন। সম্পূর্ন প্রকরনের মূল বক্তব্য হলো ব্রাহ্মণের অষ্টম বর্ষে, ক্ষত্রিয়ের একাদশ বর্ষে এবং বৈশ্যের দ্বাদশ বর্ষে উপনয়ন বিধেয় । অশ্বলায়ন গৃহ্যসূত্র ১।১৯ তে বর্নিত আছে। বর্ণ ব্যবস্থা গুণও কর্ম অনুসারে শতপথ ৩।২।১।৪০ বৈশ্য বা ক্ষত্রিয় যজ্ঞে দীক্ষিত হয়ে ব্রাহ্মণত্ব গ্রহণ করতে পারেন । ঐতরেয় ৭/৩৪ ক্ষত্রিয় দীক্ষিত হয়ে ব্রাহ্মণত্ব প্রাপ্ত করতে পারে। বর্ণব্যবস্থা যে গুণ ও কর্ম অনুসারে সেটি "বর্ণ" শব্দের অর্থ দ্বারাই প্রমাণ হয় । মনু ২/৩৭ শ্লোকে এই সংসারে যার ব্রহ্মতেজ , বিদ্যা আদির শিঘ্র এবং অধিক প্রাপ্তির কামনাকারী ব্রাহ্মণ বর্ণের ইচ্ছুকের (মাতা পিতার ইচ্ছার আধারে প্রয়োগ) উপনয়ন সংস্কার পঞ্চম বর্ষে করা উচিৎ । উপনয়নে শুদ্রের উল্লেখ না থাকাই প্রমাণ করে যে , মনু উপনয়ন এবং বেদারম্ভের দীক্ষার পূর্বে কাউকে জন্মগত শুদ্র মানতেন না । কারণ এই দ্বিজত্বে দীক্ষার সংস্কার তিন প্রকারের । যে সন্তান যে বর্ণের প্রবেশ করতে চায় সে সন্তান সেই বর্ণেই দীক্ষা গ্রহণ করবেন । অর্থাৎ পিতামাতার সংকল্প অনুযায়ী সন্তান ব্রাহ্মণ , ক্ষত্রিয় এবং বৈশ্য বর্ণে দীক্ষিত হন । এভাবে শিক্ষা দীক্ষার পর যে এই তিন বর্ণের গুণকে ধারণ করতে পারে না তিনি শুদ্র হয়ে থাকেন । আর কোন পিতা মাতাই চান না যে , তার সন্তান শূদ্রত্বে দীক্ষা গ্রহণ করুক । কারণ শূদ্র বর্ণ তার যোগ্যতা অনুসারে পরবর্তীকালে আচার্য তা ঠিক করেন এজন্য উপনয়নে শুদ্রের উল্লেখ করা হয়নি ।
জন্মসূত্রে আমরা কেউ ব্রাম্মণ বা ক্ষত্রীয় নই ।
ব্রাম্মণ , ক্ষত্রিয় , বৈশ্য , শূদ্র । ব্রাহ্মণোস্য মুখমাসীদ্ধহু
রাজন্যঃ কৃতঃ ঊরু তদস্য যদ্বৈশ্যঃ পদ্ভ্যাং শদ্রোঅজায়ত ।-(যজুর্বেদ ৩১|১১ )
পদার্থ : ( অস্য ) সেই পরমত্মার সৃষ্টিতে ( ব্রাম্মণঃ ) বেদের জ্ঞাতা ও ঈশ্বরের উপাসক ব্রাহ্মণ ( মুখম্ ) মুখের তুল্য ( অসীম ) হয় ।( বাহু ) বাহুর তুল্য বল ক্ষমতাযুক্ত পরাক্রমশালী ( রাজন্যঃ ) ক্ষত্রিয় হিসেবে ( কৃতঃ ) সৃষ্টি করেছেন । ( যৎ ) যিনি ( উরু ) উরুর তুল্য বেদ্যগাগী কর্ম করেন , ( তদ্ ) সেই ব্যক্তি ( অস্য ) এই পরমত্মার নিকট ( বৈশ্যঃ ) বৈশ্যরূপে পরিচিতি হয় । ( প্দ্ভ্যাম্ ) পাঁযের সমান পরিশ্রমী অবং অভিমান রহিত , সেবার যোগ্য ব্যক্তি ( শুদ্রঃ ) শুদ্র বলে পরিচিত হন । ( অজায়ত ) এভাবেই সকলের উৎপন্ন হয়েছে ।
ভাবার্থ : যে মানুষ বেদ বিদ্যা শম-দমাদি উত্তম গুনে মুখ্য , ব্রহ্মের জ্ঞাতা এবং মুখের মাধ্যেমে জগৎকে জ্ঞানদান করেন তিনি ব্রাহ্মণ । যিনি অধিক পরাক্রমশালী বাহুর তুল্য কার্যসিদ্ধ করেন তিনি ক্ষত্রীয় , যিনি ব্যাবহার বিদ্যায় প্রবীন হয়ে উরুর ন্যায় জগৎকে ধারণ করেন তিনি বৈশ্য এবং যিনি সেবায় প্রবীন , কর্মে কঠোর তিনি পায়ের ন্যায় পরিশ্রমী শূদ্র । এই বর্ণ ব্যবস্তা কর্ম অনুসারে বেদে কথিত হয়েছে ।
সত্য়ার্থ প্রকাশের মূল হস্তলেখ, মূদ্রন-হস্তলেখ, প্রথম সংস্করণ ১৮৭৫, দ্বিতীয় সংস্করণ ১৮৮৪ পরোপকারিনী সভা অজমের। সংস্কারক স্বামী বেদানন্দ, পন্ডিত যুধিষ্ঠির মীমাংসক, পন্ডিত ভগবতদত্ত, শ্রী জগদেব সিং সিদ্ধন্তী, স্বামী বিদ্যানন্দ, স্বামী জগদীশ্বরানন্দ এবং উদয় পুরী ইত্যাদি মূল হস্তলিপি, নানা স্থানের ভাষণের হস্তলিপি গবেষণা,পর্যালোচনা করেছিলেন। তাঁর ওপর নির্ভর করে লেখক ও সম্পাদক ডাঃ. সুরেন্দ্র কুমার (বিশুদ্ধ মনুস্মৃতির ভাষ্যকার) Satyarth Prakash এর commentary করেন ১১৫৫ পৃষ্ঠার পুস্তক আকারে। ডাঃ. সুরেন্দ্র কুমার সিংহের জন্ম ১৯৫১ সালের ১২ জানুয়ারী, হরিয়ানার, মাকরাউলি কালান গ্রামে, পিতা শ্রী গাহার সিংহ, মাতা শান্তি দেবী। তিনি সত্যার্থ প্রকাশের ভাষ্য করতে গিয়ে পুস্তকের প্রতিটা পৃষ্ঠার নীচে বিস্তৃত আলোচনা করেছেন যেমনঃ "শূদ্রাদি বর্ণ উপনয়ন না দিয়াই (সন্তানগণকে) বিদ্যাভ্যাসের জন্য গুরুকূলে পাঠাবেন।" এই কথার করান বোঝাতে লিখেছেন👇 যা আমরা পূর্বেই আলোচনা করেছি |
সত্যার্থ প্রকাশ ২য় থেকে ৫ম সমুল্লাস স্বামী বিবেকানন্দ পরিব্রাজকের কন্ঠে শুনুন- ভিডিও |
|
সত্যার্থ প্রকাশ দ্বিতীয় সংস্করণ, শঙ্করনাথ পন্ডিত(বঙ্গানুবাদ) |
দয়ানন্দ সরস্বতী কাটিবার প্রদেশে মর্ভিতে জন্ম গ্রহণ করেন। মর্ভি একটি নগর, গুজরাটের অন্তর্গত দ্রুগান্ধা রাজ্যের সীমান্তবর্ত্তী। তিনি উদীচ্য শ্রেণীস্থ ব্রাহ্মণ। উদীচ্য় ব্রাহ্মণগণ সামবেদান্তর্গত শিক্ষিত, কিন্তু তিনি গৃহে যজুর্ব্বেদ শিক্ষিত। তিনি বাল্যকালে রুদ্রাধ্যায় শিক্ষা পূর্ব্বক যজুর্ব্বেদ পাঠ করেছিলেন। প্রায় পাঁচ বৎসর বয়সে তিনি দেবনাগর অক্ষর শিক্ষা লাভ করেন, ও বহুসলখ্যক বেদ মন্ত্র ও বেদ ভাষ্য তিনি কন্ঠস্থ করেছিলেন। শব্দরূপাবলী, নিরুক্ত,নিঘন্টু ও পূর্ব্বমীমাংসা প্রভৃতি অধ্যয়ন করেন। শিবানন্দ গিরির নিকট তিনি যোগবিদ্যা শিক্ষা গ্রহন করেছিলেন।পন্ডিতবর জোয়ালাদত্ত শর্ম্মা বলেন, দয়ানন্দ কাশীর রামনিঞ্জন শাস্ত্রীর নিকট কিছু কাল কৌমুদী ও ন্যায়-শাস্ত্র শিক্ষা করিয়াছিলেন। কিন্তু সময় নিরূপন করা কঠিন বলে সময় উল্লেখ করেননি। তিনি তাঁহার নিকট হঠ-প্রদীপিকা, যোগবীজ ও শিবসন্ধ্যা প্রভৃতি গ্রন্থ অধ্যয়ন করেন। যোগবিষয়ক পুস্তকে নাড়ীচক্রের বৃত্তান্ত পাঠ করেছিলেন। দয়ানন্দ সরস্বতী কে সম্পূর্ন বুঝিতে হইলে গুরু বিরজানন্দকে বুঝা আবশ্যক। দয়ানন্দ স্বামী বিরজানন্দের নিকট পাণিনি ও পাণিনির অনুপম ব্যাখ্যাস্বরূপ মহাভাষ্য পাঠ করেন ও উচ্চারন বিধি সঠিক ভাবে করেত শিক্ষা লাভ করেন। ওনার কাছে উপনিষদ,মনুস্মৃতি,বম্রহ্মসূত্র ও পতঞ্জলির যোগসূত্র প্রভৃতি দর্শন শাস্ত্র অধ্যয়ন করেন।cont....>
No comments:
Post a Comment
ধন্যবাদ