কোয়ান্টাম ফ্লাকচুয়েশন - ধর্ম্মতত্ত্ব

ধর্ম্মতত্ত্ব

ধর্ম বিষয়ে জ্ঞান, ধর্ম গ্রন্থ কি , হিন্দু মুসলমান সম্প্রদায়, ইসলাম খ্রীষ্ট মত বিষয়ে তত্ত্ব ও সনাতন ধর্ম নিয়ে আলোচনা

धर्म मानव मात्र का एक है, मानवों के धर्म अलग अलग नहीं होते-Theology

সাম্প্রতিক প্রবন্ধ

Post Top Ad

স্বাগতম

26 April, 2021

কোয়ান্টাম ফ্লাকচুয়েশন

                                                      ১৮৬৫ সাল। নিউটনের পরে এবং আইনস্টাইন এর আগে যাকে সবচেয়ে প্রতিভাবান বিজ্ঞানী বলা হয়ে থাকে, সেই স্কটিশ বিজ্ঞানী জেমস ক্লার্ক ম্যাক্সওয়েল এক অভাবনীয় ঘটনা ঘটালেন। যেটাকে এই বিজ্ঞান জগতে ম্যাক্সওয়েলের বিপ্লব বলা হয়। তিনি তিনি বিদ্যুৎ ও চুম্বকের তত্ত্বগুলির সমন্বয় ঘটালেন। শূন্যস্থানে শক্তিক্ষেত্রের অবতারণা করলেন। অবশ্য এর জন্য তিনি মাইকেল ফ্যারাডের কাছে ঋণী। মাইকেল ফ্যারাডে প্রথম দেখিয়েছিলেন, বিদ্যুৎ তরঙ্গ শূন্যস্থানে বলক্ষেত্র তৈরি করতে পারে। ফ্যারাডের সেই ক্ষেত্র তত্ত্বকে আরো ভালোভাবে প্রতিষ্ঠিত করলেন জেমস ক্লার্ক ম্যাক্সওয়েল।

ম্যাক্সওয়েলই প্রথম বলেন, আলো, বিদ্যুৎ আর চুম্বক একই বলের তিনটি আলাদা রূপ। তিনি বলেন, এই বল পরিবাহিত হয় বিদ্যুতচুম্বকীয় তরঙ্গ আকারে। আসলে বিদ্যুৎচুম্বকীয় তরঙ্গের উৎসের আশেপাশে একটা শক্তিক্ষেত্র ছড়িয়ে থাকে। সেই ক্ষেত্রের উপর ঢেউ তুলে এগিয়ে চলে বিদ্যুৎচুম্বকীয় তরঙ্গ। আসলে সেই বলক্ষেত্রটি হল স্থান এবং কাল।

আইনস্টাইন তাঁর সাধারণ আপেক্ষিতায় স্থান-কালের ক্ষেত্র ধারণা নিয়েছিলেন ম্যাক্সওয়েলের বিদ্যুৎচুম্বকীয় ক্ষেত্র তত্ত্ব থেকে। ম্যাক্সওয়েল দেখান, স্থান-কালের ওপর বিদ্যুৎচুম্বকীয় শক্তি এক ধরনের আন্দোলন তোলে। আন্দোলনই দুটো চুম্বকক্ষেত্রকে একই স্থানে থেকে আর একই স্থানে বয়ে নিয়ে যায়।

পরে আইনস্টাইনের যখন তার আপেক্ষিকতায় ক্ষেত্রতত্ত্ব প্রয়োগ করলেন, তখন অদৃশ্য স্থান-কাল বিজ্ঞানীদের নতুনভাবে ভাবিয়ে তুলল। আর সেই ভাবনায় আর এক যুগান্তকারী বিপ্ল­ব ঘটালেন ওয়ার্নার হাইজেনবার্গ।

কোয়ান্টাম মেকানিকস দাঁড়িয়ে আছে অনিশ্চয়তা তত্ত্বের ওপর, গতে শতাব্দীর কুড়ির দশকে যেটা দাঁড় করিয়েছিলেন জার্মান পদার্থবিদ ওয়ার্নার হাইজেনবার্গ। সেই তত্ত্ব বিশ্লেষণ করেই বেরিয়ে আসে আরেকটা তত্ত্ব-কোয়ান্টাম ফ্ল্যাকচুয়েশন। এই তত্ত্ব বলে, শূন্যস্থান আসলে শূন্য নয়। তার ভেতর লুকিয়ে আছে শক্তি। সেই শক্তির যোগান দেয় ভার্চুয়াল কণারা।

শূন্যস্থানে আসলে সবসময় এই কণা-প্রতি-কণার সৃষ্টি আর ধ্বংসের খেলা চলছে। বিজ্ঞানীরা বলেন, প্রতি মুহূর্তে সব জায়গায় কণা আর প্রতি-কণার জোড়া তৈরি হচ্ছে। কিন্তু তারা খুব ক্ষণস্থায়ী। জন্মের সাথে সাথেই এরা পরস্পরের সাথে সংর্ঘষ ঘটিয়ে ধ্বংস হয়ে যায়। পড়ে থাকে শক্তি। সেই শক্তিই পরক্ষণে আবার একজোড়া কণা-প্রতিকণা তৈরি করে। এভাবেই প্রকৃতিতে চলছে ভার্চুয়াল কণাদের ভাঙাগড়ার খেলা।

১৯২০ এর দশক। ডেনিস বিজ্ঞানী নীলস বোরের নেতৃত্বে তখন পতপত করে উড়ছে কোয়ান্টাম বলবিদ্যার জয়পতাকা, দুনিয়াজুড়ে তরুণ বিজ্ঞানীরা ঝুঁকে পড়েছেন সেদিকে। বছর পঁচিশ বয়সের ব্রিটিশ তরুণ পল ডিরাক। সেই ডিরাকও ছিলেন নিলস বোরের ছাত্র। ১৯২৮ সাল। ততদিনে বিজ্ঞানী এরউইন শ্রোডিঙ্গার প্রকাশ করেছেন তাঁর বিখ্যাত তরঙ্গ সমীকরণ। কিন্তু শ্রোডিঙ্গারের সমীকরণে একটা সমস্যা ছিল। এই সমীকরণ গতিশীল ইলেকট্রন কণিকাদের আচরণ ব্যাখ্যা করতে পারে। কিন্তু সেটা কম গতির ইলেকট্রনের ক্ষেত্রে বেশ ভালো কাজ করলেও, উচ্চগতির ইলেকট্রনদের আচরণের ব্যাখ্যা ঠিকমতো করতে পারে না।

পল ডিরাক এর একটা সমাধান খোঁজার চেষ্টা করলেন। শ্রোডিঙ্গারের সমীকরণ শুধুই কোয়ান্টাম বলবিদ্যার সম্পত্তি। আপেক্ষিক তত্ত্বের সাথে এর কোনো সম্পর্ক ছিল না। পল ডিরাক সেই সমীকরণে আপেক্ষিকতার আমদানি করলেন। আপেক্ষিকতার অন্যসব সমীকরণগুলো সাথে কোয়ান্টাম বলবিদ্যার তফাতটা চোখে পড়ার মতো। কিন্তু E=mc2 সমীকরণ কোয়ান্টাম বলবিদ্যা ব্যবহার করতে গিয়ে অতটা ঝামেলায় পড়তে হয় না। পল ডিরাক তাই আপেক্ষিকতার ভর-শক্তি সমীকরণকেই আগে বেছে নিলেন কোয়ান্টামের সাথে আপেক্ষিকতার মেলবন্ধন ঘটাতে।

পল ডিরাকের ঋণাত্মক মানের প্রতি একটু বাড়তি দুর্বলতা ছিল। আইনস্টাইনের ভর-শক্তি সমীকরণে ঋণাত্মক মান এর স্থান ছিল না। পল ডিরাক প্রথমেই এই সমীকরণে ঋণাত্মক রাশি যোগ করলেন। তখন বদলে যাওয়া সমীকরণটা দাঁড়াল, E=±mc2 সে যুগের বিজ্ঞানীরা শক্তির ঋণাত্মক মানকে অবাস্তব মনে করতেন। অবাস্তবকে বাস্তবতার জগতে ঠাঁই দিতে তারা রাজি ছিলেন না। সুতরাং শক্তি ঋণাত্মক মান নিয়ে তাঁরা মাথা ঘামান নি কখনো। কিন্তু পল ডিরাকের এটা দরকার ছিল। তিনি তাই ভর-শক্তির সমীকরণে ঋণাত্মক মান রেখে দিলেন। আর এটা করতে গিয়েই গোল বাঁধল। ভর ও শক্তির ঋণাত্মক মান বিপরীত কণিকার আভাস দিল। যেহেতু ডিরাক ইলেকট্রনের আচরণ আরো ভালোভাবে ব্যাখ্যা করতে চাচ্ছিলেন, তাই নতুন এই সমীকরণ বিপরীত ইলেকট্রনের ভবিষ্যদ্বাণী করল। হিসাব মতে, সেই ইলেকট্রনের ভর হবে বাস্তব ইলেক্ট্রনের সমান কিন্তু চার্জ হবে ইলেকট্রনের বিপরীত। অর্থাৎ ধনাত্মক চার্জযুক্ত ইলেকট্রন। পরে সেই বিপরীত ইলেকট্রনের নাম হলো পজিট্রন।

ডিরাক তো তত্ত্ব দিয়েই খালাস। বিপরীত কণিকার অস্তিত্বের প্রমাণ কিভাবে আসবে?

ডিরাক দায়সারা গোছের একটা ব্যাখ্যা দাঁড় করার চেষ্টা করলেন। তিনি বললেন, বিশেষ ঋণাত্মক বিদ্যুত্চুম্বকীয় ক্ষেত্রেই এই বিপরীত ইলেকট্রন পাওয়া যেতে পারে। সাধারণ অবস্থায় ইলেকট্রন আমাদের চিরচেনা বিদ্যুৎচুম্বকীয় ক্ষেত্রের ভেতর চলে তার মান ধনাত্মক, কিন্তু বিপরীত ইলেকট্রনগুলো চলাচল করবে ঋণাত্মক বিদ্যুৎচুম্বকীয় ক্ষেত্রে।

ডিরাক তখন নতুন এক কথা শোনালেন। বললেন, ইলেকট্রন যে শক্তিস্তরগুলোতে থাকে পরমাণুর ভেতর বা বিদ্যুৎচুম্বকীয় ক্ষেত্রে, সেগুলো দুই ধরনের হয়। একটা ধনাত্মক আরেকটা ঋণাত্মক শক্তিস্তর। সাধারণ ইলেকট্রনগুলো ধনাত্মক শক্তিস্তরে থাকে, আর ঋণাত্মক শক্তিস্তরে থাকে বিপরীত ইলেকট্রনগুলো। তিনি আরো বললেন, মহাবিশ্বের সব ঋনাত্মক শক্তিস্তর কোনো এক কারণে আগেই পূর্ণ হয়ে গেছে। তাই বিপরীত ইলেকট্রনের থাকবার কোনো জায়গা নেই। এজন্য বিপরীত ইলেকট্রন অর্থাৎ পজিট্রন আমরা বাস্তব জগতে দেখতে পাই না। তার মানে এই নয়, সেগুলো পাওয়া অসম্ভব। ডিরাক বললেন, যদি বিশেষ সেই ঋণাত্মক শক্তিস্তর আমরা তৈরি করতে পারি, তবে পজিট্রনের দেখা পাওয়া সম্ভব। অনেকেই তার কথা বিশ্বাস করলেন না।

তবে বেশিদিন অপেক্ষা করতে হলো না। ১৯৩২ সালে মার্কিন বিজ্ঞানী কার্ল অ্যান্ডারসন পজিট্রন আবিষ্কার করলেন। তখন এই বিপরীত কণা বা প্রতিকণা আর শুধু তত্ত্বেই সীমাবদ্ধ রইল না। তখন অন্য বিজ্ঞানীরা বললেন শুধু ইলেকট্রনের কেন, অন্য কণাদেরও বিপরীত কণা থাকা উচিত। সেটাও প্রমাণ করতে বেশিদিন সময় লাগল না। ১৯৫৫ সালে ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই বিজ্ঞানী প্রতি-প্রোটন এবং ১৯৫৬ সালে প্রতি-নিউট্রন আবিষ্কার করলেন ।

১৯৫১ সালে মার্কিন জুলিয়ান সুইংগার প্রমাণ করলেন, শূন্য স্থানের ভেতরেই যদি প্রবল তড়িৎ ক্ষেত্র তৈরি করা যায় তাহলে কণাগুলো আর ভার্চুয়াল থাকে না। সেগুলো বাস্তব কণায় পরিণত হয়।

এই যে শূন্যস্থানের শক্তির কথা বলা হচ্ছে, এ শক্তিকেই কাজে লাগাতে চেয়েছিলেন ইনফ্লেশন তত্ত্বের নায়কেরা। শুরুটা করেছিলেন নিউইয়র্কের সিটি ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক এডওয়ার্ড ট্রিয়ন। ১৯৭০ সালে একটা বিজ্ঞান সম্মেলনে যোগ দেন তিনি। সেই সম্মেলনে কোনো একজন বিজ্ঞানী কোয়ান্টাম বলবিদ্যা নিয়ে কথা বলছিলেন। তন্ময় হয়ে সেই বক্তৃতা শুনছিলেন ট্রিয়ন। তারপর হঠাৎ তার মাথায় আসে এক যুগান্তকারী ভাবনা। তিনি বলেন, ‘আমাদের মহাবিশ্বটা হয়তো স্রেফ ভ্যাকুয়াম ফ্ল্যাকচুয়েশনের ফসল।’ সেদিন তাঁর কথা কেউ আমলে নেয়নি। বরং হাসির রোল ওঠে সভাকক্ষ জুড়ে।

কিন্তু দমে গেলেন না ট্রিয়ন। তিনি ঠান্ডা মাথায় ভাবতে শুরু করলেন। তারপর দুই বছর খেটেখুটে প্রবন্ধ দাঁড় করালেন। ১৯৭৩ সালে তিনি সেটা পাঠালেন বিখ্যাত নেচার পত্রিকায়, চিঠিপত্র বিভাগে ছাপার জন্য, কিন্তু নেচারের সম্পাদক লেখাটার গুরুত্ব বুঝলেন। সেটা ছাপালেন ফিচারের আকারে।

ট্রিয়নের সেই ধারণা এক সময় সৃষ্টিতত্ত্ব ব্যাখ্যায় কাজে লাগান ইনফ্লেশন তত্ত্বের তিন জনক ডেমোস কাজনাস, অ্যালান গুথ ও আন্দ্রে লিন্ডে। তাঁরা দেখাতে সক্ষম হন, শূন্যস্থান থেকেই মহাবিশ্বের জন্ম। আর সেই মহাবিশ্বই পরে ইনফ্লেশন বা স্ফীত হয়ে ধীরে ধীরে পরিণত মহাবিশ্বে আত্মপ্রকাশ করেছে।

শূন্যতার শক্তির সমস্যাটা অন্য জায়গায়। বিজ্ঞানীদের কথা মেনে ধরেই নিলাম ভ্যাকুয়াম ফ্ল্যাকচুয়েশনের মাধ্যমে মহাবিশ্বের জন্ম হয়েছিল। তবু কি সব সমস্যার সমাধান হয়?

প্রথম প্রশ্নটা হলো, আমাদের যে পদার্থবিজ্ঞানের নীতি সেটা আমাদের মহাবিশ্বের জন্য প্রযোজ্য। কারণ কোয়ান্টাম ক্ষেত্র বলুন, আর শূন্যতার শক্তি বলুন, এগুলো তো আমাদের পদার্থবিজ্ঞানের নীতির মধ্যেই পড়ে। মহাবিস্ফোরণের আগে যে শূন্যতা সেটা কেমন? শূন্যস্থানের যে শক্তির কথা বলছি, তার জন্য দরকার হয় মহাবিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে থাকে স্থান-কালের চাদর বা ক্ষেত্রের মধ্যে। কিন্তু এই স্থান-কালের জন্ম মহাবিস্ফোরণের পর। তাই স্থানকালের যে কোয়ান্টাম শক্তি, সেটার জন্মও নিশ্চয়ই মহাবিস্ফোরণের পর।

শূন্যস্থানের শক্তির মাধ্যমে কণা তৈরির যে ব্যাপারটা, সেটা হতে গেলে কোয়ান্টাম ক্ষেত্রের দরকার হয়, স্থান কালের দরকার হয় আর দরকার হয় কোয়ান্টাম মেকানিকসের। কিন্তু এসব কিছুরই জন্ম মহাবিস্ফোরণের মধ্য দিয়ে। মহাবিস্ফোরণের আগে স্থানকাল থাকার কথা নয়, থাকার কথা নয় কোনো কোয়ান্টাম ক্ষেত্রেরও। সেখানে আমাদের পদার্থবিজ্ঞানও অচল হওয়ার কথা। কিন্তু মহাবিস্ফোরণ ঘটেছে এটাও তো সত্যি। মহাবিস্ফোরণের আগে যে পরম শূন্য ছিল, সেটা কি তবে শূন্য নয়? সেখানেও কি কাজ করেছিল পদার্থবিজ্ঞানের সূত্র? তাই যদি হয়, সেখানেও কোয়ান্টাম ক্ষেত্র ছিল। সেই ক্ষেত্র কি আলাদা কোনো মহাবিশ্বে ছড়িয়ে ছিল? সেই মহাবিশ্বের কোনো বিন্দুতে বিগ ব্যাং ঘটে আমাদের একটি শাখা মহাবিশ্বের জন্ম। অর্থাৎ আমাদের এই মহাবিশ্বের কি আরেকটা মাতৃ-মহাবিশ্ব আছে? সেই মহাবিশ্বের কি আমাদের মহাবিশ্বের মতো আরও কোনো সন্তান আছে? হয়তো সেই সন্তানগুলোই আমাদের প্যারালাল ইউনিভার্স?

আরেকটা মজার প্রশ্ন এখানে করে ফেলতে পারি। আমাদের এই মহাবিশ্বের নিশ্চয়ই সীমা আছে। সীমা থাকলে এর প্রসারণও সম্ভব হত না। সেই সীমার বাইরে কী আছে। নিশ্চয়ই শূন্যতা আছে? সেই শূন্যতা নিশ্চয়ই আমাদের মহাবিশ্বের ভেতরে যে স্থানকালের শূন্যতা তার মতো নয়? সেই শূন্যতারই কোনো একটা বিন্দুতেই তো মহাবিস্ফোরণ ঘটেছিল আর জন্ম নিয়েছিল আমাদের মহাবিশ্ব।

যাই হোক, এ প্রশ্নের সঠিক সমাধান আমাদের বিজ্ঞানীদের হাতে আসেনি। কিন্তু বিজ্ঞানের যেভাবে উন্নতি ঘটছে হয়তো এসব উত্তর পেতে খুব বেশি দিন অপেক্ষা করতে হবে না, ততদিন পর্যন্ত এটা অমীমাংসিতই রয়ে যাবে।

শুন্যতাও বা স্পেসও মহাবিস্ফোরণের আগে ছিলনা ৷ মহাবিস্ফোরণের পর যেমন শক্তি পদার্থ প্রতি কনা ডার্ক ম্যাটার তৈরী হয়েছে তেমনি স্পেস ও তৈরী হয়েছে ৷ এখনও পর্যন্ত আমরা সিঙ্গুলারিটি পর্যন্ত পিছিয়ে দেখতে পাচ্ছি ৷ যা কখনই শুন্য নয় ৷ অন্য কিছু ৷ আসলে অব্যাখ্যাত অবস্থা ৷ যেমন শুন্য দ্বারা শুন্যের ভাগ অব্যাখ্যাত ৷

সংক্ষেপে বললে: এই তত্ত্ব বলে, শূন্যস্থান আসলে শূন্য নয়। তার ভেতর লুকিয়ে আছে শক্তি, যাকে বলা হয় শুন্যতার শক্তি বা ভ্যাকুয়াম শক্তি (Vacuum energy। সেই শক্তির যোগান দেয় ভার্চুয়াল কণারা। শূন্যস্থানে আসলে সবসময় এই কণা-প্রতিকণা সৃষ্টি আর ধ্বংসের খেলা চলছে (ছবিতে দেখুন)৷ বিজ্ঞানীরা বলেন, প্রতি মুহূর্তে সব জায়গায় কণা আর প্রতি-কণার জোড়া তৈরি হচ্ছে। কিন্তু তারা খুব ক্ষণস্থায়ী। জন্মের সাথে সাথেই এরা পরস্পরের সাথে সংর্ঘষ ঘটিয়ে ধ্বংস হয়ে যায়। পড়ে থাকে শক্তি। সেই শক্তিই পরক্ষণে আবার একজোড়া কণা-প্রতিকণা তৈরি করে। এভাবেই প্রকৃতিতে চলছে ভার্চুয়াল কণাদের ভাঙাগড়ার খেলা।

এই হচ্ছে ফ্লাকচুয়েশন থিওরির সারাংশ৷ এই থিওরি আবিষ্কারের পর নাস্তিক সমাজ অনেক আনন্দ-উৎসব করেছে একারণে যে এই তত্ত্বের মাধ্যমে শুন্য থেকে সবকিছু সৃষ্টি হওয়ার প্রক্রিয়া ব্যাখ্যা করা যায়৷ শুন্য স্থানে যদি অনবরত ও স্বতঃস্ফুর্তভাবে 'ভার্চুয়াল' কণা ও তার প্রতিকণা সৃষ্টি হতে পারে, তবে শুণ্যস্থান থেকে মহাবিশ্বও সৃষ্টি হতে পারে৷ তাদের বক্তব্য হল, 'পয়েন্ট অব সিঙ্গুলারিটি' বা মহাকর্ষীয় অদ্বৈত বিন্দু এসেছে কোয়ান্টাম ফ্লাকচুয়েশনের মাধ্যমে৷ অর্থাৎ, ভার্চুয়াল কণা-প্রতিকণার অনবরত উৎপত্তি ও বিলীন এর কোনো এক পর্যায়ে এমন কোনো কণা (বিন্দু) জন্ম লাভ করে, যটি ছিল মহাকর্ষীয় অদ্বৈত বিন্দু বা পয়েন্ট অব সিংগুলারিটি৷ অতঃপর, পয়েন্ট অব সিংগুলারিটির বিস্ফোরণ হয়, তারপর মহাজাগতিক ইনফ্লেশন (Cosmic Inflation) হয় (দেখুন: মহাজাগতিক স্ফীতিশীলতা - উইকিপিডিয়া); এবং তারপর আরো বিস্ততি হয়৷

কোয়ান্টাম
কোয়ান্টাম

এখানে উল্লেখ্য যে, ভ্যাকুয়াম ফ্লাকচুয়েশন একটি বাস্তব ও পরীক্ষালব্ধ ঘটনা, যা আমাদের প্রকৃতিতে অনবরত ঘটে চলেছে৷ অর্থাৎ, শুন্যস্থানে (Vacuum) প্রতিনিয়ত কণা ও তার বিপরীত কণা জন্ম লাভ করছে এবং সাথে সাথেই তারা একে অপরকে নিষ্ক্রিয় করে দিচ্ছে, ঠিক যেমনটি +1 এবং -1 এর যোগ ফল শুণ্য৷ ঠিক তেমনি সমগ্র মহাবিশ্বের যোগফল (ভর ও শক্তি) শুন্য এবং শুন্য থেকে কোনো কিছু উৎপত্তি লাভ করতে স্রষ্টার প্রয়োজন নেই৷ কারণ, মহাবিশ্ব জন্মের আগেও শুন্য ছিল এবং এখনো (যোগফল) শুন্যই আছে!

  • তাদের এই ব্যাখ্যা কি 'সৃষ্টিকর্তা নেই' এমনটা প্রমাণ করতে সক্ষম? আসুন একটু আলোচনা করি৷

সহজ কথায়, শুন্যস্থানে (Vacuum) যে শক্তি বিদ্যমান তাকেই শুন্যস্থানের শক্তি (Vacuum energy) বলে৷ এখন প্রশ্ন হল, এই শুন্যস্থান কতটুকু শক্তি ধারণ করে? সেই পরিমাণ শক্তি কি মহাবিশ্বের সমগ্র ভর তৈরীতে সক্ষম? ভ্যাকুয়াম এনার্জির পরিমাণ হল 10^–9 জুল/ ঘন মিটার৷ আপনি যদি একটি খালি বাক্স কল্পনা করেন, যার দৈর্ঘ, প্রস্থ ও উচ্চতা 1 মিটার, তবে বাক্সটির ভিতর 10^–9 জুল পরিমাণ শক্তি আছে৷ সুতরাং, শক্তির পরিমাণ এতটাই সামান্য, যে তা থেকে মহাবিশ্ব সৃষ্টির জন্য প্রয়োজনীয় কণা অৰ্থাৎ, পয়েন্ট অব সিংগুলারিটি বা মহাকর্ষীয় অদ্বৈত বিন্দু সৃষ্টি হওয়া সম্ভব না৷ কারণ, আকারের দিক থেকে যদিও পয়েন্ট অব সিংগুলারিটি বা মহাকর্ষীয় অদ্বৈত বিন্দু  আকার ছিল 10^-35 মিটার, যার আকার ভার্চুয়াল কণা (ফ্লাকচুয়েশনের মাধ্যমে সৃষ্ট কণা ও প্রতিকণা) এর আকারের সমান বা অনুরূপ হতে পারে; কিন্তু, ভর ও ঘনত্বের দিক থেকে কখনোই তারা সমান, অনুরূপ কিংবা কাছাকাছি হতে পারেনা৷ এমনকি সেটা কল্পনারও বাইরে! কারণ, ভার্চুয়াল কণা বা প্রতিকণার ভর ও ঘনত্ব ফোটনের ভর ও ঘনত্বের সাথে তুলনীয়/কাছাকাছি/অনুরূপ/সমান হতে পারে৷ কিন্তু, পয়েন্ট অব সিঙ্গুলারিটি একটি অতিশয় ক্ষুদ্র বিন্দু হলেও সেটির ভর ও ঘনত্ব অসীম— সমগ্র মহাবিশ্বকে একটি বিন্দুতে সংকুচিত করলে শুণ্য সাইজের অসীম ভর ও ঘনত্বের যে বিন্দুটি পাওয়া যায়৷ সুতরাং, কোয়ান্টাম ফ্লাকচুয়েশনের মাধ্যমেে ফোটন, বড় জোর ইলেক্ট্রন তৈরী হতে পারে; তার চেয়ে বেশি হলে মেনেই নিলাম প্রোটন কিংবা নিউট্রনও তৈরী হতে পারে৷ কিন্তু, তাই বলে অসীম ভরের কোনোকিছু তৈরী হওয়া অসম্ভব!

অসীম ভরের এমন বিন্দু তৈরী হতে হলে (আনুমানিক) 10¹²² ঘন মিটার জায়াগার (Space) ভ্যাকুয়াম এনার্জী একটি বিন্দুতে জড়ো করতে হবে, এক মুহুর্তের জন্য হলেও৷ কিন্তু, তা অসম্ভব! এইখানে আরো মজার বিষয় আছে৷ পর্যবেক্ষণলব্ধ ফলাফল থেকে দেখা যায়, ভ্যাকুয়াম শক্তির পরিমাণ 10^–9 জুল/ ঘন মিটার৷ অথচ, গাণিতিকভাবে প্রাপ্ত ফলাফল থেকে দেখা যায় এই শক্তির পরিমাণ 10^¹¹³ জুল/ ঘন মিটার! সুতরাং, পরীক্ষালব্ধ ফলাফলের সাথে হিসাবকৃত ফলাফল মিলে না! শুধু তাই নয়, বরং ফলাফল দুইটির আকাশ-পাতাল ব্যাবধান; না, বরং তার চেয়েও বেশি ব্যবধান! এটি বিজ্ঞানের ইতিহাসে পরীক্ষালব্ধ ফল ও তাত্ত্বিক ফলাফলের ভিতর সবচেয়ে বড় বৈষম্য এবং সবচেয়ে নিকৃষ্ট তাত্ত্বিক পর্যালোচনা (the worst theoritical prediction) হিসেবে বিবেচিত হয়! [দেখুন: Cosmological constant problem - Wikipedia]

Using the upper limit of the cosmological constant, the vacuum energy of free space has been estimated to be 10^−9 joules (10^−2 ergs) per cubic meter. However, in both quantum electrodynamics (QED) and stochastic electrodynamics (SED), consistency with the principle of Lorentz covariance and with the magnitude of the Planck constant suggest a much larger value of 10^113 joules per cubic meter. This huge discrepancy is known as the cosmological constant problem.

গাণিতিকভাবে হিসাবকৃত ফলাফল (10^113 জুল/ ঘনমিটার) থেকে প্রাপ্ত এই পরিমাণ শক্তি যদি ভ্যাকুয়াম শক্তি হিসেবে বাস্তবে থাকতো, তবে হয়তো শুণ্য থেকেই পয়েন্ট অব সিঙ্গুলারিটি তথা, বিগ ব্যাং সম্ভব হতো৷ কিন্তু, বাস্তবে এই শক্তি প্রায় 10^120 গুণ কম! সুতরাং, কীভাবে সম্ভব?

আবার মনে করুন, না হয় মেনেই নিলাম, কোয়ান্টাম ফ্লাকচুয়েশনের মাধ্যমে অসীম ভর ও ঘনত্বের এবং (প্রায়) শুন্য আয়তনের পয়েন্ট অব সিঙ্গুলারিটি মুহুর্তের জন্য তৈরী হয়ে গেলো৷ সেটাই কি যথেষ্ঠ বিগ ব্যাং ঘটানোর জন্য? সেটা যে পরবর্তি মুহুর্তে পয়েন্ট অব সিঙ্গুলারিটির প্রতিকণার (ধরে নিন একটি ধনাত্মক ও অন্যটি ঋণাত্মকপ কণা) সাথে মিলিত হয়ে নিষ্ক্রিয় হয়ে যাবেনা, সেটা কীভাবে সম্ভব?

কোনো কোনো সায়েন্টিস্ট বলেন, "কোয়ান্টাম ফ্লাকচুয়েশনের মাধ্যমে যে পজেটিভ কণা (পয়েন্ট অব সিঙ্গুলারিটি) তৈরী হয়েছিল, তা থেকে মহাবিশ্বের সকল পদার্থ ও তার ভর তৈরী হয় এবং তার প্রতিকণা তথা নেগেটিভ কণা তৈরী হয়েছিল, তা মহাকর্ষ বল হিসেবে বিদ্যমান৷ ফলে, সকল পদার্থ ও এদের মহাকর্ষ বলের যোগফল শুণ্য৷" অতএব, শুন্য থেকেই বিশ্বভ্রহ্মাণ্ড সৃষ্টি হয়েছে! আইনস্টাইনের ভর শক্তির সমীকরণ থেকে আমরা জানি, E=mc². অর্থাৎ, পদার্থকে শক্তিতে রূপান্তরিত করা যায়৷ অনুসিদ্ধান্ত হিসেবে বলা যায়, শক্তি হল পদার্থেরই একটি রূপ৷ সুতরাং, পদার্থকে শক্তির সাথে যোগ করতে বাধা নেই৷ আর, এটিকে কাজে লাগিয়েই অনেকে ধনাত্মক পদার্থ ও ঋণাত্মক মহাকর্ষ যোগ করে থাকেন৷ কিন্তু, এই ধারণাটি কতটুকু যৌক্তিক? আসুন পর্যালোচনা করি….

মনে করুন, (তাদের কথা অনুসারে) মহাবিশ্বের ভর M এবং মহাবিশ্বে ক্রিয়াশীল মহাকর্ষ বলের থেকে প্রাপ্ত শক্তি H. অতএব, তাদের ভাষ্যমতে

Mc²=–H [Mc²= সমগ্র মহাবিশ্বের ভর থেকে প্রাপ্ত শক্তি]

বা, Mc²+H= 0

এখন, যদি মহাবিশ্বের কোনো বস্তু, মনে করুন পৃথিবীর সমগ্র ভরকে যদি শক্তিতে রূপান্তরিত করা হয়, তবে উৎপন্ন শক্তির পরিমাণ –E=mc², যেখানে m হল পৃথিবীর ভর৷ [শক্তিকে যেহেতু ঋণাত্মক হিসেবে ধরা হয়েছে, তাই H এবং E এর পূর্বে (–) ঋণাত্মক চিহ্ন যোগ করা হয়েছে]৷ কিন্তু, পৃথিবীর ভরকে শক্তিতে রূপান্তরিত করার ফলে মহাবিশ্বের ভর কমে গিয়ে হয় M–m. আবার, –E=mc² পরিমাণ শক্তি উৎপন্ন হওয়ার ফলে মহাবিশ্বে মোট শক্তির পরিমাণ বেড়ে গিয়ে দাঁড়ায় (–H) + (–E)= –H–E;

কিন্তু, আমরা জানি, কণা ও তার বিপরীত কণার পরিমাণ সর্বদা সমান এবং এদের সমষ্টি শুন্য (0). শক্তির বেলায় ও একই কথা প্রযোজ্য৷ ধনাত্মক রাশির পরিমাণ ঋণাত্মক রাশি থেকে কম বা বেশি হতে পারেনা৷ পৃথিবীকে যদি শক্তিতে রুপান্তরিত করা হয়, তখন, ধনাত্মক রাশির পরিমাণ কমে যায় এবং ঋণাত্মক শক্তির পরিমাণ বেড়ে যাওয়ার ফলে সমীকরণ দাঁড়ায়—

(M–m)c²= –(H+E)

বা, Mc²–mc²= –H–E

বা, Mc²–mc²= Mc²+mc²

বা, 2mc²=0

বা, m=0

কিন্তু, পৃথিবীর ভর m= 0 হওয়া অসম্ভব৷ সুতরাং, (M–m)c²= –(H+E) হওয়াও অসম্ভব৷ এবং, পূর্বে যেগুলো ধরে নিয়ে হিসাব করা হয়েছে, সেগুলোও বাস্তবে অসম্ভব! যেমন আমরা ধরে নিয়েছি Mc²=–H এবং পৃথিবীর ভর থেকে উৎপন্ন ঋণাত্মক শক্তি mc²=–E, এগুলোও বাস্তবে সম্ভব হতে পারেনা! অর্থাৎ, শক্তি ভরের ঋণাত্মক রূপ হতে পারেনা৷ সুতরাং, এই পদ্ধতিতেও শুণ্য থেকে মহাবিশ্ব উৎপন্ন হতে পারেনা!

সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল,

  1. কোয়ান্টাম ফ্লাকচুয়েশন ঘটবার জন্য কোয়ান্টাম ভ্যাকুয়াম বা কোয়ান্টাম শুণ্যস্থান দরকার৷ যা বর্তমান মহাবিশ্ব জুড়েই বিস্তৃত৷ সুতরাং, সমগ্র মহাবিশ্ব প্রতিনিয়ত এই ফ্লাকচুয়েশন ঘটে চলেছে৷ এই প্রক্রিয়ায় যদি পয়েন্ট অব সিঙ্গুলারিটি একবার উৎপন্ন হয় এবং তা থেকে বিগ ব্যাং হয়, তাহলে মহাবিশ্বের ভিতরে সমগ্র স্থানে যে কোয়ান্টাম ফ্লাকচুয়েশন ঘটে চলেছে, তা থেকে আবার কেন সেরকম অসীম ভর ও ঘনত্বের কোনো বিন্দু পুণরায় তৈরী হচ্ছেনা এবং তা থেকে মহাবিশ্বের ভিতরেই কেন নতুন কোনো বিগ ব্যাং ঘটছেনা?
  2. তারপর, অনেকে বাবল (Bubble) থিওরী, পটেটো থিওরী দিচ্ছেন৷ Bubble theory অনুসারে আমাদের মহাবিশ্ব তৈরীর জন্য যে কোয়ান্টাম ভ্যাকুয়াম দরকার তা অন্য কোনো মহাবিশ্বের শুণ্যস্থান থেকে প্রাপ্ত৷ সেই অন্য কোনো মহাবিশ্ব তৈরীর জন্য যে কোয়ান্টাম ভ্যাকুয়াম দরকার এবং কোয়ান্টাম ফ্লাকচুয়েশন দরকার, সেটাও অন্য কোনো মহাবিশ্ব থেকে প্রাপ্ত৷ ফলে সামগ্রিক রূপটি আসলে নিম্নরূপ দাখায়—
কোয়ান্টাম ফ্লাকচুয়েশন

কিন্তু, তেমনটাই যদি হতো, তবে আমাদের মহাবিশ্বের ভিতরও বিগ ব্যাং ঘটতে দেখা যেত৷ কিন্তু, সেরকম কিছু ঘটার প্রমাণ বিজ্ঞানীরা পাননি৷ হ্যাঁ, তবে সুপারনোভা তারা লক্ষ করেছেন৷ তবে তা বিগ ব্যাং নয়৷

3. নাস্তিকদের মূল বিষয়ে, তথা গোড়ায় গলদ: কোয়ান্টাম ফ্লাকচুয়েশন কি "Something from nothing!" এই মতবাদকে স্বিকৃতী দেয়? আসুন পর্যালোচনা করা যাক:

পদার্থবিজ্ঞান আমাদের বলে যে, শুন্যস্থান (Vacuum) একেবারেই শুন্য (Absolutely nothing) না৷ মহাবিশ্বের শুন্যস্থান বলতে কোয়ান্টাম ভ্যাকুয়ামকে (Quantum Vacuum) বুঝায়৷ আর একেবারেই শুন্য বলতে 'কিছুই না' (Absolutely nothing) বুঝায়, যেখানে কোয়ান্টাম ভ্যাকুয়ামও অনুপস্থিত৷ খুব সম্ভবত, আমাদের মহাবিশ্বের বাইরে এমন Absolutely nothing বিদ্যমান, যেখানে কোয়ান্টাম ভ্যাকুয়াম, কোয়ান্টাম ফ্লাকচুয়েশন কিংবা ভ্যাকুয়াম এনার্জী অনুপস্থিত৷

আগেই বলেছি, কোয়ান্টাম ফ্লাকচুয়েশন ঘটার জন্য কোয়ান্টাম ভ্যাকুয়াম দরকার এবং সেটা হল মহাবিশ্বে বিদ্যমান শুন্যস্থান৷ এই শুন্যস্থান (Space) বা ভ্যাকুয়ামে (Vacuum) রয়েছে ভ্যাকুয়াম এনার্জী, যার ফলে এখানে কোয়ন্টাম ফ্লাকচুয়েশন হওয়া সম্ভব৷ কিন্তু, যখন কিছুই ছিলনা, অর্থাৎ, যেখানে ভ্যাকুয়াম এবং ভ্যাকুয়াম এনার্জী, সবই অনুপস্থিত (Absent), সেখানে কি কোনো ধরণের ফ্লাকচুয়েশন হওয়া সম্ভব? কিংবা, সেরকম অবস্থা থেকে কি বিগ ব্যাং হওয়া সম্ভব? বিগ ব্যাং থিওরি অনুসারে সময় (Time), স্থান (Space), মহাকর্ষ (Gravity) সবকিছুই একটি বিন্দুতে কেন্দ্রিভুত ছিল৷ তাহলে সেই বিন্দুর বাইরে যেটা থাকে সেটাই হল 'কিছুই না' বা Absolutely nothing. কারণ, Vacuum কিংবা Space বিগ ব্যাং এর পরই জন্ম লাভ করেছে৷

কোয়ান্টাম ফ্লাকচুয়েশন

ছবিতে বিগ ব্যাং শুরুর (0 তম সেকেন্ডের) অবস্থার একটা প্রতিকী ছবি দেখানো হয়েছে, বোঝার সুবিধার্থে৷

এখন কল্পনা করুন, ঠিক একই রকম একটা ছবি, যেখানে মাঝখানের সাদা বিন্দুটি অর্থাৎ, অদ্বৈত বিন্দুটিও নেই৷ চিত্রটি তখন সম্পূর্নরূপে কালো হবে, যেখানে কোনো শুন্যস্থান (Space) নেই, কোনো ভ্যাকুয়াম (Vacuum) নেই, কোনো ভ্যাকুয়াম এনার্জি (Vacuum energy) ও নেই! অর্থাৎ, একেবারেই খালি/ শুণ্য (Absolutely nothing)৷ সবকিছুই সেখানে অনুপস্থিত (Absent). এমতাবস্থায় আপনি মহাবিশ্বের উৎপত্তির ব্যাখ্যা করুন, দেখি কেমন পারেন! কারণ, কোয়ান্টাম ফ্লাকচুয়েশন তো আমাদের মহাবিশ্বের ভিতরকার ঘটনা৷ মহাবিশ্বের বাইরে কিংবা, মহাবিশ্বের অনুপস্থিতিতে তা কীভাবে ঘটতে পারে? সুতরাং, Something from nothing যে নাস্তিকদের স্লোগান এবং তারা এটা নিয়ে যে খুব মেতে আছে, সেই 'nothing' আসলে প্রকৃত 'nothing' বা 'Absolute nothing' নয়৷ বরং, আমরা vacuum বা শুন্যস্থানকে যে 'nothing' বা empty space মনে করে এসেছি (অর্থাৎ, যেখানে ভ্যাকুয়াম এনার্জী ও কোয়ান্টাম ফ্লাকচুয়েশন উভয়ই বিদ্যমান), তারা 'Something from nothing' বলতে আসলে এই 'nothing' কে বুঝিয়ে থাকে৷ বস্তুত Absolutely nothing থেকে কোনো কিছুই (something/anything) উৎপন্ন তে পারেনা৷ অর্থাৎ, একটা সময় কোনোকিছু (Something) অনুপস্থিত (absent) বা অনস্তিত্ত্বশীল (Non-existant) ছিল, কোনোভাবেই তা অস্তিত্ব (Existant) প্রকাশ করতে পারেনা; যদি না কোনো স্রষ্টা সেটিকে অস্তিত্ব দান না করেন৷ নাস্তিকদের অধিনায়ক Lawrence Krauss আরো একটা কথা বলে থাকেন, "Nothing is something." গাণিতিক পদ্ধতিতে "Something from nothing" বাক্যটিতে nothing= something বসিয়ে পাই "Something from something" 😀😁

অর্থাৎ, কিছু হতে হলে অবশ্যই কিছু দরকার৷ আর যদি ''nothing' শব্দটি ব্যবহার করতেই হয়, তবে তাদের স্লোগানটিকে সংস্কার করে "Something from what we knew to be nothing." বলা যেতে পারে৷ কারণ, আমরা যেটাকে শুণ্য বলে জেনে এসেছি, সেটা আসলেই শুণ্য ছিলনা৷ কাজেই, সেখান থেকে যদি সমগ্র বিশ্বভ্রহ্মাণ্ডও সৃষ্টি হয়, তবে সেটা প্রকৃত nothing বা Absolutely nothing থেকে সৃষ্টি হয়নি, বরং Something থেকেই সৃষ্টি হল৷

অতঃপর, যে সকল বিজ্ঞানীগণ জীবনভর পরিশ্রম করে বিজ্ঞানের তত্ত্বগুলি আবিষ্কার করছেন, তাদেরকে শ্রদ্ধা জানাই৷ তাদের তত্ত্বগুলিকে আক্রমণ করা এবং ভূল প্রমাণ করা আমার উদ্দেশ্য ছিলনা৷ বরং, আমার উদ্দেশ্য ছিল নাস্তিক্যবাদ যে আসলেই ভিত্তিহীন, অসার মতবাদ ও ধ্যানধারণার উপর প্রতিষ্ঠিত, সেটা প্রমাণ করা৷

যারা শুন্য থেকে সবকিছুর সূচনা হওয়ার দাবী করেন, তাদের দাবী যদি মেনেও নেওয়া হয়, তবে তারা এইখানে এসে একেবারেই আটকে যাবেন৷ তাদের কথামত না হয় ধরেই নিলাম কোয়ান্টাম ফ্লাকচুয়েশনের মাধ্যমে মহাবিশ্বের সকল পদার্থ জন্ম লাভ করেছে; তা থেকে গ্যালাক্সি, নক্ষত্র, গ্রহ-উপগ্রহ সৃষ্টি হয়েছে৷ কিন্তু, সেগুলো নিছক প্রাণহীন 'জড়' পদার্থ৷ কার্বন, নাইট্রোজেন, অক্সিজেন, ফসফরাস, সালফার, হাইড্রোজেন, এগুলো রসায়নবিদ্যার অংশ৷ রসায়নবিদ্যা থেকে কীভাবে জীববিদ্যার সূচনা হল, তার কোনো জবাব বিজ্ঞানীদের কাছে নেই!


No comments:

Post a Comment

ধন্যবাদ

বৈশিষ্ট্যযুক্ত পোস্ট

যজুর্বেদ অধ্যায় ১২

  ॥ ও৩ম্ ॥ অথ দ্বাদশাऽধ্যায়ারম্ভঃ ও৩ম্ বিশ্বা॑নি দেব সবিতর্দুরি॒তানি॒ পরা॑ সুব । য়দ্ভ॒দ্রং তন্ন॒ऽআ সু॑ব ॥ য়জুঃ৩০.৩ ॥ তত্রাদৌ বিদ্বদ্গুণানাহ ...

Post Top Ad

ধন্যবাদ