নাস্তিকতা অভিশাপ - ধর্ম্মতত্ত্ব

ধর্ম্মতত্ত্ব

ধর্ম বিষয়ে জ্ঞান, ধর্ম গ্রন্থ কি , হিন্দু মুসলমান সম্প্রদায়, ইসলাম খ্রীষ্ট মত বিষয়ে তত্ত্ব ও সনাতন ধর্ম নিয়ে আলোচনা

धर्म मानव मात्र का एक है, मानवों के धर्म अलग अलग नहीं होते-Theology

সাম্প্রতিক প্রবন্ধ

Post Top Ad

স্বাগতম

07 April, 2021

নাস্তিকতা অভিশাপ

নাস্তিকতা অভিশাপ

“ঈশ্বর আছে বলা যেমন বিশ্বাস, নেই বলাও তেমনি একটি বিশ্বাস।” বা “নাস্তিকদের ‘বিশ্বাসের’ ভিত্তিতে একটি বিশ্বাস বা আরেকটি ধর্ম হিসেবে চিহ্নিত করার চেষ্টা। এগুলো ভুল ধারনা, কিছু নাস্তিকও নাস্তিকতা সম্পর্কে পর্যাপ্ত পড়ালেখার অভাবের কারণে এই ভুলটি বলে থাকেন।ভারতবর্ষে উদ্ভূত দর্শনসমূহকে প্রধানত দুটি ভাগে ভাগ করা হয়  আস্তিকনাস্তিক। যে দর্শন  বেদকে প্রামাণ্য গ্রন্থ হিসেবে স্বীকার করে তা আস্তিক। সাংখ্য, যোগ, ন্যায়, বৈশেষিক, মীমাংসা ও বেদান্ত এই ছয়টি আস্তিক দর্শন এবং এগুলিকেই একত্রে বলা হয় ষড়দর্শন।

আর  চার্বাক, বৌদ্ধ ও  জৈন দর্শন বেদে বিশ্বাসী নয় বলে এগুলি নাস্তিক দর্শন হিসেবে পরিচিত। উলে­খ্য যে, আস্তিক-নাস্তিকের ক্ষেত্রে ঈশ্বরে বিশ্বাস-অবিশ্বাস কোনো কারণ নয়, যেমন ষড়দর্শনের মধ্যে সাংখ্য ও মীমাংসা জগতের স্রষ্টারূপে ঈশ্বরের অস্তিত্বে বিশ্বাস করে না, অথচ উভয়ই বেদের প্রামাণ্য স্বীকার করে। বৈশেষিক দর্শনেও সরাসরি ঈশ্বরের কথা নেই। সাংখ্য ও যোগ জগতের স্রষ্টা হিসেবে পুরুষ ও প্রকৃতিকে স্বীকার করলেও যোগ ঈশ্বরের স্বতন্ত্র সত্তায় বিশ্বাসী। ন্যায় আত্মা ও ঈশ্বরে বিশ্বাসী হয়েও জগতের স্বতন্ত্র সত্তাকে স্বীকার করে এবং বেদান্ত ঈশ্বর (সগুণ ব্রহ্ম) তথা ব্রহ্মে (নির্গুণ) বিশ্বাসী; বেদান্তমতে ব্রহ্মই একমাত্র সত্য, আর সব মিথ্যা। ফলে দেখা যায় যে, একই উৎস থেকে জন্ম হলেও আস্তিক দর্শনগুলির মধ্যে কোনো কোনো বিষয়ে অমিল রয়েছে এবং জগৎ ও জীবন সম্পর্কে সেগুলি ভিন্ন ভিন্ন মতামত পোষণ করে।

চার্বাক দর্শন না নাস্তিক দর্শন জড়বাদী। চার্বাক বা নাস্তিক দর্শন যে অতি প্রাচীন। প্রাচীন বৌদ্ধ গ্রন্থ ও সাহিত্যে,মহাভারতে এই মতের উল্লেখ পাওয়া যায়। জড়বাদী দর্শন ঘোরতর বেদ-বিরোধী এবং বেদ নিন্দুক তাই মনুস্মৃতি তে মনু মহারাজ বলেছেন "নাস্তিকো বেদনিন্দুকঃ"-অর্থাৎ যে বেদ নিন্দা করে (অপমান, ত্যাগ অথবা বিরূদ্ধাচরণ)। কেউ যদি চেতন-সত্ত্বা কে অস্বীকার করে জড়বাদী হয়, তা তার বুদ্ধি জ্ঞানের সীমাবদ্ধতা।

চর্বাক মতে, পাপ নেই,পুণ্য নেই। পাপ-পুন্যের কর্মফল ভোগও নেই। অতিপ্রাকৃত কিছুই নেই। ঐহিক ইন্দ্রিয় সুখই একমাত্র সুখ। দেহের মৃত্যুর পর আর কিছুই থাকে না। ইন্দ্রিয়লিপ্সু সাধারণ মানুষের কাছে চার্বাক নিতি খুবই হৃদয়গ্রাহী বা মনোরম, বর্ত্তমানে বিশেষত যারা ইসলাম ত্যাগ করে দিশেহারা (দিগ্‌ভ্রান্ত)। সহজ কথায় বেদ, উপনিষদ, ব্রাহ্মনগ্রন্থ, আয়ুর্বেদ.. ভারতীয় দর্শনের মূল চিন্তাভাবনা থেকে চার্বাক, নাস্তিকতা সম্পূর্ণরূপে বিচ্ছিন্ন। এই দর্শনের কথা হল-কামের (ইন্দ্রিয়-সুখ) চরিতার্থই মানুষের জীবনের চরম লক্ষ্য বা পরমপুরুষার্থ যা অন্যান্য দর্শন ও বৈদিক শাস্ত্রে ত্রিবিধ দোষ থেকে মুক্তির উপায় বা মোক্ষ প্রাপ্তির কথা বলা হয়েছে। এই দর্শন বলে-যতদিন বাঁচবে ভোগ-সুখে বেঁচে থাক, প্রয়োজন হলে ঋণ করেও ঘি খাও। জীবনে খাও-দাও ফূর্ত্তি কর, কেননা আগামীকালই তোমার মৃত্যু হতে পারে। ভবিষ্যতের না-পাওয়া সুখের মিথ্যা ছলনায় বর্ত্তমানকে ত্যাগ করো না। বাকী কিছু বৈদিক মান্যতা গ্রহণ করে তাঁরা এটা মানে সুখই স্বর্গ, দুঃখই নরক কিন্তু সুখের পরিভাষা তাঁদের আলাদা।

এই মতে দেহাতিরিক্ত আত্মা নেই,দেহের সুখই আত্মার সুখ। কোন কারণেই নিজেকে ইহলৌকিক সুখ থেকে বঞ্চিত করো না। সাধারণ লোকের কাছে এই ধরনের কতা শ্রুতিমধুর বা চারুবাক্ বলে এই দর্শনের নাম "চার্বাক" হয়েছে। তবে অনেক পন্ডিতের মতভেদ আছে  "চার্বাক" নামের উৎপত্তি বিষয়ে।

যেমনঃ "চর্ব"-ধাতুর অর্থ হল "খাওয়া দাওয়া করা বা চর্বণ করা"। এই দর্শনের খাওয়া দাওয়াকে, ইন্দ্রিয়-সুখকে, জীবনের পরমপুরুষার্থ বা কাম্যবস্তুরূপে মনে করে বলে এর নামকরণ "চার্বাক" হয়েছে। চার্বাকের একটি নীতিবাক্য হল "যাবজ্জীবেৎ সুখং জীবেৎ ঋনং কৃত্বা ঘৃতং পিবেৎ"। আবার অনেকের মতে এই দর্শনের প্রতিষ্ঠাতা দেবগুরু বৃহস্পতি। চারু শব্দের একটা অর্থও বৃহস্পতি। তাহলে "চারুর্ বাক্" অর্থাৎ "বৃহস্পতির কথা"। পৌরাণিক কাহিনি অনুসারে এই দর্শন অনুসরণ করে অসুরকুল যাতে সমূলে ধ্বংস হয় তার আয়োজন। এই দর্শনের বিভিন্ন সম্প্রদায় আছে যথাঃ বৈতন্ডিক, ধূর্ত, সুশিক্ষিত।

এই জ্ঞানতত্ত্বের সার কথা হলঃ (ক) প্রত্যক্ষই একমাত্র প্রমাণ [প্রত্যক্ষমেকৈব্-Perception is the only source of Knowledge], চার্বাকের এই মত মানলে আমাদের দৈনন্দিন জীবনযাত্রাই অসম্ভব হয়ে পড়ে। দৈনন্দিন জীবে ধূম দেখে বহ্নির অনুমান না করলে চলে না। লোকযাত্রা নির্বাহের জন্য তাই প্রত্যক্ষ-অতিরিক্ত অনুমানকেও স্বীকার করতে হয়। (খ) অনুমান প্রমাণ নয়, (গ) আগম বা শব্দ প্রমাণ নয়, (ঘ) বেদবাক্য, শ্রুতিবাক্য প্রভৃতি নির্ভরযোগ্য় নয় কোন বিজ্ঞানীর শ্রুতি বাক্য বা অনুমান তাঁর মান্যতাদেয়। প্রত্যক্ষের অর্থ প্রথমত অনুভব {ইন্দ্রিয়-অভিজ্ঞতা, ইন্দ্রিয়ের সঙ্গে বিষয়ের সন্নিকর্ষ(যোগ) জনিত অনুভব}, দ্বিতীয় প্রত্যক্ষ অপরোক্ষ অনুভব [টেবিল দেখে টেবিলের যে জ্ঞান তা অন্য কোন জ্ঞানের ওপর নির্ভর করে না],তৃতীয় প্রত্যক্ষ সম্যক অনুভব [সম্যক অর্থে সংশয়শূন্য ও বিপর্যয়শূন্য। অনিশ্চিত জ্ঞান হচ্ছে সংশয়। যেমন- ঐ বস্তুটি মূর্ত্তি, না মানুষ ? মিথ্যা জ্ঞানকে বলে "বিপর্যয়"-আকাশে দুটি চাঁদের জ্ঞান]। প্রত্যক্ষ দ্বিবিধ-বাহ্যপ্রত্যক্ষ [চক্ষু, কর্ণ, নাসিকা, জিহ্বা ও ত্বক-এই পাঁচটি বাহ্য ইন্দ্রিয়ের সাহায্যে বাইরের জগতের যে সাক্ষাৎ] ও মানসপ্রত্যক্ষ [মনের সাহায্যে সুখ, দুঃখ প্রভৃতি মানসিক অবস্থার সাক্ষাৎ]।

ন্যায় দর্শন বা বৈশেষিক দর্শনের সমস্ত প্রামাণ কে চার্বাক দর্শন গ্রহন করে না, বৈদিক দর্শন শাস্ত্রে "প্রত্যক্ষ" শব্দটি-কে যেমন যথার্ত জ্ঞান লাভের উপায় অর্থে ব্যবহার করা হয় তেমনি আবার 'যথার্থজ্ঞান' অর্থেরও ব্যবহার করা হয়। অর্থাৎ "প্রত্যক্ষ" শব্দটি একই সঙ্গে "প্রমাণ" এবং "প্রমা" অর্থে ব্যবহার করা হয়।

চার্বাক মতে, প্রত্যক্ষ আবার সবিকল্প অথবা নির্বিকল্প হতে পারে[যেমন- আমি "একটা কিছু" দেখেছি, কিন্তু সেটা কি বস্তু, সে জ্ঞান একনও হয়নি]। যাই হোক অন্যান্য দর্শন শাস্ত্রে প্রত্যক্ষকে প্রমাণরূপে স্বীকার করলেও একমাত্র প্রমাণরূপে স্বীকার করেন না। চার্বাক মতে পরোক্ষ জ্ঞান অস্পষ্ট ও অযথার্থ, এই যুক্তি তে প্রত্যক্ষ জ্ঞানকেও অযথার্থ বলতে হয়, কেননা প্রত্যক্ষজ্ঞানও পরোক্ষ। প্রত্যক্ষ জ্ঞান ইন্দ্রিয়-নির্ভর, তাই তা পরোক্ষ তা অযথার্থই।

আবার দেখুন নাস্তিক চার্বাক মতে "সকল ক্ষেত্রেই প্রত্যক্ষ জ্ঞান যথার্থ"-সকল ক্ষেত্রেই বলতে বর্তমান,অতীত ও ভবিষ্যতের প্রত্যক্ষ-জ্ঞান বোঝায়, যা প্রত্য়ক্ষের দ্বারা যাচাই করা যায় না। তাহলে মানতে হয় যে, চার্বাকরা প্রত্যক্ষ ছাড়াও অনুমানকে প্রমাণরূপে স্বীকার করেছেন। চার্বাক মতে, 'অনুমান ও শব্দ" প্রমাণ নয়, যেখানে ঋষি বাক্যও বৈদিক সংস্কৃতিতে শব্দ প্রমাণ মানা হয়। চার্বাক মতে অনুমান ও শব্দ-প্রমাণ অনেক সময় ভ্রান্ত জ্ঞান দেয়। একই যুক্তিতে প্রত্যক্ষেও প্রমাণরূপে প্রহণ করা যায় না, কেননা প্রত্যক্ষজ্ঞানও অনেক সময় ভ্রান্ত হয়। রুজ্জুতে সর্পভ্রম হয়, শুক্তিতে (মুক্তো) রজত (রৌপ)-ভ্রম হয়। 

চার্বাক মতে অনুমান প্রমাণ নয়, কেননা অনুমানের দ্বারা "প্রমা" অর্থাৎ নিঃসন্দিগ্ধ জ্ঞানলাভ হয় না। ধূম দেখে বহ্নির যে জ্ঞান তা অনুমানলব্ধ জ্ঞান। এ জ্ঞান প্রত্যক্ষজ্ঞানের মতে কখনই নিঃসন্দগ্ধ হতে পারে না। অনুমান ব্যাপ্তিজ্ঞানের ওপর নির্বর করে। ব্যপ্তি হল হেতু ও সাধ্যের মধ্যে নিয়ত সহচর-সম্বন্ধ। দূরের পাহাড়ে ধূম দেখে যখন "সেখানে আগুন আছে" বহা হয়, তখন তা হল অনুমান। এখানে অনুমান প্রক্রিয়াটি নিম্নরূপঃ

ঐ প্রর্বতটি ধূমযুক্ত

যে যে বস্তু ধূমযুক্ত সেই সেই বস্তু বহ্নিযুক্ত

পর্বতটি বহ্নিযুক্ত।

প্রতিটি অনুমানের ক্ষেত্রে তিনটি পদার্থ থাকে-পক্ষ, হেতু ও সাধ্য (যা অনুমিত হয় তা সাধ্য)। এখানে 'বহ্নি" হচ্ছে সাধ্য, কেননা বহ্নি অনুমিত হয়েছে। যার সম্বন্ধে অনুমিত হয় তা পক্ষ। এখানে "পর্বত" সম্বন্ধে অনুমিত হয়েছে। তাই পর্বত হচ্ছে "পক্ষ"। যার সাহায্যে বা য়ার ওপর নির্বর করে অনুমিত হয় তা হেতু। এখানে ধূম হচ্ছে "হেতু", কেননা ধূম-প্রত্যক্ষের ওপর নির্ভর করে পর্বতে বহ্নি অনুমিত হয়েছে।হেতু ও সাধ্যের নিয়ত সহচর-সম্বন্ধ হল ব্যপ্তি। হেতু ও সাধ্যের 'নিয়ত সম্বন্ধ" বলতে বোঝায়- যেখানে হেতু সেকানে সাধ্য এবং এমন কোন ক্ষেত্রে নেই যে, হেতু আছে কিন্তু সাধ্য নেই। উল্লিখিত উদাহরণে ধূম (হেতু) ও বহ্নি (সাধ্য) মধ্যে নিয়ত সাহচর্য বা ব্যপ্তি-সম্বন্ধ আছে। যেখানে ধূম আছে সেখানে বহ্নি আছে এবং এমন কোন ক্ষেত্র নেই যেকানে ধূম আছে কিন্তু বহ্নি (আগুন) নেই। 


নাস্তিক দর্শনগুলি ঈশ্বরে বিশ্বাস করে না; সেগুলি অনাত্মবাদী ও জড়বাদী। চার্বাকদের মতে প্রত্যক্ষই জ্ঞানলাভের একমাত্র উপায় এবং যেহেতু ঈশ্বর প্রত্যক্ষযোগ্য নন, সেহেতু তাঁর কোনো অস্তিত্ব নেই। বৌদ্ধদর্শনের আলোচ্য বিষয় মানবজীবন; মানুষের দুঃখমোচনই এ দর্শনের একমাত্র লক্ষ্য। বৌদ্ধমতে জগতের সবকিছু ক্ষণস্থায়ী, পরিবর্তনই জগতের একমাত্র সত্য; যেহেতু কোনো কিছুই শাশ্বত নয়, সেহেতু নিত্য আত্মা বলতেও কিছু থাকতে পারে না। জৈনরা দ্বৈতবাদে বিশ্বাসী। এ দর্শনে দ্রব্যসমূহকে ‘অস্তিকায়’ ও ‘নাস্তিকায়’ নামে দুই শ্রেণীতে ভাগ করা হয়েছে। যার বিস্তৃতি ও কায় (দেহ) আছে তা অস্তিকায়, যথা জীব ও অজীব (জড়) এবং যার বিস্তৃতি ও কায় নেই তা নাস্তিকায়, যথা কাল (time)। বঙ্গদেশে উপরিউক্ত দর্শনসমূহের প্রত্যেকটিরই কম-বেশি চর্চা হয়েছে এবং এখনও গুরুপরম্পরা ও প্রাতিষ্ঠানিক পর্যায়ে হচ্ছে; তবে ন্যায়, বিশেষত নব্যন্যায়ের চর্চার জন্য এক সময় এদেশ সমগ্র ভারতে বিখ্যাত ছিল।

নাস্তিক্যবাদ বিশ্বাস নয় বরং অবিশ্বাস এবং যুক্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত। বিশ্বাস নয় বরং বিশ্বাসের অনুপস্থিতিই এখানে মুখ্য। ইংরেজি ‘এইথিজম’(Atheism) শব্দের অর্থ হল নাস্তিক্য বা নিরীশ্বরবাদ। এইথিজম শব্দটির উৎপত্তি হয়েছে গ্রিক ‘এথোস’ (ἄθεος) শব্দটি থেকে। শব্দটি সেই সকল মানুষকে নির্দেশ করে যারা ঈশ্বরের অস্তিত্ব নেই বলে মনে করে এবং প্রচলিত ধর্মগুলোর প্রতি অন্ধবিশ্বাস কে যুক্তি দ্বারা ভ্রান্ত বলে প্রমাণ করে। দিনদিন মুক্ত চিন্তা, সংশয়বাদী চিন্তাধারা এবং ধর্মসমূহের সমালোচনা বৃদ্ধির সাথে সাথে নাস্তিক্যবাদেরও প্রসার ঘটছে। অষ্টাদশ শতাব্দীতে সর্বপ্রথম কিছু মানুষ নিজেদের নাস্তিক বলে স্বীকৃতি দেয়। বর্তমান বিশ্বের জনসংখ্যার ২.৩% মানুষ নিজেদের নাস্তিক বলে পরিচয় দেয় এবং ১১.৯% মানুষ কোন ধর্মেই বিশ্বাস করে না। জাপানের ৬৪% থেকে ৬৫% নাস্তিক অথবা ধর্মে অবিশ্বাসী। রাশিয়াতে এই সংখ্যা প্রায় ৪৮% এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন এ ৬% (ইতালী) থেকে শুরু করে ৮৫% (সুইডেন) পর্যন্ত। পশ্চিমের দেশগুলোতে নাস্তিকদের সাধারণ ভাবে ধর্মহীন বা পরলৌকিক বিষয় সমূহে অবিশ্বাসী হিসেবে গণ্য করা হয়। কিন্তু বৌদ্ধ ধর্মের মত যেসব ধর্মে ঈশ্বরের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করতে হয় না, সেসব ধর্মালম্বীদেরকেও নাস্তিক হিসেবে বিবেচনা করা হয়। কিছু নাস্তিক ব্যক্তিগত ভাবে ধর্মনিরপেক্ষতা, হিন্দু ধর্মের দর্শন, যুক্তিবাদ, মানবতাবাদ এবং প্রকৃতিবাদে বিশ্বাস করে। নাস্তিকরা কোন বিশেষ মতাদর্শের অনুসারী নয় এবং তারা সকলে বিশেষ কোন আচার অনুষ্ঠানও পালন করে না। অর্থাৎ ব্যক্তিগত ভাবে যে কেউ, যে কোন মতাদর্শে সমর্থক হতে পারে,নাস্তিকদের মিল শুধুমাত্র এক জায়গাতেই, আর তা হল ঈশ্বরের অস্তিত্ব কে অবিশ্বাস করা।

ইংরেজিতে Believe, Trust, Faith এই তিনটি শব্দের অর্থ আগে জেনে নেয়া যাক।

Believe (অনুমান, বিশ্বাস, বিশেষভাবে প্রমাণ ছাড়াই মেনে নেয়া)
1. accept that (something) is true, especially without proof.
2. hold (something) as an opinion; think.
যেমন, ভুতে বিশ্বাস করা। এলিয়েনে বিশ্বাস করা। অথবা, বিশ্বাস করা যে, অতীতে আমাদের পুর্বপুরুষ স্বর্গ থেকে নেমে এসেছিল। যার সপক্ষে এই বিশ্বাসী মানুষটি কোন প্রমাণ উপস্থাপন করতে না পারলেও তা তিনি বিশ্বাস করেন।

Trust (আস্থা)
1. firm belief in the reliability, truth, or ability of someone or something.
কোন পূর্ব অভিজ্ঞতা বা ধারণার আলোকে কোন বিষয় সম্পর্কে ধারণা করা। যেমন আমি আমার অমুক বন্ধু সম্পর্কে আস্থাশীল যে, সে টাকা ধার নিলে আমাকে ফেরত দেবে। বা ধরুন, অমুক পত্রিকাটি বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ ছাপে বলে আপনি মনে করেন। কারণ, অমুক পত্রিকাটি কয়েকবছর ধরে পড়ার কারণে পত্রিকাটির প্রতি আপনার আস্থা সৃষ্টি হয়েছে। এখানে, আপনার এই আস্থার পেছনে কারণ হিসেবে রয়েছে আপনার পুর্ব অভিজ্ঞতা।

Faith (বিশ্বাস, ধর্মবিশ্বাস, বৈজ্ঞানিক তথ্যপ্রমাণ ছাড়াই পরিপূর্ণ বিশ্বাস)
1. complete trust or confidence in someone or something.
2. strong belief in the doctrines of a religion, based on spiritual conviction rather than proof.
যেমন, ইসলাম বিশ্বাস করা। হিন্দু ধর্মে বিশ্বাস করা। আল্লাহ ভগবান ঈশ্বরে বিশ্বাস রাখা।

বিশ্বাস হচ্ছে, সোজা কথায় যুক্তিহীন কোন ধারণা, অনুমান, প্রমাণ ছাড়াই কোন প্রস্তাব মেনে নেয়া। ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য তথ্য-প্রমাণ, পর্যবেক্ষন এবং অভিজ্ঞতালব্ধ বিষয় মানুষের বিশ্বাসের অন্তর্ভুক্ত নয়। যখনই কোন কিছু যুক্তিতর্ক, পর্যবেক্ষণ এবং অভিজ্ঞতা লব্ধজ্ঞান হয়ে উঠবে, তা আর বিশ্বাস থাকবে না। যেমন ধরুন, পানি হাইড্রোজেন এবং অক্সিজেনের মিশ্রণে তৈরি। এটা মানুষের বিশ্বাস নয়, এটা পরীক্ষালব্ধ ফলাফল। আপনাকে এই কথাটিতে বিশ্বাসী হতে হবে না। কারণ কে এতে বিশ্বাস করলো কে করলো না, তাতে এই তথ্যের সত্যতার কিছুই যায় আসে না। এটা উপযুক্ত তথ্যপ্রমাণ দ্বারা প্রতিষ্ঠিত সত্য। আমরা কেউ বলি না “পানি হাইড্রোজেন এবং অক্সিজেনের মিশ্রন, এই কথা আমি বিশ্বাস করি”; এটা বিশ্বাস অবিশ্বাসের প্রশ্নই নয়। বা ধরুন, পৃথিবী গোল, এটা আমি বিশ্বাস করি না। আমি মেনে নিই উপযুক্ত তথ্য প্রমাণের আলোকে। এটা এখন আর অনুমান বা বিশ্বাস নেই, এটা বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে প্রতিষ্ঠিত সত্য। বা ধরুন বিবর্তনবাদ। এটা কোন অনুমান নয়। বর্তমানে এটি পরীক্ষানিরীক্ষা দ্বারা উপযুক্ত তথ্যপ্রমাণ দ্বারা প্রতিষ্ঠিত সত্য।

বিশ্বাস সেটাই করতে হয়, যাতে সন্দেহের অবকাশ রয়েছে বা যার কোন প্রমাণ পাওয়া যায় নি। ধরুন কেউ ভুতে বিশ্বাস করে, কেউ বিশ্বাস করে এলিয়েন পৃথিবীতেই আছে, কেউ জ্বীন পরী, কেউ আল্লা, কেউ জিউস কালী ইত্যাদি। এগুলো বিশ্বাসের ব্যাপার, কিন্তু আমরা আলোতে বিশ্বাসী নই়, আমরা সুর্যে বিশ্বাসী নই, আমরা চেয়ার টেবিলে বিশ্বাসী নই। কারণ এগুলো বিশ্বাস অবিশ্বাসের উর্ধ্বে। আমরা বলি না অমুক লোক সুর্যে বিশ্বাসী, তমুক লোক চেয়ার টেবিলে বিশ্বাস করে। আমরা বলি মুসলিমরা আল্লায় বিশ্বাসী, হিন্দুরা শিব বা দুর্গায়, কেউ শাকচুন্নীতে বিশ্বাস করে, কেউ বিশ্বাস করে আমাদের চারপাশে জ্বীন পরী ঘুরে বেড়ায়।

ধরুন, আগামীকাল একটি পত্রিকায় ছাপা হলো যে, জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা মেরকেল একজন এলিয়েন। এই তথ্যটি জানার পরে আমি নিচের কাজগুলো করতে পারি।
১) আমি তথ্যটি জানলাম বা শুনলাম, এবং বিশ্বাস করলাম।
২) আমি আরও কয়েকটি নিরপেক্ষ পত্রিকা পড়লাম, এবং ইন্টারনেট বা অন্যান্য মাধ্যম থেকে এর সত্যতা যাচাই করতে চেষ্টা করলাম। দেখা গেল, আরও কিছু পত্রিকা কথাটি লিখেছে। আমি সেই অবস্থায় কথাটি বিশ্বাস করলাম।
৩) আমার এইসব পত্রিকার কথা বিশ্বাস হলো না। আমি সরাসরি আঙ্গেলা মেরকেলের সাথে দেখা করতে গেলাম, এবং সরাসরি দেখলাম যে, উনি একজন এলিয়েন। দেখার পরে আমি মেনে নিলাম। যেহেতু সরাসরিই দেখা, তাই আর বিশ্বাসের অবকাশ নেই। তবে কিছুটা সংশয় থাকতে পারে।
৪) আমি শুধু দেখেই বিশ্বাস করতে ইচ্ছুক নই। পরীক্ষানিরীক্ষা পর্যবেক্ষণ করে নিশ্চিত হতে চাই। তাই আমি পরীক্ষানিরীক্ষা পর্যবেক্ষণ করে দেখলাম। তখনও আমার আর কথাটি বিশ্বাস বা অবিশ্বাসের অবকাশ নেই। আমি শতভাগ নিশ্চিত। আমি তথ্যটি মেনে নিলাম।

অন্যদিকে নাস্তিকতা হচ্ছে প্রমাণের অভাবে ঈশ্বরে অবিশ্বাস। অর্থাৎ ঈশ্বর প্রসঙ্গে শূন্য বিশ্বাস। ন্যুল বিশ্বাস। বিশ্বাসের অনুপস্থিতি। ঈশ্বরের অস্তিত্ব বিষয়ক প্রস্তাবকে বাতিল করা।

Atheism, in general, the critique and denial of metaphysical beliefs in God or spiritual beings. As such, it is usually distinguished from theism, which affirms the reality of the divine and often seeks to demonstrate its existence.

অর্থাৎ এটা “ঈশ্বর নেই”- তাতে বিশ্বাস করা নয়। বরঞ্চ “ঈশ্বর আছে”, সেই প্রস্তাবকে উপযুক্ত তথ্যপ্রমাণের অভাবে বাতিল করা এবং সেই বিশ্বাসের বিপক্ষে যুক্তি তুলে ধরা। ঈশ্বর নেই, সেটা বিশ্বাস করা আর ঈশ্বর আছে, এই প্রস্তাবনাকে প্রমাণের অভাবে বাতিল করা দুটো সম্পূর্ণ ভিন্ন বিষয়। নাস্তিকতা কোন বিশ্বাস বা ধর্ম নয়, বরঞ্চ নাস্তিকতা হচ্ছে অবিশ্বাস। সেই বিশ্বাসে আস্থাহীনতা।

যেমন ধরুন, স্ট্যাম্প সংগ্রহ করা একজনের শখ। অন্য আরেকজনের নয়। যার নয়, তার ক্ষেত্রে আমরা বলতে পারি না যে, স্ট্যাম্প কালেকশন না করা হচ্ছে তার শখ। বা ধরুন কেউ টিভিতে কেউ কোন চ্যানেল দেখে। যখন কোন চ্যানেল আসছে না, কোন সিগান্যাল আসছে না, সেটাকে আমরা আরেকটি চ্যানেল বলতে পারি না। সেটা হচ্ছে সিগন্যালের অনুপস্থিতি। শূন্য সিগন্যাল। যেমন আলো হচ্ছে সাতটি রঙের মিশ্রণ। আলোর অনুপস্থিতিকে আমরা অন্ধকার বলি। সেটাকে আরেক রকমের আলো বলি না। বা আরেকটি রঙ বলি না।

বিশ্বাসকে প্রতিষ্ঠিত করতে বিশ্বাসীগণ কিছু অসৎ যুক্তি তুলে ধরেন। যেমন, প্রমাণ করুন, ঈশ্বর নেই! বা নাস্তিকরা কী প্রমাণ করতে পারবে যে, ঈশ্বর বলে কিছু নেই?

এই যুক্তিটি অসৎ এবং একটি লজিক্যাল ফ্যালাসি বলে সারা পৃথিবীর কাছে পরিচিত। কারণ, যে দাবী উত্থাপন করবে, প্রমাণের দায়ও তার ওপরেই বর্তায়। অন্য কেউ বিষয়টি অপ্রমাণ করবে না।

এটা নাস্তিকদের দায় নয়। যে ঈশ্বরের প্রস্তাব উত্থাপন করবে, তা প্রমাণের দায় তার ওপরই বর্তায়। সে সম্পর্কে উপযুক্ত তথ্যপ্রমাণ হাজির না করতে পারলে সেটা বাতিল করে দেয়াই যৌক্তিক সিদ্ধান্ত। সেটাই দর্শনের মৌলিক অবস্থান। সেই প্রস্তাব যত জোর গলাতেই উত্থাপন করা হোক না কেন। সেটা অপ্রমাণ করার দায় নাস্তিকদের নয়। যেমন কেউ যদি দাবী করে, বৃহস্পতি গ্রহে মানুষ রয়েছে, বা সে নিজেই ঈশ্বর। এই মহাবিশ্ব সে নিজেই সৃষ্টি করেছে।বা তার বাসার পুকুরের ব্যাঙটিই মহাবিশ্ব সৃষ্টি করেছে! এরকম প্রস্তাবের প্রমাণ তাকেই করতে হবে। অন্যরা বৃহস্পতি গ্রহে গিয়ে তার প্রস্তাব অপ্রমাণ করবে না। বা সে যে এই মহাবিশ্ব সৃষ্টি করে নি, তা অপ্রমাণ করবে না। যতক্ষণ সে তার প্রস্তাবের সপক্ষে উপযুক্ত তথ্য এবং যুক্তি উপস্থাপন করতে না পারছে, শুধু “মৃত্যুর পরে” সব প্রমাণ পাওয়া যাবে বলে দাবী করছে, তার বা তাদের দাবীকে আমলে নেয়ার প্রয়োজন নেই। আর তা প্রমাণ করতে পারলে, বা ঈশ্বরের অস্তিত্ব প্রমাণ করতে পারলে, আগামীকাল পৃথিবীর সমস্ত যুক্তিবাদী নাস্তিকের দল বেঁধে আস্তিক হতে কোন বাধা নেই।

নাস্তিকতা
আমরা বলি, ধর্মবিশ্বাস এবং কুসংস্কার আসলে সমার্থক।

প্রাচীন কাল থেকেই মানুষ নানা ধরণের প্রশ্নের উত্তর খুঁজেছে। মানুষের স্বাভাবিক অনুসন্ধিৎসু মন, কৌতূহলী মনে নানা জিজ্ঞাসার সৃষ্টি হয়েছে। যেমন ধরুন, বৃষ্টি কেন হয়, ফসল কীভাবে জন্মায়, মানুষ জন্মে, পৃথিবী কোথা থেকে এলো, কিভাবে এলো, ইত্যাদি। কিছু বিষয় মানুষ পর্যবেক্ষনের মাধ্যমে জানতে পেরেছে, কিছু কিছু বিষয় জ্ঞানের সীমাবদ্ধতার কারণে, উপযুক্ত তথ্যের অভাবে বুঝতে পারে নি। ধীরে ধীরে মানুষ আরও জ্ঞান অর্জন করেছে, আরও বেশি জেনেছে।

আর যেগুলো সম্পর্কে মানুষ জানতে পারেনি, সে সময়ের জ্ঞান যে পর্যন্ত পৌছেনি, সেগুলো সম্পর্কে মানুষ ধারণা করেছে, কল্পনা করেছে। যেমন, যখন মানুষ জানতো না বিদ্যুৎ কীভাবে চমকায়, তাদের কাছে স্বাভাবিকভাবেই এই সম্পর্কে যথেষ্ট তথ্য ছিল না, তাই যখন কেউ প্রস্তাব করে এটা ভয়ঙ্কর কোন দেবতার কাজ, সেই প্রস্তাবই অন্য কোন যৌক্তিক প্রস্তাবের অনুপস্থিতির কারণে, বা সেই সময়ের মানুষের জ্ঞানের অভাবের কারণে মানুষগুলোর মধ্যে টিকে গেছে। এর পেছনে কাজ করেছে অজানার প্রতি ভয়, এবং লোভ। সেই সময়ে হয়তো কেউ দাবী করেছে, সে নিজে হচ্ছে ভয়ঙ্কর দেবতাটির পুত্রও, বা প্রিয় বন্ধু, বা আত্মীয়স্বজন, এবং এইসব দাবীর মাধ্যমে সে সমাজে সুবিধাজনক অবস্থানে পৌঁছে গেছে। ধীরে ধীরে সেটাই প্রাতিষ্ঠানিক ধর্মে রূপ নিয়েছে। মানুষের মাঝে অজ্ঞানতা, জানতে না পারার হতাশা, অজ্ঞতা একধরনে হীনমন্যতায় রুপ নেয় এবং ধীরে ধীরে অজ্ঞানতার অন্ধকার একপর্যায়ে দেবতা, ঈশ্বর, ভুত নামক কল্পনা দিয়ে তারা ভরাট করে ফেলে। যেমন তারা ধরে নিয়েছে, বিদ্যুৎ চমকানো হচ্ছে দেবতা জিউসের ক্রোধ। পরবর্তীতে আধুনিক বিজ্ঞান উপযুক্ত তথ্যপ্রমাণ সহকারে বের করেছে, বিদ্যুৎ কীভাবে চমকায়। তার পেছনে কোন দেবদেবী ঈশ্বর আল্লাহর হাত আছে কিনা। সেই সব অপ্রমাণিত বিশ্বাসের সমষ্টিই বা বিশ্বাসগুলোর বিবর্তিত রূপই হচ্ছে আজকের প্রাতিষ্ঠানিক ধর্মগুলো। আধুনিক ঈশ্বরগুলো। পুরনো ঈশ্বরদের বিবর্তন ঘটে গেছে। পুরনো অনেক প্রবল প্রতাপশালী দেবতা ঈশ্বর এবং ধর্মবিশ্বাসই সময়ের সাথে সাথে বিলুপ্ত হয়ে গেছে, আধুনিক ধর্মগুলোও একসময় বিলুপ্ত হবে।

নাস্তিকতা এই প্রচলিত প্রাতিষ্ঠানিক ধর্মবিশ্বাসের বিরুদ্ধে। তারা তা অস্বীকার করে। প্রশ্নবিদ্ধ করে। বাতিল করে। এটি কোন ভাবেই আরেকটি বিশ্বাস বা ধর্ম নয়। বরঞ্চ ধর্ম বা বিশ্বাসের অনুপস্থিতি। একটি যৌক্তিক অবস্থান। যতক্ষণ পর্যন্ত না ঈশ্বর বা স্রষ্টার উপযুক্ত প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে, ততক্ষণ পর্যন্ত। পাওয়া গেলে, তা মেনে নিতে এক মূহুর্ত দেরী হবে না। তখন আর তা বিশ্বাস করতেও হবে না। মেনে নেয়া হবে।

বস্তুত, ধর্মগ্রন্থে বর্ণিত ঈশ্বর মহাবিশ্ব সৃষ্টি করেছে এবং আমার বাসার ডোবার ব্যাঙটিই মহাবিশ্ব সৃষ্টি করেছে, এই দুটো দাবীর সপক্ষেই ঠিক একই মানের প্রমাণ দেয়া সম্ভব। তাই তা বাতিল যোগ্য। 

অজ্ঞেয়বাদ শব্দটি ইংরেজি যে শব্দটির পারিভাষিক শব্দ, অর্থাৎ “Agnostic” শব্দটিকে ভাংলে আসে গ্রিক “a” এবং “gnostos”। gnostos অর্থ জ্ঞানী, আর তার আগে উপসর্গ “a” মিলে agnostic শব্দের আক্ষরিক অর্থ হয়েছে জ্ঞানহীন। সেই অর্থে একজন ব্যক্তি অনেক বিষয়ে agnostic হতে পারেন। কিন্তু এটার সবচেয়ে জনপ্রিয় ব্যবহার দেখা যায় ধর্মীয় বিশ্বাসের বেলায়। যখন ঈশ্বরে বিশ্বাসের প্রশ্ন আসে, তখন দুটি মৌলিক অবস্থানের সূচনা ঘটে যাদের মধ্যে যেকোন একটিকে গ্রহণ করতে হয়। এটা অনুসারে, হয় আপনি ঈশ্বরে বিশ্বাস করতে পারেন, অথবা অবিশ্বাস করতে পারেন। কিন্তু যদি অপশনগুলোকে আরও একটু নীরিক্ষণ করেন তাহলে আপনি জ্ঞানের উপর ভিত্তি করে মোট চারটি অবস্থান দেখতে পারবেন:

১। জ্ঞেয়বাদী আস্তিক (Gnostic theist): আপনি ঈশ্বরে বিশ্বাস করেন এবং এটা যে সত্য এই বিষয়ে আপনার জ্ঞান আছে (বা এটা যে সত্য তা আপনি জানেন)।
২। অজ্ঞেয়বাদী আস্তিক (Agnostic theist): আপনি ঈশ্বরে বিশ্বাস করেন কিন্তু জানেননা যে এটা সত্যি কিনা (অর্থাৎ ঈশ্বরের অস্তিত্ব সম্পর্কে আপনার জ্ঞান না থাকা সত্ত্বেও আপনি ঈশ্বরকে বিশ্বাস করেন)।
৩। জ্ঞেয়বাদী নাস্তিক (Gnostic atheist): ঈশ্বরের অস্তিত্ব নেই এটা জেনে আপনি ঈশ্বরে অবিশ্বাস করেন (অর্থাৎ আপনি জানেন যে ঈশ্বর নেই এবং তাই আপনি ঈশ্বরে বিশ্বাস করেন না)।
৪। অজ্ঞেয়বাদী নাস্তিক (Agnostic atheist): ঈশ্বরের অস্তিত্ব আছে কি নেই এটা না জেনেই আপনি ঈশ্বরে অবিশ্বাস করেন (অর্থাৎ আপনি জানেননা যে ঈশ্বরের অস্তিত্ব আছে কি নেই কিন্তু আপনি ঈশ্বরে বিশ্বাস করেন না।)

তৃতীয় অবস্থানটিকে, অর্থাৎ জ্ঞেয়বাদী নাস্তিক্যবাদ বা Gnostic atheism অবস্থানটিকে এভাবে ব্যাখ্যা করা যায়, “আমি বিশ্বাস করি এবং “জানি” যে ঈশ্বরের অস্তিত্ব নেই”। অন্যদিকে চতুর্থ অবস্থানটিকে, অর্থাৎ অজ্ঞেয়বাদী নাস্তিক্যবাদ বা Agnostic atheism বলা হয় যা বলে, “ঈশ্বরের অস্তিত্ব আছে, এতে আমি বিশ্বাস করি না। কিন্তু আমি এটা জানিনা যে ঈশ্বরের অনস্তিত্ব সত্য কিনা”। এই দুই দাবীর পার্থক্য সূক্ষ্ম কিন্তু এটাকে বোঝা খুব গুরুত্বপূর্ণ।

অবিশ্বাস করা আর অন্য কিছুতে বিশ্বাস করা এক নয়

একজন নাস্তিক্যবাদীকে ঈশ্বর নেই এটা প্রমাণ করতে বলা হলে এটা ধরেই নেয়া হয় যে সেই নাস্তিক্যবাদী লোকটি “ঈশ্বর নেই” এই কথাটিতে বিশ্বাস করেন। জ্ঞেয়বাদীই নাস্তিক্যবাদীগণ দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করেন যে ঈশ্বরের অস্তিত্ব নেই। কিন্তু নাস্তিক্যবাদীদের মধ্যে অনেক অজ্ঞেয়বাদী নাস্তিকও আছেন যারা ঈশ্বরের অস্তিত্ব নেই এটাও নিশ্চিতভাবে দাবী করেন না। দুটোই বৈধভাবে নাস্তিক্যবাদ বা atheism। এটা মনে রাখা গুরুত্বপূর্ণ যে atheism বা নাস্তিক্যবাদ এবং agnosticism বা অজ্ঞেয়বাদ সম্পূর্ণভাবে দুটি আলাদা বিষয় নয়।

ঈশ্বরে বিশ্বাস নেই এটাই কাউকে নাস্তিক শ্রেণীভুক্ত করার জন্য যথেষ্ট। কোন কিছুতে বিশ্বাসহীনতা মানেই এই নয় যে এটাকে মিথ্যা বলে বিশ্বাস করা হচ্ছে। এটার কেবল এই অর্থই থাকতে পারে যে এটা যে সত্য সে বিষয়ে আপনি নিশ্চিত নন। উদাহরণস্বরূপ আপনার একজন বন্ধু বিশ্বাস করতে পারে যে ফোর্ড বিশ্বের সবচেয়ে ভাল গাড়ির কোম্পানি। আপনার এই বিষয়ে কোন বিশেষ মতামত বা ভাবনা নেই। আপনি বিশ্বাস করেন না যে ফোর্ড অন্য কোন ব্র্যান্ডের গাড়ির চেয়ে ভাল, কিন্তু এটা যে বিশ্বের সবচেয়ে ভাল কার ব্র্যান্ড না আপনি এটাও জানেন না। এই পরিস্থিতিতে আপনি আপনার বন্ধুটির দাবীর বিষয়ে agnostic বা অজ্ঞেয়বাদী।

দ্য বার্ডেন অব প্রুফ বা প্রমাণের দায়

ধরুন, আমি আপনার কাছে একটি অসম্ভব দাবি নিয়ে এলাম। সেটা হল, “আমার কাছে একটি দুই ফুট লম্বা লেপ্রিকন (Leprechaun – রূপকথায় বর্ণিত একধরণের অবাস্তব জীব) আছে। এটা আমার সিন্দুকে থাকে। কেবলমাত্র আমিই এই লেপ্রিকনকে দেখতে পারি আর এই লেপ্রিকনের অস্তিত্বের কোন ফিজিকাল এভিডেন্স নেই।” কারও পক্ষেই বলা সম্ভব নয় যে এই লেপ্রিকনটির কোন অস্তিত্ব নেই, কিন্তু আমি এটারও কোন সাক্ষ্যপ্রমাণ দিতে পারছি না যে এই লেপ্রিকনের কোন অস্তিত্ব আছে। আর এই ধরণের দাবিকেই আনফলসিফায়াবল ক্লেইম (Unfalsifiable claim) বা প্রমাণ-অযোগ্য দাবি বলা হয়।

যখন একটি প্রমাণ-অযোগ্য দাবিকে সামনে নিয়ে আসা হয়, তখন বার্ডেন অব প্রুফ বা প্রমাণের দায় তার উপরের বর্তায় যে ব্যক্তি দাবিটি নিয়ে এসেছেন। অন্যথায় এবসার্ডিটি বা বিমূর্ততার সূচনা ঘটে। উদাহরণস্বরূপ প্রমাণ-অযোগ্য দাবি সংক্রান্ত চিন্তন পরীক্ষণগুলো বা থট এক্সপেরিমেন্টগুলোর (Thought Experiment) কথাই চিন্তা করুন, যেমন “ফ্লাইং স্প্যাগেটি মনস্টার”, “ইনভিজিবল পিংক ইউনিকর্ন”, স্যাগানের “দ্য ড্রাগন ইন মাই গ্যারেজ” এবং “রাসেলস টিপট” এর অস্তিত্ব। এই প্রত্যেকটি থট এক্সপেরিমেন্টেই পূর্ববর্তী উদাহরণের লেপ্রিকনের মত কোন না কোন আশ্চর্যজনক এবং অসম্ভব প্রাণীর কথা বলা হয়েছে যাদের অস্তিত্ব সম্পূর্ণভাবে অপ্রমাণ করা যায় না।

আর এখানেই অজ্ঞেয়বাদ একটি গুরুত্বপূর্ণ অবস্থান হয়ে দাঁড়ায়। অজ্ঞেয়বাদী নাস্তিকগণ স্বীকার করেন যে, তারা ঈশ্বরকে নির্দিষ্টভাবে অপ্রমাণ করতে পারবেন না। কিন্তু তারা ঈশ্বরের অস্তিত্বের উপর সাক্ষ্যপ্রমাণের অভাবকে চোখে আঙ্গুলে দেখিয়ে দিতে পারেন এবং ঈশ্বরে বিশ্বাস না করার সিদ্ধান্ত নিতে পারেন।

কিছু দাবীকে অপ্রমাণ করা যায়

উপরের যুক্তিগুলো কেবল প্রমাণ-অযোগ্য দাবি বা যে দাবিগুলোকে সত্য বা মিথ্যা বলে প্রমাণ করা যায় না তারদের উপরেই প্রয়োগ করা যায়। যখন এই যুক্তিগুলো বিভিন্ন ধর্মবিশ্বাসে প্রযুক্ত হয় তখন অনেক ধর্মীয় দাবিগুলোই তুলনামূলক নিশ্চয়তার সাথে অপ্রমাণ করা সম্ভব। কারণ সেই দাবিগুলো নিজে থেকেই অসামঞ্জস্যপূর্ণ এবং এগুলো যুক্তির মুখে এমনিতেই ভেঙ্গে যায়।

উদাহরণস্বরূপ, আব্রাহামীয় ঈশ্বর ইহুদি, খ্রিস্টান এবং মুসলিমদের দ্বারা উপাসিত হন। ধরুন আব্রাহামীয় ঈশ্বর একই সাথে সর্বজ্ঞানী, সর্বশক্তিমান এবং সর্বমঙ্গলময়। এই তিনটি বৈশিষ্ট্য আমরা যে জগৎকে দেখছি সেখানে একই সাথে থাকতে পারে না বা কোএক্সিস্ট করতে পারে না। যখন বড় বড় দূর্যোগ ঘটে এবং হাজার হাজার মানুষ মারা যায় তখন ঈশ্বরের পক্ষে একই সাথে সর্বমঙ্গলময় এবং সর্বশক্তিমান হওয়াটা অসম্ভব হয়ে যায়।

হয় সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের এরকম দূর্যোগ আটকানোর কোন ক্ষমতা নেই অথবা এই সর্বমঙ্গলময় ঈশ্বর পৃথিবীতে মানুষের দুঃখ দুর্দশা সম্পর্কে একেবারেই ভাবনাচিন্তা করেন না। সুতরাং ঈশ্বরের প্রতিটি সংজ্ঞাকে অপ্রমাণ করা সম্ভব নাও হতে পারে তবে ঈশ্বরের কিছু কিছু স্ববিরোধী সংজ্ঞাকে অপ্রমাণ করা সম্ভব।

স্পেক্ট্রাম অব থিস্টিক প্রোবাবিলিটি অথবা আস্তিকীয় সম্ভাবনার বর্ণালী

আমাদের জীবনের অনেক বিষয়ের মতই আস্তিক্যবাদ এবং নাস্তিক্যবাদকে সাদা বা কালো এর মত দৃঢ় চরম-দ্বিমুখিতায় না ফেলে একটি স্পেক্ট্রাম বা বর্ণালীতে ফেলতে হয় (অর্থাৎ কোন ব্যক্তিকে হয় আস্তিক নয় নাস্তিক এভাবে শ্রেণীবিভক্ত না করে তাকে আস্তিক্যবাস থেকে নাস্তিক্যবাদ পর্যন্ত বর্ণালীর কোন একটি অবস্থানে রাখার কথা বলা হচ্ছে)। রিচার্ড ডকিন্স তার বিখ্যাত বই “দ্য গড ডিল্যুশন”-এ এই স্পেক্ট্রাম অব থিস্টিক প্রোবাবিলিটি বা আস্তিকীয় সম্ভাবনার বর্ণালী এর ধারণাটি দেন। এখানে আস্থিক্যবাদ থেকে নাস্তিক্যবাদ পর্যন্ত মোট সাতটি অবস্থানের কথা বলা হয়েছে। এমন নয় যে এই সাতটি অবস্থান নিয়েই বর্ণালীটি, বরং বর্ণালীর ধারণায় এই সাতটি অবস্থানের দুটো পাশাপাশি অবস্থানের মধ্যেও কোন অবস্থান থাকতে পারে। কিন্তু এই সাতটি অবস্থান হচ্ছে বর্ণালীটির মদ্যে থাকা সাতটি মাইলফলক যা দিয়ে বর্ণালীর ভিতরের বিভিন্ন অবস্থানকে সরলভাবে প্রকাশ করা যায়। নিচে এগুলোর সারমর্ম দেয়া হল:

১। সবল আস্তিক্যবাদ (Strong theism): ব্যক্তি সন্দেহমুক্ত হয়ে জানেন যে ঈশ্বরের অস্তিত্ব আছে। সি. জি. ইয়াং এর ভাষায়, “আমি বিশ্বাস করি না, আমি জানি”।
২। কার্যত আস্তিক্যবাদ (De facto theism): ব্যক্তি একশভাগ নিশ্চিন্ত নন যে ঈশ্বর আছেন, কিন্তু মনে করেন তার অস্তিত্বের সম্ভাবনা অনেক বেশি এবং ঈশ্বরের অস্তিত্ব আছে ভেবেই তিনি জীবন অতিবাহিত করেন।
৩। দুর্বল আস্তিক্যবাদ (Weak theism): ঈশ্বরের অস্তিত্বের সম্ভাবনা ৫০% এর বেশি, কিন্তু খুব একটা বেশি নয়। ব্যক্তি সম্পূর্ণ নিশ্চিন্ত নন কিন্তু ঈশ্বরে বিশ্বাসের দিকে ঝুঁকে থাকেন।
৪। পরিপূর্ণ অজ্ঞেয়বাদ (Pure agnosticism) অথবা সম্পূর্ণ নিরপেক্ষতা (Compleat impartiality): ঈশ্বর থাকার সম্ভাবনা ৫০%। ঈশ্বরের অস্তিত্বের সম্ভাবনা, তার সত্য হবার সম্ভাবনা ও মিথ্যা হবার সম্ভাবনা ব্যক্তির কাছে সমান।
৫। দুর্বল নাস্তিক্যবাদ (Weak atheism): ঈশ্বরের অস্তিত্বের সম্ভাবনা ৫০% এর কম, কিন্তু খুব একটা কম নয়। ব্যক্তি ঈশ্বরের অস্তিত্বের ব্যাপারে নিশ্চিন্ত নন কিন্তু সন্দেহবাদের (Skepticism) দিকে তিনি ঝুঁকে থাকেন।
৬। কার্যত নাস্তিক্যবাদ (De facto atheism): ঈশ্বরের অস্তিত্বের সম্ভাবনা খুবই কম, কিন্তু ০% এর উপরে। ঈশ্বরের অস্তিত্ব নেই এব্যাপারে ব্যক্তি সম্পূর্ণভাবে ইতিবাচক নন কিন্তু তিনি ঈশ্বরের অস্তিত্বের সম্ভাবনা অনেক কম বলে মনে করেন এবং ঈশ্বর বলে কিছু নেই ভেবেই জীবন অতিবাহিত করেন।
৭। সবল নাস্তিক্যবাদ (Strong atheism): ঈশ্বরের অস্তিত্বের সম্ভাবনা শূন্য। ব্যক্তি শতভাগ নিশ্চিন্ত যে ঈশ্বরের অস্তিত্ব নেই।

ডকিন্স বলেন, বেশিরভাগ আস্তিক মানুষ তাদের সন্দেহের বিরুদ্ধে গিয়ে ধর্মীয় বিশ্বাসকে শক্তভাবে আকড়ে থাকেন, এবং তাই নিজেদেরকে ১ নং অবস্থানেই ফেলেন। এদিকে বেশিরভাগ নাস্তিক নিজেদেরকে ৭ নং অবস্থানে ফেলেন না, কারণ প্রমাণের অভাবে নাস্তিক্যবাদের উদ্ভব হয় এবং প্রমাণের উপস্থিতি সবসময়ই চিন্তাশীল মানুষের চিন্তাকে পরিবর্তন করে ফেলতে পারে। বিল মার এর নেয়া এক সাক্ষাতকারে ডকিন্স নিজেকে ৬ নং অবস্থানে ফেলেন বলে স্বীকার করেছিলেন। তবে পরবর্তিতে এনথোনি কেনি এর নেয়া এক সাক্ষাতকারে ডকিন্স প্রস্তাব করেন “৬.৯” নং অবস্থানই বেশি শুদ্ধ হবে।
যদি আপনাকে নিজের বিশ্বাসকে ডকিন্সের স্কেলে রেট করতে বলা হয় তাহলে আপনি নিজেকে কোন অবস্থানে ফেলবেন?

 স্যাম হ্যারিস তার বই লেটার টু অ্যা ক্রিশ্চিয়ান নেশনে লিখেন:

প্রকৃতপক্ষে, "নাস্তিকতাবাদ" হচ্ছে এমন একটি পদবাচ্য, যার অস্তিত্বই থাকা উচিত না। কেওই নিজেকে "আমি জ্যোতিষ নই" বা "আমি আলকেমিস্ট নই" এই মর্মে অভিহিত করেন না। যেসব ব্যক্তি সন্দেহ করে এলভিস [একজন আমেরিকান সংগীত শিল্পী] এখনো জীবিত থাকতে পারে অথবা এলিয়েনরা হাতের ছোয়ায় এই মহাবিশ্বকে তাদের গোয়ালের প্রাণী বানিয়ে রাখবে, তাদের জন্য শব্দ খরচ করার মত শব্দ আমাদের নেই। যে ধর্মের সত্যতা নির্ধারণ করা যায় না, এজাতীয় ধর্মের বিপরীতে যুক্তিবাদী ব্যক্তির যে কোনো শব্দই নাস্তিক্যবাদের প্রতিনিধিত্ব করে। স্বতন্ত্রভাবে নাস্তিক্যবাদ শব্দটির আমদানী অতিরিক্ত শব্দ ব্যবহার মাত্র।"(Harris 2006, পৃ. 51)


বর্তমানে পশ্চিমা সমাজে শুধুমাত্র "ঈশ্বরে অবিশ্বাস"কেই সাধারণত নাস্তিক্যবাদ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। 

 "প্রাণের জটিলতা দেখে এর সবকিছুর একজন স্রষ্টা আছেন ভাবতে সহজ হয় বলেই আমি ধর্মের প্রতি আকৃষ্ট হয়েছিলাম। কিন্তু, আমি মনে করি, যখন আমি বুঝতে পারলাম, ডারউইনিজম এই জটিলতার আরো উন্নত ব্যাখ্যা দেয় তখন তা আমাকে সৃষ্টিতত্ত্বের জাল থেকে বেড়িয়ে আসতে সাহায্য করলো।" -রিচার্ড ডকিন্স

নাস্তিকতা মানে এখন কোনো সুনির্দিষ্ট বিশ্বাসের সমালোচনা নয়, বরং সমস্ত ধর্ম যা আধ্যাত্মিকতা বা অলৌকিকতা নিয়ে কাজ করে বা বিশ্বাস করে, তার বিরোধিতা করা।

No comments:

Post a Comment

ধন্যবাদ

বৈশিষ্ট্যযুক্ত পোস্ট

ব্রহ্মচর্যের সাধনা ভোজন

  নবম ভাগ ভোজন ভূমিকা - "ধর্মার্থকামমোক্ষাণামারোগ্যম্ মূলমুত্তমম্" . ধর্ম-অর্থ-কাম আর মোক্ষ এই পুরুষার্থচতুষ্টয় হল মানব জীবনের উ...

Post Top Ad

ধন্যবাদ