গৃহজীবনে সুখী হওয়ার সাতটি পথ - ধর্ম্মতত্ত্ব

ধর্ম্মতত্ত্ব

ধর্ম বিষয়ে জ্ঞান, ধর্ম গ্রন্থ কি , হিন্দু মুসলমান সম্প্রদায়, ইসলাম খ্রীষ্ট মত বিষয়ে তত্ত্ব ও সনাতন ধর্ম নিয়ে আলোচনা

धर्म मानव मात्र का एक है, मानवों के धर्म अलग अलग नहीं होते-Theology

সাম্প্রতিক প্রবন্ধ

Post Top Ad

স্বাগতম

22 July, 2021

গৃহজীবনে সুখী হওয়ার সাতটি পথ

  ডেল কার্নেগি » প্রতিপত্তি ও বন্ধুলাভ থেকে নেওয়া অংশঃ

পঁচাত্তর বছর আগে ফ্রান্সের সম্রাট তৃতীয় নেপোলিয়ন, নেপোলিয়ন বোনাপার্টের ভাইপো কাউন্টেস অব টেবা, মেরী ইউজিন ইগনেশ অর্গাস্টিন দ্য মন্টিনোর প্রেমে পড়েন–তিনি ছিলেন বিশ্বের একজন শ্রেষ্ঠা সুন্দরী, নেপোলিয়ন তাকে বিয়ে করেন। তার পরামর্শদাতারা তাঁকে জানান মহিলাটি শুধুমাত্র একজন অনামা স্পেনীয় কাউন্টের মেয়ে। কিন্তু নেপোলিয়ন তাতে জবাব দেন : তাতে কি হয়েছে? তার সৌন্দর্য যৌবন রূপ সবই তিনি স্বর্গীয় মনে করতেন। রাজকীয় আসন থেকে জাতির উদ্দেশ্যেই তিনি বলেন : ‘আমি এমন একজন রমণীকে বেছে নিয়েছি যাকে আমি ভালোবাসি, শ্রদ্ধা করি। কোন অচেনা মেয়ের চেয়ে এই রকম মেয়েই আমি পছন্দ করি।‘

নেপোলিয়ন আর তাঁর স্ত্রীর কি না ছিলো-স্বাস্থ্য, সম্পদ, ক্ষমতা, খ্যাতি, সৌন্দর্য, ভালোবাসা, প্রেম-রোমান্স ভরা জীবনে যা যা দরকার। কোন ভালোবাসায় ভরা আলোকোজ্জ্বল্প জীবন এর চেয়ে ভালো হয়ে ছুটতে পারে না।

কিন্তু হায়, সেই আলো শিগগিরই যেন নিভে এলো-পড়ে রইল এক মুঠো ছাই। নেপোলিয়ন ইউজিনকে সাম্রাজ্ঞী করেছিলেন, কিন্তু নেপোলিয়নের প্রেম বা সিংহাসন তার ঘ্যানর ঘ্যানর করা বন্ধ করতে পারেনি।

ঈর্ষার আগুনে দগ্ধ হয়ে আর সন্দেহের জ্বালায় ইউজিন নেপোলিয়নের কোন কথাই শোনেন নি এমন কি তাকে এক মুহূর্তও একাকী থাকতে দেন নি। শাসন কার্য চালানোর সময় রাজসভায় ঢুকেও তিনি অতি দরকারী কাজ কর্মে বাধা দিয়েছেন। তিনি তাঁকে একেবারেই একা থাকতে দিতে চাননি এই ভয়ে যে হয়ত তিনি অন্য কোন রমণীর সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা করছেন।

প্রায়ই ইউজিন তার বোনের কাছে স্বামীর নামে অভিযোগ করতেন। আর সঙ্গে কান্নাকাটি এবং ঘ্যানর ঘ্যানর করতেন, ভয় দেখাতেন। পাঠাগারে ঢুকে স্বামীকে গালাগাল দিতেন। ফ্রান্সের সম্রাটের এক ডজন প্রাসাদ থাকা সত্ত্বেও কোথাও তিনি শান্তি পেতেন না।

এসব করে ইউজিনের কি লাভ হয়?

উত্তরটা এই রকম : আমি ই.এ. রাইনহার্টের লেখা ‘নেপোলিয়ান ইউজিন’ নামে বই থেকে উদ্ধৃতি দিচ্ছি। ‘শেষ পর্যন্ত ব্যাপারটা এমনই দাঁড়ালো যে নোপোলিয়ন প্রায়ই রাত্রিবেলা নিজের চোখ টুপিতে ঢেকে পিছনের দরজা দিয়ে গোপনে প্রাসাদ ছেড়ে এক সুন্দরী মহিলার কাছে যেতেন। মহিলাটি তাঁকে ভালবাসতেন। পাথরের রাস্তায় একলা হেঁটে বেড়াতেন সম্রাট। রূপ কথাতেই এমন ঘটনা ঘটে থাকে। সম্রাট খালি ভাবতেন,আহা আমার জীবন যদি সত্যিই এমন হতো।’

ঘ্যানর ঘ্যানর করার ফলে ইউজিনের জীবনে এই রকমই ঘটে যায়। সত্যি তিনি ফ্রান্সের সিংহাসনে বসেন। এটাও সত্যি পৃথিবীতে সে সময় সবসেরা সুন্দরী ছিলেন তিনিই। তা সত্ত্বেও কিন্তু ঘ্যানর ঘ্যানরের বিষাক্ত কামড় তিনি ত্যাগ করতে পারেন নি। প্রাচীন কালে জনের মত ইউজিনও তাই বিলাপ করতে পারতেন : যা ভয় করেছিলাম আমার জীবনেই তাই ঘটেছে। তার জীবনে এটা এসেছে? মোটেই না, বেচারি মহিলাটি ঈর্ষা আর ঘ্যানর ঘ্যানর করে নিজেই তা এনেছেন।

নরকের শয়তান প্রেম ভালোবাসা ধ্বংস করার জন্য যত রকম উপায় উদ্ভাবন করেছে ঘ্যানর ঘ্যানর তার মধ্যে সবচেয়ে খারাপ। এ কখনও ব্যর্থ হয় না। গোখরো সাপের বিষের মত এটা সব নষ্ট করে শেষ করে দেয়।

কাউন্ট লিও টলষ্টয়ের স্ত্রীরও সেটা আবিষ্কার করেন তবে বড় দেরিতে। মৃত্যুর আগে তিনি তার মেয়েদের কাছে স্বীকার করেন : ‘তোদের বাবার মৃত্যুর জন্য আমিই দায়ী। তার মেয়েরা জবাব দেয়নি। তারা সবাই কাঁদছিলো। তারা জানতো তাদের মা ঠিক কথাই বলছেন। ওরা জানতো সারা জীবন ধরে শুধু অভিযোগ করে, সমালোচনা করে আর শুধু ঘ্যানর ঘ্যানর করেই তিনি স্বামীর মৃত্যুর কারণ হন।’

অথচ কাউন্ট লিও টলষ্টয় আর তাঁর স্ত্রী নানা অসুবিধা সত্ত্বেও সুখী হতে পারতেন। তিনি ছিলেন সর্বকালের একজন শ্রেষ্ঠ ঔপন্যাসিক তাঁর অমর সৃষ্টি ‘ওয়ার অ্যাণ্ড পীস‘ এবং ‘আনা কারেনিনা’ চিরকাল ধরেই পৃথিবীর সাহিত্যাকাশে উজ্জ্বল হয়ে থাকবে।

টলস্টয় এতই বিখ্যাত ছিলেন যে তাঁর স্তাবকরা দিনরাত ছায়ার মতই তাঁকে অনুসরণ করতো আর তিনি যা বলতেন সবাই তাঁরা সর্টহ্যাণ্ডে লিখে রাখতো। তিনি যদি বলতেন, মনে হচ্ছে এবার শুতে যাব’ তাহলে এই সাধারণ কথাও তারা লিখে রাখতো। এখন রুশ সরকার তিনি সারা জীবনে যা যা লিখেছেন সবই প্রকাশ করতে চলেছেন, হয়তো তার সব লেখার সংখ্যা দাঁড়াবে একশটা বই।

খ্যাতি ছাড়াও টলষ্টয় আর তার স্ত্রীর ছিলো সম্পদ, সামাজিক প্রতিষ্ঠা, ছেলে মেয়ে। কোন বিবাহ এত সুন্দর হয় না। গোড়ায় মনে হত তাদের বিবাহিত জীবন বুঝি খুবই আনন্দের হবে। তারা তাই হাঁটু গেড়ে ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা জানাত যেন এমন সুখ চিরকাল থাকে।

তারপরেই একটা আশ্চর্য ব্যাপার ঘটে গেল। টলষ্টয় আস্তে আস্তে বদলে গেলেন। তিনি হয়ে পড়লেন সম্পূর্ণ আলাদা মানুষ। যে সব বিখ্যাত বই তিনি লিখেছিলেন সেগুলোর জন্য তিনি লজ্জিত হয়ে পড়লেন আর তখন থেকে সারা জীবন উৎসর্গ করলেন শান্তি প্রচার আর যুদ্ধ ও দারিদ্র বন্ধ করার আহ্বান জানিয়ে প্রচার পত্র লেখা শুরু করেন।

যে মানুষ যৌবনে একবার স্বীকার করেন সমস্ত রকম অপরাধই তিনি করেছেন–এমন কি খুনও তিনিই আবার যীশুর শিক্ষা অনুসরণ করতে আরম্ভ করেন। তিনি নিজের সব জমি দান করে দিয়ে দরিদ্রের জীবন বেছে নেন। তিনি নিজের জুতো নিজেই বানাতেন, মাঠে কাজ করতেন, খড় কাটতেন। নিজেই নিজের ঘর ঝাঁট দিয়ে কাঠের পাত্রে খেতেন আর শত্রুদের ভালো করার চেষ্টা করতেন।

লিও টলষ্টয়ের জীবন একটা বিয়োগান্ত অধ্যায় আর এর জন্য দায়ী ছিলো তার বিয়ে। তাঁর স্ত্রী বিলাসিতা পছন্দ করতেন কিন্তু টলষ্টয় সেটা ঘৃণা করতেন। তাঁর স্ত্রী চাইতেন খ্যাতি আর সামাজিক প্রতিষ্ঠা, কিন্তু এসব সামান্য জিনিস তিনি চাইতেন না, এর কোন দাম তার কাছে ছিলো না। তার স্ত্রী চাইতেন টাকা পয়সা আর সম্পদ, আর তিনি ভাবতেন ধনদৌলত এবং ব্যক্তিগত সম্পত্তি রাখা পাপ।

বছরের পর বছর ধরে টলষ্টয়ের স্ত্রী ঘ্যানর ঘ্যানর করে, গালাগাল দিয়ে চিৎকার করতেন যেহেতু তিনি কোন টাকা পয়সা না নিয়ে তাঁর বই স্বাধীনবাবে ছাপতে দিয়ে দেন। তাঁর স্ত্রী চাইতেন এর পরিবর্তে টাকা।

তাঁকে বাধা দিলে শ্রীমতী টলষ্টয় পাগলের মত চিৎকার করে গড়াগড়ি খেয়ে আফিঙ খেতে যান। তিনি শপথ করেন আত্মহত্যা করবেন, তাই একবার তিনি কুঁয়োয় ঝাঁপিয়েও পড়তে যান।

ওদের বিবাহিত জীবনে এমন ঘটনা আছে যেটাকে আমার মনে হয় ইতিহাসের সবচেয়ে দুঃখ জনক ঘটনা। আমি আগেই বলেছি ওদের বিবাহিত জীবন গভীর আনন্দময় বলেই মনে হয়েছিলো অথচ আঠচল্লিশ বছর পর টলষ্টয় তাঁর স্ত্রীকে দেখতেও রাজি ছিলেন না। একদিন সন্ধ্যায় এই ভগ্নহৃদয় বৃদ্ধা, প্রেমের আর আদরের প্রয়াসী টলষ্টয়ের সামনে হাঁটু মুড়ে বসে কাতর আবেদন জানালেন; পঞ্চাশ বছর আগে তিনি স্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে তার ডায়রীতে যে প্রেমের নিবেদন লিখেছিলেন সেগুলো পাঠ করে শোনাতে। তিনি যখন সেগুলো পড়তে আরম্ভ করলেন, সেই সুন্দর হারানো সুখের দিনগুলো যেন আবার ফিরে এসেছিলো। দুজনের চোখেই তখন জল। বহুঁকাল আগে যে রোমান্টিক দিন তাদের জীবনকে আনন্দের আবরণে ঘিরে রেখেছিলো সে স্বপ্ন আজ কোথায় হারিয়ে গেছে।

শেষপর্যন্ত টলস্টয় আশি বছরে পা দিতে তিনি গৃহকোণের আনন্দহীন জীবন আর সহ্য করতে পারলেন। তাই তুষারপাতে আচ্ছান্ন ১৯১০ সালের অক্টোবরের এক রাতে তিনি গৃহত্যাগ করে চলে গেলেন। কোথায় চলেছেন না জেনেই সেই ঠাণ্ডা অন্ধকারে তিনি হারিয়ে যেতে চাইলেন।

এগারো দিন পরে একটা রেল স্টেশনে নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে তিনি মারা গেরেন। তাঁর মৃত্যুকালীন অনুরোধ ছিলো তাঁর স্ত্রীকে যেন তার সামনে আসতে দেয়া না হয়।

কাউন্টেস টলষ্টয় তাঁর ঘ্যানর ঘ্যানর, অনুযোগ আর হিস্টিরিয়ার জন্য এই দামই দিয়েছিলেন।

পাঠক হয়তো ভাবছেন তাঁর ঘ্যানর ঘ্যানর করার যথেষ্ট কারণ ছিলো। সেটা মানছি। কিন্তু আসল কথা তা নয়। প্রশ্ন হলো : ঘ্যানর ঘ্যানরে তাঁর কি লাভ হয়? না, তাতে খারাপ অবস্থাটা আরও খারাপ করে তোলা হয়?

আমার মনে হয় আমি সত্যিই পাগল ছিলাম’ এই কথাই কাউন্টেস টলস্টয় ভাবতেন–তবে তখন ঢের দেরি হয়ে গিয়েছিল। আব্রাহাম লিঙ্কনের জীবনের দুঃখময় পরিচ্ছেদও একই কারণ–তাঁর বিয়ে। তাঁর হত্যাকাণ্ড নয়, তাঁর বিয়ে। বুথ যখন গুলি করে, লিঙ্কন বুঝতেই পারেন নি তাকে গুলি করা হয়েছে, কিন্তু তিনি তেইশ বছর ধরে অনুভব করেছেন তার বিবাহিত জীবনের বিষাক্ত জ্বালা। এটা কম করেই বলা হলো। প্রায় শতাব্দীর এক চতুর্থাংশ ধরে মিসেস লিঙ্কন ঘ্যানর ঘ্যানর করে তাঁর জীবনকে বিষাক্ত করে তুলেছিলেন।

তিনি সব সময় অভিযোগ করতেন আর স্বামীকে সমালোচনা করতেন, লিঙ্কনের কোন কাজই ঠিক ছিলো না। তাঁর কাঁধ বাঁকানো। তিনি অদ্ভুতভাবে হাঁটেন, ডান পা বেশি তোলেন, অনেকটা রেড ইণ্ডিয়ানদের মত, এই ছিলো অভিযোগ। তিনি অভিযোগ করতেন তার চলাফেরার কোন ছন্দ নেই, তিনি ব্যঙ্গ করে তারহটা দেখাতেন যেহেতু তিনি নিজে মাদান মেন্টেলের স্কুলে শিক্ষা পান।

কাউন্টেস টলস্টয় স্বামীর বড় বড় কাজ পছন্দ করতেন না। তিনি এও বলেছিলেন তাঁর নাকটা বড় খাড়া, ঠোঁট উঁচু, তাঁকে যক্ষারোগীর মত দেখায়। তার হাত পা বড় বড় আর মাথাটা আকারে খুব ছোট।

আব্রাহাম লিঙ্কন আর মেরী টড লিঙ্কন সব দিক থেকেই আলাদা ছিলেন। সেটা শিক্ষা দীক্ষা, অতীত, রুচি, মানসিক দৃষ্টিভঙ্গী সব কিছুতেই। তারা পরস্পর সব সময়ে বিরক্তি উৎপাদন করতেন।

সেনেটের অ্যালবার্ট জে. বেভারিজ যিনি এ যুগের সবসেরা বিশেষজ্ঞ, লিঙ্কন সম্পর্কে তিনি লিখেছেন : ‘মিসেস লিঙ্কনের গলার স্বর ছিলো কর্কশ। বহুদূর থেকেই সেটা শ্রুতি গোচর হত। তাঁর বাড়ির কাছাকাছি সকলেই ওদের ঝগড়ার ব্যাপার জানত। প্রায়ই মিসেস লিঙ্কনের ক্রোধের প্রকাশ ঘটতো অন্যভাবেও। আর এটা ছিল অসংখ্য।‘

উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, মিঃ আর মিসেস লিঙ্কন তাঁদের বিয়ের পর মিসেস জ্যাকব নামের এক মহিলার বাড়িতে থেকেছেন।

এক সকালে মিঃ আর মিসেস লিঙ্কন যখন প্রাতরাশ বসেছিলেন কোন কারণে লিঙ্কনের কথায় তার স্ত্রী ক্ষিপ্ত হয়ে স্বামীর মুখে গরম কফির কাপ ছুঁড়ে মারেন। এটা তিনি করেন সকলের সামনেই।

কোন কথা না বলে লিঙ্কন লজ্জিত হয়ে চুপচাপ বসে থাকেন আর গৃহকর্ত্রী একটা তোয়ালে এনে তাঁর মুখ আর পোশাক মুছে দেন।

মিসেস লিঙ্কনের ঈর্ষা এমনই মূর্খের মতো আর অবিশ্বাস্য ছিল যে এগুলো আলোচনা করলে বিস্ময়ে স্তব্ধ হয়ে যেতে হয়। সকলের সামনেই তিনি এসব করতেন। তিনি অর্থাৎ মিসেস লিঙ্কন শেষ পর্যন্ত পাগল হয়ে যান। হয়তো তিনি বরাবরই পাগল ছিলেন।

এইসব ঘ্যানর ঘ্যানর আর গালমন্দ এবং অহেতুক রাগ কি লিঙ্কনকে বদলে দেয়? এক রকম তাই। অন্তত স্ত্রীর প্রতি তার আচরণ। নিজের বিয়ে সম্বন্ধে তার মোহ কেটে যায় আর স্ত্রীকে তাই তিনি যথাসাধ্য পরিহার করে চলতেন। দুঃখের কথা যে লিঙ্কন ফিল্ডে তাকতে চাইতেন না। বছরের পর বছর এরকম চলেছিলো। বাড়ি থাকতে তার ভয় হতো। শীত আর বসন্ত কালের তিনটি করে মাস তিনি অন্য জায়গায় থাকতেন কখনও স্প্রিং ফিল্ডের ধারে কাছে যেতেন না।

মিসেস লিঙ্কন, সম্রাজ্ঞী ইউজিনি আর কাউন্টেস টলষ্টয়ের ঘ্যানর ঘ্যানরের ফলাফল হয় এই রকমই। তাঁরা নিজেদের জীবন নিজেরাই বিষাদময় করে তোলেন। এই ভাবেই নিজেদের সবচেয়ে প্রিয়জনদের তারা ধ্বংস করেন।

নিউইয়র্কের আদালতে পারিবারিক সম্পর্কের বিষয়ে এগারো বছরের অভিজ্ঞতা সম্পন্ন বেমি হ্যাঁমবার্জর হাজার হাজার বিচ্ছেদের ঘটনা আলোচনা করে বলেছেন যে, বহু স্ত্রী-ই ঘ্যানর ঘ্যানর করে নিজেদের বিবাহিত জীবনের সমাধি খুঁড়েছেন।

অতএব পারিবারিক জীবনে সুখী হতে হলে ১ নম্বর নিয়ম হল : ‘ঘ্যানর ঘ্যানর কখনও করবেন না।‘


ভালোবাসুন ও বাঁচতে দিন

ডিসরেলি বলেছিলেন, ‘জীবনে আমি প্রচুর ভুল করতে পারি, তবে কখন ভলোবাসার জন্য বিয়ে করবো না।’

আর তা তিনি করেন নি। তিনি প্রায় পঁয়ত্রিশ বছর বয়স পর্যন্ত একাই ছিলেন। আর তারপর এক ধনী বিধবাকে বিয়ে করেন, তার চেয়ে পনেরো বছরের বড় বিধবাকে। যে বিধবার সব চুল ছিলো সাদা, যিনি পঞ্চান্নটি শীত পার হয়েছিলেন। প্রেম? না, তা নয়। ভদ্র মহিলা জানতেন ডিসরেলি তাকে ভালোবাসেন না। তিনি এটাও জানতেন ডিসরেলি তাঁকে এক বছর অপেক্ষা করতে অনুরোধ করেন যাতে তার চরিত্র বুঝতে পারেন। তারপর সেই সময় কাটলে তাঁকে তিনি বিয়ে করেন।

খুবই গদ্যময়, ব্যবসায়িক কথা বলে মনে হয়। তাই না? তা সত্ত্বেও কিন্তু ডিসরেলির ঐ বিয়ে অনেক বিয়ের চেয়েই সফলতায় ভরা ছিলো। বিয়ের ইতিহাসে এটাই আশ্চর্য।

যে ধনী বিধবাকে ডিসরেলি বেছে নিয়েছিলেন তিনি তরুণী, সুন্দরী বা দারুণ কিছু একটুও ছিলেন না। তাঁর কথাবার্তায় সাহিত্য বা ইতিহাস সম্বন্ধে হাস্যোদ্রেক করার মতই সব ঘটনা ঘটতো। যেমন উদাহরণ হিসাবে দেখা যায়, তিনি জানতেন না আগে কারা এসেছিলো গ্রীক না রোমানরা। পোশাক সম্বন্ধে তাঁর রুচি ছিলো জঘন্য, বাড়িঘর সাজানো সম্পর্কেও রুচি ছিলো অদ্ভুত। কিন্তু তিনি একটা বিষয়ে ছিলেন ওস্তাদ-পুরুষকে কি করে নাড়াচাড়া করতে হয় সে ব্যাপারে তিনি ছিলেন একেবারে সিদ্ধহস্ত। বিয়ের ব্যাপারেও তিনি ছিলেন অসামান্য দক্ষ।

তিনি তাঁর বুদ্ধিকে ডিসরেলির উপর চাপাতে চাননি! ডিসরেলি যখন চালাক চতুর ডাচেসদের সঙ্গে কথাবার্তা বলে বিরক্ত অবস্থায় শ্রান্ত হয়ে ফিরে আসতেন, মেরী অ্যানের কথাবার্তায় তখন তিনি আনন্দলাভ করতেন। বাড়ির আবহাওয়া তাঁর মনকে ক্রমেই আনন্দময় করে তুলতো। স্ত্রীকে আপ্যায়ন তাকে মধুর শান্তি এনে দিতো। বাড়িতে বয়স্কা স্ত্রীর সঙ্গে যে সময়টা তিনি কাটাতেন সেটাই ছিলো তার কাছে পরম সুখের। তাঁর স্ত্রী তাঁর কাছে ছিলেন তার সঙ্গিনী, তাঁর বিশ্বাসের পাত্রী, তার পরামর্শদাতা। প্রতি রাতে তিনি তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরে এসে স্ত্রীকে সারাদিনের কমন্স সভার সব বিবরণী শোনাতেন। আর-আর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো মেরী অ্যান আদপেই বিশ্বাস করতেন না ডিসরেলি যে কাজ করতে চান তাতে ব্যর্থ হবেন।

ত্রিশ বছর ধরে মেরী অ্যান ডিসরেলির জন্যেই বেঁচে ছিলেন, একমাত্র তারই জন্য। তার অর্থ সম্পদ তাঁর কাছে দামী ছিল শুধু স্বামীর সুখেরই জন্য। তার পরিবর্তে তিনি ছিলেন ডিসরেলির নায়িকা। মেরী মারা যাওয়ার পর ডিসরেলি আর্ল উপাধি পান, কিন্তু তিনি যখন সাধারণ একজন ছিলেন, তখন তিনি মহারাণী ভিক্টোরিয়াকে বলে মেরী অ্যানকে একটি উপাধি দান করান। অতএব ১৮৬৮ সালে তাঁকে ভাইকাউন্টেস বীকনসৃফিল্ড উপাধি দেওয়া হয়।

জনসমক্ষে মেরী অ্যানকে যতটাই বুদ্ধিহীনা বলে মনে হয়ে থাকুক, ডিসরেলি কিন্তু কখনই স্ত্রীর সমালোচনা করেন নি। কখনও একটা কড়া কথাও বলেন নি। তাছাড়া কেউ যদি তাঁকে ঠাট্টা করতে চাইতো তিনি সঙ্গে সঙ্গেই স্ত্রীর সমর্থনে দ্রুত অগ্রসর হতেন। এর মধ্যে থাকতো তীব্র বিশ্বস্ততা।

মেরী অ্যান হয়তো ত্রুটিহীনা ছিলেন না, তা সত্ত্বেও তিন দশক ধরে স্বামীর বিষয়ে কথা বলতে তাঁর ক্লান্তি আসেনি। তিনি সব সময়েই তার প্রশংসা করতেন। এর ফল কেমন হয়? ডিসরেলি বলেন, আমরা ত্রিশ বছর বিবাহিত জীবন যাপন করছি, অথচ আমি কখনই একঘেয়ে বোধ করিনি। (অথচ অনেকেই বলতেন মেরী অ্যান ইতিহাস জানতেন না, অতএব তিনি মূর্খ)

তাঁর নিজের অংশ হিসেবে ডিসরেলি কখনও গোপন করেন নি যে মেরী অ্যান তাঁর জীবনে অনেকখানি। এর ফল কি হয়? মেরী অ্যান তাদের বন্ধুদের বলতেন, আমার জীবনে এসেছে কেবল আনন্দ।

নিজেদের মধ্যে তাদের একটা ঠাট্টা চালু ছিলো। ডিসরেলি বলতেন, জানো তোমার টাকার জন্যই তোমায় বিয়ে করেছি।’ মেরী অ্যান হেসে বলতেন, হ্যাঁ,তবে আবার বিয়ে করতে হলে আমাকে এবার নিশ্চয়ই ভালোবাসার জন্যই করবে?

ডিসরেলি স্বীকার করতেন সেটা ঠিক।

না, মেরী অ্যান ত্রুটিহীনা ছিলেন না। কিন্তু ডিসরেলি তাঁর নিজের মত জীবন যাপন করায় কখনও বাধা দিতেন না।

হেনরী জেমস বলেছেন অন্যের সঙ্গে সম্পর্ক রাখতে গেলে এটা জেনে রাখা দরকার যে, অন্য লোকের সুখী হবার বিশেষ উপায়গুলোতে যেন কোন রকম বাধা না হয়। যদি না অবশ্য এতে আমাদের সুখের ব্যাঘাত হয়।

কথাটা বারবার বলার মতই।

লেল্যাণ্ড ফস্টার উড তাঁর বই ‘গ্লোয়িং টুগেদার ইন দি ফ্যামিলি’তে বলেছেন ‘বিয়েতে সাফল্য নির্ভর করে সঠিক লোক খুঁজে বের করার উপর। অবশ্য সঠিক লোক হওয়াটাও কম জরুরী নয়।

অতএব যদি সুখী হতে চান, তাহলে ২নং নিয়ম হল :

সঙ্গী বা সঙ্গিনীকে অধিকার করার চেষ্টা করবেন না।’

সমালোচনা করবেন না

জন জীবনে ডিসরেলির সবচেয়ে বড় প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন গ্লাডস্টোন। সাম্রাজ্যের যে-কোনো তর্কের বিষয় নিয়েই দুজনে লড়াই করতেন। অথচ তাদের দুজনেরই জীবনে একটা মিল ছিল, তা হল তাদের সুখী ব্যক্তিগত জীবন।

উইলিয়াম আর ক্যাথরিন গ্লাডস্টোন ঊনষাট বছর, প্রায় তিন কুড়ি বছর উজ্জ্বল বিবাহিত জীবন কাটান। সাধারণ জীবনে প্রচণ্ড ব্যক্তিত্ব সম্পন্ন গ্লাডস্টোন কোনদিনই স্ত্রীর সমালোচনা করেন নি।

ক্যাথরিন দি গ্রেটও তাই করতেন। তিনি কখনই স্বামীর সমালোচনা করেন নি।

ছোটদের কখনও সমালোচনা করার কথা নিশ্চয়ই আপনারা ভাবেন … হয়তো ভাবছেন, আমি বলবো সমালোচনা করবেন না। না, আমি তা বলবো না। আমি শুধু বলবো তাদের সমালোচনা করার আগে কেবল আমেরিকার সাংবাদিকের একটা বিখ্যাত লেখা ‘ফাদার ফরগেটস’ পড়তে। এটা বহুবার উদ্ধৃত হয়েছে এবং রিডার্স ডাইজেস্ট থেকে তুলে দিচ্ছি :

‘শোন ছোট্ট সোনা, আমি তোমাকে যখন বলছি তুমি ঘুমোচ্ছ। আমি তোমায় বকাবকি করেছি, আমি তোমার ঘরে চুপি চুপি এসেছি একা। তোমার একখানা হাত তোমার গলার তলায়, তোমার সোনালী চুল ঘামে ভিজে কপালের মধ্যে আটকে রয়েছে। এখন আমি দোষীর মতই তোমার কাছে এসেছি।

আমি এই কথাগুলোই ভাবছিলাম। আমি তোমার প্রতি কত বিরক্ত বোধ করেছি। স্কুলে যাওয়ার আগে তোমায় খুব বকেছিলাম কারণ তুমি সব খাবার ছড়িয়ে ফেলেছিল। তারপর তোয়ালে দিয়ে মুখ না মুছে কেবল তোয়ালেটা মুখে ছুঁয়েছিলে। তুমি তোমার জুতো সাফ করোনি বলেও বকাবকি করেছি।

সকাল বেলায় প্রাতরাশের সময়েও তোমায় বলেছিলাম। তুমি তোমার সব খাবার ছড়িয়ে ফেলেছিলে তারপর না চিবিয়ে সব খেয়ে ফেলেছিলে। তোমার চিবুক টেবিলে রেখে-রুটিতে খুব পুরু করে মাখন মাখিয়েছিলে। যখন তুমি আবার খেলতে যাও তখন আমি ট্রেন ধরতে ছুটেছিলাম, তখন তুমি চেঁচিয়ে বলেছিলে যাচ্ছি বাবা।

একই রকম ব্যাপার ঘটেছিল বিকেলেও। রাস্তা দিয়ে যখন আসছিলাম তখন দেখেছিলাম তুমি রাস্তার মধ্যে মাটিতে হাঁটু রেখে খেলে চলেছ, তোমার মোজায় অনেক ফুটো। তোমাকে তোমার বন্ধুদের সামনে বেশ বকাবকি করে হটিয়ে বাড়িতে নিয়ে আসি। মোজার অনেক দাম, তুমি যদি নিজে কিনতে তাহলে বুঝতে পারতে বোধ হয়। বাবার কাছ থেকে তোমায় কথাটা শুনতে হল। কথাটা মনে রেখ।

পরের কথাটা তোমার মনে আছে? এরপর আমি যখন লাইব্রেরীতে বসে পড়েছিলাম, তুমি কেমন ভয় জড়ানো বিষাদমাখা চোখে এসে দাঁড়িয়েছিলে। আমি যখন কাগজ নামিয়ে তোমায় দেখলাম তুমি আসার জন্য আমি যে বাধা পেলাম তাই অধৈর্য হয়ে খিঁচিয়ে বলেছিলাম, কি হল, কি চাই?

তুমি কিছুই বলোনি। শুধু কচি কচি হাত দুটো দিয়ে আমার গলাটা আদরের সঙ্গে জড়িয়ে ধরে আমায় চুমু খেয়েই ছুটে চলে গিয়েছিলে। তোমার হৃদয়ে ইশ্বর যে ভালবাসা দিয়েছেন তা শুকিয়ে যায়নি।

ছোট্ট সোনা, একটু পরেই আমার হাত থেকে কাগজটা পড়ে গেল। একটা অদ্ভুত রকম ভয় আমাকে কেমন যেন চেপে ধরতে চাইল। এ আমার কি রকম অভ্যাস! ক্রমাগত তোমার দোষ খুঁজে বেড়াচ্ছি, বকুনির অভ্যাসই আমায় যেন পেয়ে বসেছে তোমাকে শুধু বকুনিই দিয়ে চলেছি। এটা ঠিক নয় যে তোমাকে ভালবাসিনা-আসলে তোমার কাছ থেকে অনেক বেশিই আমি চাইছিলাম। তোমার কাছ থেকে আমি যা চাইছিলাম তা আমার বয়সের মাপকাঠিতে। তোমাকে ঠিক সেই ভাবেই বিচার করেছি।

অথচ তোমার চরিত্রে রয়েছে কত ভালত্ব-কত সূক্ষতা। তোমার ছোট্ট হৃদয় বিশাল পর্বত শিখরে ছড়িয়ে পড়া ভোরের আলোর মতই বিরাট। তার প্রমাণ তুমি ছুটে এসে আমায় জড়িয়ে ধরে চুমু খেয়েছিলে। আজ তাই তোমার কাছে অন্ধকারে হাঁটু মুড়ে বসেছি। আমার নিজেকে এই মুহূর্তে অপরাধী মনে হচ্ছে …।

এ আমার সামান্য অনুশোচনা মাত্র। তুমি জেগে থাকলে একথা তোমায় বললে বুঝতে পারতে না। আমার জানা উচিত ছিল তুমি ছোট্ট একটা ছেলে মাত্র …।

কিন্তু কাল থেকে আমি হব একজন সাহিত্যিকের বাবা এবং তোমার সঙ্গে ঠিক বন্ধুর মত ব্যবহার করবো। তোমার দুঃখের সময় আমি দুঃখ পাব এবং তোমার আনন্দের সময় আমিও আনন্দে সমান অংশীদার হব। কখনও রেগে কথা বললে তখনই নিজেকে সামলে নিয়ে ভুল সংশোধন করবো। ঠিক মন্ত্রের মত আমি আওড়াব তুমি যে একটি ছোট্ট শিশু মাত্র, এর বেশী কিছু নও।

আমি তোমাকে পূর্ণবয়স্ক একজন মানুষ ভেবে ভুল করেছি …। এখন আমি বুঝতে পারছি তুমি শুধু একটি শিশু মাত্র–ক্লান্ত হয়েইতুমি বিছানায় শুয়ে আছে। …আমি তোমার কাছে ঢের বেশি কিছু চেয়েছি সেটা চাওয়া আমার উচিত হয়নি।

সকলকে সুখী করার উপায়

‘বেশিরভাগ পুরুষই স্ত্রী সন্ধান করার সময় যা চান তা হলো, তিনি এমন কেউ হবেন যিনি কোন প্রতিষ্ঠানের মালিক হবেন না বরং এমন কেউ হবেন তিনি চাইবেন নিজেকে স্বেচ্ছায় শ্রেষ্ঠত্বের গরবে ভরিয়ে তুলতে। কথাটা বলেছেন পল পোপিনো, লস এঞ্জেলেসের পারিবারিক সম্পর্কের প্রতিষ্ঠানের ডাইরেক্টর। এই জন্যই কোন মহিলা অফিস ম্যানেজারকে একেবারই মাত্র মধ্যাহ্নভোজে আমন্ত্রণ জানানো যায়। সে হয়তো তার কলেজে জীবনের স্মৃতিই উজাড় করে দিতে ব্যর্থ হয় তখন। এমন কি নিজের খরচাটাও সে হয়তো বা নিজেই মিটিয়ে দিতে চাইবে। এর ফল কেমন হয় : এরপর থেকে সে একাকী মধ্যাহ্নভোজ সারে।

‘এর বদলে যদি কলেজে শিক্ষা পায়নি এমন টাইপিস্টকে মধ্যাহ্নভোজ ডাকলে সে আমন্ত্রণকারীর দিকে উজ্জ্বল চোখে তাকিয়ে আগ্রহ নিয়েই বলতে চায়, আপনার কথা বলুন। ফলটা কেমন হয়?

ভদ্রলোক তখন অন্যদের কাছে বলেন, মেয়েটা সুন্দরী না হলেও এরকম ভালো শ্রোতা আর দেখিনি।

পুরুষের উচিত, স্ত্রীলোকের পোশাক পরা আর রমণীয়া দেখানোর চেষ্টার তারিফ করা। সব পুরুষরাই ভুলে যায়, তাদের তাই বোঝা উচিত মেয়েরা পোশাক সম্বন্ধে কতটা আগ্রহী হয়। যেমন ধরুন, কোন পুরুষ আর কোন রমণীর সঙ্গে আচমকা পথে দেখা হয়ে গেলে প্রথম স্ত্রীলোকটি ক্কচিৎ কখনও অন্য পুরুষটির দিকে তাকায়। তার দৃষ্টি স্বভাবতই যাচাই করতে চায় অন্য স্ত্রীলোকটি কি রকম পোশাক পরেছেন।

আমার ঠাকুমা কবছর আগে আটানব্বই বছর বয়সে মারা যান। তাঁর মৃত্যুর কিছু আগে তাঁকে পঁচাত্তর বছর আগের তোলা একটা ফটো দেখাই। ঠাকুমার চোখে দেখার শক্তিই ছিলো না। তিনি শুধু একটা প্রশ্নই করেন : ‘কি পোশাক পরে ছিলাম রে?’ একবার ভাবুন ব্যাপারটা! এক বৃদ্ধা তাঁর জীবনের শেষ লগ্নে এসে, প্রায় শতবর্ষে পৌঁছে, স্মরণশক্তি হারিয়ে জিজ্ঞাসা করছেন পঁচাত্তর বছর আগে কি পোশাক পরেছিলেন। এই প্রশ্নটা তিনি যখন করেন আমি তার পাশেই ছিলাম। ব্যাপারটা আমার মনে

এমন একটা দাগ রেখে যায়, কোনদিনই যেটা হারাবে না।

যে সব পুরুষ এই বইটা পড়ছেন তাঁরা পাঁচ বছর আগে কোন্ পোশাক পরেছিলেন মনে করতে পারবেন না। হয়তো মনে রাখার ইচ্ছাও তাঁদের নেই। কিন্তু মেয়েরা একেবারে আলাদা। ফরাসী ছেলেদের শেখানো হয় কোন সন্ধ্যায় মেয়েদের সঙ্গে দেখা হলে বারবার তাদের পোশাকের প্রশংসা করা। মনে রাখবেন পাঁচকোটি ফরাসী কখনও ভুল করতে পারে না!

একটা মজার গল্প শোনাতে চাই আপনাদের। গল্পটা অবশ্য গল্পই।

এক চাষীর বউ সারাদিনের কাজের পর বাড়ির পুরুষদের সামনে একবোঝা খড় এনে জমা করে। তারা বিরক্ত হয়ে প্রশ্ন করে যে পাগল হয়ে গেছে কিনা। চাষী বৌ তার উত্তরে বলে : ‘তোমরা লক্ষ্য করবে ভাবতে পারিনি। গত বিশ বছর ধরে তোমাদের জন্য খড় রান্না করে আসছি অথচ কোনদিনই তোমরা বলোনি খড় খাচ্ছো না কি খাচ্ছো।

মস্কো আর সেন্ট পিটার্সবার্গের অভিজাতবৃন্দদের মার্জিত ব্যবহার মজ্জাগত ছিল। রাশিয়ার জারদের আমলে প্রথা ছিল খাদ্য পরিবেশনের সময় অভিজাতরা চাইতেন রাঁধুনি সামনে থাকুক যাতে তাকে অভিনন্দন জানানো যায়।

ঠিক এমনটাই আপনার স্ত্রীকেও জানান না? রান্না খারাপ হলেও তাকে প্রশংসা করুন। আর এরকম করতে গিয়ে তাকে জানাতে ভুলবেন না আপনার জীবনে সে কতখানি জুড়ে আছে। ডিসরেলী ছিলেন বিশ্বের একজন বিখ্যাত রাজনীতিক, অথচ তিনি লোকের কাছে বলতে কখনই লজ্জা পেতেন না স্ত্রী তার কাছে কতখানি প্রিয়।

এডি ক্যান্টর বলেছিলেন : জীবনের সব কিছুর জন্যেই আমি আমার স্ত্রীর কাছে স্বামী। সেই আমাকে সোজা রাস্তায় চলতে সাহায্য করেছে। আমাদের পাঁচটি সন্তান আর আমার স্ত্রী আমাদের গৃহ আনন্দে ভরিয়ে রেখেছে। সব প্রশংসা তারই প্রাপ্য।

এরকম ঘটনার উদাহরণ আরও কিছু আছে। হলিউডে যেখানে বিয়ে ব্যাপারটা ঝুঁকির কাজ হয়ে উঠেছে সেখানেও এর উদাহরণ পাওয়া যায়।

এই হলো ব্যাপার। অতএব জীবনে সুখী হতে হলে ৪নং নিয়ম হল :

আন্তরিক প্রশংসা করুন।

মেয়েরা যা ভালোবাসে

স্মরণাতীত কাল থেকেই ফুলকে প্রেমের ভাষা বলে ভাবা হয়ে আসছে। এতে খরচ বেশি হয় না, বিশেষ করে যে ঋতুতে যে ফুল মেলে। অর্থাৎ মরসুমী ফুল। কজন মানুষই বা বাড়িতে ফুল কিনে নিয়ে যান। এতে ভাবা যেতে পারে ফুলের বুঝি ঢের দাম।

তাহলে আজই আপনার স্ত্রীর জন্য এক গুচ্ছ গোলাপ কিনে নিয়ে যান না। পরীক্ষাটা একবার করেই দেখুন না কি হয়।

ব্রডওয়েতে ব্যস্ত থাকার সময় জর্জ এম. কোবান সারাদিনে তাঁর মা’কে দুবার ফোন করতে ভুলতেন না। এটা তিনি মা’র মৃত্যু পর্যন্ত করে যান। আপনারা কি ভাবেন প্রতিবারেই আশ্চর্য সব খবর দিতেন তিনি? মোটেই না। এ রকম করা একটাই মাত্র উদ্দেশ্য–যাকে ফোন করা হয় তাকে জানানো তিনি কতটা ভালবাসেন। তাকে কত খুশী করায় আপনি আগ্রহী। তার সুখ বা আনন্দে আপনার ব্যস্ততা কতখানিই।

মেয়েরা তাদের জন্মদিন বা অন্য সব উৎসবের ব্যাপারে দারুণ গুরুত্ব দেয়, কেন যে তারা তা করে সেটা একটা রমণীসুলভ রহস্যই। গড়পড়তা পুরুষরা কিন্তু কোন তারিখ মনে রাখার ব্যাপারে উদাসীন হয়। এটা কিন্তু মনে রাখা নেহাতই জরুরি কাজ, মনে রাখা উচিত।

শিকাগোর একজন জজ, যোশেফ মাবাথ যিনি ৪০,০০০ বিবাহ বিচ্ছেদের মামলার নিষ্পত্তি করে ২,০০০ স্বামী স্ত্রীকে আবার মিলিয়ে দিয়েছেন। তিনি বলেন : ‘বিবাহিত জীবন মূল গণ্ডগোল অনেক ক্ষেত্রেই সামান্য ব্যাপার থেকে উৎপত্তি হয়। স্বামী যখন অফিসে কাজে রওয়ানা হন তখন তাকে বিদায় জানানোর মত কাজ স্ত্রীরা করলে অনেক বিবাহ বিচ্ছেদই আর হয় না।’

এলিজাবেথ ব্যারেট ব্রাউনিংয়ের সঙ্গে রাবর্ট ব্রাউনিংয়ের বিবাহিত জীবন বোধ হয় সবচেয়ে স্বর্গীয় মহিমায় ভাস্বর ছিল। রবার্ট ব্রাউনিং প্রায় সব সময়েই স্ত্রীর প্রতি সামান্য ব্যাপারেই মনোযোগী হতে কখনও ভুল করতেন না। তিনি তাঁর পঙ্গু স্ত্রীকে এমনই সহৃদয়ভাবে যত্ন করতেন যে, এলিজাবেথ তাঁর বোনকে লেখেন : আমার মনে হচ্ছে আমি কেন সত্যিকার পরী হতে পারবো না।’

জীবনের ক্ষেত্রে বহু পুরুষই এই সব ছোটখাটো প্রাত্যহিক ব্যাপারে খেয়াল রাখেন না। বিবাহিত জীবনের শেষে এই রকমই ঘটে-ছোটখাটো সব ব্যাপার। যে সব দম্পতি এটা খেয়াল রাখেন না তাদের ধিক্কার দেয়া দরকার।

অতএব পারিবারিক জীবনে সুখী হতে গেলে ৫নং নিয়ম হল :

‘ছোটখাটো ব্যাপারেও নজর দিন।’

সুখী হতে হলে এটা অবহেলা করবেন না

ওয়াল্টার ড্যামরস বিয়ে করেন আমেরিকার শ্রেষ্ঠতম রাগী আর প্রেসিডেন্ট পদের একজন প্রার্থী জেমস জি. ব্লেইনের কন্যাকে। বহু বছর আগে বিয়ের পর থেকে স্কটল্যাণ্ডে অ্যান্ড্রু কার্নেগীর বাড়িতে ড্যামরস পরিবার দারুণ সুখে জীবন কাটান।

তাদের এই সুখের রহস্যটা কি?

মিসেস ড্যামরস বলেন, কোন জীবন সঙ্গী বেছে নেওয়ার সময় বিয়ের পরেই ভদ্রতাকে স্থান দিতে . চাই। স্ত্রীরা যদি স্বামীর প্রতি ভদ্রতা দেখায় তাহলে আর কিছু লাগে না।

ভালবাসাকে শেষ করতে কড়া কথা ব্যবহার হলো ক্যান্সারের মতো। লোকেরা এটা জানে বলেই আশ্চর্য ব্যাপার, আমরা আপন আত্মীয় স্বজনদের চেয়ে অচেনাদের কাছেই ভদ্রতা দেখাই। নিজের লোকদেরই আমরা অসম্মান করি বেশি।

ডরোথী ডিক্স বলেন : এটা আশ্চর্যজনকভাবেই সত্য যে যাদের আমারা সবচেয়ে বেশি খারাপ কথা বলি তারা সবাই আমাদের নিজের বাড়ির লোকজন।

হেনরি ক্লে রিমনারের মতে, ভদ্রতা হল হৃদয়ের এমন কোন গুণ যেটা ভাঙা সদরের বাইরে মনোলোভা ফুলের ওপরেই দৃষ্টি ফেলার সাহায্য করে।

ভদ্রতাবোধ বিবাহিত জীবনে অপরিহার্য বস্তু, যেমন কোন মোটরের পক্ষে তেল অতি প্রয়োজনীয়।

প্রাতরাশের টেবিলের সেই বিখ্যাত এক নায়ক অলিভার ওয়েলে হোমস বাড়িতে এই রকম এক নায়কই ছিলেন। অথচ তিনিই আবার কোন কারণে বিষাদগ্রস্ত বা হতাশায় আচ্ছন্ন হলে মনের ভাব মনেই চেপে রাখতেন, কখনই অন্যদের বিব্রত করতেন না।

কিন্তু এটা হল অলিভার ওয়েণ্ডেল হোমসের ব্যাপার। সাধারণ গড়পড়তা মানুষ কেমন ব্যবহার এক্ষেত্রে করে থাকেন? অফিসে কাজে গোলমাল হলে ওপরওয়ালার কাছে ধমকানি। শুরু হয় মাথার যন্ত্রণা, পাঁচটা পনেরোর গাড়ি হয়তো ধরা যায় না। বাড়ি ফেরার তর সয় না তাই–তারপর সব ঝাল পড়ে এবার বাড়ির সকলের উপর।

হল্যাণ্ডে নিয়ম আছে বাড়িতে ঢোকার আগে বাইরের সিঁড়িতে জুতো খুলে রাখা। ডাচদের কাছ থেকে আমাদের তাই ঢের শেখার আছে–আমাদের দৈনন্দিন জীবনের ঝামেলা বাইরে রেখে ঢোকা।

উইলিয়াম জেমস একবার কোন প্রবন্ধে লেখেন : মানুষের মধ্যে অদ্ভুত একটা অজ্ঞতা আছ। এ দোষে আমরা প্রায় সবাই ভুগি।

প্রায়ই দেখা যায় অনেকেই বাইরের মানুষের সঙ্গে চেঁচিয়ে কথা বলে না। অথচ স্ত্রীর প্রতি ঠিক বিপরীতটাই ঘটে যায়। কিন্তু বিবাহিত জীবন তাদের জীবনে ব্যবসার চেয়ে ঢের বেশী প্রয়োজনীয়।

গড়পড়তা মানুষ, যাদের বিবাহিত জীবনে সুখ আছে তারা একাকী বাস করা জ্ঞানীগুণীর চেয়ে অনেক সুখী। বিখ্যাত রুশ ঔপন্যাসিক টুর্গেনিভ বলেছিলেন : ‘আমি আমার সব কৃতিত্ব আর সব বই দিয়ে দিতে রাজি আছি শুধু যদি কোন মেয়ে আমায় সস্নেহে প্রশ্ন করার থাকে ডিনারে আসতে দেরী হলো কেন।

তাহলে বিয়ের মধ্যে সুখের সুযোগ কতটা পাচ্ছেন? ডরোথি ডিক্সের মতে বিয়েতে পুরুষের সাফল্যের সম্ভাবনা ব্যবসার চেয়ে শতকরা সত্তর ভাগ বেশি। স্ত্রী পুরুষ বিয়ে করলে শতকরা সত্তর ভাগ সফল হওয়ার সম্ভাবনা।

বিবাহিত জীবনে সাফল্যের মূলমন্ত্র হলো পরস্পরকে ভালভাবে জানার চেষ্টা করা আর পরস্পরকে সহায়তা করে চলা এবং ছোট ছোট ব্যাপারে মনোযোগ দেওয়ার কথা ভুলে না যাওয়া। তাছাড়া বিবাহ সংক্রান্ত ভালো কিছু বইও পড়ে ফেলা।

অতএব বিবাহিত জীবনে সুখী হতে গেলে ৬নং নিয়ম হল :

‘ভদ্রতা দেখান।‘

.

বিবাহিত জীবনে সুখী হতে হলে

অল্প কথায়

১: ঘ্যানর ঘ্যানর করবেন না।

২: সঙ্গী বা সঙ্গিনীকে অধিকার করতে চাইবেন না।

৩: সমালোচনা করবেন না।

৪ : আন্তরিক প্রশংসা করুন।

৫: ছোটখাটো ব্যাপারেও মনোযোগ দিন।

৬ : ভদ্রতা দেখান।

৭: বিবাহ সম্পর্কে ভালো বই পড়ুন।

.

স্বামী বা স্ত্রী নিচের প্রশ্নগুলোর উত্তর নিজেরা দেওয়ার চেষ্টা করে দেখলে উপকৃত হবেন :

স্বামীদের জন্য

১। মাঝে মাঝে স্ত্রীর জন্যে আপনি একগুচ্ছ ফুল নিয়ে আসেন? সেটা তার জন্মদিন, বিবাহবার্ষিকী বা অন্য যে কোন উপলক্ষ্যেই হোক।

২। অন্যের সামনে কখনও স্ত্রীর সমলোচনা করেন না তো?

৩। বাড়ির খরচ ছাড়া তাকে ইচ্ছেমত খরচ করার জন্য টাকাকড়ি দেন কি?

৪। তার মানসিক কোন অবস্থায় সহানুভূতি দেখান তো?

৫। আপনার অবসর সময়ের অর্ধেকটা স্ত্রীর সঙ্গে কাটান কি?

৬। আপনার স্ত্রীর রান্নার সঙ্গে আপনার মা কিম্বা অন্য কারও তুলনা করেন কি?

৭। স্ত্রী বুদ্ধিবৃত্তি বই পড়া ইত্যাদিতে স্বাধীনতা দেন কি?

৮। ছোটখাটো ব্যাপারেও প্রশংসা করেন কি?

স্ত্রীদের জন্য

১। আপনার স্বামীর কাজে পূর্ণ স্বাধীনতা দেন কি?

২। আপনার গৃহকোণ আকর্ষণীয় করার জন্য চেষ্টা করেন কি?

৩। স্বামীর পছন্দসই আহার্য তৈরিতে চেষ্টা করেন কি?

৪। স্বামীর ব্যবসা বা কাজে সহায়তা করেন কি?

৫। আপনি অর্থকরী ব্যাপারে সহজভাবে মেনে নেন?

৬। আপনি কি আপনার শাশুড়ি ও স্বামীর অন্যান্য আত্মীয়দের সঙ্গে মানিয়ে চলেন?

৭। আপনি কি স্বামীর পছন্দই পোশাক পরায় অভ্যস্ত?

৮। দৈনন্দিন খবর ধারণা ইত্যাদি সম্বন্ধে আপনি কি ওয়াকিবহাল থেকে স্বামীকে আনন্দ দান করেন?




सृष्टि संवत्  - - १,९६,०८,५३,१२२

विक्रम संवत्  - - २०७८

No comments:

Post a Comment

ধন্যবাদ

বৈশিষ্ট্যযুক্ত পোস্ট

যজুর্বেদ অধ্যায় ১২

  ॥ ও৩ম্ ॥ অথ দ্বাদশাऽধ্যায়ারম্ভঃ ও৩ম্ বিশ্বা॑নি দেব সবিতর্দুরি॒তানি॒ পরা॑ সুব । য়দ্ভ॒দ্রং তন্ন॒ऽআ সু॑ব ॥ য়জুঃ৩০.৩ ॥ তত্রাদৌ বিদ্বদ্গুণানাহ ...

Post Top Ad

ধন্যবাদ