অথ য ইচ্ছেৎ পুত্রো মে পণ্ডিতো বিগীতঃ সমিতিঙ্গমঃ শুশ্রূষিতাং বাচং ভাষিতা জায়েত সর্বান্ বেদাননুব্রুবীত সর্বমায়ুরিয়াদিতি মাংসৌদনং পাচয়িত্বা সর্পিষ্মন্তমশ্নীয়াতামীশ্বরৌ জনয়িতবৈ ঔক্ষেণ বার্ষভেণ বা।। (বৃহদারণ্যকোপনিষদ- ৬/৪/১৮)
পদার্থঃ- (অথ যঃ ইচ্ছেত্ ) আর- যে এই ইচ্ছা করে যে ; (পুত্রঃ মে) আমার পুত্র ; (পণ্ডিতঃ) পণ্ডিত [বিদ্যা-বুদ্ধি সম্পন্ন, চতুর] ; (বিগীতঃ) প্রশংসিত, প্রখ্যাত, যশস্বী ; (সমিতিম গমঃ) সভায় গমনকারী [সভা কার্য্যে কুশল] ; (শুশ্রূষিতাম) শ্রবণ যোগ্য, যাহার সব শ্রবণ করার মতো এমন ; (বাচম্) বাণীর ; (ভাষিতা) ভাষন প্রদানকারী [অপূর্ব রমণীয় বচনের বক্তা] ; (জায়েত) উৎপন্ন হোক ; (সর্বান্) সর্ব [চার] ; (বেদান্ অনুব্রুবীত) বেদের ব্যাখাতা [জ্ঞাতা] হোক ; (সর্বম্ আয়ুঃ ইয়াত্) পূর্ণ আয়ু প্রাপ্তকারী হোক; (ইতি) এমন [চায়, তাহারা] ; (মাংস+ঔদনম্) ঔষদের সার [কোমল ভাগ] এবং চাউল কে, [এইস্থানে উচিৎ পাঠ ভেদে] (মাষ+ঔদনম্) মাষকলাইয়ের সহিত চাউলকে ; (পাচয়িত্বা) রন্ধন করে ; (সর্পিষ্মন্তম্) ঘী মিশ্রিত করে ; (অশ্নীয়াতাম্) [পতি-পত্নী উভয়ে] আহার করে ; (ঈশ্বরৌ জনয়িতবৈ) [তারা এমন পুত্র] উৎপন্ন করতে সমর্থ হয় ; (ঔক্ষেণ বা) [সেই সার ভাগ] বা 'উক্ষা' [জীবক] নামক ঔষধির হোক; (আর্ষভেণ বা) বা 'ঋষভ'-নামক ঔষধিরই হোক।
সরলার্থঃ- আর- যে এই ইচ্ছা করে যে, আমার পুত্র পণ্ডিত [বিদ্যা-বুদ্ধি সম্পন্ন, চতুর] ; প্রশংসিত, প্রখ্যাত, যশস্বী, সভায় গমনকারী ; শ্রবণ যোগ্য, যাহার সব শ্রবণ করার মতো এমন বাণীর ভাষন প্রদানকারী [অপূর্ব রমণীয় বচনের বক্তা] ; উৎপন্ন হোক, সর্ব - ঋগ্বেদ, যজুর্বেদ, সামবেদ, অথর্ববেদ এই চার বেদের ব্যাখাতা [জ্ঞাতা] হোক ; পূর্ণ আয়ু প্রাপ্তকারী হোক, এমন চায়, তাহারা ; মাষকলাইয়ের সহিত চাউলকে রন্ধন করে ; ইহার সহিত ঘী মিশ্রিত করে ; [পতি-পত্নী উভয়ে] আহার করে ; তারা এমন পুত্র উৎপন্ন করতে সমর্থ হয় ; ঔক্ষেণ বা 'উক্ষা' [জীবক] নামক ঔষধির হোক বা 'ঋষভ'-নামক ঔষধিরই হোক।
উক্ত শ্লোকে মাংসৌদনম্ এর পাঠভেদ হবে মাষৌদনম্ পাঠভেদে মাংসৌদনম্ হয়। যদি 'মাংস' শব্দও গ্রহণ করা হয় তাহলেও কিন্তু বাংলা ভাষায় যাকে মাংস বলা হয় সেই অর্থ হয়না, উক্ত শ্লোকে বাংলা ভাষা নয় সংস্কৃত ভাষা প্রয়োগ হয়েছে আর সংস্কৃত 'মাংস' শব্দের অনেক অর্থ পাওয়া যায়। যেমন -
মাংস = ১. উত্তম অন্ন ২.উত্তম রস ৩. সাদন ৪. রসালো পদার্থ, ৫. মাংস ৬.পুরীষ ৭.শুদ্ধ..........ইত্যাদি ইত্যাদি ।। [অথর্ববেদ-৬/৭০/১. মাংসম্=ফলের মূল অংশ (পণ্ডিত হরিশরণ সিদ্ধান্তলঙ্কার ভাষ্যকার) ]
যে স্থলে যে অর্থে প্রয়োগ হয় সেটিই গ্রহণীয়। যারা 'মাংস' শব্দকেই মান্য করেন তাদের ক্ষেত্রে উক্ত শ্লোকে উত্তম অন্ন হিসেবে গ্রহণ করা যেতে পারে। [অন্ন বলতে অনেকেই কেবল ভাত বুঝে থাকেন কিন্তু আসলে তা নয় সকল ভোজনযোগ্য শস্য ভোজনকেই অন্ন বলা যায়] উত্তম অন্ন অর্থও কেন গ্রহণ করা যেতে পারে? কারণ উক্ত শ্লোক সহ কিছু পূর্ব শ্লোক থেকেই ঔষধি ভোজন নিয়ে আলোচনা হচ্ছিলো , আর ঔষধি ভোজন অবশ্যই উত্তম ভোজন তথা অন্ন।
মাংস আদৌ উত্তম ভোজন নয়, মাংসাহার দ্বারা দেহের জন্য উপকার হোক বা না হোক মাংসাহারে অপকারীতা রয়েছে অবশ্যই। তাছাড়া শাস্ত্রে বলা হয়েছে -
নিবর্তেত সর্বমাংসস্য ভক্ষণাৎ (মনুস্মৃতি-৫/৪৯)
অর্থাৎ সর্বপ্রকার মাংস ভক্ষণ থেকে দূরে থাকো [কোন প্রকার মাংস'ই ভক্ষণ করিবে না]।
তাৎপর্যঃ এই কন্ডিকার মধ্যে বর্ণিত পুত্র প্রাপ্তির জন্য বলা হয়েছে যে, মাষের সাথে পাককৃত চাউল বিধির সাথে আহার করা উচিৎ। এই পুত্র এবং পুত্রি উৎপন্ন করার জন্য অপেক্ষিত সাধনের কাজে নেবার শিক্ষাকে সমাপ্ত করে ইহা বলা হয়েছে যে, সব প্রকারে পুত্র কে উৎপন্ন করা আদির কৃত্য ঔক্ষ এবং আর্ষভ বিধি দ্বারা করা উচিৎ।
ঔক্ষ বিধিঃ ঔক্ষ শব্দ উক্ষ (সেচনে) ধাতু হতে এসেছে। উক্ষ দ্বারা উক্ষণ এবং উক্ষণের বিশেষন ঔক্ষ। ঔক্ষ বিধি বর্ণনাকারী শাস্ত্রকে ঔক্ষ শাস্ত্র বলে। কোন মিশ্রিত ঔষধি পাক আদি তৈরীতে কোন কোন ঔষধি কি কি মাত্রায় পড়া উচিৎ তাহা বর্ণনাকারী শাস্ত্রের নাম ঔক্ষ শাস্ত্র। অভিপ্রায় এই যে, উপরিউক্ত মাষের অথবা তিলৌদন আদির প্রস্তুতে এই (ঔক্ষ শাস্ত্র) র মর্যাদা কে লক্ষ্য রেখে কাজ করা উচিৎ।
আর্ষভ বিধিঃ আর্ষভ - ঋষভ শব্দের বিশেষন। ঋষভ এবং ঋষি শব্দ পর্যায়বাচক। আর্ষভের অর্থ ঋষিকৃত অথবা ঋষিদের বানানো কিছু। ঔক্ষ শাস্ত্রের সাথে এই আর্ষভ শব্দের ভাব এই যে, ঋষিদের বানানো বিধি (পদ্ধতি) র নামই ঔক্ষ শাস্ত্র। অর্থাৎ কোন অনভিজ্ঞর বানানো বিধিকে ঔক্ষ শাস্ত্র বলা হয় না। ঋষিকৃত পদ্ধতিই ঔক্ষ শাস্ত্র।
মাষৌদনঃ নিরুক্তেও মাংস শব্দের অর্থের মনন, সাধক, বুদ্ধিবর্ধক মন কে রুচি দানকারী বস্তুকে বলা হয়েছে। যা ফলের রসালো অংশ, ঘী, মাখন, ক্ষীর আদি পদার্থ (মাংস মাননং বা মানসং বা মনোস্মিনৎসীদতীতি ; নিরুক্ত ৪।৩)। নিরুক্তেও মাংস শব্দের অর্থের মনন, সাধক, বুদ্ধিবর্ধক মন কে রুচি দানকারী বস্তুকে বলা হয়েছে। যা ফলের রসালো অংশ, ঘী, মাখন, ক্ষীর আদি পদার্থ (মাংস মাননং বা মানসং বা মনোস্মিনৎসীদতীতি ; নিরুক্ত ৪।৩)।
এবং এই দৃষ্টি দ্বারা মাষৌদন কে মাংসৌদন বলা যায়। এই জন্য কোন প্রকরণে গো মাংস অর্থে মাংসের প্রয়োগ যা এই প্রকরনে নেই। এইজন্য যে দশ ঔষধিকে দ্বারা মাষ এবং ঔদন বর্ননার বিধান রয়েছে তাহার নাম স্বয়ং উপনিষদই উল্লেখ করেছে -
(i) ধান্য (ii) যব (iii) তিল (iv) মাষ (v) বাজরা (vi) প্রিয়জু (vii) গোধূম (viii) মসুর (ix) খল্ব (x) থলকুল।
(বৃহঃ উপঃ ৬।৩।১৩)
এখানে একটা বিষয়ে গভীর ভাবে মনোযোগ দেওয়া উচিৎ যে, এই ঔষধির গণনা করে দেখা যাচ্ছে তিলের পরেই মাষের উল্লেখ রয়েছে। এইজন্য সতেরো কন্ডিকায় তিলৌদন এবং তাহার পরে আঠারো কন্ডিকায় মাষৌদনের উল্লেখ। অন্যথা মাংসের তো এখানে যেমন বলা হলো তার কোন প্রকরনই নেই।
No comments:
Post a Comment
ধন্যবাদ