ব্রাদার রাহুল হোসাইন এবং পন্ডিত মহেন্দ্রপাল আর্য - ধর্ম্মতত্ত্ব

ধর্ম্মতত্ত্ব

ধর্ম বিষয়ে জ্ঞান, ধর্ম গ্রন্থ কি , হিন্দু মুসলমান সম্প্রদায়, ইসলাম খ্রীষ্ট মত বিষয়ে তত্ত্ব ও সনাতন ধর্ম নিয়ে আলোচনা

धर्म मानव मात्र का एक है, मानवों के धर्म अलग अलग नहीं होते-Theology

সাম্প্রতিক প্রবন্ধ

Post Top Ad

স্বাগতম

03 May, 2021

ব্রাদার রাহুল হোসাইন এবং পন্ডিত মহেন্দ্রপাল আর্য

ব্রাদার রাহুল হোসাইন এবং পন্ডিত মহেন্দ্রপাল আর্য
https://www.youtube.com/watch?v=9C6xZCdxqN8&t=344s
বেদ উপনিষদ ব্রাহ্মণগ্রন্থের কোথাও গরুর মাংস বা অন্যান্য প্রানীর মাংস খাওয়ার বিধান নাই। এই সকল গ্রন্থের কিছু ভাষ্যে এসবের উল্লেখ আছে। সেটা ভাষ্যকারের জ্ঞানের সংকীর্ণতা। এখানে বলে রাখি পন্ডিত জী অনলাই ডিবেটে কোন দিন রাজি হন না আর হননি। ডিবেট এই ভাবে হয় না, যদি কারো দম থাকে ওনার কাছে গিয়ে ডিবেট করুন তিনি যে বিষয়ে চেলেন্জ করে রেখেছেন। পন্ডিত মহেন্দ্রপাল আর্য জী কে আলোনচনার নাম করে রাহুল নামে ছেলেটি ডিবেট শুরু করেন।

আমি একজন নলেজেবল হিন্দু আবুল হিন্দু না। তাই রাহুল এর যতগুলো আর্গুমেন্ট খন্ডন করতে পারবো ততটুকু আমি করব।

( একটা জিনিস ক্লিয়ার করি। পোস্ট বানানর পর বলবে live যান সেখানে কথা বলেন। সে যদি আমাদের চেহারা না দেখে ডিবেট করতে চান তাহলে আমরা করতে পারবো।)
প্রথমঃ তিনি বললেন - যে আমরা যখন মাংস খাই আমাদের পরিপাক তন্ত্রতে কতটুকু সমস্যা হয়? কতটুক হজম করতে সমস্যা হয়? কত পরিমাণ? কত কি? এসব জিজ্ঞাসা করছেন।আরে ভাই acid বেশি লাগে 🤦‍♂️ এততুকু জানেন না। তারপর বললেন যে সিংহকে শাক-সবজি দিলে সে খেতে পারবে না হজম করতে পারবে না!
মানুষকে দিলে সে পারবে মাংস খেতে দিলে মানুষ খেতে পারবে হজম ও করতে পারবে। 🤦‍♂️আর তাতেই বুজে যায় ঈশ্বর আমাদের সেভাবেই তৈরি করেছেন ( ভাইরে ভাই) এইগুলা শুনার পর হাসব না ইগ্নর করব বুঝে উঠতে পারিনি 🙂
তিনি আবার logic fallacy ( যুক্তিবাদের ফড়িং) এর কথা বলে 🙂 মানে আমরা যা যা হজম করতে পারি সব আমাদের খাওয়া উচিত কারন ঈশ্বর সেভাবেই তৈরি করেছেন আমাদের। তাহলে গাঞ্জা, মদ, বিরি তারপর এরকম আরো অনেক কিছু হজম করতে পারি even শুকর ও তাহলে কি ঈশ্বর আমাদের এগুলো খাওয়ার জন্যই বানিয়েছেন????
আমরা খেতে পারি না তা ভুল আমরা পারি কিন্তু কারনে আছে।
গরু কোন সময় আস্ত আপেল খেতে পারবেনা কারন সেটা ওর দরকার নাই। কিন্তু মাংস খাওয়া আমাদের নরমাল ভাবে necessary নয় কিন্তু আনেক সময় আনেকে ফিজিক্যাল প্রবলেম নিয়ে জন্মায় তাদের জন্য অথবা আনেক পরিস্থিতি জন্য খেতে হয়। তাই আমারা খেতে পারি ওকে?
ব্রাদার রাহুল হোসাইন এবং পন্ডিত মহেন্দ্রপাল আর্য

 vegetarian or non vegetarian diet ভিডিও দেখুন


যেমন সাপ সে কার্নিভর কিন্তু তার তার কোনো tool নাই। তো রাহুল ভাই মহেন্দ্র পাল যখন এইটার কথা বললো তখন আপনি বললেন যে মহেন্দ্র পাল হয়তো সাপ এর কথা জানে না কিন্তু আপনি পরে বললেন আমাদের দাত কার্নিভর প্রাণীদের মত (canine teeth) 🤦‍♂️ same ভাবে আমিও বলতে পারি আপনি হয়ত শিবপাঞ্জি,জলহস্তী, উট, গরিলা, ওরাংওটাং ওদেরও canine teeth আছে তাদের কথা আপনি জানেন না আর তারা কিন্তু pure plant eater এখন?
হিপোক্রেসি দেখান কেন ভাই 🤦‍♂️
তার পর তিনি কিছু শাস্ত্র প্রমান দিলেন যে সেখানে গরুর মাংস খাওয়ার কথা আছে। আমি যতুদুর পারব দিব সব আমার কাছে এভেলেবেল না তাই।
প্রথমত তিনি বাংলা অনুবাদ দেখাচ্ছেন 🤦‍♂️। যখন একটা মন্ত্রে গরুর কে একটা মা গরুর কথা প্রমান
করার জন্য তুলসিরাম এর ট্রানসলেশন দেখাল বাকি গুলায় কেন দেখাল না? এইটা কি হিপোক্রেসি না? আর হিন্দু ধর্মের সব শাস্ত্র sanskrit এ সেটার ট্রানসলেশন বাংলা দেখাচ্ছে 🤦‍♂️
তার পর তিনি কিছু শাস্ত্র প্রমান দিলেন যে সেখানে গরুর মাংস খাওয়ার কথা আছে। আমি যতুদুর পারব দিব সব আমার কাছে এভেলেবেল না তাই।
প্রথমত তিনি বাংলা অনুবাদ দেখাচ্ছেন 🤦‍♂️। যখন একটা মন্ত্রে গরুর কে একটা মা গরুর কথা প্রমান
করার জন্য তুলসিরাম এর ট্রানসলেশন দেখাল বাকি গুলায় কেন দেখাল না? এইটা কি হিপোক্রেসি না? আর হিন্দু ধর্মের সব শাস্ত্র sanskrit এ সেটার ট্রানসলেশন বাংলা দেখাচ্ছে 🤦‍♂️। পরে বলে এর ট্রানসলেশন মানবেন না এর ট্রানসলেশন মানবেন না। হ্যাঁ আসলেই মানব না। কারন যাদের ট্রানসলেশন দেখিয়েছেন তারা যে কত বড় স্কলার সেটা তো আগে প্রমান করুন।
vedas এর ট্রানসলেশন বুল হওয়ার কারণ এবং না মানোর কারণ জানার জন্য আমার এই আর্টিকেলটা পড়েন
আপনি যেটা বললেন সেটা logic fallacy এর মধ্যে পরে কারন আমার কাছে এইরকম বই ও আছে মুসলিম এর লেখা। সেখানে পৃথিবী flat সেটা প্রমান করেছে আপনার main scripture থেকে even quran.com ও flat বলা আছে। আর পৃথিবী ঘুরে না সূর্য ঘুরে এইতাও আছে 😂 (নিছে ছবি দেওয়া হল দেখে নেন 🙂)।
পরে আপনি গীতা তাও আবার প্রভুপাদের ট্রানসলেশন দেখাচ্ছে। আমার এক ভাই এর এই ভিডিও দেখুন তার ট্রানসলেশন বুঝার জন্য যে তিনি কতো ভুল ট্রানসলেশন করেছে -https://youtu.be/NvXUx_90i2ক
পরে আবার মনুস্মৃতি থেকে দেখাচ্ছে। 🤦‍♂️
আগে এইটা পরেন 🤦‍♂️
Anumantaa vishasitaa nihantaa krayavikrayee Samskartaa chopahartaa cha khadakashcheti ghaatakaah Manusmrithi 5.51 Those who permit slaying of animals, those who bring animals for slaughter, those who slaughte, those who sell meat, those who purchase meat, those who prepare dish out of it, those who serve that meat and those who eat are all murderers.
Breehimattam yavamattamatho maashamatho tilam Esha vaam bhaago nihito ratnadheyaaya dantau maa hinsishtam pitaram maataram cha Atharvaveda 6.140.2
teeth! You eat rice, you eat barley, you gram and you eat sesame. These cereals are specifically meant for you. Do not kill those who are capable of being fathers and mothers. Aghnyaa yajamaanasya pashoonpahi Yajurveda 1.1
"O human! animals are 'Aghnya' not to be killed. Protect the animals"
Mahabharata: "He who desires to augment his own flesh by eating the flesh of other creatures, lives in misery in whatever species he may take his [next] birth."
তারপর তিনি মহাভারত থেকে দেখাচ্ছেন 🤦‍♂️ নিছে মহাভারত এর ছবি দেওয়া হল।
তারপর ব্রহ্মসূত্র এবং আদি শঙ্করাচার্য বলে বলি প্রথা আর মাংস খাওয়া মেনেছেন🤦‍♂️
নিছে ছবি দেওয়া হল সেখানে কিছুই নাই এইসব উলটা science আছে সেখানে। 🤦‍♂️
নিছে ছবি দেখে নিন।

ব্রাদার রাহুল হোসাইন এবং পন্ডিত মহেন্দ্রপাল আর্য
ব্রহ্মসূত্র, শংকরাচার্য

ব্রাদার রাহুল এবং পন্ডিত মহেন্দ্রপাল আর্য ডিবেট

মনুস্মৃতিতে কি গোমাংস ভক্ষণের বিধান রয়েছে? না নেই। তবে রাহুল যে রেফারেন্স দিল সেগুলো কি? সেগুলো প্রক্ষিপ্ত। মনুস্মৃতির একটি রেফারেন্স দিয়েই মহেন্দ্রপাল গোমাংস সহ সকল মাংস খাওয়ার নিষিদ্ধতা প্রমাণ করে দিয়েছেন। আপনি হয়তো খেয়াল করেননি সেটা, ভালো করে ভিডিওতে বলা রেফারেন্স গুলো দেখে নিবেন আবার। সেই রেফারেন্স অনুযায়ী শ্লোকটি হলো - অনুমন্তা বিশসিতা নিহন্তা ক্রয়বিক্রয়ী। সংস্কর্ত্তা চোপহর্ত্তা চ খাদকশ্চেতি ঘাতকাঃ।। (মনুস্মৃতি- ৫/৫১) পদার্থঃ- (অনুমন্তা) বধ করার আজ্ঞাকারী (বিশসিতা) মাংস কর্তনকারী (নিহন্তা) পশু বধকারী (ক্রয়-বিক্রয়ী) মাংসের ক্রয়-বিক্রয়কারী (সংস্কর্ত্তা) রন্ধনকারী (চোপহর্ত্তা) পরিবেশনকারী (চ) এবং (খাদকশ্চেতি) ভোজনকারী (ঘাতকাঃ) ঘাতক অর্থাৎ হত্যাকারী আর পাপী। অনুবাদঃ- পশু বধ করার জন্য যিনি আজ্ঞা করেন, যিনি মাংস কর্তন করেন, যিনি পশু বধ তথা হত্যা করেন, যিনি মাংস ক্রয় করেন এবং যিনি বিক্রয় করেন, যিনি মাংস রন্ধন করেন, যিনি মাংস পরিবেশন করেন এবং যিনি ভোজন করেন, তাহারা ঘাতক অর্থাৎ হত্যাকারী আর পাপী। এবার আমি আরও একটি দিই- নিবর্তেত সর্বমাংসস্য ভক্ষণাৎ (মনুস্মৃতি-৫/৪৯) অর্থাৎ সর্বপ্রকার মাংস ভক্ষণ থেকে দূরে থাকো [কোন প্রকার মাংস'ই ভক্ষণ করিবে না]। এবার প্রশ্ন আসবে কেন প্রক্ষিপ্ত? আপনি কিভাবে বুঝলেন? দেখুন অন্তত সাধারণ জ্ঞান থাকলেও বুঝবেন যে কেন প্রক্ষিপ্ত, বিশুদ্ধ মনুস্মৃতিতে কোনটি কেন প্রক্ষিপ্ত বিস্তারিত রয়েছে কিন্তু যেহেতু সংক্ষিপ্ত উত্তর দিচ্ছি সেহেতু এত বিস্তারিত লিখা সম্ভব নয় তাই সাধারণ একটি যুক্তি দিই- আমরা তো জানি যে মনু মহারাজ অনেক বিদ্বান্। আর মনুস্মৃতি গঠিত হয়েছে প্রশ্নোত্তর এর ভিত্তিতে। কারা প্রশ্ন করেছিল জানেন কি? দেখুন কারা এসে প্রশ্ন বা জিজ্ঞাসা করেছেন- মনুং একাগ্রং আসীনং অভিগম্য মহর্ষয়ঃ। প্রতিপুজ্য যথান্যায়ং ইদং বচনং অব্রুবন্।। ১/১ পদার্থঃ (মহর্ষয়ঃ) মহর্ষিগন (একাগ্রম্ আসীনম্) একাগ্রপূর্বক বসে থাকা (মনুম্) মনুর (অভিগম্য) নিকটে গিয়ে, তাদের (যথান্যায়ম্) যথোচিত (প্রতিপূজ্য) প্রণাম করে (ইদম্) এই কথা (অব্রুবন্) জিজ্ঞেস করেন। ভাবার্থঃ মহর্ষি মনু একাগ্রচিত্তে বসে, ঈশ্বরের চিন্তন করছিলেন, সেই সময় অনেকজন ঋষি আর্য আসলেন তারপর পরস্পর অভিবাদন সেরে জানার উদ্দেশ্যে ঋষি আর্যগন মহর্ষি মনুকে জিজ্ঞাসা শুরু করলেন।
কল্পের গৃহ্যসূত্র থেকেও যজ্ঞাদির রেফারেন্স দিয়েছে, কল্পে গোমাংস না থাকুক বা থাকুক মাছ মাংস ভক্ষণের বিধান পাওয়া যায় যা কিনা বেদ বিরুদ্ধ। এর জন্য জৈমিনি ঋষি মীমাংসা দর্শনে বলেছেন - ন অসন্নিয়মাত্।। (মীমাংসা দর্শন-১/৩/১২) সূত্রার্থঃ- কল্পসূত্র বেদের ন্যায় প্রমাণ (প্রামাণিক) নয়, কেননা তাহাতে অবৈদিক সিদ্ধান্তের নিরূপণ পাওয়া যায়। সর্বত্র চ প্রয়োগাত্ সন্নিধানশাস্ত্রাচ্চ।। (মীমাংসা দর্শন-১/৩/১৪) সূত্রার্থঃ- সকল কল্পসূত্রে অর্থদ্বারা পরম সন্নিহিত বেদরূপ শাস্ত্রের বিরুদ্ধ অর্থের প্রয়োগ পাওয়া যায় সেজন্য তা বেদের ন্যায় প্রমাণ (প্রামাণিক) নয়। ১০. ব্রহ্মসূত্রে কি মাংসাহারের বিধান রয়েছে? রাহুল ব্রহ্মসূত্রের রেফারেন্স দিয়ে বলেছে যে - যজ্ঞে পশু হত্যা করলে হিংসা হয়না তথা পশু হত্যা এবং মাংস খাওয়ার বিধান রয়েছে। সেই রেফারেন্স অনুযায়ী সূত্রটিতে কি বলা হয়েছে দেখে নিন - অশুদ্ধমিতি চেৎ , ন , শব্দাৎ।। (ব্রহ্মসূত্র-৩/১/২৫) চেৎ = যদি বলা হয় যে, অশুদ্ধম্ = এ তো অশুদ্ধ (পাপ) কর্ম হবে ; ইতি, ন = তো এমনটা নয় ; শব্দাৎ = শ্রুতিবাক্যে এর নির্দোষতা সিদ্ধ হয়। ব্যাখ্যা : যদি এমন শঙ্কা করা হয় যে, অনাজকে প্রত্যেক দানাতে জীব রয়েছে, এই মান্যতা অনুযায়ী অন্ন কে ভাঙ্গানো, রান্না করা, ভোজন করা তো বড় অশুদ্ধ (পাপ) কর্ম হবে ; কেননা তা দ্বারা তো অনেক জীব কে হিংসা করা দ্বারা এক জীবের উদরপূর্তি হবে, তো এমনটা নয় ;কেননা এই প্রকারে পুরুষকে "অগ্নি" বলে তাতে অন্ন কে হবন করো বলেছেন তথা শ্রুতিতে জাগায়-জাগায় অন্নকে ভোজন করার বর্নন রয়েছে (ছান্দোগ্যোপনিষদ- ৬/৬/২)। অতঃ শ্রুতির বিধান হওয়ার কারনে তা দ্বারা হিংসা হয় না তথা সেই সময় জীব সুষুপ্তি অবস্থায় থাকে....... [গীতা প্রেস থেকে প্রকাশিত ] বাংলা ভাষায় প্রকাশিত বেশির ভাগ শাস্ত্রাদিতে ভুল পাওয়া যায় মিথ্যাচার পাওয়া যায়, হিন্দীতেও অবশ্য রয়েছে এমনটা। যেমন ধরুন বৃহদারণ্যক উপনিষদে গোমাংসাহার বিষয়টি শঙ্করাচার্য ভাষ্য বলে বাংলায় প্রকাশ করে চালাচ্ছে। কিন্তু গীতাপ্রেস থেকে প্রকাশিত শঙ্করাচার্য ভাষ্যে তা পাওয়া যায়না। ১১. পণ্ডিত মহেন্দ্রপাল ভুল ভাষ্য থেকে দিয়েছে বলায় রাহুল বলেছেন যে, তাহলে গিয়ে প্রকাশনী বন্ধ করে দিন। মহেন্দ্রপাল বলেছেন আমরা (বন্ধ) করতে যাবো কেন! যারা পাঠ করবে তাদের বিবেচনা করা উচিৎ।। ধরুন আপনি একটা ভাষ্য করলেন আর অপর কেহ একটা ভাষ্য করেছিলেন। এখন আপনি অপরের ভাষ্য প্রকাশনী বন্ধ করতে চলে গেলেন, তালা দিলেন। এটা করলে কি সঠিক আমজনতা আপনাকে সাধু বলবে নাকি সন্ত্রাসী বলবে? হ্যাঁ শাস্ত্রার্থ করা যেতে পারে, বুঝানো যেতে পারে। কিন্তু ওরা যদি শাস্ত্রার্থ করতে রাজি না হয় আর বুঝতেও চেষ্টা না করে তাহলে কি করার? আপনাদেরও (মুসলমানদেরও) তো কুরানের সকল অনুবাদে ভুল রয়েছে তা কুরানের সকল প্রকাশনী বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে না কেন? কুরানের সকল appএতেও ভুল অনুবা তা বন্ধ করে দিচ্ছেন না কেন? সকল কুরান অনুবাদ ভুল এটা কিন্তু আমি নই আলেমই বলেছে, দেখে নিবেন এতে - https://youtu.be/Uwm6WKffH-I

এই ভিডিও গুলা দেখুন। আমাদের ধর্মে গো ভক্ষণ, মাংস খাওয়া বা বলির প্রথা আছে কি নেই দেখুন। ( এইটা কোনো এরাগেরা না আনেক বড় achrya . জগদগুরু আদি শঙ্করাচার্য এর ভক্ত তিনি দেখেন আবার শঙ্করাচার্য কি এইগুলা support করতে পারবে?
মহাভারত থেকে রাহুল শ্রাদ্ধের কিছু রেফারেন্স দিয়ে বলেছে যে এখানে বিভিন্ন পশুর মাংস ভক্ষণের বিধান দেওয়া হয়েছে। মহাভারত অনেকাংশই প্রক্ষিপ্ত সেটা শাস্ত্রাধ্যয়নকারীরা জানেন। শ্রাদ্ধ বিষয়ক সে যা বলেছে তা অতিথি যজ্ঞ আর যজ্ঞ সম্পর্কে মহাভারতে বলা হয়েছে - নৈষ ধর্মঃ সতাং দেবা যত্র বধ্যেত বৈ পশুঃ। (মহাভারত, শান্তিপর্ব- ৩৩৭/৫) অনুবাদঃ- যেথায় যেকোন যজ্ঞে পশুকে বধ করা হয়, তা সৎপুরুষের ধর্ম নয়।

আবার তিনি বৃহদারণ্যক উপনিষদের রেফারন্স তুলে কথা বলেছেন

অথ য ইচ্ছেৎ পুত্রো মে পন্ডিতো বিগীতঃ সমিতিংগমঃ শ্রূষিতাং বাচং ভাষিতা জায়েত সর্বান্ বেদাননুব্রবীত সর্বমায়ুরিয়াদিতি মাংসৌদন পাচয়িত্বা সর্পিষ্মন্তমশ্নী য়াতামীশ্বরো জনয়িতবা ঔক্ষেণবার্ষভেন বা ।। (বৃহদারণ্যক—০৬। ৪।১৮) কন্ডিকা নিয়ে একটা শঙ্কা আমাদের সামনে প্রায়শই উঠে । শঙ্কটা এরূপ যে, বিদ্বান পূত্র লাভের জন্য স্বামী স্ত্রী উভয়ে বৃষের মাংস দ্বারা পাককৃত অন্ন আহার করবে ।

    এখানে উক্ষা, ঋষভ ও মাংসৌদন এই তিনটি শব্দের উপর বিস্তারিত আলোচনা প্রয়োজন ।  অনেক পাঠক ভ্রান্তিবশত ভাবতে পারেন যে , যারা উত্তম , বেদজ্ঞ সন্তান কামনা করে তাদেরকে মাংস ও ভাত মিশিয়ে খাওয়ার এবং বৃষের মাংসভক্ষণ করার এখানে বিধান দেওয়া হয়েছে । কিন্তু বাস্তব তথ্য অন্য ।

      বাচষ্পত্যবৃহদভিদান এবং Sanskrit English Dictionary by Apte and Monier Williams থেকে প্রমাণ উদ্ধৃত করে দেখানো হয়েছে যে , উক্ষার অর্থ সোমও এবং ঋষভের অর্থ ঋষভক নামক ঔষধিও । সুতরাং গর্ভবতী স্ত্রী ও তার পতির জন্য সোম ও ঋষভক তুল্য বীর্যবর্ধক ঔষধির সেবনের বিধান এখানে দেওয়া হয়েছে , বৃষের মাংসভক্ষণের নয় ।

     সুশ্রুত দ্বিতীয় অধ্যায়ে গর্ভিণীদের পক্ষে মাংসাহার অত্যন্ত ক্ষতিকর এমনকি গর্ভোপঘাতকও বলা হয়েছে যেমন–

     গর্ভোপঘাত করাস্তিমেভাবাঃ – ন রক্তানি বাসাংসিবির্ভয়াৎ ,

       ন অভ্যবহরেৎ , ন য়ানমধি রোহেৎ , ন মাংসশ্নীয়াৎ ।

    এখানে গর্ভিনীদের জন্য মাংসাহার সম্পূর্ণ নিষেধ করে তার গণনা গর্ভোপঘাতকদের মধ্যে করা হয়েছে । তাহলে কি করে এটা সম্ভব হতে পারে যে , বেদজ্ঞ, উত্তম, সাত্ত্বিক সন্তান প্রাপ্তির জন্য মাংসাহারের বিধান দেওয়া আছে ?  

  এই মন্ত্রটির পূর্ব মন্ত্রগুলিতে ক্ষীরৌদন , দধৌদন , উদৌদন , ইত্যাদির বিধান লক্ষিত হয় ,  অতএব বিচারশীল , বিদ্বানদের মতই এখানে সুসঙ্গত মনে হয় অর্থাৎ মাংসৌদনম্ শব্দটির শুদ্ধ পাঠ হবে মাসৌদনম্  মাষের সঙ্গে মিশ্রিত ভাত ।

এখানে, "মাংসৌদনং" শব্দটি প্রক্ষিপ্ত।কেন প্রক্ষিপ্ত এটা বুঝতে হলে,এই শ্লোকের আগের শ্লোকগুলো দেখতে হবে।
আসুন দেখা যাক~
"সুদর্শন,একটি বেদের অধ্যয়ণকারি এবং পূর্ণায়ু যুক্ত পুত্র চাইলে,পায়েস রান্না করে ঘিয়ের সাথে,স্বামী ও গর্ভবতী স্ত্রীকে খেতে হবে।
বৃহঃ 6/4/14
"দুটো বেদের অধ্যয়ণকারি, পূর্ণ আয়ু যুক্ত পুত্র চাইলে,দই মেশানো ভাত ঘিয়ের সাথে খেতে হবে।"
বৃহঃ 6/4/15
তিনটে বেদের অধ্যয়ণকারি ও পূর্ণ আয়ু যুক্ত পুত্র চাইলে,জলে ভাত রান্না করে,ঘিয়ের সাথে খেতে হবে।
বৃহঃ 6/4/16
বিদ্বান বা পন্ডিতা কন্যা চাইলে,তিল মেশানো ভাত,ঘিয়ের সাথে খেতে হবে।
বৃহঃ 6/4/17
উপরের চারটি শ্লোকে দেখুন,দুধ ভাত,দই ভাত,জল ভাত এবং তিল ভাত, ঘি মিশিয়ে খেতে বলা হয়েছে।মাংসের কোন উল্লেখ নেই।তাহলে,হঠাৎ,6/4/18 শ্লোকে মাংসের উল্লেখ আসে কিভাবে?!!
সুতরাং,এই শ্লোকের "মাংসৌদনং" শব্দটি প্রক্ষিপ্ত।কোন মাংস লোলুপ প্রতারক ব্যক্তি এই শব্দটি সংযোগ করেছেন।

তাছাড়া,যর্জুবেদের,12/73 মন্ত্রে এবং অথর্ব বেদের, নবম কান্ড_দ্বিতীয় অনুবাক_দ্বিতীয় সূক্ত_সতেরো নং মন্ত্রে,বৃষ বা ষাঁড়কে অঘ্ন্যা বলা হয়েছে।অর্থাৎ,বৃষ বা ষাঁড়কে,হত্যা করতে পরিস্কার নিষেধ আছে।

   

    গর্ভিণী প্রকরণে বৈদ্যক গ্রন্থে মাষের ব্যবহার দেখুন–

       ততোৎপরাহ্নে পুমান মাসং ব্রহ্মচারী সর্পিঃ স্নিগ্ধঃ সর্পিঃ ক্ষীরাভ্যা শাল্যোদনং ভুক্তা মাংস ব্রহ্মচারিনীং তৈলস্নিগ্ধৌং

তৈলমাষোত্তরাহারাং নারীমুপেয়াদ্ রাত্রৌ ।

–সুশ্রুত শরীরাধ্যায় দ্বিতীয়

     অর্থাৎ উত্তম সন্তান প্রাপ্তি হেতু মধুর ঔষধযুক্ত ঘৃত ও দুগ্ধ সেবন করবে এবং স্ত্রীকে তেল ও মাষ সেবন করাবে ।

      ইত্যাদি বচন দ্বারা এটা পরিষ্কার যে , এখানে শুদ্ধ পাঠ মাষৌদনম্  । কোন মাংসলোলুপ ব্যাক্তি একে মাংসৌদনম্ লিখে দিয়েছে এবং পরবর্তীতে সেটাই প্রচলিত হয়ে যায় ।

    তবুও যদি কেউ হঠকারিতাবশত মনে করে যে , মাংসৌদনম্ কেই শুদ্ধ পাঠ মানতে হবে  তাহলে নিরুক্ততে মাংসের যে ব্যুৎপত্তি দেওয়া আছে তার ভিত্তিতে বলতে হয় যে ফলের মাংসল অংশ বা শাঁস এবং মনে ভালো লাগে এমন কোন উত্তম রুচিকর বস্তু – এই অর্থ গ্রহণ করা যেতে পারে ।

মাংসং মাননং বা মানসং বা মনোস্মিন্ সীদতীতি বা ।

(নিরুক্ত ৪-১-৩)

    অর্থাৎ মাংস বলতে কোন মাননীয় , বুদ্ধিবর্ধক ও মনপছন্দ বস্তু যেমন ক্ষীর , রাবড়ি , ছানা , ফলের শাঁস ইত্যাদি বুঝায় ।

    চরক সংহিতা চিকিৎসাদশম্ অধ্যায়ে খর্জুর মাংসান্যথ নারিকেল–কোলথি মজ্জাংজন মক্ষিকা বিট এবং বৃহন্নিঘন্টতে–

আম্রস্যানুফলে ভবন্তি যুগপম্নাংসাস্থিমজ্জাদয়ঃ , লক্ষ্যন্তে ন পৃথক–পৃথক স্ফুটতয়া , পুষ্টাস্তএব স্ফুটাঃ ।

  অর্থাৎ আমের শাঁসের জন্য মাংস এবং আটিঁর জন্য অস্থি শব্দের প্রয়োগ হয় । খেজুরের নরম খাওয়ার যোগ্য অংশকে ‘খর্জুর মাংস’ শব্দের প্রয়োগ দেখে তাকে পশু মাংসবাচক মনে করা অত্যন্ত ভুল ।

      শতপথ ব্রাহ্মণ ১১-৭ এ “এতদ্ হ বৈ পরমম্ অন্নাদ্যং য়নমাংসম্” বলে স্পষ্ট ভাষায় পরপান্নর (ক্ষীর) জন্য মাংস শব্দের ব্যবহার হয়েছে ।

‘পরমান্নং তুপায়সম্’

অমরকোষ –কান্ড ০২ শ্লোক ২৪ ।

 

পায়সং পরমান্নকে– হৈমচন্দ্রঃ , পায়সস্তুক্লীবপুংসৌ , শ্রীবাস পরমান্নয়ো ।।

মেদিনী পরমান্নম্ – ক্ষীর , দুগ্ধ সহ রন্ধিত চাল ।  

সংস্কৃত শব্দার্থ কৌস্তভ,  পৃঃ-৪৭২ ।

     উক্ত প্রমাণ গুলির দ্বারা প্রমাণিত হয় যে , ক্ষীর স্বাদযুক্ত তৃপ্তি ও পরমান্নকর হওয়ায় যজ্ঞের পরিভাষায় মাংস বলে ব্যবহৃত হয়েছে  ।  

য়দা পিষ্টানি অথ লোমানি ভবন্তী ।

য়দাপ উন্নয়তি অথ ত্বগ্ ভবতি ।।

য়দা সংয়ৌত্যথ মাংসং ভবতি ।

এবং গোপথে উ০প্র০ ৪-৬—

পশবো বৈ ধানাঃ ।

দধিমধু ঘৃতমাপো ধানা ভবন্তি এতদ্ বৈ পশূনাং রূপম্ ।।

(তৈত্তিরীয় সংহিতা ২-৩ -২- ৮ পৃঃ ১১৬ )

    ইত্যাদি বাক্য থেকে জানা যায় যে , মাখানো আটা এবং ধান ও দধি, মধু , ঘৃতর জন্য পশু আদি শব্দের প্রয়োগও প্রাচীন গ্রন্থে কোথাও কোথাও দেখতে পাওয়া যায় । সেসব দেখে পশুর মাংস বলে ভ্রম হওয়া উচিত নয় ।

     আরোও দেখুন


     যজ্ঞ প্রকরণে বিখ্যাত ঔষধ গুগ্গুলের জন্য বলা হয়েছে —

ন তং য়ক্ষ্মা অরুন্ধতে ন তং শপথো অশ্নুতে ।

য়ত্রৌষধস্য গুগ্গুলোঃ সুরভিগন্ধো অশ্নুতে ।।

অথর্ব্ববেদ০ ১৯/৩৮।

     এই মন্ত্রে যক্ষার মতো ভয়ঙ্কর রোগের জীবানু নাশ করে এই গুগ্গুল । তার জন্য মাংসের প্রয়োগ দেখুন– য়নমাংসমুপভৃতং তদ্ গুগ্গুলো ।।

(তৈত্তিরীয় সংহিতা ৬-২-৮ পৃ০-৩৮৫)

অর্থাৎ যজ্ঞসম্বন্ধী সামগ্রী মধ্যে গুগ্গুলকে মাংস বলা হয় ।


ধর্ম পথ হতে বিচ্যুত লোক নিজ মাংসলোলুপতার বশীভূত হয়ে যজ্ঞে পশুবলির প্রথা প্রচলন করেছে। যার প্রমাণ আমরা মহাভারতে পাই  -

.সুরা মৎসা মধু মাংসমাসবং কৃসরোদনম্।

ধুর্তেঃ প্রবর্তিতং হোতন্নৈবদ্ বেদেষু কল্পিতম।।

(মহাঃ শান্তি পর্বঃ ২৬৫,শ্লোক ৯)

---সুরা, মৎস, মাংস, তালরস, এইসব বস্তুকে ধুর্তেরাই যজ্ঞে প্রচলিত করেছে।  বেদে এসব উপযোগের বিধান নেই।

An Analysis of Meat in Manusmriti

অগ্নে যে যজ্ঞমধ্বরং বিশ্বতঃ পরিভূরসি।
স ঈদ্ দেবেষু গচ্ছতি।।
ঋগ্বেদ0১।১।৪
অর্থ-হে অগ্নি(জ্ঞানস্বরূপ পরমাত্না),তুমি অধ্বর অর্থাৎ হিংসারহিত যজ্ঞে ব্যাপ্ত থাকো এবং এইরকম যজ্ঞ সত্যনিষ্ঠ বিদ্বানেরা স্বীকার করে থাকেন।
এইখানে,"অধ্বর" শব্দটি খেয়াল করুন।ঋগ্বেদের বহু মন্ত্রে,অধ্বর শব্দের প্রয়োগ আছে।যথা,১।২৬।১, ১।৪৪।১৩,১।৭৪।১, ১০।২২।৭ ইত্যাদি।
নিরুক্তে দেখুনঃ
অধ্বরঃ ইতি যজ্ঞনাম ধ্বরতিহিংসাকর্মা তৎপ্রতিষেধঃ|
নিরুক্ত-প্রথম অধ্যায়ঃদ্বিতীয় পাদঃচতুর্থ পরিচ্ছেদ-শ্লোক- ১৫
শব্দার্থ-অধ্বরঃ ইতি(অধ্বর এই শব্দটি) যজ্ঞনাম(যজ্ঞের নাম),ধ্বরতিঃ(ধ্বর ধাতু),হিংসাকর্মা (হিংসাত্মক), তৎপ্রতিষেধঃ(যজ্ঞহিংসার অভাব যুক্ত)।
অর্থ~অধ্বর হল,যজ্ঞের নাম।ধ্বর্ ধাতু হিংসাবাচক।যজ্ঞে হিংসা নেই বলে তা অধ্বর।
আলোচনা~ অধ্বর মানে যজ্ঞ।ধ্বর্=হিংসা(ধ্বর্+অচ্)।ধ্বর বা হিংসা যাহাতে নেই তাহাই অধ্বর।অথবা,ধ্বর্+ঘ প্রত্যয়(পাণিনি~৩।৩।১১৮)=ধ্বর।ধ্বর অর্থ যে কাজে হিংসা হয়।তাকে বারণ করা হচ্ছে অর্থাৎ হিংসার বিপরীত যা তাই অধ্বর বা অহিংসা।তাই যজ্ঞ হিংসারহিত বা অধ্বর।
তাছাড়া, যর্জুবেদের অনেক মন্ত্রে পশুদের প্রতি হিংসা নিষিদ্ধ করা হয়েছে।যথা-
দ্বিপাদব চতুস্পাদ পাহি-যর্জু-১৪।৮
অর্থাৎ,দ্বিপদ বা মানুষ এবং চতুস্পদ বা পশুদের সর্বদা রক্ষা করা কর্তব্য।
গীতায় কোন মাংস ভক্ষণেরই বিধান দেয়নি। ইসকনের গীতা ভাষ্যের রিডিং থেকে রাহুল রেফারেন্স দিয়ে বলেছে যে যজ্ঞে পশু হত্যা করা হিংসা নয়। যাই হোক প্রভুপাদ বা ইসকন কি লিখেছে তাতে কিছু আসে যায়না। ইসকন তো কৌরানিক জোকসও প্রচার করে যেমন - কুরানে বলা হয়েছে মৃত গরু জীবিত করা হয়েছিল আর ইসকনীরাও বলে পূর্বে নাকি যজ্ঞে পশু হত্যা করে সেই পশুকে আবার জীবিত করা হতো। রাহুল এও বলেছে যে - ইনজেকশন বা এমন ঔষধি আছে যা প্রয়োগ করলে পশু আরামে মরে যাবে, কোন কষ্টই হবেনা আর হিংসাও হবেনা। বলতে ইচ্ছে করে যে- কেনরে ভাই ছুরি চাপাতি চালিয়ে হত্যা করলে হত্যা হয় আর ইনজেকশন দিয়ে মারলে হত্যা হয়না নাকি? কেহ যদি আপনাকে ইনজেকশন দিয়ে মারে তাহলে পুলিশ কি তাকে ধরবে না? গীতায় তো বলা হয়েছে - যথার্থ জ্ঞানবান পন্ডিত বিদ্যা, বিনয় সম্পন্ন ব্রাহ্মণ,গাভী, হস্তী,কুকুর ও চন্ডাল সকলের প্রতি সমদর্শী হয় (গীতা-৫/১৮) যথার্থ জ্ঞানবান যেমন মনুষ্য হত্যা করতে পারেনা মনুষ্যের মাংস খেতে পারেনা তেমনি গরু,ঘোড়া,ছাগল.... জীবকেও হত্যা করতে পারেনা বা তার জন্য নিষিদ্ধ এবং মাংস খাওয়াও নিষিদ্ধ। কারন যথার্থ জ্ঞানবান সকলের প্রতি সমদর্শী। রাহুল আরেকটি কথা বলেছে যে মৃত পশুর মাংস খান তাহলেই তো হিংসা হবেনা। আরে রাহুল কি বোকা নাকি যেখানে মাংস খাওয়াই নিষিদ্ধ সেখানে জ্যান্ত বা মৃতের প্রশ্ন আসে কোত্থেকে। কবর থেকে তুলে বা লাশ ঘর থেকে একটা মানুষের লাশ এনে তার মাংস খেলে কি মানুষ আপনাকে হিংসক বলবে না, নৃশংস বর্বর বলবে না?
মহেন্দ্রপাল আর্য বেদের বিভিন্ন রেফারেন্স দিয়ে "অঘ্ন্যা" শব্দ উদ্ধৃত করে বলেছেন যে বেদে গোজাতিকে হত্যার অযোগ্য তথা হত্যা করা যাবেনা বলেছেন। (ঋগ্বেদ-৮/৬৯/২ একটি দিলাম কিন্তু মহেন্দ্রপাল অনেকগুলো রেফারেন্স দিয়েছেন)  তিনি অথর্ববেদ থেকেও অসংখ্য রেফারেন্স দিয়ে বলেছেন যে গো হত্যা নিষিদ্ধ এবং পালন ও রক্ষার কথা বলা হয়েছে। তবে তিনি রাহুলের দেওয়া রেফারেন্স এর মন্ত্রগুলো সরাসরি খণ্ডণ না করে অন্যান্য রেফারেন্স দিয়ে পরোক্ষভাবে করেছেন, তিনার কাছে বিশুদ্ধ ভাষ্যের বেদ ছিল, তিনি ভিডিওতে তা দেখিয়েছেনও কিন্তু তা থেকে তিনি পাঠ করেননি। মহেন্দ্রপালকে আলোচনাত্মক ডিবেট বলায় হয়তো তিনি তেমন গুরুত্ব দেয়নি, গুরুত্ব দেওয়া উচিৎ ছিল। আলোচনার ন্যায় তিনি বলেছেন যে কুয়োর ব্যাঙের ন্যায় কুয়োকেই দুনিয়া মনে করিওনা অর্থাৎ যেটা থেকে রেফারেন্স দিচ্ছেন সেটাকেই সব এবং সঠিক ভাবিও না জানতে হলে অন্যগুলোও পড়ো, তাহলেই সত্যান্বেষী হওয়া যাবে, এমনটা তিনি বুঝানোর চেষ্টা করেছেন। শুধু যে তিনিই অন্য রেফারেন্স দিয়ে পশু হত্যা নিষিদ্ধ বুঝিয়েছেন বা পরোক্ষভাবে খণ্ডণ করেছেন তা কিন্তু নয়, রাহুলও একই কাজ করেছেন। মহেন্দ্রপাল যখন  কুরান-২/১৭৩ উদ্ধৃত করে বলেছিলেন, আল্লাহ মৃত জীব খেতে বারন করেছেন, আর মৃত বলতে প্রাণহীন, আত্মাহীন, রুহুহীন জীব। ছুড়ি চালিয়ে হোক বা অন্য যেভাবেই হোক হত্যা করলে আত্মাহীন হয়ে মৃত হয়ে যাবে তা যেহেতু মৃত তাই তা খাওয়া নিষিদ্ধতার আওতায় পরে, আর জীবিত থাকা অবস্থায় তো আর খাওয়ার উপযোগী নয় সুতরাং পরোক্ষভাবে মাংস খাওয়া নিষিদ্ধ।  তার জবাবে রাহুল অন্য আরেকটি রেফারেন্স দিয়ে বলেছে যে নিজে মরে যাওয়া, ছাদ থেকে পরে মরে যাওয়া....জীবের মাংস খাওয়া নিষেধ। যাই হোক কুরান-২/১৭৩ আয়াতে তা বলা হয়নি (কমেন্টে  ছবি দিয়ে দিয়েছি দেখে নিবেন)। আর এখানে কুরানের স্ববিরোধীতা প্রমান হলো, মহেন্দ্রপালও তাহাই বলেছেন। 

২০১৫ সালে ব্রাদার রাহুলের প্রশ্ন গুলির উত্তর দেওয়া হয়েছিল যে পোষ্টে সেই পোষ্টি এখান থেকে পড়ুন। পোষ্টের কমেন্ট লাইনে গিয়ে<<
বৃহদারণ্যক উপনিষদের ৬।৪।১৮ কন্ডিকা নিয়ে  প্রশ্ন তোলা হয়েছে
বিদ্বান পূত্র লাভের জন্য  স্বামী স্ত্রী উভয়ে বৃষের মাংস  দ্বারা পাককৃত অন্ন আহার করবে।
  
অর্থাৎ ইহা দ্বারা সনাতন ধর্মে গোমাংস খাওয়ার বিধান সিদ্ধ এমনটা দাবী করে অপপ্রচারকারীরা। মূলত আমাদের ধর্মের মূল স্রোত হলো বেদ। 

বেদের জ্ঞান দ্বারাই পরবর্তিতে অনেক শাস্ত্র রচিত হয়েছে।বেদে আমরা গোহত্যার বিরুদ্ধে স্পষ্ট প্রমাণ পাই।
গো হত্যা সমন্ধ্যে বেদ বলছে যে, 
"মা গাম অনাগাম অদিতিম বধিষ্ট"
(ঋগবেদ ৮।১০১।১৫) 
অর্থাৎ নিরপরাধ গাভী এবং ভূমিতূল্য গাভীকে কখনো বধ করো না।
শুধু তাই নয় গোহত্যাকারীকে দন্ডের বিধান দিয়ে বেদ বলছে যে -

যদি আমাদের গাভীকে হিংসা কর যদি অশ্বকে  যদি মনুষ্যকে হিংসা কর তবে তোমাকে সীসক দ্বারা বিদ্ধ করিব। (অথর্ববেদ ১।১৬।৪)। 

Rigveda 1.164.40 or Atharv 7.73.11 or Atharv 9.10.২০

The Aghnya cows – which are not to be killed under any circumstances– may keep themselves healthy by use of pure water and green grass, so that we may be endowed with virtues, knowledge and wealth.

বেদে আঘ্ন্যা . অহি , ও অদিতি হচ্ছে গরুর সমপদ।
আঘ্ন্যা মানে যাকে হত্যা করা উচিত নয় ।
অহি মানে যার গলা কাটা / জবাই করা উচিত নয় ।
অদিতি মানে যাকে টুকরো টুকরো করা উচিত নয় ।
(Source: Yaska the commentator on Nighantu )

Aghnyeyam saa vardhataam mahate soubhagaaya
Rigveda 1.164.27 আঘ্ন্যা গরু আমাদের সুসাস্থ্য ও উন্নতি আনে ।
স্বামী দয়ানন্দ সরস্বতীকৃত ভাষ্যে কি লেখা আছে দেখুন
हि॒ङ्कृ॒ण्व॒ती व॑सु॒पत्नी॒ वसू॑नां व॒त्समि॒च्छन्ती॒ मन॑सा॒भ्यागा॑त्।
 दु॒हाम॒श्विभ्यां॒ पयो॑ अ॒घ्न्येयं सा व॑र्धतां मह॒ते सौभ॑गाय ॥ঋগ্বেদ ১।১৬৪।২৭
पदार्थान्वयभाषाः -जैसे (हिङ्कृण्वती) हिंकारती और (मनसा) मन से (वत्सम्) बछड़े को (इच्छन्ती) चाहती हुई (इयम्) यह (अघ्न्या) मारने को न योग्य गौ (अभि, आ, अगात्) सब ओर से आती वा जो (अश्विभ्याम्) सूर्य और वायु से (पयः) जल वा दूध को (दुहाम्) दुहते हुए पदार्थों में वर्त्तमान पृथिवी है (सो) वह (वसूनाम्) अग्नि आदि वसुसञ्ज्ञकों में (वसुपत्नी) वसुओं की पालनवाली (महते) अत्यन्त (सौभगाय) सुन्दर ऐश्वर्य के लिये (वर्द्धताम्) बढ़े, उन्नति को प्राप्त हो ॥
भावार्थभाषाः -इस मन्त्र में वाचकलुप्तोपमालङ्कार है। जैसे पृथिवी महान् ऐश्वर्य को बढ़ाती है, वैसे गौएँ अत्यन्त सुख देती हैं, इससे ये गौएँ कभी किसीको मारनी न चाहियें ॥ 

Suprapaanam Bhavatvaghnyaayaah
Rigveda 5.83.8 আঘ্ন্যা গরুর জন্য সুপেয় জলের উন্নত ব্যবস্থা থাকা উচিত ।
म॒हान्तं॒ कोश॒मुद॑चा॒ नि षि॑ञ्च॒ स्यन्द॑न्तां कु॒ल्या विषि॑ताः पु॒रस्ता॑त्।
घृ॒तेन॒ द्यावा॑पृथि॒वी व्यु॑न्धि सुप्रपा॒णं भ॑वत्व॒घ्न्याभ्यः॑ ॥
স্বামী দয়ানন্দ ভাষ্যঃ
हे मनुष्यो ! जो सूर्य्य (महान्तम्) बड़े परिमाणवाले (कोशम्) घनादिकों के कोश के समान जल से परिपूर्ण मेघ को (उत्) (अचा) ऊपर प्राप्त होता है और जिससे पृथिवी को (नि, सिञ्च) निरन्तर सींचता है और (पुरस्तात्) प्रथम (विषिताः) व्याप्त (कुल्याः) रचे गये जल के निकलने के मार्ग (स्यन्दन्ताम्) बहें और जो (घृतेन) जल से (द्यावापृथिवी) पृथिवी और अन्तरिक्ष को (वि, उन्धि) अच्छे प्रकार गीला करता है वह (अघ्न्याभ्यः) गौओं के लिये (सुप्रपाणम्) उत्तम प्रकार प्रकर्षता से पीते हैं जिसमें ऐसा जलाशय (भवतु) हो, यह जानो ॥
भावार्थभाषाः -हे मनुष्यो ! जो बिजुली, सूर्य्य और वायु मेघ के कारण हैं, उनको यथायोग्य प्रयुक्त कीजिये जिससे वृष्टि द्वारा गौ आदि पशुओं का यथावत् पालन होवे ॥

বেদে গোহত্যা এবং গোমাংস খাওয়া সম্পূর্ণ ভাবে নিষিদ্ধ এটা কমুনিস্ট এবং মিশনারীরা মানতে পারে না। আমাদের বৈদিক সমাজ ব্যবস্থা তাদের সমাজ এর চেয়ে আদর্শিক ভাবে উন্নত। এদের সাথে যোগ হয়েছে একদল ধর্ম ব্যবসায়ী। তারা বেদ ও মনুসংহিতা থেকে গরুর মাংস খাওয়ার Reference খুঁজে বের করতে চায় একটি এদের সহজ Trick হচ্ছে ‘মানসা‘ কে meat / মাংস হিসেবে অনুবাদ করা । অনেকের মতে ‘মানসা‘ মানে ডাল জাতীয় খাবার ।

পন্ডিত রাহুলের মতো অনেকে বলেন,”বৃষের মাংশ [ঋকবেদ:১/১৬৪/৪৩], মহিষের মাংস [ঋকবেদ: ৫/২৯/৮], অজের মাংস [ঋকবেদ:১/১৬২/৩] খাওয়া হতো।- আরও বলা হয়েছে পরস্বিনী গাভী মানুষের ভজনীয় [ ঋকবেদ:৪/১/৬]।- গো হত্যা স্থানে গাভীগণ হত্যা হতো [ঋকবেদ:১০/৮৯/১৪]। ইন্দ্রের জন্য গোবৎস উৎসর্গ করা হয়েছে। [ঋকবেদ:১০:৮৬:১৪]। এমনকি উপনিষদ বলছে: ‘বেদজ্ঞান লাভ করতে হলে, স্বাস্থ্যবাদ সন্তান লাভ করতে হলে ষাঁড়ের মাংস খাওয়া জরুরী।”

জবাব: সমপদের অর্থ আর প্রয়োগ না জানলে এ রকম ই হবে ।
যেমন:
"keshavaM patitaM dr^shtvA pandavAH harshsha nirbharAH
rudanti kauravAssarve hA keshava hA keshava."

সোজা কথায় মন্ত্রের অর্থ হবে কেশব/কৃষ্ণ কে পরে যেতে দেখে পান্ডবরা উল্লসিত হলো আর কৌরবরা ও কৃষ্ণ, ও কৃষ্ণ বলে অর্থনাদ করে উঠলো।
এখন এটার কোনো মানে হয় না । কারণ কৃষ্ণ ছিলেন পান্ডবদের পক্ষে।

একই শব্দের নানা অর্থ থাকে।

দেখুন:
১. কেশব= জল
২. পান্ডব= সারস পাখি
৩. কৌরব= কাক
৪. শব= মৃত দেহ
এবার অর্থ দেখুন:

"keshavaM patitaM dr^shtvA pandavAH harshsha nirbharAH
rudanti kauravAssarve hA keshava hA keshava.'

মৃত দেহটিকে জলে পড়ে যেতে দেখে সারস পাখি খুশি হলো এবং কাক আর্তনাদ করে উঠলো- মৃত দেহটি
জলে পড়ে গেছে, মৃত দেহটি জলে পড়ে গেছে।

এখন আমাদের পন্ডিতরাকি বলবেন ‘ কৃষ্ণকে পান্ডবরা ঘৃনা করতেন?’ একই ভাবে রাহুল ভাই চালাকি করেছেন ।
श॒क॒मयं॑ धू॒ममा॒राद॑पश्यं विषू॒वता॑ प॒र ए॒नाव॑रेण।
उ॒क्षाणं॒ पृश्नि॑मपचन्त वी॒रास्तानि॒ धर्मा॑णि प्रथ॒मान्या॑सन् ॥ऋग्वेद १.१६४.४३
पदार्थान्वयभाषाः -हे मनुष्यो ! मैं (आरात्) समीप से (शकमयम्) शक्तिमय समर्थ (धूमम्) ब्रह्मचर्य कर्मानुष्ठान के अग्नि के धूम को (अपश्यम्) देखता हूँ (एना, अवरेण) इस नीचे इधर-उधर जाते हुए (विषूवता) व्याप्तिमान् धूम से (परः) पीछे (वीराः) विद्याओं में व्याप्त पूर्ण विद्वान् (पृश्निम्) आकाश और (उक्षाणम्) सींचनेवाले मेघ को (अपचन्त) पचाते अर्थात् ब्रह्मचर्यविषयक अग्निहोत्राग्नि तपते हैं (तानि) वे (धर्माणि) धर्म (प्रथमानि) प्रथम ब्रह्मचर्यसञ्ज्ञक (आसन्) हुए हैं ॥ 
भावार्थभाषाः -विद्वान् जन अग्निहोत्रादि यज्ञों से मेघमण्डलस्थ जल को शुद्ध कर सब वस्तुओं को शुद्ध करते हैं इससे ब्रह्मचर्य के अनुष्ठान से सबके शरीर, आत्मा और मन को शुद्ध करावें। सब मनुष्यमात्र समीपस्थ धूम और अग्नि वा और पदार्थ को प्रत्यक्षता से देखते हैं और अगले-पिछले भाव को जाननेवाला विद्वान् तो भूमि से लेके परमेश्वरपर्यन्त वस्तुसमूह को साक्षात् कर सकता है ॥

ব্রাদার রাহুল উপনিষদের ওপর যে আরোপ লাগিয়েছেন তার বিস্তারিত আলোচনা করে দেখবো আসলে উপনিষদে কি বলা হয়েছে।
উপনিষদ বেদেরই ব্যাখ্যা  হওয়ার হেতু  উপনিষদে গোমাংস আহারের নির্দেশ কদাপি থাকতে পারে না।  আমাদের স্থুল বিচার বিবেচনার জন্যই মূলত এরূপ শঙ্কার উদ্ভব হয়েছে। আসুন বিষয়টি নিয়ে একটু  বিস্তারিত বিশ্লেষন করা যাক - 

অথ য ইচ্ছেৎ পুত্রো মে পন্ডিতো বিজিগীতঃ সমিতিঙ্গমঃ শুশ্রুষিতাং বাচ্য ভাষিতা জায়েত সর্বাণ বেদাননুববীত সর্বমায়ুরিয়াদিতি মাষৌদনং পাচয়িত্বা সর্পিষ্মন্তমশ্নীয়াতামীশ্বরৌ জনয়িতবা ঔক্ষেণ বার্ষভেণ বা।।  (বৃহঃ উপঃ ৬।৪।১৮) 

শব্দার্থঃ (অথ যঃ ইচ্ছেত্ পুত্রঃ মে) এবং যে এই ইচ্ছা করে যে আমার পুত্র (পন্ডিতঃ) বিদ্বান (বিজিগীথঃ) প্রসিদ্ধ (সমিতিয় গমঃ) সভায় গমন যোগ্য (শুশ্রুষিতাম বাচম্ ভাষিতা) আদরের সহিত শ্রবণ যোগ্য ভাষনকারী (জায়েত) হবে (সর্বাণ বেদাননুববীত সর্বম্ আয়ু ইয়াত্ ইতি) সমস্ত বেদের জ্ঞাতা পূর্নায়ুর উপভোক্তা হবে তো (মাষৌদনম্) [পাঠভেদ - মাংসৌদম্] মাষের [কলাই বিশেষ] সাথে চাউল (পাচয়িত্বা সর্পিষ্মন্তম্ অশ্নীয়াতাম্ ইশ্বরী জনয়িতবৈঃ) পাক করে ঘৃতের সাথে উভয়ে [স্বামী স্ত্রী] আহার করে তো (অপেক্ষেত পুত্র) পুত্র উৎপন্ন করতে সমর্থ হবে (ঔক্ষেণ বা আর্ষভেণ) ঔক্ষ [বিধি] দ্বারা অথবা ঋষভ [বিধি] দ্বারা। 

সরলার্থঃ এবং যে এই ইচ্ছা করে যে আমার পুত্র বিদ্বান প্রসিদ্ধ সভায় গমন যোগ্য আদরের সহিত শ্রবণ যোগ্য ভাষনকারী হবে,  সমস্ত বেদের জ্ঞাতা পূর্নায়ুর উপভোক্তা হবে তো  মাষের [কলাই বিশেষ] সাথে চাউল পাক করে ঘৃতের সাথে উভয়ে [স্বামী স্ত্রী] আহার করে তো পুত্র উৎপন্ন করতে সমর্থ হবে ঔক্ষ [বিধি] দ্বারা অথবা ঋষভ [বিধি] দ্বারা। 

তাৎপর্যঃ এই কন্ডিকার মধ্যে বর্ণিত পুত্র প্রাপ্তির জন্য বলা হয়েছে যে, মাষের সাথে পাককৃত চাউল বিধির সাথে আহার করা উচিৎ।  এই পুত্র এবং পুত্রি উৎপন্ন করার জন্য অপেক্ষিত সাধনের কাজে নেবার শিক্ষাকে সমাপ্ত করে ইহা বলা হয়েছে যে, সব প্রকারে পুত্র কে উৎপন্ন করা আদির কৃত্য ঔক্ষ এবং আর্ষভ বিধি দ্বারা করা উচিৎ। 

ঔক্ষ বিধিঃ ঔক্ষ শব্দ উক্ষ (সেচনে) ধাতু হতে এসেছে।  উক্ষ দ্বারা উক্ষণ এবং উক্ষণের বিশেষন ঔক্ষ। ঔক্ষ বিধি বর্ণনাকারী শাস্ত্রকে ঔক্ষ শাস্ত্র বলে।  কোন মিশ্রিত ঔষধি পাক আদি তৈরীতে কোন কোন ঔষধি কি কি মাত্রায় পড়া উচিৎ তাহা বর্ণনাকারী শাস্ত্রের নাম ঔক্ষ শাস্ত্র। অভিপ্রায় এই যে, উপরিউক্ত মাষের অথবা তিলৌদন আদির প্রস্তুতে এই (ঔক্ষ শাস্ত্র) র মর্যাদা কে লক্ষ্য রেখে কাজ করা উচিৎ। 

আর্ষভ বিধিঃ আর্ষভ - ঋষভ শব্দের বিশেষন। ঋষভ এবং ঋষি শব্দ পর্যায়বাচক।  আর্ষভের অর্থ ঋষিকৃত অথবা ঋষিদের বানানো কিছু।  ঔক্ষ শাস্ত্রের সাথে এই আর্ষভ শব্দের ভাব এই যে, ঋষিদের বানানো বিধি (পদ্ধতি) র নামই ঔক্ষ শাস্ত্র। অর্থাৎ কোন অনভিজ্ঞর বানানো বিধিকে ঔক্ষ শাস্ত্র বলা হয় না।  ঋষিকৃত পদ্ধতিই ঔক্ষ শাস্ত্র। 

মাষৌদনঃ  নিরুক্তেও মাংস শব্দের অর্থের মনন, সাধক, বুদ্ধিবর্ধক মন কে রুচি দানকারী বস্তুকে বলা হয়েছে। যা ফলের রসালো অংশ,  ঘী,  মাখন, ক্ষীর আদি পদার্থ (মাংস মাননং বা মানসং বা মনোস্মিনৎসীদতীতি ; নিরুক্ত ৪।৩)।  নিরুক্তেও মাংস শব্দের অর্থের মনন, সাধক, বুদ্ধিবর্ধক মন কে রুচি দানকারী বস্তুকে বলা হয়েছে। যা ফলের রসালো অংশ,  ঘী,  মাখন, ক্ষীর আদি পদার্থ (মাংস মাননং বা মানসং বা মনোস্মিনৎসীদতীতি ; নিরুক্ত ৪।৩)। 

শ্রী রাম শর্মা কৃত অনুবাদ দেখুন-

যার এই ইচ্ছা যে, আমার পুত্র প্রখ্যাত বিদ্বান, বিদ্বানগণের সভাতে সম্মান প্রাপ্ত কুশল বক্তা, প্রিয়ভাষী ও সব বেদের জ্ঞাতা আর শতায়ু হোক, সেই দম্পত্তী উক্ষা বা ঋষভ নামক ওষধীর মাংসল অংশ আর চালের ভাত (খিচড়ী) পাক করে, তাতে ঘৃত মিশিয়ে সেবন করবে । এই ক্রিয়া দ্বারা তারা উপর্যুক্ত গুণ সম্পন্ন পুত্র প্রাপ্তিতে সক্ষম হবে । 
ঋগ্বেদ ১০।২৭।২

রাহুল ব্রাদার প্রদর্শিত অনুবাদ : 
(ঋষি কহিতেছেন)-যে সকল ব্যক্তি দৈবকর্মের অনুষ্ঠান না করে এবং কেবল তাহাদিগের নিজের উদর পূরণ করিয়া স্মৃতি হইয়া উঠে, আমি যখন তাহাদিগের সঙ্গে যুদ্ধ করিতে যাই, তখন, হে ইন্দ্ৰ! তোমার নিমিত্ত পুরোহিতদিগের সহিত একত্র স্থূলকায় বৃষকে পাক করি এবং পঞ্চদশ তিথির প্রত্যেক তিথিতে সোমরস প্রস্তুত করিয়া থাকি ।

অপরপক্ষে শ্রী রাম শর্মা কৃত অনুবাদ :

(ঋষি বসুক্র বলছেন) হে ইন্দ্রযখন আমি দেবোপসনা রহিত ও শারিরীক সামর্থ্য দ্বারা অভিমানী (দাম্ভিক) মানুষের সাথে সংঘর্ষ করতে যাইতখন আমি আপনাকে হব্য দ্বারা সন্তুষ্ট করি । আমি পঞ্চদশ তিথিতে আপনাকে সোম সমর্পিত করি ।


ঋগ্বেদ ১০।২৮।৩।

রাহুল ব্রাদার প্রদর্শিত অনুবাদ :

হে ইন্দ্র! যখন অন্ন কামনাতে তোমার উদ্দেশে হোম করা হয়, তখন তারা শীঘ্র শীঘ্র প্রস্তরফলক সহযোগ মাদকতাশক্তিযুক্ত সোমরস প্রস্তুত করে, তুমি তাহা পান কর। তাহারা বৃষভসমূহ পাক করে, তুমি তাহা ভোজন কর।
অপরপক্ষে শ্রী রাম শর্মা কৃত অনুবাদ :  

(ঋষির কথন) হে ইন্দ্রদেব ! আপনার জন্য পাষাণ খণ্ডের ওপর শীঘ্রতাপূর্বক অভিষুত আনন্দপ্রদ সোমরসকে যখন যজমান ব্যক্তি প্রস্তুত করে, তখন আপনি তার দ্বারা প্রদত্ত সোমরস পান করে থাকেন । হে ঐশ্বর্য-সম্পন্ন ইন্দ্রদেব ! যে সময় সৎকার-পূর্বক হবিষ্যান্ন দ্বারা যজ্ঞ করা হয়, সে সময় সাধকগণ বৃষভ (শক্তিসপম্পন্ন হব্য)-কে পাক (পরিপক্ক) করেন, আর আপনি তা সেবন করে থাকেন । 

শ্রী রাম শর্মা কৃত অনুবাদ অনুসারে  এখানে বৃষভ অর্থ শক্তিসপম্পন্ন হব্য, ষাড় নয় । সুতরাং এখানেও গোহত্যা অনুমদিত নয় ।

পোষ্টের নীচে আচার্য অগ্নিব্রত নৈষ্টিক জী কৃত ঋগ্বেদ ১০/২৮/৩ এর তিনপ্রকার ভাষ্য দেখবেন

 
ব্রাদার রাহুল হোসাইন এবং পন্ডিত মহেন্দ্রপাল আর্য

এবং এই দৃষ্টি দ্বারা মাষৌদন কে মাংসৌদন বলা যায়।  এই জন্য কোন প্রকরণে গো মাংস অর্থে মাংসের প্রয়োগ  যা  এই প্রকরনে নেই। এইজন্য যে দশ ঔষধিকে দ্বারা মাষ এবং ঔদন বর্ননার বিধান  রয়েছে তাহার নাম স্বয়ং উপনিষদই  উল্লেখ করেছে - 
(i) ধান্য (ii)  যব (iii) তিল (iv) মাষ (v) বাজরা (vi) প্রিয়জু (vii) গোধূম (viii) মসুর (ix)  খল্ব (x) থলকুল। 
(বৃহঃ উপঃ ৬।৩।১৩) 

 
ব্রাদার রাহুল হোসাইন এবং পন্ডিত মহেন্দ্রপাল আর্য


এখানে একটা বিষয়ে গভীর ভাবে মনোযোগ দেওয়া উচিৎ যে, এই ঔষধির গণনা করে  দেখা যাচ্ছে তিলের পরেই মাষের উল্লেখ রয়েছে। এইজন্য সতেরো কন্ডিকায় তিলৌদন এবং তাহার পরে আঠারো কন্ডিকায় মাষৌদনের উল্লেখ। অন্যথা মাংসের তো এখানে যেমন বলা হলো তার কোন প্রকরনই নেই।


সায়ণভাষ্য কেমন নীচে দেখুনঃ
সায়ণাচার্য ও রমেশ চন্দ্র দত্তের বেদের ভাষ্য সমীক্ষা
অনেক অতিজ্ঞানী পন্ডিত সায়ণ ও রমেশের এই মন্ত্রটির ভাষ্য দেখিয়ে, প্রমাণ করতে চায় বেদে মূর্তি পূজা আছে।আসুন বিশ্লেষণ করা যাক~
ক ইমং দশভির্মমেন্দ্রেং ক্রীণাতি ধেনুভিঃ।
যদা বৃত্রাণি জংঘনদথৈনং মে পুনর্দদৎ।।
ঋগ্বেদ~মন্ডল-4,সূক্ত-24,মন্ত্র-10
(হরফ প্রকাশনীর প্রকাশিত,ঋগ্বেদ-প্রথম খন্ড-পৃষ্ঠা-498-499)
বিশ্লেষণ- সায়ণ ও রমেশ দু'জনেই এই মন্ত্রে,দশটি গরু দিয়ে,ইন্দ্রের প্রতিমা বা মূর্তি ক্রয় বা কেনার কথা বলেছেন।
এখানে,হাস্যকর ব্যাপার হল এই যে,যর্জুবেদ,32/3 এ পরিষ্কার বলা আছে যে, ঈশ্বরের প্রতিমা বা মূর্তি হয় না।
যর্জুবেদ, 40/8 অনুযায়ী ঈশ্বর নিরাকার।
যর্জুবেদ,40/9 অনুযায়ী,ঈশ্বর ছাড়া অন্য কোন প্রাকৃতিক বস্তুকে ঈশ্বররূপে উপাসনা করলে, অজ্ঞানরূপ অন্ধকারে প্রবেশ করতে হয়।
সাম্প্রদায়িক লোকেরা নিজেদের স্বার্থ সিদ্ধির জন্য,বেদের নামে, মিথ্যাচার করে। স্বয়ং বিবেচনা করুন,ঈশ্বরীয় বাণী বেদে,গরু দিয়ে মূর্তি কেনা-বেচার মতো ব্যবসায়ী বুদ্ধি থাকবে কেন?!!!
দ্বিতীয়তঃ,এখানে সায়ণ ও রমেশের ইন্দ্রের প্রতিমাবাচক অর্থ,বৈদিক ব্যাকরণ,বৈদিক শব্দকোষ বা নিঘন্টু,নিরুক্তর সম্পুর্ন বিপরীত।
"ইন্দ্র" অর্থে,ঐশ্বয্যবান,পরমাত্না, সূর্য,বিদ্যুৎ ইত্যাদি হয়।
উদাহরণঃ (ইদি পরমৈশ্বর্যে)এই ধাতুর উত্তর 'রন' প্রত্যয় যোগে 'ইন্দ্র' শব্দ সিদ্ধ হয়।'য ইন্দ্রতি পরমৈশ্ব্যবান্ ভবতি স ইন্দ্রঃ পরমেশ্বরঃ', অর্থাৎ,পরম ঐশ্বর্যশালী বলে পরমাত্নার নাম 'ইন্দ্র'।
এইবার এই মন্ত্রটির প্রকৃত অর্থ দেখুন~
প্রকৃত অর্থঃ (কঃ)(ইমম্)(দশভিঃ)অঙ্গুলিভিঃ(মম)(ইন্দ্রম্)ঐশ্বয্য(ক্রীণাতি)(ধেনুভিঃ)দোগ্ধীভির্গোভিরিব বাগ্মিঃ(যদা)বৃত্রানি(ধনানি)জঙ্ঘনৎ ভৃশং হন্তি প্রাপ্নোতি(অথ)(এনম্)(মে)মহ্যম্(পুনঃ)(দদৎ)দদাতি।।
ভাবার্থ#ক ঐশ্বযং বদ্ধিতুং শকনুয়াদিতি প্রস্নস্য।যঃ সর্বথা পুরুষার্থো সুশিক্ষিত য়া বাচা যুক্তশ্চেতি কুতো য আদাবৈশ্বযং প্রাপ্নুয়াৎ স এব অন্যেভ্যোঃ দাতুর্মহৎ।।

মহর্ষি দয়ানন্দ সরস্বতী ভাষ্য
ভাবার্থঃ কে ঐশ্বর্য বৃদ্ধি করতে পারে এই প্রশ্নের উত্তরে বলা হচ্ছে- যিনি পুরুষার্থযুক্ত,উদ্যমশীল, বিদ্যা এবং বাক-বৈদগ্ধ্যের অধিকারী অধিকারী, তিনিই ঐশ্বর্য লাভ করেন যিনি প্রথমে ঐশ্বর্য লাভ করতে পারেন তিনিই পারেন পরে অপরকে দান করতে ।
পীবানং মেষমপচন্ত বীরা ন্যুপ্তা অক্ষা অনু দীব আসন্ ।
দ্বা ধনুং বৃহতীমপ্স্বন্তঃ পবিত্রবন্তা চরতঃ পুনন্তা ॥
ঋগ্বেদ ১০.২৭.১৭ 
সায়ণভাষ্যঃ “বীরাঃ প্রজাপতেঃ পুত্রা অঙ্গিরসঃ "পীবানং স্থূলম্ । মেদোমাংসাদিয়ুক্তমিত্যর্থঃ। "মেষম্ অজম্ “অপচন্ত প্রজাপতিরূপস্যেন্দ্রস্যার্থায় পক্ববন্তোঽভবন্ । পশুয়াগং কুর্বন্ত ইত্যর্থঃ । কিংচ। লুপ্তোপমমেতৎ । যথা দেবানাম্ "অক্ষাঃ “দীবে দেবনে রমণস্থানে “ন্যুপ্তাঃ নিক্ষিপ্তাঃ সন্তঃ "অনু “আসন্ সংক্রীডমানয়োর্দ্বয়োরেকতরস্যানুগতা ভবন্তি তথা সর্বেঽঙ্গিরসঃ প্রজাপতেরনুগতা ভবন্তি। “দ্বা অঙ্গিরসাং মধ্যে দ্বাবঙ্গিরসৌ “ধনুম্ । ধনুশব্দোঽত্র ধনুঃশব্দপর্যায়ো ধনশব্দপর্যায়ো বা । ধনুর্যথা বধসাধনং তথাজ্ঞানাদিবধসাধনং ধনবৎপ্রীতিকরং বা। কপিলমিত্যর্থঃ । "বৃহতীং প্রজাপতেরাজ্ঞয়া বর্ধয়িত্রীং প্রকৃতিম্ "অপ্স্বন্তঃ প্রকৃতিস্থানাং সূক্ষ্মণামুদকানাং মধ্যে "চরতঃ প্রজাপত্যাদেশাদারাধয়তঃ। কীদৃশৌ । "পবিত্রবন্তা পবিত্রবন্তৌ । মন্ত্রঃ পবিত্রমুচ্যতে । ধ্যানসাধনপ্রণবমন্ত্রবন্তৌ "পুনন্তা শুদ্ধৌ। প্রণবধ্যানেনাত্মানং সংস্কুর্বন্তাবিত্যর্থঃ ॥

সায়ণভাষ্যে -

বীরাঃ = বীরাঃ প্রজাপতেঃ পুত্রা অঙ্গিরসঃ - প্রজাপতি পুত্র অঙ্গিরসের [ অঙ্গিরা ] কথা বলা হয়েছে । যেখানে মূল মন্ত্রে কেবল বীরাঃ উল্লেখ আছে সেখানে এই পুত্রাদি খুঁজে পাওয়া সম্পূর্ণ কল্পনা মাত্র ।

অক্ষ= পাশা, অর্থ করে লিখেছেন ' সংক্রীডমানয়োর্দ্বয়োরেকতরস্যানুগতা ভবন্তি ' ; যেখানে বেদে দ্যূতক্রীড়া নিষেধ করা হয়েছে অক্ষকিতব নিন্দা সূক্তে সেখানে সায়ণাচার্য এখানে অক্ষক্রীড়াপূরক অর্থ করে বেদের মধ্যেই পরস্পর বিরোধীতামূলক ভাষ্য করেছেন ।

👉 বাংলা অনুবাদঃ পুরুষগণ স্থূলকায় মেষপশু পাক করিল। পাশক্রীড়াস্থলে পাশ গুলি নিক্ষিপ্ত হইতে লাগল। আর দুই জন প্রকাণ্ড ধনু ধারণপূর্বক মন্ত্র উচ্চারণ দ্বারা আপনাদিগের দেহ শুদ্ধ করিতে করিতে জলের মধ্যে বিচরণ করিতে লাগিল।

[ রমেশচন্দ্র দত্ত কৃত অনুবাদ ]


এখন এর সদর্থ আমরা দেখি -

সংস্কৃত ভাষ্যঃ (বীরাঃ) দশ প্রাণাঃ “প্রাণা বৈ দশ বীরাঃ” [শ০ ১২।১।৮।২২] (অক্ষাঃ অনু) ইন্দ্রিয়াণি অনু “অক্ষা ইন্দ্রিয়াণি” [মৈ০ ৪।৫।৯] (দিবে ন্যুপ্তাঃ আসন্) রমণস্থানে শরীরে ক্ষিপ্তাঃ অন্তর্হিতাঃ সন্তি (মেষং পীবানম্-অপচন্ত) ইন্দ্রমাত্মানম্ “ইন্দ্রস্য মেষস্য” [কাঠ০ ১২।২১] পুষ্টং পূর্ণশরীরবন্তং কুর্বন্তি (দ্বা) দ্বৌ প্রাণাপানৌ (বৃহতীং ধনুম্) মহতীং তনুম্ (অপ্সু অন্তঃ) দেহজলেষু (পুনন্তা পবিত্রবন্তা চরতঃ) পবিত্রয়ন্তৌ পবিত্রভূতৌ চরতঃ ॥

বঙ্গানুবাদঃ ( বীরাঃ) দশ প্রাণ (অক্ষাঃ-অনু) ইন্দ্রিয়ের সাথে (দিবং ন্যুপ্তাঃ-আসন্) রমণস্থান শরীরে রাখা হয়েছে। ( মেষং পীবানম্-অপচন্ত) আত্মাকে পূর্ণাঙ্গ করে । (দ্বা) উভয় প্রাণ ও অপান ( বৃহতীং ধনুম্) মহান দেহকে ( অপ্সু-অন্তঃ) দেহজলে পবিত্র করার মাধ্যমে পবিত্ররূপে বিচরণ করে৷

ভাবার্থঃ আত্মা যখন শরীরে আগমন করে তখন প্রথমে দশ প্রাণ প্রাপ্ত হয় । তারপরে ইন্দ্রিয়গণের বিকাশ হয় এবং শরীর সর্বাঙ্গীনভাবে পরিপূর্ণ হয় । অভ্যন্তরীণ রস ( রক্ত) -কে পবিত্র করতে থেকে স্বয়ং পবিত্রস্বরূপ প্রাণ-অপান তথা শ্বাস-প্রশ্বাস চলতে থাকে৷
पीवा॑नं मे॒षम॑पचन्त वी॒रा न्यु॑प्ता अ॒क्षा अनु॑ दी॒व आ॑सन् ।
द्वा धनुं॑ बृह॒तीम॒प्स्व१॒॑न्तः प॒वित्र॑वन्ता चरतः पु॒नन्ता॑ ॥-ऋग्वेद १०.२७.१७
(वीराः) दशप्राण (अक्षाः-अनु) इन्द्रियों के सहित (दिवं न्युप्ताः-आसन्) रमणस्थान शरीर में रखे गये हैं। (मेषं पीवानम्-अपचन्त) आत्मा को पूर्णाङ्गवाला करते हैं। (द्वा) दोनों प्राण और अपान (बृहतीं धनुम्) महान् देह को (अप्सु-अन्तः) देह जलों में (पुनन्ता पवित्रवन्ता चरतः) पवित्र करते हुए पवित्ररूप विचरते हैं ॥
(वीराः) दश प्राणाः “प्राणा वै दश वीराः” [श० १२।१।८।२२] (अक्षाः अनु) इन्द्रियाणि अनु “अक्षा इन्द्रियाणि” [मै० ४।५।९] (दिवे न्युप्ताः आसन्) रमणस्थाने शरीरे क्षिप्ताः अन्तर्हिताः सन्ति (मेषं पीवानम्-अपचन्त) इन्द्रमात्मानम् “इन्द्रस्य मेषस्य” [काठ० १२।२१] पुष्टं पूर्णशरीरवन्तं कुर्वन्ति (द्वा) द्वौ प्राणापानौ (बृहतीं धनुम्) महतीं तनुम् (अप्सु अन्तः) देहजलेषु (पुनन्ता पवित्रवन्ता चरतः) पवित्रयन्तौ पवित्रभूतौ चरतः ॥
भावार्थभाषाः -आत्मा जब शरीर में आता है, तब प्रथम दशों प्राण प्राप्त होते हैं। उसके पीछे इन्द्रियों का विकास होता है और शरीर सर्वाङ्गों से पूर्ण हो जाता है। अन्दर के रसों को पवित्र करते हुए स्वयं पवित्र स्वरूप प्राण-अपान, श्वास-प्रश्वास चलते हैं ॥
[ ভাষ্যকারঃ স্বামী ব্রহ্মমুনি পরিব্রাজক , আর্যসমাজ ]

সায়ণাচার্যের আগমনকাল খৃষ্টাব্দ চতুর্দশ শতাব্দীতে, স্বামী শংকরাচার্যের প্রায় ১৬০০ বৎসর পরে। এর মধ্যে সাম্প্রদায়িক যাগ-যজ্ঞ চলছিল। জৈন বৌদ্ধগণের ভাটা পড়ায় সাম্প্রদায়িক বামমার্গী কর্মকাণ্ডের প্রচণ্ডতা পরিলক্ষিত হয়।
সায়ণাচার্য বুক নরেশের মন্ত্রী ছিলেন। বিজয়নগর গোলকুণ্ডার রাজা হিন্দু সংস্কার-যুক্ত ছিলেন। উত্তর ভারতে মুসলমান রাজারা প্রবল পরাক্রমী হতে শুরু করেন। এখানে হিন্দুদের প্রতি অত্যাচার চলছিল। বুক নরেশ সাণাচার্যকে হিন্দু ধর্মের পুস্তক সমুদায় ভাষ্য করার জন্য নিযুক্ত করেন। আজ থেকে প্রায় ৬০০ বৎসর পূর্বে সাম্প্রদায়িকতা, ধূৰ্ত্ততা এবং মুসলমানদের হাত থেকে রক্ষা পাবার ভাবনা চিন্তা শক্তিশালী হতে শুরু করে। সায়ণাচার্যের সময়ে সামাজিক, সাম্প্রদায়িক এবং ধার্মিক পৃষ্ঠভূমি ছিল ঠিক এই প্রকার। সুতরাং আচার্য সায়ণের ভাষ্যকে যথার্থবক্তা, আপ্তপুরুষ এবং ঋষিগণের পংক্তিতে প্রতিষ্ঠিত করা সম্ভবপর নয়। ওঁর মধ্যে তাৎকালীন ত্রুটি, সাম্প্রদায়িকতা ও ঋষি পরম্পরা থেকে পৃথকতা সুস্পষ্ট। এ বিষয়ে ঋষি অরবিন্দের সম্মতির প্রতি দৃষ্টিপাত করা বাঞ্ছনীয়—(বেদোঁ কা যথার্থ স্বরূপ পৃ-৫৫-৫৬।)

 যদি কোন বিদ্বত্তাপূর্ণ চাতুর্যের কোষ থাকে, সাধারণতঃ বিদ্বতার যেমন গম্ভীর নির্ণায়ক শক্তি, নিশ্চিত রুচি, যথার্থ সমালোচনাত্মক, তুলনাত্মক নিরীক্ষণ, ঋষিদের সাক্ষাৎ দৃষ্টি সম্পন্ন এবং অত্যন্ত সাদামাঠা বুদ্ধি হতেও দূর এবং তা থেকে রহিত, যার মধ্যে পূর্ব চিন্তাশীলতানুযায়ী বেদমন্ত্র সকল প্রয়োজনানুযায়ী পরিবর্তন ঘটিয়ে প্রয়োগের প্রচেষ্টা করা হয়েছিল সেটি সাণাচার্যের ভাষ্য—যা বিশাল, চমৎকার প্রথম অপরিস্কৃত সামগ্রী রূপে ততটাই উপযোগী এবং বৈদুষ্যপূর্ণ।
 ইউরোপের বিদ্বানগণের সংস্কৃত ভাষাদির বিষয়ে তেমন যোগ্যতা না থাকায় মূলবেদ বোধগম্য হয়ে উঠেনি। তাঁরা সাধারণতঃ মধ্যকালের আচার্যগণসায়ণাচার্য, মহীধরাচার্য আদিগণের ভাষ্যের আধারে নিজেদের মতামত প্রদান করতেন। মাঝে মধ্যে তারা এই কথা স্বীকারও করতেন। শ্রী ক্লেটন (Claton) সায়ণাচার্যকে আধার এবং শ্রী গ্রাফিথ মহীধরাচার্যকে নিজের উপজীব্য বলে উল্লেখ করেন। গ্রাফিথ তার অনুদিত যজুর্বেদ-এর ভূমিকায় স্বীকার করেছেন
“All that I have attempted to do is to give a faithful translation to the best of my ability, of the texts and sacrificial formulas of Vedas, with just sufficient commentary ; chiefly from Mahidhar, to make them intelligible.”
অর্থাৎ “মহীধরের ভাষ্যের আধারে আমার সমস্ত যোগ্যতা ও সামৰ্থ অনুসারে আমি যজুর্বেদের মন্ত্র ও যজ্ঞকে বোধগম্য করাতে প্রচেষ্টা করেছি মাত্র।”
মহীধারাচার্য স্বয়ং তান্ত্রিক ছিলেন এবং তাঁর ভাষ্যে পশুহিংসা, অশ্লীলতা ইত্যাদির সমর্থন করা প্রাচীন ঋষিদের পরম্পরার বিরুদ্ধে গিয়েছে। এই সকল সাহিত্য হাজার বছরের পুরোনোও নয়, ফলে বৈদিক সিদ্ধান্ত অথবা প্রাচীন আর্য পরম্পরার সম্বন্ধে সত্য-বাস্তব মতামত প্রতিষ্ঠিত হয়না। আর্য পরম্পরার জন্য সেটিকে আধার রূপে গণ্য করা অন্যায়।।
বৰ্তমান বিশ্ববিদ্যালয়ের সমস্যাসমূহ—
ম্যাক্সমূলর, মোনিয়র উইলিয়ামস, গ্ৰীফিথ্ প্রভৃতি সংস্কৃতের ইউরোপীয় পণ্ডিতগণের সমস্যা ছিল যে, তাদের পরম্পরানুগত রীতিতে সংস্কৃত পাঠের সুযোগের অভাব। স্বামী দয়ানন্দ সরস্বতীর ব্যক্তিগত অনুভব ছিল এই যে, পশ্চিমী পণ্ডিতগণের নিকট সংস্কৃত পত্রও অবোধ্য ছিল। তাদের মধ্যে অনুসন্ধান কার্যের পটুতা, কোষ নির্মাণ ইত্যাদির জ্ঞান ছিল এবং তারা কয়েকটি উপযোগী কর্মের নিদর্শন রেখে গেছেন। তাদের পুরাবিদ্যা, ভারতীয় ঐতিহ্য (Indology) ইত্যাদির মধ্যে স্বার্থ নিহিত আছে। খৃষ্টান ধৰ্ম প্রচারের প্রচ্ছন্ন কামনা পরিলক্ষিত হয়।
পরম্পরা অনুযায়ী সংস্কৃত বিদ্বান্ ও অধ্যাপকদের অভাব বৰ্ত্তমান। বিশ্ববিদ্যালয়গুলির মধ্যেও পরিলক্ষিত হয়। সুতরাং তাঁদের দ্বারা মূলগ্রন্থের অধ্যয়ন ও অধ্যাপনা করা সম্ভবপর হয়না, কারণ তারা পূর্বসূরীদের গ্রন্থসমূহ থেকে জানার চেষ্টা করেন। অনুসন্ধানের নামে প্রয়োজনীয় তথ্য সামগ্ৰী মূল গ্রন্থ থেকে অল্প ও পূর্ব বিদ্বানগণ রচিত গ্ৰন্থ সমূহ থেকে অধিক গ্রহণ করা হচ্ছে।

 ইউরোপ এবং বিশেষ ভাবে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ডংকা বাজছে। অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের বোডেন্ চেয়ার নামক একটি চেয়ার (ট্রাস্ট) স্থাপন করা হয়। অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে কেবলমাত্র সংস্কৃত চর্চা ও প্রচারের জন্য ঐ ব্যবস্থা করা হয়নি বরঞ্চ খৃষ্টান ধর্মের প্রচার ও গ্রাম্য ভারতীয়দের খৃষ্টান ধর্মে ধর্মান্তরিত করা শুরু হয়। প্রো. মোনিয়র উইলিয়াম্স-এর বক্তব্য দেখুনঃ That the special object of his (Boden’s) munificent request was to promote the translation of the scriptures into Sanskrit, so as to enamble his countrymen to proceed in the “conversion of the natives of India to the Christian religion."
মোনিয়র উইলিয়ামের উক্তি উদ্ধৃতি করার তাৎপৰ্য্য এই যে লণ্ডনের অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে সংস্কৃত পঠনপাঠনের নিমিত্ত বোডেন ট্রাস্ট “বোডেন চেয়ারের” স্থাপনা করা, যার মূল উদ্দেশ্য ধাৰ্মিক গ্ৰন্থসমূহের বাংলায় অনুবাদ করার মাধ্যমে ভারতীয়দের খৃষ্টধর্মে রূপান্তরিত করার কাজে ইংলণ্ডের ব্যক্তিগণ অগ্রসর হতে পারেন।
এই যোজনার মূলে পূর্ব পরিকল্পিত ধর্মান্তরিত করার যেরূপ মানসিকতা কাজ করছিল তা বিচার্য বিষয়। ম্যাক্সমূলর আদিগণের কার্য পদ্ধতি থেকে তা বিচার করা যায়। সঙ্গে সঙ্গে তাদের সাহিত্য, ইতিহাসের প্রামাণিকতা সম্পর্কে এক বিশাল প্রশ্নচিহ্ন থেকে যায়। মোনিয়র উইলিয়াম-এর “Sanskrit English Dictionary” আজও উক্ত বিষয়ের সাক্ষ্য বহন করছে। এ সকল ইংরেজদের ঔপনিবেশিক সাম্রাজ্যবাদের বৃহৎ পরিকল্পনা সমূহের একটি অঙ্গ। এই পরিকল্পনার কর্ণধার ছিলেন লর্ড “মেকলে”। তিনি ভারতীয় হিন্দুদের মধ্যে খৃষ্টান ধর্ম প্রচারের জন্য ব্যাকুল ছিলেন। ঐ পরিকল্পনার বৃহৎ অঙ্গ ছিল ইংরেজি ভাষাকে ভারতীয় শিক্ষার মাধ্যম রূপে প্ৰতিষ্ঠা করা। খৃষ্টধর্মে ধর্মান্তরিত করার প্রমাণ লর্ড মেকলের উক্তিতে পরিলক্ষিত হয়।
"English Education would train up a class of persons Indian in blood and colour, but English in tastes, in opinions, in morals and in intellect.”
অর্থাৎ ইংরেজি শিক্ষা এমন এক শ্রেণী তৈরি করবে, যারা রক্ত ও বর্ণগত দিক থেকে ভারতীয় হলেও রুচি আচার আচরণ, বিচার ও ব্যবহারে ইংরেজ হবে।”
ইংরেজ সাম্রাজ্যের নীতি ছিল এটাই, যার কূটনীতি ভারতের স্বতন্ত্রতার পঞ্চাশ বৎসর পরেও বৌদ্ধিক স্বতন্ত্রতা আসতে দেয়নি। প্রোফেসর ম্যাক্সমুলর থেকে আরম্ভ করে আজ পর্যন্ত অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে সংস্কৃত এবং ইতিহাসের অধ্যাপক এই ষড়যন্ত্র থেকে মুক্তি লাভ করতে সক্ষম হন নি।
এখন ম্যাক্সমুলারের ভাবনার বিশ্লেষণ করে দেখা যাক—প্রোফেসর ম্যাক্সমূলরের পত্নীকে প্রদত্ত এক পত্র থেকে তাঁর মত একজন বিশ্ববিশ্রুত বিদ্বানের খৃষ্টধর্ম প্রচারের বিষয়ে ধর্মান্ধতার পরিচয় পাওয়া যায়। পত্রের ভাষা এবং ভাবনা অনুযায়ী বিচার করুন যে এই বিদ্বান ব্যক্তি বিদ্যা-ভারতীয় বিদ্যার (Indology) ছদ্মরূপ প্রয়োগের মাধ্যমে ভারতবাসীকে কোন ধর্মান্ধতার অন্ধকারে নিয়ে যাচ্ছিলেন। এটি কি জ্ঞান বিজ্ঞানের প্রচার কিংবা ধাৰ্মিক ছল? ম্যাক্সমূলার নিজের পত্নীকে পত্রে লেখেন ।
“I hope I shall finish that work (the publication of the Rig Veda with its English translation) and I feel convinced, though, I shall not have to see it Yet, this edition of mine (of the Rig Veda) and the translation of Vedas will hereafter tell to great extent on the fate of India and on the growth of millions of souls in that country. It is the root of their religion and to show them what the root is, I feel sure, the only way of uproating all that has been sprung from it during the last three thousand years.” (Life & letters of F Maxmuller.)
অর্থাৎ “আমার আশা যে ঐ কাজ (বেদের অনুবাদ) আমি সম্পূর্ণ করব এবং আমার বিশ্বাস যে আমি যখন থাকব না তখনও আমার ঋগ্বেদের এই সংস্করণ এবং বেদের অনুবাদ ভারতের ভাগ্য এবং লক্ষ ভারতীয়দের আত্মিক বিশ্বাসে সুদূরপ্রসারী প্রভাব বিস্তার করতে সক্ষম হবে। বেদ তাদের ধর্মের মূল এবং এই মূল তাদের সামনে প্রদর্শন করা একমাত্ৰ অসংদিগ্ধ প্রক্রিয়া যা ঐ সকল (বিশ্বাস-ভাবনা-শ্রদ্ধা) যা গত তিন হাজার বৎসর ধরে অঙ্কুরিত হয়েছে তা উৎপাটনের একমাত্র উপায়।”
তথাকথিত বিদ্বান ও অধ্যাপকমণ্ডলী ভারতবর্ষে নিষ্ঠুরতার সঙ্গে খৃষ্টধর্ম প্রচারে উতলা হয়ে উঠেছিলেন, তার প্রমাণ ভারতমন্ত্রী (Secretary of State for India) ড্যুক্ আর্গায়লের প্রতি ১৬ই আগষ্ট ১৮৬৮ সালে লিখিত ম্যাক্সমূলরের পত্র থেকে পাওয়া যায়। তিনি লিখেছেন
“The ancient religion of India is doomed and if christianity does not step in, whose fault will it be?( বেদো কা যথার্থ স্বরূপ পৃ-৩৩)
অর্থাৎ ভারতের প্রাচীন ধর্ম নষ্ট হবে, কিন্তু, যদি খৃষ্টধর্ম ঐ স্থান গ্রহণ করতে সক্ষম না হয় তবে কাকে দোষী করা হবে? (অর্থাৎ এটি সরকারের দোষ বলে পরিগণিত হবে কারণ বিদ্বান ও বিশ্ববিদ্যালয় তাদের আপন কাৰ্য সম্পন্ন করেছে।)
ভারতীয় বিদ্বানগণ খৃষ্টান বিদ্বানদের জ্ঞান-বিদ্যার সেবক রূপে স্বীকার করে এদের বিশ্বাস করে নিতেন। মূল গ্রন্থের পাঠ ব্যতিরেকেই ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতেন। মান্যবর শ্ৰী বালগঙ্গাধর তিলক Antic Home in the Vedas নামক গ্রন্থ রচনা করেছেন। তিলক মহারাজ মূল সংস্কৃত গ্রন্থ পাঠ না করে, কেবল ইংরেজি অনুবাদ পড়ে ও তারই উপর নির্ভর করে উক্ত মহত্বপূর্ণ গ্রন্থ রচনা করেন। এই তথ্য তিনি শ্রী রমেশচন্দ্র বিদ্যারত্নের নিকট স্বীকার করেন। শ্রী বিদ্যারত্নজী পাঁচদিন ধরে আলোচনা ও বিচারের মাধ্যমে যখন তিলকজীকে তাঁর ভুলগুলির উপর আলোকপাত করান, তখন তিনি স্বীকার করেন যে তিনি সংস্কৃত মূল গ্রন্থ এবং বেদের মূল না পড়েই কেবল ইংরেজি অনুবাদই পাঠ করেছিলেন।
(দেখুন—বৈদিক সম্পত্তি, প্রথম সংস্করণ, পৃ-৯৯)
১। বিকাশবাদ অনুসারে মানবজাতি বানর(আজকের যুগের বানর নয়) থেকে বনমানুষ হয়েছে। এবং বানর থেকে বিকশিত হয়ে মানব হয়েছে। বানর শুদ্ধ শাকাহারী প্রাণী, বনমানুষও শাকাহারী। প্রাচীন কালে, ফলমূল বন প্রভৃতি অনেক
বেশি ছিল, ধরণীতে ফলমূলের অতিরিক্ত বন্য অন্ন ও পর্যাপ্ত পরিমাণে পাওয়া যেত, প্রাকৃতিক নিয়মেই সহজলভ্য ছিল। “বাদী তোষন্যায়” এর দ্বারা যদি বিকাশবাদের চক্রকে মেনে নেওয়া হয়, তবুও একথা স্বীকার করতেই হবে যে, তখন ফলমূলের আধিক্য থাকায় আদিম কালের মানব গোষ্ঠীর মাংসাহারী হবার প্রয়োজনীয়তা ছিল না। বানর মাংসাহারী নয় অথচ বানরের বিবর্তনে মানুষ মাংসাহারী রূপে পরিণত হল। কেন ? কি ভাবে?
২। মানবজাতি ভিন্ন, সমান পষবাত্মিক জাতি ; যে জাতির নরনারী সন্তানের জন্ম দাতা তারা একজাতি। কিন্তু প্রকৃতিগত ভাবে মানুষ মাংসাহারী নয়। মাংসাহারী জীব ও মানুষের প্রকৃতিতে সুস্পষ্ট পার্থক্য দেখা যায়। সেগুলি হল
(ক) শাকাহারী প্রাণী ঠোট দিয়ে গস করে জল পান করে, মাংসাহারী জিভ দিয়ে চপ্ চপ্ শব্দ করে জলপান করে। মানুষ, গরু, মোষ প্রভৃতি মুখ দিয়ে গস করে জল পান করে। বাঘ, সিংহ, কুকুর, সাপ প্রভৃতি জিভ দিয়ে জল পান করে। অতএব মানুষ শাকাহারী।।
(খ) শাকাহারী অন্ধকারে দেখতে পায়না, মাংসাহারী রাত্রে দেখতে পায়। মানুষও রাত্রে দেখতে পায় না। বাঘ, সিংহ, বেড়াল আদি রাত্রে দেখতে পায়।।
(গ) শাকাহারীর শরীরে ঘাম হয়, মাংসাহারীর শরীরে ঘাম হয় না। মাংসাহারী মুখ খুলে জিভ বার করে হাঁফায় এবং তাদের জিভ থেকে লালা ক্ষরণ হয়।
(ঘ) মাংসাহারী প্রাণীর সন্তানোৎপত্তি ক্রিয়া, মৈথুনকালে বন্ধনের সৃষ্টি করে, কিন্তু শাকাহারীর মধ্যে তা হয় না।
(ঙ) মাংসাহারী প্রাণীর ক্ষুদ্রান্ত ছোট হয়, সেখানে অধিক অম্ল নিঃসৃত হয়। মাংসের পচনকার্য্যের নিমিত্ত অধিক এ্যাসিডের প্রয়োজন হয়। সেইজন্য মাংসাহারে আসক্ত ব্যক্তি মদ্যপানে অভ্যস্ত হয়ে পড়ে। শাকাহারীর পচন প্রণালী (ক্ষুদ্রান্ত) বড় হয় এবং স্বল্প অম্ল নিঃসরণ করে।
(চ) মাংসাহারীর নখের ভিতর খালি হয় যা থাবার মধ্যে বন্ধ থাকে কিন্তু শাকাহারীর নখ সর্বদা উন্মুক্ত থাকে।
(ছ) মাংসাহারী প্রায়শঃ শাকাহারী পশুর মাংস খাদ্যরূপে গ্রহণ করে, মাংসাহারীর মাংস নয়।
৩। যে সকল তথাকথিত বুদ্ধিবাদের দম্ভে দাম্ভিকেরা বেদকে জ্ঞান বিজ্ঞান ও আধ্যাত্মিকতার গ্রন্থরূপে স্বীকার করতে সংকোচ বোধ করেন, তাদের কাছে এটিও একটি কারণ, ওদের মতানুসারে বেদসমূহের নির্মাণকারীগণ বনমানুষের সমীপবর্তী ছিলেন। সুতরাং বেদের মধ্যে বিদ্যা ও আদর্শের উন্নতমানের বক্তব্য থাকা সম্ভব নয়। Nearer the animal, lesser the wisdom.
বেদে গাভী সম্মান ও পূজার দৃষ্টিতে উপযোগী এবং অগ্ন রূপে স্বীকৃত। বেদে যজ্ঞের নাম অধ্বর। অর্থাৎ যে ক্রিয়া হিংসা রহিত। বৈদিক শব্দের ব্যাখ্যাকারী আচার্য যাস্ক তাঁর নিরুক্ত গ্রন্থে লিখেছেন যে—“ধ্বরতীতি হিংসাকর্মা তত্তপ্রতিষেধঃ অধ্বরঃ” যজ্ঞ কৰ্ম হিংসার বিরোধী। যজ্ঞকে সর্বথা হিংসা রহিতই হওয়া উচিত। গোমেধ, অশ্বমেধ ইত্যাদি যে কোন প্রকার যজ্ঞে পশুবধের বিধান কোথাও পাওয়া যায় না। বেদে, বেদভক্ত জনগণের মনে তাদের বিচার কিংবা সংস্কারে, গোবধ অথবা গোমাংসের বিষয়ে কোনও প্রশ্নের অবকাশ নেই।
হাজার বছর ধরে বিদেশীদের সঙ্গে ভারতবাসীদের সম্পর্ক ও আচারবিচার ব্যবহারের আদান প্রদান চলে আসছে। সময়ের গতির সঙ্গে দেশের কত মানুষ মাংসাহারী হয়েছেন। খৃষ্টান ও মুসলমানদের মধ্যে মাংসাহার কিংবা গো মাংস খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করা বা না করার কোন বাছ-বিচার নেই। কিন্তু হিন্দুদের মধ্যে, আৰ্য সভ্যতার মধ্যে যাঁরা মাংসাহারী তারাও গোমাংস ভক্ষণকে পাপ ও অধর্ম বলে মনে করেন। গো-হত্যাকারীরা আর্য সংস্কৃতি নষ্ট করার হাজারো চেষ্টা করছে--বেদের ব্যাখ্যা দূষিত করেছে, গ্রন্থের মধ্যে প্ৰক্ষেপ-ভেজাল দেবার চেষ্টা করেছে; কর্মকাণ্ডের গ্রন্থ সমূহকে ভ্রষ্ট করেছে, কিন্তু এত সব করা সত্ত্বেও তারা সফল হতে পারেনি। আজ পর্যন্ত আর্য বংশধরদের পরম্পরা সংস্কার এবং বিচারকে ভ্রষ্ট করতে সক্ষম হয়নি। আজও ভারতের আর্য বংশধরেরা, বেদ ভক্ত হিন্দুরা গোধনকে পূজ্যা ও মাতা বলে স্বীকার করেন। জনগণের মনোভাব আজও নির্মল ও নিষ্কলঙ্ক রয়েছে।
সমানী ব আকূতিঃ সমানা হৃদয়ানি বঃ।
সমানমস্তু বো মনো যথা বঃ সুসহাসতি।।
ঋগ্বেদ-মন্ডল-10,সূক্ত-191, মন্ত্র-4
(ঋষি-সংবনন।ছন্দ-অনুষ্টুপ।) অথবা,
অথর্ববেদ ম্পূর্ণরূপে একমত হও।
এত সুন্দর মন্ত্রের, সায়ণ বিনিয়োগ দেখিয়ে কি ভাষ্য করেছেন দেখুন~
বি.দ্র.সূক্তে, সাংমনস্য থাকলেও সায়ণ সাংমনুষ্য পাঠ করেছেন।
সায়ণভাষ্য (অথর্ব-3/6/30)
সহৃদয়ং সাংমনুষ্যং ইতি সূক্তেন সাংমনস্যকর্মণি গ্ৰামমধ্যে সম্পাতিতোদকুম্ভোনিনয়নম্ তদ্বৎ সুরাকুম্ভনিনয়নম্ ত্রিবর্ষৎ সিকায়া গোঃ পিশিতানাং প্রাশনং সম্পাতিতান্নপ্রাশনং সম্পাতিতঃসুরায়াঃ পায়নং তথাবিধপ্রদোকপায়নং চ কুর্য্যাৎ।
অর্থ-'সহৃদয়ং সাংমনুষ্যং'এই সূক্তের দ্বারা,সাংমনস্য কর্মে(পরস্পর প্রীতিযুক্ত মানুষের নিবর্তিত কর্ম), পরস্পরের জলপূর্ণ কলসীর জলকে সংমিশ্রিত করে গ্ৰামের মধ্যে নিয়ে যেতে হবে।এইরূপ পরস্পরের মদপূর্ণ কলসির মদকেও সংমিশ্রিত করে গ্ৰামের মধ্যে (পরিক্রমা করে) নিয়ে যেতে হবে। তিন বৎসর বয়স্ক গাভীর মাংস খেতে হবে পরস্পরের অন্ন সংমিশ্রিত করে সকলকে খেতে হবে।পরস্পরের মিশ্রিত মদ পরস্পরকে পান করতে হবে এবং পরস্পরের জলাশয়ের জল পরস্পরকে পান করতে হবে।
বৈদিক~দেখুন,এইখানে সায়ণ মন্ত্রের অর্থের সাথে সঙ্গতিহীন মদ,গরুর মাংস খাবার ভাষ্য করেছেন।মদ ও মাংস তো আপনারা খান!!তো এইবার সায়ণের ভাষ্য অনুযায়ী,গরুরও মাংস খান!!!
পৌরাণিক হিন্দু~আমরা সায়ণ ভাষ্য মানি না।আমরা দয়ানন্দ সরস্বতীর ভাষ্য মানিনা।বেদে না থাকলেও আমরা মূর্তি পূজা করবো।পীরের মাজার পূজা করবো।সায়ণ ভাষ্যের কিছুটা মানবো যেখানে সায়ণ,মূর্তি পূজার ভাষ্য করেছেন!!!মূর্তি চাই!!!আপনারা মোল্লা!! আমরা গর্বিত হিন্দু!!!!!!!বৈদিক~মুসলিম তো আপনাদের কচুকাটা করছে!!
“অন্যোন্যমভিহর্যৎ, বৎসংজাতমিবাঘ্ন্যা”
(অথর্ব ৩-৩০-১)
এটি সামাজিক কৰ্ত্তব্যের উপদেশ-
হে মনুষ্যগণ! পরস্পর একে অপরকে এমনভাবে স্নেহ কর, ভালবাসো, যেমনভাবে অহৰ্তব্য গাভী আপন বাছুরকে ভালোবাসে।।
মহাভারতের সমন্ধ্যে সবচেয়ে বহুল প্রচলিত ভ্রম এই যে, রাজা রন্তিদেবের রাজ্যে প্রতিদিন দুই সহস্র গাভী রান্ন করা হতো অতিথিদের জন্য। যার উল্লেখ বেশ রসালোভাবে রাহুল সাংকৃত্যায়ন তার "ভোলগা থেকে গঙ্গা" বইয়ের ১৫৮ পৃষ্ঠাই উল্লেখ করেছেন।
                    
মূল শ্লোক উদ্ধৃতিটি তিনি মহাভারতের বনপর্বের ২০৮ অধ্যায় থেকে দিয়েছেন । শ্লোকটি হচ্ছে -

রাজ্ঞো মহানসে পূর্বে রন্তিদেবস্য বৈ দ্বিজ।
দ্বে সহস্রে তু বধ্যতে পশুনমন্বহং তদা।।

মহাভারতে সব সংস্করণে এ শ্লোকটি পাওয়া যায় না।গীতা প্রেস থেকে প্রকাশিত মহাভারতের ২০৭ এবং ২০৮ অধ্যায়ের কোন স্থলেই এই শ্লোকটি নেই। উক্ত অধ্যায়ে ধর্মব্যাধ এবং কৌশিক ব্রাহ্মণের উপাখ্যানে ধর্মব্যাধ কোন ঐতিহাসিক রাজার বর্ননা করেন নি।

আমাদের সর্বপ্রথম মান্যতা বেদ। কারণ বেদ ভিন্ন সমস্ত শাস্ত্র কালান্তরে প্রক্ষিপ্ততার স্বীকার হয়েছে। তাই কোন শাস্ত্রের সিদ্ধান্তকে অবশ্যই বেদ দ্বারা যাচাই করা উচিৎ।  এক্ষনে উক্ত শ্লোকটির উপর একটু সমীক্ষা করা যাক -

 
(i) মহাভারত অনুশাসন পর্ব অধ্যায় ১১৫ শ্লোক ৬৩-৬৭  মধ্যে অনেক রাজার নাম উল্লেখ করে বলা হয়েছে যে, তারা কখনো মাংস খান নি। সেই নামগুলোর মধ্যে রন্তিদের নামও উল্লেখ রয়েছে। অর্থাৎ যিনি কখনো মাংস খান না তিনি গরু মাংসের ভোজ দেবেন এটা কখনো হতে পারে না।
                                    
ব্রাদার রাহুল হোসাইন এবং পন্ডিত মহেন্দ্রপাল আর্য

(ii) যদি রন্তিদেবের রাজ্যে প্রতিদিন ২০০০ গাভী হত্যা হয় তবে, বছরে গাভী হত্যার সংখ্যা দাঁড়ায় ৭,২০,০০০। আর এ নিয়ম যদি ক্রমাগত কয়েক বছর চলতে থাকে তবে পৃথিবী থেকে গাভী হারিয়ে যেত।

(iii) মহাভারত দ্রোণপর্ব অঃ ৬৭ তে নারদ সৃন্জয় কে রাজা রন্তিদেবের সমন্ধ্যে বর্ণনা করে বলেন যে, রন্তিদেব প্রত্যেহ ১০০০ নিষ্ক দান করেন। এক হাজার সুবর্ণের ষাড়ের সাথে শত শত গাই এবং একশত আট স্বর্ণমুদ্রা এরূপ ধনকে নিষ্ক বলে।                          

(iv) মহাভারত শান্তপর্ব ২৬২। ৪৭ এ গাভীহত্যাকে মহা পাপ বলে গণ্য করা হয়েছে -

অঘ্না ইতি গবাং ক এতো হন্তমুর্হতি।
মহচ্চকারাকুশলং বৃষং গাং বাহহলভেন তু য়ঃ।।

অর্থাৎ ,  শ্রুতিতে গাভীকে অঘ্না (অবধ্য) বলা হয়েছে। পুনারায় তাকে হত্যার জন্য কে বিচার করেন? যে গাই কে এবং ষাড়কে মারেন তিনি মহা পাপ করেন। 

                          


শ্রুতি মধ্যে গাভী হত্যার বিরুদ্ধে প্রমাণ -

 
★ প্র নু বোচং চিকিতুষে জনায় মা গামনাগা মদিতিং বধিষ্ট।। (ঋগবেদ ৮।১০১।১৫)
--- হে জ্ঞানবান পুরুষের নিকট আমি বলেতেছি নিরপরাধ অহিংস পৃথিবী সদৃশ গাভীকে হত্যা করিও না।
★ " অদিতিম মা হিংসী" (যজুর্বেদ ১৩। ৪৯)
- হত্যার অযোগ্য গাভীকে কখনো মেরো না।
★ " মা গাম অনাগাম অদিতিম বধিষ্ট" (ঋগবেদ ৮।১০১।১৫)
--- নিরপরাধ গাভী এবং ভূমিতূল্য গাভীকে কখনো বধ করো না।

 
★"অঘ্না ইব" (অঃ ৩।৩০।১)। গাভী সমূহ বধের অযোগ্য।
★ যদি নো গাং হংসি যদ্যশ্বং যদি পুরুষম।তং ত্বা সীসেন বিধ্যামো যথা নোহসো অবীরহা। (অথর্বেদ ১।১৬।৪)
--- যদি আমাদের গাভীকে হিংসা কর যদি অশ্বকে যদি মনুষ্যকে হিংসা কর তবে তোমাকে সীসক দ্বারা বিদ্ধ করিব যাহাতে আমাদের মধ্যে বীরদের বিনাশক কেহ না  থাকে।



 
রাহুল জী মহাভারতে কে পঞ্চম বেদ সঙ্গা দিয়ে গোহত্যাকে শাস্ত্রীয় প্রমাণ করার চেষ্টা করেছিলেন।তিনি কি মহাভারতের পূর্বে মূল চতুর্বেদ কদাপি অধ্যয়ন  করেছিলেন? করলে বোধ হয় তিনি গোহত্যাকে শাস্ত্রীয় বলতেন না। আর রাহুল জীর পঞ্চম বেদ মহাভারতেও তো গো হত্যাকে মহাপাপ বলা হয়েছে যার উল্লেখ আমরা করেছি। তো কিভাবে ইহা সম্ভব হতে পারে যে, রাজা রন্তিদেব সহস্র গাভী বধ করতেন?

রাহুল জী তার ভোলগা থেকে গঙ্গা বই এর ফুট নোটেদ্রোণপর্বের ৬৭ অধ্যায়ের প্রথম দুটো শ্লোকের মধ্য তিনটি লাইনের উল্লেখ করেন। প্রথম শ্লোক পুরোটা এবং দ্বিতীয় শ্লোকের অর্ধেক -

সাংকৃতু রন্তিদেবং চ মৃতং সৃংজয় শুশ্রুম।
যস্য দ্বিশতসাহস্রা আসন্ সুদা মহাত্মনঃ।১।।
গৃহানভ্যাগতান্ বিপ্রানতিথীন্ পরিবেষকাঃ।

এই লাইনগুলো দিয়ে রাহুল জী প্রমাণ করতে চেয়েছেন যে, রন্তিদেবের রাজ্যে দুই সহস্র গাভী রান্না করা হতো।

কিন্তু রান্নার সংখ্যা সংস্কৃতে দুই শত সহস্র (দ্বিশতসাহস্রা) দুই সহস্র নয়। আর শ্লোকগুলোতে তো গাভী রান্নার কোন কথাই আসে নি। রাহুল জী অনেক চালাকীর সাথে অর্ধেক শ্লোক উল্লেখ করে ভ্রম সৃষ্টি করেছেন। বাকী অর্ধেক শ্লোক পড়ুন

পক্বাপক্বং দিবারাত্রং বরান্নমমৃতোপমম্।।২।।

এই শ্লোকে তো স্পষ্ট যে, মূলতো কি রান্না হতো রন্তিদেবের রাজ্যে । শ্লোকে ( বরান্ন অমৃত পমম্) শব্দ এসেছে যার অর্থ অমৃতের সমান উত্তম অন্ন যা পায়েস, ক্ষীর, দধি ইত্যাদি। শ্লোক দুটির পূর্ণঙ্গ অর্থ হচ্ছে -

নারদ সৃন্জয় কে বলছন - সৃন্জয়! শুনেছো সংকৃতির পুত্র রন্তিদেবও জীবিত নেই। সেই মহাত্মা নরেশের ওখানে দুই লাখ পাচক ছিলো, যারা ব্রাহ্মণদের জন্য অমৃতের সমান মধুর অন্ন রান্না করতো।


অর্থাৎ রন্তিদেবের রাজ্যের রান্নায় গাভী আসতো দুধ প্রদানের জন্য তাদের মাংস সরবরাহের জন্য নয়।

রাহুল জী একই পৃষ্ঠায় উক্ত অধ্যায়ের আরো একটি শ্লোক অত্যন্ত বিকৃতভাবে উপস্থাপন করে ঘৃণ্য মানষিকতার পরিচয় দিয়েছেন। তিনি লিখেছেন - অতিথিদের সংখ্যা বেড়ে উঠার কারণে মাংস কম পড়ে যাবার ভয়ে পাচকরা মাংসের বদলে ঝোল বেশী করে নেবার অনুরোধ জানাতো। শ্লোকটি হচ্ছে -

তত্রস্ম সুদাঃ ক্রোশন্তি সুমৃষ্টমণিকুন্ডলাঃ।।১৫
সুপং ভূয়িষ্ঠমশ্নীধ্বং নাদ্য মাসং যথা পুরা।

শ্লোকটিতে রাহুল সাংকৃত্যায়ন মাসং (month) শব্দটির পাঠে মাংস (meat) করে এরূপ অনর্থ করেছেন। শ্লোকটির পদপাঠগুলোর সঠিক অর্থ হচ্ছে -

(সুদাঃ) পাচকরা (সুমৃষ্ট মণিকুন্ডলাঃ) মণিময় কুন্ডল ধারণ করে (ক্রোশন্তি) ডেকে ডেকে উচ্চস্বরে বলেন (তত্র) এখানে (অশ্নিধ্বম্) আপনারা ভোজন করুন(ভূয়িষ্ঠ) অধিক (সুপম্) তরল রান্না ডাল আদি (যথা) যাহা (নাদ্য) রান্না করা হয় নি (মাসং পুরা) গত এক মাসে।

সরলার্থ হচ্ছে , পাচকরা মণিময় কুন্ডল ধারণ করে ডেকে ডেকে উচ্চস্বরে বলেন - আপনারা অধিক ডাল আদি অধিক ভোজন করুন এরূপ রান্না গত একমাসে হয় নি।
                  
         
বেদে মাংসাহার

                    অর্থাৎ শ্লোকটিতে মাসং (month) শব্দের পাঠ রয়েছে, মাংস(meat) নয়। যদি শ্লোকটিতে রাহুল জীর মান্য অনুসারো মাংস ধরে নেওয়া হয় তবুও অর্থের অনর্থ ঘটবে না। কারণ বৈদিক নিরুক্ত আদি গ্রন্থ অনুসারে, মনন, সাধক, বুদ্ধিবর্ধক মন কে রুচি দানকারী বস্তুকে বলা হয়েছে। যা ফলের রসালো অংশ, ঘী, মাখন, ক্ষীর আদি পদার্থ (মাংস মাননং বা মানসং বা মনোস্মিনৎসীদতীতি ; নিরুক্ত ৪।৩)।

শান্তিপর্বের ২৯২ অধ্যায়ের ৭ শ্লোকে দেখা যায় যে, রন্তিদেব ঋষি মুনিদের ফল মূল দিয়ে আপ্যায়ন করতেন মাংস দ্বারা নয়।

 
রন্তিদেবেন লোকেষ্টা সিদ্ধিঃ প্রাপ্তা মহাত্মনা।
ফলপত্রেরথো মূলৈর্মুনীনর্বিতবাংশ্চ সঃ।।

অর্থাৎ মহাত্মা রন্তিদেব ফল মূল দিয়ে ঋষি মুনিদের পূজন করেছিলেন। ইহা দ্বারা তিনি সিদ্ধি প্রাপ্ত হয়েছিলেন, যাহা সব লোক অভিলাস রাখেন। 


                      গোচর্ম হতে নির্গত রস থেকে কি নদী হওয়া সম্ভব?

রাহুল সাংকৃত্যায়ন উক্ত পৃষ্ঠাই আরো লিখেছেন - রন্তিদেবের ভোজনশালায় প্রতিদিন দুই হাজার করে গরু মারা হতো। তাদের চামড়া রসুইখানায় রাখা হতো। তা থেকে যে রস গড়িয়ে পড়তো তাতে এক নদীর সৃষ্টি হয়। চর্ম থেকে উৎপত্তি বলে তার নাম চর্মণবতী।

এর শ্লোকটির উল্লেখ মহাভারত শান্তিপর্বের ২৯ তম অধ্যায়ে রয়েছে। শ্লোকটি আলোচনার জন্য আমরা শ্লোকটির আগে এবং পরের কয়েকটি শ্লোকের অর্থ ক্রমান্বয়ে দেখবো -

উপতিষ্ঠন্ত পশবঃ স্বয়ং তং সংশিতব্রতম্।
গ্রাম্যারণ্যা মহাত্মনং রন্তিদেবং যশস্বিনম্।।১২২।।

কঠোর ব্রতের পালনকারী, যশস্বী মহাত্মা রাজা রন্তিদেবের নিকট জঙ্গলের পশু নিজে নিজেই যজ্ঞের জন্য উপস্থিত হন।।১২২

মহানদী চর্মরাশেরুৎকলেদাত্ সসৃজে যতঃ।
ততশ্চর্মণ্বতীর্বং বিখ্যাতা সা মহানদী।। ১২৩।।

সেখানে চর্মরাশী দ্বারা যে জল প্রবাহিত হয় তা থেকে এক বিশাল নদী উৎপন্ন হয়, যাকে চর্মণবতী (চম্বল) এর নামে বিখ্যাত।

ব্রাহ্মণেভ্যো দদৌ নিষ্কান্ সদসি প্রততে তৃপঃ।
তুভ্যং নিষ্কং তুভ্যং নিষ্কমিতি ক্রোশন্তি বৈদ্বিজাঃ।১২৪।।
সহস্রং তুভ্যমিত্যুক্তা ব্রাহ্মণান্ সম্প্রপদ্যতে।

রাজা নিজে বিশাল যজ্ঞে ব্রাহ্মণদের সোনার নিষ্ক দান করেন। সেখানে দ্বিজলোগ ডেকে ডেকে বলেন ব্রাহ্মণ এখানে তোমাদের জন্য নিষ্ক, এখানে তোমাদের জন্য নিষ্ক, কিন্তু কেউ নেবার জন্য এগোয় না। পুনরায় তারা বলে যে, তোমাদের জন্য সহস্র নিষ্ক তখন গ্রহনকারী অনেক ব্রাহ্মণ উপলব্ধ হয়।

এই শ্লোকগুলোতে স্পষ্ট যে, রন্তিদেবের রাজ্যে কোনরূপ হত্যা হতো না। কারণ সহস্র গাভী হত্যার পর আবার সবাই কে সহস্র গাভী দান করতে দিনে বহু সংখ্যক গাভীর প্রয়োজন। আর যদি গাভীদের সেখানে হত্যাই করা হতো গাভীরা সেখানে নিজে থেকে কখনো আসতো না।

 রামচরিতমানে গোস্বামী তুলসীদাস লিখেছেন -

মুনিগণ নিকট বিহগ মৃগ জাহী। বাধ বধি বিলেকি পরাহি।।
হিত অনহিত পসু পচ্ছিউ জানা। মানুষ তনু গুন গ্যান নিধানা।।
(অযোধ্যা কান্ড দোহা ২৬৩-২৬৪)
                           অর্থাৎ, দেখো না পশু পক্ষিগণ কেমন নির্দ্ধিতায় মুনিগনের নিকট গমন করেন তারাই আবার হিংসায় বিশ্বাসী ব্যাধকে দেখে পলায়ন করেন। শত্রু মিত্রদের চেনবার ক্ষমতা পশু পক্ষিদেরও আছে আর মানবতনু বিশেষ জ্ঞান গুন সম্পন্ন।
                               

তো ইহা স্পষ্ট যে, গাভীগুলো রাজা রন্তিদেবের নিকট দুধ সরবরাহের জন্যই গমন করতো। তারপর সেই গাভীগুলোকে যজ্ঞানুষ্ঠানে রাজা ব্রাহ্মণদের দান করতেন। দানের পূর্বে গাভীগুলোকে উত্তমভাবে পরিষ্কার করার জন্য স্নান করানো হতো যাতে গাভীগুলোকে সুন্দর করে সাজানো যায়। গাভীদের গায়ের চর্ম পরিষ্কারের জন্য জল ব্যবহার করা হতো। সেই অধিক পরিমাণ গাভীদের গায়ের চর্ম হতে নির্গত পরিষ্কৃত জল প্রবাহের ফলে এক নদীর সৃষ্টি হয় তাহাই চর্মণবতী (চম্বল) নদী নামে পরিচিত।

কিন্তু রাহুল সাংকৃত্যায়ন এই ঘটনাটির বিপরীত অর্থ করে হত্যাকৃত গাভীর চর্ম হতে নির্গত রস কর্তৃক নদীর সৃষ্টি করেছেন। যা সম্পূর্ণরূপে অমানবিক কার্য।

এখন কেউ যদি পূর্বোক্ত মহাভারত বন পর্বের রাহুল কর্তৃক উদ্ধত শ্লোকটিতে "বধ্যতে" শব্দটি দেখে প্রমাণ করতে চায় যে, গাভীদের হত্যাই করা হতো। তো তাদের অবগতির জন্য এটা জানানো আবশ্যক যে, বধ্যতে শব্দের অর্থ শুধু বধ অর্থেই ব্যবহৃত হয় না পরন্ত এর অর্থ হয় to tie, to bind ইত্যাদি । " বধ্যতে" শব্দটির উল্লেখ আমরা ঋগবেদ ১০।৮৫।২৮ এ পাই - "পতির্বন্ধেষু বধ্যতে" অর্থাৎ পতি সাংসারিক বন্ধনে আবদ্ধ হন।

         

        

পশ্চিমা বিদ্বানগণ গ্রিফিথ আদি বধ্যতে শব্দের অর্থ bond করেছেন।
                             

অতএব মহাভারতের উক্ত শ্লোকের এরূপ অর্থ সম্ভব যে, দুই সহস্র গাভী রান্না ঘরের পাশে আবদ্ধ করে রাখা হতো যাতে গাভীদের নিকট হতে দুধ সংগ্রহ করা যায়।


 
এটাও ধ্যান রাখা আবশ্যক যে, উক্ত শ্লোক মহাভারতের সব সংস্করনে নেই। ধর্ম ব্যাধ কৌশিক ব্রাহ্মণকে কোন ঐতিহাসিক ঘটনা শোনান নি। যার উল্লেখ আমরা পূর্বেও করেছি। অর্থাৎ রাহুল সাংকৃত্যায়ন এর দাবীগুলো সম্পূ্ণরূপে সত্য নয়।

রাহুল সাংকৃত্যায়ন এর উক্ত বই এর পৃষ্ঠার খন্ডচিত্র


পরিশেষে বলবো
অজ্ঞানাদযদি বা জ্ঞানাৎ কৃত্বা কর্ম বিগর্হিতম্।
তস্মাদ্বিমুক্তিমন্বিচ্ছন্ দ্বিতীয়ং ন সমাচরেৎ।।
মনুস্মৃতি-১১/২৩৩
অনুবাদ-অনিচ্ছাতেই হোক আর ইচ্ছাতেই হোক, নিন্দিত বা পাপকর্ম করে, সেই পাপ থেকে যদি মুক্ত হওয়ার ইচ্ছা থাকে, তাহলে সেই কর্মটি আর দ্বিতীয়বার করা উচিৎ নয়।
বিশ্লেষণ-অতীতে যে অনৈতিক ও পাপ কাজ আমরা করেছি,সেই ভুল যেন আর দ্বিতীয়বার না করি।যা হবার তাতো হয়েই গেছে।বর্তমানে আর যেন না হয়।

মানুষ সমস্ত কিছুই খেয়ে থাকে বলে সর্বভূক প্রাণীতে পরিণত হয়েছে, বাস্তবে কি তাই ।

( ১ ) প্রখ্যাত বিবর্তনবাদী এবং নৃ-তত্ত্ববিজ্ঞানীগণ এ কথা পুরােপুরি স্বীকার করেননি যে , বানর থেকে কালে কালে বিবর্তন হয়ে মানুষের সৃষ্টি হয়েছে ।

তবে প্রতিষ্ঠিত তথ্য এই যে , মানুষ এবং বানরের দেহের মধ্যে নানা অংগ প্রত্যঙ্গ এবং তার গঠনগত এবং ক্রিয়াগত সাদৃশ্য আছে । শুধু তাই নয় চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা মানুষ এবং বানরের দেহযন্ত্র বিশ্লেষণ করে দেখেছেন যে , মানুষের দেহযন্ত্র বানরের মতই ফল - মূল , লতা - পাতা , আহারের উপযােগী । সেহেতু মানুষও বানরের মতই শাকাহারী প্রাণী ।

( ২ ) মাংসাশী প্রাণীদের লালারস অম্লধর্মী ( Acidic ) , তৃণভােজী নিরামিষাশী প্রাণীর লালরস ক্ষারধর্মী ( Alkaline ) । লালারস অম্লধর্মী হওয়াতে মাংসাশী প্রাণীরা মাংস কাঁচা খায় এবং না চিবিয়ে হজম করে ফেলতে পারে । কারণ তাদের পেটের ভিতরে Hydrochloric Acid ধর্মী হজমী রস আছে ।

অপরদিকে তৃণভােজী প্রাণীদের আহার্য দ্রব্য ভালভাবে চিবিয়ে চিবিয়ে খেতে হয় কারণ খাবারের সময় তার মুখে যে হজমী রস বের হয় তা Alkaline এবং কেবল লতাপাতা হজমের উপযুক্ত ।

মানুষ চিবিয়ে চিবিয়ে খাদ্য গ্রহণ না করলে খাদ্যদ্রব্য হজম হয় না । এছাড়া পাচন প্রক্রিয়ার রাসায়নিক বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে মাংসাশী প্রাণীদের পাকস্থলীতে যে পরিমাণ হাইড্রক্লোরিক এসিড নিঃসরণ হয় , শাকাহারী প্রাণীদের তার দশ ভাগের এক ভাগ নিঃসরণ হয়ে থাকে । যার কারণে মানুষ , মাছ মাংস পরিপূর্ণ হজম করতে পারে না । ফলে ইউরিক এসিডের সৃষ্টি হয় যা অন্য কোন শাকাহারী প্রাণীর হয় না ।

( ৩ ) কোন মাংসাশী প্রাণীর লবণ বা নােনতা খাবারের প্রতি লালসা নেই , কিন্তু শাকাহারী প্রাণীদের নােনতা লতাপাতার প্রতি প্রবল আকর্ষণ আছে । বিশাল দেহের হাতি নােনা মাটির খোঁজ করে বিশেষ করে মিলনের সময় নােনতা মাটি এবং গাছ পালার জন্য হন্যে হয়ে খুঁজে বেড়ায় ।

এছাড়া গৃহপালিত গরু ছাগল নুন মেশানাে খাবার এবং জল খুব আগ্রহ করে খায় অথচ মাংসাশী প্রাণী লবণহীন খাদ্যই খেতে থাকে । এমনিতেই শাকাহারী প্রাণীদের সহজাত প্রবৃত্তি হচ্ছে লবণাক্ত খাদ্য আহার করা । মানুষও লবণাক্ত খাদ্য খুব আগ্রহ নিয়েই খেয়ে থাকে।এতেও বােঝা যায় মানুষের খাদ্য শাকাহার।

( ৪ ) বাঘ , সিংহ , কুকুর , শেয়াল প্রভৃতি মাংসাশী প্রাণী , অনেক দৌড়াঁলে তাদের শরীর থেকে কোন ঘাম বের হয় না । তাদের ঘাম বের হওয়ার জায়গা শুধুনাক এবং জিহবা । দেখা যায় এই সব প্রাণী দৌড়ালে জিহব বের করে হাঁপায় এবং জিহব দিয়ে টপটপ করে জল পড়তে থাকে । অথচ শাকাহারী প্রাণী মাত্রই দৌড়ালে তাদের শরীর থেকে প্রচুর ঘাম বের হতে থাকে ঠিক যেমন মানুষের বের হয় , কারণ এরা লবণ খায় ।

( ৫ ) খাবার গ্রহণ এবং হজমকৃত বর্জ্য নির্গমণের যে রাস্তা তার একটা গাণিতিক দৈর্ঘ্য আছে । সমস্ত মাংসাশী প্রাণীর মুখ থেকে পায়ুপথ পর্যন্ত দৈর্ঘ্য তার দেহের সাড়ে তিন গুণ লম্বা । অন্যদিকে সমস্ত শাকাহারী প্রাণীর খাদ্য নালীর দৈর্ঘ্য তার দেহের সাড়ে বার গুণ লম্বা হয়ে থাকে ।

বাস্তবেও দেখা যায় ছাগল - গরুর পেটের মধ্যে পেচানাে পেচানাে অনেক লম্বা মােটা এবং সরু নাড়ীভূড়ী আছে । পক্ষান্তরে কুকুরের পাকস্থলীর থেকে পায়ুপথ পর্যন্ত নাড়ীর দৈর্ঘ্য একেবারেই কম । মাংসাশী প্রাণীদের খাদ্যনালী এই অল্প দৈর্ঘ্যর কারণ তারা কম সময়ের মধ্যে খাদ্য হজম করে । খাবারের এসিড বর্জ কম সময়ের মধ্যে শরীর থেকে বের করে দিতে পারে । পক্ষান্তরে শাকাহারী প্রাণীদের হজম প্রক্রিয়া একটু ধীর গতিতে হয়ে অন্ত্রের মধ্যে বেশী সময় ধরে অবস্থান করে বলেই অন্ত্রের দৈর্ঘ্য অনেক বড় ।

( ৬ ) জল পান করার রীতি দেখেও মাংসাশী এবং নিরামিষাশী প্রাণীদের আলাদা করে ফেলা যায় । মাংসাশী প্রাণী হলেই তারা জিভ দিয়ে চেটে চেঁটে জল পান করবে । কখনই চুমুক দিয়ে নিঃশ্বাসের টানে জল পান করতে পারে না । অন্যদিকে শাকাহারী এবং তৃণভােজী প্রাণী মাত্রই জলের মধ্যে মুখ ডুবিয়ে নিঃশ্বাসের টানে অথবা চুমুক দিয়ে জল পান করে থাকে । তখন সন্দেহাতীত ভাবে বলা যায় মানুষ শাকাহারী প্রাণী ।

( ৭ ) আধুনিক পৃথিবীতে শিল্প , সাহিত্য , বিজ্ঞান , সভ্যতা ও সাংস্কৃতির চরম উন্নতি হলেও মানুষের শারীরিক সক্ষমতার অবনতি হয়েছে , শুধুমাত্র খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তনের কারণে । সম্পূর্ণ শাকাহারী প্রাণী মানুষ অথচ খাদ্য তালিকায় রয়েছে মাছ , মাংস হরেক রকমের প্রক্রিয়াজাত , পরিশােধিত , সংরক্ষিত ক্ষতিকর রসায়নিক দ্রব্য এবং নানান ধরনের রং মিশ্রিত নাম না জানা এসিড সমৃদ্ধ খাদ্যদ্রব্য ।
মানুষের খাদ্য আসলে কি?
১. কোনো মেশিন সম্পর্কে তথ্য, ব্যবহারকারীর চেয়ে স্রষ্টার কাছে বেশি থাকে।
২. মেশিনের জ্বালানি এবং শরীরের খাদ্য তার গঠন অনুযায়ী নির্ধারিত হয়।
৩. উপযুক্ত (গঠন অনুযায়ী) জ্বালানি বা খাবার দ্বারা মেশিন বা শরীর ভালো কাজ করবে আর দীর্ঘ কাল পর্যন্ত ভালো করে কাজ করবে অন্যথায় জ্বালানি বা খাবার দ্বারা কম কাজ করবে আর শীঘ্র খারাপ হয়ে যাবে।
৪. জ্বালানি বা খাবার হলো সেই পদার্থ, যার দ্বারা মেশিন কাজ করে আর শরীর জীবিত থাকে। যে পদার্থকে খাদ্য হিসেবে শরীরে প্রবেশ করানো হয় এবং শরীর বাঁচে না, তা খাদ্য হতে পারে না।
৫. সকল শরীর (আস্তিকদের জন্য) ঈশ্বর বানিয়েছেন অথবা (নাস্তিকদের জন্য) প্রকৃতি বানিয়েছে। একটিও শরীর কোনো ডাক্তার, বিজ্ঞানী, অর্থনীতিবিদ, ধর্মগুরু বানায়নি।
৬. আমরা এই সংসারে আমাদের চারপাশে দুই ধরনের দেহ দেখতে পাই- মাংসাহারী এবং শাকাহারী।
এখানে আমরা ১, ২, ৫ আর ৬ এর ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নিবো মানুষের খাদ্য মাংসাহারী না শাকাহারী?
সকল শরীর ঈশ্বর অথবা প্রকৃতি বানিয়েছে, ঈশ্বর বা প্রকৃতির জ্ঞান মানুষের চেয়ে বেশি আর খাবার গঠন অনুযায়ী হয়ে থাকে। আমাদের সামনে দুই ধরনের শরীর মাংসাহারী (সিংহ,বাঘ, চিতা, হায়না, নেকড়ে ইত্যাদি) আর শাকাহারী (গরু, ছাগল, ঘোড়া, হাতি, উট ইত্যাদি) উপস্থিত আছে, তাই সবচেয়ে মৌলিক বিষয় হলো শরীরের গঠন অনুযায়ী খাবার ঠিক করে দিয়েছে ঈশ্বর বা প্রকৃতি যিনি শরীর তৈরি করেছে আর ঈশ্বর বা প্রকৃতির কথা মানুষের চেয়ে বেশি সঠিক হবে, এই ভিত্তি ব্যবহার করে, আমরা মানুষের খাদ্য নির্ধারণ করবো। সেই সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য, আমরা শাকাহারী এবং মাংসাহারীদের শরীরের গঠন তুলনা করবো আর দেখা যাক মানবদেহের গঠন কিসের সাথে মিলে যায়? যদি মানুষের শরীর শাকাহারী দেহের অনুরূপ, তবে মানুষের খাদ্য শাকাহারী এবং যদি দেহের গঠন মাংসাহারী দেহের সাথে মিলে যায়, তবে মানুষের খাবার হবে মাংসাহারী। এটি চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে এবং আমাদের কোনো ধর্মগুরু, বিজ্ঞানী বা ডাক্তারকে জিজ্ঞাসা করার দরকার নেই, কারণ ঈশ্বর বা প্রকৃতির কাছে তাদের কোনো যোগ্যতাই নেই আর যাই হোক একজন মানুষের পক্ষে নিষ্পক্ষ হওয়া খুব কঠিন। নিম্ন তালিকায় মাংসাহারী-শাকাহারী দেহের গঠনের তুলনামূলক তথ্য দেওয়া হচ্ছে-
১. মাংসাহারী- চোখ গোলাকার হয়, অন্ধকারে দেখতে পায়, অন্ধকারে চকচক করে, জন্মের ৫-৬ দিন পরে খোলে।
শাকাহারী- চোখ লম্বা হয়, অন্ধকারে দেখতে পায় না, অন্ধকারে চকচক করে না আর জন্মের সাথে সাথেই খোলে।
২. মাংসাহারী- ঘ্রাণ শক্তি (গন্ধ অনুভূতির শক্তি) অনেক অধিক হয়ে থাকে।
শাকাহারী- ঘ্রাণ শক্তি মাংসাহারীর তুলনায় অনেক কম হয়ে থাকে।
৩. মাংসাহারী- খুব উচ্চ কম্পাঙ্কের শব্দ শুনতে পারে।
শাকাহারী- খুব উচ্চ কম্পাঙ্কের শব্দ শুনতে পারে না।
৪. মাংসাহারী- দাঁত ধারালো হয়, পুরো মুখে শুধু দাঁত আছে, দাঢ় নেই আর দাঁত একবারই আসে।
শাকাহারী- দাঁত আর দাঢ় দুটোই আছে, চ্যাপ্টা হয়ে থাকে, একবার পরে গেলে দ্বিতীয়বার আবার নতুন দাঁত জন্মে।
৫. মাংসাহারী- এরা মাংসকে ছিঁড়ে গেলে, তো এদের চোয়াল কেবল উপর-নিচে চলে।
শাকাহারী- এরা খাদ্যকে চিবিয়ে চিবিয়ে খায়, তো এদের চোয়াল উপর-নিচে আর ডানপাশে-বামপাশ চলে।
৬. মাংসাহারী- মাংস খাওয়ার সময় বারংবার মুখকে খোলে এবং বন্ধ করে।
শাকাহারী- খাওয়ার সময় খাদ্য একবার মুখে নেওয়ার পর গেলা পর্যন্ত মুখ বন্ধ রাখে।
৭. মাংসাহারী- জিহ্বা সামনের দিক থেকে চ্যাপ্টা ও পাতলা এবং সামনের দিক থেকে চওড়া।
শাকাহারী- জিহ্বা প্রস্থে কম এবং সামনের দিক থেকে গোলাকার হয়।
৮. মাংসাহারী- জিহ্বাতে টেস্ট বুড্স (Taste Buds) যার সাহায্যে স্বাদকে চিনতে পারে, সংখ্যায় খুব কম হয় (৫০০ - ২০০০)।
শাকাহারী- জিহ্বায় অনেক পরিমানে টেস্ট বুড্স থাকে (২০,০০০ - ৩০,০০০), মানুষের জিহ্বাতে এর সংখ্যা ২৪,০০০ - ২৫,০০০ হয়ে থাকে।
৯. মাংসাহারী- মুখের লালা অম্লীয় (acidic) হয়।
শাকাহারী- মুখের লালা ক্ষারীয় (alkaline) হয়।
১০. মাংসাহারী- পেটের গঠন এক কক্ষীয় হয়।
শাকাহারী- পেটের গঠন বহু কক্ষীয় হয়। মানুষের পেট হলো দুই কক্ষীয়।
১১. মাংসাহারী- পাকস্থলীর পাচক রস খুব তেজ (ঘন) হয়। শাকাহারীদের পাকস্থলীর পাচক রসের তুলনায় ১২-১৫ গুণ অধিক তেজ হয়ে থাকে।
শাকাহারী- শাকাহারীদের পাকস্থলীর পাচক রস মাংসাহারীদের তুলনায় অনেক কম তেজ হয়। মানুষের পাকস্থলীর পরিপাক রসের তেজ শাকাহারীদের সমান।
১২. মাংসাহারী- পাচনতন্ত্র (মুখ থেকে মলদ্বার পর্যন্ত) দৈর্ঘ্য কম থাকে। সাধারণত শরীরের দৈর্ঘের ২.৫ – ৩ গুণ হয়।
শাকাহারী- পাচনতন্ত্রের দৈর্ঘ্য বেশি থাকে। প্রায় শরীরের দৈর্ঘের ৫-৬ গুণ হয়।
১৩. মাংসাহারী- ক্ষুদ্রান্ত্র এবং বৃহৎ অন্ত্রের দৈর্ঘ্য ও প্রস্থের মধ্যে খুব একটা পার্থক্য নেই।
শাকাহারী- ছোট অন্ত্র বৃহৎ অন্ত্রের তুলনায় প্রস্থে অনেক ছোট এবং দৈর্ঘ্যে অনেক বেশি হয়।
১৪. মাংসাহারী- এগুলিতে কার্বোহাইড্রেট থাকে না, এই কারণে, মাংসাহারীদের অন্ত্রে কোনো কিণ্বন (Fermentation bacteria) ব্যাকটেরিয়া নেই।
শাকাহারী- এদের অন্ত্রে কিণ্বন (Fermentation bacteria) ব্যাকটেরিয়া থাকে, যা কার্বোহাইড্রেট হজমে সাহায্য করে।
১৫. মাংসাহারী- অন্ত্রগুলি পাইপের মতো অর্থাৎ ভিতর থেকে সমান।
শাকাহারী- অন্ত্রে স্ফীতি (bulges) এবং খাঁজ grooves আছে, অর্থাৎ, ভিতরের গঠন চুড়িগুচ্ছের মতো।
১৬. মাংসাহারী- এদের লিভার চর্বি এবং প্রোটিন হজম করার জন্য অধিক পাচক রস নির্গত করে। পিত্তে জমা করে। আকারে বড় হয়।
শাকাহারী- এদের লিভারের পাচক রস চর্বি হজমকারী পাচক রসের তুলনায় কম হয়। পিত্ত হতে ছাড়ে। তুলনামূলকভাবে ছোট হয়।
১৭. মাংসাহারী- অগ্ন্যাশয় অল্প পরিমাণে এনজাইম নিঃসরণ করে।
শাকাহারী- মাংসাহারীদের তুলনায় অধিক পরিমানে এনজাইম নিঃসরণ করে।
১৮. মাংসাহারী- রক্তের প্রকৃতি অম্লীয় (acidic) হয়।
শাকাহারী- রক্তের প্রকৃতি ক্ষারীয় (alkaline) হয়।
১৯. মাংসাহারী- রক্তে এক ধরনের লাইপোপ্রোটিন থাকে, যা শাকাহারীদের থেকে আলাদা।
শাকাহারী- মানুষের রক্তের লাইপোপ্রোটিন (Lipoprotein) শাকাহারীদের সাথে মেলে।
২০. মাংসাহারী- প্রোটিন হজমের ফলে ইউরিয়া এবং ইউরিক অ্যাসিড উৎপন্ন হয়, তাই রক্ত থেকে প্রচুর পরিমাণে ইউরিয়া ইত্যাদি অপসারণের জন্য বড় আকারের কিডনি (Kidney) রয়েছে।
শাকাহারী- এদের কিডনি মাংসাহারীদের থেকে ছোট হয়।
২১. মাংসাহারী- এদের মলদ্বারের (Rectum) উপরে কোন অংশ নেই।
শাকাহারী- এদের Rectum আছে।
২২. মাংসাহারী- এদের মেরুদণ্ডের গঠন এমন যে এরা পিঠে ভার বহন করতে পারে না।
শাকাহারী- এরা পিঠে ভার বহন করতে পারে।
২৩. মাংসাহারী- এদের নখ সামনের দিক থেকে তীক্ষ্ণ, গোলাকার এবং লম্বা।
শাকাহারী- এদের নখ চ্যাপ্টা এবং ছোট।
২৪. মাংসাহারী- এরা তরল পদার্থকে চেটে পান করে।
শাকাহারী- এরা তরল পদার্থকে চুমুক দিয়ে পান করে।
২৫. মাংসাহারী- এদের ঘাম আসে না।
শাকাহারী- এদের ঘাম আসে।
২৬. মাংসাহারী- এদের প্রসবের সময় (বাচ্চা জন্ম করতে সময়) কম লাগে। প্রায় ৩ - ৬ মাস।
শাকাহারী- এদের প্রসবের সময় মাংসাহারীদের তুলনায় অধিক সময় লাগে। প্রায় ৬ - ১৮ মাস।
২৭. মাংসাহারী- এরা জল কম পান করে থাকে।
শাকাহারী- এরা তুলনামূলকভাবে বেশি জল পান করে।
২৮. মাংসাহারী- এদের শ্বাস-প্রশ্বাস দ্রুত হয়।
শাকাহারী- এদের শ্বাস-প্রশ্বাসের হার কম, এদের আয়ুষ্কাল দীর্ঘ হয়।
২৯. মাংসাহারী- ক্লান্ত হলে ও গরমে মুখ খুলে এবং জিভ বের করে হাঁপাতে থাকে।
শাকাহারী- মুখ খুলে হাঁপায় না আর গরমে জিভ বের করে না।
৩০. মাংসাহারী- প্রায়ই দিনের বেলা ঘুমায়, রাতে জাগে ও ঘুরে বেড়ায়।
শাকাহারী- রাতে ঘুমায়, দিনে সক্রিয় থাকে।
৩১. মাংসাহারী- এরা নিষ্ঠুর হয়ে থাকে, প্রয়োজনে নিজের সন্তানকে মেরে খেতে পারে।
শাকাহারী- নিজের সন্তানকে হত্যা করে না এবং সন্তানের প্রতি হিংসক হয় না।
৩২. মাংসাহারী- অন্য প্রাণীদের ভয় দেখানোর জন্য হুংকার দেয়।
শাকাহারী- অন্য প্রাণীদের ভয় দেখানোর জন্য হুংকার দেয় না।
৩৩. মাংসাহারী- এদের রক্তে প্রচুর পরিমাণে রিসেপ্টর রয়েছে যা রক্তে কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণ করে।
শাকাহারী- এদের রক্তে রিসেপ্টরের পরিমাণ কম রয়েছে। মানুষের রক্তেও কম পরিমাণে রয়েছে।
৩৪. মাংসাহারী- এরা কোনো প্রাণীকে হত্যা করে এবং তার মাংস কাঁচাই খেয়ে ফেলে।
শাকাহারী- মানুষ কোনো প্রাণীকে হত্যা করে তার কাঁচা মাংস খায় না।
৩৫. মাংসাহারী- এদের মলমূত্রে দুর্গন্ধ রয়েছে।
শাকাহারী- এদের মলমূত্রে দুর্গন্ধ হয় না (যদি কোনো মানুষ শাকাহারী হন এবং তার হজমশক্তি সুস্থ থাকে, তাহলে সেই মানুষের মলমূত্রে খুব কম গন্ধ থাকে)।
৩৬. মাংসাহারী- হজমের সময় শক্তি পেতে এদের পরিপাকতন্ত্রে বিভিন্ন ধরনের প্রোটিন ব্যবহার হয়, যা শাকাহারীদের থেকে আলাদা।
শাকাহারী- এরা শক্তি পেতে বিভিন্ন প্রোটিন ব্যবহার করে।
৩৭. মাংসাহারী- এদের পরিপাকতন্ত্র, যা এনজাইম তৈরি করে, তারা মাংসই হজম করে।
শাকাহারী- এদের পরিপাকতন্ত্র, যা এনজাইম তৈরি করে, তারা শুধুমাত্র বনস্পতি জাতীয় পদার্থ হজম করে।
৩৮. মাংসাহারী- এদের শরীরের তাপমাত্রা কম, কারণ মাংসাহারীদের BMR (Basic Metabolic Rate) শাকাহারীদের থেকে কম।
শাকাহারী- মানুষের শরীরের তাপমাত্রা শাকাহারী প্রাণীদের কাছাকাছি।
৩৯. মাংসাহারী- দুটি পাত্র নিন, একটিতে মাংস রাখুন এবং অন্যটিতে শাকাহার রাখুন, তাহলে মাংসাশী প্রাণী মাংস বেছে নেবে।
শাকাহারী- মানব শিশু শাকাহারকে বেছে নেবে।
উপরোক্ত তথ্য অনুসারে, মানবদেহের গঠন কোনোরূপ ব্যতিক্রম ছাড়াই ১০০% শাকাহারী প্রাণীদের শরীরের গঠনের সাথে মেল খায় এবং খাদ্য দেহের গঠন অনুযায়ী নির্ধারিত হয়, তাই মানুষের খাদ্য হলো শাকাহার, মাংসাহার কখনোই নয়। শাকাহার ভোজন করার ব্যাপারে আমাদের নিশ্চিত হওয়া উচিত এবং মাংসাহার খাবারের কারণে অনেক ধরনের ক্ষতি হয় তাই এর থেকে দূরে থাকতে হবে।
শাকাহারে মানবের কল্যাণ আর মাংসাহারে বিনাশ। প্রকৃতির সিদ্ধান্তকে উপেক্ষা করে বিনাশ থেকে বাঁচার কোনো পথ নেই।

আমাদের আধুনিক সভ্যতার চরম বাস্তবতা হচ্ছে আমরা এই রান্না খাবারে অভ্যস্থ । যার ফলে মানুষ শরীরিক গঠন প্রাকৃতিক নিয়মের বিরুদ্ধে চলে যাওয়ায় নানান রােগ , দূবর্ল , উদ্যামহীন , হিংসাপরায়ণতা , অহংকারী , বদমেজাজী ও মনসংযােগের অভাব ইত্যাদি শারীরিক ও মানসিক ব্যধিতে পতিত হচ্ছে ।

উপসংহারে বলতে চাই , যদি গভীর মনােযােগ সহকারে বুঝতে চেষ্টা করি , তাহলে বুঝতে পারবাে যে , মানুষ শাকাহারী জীব এবং অভ্যন্তরীণ আচার ব্যবহার , গুণাগুণ , প্রকৃতি সবই শাকাহার ।

শাকাহার হওয়ার কারণে স্বাস্থ্যগত যে সুবিধা আমরা নিতে পারি তা না করে আমরা মাংসাশী হয়ে নানান রােগে জর্জরিত এবং মানসিকভাবে মনুষ্যত্ব হারিয়ে এক হিংস্র প্রাণীর ন্যয় হয়ে উঠছি , যার ফল আজ মানুষই প্রশ্ন করছে যে মানুষ , মানুষ কিনা ?

অর্থাৎ মানুষ জানে তার বৈশিষ্ট্যের কথা , যে বৈশিষ্ট্য সে হারিয়ে ফেলেছে । তাই মানুষের উচিৎ হবে প্রকৃতিতে ফিরে যাওয়া , আবার মানুষ হওয়া ।

अद्रिणा ते मन्दिन इन्द्र तूयान्त्सुन्वन्ति सोमान्पिसि त्वमेषाम्।
पचन्ति ते वृषभां अत्सि तेषां पृक्षेण यन्मघवन् हूयमानः।। ऋ. 10.28.3

आधिदैविक भाष्य- यहाँ संवाद की शैली में सृष्टि विद्या को समझाया गया है। यहाँ छन्द रश्मि का ऋषिरूप प्राण-अपान युग्म इन्द्र तत्व अर्थात् तीक्ष्ण विद्युत् आवेशित तरंगों से कहता है- (इन्द्र) हे इन्द्र तत्व अर्थात् तीक्ष्ण विद्युत् तरंगो! (ते) तुम्हारे लिए (अद्रिणा) {आद्रिः = अद्रिरसि श्लोककृत् (का.1.5), मेघनाम (निघं. 1.10), यो अत्ति अदन्ति यत्रेति वा स अद्रिः (उ.को. 4.66) (श्लोकः = वाङ्नाम) (निघं. 1.11)} काॅस्मिक मेघों के अन्दर (यहाँ सप्तमी अर्थ में तृतीया का प्रयोग है।) विभिन्न वाग् रश्मियों को उत्पन्न करने वाली सूक्ष्म प्राणादि रश्मियों से प्रेरित किंवा उनके सहयोग से (मन्दिनः) नाना प्रकार की कमनीय छन्द रश्मियां (तूयान् सोमान्) {तूयम् क्षिप्रनाम (निघं. 2.15), उदकनाम (निघं. 1.12)} शीघ्र गमन करने वाली तथा सम्पूर्ण काॅस्मिक मेघ को सिचत् करने वाली सोम रश्मियों को (सुन्वन्ति) उत्पन्न करती हैं किंवा उस काॅस्मिक मेघस्थ पदार्थ को सम्पीडित करके मानो उससे सूक्ष्म सोम रश्मियों को निचोड़ती हैं। (त्वं, तेषां पिबसि) हे इन्द्र तत्व अर्थात् बलवती तीक्ष्ण विद्युदावेशित तरंगो! तुम उन सोम रश्मियों को पीओ अर्थात् अवशोषित करो। (ते) तुम्हारे लिए (वृषभान्) {वृषभः = स एव (आदित्यः) सप्तरश्मिर्वृषभस्तुुुविष्मान् (जै. उ. 1.28.2) (तुविरिति बलनाम - निघं. 3.1)} उस काॅस्मिक मेघ में अनेकों प्रकार के बहु आकर्षण बलयुक्त आदित्यलोकों अर्थात् विशालतारों को (पचन्ति) परिपक्व करते हैं अर्थात् सोम रश्मि से समृद्ध इन्द्र तत्व अर्थात् तीक्ष्ण विद्युदावेशित तंरगें उन विशाल तारों को उत्पन्न व परिपक्व करती हैं। (मघवन्) {मघवान् = स उ एव मखः स विष्णुः। ततः इन्द्रो मखवान् अभवत् मखवान् है वै तं मघवान मित्याचक्षते परोक्षम् (श. 14.1.1.13) (मखः = यज्ञनाम) (निघं. 3.17), यज्ञो वै मखः (तै. ब्रा. 3.2.8.3) एष वै मखो य एष (सूर्यः) तपति (श. 14.1.3.5)} विभिन्न प्रकार की संयोग-वियोगादि क्रियाओं एवं नाना प्रकार की प्रकाश तरंगों से परिपूर्ण सूर्यादि तारा (पृक्षेण) { पृक्ष = अन्ननाम (निघं. 2.7) संयोज्य कणों की असंख्य धाराओं के द्वारा (हूयमानः) अनेक प्रकार के संघर्षण एवं तज्जन्य नाना उच्च ध्वनियों को उत्पन्न करता हुआ वह विशाल काॅस्मिक मेघ (तेषाम्-अत्सि) उन सूर्यादि तारों को अपने अन्दर निगले रहते हैं अर्थात् अपने गर्भ में समाए रहते हैं।

भावार्थ- जब विशाल काॅस्मिक मेघ के अन्दर विद्यमान् सूक्ष्म प्राण रश्मियों से प्रेरित होकर विभिन्न छन्द रश्मियों के द्वारा उस काॅस्मिक मेघ का सम्पीडन होना प्रारम्भ होता है, उस समय उस विशाल मेघ रूप पदार्थ में उन छन्द व प्राण रूप रश्मियों से सोम अर्थात् सूक्ष्म मरुद् रश्मियां उत्पन्न होने लगती हैं। जब उस काॅस्मिक मेघ में व्याप्त विद्युदावेशित तरंगें उन सोम रश्मियों को अवशोषित करती हैं, तब वे तीव्र बल व ऊर्जा से सम्पन्न होने लगती हैं। इसके पश्चात् उस काॅस्मिक मेघ में नाना प्रकार से सम्पीडन क्रिया प्रारम्भ होकर सम्पीडन के अनेक केन्द्रों की उत्पत्ति होने लगती है। इसके साथ उन केन्द्रों के आस-पास विभिन्न प्रकार के आयन्स की धाराएं बहने लगती हैं। इससे सम्पूर्ण काॅस्मिक मेघ में नाना प्रकार के गम्भीर उच्च घोष उत्पन्न होने लगते हैं। इस प्रकार उस सम्पूर्ण मेघ रूप पदार्थ में अनेंकों सूर्यों का गर्भ पल रहा होता है।

इस ऋचा (छन्द रश्मि) का सृष्टि प्रक्रिया पर प्रभाव- इसके प्रभाव से काॅस्मिक मेघ में विद्युदावेशित कणों की अनेकों धाराएं बहने लगती हैं, जो वहाँ विद्यमान् सूक्ष्म छन्द वा मरुद् रश्मियों को अवशोषित करके तीव्रतर रूप को प्राप्त होती हैं। इन धाराओं से युक्त काॅस्मिक मेघ अपने गुरुत्व बल एवं नाना छन्द व प्राण रश्मियों के प्रभाव से सम्पीडत होने लगता है और इस सम्पीडन क्रिया के समय ही उस विशाल मेघ के अन्दर विभिन्न तारों के केन्द्रों का निर्माण होकर उनका गर्भ पलने लगता है।

आधिभौतिक भाष्य- (इन्द्र) हे ऐश्वर्यवान् राजन् (ते) तेरे लिए (अद्रिणा) {अद्रिरसि श्लोककृत् (का.1.5)} तेरी प्रशंसा करने वाले हितैषी वैद्यादि जनों से प्रेरित (मन्दिनः) तुझे चाहने व प्रसन्न करने वाले परिवारी जन अथवा राष्ट्र के नागरिक (तूयान् सोमान्) {सोमः पशुर्वै प्रत्यक्षं सोमः (श.5.1.3.7) यशो वै सोमः (श.4.2.4.9) सोम ओषधीनामधिराजः (गो. उ. 1.17), अन्नं सोमः (कां. 9.9)} शीघ्रगामी अश्वादि पशुओं को, तेरे यश व प्रतिष्ठा को, तेरे लिए उत्तम अन्न व औषधियों को (सुन्वन्ति) प्रदान करते हैं, उत्पन्न करते हैं। हे राजन्! (तेषां, पिबसि) तुम उन अश्वादि पशुओं का संरक्षण करो {यहाँ ध्यान रहे कि ‘पा’ पाने धातु का अर्थ पीना के साथ-2 संरक्षण करना भी है। प्रकरण के अनुसार सोम का अर्थ पशु ग्रहण करने पर ‘पा’ धातु का अर्थ संरक्षण करना ग्रहण करना चाहिए। इस धातु के अर्थ के लिए देखें-संस्कृत-धातु-कोष-पं. युधिष्ठिर मीमांसाक} तथा उत्तम अन्न व औषधि आदि रसों का संरक्षण भी करो और उनका पान करो। इसके साथ ही अपने राष्ट्र के नागरिकों द्वारा जो सम्मान व प्रतिष्ठा प्राप्त हो रही है, उसका भोग करते हुए ऐसे कार्य करो कि उस यश का सदैव संरक्षण ही होवे, न कि उसमें किसी प्रकार की न्यूनता आने पावे।

(ते) हे राजन्! तेरे लिए (वृषभान् पचन्ति) वैद्यजन वृषभ नामक ऋषभकन्द औषधि एवं वीर्यवर्धक अनेक अन्न व औषधियों को पकाते हैं। { श्री वैंकटेश्वर प्रेस, मुम्बई में छपे औषधियों में अनेक वनस्पतियों के नाम पशु संज्ञक दिए हैं। पढ़ें- मेरे द्वारा लिखित मांसाहार-धर्म, अर्थ और विज्ञान के आलोक में} (मघवन्) हे धनैश्वर्यवान् राजन्! (पृक्षेण) अपने स्नेह सम्पर्क के द्वारा (हूयमानः) अपने प्रजाजनों के साथ मधुर संवाद व व्यवहार करते हुए (तेषाम्-अत्सि) उनके द्वारा प्रदत्त कर आदि का उपयोग कर किंवा उनके साथ आनन्द का भोग कर।

भावार्थ- किसी राष्ट्र के राजा के हितैषी वैद्य वा राजपरिवारी जन राजा के लिए उत्तम अन्न औषधियों को तैयार करते रहें। उस राष्ट्र के नागरिकों के मन में अपने राजा के प्रति यश व सम्मान का भाव होवे तथा वह राजा भी अपने प्रजाजनों के साथ निरन्तर स्नेह संपर्क के द्वारा मधुर व्यवहार करते हुए उचित मात्रा में करों का संग्रहण करके उनके साथ मिलकर आनन्द व ऐश्वर्य का भोग करे अर्थात् प्रजा को दुःखी करके राजा कभी व्यक्तिगत सुख की आकांशा नहीं करे और न जन सामान्य से कठोर व्यवहार करे।

आध्यात्मिक भाष्य- (इन्द्र) हे जीवात्मन् वा योगसाधक! (ते) तेरे लिए (अद्रिणा) अपने अन्तः करण में वेद की ऋचाओं को धारण करने वाले ऋषियों द्वारा प्रेरित (मन्दिनः) तेरा प्रिय चाहने वाले ईश्वर के स्तोता आचार्य अपनी शिक्षा के द्वारा (तूयान् सोमान्) {सोमः = सत्यं श्रीज्र्योतिः सोमः (श. 5.1.2.10) प्राणः सोमः (श. 7.3.1.2), तूर्यम् = सुखकरम् (म.द.ऋ.मा.3.52.8)} सत्य स्वरूप एवं प्राणों के प्राण परमेश्वर की आनन्द ज्योति को (सुन्वन्ति) प्रकट कराते हैं। (तेषां, पिबसि) हे योगिजनो! तुम उस परमानन्द रूपी रस का पान करो। (ते) वे योगी आचार्य तुम्हारे लिए (वृषभान् पचन्ति) आपके आत्मा व अन्तःकरण में ब्रह्मानन्द की वर्षा कराने वाली दिव्य ज्योति को विकसित व परिपक्व करते हैं अर्थात् उनके मार्गदर्शन में की गयी योगसाधना से समाधिजन्य प्रज्ञा व आनन्द की पुष्टि होती है। (मघवन्) हे योगधन से युक्त योगसाधक (पृक्षेण) अपने आत्मा व अन्तःकरण में प्राण व वेद की ऋचाओं की सुखद वृष्टि के द्वारा (हूयमानः) परब्रह्म का आह्वान करते हुए (तेषाम् अत्सि) उस परमानन्द की वृष्टि एवं प्राण ऊर्जा का उपभोेेग करके अपने आत्मा व अन्तःकरण के बल को बढ़ाता रहा।

भावार्थ- परब्रह्म के साक्षात्कृतधर्मा एवं वेद की ऋचाओं को अपने अन्तःकरण में बसाने वाले ऋषियों से प्रेरित योग के आचार्य अपने योगसाधक शिष्य को परब्रह्म का साक्षात्कार कराते हैं। वे आचार्य अपने शिष्यों के भीतर ब्रह्म की ज्योेेेेति का प्रकाश कराके उसे पुष्ट भी करते हैं। इस कारण वे योगसाधक शिष्य परमेश्वर की दिव्य ज्योति एवं प्राण ऊर्जा को प्राप्त करके अपने आत्मा व अन्तःकरण को बलवान् बनाने में सक्षम होते हैं।

इस ऋचा का ऋषि वृषाकपिरिन्द्र इन्द्राणी है, इसका तात्पर्य है कि इस छन्द रश्मि की उत्पत्ति विशेष बलशाली व विभिन्न रश्मियों को कम्पाने वाले सूत्रात्मा वायु के विशेष रूप से होती है। (देखें- वेदविज्ञान-आलोकः - पृ. 1462) इसका देवता इन्द्र होने से इन्द्र तत्व अर्थात् सूर्य लोक एवं उसके अन्दर विद्यमान तीक्ष्ण विद्युदावेशित तरंगें तीव्रता को प्राप्त होती हैं। इसका छन्द पंक्ति होने से सूर्यादि तारों के अन्दर विभिन्न प्रकार की संयोजन व वियोजनादि विस्तार को प्राप्त करती हैं।

आधिदैविक भाष्य- (मे हि प´चदश साकं विंशतिम्) मेरे अर्थात् पूर्वोक्त विशेष सूत्रात्मा वायु के द्वारा {तृतीयार्थ में चतुर्थी का प्रयोग है।} ही पन्द्रह अर्थात् प्राण, अपान, व्यान, समान, उदान, नाग, कूर्म, कृकल, देवदत्त एवं धनंजय ये दस प्राथमिक प्राण तथा सूत्रात्मा वायु, भूः, भुवः, स्वः एवं हिम् अथवा पंच महाभूत ये पांच मिलाकर पन्द्रह प्राथमिक सूक्ष्म रश्मि आदि पदार्थों के साथ-2 बीस अर्थात् 12 मास, 6 ऋतु रश्मियां, मनस्तत्व एवं ओम् रश्मि अथवा 12 मास एवं गायत्री, उष्णिक्, अनुष्टुप्, बृहती, पंक्ति, त्रिष्टुप्, जगती के अतिरिक्त अतिच्छन्द रश्मियां, ये 20 प्रकार की रश्मियां, इस प्रकार कुल 35 प्रकार के रश्मि आदि पदार्थ (उक्ष्णः) {उक्षा = उक्षतेर्वृद्धिकर्मणः उक्षन्त्युदकेनेति वा (निघं. 12.9)} वर्षा आदि के द्वारा सींचने में समर्थ अथवा प्रकाशादि किरणों के द्वारा विभिन्न लोकों को प्रकाशित करने में समर्थ विशाल सूर्यादि लोकों को (पचन्ति) परिपक्व वा पुष्ट करते हैं अर्थात् उपर्युक्त पैंतीस प्रकार के रश्मि आदि पदार्थों के द्वारा ही विशाल काॅस्मिक मेघों में विभिन्न तारों का निमार्ण होता है। (उत) और (अहम्) मैं अर्थात् इस छन्द रश्मि के ऋषिरूप सूत्रात्मा वायु का विशेष स्वरूप (अद्मि) इन सभी पैंतीस रश्मि आदि पदार्थों का भक्षण करता है अर्थात् सबको एकसूत्र में बांधकर सूर्य लोकादि विभिन्न लोकों को भी अपने अन्दर समाहित कर लेता है। (पीवः) इस प्रक्रिया के समय वह सूत्रात्मा वायु अति विस्तृत रूप धारण करके सम्पूर्ण सौरमण्डल, गैलेक्सी आदि में व्याप्त हो जाता है। (मे) मेरे अर्थात् उस विशेष सूत्रात्मा वायु के (उभा) दोनों रूप अर्थात् सम्पूर्ण लोकों को आच्छादित करने वाले तथा विभिन्न सूक्ष्म कणों व रश्मियों को ढकने वाले दोनों रूप सम्पूर्ण काॅस्मिक मेघ, गैलेक्सी, सौरमण्डल आदि के अन्दर व बाहर सर्वत्र व्याप्त हो जाते हैं। (इन्द्रः) वह इन्द्र अर्थात् विद्युत चुम्बकीय तंरगें, विद्युदावेशित तरंगें तथा सूर्यादि लोक अन्य लोकों से उत्कृष्ट स्वरूप को प्राप्त करते हैं।

भावार्थ- जब किसी काॅस्मिक मेघ के अन्दर दस प्राथमिक प्राण, पंच महाभूत अथवा सूत्रात्मा , हिम् , भूः, भुवः व स्वः, ये सब पन्द्र्र्र्र्रह पदार्थों के साथ 8 प्रकार की छन्द व 12 प्रकार की मास रश्मियां मिल कर अर्थात् कुल 35 प्रकार के रश्मि आदि पदार्थ विशेष सक्रिय होते हैं, उस समय उस विशाल मेघ के अन्दर नाना प्रकार के तारों का जन्म होने लगता है। उस समय सूत्रात्मा वायु अति विस्तृत होकर सभी पदार्थों के साथ-2 सम्पूर्ण काॅस्मिक मेघ को अपने अन्दर व्याप्त कर लेता है। इन सभी लोकों में सूत्रात्मा वायु रश्मियों के दोनों रूप अर्थात् एक वह रूप, जो सूक्ष्म रश्मियों वा कणों को परस्पर जोड़ने में सहायक होता है और दूसरा, जो विभिन्न लोकों के गुरुत्वाकर्षण बल का एक महत्वपूर्ण भाग बनकर उन्हें थामे व जोड़े रखता है, सम्पूर्ण ब्रह्माण्ड में सक्रिय होते हैं। इससे विभिन्न प्रकार के विकिरण व लोकों को उत्कृष्ट स्वरूप प्राप्त होता है।

आधिभौतिक भाष्य- (मे हि पंचदश साकं विंशतिम्) मैं अर्थात् राजा अपने पांच प्राण, पांच ज्ञानेन्द्रियांे व पांच कर्मेन्द्रियों को वश में करके दश कामज व्यसन { अक्ष अर्थात् चैपड़ खेलना, जुवा खेलना, दिन में सोना, कामकथा वा दूसरे की निन्दा किया करना, स्त्रियों का अति संग, मादकद्रव्य अर्थात् मद्य, अफीम, भाँग, गाँजा, चरस आदि का सेवन, गाना बजाना, नाचना व नाच कराना, सुनना और देखना, वृथा इधर-उधर घूमते रहना।- मनुस्मृति- सत्यार्थ प्रकाश के षष्ठ समुल्लास से उद्घृत} व आठ क्रोधज व्यसन { पैशुन्यम् अर्थात् चुगली करना, बिना विचारे बलात्कार से किसी की स्त्री से बुरा काम करना, द्रोह रखना, ईष्र्या अर्थात् दूसरे की बड़ाई वा उन्नति देख कर जला करना, असूया दोषों में गुण, गुणों में दोषारोपण करना, अर्थदूषण अर्थात् अधर्मयुक्त बुरे कामों में धनादि का व्यय करना, कठोर वचन बोलना और बिना अपराध कड़ा वचन वा विशेष दण्ड देना।- मनुस्मृति- सत्यार्थ प्रकाश के षष्ठ समुल्लास से उद्घृत} अविद्या व प्रमाद, इन बीस दुव्र्यसनों को जीत कर (उक्ष्णः) प्रजा के लिए अपने सुख व पराक्रम वर्षक स्वरूप को (पचन्ति) परिपक्व करता है {यहाँ बहुवचन प्रयोग व्यत्यय से हुआ है।} (उत) और (अहम्) मैं सुखवर्षक राजा (अद्मि) सम्पूर्ण राष्ट्र के दुःख, अविद्या, दरिद्रता, अशान्ति एवं असुरक्षा आदि को नष्ट करता हूँ, (पीवः) ऐसा करके मैं अपने राष्ट्र का विकास करता हूँ, (मे) मेेरे (उभा कुक्षी) सज्जन प्रजाजन हेतु स्नेह व दुर्जनों हेतु उचित दण्ड, ये दोनों स्वरूप वा व्यवहार (इत् पृणन्ति) सम्पूर्ण राष्ट्र को सुख व शान्ति से समृद्ध करते हैं।

भावार्थ- जो अपने प्राणों व इन्द्रियों को वश करके अविद्या, प्रमाद व सभी कामज तथा क्रोधज दोषों को जीत लेेता है, वह सम्पूर्ण राष्ट्र को नाना प्रकार के सुख-ऐश्वर्यों से भर देेेता है। ऐसा राजा सज्जनों को संरक्षण व दुष्टोें को उचित दण्ड के द्वारा अपने राष्ट्र को सर्वविध संरक्षित व सुखी करता है।

आध्यात्मिक भाष्य- (मे हि) मैं योग साधक (पंचदश साकं विंशतिम्) मोक्ष के चार साधन, जिनमें प्रथम विवेेक के बारह प्रकार अर्थात् शरीर के अन्नमय, प्राणमय, मनोमय, विज्ञानमय व आनन्दमय कोष, तीन अवस्था-जाग्रत, स्वप्न, सुषुप्ति, चार शरीर-स्थूल, सूक्ष्म, कारण एवं तुरीय वा स्वाभाविक को यथावत् जानना, ये बारह प्रकार के विवेक, द्वितीय वैराग्य अर्थात् ज्ञान की पराकाष्ठा, तृतीय षट्क सम्पत्ति (शम, दम, उपरति, तितिक्षा, श्रद्धा व समाधान), चैथा मुमुक्षुत्व अर्थात् मुक्ति की तीव्र इच्छा, ये कुल मिलाकर मुक्ति के बीस साधनों के साथ यम, नियम, आसन, प्राणायाम, प्रत्याहार, धारणा, ध्यान व समाधि, इन आठों योगांगों से प्रत्यक्ष, अनुमान, आगम, इन तीन प्रमाण, विपर्पय, विकल्प, निद्रा व स्मृति, इन सात प्रकार की वृत्तियों का निरोध करके अर्थात् कुल पैंतीस प्रकार के साधनोपसाधनों के द्वारा (उक्ष्णः पचन्ति) सुख व आनन्द की वृष्टि करने हारे परब्रह्म परमात्मा को साक्षात् करने की प्रक्रिया को परिपक्व करता हूँ। (उत) और (अहम्) मैं योगमार्ग का पथिक (अद्मि) उस परमानन्द व पावनी शान्ति का भक्षण करता हूँ अर्थात् उसका आस्वादन अनुभव करता हूँ और ऐसा करके (पीवः) अपने आत्मिक बल व पवित्रता को समृद्ध करता हूँ। (मे) मेरे (उभा कुक्षी) लौकिक व परलौकिक दोनों ही सुख (इत्, पृणन्ति) मुझे पूर्ण तत्व करते हैं।

भावार्थ- कोई भी योगी जब विवेक, वैराग्य, षट्क सम्पत्ति, मुमुक्षुत्व के साथ अष्टांग योग की साधना करता है, उस समय वह सृष्टि के सम्पूर्ण विज्ञान के साथ-2 परब्रह्म परमेश्वर एवं स्वयं के यथार्थ स्वरूप को जानकर परमानंद को प्राप्त करता है। इसके साथ वह इस लोक में भी सभी सुखों को प्राप्त करने में समर्थ होता है।

अब विज्ञ पाठक स्वयं विचार कर सकते हैं कि महर्षि दयानन्द सरस्वती की परम्परा का कोई भी भाष्यकार वेदों में मांसाहार, पशुबलि आदि पापों को कभी स्वीकार नहीं कर सकता है। इसमें उनका कोई पूर्वाग्रह नहीं है, बल्कि वेद का वास्तविक स्वरूप ही ऐसा है, जहाँ ऐसे पापों का कोई स्थान नहीं है। मैंने अपना भाष्य मात्र अपनी ऊहा के बल पर नहीं किया है, बल्कि उसका एक आधार है- विभिन्न वैदिक ग्रन्थों के प्रमाण एवं उनकी वैज्ञानिकता। पाठक मेरे भाष्य की अन्य भाष्यों से तुलना स्वयं करके यह जान सकते हैं कि यदि इसी प्रकार चारों वेदों का भाष्य किया जाए, तो संसार में कौन ऐसा मूर्ख होगा, जो वेद का उपहास करने की कल्पना भी कर सकेगा? दुर्भाग्य से ऋषि दयानन्द जी को विस्तार से वेद भाष्य करने का समय नहीं मिला।[ভাষ্যকারঃ আচার্য অগ্নিব্রত নৈষ্টিক]

1 comment:

  1. 😀😀😀 গরুর সন্তান গরুই হয় তার প্রমান আবার ও পেলাম

    ReplyDelete

ধন্যবাদ

বৈশিষ্ট্যযুক্ত পোস্ট

अथर्ववेद 6/137/1

  एक वरिष्ठ वैदिक विद्वान् ने मुझे अथर्ववेद के निम्नलिखित मन्त्र का आधिदैविक और आध्यात्मिक भाष्य करने की चुनौती दी। इस चुनौती के उत्तर में म...

Post Top Ad

ধন্যবাদ