মূর্তিপূজা প্রসঙ্গে স্বামী বিবেকানন্দের কুযুক্তি - ধর্ম্মতত্ত্ব

ধর্ম্মতত্ত্ব

ধর্ম বিষয়ে জ্ঞান, ধর্ম গ্রন্থ কি , হিন্দু মুসলমান সম্প্রদায়, ইসলাম খ্রীষ্ট মত বিষয়ে তত্ত্ব ও সনাতন ধর্ম নিয়ে আলোচনা

धर्म मानव मात्र का एक है, मानवों के धर्म अलग अलग नहीं होते-Theology

সাম্প্রতিক প্রবন্ধ

Post Top Ad

স্বাগতম

15 July, 2021

মূর্তিপূজা প্রসঙ্গে স্বামী বিবেকানন্দের কুযুক্তি

 মূর্তিপূজা প্রসঙ্গে স্বামী বিবেকানন্দের কুযুক্তি

ঘটনার কথা— রাজস্থানের অন্তর্গত আলোয়ারের মহারাজা, মঙ্গল সিং ওনার কেন্দ্রে স্বামী বিবেকানন্দকে আমন্ত্রণ করেন। স্বামী বিবেকানন্দ একবার আলোয়ারের মহারাজের বাড়িতে অতিথি হয়েছিলেন। সেখানে রাজা মূর্তি পূজার যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুললেন। ওনার সঙ্গে ধর্ম, বিশ্বাস ইত্যাদি নিয়ে কথোপকথনের সময়, উনি স্বামীজি কে জিজ্ঞেস করেন যে এই মাটি, কাঠ বা ধাতু দিয়ে তৈরী মূর্তি পূজা করে কি লাভ হয়। এর মধ্যে তো প্রাণও থাকে না এবং এটা কাউকে আশীর্বাদও করতে পারেনা।এর কোনো মানে হয় না। তাই আমি আমার এই অঞ্চলের মধ্যে এরকম যা যা পাবো, সব ধ্বংস করে ফেলব। হঠাৎ স্বামীজির চোখে পড়ল দেয়ালে টাঙানো একটা ছবির দিকে। তিনি বললেন, ‘এটা কার ছবি?’ রাজা জানালেন, এটা তাঁর বাবার ছবি। স্বামীজি তখন বললেন, আপনি কি ওই ছবির ওপর থুতু ফেলতে পারেন?
আলোয়ারের মহারাজা
উনি আরো বললেন এই ছবি তো রক্ত, মাংস, হাড়বিহীন এবং এতে তো প্রাণও নেই, এটা তো আশীর্বাদও করতে পারেনা। মহারাজার চেহারাটা নিজের অজ্ঞতার জন্য লজ্জায় লাল হয়ে গেলো। স্বামীজি তখন বললেন, ঠিক একই রকম ভাবে হিন্দুরাও ওই মূর্তির মাধ্যমে নিজের ভগবানের সঙ্গে একাত্মতা বোধ করে।
গৃহকর্তা বললেন, ‘অসম্ভব। আমার বাবার ছবির ওপর আমি থুতু ফেলব কেন?’ বিবেকানন্দ বললেন, ‘অবশ্যই আপনি আপনার মৃত পিতার ছবির ওপর থুতু ফেলবেন না। কারণ, এটা আপনার বাবার ছবি। ছবিটা আপনার বাবার প্রতিকৃতি এবং আপনার বাবার মতোই ওই ছবিটাকে আপনি ভক্তি করেন। ঈশ্বর বা দেব-দেবী মানুষের কল্পনায় একটা অবয়ব ধারণ করে এবং কাঠ-মাটি দিয়ে ওই অবয়বের একটা মূর্ত মানুষ তৈরি করে। মানুষ আসলে মূর্তিটিকে পূজা করে না, পূজা করে মূর্তির ভেতরে যে ঈশ্বর বা দেব-দেবীর অবয়ব, তাঁকে
এজন্য স্বামী বিবেকানন্দ বলেছেন—
“পুতুল পূজা করে না হিন্দু, কাঠ মাটি দিয়ে গড়া। মৃন্ময়ী মাঝে চিন্ময়ী হেরে, হয়ে যাই আত্মহারা।৷”
রাজা তার ভুল বুঝতে পারে এবং হাত জোড় করে স্বামী বিবেকানন্দ এর কাছে তার ভুল শিকার করে।

সূত্র ::
১) Please click here

২) Please click here

৩) Please click here

৪) Please Click here

ঠিক একই রকম ভাবে শিকাগো শহরের ধর্মসভায়ও স্বামীজি বক্তব্য রেখেছিলেনঃ
'কুসংস্কার মানুষের বড় শত্রু. কিন্তু দ্বীচারিতা তো আরো খারাপ. খ্রিস্টান রা গির্জায় কেন যায়? ক্রস ওদের কাছে পবিত্র কেন? প্রার্থনা করার সময় কেন? মুখটা উপরের দিকে করে রাখে? একটা ক্যাথলিক গির্জায় এতো ছবি কেন থাকে? Protestant রা যখন প্রার্থনা করে, ওদের মনের মধ্যে এত ছবি থাকে কেন? মূল কথা হল যে মনের মধ্যে যদি কোন ছবি না থাকে, তাহলে মনে হবে যেন আমরা শ্বাস না ফেলে বেঁচে আছি. মনের অভ্যন্তরের বেঁচে থাকা ধারণাকেই আমরা বস্তু দিয়ে তৈরী প্রতিমার রূপ দান করি আবার তেমনি উল্টোটা ও সত্যি।


( From the ages, Christian missionaries are refusing the worship of sculptures, statues and idols [Swami Vivekananda and Non-Hindu Traditions- A universal Advaita by Stephen E. Gregg], instead irony is, the Catholic Churches worship, offer wine and bread to the statue of Jesus. The veneration of murtis (idol) is based on believe, association and respect for Hindus. We believe murti (symbol of god representation) has life (pran-pratistha) to make it vibrant, I must tell you an incident that happened long back when Mangal Singh (Maharaj of Alwar, Rajasthan) had invited Swami Vivekanada ji in his constituency and during the conversation of religion and faith, he promptly told Swami ji “What is the use of worshiping statue, which is merely made of clay, stone, wood or metal, neither it has life nor it can bless anyone, Its meaningless and I am thinking to destroy it all over in my territory then Swami Vivekananda ji asked Maharaj’s Minister to bring a portrait of his Maharaj Mangal Singh’s deceased father, which was hanging on the wall and requested to bring it down and spit on it, because the portrait doesn’t have bones, flesh, blood and it can’t bless also. Maharaj Mangal Singh was shocked and felt abash for his ignorance. Swami ji explained the same way Hindu people see relate and connect with their God through Murti (Idols) puja. In the same context Swami Vivekanand ji had said very aptly on World Parliament of Religions Chicago: 
“Superstition is a great enemy of man, but bigotry is worse. Why does a Christian go to church? Why is the cross holy? Why is the face turned toward the sky in prayer? Why are there so many images in the Catholic Church? Why are there so many images in the minds of Protestants when they pray? My brethren, we can no more think about anything without a mental image than we can live without breathing. By the law of association, the material image calls up the mental idea and vice versa.”)

এবার দেখি কুযুক্তি বা কুতর্ক বা হেত্বাভাস বা Logical fallacy কাকে বলে, তা ব্যাখ্যা করা প্রয়োজন। এর মানে হচ্ছে, প্রতারণামূলক কিছু, বা কুতর্ক, বা কুযুক্তি অথবা ন্যায়সঙ্গত কর্মে ফাঁকি দেয়া। যুক্তিবিদ্যায় প্রচলিত কিছু অনর্থক কথার মারপ্যাঁচ কিংবা ভুলযুক্তি/কুযুক্তি/অপযুক্তি বা কুতর্ক জুড়ে দেয়ার প্রবণতা দীর্ঘদিন ধরে লক্ষ্যণীয় ছিল, এবং এগুলো সবই যে কুতর্ক তা দ্বিধাহীনভাবেই প্রমাণিত হয়েছে। তাই বর্তমান সময়ে বিতর্ক কিংবা একাডেমিক আলোচনার সময় কিছু কিছু যুক্তিকে কুতর্ক বা হেত্বাভাস বা logical fallacy হিসেবে চিহ্নিত করা হয়।

কুযুক্তি বা কুতর্ক বা হেত্বাভাস কাকে বলে পৃথিবীর প্রায় সকল যুক্তিবাদী মানুষই বিষয়গুলো সম্পর্কে অবগত। অনুন্নত অসভ্য এবং অশিক্ষিত সমাজে যদিও এই কুতর্কগুলোই এখনো যুক্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠা পায়। কিন্তু এগুলো কোনটাই আসলে যুক্তি হিসেবে গণ্য হয় না। সহজভাবে বলতে গেলে, এই ধরণের কুযুক্তিগুলো সবই যুক্তিবিদ্যার শুরুতেই বাতিল করে দেয়া হয়। সেগুলো আলোচনাতে আসবার যোগ্যতাই রাখে না। হয়তো আপনি নিজেই মনের অজান্তে নানা ধরণের ফ্যালাসি দিয়ে যুক্তিতর্ক করে যাচ্ছেন।

কোনটি ভ্যালিড লজিক আর কোনটি লজিক্যাল ফ্যালাসি সেটা বুঝতে আমাদের সবারই একটু যুক্তিবিদ্যা পড়া উচিত। এতে আমাদের যুক্তিবোধ বাড়বে, মুক্তমনে চিন্তা করতে শিখবো, মিথ্যার ভীড় থেকে সত্য খুঁজে নিতে শিখবো।

উক্ত ঘটনায় স্বামী বিবেকানন্দ জী বলেছেন ‘অবশ্যই আপনি আপনার মৃত পিতার ছবির ওপর থুতু ফেলবেন না। কারণ, এটা আপনার বাবার ছবি। ছবিটা আপনার বাবার প্রতিকৃতি এবং আপনার বাবার মতোই ওই ছবিটাকে আপনি ভক্তি করেন। "

এখানে লক্ষণীয় বিষয় এই যে, স্বামী জী নিজে স্বীকার করছে ছবি টি রাজার পিতার ছবি, তা রাজাও নিজে বলেছেন। অর্থাৎ ওটা রাজার পিতার প্রতিমূর্ত্তি, প্রতিচ্ছবি কিন্তু আমরা বেদ (শুক্লযজুর্বেদ ৩২৷৩) অনুযায়ী জানি যে ঈশ্বরের কোন প্রতিমূর্ত্তি বা প্রতিচ্ছবি হয় না।

সংস্কৃত প্রতিমা শব্দটি "প্রতিম" থেকে উতপন্ন এবং আ প্রত্যয়যোগে নিস্পন্ন। প্রতিম এর অর্থ তুলনীয় এবং অপ্রতিম এর অর্থ অতুলনীয়। তাই- "ন তস্য প্রতিমা অস্তি" শ্লোকটির অর্থ দাঁড়ায় তার কোন তুলনা নেই।

বিবেকানন্দের কুযুক্তি

ন তস্য প্রতিমা অস্তি যস্য নাম মহদযশঃ ৷
হিরণ্যগর্ভ ইত্যেষ মা মা হিংসীদিত্যেষ যস্মান্ন জাত ইত্যেষঃ৷৷-(শুক্লযজুর্বেদ ৩২৷৩)

এই মন্ত্র দ্বারা যেমন প্রমাণ হয় ঈশ্বরের তুল্য কিছু নেই, তেমনি তাঁর প্রতিমা বা মূর্তি নেই। প্রতিমা অর্থ যে মূর্তি হয় তা মানতে নারাজ পণ্ডিতম্মন্যরা। মূর্তি শব্দ অবৈদিক দেখে বেদে মূর্তি শব্দ নেই, সে স্থলে আছে প্রতিমা। প্রতিমা অর্থ যে মূর্তি তা বৈদিক কোষেও উল্লেখিত আছে।

বিবেকানন্দের কুযুক্তি
দেখা যায় প্রতিমা=উপমা দেখাতে তারা সাধারণ বাংলা অভিধান ইউজ করে৷ অথচ একটি বিখ্যাত প্রাচীন অভিধান অমরকোষ এ প্রতিমার ৮ প্রতিশব্দ আছে যা মূর্তি নির্দেশ করে৷ অমরকোষ ২.১০.৩৫ প্রতিমানং প্রতিবিম্বং প্রতিমা প্রতিয়াতনা প্রতিচ্ছায়া। প্রতিকৃতিরর্চা পুংসি প্রতিনিধিরুপমোপমানং স্যাত্।।

বেদের অসংখ্যস্থলে পরমাত্মার মহিমাকে বিভিন্ন উপমার সাহায্যে প্রকাশ করা হয়েছে৷ তাহলে বিচার্য এই যে যখন ঈশ্বের মূর্ত্তি বা ছবি সম্ভব নয়, তখন কি রূপে এই যুক্তি সঠিক বলে ধরা যায়, আবশ্যয় ইহা একটি কুতর্ক।

গীতা ১৮।২২ শ্লোকে মূর্ত্তিপূজা তামসিক জ্ঞান সম্পন্ন বলা হয়েছে।

বিবেকানন্দের কুযুক্তি
অক্ষয় লাইব্রেরি 

যত্তু কৃৎস্নবদেকস্মিন কার্যে সক্তমহৈতুকম্।
অতত্ত্বার্থবদল্পং চ তত্তামসমুদাহৃতম্।।

অনুবাদঃ আর যে জ্ঞানের দ্বারা প্রকৃত তত্ত্ব অবগত না হয়ে, কোন একটি বিশেষ কার্যে পরিপূর্ণের ন্যায় আসক্তির উদয় হয়, সেই তুচ্ছ জ্ঞানকে তামসিক জ্ঞান বলে কথিত হয়।

পরে স্বামী জীর ভাষায় "মানুষ আসলে মূর্তিটিকে পূজা করে না, পূজা করে মূর্তির ভেতরে যে ঈশ্বর বা দেব-দেবীর অবয়ব, তাঁকে"

এখানেও বিচার্য এই যে শুধু কি মূর্ত্তির ভেতরেই ঈশ্বর ব্যাপ্ত আছেন, অন্যত্র নন..? 

কঠ উপনিষদেও ১/২/২২ এ বলা হচ্ছে ব্রহ্ম প্রাণীগণের শরীরে থেকেও শরীর রহিত

কঠ উপনিষদ ১/২/২২
কঠ উপনিষদের ১/৩/১৫ তে আরও বলা হয়েছে, পরমাত্মা অরূপম বা রূপহীন, কেবল সেই পরমাত্মাকে উপলব্ধি করতে পারলেই মৃত্যুর হাত থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে।

বিবেকানন্দের কুযুক্তি
কঠ ১।৩।১৫
মুণ্ডক উপনিষদ ২/১/২ তো বলেই দিচ্ছে, সেই দিব্য পুরুষ অমূর্ত বা মূর্তিহীন
সেই পরমেশ্বরের মূর্তি তো দূরে থাক, 

বিবেকানন্দের কুযুক্তি


শ্বেতাশ্বতর উপনিষদ ৬/৯ বলছে সেই ঈশ্বরের কোনও চিহ্নবিশেষও নেই

বিবেকানন্দের কুযুক্তি

উপর্যুক্ত আলোচনা থেকে এটা স্পষ্ট বেদ উপনিষদের সর্বত্রই নিরাকার মূর্তিহীন ঈশ্বরের কথা বলছে।
আবার দেখুন আপনি কি ওই ছবির ওপর থুতু ফেলতে পারেন?’ এই কথার দ্বারা স্বামী জী তর্ক দিয়েছেন যে রাজা নিজের পিতার ছবির ওপর যদি থুতু দিয়ে দেন তবে ইহা প্রমাণ হবে মূর্ত্তিপূজা সঠিক নয়।
এখন মহারাজা যদি তর্কের খাতিরে ছবিটির ওপর থুতু দিয়ে দিতেন [ যা খুব নীচ ব্যক্তিই কল্পনা করতে পারেন] তবে কি স্বামী বিবেকানন্দের তর্ক টি টিকে থাকতো ?!! অবশ্যয় না, ইহা একটি কুযুক্তি,কুতর্ক।
ইহা

অপ্রাসঙ্গিক তর্কের কুযুক্তি বা ফ্যালাসি [Red herring]

এই হেত্বাভাসটি ঘটে যখন কোন দাবীর সপক্ষে চাওয়া মাত্রই সেই গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন টি থেকে দর্শক শ্রোতার দৃষ্টি সরিয়ে নিতে বা বিভ্রান্ত করতে সম্পূর্ণ প্রসঙ্গহীন কিছু বিষয় উপস্থাপন করে। যার ফলে আলোচনাটি পন্ড হয়ে অন্য আরএকটি বিষয় চলে আসে

দাবীঃ আমার মনে হয় ভুত আছে।
প্রশ্নঃ ভুত যে আছে, তার প্রমাণ কী?
দাবীঃ এই যে আমরা জন্মেছি, মারা যাচ্ছি, এগুলো তো সত্য, তাই না? মারা যে যাচ্ছি, আমরা কোথায় যাচ্ছি?

উপরের দাবীগুলো লক্ষ্য করুন। দাবীকারী প্রথমে বললো ভুত আছে। প্রমাণ চাওয়া মাত্রই তিনি আলোচনা ভিন্ন একদিকে নিয়ে গেলেন, যেই আলোচনায় তার কথাগুলো আপাত দৃষ্টিতে লজিক্যাল মনে হলেও, তিনি অপ্রাসঙ্গিকভাবেই আসলে জন্ম মৃত্যুর প্রসঙ্গের অবতারণা করেছেন। যার সাথে ভুত থাকা না থাকা সম্পর্কহীন। পরের ধাপে তিনি যতই যৌক্তিক কথা বলুন না কেন, তার সকল যুক্তিই কুযুক্তি বা ফ্যালাসি বলে বিবেচিত হবে। কারণ তিনি মূল প্রসঙ্গ বাদ দিয়ে অন্যদিকে চলে গেছেন।

আরো একটি স্বামী বিবেকানন্দের বিচার দেখুনঃ

জীব প্রেম নিয়ে স্বামীজীর অমিয় বাণীটির কথা আমরা সবাই জানি। স্বামীজী বলেছেন –

বহুরূপে সম্মুখে তোমার, ছাড়ি কোথা খুঁজিছ ঈশ্বর

জীবে প্রেম করে যেই জন, সে জন সেবিছে ঈশ্বর।

ভাল কথা। কিন্তু আমি ইতিহাস ঘেঁটে দেখলাম, এই বিবেকানন্দ শ্রীরামকৃষ্ণের মৃত্যুর পরে ১৮৮৬ সালে প্রথম শ্রীরামকৃষ্ণ মঠ ‘বরাহনগর মঠে’র প্রতিষ্ঠার পরে সেখানে মহা উৎসাহে পশুবলি পবর্তন করেছিলেন। অধিকাংশ গুরুভাইদের আপত্তি সত্ত্বেও তিনি সর্বদাই দেবী পূজায় পশুবলির ব্যবস্থা রাখতেন। এমনকি বেলুড়মঠের দুর্গাপূজাতেও তিনি পাঁঠাবলি দিতে চেয়েছিলেন, কিন্তু তার গুরু রামকৃষ্ণের স্ত্রী সারদা দেবী আপত্তি করলে তিনি তা করতে পারেননি[নিরঞ্জন ধর, বিবেকানন্দ: অন্য চোখে, উৎস মানুষ সংকলন]। কিন্তু বেলুড় মঠে করতে না পারলেও কালিঘাট থেকে বলি দিয়ে পাঁঠা নিয়ে এসে ভোজনের আয়োজন করতেন। পরবর্তী জীবনে আমরা আরো দেখি তার ইংরেজ শিষ্য নিবেদিতাকে দিয়ে বিভিন্ন জনসভায় পশুবলির সমর্থনে বক্তৃতার ব্যবস্থা করেছিলেন[নিরঞ্জন ধর, বিবেকানন্দ: অন্য চোখে, উৎস মানুষ সংকলন]। বিবেকানন্দের জীবপ্রেমের কি অত্যাশ্চর্য নমুনা! একজন বেদান্তবাদী সন্ন্যাসী হিসেবে সমগ্র জীবজগতকে ভালবাসার উপদেশের সাথে পশুবলি একেবারে অসঙ্গতিহীন, তা বোধ হয় না বলে দিলেও চলবে। শুধু তাই নয়, বিবেকানন্দ বললেন[মহেন্দ্রনাথ দত্ত, শ্রীমৎ বিবেকানন্দ স্বামীজির ঘটনাবলী, প্রথম খণ্ড, পৃঃ ৯৬] –

আরে একটা পাঁঠা কী, যদি মানুষ বলি দিলে যদি ভগবান পাওয়া যায়, তাই করতে আমি রাজি আছি।

অর্থাৎ কল্পিত ভগবানকে পাওয়ার জন্য দরকার হলে মানুষকে পর্যন্ত বিবেকানন্দ বলি দেবেন! এই না হলে ‘জীবে প্রেম করে যেই জন, সে জন সেবিছে ঈশ্বর’।

www.ধর্ম্মতত্ত্ব.com

তথ্যসূত্র

1. ‎Francis, The Astonishing Hypothesis : The Scientific Search for the soul

No comments:

Post a Comment

ধন্যবাদ

বৈশিষ্ট্যযুক্ত পোস্ট

জাতিবাদ ও ভগবান মনু

  সম্পাদকীয় বর্তমান সময়ে দেশ অনেক গম্ভীর সমস্যায় গ্রস্ত আছে, তারমধ্যে একটা হল - জাতিবাদ। এই জাতিবাদের কারণে আমাদের দেশের অনেক বড় হানি হ...

Post Top Ad

ধন্যবাদ